এ হোর ইন দ্য ইডেন

এ হোর ইন দ্য ইডেন

নিউইয়র্কের সেকেন্ড ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট লোকে লোকারণ্য, তিলধারনের জায়গা নেই। সেই আদালতে চরম চাঞ্চল্যকর এবংবড় মজার এক মামলা উঠেছে। সময়টা হলো আঠেরশোঅষ্টআশি খ্রীস্টাব্দের ২১শে ডিসেম্বর। আসামীকে দেখে ঘরময় এক চাপা কৌতুকের হাসির রোল উঠলো। আসামীর নাম আলফ্রেড ডাগস। পেশায় নাবিক। বেঁটেখাটো চেহারা, বয়স আটত্রিশ। এর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, এ নাকি কোন এক দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে একটি উলঙ্গ অন্ধ যুবতীকে পাহাড়ের টিলা থেকে ধাক্কা মেরে সমুদ্রে ফেলে হত্যা করে গত আগস্টে।

কৌতুকের হাসি উত্থিত হয়েছিল এই কারণে যে, এইরকম একটা হাঁদাগঙ্গারাম আকৃতির লোক বিশ্বের সেরা নয়জন সুন্দরী যুবতী নাচিয়ে গাইয়ে উচ্চস্তরের শো গার্লদের সঙ্গে পাঁচটা বছর এক জনমানবশূন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দ্বীপে কাটিয়েছে। নয় নায়িকা এক নায়ক। এই বসবাসের ফলে সেই বিন্দুসম সিন্ধুদ্বীপে একটি দুটি নয়, লোকটি ষোলটি সন্তানের পিতৃত্ব লাভ করেছিল ঐ নয়টি বিশ্বসুন্দরীর সৌজন্যে।

গত সতেরই সেপ্টেম্বর মার্কিন বাণিজ্য জাহাজ রচেষ্টার ওদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে নির্বাসিত দ্বীপ থেকে। দেশে আসার পর এই মামলা শুরু হয়।

ডাগস নাকি গীতা মার্স নামক এক একুশ বছরের সুইডেনবাসী যুবতীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে।

সারা দুনিয়ার সংবাদপত্রে হৈ হৈ করে এই চাঞ্চল্যকর মামলা ও তার অন্তর্নিহিত কাহিনী সাড়ম্বরে ছাপা হতে থাকে। ঘটনাটা এইভাবে আরম্ভ হয়ঃ

জুন মাসের দোসরা তারিখে জেনট নামক এক জাহাজ খোল ভর্তি সুতি বস্ত্র এবং রাম-মদ্য আর সাঁইত্রিশ জন যাত্রী নিয়ে আমেরিককার পানামা থেকে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া যাবে সিডনী বন্দরে।

প্রথম তিরিশ দিন নিরাপদে চলেছেঊনসত্তর টন জাহাজ। শান্ত সমুদ্র, উষ্ণ পশ্চিমীবাতাস, আর ক্যাপ্টেন জোনাসেন বার্ডলের সুদক্ষ নৌ-চালানো। তেসরা জুলাই সকাল থেকেই সমুদ্র-আকাশ কালো ভয়ঙ্কর মেঘে ছেয়ে গেল। পাহাড় সমান ঢেউ এসে আছড়ে পড়তে লাগল জাহাজে গায়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো প্রলয়। সামনের দুটি খোলে হুহু করে জল এসে ঢুকতে লাগলো।

জাহাজে পাগলা ঘণ্টা বেজে উঠলো। যাত্রীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেলো লাইফ বোটে ওঠার জন্য। এই গোলমালের মধ্যে ডাগস অপর নাবিক মেট হারম্যান-এর সাহায্যে কোনক্রমে একটি বোট নামিয়ে ফেললে জাহাজের পেছনের উল্টো দিকে। হঠাৎকানে এলো উপরের জাহাজে আতঙ্কগ্রস্ত নরনারীদের প্রবল আর্ত চীৎকার, তার মধ্যে দড়ি বেয়ে নেমে আসতে দেখা গেল চমৎকার মোজা পরা দুটি পা, পরে সশরীরে এক পরম রূপবতী যুবতীকে। তারপর একে একে নেমে এলে আটজন সেরা সুন্দরী মেয়ে। বাধ্য হয়ে সেই সুন্দরী মেয়েদের অনুরোধে দু-চারজন মেয়েকে দু-হাতে জড়িয়ে ধরে নৌকায় নামাতে সাহায্য করতে হল তাকে।

এদিকে দেখা গেল অনেক যাত্রীই আতঙ্কে সমুদ্র জলে লাফিয়ে পড়েছে। এবং অচিরেই তলিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে উপরে জাহাজে ক্যাপ্টেনের নির্দেশে লাইফ বোটকে জাহাজ থেকে বিযুক্ত করে নেওয়া হলো। আর মুহূর্তের মধ্যে জাহাজটা প্রচুর ফেনা তুলে সমুদ্রগর্ভে লীন হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে বেশিরভাগ মেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।

এবার আমরা দেখবো যে এই মেয়েরা কারা। বার জন মেয়ে সহ এই অ্যালিসিয়া ভেনেবেলস। জন্স টুপটি যাচ্ছিল মিউজিক হল টুর-এ। এরা সব উচ্চ পর্যায়ের উপার্জনশীলা অতি দক্ষ গায়িকা ও নর্তকী। এরা এদের কলাকুশল দ্বারা বিশ্বের যাবতীয় ধনীকুলের মনোরঞ্জন করে ফিরতো। এসব দেমাকী গরবিনীরা জাহাজের সাধারণ মানুষদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল তারা যেন ভুলেও এই সব উচ্চ অভিজাত শ্রেণীর মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার স্পর্ধা না দেখায়। মেয়েদের এই অবজ্ঞা ডাগসকে আদৌস্পর্শ করলোনা। প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির মধ্যে সে বিশাল ঢেউয়ের ওপর নৌকা চালাতে লাগলো।

ডাগস এর মনে এতটুকু খেদ নেই। কেননা সে চিরকালই মেয়েদের দিক থেকে এই ধরনের ঘৃণিত ব্যবহার পেতে অভ্যস্ত। প্রকৃতপক্ষে সে আদালতে বলে গেল যে এটা তাদের বংশেরও নিয়তি বলা যায়।

রূপসী অভিজাত নতকারা ওর সঙ্গে কথা বললো শুধু মাত্র ওকে ভর্ৎসনা করবার জন্যেই, যেন তাদের বর্তমান দুর্দশা ওর জন্যেই হয়েছে। তারা ক্ষুধার্ত হলো, তৃষ্ণার্ত হলো এবং তার জন্যও তারা ডাগসকেই দায়ী করলো।

আর এতে সব কটুবাক্য ভৎর্সনা অভিযোগ সব কিছু নীরবে সহ্য করে গেল শান্ত বোকা ও ভীরু স্বভাবের ডাগস। ছোটো নৌকাটিতে ছিল মাত্র দু ব্যারেল পানীয় জল আর তিন টিন প্লেন বিস্কুট। সমুদ্রপীড়া কমে এলে মেয়েগুলি খাদ্য ও পানীয় দাবী করে বসলো। প্রথম প্রথম তারা আপত্তি করলেও শেষে সেই অতি সাধারণ বিস্কুটগুলো প্রচণ্ড খিদের তাড়নায় শান্ত মনে খেয়ে নিল।

চতুর্থ দিনে দেখা গেল এই সামান্য নাবিকটাকে তারা গ্রাহ্যের মধ্যে আনলোনা। গরমের জ্বালায় তারা পুরুষের সামনেই দেহ থেকে মোজা, পেটিকোট, সেমিজ ও বক্ষবন্ধনী খুলে ফেলে শীতল সমুদ্র জল সর্বাঙ্গে সিঞ্চন করে চলেছে।

ষষ্ঠ দিনের সন্ধ্যার কিছু পূর্বে দিক্রবালে তাদের চোখে পড়লো ঐ দ্বীপের ডাঙা।

–ঐ তো অস্ট্রেলিয়া। সমস্ত মেয়েগুলি আনন্দে কলকলিয়ে উঠলো যেন।

দ্বীপের তীরভূমিতে কোন জনমানব ছিল না, নাবিক জীনের অভিজ্ঞতায় ডাগস যদিও বুঝতে পেরেছে এটা মোটেই অস্ট্রেলিয়া নয়, তবুও সে সেই অপ্রিয় সত্যি উচ্চারণ করে মেয়েগুলির বিরাগভাজন হতে চাইল না। নীরবে দাঁড় টেনে সে দ্বীপের দিকে এগোতে লাগলো। মেয়েগুলি দ্রুত পোশাক পরে নিল।

দ্বীপে পা রেখে মেয়েদের আশা ভঙ্গ হলো। দ্বীপের তীরভূমিতে কোনো জনমানব ছিল না। দীর্ঘকায় পামগাছের সারি তাদের দশ ফুট পাতা দুলিয়ে তীরভূমির শোভা বর্ধন করছে। তীরের কাছে এক জলাতে নৌকো বাঁধা হলো। অতঃপর প্রতিটি মেয়েকে জল বাঁচিয়ে প্রায় কাঁধে করে ডাঙায় পৌঁছে দিতে বেচারা ডাগস-এর ঘাম ছুটে গেল।

মেয়েদের অজস্র প্রশ্নে তার পাগল হয়ে যাবার দাখিল হল। কাছাকাছি শহর বন্দর কতদূর? হোটেল পাবে তারা কখন সে তাদের কোথায় নিয়ে এলো, কোথায় তারা বিশ্রাম করবে? দ্রুত সব কিছুর ব্যবস্থা না করলে দেশে ফিরে গিয়ে তাকে জেলে ঢোকাতে হবে বলে শাসানো হলো।

মেয়েগুলোকে পৌঁছে দিয়ে চরম ক্লান্ত হয়ে এদের একটি প্রশ্নেরও জবাব না দিয়ে পঞ্চাশগজ দূরে শ্বেতশুভ্র বালুকা ভূমির ওপর শুয়ে পড়ে অনতিবিলম্বে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলো।

বেশ কয়েক ঘণ্টা বাদে তার ঘুম ভেঙে গেলো। তখন কত রাত কে জানে। তারকাচ্ছাদিত আকাশে একফালি চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। সফেন ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে জলাগুলোর ওপর দিয়ে বালুকা বেলায়। ডাগস চোখ কচলে উঠে বসলো।

তার চোখে পড়লো প্রায় দশ গজ দুরে বৃত্তাকারে ঘন হয়ে বসে রয়েছে নয়জন রূপসী। যেই তারা দেখলে যে সে জেগে উঠেছে অমনি তাদের বাক্যের গুলি বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। তাদের ক্ষিধে পেয়েছে তেষ্টা পেয়েছে, তারা ভীষণ ক্লান্ত ইত্যাদি।

অকস্মাৎ এক অভাবনীয় পরিবর্তন এসে গেল আলফ্রেড ডাগস-এর মনে। সে আদালতে স্পষ্ট ভাষায় বললো আর ভয় ভীতি লজ্জা নয়, এবার রুখে দাঁড়াতে হবে। চিরজীবন কি শুধু আজ্ঞাবহ ক্রীতদাস হয়ে থাকবো। কি যে হলো আমার। কঠোর মনোভাব এসে গেল। কঠোর কণ্ঠেই বলে উঠলাম, চুপ করুন! মুখ বন্ধ করেই আমার কথা শুনুন। ভদ্রমহিলাগণ, যদি আপনারা কিছু খেতে চান তাহলে আমি বলব, ঐ জঙ্গলের কাছে গিয়ে খুঁজে দেখুন, খাবার মত ফল-টল কোন না কোন গাছে পেয়ে যাবেন।

 এই কথাগুলো বলে আমার ভীষণ ভালো লাগছিল। নিজেকে যেন এবার প্রকৃতই একজন পুরুষ বলে মনে হতে লাগলো।

ডাগসের এই কথা শুনে মেয়েরা খুব অবাক হয়ে গেলো। তাদের মধ্যে একে অন্যে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। অবশেষে জনৈকা দীর্ঘাঙ্গী স্বর্ণকেশী মেয়ে ইংরাজিতে বললে, শোন হে ভালো মানুষের ছেলে, তুমিই এনে দেবে আমাদের খাবার। আমরা তোমার কোনো বাজে কথা শুনতে রাজি নই।

শুনে প্রথমটা একটু থতমত খেলেও ডাগস আবার কঠোর মনোভাব ধারণ করে, কোন কথা বলে সেখান থেকে চলে গেল কোথায়। সে ঘন বনে গিয়ে দেখলো গাছে আম পেকে রয়েছে। তার দুটো পেড়ে নিয়ে সে খোসা ছাড়িয়ে খেতে আরম্ভ করলো।

সে বললো, আমি যে অমন সাহসের পরিচয় দিয়ে অমনভাবে বলতে সক্ষম হব একথা ভেবে। সত্যি সত্যিই খুব অবাক হচ্ছি।

ডাগসের কথা শুনে গুরু-গম্ভীর বিচারপতিও কিঞ্চিৎ মুচকি না হেসে পারলেন না।

অন্যতম সুন্দরী মারীয়া স্যান্টোস-এর সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে সেই সময় থেকে ডাগস নয়টি কন্যার দরকার-অদরকারের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে গেল। সে শুধু নিজের খাবার আর শোবার ব্যবস্থা করে নিল মেয়েদের কথা ভাবলো না।

কিন্তু নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা ঐ নয় কন্যার এক কন্যা বেটি জর্জ অন্য কথা বলেছিলো, সে জানালো ডাগস তাদের কি করতে হবে অবশ্যই তা বলেছিল।

আমার মনে হয় ডাগস যে ব্যবহার করেছে তার জন্য তাকে মোটেই দোষী করা যায় না। কেননা, আমরা নৌকায় ওর প্রতি যে ধরনের অভদ্র ও জঘন্য ব্যবহার করেছি তার তুলনা হয় না। এত কিছু সত্ত্বেও ডাগস আমাদের সঙ্গে কি ভালো ব্যবহারই না করে গেছে।

ডাগস একটা স্থান নির্বাচনের জন্য প্রায় আধমাইল হেঁটে গিয়ে সমুদ্র বেলায় একটি সুন্দর জায়গা পেল। বালুকা বেলার সামনে একটা প্রবাল লেগুন। দীর্ঘ পাম গাছের সারিতে খর রৌদ্রে স্নিগ্ধ ছায়া নেমেছে। লেগুনের কাছেদাঁড়িয়ে একটি উঁচু ধূম্নবর্ণের টিলা যেন সামনেকার জলাভূমির শান্ত জলকে অদূরে বাইরে অশান্ত সমুদ্র থেকে রক্ষা করে চলেছে।

একটা তীক্ষ্ণধার প্রস্তরখণ্ডের মাথায় গাছের ডাল কেটে প্রস্তরের তলা থেকে চাল-এর মত করে নিল। পরে পাতার ছাউনি দিল। সরু ডাল ও বড় পাতার সাহায্যে দেওয়াল দিয়ে সুন্দর একটি কুটির করে নিল। কাজ শেষ হলে সে চুপচাপ বেলাভূমিতে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল, তখন তার নজরে পড়লো নয়টি মেয়ে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। এক মারিয়া স্যান্টোস ছাড়া মনে হল অন্য মেয়েগুলি যেন বশ্যতা স্বীকার করতে চায়।

ডাগসের বুকটা একথা ভেবে ফুলে উঠলো যে, এতদিনকার ভীরু জীবনে সে একবার অন্তত রুখে দাঁড়াবার সাহস দেখিয়েছে। পরবর্তী তিনদিন সে নিজের খাবার সংগ্রহ করে খেয়েছে এবং নিজ কুটিরে শুয়ে অঘোরে ঘুমিয়েছে। মেয়েগুলো তার কুটিরের খুব কাছাকাছি তালগোল পাকিয়ে শুয়ে থেকেছে, এবং নিজেরাই বন থেকে কলা আম ও নারকেল সংগ্রহ করে খেয়েছে।

দ্বীপে পদার্পণ করবার চতুর্থ দিনের শেষ রাত্রে ঘুমন্ত অবস্থায় ডাগস টের পেল কে যেন তাকে দু-হাতে মৃদু ঝাঁকুনি দিচ্ছে। সে চোখ মেলে চাইতে দেখলো একটি মেয়ে ওর ঠোঁটে নরম আঙুল চাপা দিয়ে চুপ করে থাকতে বলছে। এ হলো স্বর্ণকেশী সরু কোমর সমন্বিতা মেয়েটি, বিনা বাক্যব্যয়ে এস শুয়ে পড়ল ওর পাশে, মুখে মৃদু হাসি, –ওরা সব ঘুমিয়ে আছে, মেয়েটি ফিসফিসিয়ে বলে।

মেয়েটি অনন্যসাধারণ সুন্দরী, কি অবিশ্বাস্য নরম দেহ মেয়েটির। পাছেনড়লে চড়লে মেয়েটি চলে যায় এই ভয়ে ডাগস সাগ্রহ প্রতীক্ষায় মরার মত পড়ে রইল।

মেয়েটি হেসে ডাগসের বিহ্বল ওবিস্মিত চাউনীর মধ্যে তার ঠোঁটে দীর্ঘ এক প্রেম চুম্বন একে দিল।

ডাগসের বিবৃতির ঠিক এই সময় প্রসিকিউটিং অ্যাটর্নী এই বলে আপত্তি করল যে এর দ্বারা কোন নির্দোষী মেয়ের সুনাম নষ্ট হয় এটা সে চায় না। জজ কিছু নির্দেশ দেবার আগেই স্যালি ক্র্যামার নামক সেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে উঠে বলে যায়, ইয়োর অনার ও যা বলছে তা সবই সত্যি। এ বিবৃতির দ্বারা আমি মোটেই লজ্জিত হচ্ছি না, আমি বলছি বেচারা অ্যালফ্রেডকে দোষী করে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ও একটা মাছিকে পর্যন্ত আঘাত দিত না, কোন মানুষকে খুন করা দূরে থাক। আমরা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নীকে বলেছি এটা ঐ নারীটির কর্ম। বলে অদূরে মারিয়া স্যান্টোস-এর পানে আঙুল নির্দেশ করলো।

জজ-এর নির্দেশে ডাগস তার বিবৃতি চালিয়ে যেতে লাগলো।

ডাগস স্যানিকে নিয়ে আধ মাইল দূরের এক আম বাগানে দিন কাটালো। দুজনে সেখানে এক শয্যায় ঘুমোলো।

ডাগসের অ্যাটর্নি জেরা করে একথা প্রমাণ করবার চেষ্টায় রইলো যে, গীতা মার্সকে হত্যার উদ্দেশ্য তার মক্কেলের আদৌ ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল অন্য একজনের যার কথা পরে উন্মোচিত হবে–ডাগসের প্রতি সেই মেয়েটির অনুরাগই তৃতীয় একজনের হত্যাকাণ্ড জাগিয়েছিল। স্যালি ক্র্যামারও সায় দিয়ে জানালো ডাগসের কোন দোষ নেই–সে নিজেই উপযাচিকা হয়ে তাকে ভুলিয়েছে। পর পর চারদিন তারা ঝোপে-জঙ্গলে বিহার করে বেড়িয়েছে। দুজনের খাবার ও পানীয় সংগ্রহ করত সে। তারপর প্রেম প্রণয়ান্তে দুজনে আলাদা আলাদা ফিরে আসতো সমুদ্র বেলায়।

সপ্তম দিনের শেষ রাত্রে আবার ডাগস জেগে উঠলো এক ঝাঁকুনিতে। এবার এল অন্য মেয়ে। এই গ্রীক কন্যাটির নাম লাম্বাইউমেনডেস, প্রচণ্ডভাবে এক চুম্বন দিতে দিতে সেও প্রথমার এর মত বলে উঠলো, চুপ কর, কথা বলো না। যেজন্য সে এসেছে সে কাজে অবিলম্বে সে মেতে উঠলো। অদূরে পঞ্চাশ গজ দূরে অপর মেয়েগুলি তখন অঘোরে নিদ্রা যাচ্ছে। এই মেয়েটি নানা কলাবতী।

কিন্তু চরম বিপত্তি শুরু হল অল্পক্ষণ বাদেই। গ্রীক কন্যা পুলকিত ও তৃপ্ত দেহমনেকুটির থেকে বেরিয়ে যাবার অল্পক্ষণ পরেই একটা গলা ফাটানো চিৎকার শোনা গেল–কোথায় গিয়েছিলিতুই?

ডাগস মুখ তুলে দেখলো প্রথমা সেই স্যালি ক্র্যামার বাঘিনীর মত লাফিয়ে এসেগ্রীক মেয়েটির কালো চুলের গোছা দু-হাতে ধরে মল্লযুদ্ধে মেতে উঠলো।

ইতিমধ্যে বাকি মেয়েরা সেখানে এসে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে এই চাঞ্চল্যকর লড়াই দেখতে লাগলো।

প্রায় আধঘণ্টা লড়াই চললো। শেষে দুজনেই চরম ক্লান্ত হয়ে বালির ওপর শুয়ে হাঁপাতে লাগলো। দুজনের দেহই নখের আঁচড়ে রক্তাক্ত। মুখ চেনা যায় না।

এই ঘটনাতেই ডাগস বুঝে ফেললো যে ঐ দীর্ঘাঙ্গী স্বর্ণকেশী মেয়ে মারিয়া স্যান্টোসের দিক থেকে কি ধরনের শক্রতার সম্মুখীন তাকে হতে হবে। এ লড়াইটা দেখতে বেশ মজা লাগলেও তাকে বেশ চিন্তিত করে তুললো সন্দেহ নেই। তাই লড়াই শেষে সে মেয়েদের হুঁশিয়ার করে দিল এই বলে যে এ ধরনের জঘন্য গুণ্ডাপনা কিন্তু সে ভবিষ্যতে কখনোই সহ্য করবে না। কেননা তাদের সবাইকেই হয়তো বাকি জীবন এই হতচ্ছাড়া দ্বীপে কাটাতে হবে। অতএব ঝগড়া ঝাটি সহ্য করা হবেনা। এখানে যখন আমাদের জীবন কাটাতেই হবে তখন যতটা সম্ভব আমোদ আহাদ ফুর্তিতেই কাটানো উচিত বলে মনে হয়।

ডাগস আরো জানায় যে অবিলম্বে সে একটা বাড়ি তৈরীর ব্যবস্থা করবে। তারপর মেয়েদের কাজ ভাগ করে দেবে। কেবলমাত্র মারিয়া ছাড়া আর আটজন মেয়ে তার কথা আদেশ স্বরূপ মেনে নিল।

কিছু আলোচনার পর আটটি মেয়ে ডাগসের বশ্যতায় রাজি হয়ে গেল।

কোন কোন দ্বীপের আদিবাসীদের ধরনে ডাগস, বাড়ি তৈরী করল। ছাদ করলো মোটা পুরু গাছের ছাল দিয়ে। ঘর হল দুটো, একটা বড়, তাতে মেয়েদের। লাগোয়া ঘর ডাগ-এর। পরবর্তীকালে পছন্দ মত মেয়ে আসতো ওর কাছে রাত্রিকালের জন্য। প্রথমে সে স্যালিকে রাজি করায় তার ঘরে বসবাস করার জন্য একটানা। যদিও গ্রীক কন্যা লাম্বাকে মুখ বন্ধের জন্য সপ্তাহে দু-দিন তার কাছে আসতে দিতে হতো। ওদিকে মারীয়া নিজের একটা কুটির করে নিয়েছিল। তীরভূমি বরাবর কয়েকশ গজ দূরে।

ওরা সবাই মিলে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করতে নারকেল, বাদাম, ব্রেডফুট, কলা, আম আরও বহু প্রকার জংলী ফল ও শাকসজী। ডাগস ঐ প্রবাল লেগুনে ঘণ্টা দুই মাছ ধরতো। এবং ফিজি দ্বীপবাসীদের মত কী-মা নামক উনানে রৌদ্র কিরণে উত্তপ্ত প্রস্তরখণ্ড বা বালির দ্বারা খাদ্য দ্রব্যকে রোস্ট করে নিত।

মাসখানেক কাটাবার পর সাহস সঞ্চয় করে ডাগস সরাসরি মেয়েদের মিলিত করে বলেই ফেললো তার মনোগত বাসনা। অর্থাৎ শুধু স্যালি বা লাম্বা নয়, তার খুশিমত যখন যাকে ইচ্ছে সে ডেকে নিয়ে শয্যাসঙ্গিনীকরবেএরপর থেকে। এতদিন ওরবশ্যতা স্বীকারকরেচলা সত্ত্বেওএপ্রস্তাবে মেয়েরা যারপরনাই ক্রুদ্ধ হয়েফঁসেউঠল। বলতে লাগলোআজ ফাঁদে পেয়ে সে যেধরনেরঅপমান করে যাচ্ছে, এর শোধ নেবে তারা সভ্য জগতে ফিরে গিয়ে ওকে ফাঁসী কাঠে লটকে।

গ্রীক কন্যা লাম্বা খাঁচার মধ্যে বন্দি জন্তুর মত অস্থির পদচারণা করতে লাগলো। প্রত্যেকটি মেয়ে ওকে গালাগালি করতে লাগলো।

একে একে প্রত্যেকেই ওকে নিয়ে পড়লো। ওর মনে হল মেয়েগুলির আসল উদ্দেশ্য ওর প্রতি যত না ক্রোধ তার চেয়ে বেশি হল নিজেদের মধ্যে একে অপরের কাছে সতী সাজা।

ওদের বাক্যবাণ ছোঁড়া শেষ হলে ডাগস ঠাণ্ডা গলায় বললে, কেন মেয়েরা রাগ করছে। এত শুধু তার ব্যক্তিগত নয় ওরাও মজা পাবে। যৌন জীবন ওদের কি প্রয়োজন নেই?

মেয়েরাও ভাবলো তাদের বাকি জীবন এই একটি মাত্র পুরুষকে অবলম্বন করেই কাটাতে হবে।

অতএব ডাগস প্রকৃতই নবাবী জীবন যাপন করতে লাগলো। কখনও জল বিহার কখনও সুল বিহার, কখনও শয্যা বিহার, এই রকম অদ্ভুত জীবন ওদের চললো পরবর্তী চার বছর ধরে। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মেয়ের গর্ভে ষোলটি শিশু জন্মালো।

একদিন সকালে ওরা সবাই মিলে গেল দ্বীপের শেষ প্রান্তের এক লেগুন-এ সাঁতার কাটতে। ডাগস-এর বারণ সেখানে হাঙরের লেজ ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে। কিন্তু ওরকথা কেউ মানলো না। এই ভাবেই ডাগস-এর চাঞ্চল্যকর নারীঘটিত জীবনযাত্রার আকস্মিক ও নৃশংস পরিসমাপ্তি ঘটে গেল।

আদালতের সামনে স্যালি ক্র্যামারই সেই ট্রাজেডির বর্ণনা দিয়ে গেল। কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর কানে এলো গ্রীকের মর্মভেদী আর্তনাদ। যখন টের পেলাম তখন অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। দেখলাম গ্রীক জলে ডুবে গেল, তারপর জল তোলপাড়, কিসে যেন ঝাপটা মারছে, গ্রীক একবার ভেসে উঠে আবার ডুবে গেলো। তখনই দেখা গেল ওকে একটা কালান্তক হাঙর-এ ধরেছে। আমরা ভয়ে চীৎকার করে উঠলাম। একমাত্র মারীয়াই দেখলাম ধীর স্থির রয়েছে। সে সাঁতার কেটে চলে গেল গ্রীকের কাছে। এতোক্ষণে হাঙরটা বোধ হয় পালিয়েছে। গ্রীক তখন একবার ডুবছিল একবার ভাসছিল। মারীয়াই গিয়ে ওকে ধরে টেনে এনে পাড়ে তুললো।

গ্রীকের মুখটাকে হাঙরটা দু-ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে, ওর দুটি চোখই নেই।

সংবাদ পাওয়া মাত্র ডাগ চলে আসে, কিন্তু মারীয়া স্যান্টোস ওকে তার কুটিরে প্রবেশ করতে দেয়নি। সে নিজেই নাকি গ্রীকের সেবা-শুশ্রূষা করবে। ডাগ জোর করে কুটিরে ঢুকতে গেলে মারীয়া ওর মাথায় একটি পাথরের টুকরো দিয়ে আঘাত করে।

ডাগস মাটিতে পড়ে যায়, কান থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। ডাগস দাঁড়িয়ে উঠে এক ঝটকায় ওকে ফেলে দিয়ে ওর পেটে এক লাথি মেরে ধরাশায়ী করে। পরক্ষণেই সেই মেয়ে উঠে আসে বিরাট এক পাথরের টুকরো নিয়ে, সে সময় তিনজন মেয়ে এসে ওকে ধরে না ফেললে ডাগস হয়তো সে আঘাতে প্রাণে বাঁচতো না। গ্রীকের ভার তার ওপরই রইলো।

চারমাস অক্লান্ত সেবা করে গ্রীককে সে ভালো করে তুললো। গ্রীক ভালো হল বটে তবে সে পুরোপুরি অন্ধ হলো এবং তার মুখটা হল বীভৎস বিকৃতদর্শন।

আমেরিককান বাণিজ্য জাহাজ রচেস্টার উক্ত দ্বীপ থেকে সাতাশেই সেপ্টেম্বর ওদের উদ্ধার করবার বেশ কিছুদিন আগে গ্রীকের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

মারীয়া ঐ জাহাজের ক্যাপ্টেন লুথার ওয়েবকে যে কাহিনী বলে তাতে বলা হয়েছে যে মারীয়ার সাময়িক অনুপস্থিতির সুযোগে ডাগস্ নাকি তার কুটিরে এসে গ্রীককে নিজের ঘরে নিয়ে যাবার জন্যে চেষ্ট করে। যখন গ্রীক তাতে অস্বীকার করে তখন ডাগসনাকি তাকে মারধোর করতে থাকে। গ্রীক ভয়ে পালিয়ে যেতে গিয়ে সমুদ্র তীরে টিলার ওপর চলে যায়। তখন ডাগস নাকি তাকে ঠেলে সমুদ্রে ফেলে দেয়। শিলাসংকুল লেগুনে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে গ্রীকের মৃত্যু হয়। এই হলো মারীয়া স্যান্টোসের কাহিনী।

আসামী পক্ষের অ্যাটর্নী মারীয়ার এই কাহিনীকে অন্যান্য মেয়েদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে নাটক করবার চেষ্টা করে এই ভাবে যে এইসব মেয়েরা জানায় গীতার তথাকথিত হত্যাকাণ্ডের সময়ে ডাগস তাদের কাছে ছিল। কিন্তু মুস্কিল হল যে হত্যার সঠিক সময় বহু চেষ্টা করেও প্রমাণ করতে পারেনি সে।

মামলা প্রায় শেষ হয়ে এল। এমন কি সংবাদপত্রের রিপোর্টাররাও ডাগস্ এর নির্দোষিতায় আর আস্থা রাখতে পারছিল না। মারিয়া জানিয়েছে সে নিজে একজন প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনার, অতএব ডাগস এর দণ্ডভোগ ছাড়া উপায় নেই।

আঠেরশ উননব্বই খ্রীস্টাব্দের চব্বিশে জানুয়ারী এ মামলা এক বিস্ময়কর ও আকস্মিক বাঁক নিল। আসামী পক্ষের অ্যাটর্নী কোর্টের অনুমতি চাইলে ইংরেজ মেয়ে মিস পাম রাদারফোর্ডকে সাক্ষী হিসাবে কাঠগোড়ায় তুলবার।

মেয়েটি ভয়ে আশংকায় ফ্যাকাশে এবং নার্ভাস হয়ে গিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়ালো।

মেয়েটির কাহিনী সাদা সরল ও সংক্ষিপ্ত :

যেদিন গ্রীক মার্স-এর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় মিস্ পাম রাদার ফোর্ড সেদিন সকালে মারীয়া স্যান্টোসের কুটিরে যায়। সে নাকি প্রায়ই এই সুন্দরীর কুটিরে যায়।

কুটিরে গিয়ে সে শুনতে পায় গ্রীক এবং মারীয়ার প্রবল বাদানুবাদ ও কলহ।

গ্রীক চীৎকার করে বলে চলেছে যে মারীয়ার সঙ্গে বসবাস তার কাছে চরম অসহ্য হয়ে উঠেছে। সে কিছুতেই আর একসঙ্গে থাকবে না।

 মারীয়া নাকি গর্জন করে বলছে কোনক্রমেই গ্রীকের ডাগস-এর কাছে ফিরে যাওয়া চলবে না। মারীয়া যখন এইভাবে হুঁশিয়ার করে ভীতিপ্রদর্শন করছিল তখন অন্ধ মেয়ে গ্রীক এক পা দু-পা করে বাইরের দিকে চলতে শুরু করেছিল। গ্রীক ঐ শিলা সংকুল সমুদ্র তীরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

এই সময় মারীয়া ভীষণ রেগে বলে যাচ্ছিল যে তাকে ছেড়ে গ্রীককে পৃথিবীর অপর কোন পুরুষের কাছে কিছুতেই সে যেতে দেবেনা। গ্রীক তবু অতি ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছিল। যখন সে গিয়ে টিলাটার শেষ প্রান্তে প্রায় পৌঁছল, তখন সেবালুকাবাঅন্য কিছুর স্পর্শে বুঝি বারেক থেমে পড়ল। আমি চীৎকার করে ওকে সাবধান করে দিলাম আর যেও না পড়ে মরবে যে। আমার কথা শুনে গ্রীক ফিরে আসতে উদ্যোগী হয়েছিল কিন্তু মারীয়া পাগলের মতো ছুটে গিয়ে গ্রীককে ধাক্কা মেরে টিলা থেকে জলে ফেলে দিল। আমি অবাক হয়ে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখলাম।

এরপর মারিয়া আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো ভালোই হলো নিজ চোখে তুমি ঘটনাটা দেখলে তবে সাবধান। আমাকে ছেড়ে গেলে তোমারও এই পরিণতি হবে।

***

এইসব কথা শুনে আদালতে সাংঘাতিক চাঞ্চল্য পড়ে গেল। সাংবাদিকরা তাদের পূর্ব রচনা পরিবর্তন করতে নিজ নিজ অফিসে ছুটে গেল।

আঠেরশ উননব্বই খ্রীস্টাব্দে চাব্বিশে জানুয়ারী সাতজন পুরুষ ও পাঁচজন নারীর দ্বারা গঠিত জুরিবৃন্দ ডাগসকে নিরপরাধ ঘোষণা করল।

দুদিন পরে মারীয়া স্যান্টোসকে ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার চার্জে গ্রেপ্তার করা হলো। পাঁচ মাস বাদে ফসীর হুকুম হল তার। সে বছর চৌঠা মে ওর ফাসীর দিন নির্দিষ্ট হলো।

মুক্তি পাবার কুড়ি দিন বাদে ডাগস স্যালি ক্র্যামারকে বিয়ে করল। চমৎকার জায়গাতে ওদের বিয়ে হলো। স্থানটি ছিল বোস্ট শহরে জজ কাকল্যান্ডের প্রাইভেট চেম্বার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *