৪.১০ কবর দেয়া হয়েছে ডন ভিটো কর্লিয়নিকে

১০.

গতকাল কবর দেয়া হয়েছে ডন ভিটো কর্লিয়নিকে।

কর্লিয়নি পরিবারের সমস্ত প্রভাবশালী পদাধিকারীরা উঠানে এসে জড়ো হয়েছে। ডনের খালি বাড়িতে বারোটার একটু আগে প্রবেশ করেছে তারা। তাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে মাইকেল কর্লিয়নি নিজে।

কোণের লাইব্রেরি রুমটা লোকজনে ভরে গেছে। গভীর চেহারা নিয়ে উপস্থিত রয়েছে দুই ক্যাপোরেজিমি ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও। রয়েছে রকো ল্যাম্পনি, তার চালচলনে আশ্চর্য দক্ষতা আর নিপুণ ব্যবহার-জ্ঞান প্রকাশ পাচ্ছে। রয়েছে কার্লো, একেবারেই চুপচাপ, যেন নিজের সম্মানজনক পদ সম্পর্কে ভীষণ সচেতন সে। রয়েছে টম হেগেন, ওকালতি ছেড়ে পারিবারিক সঙ্কট মোকাবিলা করার জন্যে ছুটে চলে এসেছে সে-ও। রয়েছে আলবার্ট নেরি, যতটা সম্ভব নতুন ডনের কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করছে সে, মাইকেলের সিগারেট ধরিয়ে দিচ্ছে, ককটেল তৈরি করে দিচ্ছে-কর্লিয়নি পরিবারের সাম্প্রতিক বিপর্যয় সত্ত্বেও তার আচরণে পরিবারের প্রতি পূর্ণ অবিচল আস্থা প্রকাশ পাচ্ছে।

পরিবারের ওপর প্রচণ্ড একটা আঘাত হয়ে লেগেছে মহান ডনের মৃত্যু সবাই ধরে নিয়েছে তার মতুর ফলে কর্লিয়নি পরিবারের অর্ধেক ক্ষমতা কমে গেছে। বার্জিনি-টাটাগ্লিয়াদের বিরুদ্ধে দর কষাকষির যে ক্ষমতা দুদিন আগেও ছিল, তার সবটুকু হারিয়ে ফেলেছে এরা। মাইকেলের সামনে এই মুহূর্তে যারা বসে রয়েছে, তারা সবাই অন্তত তাই বিশ্বাস করে। সবাই একটা উদ্দেশেই এসেছে, অপেক্ষাও করছে তার জন-মাইকেলের কথা শুনতে চায়। মাইকেল এখনও তাদের কাছে। ডন হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। ওদের কাছ থেকে পদমর্যাদা, সে উপাধি পেতে হলে কাজ দেখাতে হবে মাইকেলকে। শুধু মুখের কথা আর ব্যক্তিত্ব দেখিয়ে পাবার নয় ও জিনিস। বেঁচে থাকলে ছেলেকে উত্তরাধিকারী হিসেবে নির্বাচন করে যেতে পারতেন গড ফাদার। কিন্তু তা যখন যাননি, এখন উত্তরাধিকারী কে হবে তা নিয়ে কথা উঠতে পারে। বাপের অনুপস্থিতিতে ছেলেই ডন হবে, এমন কোন বাঁধাধরা আইন নেই।

সবার হাতে মদের গ্লাস ধরিয়ে দিচ্ছে নেরি। তার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুল মাইকেল, তারপর শুরু করল, সবাইকেই বলছি। তোমাদের কার কি মনের অবস্থা, বুঝতে পারছি আমি জানি, আমার বাবাকে সবাই তোমরা কত শ্রদ্ধা করতে। একথাও ঠিক, এখন থেকে তোমাদের সবাইকে যার যার নিজের পরিবারের কথা ভাবতে হবে। তোমরা হয়তো ভাবছ, বাবা বেঁচে থাকতে যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তার কি হবে। ভারছ, আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তার কি হবে। সবরকম সন্দেহের অবসান ঘটাবার জন্যে পরিষ্কার করে বলছি আমি, যাকে যা কথা দিয়েছি তা রক্ষা করা হবে, বাবা মারা যাওয়ায় কোন কিছুরই বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না।

মোষের মত প্রকাণ্ড ঝাকড়া মাথাটা দোলাচ্ছে ক্লেমেঞ্জা। গভীরভাবে বলল, আমি বাৰ্জিনি-টাটাগ্লিয়াদের কথা বলছি, মাইক। ওরা এবার আমাদেরকে চেপে ধরবে। আমার মনে হয়, ওদের সাথে বসে কথা বলতে হবে তোমাকে। উপস্থিত সবাই লক্ষ করল, মাইকেলকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্বোধন করল না ক্লেমেজা, ডন বলে সম্বোধন করা তো দূরে থাকুক।

অপেক্ষা করে দেখা যাক কি হয়, বলল মাইকেল। শান্তি ওদেরকেই আগে ভাঙতে দাও।

শান্তি ওরা এরই মধ্যে ভেঙেছে, মাইক, নরম গলায় বলল টেসিও। এখানে আসার আগে খবর পেলাম, আজ সকালেই ওরা ব্রুকলিনের দুটো আড়তে হানা দিয়েছে। বুঝতে পারছি, মাসখানেকের মধ্যে ব্রুকলিন আমার হাতছাড়া হয়ে যাবে। একটা টুপি ঝুলাবার পর্যন্ত জায়গা পাব না ওখানে।

চিন্তিতভাবে টেসিওর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকল মাইকেল, তারপর জানতে চাইল, পাল্টা কোন ব্যবস্থা নিয়েছ নাকি?

না, টেসিও তার ছোট্ট মাথাটা নেড়ে বলল, তোমার জন্যে আরেকটা সমস্যা সৃষ্টি করা হবে ভেবে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছি।– খুব ভাল করেছ, বলল মাইকেল। তোমাদের সবাইকে এই কথাটাই বলতে চাই আমি। সবাই যে যার হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকো। ওরা যে খোঁচা মারবে সে তো জানা কথা, কিন্তু আমাদের তরফ থেকে কেউ কোন পাল্টা জবাব দিতে যেয়ো না। স্রেফ চেপে বসে থেকো। সব গুছিয়ে নিতে কয়েক হপ্তা সময় দরকার আমার, ইতিমধ্যে দেখতে হবে বাতাস কোন দিকে বইছে। তারপর, যাই ঘটুক না কেন, যেমন কথা দিয়েছি, তোমাদের সবার জন্যে যথাসম্ভব ভাল ব্যবস্থা করে দেব আমি। তোমাদের ব্যবস্থা করার পর শেষ আলোচনা সভা ডাকব একটা, সেই সভায় বেশ কয়েকটা সিদ্ধান্ত নেব।

মাইকেলের শেষ কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। কিন্তু ওদের বিস্ময়ের ভাবটা দেখেও যেন দেখতে পেল না মাইকেল। মীটিং শেষ হয়ে গেছে, সবাইকে দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে অ্যালবার্ট নেরি।

টম, তুমি থাকো, তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল মাইকেল।

দাঁড়িয়ে পড়ল টম হেগেন। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে দাঁড়াল জানালার সামনে।

একে একে দুই ক্যাপোরেজিমি, কার্লো, আর রকো ল্যাম্পনিকে উঠান পার করিয়ে একেবারে ফটকের বাইরে পৌঁছে দিয়ে এল অ্যালবার্ট নেরি। এতক্ষণে ঘুরে দাঁড়াল টম হেগেন।

সমস্ত রাজনৈতিক যোগাযোগের সুতো শক্তভাবে বেঁধে নিয়েছ? মাইকেলের চোখে চোখ রেখে জানতে চাইল সে।

একটু বিষণ্ণ ভঙ্গিতে বলল মাইকেল, সবগুলো পারিনি এখনও। আরও চারমাস সময় দরকার ছিল আমার। ওই সুতো বাধার কাজই করছিলাম আমি আর ডন। তবে, আশার কথা হলো, বিচারকরা সবাই আমাদের হাতে আছে। ওই কাজটাই করা হয়েছে সবার আগে। তাছাড়া, কংগ্রেসের প্রভাবশালী সদস্য যারা আমাদের সাথে ছিলেন, তারা সবাই আমাদেরকে সমর্থন দেবেন বলে তৈরি হয়ে আছেন। এরপর বাকি থাকল, এখানের, নিউ ইয়র্কের দলীয় নেতারা তাদেরকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই। মানুষ যা মনে করে, কর্লিয়নি পরিবার তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। তবু, আমি ঠিক করেছিলাম, এতটুকু ফুটো রাখব মা কোথাও। কিন্তু তা আর হলো না। সব দিক নিচ্ছিদ্র করতে এখনও কিছু সময়ের দরকার, কিন্তু তা আমার কপালে নেই। হঠাৎ হাসল মাইকেল, আরও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল হেগেনের দিকে, বলল, তুমি বোধহয় এরই মধ্যে গোটা পরিকল্পনাটাই আঁচ করে নিয়েছ?

তা আর এমন শক্ত কি! মাথা ঝাঁকিয়ে বলল হেগেন। তবে, আমাকে বাদ দেয়া হলো কেন, প্রথমে সেটা বুঝিনি। কিন্তু যেই মাথায় সিসিলীয় টুপি পরলাম, ১৫–গড ফাদার ও অমনি সব পরিষ্কার হয়ে গেল।

হাসছে মাইকেল। বাবা আমাকে বলে দিয়েছিলেন, তুমি সব বুঝে নেবে। কিন্তু এখন আর আমার ওসব বিলাসিতা করা সাজে না। এখানে তোমাকে আমার দরকার। অন্তত কয়েকটা হপ্তা আমার সাথে থাকো তুমি। ভেগাসে ফোন করে তোমার স্ত্রীকে কথাটা জানিয়ে দাও।

ঠিক কিভাবে তোমার ওপর হামলা করবে ওরা, কিছু আন্দাজ করতে পেরেছ? চিন্তিতভাবে জানতে চাইল হেগেন!

আমার আন্দাজ করার দরকার হয়নি, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল মাইকেল, বাবাই সেটা ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, আপনজন কারও সাহায্য নেবে ওরা। বার্জিনি অত্যন্ত ধুরন্ধর ব্যবসায়ী, এমন কারও সাহায্য নেবে সে, যাকে সন্দেহ করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারব না।

আমার মত কেউ, মাইকেলের চোখে চোখ রেখে হাসছে হেগেন।

হাসছে মাইকেলও। বলল, তুমি আইরিশ, সুতরাং তোমার ওপর ওদের আস্থা নেই।

আইরিশ নই, জার্মান-আমেরিকান।

তার মানেই ওদের কাছে তুমি আইরিশ, বলল মাইকেল। ওরা তোমার সাহায্যও নেবে না, নেরির সাহায্যও নেবে না, কারণ নেরি আবার এক সময় পুলিশের চাকরি করত। তাছাড়া, তোমরা দুজন আবার আমার খুব বেশি কাছের মানুষ। তোমাদের কারও সাহায্য চাইতে গেলে ব্যাপারটা ফেঁসে যেতে পারে, অত বড় ঝুঁকি নেবে না ওরা। এরপর ধরো রকো ন্যাশনি-সে আবার যথেষ্ট কাছের নয়। উহু, …ক্লেমেঞ্জা, টেসিও, অথবা কার্লো, এদের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নেবে ওরা।

যদি বাজি ধরতে বলো, আমি বলব কার্লোই ওদের লোক, নিচু গলায় বলল হেগেন।

দেখা যাক, বলল মাইকেল। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।

.

পরদিন সকাল। টম হেগেনকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট খেতে বসেছে মাইকেল। খবর এল, ফোন এসেছে।

উঠে গেল মাইকেল। লাইব্রেরি রুমে এসে ফোনটা রিসিভ করল ও। কিচেনে ফিরে এসে নিঃশব্দে নিজের চেয়ারে বসল আবার। তাকাল হেগেনের দিকে। সব ব্যবস্থা হয়ে গেল, হেগেনকে বলল ও। আজ থেকে এক হপ্তা পর বার্জিনির সাথে বসে কথা বলতে হবে আমাকে। আমাকেই যেতে হবে বার্জিনির কাছে। ওরা বলছে, ডন মারা গেছেন, তাই নতুন করে শান্তি করতে হবে, হেগেনের চোখে চোখ রেখে হাসছে মাইকেল।

কে ফোন করল তোমাকে? চাপা, তীক্ষ্ণ কষ্ঠ জানতে চাইল হেগেন। কে যোগাযোগ করুল ওদের সাথে? দুজনেই জানে ওরা, কর্লিয়নি পরিবার থেকে যে-ই যোগাযোগ করে থাকুক, সে-ই বিশ্বাসঘাতক।

ম্লান একটু হাসল মাইকেল। আশ্চর্য একটা বিষণ্ণতা ফুটে উঠল ওর চেহারায়। সখেদে, ছোট্ট করে উচ্চারণ করল নামটা, টেসিও।

মাথা নিচু করল দুজনেই, আর কোন কথা না বলে নিঃশব্দে শেষ করল। খাওয়াটা। অনেকক্ষণ পর কফির কাপে একটা ছোট্ট চুমুক দিয়ে বলল হেগেন, কসম খেয়ে বলতে পারতাম, কার্লোই বিশ্বাসঘাতক। তা না হলে ক্লেমেঞ্জা। টেসিওর কথা আমি কল্পনাও করিনি। ওদের মধ্যে ওই সবচেয়ে শী।

সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও, বলল মাইকেল বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে যেটাকে সবচেয়ে ভাল বলে মনে হয়েছে ওর, সেটাই করেছে। আমাকে বার্জিনির হাতে তুলে দিয়ে কর্লিয়নি পরিবারের উত্তরাধিকারী হতে চায় ও। আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেনি, ভেবেছে, আমার সাথে থাকা মানে দুর্বল একটা লোকের সাথে থাকা-কখন কে ওকে খতম করে দেয়, কে জানে। ও ধরে নিয়েছে, আমি হেরেই আছি।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল হেগেন, তারপর অনিচ্ছাসত্ত্বেও জানতে চাইল, ধরে নেয়াটা কতটুকু ঠিক হয়েছে ওর?

শ্রাগ করল মাইকেল। বলল, বাইরে থেকে দেখে মনে হবে কর্লিয়নি পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ। শুধু আমার বাবা জানতেন, দশ দশটা দলের সমান ক্ষমতা রাখে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকত। যতদূর বুঝতে পারছি ডনের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রায় সবটাই চলে এসেছে আমার হাতে। তবে, আমি ছাড়া আর কেউ তা জানে না। হেগেনের চোখে চোখ রেখে হাসল মাইকেল। তাকে আশ্বস্ত করে বলল, আমাকে ডন বলে ডাকতে বাধ্য করব ওদেরকে আমি। কিন্তু টেসিওর কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

বার্জিনির সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছ তুমি?

অবশ্যই। আজ থেকে এক হপ্তা পর। কোথায় জানো? ব্রুকলিনে। টেসিওর জায়গায়, যেখানে আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। আবার মান একটু হাসি খেলে গেল। মাইকেলের ঠোঁটে।

এই কদিন সাবধানে থেকো, বলল হেগেন!

এই প্রথম মাইকেলের আচরণে ঠাণ্ডা একটা ভাব লক্ষ করা গেল। স্থির দৃষ্টিতে হেগেনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, এ ধরনের পরামর্শের জন্যে কনসিলিয়রির দরকার হয় না আমার।

.

সাবধানতা অবলম্বন কাকে বলে হেগেনকে তা দেখিয়ে দিল মাইকেল। পুরোটা হপ্তা উঠানের বাইরে একবারও পা ফেলল না ও। পাশে নেরি না থাকলে কারও সাথেই দেখা করল না। এর মধ্যে একটা মাত্র জটিলতার উদ্ভব হলো, অনিচ্ছাসত্বেও ব্যাপারটা মেনে নিতে হলো মাইকেলকে। কনির বড় ছেলে ব্যাপটাইজড হবে, সেজন্যে একটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনুরোধ করা হলো, ছেলেটার গড় ফাদার হতে হবে মাইকেলকে। অনুরোধটা এল কে-র তরফ থেকে। তবু প্রথমে সেটা প্রত্যাখ্যানই করল মাইকেল।

তোমার কাছ থেকে কখনও কিছু চাইনি আমি, বলল কে, শুধু আমার মুখ চেয়ে এই অনুরোধটা রাখো তুমি, লক্ষ্মীটি। বড় আশা করে আছে কনি। কার্লোও ধরেছে আমাকে। ব্যাপারটাকে সাতিক গুরুত্ব দিচ্ছে ওরা। প্লীজ, মাইক!

অনুরোধ তো করুল কে, কিন্তু মাইকেলের চেহারায় বিরক্তি ফুটে উঠতে দেখে ভয় হলো, কথাটা বোধহয় রাখবে না সে। কিন্তু মাইকেল যখন মাথা নেড়ে রাজী হয়ে গেল, একটু অবাকই হলো সে।

ঠিক আছে, বলল মাইকেল, কিন্তু উঠানের বাইরে যেতে পারব না আমি। ওদেরকে বলে দাও, পাদ্রীকে বাড়িতে ডেকে এখানেই যেন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে। খরচ যা লাগে, আমি দেব। গির্জার লোকেরা ব্যাপারটা নিয়ে ঝামেলা করতে পার, কিন্তু ওদেরকে বলে দাও, হেগেন ওসব ঠিক সামলে নেবে।

বার্জিনির সাথে আগামীকাল বৈঠকে বসবে। মাইকেল, কনি আর কার্লোর। ছেলের গির্জায় আস্থাবান হবার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা হয়েছে আজ। ভাগ্নেকে অসম্ভব দামী সোনার একটা হাতঘড়ি উপহার দিল মাইকেল। ছোটখাট একটা প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়েছে কার্লোর বাড়িতে। দাওয়াত পেল ক্যাপোরেজিমিরী, হেগেন, ল্যাম্পনি, ডনের বিধবা স্ত্রী এবং উঠানের অন্যান্য বাসিন্দারা। আনুষ্ঠানিকভাবে ওদের ছেলের গড ফাদার হলো মাইকেল।

সবাই খুব খুশি। আবেগে একেবারে অভিভূত হয়ে পড়েছে কনি কর্লিয়নি। সারাটা সন্ধ্যা ভাই আর ভাবীকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেয়ে দুজনকেই অস্থির করে তুলল সে। এমন কি লোকেও ভাবাবেগে আপ্লুত হতে দেখা গেল, সুযোগ পেলেই ওদের সেকেলে নিয়মে মাইকেলের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে ওকে গড ফাদার বলে সোধন করছে সে।

মাইকেলের মধ্যেও আশ্চর্য একটা পরিবর্তন লক্ষ করছে সবাই। আজকের মত মিত্তক আর অমায়িক বলে এর আগে কখনও মনে হয়নি তাকে।

ফিসফিস করে ভাবীকে বলল কনি, আজ বোঝা গেল, কার্লোর সাথে খুব সদ্ভাব হবে মাইকের। দেখো, এই আমি বলছি, দুজন দুজনের প্রাণের বন্ধু হয়ে উঠবে। এ-ধরনের এক একটা উপলক্ষ থেকেই তো মানুষের সাথে মানুষের ভাব

ননদের হাতে একটু চাপ দিয়ে বলল কে, কি খুশিই যে হয়েছি আমি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *