গোখলে, গান্ধিজী ও গোবিন্দবাবু

গোখলে, গান্ধিজী ও গোবিন্দবাবু

মহাত্মা বলে সর্বসাধারণে পরিচিত ও পুজিত হবার ঢের আগে থেকেই গান্ধীজি যে যর্থাথ অর্থে মহান আত্মা, তার পরিচয় এই গল্পে তোমরা পাবে। যিনি এই গল্পের জন্য নায়ক, এক গৌণ চরিত্র, তার নিজের মুখ থেকে এ কাহিনীটি শোনা আমার।

গোবিন্দবাবু সেই সময়ে কলকাতার একজন সাধারণ আপিসের কেরানী। তার আসল নাম অবশ্য গোপন রাখলাম। এখন তিনি বড় পদে প্রতিষ্ঠিত যে তার নাম করলে অনেকেই তাকে চিনতে পারবেন।

বহুদিন আগেকার কথা। গোখলে সেই সময়ে ভারতবর্ষের নেতা। সেই গোখলের কলকাতাবাসের সময়ে তাকে পছন্দসই বাসা খুঁজে দিয়েছিলেন, এই সূত্রে গোখলের সঙ্গে আমাদের গোবিন্দবাবুর ঘনিষ্ঠতা গজায়।

ঘনিষ্ঠতা দিনদিনই দারুণতর হয়ে উঠছিল। কেন না, গোখলের দেশ থেকে যখনই তার আত্মীয়-গোষ্ঠীর কেউ আসে, গোখলে তাঁকে কলকাতা দেখবার ভার গোবিন্দবাবুর ওপর দেন। গোবিন্দবাবুকে গোখলের অনুরোধ রাখতে হয়। অত বড় দেশমান্য ব্যক্তির ভাড়াটে বাড়ি যোগাড় করে দেবার সুযোগ লাভ করে তিনি নিজেকে ধন্য জ্ঞান করেছিলেন, এখন তার দেশোয়ালিদের কলকাতা দেখিয়ে আপনাকে কৃতার্থ বোধ করেন।

তাঁর ফরমাস খাটতে পেলে গোবিন্দবাবু যে আপ্যায়িত হন এটা বোধ করি গোখলে বুঝতে পেরেছিলেন। তাই গোবিন্দুবাবুকে বাধিত করবার সামান্য সুযোগও তিনি অবহেলা করতেন না। যখনই পোরবন, কি পুণা, কি ভুসাওয়াল থেকে কোন অতিথি আসত, গোখলে বলতেন, গোবন্দবাবু ইনকো কলকাত্তা তো কুছ দেখলা দিজিয়ে!

গোবিন্দবাবু অত্যন্ত উৎসাহের সহিত ঘাড় নাড়তেন। কিন্তু সেই অদৃষ্ট পূর্ব্ব অপরিচিত অভ্যাগতকে কলকাতায় দৃশ্য ও দ্রষ্টব্য দেখিয়ে বেড়াতে সেই উৎসাহের কতখানি পরে বজায় থাকত তা বলা কঠিন।

সেই সময়ে গান্ধীজি আফ্রিকা থেকে সবে স্বদেশে ফিরেছেন, তাঁর কীর্তি- কাহিনী সমস্ত শিক্ষিত ভারতবাসীর মনে শ্রদ্ধা ও বিস্ময়ের সঞ্চার করেছে। যদিও আপামর সাধারণের কাছে তার নাম তখন পৌঁছেনি, তবু তাঁর অদ্ভুত চরিত্র, জীবনযাত্রা ও কর্ম-প্রণালীর কথা ক্রমশ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছিল। ভারতবর্ষে ফিরেই গান্ধীজি গুজরাট থেকে কলকাতায় এলেন গোখলের সঙ্গে দেখা করতে।

সেই তাঁর প্রথম কলকাতায় আসা। কাজেই গোখলের স্বভাবতই ইচ্ছা হল গান্ধীজিকে কলকাতাটা দেখানোর। এ কাজের ভার আর কার ওপর তিনি দেবেন? এই কাজের উপযুক্ত আর কে আছে ওই গোবিন্দবাবু ছাড়া? এতএব গোবিন্দবাবুকে ডেকে অনুরোধ করতে তার বিলম্ব হল না।

মোহনদাসকো কলকাত্তা তো দেখলা দিজিয়ে!–শুনে গোবিন্দবাবু কিন্তু নিজেকে এবার অনুগৃহীত মনে করতে পারলেন না। গান্ধীজির পুরো নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। যদিও গোবিন্দবাবুর কানে গান্ধীজির খ্যাতি পৌঁছেছিল, তবু কেবল মোহনদাস থেকে তিনি বুঝতে পারলেন না যে তিনি সেই বিখ্যাত ব্যক্তিটিরই গাইড হবার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তাছাড়া গোখলের কথায় তিনিই সকালে গিয়ে লোকটাকে স্টেশন থেকে এনেছেন–থার্ড ক্লাসের যাত্রী, পরণে মোটা কাপড়)–তাও আবার আধময়লা, পায়ে জুতো নেই, মলিন অপরিচ্ছন্ন চেহারা–এ সব দেখে লোকটার ওপর তার শ্রদ্ধার উদ্রেক হয়নি। সেই লোকটাকে সঙ্গে নিয়ে সারা কলকাতা ঘুরতে হবে ভেবে গোবিন্দবাবুর উৎসাহ উপে যাবার যোগাড়!

কিন্তু কি করবেন? গোখলের অনুরোধ। আগের দিনই তিনি গোখলের দূর সম্পর্কীয় এক আত্মীয়কে কলকাতা দর্শন করিয়েছেন। সে লোকটি গুজরাটের কোন এক তালুকের দারোগা। সে তবু কিছু সভ্য-ভব্য ছিল, হাজার হোক দারোগা তো! কিন্তু এ লোকটা? গান্ধীজির দিকে দৃষ্টিপাত করে গোবিন্দবাবু বিরক্তি গোপন করতে পারলেন না। বোধহয় কোন সিপাই-টিপাই কি দারোয়ানই হবে বোধ হয়! গোভলের আত্মীয়স্বজন, ভাই-বন্ধু-তাঁর প্রদেশের তাবৎ লোকের ওপর গোবিন্দবাবু বেজায় চটে গেলেন। তাদের কলকাতা আসার প্রবৃত্তিকে তিনি কিছুতেই মার্জনা করতে পারছিলেন না।

যাই হোক, নিতান্ত অপ্রসন্নমনে সিপাইকে লেজে বেঁধে গোবিন্দবাবু নগর ভ্রমণে বার হলেন। এই ভেবে তিনি নিজেকে সান্তনা দিলেন যে রাস্তার লোকে এও তো ভেবে নিতে পারে যে, এ তাঁর নিজেরই সেপাই। গোবিন্দবাবু আজ বডি গার্ড সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছেন তাদের এই সাময়িক ভুল বোঝার ওপর কিঞ্চিৎ ভরসা করে তিনি কিঞ্চিৎ আত্মপ্রসাদ পাবার চেষ্টা করলেন।

পরেশনাথ মন্দিরের কারুকার্য্য, সেখানকার মাছের লাল, নীল ইত্যাদি রং বেরং হবার রহস্য, মনুমেন্ট কেন অত উঁচু হয়, কলকাতার গঙ্গা কোন কোন প্রদেশ পেরিয়ে এসেছে, হাওড়া-পুল কেন জলের ওপর ভাসে আর ভাসা পুল কেন যে ডুবে যায় না তার বৈজ্ঞানিক কারণ ইত্যাদি কলকাতা শহরের যা কিছু দ্রষ্টব্য ও জ্ঞাতব্য ছিল লোকটাকে তিনি ভাল করে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন।

ওকে ক্রমশই তার ভাল লাগছিল। এমন সমঝদার শ্রোতা তিনি বহুদিন পাননি। এমন কি কালকের সেই দারোগাটিও এমন নয়। দারোগাটি তবু মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করার প্রয়াস পেয়েছে বলেছে অত বড় মনুমেন্ট কেবল ইটের বাজে খরচ, মানুষ যদি না থাকল ত অত উঁচ করার ফায়দা কি! বলেছে মাছের ঐ লাল, নীল রং সত্যিকার নয়, রাত্রে লুকিয়ে রং লাগিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এই সিপাইটি সে রকম না; তিনি যা বলেন তাতেই ঘাড় নেড়ে এ সায় দেয়। তবে অসুবিধার কথা এই যে কালকের দারোগাটি তবু কিছু ইংরেজি বুঝত, ইংরেজির সাহায্যে তাকে বোঝানো সহজ ছিল কিন্তু এ সিপাই ত ইংরেজির এক বিসর্গও বোঝে না। অথচ হিন্দিতে সমস্ত বিষয়ে বিশদ করতে গিয়ে গোবিন্দবাবুর এবং হিন্দি ভাষায় প্রাণান্ত হচ্ছিল।

গোবিন্দবাবু সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়লেন মিউজিয়ামে গিয়ে। চিড়িয়াখানায় তেমন কিছু দুর্ঘটনা হয়নি, কেন না, জন্তু জানোয়ারের অধিকাংশই উভয়ের কাছে অজ্ঞাতকুলশীলে নয়। ই হাঁথি, বান্দর–এই বলে তাদের পরিচিত করার পরিশ্রম গোবিন্দবাবুকে করতে হয়নি! কিন্তু মিউজিয়ামে গিয়ে বাঁদরের পূর্ব্বপুরুষ থেকে কি করে ক্রমশ মানুষ দাঁড়াল তার বিভিন্ন জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত দেখিয়ে ডারুইনের বিবর্তনবাদ বোঝাতে গোবিন্দবাবুর দাঁত ভাঙবার যোগাড় হল। কিন্তু সিপাইটির ধৈর্য ও জ্ঞান-তৃষ্ণা আশ্চর্য বলতে হবে। গোবিন্দবাবু যা বলেন তাতেই সে ঘাড় নেড়ে সায় দেয়, আর–সমঝাতা হ্যায়, সমঝাতা হ্যায়।

সমস্ত দিন কলকাতা শহর আর হিন্দি বাতের সঙ্গে রেষারেষি করে গোবিন্দবাবু পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। মাঝে মাঝে ছ্যাকরা গাড়ির সাহায্যে নিলেও অধিকাংশ পথ তাদের হেঁটেই মারতে হয়েছিল। ফিরবার পথে গোবিন্দুবাবু স্থির করলেন আর হাঁটা নয়, এবার সোজা ট্রামে বাড়ি ফিরবেন। সারাদিনের ধস্তাধস্তিতে গোবিন্দবাবু কাবু হয়ে পড়লেও সিপাইটির কিছুমাত্র ক্লান্তি দেখা গেল না।

অশ্ব-বাহন ছেড়ে কলকাতায় তখন প্রথম বিদ্যুৎ বাহনে ট্রাম চলছে। গোবিন্দবাবু ট্রামে উঠলেন বটে, কিন্তু সিপাইটি যে তার পাশে বসে এটা তাঁর অভিরুচি ছিল না। যদি চেনাশোনা লোকের সঙ্গে দৈবাৎ চোখাচোখি হয়ে যায়। কিন্তু সিপাইটির যদি কিছুমাত্র কান্ডজ্ঞান থাকে। সে আম্লানবদনে কিনা তার পাশেই বসল। তার আস্পর্ধা দেখে গোবিন্দবাবু মনে মনে বিরক্ত হলেন এবং সংকল্প করলেন আর কখনও গোখলের বাড়ির ছায়া মাড়াবেন না।

তাঁদের মুখোমুখি আসনে একজন ফিরিঙ্গি বসেছিল, তার কি খেয়াল হল, সে হঠাৎ গোবিন্দবাবু এবং সিপাইয়ের মধ্যে যে জায়গাটা ফাঁক ছিল, সেইখানে তার বুটসুদ্ধ পা সটান চাপিয়ে দিল।

গোবিন্দবাবু বেজায় চটে গেলেন। ফিরিঙ্গিটার অভদ্রতার প্রতিশোধ নেবার ইচ্ছা থাকলেও ওর হোকা চেহারার দিতে তাকিয়ে একা কিছু করবার উত্সাহ তাঁর হচ্ছিল না। সিপাইটির দিকে বক্র কটাক্ষ করলেন, কিন্তু তার রোগাপটকা শরীর দেখে সেদিক থেকেও বড় একটা ভরসা পেলেন না। অগত্যা তিনি নীরবে অপমান হজম করতে লাগলেন।

কিন্তু একটু পরে তিনি যে প্রভাবিত দৃশ্য দেখলেন তাতে তার চক্ষু স্থির হয়ে গেল। সিপাইটি করেছে কি, তার ধূলিধূসারিত চরণযুগল সোজা সাহেবের পাশে চাপিয়ে দিয়েছে। বাবাঃ সিপাইটির সাহস তো কম নয়, তিনি মনে মনে তার তারিফ করলেন। সামান্য নেটিভের সুঃসাহস দেখে ফিরিঙ্গিটাও বুঝি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তার ফেরঙ্গ স্বভাব চাড়া দিয়ে উঠল। সে রুক্ষ স্বরে হুকুম করলে- এইও! গোর হঠা লেও!

সিপাইটি কোন জবাবও দেয় না, পাও সরায় না; যেন শুনতেই পায়নি সে।

সাহেব সিপাইয়ের পাজরায় বুটের ঠোক্কর মেরে বলল–এই! তুম! শুনতা নেহি?

প্রতুত্তরে সিপাই পা না সরিয়ে মৃদু একটু হাসল কেবল।

এরূপ অদ্ভুত ব্যাপার সাহেব জীবনে কখনো দেখিনি। সাহেবের হুমকিতে ভয় খায় না, অথচ পদাঘাতের প্রতিশোধ নেবারও চেষ্টা করে না, ভয়ও নেই ক্রোধও নয়–অপমান ও লাঞ্ছনার হাস্যতর এমন সমন্বয়ের সাক্ষাৎ এর আগে সে পায়নি। বিস্ময়ে এবং পরাজয়ে তার স্পর্ধা স্বভাবতই সঙ্কুচিত হয়ে এল। সে এবার গোবিন্দবাবুকে ইংরেজিতে বলল–তোমার বন্ধুকে পা তুলে নিতে বল।

গোবিন্দবাবুর আত্মসম্মানে আগাত লাগল। সেই সামান্য সিপাইটা তাঁর বন্ধু! দস্তরমত রাগ হল তার। তিনি গোবিন্দবাবু, হাকিমের দক্ষিণ হস্ত, আর এই সিপাইটা কিনা তার সমকক্ষ। ফিরিঙ্গির ওপর গোড়া থেকেই তিনি চটেছিলেন, এখন তার এই অমূলক সন্দেহে তিনি অসম্ভব ক্ষেপে গেলেন। দ্বিরুক্তি না করে উঠেই রাগের মাথায় তিনি ফিরিঙ্গিটার নাকের গোড়ায় এক ঘুসি কষিয়ে দিয়েছেন।

সারা ট্রামে হৈ-চৈ পড়ে গেল। ফিরিঙ্গিও আস্তিন গুটিয়ে দাঁড়াল। সেই গাড়িতে হিন্দু স্কুলের জনকতক ছাত্র যাচ্ছিল, তারা গোবিন্দবাবুর পক্ষ নিল। ফিরিঙ্গিটিকে হিড়হিড় করে রাস্তায় নামিয়ে তুলো ধুনাবার উদ্যোগ করল তারা।

