০৩. গাহি নতুনের গান

০৩. গাহি নতুনের গান

এক.

বাড়ি গেলে আজকাল ভীষণরকম মন খারাপ হয়। আমার বড় ভাইকে পইপই করে বুঝিয়ে বলেছিলাম কেন তার স্ত্রীর, অর্থাৎ আমার ভাবির উচিত নয় আমার সামনে আসা, আমার সাথে কথা বলা। যদি কথা বলতেই হয়–তাহলে সে যেন অবশ্যই যথাযথ পর্দার সাথে কথা বলে।

আমার ভাই আমার কথা হয়তো বুঝতে পারেননি অথবা আমি অধম তাকে বোঝাতে হয়তো উপযুপরি ব্যর্থ, যার দরুন বাড়ি গেলে এখনো আমাকে সেই আগের করুণ অবস্থার মধ্য দিয়েই যেতে হয়। কেবল তা-ই নয়, গ্রামের মহিলাদের মধ্যে পর্দার জ্ঞান একেবারে নেই বললেই চলে। পর্দা বলতে তারা কেবল বাইরে বেরোনোর সময় একটা ছিপছিপে বোরকা পরাকেই বুঝতে শিখেছে। মাহরাম ও নন-মাহরামের একটা সরল সীমারেখা যে ইসলামে বিদ্যমান, তার কিঞিৎ জ্ঞানও আমি গ্রামের অধিকাংশ মহিলার মাঝে দেখতে পাই না। দোষটা যে মোটাদাগে তাদের একার, তা কিন্তু নয়। দোষটা সমানভাবে আমাদেরও। আমরা তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারিনি। আমাদের জুমুআর খুতবাগুলোতে কিংবা ওয়াজ-মাহফিলগুলোতে গতানুগতিক আলোচনার বাইরে আমরা কখনোই পর্দা, মাহরাম নন-মাহরামের মতন ব্যাপারগুলো নিয়ে আলাপ করি না। নারী-পুরষের অবাধ মেলামেশার ব্যাপারে শারিয়ার টেনে দেওয়া যে সীমারেখা, সেই সীমারেখার আলাপ আমাদের আলোচনায় ভীষণভাবে অনুপস্থিত।

ফলে, আগে যেখানে আঁধার ছিলো, এখনো সেখানে ঘোর আঁধারের ঘরবসতি।

একটা কথা আমাদের সমাজে খুব প্রচলিত। লোকমুখে শুনি—‘বড় ভাবি মায়ের মতো।’ বড় ভাইয়ের বউকে মা জ্ঞান করার বিদ্যে নিয়ে আমাদের সমাজের অধিকাংশ মুসলিম শিশু বড় হয়ে ওঠে। দ্বীনের বুঝ আসার পরেই আমি বুঝতে পারলাম, কথাখানা কতখানি ভয়ানক! বড় ভাইয়ের বউ, যার সাথে আমার রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই, যে ধর্মমতে আমার জন্য মাহরামও নয়, তাকে দেওয়া হয়েছে মায়ের সমান আসন! আমি এমন অনেকগুলো পরিবার সম্পর্কে জানি, যেখানে পরিবারের বড় ভাই বিদেশে আর ছোট ভাই বড় ভাইয়ের বউয়ের সাথে দিব্যি পরকীয়া করে বেড়াচ্ছে। বাঙালি মুসলিম সমাজে আজকাল এসব ব্যাপার এত সহজ আর খোলামেলা হয়ে উঠেছে যে–এগুলোকে এখন খুব গুরুতর অপরাধ হিশেবে দেখা হয় না। সমাজ যাকে তুলনা করেছে মায়ের সাথে, যাকে দিয়েছে মায়ের সমান মর্যাদা আর আসন, ঠিক তার সাথেই আবার পরকীয়া! কেমন অদ্ভুতুড়ে না?

কিন্তু এটাই নিরেট সত্য। বাঙালি মুসলিম সমাজে আজ পর্দা-প্রথার যে করুণ দশা, তা দেখলে দ্বীনের জন্য দরদ রাখে এমন যে-কারো বুক হুহু করে উঠবে। শুধু। তো বড় ভাইয়ের বউই নয়, আমাদের বড় ভাইয়েরা, যারা যথেষ্ট যত্নের সাথে বিয়ের পর শালিদের সঙ্গে যে মধুর ভাই-বোনের সম্পর্কটা পাতায়, সেটাও যে কতটা সাংঘাতিক, তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে! এমন আরো বহু এবং নানাবিধ মধুর সম্পর্ক তৈরি করে নিয়েছে আমাদের সমাজগুলো, যা দ্বীন ইসলাম কখনোই, কোনোভাবে, কোনোরূপে সমর্থন করে না।

দুই.

কুরআনে আমরা দেখি–মুসা আলাইহিস সালাম যখন নিরাশ্রয় অবস্থায় মাদইয়ানে আসেন, তখন একটা কূপের অদূরে দুটো রমণীকে তিনি দেখতে পান, যারা তাদের বকরিগুলোকে নিয়ে একপাশে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কূপ থেকে পানি নেওয়ার বদলে জড়তা নিয়ে অদূরে তাদের দাঁড়িয়ে থাকবার কারণ মুসা আলাইহিস সালামের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠলো।

তখন কূপের কাছে ছিলো কয়েকজন পুরুষ, যারা নিজেদের প্রয়োজনের পানি কূপ থেকে তুলে নিচ্ছিলো। যেহেতু কূপের কাছে পুরুষদের আনাগোনা, ফলে মেয়েদুটো সেই আনাগোনার মাঝে নিজেদের হাজির করার চাইতে অদূরে দাঁড়িয়ে পুরুষদের প্রস্থানের জন্য অপেক্ষা করাটাকেই শ্রেয় মনে করলো।[1]

আচ্ছা, পুরুষদের পাশাপাশি মেয়ে দুটোও যদি কূপের কাছে গিয়ে পানি নেওয়ার জন্য তোড়জোড় আরম্ভ করতো, কী হতো তাহলে? তারা কি গিয়ে বলতে পারতো না, ‘ভাই, জায়গা দেন, আমরাও একটু পানি নিই?’

নিজের অধিকার ও দরকার সামলাবার জন্য এভাবে পুরুষদের সাথে বাদানুবাদে জড়ালে কোনো ক্ষতি ছিলো কি? আসলে ক্ষতি ছিলো কি না, তা বলা যায় না; তবে দ্বীনের উত্তম পন্থা যে লঙ্ঘন হতো, নিশ্চিতভাবে বলা যায়। আপনি বলতে পারেন–এখানে উত্তম পন্থা কোনটা তাহলে? নিজের অধিকারটুকু ছেড়ে দিয়ে অন্যকে সুযোগ করে দেওয়া? সেটাও নয়। এখানে মূল বিষয়টা লজ্জা তথা– রমণীয় গুণের!

আপনি যদি আধুনিকতাবাদ কিংবা অধুনা দুনিয়ার নারীবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন, আপনার মতামত হবে কূপের কাছে গিয়ে সেসব পুরুষের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, সমানে সমান জোর খাঁটিয়ে নিজ প্রয়োজন সেরে নেওয়া। কুরআনে বর্ণিত মেয়েদুটোর জন্য আপনার প্রস্তাবিত পরামর্শ থাকতো এরকম। কতিপয় পুরুষদের দেখে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা, নিজ প্রয়োজন সারা থেকে নিবৃত্ত হওয়াকে আপনি নিতান্তই বোকামো জ্ঞান করবেন নিঃসন্দেহে।

কিন্তু আল্লাহর প্রস্তাবিত পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি নারী ও পুরুষের জন্য একটা লজ্জার বন্দোবস্ত করেছেন। টানিয়ে দিয়েছেন একটা সীমারেখা। মেয়েদুটোর জন্য মাহরাম নয়, এমনসব পুরুষের যাবতীয় সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকাই ছিলো তাদের রবের আদেশ। তারা চাইলে সেই কূপের কাছে গিয়ে পানি নেওয়া শুরু করতে পারতো কিংবা কূপের কাছে দাঁড়িয়ে পুরুষদের অনুরোধ করতে পারতো তারা যেন তাদের জায়গা করে দেয়।

তবে এতে করে মেয়েদুটোকে পুরুষদের কাছাকাছি আসতে হতো। হয়তো তাদের সাথে কথাও বলতে হতো, কিন্তু কাজটাকে তারা নিজেদের জন্য সমীচীন মনে করেনি। অপরিচিত, মাহরাম নয়, এমন পুরুষদের সাথে কথা বলা কিংবা তাদের কাছাকাছি অবস্থান করাটাকে তাদের কাছে যথার্থ মনে হয়নি। এমন তো নয় যে, পুরুষগুলো কূপটাকে দখল করে বসে থাকবে। মেয়েদুটো জানতোদরকার পূরণ হলে পুরুষেরা সেখান থেকে নিশ্চিতভাবে সরে যাবে। তখন তারা তাদের বকরিগুলোকে পানি পান করানোর জন্য একটা নির্বিঘ্ন সুযোগ লাভ করবে। তার জন্য একটু অপেক্ষা হয়তো করা লাগবে, কিন্তু তা তো কিছু নন-মাহরাম পুরুষের কাছাকাছি যাওয়া, তাদের সাথে কথা বলার চাইতে ঢের উত্তম।

এই যে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা, পুরুষদের কাছাকাছি না ঘেঁষা, তাদের সাথে কথাবার্তায় na জড়ানো–এসবকে কখন আপনি উত্তম বলে ভাবতে পারবেন? যখন আপনার ভেতর দ্বীন পালনের জন্য একটা দরদ থাকবে। দুনিয়ার চোখ দিয়ে তাকালে আপনি এই ঘটনায় ‘অধিকার’কে বড় করে দেখবেন, কিন্তু দ্বীনের দরদ নিয়ে তাকালে আপনি এখানে অধিকারের চাইতেও যা বড় করে দেখতে পাবেন, তা হলো– আপনার লজ্জা এবং মুসলিম রমণী হিশেবে আপনার আত্মমর্যাদা!

ইসলামের একটা অর্থ হলো–আত্মসমর্পণ। জীবনের সবকিছুতে, সবখানে দ্বীনকে বড় করে দেখবেন, দ্বীনের বিধি-নিষেধকে গুরুত্ব দেবেন–এই হলো আপনার ওপর ইসলামের দাবি।

কিছু পর-পুরুষ যেখানে জড়ো হয়ে আছে, সেখানে গিয়ে যদিও-বা আপনি দাঁড়াতে পারেন, কথা বলতে পারেন, তথাপি যেহেতু আপনার দ্বীন আপনাকে একটা সীমারেখা বেঁধে দেয়, তাই আপনি যখন আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে আপনার দ্বীনের কাছে সমর্পণ করবেন, তখন ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার ওপরে আপনি দ্বীনটাকেই মূল্য দেবেন বেশি।

ওই মেয়ে দুটো, যারা কূপের কাছে কিছু পুরুষ-মানুষ আছে দেখে ওদিকে ঘেঁষেনি, তারাও দ্বীনটাকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছে। তারা অপেক্ষা করেছিলো লোকগুলো বিদেয় হওয়ার। লোকগুলো চলে গেলেই তারা দুজনে বকরিগুলোকে পানি খাওয়াবে– এমন চিন্তা থেকেই তারা অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। এই যে অপেক্ষা আর ধৈর্য–এটা হলো দ্বীন পালনের নির্যাস। দ্বীনটাকে বড় করে দেখার প্রয়াস।

মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনাটা এখানেই শেষ নয়। মেয়ে দুটো তাদের বকরিকে পানি পান করাতে পারছে না, ওদিকে কূপের কাছে থাকা লোকগুলোও সরতে দেরি হচ্ছে দেখে মুসা আলাইহিস সালাম স্ব-উদ্যোগে, নিজ থেকে এসে মেয়ে দুটোর বকরিগুলোকে পানি পান করালেন কূপ থেকে।

তাদের বকরিগুলোকে পানি পান করিয়ে মুসা আলাইহিস সালাম একটা গাছের ছায়ায় এসে বসে পড়লেন। মেয়ে দুটোও তাদের বকরিগুলোকে নিয়ে নিজেদের বাড়ির দিকে গেলো। মেয়েরা তাদের বাবাকে সমস্তটা খুলে বলার পরে তাদের বাবা বললেন, ‘যাও, লোকটাকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসো। তিনি তোমাদের উপকার করেছেন, তার বিনিময়ে আমি তাকে পুরস্কার দিতে চাই।’

বাবার অনুমতিক্রমে তখন মেয়ে দুটোর একজন এসে মুসা আলাইহিস সালামের সাথে কথা বললো। কুরআন সেই ঘটনাকে বিবৃত করে এভাবে–

‘তখন নারী দুজনের একজন তার কাছে সলজ্জ-পদে এলো এবং বললো, ‘আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন। আপনি আমাদের বকরিগুলোকে পানি পান করিয়েছেন। আমার পিতা এজন্য আপনাকে পুরস্কৃত করতে চান।’[2]

এই আয়াতে একটা শব্দ বিশেষ-বিবেচনার দাবি রাখে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এখানে খুব স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, ‘নারী দুজনের একজন সলজ্জ-পদে তার কাছে এলো। তাদের মধ্যকার একজন যে খুব ‘সলজ্জভাবে’ মুসা আলাইহিস সালামের কাছে এসেছিলো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তো এই শব্দ উল্লেখ না করলেও পারতেন; কিন্তু কেন তিনি এই বিশেষ শব্দটাকে আমাদের সামনে উল্লেখ করলেন বলতে পারেন? কারণ হলো–পর্দা। মুসা আলাইহিস সালাম মেয়েগুলোর জন্য মাহরাম নন, পরপুরুষ। পর-পুরুষের সাথে যদি দরকারবশত কথা বলতে হয়, তার সামনে যেতে হয়, তাহলে কতটা লজ্জা-আব্রু নিজের মধ্যে রাখতে হয়, কতটা পর্দা মেনে তার সামনে আসতে হবে, তার একটা সীমারেখা বোঝাতেই এই শব্দকে বাছাই করেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।

এটাই হচ্ছে ইসলামের সীমা-পরিসীমা। আপনার মাহরাম নয় এমন কারো সামনে যদি আপনাকে যেতে হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে যথাযথ পর্দা, যথেষ্ট লজ্জা নিজের মধ্যে রেখে তবে যেতে হবে। কিন্তু আমরা কী করি? আমরা মনে করি– আমাদের বড় ভাইয়ের বউয়েরা হচ্ছে আমাদের বড় বোন কিংবা মায়ের সমান। আমাদের শালিরা হচ্ছে আমাদের মায়ের পেটের বোনের মতো। চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই, যারা আপনার মাহরাম নয়, তাদের সাথে যদি আপনি আপনার মাহরামের মতো করেই কথা বলেন, যথেষ্ট পর্দা-বিহীন তার সামনে যান, তার সাথে খোশগল্প করেন, প্রকারান্তরে আপনি কিন্তু দ্বীনের একটা বুনিয়াদি বিষয়কে হালকা করে দেখছেন।

পর-পুরুষের সামনে নিজেকে কতটা গুটিয়ে নিতে হবে, পর-পুরুষকে কতটা এড়িয়ে চলতে হবে, ভয় পেতে হবে, তার আরো একটা উদাহরণ আমরা মারইয়াম আলাইহাস সালামের ঘটনা থেকেও পাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে যখন জিবরিল আলাইহিস সালাম মারইয়াম আলাইহাস সালামের কাছে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের সুসংবাদ নিয়ে আসেন, তখন নিজের কক্ষে জিবরিলকে দেখে একেবারে ঘাবড়ে যান মারইয়াম আলাইহাস সালাম। কারণ ইতোপূর্বে তিনি কখনো জিবরিলকে দেখেননি। মানুষের বেশ ধরে আসা জিবরিল আলাইহিস সালামকে তিনি পর-পুরুষ ভেবে ভয়ে তটস্থ হয়ে বলে ফেললেন, ‘আমি তোমার কাছ থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি, এবং (আল্লাহকে ভয় করো) যদি তুমি মুত্তাকি হও।’ [3]

মারইয়াম আলাইহাস সালামের এই যে ভয় পাওয়া, মানুষের বেশধারী জিবরিল আলাইহিস সালামকে দেখে ঘাবড়ে যাওয়া, তার কাছ থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা–এসবকিছুর পেছনেও নেপথ্য কারণ কিন্তু সেই একটাই, আর তা হলো– পর্দা। একজন পরপুরুষের সামনে নিজেকে মেলে ধরার প্রবণতা কিংবা তার সাথে খোশগল্পে মেতে ওঠার সুযোগ দ্বীন ইসলাম আপনাকে দেয় না। যদি তা থাকতো, তাহলে সেদিন মারইয়াম আলাইহাস সালাম জিবরিল আলাইহিস সালামকে দেখে ঘাবড়ে যেতেন না। তিনি আপ্যায়ন করাতেন, বসতে দিতেন, খোশগল্প করতেন। তিনি কিন্তু তা করেননি; বরং অকস্মাৎ এমন একজন মানুষকে দেখে তিনি ভয়-ই পেয়ে গেলেন। পর্দা লঙ্ঘনের ভয়। নিজের ইজ্জত-আব্রু লঙ্ঘন হওয়ার ভয়।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি– একবার অন্ধ সাহাবি ইবনু উম্মি মাকতুম রাযিয়াল্লাহু আনহু নবিজির কাছে এলে নবিজি উম্মু সালামা ও মাইমুনা রাযিয়াল্লাহু আনহুমাকে ঘরের ভেতরে চলে যেতে বলেন। এমন আদেশ পেয়ে তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইনি তো অন্ধ। তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা তো অন্ধ নও।’[4]

পর্দার গুরুত্ব বোঝার জন্য বোধকরি এই হাদিসটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। উম্মি মাকতুম রাযিয়াল্লাহু আনহু অন্ধ। তিনি না নবিজিকে দেখতে পান, আর না উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে দেখতে পাবেন। তথাপি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে ভেতরে চলে যেতে বলেছিলেন। ওই সাহাবির হয়তো-বা চোখে আলো নেই, কিন্তু উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা তো অন্ধ ছিলেন না। অকারণে, অহেতুক কেনই-বা একজন পর-পুরুষকে দেখবেন তিনি?

আমরা যারা নারীদের সামনে পুরুষের, পুরুষের সামনে নারীর অবাধ যাতায়াত আর মেলামেশাকে হালকাভাবে দেখে থাকি, আমরা যারা বলি, ‘একটু গেলে কীই-বা হয়, তাদের জন্য চমৎকার একটা শিক্ষা রয়েছে এই হাদিসে। একটু গেলে কী হয়’–এই জিনিস নবিজির চাইতে আমরা নিশ্চয় বেশি বুঝতে পারবো না। তিনি যেখানে নিজের স্ত্রীকে একজন অন্ধ লোকের সামনে অবস্থান করতে দেননি, সেখানে আমরা কীভাবে চক্ষুমান পর-পুরুষদের সাথে আমাদের মা, স্ত্রী, কন্যা, বোনদের মেলামেশাকে জায়েয করতে পারি?

তিন.

আমি এমনকিছু বোনের কথা জানি, যারা ডিপার্টমেন্টের ভাইবা বোর্ডে পুরুষ শিক্ষকের সামনে নিকাব খুলতে কখনোই রাজি হননি। যদিও-বা নিকাব না খোলার জন্য তাদেরকে অনেক অপমান, অনেক লাঞ্ছনা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্তের হুমকিও দেওয়া হয়েছিলো, তথাপি তারা সব অপমান, লাঞ্ছনা-গঞ্জনাকে মাথায় নিয়ে, কোনো হুমকি-ধমকিকে দ্বীনের চেয়ে বড় করে না দেখে তারা তাদের মতো অটল-অবিচল ছিলেন। এমন অনেক বোনেরাই আছেন, যাদের চেহারা কোনোদিন তাদের পুরুষ সহপাঠী দেখেনি। অদরকারে তাদের কণ্ঠস্বর পর্যন্ত শুনতে পারেনি। তারা কখনোই ছেলে-মেয়ে মিলে করা ক্লাশ-পার্টিগুলোতে যোগ দেননি। বস্তুবাদী সমাজের চোখে এসব হয়তো বড্ড অসামাজিক আচরণ, কিন্তু আল্লাহর চোখে এই ত্যাগ, এই তিতিক্ষা, এই সংগ্রামের মূল্য অবশ্যই অনেক। তাদের কাছে তাদের সহপাঠীরা পর-পুরুষ। পর-পুরুষের সামনে নিজের চেহারাকে অনাবৃত করা, তাদের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বলা, পার্টি করা ইত্যাদিকে সেই সব বোনেরা দ্বীন-বহির্ভূত কাজ বলে গণ্য করতেন।

আমার স্ত্রীর মুখে তার এক আত্মীয়ার গল্প শুনেছিলাম। উত্তরবঙ্গের দুপুরের কড়া রোদে ভদ্রমহিলাকে ধান শুকাতে-নাড়তে হতো, খড় শুকাতে হতো; কিন্তু বাড়ির সাথে লাগোয়া ছিলো সদর রাস্তা এবং ওই রাস্তায় বাজার বসতো সকাল থেকে। যেহেতু রাস্তা এবং বাড়ির উঠোনের মাঝে কোনো দেওয়াল ছিলো না, নিদেনপক্ষে একটা বাঁশ বা টিনের বেড়াও না, তাই রাস্তা ও বাজারের সমস্ত লোক বাড়ির লোকেদের এবং বাড়ির সমস্ত লোক বাজারের লোকেদের দেখতে পেতে অনায়াসে। এই অবস্থার মধ্যেই বাইরে ধান শুকাতে হতো ওই আত্মীয়াকে, কিন্তু পর্দা করার ব্যাপারে তিনি যেহেতু নাছোড়বান্দা, তাই ওই কড়কড়ে রোদের মাঝে, বোরকা-নিকাব পরেই তিনি দিনভর ধান শুকাতেন আর খড় নাড়তেন। স্বামীর আদেশ ছিলো এই–পর্দা করো আর যা-ই করো বাপু, তোমার কাজ যেন ঠিকঠাক থাকে। কাজ সামলিয়ে তুমি যা ইচ্ছে করো, আমার তাতে কিছু যায় আসে না।

মহিলাকে তো কাজও করতে হবে, অন্যদিকে পর্দাও করতে হবে। পর-পুরুষের নজর থেকে বাঁচাতে হবে নিজেকে। তাই সেই কাঠফাটা রোদের মাঝেও তিনি নিজের পর্দার ব্যাপারে এতটুকু ছাড় দেননি। এই যে ত্যাগের গল্প, এই গল্পকে আপনি কিন্তু বস্তুবাদের কোনো প্যারামিটার দিয়েই মাপতে পারবেন না। এই ত্যাগের তৃপ্তি ওই মহিলা বুঝবে না, যার কাছে পর্দাটা নিছক ফ্যাশন কিংবা আহ্বাদের বিষয়। ওই মহিলাও বুঝবে না, যার কাছে পর্দাটা একপ্রকার বোঝা। এই ত্যাগের মর্ম ওই পুরুষ বুঝবে না, যে নিজের মা, স্ত্রী, বোন, কন্যার পর্দার ব্যাপারে সচেতন নয়; যে মনে করে তার স্ত্রী-কন্যা আর বোনেরা পর-পুরুষদের সাথে। মিশলে, কথা বললে, খোশালাপে মজলে দুনিয়া উল্টে যাবে না।

চার.

আমাদের আরো একটা ব্যামো আছে। আমরা যখন পর্দার কথা বলি, পর্দা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা করি, তখন আমাদের মানসপটে জ্বলজ্বল করে একটা বোরকা পরা নারীমূর্তির ছবি ভেসে উঠে। আমরা, পুরুষেরা ধরেই নিয়েছি, পর্দাটা কেবল নারীদের জন্যই। পুরুষের আবার পর্দা কী? দুঃখের ব্যাপার হলো–পর্দা বলতে আমরা কেবল বোরকা-হিজাবকেই ভাবতে শিখেছি। দৃষ্টিরও যে পর্দা আছে, শ্রবণেরও যে পর্দা থাকে, তা কি আমরা কখনো জানতে চেয়েছি?

কুরআনে সুরা নুরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পর্দার বিধান নাযিল করেছেন। মজার ব্যাপার হলো–সুরা নুরের পর্দা-সংক্রান্ত প্রথম আয়াতটাই পুরুষদের উদ্দেশ্য করে বলা এবং ওই আয়াতে প্রধানত পুরুষদেরকে দৃষ্টির ও লজ্জাস্থানের হিফাযত করতেই বলা হয়েছে। কুরআন যখন পর্দার বিধান নাযিল করেছে, সবার আগে পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে কথা বলেছে, কিন্তু অতীব দুঃখের ব্যাপার হলো এই আজকের সময়ে আমরা পর্দা বলতে যা কিছু বুঝি, সবকিছু একচেটিয়াভাবে নারীদের ওপরেই চাপিয়ে দিই।

পর্দাটা নারী ও পুরুষ দুজনার জন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ফরয করেছেন। একজন নারী যেমন নিজেকে বোরকা আর হিজাবে আবৃত করবে, নিজের রূপ-লাবণ্যকে পর-পুরুষের দৃষ্টি থেকে বাঁচাবে, ঠিক একইভাবে একজন পুরুষও এমন পোশাক পরবে না, যা তার শরীরের গড়ন-গাড়নকে প্রকাশ করে দেয়। ঢিলেঢালা পোশাকই সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী। আজকাল আমরা দেখি, অনেক মুসলিম পুরুষেরা এমন ছিপছিপে শার্ট-প্যান্ট পরেন, যা তাদের শরীরের গড়নকে মেলে ধরে। আপাতদৃষ্টিতে এটাকে ফ্যাশান কিংবা যুগের চাহিদা যা-ই বলা হোক

কেন, এই ধরনের পোশাক নিজেকে এবং বিপরীত লিঙ্গের অন্য কাউকে যেকোনো মুহূর্তে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিতে পারে। পর্দার আবশ্যিকতা-ই হলো এই কারণে যে–পর্দা আপনার দেহকে প্রদর্শনেচ্ছা থেকে বাঁচাবে; কিন্তু আমরা যারা ছিপছিপে শার্ট-প্যান্ট পরি, যা শরীরের সাথে একেবারে লেপ্টে থাকে, তা আদতে কতখানি আমাদের প্রদর্শনেচ্ছা থেকে বাঁচায়, ভেবেছি কি?

ছিপছিপে শার্ট-প্যান্ট পরা যাবে কি না বা শারিয়ায় তা জায়েয কি না, সেসব আমার। আলোচনার বিষয় নয়। আসলে আমি এখানে যা বোঝাতে চাই, তা মোটাদাগে এই–সুন্নাহসম্মত পোশাকের অর্থই হলো তা আমাদের শরীরকে এমনভাবে ঢেকে রাখবে, যাতে কোনোভাবে আমাদের শরীরের গঠন, গড়ন প্রকাশ না পায়। আমাদের পোশাকের চেহারা যদি হিন্দি কিংবা তামিল সিনেমার নায়কের মতো হয়, তাহলে সেই পোশাক নিয়ে আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবার অবকাশ আছে বৈকি!

তবু প্রশ্ন থেকে যায়, এ ধরনের পোশাক পরলে কি কেউ গুনাহগার হবে? প্রশ্নটার উত্তর অন্যভাবে দেওয়া যাক। গুনাহগার হবে কি না, সেই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে উত্তম কিংবা অধিকতর উত্তমের কথা যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে হয়তো-বা এই ধরনের ছিপছিপে, গায়ে লেপ্টে থাকা পোশাক পরিধান না করাই উচিত।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যুহদের স্তর হচ্ছে তিনটা। মানে, আল্লাহকে ভয় করে, কিংবা আল্লাহকে ভালোবেসে একজন মানুষ তিনভাবে জীবনযাপন করে থাকে।

প্রথম স্তরের মানুষেরা কেবল যাবতীয় হারাম থেকে বেঁচে থাকে।

দ্বিতীয় স্তরের মানুষ হারাম থেকে তো বাঁচেই, হালালের মধ্যে যা অতিরিক্ত, তা থেকেও বিরত রাখে নিজেদের।

তৃতীয় এবং সর্বোচ্চ স্তরের মানুষ হালালের মধ্যেও এমন সব জিনিস এড়িয়ে চলে, যা সাধারণত আল্লাহর ভাবনা থেকে গাফেল করে দেয়।

এখন যদি ধরেও নিই, ছিপছিপে পোশাক পরিধানে কোনো অসুবিধে নেই, এটা জায়েয; তবু এটা তো নিশ্চিত যে–এই পোশাকের চেয়ে ঢিলেঢালা পোশাক-ই সুন্নাহর অধিক কাছাকাছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর অধিকতর প্রিয় হয়ে উঠতে চায় কিংবা আল্লাহকে বেশিই ভালোবাসতে চায়, তার কি উচিত নয়, এমন হালালের দিকে ঝুঁকে পড়া, যা অন্য একটা হালালের চাইতে অধিক উত্তম?

সাধারণত, বর্তমান জামানায় কিছু নারী যে স্টাইলিশ হিজাব পরে থাকেন, তা অবশ্যই সর্বসম্মতিক্রমে অপছন্দনীয়; কিন্তু আমরা যারা স্টাইলিশ হিজাব অপছন্দ করি, তারা যখন স্টাইলিশ শার্ট-প্যান্ট পরে, স্টাইলিশ হিজাবের বিরুদ্ধে বলতে যাবো, তখন কি আমাদের উচিত নয় আগে অন্তত একবার নিজের দিকে তাকানো?

আলোচনার সারবস্তু হলো–পুরুষেরও পর্দা আছে। পুরুষেরাও দৃষ্টির হিফাযত করবে এবং শালীন পোশাক পরিধান করবে, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, পর্দার আয়াতে যেখানে আগে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করেই কথা বলা হয়েছে, সেখানে আমরা পর্দার যাবতীয় হুকুম যেন নারীকুলের ওপরে চাপিয়ে দিতে পারলেই বেঁচে যাই।

পাঁচ.

এক বন্ধুর বাসায় ছিলো আমার অবাধ যাতায়াত। রোজকার আজ্ঞা, বিভিন্ন বিষয়ে শলা-পরামর্শসহ নানান কারণে তার বাসায় যাওয়াটা একপ্রকার আমার রুটিনে পরিণত হলো। বন্ধুটার বিয়ের পরে প্রথম যেদিন তার বাসায় আসি, দরোজার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রথমেই খানিকটা থতমত খেলাম। তার বাসার দরোজায় সাদা কাগজের ওপরে গোটা গোটা অক্ষরে কুরআনের একখানা আয়াত লেখা। আয়াতটা ছিলো–

হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যকারো ঘরে প্রবেশ কোরো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং ঘরের লোকদের সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।(5)

এমন নয় যে এই আয়াত আগে কখনোই পড়িনি কিংবা আমার চোখে পড়েনি, কিন্তু সেদিন তার ঘরের দরোজায় এমনভাবে আয়াতখানা সাঁটানো দেখে মনে হলো– আমি বুঝি এই আয়াত সেদিন-ই প্রথম দেখলাম। বিনা অনুমতিতে কারো ঘরে প্রবেশের অনুমতি ইসলাম যে আমাকে দেয়নি, সেটা সেদিন যেন আমি নতুনভাবে অনুভব করতে পারলাম। এখন যে আমার বন্ধুর ঘরে একজন নারী আছে এবং ওই নারী যে আমার জন্য মাহরাম নয়, তার সামনে যাওয়ার অনুমতি আমার নেই–এই। আয়াতখানাই সেই নির্দেশটা আমাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো।

আমাদের গ্রাম-বাংলার আরো একটি চিরাচরিত দৃশ্য হচ্ছে এই–আমাদের চাচা, জেঠা, ফুফা, চাচাতো ভাই, মামাতো ভাইয়েরা আমাদের ঘরে এসে, আমাদের মা-বোন-স্ত্রীদের সাথে দিব্যি খোশালাপে মেতে ওঠে। বড় আফসোস এবং পরিতাপের বিষয় হলো, পর্দার সামান্য বালাইটুকু এখানে রক্ষা হয় না। একজন মুসলমান অপর মুসলমানের ঘরে আসতে হলে সবার আগে তাকে বাইরে থেকে, দৃষ্টি অবনত রেখে অনুমতি চেয়ে নিতে হবে। অনুমতি দেওয়া হলে তবেই সে ঘরে ঢুকতে পারবে, নতুবা নয়। এই কথা আমার নয়, স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই বিষয়ে কুরআনে দুইটা আয়াত নাযিল করেছেন।

হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যকারো ঘরে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং ঘরের লোকদের সালাম দেবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। অতঃপর, যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও, তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ কোরো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও, তাহলে তোমরা অবশ্যই ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। বস্তুত, তোমরা যা করো, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।’[6]

এই যে আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমারেখা, নিয়ম ও নীতিমালা–এসব মেনে চলার কোনো বালাই কি আমাদের গ্রাম-বাংলা এবং আধুনিক মুসলিম পরিবারগুলোতে আছে? আমাদের বন্ধুরা, অফিসের কলিগ, ছেলে-মেয়ের স্কুলশিক্ষকেরা কত সহজে আমাদের ঘরগুলোতে ঢুকে পড়তে পারেন। না কোনো অনুমতির দরকার পড়ে, না দরকার পড়ে কোনো পর্দার। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে–আমাদের মায়েরা, স্ত্রী ও বোনেরা দরোজার কাছে এসে হাসিমুখে এসমস্ত নন-মাহরাম, পর-পুরুষদের সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে নিয়ে যান। অথচ একজন মুসলিম নারীর উচিত নয় কোনোভাবে একজন পর-পুরুষ, যে তার মাহরাম নয়, সরাসরি রক্ত-সম্পর্কের কেউ নয়, তার সামনে যাওয়া। বাসায় স্বামী, সন্তান কিংবা বাবার অনুপস্থিতিতে যদি কোনো পর-পুরুষ আসে, দরোজার অভ্যন্তর থেকেই তার সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত। যদি তার কোনো দরকার থাকে, তাহলে তাকে এমন সময়ে আসতে বলা যখন বাসায় কোনো মাহরামের উপস্থিতি থাকবে। তেমনি আমরা যখন কারো বাসায় যাবো, তখন আগে বাইরে থেকে সালাম দিয়ে অনুমতি চেয়ে নেবো। যদি বাসায় কোনো পুরুষ না থাকে, তাহলে আমাদের উচিত হবে না ওই বাসায় যাওয়া। ওই বাসায় কোনো মাহরাম পুরুষ উপস্থিত থাকলে তখন যাওয়াটাই অধিকতর উত্তম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুমিনদের শিখিয়ে দিচ্ছিলেন, নবিজির স্ত্রীদের কাছ থেকে কোনো জিনিস চাইতে হলে কীভাবে চাইতে হবে–

তার স্ত্রীদের কাছ থেকে কিছু চাইতে হলে পর্দার অন্তরাল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। [7]

কারো বাসায় যদি কোনো পুরুষ উপস্থিত না থাকে, আপনি ওই বাসায় যাবেন না। কিছু চাইতে হলে তা পর্দার অন্তরালে থেকে চাওয়ার কথা আল্লাহ আপনাকে জানাচ্ছেন। আপনি যদি একজন নারী হন, মাহরাম নয় এমন কোনো পুরুষ আপনার বাসায় এলে আপনি তার সাথে পর্দার অন্তরাল থেকেই কথা বলুন। এটাই আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমারেখা। এটা আমাদের অন্তরের পবিত্রতার জন্যই। দুজন নারী-পুরুষ, যারা সম্পর্কে রক্তের কেউ নয়, কেউ কারো মাহরাম নয়, তারা যখন একান্তে খোশালাপ করে, শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিশেবে উপস্থিত হয়ে যায়। অন্তরে যত ধরনের কুটিল চিন্তা, কুৎসিত ভাবনা দেওয়া যায়, সব সে আপনার মনে ঢেলে দেবে। কারণ সে চায় আপনি পথভ্রষ্ট হোন। সে তো আপনাকে পথভ্রষ্ট করবে বলেই আল্লাহর সামনে ওয়াদা করেছিলো। শয়তানকে সুযোগ না দেওয়ার জন্যই, নিজের অন্তরের পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে, সর্বোপরি নিজেকে হিফাযতের উদ্দেশেই আপনার উচিত নয় নন-মাহরাম কারো বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করা, গল্প-গুজব-আড্ডা দেওয়া।

বস্তুবাদী ধ্যান-ধারণা কিংবা প্রগতিবাদী ভাবনা এসবকে বড্ড অসামাজিক কাজ বলে আপনাকে বোঝাতে চাইবে। কীভাবে আপনি একজন মানুষকে দরোজা থেকে বিদেয় করে দিতে পারেন? কিংবা ফিরে আসতে পারেন কারো দোরগোড়া থেকে? আদতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তো স্পষ্ট করেই বলেছেন, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আমাদের কল্যাণ কীসে, তা আমাদের রব-ই ভালো জানেন; কিন্তু আমাদের রবের আদেশকে পাশ কেটে অন্য কিছুতে, অন্য কোথাও যখন আমরা আমাদের কল্যাণ খুঁজতে যাবো, হতে পারে সেটাই আমাদের জন্য জাহান্নামের চৌরাস্তা।

ছয়.

আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থা, পারিপার্শ্বিক রীতি-নীতিতে আমরা এতটাই বেশরম আর বেখবর হয়ে আছি যে, আমাদের কাজকর্মগুলো কখন যে ইসলামের সীমাতিক্রম করে চলে যাচ্ছে, সেই হুঁশ আমাদের নেই। প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত আমরা হারামের মাঝে ডুবে থাকছি, হারাম দেখছি, হারাম কাজ করছি, হারাম খাচ্ছি, কিন্তু কী আশ্চর্য, আমাদের এতে কোনো চৈতন্য নেই। নেই কোনো ভাবান্তর! আমরা যা করছি তা ইসলামের মাপকাঠিতে কতখানি ঠিক আর কতখানি ভুল, তা ভেবে দেখার, তা পরখ করে নেওয়ার কোনো তাড়না আমরা অনুভব করি না। আমাদের চকৃতকর্মের জন্য আখিরাতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে, সেই ভয়ে আমরা শিউরে উঠি না। যুগের জাহিলিয়াত আমাদের এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে ফেলেছে যে, সমস্ত অধার্মিকতা, সমস্ত অ-ইসলামি কার্যকলাপ, সমস্ত অবাধ্যতা এখন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। আমরা এতে খুব সুন্দর আর পরিপাটিভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

পর্দা এবং দৃষ্টি হিফাযতের গুরুত্ব আর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনের পর থেকে পারতপক্ষে আমাদের সমাজের তথাকথিত বিবাহ-আয়োজনগুলোতে না যাওয়ার চেষ্টা করি সাধারণত। কারণ আমাদের মধ্যে জাহিলিয়াত কতটা শক্তপোক্ত আসন গেঁড়ে বসেছে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই সমস্ত বিয়ে-বাড়ি।

কনে সেজেগুজে স্টেজে বসে আছে আর ফটোগ্রাফাররা নানান ভঙ্গিতে, নানান। এঙ্গেলে কনের ছবি উঠাচ্ছে। কখনো দূর থেকে, কখনো কাছ থেকে। শুধু তো ভাড়া করে আনা ফটোগ্রাফাররাই নয়, আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোনগুলোও এখানে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করে। স্টেজে বসে থাকা কনের শারীরবৃত্তীয় সকল কলা আমাদের ক্যামেরাগুলোতে ধরা পড়ে। এরপর সেসব ছবি আমাদের বদৌলতে বিভিন্ন মনোহর আর মনকাড়া ক্যাপশনে ছড়িয়ে পড়ে ভাচুয়ালে। হাজার-লক্ষ চোখ আর দৃষ্টির ভেতর দিয়ে যেতে যেতে, কনেকে নিয়ে কত হাজার রকমের চিন্তা যে অন্তরগুলোতে দানা বাঁধে সেই হিশেব কোথাও মিলবে না।

আপনি যদি বলতে চান কিংবা আপনাকে যদি বলা হয়–যে ফটোগ্রাফাররা ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে, তারা কেনই-বা এমন কুৎসিত, বিদঘুঁটে চিন্তা করতে যাবে, তাহলে আপনি ভুল করছেন। আপনার মনে রাখা উচিত–এরা পুরুষ, ফেরেশতা নয়। মানুষের ভদ্রস্থ পোশাক কিংবা মার্জিত চেহারা দেখে বিভ্রান্ত হতে নেই। একেবারে। আড়ালে, একান্ত গোপনে, নিবিড় নির্জনতায় তারা যে কল্পনার কোন কোন রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়, ইন্টারনেটের কোন অলি-গলিতে ঘোরাফেরা করে, তা আমি আর আপনি কি জানি? একটা সরল চেহারার ওপাশে কোন কুৎসিত চিন্তা আর লোলুপ দৃষ্টিটা লুকিয়ে আছে, সেই সংবাদ তো আমাদের কাছে পৌঁছায় না। তাই সাবধান হতে হবে আমাকে। আমি কারো বাবা কিংবা ভাই। আমার মেয়েকে স্টেজে বসিয়ে হাজারো পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচাতে, আমার বোনকে হাজারো পুরুষের অসংলগ্ন ভাবনা থেকে রক্ষা করতে, ওয়েডিং ফটোগ্রাফির মতো . এমন জাহিলিয়াতকে, এমন তথাকথিত সামাজিকতাকে সাহস করে রুখে দিতে হবে। সামাজিকতার নামে, আধুনিকতার নামে গজিয়ে ওঠা এই উদ্ভট ফিতনাকে মোকাবেলা করতে হবে আমাদের নারীদেরকেই। তাদের ঠিক করতে হবে– ওয়েডিং ফটোগ্রাফির নাম করে হাজারো পুরুষের খায়েশ পূরণের সামগ্রী তারা হতে চায় কি না? সাহস করে তারা যদি ‘না’ বলতে পারে, যুগের এই জাহিলিয়াত তখন অনেকখানি রুখে দেওয়া সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করি।

সাত.

বাইরে বেরোলে একটা দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। কোনো আঙ্কেল-আন্টি তাদের মেয়েকে নিয়ে হয়তো শপিংয়ে এসেছেন। আঙ্কেলের মুখে চাপ দাঁড়ির রেশ দেখা যায় এবং আন্টি থাকেন বোরকা পরিহিত অবস্থায়, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য–তাদের ষোড়শী কন্যা, যে কিনা বিয়ের উপযুক্ত, তার গায়ে বোরকা-হিজাবের নাম-গন্ধও থাকে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়–বোরকা-হিজাবটাকে তারা হয়তো-বা বয়সের সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয়াদি ভেবে বসে আছেন। তারা হয়তো ভাবেন, বয়স বাড়লেই কেবল গায়ে বোরকা-হিজাব উঠাতে হয়। উর্বর তারুণ্যে, ভরা যৌবনে খোলামেলা চলাফেরাটাই তাদের কাছে কেমন যেন যুক্তিযুক্ত!

আমি যদি জিজ্ঞেস করি, আপনি কি দাইয়ুস হতে চান? আপনি হয়তো-বা প্রথমেই থতমত খাবেন। অবাক হয়ে পাল্টা জানতে চাইবেন, ‘দাইয়ুস কী?’

আপনি জানেন না দাইয়ুস কাকে বলে! কিন্তু নিজের অজান্তে, অগোচরে আপনি হয়তো দাইয়ুস হয়ে বসে আছেন। দাইয়ুস হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যার অধীনস্থ নারীগণ বেপর্দা চলাফেরা করে।[9] অর্থাৎ, আপনি যখন পরিবারের বড় এবং দায়িত্ববান সন্তান, তখন আপনার মা যদি বেপর্দা চলাফেরা করে, কিন্তু আপনি তাতে বাধা

দেন, তাকে সংশোধন না করেন; আপনার বোন যদি বেপর্দা ঘোরাফেরা করে, তাকে যদি আপনি পরিবারের কর্তা হওয়া সত্ত্বেও সংশোধন না করেন; আপনার

স্ত্রী যদি তার মাহরাম নয় এমন পুরুষদের সাথে মেলামেশা করে, বেপর্দা তাদের সামনে যায়, কথাবার্তা বলে এবং তাকেও যদি আপনি সতর্ক না করেন, তাহলে আপনাকে বলা হবে দাইয়ুস। একজন দাইয়ুসের সবচেয়ে বড় শাস্তি হচ্ছে এই সে জান্নাতের খুশবু পর্যন্ত পাবে না, অথচ জান্নাতের খুশবু চল্লিশ হাজার বছরের দূরত্বে থাকলেও পাওয়া যায়![10] চল্লিশ হাজার বছরের দূরত্বে থাকলেও যার সৌরভ নাকে এসে লাগবে, দাইয়ুস ব্যক্তির নাকে সেই সৌরভের কণামাত্রও যখন পৌঁছাবে না, তখন ভাবুন তাকে জান্নাতের সীমানা থেকে কতখানি দূরে রাখা হবে!

দাইয়ুস ব্যক্তির আরেকটা চরম শাস্তি হচ্ছে–কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার দিকে তাকাবেন-ই না।[11] সেদিন এমন অনেক গুনাহগার থাকবে, যাদের দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর রহমতের দৃষ্টি দেবেন এবং তাদের ক্ষমা করে দেবেন; কিন্তু দাইয়ুস, যে তার অধীনস্থ নারীদের পর্দার ব্যাপারে বেখেয়াল ছিলো, যে তাদের বেপর্দা চলাফেরায় কোনো সমস্যা দেখতো না, তার দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাকাবেন পর্যন্ত না! তার রব তার দিকে তাকাবেন না–একজন মুসলিমের জন্য এর চাইতে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে!

আপনি নিজ হাতে গুনাহ কামাচ্ছেন না, কিন্তু আপনার আমলনামায় গুনাহ লেখা হচ্ছে কেবল আপনার অধীনস্থ নারীকুলের বেপর্দা চলাফেরার কারণে। আপনার মনে হচ্ছে আপনি দোষ করছেন না, কিন্তু আপনার দোষ হচ্ছে এই–আপনি পরিবারের প্রধান অভিভাবক হওয়ার পরেও এহেন চলাফেরার জন্য তাদের সাবধান করেননি; বরং তাদের এমন চলাফেরায় আপনি অনুমতি, মৌন সম্মতি ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন–

যারা চায় যে মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। বস্তুত আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।[12]

পর্দা হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দেওয়া ফরয একটা বিধান। ফরযের আবশ্যিকতা এমন যে–এটা অক্সিজেন গ্রহণের মতোই। অক্সিজেন গ্রহণ না করলে যেভাবে আমাদের দেহের মৃত্যু ঘটে, তেমনি আল্লাহর নাযিলকৃত ফরয বিধান ত্যাগ করলে মৃত্যু হয় আমাদের অন্তরের। আর মৃত অন্তরে শয়তান গড়ে তোলে তার শয়তানির ইমারত।

যুগের জাহিলিয়াত এমন অবস্থায় পৌঁছেছে–এখানে পর্দা মানাটাই এখন নতুন জিনিস, পর্দা না করাটাই চিরাচরিত চলে আসা নিয়ম। পর্দা করলে, পর্দা মানলে আপনার চারপাশ থেকে মানুষ বড় বড় চোখ করে তাকাবে যেন আপনি বেশ অদ্ভুত ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী, ভুল করে এই তল্লাটে নেমে পড়েছেন! তাদের সমালোচনাকে, অদ্ভুত চাহনিকে পাত্তা দেওয়ার কোনো দরকার নেই। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গুরাবাদের জন্য সুসংবাদ দিয়ে রেখেছেন।[14] গুরাবা হচ্ছে তারাই, যারা ফিতনার সময়ে সঠিক ইসলামের ওপর দাঁত কামড়ে পড়ে থাকবে। গুরাবার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অপরিচিত। আপনি যখন ইসলামের বিধি-বিধান নিজের জীবনে প্রয়োগ করা শুরু করবেন, আপনার চারপাশের লোকজনের কাছে তা বড্ড অপরিচিত, বড্ড বেখাপ্পা আর বেঢপ লাগবে। বিভ্রান্ত হবেন না। গুরাবা হিশেবে আপনার জন্য সুসংবাদ! তাদের চোখে হোক না নতুন, আমরা তবে গাহি

———
[1] দ্রষ্টব্য–সুরা কাসাস, আয়াত : ২৩-২৪

[2] সুরা কাসাস, আয়াত : ২৫

[3] সুরা মারইয়াম, আয়াত : ১৮

[4] জামি তিরমিযি : ২৭৭৮; সুনানু আবি দাউদ : ৪১১২; মুসনাদু আহমাদ : ২৬৫৩৭–হ্যাঁদিসটির সনদ সহিহ

[5] সুরা নুর, আয়াত : ২৭

[7] সুরা নুর, আয়াত : ২৭-২৮

[8] সুরা আহযাব, আয়াত : ৫৩

[9] শুআবুল ঈমান, বাইহাকি : ১০৩১০; আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, খণ্ড : ৩; পৃষ্ঠা : ১৪৩-হাদিসটির সনদ সহিহ লিগাইরিহি

[10] সহিহুল বুখারি : ৬৯১৪; মুসনাদু আহমাদ : ৬৭৪৫

[11] সুনানুন নাসায়ি : ২৫৬২-হাদিসটির সনদ হাসান।

[13] সুরা নুর, আয়াত : ১৯

[14] সহিহ মুসলিম : ১৪৫; জামি তিরমিযি : ২৬২৯; সুনানু ইবনি মাজাহ : ৩৯৪৬; মুসনাদু আহমাদ : ৩৭৮৪; মুসান্নাফু ইবনি আবি শাইবা : ৩৪৩৬৬

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *