৩. ছোট ঘিঞ্জি বাড়ি

০৩.

সলি লিউইসকে একটি ছোট ঘিঞ্জি বাড়ির শেষ তলায় খুঁজে পেলাম। তার সামনে একটা পুরোনো আধভাঙ্গা টেবিল, তোবড়ানো একটা ফাইলিং ক্যাবিনেট। একটা ছোট্ট টেবিলের ওপর টাইপরাইটার রাখা আছে। বুঝতে পারলাম টাইপের কাজটা ও নিজেই করে।

একটা পাতলা ফাইল নিয়ে টেবিলের সামনে ও বসেছিল। সে ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল। বয়স পঁয়ত্রিশেক। মাঝারী লম্বা, মাথাভর্তি ঘন কালো চুল, একরাশ দাড়ি গোঁফের জঙ্গলে মুখখানা ঢাকা। পোশাক বেশ পুরোনো। আর এত রোগা যে মনে হয় সপ্তাহে একদিন হয়তো তার পেট পুরে খাওয়া জোটে।

বলুন, আমি কি করতে পারি আপনার জন্য? বলে সে আমার সঙ্গে করমর্দন করল। আমি আমার কার্ড বের করে তাকে দিলাম। সে কার্ডটা খুঁটিয়ে দেখে আমাকে চেয়ারে বসতে বলল। চেয়ারটায় বসতে ভয় হল যদি ভেঙ্গে যায়।

আপনাদের এজেন্সী সম্পর্কে আমি সবকিছুই জানি। বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?

আমি জানতে পেরেছি আপনি মৃত মিস অ্যাঙ্গাসের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা।

হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন।

টেরেন্স থরসেন বা টেরি জিগলার নামে কাউকে চেনেন বা ঐ নামটা আগে কখনও শুনেছেন?

 টেরি জিগলার? হ্যাঁ নিশ্চয়ই শুনেছি।

আমি ওকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। মিস অ্যাঙ্গাসের ওর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল শুনেছি, তাই আশা করেছিলাম উনি আমায় ওর খোঁজ দিতে পারবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি বেঁচে নেই। কাজেই মনে হল উনি বেঁচে থাকতে নিশ্চয় তার কথা আপনাকে বলে থাকবেন। সে কথা ভেবেই আমি আপনার কাছে এলাম।

আপনি ওকে খুঁজছেন কেন?

ওকে খুঁজে বের করার জন্য অ্যাকমে এজেন্সীকে ভাড়া করা হয়েছে। মক্কেল কে তা আমি জানি না। আমায় শুধু ওকে খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।

তাহলে তো দেখছি আপনার আর আমার একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। লিউইস চেয়ারে গা এলিয়ে বলল, মিস অ্যাঙ্গাস ওঁর সব টাকাকড়ি জিগলারকে দিয়ে বসে আছেন। জিগলারকে যতক্ষণ খুঁজে বের করতে না পারছি ততক্ষণ আমি ওঁর সম্পত্তির বিলি বন্দোবস্ত করতে পারছি না এবং এখনও পর্যন্ত আমি সফল হইনি।

কিন্তু আমি যতদূর জানি মিস অ্যাঙ্গাসের অবস্থা ভাল ছিল না, উনি জিগলারের ঘরদোর সাফ করতেন। ওঁর সবকিছু উনি কিভাবে তাহলে ওকে উইল করে দিয়ে গেলেন?

ওঁর সম্পত্তির মোট পরিমাণ এক লাখ ডলারের মত। তাও করের আওতায় আসে না। সলি লিউইস বলল, আসলে উনি একটু ক্ষ্যাপা গোছের ছিলেন। উনি কখনও টাকা খরচ করতেন না, আগলে থাকতেন। আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম যে এভাবে খামের ভেতর সব টাকা পুরে বাড়িতে রাখা ঠিক নয়। ব্যাঙ্কে টাকা রাখার জন্যে আমিই ওকে পীড়াপীড়ি করতাম। উনি শেষ পর্যন্ত আমার কথা শুনেছিলেন।

উনি ব্যাঙ্কে টাকা রেখেছিলেন এ সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত?

হা, খোঁজ নিয়েই নিশ্চিত হয়েছি। খুন হবার চারদিন আগে উনি প্যাসিফিক অ্যান্ড ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে টাকা রেখেছিলেন। ওখানকার জেনারেল ম্যানেজার মিঃ অকল্যান্ডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। জিগলারকে খুঁজে বের করাটুকু বাকি।

ওকে খুঁজে বের করতে আপনি কি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?

সবাই যা ব্যবস্থা নেয়, তাই নিয়েছি। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। পুলিশে খবর দিয়েছি, পার্সনাল বুরোকে জানিয়েছি। দুমাস হয়ে গেল জিগলারকে খুঁজে বার করতে পারিনি। কিন্তু আপনিও তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আপনি না পারলে আর কে পারবে?

ধরুন সে যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে? সে ক্ষেত্রে টাকাটা কি হবে?

 মিস অ্যালাস খুন হবার পর যদি ও মারা গিয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ওর পরে যে ভাই বোন আছে সে টাকাটার মালিক হবে। কিন্তু ও যে মারা গেছে সে সম্পর্কে আমায় নিশ্চিত হতে হবে।

আমি ট্যাক্সিতে চেপে অফিসে ফিরে টেবিলে বসে সবে টাইপ করতে শুরু করেছি, এমন সময় বিল ঘরে এসে ঢুকল।

চেয়ারে বসতে বসতে বিল বলল, বাপরে বাপ। বাইরে বিশ্রী গরম।

 কিছু পেয়েছো?

তুমি ঠিকই ধরেছিলে। তুমি চলে যাবার কিছুক্ষণ বাদে ভেতর থেকে একটা ধেড়ে বদখত গুণ্ডা টাইপের কালোলোক বেরিয়ে এলো। একটা সাদা ক্যাডিলাকে চেপে চলে গেল। আমিএ তার পিছু নিলাম। ও ব্ল্যাক ক্যাসেট রেস্তোরাঁর সামনে গাড়ি দাঁড় করালো। সে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা অল্পবয়সী কালো বেরিয়ে এসে সেই ক্যাডিলাকটা নিয়ে চলে গেল।

ঐ ধেড়ে বদখত গুণ্ডাটার চেহারার বর্ণনা দাও।

ও ব্যাটা যে গুণ্ডা তা তাকে একবার দেখলেই বোঝা যায়। লম্বায় প্রায় ছ ফুট দু ইঞ্চি, কাঁধের মাপ একগজের কম হবে না। ঘামে ভেজা জামার ভেতর থেকে ওর বুক ও পিঠের পেশীগুলো ফুলে ফুলে উঠছিল। লোকটার চাউনি ঠিক গোখরো সাপের মত। ওই যে স্মেডলি সেটা নিশ্চিত।

দু ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। দু ঘন্টা আগে ডলি গিলবার্টের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন সময় হয়েছে ওর সঙ্গে দেখা করার। আমার রিপোর্ট বিলকে দিয়ে ডলি গিলবার্টের আস্তানায় গেলাম।

কলিংবেল টেপার সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে গেল। ডলি সামনেই দাঁড়িয়ে। তার মুখে সেই চিরন্তন মোহিনী হাসি। পৃথিবীর সবদেশের পন্যা মেয়েদের মুখে যা ফুটে ওঠে।

 ভেতরে এসো নাগর। দেরী হয়ে গেল, কিন্তু কি করব বল। ও লোকটা যখনই আসে তখনই এমন সময় নেয়। ভয়ে কিছু বলতেও পারি না।

ডলির অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকেই সে সদর দরজার ছিটকিনি এঁটে দিয়ে আমায় তার শোবার ঘরে নিয়ে চলে এল।

আমার হাতে বড্ড সময় কম গো সোনা। পঞ্চাশ ডলার দাও তারপর যা করার করো। আমি কিছু না বলেই তার চোখের দিকে তাকাতেই সে অস্বস্তি বোধ করে চাপা গলায় বলল, ওরকম করে আমায় দেখছো কেন, তুমি কি ভয় পেয়েছে?

না, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই ডলি, বলেই তাকে পাঁজাকোলা করে তুলে বসার ঘরে নিয়ে এলাম। আমার লাইনের ব্যাপার স্যাপার একটু অন্যরকম, বলে তাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে আমার কার্ডখানা দেখালাম।

চাপা রুক্ষ গলায় চেঁচিয়ে উঠলো, দূর হয়ে যাও এখান থেকে, হতচ্ছাড়া। গোয়েন্দাগিরি করার আর জায়গা পাওনি?

আমি একটা খবরের জন্য তোমার কাছে এসেছি। খবরটা দিলে একশো ডলার পাবে।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, টাকাটা দেখি।

ওয়ালেট থেকে একটা একশো ডলারের নোট বের করে তার নাকের সামনে একবার নেড়ে আবার ভাজ করে মুঠো করে রাখলাম।

কি ঠিক করলে? খবরটা দেবে?

ততক্ষণে ও জামাকাপড় খুলে উলঙ্গ হয়েছে। ডলির চেহারার চটক আছে, পাতলা ছিপছিপে গড়ন, বুকের গড়নও সুন্দর, পেট আর কোমর চমৎকার। তবু কেন যেন আমার গা ঘিন ঘিন করতে লাগল।

কি খবর চাও?

আমি টেরি জিগলারকে খুঁজছি।

সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক ও চাপা গলায় ডলি বলল, টেরির খোঁজ আমার কাছে পাওয়া যাবে এ ধারণা তোমার কি করে হল?

তোমার কাছে খোঁজ পাব কিনা জানি না। তবে আমি শুনেছি ও চলে যাবার কয়েকঘন্টার মধ্যে তুমি এখানে আস্তানা গেড়েছে। ভেবেছিলাম ও হয়ত তোমায় বলেছিল যে এই আস্তানাটা ফাঁকা হচ্ছে। সেই কারণেই হয়ত তুমি জানো ও কোথায় আছে?

টাকাটা আমায় দেবে তো? ওটা এক্ষুনি আমায় দাও না।

আমায় খবরটা জানালেই এটা তোমায় দিয়ে দেব। ও যে এখান থেকে চলে যাবে সে কথা আগে তোমায় বলেছিল?

না, কিন্তু এই অ্যাপার্টমেন্ট কঁকা হচ্ছে সে খবর আগেই পেয়েছিলাম। টেরির সঙ্গে আমার মেলামেশা না থাকলেও এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে।

টেরি জিগলারকে কোথায় খুঁজে পাব তা তুমি সত্যিই জানো না?

ও কি ঝামেলায় পড়েছিল, তাই খুব তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে গেছে।

না, ঝামেলায় পড়েনি। ও একজনের কাছে টাকা পায়। আমার কাজ ওকে খুঁজে বার করে টাকাটা ওর হাতে তুলে দেওয়া।

ডলি চোখ বড় করে বলল, কত টাকা?

 সে আমি জানি না, জানার দরকারও নেই। টেরিকে কোথায় পাব তা তুমি বলবে কি বলবে না?

বিশ্বাস করো নাগর, ও কোথায় আছে আমি সত্যিই জানি না। ইস, ঐ হতচ্ছাড়া হাতে কতগুলো টাকা পাবে। আচ্ছা, আমি যদি এরকম টাকা পেতাম।

টেরিকে হতচ্ছাড়া বলছ কেন?

আমি বহুবার ওকে দেখেছি। কোনদিন মুখ ফুটে একটা কথা আমায় বলেনি। এমন ভাবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত যেন আমি একটা আশ্চর্য চীজ, সত্যিই ও খুব ভাল পিয়ানো বাজাত।

ওর সম্পর্কে তোমার কি ধারণা? ছেলেটা পাগল না বদমাশ?

 কি করে বলব, বল? এখানে যারা আছে তাদের সবার পেছনে কিছু না কিছু রহস্য আছে।

ধন্যবাদ, বলে আমি একশো ডলারের নোটখানা তাকে দিলাম। সে সেটা হাতে নিতেই আমি বললাম, হ্যাংক স্মেডলি কি এখানে প্রায়ই আসে?

ডলির মুখখানা আমার কথায় একেবারে সাদা হয়ে গেল।

ডলি চেঁচিয়ে উঠল, দূর হয়ে যাও। যথেষ্ট সহ্য করেছি, আর নয়। এক্ষুনি দূর হও বলছি।

ডলির মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখতে পেলাম।

 হাজার প্রলোভন দেখিয়েও এখন ওর কাছ থেকে আর কিছু আদায় করতে পারব না, তাই বেরিয়ে লিফটে চড়ে নীচে নামলাম।

অফিসে ফিরে দেখি বিল তার টেবিলে বসে চুইংগাম চিবোতে চিবোতে আমার রিপোর্ট মন দিয়ে পড়ছে।

ডলির কাছ থেকে যা জেনেছি তা ওকে বললাম। বিল বলল, দ্যাখো ডার্ক, আমি তোমার সঙ্গে একমত হতে পারছি না। টেরি থরসেন সম্পর্কে তোমার এত কৌতূহল কেন? আমাদের তো…

ঠিক কথা, কিন্তু আমরা কোন সূত্র পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে যে টেরির খোঁজ নিলে ও আমাদের ঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। আর ঠিক সেই কারণেই ওকে খুঁজে বের করে ওর সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।

হ্যাংক স্মেডলির ওপর কি আমাদের নজর রাখা উচিত না?

তার আগে টেরিকে আমাদের দরকার।

তুমি আমার ওপরওয়ালা, তুমি যা ভাল বুঝবে তাই করবে। এবার কি করবে?

 তুমি বাড়ি গিয়ে খেয়েদেয়ে চটপট শুয়ে পড়বে। আমি রিপোর্ট দেখা হয়ে গেলে বাড়ি গিয়ে শুয়ে পড়ব।

তুমি ঠিক আছ তো ডার্ক?

কথা না বাড়িয়ে কেটে পড়ো।

আমার ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেখলাম খুব মজবুত একটা নতুন তালা দরজায় লাগানো আর চাবিদুটো লেটার বক্সে রাখা ছিল। দেয়ালের সেই বিশ্রী হুঁশিয়ারী, সাদা রং দিয়ে ভাল করে মুছে ফেলা হয়েছে, ভেতরের সবকিছুই আবার আগের মত রয়েছে। সুজিকে ধন্যবাদ জানাবার জন্য বেলভিউ হোটেলে ফোন করে জানতে পারলাম ও একগাদা টুরিস্টকে নিয়ে খুব ব্যস্ত আছে। দু ঘণ্টা পর হয়ত টেলিফোন ধরার ফুরসৎ পাবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিসিভারটা রাখলাম।

পরদিন একটু সকাল সকাল অফিসে এসে রিপোর্ট টাইপ করছি তখন বিল এল।

বিল বলল, রাতে ভাল ঘুম হয়েছে তো?

বিল, তোমায় একটা ওল্ডসমোবাইল গাড়ি খুঁজে বার করতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি দরকার। গাড়ির নম্বরটা লিখে নাও, পি সি ১০০০১।

এক্ষুনি যাচ্ছি, বলেই বিল বেরিয়ে গেল।

আমি রিপোর্ট টাইপ শেষ করে গ্লেন্ডার কামরায় ঢুকলাম। ও সবে অফিসে এসে সেদিনের ডাকে আসা চিঠিপত্রে চোখ বুলাচ্ছিল।

এই যে গ্লেন্ডা, মিসেস থরসেনের কেসের ব্যাপারে তোমার সঙ্গে কথা বলতে এলাম।

 নতুন কিছু পেলেন?

যেটুকু জেনেছি সেটুকু গ্লেন্ডাকে জানালাম। সেই সঙ্গে এও বললাম, মনে হচ্ছে অ্যাঞ্জেলা থরসেন ঐ ব্ল্যাক ক্যাসেট রেস্তোরাঁয় কাউকে টাকা দিচ্ছে। সে লোক হ্যাংক স্মেলি না অন্য কেউ বলতে পারছি না। অ্যাঞ্জেলা বা হ্যাংকের সঙ্গে কথা না বলে কোনও পথই খুঁজে পাব না মনে হচ্ছে। টেরিকে খুঁজে পেলে খুব কাজ হত। তবে এ কেসে সফল হতে সময় লাগবে।

আমরা মিসেস থরসেনের কাছ থেকে তদন্তের খরচ বাবদ প্রতিদিন তিন হাজার ডলার করে নিচ্ছি। আপনি বরং তার সঙ্গে একবার দেখা করে জেনে নিন উনি কাজ চালিয়ে যাবেন কিনা। ওঁর প্রতিক্রিয়া কি হয় তা একবার দেখে আসুন।

গ্লেন্ডা বাজে উপদেশ দেয়নি। এখন সকাল দশটা বেজে কুড়ি মিনিট হয়েছে। আমি মিসেস থরসেনের বাড়িতে ফোন করলাম।

উল্টোদিক থেকে শোনা গেল বাটলার স্মেডলি ফোন ধরেছে।

মিসেস থরসেনের সঙ্গে কথা বলব, আমি মিঃ ওয়ালেস বলছি।

আপনি গোয়েন্দা ভদ্রলোক তো? একটু থেমে স্মেডলি জানতে চাইল।

ঠিক ধরেছো, এখন ওকে ফোনটা দাও।

 মিসেস থরসেন বাড়ি নেই মিঃ ওয়ালেস, উনি সন্ধ্যের আগে ফিরবেন না।

তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখলাম। তারপর কাগজে কিছু লিখে বিলের টেবলে চাপা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়িতে চেপে হাজির হলাম থরসেনের প্রাসাদে। মিসেস থরসেন বাড়িতে না থাকায় ভাল হয়েছে কারণ এই ফাঁকে আমি জোশ স্মেডলির সঙ্গে কথা বলতে পারব।

ঘণ্টা বাজাবার পর দরজা খুলল, মুখ বের করে স্মেডলি বলল, দুঃখিত মিঃ ওয়ালেস, মিসেস থরসেন বেরিয়েছেন।

 সে তো তুমি ফোনে বলেছ, বলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম, জোশের কাঁধে হাত রেখে বললাম, তোমার সঙ্গে আমার কথা বলা দরকার, জোশ।

মাপ করবেন মিঃ ওয়ালেস, জোশ স্মেডলি বিরক্তির সুরে বলল, আমি ব্যস্ত আছি।

ঠিক আছে, তোমার ঘরে চলোনা বাপু। আমি হাতখানা ধরে বন্ধুর মত বলি, কয়েকটা প্রশ্ন করব, ব্যস।

কিছুক্ষণ সে আমায় দেখল, তারপর একখানা বড় ঘরে নিয়ে এল। ভেতরে আর্মচেয়ার, একটা খাট, কয়েকটা আলমারী, বাথরুম সবই রয়েছে। জোশ স্মেডলি বিলাসিতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

গলাটা শুকিয়ে আছে জোশ, একটু স্কচ ঢালল।

দেয়ালের আলমারী খুলে কুটি সার্কের বোতল আর দুখানা গ্লাস বের করল। দেখলাম আলমারীর ভেতরে আরও অনেক সাজানো আছে কুটি সার্কের বোতল।

আমায় গ্লাস দিয়ে একটা চেয়ারে বসল জোশ, এক চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করল, বলুন মিঃ ওয়ালেস, আপনি কি জানতে চান?

অ্যাঞ্জেলাকে কেউ ব্ল্যাকমেল করছে কিনা, করলে তার কারণ এবং কে সেই লোক তা খুঁজে বের করার জন্য মিসেস খরসেন আমায় ভাড়া করেছেন। আশা করি তোমার অজানা নয়।

সে মাথা নাড়াল।

 এখানে যা ঘটেছে বা ঘটছে তার সবই তুমি জানো, তাই না জোশ?

আমি ত্রিশবছর যাবৎ মিঃ আর মিসেস থরসেনের সেবা করে আসছি, কিছুটা সতর্ক ভঙ্গিতে জোশ বলল।

বেশ, এবার বলত মিঃ থরসেন কি ধরনের লোক ছিলেন? ব্যাপারটা খুব গোপন জোশ, সেইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তা খেয়াল রেখো।

মিঃ থরসেন তো মারা গেছেন।

তা জানি জোশ, আমি জানতে চাইছি উনি কিরকম লোক ছিলেন?

মিঃ থরসেন কড়া ধাঁচের লোক ছিলেন, একটু চুপ করে জোশ বলল, উনি আমায় ভীষণ খাটাতেন। উনি পয়সার দিকে খুবই উদার। হ্যাঁ, মিঃ থরসেন খুব কড়া ধাঁচের লোক ছিলেন।

নিজের ছেলেমেয়ের সঙ্গেও কি উনি কড়া ব্যবহার করতেন?

মিঃ টেরির বেলায় কড়া ব্যবহার করতেন কিন্তু মিস অ্যাঞ্জেলার বেলায় ঠিক উল্টো অর্থাৎ নরম ব্যবহার। মিঃ টেরির পিয়ানো বাজানো ছিল ওঁর দুচোখের বিষ। হ্যাঁ, মিঃ টেরির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন। পরে মিঃ টেরি এ বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। জোশ স্মেডলি মুখ তুলে তাকাল, তার মুখখানা অদ্ভুত হাসিতে ভরে উঠল। মিঃ টেরি যতদিন ছিলেন ততদিন অশান্তি লেগেই থাকত। উনি চলে যাবার পর সব ঠিক হয়ে গেল। মিঃ থরসেনও মারা গেলেন। তারপর আর এক মুশকিল হল। মিস অ্যাঞ্জেলার সঙ্গে মা মিসেস থরসেনের প্রায়ই খিটিমিটি হতে লাগল। তাই শেষকালে মিস অ্যাঞ্জেলা বাড়ির বাইরে একটা বাংলোতে থাকতে শুরু করলেন। আমার স্ত্রীর সঙ্গেও আমার খিটিমিটি শুরু হল, তারপর সেও অ্যাঞ্জেলার কাছে চলে গেল, এখন ওরই দেখাশোনা করে।

এই দুই ভাইবোনকে তো তুমি ছেলেবেলা থেকে বড় হতে দেখেছো, টেরি সম্পর্কে তোমার মনোভাব কি?

জোশ গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, মিঃ টেরি খুব ভাল ছেলে ছিল মিঃ ওয়ালেস, ও প্রায়ই এখানে আসত এবং গল্প করত। আমার অতীত জীবনের আমার বাবা মার কথা সে মন দিয়ে শুনত। আমার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা নেই জেনে সে খুবই দুঃখ পেয়েছিল। মিঃ টেরি আমায় বলেছিল যে ওর বাবার সঙ্গে একসঙ্গে থাকা ওর পক্ষে আর সম্ভবনয়। মিঃ থরসেন অফিসে বেরিয়ে যেতেই মিঃ টেরি ওর ঘরে ঢুকে পিয়ানো বাজাতে শুরু করত। সত্যিই ছেলেটার প্রতিভা ছিল। যে কোন সুর একবার শুনলেই সে তা ঠিক তুলে ফেলত। ওর বাবার ওকে গান শেখানোর ইচ্ছে ছিল না, তেমনি দরকারও ছিল না। ও নিজের মনেই নিখুঁত বাজাত। প্রায় দু বছর আগে চলে যাবার সময় আমার কাছে এসে আমার হাতদুটো ধরে বলল, জোশ কালকে আমি চলে যাচ্ছি। ও চলে যাবার পর আমি চিৎকার করে কেঁদেছিলাম।

তোমার গ্লাস খালি, জোশ, আরেকবার নাও না।

সে দেয়াল আলমারী থেকে কুটি সার্কের বোতল খুলে আরেকটু স্কচ গ্লাসে ঢেলে নিয়ে বসতেই বললাম, মিস অ্যাঞ্জেলার কথা বল শুনি। ও ছেলেবেলায় কেমন ছিল বল।

মিঃ ওয়ালেস, অ্যাঞ্জেলা ছেলেবেলায় সত্যিই খুব ভাল মেয়ে ছিল। বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন বিশ্রী স্বভাব ওকে পেয়ে বসল। আমাকে দুচোখে দেখতে পারত না। মনে হয় এটা আমার বৌয়েরই কারসাজি। ও যা তা বলে এমন কান ভারী করে তুলেছে যে অ্যাঞ্জেলা বড় হবার পর তার সঙ্গে আমার একদম বনত না।

অ্যাঞ্জেলার সঙ্গে ওর ভাইয়ের বনিবনা কেমন ছিল?

জোশ মাথা নেড়ে বলল, ওরা একজন আরেকজনকে ছেড়ে থাকতে পারত না। মিঃ টেরি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার পরই অ্যাঞ্জেলার স্বভাব কেমন যেন পাল্টে গেল। মনে হত ওর যেন কোন কিছুতেই আকর্ষণ নেই। মিঃ থরসেন মারা যাবার পর ও এ বাড়ি ছেড়ে বাংলোয় গিয়ে উঠল আর আমার স্ত্রীর সঙ্গে থাকতে শুরু করল। এখন আর ওকে চোখেই পড়ে না। জোশের মুখে যেন একটা দুঃখের ছাপ ফুটে উঠল।

মিঃ থরসেন হঠাৎ একবছর আগে মারা গিয়েছিলেন, তাই না?

হ্যাঁ, তার মৃত্যু কোন ব্যাপার ছিল না, বরং তাকে স্বাভাবিকই বলব।

কি বলতে চাইছে, জোশ?

মিঃ থরসেন ভোগী আর বদমেজাজী ছিলেন। আর বদমেজাজের চোট এসে পড়ল দুর্বল হার্টের ওপর। ওর হার্টের অবস্থা ছিল খারাপ। ডাক্তার সাবধান করে দিয়েছেন, কিন্তু উনি উপদেশ না নিয়ে নিজের ইচ্ছেমত চলতেন।

ওর স্বভাবের জন্যে তুমি অসুবিধায় পড়তে?

আমি নই, আমি চিনতাম, বহুবছর ধরে ওঁর সেবা করেছি, অন্য কিছু লোক..

কিন্তু ওর এই স্বভাব মানিয়ে নিতে পারতনা বলছ?

ঠিক তাই।

তাদের সঙ্গে ওর ঝগড়া হত?

ঝগড়া ঠিক নয়, কারণ তাদের সাথে তার ব্যবসা করতে হত। ঐসব লোকের টাকা উনি চালাকি করে খাটাতেন।

কিন্তু ওদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উনি মেজাজ ঠিক রাখতে পারতেন না তাই না?

হ্যাঁ

ওদের সঙ্গে, তোমার সঙ্গে এমনকি মিস অ্যাঞ্জির সঙ্গেও তাই না?

হ্যাঁ, একবার মিঃ টেরিকে নিয়ে মিস অ্যাঞ্জির সঙ্গে ওর কথা কাটাকাটি হয়েছিল।

 ব্যাপারটা কখন ঘটেছিল জোশ?

সেদিন…। বলে জোশ গ্লাসে আরেক চুমুক দিল।

তুমি কি ওদের ঝগড়া শুনেছিলে? মিস অ্যাঞ্জি গলা চড়িয়ে ওঁকে কিছু বলেছিলেন?

সে সব আমি শুনিনি। কানে এল মিস অ্যাঞ্জি খুব জোরে ওর ভাই মিঃ টেরির কথা বলছে। তারপর ও ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ওর মৃত্যুর দিনই এটা ঘটেছিল।

করোনারকে তুমি এই ঘটনার কথা জানিয়েছিলে?

 উনি জানতে চাননি, তাছাড়া পুরোপুরি পারিবারিক ব্যাপার তাই…।

আমি টেরিকে খুঁজছি। ওকে খুঁজে বের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুমি জান ও কোথায় আছে?

স্মেডলি বলল সে জানেনা। চুপ করে থেকে বলল, ওর খোঁজ দিতে পারলে খুব খুশিই হতাম মিঃ ওয়ালেস। ওকে দেখতে, কথা বলতে খুব ইচ্ছে হয়। এখান থেকে যাবার পর কোন খবরই পাইনি।

ওর সঙ্গে দেখা করার গুরুত্ব তোমায় বলছি। এক বৃদ্ধা মহিলা মারা যাবার আগে ওকে একলাখ ডলার দিয়ে গেছেন। ওঁর নাম মিস অ্যাঙ্গাস, তিনি খুন হয়েছেন। যতক্ষণ না দেখা হচ্ছে, টাকাটা ওর হাতে পৌঁছোচ্ছে না। এক লাখ ডলার জোশ, পরিমাণটা খুব কম নয়।

কথা শেষ করে ওর হাবভাব দেখতে লাগলাম।

বৃদ্ধা মহিলা খুন হয়েছেন? আমার দিকে তাকিয়ে ও প্রশ্ন করল।

হ্যাঁ, খুনি ভেবেছিল ওনার কাছেই টাকাকড়ি রেখেছেন। টেরিও থাকত সেখানে। খুনি যে টাকার খোঁজে এসেছিল সে সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত। কিন্তু টেরি এসে দাবী করলেই ব্যাঙ্ক তাকে সে টাকা দিয়ে দেবে।

মিঃ ওয়ালেস, ও কোথায় আছে তা জানিনা।

আমি চেয়ার ছেড়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বললাম, একটা কথা জোশ। হ্যাংক নামে তোমার একটি ছেলে আছে, এবং ব্ল্যাক ক্যাসেট ডিসকো ওই চালায়, তাই না?

জোশ থরথর করে কেঁপে উঠল।

হা, মিঃ ওয়ালেস, আপনি ঠিকই বলেছেন।

এ বাড়িতে আমাকে তদন্তের কাজে ভাড়া করা হয়েছে, এ খবর তুমি টেলিফোনে তোমার ছেলেকে জানিয়েছিলে, তাই না?

জোশ কোন কথা বলতে পারল না, দুচোখ বুজে ঠক্ঠক্ করে কাঁপতে লাগল এমনকি হাতের গ্লাসের স্কচও কাঁপতে লাগল।

আমি এবার পুলিশী গলায় ধমকে উঠলাম, আমার কথার উত্তর দাও।

 জোশ বিড় বিড় করে বলল, আমি আমার ছেলের সঙ্গে রোজই টেলিফোনে কথা বলি।

তুমি ওকে আমার কথা বলেছ?

এখানে কি ঘটছে না ঘটছে সে সম্পর্কে আমার ছেলে যথেষ্ট কৌতূহলী, এখানকার সবকিছু ও আমার কাছে জানতে চায়।

ঠিক আছে জোশ, বলে আমি বেরিয়ে এলাম। জোশ স্মেডলি তার ছেলে হ্যাংককে এই বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল যে, অ্যাঞ্জেলার ওপর নজর রাখার জন্য আমায় ভাড়া করা হয়েছে। আর। হ্যাংক সঙ্গে সঙ্গে আমার অ্যাপার্টমেন্টে চড়াও হয়ে আমায় বেহুঁশ করে হুশিয়ার করে দিয়েছিল, দেয়ালে লিখেছিল অ্যাঞ্জির ব্যাপারে যেন নাক না গলাই।

অফিসে ফিরে দেখি বিলের টেবিলে আমার লেখা চিরকুটটা তখনও পড়ে আছে। জোশ স্মেডলির সঙ্গে আমার যা কথাবার্তা হয়েছে বসে বসে সেই রিপোর্ট টাইপ করলাম। বেলা সোয়া একটা বাজে, থরসেন ফাইলে রিপোর্টটা রাখছি, এমন সময় বিল এল। তার উত্তেজিত চোখমুখ দেখে বুঝলাম খবর আছে।

খিদে পেয়েছে বিল, চলো খেয়ে আসি।

খিদে আমারও পেয়েছে, আমি এখন একটা আস্ত হাতী খেয়ে ফেলতে পারি।

 একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকে ভেড়ার মাংসের চপ আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের অর্ডার দিলাম।

 মাংসে কামড় দিয়ে প্রশ্ন করলাম, নতুন কি খবর আছে বিল?

ওল্ডস মোবাইলটা হ্যাংক স্মেডলির নামে রেজিস্ট্রী করা হয়েছে, তিন মাস আগে ওর নো ট্রান্সফার করা হয়েছে। কি মনে হচ্ছে?

আলুভাজা চিবোতে চিবোতে বললাম, বলে যাও।

হ্যাংকের ঠিকানাও পেয়েছি। ৫৬, সিগ্রোভ রোড, সিকোম্ব। আমি ভেতরে ঢুকে একবার চারপাশ দেখে এসেছি। ছাদের ওপর হ্যাংকের আস্তানা। জায়গাটা সুন্দর, বেশ ছিরিছাঁদও আছে এখান থেকে থানায় গিয়ে টম লেপস্কির সঙ্গে কথা বললাম। ওকে জানালাম যে হ্যাংক স্মেডলির গতিবিধি সম্পর্কে আমরা জানতে চাই। দেখলাম পুলিশ হ্যাংকের সবরকম খোঁজ খবর রাখে ওর ফাইল খুলে দেখলাম যে বারো বছর বয়সেই হ্যাংকের নাম পুলিশের খাতায় উঠে গিয়েছিল তিনবার কিশোর অপরাধী হিসেবে ও সংশোধনাগার থেকে ঘুরে এসেছে। চুরি করেছে, মারপিট করেছে, দাঙ্গায় অংশ নিয়েছে। একটা পুরোপুরি নচ্ছাড় বলতে যা বোঝায় ও হল তাই। তারপর হঠাৎ ও ভদ্র সাজল। কিন্তু লেপস্কি তাতে একটুও নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। ওর মন বলছে যে হয় হ্যাংকের আস্তানায় নয়ত ঐ ওর ব্ল্যাক ক্যাসেটে কোন অপরাধমূলক কারবার গোপনে চলছে, কিন্তু লেপস্কির হাতে তখনও কোন প্রমাণ আসেনি। ও নিজে বহুবার ঐ দুটো জায়গায় খানা তল্লাসী চালাতে চেয়েছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত সার্চ ওয়ারেন্ট পায়নি ব্যস, এই আমার খবর ডার্ক।

বেড়ে কাজ করেছে বিল, হ্যাংকের বাবাকে জেরা করে যেটুকু জেনেছি .সটুকু বিলকে বললাম। তাতে কাজ খুব একটানা এগোলেও একটা সন্দেহের ছায়া আমাদের মনে ঘুরপাক খেতে লাগল।

বিকেল সোয়া চারটে বাজল, মিসেস থরসেন নিশ্চয়ই এতক্ষণে বাড়ি ফিরে এসেছেন। ভাবলাম একবার ওর সঙ্গে দেখা করলে মন্দ হয় না।

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি বন্ধ হয়ে রোদ উঠেছে। থরসেন ভিলার বাইরে গাড়ি পার্ক করে গেটের দিকে এগোতে গিয়ে চোখে পড়ল মিসেস থরসেন বাগানে এক বিশাল রঙীন ছাতার নীচে বসে চা খাচ্ছেন। তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তিনি ঠাণ্ডা চাউনিতে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখলেন।

মিঃ ওয়ালেস, এখানে আসবার আগে আপনাকে টেলিফোনে আমার সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে বলেছিলাম।

উল্টোদিকের চেয়ারটায় বসতে বসতে বললাম, আজ্ঞে টেলিফোন করেছিলাম। কিন্তু আপনি তখন বেরিয়েছিলেন। তাই দেরী না করে একেবারে চলেই এলাম।

কেন, কি ব্যাপার বলুন?

আপনার কেসে আমরা কতদুর এগিয়েছি তা আপনাকে জানাতে বলেছেন আমার ওপরওয়ালা। সেইসঙ্গে তারা জানতে চেয়েছেন যে আপনি এ কেসের তদন্ত চালাতে আর ইচ্ছুক কিনা?

কতদূর এগিয়েছেন আপনারা?

 আপনার মেয়েকে কেউ ব্ল্যাকমেল করছে কিনা এবং যদি তাই হয় তবে সে লোকটিকে খুঁজে বের করতে আপনি আমায় ভাড়া করেছিলেন। আমি আপনার মেয়েকে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে দেখেছি, তারপর তার পিছু নিয়ে বন্দরের ধারে ওয়াটার ফ্রন্ট বস্তী এলাকায় গিয়েছি। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে ব্ল্যাক ক্যাসেট ডিসকো নামে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকেছে যেখানে সাদাদের ঢাকা নিষেধ। দশ মিনিট সেখানে কাটিয়ে যখন সে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে তখন তার সঙ্গে আর টাকা ছিল না।

আমার কথা শুনে যেন মিসেস থরসেন পাথর হয়ে গেলেন।

তিনি কর্কশ গলায় প্রশ্ন করলেন, ব্ল্যাক ক্যাসেট? সেটা কি?

নামে রেস্তোরাঁ আগেই বলেছি, আসলে ওটা কালোদের নাইট ক্লাব। সাদাদের ওখানে ঢোকা বারণ।

আপনি বলছেন আমার মেয়ে সেখানে গিয়েছিল?

হ্যাঁ, এবং নিশ্চয়ই সে ক্লাবের কাউকে দশহাজার ডলার দিয়ে এসেছে। তার মানে এই নয় যে সে কালোদের সঙ্গে মেলামেশা করে।

তাহলে মানে কি দাঁড়ায়?

আমার ধারণা সে কালোদের কোনও তহবিলে দান করেছে যে সব কালো মানুষের বাঁধা ধরা আয় নেই। প্রচণ্ড দুঃখ দারিদ্রের মধ্যে সবরকম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যারা কোনমতে বেঁচে আছে তাদের সে এভাবে সাহায্য করে। তবে আমি এটুকু জানি যে এ ক্লাবের মালিক হ্যাংক স্মেডলি। আর সে আপনার বাটলার জোশ স্মেডলির ছেলে।

বেশ বুঝতে পারলাম ভেতরে তিনি প্রচণ্ড ধাক্কা খাওয়া সত্ত্বেও বাইরে নিজেকে সংযত রাখছেন।

 পুরো তিনটি মিনিট তিনি নিজের সুন্দর হাত দুটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে বললেন, হ্যাংক স্মেডলি। বিড় বিড় করে বললেন, হ্যাঁ ও আমাদের বাগানে কাজ করত। ওর আর আমার মেয়ের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। হ্যাংক আমার মেয়ের সঙ্গে খেলত। অ্যাঞ্জেলা তখন বেশ বড় হয়ে উঠেছে, ও একটু লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে চেঁচামেচি করে খেলতে ভালবাসত আর হ্যাংক ওর থেকে দশ বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও ওকে উৎসাহ দিত। ব্যাপারটা আমার ভাল লাগেনি। আমার স্বামীকে কথাটা বলাতে উনি হ্যাংককে তাড়িয়ে দেন। লক্ষ্য করতাম হ্যাংকের জন্য অ্যাঞ্জেলার প্রায়ই মন খারাপ হত। ব্যাপারটা তাহলে এই দাঁড়াচ্ছে, যে অ্যাঞ্জেলা ওর সঙ্গে শুধু লুকিয়ে দেখাই করছে না, উল্টে তাকে টাকা দিতে শুরু করেছে, কি ভয়ানক!

দেখে তাই মনে হচ্ছে বটে। কিন্তু আসল ঘটনাটা তো তেমন নাও হতে পারে।

এ ব্যাপারে বাটফলারের সঙ্গে আমার কথা বলতে হবে, দুচোখে আগুন ঝরিয়ে তিনি আমার দিকে তাকালেন।

মিসেস থরসেন আপনার উচিত সবার আগে আপনার মেয়ের সঙ্গে কথা বলা।

মিসেস থরসেন তিক্ত হেসে, কার সঙ্গে কথা বলব? অ্যাঞ্জেলার সঙ্গে? ও আমায় কিছুই বলবে না। আমি জানি ও আমায় ভীষণ ঘেন্না করে।

মিসেস থরসেন এ ব্যাপারে অনেক জটিলতা দেখা দিয়েছে। আমি খামোকা আপনার টাকা নষ্ট করছি না। ঐ কেসে আরও তদন্ত চালানোর ব্যাপার পুরোপুরি আপনার ওপর নির্ভর করছে। আপনি একবার শুধু বলুন তারপর আমার এজেন্সী হয় আপনার ফাইল বন্ধ করে দেবে নয়তো যেমন চলছে তেমন চালিয়ে যাবে।

কি ধরনের জটিলতার কথা আপনি বলছেন?

হ্যাংক খুবই বিপজ্জনক। কিন্তু নাইট ক্লাবে আসলে কি ঘটছে তা আমি জানতে চাই। পুলিশ বহু চেষ্টা করেছে কিন্তু এগোতে পারেনি। আমি যদি অবৈধ কার্যকলাপ সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ যোগাড় করতে পারি তাহলে ঐ লোকটাকে আমি জেলে পাঠিয়ে ছাড়ব। এখন আপনার মতামতের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।

ভয়ানক নিষ্ঠুরভাবে দাঁতে দাঁত পিষে তিনি বললেন, ঐ অপদার্থ জেলে গেলে এর চাইতে আনন্দের খবর আর কিছু হতে পারে না। বেশ, টাকা যত লাগে লাগুক, আপনারা তদন্ত চালিয়ে যান।

আমি তা করব, কিন্তু একটা শর্ত মিসেস থরসেন। এ ব্যাপারে আপনি আপনার মেয়ে বা বাটলারকে কোন প্রশ্ন করবেন না। কেমন, রাজী তো?

তিনি বিষ ঢালা গলায় বললেন, আমি সবকিছু আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি, আপনি নিজে সব দায়িত্ব নিন।

বিদায় জানিয়ে চলে এলাম।