১৩. খবরের কাগজ কিনলাম

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

০১.

বেশ কয়েকটা খবরের কাগজ কিনলাম শহরে এসে এবং বুইকে ফিরে যাবার সময় খবরের শিরোনামাগুলো দেখলাম। ডলোরেস ও নাটলের হত্যাকাণ্ড প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকবে ভেবেছিলাম, কিন্তু তাতে কিছুই নেই।

এমন জায়গায় গাড়িটা ছিল যেখানে গাড়ি রাখা নিষেধ, সেজন্য গাড়িতে এসে তাড়াতাড়ি স্লিমস বারের দিকে ছুটলাম, যেখানে পরবর্তী কার্যকলাপ ঠিক করার আগে স্যান্ডউইচ ও বীয়ারের সঙ্গে খবরের কাগজগুলো পড়তে পারব।

বার প্রায় খালি, এক কোণে এক অপরিচিত ভদ্রলোকের সঙ্গে জো ফেলোস বসেছিল। দুজনেই বিফ প্যাটিসের সঙ্গে বীয়ার খাচ্ছিল। দৃষ্টির আড়ালে যাবার আগেই জো ফেলোস আমাকে দেখে, এই যে চেস, এদিকে এস।

একটা স্যান্ডউইচ ও বীয়ার আনতে বলে জোর বুথে এসে ঢুকলাম।

জো বলল, ভেবেছিলাম গলফ খেলতে গিয়েছ, বস, বস। জিম বাকলের সঙ্গে পরিচয় করে নাও। ইনি হচ্ছে ইনক্যোয়ারার পত্রিকার প্রধান ব্যক্তি।

কেবলমাত্র ইনক্যোয়ারার পত্রিকাই সেকথা জানেনা, বাকলে বলল। বেঁটে, মোটা, মাঝবয়সী ভদ্রলোক, চোখের দৃষ্টি অনুসন্ধানী।

আমার ঘাড়ের কাটা দাগগুলোর দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চেয়ে বলল, দেখ ভাই, মেয়েটা নিশ্চয়ই বেশ চড়া দামে তার আত্মসম্মান বিক্রি করেছে।

জো অবাক হয়ে চাইল।

আমি বললাম, কিছু ভাববেন না, ব্যাপারটা অনেকটা এই ধরনের–একটা ছেলে একটা মেয়েকে প্রায় বিরক্ত করে। বোকার মত আমি তাতে বাধার সৃষ্টি করেছিলাম। দেখা গেল মেয়েটা আমার বাধা দেওয়া পছন্দ করল না। আমি যে প্রাণ নিয়ে পালাতে পারলাম এটাই আশ্চর্য।

দুজনেই হেসে উঠল। কিন্তু জো আমার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইল।

আলোচনার বিষয় পালটাবার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম, রবিবারের দিনে তুমি এখানে কি করছ?

এর সঙ্গে সমুদ্রের ধারে সারাটা দিন কাটাব বলে ঠিক করেছিলাম, জো বাকলের দিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বলল, এখন বলছে কাজ আছে। সুতরাং এখন একাই যেতে হবে। অবশ্য তুমি যদি রাজী হও।

ইচ্ছে ছিল জো, কিন্তু নানা কাজে বাঁধা।

যতক্ষণ মেয়েটা বাঁধা আছে ততক্ষণ আপনারা দুজনে মানিকজোড় হতে পারেন, বলে বাকলে, হো হো করে হেসে উঠল।

মনে পড়ল লুসিলি আমার বিছানায় বাঁধা অবস্থায় আছে। অবচেতন মনে সে সত্যি ঘটনার কাছাকাছি এসে পড়েছে।

এই ইনক্যোয়ারারটা কি আপনি এখানে কিনেছেন? আমাকে সীটের উপর কাগজটা রাখতে দেখে বলল।

হ্যাঁ, আপনার দরকার?

গত রাতে আমি যে খবরটা পাঠিয়েছিলাম সেটার কি হল এখনও দেখার সুযোগ হয় নি। সে কাগজটা খুলে সামনের পৃষ্ঠায় দৃষ্টি বোলাতে লাগল। কাগজের পাতা উল্টিয়ে দেখে আমাকে ফিরিয়ে দিল। তিন হাজার শব্দ প্রায় রক্ত ও স্কচ দিয়ে লেখা বলা চলে। আর নিষ্ঠুর বদমাশ তাকে দুশো শব্দে কমিয়ে এনেছে। এদের জন্য কাজ করি ভাবতেও ঘেন্না হয়।

জো বলল, জিম সেই গাড়ি চাপা দেওয়ার খবরটা পাঠাচ্ছে এবং সেটার তত্ত্বাবধানে আছে।

স্যান্ডউইচে কামড় দিয়ে চিবোতে লাগলাম আর বললাম, সত্যি? আজ সকালে খবরটা পড়ার সময় পাইনি। কোন নতুন খবর আছে?

