১. প্যারিসের অরলি এয়ারপোর্টে

হ্যাভ দিস্ ওয়ান অন্ মি

০১.

প্যারিসের অরলি এয়ারপোর্টে প্রাগ থেকে এসে ক্যারাভেস্তাল প্লেনটি সময়মতো নামল। একটি বেঁটে এবং মোটাসোটা লোক নামল অন্য যাত্রীদের সঙ্গে। একটি কালো রঙের জীর্ণ ব্রীফকেস তার হাতে।

মোনাথান কেইন লোকটির নাম। ওর একটি দুকামরার অফিস আছে প্যারিসের রু পল সেজা রাস্তায় এবং ওর পাসপোর্টটি আমেরিককান। নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের গ্যালারী গুলোতে প্রাগ থেকে ভালো কাঁচের জিনিষ এনে রপ্তানি করা ওর কাজ। ও প্রাগে যায় এক সপ্তাহ বাদে বাদে। চেকোশ্লোভাকিয়ার কর্তাদের বৈদেশিক মুদ্রা বেজায় দরকার তাই ওর ব্যবসায়ে কর্তারা খুবই খুশি।

কেইন একটি ট্যাক্সিতে উঠল এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে এবং রু রয়্যালে যেতে বলল ড্রাইভারকে। চারদিক দেখতে লাগল ট্যাক্সিতে বসেও খুবসতর্কভাবে। অন্য কোনো গাড়ি বা ট্যাক্সি ওকে অনুসরণ করছে কিনা তা লক্ষ্য রাখল ও চলতে চলতে।

বিশেষ একটি কারণ ছিল কেইনের এই সতর্কতার। কাঁচ আমদানীই ওর একমাত্র কাজ নয়। ও একজন বিশ্বস্ত সংবাদবাহক প্যারিসের সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সির। লৌহ যরনিকার ওপারের.গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ওর কাজ। গুপ্তচরদের ওপর নজর রাখা, তাদের খবর দেওয়া নেওয়া যাতে তাদের আসল পরিচয় প্রকাশ না পায় এবং তারা ঠিকমতো কাজ করে। ও এবার বিশেষ দুঃসংবাদ এনেছে প্রাগ থেকে। ও পারতপক্ষে দেখা করে না সি. এ. বির কর্তা যে প্যারিস বিভাগের সঙ্গে যুক্ত সেই জন ডোরীর সঙ্গে। ওর হয়তো জান চলে যাবে ওকে যদি কেউ ডোরীর সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দেখে। ডোরীর সঙ্গে দেখা না করে কোনো উপায় নেই ওর পরিস্থিতি এমন। ওর এত সাবধানতা তাই ট্যাক্সিতে উঠেও।

একটু আশ্বস্ত বোধ করল তাই কেইন। ওকে কেউ ধাওয়াকরছে বলে মনে হয় না কারণ পেছনে গাড়ির ভিড়।

কেইন রু রয়্যালে পৌঁছাল আধঘণ্টা বাদে। একটি শৌখিন কাঁচের দোকানে ঢুকল ও ট্যাক্সি থেকে নেমে। ওকে দেখে একটু হাসল একজন কর্মচারী। দরজা বন্ধ করল কেইন একটি ছোট্ট অফিসঘরে ঢুকে। কথা বলছে টেলিফোনে জ্যাক ফয়। মেয়েলী চেহারার জ্যাক যেন তরুণ।

গায়ে নীল ব্লেজার এবং মাথায় রঙিন খড়ের টুপি পরল কেইন তাড়াতাড়ি নিজের জ্যাকেট খুলে ফেলে। একটি গলিতে এসে পড়ল ও ব্রিফকেস হাতে নিয়ে অফিসের পেছনের দরজা খুলে। জোসেফের রেস্তোরাঁয় যেতেবলল ড্রাইভারকে। তারপররুজাকো ধরে হেঁটে এসেএকটিট্যাক্সি ধরে।

রেস্তোরাঁর মালিক জোসেফ ক্ৰেভরে ওকে দেখে খুশি হয়ে হাত মেলাল ছোট বারটিতে ও যখন ঢুকল। তারপর ওকে নিয়ে গেল দোতলার একটি ছোটো প্রাইভেট ডাইনিং রুমে। জানলায়। পর্দা রয়েছে ঘরটিতে। আর রয়েছে খাবারের টেবিল যাতে দুজনে খেতে পারে।

কেইন খাবারের অর্ডার দিল কুশল প্রশ্ন শেষ হতেই। ও যে খুবই শৌখিন তা বোঝা গেল ওর খাবার এবং মদ নির্বাচনে।

 কেইন অধীর হয়ে ঘড়িতে দেখল পৌনে একটা। আমার বন্ধু এলে সোজা ওপরে নিয়ে এসো ও বলল। ক্ৰেভরে বেরিয়ে গেল সায় দিয়ে।

কেইন একটা সিগারেট ধরাল গম্ভীর হয়ে। ভক্কা মার্টিনির বোতল রেখে গেল একজন ওয়েটার এসে। চুমুক দিল তাতে কেইন। এইসময় জন ডোরী দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল।

ঊনচল্লিশ বছর কাজ করেছে ডোরী প্যারিস আমেরিককান এমবাসীতে। এখন ও বিভাগীয় পরিচালক সি. আই. এর। ছোটোখাটো দেখতে। চোখে চশমা, ছেষট্টি বছর বয়স। ব্যাংকারের মত দেখতে। যে সুদক্ষ কর্মী সংগঠন রাশিয়ার গুপ্তচর বিভাগের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই চালাচ্ছে, ডোরী যে তারই চতুর এবং নির্মম সর্বেসর্বা তা বোঝার কোনো উপায় নেই।

দরজা বন্ধ করতে করতে বলল ডোরী, হ্যালো জন ভালোই দেখাচ্ছে তোমাকে।

তোমার যদি তাই মনে হয় এবং সেটা যদি সত্যি হত তাহলে ভালই হত।

ডোরীর পছন্দসই পানীয় দিয়ে গেল ওয়েটার এসে। ডোয়ী চেয়ার টেনে নিয়ে বসল ওয়েটার চলে যেতে। ও জিজ্ঞেস করল, কিছু ঘটনা ঘটেছে কি?

ঘটনা ঘটেছে, ফাঁস হয়ে গেছে ওয়ারদিংটনের পরিচয়।

ওয়ারদিংটন যে ছিল তোমার প্রাগের এজেন্ট।

ইংরেজ অ্যালেক ওয়ারদিংটন, প্রাগে দশ বছর রয়েছে একটি চেক মেয়েকে বিয়ে করে। ইংরাজী শেখায় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের। আমরা ওকে খরিদ করি তিন বছর আগে। ওর বেজায় টাকার খাই। এটা অবশ্য সকলেরই আছে। কার যে নেই তা বলা যায় না। আমরা বেনে সুইস ব্যাঙ্কে জমা দিই ওরটাকা। ও জমিয়েছে প্রায় ষাট হাজার ডলার। ওকাজ করে টাকা জমিয়েছে কারণ ও এই পর্যন্ত যে টাকা জমিয়েছে তার সবটাই ওর দরকারী। যদিও কোনো সঠিক প্রমাণ নেই, এর কারণ ও চালে ভুল করেছে। ও বেজায় ঘাবড়ে গেছে, কারণ সন্দেহের চোখ পড়েছে ওর উপর নাহলে হয়তো ও ধাপ্পা দিয়েও চালাতে পারত। ও এখন পালিয়ে এসে টাকা খরচ করতে চায় কারণ জমানো টাকার কথা ভেবে ও এখন পাগল হয়ে গিয়েছে। ও মতলব আঁটছে এখন পালাবার। ভয়ের চোটে ও একেবারে ল্যাজে গোবরে হয়ে আছে। আমাদের পাঠাতে হবে এখন। ওর বদলী লোক।

খাবার চলে এল ইতিমধ্যে। কোনো কাজের কথা হল না খেতে খেতে। ডোরী তারপর বলল, আমার কোনোদিনই বিশেষ সুবিধের লোক বলে মনে হয়নি ওয়ারদিংটনকে ওর জায়গায় নিশ্চয় অন্য লোক পাওয়া যাবে।

আমি ঈর্ষা করতে পারছি না কে যাবে কারণ বেজায় কঠিন ওখানকার অবস্থা, ওখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়ে এসেছে রাশিয়ান সিকিওরিটির একটি লোক, তার নাম মালিক।

মালিক এখন ওখানে, ও ওদের অন্যতম সেরা এবং দুর্দান্ত বিপজ্জনক লোক।

ওর জন্যেই তো পালাতে চায় ওয়ারদিংটন ঘাবড়ে যুবড়ে।

 পারবে কি পালাতে ওয়ারদিংটন।

 ও চেষ্টা করবে, তবে মনে হয় না যে ও পালাতে পারবে।

 চেষ্টা করবে ও কবে নাগাদ?

এখন তো সাহস সঞ্চয় করছে, তাই এটা বলা মুশকিল, তবে আমার ধারণা যে পুলিশ ওকে ধরবেই ও পালাবার চেষ্টা করলে।

আমাদের একটি মেয়ে এজেন্ট ওখানে আছে না?

মেয়েটির নাম মালা রীড।

 ও কাজের মেয়ে না।

 মাঝেমধ্যে ও কাজে লেগেছে।

ওয়ারদিংটন সব বলে দেবে যদি ওকে চাপ দেওয়া হয়।

হ্যাঁ তা নিশ্চয়ই বলে দেবে।

মুশকিল হবে তা হলে বল তোমার আর মালার।

 হ্যাঁ সেটা তো বেজায় মুশকিলের কথা।

প্রাগে তোমার যোগাযোগ নষ্ট হোক সেও চাই না এবং মালাকেও খোয়াতে চাই না। কিছু করতে হবে হয়তো ওয়ারদিংটনকেই।

ওকে মেরে ফেলাই আমাদের একমাত্র উপায়। আমার আর মালার মেয়াদও শেষ যদি মালিক ওকে একবার হাতে পায়।

এক সময় লোকটা কাজ দিয়েছে এবং আমরাও টাকা দিয়েছি তাই আমি তা হতে দেব না।  তড়িঘড়ি করতে হবে যা করার তা তাড়াতাড়ি।

তাতেও হয়তো দেরি হয়ে যাবে যদি আগামী রাতের মধ্যে করতে হয়।

আমার কাছে আছে বোধহয় ওর ঠিকানা। ও আছে তোত বউকে নিয়ে। আমি দেখছি, আচ্ছা ঠিক আছে। প্রাগের ধারে কাছে যেও না এখন তুমি। তোমার কি মনে করার কোনো কারণ আছে যে মালিক তোমায় সন্দেহ করে।

না না ওদের পেয়ারের লোক আমি, ডলার দিয়ে আমি বরং

মালিক অতি সাংঘাতিক লোক তাই অত নিশ্চিন্ত থেকো না।

আমার কোনো বিপদ নেই যদি আমি ওয়ারদিংটনের মুখ বন্ধ করতে পারি।

বন্ধ ওর মুখ থাকবেই। কাকে এখন পাঠাই। ল্যাটিমার ভাষা জানে জ্যাক। সেই কারণে ওকে পাঠানো ভাল। গত দু বছর ও ইন্টারন্যাশনাল ক্যালকুলেটর্সে চাকরী করছে। তাই ওকে সহজেই প্রাগে বদলী করতে পারি। বল তুমি কি বলবে।

হা বলতাম যদি এখানে মালিক না থাকত। ঠিক চিনে ফেলবে মালিক ওকে। জ্বলে গেছে যে লালবাতি। তোমরা নতুন কাউকে পাঠাবে ওয়ারদিংটনের জায়গায় ওরা তা জানে। সন্দেহ করবে ওরা নতুন লোক দেখলেই।

ভাবতে হবে না সে তোমায়। পারব তো ওর সঙ্গে কাজ করতে।

 নিশ্চয় পারবে।

সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছি ঠিক আছে। কিচ্ছুটি করোনা আমি না বলা অবধি। দুহপ্তার মধ্যে ল্যাটিমারের সঙ্গে যোগাযোগ করব প্রাগে ফিরে, যদি সবকিছু ভালোয় ভালোয় উৎরোয়। আমাদের দুজনেরই ওকে দিয়ে বেশি কাজ হবে বলে মনে হয় ওয়ারদিংটনের চেয়ে।

নিশ্চিন্ত হল কেইন। ডোরী যখন বলেছে যা হয় কিছু একটা করবেই, করবেতো যখন ওকে আর ঘাঁটানো ঠিক নয়।

স্যুটকেস বন্ধ করল আলেক ওয়ারদিংটন। বাইরের দিকে চাইল জানলার পর্দা সরিয়ে ঘড়ি দেখে নিয়ে। উল্টোদিকের দেওয়ালে ঠেস দিয়ে চার ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়েই আছে কালো বর্ষাতি হাতে লোকটি।

কপালের ঘাম মুছল ওয়ারদিংটন পিছিয়ে এসে। দশটা বাজতে পাঁচ তখন ঘড়িতে। সুক ইংরেজী শিখতে আসবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে। লোকটা চলে যাবে সঙ্গে সঙ্গে। সুক দুনম্বর কর্তা চেক গুপ্ত পুলিশের। কেউ নজর রাখেনা ও যতক্ষণ থাকে। লোকটি ফিরে আসে সুক চলে গেলে। এই রুটিন চলছে গত চারদিন ধরে। আজই পালাবে তাই ওয়ারদিংটন ঠিক করেছে। হয়তো দেরি হয়ে গেল সময় নেই। যে কোনো মুহূর্তে ওকে ধরতে পারে ও স্পষ্ট টের পাচ্ছে।

প্রস্তুত হতে পারেনি ও এখনও। আগেকার মতলব মতো কাজ করা যেত যদি আরো সময় পাওয়া যেত। পালিয়ে গা ঢাকা দিতে হবে কারণ সময় নেই। ও বাইরের ঘরে এল স্যুটকেশটা খাটের নীচে ঢুকিয়ে রেখে। বাজার করতে বেরিয়েছে ওর মেয়ে এমিলি। কোনো কষ্ট হচ্ছে না ওকে ফেলে পালাতে। উবে গেছে পনেরো বছরের প্রেম ভালবাসা সবকিছু। অ্যালেক সি. আই. এর যে কাজ করে তা এমিলি জানেনা। ও আরও জানে না যে ওর আরেকটি মেয়ে আছে জীবনে এবং সুইজারল্যান্ডে মোটা টাকা আছে।

একটি কল বের করল টেবিলের দেরাজ থেকে ওয়ারদিংটন। অতি সামান্য জিনিষ। বালি আর সীসের টুকরো ভরা একটি ছোট্ট ব্যাগ। যে কেউ সংজ্ঞা হারাবে এর আঘাতে। ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে অস্ত্র হাতে এবং ঢিপঢিপ করছে ওর বুক। লোকটি যদিও মারদাঙ্গায় পটু নয় কিন্তু যেহেতু আজ ওর জীবন বিপন্ন তাই ওকে মারদাঙ্গা করতে হবে।

ও টেবিলে বসল কলটি পকেটে পুরোও নিজেই অবাক হল নিজের স্থৈর্য দেখে। আজ সুককে গসওয়ার্দির ফরসাইটে সাগা পড়াতে হবে বলে মনে পড়ল। ও ভয় করে খুব সুককে। তবে সুক যে ইংরাজী শিক্ষায় বেশ এগিয়ে গেছে সেটা মানতেই হয়। এটা ভাবাই যায় না যে ইংরাজী সাহিত্য পড়ে এত আনন্দ পাবে ওর মতো পাষণ্ড।

বইয়ের পাতাটা খুলে টেবিলে রাখল ও যেখান থেকে আজকের পড়া শুরু হবে। সেই সময় ও শুনল সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ। কে যেন চারতলার ঘরে উঠছে সিঁড়ি বেয়ে। পথের লোকটি উধাও সে গিয়ে দেখল জানলা দিয়ে।

ও দরজা খুলে দিল বেলের আওয়াজ শুনে। ওর দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে ঘরে ঢুকল সুক। ভারিসারি চেহারা, ঠোঁটটি পাতলা, সদাই সন্দেহের দৃষ্টি ওর চোখে।

সুক চেয়ারে বসে পড়তে শুরু করল ওর দিকে আরেকবার চেয়ে। ওর পড়া শুনতে ওয়ারদিংটন চেয়ারের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। ও লক্ষ্য করে দেখল সুকের মাথার পিছনটা। ওকে গ্রেপ্তারের মতলব ঘুরছে লোকটার মাথায় বলে ওর মনে হল। আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দেখল কলটা। •

ওর মতলব আঁচ করেছিল বোধহয় সুক। ওয়ারদিংটন কল চালাল ও হঠাৎ পিছন ফিরতে না ফিরতেই। সুকের মাথার উপর গিয়ে পড়ল চোটটা। ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল কলটা। সংজ্ঞাহীন নিশ্চল হয়ে বসে রইল চেয়ারে। এলিয়ে পড়ল দেহ ওর ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে। হাড়গোড় নেই যেন ওর শরীরে। মাটিতে পড়ল চেয়ার থেকে যেন কাপড়চোপড় এবং মাংসের একটি স্কুপ।

ওর স্যুটকেশ টেনে বের করল ওয়ারদিংটন ছুটে গিয়ে। একটি কালো বর্ষাতি পরে নিল। সুক অচৈতন্য ও ফিরে এসে দেখল। সুক হয়তো মরে গেছে ও ভাবল। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে সিঁড়ি ধরে নামতে লাগল আর সময় নষ্ট না করে। ওর স্ত্রী এমিলির সঙ্গে হঠাৎ দেখা সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দোতলায়। এমিলির বয়স চুয়াল্লিশ বছর। বেজায় মোটা এবং বেঁটে। চাইল দুজনে দুজনের দিকে। সুটকেশ দেখে এমিলি বলল, নির্ভয়ে যেতে পারো, এসে যায় না আমার কিছু। চলে যাও।

আমি চললাম এমিলি, তোমার কোনো অসুবিধা হবেনা আশা করি। কোথাও ঘুরে এস খানিক, এখন উপরে যেও না।

এমিলি ফুঁসে বলল, বাঁচা গেল, যাও তোমার মেয়ে মানুষের কাছে।

তোমার বাবা।

আমি কি করব তা বাতলাতে হবে না চুপচাপ চলে যাও।

ওয়ারদিংটন কর্কশ গলায় বলল, ওপরে যেও না এমিলি আমি বাধ্য হয়ে তোমার বাবাকে মেরে ফেলেছি। উনি উপরে আছেন।

এমিলি তাচ্ছিল্য গলায় বলল, পালিয়ে বাঁচবে ভাবছ আহাম্মক।

বিদায় এমিলি চললাম।

ওয়ারদিংটন বেরিয়ে পড়ে লক্ষ্য রেখে চলল সরু পথের দুপাশে। ওকে যেতে দেখেনি কেউ। না কেউ যেতে দেখেনি ওকে। ও পালাবার চেষ্টা করবে না যতক্ষণ সুক সঙ্গে থাকবে ততক্ষণ এবং সেটা ও ধরেই নিয়েছে।

ও ট্রামে উঠে ভাবল, তল্লাশী শুরু করবে সুকের জ্ঞান ফিরে এলে। সুকের মাথার খুলি কতটা মোটা এটা নির্ভর করবে তার উপর। ও ভাবতেই শিউরে উঠল, ওর কল মারার কথাটা।

দু একজন ঘুরে দেখল ওয়ারদিংটনের ইংরেজ মার্কা চেহারাটা। ওর অভ্যেস হয়ে গেছে এতে, সবাই একটু সন্দেহের চোখে দেখে প্রাগে বিদেশীদের।

ও একটি ছোট্ট পথে ঢুকল টাউনহল স্কোয়ারে ট্রাম থেকে নেমে। এই নির্জনপথে কেউ থাকে না, শুধু ও এবং আরেকটি বৃদ্ধা ছাড়া। ও প্রথমে পৌঁছল নির্দিষ্ট বাড়িতে তারপর অন্ধকার দরজা দিয়ে চট করে ঢুকে একটি কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপর তলায় উঠল এবং ঘা দিল একটি নোংরা দরজায়। পায়ের আওয়াজ দরজার পেছনে। একটি মেয়ে প্রথমে চাবি ঘোরাল এবং তারপর ফাঁক করে দাঁড়াল দরজা।

মেয়েটির নাম মালা রীড। ওয়ারদিংটন একই উত্তেজনা অনুভব করে যতবার ওকে দেখে। ও প্রেমে পড়ে যখন থেকে ও মালাকে প্রথম দেখে কিন্তু সে কথা ও জানায়নি মালাকে। মালা যে সংবাদবাহক ছাড়া ওকে আর কিছু মনে করে না সেটা ও ভালভাবেই জানে।

মালা বলল, তুমি এখানে, ব্যাপার কি। ওয়ারদিংটন মালাকে দেখতে লাগল, ঘরে ঢুকে স্যুটকেশ নামিয়ে বর্ষাতি খুলতে খুলতে। বয়স আঠাশ মালার। চেক বিপ্লবে বাবা মৃত, মা মৃত ক্যানসার রোগে। আলহামব্রা নাইট ক্লাবে মনমাতানো ইংগিতে গলার খামতি গুটিয়ে গান গেয়ে টুরিস্টদের খুশি করে এখন মালা। ওকে উৎসাহই দেয় সরকার। দেশে ওর জন্য বেড়ে গেছে ডলার আমদানি। ও প্রতি রাতে ক্লাবে গাইছে গত দুবছর হল।

ও লম্বা সাধারণ মেয়ের চেয়ে। ও বিমোহিণী কিন্তু সুন্দরী নয়। ওর পুরস্ত ঠোঁট এবং বেগুনী চোখ। ওর শ্রেষ্ঠ সম্পদ ওর শরীর। উঁচু ও পুরস্ত বুক। লম্বাটে পা এবং সরু ধরনের কোমর। চোখ ফেরাতে পারে না পুরুষরা ওর শরীর থেকে।

ও সি.আই, এ তে কাজ করছে দুই বছর হল। ডোরীর এজেন্টবলেছিল যে মিষ্টিকথায় ভুলিয়ে মালাকে কি বিপদে জড়ানো হচ্ছে তা মালার উপস্থিত বুদ্ধি থাকলেও মালা বোঝে না। কম্যুনিস্ট বিরোধী ও। বিশেষ কষ্ট হয়নি ওকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কাজে লাগাতে। অন্য এজেন্টদের খবর পৌঁছে দিয়েছে মালা। ওয়ারদিংটনের সঙ্গে ও কাজ করছে, কি জালে ও জড়িয়ে গেছে বা কি বিপদে ও পড়েছেনা জেনেই। সিআই কে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দিয়েছে তিনবার গত দুবছরে, খবরগুলোর গুরুত্ব না জেনেই। ওর সম্পর্কে ডোরর ধারণা বাড়াবাড়ি রকমের উঁচু প্যারিসে। মালাই সবচেয়ে বেশি দমে যাবে যদি ওকে চেকোশ্লোভাকিয়ার সবচেয়ে বড় মেয়ে এজেন্ট হিসাবে ধরা হয়।

ও প্রাগে কাটিয়েছে সারাজীবন ভালো রোজগার করে এবং পুলিশ ওকে সৎ নাগরিক বলে মনে করে যেহেতু ওর ব্যবহারের সন্দেহজনক কিছু নেই। ডোরীর হাতের নাচের পুতুল হিসাবে ও চমৎকার, যেহেতু কেউ ওকে সন্দেহ করে না।

ওকে ঘাবড়ে দিয়েছিল ওয়ারদিংটনের অতর্কিত আবির্ভাব। ও বলল স্যুটকেশটা দেখে, কোথাও কি যাচ্ছ তুমি ..

কোথাও যাচ্ছি, বোসো কথা আছে কয়েকটা।

 হল না কি কোনো গণ্ডগোল।

 ওর ঘরে পড়ে থাকা সুকের অজ্ঞান হওয়া শরীর-এর ছবি ওয়ারদিংটনের মনে পড়ল। তাকিয়ে দেখল সামনে মালার মনভোলানো নারী দেহ। ব্যর্থতার অক্ষম ক্ষোভ, মনে বড় দুঃখ। এ রকম একটি মেয়ে ওকে খুবই আনন্দ দিতে পারত যতই সাতচল্লিশ বছর বয়স হোক না কেন।

ওয়ারদিংটন বলল, আমি কিন্তু নিরুপায় এবং দুঃখিতও যে আমাকে কদিন কিন্তু এখানে থাকতে হবে।

মালা তাজ্জব, এখানে থাকবেন, না হতেই পারে না, কারণ এখানে জায়গা নেই। হতে পারে না এটা।

মাত্র কটা দিন থাকতে দিতে হবে। আমি তোমায় বিরক্ত করব না, কারণ আমি কথা দিচ্ছি যে আমি প্রাগ ছেড়ে চলে যাব, তবে আমি যেতে পারব না তোমার সাহায্য ছাড়া।

তুমি শোবে কোথায়, কারণ বিছানা একটা এক বিছানায় মালা যদি ওকে শুতে বলত। মালা কিন্তু সে কথা বলবেই বা কেন?

ওয়ারদিংটন বলল, বিশ্বাস কর, আমাকে থাকতেই হবে, দরকার হলে আমি মাটিতে শোব।

ওয়ারদিংটনের সাদা মুখ চোখে আতঙ্ক, মালা সেটা লক্ষ্য করল। তাই বলল, খুঁজছে কি ওরা তোমায়।

ওয়ারদিংটন মাথা নাড়িয়ে বলল, হ্যাঁ ওরা খুঁজছে আমাকে।

চেয়ারে বসে ক্যাপ্টেন টিম ও হ্যালোরান। বিশাল চওড়া কাঁধ, লালচে মুখ, নীলচে চোখ এবং কঠিন মুখ। ও ইউরোপের সকল সি, আই. এ এজেন্টের ইনচার্জ। ডোরী ওকে কেইনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের কথা বলছে টেবিলের ওপাশে বসে। ও হ্যালোরান সব জেনে গেছে নির্বিকার মুখে। কোনো না কোনো একটি সমাধান ডোরী খুঁজে বের করবেই এটা ও জানে। ওর অগাধ বিশ্বাস ডোরীর উপরে।

ডোরী বলল, মালিক যদি ওয়ারদিংটনকে ধরে তাহলে কেইন এবং মালা ফেঁসে যাবে, শেষ পর্যন্ত এটাই দাঁড়াচ্ছে। খতম করতেই হবে ওয়ারদিংটনকে, যদিও সেটা অবশ্য কে করবে।

ও হ্যালোরান নির্দ্বিধায় বলল, মাইক ও ব্রায়েন। রাতের প্লেনেই যেতে পারে ও ডিপ্লোমাটিক পাসপোর্ট নিয়ে। ও কাজ হাসিল করে ফেলবে আজ, বেশি রাত বা কাল সকালের মধ্যেই। ওর কোনো অসুবিধে হবে না এতে।

তাই কর টিম তাহলে, ঠিক আছে। একটা ফাইল নিয়ে পড়তে লাগল ডোরী।

 টিম ডোরীকে বলল টেলিফোনে কার সঙ্গে কথা বলে, কাজ হয়ে গেছে ধরে নিন।

ফাইল সরিয়ে রেখে ডোরী বলল, বদলী পাঠাতে হবে এখন ওয়ারদিংটনকে, আমি ভাবছি জ্যাক ল্যাটিমারের কথা। কিন্তু ভরসা পাচ্ছে না কেইন। বদলীতে কে আসে তা দেখার জন্য ওরা ওৎ পেতে থাকে। ল্যাটিমার ফাস হয়ে যাবে কাজ শুরু করার আগেই এটা কেইন মনে করে থাকে।

আমি কথা বলব কেইনের সঙ্গে। উপযুক্ত লোক ল্যাটিমারই।

কথা বলেছি আমি, কখনো ভুল করেনা কেইন, মালিককে মনে পড়ে তোমার। প্ৰাগে এসেছেন মালিক একথা কেইন বলেছে।

কে এসেছে, মালিক?

হ্যাঁ, মালিক, যে সোভিয়েতের সেরা এজেন্ট। ল্যাটিমারকে প্রাগে ঢুকতে হবে ওর চোখে ধুলো দিয়ে, বলে চলল ডোরী, একটা ধোকাবাজি করতে হবে আমাদের। এমন একজনকে প্রাগে পাঠাতে হবে যাকে মনে হয় আমাদের এজেন্ট হিসাবে এবং তার ওপরই যাতে পড়ে মালিকের সন্দেহ। ল্যাটিমার প্রাগে ঢুকে পড়বে সেই ফাঁকে।

বেড়ে লাগছে শুনতে, তার অবস্থা কিন্তু শোচনীয় হবে যাকে আপনি প্রাগে পাঠাবেন।

শুকনো হাসি হেসে ডোরী বলল, সে তো বটেই, তবে তেমন লোকই যাবে যাকে খরচের খাতায় লিখে রাখা চলে। আজ সকালেই গ্যারলান্ড হংকং থেকে ফিরেছে সেটা কি তুমি জানো?

এখানে ফিরেছে গারল্যান্ড।

আমি ওর উপর নজর রাখি। অনেক দেনা আছে ওর আমার কাছে। সময় এসে গেছে এখন শোধ দেবার। আমি টোপ হিসাবে সামনে রাখব গারল্যান্ডকে। গারল্যান্ড প্রাগে এসেছে এটা মালিক যেই শুনবে, ও তখন ধরেই নেবে যে আমরা বদলীতে পাঠিয়েছি গারল্যান্ডকে। ল্যাটিমার চুপিসারে প্রাগে ঢুকে পড়বে। ও যখন গারল্যান্ডকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। মনে হচ্ছে কি কেমন। ১. চুপকরেরইল ও হ্যালোরান। ওর যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছেগ্যারল্যান্ডের উপর। ডোরর সেরা এজেন্ট ছিল একসময় গ্যারলাভ। তারপর বলল, ধরে নিচ্ছেন কেন যে গারল্যান্ড প্রাগে যাবে? আমাদের হয়ে কাজ করে না এখন ও, বোকাও নয় নোকটা। আমি ভাবতেই পারছি না যে ও যাবে লৌহ যবনিকার ওপারে।

টাকা এবং মেয়ে মানুষ, এ দুটোই দুর্বলতা গারল্যান্ডের। ঘাবড়িও না। আমি সেবন্দোবস্ত করছি ও যাবেই।

আপনি কি এটাই চান যে যদিও ও যায় কিন্তু গেলেও পরে আর ফিরবে না।

শুধু নিজের কথা ভাবে গারল্যান্ড। ও কাজ করছে, আমাদের হয়ে কাজ করে মুনাফা লুটছে বলেই। বহু টাকা মেরেছে ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে। আমরাও তাই করবও যেভাবে আমাদের ব্যবহার করেছে। কোনো ক্ষতি নেই যদি ও খতম হয় তাহলে হবে। মাছ টোপ গিলবেই যদি সে টোপ জুৎসই হয়। আমি একটি খাসা এবং লোভনীয় টোপ তৈরী করেছি গারল্যান্ডের জন্য। ও যাবেই প্ৰাগে।

.

মুখ মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল ওয়ারদিংটন। ওকামিয়ে ফেলেছে ওরবহুদিনের রাখা গোঁফ। অন্যরকম দেখাচ্ছে কেমন ওর মুখটা। ও দুর্বল এবং গো-বেচারা। ওকে কেউ চিনতে পারবে না ওর গোঁফ ছাড়া এটাই ওর ধারণা। ও বলল, চুলের রং পালটাব ভাবছিলাম, তুমি যদি একটু সাহায্য কর। কি করে যে লাগাতে হয়, তবে এক বোতল পেরোসাইড সঙ্গে আছে।

ওর দিকে তাকিয়ে থাকে মালা অসহায় চোখে। ওর ভেতরটা খুবই কাঁপছে। ওর মেয়াদ শেষ ওয়ার দিংটন গ্রেপ্তার হলে এটা ও. জানে। সবই বলে দেবে, ওয়ারদিংটনকে যদি জেরা করা হয়। মালা ভয়ে দিশেহারা হয়ে গেল। সিকিউরিটি পুলিশের হাতে পড়লে তার অবস্থা কি হবে তা ভেবে বলল, প্লীজ চলে যাও তুমি, দয়া করে চলে যাও।

নিশ্চয় তোমার মন মেজাজ ঠিক নেই, তুমি কি বলছ, তোমায় চা করে দিচ্ছি আমি, চা খেলেই তোমার ভালো লাগবে, কোথায় রেখেছ তুমি চায়ের সরঞ্জাম।

আমি তোমায় কোনো সাহায্য করব না, তোমাকে আমি এখানে রাখতে চাই না, তুমি চলে যাও প্লীজ।

রান্নাঘরে গেল ওয়ারদিংটন। অনেক দুশ্চিন্তা এখন মালার। সে নিজেই ভাবল একবার পালাবে কিন্তু পালাবে কোথায়। একাজে কেন যে সেনামতে গেল ডোরীর এজেন্টের বড় বড় কথা শুনে নিজেই পুলিশে খবর দেবে একবার ভাবল ও কিন্তু ওর জীবন শেষ হবে তাহলে, ওর রক্ত জল হয়ে গেল এই ভেবে যে ওর সুন্দর শরীরটা নিয়ে কি করবে পুলিশ। ওরা ওকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে পৈশাচিক উল্লাসে ওকে কথা বলার জন্য।

চা নিয়ে ঢুকল ওয়ারদিংটন। বলল, নতুন করে ছবি তুলব পাসপোর্টের, চুল রাঙিয়ে।

একটি লোকের কাছে নিয়ে যায় মালা। ছবিগুলো তুলে ও এটাই চায়। ওয়ারদিংটনের ব্রিটিশ পাসপোর্টে যে লোকটি নতুন ছবি লাগিয়ে দেবে। লোকটি নিশ্চয় ভয়ে চেঁচাতে আরম্ভ করত

 রাত নটায় মাইক ও ব্রায়েন বার্নবের্গ অবধি প্লেনে এসে গাড়ি নিয়ে প্রাগে পৌঁছল।

ও আততায়ীর কাজ করছে ও হ্যালোরেনের হয়ে গত তিন বছর ধরে। দলত্যাগী গুপ্তচর খুন করেছে এর মধ্যে চারজনকে। ওর কোনো বিবেকদংশন নেই খুন বিষয়ে। যে কোনো পেশার মতই খুনও ওর কাছে একটি পেশা। সাইলেন্সর লাগানো৪৫ ক্যালিবার পিল এই পেশার অন্যতম হাতিয়ার। সব চেয়ে নিরাপদ মাথায় গুলি করা। মগজ উড়ে যায় ৪৫ গুলিতে।

ওয়ারদিংটনের বাড়ি কোথায় তা ম্যাপ দেখে ও আগেই জেনে গেছে। সে পকেটে হাত দিয়ে পিস্তলটা দেখে নিল গাড়ি থেকে নেমে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে। আজ রাতেই ও নরেন্স বাগ থেকে প্যারিসের প্লেন ধরবে ঠিক মতো কাজ হলে। রূপালী, বুজ কঠোর দৃষ্টি যুক্ত চোখ দিয়ে দাঁড়িয়ে একজন দৈত্যের মত চেহারার লোক।

শরীর দিয়ে কাঁপুনি বয়ে গেল মালিককে দেখে ও ব্রায়েনের। মালিকের ছবি ও সি. আই. এ এর ফাইলে দেখেছে, যদিও চোখে দেখিনি। স্যুট পরা তিনজন লোক মালিকের পেছনে। স্টেনগান দুজনের হাতে। মালিক শান্ত গলায় বলল, কি চাই? অবস্থা বেগতিক ও ব্রায়েন সেটা বুঝল, ধরা পড়েছে কি ওয়ারদিংটন? ও বলল, আছেন কি মিঃওয়ারদিংটন। উনি ইংরাজী শেখান শুনলাম।

আসুন ভেতরে।

স্টেনগানধারীদের দিকে চেয়ে ঢুকল ও ব্রায়েন ইতস্ততঃ করে। মালিক দরজা বন্ধ করে বলল আপনার পাসপোর্ট নেই? এখানে নেই মিঃ ওয়ারদিংটন।

পাসপোর্ট দিল ও ব্রায়েন। মালিক যার হাতে স্টেনগান নেই এটা দেখে তার হাতে সেটা দিল দিয়ে বলল, কেমন আছেন মিঃ ডোরী।

বেঁচেই আছেন যদুর জানি। কেমন আছেন মিঃ কোভস্কি? জিজ্ঞেস করলেন যে কোভস্কি সম্বন্ধে সেই কোভস্কি মালিকের ওপরওয়ালা।

আপনি একটু দেরীকরে ফেলেছেন তবেযন্দুর জানি তিনি বেঁচেই আছেন। আমি ব্যবস্থা করছি ওয়ারদিংটনের। সকাল দশটা নাগাদ ভেগেছে ওয়ারদিংটন।

পেছন পেছন চলল ও ব্রায়েন লোকটির মালিক বলল, মিঃ ও ব্রায়েন এক মিনিট। চেষ্টা করবেন ফেরার দয়া করে। বুঝলেন তাহলে ঘুরে যাবে ব্যাপার।

আচ্ছা চলি, নিশ্চয়।

ও ব্রায়েন বাড়ির ভিতর থেকে একটি মেয়ের চাপা কান্না শুনতে পেল সিঁড়ি দিয়ে এগোতে এগোতে। এ নিশ্চয় ওয়ারদিংটনের বউয়ের কান্না।

.

০২.

 গারল্যান্ড বলল, পাঁচমিনিটের মধ্যে আমায় বেরোতে হবে দেখ খুকি, মদ শেষ করবে জলদি জলদি।

অসামান্য সৌন্দর্যে ভরা আঠারো বছরের একটি মেয়ে গ্যারলান্ডের সামনে বসে মদ্যপান করছিল। গারল্যান্ড এখনো কাবু হয়নি কিন্তু কিছুক্ষণ ধরে মেয়েটি নানাভাবে প্রলোভন দেখাচ্ছে বারবার মেয়েটি ওর দেহ সৌষ্ঠব মেলে ধরছে নানা রকম অঙ্গভঙ্গী করে। গারল্যান্ডকে ছাড়তে রাজি নয় সে কিছুতেই। একেই বলে পুরুষ মানুষ গারল্যান্ডকে দেখে সে মুগ্ধ হয়ে ভাবছে।

বহু পুরনো পাপী গারল্যান্ড। ওরআর ভাল লাগেনা কচি মেয়েদের এ ধরনের যৌন আবেদন ভেতরে সব ঠাণ্ডা মেরে আসে আধ বুড়ো মনে হয় নিজেকে। ভেতরে সব ঠাণ্ডা মেরে আসছে বলে মনে হয়। টেলিফোনের আওয়াজ হঠাৎ বাঁচিয়ে দিলে ওকে।

আমেরিককান গলা ভেসে এল ফোনের ওদিক থেকে, হ্যারি ময় বলছি গারল্যান্ড। আমাকে তুমি চেন না। আমাকে তোমার নম্বর দিয়েছিল ফ্রেড। একটা কাজ করে দিতে হবে আমার। আমি তোমায় টাকা দেব অবশ্য এজন্য।

গারল্যান্ড মেয়েটির দিকে চেয়ে বলল, কত টাকা। পোশাক খুলছে ততক্ষণে মেয়েটি।

হ্যারি বলল, আমি লা ক্রোয়া দ্যের বারে থাকব দশটা পর্যন্ত। জায়গাটা চেন তুমি?

আমি যাব, কে চেনে না।

মেয়েটি তখনোদাঁড়িয়ে, টেলিফোন নামিয়ে সে ঘুরে দেখল। বিশেষ কিছু নেই পরনে। লোভও হল একবার মনে। দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে। মেয়েটির অশ্রাব্য গালাগালি ভেসে এল দরজার পেছন থেকে।

ব্রেসেন বারে ফোন করল ও, ঘরে ফিরে এসে ফোন তুলে। ওই বারের বার ট্রেন্ডার ফ্রেন্ডকে ও চেনে। ও হ্যারিকে ভালো চেনে না ফ্রেড তাই বলল। হ্যারি কোনো স্মাগলিং-এর সঙ্গে জড়িত বলেই ওর মনে হয়। তোমায় নম্বর দিয়ে ভুল করিনি তো, ফ্রেড বলল।

বলা যায় না যে কি থেকে লাভের সুযোগ আসতে পারে তাই ওকে আশ্বস্ত করল গারল্যান্ড।

বুড়োটা সমকামী এবং তরুণদের ভিড়ই বেশী এই লা ক্রোয়া দ্যের নাইট ক্লাবে। নিগ্রো ট্রামপেটার খুব মৌজ করে ট্রামপেট বাজাচ্ছে যখন গারল্যান্ড ঢুকল। ক্লাবে হইচইতে ভর্তি এবং ঘাম ও সিগারেটের গন্ধে ভারী ক্লাবের বাতাস। মেয়েলী ভাব দেখাতে এগিয়ে এল মোটাসোটা বারমান। হ্যারি মস, এসেছে গারল্যান্ড বলল।

চার নম্বর কামরায় ও অপেক্ষা করছে ডিয়ার।

 একা অপেক্ষা করছে?

হ্যাঁ, নিশ্চয়।

গারল্যান্ড উপরে চলে গেল, একটু হেসে। স্কচ হুইস্কির বোতল, বরফ ও গ্লাস নিয়ে বসে আছে চার নম্বর কামরায় একটি যুবক।

মস

বদমায়েসীর ছাপ আছেতরুণটির চেহারায়, চেয়ার ঠেলে দিল গ্যারল্যান্ডের দিকে এবং বলল, এসেছ দেখে আমি হ্যারি মস খুশী হলাম। সিগারেট ধরাতে ধরাতে গারল্যান্ড বলল, জলদি বল, যা বলবার।

আমি নিজে করতে পারছি না, একটা খারাপ কাজ আছে। ঝামেলা হবেনা পাল্টা, ত্রিশ হাজার ডলার। আধাআধি বখরা আমার এবং তোমার মধ্যে। কথাটা কি মনে ধরেছে?

মনে এটা ধরতে পারে। সত্যি কোনো ঝামেলা হবে না এটা যদি বিশ্বাস করাতে পার।

সাহায্যের দরকার আমার। তুমি যে মুখ আলগা লোক নও একথা সকলে বলল। আমার কিছু করার নেই তুমি যদি এটা রটিয়ে বেড়াও।

সবাই!

কথাটা শোন, বললাম তো আমার বন্ধু ফার্ডি নিউম্যান এবং আমি আর্মিতে থাকার সময় পশ্চিম বার্লিনে একমাস আগে ট্রাক হাইজ্যাক করে আর্মির মাইনের টাকা চুরি করি। পালাই সেখান থেকে পূর্ব বার্লিনে। সেখান থেকে কায়রো ভাগা যাবে প্রাগে গিয়ে এই ধারণা ছিল ফার্ডির। খারাপ লাগছে শুনতে?

মিষ্টি লাগে খুব টাকার কথা শুনতে চালিয়ে যাও তুমি।

চেক সিকিউরিটি পুলিশের খপ্পরে পড়লাম যখন প্রাগে পৌঁছলাম। একটি লোকের ঠিকানা পশ্চিম বার্লিনে একটা মেয়ের কাছে নিয়েছিলাম। বিশ হাজার আগেই নিয়ে নিল সে হারামজাদা। আমাদের লুকিয়ে রাখবে, খাবার দাবার বন্দোবস্ত করে দেবে, ঠাণ্ডা হলে পালাবার বন্দোবস্ত করে দেবে প্রাগ থেকে, এটাই বন্দোবস্ত করা ছিল। কোনো পাত্তাই পাওয়া গেল না কিন্তু ব্যাটার। দে চম্পট আমাদের ওর বাড়িতে তুলে। লুকিয়েছিলাম তিনদিন না খেয়ে। কে খাবার কিনতে যাবে তা ঠিক করা হল চারদিনের দিন টস করে। ফার্ডি গেল। পুলিশের হুইসেল শোনা গেল ও চলে যাবার তিন মিনিট বাদেই। আমি ছাদে পালালাম টাকার থলে ভুলে। ফার্ডি ছুটছে এবং দেখি দুজন পুলিশ ফাড়ির পেছনে। একজন পিস্তল চালাল ধরতে না পেরে, ব্যাস খতম হয়ে গেল ফার্ডি। চম্পট দিলাম আমি। পালিয়ে এসেছি একটা মেয়ের সাহায্যে। ওখানেই রয়ে গেছে টাকা।

কি করে জানলে যে টাকা সেখানেই রয়ে গেছে।

সেখানে খোঁজার কথা কেউ ভাববে না যেখানে আমি লুকিয়ে রেখে এসেছি। বেশি জায়গা নেইনি একশো ডলারের তিনশো নোট, সেটাই আমি বলছি।

আমি পারব বলেই বা ভাবছ কেন, তুমি যখন পারনি।

ওরা নজর রাখছে আমার উপর। ওরা চেনেও না তোমাকে। প্রাগ সবচেয়ে নির্ঞ্ঝাট লৌহ যবনিকার ওপারে যত জায়গা আছে তার মধ্যে। বেজায় মন্দা চেকদের আর্থিক অবস্থা। ওরা পাগল বিদেশী মুদ্রার জন্য, বেজায় খাতির করে তাই টুরিস্টদের। কেউ তোমায় সন্দেহ করবে না যদি তুমি ট্যুরিস্ট হিসাবে যাও। ওরা খুলে দেখবে না টুরিস্টদের ব্যাগ অবধি। যাবে আর আসবে শুধু তুমি।

তুমি পাবে বলে জানছ কি করে যদিও বা টাকাটা পাই।

বাবা এতো জুয়ার বাজি ধরা, আজনা হোক আরেকদিন ঠিক ধরব। পড়বে তখন তুমি বিপদে।

আমি ঠিক অতটা আনাড়ী নই। তবে তুমিও তো পড়তে পার।

তুমি জবরদস্ত ঝানু বলে শুনেছি। চেষ্টা করে দেখব তবু। এখন বল কি ব্যাপার, সে কথা যাক।

কোথায় লুকনো আছে টাকা ভেবে দেখি।

তোমার হাতে যখন এয়ারপোর্টে প্লেনের টিকিট দেখব তখন বলব।

খরচ করার জন্য কমসে কম দু হাজার ফ্লা লাগবে। অত টাকা কে দেবে।

ওটুকু কিভাবে যোগাড় করতে হয় তা আমি জানি।

সকল দশটায় ফোন করো তখন আমি ভেবে দেখব। আমার তেমন পছন্দসই নয় ও অঞ্চলটা। সেহেতু তাই খোঁজ নিয়ে দেখ এদিক ওদিক। ট্যুরিস্ট হিসাবে গেলে কোনো ঝামেলা নেই সবাই বলবে।

আচ্ছা চলি, তাই করব। বেরিয়ে গেল গারল্যান্ড এই কথা বলে। টেলিফোন বুথে ঢুকে মস ডায়াল করল ড্রিংক শেষ করে। রুক্ষ্ম কাটাকাটা গলায় জবাব এল অন্য দিক থেকে।

মস্ বলল, যাবে বলে মনে হয় পার্টি। কালকের মধ্যে জানাবে।

 ডোরী বলল, আমিও ভেবেছিলাম তাই, এই কথা বলে ফোন ছেড়ে দিল ডোরী।

তখনি ফোন করছিল গারল্যান্ডও। সে ফোনকরছিল নিউ ইয়র্কে হেরালড ট্রিবিউন কাগজের সাংবাদিক বিল ল্যামপসনবো। লা ক্রোয়া দ্যোরের উল্টোদিকের কাফে থেকে। বহু খবর রাখত গিল তার ফলে গারল্যান্ডের কাজে এসেছেও বার।

ল্যামপসন বলল, গারল্যান্ড না কি।

 তিন চার হপ্তা আগে ঘটে যাওয়া পশ্চিম বার্লিনের একটি ডাকাতির ব্যাপারে কিছু খবর দরকার।

জান না কী তুমি কিছু?

বিল এই ব্যাপারে আমিই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করছি।

ঠিকই বলেছ, পঞ্চাশ হাজার ডলার নিয়ে ভাগে দুজন নাম লেখানো সৈন্য। হ্যারি মস এবং ফার্ডি নিউম্যান তাদের নাম। এখনো তাদের খুঁজছে পুলিশ। ওরা নাকি লৌহ যবনিকার ওপরে পালিয়েছে বলে গুজব, তুমি শুনেছনাকি এই সমস্ত খবর। জোরদার খবর এটি, বাজার গরম করতে পারে।

রিসিভার নামিয়ে রাখল গারল্যান্ড জবাব দিয়ে। সত্যি কথা বলেছে তাহলে মস। ক্ষতি কি? ত্রিশ হাজার ডলার, মসেদের খরচে প্ৰাগে ঘুরে আসা যাবে টাকা যদি পাওয়া না যায়। এটা মন্দ নয়, যাবে বলে ও ঠিক করল। তিনচার দিনে সেরে নেবে ভিসার ব্যাপারটা।

সে বাড়ি ফিরে দেখে মেয়েটি তখনা যায়নি। ও বিরক্ত হল বেজায়।

 মেয়েটি সম্বোধন করল বয় ফ্রেন্ডকে, হ্যালো, চোর ঢুকেছিল তোমার বাড়িতে।

ওকে চলে যেতে বলল গারল্যান্ড। ওর কথায় কানই দিল না মেয়েটি। বলল, চোর এসেছিল বলছি না। বিরাট চেহারা লোকটার মুখ লাল। লতি কাটা ডান কানের। আমি বসেছিলাম ওপরের সিঁড়িতে আমাকে দেখতে পায়নি ও। পেশাদার বলে মনে হল লোকটিকে। তালা খুলে ঢুকল যেভাবে।

সতর্ক হয়ে উঠল গারল্যান্ড। এ অস্কার ব্রুকম্যান না হয়ে যায় না, যা বোঝা যাচ্ছে লোকটার চেহারার বর্ণনা শুনে। ও হ্যালোরানৈর পোষা গুণ্ডা ব্রুকম্যান।

গারল্যান্ডকে প্রলুব্ধ করার আশা ছাড়েনি তখনও মেয়েটি। ওর নাম রিমা বলে জানা গেল। চোরটা ছিল কতক্ষণ গারল্যান্ড বলল।

ঘড়ি দেখেছি, বিশ মিনিট।

গারল্যান্ড বুঝল কিছুই চুরি যায়নি সব ভালো করে দেখে। আসল ব্যাপার ধাঁধা লেগেছে ব্রুকম্যানের। ব্রুকম্যানকে পাঠিয়েছিল কি ডোর? এত নির্বোধ তো হবে না ডোরী। তবে কেন এসেছিল ব্রুকম্যান!

.

ডোরীর টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অস্কার ব্রুকম্যান। নিবানো চুরুটটি চিবোচ্ছে ও হ্যালোরান এবং চোখ তার জানালার বাইরে। একটা চাপা উত্তেজনা ঘরের হাওয়ায়।

ডোরী বলল, রিপোর্ট পেয়েছি ও ব্রায়েনের, এখনো বেঁচে আছে ওয়ারদিংটন।

ও হ্যালোরান বলল, আমরা দোষ দিতে পারি না ও ব্রায়েনকে। বড় দেরিতে এসেছিল কেইনের খবর।

মামুলী ওজর তো ওটা একটা। আমরা দোষ দিতে পারি না ও ব্রায়েনকে। ও আর ওখানে ফিরতে পারছেনা, কারণ মালিক ওখানে এসে পড়েছে। ওয়ারদিংটনকে যদি মালিক ধরে ফেলে? ওয়ারদিংটনকে ধরবেই। ধরলে আমরা ভালো এজেন্ট হারাচ্ছি কিন্তু দুজনেই।

কিছুই বলল না ও হ্যালোরান ও ব্রুকম্যান। অন্ততঃ এটা মনে হচ্ছে যে গারল্যান্ড প্রাগে যাচ্ছে। রাগ ওর দুচোখে। জিজ্ঞেস করলো ব্রুকম্যানকে, রিপোর্ট কি তোমার?

বেশ খুশি ব্রুকম্যান, ভালোভাবে কাজ হাসিলকরে। বলল, আমি খামটা ঢুকিয়ে রেখে এসেছি গ্যারল্যান্ডের সুটকেশে। ও খামটা খুঁজে পাবে না যদি টুকরো টুকরো করে না ছেড়ে।

কেউ দেখে ফেলেনি তো তোমাকে?

কেউ দেখেনি স্যার।

কিছুক্ষণ ভেবে ডোরী বলল, বুঝিয়ে বলি ব্যাপারটা, আমরা ল্যাটিমারকে প্ৰাগে ঢোকাতে চাই গারল্যান্ডকে সামনে রেখে ভাওতা দিয়ে, এটা আগেই বলেছি। ওখানে মালিক আছে সে। ভালোভাবেই জানে গারল্যান্ডকে। আমাদের বদলী এজেন্ট যে গারল্যান্ড এটা ও ভালোভাবেই ধরে নেবে। গারল্যান্ডকে প্ৰাগে পাঠানোই এখন আমাদের সমস্যা। সত্যিই ঘটে হ্যারি মস্ এবং ফার্ডি নিউম্যানের ডাকাতির ঘটনাটি, পুলিশের গুলিতে মরে নিউম্যান এবং প্রাগে জেল খাটছে আসল হ্যারি মস্। আমার এক ভাইপো আছে ড্রামাটিক স্কুলে। গারল্যান্ডের জালে তাকে জড়ানো হয়েছে হ্যারি মস সাজিয়ে। টোপ গিলেছে গারল্যান্ড। চোরাই টাকা উদ্ধার করতে ও যাচ্ছে প্রাগে। এই অপারেশনে দরকার প্রাগে পাওয়া টাকাটা।

দেরাজ খুলে একটা মোটা খাম বের করল ডোরী এবং ব্রুকম্যানকে বলল, ত্রিশ হাজার ডলার আছে এখানে, মালা আঁচ পাবেনা, মালা রীডের বাড়িতে এমন জায়গায় এটা তুমি লুকিয়ে রাখবে। টাকাটা কোথায় লুকানো আছে এটা গারল্যান্ডকে বলা হবে। তুমি নাম ফাস করবে না যেইমাত্র গারল্যান্ড টাকা পাবে এবং পুলিশে খবর যাবে সেইমাত্রই ফোনে। ওর স্যুটকেশে খাম পাবে পুলিশ যখন গারল্যান্ডকে গ্রেপ্তার করবে। মালিকের মনে হবে যে ওয়ারদিংটনের জায়গায় গারল্যান্ড এসেছে সেই খামের কাগজপত্র দেখে। আমরা ল্যাটিমারকে প্রাগে ঢুকিয়ে দেব এই গোলমালের মধ্যে।

ডোরী বলল ব্রুকম্যানের হাতে একটা কাগজ দিয়ে, তোমার নির্দেশ এটি, খুবই জরুরী সময়ের ব্যাপারটা। প্রাগে রওনা হচ্ছে গারল্যান্ড এটা যখন জানব, তখন আমি সেটা তোমায় জানিয়ে দেব। কোনো ভুলচুক যেন এতে না হয়। তুমি কিচ্ছুটি করবে না আমি না বলা অবধি।

কাগজ আর টাকার খাম নিয়ে বেরিয়ে গেল ব্রুকম্যান কথায় সায় দিয়ে। ও হ্যলোরানকে বলল ডোরী, ভালো হত যদি ওয়ারলিংটনকে খতম করা যেত। আমাদের বিপদে ফেলতে পারে ও।

রূঢ় ভাবে বলল ও হ্যালোরান, পুরো অপারেশনটা গোলমেলে ব্যাপার এবং অনিশ্চিত বলে আমার মনে হয়। অযথা তুমি ভেবেছ গারল্যান্ডকে তুমি বরাই, ঝামেলা পাকতে পারে ওকে নিয়েই তোমার। আমরা সঠিক জানি না ওগে যাচ্ছে কিনা।

ও যাবে আমি জানি।

ও না হয় গেল, ও ভাগতেও পায়ে তোমার টাকা নিয়ে। বেজায় ধুরন্ধর ও।

একটা বেজায় ছিঁচকের সম্বন্ধে এই ধারণা হল কি করে তোমার? ও মোটেওনয় তেমন ধুরন্ধর, গেলে যাবে টাকা, গারল্যান্ড পাচ্ছে না টাকা। চেকরা পেলেও ক্ষতি কি সরকারী টাকা গেলে। তোমার অভ্যেস হয়ে গেছে গারল্যাকে উঁচু নজরে দেখটা। ও চালু নয় তত, এটা আমি বলতে পারি।

গারল্যান্ড ডোরীকে বোক বানিয়ে কতবার যে মোটা টাকা মেরেছে সেটা মনে পড়ল ও হ্যালোরানের। তার মনে হল এখন বাঞ্ছনীয় নয় ডোরীকে ওসব কথা মনে করিয়ে দেওয়া।

.

ফিল্মের কার্টিজ বের করল ওয়ারদিংটন ক্যামেরাটা খুলে। পর পর কুড়িটা ছবি ওর তুলেছে মালা। লোকটাকে কিভাবে ভাগানো যায় সেটাই এখন মালার মনোভাব।

 দিন দুয়েকে মধ্যে যে চলে যাবে, সেটাই ওয়ারদিংটন বলে দিয়েছে।

সে ফিল্মটা মালার হাতে দিয়ে বলল, এটা কারেল ভ্রটের কাছে নিয়ে যাবে তুমি? সেলেট না উলিসে ওর বাড়ি, নতুন ছবি লাগিয়ে দেবে ও পাসপোর্ট খুব কাজের আছে বুড়ো।

মালার কথামতো ও দরজা বন্ধ করল, বাথরুমে ঢুকে যাতে পোশাক পাল্টাতে পারে মালা। মালাকে কিছুই বুঝতে দেয়নি ও যদিও প্রথম দর্শনেই ও মালার প্রেমে পড়েছিল। বেড়ে গেছে ভালবাসা দুবছরের পরিচয়ে। ওর মনে মালার প্রতি লিলা আরো প্রবল হয়েছে যেহেতু মালার বাড়িতে ও কয়েকদিন রয়েছে। মালা ওকে প্রত্যাখ্যান করবে ও চিরদিন জানে। ও চুপ করে থাকে সবসময় এইকথা ভেবেই। নিজের মনকে অন্য দিকে ঘোরাল ও জোর করে। এক গোপনকন্যুনিস্ট বিরোধী সভায় ওর প্রথম দেখা ভ্লাস্টের সঙ্গে। ও এক দক্ষ এনগেজার সেটা ব্লাস্ট বলেছিল। ও একটি অভিজাত হোটেলে লিস্টম্যানের কাজকরে সেই পরিচয় গোপন রেখে। একদিন ওকে প্রাগ ছেড়ে পালাতে হতে পারে সেটা ওয়ারদিংটনজানে। দরকার হবেই হবে সেদিন জাল পাসপোর্টের। ভাটের প্রয়োজন হতে পারে সেদিন। জীবনটা দিব্যি কাটছিল। সুইস ব্যাঙ্কে কতটা টাকা জমেছিল। এই মালিক হঠাৎ এসে উদয় হল ধূমকেতুর মত। ও ব্যবস্থা করছে পালাবার সেই থেকেই। ওর দৈহিক এবং মানসিক অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মালিকের হাতে পড়লে এটা ও জানে। বলে ফেলতে বাধ্য হবে তখন। অনেক মূল্যবান ডোরীর কাছে ওয়ারদিংটনের চেয়ে মালা এবং কেইন। ডোরীওকে মারতে গুণ্ডা পাঠাবেও বলবেজানে বলেই। ওর অবস্থাটা এখন কি? ওকে খুঁজছে। যে মালিক শুধু তাই নয়, ওকে শিকার করতে ব্যস্ত ডোরীর ঘাতকও। ওয়ারদিংটন বেরিয়ে এল দরজায় টোকা পড়তেই।

মালাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। নীল জামায় নতুন করে মুগ্ধ হল ওয়ারদিংটন। মালার দিকে, কিছুক্ষণ চেয়ে রইল এবং তারপর মালার হাতে দিল পকেট থেকে একটা খাম এবং বলল, হারিও না, এতে টাকা আছে ভাটের জন্য। সাবধানে যাও। সঙ্গে পাসপোর্ট এবং ফিল্ম নিয়ে যেও।

বেরিয়ে গেল মালা। ভ্লাস্টের বাড়ি পৌঁছল মিনিট কুড়ি বাদে। কেউ পিছু নিয়েছে কিনা সে দেখে নিল সিঁড়ি দিয়ে পাঁচতলায় উঠবার সময়। কেউ কোথাও নেই তাই দরজায় বেল টিপল মালা আশ্বস্ত হয়ে। এক বেজায় মোটা বুড়ো দরজা খুলে দিল। ওর হাতে টাকা, ফিল্ম পাসপোর্ট : দিল মালা ঘরে ঢুকে। লোকটার ডানহাতে যে ব্যান্ডেজ বাঁধা সেটা দেবার সময় হঠাৎ খেয়াল হল।

মালা বলল, চোট পেয়েছেন কি আপনি কোন।

 কেশী কাটেনি, তবে কেটে গেছে। কাটাছেঁড়া সারতে বড় সময় নেয় আমার এই বয়সে।

আপনি তাড়াতাড়ি কাজটা সেরে দেবেন, মিঃ ওয়ারদিংটন বললেন।

বড় বদ সময় হল এই জখমটা। কিছু তো করতে পারব না হাত না সারলে। ও টাকা গুনতে লাগল এই বলে খাম খুলে। মালাকে বলল তারপর সন্তুষ্ট হয়ে, এই সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় করে দেব।

পুলিশ এর তল্লাশীতে বেরিয়ে পড়েছে কারণ এটা খুব জরুরী।

আমি কি করব বলুন, আমি সত্যিই দুঃখিত। ওয়ারদিংটন ওর ঘরে থাকবে এখন দুসপ্তাহ। মালা এখন কি করবে, তাই মালা বলল, আগে হয় না আরো।

নিখুঁত কাজের জন্য কিছু করা সম্ভবনয় হাত ঠিক না হলে, আমি খুবই দুঃখিত এই কথা ওকে বলে দেবেন।

নীরবে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল মালা। ভীষণ আলোড়ন হচ্ছে মনের মধ্যে, কি করবেও এখন।

ওয়ারদিংটন বসে মালার ঘরে। সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পেল হঠাৎ এবং পেয়ে কান পাতল খাপ থেকে ৩২ ক্যালিবার পিস্তল বের করে। ও আশত হল দরজা খুলে মালাকে ঘরে ঢুকতে দেখে।

কি হল, ও জিগ্যেস করল।

হাত কেটে গেছে ভ্লাস্টের, ও কিছু করতে পারবেনা দুসপ্তাহের আগে। এখানে রাখতে পারব না আমি তোমাকে দুসপ্তাহ।

ওরা আমাকেধরবেই আমি গেলে। তুমি কতদিন বাঁচবেআমি ধরা পড়লে। ওরা কথা বলাবেই বলাবে আমাকে দিয়ে। আমায় এখানে থাকতে হবে আমার তোমার দুজনের জন্যই।

আমি কি বলব কোনো বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে তোমাকে থাকতে দিতে। এখান থেকে চলে যাব আমি।

তার সন্দেহ হবে তাতে, কোনো জ্বালাতন করব না আমি তো বলছি। তুমি কেন বুঝছো না ওরা আমাদের দুজনকেই খুন করবে যদি আমায় ধরতে পারে।

হাত মুঠো করে চেপে ধরল মালা। ঠোঁট কাঁপছে, সাদা হয়ে গেছে মুখ। ও বলল, তুমি এই বিপদে আমাকে ফেলবে কেন, কাপুরুষ! স্বার্থপর এখানে এলে কেন তুমি?

তুমি শুধু তোমার কথা ভেবে বোলর মতো কথা বলছ। দুজনেরই কথা ভাবছি আমি, আমাদের। বাজে কথা। থাক ভাবা যাক লাঞ্চের কথা।