৪. তোড়ে বৃষ্টি পড়ছে

০৪.

আমি গাড়ির ভেতর বসে ভাবছিলাম, তোড়ে বৃষ্টি পড়ছে আমার গাড়ির ছাদে। সেই শব্দ শুনতে শুনতে আমার মন চলে গেল মিসেস থরসেনের সঙ্গে আমার যা কথাবার্তা হয়েছে সেইদিকে। তদন্ত চালিয়ে যাবার সবুজ সংকেত তিনি আমায় দিয়েছেন। তার যখন টাকা খরচ হচ্ছে বিনিময়ে কিছু ফল পাওয়া দরকার।

থরসেনের এস্টেটের চারিদিক ঘেরা উঁচু পাঁচিলের গা ঘেঁষে ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে যেতে যেতে আমার ডাইনে একটা সরু গলি পড়ল। পাঁচিলের গা ঘেঁষে আমি সেই গলির ভেতরে ঢুকলাম। যা আশা করেছিলাম তাই, এই গলি শেষ হয়েছে অ্যাঞ্জেলার বাংলোয়।

ভেজা ঘাসের ওপর গাড়ি দাঁড় করালাম। ম্যাকিন্টস গায়ে চাপিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এগোলাম। বাংলো না বলে তাকে বড়সড় একটা কুঁড়ে বলাই ঠিক হবে। সম্ভবতঃ গোটা চারেক ঘর আছে ভেতরে। সামনেই দাঁড় করানো অ্যাঞ্জেলার মরচে পড়া বীটল গাড়িখানা।

বাংলোর বাইরে কোন বারান্দা নেই। কলিংবেল টিপে অপেক্ষা করছি।

এক হ্যাঁচকা টানে ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলল। তাকিয়ে দেখি বিশাল বাহু এক মাঝবয়সী কালো মহিলা যার চেহারা যেমন রুক্ষ তেমনি গায়েও প্রচণ্ড জোর মনে হল।

আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে সে কর্কশ সুরে বলল। এখানে কি চান মিস্টার?

 মিস অ্যাঞ্জেলা থরসেনকে।

কেটে পড়ুন মিস্টার। মিস অ্যাঞ্জেলা অচেনা লোকদের সঙ্গে দেখা করেন না। যান, আগুন এখান থেকে।

কার্ড বের করে তাকে দেখিয়ে পুলিশি গলায় বললাম, ওঁকে আমার সঙ্গে দেখা করতেই হবে। আর এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব? দেখছো না আমি ভিজে যাচ্ছি।

কার্ডটা পড়ে একনজর আমায় দেখে বলল, দাঁড়ান। বলেই শব্দ করে দরজা বন্ধ করল।

এই হল জোশের বৌ হান্না স্মেডলি। জোশের কথা ভেবে আমার কষ্ট হল, এই বয়সে বৌ ওকে ছেড়ে চলে গেছে, তা বেচারা মদ না খেয়ে কি করবে।

পুরো পাঁচ মিনিট ঐভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে আবার কলিংবেলটা টিপলাম। মিসেস স্মেডলি হ্যাঁচকা টানে দরজা খুলে কটমট করে তাকিয়ে বললেন, আসুন ভেতরে আসুন। ম্যাকিন্টসটা খুলে ফেলুন নয়ত ভিজে যাবে।

ম্যাকিন্টস আর টুপিটা খুলে লবিতে বৃষ্টির জলের মধ্যেই নামিয়ে রাখলাম। সে আরেকটা দরজা খুলে আমায় ভেতরে যাবার ইঙ্গিত করল। ঘরটা বেশ বড়সড়, ঘরের ভেতর আছে কয়েকটা চেয়ার ও একটা বড় টি.ভি. সেট।

আমি ঘাড় ফেরাতেই দেখলাম আমার পেছনের চেয়ারে আরাম করে বসে এক যুবতী, উৎসুক চোখে সে আমার দিকে তাকিয়েছিল, অ্যাঞ্জেলা থরসেন।

তার চোখে এখন বড় সানগ্লাস নেই, মাথায় মুখ আড়াল করা সেই বেটপ টুপিও নেই।

আমি একটু চমকে গেলাম। অ্যাঞ্জেলার মার কাছে শুনেছিলাম ওর মধ্যে এমন কিছু নেই যা পুরুষদের আকৃষ্ট করতে পারে। তবে কি মিসেস থরসেন তার মেয়েকে হিংসে করেন?

মেয়েটির দিকে তাকাতেই হলিউডের এক বিখ্যাত অভিনেত্রীর মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। অড্রে হেপবার্ন। প্রথম ফিল্মে তার যে চেহারা ছিল অ্যাঞ্জেলার পা থেকে মাথা পর্যন্ত অবিকল সেরকম। সেই গড়ন, সেই কালোচুল, সেইরকম গভীর বাদামী চোখ। হ্যাঁ, ওর শরীরটা বড্ড রোগা, কিন্তু একবার ওর মুখের দিকে তাকালেই তীব্র যৌন আকর্ষণ চোখে পড়বে।

জোর করে ভেতরে ঢোকার জন্য মাপ চাইছি মিস থরসেন। আশা করছি আপনি আমায় সাহায্য করতে পারবেন।

সে হেসে আমায় বসবার ইঙ্গিত করলো। অ্যা

ঞ্জেলা বলল, আশা করছি পারব মিঃ ওয়ালেস। আপনি বসুন। কি খাবেন বলুন, চা না কফি?

ধন্যবাদ, আমি কিছুই খাব না।

আপনি বেসরকারী গোয়েন্দা?

ঠিক ধরেছেন মিস থরসেন।

 তাহলে তো আপনি পদে পদে উত্তেজনা আর রোমাঞ্চের মধ্যে কাটান। গোয়েন্দাদের কাণ্ডকারখানা তো থ্রিলার খুললেই পাওয়া যায়।

বাইরে যা পড়েন বাস্তবে বেসরকারী গোয়েন্দাদের জীবন কিন্তু তার চাইতে একদম আলাদা মিস থরসেন। আমার বেশীরভাগ সময়ই গাড়িতে বসে বা সেইসব লোকের সঙ্গে কথা বলে কাটে যারা সহযোগিতা করে না।

আবার হেসে অ্যাঞ্জেলা বলল, তাহলে আপনি আমার কাছে এসেছেন? যাক কি ব্যাপার বলুন

আপনার ভাই টেরিকে খুঁজে বার করার জন্য আমায় ভাড়া করা হয়েছে।

ওর চোখে কৌতূহলী চাউনি।

আমার ভাই? টেরি?

 ঠিক ধরেছেন, এক বৃদ্ধা মারা যাবার আগে ওর নামে কিছু টাকা রেখে গেছেন। এখন যতক্ষণ ওকে খুঁজে না পাওয়া যাচ্ছে ততক্ষণ টাকাটা ব্যাঙ্কেই পড়ে থাকবে।

একজন বৃদ্ধা টেরির নামে টাকা রেখে গেছেন?

 হ্যাঁ, মিস থরসেন।

 চমৎকার মানুষ তো। তা তিনি কে?

গম্ভীর ভাবে বললাম, আমার বড়কর্তা শুধু টেরিকে খুঁজে বের করার দায়িত্বটুকু আমায় দিয়েছেন। বৃদ্ধার নাম আমায় জানাননি, কিন্তু এটুকু বলেছেন যে তিনি আপনার ভাইয়ের নামে, এক লাখ ডলার ব্যাঙ্কে রেখে গেছেন। কাজেই আমি এত খোঁজ খবর নিচ্ছি।

সামনের দিকে ঝুঁকে অ্যাঞ্জেলা বলল, আপনি বলছেন একলক্ষ ডলার!

 ঠিক তাই মিস থরসেন।

আবার হেসে বলল, কি চমৎকার লোক!

সত্যিই আশ্চর্য মহিলা, কিন্তু তাহলেও ওকে খুঁজে বের করতেই হবে। আপনি কি সাহায্য করতে পারবেন?

পারলে খুব খুশিই হতাম। কতমাস হয়ে গেল ভাইটাকে দেখি না।

ও আপনাকে চিঠি লেখেনা বা টেলিফোন করেনা?

আমার বড় কষ্ট হয় মিঃ ওয়ালেস। একসময় আমার ভাই আর আমি দুজনেকত অন্তরঙ্গ ছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না।

সে সত্যি কথা বলছে কিনা বুঝতে পারলাম না।

আপনি ওর কোন বন্ধুর নাম ঠিকানা দিতে পারেন যে ওর খোঁজ দিতে পারবে?

বিষাদের ভঙ্গিতে ও মাথা নাড়ল, ওর কোন বন্ধুকে আমি চিনি না।

আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে ও ডেড এন্ড ক্লাবে পিয়ানো বাজাত। হঠাৎ একদিন ওখান থেকে চলে যায়।

সে অবাক চোখে তাকাল।

না, এটা আমার জানা ছিল না।

তাহলে আপনি আমায় কোন সাহায্যই করতে পারবেন না?

পারলে খুশি হতাম। আপনার কার্ড তো আমার কাছে রইল, টেরির খোঁজ পেলে আপনাকে টেলিফোন করব।

আপনি টেলিফোনে খবরটা দিলে সত্যিই আমি খুশি হব। এটা খুব লজ্জার ব্যাপার, ব্যাঙ্কে এই মোটা সোটা টাকা পড়ে পচছে, এদিকে আপনার ভাই সে খবর জানেই না।

ঘাড় নেড়ে অ্যাঞ্জেলা বলল, সত্যিই লজ্জার ব্যাপার। বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। আর ঠিক তখনই অ্যাঞ্জেলার মুখের ভাব ভাল করে লক্ষ্য করে আমি প্রশ্নটা করলাম যার সাহায্যে আমি বুঝব অ্যাঞ্জেলা সত্যি বলছে না কি মিথ্যা কথা বলতে সে একজন ওস্তাদ।

বলতে পারেন হ্যাংক স্মেডলিকে কোথায় গেলে পাব?

ওর চোখের পাতার দ্রুত কাপন আর নিমেষের জন্য দুচোখ জ্বলে ওঠা আমার চোখ এড়াল না। ওর সরল হাসিও যেন শুকিয়ে গেল। আমি বেশ বুঝলাম এবার ওকে বাগে পেয়েছি।

আবার সেই সরল হাসি তার ঠোঁটে। হ্যাংক স্মেডলি? আশ্চর্য! আপনি কি সেই কালো ছেলেটার কথা বলছেন যে একসময় আমাদের বাগানে কাজ করত?

ঠিক ধরেছেন, মিস থরসেন। আমি হ্যাংক অর্থাৎ মিসেস স্মেডলির ছেলের কথাই বলছি, আপনি বলতে পারেন কোথায় তার খোঁজ পাব?

আবার সেই হাসি, আমি বলতে পারব না। বহুদিন হল ওর সঙ্গে দেখা হয় না, ওর মার সঙ্গেও দেখা হয় না।

কি নির্লজ্জ মিথ্যা! হ্যাংকের মা মিসেস স্মেডলি স্বামীকে ছেড়ে দিনরাত ওর দেখাশুনা করছে, একটু আগেই সে আমায় দরজা খুলে দিল। অথচ মেয়েটা দিব্যি বলছে অনেকদিন তার সঙ্গে দেখা হয় না। ভেবেছে হ্যাংকের মাকে আমি চিনি না। কোনরকম খোঁজ খবর না নিয়েই আমি এখানে এসেছি। গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়ে অনেক মেয়ে ঘেঁটেছি, কিন্তু এরকম ডাহা মিথ্যেবলা মেয়ে এর আগে দেখেনি যে হাসতে হাসতে দিনকে রাত করতে পারে।

মনে হচ্ছে আপনার ভাইকে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হবে। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার এজেন্সী কোন কাজের জন্য টাকা নিলে সেকাজ পুরোপুরি শেষ না করে হাল ছাড়ে না। আমি জানি আপনার ভাইকে কখন খুঁজে পাব তা জানার জন্য আপনি ভেতরে ভেতরে ছটফট করবেন। ভয় নেই, সময় এলে আমিই আপনাকে সে খবর জানাবো।

আড়চোখে দেখলাম তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সে কোন কথা না বলে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে লবিতে পড়ে থাকা আমার ম্যাকিন্টস তুলে গায়ে চাপালাম। টুপি থেকে জল ঝেড়ে পরলাম। তারপর গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলাম।

ওর মা বলেছিল অ্যাঞ্জেলা মানসিক দিক থেকে সুস্থ নয়। সত্যি কি?

যে মেয়ে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সেই এমন বেমালুম মিথ্যে গল্প সাজাতে পারে তার বাকি জীবন তো পড়েই আছে। আর এও ঠিক যে হ্যাংকের কথা না তুললে ওকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ থাকত না।

কিন্তু অ্যাঞ্জেলা এবার কি করবে? ওর ভাইকে হুঁশিয়ারি করে দেবে? নাকি হ্যাংককে বলবে যে তার পেছনে গোয়েন্দা লেগেছে হুঁশিয়ার। হয়ত অ্যাঞ্জেলা তার কোনটাই করবে না।

গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে সোজা হাইওয়ের দিকে চললাম।

অফিসে ফিরে দেখি বিল একমনে টাইপ করে চলেছে। সব কথা তাকে খুলে বললাম, এবার আমরা একটা খাঁটি চরিত্র পেয়েছি। কি চমৎকার মিথ্যে বলতে পারে সে তুমি নিজের কানে শুনলে তার তারিফ না করে পারবে না। তবে হ্যাঁ, মেয়েটার নার্ভ ইস্পাতের মত মজবুত, ব্যাটাছেলের মাথা ঘুরে যাবার মত যথেষ্ট আকর্ষণ আছে। দিব্যি বলল ভাইয়ের খোঁজখবর ও পায় না, আর হ্যাংক স্মেডলির সঙ্গে দেখা হয় না।

বিল টাইপ করতে করতে বলল, রীতিমত পাখোয়াজ মেয়ে দেখছি। কিন্তু ওর ভাইকে কেন খুজছ তা আমার মাথায় ঢুকছে না। মনে হচ্ছে এ কেসের আসল লোক হ্যাংক, অন্য কেউ নয়।

হয়তো তোমার কথাই ঠিক। কিন্তু বারবার মনে হচ্ছে টেরিকে আমার খুব দরকার, রহস্যের চাবি ওর কাছেই আছে। তবে আমার ভুলও হতে পারে। যাকগে, আগে এই রিপোর্টটা টাইপ করা যাক।

টাইপ শেষ করতে করতে সাতটা কুড়ি বেজে গেল। রিপোর্টগুলো থরসেন ফাইলে ঢুকিয়ে বিল বলল, এবার কি করবে?

কোনও রেস্তোরাঁয় ঢুকেইটালিয়ান কোর্সে ডিনার খাব। তারপর সোজা হ্যাংক স্মেডলির সঙ্গে দেখা করব।

আবার ঐ কালোদের নাইট ক্লাবে যাবে?

ঠিক তাই।

খুব ভাল। তাহলে আমিও তোমার সঙ্গে যাব।

টেবিলের নীচের ড্রয়ার খুলে পয়েন্ট থ্রি এইট রিভলবারটা নিয়ে চেম্বারটা ভাল করে দেখে কোমরের বেল্টে গুঁজে রাখলাম।

বিল তোমার রিভলবারটা নাও। ঝামেলা হতে পারে।

বিল ড্রয়ার খুলে একজোড়া পেতলের পাত্রও বেরকরল। দুহাতে ও দুটো পরে খুশীভরা চোখে সেগুলো দেখতে লাগল। তারপর বলল, তুমি তো রিভলবার নিয়েছে ডার্ক, তাহলে আমার আর দরকার নেই। আমার এতেই কাজ হবে।

ধমকে উঠলাম, কি হচ্ছে বিল? ওগুলো সঙ্গে রাখা যে বেআইনী তা জান না? ওগুলো গুণ্ডা বদমাশরা ব্যবহার করে। এখুনি ওগুলো খুলে ফ্যালো।

ঠিক বলেছো, ওগুলো বেআইনী আর গুণ্ডা বদমায়েশরা ব্যবহার করে। তা আমরাও তো একজন গুণ্ডার কাছেই যাচ্ছি। পাঞ্চ দুটো খুলে সে পকেটে রাখল। কালোদের সঙ্গে লড়াই করতে পাঞ্চের জুড়ি নেই।

কথাটা একদম উড়িয়ে দিতে পারলাম না। আমি জানি ঐ একটি পাঞ্চের সাহায্যে বিল এমন মোম ঘুষি মারার ক্ষমতা রাখে যা একটা হাতীকেও কাৎ করে দিতে পারে।

 দাঁড়াও একটা ফোন করে নিই আমরা তারপরে বেরোব। বলে বেলভিউ হোটেলের নম্বর ডায়াল করলাম। সুজি ডিউটিতেই ছিল। ওকে খুব ব্যস্ত মনে হল, একটা কথা বলেই ছেড়ে দিচ্ছি। দেয়ালে হোয়াইট ওয়াশ আর দরজার তালাটা সারিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি। সত্যিই তোমার জুড়ি নেই সুজি।

থাক যথেষ্ট হয়েছে। আর ধন্যবাদ দিতে হবেনা। তুমি যে বীরপুরুষ তা আমার জানতে বাকি নেই। ঝামেলার মধ্যে জড়িয়ো না। সামনের বুধবার দেখা হবে, রাখছি।

বিল ও আমি গাড়িতে উঠলাম। এখনও ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। সকোম্বের বড় রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে লুসিনো নামে একটা ইটালিয়ান রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম। রেস্তোরাঁর ভেতরটা প্রায় ফাঁকা বললেই চলে, বেশি খদ্দের নেই। আমরা কোণের দিকে একটা টেবিলে বসলাম। কড়া ইটালিয়ান ওয়াইনে চুমুক দিয়ে বিল বলল, এখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যাব?

যেখানে যাব বলে বেরিয়েছি। অ্যাকমে এজেন্সীর বেসরকারী গোয়েন্দা হিসেবেই সেখানে ঢুকব। তারপর বলব যে হ্যাংকের সঙ্গে দেখা করতে চাই। যদি কোন ঝামেলা না করেই হ্যাংক আমাদের সঙ্গে দেখা করে তো ওকে জিজ্ঞেস করব, যে টেরিকে খুঁজে বের করতে ও আমাদের সাহায্য করতে পারে কিনা। এবার দেখতে পাচ্ছে, এই তদন্তের ব্যাপারে টেরির ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তাই তো মনে হচ্ছে, বলল বটে কিন্তু গলা শুনে মনে হল সে এখনও আমার সঙ্গে একমত হতে পারেনি।

ঠিক ধরেছ। তাহলে তুমি জানতে চাইছে তারপর আমরা কি করবো সেটা নির্ভর করছে হ্যাংক আমাদের সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার করে তার ওপর। তবে ও টেরির ব্যাপারে মুখ খুলবে কিনা সন্দেহ আছে। কাজেই এর পরের কাজ হল অ্যাঞ্জেলাকে অনুসরণ করা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওর ওপর আমাদের নজর রাখতে হবে।

বিল মাথা নেড়ে বলল, তুমি কি ভাবছো ঐ পথে এগোলে কিছু যোগাড় করতে পারবে?

জানি না তবে চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?

 বিকেলে প্লেটে করে লুসিনো আমাদের জন্যে স্প্যাঘেটি এনে হাজির করল, ঘোট অক্টোপাস কেটে টুকরো করে মুচমুচে করে ভেজে তার ওপর ছড়ানো, সঙ্গে কয়েক টুকরো মুগীর মাংস আর ছোট চিংড়িও আছে। আর টমেটোর সসভর্তি একটা বড় বাটি সে টেবিলের মাঝখানে রাখল।

আমাদের দুজনেরই প্রচণ্ড ক্ষিদে পেয়েছিল। রাত সোয়া দশটা নাগাদ আমরা খেয়ে দেয়ে বেরোলাম। ওয়াটার ফ্রন্টের একপাশে গাড়ি রেখে দুজনে ডিসকোতে হেঁটে এলাম। ভেতরে ঢোকার আগে কোমরে হাত দিয়ে দেখলাম সেটা ঠিক আছে কিনা। বিলও তার ট্রাউজারের দু পকেটে হাত ঢোকাল।

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখি বিকট বারের চারিদিকে অসংখ্য টেবিল, চেয়ার, বেশ কিছু কালো বসে বীয়ার খাচ্ছে। সামনে উঁচু একটা প্ল্যাটফর্ম। তার ওপর তিনজন কালো দাঁড়িয়ে। প্রথমটির হাতে ট্রাম্পেট দ্বিতীয়টির হাতে স্যাক্রোফোন এবং তৃতীয়টির হাতে ড্রামেরকাঠি, সামনে রাখা বিশাল ড্রামটিকে ঠিকমত বসাচ্ছে।

আমাদের ঢুকতে দেখেই দশাসই চেহারার এক কালো এসে খেঁকিয়ে উঠলো, পড়তে পারো না? নোটিসে লেখা আছে দ্যাখোনি সাদাদের এখানে ঢোকা বারণ।

সরো এগোতে দাও। আমি হ্যাংকের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

 সে জ্বলন্ত চোখে দাঁতে খিঁচিয়ে, এখানে কোন উল্লুক ঢুকতে পারে না।

আমার কার্ডখানা তার নাকের সামনে তুলে বললাম, লেখাপড়া কিছু শিখেছো? এটা পড়তে পারো? তাতে কাজ হল। বিড়বিড় করে সে পড়ল।

সে হেঁড়ে গলায় বলল, তুমি কি পুলিশের লোক?

আমিও একটু চেঁচিয়ে বললাম, এই যে কালোমানিক, এই কার্ডটা নিয়ে হ্যাংককে দেখাও। ওকে বলল যে আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।

সে একটু ইতস্ততঃ করে ড্যান্সিং ফ্লোর ছেড়ে একটা দরজা খুলে ওপাশে চলে গেল। হলের ভেতর কয়েকজন কাল মেয়ে পুরুষ এই দিকে দেখল। মনে হয় ওরা সবাই আমাদের পুলিশের লোক বলেই ধরে নিয়েছে।

 চলে এসো, বলে আমি বিলকে সঙ্গে নিয়ে ছেলেটা একটু আগে যে দরজাটা খুলে ওপাশে গিয়েছে সেই দরজার হাতলটা একটানে খুললাম। দরজা খুলতেই আরেকটা দরজা চোখে পড়ল। করিডোরে এগোতেই দ্বিতীয় দরজাটা কে যেন ওপাশ থেকে হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেলল। পরমুহূর্তে একটি লোক আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল আর তার পা ও মাথা দেখেই বুঝতে পারলাম সে

এর আগে বিল হ্যাংক স্মেডলির বর্ণনা দিয়েছিল, কিন্তু নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত বুঝতে পারিনি কি বিশাল শরীর। দেখলাম লম্বায় পুরোপুরি সাড়ে ছফিট, আর তার কাধ এত চওড়া যে পাড়াগাঁয়ের খামার বাড়ির দরজায় দাঁড়ালে আর কেউ সে দরজা দিয়ে যেতে আসতে পারবেনা। বিল বলেছিল ওর মাথাটা ছোট, কথাটা ঠিকই। চোখের দিকে তাকালে যে কেউ আঁতকে উঠবে।

কি চাই তোমাদের? লক্ষ্য করলাম ওর দুহাত মুঠো পাকানো।

 আপনিই মিঃ হ্যাংক স্মেডলি? আমি জানতে চাইলাম।

আমার কথা শুনে ও একটু ধাক্কা খেল। ওর দুহাতের মুঠো খুলে গেল।

 হা। এখানে কি চাই?

মিঃ স্মেডলি আমি অ্যাকমে ডিটেকটিভ এজেন্সী থেকে আসছি। আস্তে বললাম, আশা করছি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।

সন্দেহভরা চোখে আমার দিকে তাকালো। তারপর বলল, সাদাদের সাহায্য করি না। কেটে পড়ো, তোমার গায়ের গন্ধ আমার বরদাস্ত হচ্ছে না।

সাদা কালো বাদ দিননা মশাই। আমি বললাম, আমার পদবী ওয়ালেস, আপনি ঐ বলেই ডাকবেন, আমিও আপনাকে হ্যাংক বলে ডাকব। মনে হয় আমরা কথা বলতে পারব।

এমন ব্যবহার ও আমার থেকে আশা করেনি। দেখলাম ও ইতস্ততঃ করছে। কিছুতেই ও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না।

তবু দাঁড়িয়েই রইল।

আমি টেরি জিগলারের খোঁজে এসেছি। গলা নামিয়ে আস্তে কথাগুলো বললাম, যেমন বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলে।

এতে কাজ হল। একটু সামনে ঝুঁকে কটমট করে আমার দিকে তাকাল।

 ও হেঁড়ে গলায় বলল, ওকে দিয়ে কি দরকার?

 উত্তর দেবার আগেই চোখে পড়ল হ্যাংকের পেছনে একটা লোক দাঁড়িয়ে আমাদের সব কথা শুনছে।

লোকটার দিকে ইঙ্গিত করে বললাম, ওকে একটু তফাতে যেতে বলল। ব্যাপারটা খুব গোপনীয়, সবার শোনার মত নয়।

ও ঘুরে দাঁড়িয়ে ধমকে উঠলো, অ্যাই ভাগ এখান থেকে।

 ধমক খেতেই লোকটা আমার পাশ কাটিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল।

আমি টেরিকে খুঁজছি। কারণ একজন মারা যাবার আগে ওর নামে কিছু টাকা ব্যাঙ্কে জমা রেখেছে। যতক্ষণ না ওকে পাচ্ছি ততক্ষণ টাকাটা ব্যাঙ্কে পচবে।

এবার হ্যাংক শান্ত গলায় জানতে চাইল, কত টাকা?

 লাখ খানেকের মত হবে, আমি ঠিক বলতে পারব না।

 হ্যাংক অবাক হয়ে তাকিয়ে, লাখখানেক।

তাইত জানি। তবেটাকার পরিমাণ কত তা সঠিক বলতে পারবনা। হয়তো বেশিও হতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ওকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যেতে পারে?

ওকে পেলে কি করবেন?

তাহলে তো সব ভাবনা মিটেই গেল। আমি ওকে ব্যাঙ্কে নিয়ে যাব। সেখানে কয়েকটা ফর্মে সই করবে। তারপরেই সে টাকার মালিক হবে। খুব সোজা ব্যাপার।

মনে হল হ্যাংক কিছু একটা ভাবছে।

এক লাখ? সে তো অনেক টাকা। কোথায় আছে ঠিক জানি না তবে হয়ত খুঁজে বের করতে পারব। সবাইকে জিজ্ঞেস করতে হবে। ও এখানে নেই অন্য কোথাও থাকতে পারে।

বেশ বুঝতে পারলাম যে ও মিথ্যে বলছে কিন্তু আমায় ধৈর্য বজায় রাখতেই হবে।

ঠিক আছে হ্যাংক। আমার কার্ডটা আপনার কাছে রেখে দিন। টেরির সঙ্গে কথা বলে দেখুন, যদি ঐ টাকাটা ও নিতে চায় তো আমাকে টেলিফোনে জানাবেন। কেমন ঠিক আছে?

হ্যাঁ সেই ভালো। বলেই বিলের দিকে তাকিয়ে বলল, এই বেঁটে লোকটা কোথা থেকে এল?

ও আমার বডিগার্ড। গুণ্ডা বদমাশদের সঙ্গে কারবার করতে হয় তাই ও আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকে।

হ্যাংক বিশীরকম খ্যাক খ্যাক শব্দ করে হাসল, ঐ বেঁটে বাঁটকুল আপনার বডিগার্ড। ওর এক ফোঁটাও দম নেই আপনার বডি গার্ড দেবে কি করে? এক ছুঁয়ে বীয়ারের গ্লাস থেকে ফেনা ফেলতে পারবে?

আড়চোখে দেখলাম বিলের দুহাত ট্রাউজারের দু পকেটে ঢুকিয়েছে। আমি জানি এক্ষুণি ওকে সরিয়ে না নিলে ওরদু পকেটে লুকানো দুটি পেতলের পাঞ্চ বিদ্যুতের বেগে আছড়ে পড়বেহ্যাংকের তলপেটে, চোয়ালে। আর ঐ ষণ্ডাটা কাটা কলাগাছের মত মেঝেয় মুখ থুবড়ে পড়বে।

আমি সতর্ক হলাম। বিলের ডানহাতের কব্জি শক্ত মুঠোয় চেপে ধরে বললাম, চলো বিল। আমাদের কাজ হয়ে গেছে। এবার যাওয়া যাক। বলে তাকে একরকম ঠেলতে ঠেলতে সরিয়ে নিয়ে গেলাম। দরজার কাছে নিয়ে মুখ ফিরিয়ে বললাম, তাহলে হ্যাংক, ঐকথাই রইল। টেলিফোন করবেন।

তুমি আমায় সরিয়ে আনলে কেন? বাঁদরটাকে মনের সুখে প্যাদাতাম।

 গাড়িতে উঠতে উঠতে বললাম, ধৈর্য ধরতে শেখো। প্যাদানোর সুযোগ পরে অনেক পাবে। এখনও তার সময় আসেনি।

এবার কি করবে?

এবার আমরা বাড়ি ফিরে যাবো। স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে বললাম, আমার এখনও মনে হচ্ছে এ কেসের সমাধানে টেরি আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করতে পারবে। দুটো ফাঁদ পাতলাম। অ্যাঞ্জেলা আর হ্যাংক দুজনেই জেনেছে যে টেরির দাম এখন এক লাখ ডলার। ওরা ঠিকই জানে। টেরি কোথায় আছে। আশা করছি ওদের দুজনের মধ্যে একজন টেরিকে ঠিকই খবরটা দেবে, তারপর টাকার লোভে সে এসে হাজির হবে।

ধরো, টেরি কোথায় তা ওদের দুজনের একজনও জানে না। তখন কি হবে?

 ওরা ঠিকই জানে টেরি কোথায় আছে। দেখা যাক। আগামীকাল সকাল নটায় তাহলে দেখা হবে।

খুব ভাল।

বিলকে তার আস্তানায় পৌঁছেদিয়ে বেলভিউতে ফিরে এলাম। লবী পেরিয়ে রিসেপশন ডেস্কে পৌঁছাতেই সুজি আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।

কিগো আজ রাতে বেরোবে কি?

অসম্ভব অর্ক। রাত তিনটের আগে আমার ছুটি মিলবেনা। আর তখন আমার বেড়াতে যাবার মত অবস্থা থাকবে না। একটু ধৈর্য ধরো সোনা বুধবার সন্ধ্যায় বেরোব।

দুজন বয়স্ক মোটাসোটা লোক রিসেপসশন ডেস্কে এল। একগাল হেসে সুজি তাদের সঙ্গে কথা বলল।

অগত্যা আমি আমার আস্তানায় ফিরে এলাম। স্নান সেরে কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম। তারপর গা এলিয়ে দিলাম বিছানায়।

.

 বিল আর আমি সকাল সাড়ে নটায় বসে আছি। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল।

রিসিভার তুলে বললাম, ওয়ালেস কথা বলছি। কি খবর হ্যাংক, বলেই বিলকে ইঙ্গিত করলাম এক্সটেনশন রিসিভারটা কানে লাগাতে। আমার আর হ্যাংকের যা কথাবার্তা হবে সব ও শুনতে পাবে।

বলো কোনও খবর আছে?

 হ্যাঁ, টেরিকে খুঁজে বের করেছি। ও, ওটা তাড়াতাড়ি পেতে চাইছে।

ওকে কোথায় খুঁজে পেলে?

 তা আপনার জেনে দরকার নেই, ও কবে টাকাটা পাবে তাই বলুন।

 চিন্তার কিছু নেই, হ্যাংক। আমি পরে আপনাকে ফোন করব। ও আমি পরে ঠিক সাজিয়ে নেব। সাজিয়ে নেব বলতে আপনি কি বলতে চান?

ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা অ্যাপয়েনমেন্ট করতে হবে। মিঃ অকল্যান্ড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। ওঁর সামনে টেরিকে সনাক্ত করার একটা ব্যাপার আছে, সেটা হয়ে গেলে টেরিকে কয়েকটা ফর্ম সই করতে হবে। কোন চিন্তা নেই, পরে আমি আপনাকে ফোন করব। বলে রিসিভারটা নামিয়ে রাখলাম।

বিল রিসিভার নামিয়ে বলল, ব্যাটা পাজীর পাঝাড়া।

হতে পারে, যাকগে। এবার শোন তোমায় কি করতে হবে। ডেড এন্ডনাইটক্লাবে গিয়ে হ্যারি রিচকে বলল যে টেরি ব্যাঙ্কে তার প্রাপ্য টাকা নিতে আসবে। সেখানে রিচ তাকে সনাক্ত করতে রাজি আছে কিনা। মনে হচ্ছে টেরিকে দেখবার জন্যে ও ঠিক ছুটে আসবে। তুমি এই কাজের ভারটা নাও। আমি অকল্যান্ডকে সামলাবার ভার নিচ্ছি।

কুড়ি মিনিটের মধ্যে ব্যাঙ্কে পৌঁছলাম। খবর দিতেই মিঃ অকল্যান্ড ডেকে পাঠালেন। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই মিঃ অকল্যান্ড গীর্জার বিশপের মত প্রসন্ন হাসি হাসলেন।

বলুন মিঃ ওয়ালেস, কাজকর্ম কি রকম এগোচ্ছে? বলে আমার সঙ্গে করমর্দন করলেন।

মিঃ অকল্যান্ড যতদুর খোঁজ পেয়েছি ব্রেকার্স বিল্ডিংয়ে মিস অ্যাঙ্গাস নামে এক ভদ্রমহিলা থাকতেন। মারা যাবার আগে তিনি টেরেন্স থরসেন ওরফে টেরি জিগলারের নামে আপনার ব্যাঙ্কে এক লাখ ডলার রেখেছেন, তা খবরটা কি ঠিক?

সবটা ঠিক, মিঃ ওয়ালেস। মিস অ্যাঙ্গাসের উকিল সলি লিউইস বলেছেন যে যতক্ষণ উনি মিঃ থরসেনকে খুঁজে না পাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত টাকাটা ব্যাঙ্কে থাকবে।

কিন্তু এর সঙ্গে আপনার তদন্তের কি সম্পর্ক?

মনে হচ্ছে টেরেন্স থরসেন আমাদের অনেক কাজে আসবে মিঃ অকল্যান্ড। ওর বন্ধুরা ওকে বলেছে যে ব্যাঙ্কে ওর নামে এক লাখ ডলার পড়ে পচছে। আমার ধারণা এবার টাকার জন্য ও ঠিক এসে হাজির হবে। ওর পাওনা হয়েছে তাই ওকে টেনে নিয়ে আসবে।

অকল্যান্ড নিজের মনে বললেন, চমৎকার!

আপনি আগে কখনও টেরেন্স থরসেনকে দেখেছেন?

একটু চমকে অকল্যান্ড বললেন, না, কখনও তাকে দেখিনি।

তাহলে কেউ এসে যদি বলে যে সেই টেরেন্স থরসেন তাহলে আপনি কোন বিশ্বাসে তাকে টাকা দেবেন?

তিনি উত্তেজিত ভাবে একবার চেয়ার ছেড়ে উঠে আবার বসে পড়লেন।

তাহলে বলছেন কোন আজেবাজে লোক এসে টাকাটা দাবী করতে পারে, যার উদ্দেশ্য প্রতারণা?

তা একলাখ ডলারের জন্য তেমন কাণ্ড ঘটা বিচিত্র নয়।

সে তো একশোবার মিঃ ওয়ালেস। টাকাটা দেবার আগে সনাক্ত করার একটা ব্যাপার আছে। টাকার দাবীদার যে সত্যিই টেরেন্স থরসেন, সে বিষয়ে আমায় নিশ্চিন্ত হতে হবে।

মিঃ অকল্যান্ড, সনাক্ত করার সব চাইতে ভালো লোক হল টেরির বোন অ্যাঞ্জেলা থরসেন। শুঁকে আপনি একবার আসতে বলুন। ও যদি নিজের ভাইকে সনাক্ত করে তাহলে কোন ঝামেলাই থাকে না।

এটা খুব ভাল বুদ্ধিই দিয়েছেন মিঃ ওয়ালেস।

তাহলে আজ দুপুরে টেরিকে আনানোর ব্যবস্থা করা যাক। কি বলেন?

একমিনিট। মিঃ অকল্যান্ডার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক দেখে বললেন, তিনটে নাগাদ করা হোক।

তাহলে মিস থরসেনকে টেলিফোন করে একবার আসতে বলুন না? আমার তো মনে হচ্ছে এতদিন পরে উনি ভাইকে দেখে খুশিই হবেন।

হ্যাঁ, তা তো বটেই। থরসেন পরিবারকে সাহায্য করতেই তো আমি চাই। দেখি ওকে পাই কি না, বলে মিঃ অকল্যান্ড সুইচ টিপে মিস থরসেনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেন।

পাঁচ মিনিট পর অ্যাঞ্জেলার লাইন পাওয়া গেল।

হ্যালো। আমি প্যাসিফিক অ্যান্ড ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকে হোরেস অকল্যান্ড বলছি। আপনাকে ডিসটার্ব করছি না তো?

উল্টোদিকের কথা আমি বুঝতে পারলাম না।

আপনি কি জানেন যে আপনার ভাই টেরেন্সের নামে এক ভদ্রমহিলা উইলে এক লাখ টাকা দিয়ে গেছেন?

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বললেন, হ্যাঁ মিঃ ওয়ালেস যথেষ্ট সাহায্য করছেন। মিস থরসেন, এখন ব্যাপার হল যে যিনি ঐ টাকা দাবী করবেন তার পরিচয় সম্পর্কে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে। আমি আপনার ভাইকে আগে কখনও দেখিনি, তাই চাই তাকে সনাক্ত করা হোক। আজ বিকেল তিনটেয় একবার আসুন না। এসে আমার পক্ষ থেকে আপনার ভাইকে সনাক্ত করে যান।

ও পক্ষের বক্তব্য শুনে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তা আমি বুঝতে পারছি। আপনি অনেকদিন আপনার ভাইকে দেখেন নি। এতদিন বাদে তাকে দেখতে পেলে আপনিও খুব খুশি হবেন। তাহলে আপনি বিকেল তিনটেয় এখানে আসছেন। ধন্যবাদ, বলে মিঃ অকল্যান্ড রিসিভার রাখলেন।

উনি রাজী হয়েছেন। বলছেন আমাদের সাহায্য করতে পারলে খুব খুশি হবেন। আমি এর মধ্যে অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

মিঃ অকল্যান্ডের জন্য দুঃখ হল। অ্যাঞ্জেলা যে কি চীজ তা উনি না জানলেও আমি জানি। ও মেয়েকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।

উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, খুব ভাল কথা। তাহলে আমি ঠিক তিনটের সময় আসব।

তাই আসুন মিঃ ওয়ালেস। মিঃ অকল্যান্ড করমর্দন করে বললেন, ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং হবে বলে মনে হচ্ছে।

আমারও তাই ধারণা, আচ্ছা পরে দেখা হবে বলে বেরিয়ে এলাম।

প্যাসিফিক অ্যান্ডন্যাশনাল ব্যাঙ্কে ঠিক পৌনে তিনটেয় ঢুকলাম। মিস বার্চের কাছে গিয়ে একটু বন্ধুত্বপূর্ণ হাসতেই তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, মিঃ অকল্যান্ড এখন ব্যস্ত আছেন।

ঠিক আছে, ওকে শুধু বলুন যে আমি এসেছি, বলে আমি চেয়ারে বসলাম।

আমি ও বিল কিছু হালকা খাবার খেয়ে লাঞ্চ সেরেছি। খেতে খেতে বিল বলছে যে শুধু হ্যারি রিচইনয় সেইসঙ্গে সেমিস লিজা ম্যানচিনি এক যুবতীর সঙ্গেও দেখা করে এসেছে। টেরি নিখোঁজ হবার আগে পর্যন্ত লিজা নামে ঐ যুবতীটি ছিল তার বান্ধবী।

চমৎকার কাজ করেছ বিল। তদন্ত করতে করতে একদম ভেতরে ঢুকে যাওয়া একেই বলে। খুব সময় মত কাজটা করেছে।

হ্যামবার্গার চিবোতে চিবোতে বিল বলল, ভাবনার কিছু নেই। রিচ আসলে টেরির সঙ্গে কথা বলতে চায়। মতলব একটাই, সে হল বুঝিয়ে সুঝিয়ে কোনমতে টেরিকে ওর নাইট ক্লাবে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। তাছাড়া শুধু হ্যারি নয় টেরির পাশে শোবে বলে লিজাও দস্তুরমত হাঁফাচ্ছে। ওরা দুজনেই আসতে রাজি হয়েছে।

খুব ভাল কথা। তুমি ঠিক তিনটে কুড়ি নাগাদ ওদের ব্যাঙ্কে আনবে তার আগে নয় কিন্তু। আমি ওদের দুজনকেই একটু অবাক করে দিতে চাই।

মিস বার্চ দশ মিনিট পরে বললেন, মিঃ অকল্যান্ডের হাত খালি হয়েছে এবার। আপনি ওর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

আকল্যান্ডের কামরায় ঢুকতেই তিনি যথারীতি করমর্দন করে গীর্জার বিশপের হাসি হাসলেন।

বুঝলেন মিঃ ওয়ালেস এটা খুবইনটারেস্টিং ব্যাপার হবে। উল্টোদিকের চেয়ারে আমাকে বসার ইঙ্গিত করে, আসলে এমন ব্যাপার তো আর রোজ রোজ ঘটে না। দরকারী কাগজপত্র সব আমি। আনিয়ে রেখেছি। মিঃ লিউইসের সঙ্গেও কথা বলেছি। মিস থরসেন ওঁর ভাইকে সনাক্ত করলেই ব্যাপারটা চুকে যাবে।

আমি শুধু হেসে সিগারেট ধরিয়ে চেয়ারে বসলাম। ঠিক তিনটে বাজতেই অকল্যান্ডের টেবিলের ওপরে রাখা ইন্টারকমটা বেজে উঠল। মিঃ অকল্যান্ড টিপতেই মিস বার্চের গলা শোনা গেল। মিঃ টেরি থরসেন এসেছেন।

ওকে ভেতরে পাঠিয়ে দাও। বলেই অকল্যান্ড বললেন, এটা ইন্টারেস্টিংয়ের চাইতেও বেশি কিছু।

সত্যিই তাই। পরক্ষণে দরজা ঠেলে বছর পঁচিশের একটি ছেলে ভেতরে ঢুকল। ছেলেটির গায়ে সাদা শার্ট, পরনে কালো ট্রাউজার্স, পায়ে মেক্সিকান বুট জোড়া। সেই বুটের ভেতর ট্রাউজার্সের তলার দিকটা গোঁজা। মাথার চুলকাঁধে এসে ঠেকেছে। ছেলেটার গড়ন খুবই পাতলা আর ছিপছিপে মুখখানা ঠিক ইঁদুরের মত আর দু চোখের দৃষ্টিতে সন্দেহের ছোঁয়া।

অকল্যান্ড চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আপনিই মিঃ টেরি থরসেন?

হ্যাঁ, ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ইনি কে?

আমি দাঁড়িয়ে বললাম, আমার নাম ওয়ালেস মিস অ্যাঙ্গাসের অ্যাটর্নি মিঃ সলি লিউইসের পক্ষে আমি কাজ করছি।

 ছেলেটি অকল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে, নিন, যাকরবার চটপট করুন। আমার তাড়া আছে। টাকাটা কোথায়? তার গলা বেশ কর্কশ আর ব্যবহারও অভদ্র গোছের।

মিঃ অকল্যান্ড গভীর ভাবে বললেন, টাকাটা দেবার আগে আপনাকে সনাক্ত করার একটা ব্যাপার আছে মিঃ থরসেন।

ছেলেটা তেরিয়া হয়ে বলল, সনাক্তকরণ? তার মানে? আপনি কি বলতে চাইছেন?

আবার ইন্টারকম বেজে উঠল। মিস থরসেন এসেছেন মিঃ অকল্যান্ড, ওকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

এই তো আপনার বোন এসে পড়েছে মিঃ থরসেন। এতদিন বাদে আপনি ওকে দেখতে পেয়ে নিশ্চয়ই খুব খুশি হবেন।

অ্যাঞ্জেলা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। তার গায়ে সোয়েট শার্ট, পরনে নীল রংয়ের জিনস, মেক্সিকান টুপি আর চোখে সানগ্লাস। অ্যাঞ্জেলা দুহাত বাড়িয়ে ছেলেটার দিকে এগোলো।

অ্যাঞ্জেলা উল্লাস ভরা গলায়, টেরি! কি অদ্ভুত ব্যাপার। কতদিন পর তোমায় কাছে পেলাম।

কিন্তু টেরির মধ্যে কোন আনন্দ বা উল্লাস নেই। উত্তাপহীন গলায় বলল, শোন, আমরা পরে, কথা বলব। আগে টাকাটা আমার চাই। তারপর এই বাজে জায়গা থেকে বেরিয়ে যা বলার বলব।

সে তো একশোবার টেরি। অকল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে অ্যাঞ্জেলা বলল, এ হল আমার ভাই টেরি। ওকে টাকাটা কি এখন দেবেন? দিলে ভাল হয়। এতদিন বাদে দেখা হল অনেক কথা জমে আছে।

নিশ্চয়ই মিস থরসেন। তাহলে আপনি ওকে টেরেন্স থরসেন বলে সনাক্ত করছেন তো?

তীক্ষগলায় অ্যাঞ্জেলা বলল, আমি এক্ষুণি সেই কথাই বললাম। নয় কি? টাকাটা ওকে দিয়ে দিন। ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক কথা জমা আছে।

মিঃ অকল্যান্ড কয়েকটা কাগজ ছেলেটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এগুলোতে সই করে দিন তারপর আমি আপনার টাকাটা দেবার ব্যবস্থা করছি। বলুন, টাকাটা আপনি কিভাবে পেতে চান?

নগদ চাই, পুরোটা, বলেই অকল্যান্ডের হাত থেকে কলমটা ছিনিয়ে নিয়ে টিক দেওয়া জায়গায় সই করতে লাগল।

ওর সই করার ফাঁকে আমি বাইরে আসতেই দেখি দুই যুবক যুবতীকে নিয়ে বিল দাঁড়িয়ে। বুঝলাম এরাই হ্যারি রিচ আর লিজা ম্যানচিনি।

 মিঃ রিচ আমার সঙ্গে একটু আসুন। বলে বিলকে ইঙ্গিত করলাম যেন লিজা ম্যানচিনিকে একটু আটকে রাখে। তারপর তাকে নিয়ে অকল্যান্ডের কামরায় ঢুকলাম।

অকল্যান্ড বললেন, ইনি কে?

এ ভদ্রলোকের নাম হ্যারি রিচ, ইনি একটি নাইট ক্লাবের মালিক। ওঁর নাইট ক্লাবে মিঃ থরসেন পিয়ানিস্টের চাকরী করত। মিঃ থরসেনকে সবাই টেরি জিগলার বলেই জানত। আমার মনে হয় টাকাটা দেবার আগে মিঃ রিচের একবার ওকে টেরি জিগলার বলে সনাক্ত করা দরকার।

অকল্যান্ড আমতা আমতা করে, কিন্তু মিস থরসেন তো আগেই ওকে সনাক্ত করেছেন।

রিচের দিকে তাকিয়ে বললাম। মিঃ রিচ দেখুন তো, এই ছেলেটিই কি টেরি জিগলার?

ছেলেটির দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে হ্যারি মাথা নেড়ে বলল, উঁহু, ও টেরির মতই সাজগোজ করেছে বটে। কিন্তু ও টেরি নয়, ওকে আমি চিনি না। এটুকু বলতে পারি যে ও টেরি জিগলার নয়।

ঠিক বলছেন তো মিঃ রিচ?

আলবাৎ। বেশ কয়েক মাস টেরি আমার কাছেকাজ করেছে। প্রত্যেক হপ্তায় আমি নিজে হাতে, ওকে প্রাপ্য বেতন দিয়েছি। আপনি কি করতে চাইছেন জানি না কিন্তু শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করছেন মিঃ ওয়ালেস। বলে রিচ গটগট করে বেরিয়ে গেল।

একটা ধাক্কা অকল্যান্ড খেয়েছে

বুঝতে পারছি কিন্তু তাকে কিছুসুযোগনা দিয়েই বাইরে থেকে মিস লিজা ম্যানচিনিকে ভেতরে নিয়ে এলাম।

 ইনি হলেন মিস লিজা ম্যানচিনি। টেরি থরসেন ওরফে টেরি জিগলারের সঙ্গে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে ছিলেন। টেরির সঙ্গে দেখা হবে জেনে ছুটে এসেছে। দেখুন তো মিস ম্যানচিনি, এই লোকটিই টেরি জিগলার কি না?

একপলক তাকিয়েই মিস লিজা ভুরু কুঁচকে ঘেন্না জড়ানো গলায় বলল, এই উল্লুকটা টেরি হতে যাবে কোন দুঃখে? আপনি কি ভেবেছেন এতদিন বাদে টেরিকে দেখলে আমি চিনতে পারব না?

তাহলে আপনি বলছেন এ টেরি জিগলার নয়?

তাই বলছি। আপনি কি ভেবেছেন এই উল্লুকটার সঙ্গে আমি শুতে যাব? সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, হা ভগবান! ভেবেছিলাম সত্যিই এতদিন বাদে টেরির সঙ্গে আবার দেখা হবে।

বিল তার পাশেই দাঁড়িয়েছিল। তার হাতটা চেপে ধরে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল।

কামরার ভেতরে কারও মুখে কোন কথা নেই। ছেলেটি কুলকুল করে ঘামতে লেগেছে, রাগে দুচোখ লাল। অ্যাঞ্জেলা পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে। অকল্যান্ডকে দেখে মনে হল তার শিরদাঁড়া ভেঙ্গে গেছে।

অ্যাঞ্জেলার গলায় রুক্ষতা, মিঃ অকল্যান্ড! আমি আবার বলছি যে ছেলেটি আমার ভাই। কোথাকার এক সস্তা নাইট ক্লাবের মালিক আর একটা রাস্তার বেশ্যা কি বলে গেল সেই কথা আপনি মেনে নেবেন?

নিশ্চয়ই না, মিস থরসেন। তবে কোথাও নিশ্চয়ই কোনও ভুল ভ্রান্তি হয়েছে।

চড়ালে গলায় অ্যাঞ্জেলা, ভুল ভ্রান্তি কিছুই হয়নি। টেরি টাকাটা পাক তা ওরা চায় না। ওরা জেনেশুনে মিথ্যে বলছে। আপনি আমার ভাইকে টাকাটা দেবার ব্যবস্থা করুন।

 মিঃ অকল্যান্ডকে দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই ওঁর স্ট্রোক হবে। আমি ওঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার পুরনো পুলিশি মেজাজে বললাম, শুনুন মিস থরসেন, এই টাকাটা ওকে পাইয়ে দেবার কোনও অধিকার মিঃ অকল্যান্ডের নেই। মিস অ্যাঙ্গাসের উইল যার হেপাজতে আছে সেই মিঃ লিউইসের হয়ে আমি কাজ করছি। আমি কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারি নি। আপনি বলছেন এই ছেলেটি আপনার ভাই। দুজন লোক যারা বেশ কিছুদিন ধরে আপনার ভাইকে দুবেলা দেখেছে তারা বলছে এ সেই লোক নয়। এই ছেলেটি আপনার ভাই সে বিষয়ে আমি যতক্ষণ না নিশ্চিন্ত হচ্ছি ততক্ষণ মিঃ অকল্যান্ডেরও এক লাখ ওকে দেবার অধিকার নেই।

অ্যাঞ্জেলা ঘুরে দাঁড়াল। ওর পাতলা শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। আর তাই দেখেই আমি বুঝলাম ও কি সাংঘাতিক রেগে গিয়েছে।

অ্যাঞ্জেলা চাপাস্বরে বলল, আমি দাবী করছি আমার ভাইকে তার পাওনা টাকা দিয়ে দেওয়া হোক।

ভাবনার কিছু নেই। রাস্তার ওপরেই আছে ইডেন নাইট ক্লাব। চলুন সবাই মিলে একবার সেখানে যাওয়া যাক। ওখানকার মালিক আমার বন্ধু। আমি তাকে বলে আপনার ভাইকে পিয়ানোর সামনে বসতে বলছি। যদি ও সত্যিই ফ্যাটেস ওয়ালারের মত বাজাতে পারে তাহলে টাকা পাবার কোন অসুবিধেই হবে না। কেমন রাজি তো?

ছেলেটা আমার কথায় ক্ষেপে উঠল। গলা চড়িয়ে বলল, তখনই জানতাম! বারবার ঐ কেলে উকটাকে বলেছিলাম এই মতলবে কাজ হবেনা। আর তুই! সেঅ্যাঞ্জেলার দিকে তাকিয়ে বলল, তোকেও বলেছিলাম রে মাগী! এতে কাজ হবে না। বলেই ও আমায় ঠেলে ঝড়ের মত বেরিয়ে গেল।

তাহলে মিঃ অকল্যান্ড এই ব্যাপার, অকল্যান্ডের চুপসে যাওয়া বেলুনের মত মুখের দিকে তাকিয়ে আমার কষ্ট হল। টেরি থরসেনফিরে এলে আমি আপনাকে হুঁশিয়ার করে দেব। অ্যাঞ্জেলার দিকে ফিরে বললাম, চমৎকার খেলাটা খেললেন বটে মিস থরসেন। কিন্তু তেমন জমল না, এই দুঃখ।

আপনাকে এর জন্য পস্তাতে হবে। সত্যিই পড়াতে হবে।

তাড়াতাড়ি বড় হয়ে উঠুন মিস থরসেন। এখনও ছেলেমানুষ আছেন। টাকাই কিন্তু সব নয়। শান্তগলায় বলে আমি বেরিয়ে এলাম। অকল্যান্ডকে এখন এই বদমাশ মেয়েটাকে সামলাতে হবে। তার কথা ভেবে সত্যিই আমার দুঃখ হচ্ছে।

কামরার বাইরে এসে গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি গাড়িও নেই বিলও নেই। অগত্যা একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা অফিসে ফিরে এলাম। থরসেন কেসের ওপর একটা রিপোর্ট এখুনি লিখতে হবে।