বাকলে গ্লাসে চুমুক দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল।

নতুন? দেখুন, এই খবরটা এখন সাংঘাতিক আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। এমন কি, এর উপর বর্তমান শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনও আসতে পারে।

জো বলল, বাজে কথা ছেড়ে আমাদের আসল কথায় আসা যাক। খবরটা যদি এতই আলোড়নের সৃষ্টি করেছে তবে প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে দেওয়া হল না কেন?

কারণ এখনও আমরা সব কিছু তথ্য জানতে পারিনি। কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

 জো অধীর হয়ে বলল, কি ব্যাপারে? কোন্ ঘটনার কথা বলছ?

 বাকলে বলল, বলছি। ও’ব্রায়ান মারা না গেলে তার সম্বন্ধে লোকে কিছুই জানতে পারত না।ও’ব্রায়ান দারুণ ভাল লোক ছিল বলে সুলিভা যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল সেটা শুনতে ততদিনই ভাল লাগছিল যতদিন না আমরা ও’ব্রায়ানের ব্যাপারে তদন্ত করি। প্রকৃত ঘটনা জানতে পারা গেছে। ব্যাঙ্কে তার প্রায় এক লক্ষ পঁচিশ হাজার ডলার এবং পাম ক্রেসেন্টে তার সুন্দর একটা বাংলো আছে। যা একমাত্র সিনেমা তারকাদেরই থাকা সম্ভব। পুলিশের কোন লোক এভাবে থাকা মানে ঘুষ। তার এই সব ব্যাপার জানতে মাত্র দুজন। যে যে মেয়েকে সে বিয়ে করতে চেয়েছিল, একজন নাইট ক্লাবের গায়িকা এবং তার এজেন্ট নাটলে। তাদের ভাগ্যে গত রাতে। কি ঘটেছে জানেন?

জো গোল গোল চোখে তার দিকে চেয়েছিল।

তাদের দুজনকেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওয়াশিংটন হোটেলে নাটলের বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। হোটেলের রাতের কেরানীকে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছে। হত্যাকারী ভিতরে এসে কোন ঘরে নাটলে আছে জানতে চেয়েছিল তারপরেই তাকে হত্যা করে। শেষে উপরে গিয়ে নাটলেকে হত্যা করে। মেয়েটা যখন তার ম্যাডক্স আর্মসের ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিল তখন তাকে হত্যা করা হয়।

জো বলল, এত বড় ঘটনা কাগজে নেই।

হ্যাঁ, আছে মাত্র দশ লাইন। কিন্তু আগামীকাল কাগজের প্রথম পাতায় সবচেয়ে বড় খবর হবে। আমরা এর উপর তদন্ত করছি। ও’ব্রায়ানের জোচ্চুরি জানার চেষ্টা করছি। পুলিশ কমিশনার মনে করেন ও’ব্রায়ান কয়েকটি প্রতারক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল। সুলিভা কিন্তু মনে করেন লোকটা ব্ল্যাকমেলার ছিল।

যে মেয়েটা গতকাল খুন হয়েছে সে কি লিটল ট্যাভার্ন নাইট ক্লাবে গান করত? স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞাসা করলাম।

হ্যাঁ। সুন্দরী মেয়ে, কিন্তু টাকার জন্য গান করতে হত।

 লিটন ট্যাভার্নের প্রকৃত মালিক কে?

বাকলে কাঁধ ঝাঁকিয়ে সত্যিই রহস্যময়। আমি জানার চেষ্টা করেছি। রেজিষ্ট্রি করা আছে আর্ট গ্যালগানো নামে জনৈক ব্যক্তির নাম। কিন্তু কেউ জানে না লোকটি কে। আমার ধারণা শহরে ঐ নামে কোন লোক বাস করে না। ক্লাবটা চালায় জ্যাক ক্লড নামে একজন। কেন জিজ্ঞাসা করছেন?

শুনেছি গতকাল রাতে ক্লাবের উপরতলায় এক জুয়ার আড্ডা বসেছিল এবং বাজীর হার ছিল খুব চড়া।

বাকলে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, এটা কথার কথা। এই শহরে জুয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ কয়েকজন মাতব্বর লোক আড্ডা খোলার তালে ছিল, কিন্তু পুলিশ কমিশনার সঙ্গে সঙ্গে তাদের উদ্যম নষ্ট করে দেন। লিটল ট্যাভার্ন তিন বছর হল চালু হয়েছে। জুয়ার আজ্ঞা থাকলে নিশ্চয়ই শুনতাম।

আপনি কি সঠিক জানেন? গত রাতে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। একজন আমাকে বলল যে উপরে জুয়ার আচ্ছা আছে।

বাকলে আমার উপর দৃষ্টি রেখে বলল, এক মিনিট, এই অঞ্চলটা ও’ব্রায়ান তদারকি করত। সে নিশ্চয়ই ক্লাবের এই সব আড্ডা গোপন রেখে থানায় কোন রিপোর্ট পাঠাত না। এটা দারুণ খবর। তাহলে এখানেই সে ঘুষের টাকা পেত। আপনি কি প্রায়ই সেখানে যান?

প্রায়ই যাই না তবে মাঝে মাঝে যাই।

আপনি কি সেখানে গিয়ে দেখবেন জুয়ার টেবিল আছে কি নেই?

মাঝখানে জো বলল, এই! তোমারও কিছু সাহস থাকা উচিত। তাহলে চেস কেন তোমার নোংরা কাজগুলো করতে যাবে?

বাকলে বলল, উপরে জুয়ার আড্ডা আছে কিনা দেখার সুযোগ একজন পুলিশের পক্ষে যতটা কষ্টকর আমার পক্ষেও একই রকম। কিন্তু ইনি সেখানে যান। যদি ইচ্ছা করেন তবে আমাদের কেন সাহায্য করবেন না?

যদি সম্ভব হয় তবে আমি আপনার রহস্য জানার চেষ্টা করব। আজ বিকেলে সেখানে যাব এবং যদি সুযোগ পাই আপনাকে ফোনে জানাব।

 জো অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে রইল আর বাকলে এগিয়ে এসে আমার গায়ে হাত বোলাতে লাগল।

আপনিই হচ্ছেন মানুষের মত মানুষ। ইনক্যোয়ারার কোনদিনই আপনার অবদান ভুলবে না। পরের বার আপনার সেলসম্যান যখন বিজ্ঞাপনের জন্য আসবে তখন বরকম সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করব।

ওয়ালেট থেকে একটা কার্ড বার করে আমার হাতে দিয়ে যদি আমি ধারে কাছে না থাকি তবে জ্যাক হেমিংসের সঙ্গে যেন দেখা করি। যে কোন প্রয়োজনে সে সাহায্য করবে। সত্যিই যদি উপরে জুয়ার আড্ডা থাকে তবে বেশ ঝামেলার ব্যাপার। শুনুন, আপনি যদি আমার অফিসে আসতে পারেন তাহলে আপনাকে একটা ক্যামেরা দেব। তাদের আড্ডার ছবি যদি একটা তুলে আনতে পারেন তাহলে আমরা ওদের বেকায়দায় ফেলতে পারি।

মনে হয় না তারা সেটা বরদাস্ত করবে।

ক্যামেরাটা না দেখলে বুঝতে পারবেন না। এর লেন্সটা আপনার বোতামের গর্তে ফিট করা থাকবে। আপনার করণীয় হচ্ছে পকেটের ভিতর লুকিয়ে রাখা শার্টার টিপে ধরতে হবে। বাকী কাজটুকু লেন্স এবং ফিল্মে হয়ে যাবে। জুয়ার আড্ডার একটি ছবি এনে দিন মিঃ স্কট। কাগজের কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।

আশা করি পারব।

 সে আমার হাতে আনন্দে চাপড় মারল।

চলুন এখান থেকে ওঠা যাক। আমার বড় সাহেবের সঙ্গে দেখা করবেন চলুন।

জো হঠাৎ হাতের উপর দিকটা চেপে ধরল, এক মিনিট চেস তুমি অযথা ঝামেলা ঘাড়ে তুলে নিচ্ছ। ধর, তুমি আর আমি যদি যাই তাহলে কেমন হয়?

না, জো, দুজনে গেলে অযথা ভিড় হবে। আমি কোন ঝামেলায় গিয়ে পড়ছিনা। ঝামেলার মোকাবিলা করতে চলেছি।

বাকলে বলল, নিশ্চয়, নিশ্চয়। এতে ঝামেলার কিছু নেই। সত্যিই যদি আড্ডা থাকে তবে পুলিশ কমিশনারের গদি কাঁপিয়ে দিতে পারব।

একই ব্যাপার। আমি তোমার সঙ্গে যাবো। দুজনে ভিড় হবে ঠিক কিন্তু বিপদের সময় রক্ষা পাওয়া যাবে।

না, জো। আমি নিজেই হয়ত উপরে যেতে পারবো না। দুজনের পক্ষে তো অসম্ভব। আর বিকেলে হয়ত আজ্ঞা নাও বসতে পারে।

জো জেদ করে বেরিয়ে, আমি তোমায় সঙ্গে আসছি, চেস। যদি প্রয়োজন হয় বাইরে অপেক্ষা করব।

আমি জানি, কোন কাজে একা করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি।

তোমাকে সঙ্গে নিতে চাই না, জো। আমি নিজের শখের সঙ্গে ব্যবসাকে জড়িয়ে ফেলেছি কিন্তু তুমি অযথা প্রতিবন্ধক হয়ে উঠবে।

বাকলে বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিচে গিয়ে সমুদ্রের জলে ডুব দাও গে, জো। আমার বন্ধুর সঙ্গে আমার অন্য দরকার আছে। তুমি সাঁতার দাও গে। বলে আমায় হাত ধরে টানতে টানতে বুইকের কাছে নিয়ে এল।

পথে জিজ্ঞাসা করলাম, লেন মেয়েটাকে কে মেরেছে এ সম্বন্ধে পুলিশের কি কোন ধারণা আছে?

নাম না জানলেও তাকে পাকড়াও করার ব্যবস্থা হয়েছে। তাদের কাছে তার আঙুলের ছাপ আছে এবং লোকটার চেহারার বিবরণও তারা জানতে পেরেছে। আমার ধারণা লোকটা হয় পাগল। নয়ত একেবারে শিক্ষানবীস। সমস্ত জায়গা জুড়ে সে আঙুলের ছাপ রেখে গেছে। মেয়েটার ঘর থেকে এবং ওয়াশিংটন হোটেল থেকে লোকটাকে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল। ডলোরেস লেনের ঘরে এবং নাটলের ঘরে লোকটার আঙুলের ছাপ পাওয়া গিয়েছে তারা বলে। লোকটা দীর্ঘকায়, গায়ের রং কালো এবং বয়স আপনারই মত। লেফটেন্যান্ট ওয়েস্ট মনে করেন খুব শীগগিরই তাকে ধরা সম্ভব হবে।

বাইরে চেয়ে কাঁপা বুকে বললাম, সত্যিই?

হ্যাঁ, তারা শহরে সেই মেয়েটার খোঁজ করছে যে তাকে দেখেছিল। মনে হয় সে চিনতে পারবে। তাহলে লোকটাকে গ্রেপ্তার করে তার আঙুলের ছাপ নেওয়া হবে এবং দুটো মিলিয়ে দেখা হবে।

.

০২.

দু এক মিনিট পরেই লিটল ট্যার্ভান নাইট ক্লাবে এসে উপস্থিত হলাম। গাড়ি রাখার জায়গা ছিল না, কিন্তু জায়গা করে নিতে বেশ বেগ পেতে হল।

সে দিন প্রচণ্ড গরম এবং বাতাস বলতে ছিল না। পাম সিটিতে এমন হয়, কিন্তু বাতাসের জন্য প্রাণটা হা–হুতাশ করে, বাতাসের বদলে ধুলো এসে বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। মেজাজটা খাপ্পা হয়ে ওঠে, যে–কোন মুহূর্তে ফেটে পড়ার পর্যায়ে আসে।

বারান্দার সামনে টেবিলগুলোতে পুরুষ ও স্ত্রীলোকের দল খাবারের বিরাট তালিকায় চোখ বুলোচ্ছিল।

ওপরে উঠে এলাম সিঁড়ি বেয়ে। দারোয়ান ছাড়া কেউ আমার দিকে চেয়ে দেখল না; দারোয়ান খিটখিটে মেজাজের। সে সেলাম জানাল এবং সহজ ভাবে রিভলভিং দরজাটাকে সরিয়ে পথ করে দিল যেন সে ডিমের খোলায় ঠেলা দিচ্ছে।

হ্যাট–পরা মেয়েটা আমাকে চিনতে পারল। জায়গা থেকে সরে দাঁড়াল না। আমার দিকে চেয়ে মৃদু হেসে অন্য দিকে চাইল।

বারের দিকে গেলেও ভিতরে ঢুকলাম না। বারটা লোকে ভর্তি। পিপে পিপে মদ খেয়ে চীৎকার করে কথা বলছে। সঙ্গে আসা সুন্দরী ও সোনালি চুলের মেয়েদের মনে দাগ কাটার চেষ্টা করে সারা সপ্তাহের কষ্টে রোজগার করা টাকার শ্রাদ্ধ করছে।

বারের পিছনে অসকার রস ছিল। সেখানে দুজন মেক্সিকান লোকও ছিল। তারা খুব ব্যস্ত। মেয়েদের মহলে রস ব্যস্ত ছিল। দেখতে পেলাম তিনজন মহিলাকে শ্যাম্পেন ককটেল পরিবেশন করছে।

সরে এলাম সেখান থেকে। রস আমাকে দেখে, সেটা চাইছিলাম না। আমার রাম খাওয়া বন্ধুর সন্ধানে চারপাশ চেয়ে দেখলাম।

এবং খুঁজে বার করলাম। বারের এক কোণে থেকে উঠে আসছিল।

কাছে আসতেই জিজ্ঞাসা করলাম, চিনতে পারেন?

তখন সে মাতাল। চোখ খুলে আমাকে চেনার চেষ্টা করল, চিনতে পেরে হেসে উঠল।

হ্যাল্লো, সে বলল, দুঃখ কষ্ট ভুলতে এসেছেন?

দেখতে এসেছি বাজী ধরে কিছু টাকা রোজগার করা যায় কি না, বলে লবির দিকে গেলাম। ওপরে গিয়ে সুযোগ পাব? আপনি কি বলেন?

কেন নয়? আমি ওপরে যাচ্ছি। আমার সঙ্গে আসুন।

ভেবেছিলাম ওপরে গেলে ঝামেলায় পড়ব।

 তা বটে। আমাকে এখানে সকলেই চেনে। আপনার নাম, যেন কি বল্লেন?

 স্কট।

বেশ, বেশ। তাহলে চলুন ভাই, স্কট। দেখা যাক আপনি কিরকম জুয়ায় হেরে যান।

হলঘরের ভিতর দিয়ে সে আমাকে নিয়ে একটা সরু প্যাসেজ দিয়ে এগিয়ে চলল। আমি তাকে অনুসরণ করে চললাম। এলিভেটরে করে দুটো তলা ওপরে নিয়ে এল।

গির্জায় বিশপ যেমন তার ভক্তদের ফুঁ দিয়ে আশীর্বাদ করেন, আমাদের ওপরে ওঠার সময় ওয়েলিভার সেই ভাবে আমার মুখের উপর ঢেকুর তুলে রামের বাষ্পকণা ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

আমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল।

বাকলের দেওয়া ছোট্ট ক্যামেরাটা আমার কোটের ভাজে পিন দিয়ে আটকানো ছিল। জামার পকেটের মধ্যে রাখা শাটার আঙ্গুল দিয়ে টিপে ধরলাম। বাকলে একটা ছবি নিতে বলেছিল। ক্যামেরায় ছোট্ট ফিল্ম। পাল্টাবার কোন সুযোগ ছিল না। সে বলেছিল, জীবনে হয়ত এই একবারই সুযোগ মিলবে। যদি আমরা জুয়ার আড্ডার একটা ছবি আনতে পারি–অবশ্য কোন আচ্ছা যদি থেকে থাকে তাহলে এই শহরের অনেক গোপন কথা ফাস হয়ে যাবে।

যদি ছবিটা নিতে গিয়ে আমি ধরা পড়ি তবে শহরের বদলে যে আমিই মোক্ষম ভাবে ফেঁসে যাব, এ তথ্যটা সে মনে হয় খেয়াল করেনি।

এলিভেটর দাঁড়াল, অল্প শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল।

একটা হলঘরে ওয়েলিভার ঢুকল যেখানে দুজন লোক। মল্লবীর বললেই চলে। সারা জায়গাটা জুড়ে বসে বসে শরীরের পেশীর কসরৎ করছিল। যেন জো লুই বা রকি মার্সিয়ানোর সঙ্গে তারা অনায়াসে এক হাত লড়তে পারে।

ওয়েলিভারের দিকে তারা কঠিন দৃষ্টিতে চাইল। তারপর আমার উপর।

হলঘরের দুই পাল্লার দরজার দিকে ওয়েলিভার শান্তভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল পেছনে আমিও যাচ্ছিলাম। রবিবারের ছুটিতে বেড়াতে বেরিয়েছি এই রকম ভাব দেখিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম।

যখন আমরা দরজার বেশ কাছে তখন তাদের একজন কসরৎ থামিয়ে আমাদের দিকে অবাক হয়ে চাইল।

একটা উড়োজাহাজের মরচে-পড়া স্ক্রু খুলে গেলে প্রপেলারে যেমন শব্দ হয়, সেই রকম গলায় একজন চিৎকার করল, এই যে, তুমি কোথায় যাবে ভাবছ?

ওয়েলিভার চোখ রাঙ্গিয়ে ফিরে দাঁড়াল। বাজখাই গলায় সেও কেঁপে উঠেছিল। হাজার হোক সে ক্লাবের মেম্বার, এ ধরনের ব্যবহার আশা করেনি।

আমাকে জিজ্ঞাসা করছ?

ওদের মধ্যে বয়স্ক লোকটি আমার দিকে এগিয়ে, না–ওকে। কোথায় যাবে?

সে সম্ভ্রমের সঙ্গে বলার চেষ্টা করল, আমার বন্ধু, আমি ওকে, ভিতরে নিয়ে যাচ্ছি। কোন আপত্তি আছে?

মিঃ ক্লড কি যেতে বলেছেন?

নিশ্চয়ই, মিঃ ক্লড অনুমতি দিয়েছেন। বলে আমার হাত ধরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। সন্দেহের চোখে তারা আমার দিকে চেয়ে রইল।

একটা বড় ঘর, পুরুষ ও মহিলায় ঘরটা ঠাসা ভর্তি। মৃদু আলো, সিগারেটের ধোঁয়া ও উত্তেজিত কথাবার্তায় ঘর ভরে ছিল।

ঘরের ঠিক মাঝখানে জুয়ার টেবিল। টেবিলের চার পাশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে পাম সিটির অভিজাত সম্প্রদায়ের লোকেরা। ওয়েলিভার বলেছিল বাজীর হার বেশ চড়া। টেবিলের ওপর রাখা টাকা পয়সার ভুপ। একবারের বাজীর জন্য টেবিলের ওপর প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার ডলার রাখা ছিল।

ওয়েলিভার টাকার দিকে চেয়ে বিড়বিড় করে বলল, এটা একবারের বাজী, পাগল লোকেদের সঙ্গে আমরা কোন ঝামেলায় আসতে চাই না।

প্রত্যেকের দৃষ্টি ছিল একজন মোটা বয়স্ক লোকের উপর, যে এক গাদা খুচরো টাকা পয়সা সামনে রেখে বসেছিল। তার কাছে এগিয়ে গেলাম। পাঁচ নম্বর কালো ঘরে অনেকগুলো খুচরো পয়সা তাকে রাখতে দেখলাম।

বেশ কয়েকজন লোক মোটা লোকটাকে অনুসরণ করে কম বাজী ধরল। একটি চাকা ঘোরার পর একটা বল ঘুরতে ঘুরতে পাঁচ নম্বর কালো ঘরে এসে থামল।

একটা মৃদু গুঞ্জন উঠল চারিদিকে। জুয়ার পরিচালক ঘোর কৃষ্ণবর্ণের একজন মেক্সিকান, সে যারা হেরে গেল তাদের খুচরো পয়সাগুলো একত্রে জড় করে মোটা লোকটার দিকে এগিয়ে দিল।

একজন সুন্দরী মহিলা সামনে দাঁড়িয়ে। তার মুখ থেকে মদের উগ্র গন্ধ বেরিয়ে আসছিল। ঠেলা দিয়ে পথ করে সামনে এগিয়ে মেয়েটির পেছনে এসে দাঁড়ালাম। সেখান থেকে টেবিলটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল। তীব্র আলোয় জুয়াড়ীদের সামনে টাকা পয়সা সুন্দর দেখা যাচ্ছিল। ছবি নেওয়ার পক্ষে অনুকূল অবস্থা।

বাকলে বলেছিল আমাকে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে রাখা শাটার টিপতে হবে। লেন্স এত দ্রুত ছবি নিতে পারে এবং ফিল্ম আলোর স্বল্পতাকে এত সুন্দর ভাবে পরিপূরণ করতে পারে যে ছবি কোনমতেই খারাপ হবে না।

একটা বসার জায়গার খোঁজে ওয়েলিভার সরে গেল। সবচেয়ে ভাল জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি বুঝতে পেরে শাটারের বোতামের আঙ্গুল এনে দম বন্ধ করে বাকলের উপদেশ মত আস্তে আস্তে বোতমটা টিপে দিলাম। একটা অস্পষ্ট মৃদু শব্দ শুনতে পেলাম। বুঝলাম শাটার কাজ করেছে। .

ঠিক তারপরেই ঘটনাটা ঘটল।

জানতাম না যে লোকগুলো যখন জুয়াড়ীদের খেলা দেখছিল আরবাজীর হিসেব রাখছিল, তখন আমার ওপর ও নজর রাখছিল। আমার মুখের অভিব্যক্তির জন্য অথবা আমার কোটের ভাজে লেন্সটা জুয়ার পরিচালক দেখেছিল কিনা জানি না। তারা ধরে ফেলেছিল। দুটো শক্ত শরীর আমার শরীরে চাপ দিল। লোহার সাঁড়াশীর মত দুটো হাত চেপে ধরল। দুজন লোক আমার দুপাশে।

এই দুজন কিন্তু আগের দুই মল্লবীর নয়, এরা দুজন পেশাদারী জুয়াড়ী। রোগা চেহারার লোক দুজনকে যমজ দেখাচ্ছিল। একজন ফর্সা, অন্যজন কালো। দুজনেরই মুখ কুড়ালের মত। চোখ মলিন, চ্যাপ্টা এবং ভাবলেশহীন।

দুজনেই ভয়ংকর প্রকৃতির, কঠিন রুক্ষ ও নিষ্ঠুর দেখাচ্ছিল।

ফর্সা লোকটি বলল, এই শয়তান, কোন রকম ঝামেলা করবি না। আমাদের মালিক তোর সঙ্গে কথা বলতে চায়।

বিশেষ পদ্ধতিতে জনতার ভিড় থেকে আমাকে সরিয়ে নিল। তাদের মুঠোর চাপে আমার হাত দুটো যেন পঙ্গু হয়ে গেল।

সবেমাত্র টেবিলের পাশে ওয়েলিভার একটা বসার জায়গা পেয়েছে আমার এই অবস্থা দেখে অবাক হল কিন্তু বসার জায়গার লোভে আমার দিকে চেয়ে হাসল।

ফর্সা লোকটা বলল, এই শয়তান, ভয় পাবিনে। ভালভাবে হেঁটে চল। যদি বাঁদড়ামি করিস তাহলে আমার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।

আমার মনিবন্ধ ছেড়ে লোক দুটো কাঁধে ধাক্কা মেরে মেরে আমাকে সামনের দিকে হাঁটাতে লাগল।

কেউ আমার দিকে নজরও দিল না। আমি হয়ত তাদের ঘুষি মেরে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে পারতাম কিন্তু তাতে বিপদ বেড়ে যেত।

সুতরাং তাদের সঙ্গে হেঁটে দরজার সামনে এলাম। ফর্সা লোকটা দরজায় টোকা মারল।

ভিতরে এস, ফর্সা লোটা হাতল ঘুরিয়ে দরজা খুলল।

কালো লোকটা কনুইয়ের ধাক্কা মেরে ঘরে নিয়ে এল। ঘরটা অফিস না বসবার ঘর বোঝ গেল না। লাল টকটকে পর্দায় ঢাকা জানালার পাশে একটা ডেক্স। ডেক্সের পিছনে একটা চেয়ার এবং ডানদিকে একটা লোহার ক্যাবিনেট। ঘরে বাকি চেয়ার ও রেডিও সেট। এবং স্প্যানিশ শালে মোড়া একটা ইজিচেয়ারে ভর্তি। ঘরে একটা ছোট বার ছিল।

ডেস্কের পিছনে এক্সিকিউটিভ চেয়ারের উপর কালো জামা পরে একজন মোটা, দীর্ঘকায় লোক বসেছিল। তার মাথা লাল ও পাকা চুলে ভর্তি, তার মাংসল মুখে একটা গভীর চিন্তার ভাব তার ছোট্ট কটা চোখ দুটো স্থির ও দৃষ্টি যেন ভাসা ভাসা।

কালোলোকটা ডেক্সের পাশে এসে দাঁড়াল এবং অন্যজন দরজা ভেজিয়ে দিল। মনে হল দরজায় চাবি লাগানো হল।

এবারে অস্বস্তি লাগছিল যদি তারা ক্যামেরাটা দেখতে পায়, তবে বিপদ।

ডেস্কে বসে থাকা লোকটা আমার দিকে চেয়ে পরে কালো লোকটার দিকে চেয়ে ভুরু দুটো কোঁচকাল।

কালো লোকটা বলল, সদস্য নয়। প্রতারকের মত বিনয়ের সুরে মোটা লোকটা যাকে জ্যাক ক্লড ভেবেছিলাম বলল, অত্যন্ত দুঃখিত বন্ধু। আমরা কিন্তু রবাহুত লোককে স্বাগত জানাই না। আপনার নাম জানতে পারি।

আমি চেসটার স্কট। এখানে এত উত্তেজনা কেন? ফিল ওয়েলিভার আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে, সে হল আমার বন্ধু।

কোথায় থাকেন মিঃ স্কট?

 বললাম।

সে টেলিফোন বইটা নিয়ে আমার ঠিকানা যাচাই করে দেখল।

মিঃ ওয়েলিভারের জানা উচিত আমার অনুমতি ছাড়া কোন বন্ধুকে তিনি ওপরে আনতে পারেন না, যতক্ষণ না তার বন্ধুরা আমাদের বাৎসরিক চাদা দিয়ে দেয়।

আমি সেকথা জানতাম না। ফি-এর কথা ওয়েলিভার কোনদিন বলেনি। আমি ফি দিতে রাজী আছি। কত?

ক্লড বলল, পঁচিশ ডলার।

 কালো লোকটার দিকে চেয়ে। বলল, মিঃ স্কটের সম্পর্কে তোমরা কিছু জান?

 গত রাতে একে মিস লেনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল।

 ক্লডের দৃষ্টি যেন অনেক দুরে সরে গেল। চেয়ারে, একটু নড়ে বসে বিনয়ের সঙ্গে বলল, মিঃ স্কট, মিস লেনকে আপনি চেনেন?

না, তার গান শুনেছি। আমার ধারণা সে বেশ সুন্দরী। আমার সঙ্গে মদ খাবার জন্য তাকে অনুরোধ করেছিলাম।

সে খেয়েছিল?

না।

 কিন্তু আপনি কি তার ড্রেসিংরুমে কথা বলছিলেন?

হ্যাঁ, বলেছিলাম। কিন্তু এসব প্রশ্ন কেন?

 কি নিয়ে কথা বলছিলেন?

 এমনি এটা সেটা নিয়ে। আপনাদের কি দরকার?

 ক্লড কালো লোকটার দিকে চেয়ে বলল, আর কোন প্রশ্ন আছে?

আর কিছু নেই।

আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত। মিঃ স্কট। পঁচিশ ডলার দিন।

ওয়ালেট থেকে পঁচিশ ডলার বার করে টেবিলের উপর রাখলাম।

একটা রসিদ লিখে আমার হাতে দিয়ে, একটু সাবধানে চলবেন, মিঃ স্কট। কারণটা নিশ্চয়ই আপনাকে বলতে হবে না। আশাকরি প্রায়ই আপনার দেখা পাব।

আশা করি পাবেন।

 কালো ও ফর্সা লোকটা বিরক্তি নিয়ে আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেল।

রসিদটা ওয়ালেটে রেখে। আচ্ছা ধন্যবাদ বলে পিছন দিকে গেলাম।

 ঠিক সেই সময় অসকার রস ভিতরে এসে ঢুকল।

তার পরনে বারম্যানের পোশাক এবং হাতের ট্রেতে এক বোতল স্কচ, একটা গ্লাস এবং বরফের পাত্র।

ক্লডের টেবিলে ট্রে রাখার আগে পর্যন্ত সে আমাকে চিনতে পারেনি। পরে সে আমার দিকে এমন ভাবে চাইল যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি বেরিয়ে যাবার পথের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম।

 রস আমার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইল।

 দরজার হাতল ঘুরালাম কিন্তু দরজায় তালা লাগান ছিল।

 ফর্সা লোকটা তালা খুলতে এগোলে রস হুংকার দিল, এই, ওকে এখান থেকে যেতে দিও না।

 চাবি তালায় লাগানো ছিল। চাবি ঘুরিয়ে দরজাটা খুলতে যাব লোকটা ছুটে দরজার কাছে এসে পা দিয়ে দরজাটা ঠেলে ধরল।

রস বলল, ও এখানে কি করছিল?

 ফর্সা লোকটা হতবুদ্ধি হয়ে ক্লডের দিকে চাইল।

আমি তার চোয়ালে সজোরে এক ঘুষি মারলাম সে পিছন দিকে সরে যেতেই তার মাথাটা । দেয়ালে ঠুকে গেল।

চাবি ঘুরিয়ে দরজাটা খুললাম।

ধর ধর।

 কালো লোকটা চিৎকার করে উঠল।

তার দিকে চাইলাম হাতে একটা ৩৮ স্বয়ংক্রিয় পিস্তল। নলটা আমার দিকে।

 তার হুমকি উপেক্ষা করেই দরজা খুলে ফেললাম।

 রস হিংস্র ও ভয়াবহ ভাবে আমার দিকে ছুটে এল।

 সে আসার আগেই আমি প্যাসেজে এসে দাঁড়ালাম।

আমার মুখে ঘুষি মারলো। কিন্তু আমি এক পাক ঘুরে তার হাতটা ধরার চেষ্টা করলাম। তার মুখে এক ঘুষি বসিয়ে দিলাম। সে ছিটকে পড়ে গেল। আমি ছুটে দরজা পেরিয়ে জুয়ার ঘরে এলাম।

বেশ ভারী একটা কিছু আমার হাঁটুর পেছনে লাগতেই আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। উঠতে যাব এমন সময় কালো লোকটা আমার চোয়ালে এক ঘুষি বসিয়ে দিল। মাথাটা তুলতে যাব একটার পর একটা ঘুষি পড়ল।

এক লাথি মেরে কালো লোকটাকে দুরে ছিটকে ফেলে টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালাম। রস বেরিয়ে আমাকে আক্রমণ করতে এল।

সে একটা ঘুষি ছুঁড়তেই আমি ছুটে এসে সজোরে এক ঘুঁষি বসিয়ে দিলাম।

কিন্তু ওকে বেশি আঘাত দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হল না।

কালো লোকটা উঠে এত দ্রুতগতিতে আমার দিকে ছুটে এল যে আমার আর কিছুই করার ছিল না।

ভারী রডের মত একটা কিছু নেমে আসার শব্দ পেলাম। মাথাটা বাঁচাবার জন্য অল্প পাশে সরিয়ে নিলাম।

আমার চোখ অন্ধকার হয়ে উঠল। বুঝলাম। দ্বিতীয়বারে আমার দেরী হয়ে গেছে।

যাই হোক সে একজন পেশাদার লোক। যখন সে ফাঁদে ফেলবার চেষ্টা করবে তখন ফাঁদে পড়তেই হবে।