যে সিপাইটি নিজের লাঞ্ছনায় এতক্ষণ নিরুদ্বিগ্ধ ও নির্বিকার ছিল, সাহেবের প্রতি অত্যাচারের সম্ভাবনায় সে এবার ব্যস্ত হয়ে Oh my boys বলে ছেলেদের সমোধন করে বক্তৃতা শুরু করে দিল। সেই বক্তৃতার মর্ম হচ্ছে সাহেবের কোন দোষ নেই। তাকে মারবার কোন অধিকার নেই আমাদের। কারকেই মারবার আমাদের অধিকার নেই। মানুষ যেন মাকে আঘাত না করে। তোমরা অন্যায় আচরণকারীকে ক্ষমা করতে শেখ, ভালবাসতে শেখ। ভালবাসার দ্বারাই অন্যায়কে জয় করা যায়। অহিংসা পরম ধর্ম–ইত্যাদি ইত্যাদি।

সিপাইয়ের মুখে ইংরেজির চোস্ত বুলি শুনে গোবিন্দবাবু তো হতভম্ব। এ যদি এমন চমৎকার ইংরেজি জানে তবে এতক্ষণ তা বলেনি কেন? তাহলে কি তাকে সারাদিন এমন হিন্দি কসরৎ করে এমন গলদঘর্ম হতে হয়? আহা, আগে জানলে ডারউইনের বিবর্তনবাদ কত ভাল করেই না একে বোঝান যেত। ছেলেরা নিরস্ত হল কিন্তু গোবিন্দবাবুর উন্মা যায় না। তিনি বললেন–ও কেন আমাদের পাশে বা তুলে দিল?

ও আরামের জন্য পা তুলেছে, আমিও আরাম পেয়েছি, পা তুলে দিয়েছি। শোধ-বোধ হয়ে গেছে।

আমি তো সেজন্য ওকে কিছু বলছি না।

লাঞ্ছনার হাত তেকে রক্ষা পেয়ে, এই অদ্ভুত লোকটির কথায় ও ব্যবহারে সাহেব চমৎকৃত হয়ে গেছল। সে সিপাইটির করমর্দন করে ধন্যবাদ জানিয়ে চলতি একজনের মোটরে চড়ে চলে গেল। সিপাইটি গোবিন্দবাবু ও ছেলেদের হয়ে সাহেবের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।

ঠেঙাবার এমন দুর্লভ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় গোবিন্দবাবু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। তিনি সারা পথ আর বাক্যব্যয় করলেন না, সিপাইয়ের দিকে তাকালেন না পর্যন্ত। ভীতু কোথাকার। যদিও ভাল ইংরেজি বলতে পারে তবু তার কাপুরুষতাকে তো মার্জনা করা যায় না। তাকে গোখলের আস্তানায় পৌঁছে দিয়ে তিনি সটান বাড়ি ফিরলেন। সিপাইয়ের সঙ্গে বিদায়সম্ভাষণ পর্যন্ত করলেন না।

পরদিন গোখলের সঙ্গে দেখা হতেই তিনি বললেন–আপনার সিপাই কিন্তু খাসা ইংরেজি বলতে পারে।

সিপাই কৌন? আরে মোহনদাস। তুমি সিপাহি বন গিয়া। বলে গান্ধীজীকে ডেকে গোখলে একচোট খুব হাসলেন। গান্ধীজীও হাসতে লাগলেন।

এত হাসাহাসির মর্মভেদ করতে না পেরে গোবিন্দবাবু অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন, কিন্তু তার পরমুহূর্তেই যখন রহস্যভেদ হল, সিপাহির যথার্থ পরিচয় তার অজ্ঞাত রইল না, তখন তিনি আরো কত বেশি অপ্রস্তুত হয়েছিলেন তা অনুমান করতে পার। বোধহয় পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন মানুষ এতখানি অপ্রস্তুত হয়নি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *