০৭. দুপুরের খাবারটা স্যান্ডউইচ

সপ্তম পরিচ্ছেদ

০১.

দুপুরের খাবারটা স্যান্ডউইচ দিয়ে সেরে বাংলোর দিকে ছুটলাম। লাঞ্চের সময় অনেক কিছুই ভাবছিলাম। দুর্ঘটনাটা যে একটা গোলমেলে ব্যাপার এই বিশ্বাস মনে ক্রমশঃ দৃঢ় হচ্ছিল। আমি নিশ্চিত যে লুসিলি দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটিয়েছিল সেটা আমাকে মিথ্যা বলেছে। ঘটনাস্থল দেখার পর ব্যাপারটা আরও জটিল মনে হচ্ছে। এমনও হতে পারে যে, লুসিলি ও’ব্রায়ানকে তার দিকে আসতে দেখে গাড়ির গতি কমাতে না পেরে সে সোজা তার দিকে গাড়ি চালিয়েছিল। এইরকম একটা অদ্ভুত পরিস্থিতিতে সে কোন জুরির কাছেই কোন রকম করুণা পাবার আশা করতে পারে না। সমস্ত দোষটা আমার ঘাড়ে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে কেন তার এত আগ্রহ অবাক লাগছিল আমার।

বর্তমান সমস্যা হচ্ছে। ক্যাডিলাকটা নিয়ে আমি কি করব। পুলিশ যদি সেরকম খুঁটিয়ে সার্চ করতে থাকে, তবে সিবোর্নের গ্যারেজে তারা গাড়িটাকে দেখতে পাবে।

পুলিশের বড়কর্তা ঘোষণা করেছেন যে, দুর্ঘটনার পর যদি কারও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তবে অবিলম্বে থানায় রিপোর্ট করতে হবে এবং কিভাবে গাড়ির ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে হবে।

ভাবছিলাম। এই নিয়মের মধ্যে দিয়ে কোনরকমে বেরিয়ে আসা যায় কিনা। গ্যারেজের দরজায় যদি গাড়িটাকে চালিয়ে সোজা গিয়ে ধাক্কা দিই এবং তারপর পুলিশকে ফোন করে জানাই যে, গাড়িটা এরকম ভাবে ড্যামেজ হয়েছে। তবে তারা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে? কিন্তু গাড়ির পাশে গভীর ক্ষতের দাগদুটোর সঙ্গে তো এর কোন সঙ্গতি নেই। এবং এই দাগ দুটো পুলিশের মনে সহজেই সন্দেহের উদ্রেক করবে।

যাই হোক মোটামুটি আমি এই নিয়েই চিন্তা করতে লাগলাম। সদর দরজার তালা খুলতে খুলতে তখন এটা নিয়ে ভাবছিলাম, সেই সময় টেলিফোন বাজতে শুনে লাউঞ্জে ঢুকে রিসিভারটা তুলে নিলাম।

 মিঃ স্কট?

ওয়াটকিনসের গলার স্বর চিনতে পারলাম। আশ্চর্য, কি কারণে সে ফোন করতে পারে।

 হ্যাঁ কথা বলছি।

মিঃ আইকেন আপনাকে ফোন করতে বলেছেন, স্যার। তিনি বললেন যে সম্ভবতঃ এখনও আপনি বাড়িতেই আছেন। যদি আপনি সময় করতে পারেন, তবে একবার এখানে এলে মিঃ আইকেন খুব খুশি হবেন।

কিন্তু এখন আমার গলফ ক্লাবে বিশ্রাম নেওয়ার কথা। আমাকে ফোনে পাওনি একথা কি তাকে বলতে পার না?

বলতে পারি স্যার। কিন্তু মিঃ আইকেনের কথার ধরনে মনে হল, ব্যাপারটা খুব জরুরী। যাই হোক, যদি মনে করেন…

না, ঠিক আছে। আমি আসছি। তিনি এখনই দেখা করতে চান?

 তিনি আপনার অপেক্ষায় রয়েছেন স্যার।

ঠিক আছে। এখনই বেরিয়ে পড়ছি, বলে রিসিভার নামিয়ে রাখলাম।

আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম আমাকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল, দু চোখে সন্ত্রস্ত ভাব।

লুসিলি কি নার্ভাস হয়ে তাকে সব বলে দিয়েছে? সে কি নিজের কথা আগে বলেছে? কোন গণ্ডগোল না হলে এমন হঠাৎ জরুরী তলব করবেন কেন?

গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় মনে হচ্ছিল, কোন বৃদ্ধ মহিলা বিছানার নিচে শব্দ শুনলে যে রকম আতঙ্কগ্রস্ত হন, আমার মনের অবস্থাও ঠিক সেই রকম।

আইকেনের বাড়ির সামনের অলিন্দে দাঁড় করানো ধূসর রঙের বুইক কনভারটিবল গাড়িটার পাশে আমার গাড়িটা রেখে উপরে উঠতে লাগলাম।

উপরের ধাপটায় উঠেই সামনে চাইতে আইকেনকে পাজামা ও ড্রেসিংগাউন পরে একটা লাউঞ্জের চেয়ারে শুয়ে থাকতে দেখলাম, একটা কম্বলে পা দুটো ঢাকা। তার পাশে চওড়া কাঁধের একজন ভদ্রলোক বসেছিলেন আমার দিকে পিছন ফিরে।

আমার বুকটা কাঁপছিল এবং স্নায়ুগুলো যেন অসাড় হয়ে আসছিল। তার মুখে কোমল স্মিত হাসি দেখা দিল আমাকে স্বাগত জানাতে। আমি একটু নিশ্চিত হলাম। আমার ওপর চটে থাকলে, তার এমন হাসিমুখ থাকত না।

এই যে স্কট, তুমি কি গলফ খেলতে গিয়েছিলে?

অন্য লোকটি ফিরে চাইল তখনই চিনলাম, টম হ্যাকেট সেই লোকটা, যে দুর্ঘটনার রাতে লুসিলি ও আমাকে বাংলো থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল, সিবোর্নের অনুরাগী টম হ্যাকেট।

 সে দরাজ হাসিতে হাতটা বাড়িয়ে দিল, হ্যালো আবার তবে দেখা হল। আর. এ. বলছিলেন, আপনি নাকি নিউইয়র্ক অফিসের হেড হয়ে যাচ্ছেন?

আইকেন বিরক্ত হয়ে বললেন। বস, বস, তুমি কি গলফ খেলতে যাচ্ছিলে?

ওয়াটকিনস যখন ডাকল তখন প্রায় যাবার মুখে, বলতে বলতে হ্যাকেটের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।

অত্যন্ত দুঃখিত খেলতে যেতে বলেছিলাম, সত্যিই তাই চেয়েছিলাম কিন্তু হ্যাকেট এসে পড়ায় মনে হল তার সঙ্গে তোমার আলাপ হওয়া উচিত।

হ্যাকেটের দিকে চাইলাম ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না তবে মনে হয় গোলমেলে কিছু নয়।

হ্যাকেটের দিকে চেয়ে আইকেন হেসে বললেন। এই ছোকরা খুব পরিশ্রম করে। আমি সপ্তাহের শেষে ওকে ছুটি নিতে বলেছিলাম। গলফ খেলতে ও সুন্দরী মেয়ে খুঁজে নিতে বলেছিলাম। তুমি এভাবে হাজির হয়ে সব পণ্ড করে দিলে।

হ্যাকেট হেসে, তা মনে করবেন না। সে হয়ত গলফ খেলার সুযোগ পায়নি কিন্তু অন্য জিনিসটি থেকে বঞ্চিত হয় নি। কি, তাই না?

আমি কোনরকমে হাসি বজায় রাখলাম।

আইকেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইলেন। আচ্ছা? ওর সম্বন্ধে তুমি কি করে জানলে?

ঠিক আছে। ছোকরার একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে, তাই না? ব্যাপারটা হচ্ছে স্কট, আমি নিউইয়র্কের ব্যবসায় কিছু টাকা খাটাতে চাই। যখন আর, এ. বললেন যে, ওখানকার অফিস তুমিই চালাবে। তখন তোমার সঙ্গে কথা বলতে খুব ইচ্ছা হল। এই জন্যেই আর কি, তাই না আর. এ.?

আইকেনের মুখটা ভার হয়ে উঠলে তিনি যথেষ্ট নরম সুরে বললেন। হ্যাঁ তাই। যাই হোক ও তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছে। হ্যাকেট প্রায় হাজার দশেক ডলার ব্যবসায় খাটাতে চায়। সে চাইছে যে, তুমি তার টাকা পয়সার ব্যাপারে দেখাশুনা করবে। এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে চায়।

হ্যাকেট আমাকে বললেন, তুমিই উপযুক্ত লোক। কিন্তু দু একটা ব্যাপারে আমি তোমার সঙ্গে একটু আলোচনা করতে চাই। কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে নিশ্চয়ই মনে কিছু করবে না?

না, না। আনন্দের সঙ্গেই বলব।

এগুলো তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে কোন প্রশ্ন নয়। অফিসের বাইরে কে কি করে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। যতক্ষণ না সে কোন গণ্ডগোল বা কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়ছে।

একটা সিগারেট বার করে তা ধরাবার সময়ে নিজেকে আড়াল করলাম।

আশা করি, তুমি কোন কেলেঙ্কারীর সঙ্গে যুক্ত নও।

আইকেন অধৈর্য হয়ে বলল, স্কটের এ ধরনের কোন ব্যাপার নেই। তুমি নিশ্চয় মনে কর না যে, স্ক্যান্ডালের সঙ্গে জড়িত কোন লোককে আমি চাকরি দিই, নয় কি?

আমি নিশ্চিত যে তুমি তা করনা–হ্যাকেট সামনে ঝুঁকে আমার হাঁটুতে একটা টোকা মারল। আমি ছেলেমানুষি করতে ভালবাসি। তুমি এর কোন গুরুত্ব দিও না। এখন, আমাকে তোমার পড়াশুনার বিষয়ে কিছু বলবে কি?

আমি নিশ্চিত জানি যে সে কোন কিছু জানে বা সন্দেহ করে। আমার সঙ্গে যে মেয়েটিকে দেখেছিল। সে যে লুসিলি, তা কি সে আন্দাজ করতে পেরেছিল?

শিক্ষাগত যোগ্যতা বললাম। পরে আমার কর্মজীবন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হল। নিউইয়র্কের অফিস কিভাবে চালাব ভেবেছি, কতজন কর্মচারীর প্রয়োজন হবে, অফিস কোথায় হবে ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন করল। সব শুনে তাকে সন্তুষ্ট মনে হল।

তুমি পারবে। তুমি ঠিক রোজারের ধাঁচের লোক এবং আমার পক্ষে আশাতীত। তাছাড়া বিশ হাজার ডলার ব্যবসায়ে লাগাবে।

আইকেন মাথা নাড়লেন।

মাইনে ছাড়া মোট আয়ের শতকরা পাঁচভাগ পাবে?

হ্যাঁ।

হ্যাকেট কিছুক্ষণ ভেবে, ঠিক আছে। শর্ত খুবই ভাল, স্কট আশা করি তুমি ভাল মুনাফা করবে। কখন টাকাটা দিচ্ছ?

পরের বৃহস্পতিবার।

ঠিক আছে, রোজার। আমার চেকও ঐ সময়ে পাবে। ঠিক আছে?

আমার পক্ষেও ভাল হয়। আমি ও ওয়েস্টারকে দিয়ে সব বন্দোবস্ত করে রাখব। তুমি ওকে চেন নিশ্চয়ই?

হ্যাঁ, ভাল লোক। হ্যাকেট উঠে দাঁড়াল। ঠিক আছে, আমরাও স্কটকে গলফের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে চাই না। আমার স্থির বিশ্বাস তুমি চাকরিতে উন্নতি করবে। তোমার উন্নতি কামনা করি। হাত বাড়িয়ে দিল।

ধন্যবাদ। তার সঙ্গে করমর্দন করে আইকেনের দিকে চাইলাম, যদি তাই হয়…

আইকেনকে নিচে রাস্তার দিকে চাইতে দেখে চুপ করে গেলাম।

আইকেন বললেন, এ আবার কি ঝামেলা?

 আমিও সে দিকে চাইলাম।

একটা নীল রঙের গাড়ি, মাথায় যার লাল সংকেত আলো এবং সাইরেন বসানো দ্রুত বাড়িটার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি শক্ত হলাম।

গাড়িতে চারজন পুলিশের লোক বসেছিল।

.

০২.

 ধূসর রঙের দোমড়ান মোচড়ান পোশাক এবং হাল্কা টুপি পরা এক দীর্ঘকায় তোক গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। তার মাংসল মুখ কঠিন এবং রোদে পোড়া। তার চ্যাপ্টা নাকের দুপাশে জঙুলের চিহ্ন দেখেই মনে হচ্ছে এ ভীষণ কড়া মেজাজের সন্দিগ্ধ প্রকৃতির পুলিশের লোক।

আমি ও হ্যাকেট যখন রেলিং–এ ঝুঁকে দেখছিলাম সে উপরে চেয়ে আমাদের দেখল। এবং ধীরে ধীরে উপরে উঠে এল।

উর্দি পরা দুজন পুলিশ গাড়িটার দু-পাশে এসে দাঁড়াল এবং ড্রাইভার গাড়ীর ভেতরেই রইল।

সাদা পোশাকের লোকটিকে আমাদের কাছে আসতে দেখে ভয়ে আমার বুক কাঁপছিল। সব দাগী আসামীই যে ভাবে পুলিশের দিকে চায়। আমিও ভাবছিলাম সে আমাকে গ্রেপ্তার করতে এসেছে।

আইকেনের সামনে এসে বলল, শহরের পুলিশ বাহিনীর ডিটেকটিভ লেফটেন্যান্ট ওয়েস্ট বলছি। ক্যাপ্টেনের অভিবাদন নেবেন। আপনার সহযোগিতা কামনা করি।

কি ব্যাপার? ক্যাপ্টেন কি চান? –একেবারে হতভম্ব হয়ে বললেন।

ঐ যে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যাপারটা সম্ভবত আপনি সকালের কাগজে পড়েছে। ক্যাপ্টেন শহরের প্রতিটি গাড়ি পরীক্ষা করে দেখতে চান সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা। মিঃ আমরা শুধু একবার দেখে নিতে চাই।

আইকেনের মুখ গম্ভীর। গাড়ি দেখতে চান? এটা কি ভাবতে পারছেন না যে আমার সঙ্গে এই ঘটনার কোন সম্পর্ক নেই?

হ্যাকেট রেলিং–এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। তার মুখে কৌতূহল প্রকাশ পাচ্ছিল।

ওয়েস্ট মাথার পিছনদিকে টুপিটা আরও ঠেলে দিল। তার কপালটা ঘামে চকচক করছিল।

না, স্যার আমরা সে সব ভাবিনি। তবে আমরা শহরের প্রতিটি গাড়িই, চেক করে দেখছি। আপনার ড্রাইভার আছে। এমনও হতে পারে যে সে গতরাত্রে আপনার কোন গাড়ি ব্যবহার করেছিল। নিশ্চিত বলছি না, তবে একবার দেখে নিলেই হয়ে যায়। ক্যাপ্টেন অবশ্য বলেছেন যে আপনি আপত্তি করলে যেন আপনাকে বিরক্ত না করা হয়।

আইকেন রেগে বললেন, আমার ড্রাইভার গতরাত্রে কোন গাড়ি ব্যবহার করেনি।

 ঠিক আছে স্যার, ক্যাপ্টেন জোর করতে বারণ করেছেন। তবে ড্রাইভার না করলে অন্য কেউ ব্যবহার করে থাকতে পারে।

আমার পা ভাঙ্গার পর আমার একটা গাড়িও বাইরে যায় নি। আপনি বৃথা সময় নষ্ট করছেন।

আমার এই কাজ। যদি আপনার গাড়ি দেখাতে আপত্তি করেন, ঠিক আছে। আমি চলে যাচ্ছি এবং ক্যাপ্টেনকে একথাই বলব।

আইকেন যেন ফেটে পড়লেন এবং হ্যাকেটের দিকে চেয়ে, কথা শোন আমাদের টাকার যে কিভাবে অপব্যবহার হয় এটি তারই উদাহরণ। চারটে গাড়ি পরীক্ষা করতে চারজন লোক। আমি সুলিভানকে লিখে সব জানাব। একটা বোকা লোক গাড়ি চাপা পড়ে মরেছে, তার জন্য এত হট্টগোল।

হ্যাকেট বিনীতভাবে বলল, ড্রাইভার থামেনি। এই অফিসারকে তুমি দোষ দিতে পার না। রোজার উনি ওর ডিউটি করছেন।

ঠিক আছে, যান, আমার গাড়ি পরীক্ষা করুন। আমি মিথ্যা বলি না। আমাদের কর বাবদ দেওয়া টাকার এইভাবে অপব্যবহার করুন। যান! এখুনি এখান থেকে চলে যান।

ওয়েস্ট বলল, ধন্যবাদ। আপনার গ্যারেজ কোথায় দয়া করে বলবেন?

 আইকেন আমার দিকে চেয়ে, গ্যারেজটা কোথায় জান?

জানি।

 তাহলে এই ভদ্রলোককে নিয়েগিয়ে দেখিয়ে আনতে পারবে? ওর সঙ্গে সঙ্গেই থাকবে। দেখবে ওর লোকেদের অন্য কেউ যেন ভেতরে না ঢোকে। কেবল লক্ষ্য রাখবে যে আমার ড্রাইভারকে বিপদে ফেলার মত কোন সাক্ষ্য প্রমাণ সেখানে নেই।

আমরা সিঁড়ি ভেঙ্গে নীচে এলাম যেখানে উর্দিপরা লোকগুলো ছিল। ওয়েস্ট তাদের দিকে মাথা নাড়ল। যখন তাদের চোখের আড়ালে এলাম ওয়েস্ট শান্ত গলায় বলল, আপনি কি এই লোকটার কাছে কাজ করেন?

হ্যাঁ।

আমার চেয়েও খারাপ অবস্থা। আমার ধারণা ছিল আমাদের ক্যাপ্টেন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ লোক। এখন দেখছি এই আইকেনের সঙ্গে তার কোন তুলনাই হয় না।

আমরা পন্ডিয়াক ও বুইকটার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। ওয়েস্ট থেমে গাড়ি দুটোর দিকে চাইল।

এ দুটো কার জানতে পারি?

সিবোর্নের গাড়ি লাইসেন্সের টিকিটটা সরিয়ে সেখানে আমার টিকিটটা আগেই আটকে রেখেছিলাম কিন্তু জানতাম ইচ্ছে করলে সে লাইসেন্সের টিকিটের সঙ্গে গাড়ির নাম্বার মিলিয়ে দেখতে পারে তাহলেই সর্বনাশ। গাড়িটা ধার করা তাও বলতে ইতস্ততঃ করলাম।

পন্টিয়াকটা আমার। বুইকটা মিঃ হ্যাকেটের যাকে উপরে দেখলেন।

ওয়েস্ট গাড়ি দুটোর চারপাশে পাক দিয়ে আচ্ছা গাড়ি দুটোর নিশ্চয়ই কোন গণ্ডগোল নেই তাই না? আপনি বললেন না যে পন্টিয়াকটা আপনার?

হ্যাঁ।

আপনাকে একটা সার্টিফিকেট দিতে পারি। আমাদের লোকেরা তাহলে আপনার কাছে যাবে না। আপনার নাম কি?

বললাম।

 ছাপা ফর্মের একটা প্যাড সে হাতের উপর তুলে নিল এবং লিখতে শুরু করল।

ঠিকানা?

 বললাম।

সে গাড়িটার দিকে চেয়ে আরও কিছু লিখল। পরে কাগজটা প্যাড থেকে ছিঁড়ল।

 ক্যাপ্টেন এইভাবে সার্টিফিকেট দিতে চান। মনে হতে পারে যেন উকুন বাছা হচ্ছে। এই সার্টিফিকেটের বলে আপনার গাড়ি আজ থেকে বিপদমুক্ত। যদি ফেণ্ডার বেঁকে যায় বা গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের কাছে আর রিপোর্ট করার দরকার হবেনা। কেউ কিছু বললে সার্টিফিকেটটা দেখাকেন। ঝামেলা কিছু নেই, এই ভাবে আমরা শহরের সব গাড়িই পরীক্ষা করে দেখছি। সার্টিফিকেটটা নিয়ে নিলাম।

হারাবেন না। অনেক ঝামেলা থেকে রেহাই পাবেন।

না হারাব না। সার্টিফিকেটটা যত্ন করে পকেটে রাখলাম যেন দশলক্ষ ডলারের বিল রাখছি।

ওয়েস্ট বলল, ক্যাপ্টেনের আইডিয়া খুব সুন্দর। এই জন্যেই তিনি ক্যাপ্টেন। অবশ্য কোন কাজ করেন না। আমি বলতে চাইছি যে আমি ক্যাপ্টেন হলে এরকমটা করতাম না। এখন পুলিশের সবলোকই সেই হত্যাকারীর খোঁজে ঘুরছে। প্রত্যেকটি পুলিশ বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্যারেজ দেখছে। রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করছে। আমাদের ক্যাপ্টেন কেমন জানেন? পত্রিকায় যেসব পুলিশের খবর বার হয় তিনি তাদেরই মত একজন। তিনি আত্মপ্রচার চান। প্রেসের কাছে যে টুকরো খবরটা আজ সকালে তিনি দিয়েছিলেন, পড়েছেন? ও’ব্রায়ানের ব্যাপারে। আপনার কাছেই বলছি, ও’ব্রায়ান ছিল পুলিশ বাহিনীর সবচেয়ে খারাপ লোক, ভীষণ কুঁড়ে সবসময় এক কাজ নিয়ে পড়ে থাকত। সে ঘুষ নিত এবং একটু আধটু ব্ল্যাকমেলও করত। পুরোপুরি বদমাশ ছিল, ক্যাপটেন তা জানত। গত সপ্তাহে ও’ব্রায়ান বলল এইবার সে ক্যাপ্টেনের হাত থেকে নিস্তার পাবে। উল্টে লোকটা নিজেই গাড়ি চাপা পড়ল। জানেন, এ কয়দিনে কতটুকু ঘুমিয়েছি? এক ঘণ্টা দশ মিনিট, তাও আবার গাড়িতে বসে বসে। আজ একটু ঘুমোবার সময় পেলে ভাগ্যবান মনে করব।

শুনতে শুনতে ভাবছিলাম কোন পুলিশ অফিসারকে এভাবে কথা বলতে শুনিনি। কিছুটা হতভম্ব হয়েছিলাম।

ওয়েস্ট তার সাদা দাঁত বার করে ঠোঁট চেপে ধরল।

খুব সিরিয়াসলি কথাগুলো ধরবেন না মিঃ স্কট। মাঝে মাঝে আমি এভাবে কথা বলি। এতে বেশ ভালোই লাগে। যদিও জানি ও’ব্রায়ান ভাল লোক ছিল না তবুও যে লোকটা হত্যা করেছে তাকে খুঁজে বার করা আমার খুব ইচ্ছা। হয়ত কিছুটা সময় নেবে তবে আমরা তাকে খুঁজে বার করবই–সিগারেটের টুকরোটা মাটিতে ফেলে জুতোসুষ্ঠু পা দিয়ে চাপা দিয়ে বলল। এবার চলুন, আপনার বসের গাড়ি দেখা যাক। এই নয় যে গাড়িগুলো নিয়ে কিছু করার আছে। তবে আমাকে একটা ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দিতে হবে। কোথায় গাড়িগুলো আছে?

 সুইমিং পুলের ধারে, কাছেই।

সুইমিং পুল, অ্যাঁ? দারুণ বড়লোক। আপনি বড়লোকের কাজ করতে ভালবাসেন, মিঃ স্কট?

চাকরি যেমন নিতেও পারি তেমনি আবার ছাড়তেও পারি।

হ্যাঁ, সেইটাই একমাত্র উত্তর। লোকটানরাধমও হতে পারে। কমিশনারেরও চোখে একইরকম দৃষ্টি দেখেছি। টাকার জন্য লোকে নিজেকে ক্ষমতাশালী মনে করে। আমি এধরনের ক্ষমতাশালী লোকেদের পছন্দ করি না। টাকা পয়সাওয়ালা মানুষেরা যে পথে চলে, যখন চলে সবসময়ই নিজেদের ভার, অন্যদের ঘাড়ে চাপাবার চেষ্টা করে।

মোড়টার বাঁক নিতেই চার গাড়ির গ্যারেজ ও সুইমিং পুলটার কাছে এসে পড়লাম।

লুসিলি সুইমিং পুলের ড্রাইভ বোর্ডে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের দিকে পাশ ফিরে থাকতে আমাদের দেখতে পায়নি। একটা সাদা বিকিনি পরেছিল যেটা লোককে দেখা যায় না এমন দেহের অংশকে কোনরকমে আড়াল করে রেখেছিল। শরীরের অন্যান্য অংশগুলো সোনালী দেখাচ্ছিল, তার ঘন বাদামী চুল কাঁধে ছড়িয়ে ছিল। এমন একটা দৃশ্যের অবতারণা করেছিল যে আমি ও ওয়েস্ট থমকে দাঁড়ালাম যেন হঠাৎ একটা শক্ত দেয়ালের সামনে এসেছি।

সে পায়ের গোড়ালির উপর ভর করে হাত দুটো উপর দিকে তুলে বোর্ড থেকে লাফ দিল।

 মনোরম ভঙ্গীতে ডিগবাজী খেয়ে সে জলে এসে পড়ল। চুলগুলোদুপাশেভাসিয়ে চিৎসাঁতার কেটে বাঁধানো সিঁড়ির দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।

আচ্ছা ওয়েস্ট বলল।

সে টুপি সরিয়ে রুমালটা নিয়ে কপালের ঘাম মুছল লুসিলিকে উঠে আসতে দেখে। তার সোনালী চুল থেকে জল পড়ছিল এবং সাদা বিকিনিটা গায়ের উপর এমনভাবে চেপে বসে ছিল মনে হচ্ছিল যেন দ্বিতীয় কোন চামড়া।

সে কেবিনে ঢোকা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলাম।

 ওয়েস্টের শক্ত মুখটা দুর্বোধ্য হাসিতে ভরে উঠল। ওর মেয়ে?

 মিসেস আইকে।

মিসেস আইকেন?

হা।

আপনি বলতে চান ঐ পাকা বুড়োটার বৌ?

হা, মিসেস আইকেন।

সে শিস দিতে দিতে বলল, বয়স কুড়ি বছরের বেশি বলে মনে হয় না।

এটা অবশ্য আমার দোষ নয়।

 ঠিক, ঠিক। আপনার দোষ নয়। আচ্ছা লোকটা নিশ্চয়ই টাকার জোরে বিয়ে করেছে, তাই না?

বলতে বলতে সে আমাকে ছেড়ে গ্যারেজের ভিতরে ঢুকল।

রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম।

লুসিলি কেবিন থেকে বেরিয়ে এল। তার কোমরে লাল রঙের বেল্ট পরনে প্যান্ট ও পায়ে চটি। হাতে ছিল কম্বলে তৈরি বিকিনির অংশ দুটো এবং সে আমাদের দিকেই আসছিল।

সাবধান করে না দিলে ওয়েস্টের সামনে কিছু বোস বলে ফেললে ফল যে কি মারাত্মক হতে পারে বুঝতে পেরে তার দিকে ছুটলাম।

চেয়ে দেখলাম ওয়েস্ট গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে আসছে। ওয়েস্ট গ্যারেজের দরজাবন্ধ কয়ছিল, আমি পা ফেলে তার কাছে এলাম।

এই লোকটা পুলিশ অফিসার, তাড়াতাড়ি বললাম। সে তোমার খোঁজে আসেনি। গাড়ি পরীক্ষা করতে এসেছে। ভয় পাবার কিছু নেই। এভাবে আসা আমার উচিত হয়নি, কিন্তু সময় ছিল না। যাই হোক এখন হয়তো মূৰ্ছা যাবে।

চোখ মুখ দেখে, তার বয়স অনেক বেশি দেখাচ্ছিল।

ওয়েস্টের পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম, আমাদের দিকে আসছে এবং উপস্থিত হল।

 সে দাঁড়াল আমার পাশে এসে, এবং লুসিলির দিকে চেয়ে ছিল।

লুসিলিও তার দিকে চাইল যেন একটা খরগোস একটা সাপের দিকে চেয়ে আছে।

ওয়েস্ট বলল, শুভ সন্ধ্যা, মাদাম। আমি গাড়ি পরীক্ষা করে দেখছিলাম, আশা করি পড়েছেন…আর বেশি কথা সে বলতে পারল না।

হঠাৎ লুসিলি পিছন ফিরে হাঁটতে লাগল। তবে জোরে জোরে হাঁটছিল।

 ফিরে দেখছিল ওয়েস্ট, ছুটে অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত আমরা দুজনে কথা বলতে পারলাম না।

বেশ মেজাজি, আঁ, সে বলল, বদ–খেয়ালি, তাই না?

 পুলিশ অফিসার ওর কাছে আর এমন কি? স্বাভাবিক ভাবে বললাম, বড়লোকের বৌ তো।

ঠিক রুমাল বার করে ঘাম মুছতে মুছতে সে বলল, এটা ওর অভ্যাস। বুঝতে পারছি না কি হয়েছিল। মুখের রং পালটাতে চলেছেন?

তাই বুঝি?

 ওয়েস্ট আমার পাশে পাশে হাঁটতে লাগল।

হ্যাঁ, রং পালটেছিল। যেন পুতুল। এমন সুন্দর চেহারা নিয়ে ঐ বুড়ো আইকেনকে বিয়ে করা মানে জীবনটা নষ্ট করাই মনে হয়।

কর্কশ স্বরে বললাম, তোমার যদি এতই কষ্ট হয় তবে মেয়েটাকে গিয়ে বল না।

আমার চাকরিটাকে পছন্দ করি না বটে তবে হারাতেও চাই না। ওর কি কোন প্রণয় আছে, আপনি কি মনে করেন?

ওকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন।

 ইচ্ছা হয় তবে মনে হয় না আমাকে বলবে। সে কি কোনদিন আইকেনের গাড়ি ব্যবহার করেছে? কোনটাকে কি কোনদিন ভাঙ্গা চোরা অবস্থায় দেখেছেন?

না, ড্রাইভার ভালভাবেই রাখে। দেখলে সম্ভবতঃ সেই দেখবে।

 ও ব্যবহার করে কিনা এটা দেখা অবশ্য আপনার কাজ নয়। কিন্তু তার যদি ড্রাইভার পারমিট না থাকে তবে উত্তর হবে সে নিশ্চয়ই গাড়ি ব্যবহার করে না।

ওয়েস্ট আড়চোখে আমাকে দেখে, ওর কোন ড্রাইভিং পারমিট নেই। এর অর্থ এই নয় যে ও গাড়ি নিয়ে মাঝে মাঝে বাইরে বার হয় না। অনেকেই এ রকমটি করে। কি করে জানলেন যে ও গাড়ি চালাতে জানে না?

মনে হয় ওকেই জিজ্ঞেস করা ভাল। এতে আপনার কিসের দরকার?

দেখুন ভাই, মনে কিছু করবেন না। আমার কাজই হচ্ছে প্রশ্ন করা। আমি পুলিশের লোক। যখন অস্বাভাবিক কিছু ঘটে আমরা ভাবি কেন এমনটি হল। ভাবছি আমাকে দেখে কেন সে বিবর্ণ হল। সুন্দর চেহারার মেয়েকে বাগে আনতে পুলিশের চেয়ে তোমরা চোমরা লোকের দরকার কিন্তু সে সত্যিই কেমন হয়ে গেল। কেন? কি এমন ঘটল? বিবেক যদি দংশন না করে তবে পুলিশের লোক দেখলে মুখ ফ্যাকাশে হতে পারে না।

আমি কি করে জানব?

 ঠিক। আপনি কি করে জানবেন?

ওয়েস্ট আইকেন যেখানে ছিলেন সে দিকে চলল। কিছুটা দুরত্ব রেখে আমিও পিছন পিছন চললাম।

চারটি গাড়ির জন্য আইকেনের নামে সে চারটি সার্টিফিকেট দিল।

আইকেন সেগুলো নিয়ে টেবিলে ছুঁড়ে দিল। ওয়েস্ট হ্যাকেটকেও তার গাড়ির জন্য একটা সার্টিফিকেট দিল।

মনে হয় সব ঠিক আছে। আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ, স্যার। নিস্তব্ধ পদক্ষেপে সে নিচে নামল।

আমার মনে হয় এসব হচ্ছে করদাতাদের টাকার যথেচ্ছ অপব্যবহার। যতসব ঝামেলা..আইকেন গর্জন করলেন।

হ্যাকেট ভুরু কুঁচকে বলল।

তুমি কি তাই বল? যে লোকটা পুলিশটাকে মেরেছে ওরা তাকেই খুঁজছে। ওদের কাছে এটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তারা জানে হত্যাকারীর গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাড়িটা খোঁজার ব্যাপার এটাই সবচেয়ে ভাল উপায়। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটাকে তারা খুঁজে বার করবেই যেটার কোন সার্টিফিকেট নেই। তখন তারা হত্যাকারীকেও বার করতে পারবে। আচ্ছা, আমরা তোমার গলফ খেলায় বাধা দিচ্ছি। আমাকেও যেতে হবে। আইকেনের দিকে চেয়ে। বৌটা ভেবে খুন হবে আমি আবার কোথায় গেলাম। তাহলে আর. এ. আমাদের এই প্রচেষ্টা যথেষ্ট আনন্দের হবে, কি বল? বলেই সে আইকেনের সঙ্গে করমর্দন করল।

আইকেন বললেন, সব কিছুই স্কটের উপর নির্ভর করে।

হ্যাকেট আমার কাঁধ চাপড়ে, ও ঠিকই বলেছে। বেশ। আমি এবার যাই। পায়ের দিকে লক্ষ্য রাখবে আর. এ.। যত শীঘ্র ভাল হবে ততই মঙ্গল।

হ্যাকেট ও আমি আমাদের গাড়ির দিকে যেতে যেতে হ্যাকেট বলল, আমার হোটেলে আসতে ভুলবে না। আমার স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারলে যথেষ্ট আনন্দ পাব।

বাঃ খুব সুন্দর। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে আর. এ. চান প্রতিরাতেই আমি তার কাছে আসি ফলে সময় পাই না।

হ্যাঁ, আমি তার ব্যবস্থা করব। তবু সময় করার চেষ্টা করবে। পন্টিয়াকের দিকে চেয়ে, দেখছি এখনও তুমি জ্যাকের গাড়িটা ব্যবহার করছ।

হ্যাঁ, তবে বেশিদিন করতে হবে না। শীঘ্রই আমার গাড়ি ফিরে পাব।

 গাড়িটার কি হয়েছে বললে?

তেল পড়ে যাচ্ছে।

সে মাথা নেড়ে, গাড়িগুলো বড় বিপদে ফেলে। এখানে আসার আগে আমার গাড়ির গ্যাসকেট। ভেঙ্গে যায়। প্রত্যেক গাড়িই কিছুদিন পরে পরে গণ্ডগোল করবে।

আমি নিশ্চিত যে একটা অপ্রীতিকর মুহূর্তের সামনে পড়তে হবে।

অনুসন্ধানী দৃষ্টি মেলে বলল, আর. এর স্ত্রীকে দেখেছ?

আমি, আমি দেখেছি।

আমিও দেখেছি। প্রায়ই ভাবি আর, এ. কেন তাকে বিয়ে করল। সে আসলে একজন যুবকের উপযুক্ত। আর.এ. তার পক্ষে যথেষ্ট বয়স্ক। যখন এই বয়সের মেয়ে তার চেয়ে প্রায় চল্লিশ বছরের বড় বুড়োকে বিয়ে করে তার আশেপাশের সমস্ত যুবককে সে বিপথগামীকরে। কেন যে তোমাকে কথাগুলো বলছি বুঝতে পারছি না। তোমার মত বুদ্ধিমান ছেলে অবশ্য নষ্ট হবে না।

আমার হাত চাপড়াতে চাপড়াতে সময় পেলেই আমাদের ওখানে যেতে ভুলবে না। আজ এই পর্যন্ত। আশাকরি আবার শীঘ্র দেখা হবে। গাড়ির জানালা থেকে মুখ বাড়িয়ে বলে চলে গেল।

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম।

বুঝতে পারলাম গতকাল রাতে আমার বাংলোয় লুসিলিকে দেখে সে চিনতে পেরেছিল। তাই উপদেশের ভঙ্গিতে আমার মুখে যেন বিপদের লাল আলো ফেলছিল।

জোরে নিশ্বাস নিতে নিতে পন্টিয়াকের ভিতরে বসলাম। সামনে ঝুঁকে উইন্ড–স্ক্রীনের মধ্যে দিয়ে সামনে চেয়ে স্টার্টারের বোতাম টিপে জোরে গাড়ি চালিয়ে বাংলোর দিকে ছুটলাম।