৮. বিচার শেষ

০৮.

বিচার শেষ

পরের দিন সকালে আমি লস্ এঞ্জেলসে গিয়ে ম্যাকলিনের সঙ্গে দেখা করলাম। ডেলানির পাশে গেলাসের ব্যাপারটা সবটাই তাকে বললাম, চুপকরে শুনলো সে। তারপর আমাকে বললো, এ কথাটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুলিশকে জানিয়ে আসা ভালো।

এখনই যাচ্ছি, আমি উঠে পড়লাম।

এক মিনিট মিঃ রেগান, ধূর্ত চোখে সে তাকালো। একটা কথা বলে দিই, এ ধরনের সাক্ষ্য যিনি দেবেন তার এ ব্যাপারটায় কোনো স্বার্থ না থাকলেই ভালো। আপনার কোনো স্বার্থ নেই তো? যদি বলেন আমি চাই মিসেস ডেলানি ছাড়া পান, তাহলে অবশ্যই স্বার্থ আছে।

আমি সে কথা বলছিনা। ওর স্বরটা তীক্ষ্ণ হলো, বুজকে এ খবর দিলেই আপনার ওপর নজর এসে পড়বে। মিসেস ডেলানির বিরুদ্ধে ওরা যা খাড়া করেছে, সেটা নষ্ট হয়ে যাবে। বুজ ভাবতে পারে আপনি মিথ্যা বলছেন মিসেস ডেলানি ছাড়া পাওয়ার জন্য, ও এও ভাববে যে আপনার সঙ্গে মিসেস ডেলানির কোনো যোগাযোগ আছে। তাহলে ওর সুবিধা হবে।

আমি বললাম, মিসেস ডেলানির সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল, ওঁর স্বামী অবশ্য জানতেন। একদিন ওঁকে রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেছিলাম, ওই একদিনই।

ম্যাকলিন অনেকক্ষণ ভাবলল, তারপর বললো, ঝুঁকিটা আমাদের নিতে হবে। বুজ যদি জানতে চায় তাহলে বুজের কাছে ব্যাপারটা বলাই ভালো। আপনি না বলার পর ও যদি জেনে যায় তবে খুব খারাপ হবে। দেখুন, মিঃ রেগান, মিসেস ডেলানির অবস্থা খুবই অনিশ্চিত। ওঁর জীবনে কোনো কুৎসা নেই। আমি এইটাই ধরে নিচ্ছি। আদালতে আমি ওঁকে একজন বিশ্বস্ত স্ত্রী হিসেবে পেশ করতে চাই। যত দুর্ব্যবহারই ওঁর ওপরে করা হয়ে থাকুক তবু চার বছর ধরে উনি স্বামীর কাছেই ছিলেন। এমনকি ওঁকে মারধোর করার পরে যখন উনি বাড়ি ছেড়ে যাবেন ভাবলেন, তারপরও উনি ফিরে আসছিলেন, ছেড়ে যেতে পারেন নি। এতে কাজ হবে জুরীদের ওপরে। ওদিকে যদি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নী প্রমাণ করতে পারেন যে মিসেস ডেলানি স্বামীর জীবদ্দশায় তার বিশ্বাস ভাজন ছিলেন না তবে ওঁকে বাঁচানো যাবে বলে মনে হয় না। ওঁকে ছাড়িয়ে আনতে হলে কিছু টাকার প্রয়োজন। ওঁর যদি টাকা থাকতো, আমি লাউসন হান্টকে লাগাতাম। তার মতো লোকেরই দরকার এই কেসে।

কত লাগবে তার?

 ম্যাকলিন বললো, পাঁচ হাজার ডলার-এর মতো।

আমি দ্বিধা করলাম না, ঠিক আছে, আপনি তার সঙ্গে কথা বলুন।

 ম্যাকলিন আমার দিকে হাঁ করে চাইলো, কি বলছেন আপনি?

 তার সঙ্গে কথা বলুন। আমি টাকা দেবো। আমার টেলিফোননম্বরটা আমি ওকে লিখে দিলাম।

বুঝতে পারছিলাম যে, ও আমার দিকে বিশ্রীভাবে তাকিয়ে আছে, আমি পরোয়ানা করে পুলিস হেডকোয়ারটার্সের দিকে গাড়ি চালালাম।

লেফটেনান্ট বুজের অফিসে ঢোকার সময়ে আমার বেশ ভয় ভয় করছিল।

বুজ জানলার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে পাইপ টানছিল। আমাকে দেখে ঘুরে দাঁড়ালো, এসো রেগান। তোমার জন্য কি করতে পারি?

আমি বললাম, ডেলানির ব্যাপারে এসেছি, একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ওঁকে যখন দেখতে পাই তখন একটা খালি গ্লাস পড়ে ছিল। আমি ওটাকে ধুয়ে রান্নাঘরে তুলে রেখেছিলাম।

বুজ কথাটা শুনে চমকে উঠলো। কি কারণে তুলেছিলে?

কি জানি কেন। আমার খুব ধাক্কা লেগেছিল। জেফারসনের জন্য যখন অপেক্ষা করছিলাম, তখন গ্লাসটায় পা লেগে গিয়েছিল। ওটাকে দেখে কিছু করতে পেরে বেঁচে গেলাম। ব্যাপারটা একেবারে ভুলে গিয়েছিলাম। আজ সকালে মনে পড়লো।

তুমি কি ইয়ার্কি করছো? বুজের মুখটা লাল হয়ে উঠলো।

না, এটা নিয়ে কি ইয়ার্কি করা যায়? সত্যি বলছি পাশে একটা খালি গ্লাস পড়েছিল। বুজ আমার দিকে তাকালো, তারপর বলল, যদি তুমি মিথ্যে বলে থাকে তাহলে খুনের সহকারী হিসাবে তোমাকে দেখা হবে। ঠিক আছে। চলো, ওই বাড়িটায় যাবে, সেখানে তুমি দেখাবে কোথায় গ্লাসটা পেয়েছিলে আর কোথায় রেখেছে?

সার্জেন্ট হপকিন্সকে ডাকলো ও, ভেতরে এলো হপকিন্স।

তাকে ব্যাপারটা বলা হলো। হপকিন্স আমার দিকে তাকালো।

ডেলানির বাড়ি পর্যন্ত আমরা চুপচাপ ছিলাম। ওরা দুজনে সামনে বসেছিল আমি পেছনে। খুব খারাপ লাগছিল আমার, ওদের বিরূপ মনোভাব আমি পরিষ্কার অনুভব করতে পারছিলাম।

বাড়িতে গিয়ে আমি সব দেখালাম। বুজ গ্লাসটাকে ছুঁতে দিলোনা। রুমাল জড়িয়ে নিয়ে শুকলো একবার। তারপর সেটাকে নিয়ে ব্যাগে রেখে দিলো।

আচ্ছা রেগান, বুজের গলায় পুলিশী সুর লাগলো, এই মেয়েটির সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক?

এটাই আমি আশা করেছিলাম। তার জন্য আমি তৈরী ছিলাম। উনি আমার কেউ নন, ম্যাকলিনের সতর্কতার কথা মনে পড়লো আমার, কেবল আমার খরিদ্দারের স্ত্রী।

বুজের চোখ জ্বলে উঠলো, তুমি শপথ করে বলতে পারো যে তুমি ওকে কখনো বাইরে নিয়ে যাও নি একা একা?

ম্যাকলিনের কথা মনে পড়লো।

 গিল্ডাকে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খাবার কথাটা যদি আমি চেপে যাই আর বুজ পরে জানতে পারে, তবে সেটা খুব খারাপ হবে। কিন্তু এখন আর বলা চলে না। এখন বললে, ও সত্যি কথাটা বার করে ফেলবে।

আমি একটা ঝুঁকি নিলাম।

আমি শপথ করছি, উনি আমার কেউ ছিলেন না।

আমার দিকে বুজ অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলো, রেগান, ধরে নিচ্ছি–তুমি মিথ্যে বলছো না। আমি খোঁজ নেব। যদি মিথ্যে বলে থাকো, পনেরো বছরের মত তোমায় জেলে যেতে হবে।

লেফটেনান্ট, তোমার যা খুশি তুমি করতে পারো।

বুজ হাসলো, ঠিক আছে, হয়তো মেয়েটা গ্লাসটা সরায় নি। আমি ভাবছিলাম গ্লাসটা না থাকার কোনো মানে হয় না। আচ্ছা দেখা যাক, চলো তোমায় পৌঁছে দেব।

দুদিন পরে ম্যাকলিন আমাকে ফোন করলো।

 হান্ট কেসটা নেবেন, সে বললো, আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান। আজ এগারোটার সময় আসতে পারবেন?

আমি বললাম যাবো।

হান্টের খুব নাম, গত দশ বছরে খুনের কেসের খবর যারা কাগজে পড়েছে তারাই জানে ওঁর নাম। লস এঞ্জেলসের সৌখিন পাড়ায় ওঁর অফিস।

আমি কখনো ওঁকে দেখিনি। দেখে ভারী অবাক লাগলো। পঞ্চাশ থেকে ষাটের মধ্যে বয়স। মুখ দেখে কিছুই বোঝা যায় না।

বসুন মিঃ রেগান। আমি কেসটা দেখছি। শুনছি আপনি টাকা দিচ্ছেন?

হ্যাঁ

উনি এর কারণ জানতে চাইলেন।

আমি ব্যাপারটা সংক্ষেপ করতে চাইলাম। কত লাগবে?

কারণটা জানতে চাওয়া আমার ব্যাপার, যদি আপনি চান আমি মিসেস ডেলানিকে ছাড়িয়ে আনি। ম্যাডক্স যখন বলেছে ডেলানিকে খুন করা হয়েছে, তখন এতে কোন ভুল নেই। আমার কাজ আমার মক্কেল কে ছাড়িয়ে আনা, দোষী হোক আর নির্দোষ হোক। যতক্ষণ বিচার শেষ না হচ্ছে ততক্ষণ তার সব কিছুই আমি। যদি ম্যাডক্সকে হারাতে হয়, আমার সব কিছু জানা দরকার। আপনি যা বলবেন তা আর কেউ জানবে না। এখন যদি আপনি মিসেস ডেলানিকে বাঁচাতে চান তবে সমস্ত কিছুই খুলে বলা ভালো।

আমি প্রথমে একটু ইতস্ততঃ করলাম তারপর সমস্তই তাকে খুলে বললাম। কিছুই লুকোইনি, বলতে পেরে আমার তৃপ্তি হচ্ছিল।

উনি ঘুরে দাঁড়ালেন। খুনের জন্যই সব কিছু করা হয়েছিল, ম্যাডক্স সেটা ধরতে পেরেছে। আপনি যা বললেন জানি না এতে সুবিধে হবে কি না। ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নী প্রমাণ করতে চাইবে যে ডেলানি মাতাল ছিলেন। যে মেয়েটা ওদের বাড়িতে কাজ করত, তাকে দিয়ে ও বলাবে যে সকাল থেকেই ডেলানি বোতল নিয়ে বসে গিয়েছিলেন। ও বলবে যে মিসেস ডেলানি হুইস্কিতে সায়ানাইড মিশিয়ে দিয়েছে। আপনি অন্যমনস্ক ভাবে ওটা সরিয়ে মতলবটা নষ্ট করে দিয়েছেন। যদি প্রেম ছিল তাহলে কিছুই করার নেই। জুরীকে আমার বিশ্বাস করাতে হবে গিল্ডা স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত ছিল, যেহেতু টাকা ফুরিয়ে গিয়েছিল তাই উনি আত্মহত্যা করেছেন।

তাই তো হয়েছে। আমি বললাম, এটা ওদের বিশ্বাস করতেই হবে।

দেখা যাক, আপনি আমার ওপর ছেড়ে দিন। এখন সব কিছু নির্ভর করছে আপনার প্রেমটা জানাজানি হওয়া না হওয়ার ওপরে।

স্বীকারোক্তি করার মত পাগলামো করে ফেলবেন না যেন, কারণ এতে সুবিধা হবে না। গিল্ডার শাস্তি একটু বেশি হতে পারে, কিন্তু আপনিও বিপদে পড়বেন। বিকেলে আমি গিল্ডার সঙ্গে কথা বলবো।

আমি চলে এলাম। বিচার শেষ হলেই আমাকে পাঁচ হাজার ডলার দিতে হবে। হয়তো সমস্ত বিক্রি করতে হবে আমায়। একটা কাজের ব্যবস্থা করতে হবে আমায়। মিয়ামির অফিসে আমি চিঠি লিখলাম। যদি ওরা আমাকে কাজ দেয়।

এখন বিচারের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আমার আর কোনো পথ নেই।

.

গিল্ডাকে গ্রেপ্তারের পাঁচ সপ্তাহ পরে এই উত্তেজনাময় মামলা শুরু হলো। এই কটা দিন খুব উত্তেজনার মধ্যে আমার কেটেছে।

ডাক্তারকে দেখে মনে হলো বেশ ভয় পেয়ে গেছেন। ঘরের মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার ছিল যে আমাদের কথা বলতে দিচ্ছিল না। জেফারসন গম্ভীর মুখে ছিলেন।

প্রায় আড়াইটার সময়ে আমার ডাক পড়লো। এর আগে ডাঃ ম্যালার্ড, জেফারসন এদের সবাইয়ের শুনানী হয়ে গিয়েছে।

আমি সাহসে বুক বেঁধে উঠলাম। ছসপ্তাহ আমি গিল্ডাকে দেখতে পাই নি। হান্টের সাবধানতার কথা আমার মনে ছিল।

 শপথ নেবার পরে একবার গিল্ডাকে আড়চোখে দেখে নিলাম। অদ্ভুত বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে ও। গিল্ডা চুপ করে হান্টের পাশে বসেছিলো। জুরীদের দিকে তাকালাম।

তিনজন মহিলা, বাকিরা পুরুষ। ডি. এ. উঠে আমাকে টি. ভি. সেট সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন। কিভাবে ডেলানিকে দেখতে পেয়েছিলাম, উনি যে ইলেকট্রিক শক খেয়ে মারা গেছেন বলে আমার মনে হয়, বললাম আমি।

ডি. এ গ্লাসটার কথাও আমার কাছ থেকে জানতে চাইলেন। জুরীদের চোখ থেকে একঘেয়ে ভাবটা সরে যাচ্ছে দেখতে পেলাম।

সমস্ত কথা শুনে ব্যাপারটা উনি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারেবারে জানতে চাইলেন। জুরীদের বোঝাতে চাইলেন যে ডেলানি সেটার পেছনটাও খুলতে পারেন নি বা স্ক্রু-ড্রাইভারটাও তুলতে পারেন নি।

শেষকালে উনি বললেন, ঠিক আছে মিঃ রেগান, এই বলে উনি হান্টের দিকে চাইলেন।

চেয়ার থেকে না উঠেই হান্ট বললেন আমাকে তার কিছু জিজ্ঞেস করার নেই, পরে ডাকবেন আমায়। আমি আগের ঘরটায় ফিরে গেলাম।

বেলা চারটের সময় আমাকে আবার আদালতে আনা হলো। তখন সেখানে বেশ উত্তেজনা। কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন হেনরি স্টাডলী, শিরদাঁড়ার রোগের একজন বিশেষজ্ঞ, ডেলানিকে উনি চিকিৎসা করতেন।

উনি বললেন, ডেলানির অক্ষমতাটা স্বাভাবিক ছিল। তার শিরদাঁড়া জখম হয়ে কোমর থেকে নীচে পর্যন্ত সম্পূর্ণ অসাড় হয়ে গিয়েছিল।

হান্ট বললেন, ডেলানির পক্ষে নীচের → দুটো খোলা সম্ভব নয়, এ বিষয়ে অ্যাটর্নী সাহেব অনেক কিছু বলেছেন। এরই ওপর ভিত্তি করে আমার মক্কেলের বিচার হচ্ছে। জুরিদের দিকে ফিরে উনি বললেন, ডেলানি যে আত্মহত্যা করেছেন এতে কোন সন্দেহ নেই। উনি যখন বুঝতে পারলেন ওঁর টাকাও নেই, স্ত্রীও ত্যাগ করে যাচ্ছে তখন উনি নিজের জীবনটাকে শেষ করে– দেবেন বলে মনস্থির করলেন। উনি জানতেন যে ওঁর মৃত্যুটা যদি দুর্ঘটনা বলে মনে হয় তাহলে ওঁর স্ত্রী ইনসিওরেন্সের টাকাটা পাবে, দেনাও শোধ হবে।

আমি বুঝতে পারলাম জুরীরা এটা বিশ্বাস করছে না।

শেষপর্যন্ত ঠিক হলো ডেলানির মতো অবিকল একজন রোগীকে আনা হবে। ডি. এ. তাঁর নিজস্ব ডাক্তার নিয়ে আসবেন। সবার সামনে ব্লু-জয় কেবিনে ব্যাপারটা দেখাবার ব্যবস্থা হবে।

সেদিনের মতো শুনানী মুলতুবী হয়ে গেল।

পরের দিন ব্লু-জয়, কেবিনে একটা ভীড় জমো। বিচারক আর জুরীরা ছাড়া ছিলেন দুজন ডাক্তার, বুজ, ম্যাডক্স, হান্ট, ডি. এ। এছাড়া আমি।

ডেলানির চেয়ারে একজন রোগাটে লোক বসেছিল, তার নাম হোলমান। হান্ট তাকে বললেন, স্টোররুমে গিয়ে যন্ত্রপাতির বাক্স থেকে স্ক্রু-ড্রাইভারটা নিতে।

লোকটি চেয়ার চালিয়ে স্টোররুমে ঢুকে লাঠিটা দিয়ে বাক্সটাকে টান মারলো। কিছু কিছু যন্ত্রপাতি ছড়িয়ে পড়লো কিন্তু স্ক্রু-ড্রাইভারটা কোলের ওপরেই পড়লো। ডি. এ. কে দেখে মনে হলো ওঁর অস্বস্তি হচ্ছে।

এবারে সেটটার পেছনটা খোলার ব্যাপার। হোলমান চেয়ার চালিয়ে টি. ভি. সেটের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো কিন্তু পারলো না, ব্যর্থ হলো। চেয়ারটা পেছনে সরে যেতেই মুখ থুবড়ে পড়লো মাটিতে। তারপর একটু পাশ ফিরে জলের গ্লাসটা নিয়ে খানিকটা চুমুক দিলো, তারপর গ্লাসটা ফেলে দিয়ে পড়ে গেল।

ঐ ভাবে থাকুন! হান্ট বললেন, তারপরে আমাকে ডাকলেন তিনি, দেখুন তো মিঃ রেগান, ডেলানিকে কি আপনি এই ভাবেই পড়ে থাকতে দেখেছিলেন? ভালো করে দেখুন।

আমি বললাম, হ্যাঁ, ঠিক এই ভাবেই ডেলানিকে পড়ে থাকতে দেখেছিলাম।

এই খানেই মামলাটা পুরোপুরি ঘুরে গেল।

 বিকেলে ডি. এ. আদালতে লড়লেন, কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি হারবেন। জুরীদের মনে হান্ট প্রচুর সন্দেহ দিয়ে দিয়েছেন। উনি বললেন কোনো দায়িত্বশীল লোক এই ভাবে গিল্ডাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন না। তাকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হোক।

জুরীরা দুঘণ্টা ধরে আলোচনায় বসলো।

এই দুঘণ্টা আমার জীবনের দীর্ঘতম সময়। ওরা ফিরে এসে গিল্ডার দিকে তাকালো, বুঝলাম ও ছাড়া পাবে।

জুরীদের প্রধান বললেন, গিল্ডা নির্দোষ, কোর্টে প্রচুর আলোড়ন হলো।

 গিল্ডা হান্টের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আদালত থেকে বেরোবার সময় আমার দিকে তাকালো না, দ্রুত ওর দিকে এগিয়ে গেলাম কিন্তু ও ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল।

ম্যাডক্স বললো, আমার ভুল হতে পারে না। মেয়েটি কৌশল করে বেরিয়ে গেল। ও-ই খুনী!

গাড়িতে গিয়ে উঠলো ম্যাডক্স। পেছনে তাকিয়ে রইলেন হান্ট, তার চোখমুখে বিজয়োল্লাস।

.