এ মার্ডার ইন ওয়েস্ট

এ মার্ডার ইন ওয়েস্ট

অঞ্চলটি ছিল গণিকা অধ্যুষিত ইস্ট এন্ড এর হোয়াইট চ্যাপেল পল্লী। সেটা ছিল কুয়াশা আচ্ছাদিত ধোঁয়াটে এক রাত। কুয়াশার মধ্য দিয়ে একটি ছায়ামূর্তি হেঁটে যাচ্ছিল। টহলদারী পুলিস দেখেই সে বাড়িতে লুকিয়ে পড়েছি। কোন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায়। হঠাৎ দেখা পেল লোকটি চোখের পলকে ঢুকে পড়লো ডানদিকের বক্স রো নামক ক্ষুদ্র এক গলিতে। অতঃপর নিঃশব্দ পায়ে সে একটা বাড়ির অন্ধকার আড়ালে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো এবং সেখানে অপেক্ষা করতে লাগলো ঠিক শিকারী বিড়ালের মতো।

রাত ক্ষয়ে ক্ষয়ে ভোরের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছে। লোকটি তেমনি ভাবে অপেক্ষা করে আছে, বলা যায় ওঁৎ পেতে আছে অসীম ধৈর্যে। রাত একটা… দুটো…তিনটি বেজে গেল ক্রমে। তারপর সহসা সে উৎকর্ণ হয়ে উঠলো।

রাত তখন ঠিক তিনটে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। তারিখটা ছিল আঠারশো অষ্টআশি খ্রীস্টাব্দের একত্রিশে আগস্ট। ঠিক সেই মুহূর্তে ইতিহাসের জঘন্যতম খুনী জ্যাক দি রিপারআবার একনৃশংস আঘাত হানলো। মাত্র কয়েক মিনিটের ঘটনা। সেই মুহূর্তে এক টহলদার পুলিস সেই গলিপথে এসে পড়েছিল। তার নজরে পড়লো একটি স্ত্রীলোক অন্ধকার রাস্তায় শুয়ে পড়ে আছে। সে ভাবলো হয়তো কোনো গণিকা অত্যধিক মদ্যপানে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে।

লোকটি তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে স্ত্রীলোকটিকে তুলতে গেল। পরক্ষণেই ভয়ে-বিস্ময়ে আতঙ্কে সে স্তব্ধ হয়ে গেল। মেয়েটার দেহ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে। বিস্মিত দৃষ্টিতে পুলিসটি লক্ষ্য করল মেয়েটির স্কার্টটি কোমর পর্যন্ত তোলা, তলায় কোন অন্তর্বাস নেই, সুপুষ্ট শ্বেত শুভ্র দুটি জঙঘা স্বল্পালোকে উন্মুক্ত। নারীটির নিম্নাঙ্গের সর্বত্র প্রচুর ছুরিককাঘাতের চিহ্ন। দেহে প্রাণের স্পন্দন নেই। গলাটি তার এধার থেকে ওধার পর্যন্ত ফালি করে কাটা। পুলিসটি মেয়েটিকে তুলতে যেতেই তার মুণ্ডটি অতি নগণ্য সূত্রে পিছন দিকে ঝুলে পড়লো।

পুলিস অফিসারের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে নিহত রমণী অবশ্যই এক দেহ পসারিনী। হয়তো লাইনেনবাগতাই হবে। দরদস্তুর শেষে অকুস্থলেই হয়তো সে শয্যাগ্রহণ করেছিল দেহদান মানসে আর সেই অবস্থাতেই ঘাতকের ছুরি নেমে এসেছে। না হলে এমন নিখুঁত নারী হত্যার আর কিবা ব্যাখ্যা হতে পারে। আসাধারণশীতল মস্তিষ্কসম্পন্ন পাকা ওস্তাদ সেই কষাই একটি আঘাতেই মেয়েটির গলা কেটে শেষ করেছে। অতঃপর ক্ষ্যাপার মত গনিকাটির নিম্নাঙ্গে বারে বারে ছুরিককাঘাত করে গেছে।

পুলিসটির চীৎকারে পাড়া জেগে উঠলো। ঘটনাস্থলে এসে সবাই স্তম্ভিত, একটা আতঙ্ক সবার মনে। চকিতে এই লোমহর্ষক সংবাদ সারা লন্ডনে ছড়িয়ে পড়লো। সর্বনাশ! জ্যাক-দি-রিপার আবার চরম আঘাত হেনেছে। আশ্চর্য কাণ্ড, কেউ বলতে পারে না এই রিপার-এর আসল নাম বা সঠিক পরিচয় কি, জানে না সে কোন্ দেশের মানুষ, সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার যেটি, সেটি হল ঐ হত্যাকারীর এইসব হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যই বা কি সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। সে কোন বস্তু অপহরণ করছে না, শুধুই নিছক হত্যা করে চলেছে।

এবারকার নিহত গণিকাটির নাম অ্যান নিকলস।

এর আগে এই ধরনের বীভৎস নারীহত্যা বারে বারেই হচ্ছিল। তারপর একসময় সহসা একেবারে নীরব হয়ে গেল। এটাই বলতে গেলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এক চরম অনুঘাটিত রহস্য বিশেষ।

পূর্ববর্ণিত ঘটনাটি তৃতীয় নারীহত্যা। প্রথমটি ছিল একই এলাকায় এম্মা এলিজাবেথ স্মিথ নাম্নী অপর এক স্রষ্টা নারীর। ঐ বছরই তেসরা এপ্রিল শেষ রাত্তিরে তাকেও বীভৎস ভাবে হত্যা করা হয় একই কুখ্যাত অঞ্চলে।

দ্বিতীয় নারীটির নাম মার্থা ট্যারবাস। সাত আগস্ট তারিখে একটি বা দুটি নয় পুরো তিনটি ছুরিককাঘাতে তাকে হত্যা করা হয় সেই বক্স রো-তেই। যেখানে মৃত্যুর পক্ষে একটি আঘাতই যথেষ্ট ছিল সেখানে এতগুলি আঘাতের ঘটনায় মনে হয় হত্যাকারী একজন সাংঘাতিক হিংস্র উন্মাদ।

চতুর্থ যে গণিকাটি নিহত হল তার নাম অ্যানি চ্যাপম্যান। মেয়েটির স্বামী ছিল। কিন্তু অত্যধিক মদ্যাসক্ত মেয়ে মানুষ ছিল সে। কখনও অর্থের বিনিময়ে কখনও বা স্রেফ একটু মদ্যপানের বিনিময়ে সে অক্লেশে দেহ দান করে বেড়াত। একেও অতীব নিপুণ শল্য চিকিৎসকের মত অপারেশনের কায়দায় নির্মমভাবে হত্যা করেছে রিপার।

অদ্ভুত কাণ্ড ভাবাই যায় না। শেষ রাত হলেও অত্যন্ত জনবহুল এলাকায় নিঃশব্দে এভাবে মানুষ মারা প্রায় অকল্পনীয় ব্যাপার। অ্যানির টাকা-পয়সা আংটি ঘড়ি কিছুই খোয়া যায়নি। দেহে কোনো ধর্ষণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অবশ্য একটি বড় বস্তুই খোয়া গেছে। তার নিম্নাঙ্গ থেকে তার জরায়ুটি নিখুঁতভাবে কেটে বের করে নিয়ে গেছে সেই অজ্ঞাত ঘাতক। অতএব পুলিসের ধারণা হলো খুনীটি হয় নিপুণ সার্জন নয়তো কোনো পাকাঁপোক্ত কষাই।

লন্ডনবাসীদের মনে একটি ধারণা খুব প্রবল হয়ে উঠলো যে কোন ইংরেজ এমন জঘন্য কাজ কিছুতেই করতে পারে না। এ নিশ্চয়ই বিদেশী ঘাতকের কাজ, যেহেতু কুখ্যাত অঞ্চলে নানা ধরনের বিদেশী কষাই ও সন্দেহজনক চরিত্রের মানুষ বসবাস করে। এই রকম সংশয়ান্বিত ধারণাই গেঁথে গেল স্থানীয় জনসাধারণের মনে।

বলা বাহুল্য দুর্ধর্ষ পুলিস বিভাগ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডও তৎপর হয়ে উঠলো। পুলিস দপ্তরে রাশি রাশি সত্য মিথ্যা খবর পৌঁছতে লাগল কিন্তু কোনো সঠিক হদিশ মিলল না।

জনৈক প্রাবন্ধিক তার গ্রন্থে প্রমাণ কতে চাইলেন যে এই খুনী আদৌ কোনো পুরুষ মানুষ নয়। এ হল একজন ধাত্রীবিদ্যা বিশারদ রমণী। রাত-বিরেতে পেশার প্রয়োজনে বিভিন্ন অঞ্চলে তাকে যাতায়াত করতে হয়। সুতরাং সন্দেহাতীত ভাবে তার পক্ষেই একাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে কি খুনীটি জ্যাক না হয়ে জেন-দি-রিপার?

এরপর ঘটনার চমক শতগুণ বেড়ে গেল যখন দেখা গেল ত্রিশশে সেপ্টেম্বর রাত্রে এক ঘণ্টার ও কম সময়ের ব্যবধানে জ্যাক-দি-রিপার ডবল খুন করে বসল।

এই দুজনও ছিল গণিকা। একজনের নাম এলিজাবেথলংলিজ আর অপরজনের নাম ক্যাথারিন এডাওজঃ। এই দুজনকেও যখন হত্যা করা হয় কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। এই দুজন নারীর খোয়া গেছে কিডনী, পঞ্চম ও ষষ্ঠ নারীহত্যা এইভাবে সমাধা হলো।

লন্ডনবাসীদের মনে আতঙ্কের ঢেউ বয়ে গেল। ঐ এলাকায় সন্ধ্যের পরে ঘর থেকে বেরোনো বন্ধ হয়ে গেল বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে।

হোয়াইট চ্যাপেল ও পাশ্ববর্তী স্পিটাফিল অঞ্চলের কিছু ভদ্র ধনী ও অভিজাত মহিলা একযোগে মহারাণী ভিক্টোরিয়া সমীপে লিখিত আবেদনে আর্জি জানালো যে তিনি যেন অনুগ্রহ করে যাবতীয় গণিকালয় অবিলম্বে বন্ধ করার আদেশ দেন।

এদিকে ভিজিলেন্স কমিটি গঠন হয়ে গেল। ইস্ট এন্ড অঞ্চলে টহলদারী পুলিশ প্রহরীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রায় প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে জানা যায় যে জ্যাক-দি-রিপার নাকি অনতিদীর্ঘ ছিপছিপে ধরনের মাঝবয়সী মানুষ, হাতে তার ডাক্তারী ব্যাগ, মাথায় উঁচু সিল্কের টুপী, একটা বিষয়ে সবাই একমত যে লোকটার কথাবার্তায় নাকি বিদেশী টান রয়েছে।

রহস্যজনক ভাবে খুনের পর খুন হয়ে যাচ্ছে অথচ কোন কিনারা করা যাচ্ছে না, তাই স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড একটু বিচলিত হয়ে পড়েছে।

জোড়া খুনের ছয় সপ্তাহ পরে সপ্তম আঘাত এলো মেরী জেন কেলি নাম্নী অপর এক রূপোপজীবিনীর ওপর, বয়স পঁচিশ, পূর্ণ যুবতী। এর হত্যাকাণ্ড হয়েছে ইনডোরে।

দরদস্তুরান্তে এর ভাড়া করা ঘরে গিয়ে জ্যাক একে ধীরে-সুস্থে সময় নিয়ে হত্যা করে। ঘরে কোনো আলো না থাকায় ঘাতক কাগজ ও মেয়েটার পোশাকে অগ্নিসংযোগ করে তার আলোয় বীভৎস শল্যকর্ম চালিয়ে কেলিকে খুন করে।

এই ঘটনায় লন্ডনে ভীষণ হৈ চৈ পড়ে গেল। জনসাধারণ সহ চতুর পুলিস বিভাগও দেখা গেল এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অসহায়। সময় বয়ে যেতে লাগল। উৎকণ্ঠায় উত্তেজনায় শংকায় শিহরণে মানুষ দিন কাটাতে লাগলো।

কিন্তু আশ্চর্য বেশ কিছুকাল ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হলো না। জ্যাক-দি-রিপার যেমন হঠাৎ এসে উদয় হয়েছিল তেমনি হঠাৎই মিলিয়ে গেল।

লন্ডনবাসীদের ইতিহাসে এটি এক অনুদঘাটিত অপার রহস্যরূপেই রয়ে গেল। শুধু একটা ঘোর দুঃস্বপ্নের স্মৃতি হয়ে রইল জ্যাক-দি-রিপার নামটি। কুখ্যাত পল্লীর গণিকারা আজও সেই ভয়াবহ কালকে স্মরণ করে চমকে ওঠে।

***

তারপর বহুকাল পরে, উক্ত ঘটনাকাল থেকে পুরো আটষট্টি বছর বাদে উনিশশ ছাপ্পান্ন খ্রীস্টাব্দে ঘটল সেই বিস্ময়কর উন্মোচনটি, অকল্পনীয় সে উদঘাটন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের সদস্য ডন উইল্কি। যিনি প্রথম মহাযুদ্ধের সময় বহুবার বহু গোপন গুপ্তচরীয় ব্যাপারে ইউরোপে চষে বেড়িয়েছিলেন, তিনি আবাল্য কৌতূহল আর অনুসন্ধিৎসা নিয়ে বিশ্বের রক্তাক্ত এক ক্লাসিক ক্রাইমের রহস্যময় নামক সেই জ্যাক-দি-রিপারের রহস্য উন্মোচনে ব্রতী হলেন।

শার্লক হোসম্-এর মত দক্ষতায় তদানীন্তন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ফাইল ও সংবাদপত্র, লন্ডন টাইমস্-এর সংবাদাদি ও মন্তব্য বারে বারে পাঠ বিচার ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তিনি যে কাহিনীর উদঘাটন করলেন তা যেমন বিচিত্র তেমনি বিস্ময়কর। বলতে গেলে অলৌকিক এক ঘটনারই বিস্তৃত বিবরণ সেটি। পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে দৈবশক্তি প্রয়োগের এক পরম আশ্চর্য দৃষ্টান্ত।

ডন উইল্কির গবেষণার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োক্ত বিবরণ প্রকাশ পায় ।

পর পর সাত সাতটি গণিকা হত্যাকারী সেই নরপিশাচ একদা দম্ভ ভরে পুলিস দপ্তরে একটি মেয়ের কর্তিত কিডনী পাঠিয়ে দিয়েছিল। দেয়ালে দেয়ালে চকখড়ি আর নিহত গণিকাদের রক্ত দিয়ে তার অপরাধ কাহিনী দম্ভভরে লিখে রাখত। আর একবার এক সংবাদপত্র অফিসে লিখে পাঠিয়েছিলঃ এটি হলো আমার চতুর্থ হত্যাকাণ্ড। আমি আরও ষোলটি স্ত্রীলোক বধ করে তবে অবসর নেব। ইতি জ্যাক-দি-রিপার।

সর্বপ্রথম নিহত এম্মা এলিজাবেথ স্মিথের হত্যাকাণ্ডের সংবাদ কিন্তু আদৌ ছাপা হয়নি লন্ডন টাইমস–এ। দ্বিতীয় মার্থা ট্যারবাসের বিষয়ে টাইমস্ সর্বপ্রথম মুখ খোলে। ঘটনার বিবরণ দিয়ে লেখে, সন্দেহাতীতভাবে এ হত্যাকাণ্ডটি একটি বীভৎস অপরাধ।

গণিকাপল্লীতে সাধারণত মারধোর খুন জখম প্রায় সংঘটিত হয় বলে হয়তো কাগজে প্রথমটা একে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু তৃতীয় মেরি অ্যান নিকলস্-এর হত্যার পরই সবার টনক নড়ল।

সংবাদপত্রেও চাঞ্চল্য দেখা দিল। সারা শহর ভয়ে আতঙ্কে শিহরিত হয়ে উঠলো। এই রকম বিপর্যস্ত অবস্থায় ঘটনামঞ্চে এসে উপস্থিত হলেন অদ্ভুত ক্ষমতাসম্পন্ন অলৌকিক শক্তিধারী সেই মানুষটি যার কাজকর্ম দেখে পুলিস বিভাগ তাজ্জব হয়ে গেল।

সেই মানুষটির নাম ছিল রবার্ট জেম্স লীস। তিনি ছিলেন সর্বজনবিদিত দিব্যদর্শী অলৌকিক শক্তিধর এক ব্যক্তি। যীশুখ্রীস্টের মানবতাবোধে বিশ্বাসী এই ধার্মিকপ্রবর ছিলেন উচ্চশ্রেণীর একজন মানব প্রেমিক। রবার্ট জেমস্ লীস-এর ব্যক্তিগত যাবতীয় অর্থাদি হোয়াইট চ্যাপেল অঞ্চলে দুঃস্থ দরিদ্র নিপীড়িত বাসিন্দা কল্যাণার্থে ছিল উৎসর্গীকৃত।

এ হেন লীস-এর একদা এক বিচিত্র স্বপ্নদর্শন হলো।

সকালবেলা লীস দেখলেন যে, স্বপ্নের ঘটনাটা হুবহু তার নিজের হাতের লেখায় লিখিত হয়ে বিছানার পাশে টেবিলের ওপর পড়ে রয়েছে। তিনি জ্ঞাতসারে ঐ রকম লিখেছেন বলে কিছুতেই স্মরণ করতে পারলেন না।

তার এই স্বপ্নে দেখা ঘটনার সত্যতা সম্বন্ধে তিনি দৃঢ় নিশ্চিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ এক পত্রে এই বিবরণ জানিয়ে দিলেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে। কিন্তু সে সময় হাজার হাজার সব উদ্ভট পত্র পুলিস দপ্তরে বন্যার মত আসতে থাকায় তারা ঐ পত্রের কোনো প্রাপ্তি স্বীকার করল না।

চতুর্থা নারী অ্যানি খুন হলো আটই সেপ্টেম্বর, স্থান হাম বারি স্ট্রীট। এবার প্রমাণিত হলে খুনীর হাতিয়ার ছিল তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার সরু ব্লেডের ছয় থেকে আট ইঞ্চি দীর্ঘ এক ছুরিককা। আঘাত ওকাটাকাটির ধরন-ধারন দেখে স্পষ্টতই মনে হলোশরীরতত্ত্ব সম্বন্ধে খুনীটির অগাধ জ্ঞান বর্তমান

এই খুনটি কিন্তু বহু লীস-এর স্বপ্নদর্শনমত স্থানের অতি কাছাকাছি সংঘটিত হল। এবার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড থেকে দুজন পুলিস ইনস্পেক্টর সরাসরি গিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করল। লীস-এর কথা, তার স্বপ্ন মিথ্যা হয় না। পুলিস ইনস্পেক্টরটি লীসকে অনুরোধ জানিয়ে গেল, তিনি যেন সর্বদা তার পরবর্তী মনস্তাত্ত্বিক স্বপ্নগুলি নিয়মিত ভাবে পুলিসের গোচরে আনেন।

কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে জানলেন যখন তিনি বৈঠকখানায় বসে ছিলেন সেই সময় সহসা তার নজরে পড়ল দুজন মানুষ, একজন নারী অপরজন পুরুষ, বড় রাস্তা দিয়ে তারা পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিল। লীস তার মনশ্চক্ষে তাদের অনুসরণ করতে থাকলেন, দেখলেন সেই দুজন নরনারী একটি সংকীর্ণ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করল…তার পাশেই আলো ঝলমল একটা মদ্যশালা অবস্থিত…দেখলেন, মেয়ে ও পুরুষটি পরিপূর্ণ স্বাভাবিক, লোকটির পরণে ছিল স্কচ টুইডের গাঢ় স্যুট, বাহুতে তার হাল্কা ওভারকোট ঝুলছিল, মাথায় ছিল হ্যাট, তার নীলাভ চোখ দুটি থেকে যেন পাশব রশ্মি ঠিকরে পড়ছিল।

লোকটা এরপর তার হাল্কা ওভার কোট আস্তে করে মাটিতে পেতে দিয়ে তার ওপর হাতের ছড়িটা রেখে দিল, অতঃপর আচমকা মেয়েটার মুখ একহাতে চেপে ধরে কোটের ভেতর পকেট থেকে একটা দীর্ঘ ছুরি বের করে মুহূর্তে স্ত্রীলোকটির গলা কেটে ফেলল। যতক্ষণ পর্যন্ত না মেয়েটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেল ততক্ষণ সে তার মুখ চেপে ধরে রইল।

এবার লোকটা অনেকবার ছুরিককাঘাত করল স্ত্রীলোকটার দেহে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসে লোকটার শার্টের সম্মুখভাগ ভিজিয়ে দিল…প্রতিটি আঘাত করল নিখুঁত বৈজ্ঞানিক নিপুণতায় এরপর সে মেয়েটার পোশাকের অংশবিশেষ ছিঁড়ে নিয়ে শার্টের রক্তের দাগ ঢাকতে কোটের বোতামগুলো এঁটে দিল। তারপর যেন কিছুই হয়নি এমনি ভাব নিয়ে সে ধীর স্থির শান্ত পদক্ষেপে অকুস্থল ত্যাগ করে গেল।

আশ্চর্যের ব্যাপার পঞ্চম হত্যাকাণ্ডটি হল বহু লীস-এর লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী। লং লিজ নাম্নী মেয়েটিকে সত্যি সত্যিই রিপার সেই সংকীর্ণ প্রাঙ্গণে ঢুকে হত্যা করে। লীস-এর বর্ণনায় যেটা ছিল ঝলমলে মদ্যশালা আসলে সেটি হল আলো ঝলমল সোসালিস্ট ক্লাবের মিটিং-এর হলঘর।

এ ব্যাপারে পুলিস যেমন বিস্মিত হল, তেমন স্বয়ং লীসও ততোধিক বিচলিত হল। জ্যাক দি–রিপার পুনরায় আর এক আঘাত হানলো।

ষষ্ঠ নারী ক্যাথারিন এডাওজ-এর গলা কাটা ক্ষত–বিক্ষত মুখাবয়ব ও দেহের নিম্নাঙ্গে অবর্ণনীয় আঘাতপ্রাপ্ত মৃতদেহ পাওয়া গেল ত্রিশশে সেপ্টেম্বর মিটার স্কোয়ার নামক স্থানে।

পুলিস বিভাগ ও সংবাদপত্র অফিসে জ্যাক-দি-রিপার-এর স্বাক্ষরিত বেশ কয়েকটি চিঠি এসে পৌঁছল। সেসব চিঠির ভাষা ও ভঙ্গী দিয়ে মনে হলো অজ্ঞাত খুনীটি অকল্পনীয় জানোয়ার বিশেষ।

একটি কার্ড ও চিঠি সে পাঠিয়েছিল সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সিতে, সে পত্র তারা পুলিসের হাতে অর্পণ করে। পত্রে সে তার অপরাধ স্বীকার করে। পরে সে লিখেছে পরবর্তী কার্যের দ্বারা সে তার কথার সত্যতা প্রমাণ করবে ভবিষ্যতে নিহতা নারীটির কান কেটে নিয়ে তা নিউজ এজেন্সীতে আনন্দের প্রীতি উপহারস্বরূপ পাঠিয়ে। পত্রে একটি অনুরোধ ও সে জানিয়েছে আরও কয়েকটি কার্য সমাধা না হওয়া পর্যন্ত এজেন্সী যেন অনুগ্রহ করে তার পত্রটি প্রকাশিত না করে।

চারদিন বাদে আবার জ্যাক-দি-রিপার এর স্বাক্ষরিত নিয়োক্ত পত্রটি পাওয়া গেল : ডিয়ার বস, আমি মোটেই চাল মারছি না। কাল আপনি এই শর্মার কাজের একটি সংবাদ পাবেন। এবার ডবল অনুষ্ঠানের। প্রথম মেয়েটা কিছু চি চি চিৎকার করেছিল, তাই সরাসরি তাকে খতম করতে পারিনি। যাই হোক তা সত্ত্বেও সে আমার হাত থেকে রেহাই পায়নি। এই ঝামেলার জন্যে তার কান কেটে পুলিসের কাছে পাঠাবার সময় পাইনি। চিঠিটা আমার অনুরোধ মতো চেপে রাখবার জন্যে আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ। জ্যাক-দি-রিপার। এই পত্রের তারিখ ছিল পয়লা অক্টোবর।

দু-সপ্তাহ বাদের ঘটনা। হোয়াইট চ্যাপেল ভিজিলেন্স কমিটি এই কেস-এর ব্যাপারে নির্দিষ্ট সদস্য মিঃ লাস্ক ছোট একটি কার্ডবোর্ড বাক্স সহ একটি চিঠি পেল রিপারের কাছ থেকে।

চিঠিতে লেখা ছিলঃ নরক থেকে বলছি। হে মিঃ লাক্স! স্যার, স্ত্রীলোকটির দেহ থেকে কেটে নেওয়া কিডনীর অর্ধেকটা পাঠালাম। এ বস্তুটি আপনার জন্যেই রেখেছিলাম। যদি কিছুদিন আরো অপেক্ষা করেন তো যার দ্বারা এটাকে কেটেছি সেই রক্তাক্ত ছুরিটাও উদাহরণ স্বরূপ পাঠাতে পারি। যদি ক্ষমতা থাকে আমাকে ধরার চেষ্টা করতে পারেন মাননীয় মিঃ লাস্ক।

 কিছুটা ভীত ও উত্তেজিত লাস্ক সেই কুৎসিত মাংসখণ্ডটিকে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানায় ওটা লম্বালম্বি ফালি দেওয়া চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স্কা কোন নারীর কিডনী। নারীটি প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করতো। তার দেহ থেকে সপ্তাহ তিনেক আগে এটাকে কেটে নেওয়া হয়েছে।

এই বিবরণ মিলে যায় এডাওজ নান্নী গণিকাটির হত্যার ব্যাপারে। মহিলাটির বাঁদিকের কিডনী সত্যিই অপহৃত হয়েছিল।

এরপর একদা সেই দিব্যদর্শী লীস যখন তার বন্ধু শ এবং বেক-এর সঙ্গে বসে নৈশাহার করছিলেন সহসা তিনি পেশীর আক্ষেপজনিত নিদারুণ এক বেদনায় পেট চেপে ধরেনুয়ে পড়েন। বন্ধুরা সাংঘাতিক ভয় পেয়ে যায়। লীস তখন তাদের জানায় যে জ্যাক-দি-রিপার এই মুহূর্তে আবার একটি খুন করে ফেললো।

বন্ধু শ নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত তখন সাতটা-ঊনপঞ্চাশ মিনিট।

 তিনজনে মিলে ছুটে গেলো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অফিসে। তারা সেখানে এই ঘটনার বর্ণনা সবে শুরু করেছে এমনসময় খবর এলো একজন কনস্টেবল সাতটা–পঞ্চাশ মিনিটের সময় মিলার্স কোট এ মেরী জেন কেলি নামক একটি ভ্রষ্টা মেয়ের নগ্ন মৃতদেহ আবিষ্কার করেছে।

এই দুঃসংবাদ শোনবার পর লীস ও তার সঙ্গীদ্বয় পুলিসের সঙ্গে সোজা ঘটনাস্থলে চলে যায়। সেই অন্ধকার জায়গায় পৌঁছানোমাত্র লীস বলে ওঠে, দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখুন। অন্ধকার দেওয়ালে একটা আলো ফেলা হলো। দেখা গেলো সেখানে চকখড়ি দিয়ে লেখা রয়েছে? সতেরো, জ্যাক দি রিপার।

সতেরো! তবে কি সাতের বদলে সতেরটি খুন করেছে শয়তানটা। সেই মুহূর্ত থেকে লীস সর্বক্ষণের জন্য খুনীর সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত করলো। তার ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠলো, যে করেই হোক এই রহস্যজনক হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করা। খুঁজে তাকে বের করতেই হবে।

একদিন লীস সস্ত্রীক বাস-এ চেপে কোথায় যেন যাচ্ছিল। নটিং হিল-এ হাতে হাল্কা ওভারকোট নিয়ে টুইড স্যুট পরা এক ব্যক্তি বাস-এ উঠল। সহসা লীসের মনের মধ্যে ঠাণ্ডা স্রোতের এক ভাবাবেগ বয়ে গেল। মার্বেল আর্ট স্টপ-এ সেই লোকটা বাস থেকে নেমে গেল। সঙ্গে সঙ্গে লীস স্ত্রীকে ফেলেই বাস থেকে নেমে গিয়ে লোকটিকে অনুসরণ করলো। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই লোকটি ভাড়া গাড়ি ডেকে তাতে উঠে পিকাডিলির পথে অদৃশ্য হয়ে গেল।

বোঝা গেল রিপার তার বীভৎস হত্যাকাণ্ডের পথে ক্রমশই উন্মত্ত ও হিংস্রতম হয়ে চূড়ান্তের দিকে এগিয়ে চলেছে, তার রক্তলোলুপতা সীমাহীন পর্যায়ে এসে পৌঁচেছে। আরও বেশি হত্যাকাণ্ডের আশংকায় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত দিব্যদর্শী লীসকেই আঁকড়ে ধরল, তারই শরণ নিল।

আরম্ভ হল এক আজব পদযাত্রা। বিচিত্র পথপরিক্রমা। এমন ঘটনার নজীর বিশ্বের ইতিহাসে আর দ্বিতীয়বার পাওয়া যায়নি।

লীস ধ্রুব নিশ্চিত ছিলেন যে, তার তথাকথিত মনস্তাত্ত্বিক শক্তি উক্ত স্যাডিস্টিক নারীঘাতকের লুক্কায়িত অজ্ঞাত বাসস্থানের সন্ধানে তাকে অবশ্যই সাহায্য করবে।

একদিন সকালে পুলিসবাহিনীলী এর নেতৃত্বে তারই পিছনে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগলো। দিব্যদর্শী লীস পথপরিক্রমা করতে লাগলো।

রাত তখা চারটে। অকস্মাৎ লীস এসে থেমে পড়লেন ওয়েস্ট এন্ড ম্যানসন নামক এক অট্টালিকার গেট-এর সামনে, আবছা আলো আসা একটি জানলার দিকে আঙুল দেখিয়ে শুকনো কণ্ঠে বলে উঠলেন লীস, ঐখানে আপনাদের প্রার্থিত ব্যক্তিটি রয়েছে। ঢুকে যান গ্রেপ্তার করুন তাকে।

পুলিস ইনস্পেক্টর এবার সত্যিসত্যিই অবাক হয়ে গেল। কি বলছেন আপনি! এ বাড়ির মালিক কে জানেন? তিনি হলেন শল্য চিকিৎসক প্রখ্যাত এক সার্জন শুধু তাই নয় শোনা যায় ইনি ইংলন্ডের রাজ পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তা সূত্রে আবদ্ধ। আপনি এ কি বলছেন?

ঠিকই বলছি অফিসার, দিব্যদর্শী আচ্ছন্নের মত বলেন ঠিক আছে। পুলিসের অনুরোধে তিনি বাড়ির হলঘরেরও এক সুন্দর বর্ণনা দেন।

পুলিস বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখলে সত্যিই হুবহু লীস-এর বর্ণনার সঙ্গে মিলে গেলে ড্রইংরুমে বসে ইনস্পেক্টার ডাক্তারের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন। ভদ্রমহিলা জানালেন, হ্যাঁ তার স্বামী তথাকথিত জ্যাক-দি-রিপার-এর প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সময় বাড়িতে ছিলেন না। তার স্বামী নাকি নানা ব্যাপারে তাকে ভয় দেখাতেন।

দীর্ঘকায় নীলনয়ন, কঠোর চরিত্রের একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এই প্রখ্যাত ডাক্তার, তার প্রথম নাম হলো জন। তাকে ঘুম থেকে তুলে প্রশ্নাদি করা হলো। স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই তিনি ইন্সপেক্টরকে জানালেন যে প্রায়ই নাকি তিনি নিজেকে হসপিটাল ও চেম্বার থেকে বহু দূরে কোন এক অচেনা স্থানে আবিষ্কার করতেন। কি ভাবে কোথায় কখন গেলেন এলেন তা শত চেষ্টা করেও বুঝতে পারতেন না। দুবার স্মৃতিশক্তি ফিরে আসার পর তিনি দেখেছেন যে তিনি সশরীরে নিজের ঘরে মধ্যেই বসে রয়েছেন। যেন এতক্ষণ ঘোরের মধ্যেই ছিলেন। চৈতন্য ফিরে আসতে তিনি দেখেছেন তার শার্টের সামনেটা লাল রক্তে ছোপানো, আর সারা মুখ তাঁর আঁচড়ানো খিমচানো, বিস্মৃতির অন্তরালেই এসব ঘটনা ঘটে গেছে বলেই তিনি জানান।

বাড়ি সার্চ করা হলো। তাতে পাওয়া গেল, স্কচ টুইডের স্যুট, হালকা নরম ফেল্ট হ্যাট এবং একটা হালকা ওভারকোট–সব কিছুই মিলে যাচ্ছে। এরপর আরও কিছুক্ষণ জেরা করার পর অবশেষে ডাক্তার তারকৃত অপরাধ সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অফিসারকে রুদ্ধকণ্ঠে সহসা বলে ওঠেন, আমাকে এক্ষুনি হত্যা করে ফেলুন। আমি নিজের মধ্যে একটা দায় নিয়ে এভাবে কিছুতেই বেঁচে থাকতে পারব না।

দিব্যদর্শী লীস এক অপার্থিব দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকলো ডাক্তার আসামীর দিকে।

ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিস স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে তার অতীতের রেকর্ডপত্র বারে বারে খতিয়ে দেখা হলো। তাতে প্রকাশ পেলে তিনি যখন গাইজ হাসপাতালে এক্স মেডিক্যাল স্টুডেন্ট তখনই দেখা গেছে তার সর্বাধিক পছন্দের সাবজেক্ট ছিল জীবিত প্রাণী ব্যবচ্ছেদ কর্মটি মানুষ হোক বা প্রাণী হোক তাদের ব্যথা বেদনা তাকে অসীম আনন্দ দিত। বোঝা গেল এ লোক শুধু ম্যাসোচিস্টই নয় স্যাডিস্টও বটে।

অ্যালিয়েমিষ্ট কমিশনের কাছে সাক্ষী দেওয়ার সময় ডাক্তার পত্নী জানান যে, ডাক্তার স্বাভাবিক অবস্থায় খুবই ভালোমানুষ কিন্তু অস্বাভাবিক অবস্থায় তাকে একেবারেই চেনা যায় না। একদিন নাকি ডাক্তার একটা জীবন্ত বেড়ালকে নিয়ে টেবিল ল্যাম্পের আলোর ওপর ধরে পোড়াচ্ছিলেন আর সেই বিড়ালের চীৎকারে ডাক্তার পত্নী সেখানে উপস্থিত হয়ে ঐ অস্বাভাবিক দৃশ্য লক্ষ্য করেন।

কমিশনের যাবতীয় সদস্য একবাক্যে রায় দিলেন যে, ডাক্তার একজন ভয়ঙ্কর রকমের বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেখানে একশ চব্বিশ নং বেড চিহ্নিত হলো।

ডন উইল্কির উপরোক্ত এই থিয়োরীসমূহ সংগৃহীত হয় আঠারশো অষ্টআশি খ্রীস্টাব্দের লন্ডন টাইমস এবং দিব্যদর্শী লীস-এর মৃত্যুর বছর একত্রিশ এর ডেইলী এক্সপ্রেস পত্রিকা থেকে। উইল্কি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পুলিস রিপোর্ট এবং অজস্র কনফিডেন্সিয়াল ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করে গবেষণারত ছাত্রদের মত এসব তথ্য সংগ্রহ করেন।

ভয়ঙ্কর খুনী জ্যাক-দি-রিপারের ঐসব গণিকাদের প্রতি কিসের আক্রোশ ছিল বোঝা যায় উইল্কির সিদ্ধান্ত থেকে। জ্যাক বোধ করি কোন সময় গণিকা গমনের ফলে মারাত্মক সিফিলিশ রোগে আক্রান্ত হয়। সে যুগে ঐ কালব্যাধি নিরাময়ের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। তাই বোধ হয় এই নিদারুণ প্রতিশোধের ইচ্ছা।

ডন উইল্কির গবেষণায় আর একটি সংবাদ জানা যায়।

জ্যাক-দি-রিপারকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় গ্রেপ্তারে সাহায্য করবার জন্য সরকার পচাত্তর হাজার পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।

ইতিপূর্বে ইতিহাসে এমন কোন খবর প্রকাশ পায়নি যে ঐ পুরস্কারের টাকা কাউকে দেওয়া হয়েছিল বা কেউ দাবী করেছিল সে সময়।

অতঃপর দিব্যদর্শী লীস-এর মৃত্যুর পর প্রকাশ পায় যে তাকে নাকি একাধিকবার মহারাণী ভিক্টোরিয়ার সমীপে তার রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। এ গুজবও প্রচলিত ছিল যে লীসকে রাজকীয় প্রি ভি পার্স পেনসন হিসেবে বাৎসরিক প্রায় আটশো পাউন্ড করে বহু বৎসর ধরে দেওয়া হয়েছিল।

এইভাবে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম খুনী রহস্যময় জ্যাক-দি-রিপারের কাহিনীর পরিসমাপ্তি ঘটে।

এখানে আশ্চর্য ব্যাপার হলো কি বিজ্ঞান হার মানলো দৈবশক্তির কাছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *