৫০. শিলং পাহাড়ে আসার পর

৫০.

চুপচাপ শুয়ে ছিল সেঙাই। ঘুম আসছে না।

শিলং পাহাড়ে আসার পর দুটো দিন পার হয়ে গেল। এই দু দিনে আদিম বুনো মনের বয়স যেন হঠাৎ অনেক বেড়ে গিয়েছে। কাল সমস্ত দিন চেঁচামেচি করেছে সেঙাই, কেঁদেছে, নিরুপায় আক্রোশে অশ্রাব্য গালাগালি করেছে, নিজের চুল মঠো মুঠো ছিঁড়ে ফেলেছে। খিমচে কামড়ে বসন্তকে ক্ষত বিক্ষত করেছে। কিন্তু আজ একেবারে চুপচাপ, নিঝুম পড়ে রয়েছে।

সেঙাই ভাবছে। তার ভাবনাটা সোজা সহজ খাতে বইছে না। চিন্তাগুলোও শৃঙ্খলাবদ্ধ নয়। তার ভাবনাগুলোকে গোছগাছ করে নিলে মোটামুটি এরকম দাঁড়ায়।

কোথায়, কত দূরে, ছয় আকাশ ছয় পাহাড়ের ওপারে তাদের ছোট গ্রাম কেলুরি পড়ে রইল। তাদের জোহেরি কেসুঙ, আঁকাবাঁকা টিজু নদী, পাহাড়-জলপ্রপাত-মালভূমি, চড়াই এবং উতরাই, সেই অরণ্য-আদিম জীবজগৎ–সেখানে কি আর কোনোদিনই ফেরা যাবে? শত্রুপক্ষের জোয়ানী মেহেলীকে কি বিয়ে করা সম্ভব হবে? নানকোয়া গ্রামের বাঘমানুষ মেজিচিজুঙের সঙ্গে হয়তো এই সাঙসু ঋতুর রাত্রিতে মেহেলীর বিয়ে হচ্ছে। হয়তো সালুয়ালাঙ এবং নানকোয়া বস্তির শয়তানগুলো বিয়ের উৎসবে বাঁশের চোঙা ভরে আকণ্ঠ রোহি মধু গিলে, সাদা শুয়োরের মাংস চিবুতে চিবুতে হস্লা করছে। নাচ-গান-বাজনা এবং উল্লাসে সালুয়ালাঙ গ্রামটা মেতে উঠছে। অসহ্য, অসহ্য। বুকের মধ্যে রাগ এবং যন্ত্রণা মোচড় দিতে থাকে।

মেহেলীর কথা ভাবতে ভাবতে চিন্তাটা হঠাৎ অন্য দিকে ঘুরে গেল। সেঙাই ভাবতে লাগল, তাদের গ্রামটাকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছে সাহেবরা। ঘরে ঘরে আগুন লাগিয়েছে। জোয়ানদের বন্দুক দিয়ে খতম করেছে। গর্ভিণী জামাতসুকে পেটে লাথি মেরে সাবাড় করেছে। বুড়ি বেঙসানুকে বুকে গুলি মেরে শেষ করেছে। কেলুরি গ্রামের আর তাদের কত বড় বনেদি বংশের ইজ্জত নষ্ট করেছে। নানকোয়া আর সালুয়ালাঙ বস্তির জোয়ানরা মেহেলীকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ভাবতে ভাবতে ফুঁসতে লাগল সেঙাই, চোখের তারাদুটো জ্বলতে লাগল। না না, কাউকে সে রেহাই দেবে না।

ছোট্ট সেল। একপাশে টিমটিমে তেলের লণ্ঠন।

ওধারে গরাদের পাশে বসে ছিলেন বসন্ত। নিজের ভাবনা এবং জীবনধারায় পরিবর্তন ইত্যাদি নানা বিষয়ে চিন্তা করছিলেন। তার দৃষ্টি হঠাৎ সেঙাই-এর ওপর এসে পড়ল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। সেঙাই আসার পর থেকেই একটা নতুন ভাবনা অস্পষ্টভাবে মনের মধ্যে উঁকি মারছিল। এই মুহূর্তে, হঠাৎ সেটা অত্যন্ত স্পষ্ট হল, রাশি রাশি আলোক কণিকার মতো মনের ওপর ছড়িয়ে পড়ল।

বসন্ত ভাবলেন, আসমুদ্রহিমাচল এই বিশাল, বিস্তীর্ণ ভারতবর্ষ। কোটি কোটি মানুষের এই দেশের আত্মা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় জ্বলছে। সমতলের শহর বন্দরের সুসভ্য মানুষই কেবল নয়, অরণ্যচারী এবং পাহাড়ী আদিবাসীরাও নতুন স্বপ্নে উন্মুখ হয়ে উঠেছে। এদের শিক্ষাদীক্ষা নেই, সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব নেই, শুধুমাত্র অফুরন্ত প্রাণাবেগ এবং উন্মাদনা সম্বল করে স্বাধীনতার লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

বসন্ত ভাবতে লাগলেন, সেঙাইকে শিক্ষাদীক্ষা এবং দেশকাল সম্পর্ক প্রয়োজনীয় ধারণা দেওয়া একান্ত উচিত। অফুরন্ত প্রাণপ্রাচুর্যের সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষা-জ্ঞানের মিলন ঘটলে এই সব আদিম মানুষ দেশকে নতুন শক্তি দেবে।

বসন্ত স্থির সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছুলেন, সেঙাই নামে ভারত সীমান্তের এক খণ্ড পাথরে তিনি অপরূপ ভাস্কর্য রচনা করবেন।

স্তব্ধ, নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে রয়েছেন বসন্ত। লণ্ঠনের টিমটিমে আলোতে তাকে একটা ধাতুমূর্তির মতো দেখাচ্ছে।

.

৫১.

ভোর রাত্রির দিকে সেলের তালা খোলার শব্দ শোনা গেল। বসন্তের তন্ত্ৰামত এসেছিল। কম্বলের মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে ছিল সেঙাই। ঘুম আসেনি।

হঠাৎ সেলের দরজাটা খুলে গেল। নিমেষের মধ্যে একটা ভারী দেহ ছিটকে এসে পড়ল সেঙাই-এর ওপর। বাইরে থেকে সিপাইরা ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারপরেই আবার দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

সেঙাই চিৎকার করে উঠল, ইজা হুতা! আমার ঘাড়ে এসে পড়েছিস শয়তানের বাচ্চা! একেবারে জানে লোপাট করে দেব। বর্শা দিয়ে ফুড়ে ফেলব।

মানুষটা জবাব দিল না, চুপচাপ পড়ে রইল।

ডান হাতের জখমী কবজিটা যন্ত্রণায় টাটিয়ে উঠেছে। কাতরাতে কাতরাতে একপাশে সরে বাঁ হাত দিয়ে লোকটার গলা খিমচে ধরল সেঙাই। সঙ্গে সঙ্গে আর্তনাদ শোনা গেল, আঃ-আঃ-আঃ–

সেঙাই-এর চেঁচামেচিতে ধড়মড় করে উঠে বসেছিলেন বসন্ত। হামাগুড়ি দিয়ে লণ্ঠন হাতে সামনে এগিয়ে এলেন।

লোকটার মুখে আলো পড়তেই সেঙাই চমকে উঠে। শেষ রাতের সঙ্কীর্ণ, নিস্তব্ধ সেলটাকে শিউরে দিয়ে সে চিৎকার করে উঠল, তুই, তুই মাধোলাল! এই মাধোলাল, তোর কী হয়েছে? শয়তানের বাচ্চা, কথা বলছিস না কেন?

সেঙাই-এর স্ফুটনোম্মুখ মনে কতকগুলো ছায়া নড়াচাড়া করতে লাগল। কোহিমা শহর থেকে ডিমাপুরগামী সেই আঁকাবাঁকা সড়ক, তার পাশে সমতলের বেনিয়াদের বাজার, তেল লবণ-চাল, মোষের শিঙ, বাঘ-হরিণের ছাল, নানা রঙের নানা আকারের মনিহারী জিনিসের ছড়াছড়ি। তার মধ্যে বাঁশের মাচানে বসে থাকত মাখোলাল। রানী গাইডিলিওর গল্প বলত, সমতল দেশের গল্প, গান্ধিজি নামে একটি মানুষের আজব কহিনি বলে সবার তাক লাগিয়ে দিত।

সেই মাধোলাল! তাজ্জবের ব্যাপার। শিলং শহরের জেলখানায় তার সঙ্গে দেখা হবে, এ কথা কি জানত সেঙাই? না, কস্মিনকালে ভেবেছিল?

সেঙাই আবার ডাকল, এই মাধোলাল, শোন না, আমার দিকে তাকা।

নির্জীব গলায় মাধোলাল আর্তনাদ করল, আঃ-আঃ-আঃ–

হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠল সেঙাই, তুই তো এখানে আঃ-আঃ–করছিস! কোহিমায় তোর দোকানটা যে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রামখোর বাচ্চারা! শুনলি রে শয়তান, তোর দোকানে কিছু নেই, সব লোপাট করে দিয়েছে।

চোখের পাতা দুটো অতি কষ্টে মেলল মাধোলাল। রক্তাভ, ঘোর ঘোর চোখ। জড়ানো বিকৃত গলায় বলল, কে? কখন এলি? আয় বাপ বুধোলাল–

দাঁতমুখ খিঁচিয়ে সেঙাই গর্জে উঠল, আহে ভু টেলো! আমাকে চিনতে পারছিস না রে ধাড়ি টেফঙ! আমি তো সেঙাই। সারুয়ামারুর সঙ্গে তাদের দোকানে গিয়েছিলাম। তুই বানী গাইডিলিওর গল্প বলেছিলি। আসান্যুদের সদ্দার গান্ধিজির গল্প বলেছিলি। মনে পড়ছে না তোর! ইজ হুকুঙ তা।

চোখের পাতা দুটো ভারী হয়ে বুজে আসছে। কোনোক্রমে অর্ধেক চোখ মেলে তাকাল মাধোলাল। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর অস্পষ্ট গলায় নাগা ভাষায় বলতে লাগল, বড় দরদ হচ্ছে। সায়েবরা মাজায় বন্দুকের গুলি করেছিল। দাওয়াই দেয়নি। আঃ-আঃ-আঃ–

শেষ পর্যন্ত আর কথাগুলো শোনা গেল না। একটানা গোঙানি শুরু হল।

এতকাল নাগা পাহাড়ে কাটিয়েছে। আজমিড় কি মাড়োয়ারের সেই দেহাতি গ্রাম এবং মাতৃ ভাষাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছে মাধোলাল, নাগা ভাষাতেই সে কথা বলে।

সেঙাই চেঁচিয়ে উঠল, সায়েরা তোকে ছুঁড়েছে, রামখোর বাচ্চারা আমাদেরও খুঁড়েছে। ওদের সব কটাকে খতম করব। বলতে বলতে মাধোলালকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। একটু পর মাধোলালকে ছেড়ে বসন্তর দিকে তাকাল সেঙাই। বলল, হুই যে। তোকে মাথোলালের কথা বলেছিলাম, এই সেই মাধোলাল। সায়েব শয়তানরা ওকে ছুঁড়েছে।

বুঝেছি। লণ্ঠনটা নিয়ে মাথোলালের ওপর ঝুঁকে পড়লেন বসন্ত। তলপেট, কোমর, এমন। কি উরু পর্যন্ত অস্বাভাবিক ফুলে রয়েছে। কোমরের কাছে একটা ক্ষতমুখ। লালচে থকথকে রস গড়িয়ে আসছে। পাটকিলে রঙের পচা মাংস থেকে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। দেখতে দেখতে শিউরে উঠলেন বসন্ত। আতঙ্কে চোখ দুটো বিস্ফারিত হল তাঁর। গ্যাংগ্রিন। কী বীভৎস! কী ভয়ানক!

সেঙাইও দেখছিল। মাধোলালের কোমরে ক্ষত দেখতে দেখতে অনেক দিন আগে সালুয়ালা গ্রামের খোনকের কথা মনে পড়ল। সেদিন খোনকের বুকে বিরাট ক্ষত দেখে হিংস্র উল্লাসে মনটা ভরে গিয়েছিল, কিন্তু এই মুহূর্তে মাধোলালের দগদগে ঘা দেখতে দেখতে কী এক দুর্বোধ্য এবং অসহ্য বেদনায় শিরাস্নায়ুগুলো পাকিয়ে পাকিয়ে ছিঁড়ে পড়তে লাগল। হৃৎপিণ্ডটাকে দলে-মুচড়ে তীব্র, অদম্য কান্নার বেগ গলার ভেতর থেকে ছুটে আসতে চাইল।

বিড়বিড় করে মাথোলাল বলল, সায়েবরা আমার দোকানটা ভেঙে দিল। আমি তো কোনো দোষ করিনি। খালি রানী গাইডিলিও আর গান্ধিজির গল্প বলেছি পাহাড়ীদের কাছে। বুঝলি বুধোলাল, বাপ আমার, খবদ্দার হুই পাহাড়ে যাবি না। নাগা পাহাড়ে পাপ ঢুকেছে। সীয়ারাম, সীয়ারাম। আঃ-আঃ-আঃ–

গোঙাতে গোঙাতে থেমে গেল মাখোলাল। ঠোঁট দুটো একটু একটু নড়ল, মুখটা হাঁ হয়ে রইল। কোটরের মধ্যে চোখ বুজে রয়েছে। একসময় সমস্ত শরীর নিস্পন্দ হয়ে গেল তার।

বাঁ হাত দিয়ে মাধোলালের কাঁধে কঁকানি দিল সেঙাই। বলল, শোন মাখোলাল, তোর কথামতো আমি কাজ করেছি। সায়েবদের সঙ্গে আমাদের বস্তির লড়াই হয়েছে। রানীর খোঁজে শয়তানরা গিয়েছিল আমাদের বস্তিতে। আমি তাদের মারিনি। তুই বারণ করেছিলি। ওরাই আমাদের বন্দুক দিয়ে খুঁড়েছে, ঘরে ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। অনেক সয়ে সয়ে কোহিমার বড় ফাদারকে বর্শা হাঁকড়ে ছিলাম। কী করব বল, ঠাকুমাকে আর জামাতসুকে সাবাড় করলে ওরা। মেজাজটা বিগড়ে গেল কি-না।

মাধোলাল জবাব দিল না, তেমনি নিথর পড়ে রইল।

বসন্ত বললেন, মাধোলাল বুঝি কোহিমাতে অনেকদিন ছিল?

হু-হু, অনেক দিন। আমি মাস কয়েক আগে ওকে দেখেছি। আমাদের বস্তির সারুয়ামারু, বুড়ো নড্রিলো, আমার বাপ সিজিটো–সবাই ওর দোকান থেকে নিমক নিত। মজাদার গল্প বলত মাথোলাল। কথা শেষ হলেই বলত, সীয়ারাম সীয়ারাম। তাই না রে মাথোলাল? বলতে বলতে মাধোলালের গায়ে হাত পড়তেই সেঙাই চমকে উঠল। দেহটা ভীষণ ঠাণ্ডা, হিমাক্ত। সেবার সালুয়ালা গ্রামের খাদে পড়ে গিয়েছিল সেঙাই। মেহেলী না বাঁচালে খাদের মধ্যে মরে থাকতে হত। সেই সাতকি রাত্রিতে হিমাক্ত দেহে মৃত্যুর লক্ষণ বুঝতে পেরেছিল সেঙাই। মরে গেলে কিংবা মরতে বসলে মানুষের দেহ বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

অপরিসীম আতঙ্কে সেঙাই চিৎকার করে উঠল, দ্যাখ দ্যাখ, মাধোলালটা কেমন ঠাণ্ডা মেরে গেছে।

ঠাণ্ডা মেরে গেছে। গলাটা কেঁপে গেল বসন্তর। একবার মাথোলালের গায়ে হাত দিলেন। তারপর তড়িৎগতিতে হাতখানা তার নাকের সামনে আনলেন। অনেকক্ষণ পর সন্দেহ ঘুচল। নাঃ, নিশ্বাস পড়ছে না।

মাথাটা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ভগ্ন, দুর্বল গলায় বসন্ত বললেন, মাধোলাল নেই।

নেই! এই তো রয়েছে মাধোলাল! আহে ভু টেলো! কদর্য মুখভঙ্গি করল সেঙাই।

মাধোলাল মরে গেছে।

মরে গেছে!

নির্নিমেষ, বিমূঢ় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ মাথোলালের দেহটার দিকে তাকিয়ে রইল সেঙাই। তারপর হঠাৎ একটা প্রবল কান্নার তোড় বুকটাকে চুরমার করে গলা ফাটিয়ে হু-হু–করে বেরিয়ে এল। মাধোলালের বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সেঙাই। ফুলে ফুলে, কেঁপে কেঁপে কাঁদতে লাগল। তার চোখ থেকে নোনা জল ঝরে ঝরে মাথোলালের মুখে মাখামাখি হতে লাগল।

সেঙাই-এর মাথার ওপর হাত রাখলেন বসন্ত।

কোহিমা পাহাড়ে উদ্দেশ্যহীনভাবে, এমনকি নিজের অজান্তে সেঙাইকে এক নতুন জীবনের কথা শোনাবার ভার নিয়েছিল মাধোলাল। সেই মাধোলাল আজ মারা গেল। সেঙাই এর জীবনে তার ভূমিকা শেষ হল।

শিলং পাহাড়ে সেঙাইকে আর এক ব্যাপক, বিপুল এবং মার্জিত জীবনের শিক্ষা দেবার দায়িত্ব সজ্ঞানে নিয়েছে বসন্ত। মাধোলালের কাছ থেকে বসন্তর কাছে এই দায়িত্ব হস্তান্তর সেঙাই-এর সম্পূর্ণ অজান্তেই ঘটল।

হাউ হাউ শব্দ করে সেঙাই কাঁদছে। চুল ছিঁড়ছে। মাথোলালের দেহটাকে আঁচড়াচ্ছে, কামড়াচ্ছে।

সেঙাই–সে বন্য এবং হিংস্র। হত্যা কিংবা মৃত্যু তার কাছে বিচলিত হবার মতো ঘটনাই নয়। জীবনের সবরকম ভীষণতায় সে অভ্যস্ত। তবু মাধোলালের মৃত্যুতে সে কাঁদছে। লালসা, প্রতিহিংসা, আক্রোশ, কাম, তীব্র রতিবোধ–আদিম মানুষের উগ্র প্রবণতাগুলো এই মুহূর্তে তার মন থেকে মুছে গিয়েছে। একটি সুকুমার বৃত্তি তার স্ফুটনোন্মুখ চৈতন্যকে ভরে রেখেছে। সেটি হল মমতা, এবং মমতার সঙ্গে অপরিসীম বেদনা। বাইরে গাঢ় কুয়াশা জমেছে। পাহাড়ী চক্ররেখা ঘিরে সেই কুয়াশা স্তরে স্তরে তুলোর মতো ঝুলছে।

.

সেঙাই-এর মনে বেদনা ও মমতার জন্ম হল।

সেঙাই-এর আদিম জীবন শেষ হল।

[প্রথম পর্ব সমাপ্ত]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *