৪.০৫ এক বছর আগের কথা

০৫.

এক বছর আগের কথা।

সিনেমা কোম্পানীর মালিক জনি ফন্টেন। তার সাজানো অফিস কামরায় বিষণ্ণ মনে ব্রসে আছে একাকী। প্রথম ছবিটাই সুপারহিট হয়েছে তার, সাফল্যের শিখরে উঠে এসেছে সে, কিন্তু তবু বেঁচে থাকায় কোন স্বাদ পাচ্ছে না। ভাল লাগছে না কিছুই। সে নিজেই তার প্রথম ছবির নায়ক, সেটায় নিনোরও একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। জোয়ারের মত টাকা নিয়ে আসছে ছবিটা। কাজ শেষ করতে কোথাও। কোন উটকো ঝামেলায় পড়তে হয়নি তাকে। শিল্পী, কর্মী, টেকনিশিয়ান সবাই যে যার কাজ সুচারুভাবে শেষ করেছে। খরচও বাজেট ছাড়ায়নি। ছবিটা থেকে সবাই দেদার টাকা কামাচ্ছে, আরও কামাবে, আর সেই সাথে দশ বছর বেড়ে যাবে জ্যাক ওল্টসের বয়স।

আরও দুটো ছবিতে হাত দিয়েছে জনি। প্রথমটার নায়ক নিজেই, কিন্তু দ্বিতীয়টার নায়কের ভূমিকা ছেড়ে দিয়েছে নিনোকে। দর্শকরা পর্দায় দারুণ পছন্দ করেছে ওকে। আর যাই হোক, চেহারাটা খাসা, ঠিক যেন পাকা আপেল, এমন নেশায় পাওয়া মিষ্টি চেহারার নায়কদেরকেই তো বুকে জড়িয়ে ধরতে ভালবাসে মেয়েরা। নিনোর চেহারায় অদ্ভুত একটা সরলতাও আছে, ঠিক যেন হারিয়ে যাওয়া ছোট ছেলে জনির কপালই ভাল, হাতটা যেন পরশ পাথর হয়ে উঠেছে, ধুলো ভুলেও সোনা হয়ে যাচ্ছে ঘরে টাকা আসার কোন বিরাম নেই। ওদিকে ব্যাংকের মাধ্যমে গড ফাদারও নিজের ন্যায্য ভাগ ঠিক মত পেয়ে যাচ্ছেন। এ আরেক আনন্দের ব্যাপার। গড ফাদার তার ওপর এতটা বিশ্বাস রাখেন, সে-বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পেরে. জনিও গর্বিত। কিন্তু এসব স্মরণ করেও মনটাকে আজ বশ মানাতে পারছে না ও।

আজ সে একজন সফল, সার্থক, স্বাধীন চিত্র-প্রযোজক। গাইয়ে হিসেবে যত প্রতিপত্তি ছিল, তার সমান নয়, আরও অনেক বেশি খ্যাতি অর্জন করেছে সে ছবি তৈরি করে। গলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যা কিছু হারিয়েছিল, তার সবই ফিরে এসেছে তার হাতের মুঠোয়। সুন্দরী মেয়েরা আবার তার পিছু নিয়েছে, একজন দুজন নয়, ঝাঁকে ঝাকে। কে কার আগে তার গায়ে আছড়ে পড়তে পারে তারই যেন। প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ওদের ভেতর। আগেও এমন হয়েছে, কিন্তু সেবার কারণটা ছিল ওর ওপর ভক্তি। এখন তা নয়। এখনকার ব্যাপারটা আরও অনেক বেশি বৈষয়িক।

নিজে ব্যবহার করার জন্যে প্লেন কিনেছে জনি। রাজ-রাজড়াদের মত জীবন কাটায়, বিলাসিতার সমস্ত স্বাদ উপভোগ করছে। ইনকাম ট্যাক্স-এর ব্যাপারে আজকাল নানা ধরনের সুবিধে পায় সে আগে যা কখনও পেত না। তাহলে মন খারাপের কি হলো জনির?

কোন কারণ নেই, তবু মন খারাপ, ব্যাপারটা তা নয়! মাথার সামনের দিকে, কপালে ব্যথা অনুভব করছে সে। নাকের ভেতর নালিগুলোতে যন্ত্রণা। আর গলা খুস খুস। এই গলা খুস খুস ভাবটাই সবচেয়ে বেশি জ্বালাচ্ছে তাকে। ওটা চুলকে আরাম পাবার একমাত্র উপায় গান গাওয়া। কিন্তু কিভাবে গাইবে জনি? সাঙ্ঘাতিক ভয় করে তার। ডাক্তার জুলস সীগলকে ফোন করে জানতে চাইল, কবে নাগাদ গাইতে পারব, ডাক্তার?

উত্তরে জুলস জানাল, যখন ইচ্ছে গাইতে পারেন আপনি।

সাহস পেয়ে গাইতে চেষ্টা করল জনি। চেষ্টা না করলেই ভাল ছিল। গাধার মত হেঁড়ে সুর বেরুল গলা থেকে, নিজের কণ্ঠস্বর বলে চিনতেই পারুল না ও। চোখে পানি এসে গেল তার। খানিক চেষ্টা করার পর হাল ছেড়ে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল মদের বোতলের দিকে। তার পরদিন সে কি ব্যথা গলায়। আঁচিলগুলো চেঁছে ফেলে দেবার আগে যে-ধরনের ব্যথা অনুভব করত এটা সে-ধরনের নয়, অন্যরকম। এতে জ্বালা ভাবটা বেশি, যেন কাটা ঘায়ে লবণের ছিটে পড়েছে। ভয়ানক একটা আশঙ্কা ছিল মনে গলাটা বোধহয় আর কোনদিন ভাল হবে না। কিন্তু অপারেশনের পর সেইদিন প্রথম গাইতে চেষ্টা করে পরিষ্কার বুঝল জনি, গলাটা তার চিরকালের জন্যে গেছে।

গানই তো ছিল তার জীবন। গান ছাড়া আর কি জিনিস আছে যাকে সে ভালবেসেছে? সেই গানই যদি গাইতে না পারে, কি লাভ বেঁচে থেকে? সাফল্য, টাকা, খ্যাতি-গাইতে না পারলে এসবের এক পয়সাও দাম নেই। অন্তর দিয়ে একটা কাজই করতে পারত জনি, করেছেও তাই–গান। একটা বিশেষ ধরনের গান গাইত সে, সে বিষয়ে দুনিয়ায় তার চেয়ে ভাল আর কেউ কিছু জানে না। এতদিন ভাল বোঝেনি, কিন্তু আজ গলা হারিয়ে টের পায় কত ভাল গাইত সে। দীর্ঘ অনেক। বছরের অভিজ্ঞতা, শেষদিকে খাঁটি পেশাদার শিল্পী হয়ে উঠেছিল সে। কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল তা জিজ্ঞেস করতে হত না কাউকে, ও নিজেই সব বুঝতে পারত। চর্চা করে যখন গলাটাকে শানিয়ে নিয়ে এসেছে, ঠিক তখনই সেটা নষ্ট হয়ে গেল। মাঝে মাঝে আশ্চর্য হয়ে ভাবে জনি, এখনও সে আত্মহত্যা করেনি কেন? এতবড় দুঃখ কিভাবে সহ্য করছে সে? এ যে কি ক্ষতি, কত বড় ক্ষতি, কাউকে তা বলে বোঝাতে পারবে না সে।

শুক্রবার। জনি ঠিক করল দিনটা আজ ভার্জিনিয়া আর মেয়েদেরকে সঙ্গ দিয়ে কাটাবে। ওখানে যাবার আগে প্রতিবার ফোন করে জানায় সে। আজও তাই করল। এর কারণ, ভার্জিনিয়াকে আপত্তি করার একটা সুযোগ দেয়া। কিন্তু জিনি কখনও আপত্তি করেনি। বিয়েটা ভেঙ্গে যাবার পর কমদিন তো গত হলো না, কিন্তু তবু যখনই মেয়েদেরকে দেখতে যেতে চেয়েছে জনি, সাথে সাথে রাজী হয়েছে জিনি, প্রতিবাদ করেনি। এব্যাপারে জিনিও একটা নীতি মেনে চলে-বাপ তার মেয়েদের দেখতে চাইলে তাতে সেবাধা দেবে না, সে অধিকার নিজেকে সে দেয় না। জিনির কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ উতলা হয়ে উঠল জনির মন। জিনিয়ার মত মেয়ে হয় না, নতুন করে কথাটা স্বীকার করুন আজ আবার। এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পেরেছিল, আজও তার সাথে সব রাখতে পেরেছে, এটা তার নেহায়েত সৌভাগ্য। কিন্তু সে সাথে আবার একথাও ঠিক যে জিনিয়ার সাথে কখনই আর ঘর-সংসার করা সম্ভব নয়। জিনি ওকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না, সেও জিনিকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না। দুপক্ষ থেকেই তা আর সম্ভব নয়। তবে যখন পয়ষট্টি বছর বয়স হবে ওদের, সবাই যে বয়সে অবসর নেবার কথা চিন্তা করে, তখন হয়তো দুজনে এক সাথে অবসর জীবনটা কাটাতে পারবে।

কিন্তু তিক্ত বাস্তব মনটাকে শান্ত না করে আরও অস্থির করে তুলল। ওখানে পৌঁছেই টের পেল জনি, জিনিয়ার মেজাজ ভাল নেই। মেয়েরাও বাপকে দেখে আগের মত নেচে উঠল না। তার কারণ, বান্ধবীদের সাথে ক্যালিফোর্নিয়ায় বেড়াতে যাচ্ছে ওরা, শনিরবি দুটো দিন ঘোড়ায় চড়ে কাটাবে সেখানে। জিনির বোধহয় একটু আপত্তি রয়েছে, তাই মুখটা ভার। জনি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করল। শেষ পর্যন্ত মায়ের অনুমতি পেল মেয়েরা। জনিও তাদের চুমো খেয়ে বিদায় দিল। মেয়েদের মনের অবস্থা বুঝতে অসুবিধে হয়নি তার। খিটখিটে বাবাকে ফেলে কোন্ ছোট মেয়ে ঘোড়ায় চড়তে না যায়? বিশেষ করে যে বাবা তাদের সাথে থাকে না, নিজের ইচ্ছেমত যায় আসে?

দু ঢোক গিলে গলাটা ভিজিয়ে নিই, জিনিকে বলল জনি, তারপর আমিও বিদায় নেব।

জিনির মেজাজ যে ভাল নেই সেটা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সাধারণত এমন হয় না। মেজাজ যতই খারাপ থাকুক, জনি এলে চেহারাটা হাসিখুশি করে রাখার চেষ্টা করে ও। আজ কিন্তু উল্টোটা ঘটছে। মৃদু গলায় সংক্ষেপে জবাব দিল, আচ্ছা।

মনে মনে স্বীকার করল অনি, যেভাবে জীবন কাটাচ্ছে জিনি, অর্থাৎ যেভাবে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে, সেটা মোটেও সুখের নয়। সেজন্যে নিজেকে অপরাধী বলে মনে হলো তার।

জনির দিকে তাকিয়ে আছে জিনি। লক্ষ করুল, গ্লাসে কানায় কানায় মদ ঢেলে নিল জনি। একটু বেসুরো গলায় জানতে চাইল সে, তোমার আবার মন খারাপের কি হলো? তুমি যে আবার এত ভাল ব্যবসাও করতে পারবে, স্বপ্নেও ভাবিনি আমি। তোমার তো এখন পোয়াবারো অবস্থা।

ওর দিকে ফিরুল জনি, মৃদু হাসল। টাকা রোজগারটা কোনদিনই তেমন কঠিন কাজ নয়। বলেই বুঝল, জিনির মন খারাপের কাল এটাই–ওর সাফল্য।

মনের মানুষ বা কাছের মানুষ খুব বেশি সাফল্য লাভ করুক, মেয়েরা তা চায় না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাফল্য ওদের বিরক্ত করে তোলে। বিয়ে, প্রেম, যৌন অভ্যাস এই সব চোখা চোখা অস্ত্র দিয়ে পুরুষদের ওরা কাবু করে রাখতে বেশি পছন্দ করে। পুরুষদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করাটাই ওদের একমাত্র উদ্দেশ্য, সেখানেই ওদের সার্থকতা বলে মনে করে ওরা। সেই পুরুষ যদি খুব বেশি সাফল্যের মুখ দেখে, ওদের মনে অনিশ্চয়তা জেগে ওঠে–ভয় হয়, আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে।

বুদ্ধি করে নিজের দুঃখের কথাটা পাড়ল জনি। দুঃখটা কলজেছেঁড়া হলেও প্রসঙ্গটা তুলল যতটা না সহানুভূতি পাবার আশায়, তারচেয়ে অনেক বেশি জিনির মন ভাল করে দেবার আন্তরিক কামনায়।

কি হবে এসব দিয়ে? বলল জনি। গাইতে পারি না, সেটাই আসল কথা। জিনি, বিশ্বাস করো, আমার আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। গান ছাড়া আমার অস্তিত্বের দাম কি, বলো?

জিনির চেহারা এবং কণ্ঠস্বরে একরাশ বিরক্তি প্রকাশ পেল। এ আবার কি কথা, জনি? এখনও তুমি কচি খোকা আছ নাকি? বয়স কত হলো খেয়াল আছে? পঁয়ত্রিশ ছাড়িয়ে গেছ। গান? দৃর, ও দিয়ে কি হবে? গাইতে পারো না, তাতে তোমার এত দুঃখ পাবার কি আছে, আমি তো ভেবে পাইনা। ছবির ব্যবসাতে কম টাকা কামাচ্ছ তুমি?

একদৃষ্টিতে জিনির দিকে তাকিয়ে রইল জনি। কয়েক সেকেণ্ড পর বলল, আমি গাইতে ভালবাসি। আমি একজন গায়ক। গান আমার জীবন। তার সাথে বয়স হওয়ার কি সম্পর্ক?

উত্তেজিত হয়ে উঠল ভার্জিনিয়া। কি জানি, বাপু! সত্যি বলছি, আমার কিন্তু কোনকালেই তোমার ওই গান গাওয়া ভাল লাগেনি। তুমি যে ভাল ছথি করতে পারো তা তো প্রমাণ করেই দিয়েছ। আমার কাছে এটাই ভাল মনে হয়। তারপরই ভয়ঙ্কর কথাটা বলল জিনি, তুমি যে আর গাইতে পারো না সেজন্যে আমি খুব খুশি।

মুহূর্তে বিস্ময়ে পাথর হয়ে গেল জনি। তারপরই প্রচণ্ড রাগ হলো তার। কি বললে? এমন একটা বিচ্ছিরি, জঘন্য কথা বলতে পারলে তুমি? আঘাতটা মর্মে গিয়ে লেগেছে ওর। ভেবেই পাচ্ছে না, এমন কথা মুখে আনল কিভাবে জিনি! তাকে জিনি এতটা ঘৃণা করেই বা কিভাবে? কিভাবে তা সম্ভব।

ওর রাগ আর অভিমান লক্ষ করে হাসল জিনি। আমার ওপর রাগ করা অন্যায় হয়ে যাচ্ছে তোমার, অনেকটা স্মরণ করিয়ে দেবার সুরে বলল সে, একবার ভেবে দেখো। ভাল গায়ক হিসেবে তোমার যখন নাম ডাক ছিল তখন রাজ্যের মেয়েরা তোমার পিছনে ছুটত-ভেবে দেখেছ কেমন লাগত তখন আমার? জনির চোখে চোখ রেখে স্পষ্ট করে বলছে জিনি। উদোম শরীরে আমি যদি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতাম, আর রাজ্যের পুরুষরা আমার পিছনে ছুটত-ভেবে দেখেছ, কেমন লাগত তখন তোমার? তুমি ভাল গাইতে পারতে, সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। আমি চাইতাম, মনেপ্রাণে চাইতাম, তোমার গলা যেন নষ্ট হয়ে যায়–তুমি যেন আর গাইতে না পারো। কিভাবে যেন ঠিক তাই ঘটে গো সেজন্যে আমি খুশি হয়েছিলাম। একটু থামল জিনি, তারপর আবার বলল, তবে, এখন তুমি গাইতে পারো না পারো তাতে আমার কিছু এসে যায় না। ওসব আমাদের বিয়ে ভাঙার আগেকার ব্যাপার–এখন আর কিছুতেই কিছু এসে যায় না।

ঘন ঘন ঢোক গিলে গ্লাসটা নিঃশেষ করল জনি। একটুও বুদ্ধি নেই তোমার, ঠাণ্ডা গলায় বলল সে। কিছুই বোঝো না তুমি। ঘুরে দাঁড়াল সে, কিচেনে চলে এল। ফোনের রিসিভার তুলে ডায়াল করল নিনোর নাম্বারে। পাম স্প্রিংসে গিয়ে শনি-রবি দুটো দিন কাটাবার প্রস্তাব শুনে অপরপ্রান্তে আনন্দে লাফিয়ে উঠল নিনো। জনি একটা মেয়ের ফোন নাম্বার দিল তাকে। কুমারী একটা মেয়ে। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে। বয়সও কম। গত কয়েকদিন ধরেই তার সাথে যোগাযোগ করার কথা ভাবছিল ও।

নিনোকে বলল, ওই মেয়েই তোর জন্যে একজন সঙ্গিনী যোগাড় করে নিয়ে আসবে। তোর বাড়িতে ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে যাব আমি।

বিদায় দেবার সময়ও মুখ ভার করে থাকল জিনি। কিন্তু জনিও গম্ভীর হয়ে থাকল, ভদ্রতা দেখিয়ে একটু হাসল না পর্যন্ত। সহজে জিনির ওপর রাগ করে না সে। কিন্তু আজ জিনি সত্যি রাগিয়ে দিয়েছে তাকে। মন থেকে সমস্ত বিষাদ ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টা করছে সে। ধ্যেতেরি ছাই, কে কি বলল তাতে কিছুই এসে যায় না তার-শনি রবিবারটা তো চুটিয়ে ফুর্তি করা যাবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বেশি দরকার।

যা আশা করেছিল, পাম স্পিংসে চমৎকার কাটল সময়টা ওখানে নিজের বাড়ি আছে জনির, সেখানেই উঠল চারজন। বছরের এই একটা সময়, যখন বাড়িটাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে খালি রাখা হয়। কাজের লোকেরা তৈরি হয়েই থাকে; জানে, যে কোন সময় বাড়িতে এসে উঠতে পারে মনিব।

মেয়ে দুটো একেবারে কচি, ফলে দারুণ ফুর্তি করা গেল ওদের নিয়ে। এখনও স্বার্থটাকে বড় করে দেখতে শেখেনি ওরা, নিজেদের জন্যে সুবিধে করে নেবার লোভটা এখনও আসন গেড়ে বসেনি মগজে। ডিনারের আগে পর্যন্ত সুইমিং পুলের ধারে বসে সময় কাটাল ওরা। কিছু বন্ধু এসে জুটল ওখানে। তারা বিদায় নেবার পর নিনোও তার সঙ্গিনীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এল-সাপারের জন্যে তৈরি হতে হবে। রোদের আঁচ লেগে গরম হয়ে গেছে গা, এই সুযোগে মেয়েটার সাথে খানিকটা প্রেমও করা যাবে।

কিন্তু জনির মেজাজ আজ অন্যরকম। সঙ্গিনীটির নাম টিনা। একমাথা সোনালী চুল তার। মিষ্টি হেসে তাকে শাওয়ারে গোসল করার জন্যে পাঠিয়ে দিল জনি। সময়টা হয়তো ভালই কাটবে, কিন্তু ও জানে, মেয়েটার সাথে জমবে না তার।

ভার্জিনিয়ার সাথে ঝগড়া হলে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারে না জনি।

বসবার ঘরটা কাঁচ দিয়ে মোড়া। একধারে একটা পিয়ানো ঘরে ঢুকেই কি এক দুর্বার আকর্ষণ অনুভব করল সে, ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। এককালে ব্যাণ্ডে ছিল জনি, গান করত, স্রেফ মজা বা অলস সময় কাটাবার জন্যে পিয়ানো নিয়ে টুংটাং করত। সে সব দিনের কথা কখনও ভুলবে না ও পুরানো গানের সুর তুলত পিয়ানোতে। সে সব সুর কি কোমল আর জ্যোৎস্না মাখা।

ঘরে কেউ নেই, তাই পিয়ানোর টুংটাঙের সাথে দুকলি গাইছে জনি। বরটা নিচু করে রেখেছে, বাড়তে দিচ্ছে না। যে গানের যে কটা ছাড়া ছাড়া কথা মনে গড়ছে বা গলায় আসছে তাই গুন গুন করছে সে, ঠিক গাইছে বলা চলে না তাকে। পা টিপে টিপে ঘরে ঢুকেছে টিনা, টেরই পায়নি জনি। গ্লাসে মদ ঢালল টিনা, পানি মেশাল-৩ৰু তার উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতন নয় জনি। তারপর ওর পাশে এসে বসল টিনা। নিজের অজান্তেই গানটা থেমে গেল জনির। এখন শুধু পিয়ানোয় টুংটাং আওয়াজ তুলছে। তারপর একটা সুর তুলতে শুরু করল। সেই সুরের সাথে গলা মিলিয়ে গুন গুন করছে টিনা।

টিনাকে পিয়ানোর সামনে বসে থাকতে বলে শাওয়ার সারতে চলে গেল জনি। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলার মত ভঙ্গিতে আরও কয়েকটা গানের কলি আওড়লি সে। তারপর কাপড়চোপড় পরে নিচে নেমে এসে দেখে টিনা এখনও পিয়ানো সামনে নিয়ে একা বসে আছে তার জন্যে। নিনো বোধহয় সঙ্গিনীকে নিয়ে। ব্যস্ত, অথবা কে জানে, কোথাও বসে হয়তো মদ খেয়ে মাতাল হবার সাধনা করছে।

আবার সেই দুর্বার আকর্ষণ জনিকে টেনে নিয়ে এল পিয়ানোর সামনে। উঠে দাঁড়িয়ে জায়গা ছেড়ে দিল টিনা। ঘরের ভেতর ঘুরছে সে, সুইমিং পুল দেখছে।

পুরানো একটা গান ধল জনি।

একটু অবাকই হলো, কই, গলা তো জ্বালা করছে নাঃ সুরগুলো বেরিয়ে আসছে গলা থেকে, একটু যেন চাপ সুরে, কিন্তু কোথাও এতটুকু অবাঞ্ছিত খাদ নেই, পরিপূর্ণ নিটোল হয়ে বেরিয়ে আসছে আওয়াজ।

চোখ তুলে বারান্দার দিকে তাকাল জনি। ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে টিনা। কাঁচের জানালা বন্ধ, কিছুই শুনতে পাচ্ছে না সে। কেউ ওর গান শোনে, কেন কে জানে, তা চায় না জনি।

নতুন করে পুরানো একটা ব্যালাড ধরুল ও। এবার গলাটাকে চেপে রাখল না। গলা ছেড়ে গাইছে ও, যেন শ্রোতাদের সামনে গাইছে।

গলাটাকে পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে, নিজেকে মুক্ত করে দিয়ে গাইছে ও, আর অপেক্ষা করছে কখন শুরু হবে পরিচিত জ্বালাটা। কিন্তু সেটার অস্তিত্বই টের পাচ্ছে না সে।

অনেকদিন পর নিজের গানের গলা শুনছে জনি। কেমন যেন অন্যরকম শোনাচ্ছে, কিন্তু খারাপ লাগছে না। কণ্ঠস্বর আরও গাঢ় লাগছে–পুরুষ মানুষের গলা এটা, ছেলেমানুষের নয়। সন্দেহ হলো, গলায় একটা বিস্ময়কর সমৃদ্ধি এসেছে। সন্দেহটা ধীরে ধীরে বিশ্বাসে পরিণত হচ্ছে, এখন আর কোন সন্দেহ নেই ওর মনে, এটা একটা সুগভীর সমৃদ্ধ কণ্ঠস্বর। নিশ্চিন্ত মনে থামল জনি। পাথরের মত নিশ্চল বসে আছে পিয়ানোর সামনে। নড়বে, সে শক্তি নেই যেন শরীরে। চুপচাপ বসে ভাবছে।

মন্দ নয়, আচমকা পিছন থেকে নিনোর গলা পেল ও। অন সেকেণ্ড বট-কিসের মন্দ নয়? অপূর্ব! বিস্ময়কর। এ কার গলা, দোস্ত?

ঝট করে ঘুরে বসল জনি। দরজায় নিনোকে একা দেখে স্বস্তি বোধ করল সে। নিনো শুনেছে শুনুক, তাতে তার আপত্তি নেই। ওর সঙ্গিনীটা না শুনলেই হলো।

দেখা যাক, বলল জনি। মেয়ে দুটোকে নিয়ে কি করা যায় বল তো? ওদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া যায় না?

তুই ব্যবস্থা কর, বলল নিনো। এত কচি আর এত ভাল, ফুল ছুঁড়েও ওদের মনে কষ্ট দিতে পারব না আমি। আমার মেয়েটার সাথে দুবার প্রেম চালালাম, এখন যদি ওকে না খেতে দিয়ে ফেরত পাঠাই, আমাকে কি ভাববে বল দেখি?।

ধ্যত্তেরি, না হয় শুনলই ওরা! বিচ্ছিরি গলা তো কি হয়েছে। মেয়েগুলোকে বিদায় করবার দরকার নেই, মনস্থির করে পরিচিত এক ব্যাণ্ড লীডারকে ফোন করল জনি। পাম স্প্রিংসেই থাকে সে। তার কাছ থেকে একটা ম্যাণ্ডোলিন চাইল সে। কিন্তু ব্যাণ্ড লীডার প্রতিবাদের সুরে বলল, ম্যাণ্ডোলিন? ম্যান্ডোলিন দিয়ে কি হবে? পাম স্প্রিংসে কেউ ম্যান্ডোলিন বাজায় না।

জানি, চিৎকার করে বলল জনি। তোমাকে যা বলছি তাই করো। একটা মাণ্ডোলিন পাঠিয়ে দাও।

রেকর্ড করার যন্ত্রপাতিতে বাড়িটা ভর্তি, সুতরাং সেদিক থেকে কোন সমস্যা দেখা দিল না। মেয়ে দুটোকে থাকতে দেয়ায় সুবিধেই হলো। ওদেরকে যন্ত্র অন অফ করা, শব্দ কমানো বাড়ানো রপ্ত করিয়ে নিল জনি।

খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে কাজে বসল ও। ম্যাণ্ডোলিন নিয়ে সঙ্গত করছে নিনো। এক এক করে তার সব পূরানো গান গাইছে জনি। গাইল গলা ছেড়ে, একটুও দয়া মায়া করল না গলাটাকে। গলার অবস্থা চমৎকার, এত ভাল আশা করেনি সে, মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে গেয়ে যেতে পারবে।

কতদিন, কত মাস গাইতে পারেনি সে। গাইতে পারেনি, কিন্তু গানের ভাবনা ছাড়তে পারেনি কখনও। কল্পনায় ভেবেছে, আবার যদি গাইতে পারত, অল্প বয়সে যেভাবে গেয়েছে সেভাবে গাইত না, অন্যভাবে গাইত। এতদিন আওয়াজ করে গাইতে পারেনি জনি, মনে মনে গেয়েছে। কল্পনাটা এখন বাস্তব হয়ে উঠছে। যেভাবে গাইলে গান আরও ভালভাবে ফুটবে বলে মনে করত সেইভাবে গাইছে এখন, আরও বেশি ওস্তাদি আর রংঘাত আরোপ করে। তা করতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। মাথার ভেতর যেমন শুনতে পেত কাজের বেলায় সেই ভাবে গাইতে গিয়ে ঠিক সুরটি বেরুচ্ছে না।

মনে মনে ঠিক করল, আরও জোরে, আরও অনেক ভোলা গলায় গাইতে হবে তাকে। এখন আর নিজের গলা শুনছে না জনি।সম্পূর্ণ মনোযোগ চলে গেছে গানের ওস্তাদির দিকে। তাল বজায় রাখতে গিয়ে ঠেকে যাচ্ছে এখানে সেখানে কিন্তু ও কিছু না, অনেকদিন চর্চা না থাকলে অমন হতেই পারে। মেট্রোনোম ওর মাথার ভেতরই আছে, ফলে কখনও ভুল হয় না তার। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে, একটু চর্চা করলেই হবে।

অবশেষে থামল জনি। উজ্জল, উদ্ভাসিত মুখে এগিয়ে এসে তার মুখে একটা চুমু খেয়ে বলল টিনা, আজ বুঝলাম কেন তোমার প্রত্যেকটা ছবি দেখতে যায় মা! উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কথাটাই বলে ফেলেছে টিনা। ঠিক এই বিশেষ মুহূর্তটি ছাড়া অন্য কোন সময় কথাটা বলা ভুল হত। হাসছে ওরা।

টেপটা বাজিয়ে শোনার পালা এবার। পুরো মন লাগিয়ে নিজের গানগুলো ও জনি। আশ্চর্য বদলে গেছে গলাটা, প্রায় সম্পূর্ণ বদলে গেছে, কিন্তু এ যে জনি ফন্টেনেরই কণ্ঠস্বর তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। তার আগের ধারণাটাই ঠিক। আগের চেয়ে আরও অনেক সমৃদ্ধি এসেছে গলায়। আরও গাঢ় হয়েছে স্বর। আগের গলায় একটা ছেলেমানুষির পাতলা ভাব ছিল, এখন সেটা পুরুষ মানুষের পরিণত গলায় রূপান্তরিত হয়েছে। এই নতুন গলায় আবেগ আরও যথার্থভাবে ফুটেছে, অনুভব করার জন্যে এর ভেতর অনেক বেশি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কৌশলগত বিচারেও এর আগে কখনও এত ভাল গায়নি জনি। এ যাকে বলে গুণীর কাজ। চর্চা নেই, তাতেই যদি এত ভাল গাইতে পেরে থাকে, চর্চা করলে তো আরও কত ভাল গাইতে পারবে।

হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল জনির মুখ। নিনোর দিকে ফিরল সে। কি রে, কেমন বুঝছিস? যতটা ভাল মনে করছি, আসলেই কি ততটা ভাল?

প্রত্যাশায় ভরাট জনির মুখের দিকে তাকাল নিনো। চিন্তিত ভাবে বলল, ততটা কিংবা হয়তো তারচেয়েও ভাল। কিন্তু দেখা যাবে কাল কি রকম গাইতে পারিস।

নিনো খুব একটা উৎসাহ পায়নি লক্ষ করে মন খারাপ হয়ে গেল জনির। গাল মন্দ শুরু করে দিল সে। শালা, বেজম্মা! খুব ভালই জানা আছে তোর, আমার মত গাইতে পারবি না কখনও তুই। কালকের কথা কালকে দেখা যাবে। আমি কিন্তু সাঙ্ঘাতিক উত্তেজিত হয়ে পড়েছি।

কিন্তু সে রাতে আর গাইল না জনি। নিনো আর মেয়ে দুটোকে সাথে নিয়ে একটা পার্টিতে গেল। এক বিছানায় রাত কাটালেও জনিকে দিয়ে আশা পূরণ হলো না টিনার। বেচারা হতাশই হলো! ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আবার একটু মন খারাপ হয়ে গেল জনির। তারপর ভাবল কি আশ্চর্য, এক দিনেই সব আশা করলে হয় নাকি!

সকালে ঘুম ভাঙতেই দুশ্চিন্তায় উতলা হয়ে উঠল জনি। সত্যি গলা ফিরে পেয়েছে সে? নাকি স্বপ্ন দেখেছে কাল রাতে? আতঙ্কিত হয়ে পড়ল সে। তারপর সব কথা মনে পড়ে গেল, বুঝল স্বপ্ন নয়। কিন্তু একটা দুশ্চিন্তা দূর হলো তো আরেকটা আসন গেড়ে বসল মনে। ভাল হয়ে যাওয়া গলা আবার যদি নষ্ট হয়ে যায়? ধীর পায়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ও। ভয়ে ভয়ে একটু গুন গুন করে পরখ করল গলাটাকে। কিন্তু এইটুকুতে কিছুই বোঝা যায় না রাতের পাজামা খোলার ধৈর্য হলো না, তাড়াতাড়ি নেমে এল নিচে। বসবার ঘরে ঢুকেই সোজা এগিয়ে গেল পিয়ানোর দিকে। প্রথমে হালকা একটা সুর বাজাল, একটু পর তার সাথে গান ধরল একটা।

গলাটাকে ইচ্ছে করেই বাড়তে দিল না জনি। দুরু দুরু করে উঠল বুকটা। কিন্তু কই, গলায় তো কোন ব্যথা নেই। বেসুরোও শোনাচ্ছে না আওয়াজটা। গলা ছেড়ে দিল এবার জনি।

পরিপূর্ণ, নিখুঁত সুর বেরিয়ে আসছে, কোথাও কখনও জোর খাটাতে হচ্ছে না। পুলকিত হয়ে উঠল ও, বুঝতে পারছে দুঃখের দিন শেষ হয়েছে তার। যা কোনদিন ফিরে পাবে বলে আশা করেনি তাই ফিরে পেয়েছে। এখন আর কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না সে। কেউ যদি তাকে ভাল না বাসে কিছু এসে যাবে না তার। ছবি করতে গিয়ে এখন যদি সে মার খায় তাতেও কিছু এসে যাবে না। টিনা কাল নিরাশ হয়েছে, কিই-বা এসে যায় তাতে? সমস্ত ব্যর্থতা, সমস্ত দুঃখ ভুলে যেতে পারে এখন জনি, কারণ সব চেয়ে বড় আনন্দ ফিরে এসেছে তার জীবনে। আবার গাইতে পারছে সে, সেজন্যে বোধহয় মন খারাপ হয়ে যাবে জিনিয়ার, তাতেও কিছু এসে যায় না জনির।

মুহূর্তের জন্যে একটু খেদ অনুভব করুল শুধু তার মেয়েদের কথা ভেবে। আহা, গলাটা যদি মেয়েদের জন্যে গাইতে গিয়ে ফিরে পেত সে, কি ভালই না হত তাহলে।

.

চাকা লাগানো ট্রে-র মৃদু আওয়াজ শুনে অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এল জনি ফন্টেন। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল একজন নার্স ঢুকছে কামরায়, সাথে করে ওষুধ-পত্র নিয়ে এসেছে সে। উঠে দাঁড়াল জনি। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিনোর দিকে। নিনো কি ঘুমাচ্ছে? নাকি সত্যি বাঁচার কোন আশা নেই.ওর, মারা যাচ্ছে? জনি জানে, তার গলা ফিরে আসায় এতটুকু ঈর্ষা হয়নি নিনোর মনে। কিন্তু অন্য একটা ব্যাপারে সাঙ্ঘাতিক ঈর্ষা হয়েছে। ও বুঝতে পারছে, নিনোর সেই তীব্র ঈর্ষার কারণ, জনির আনন্দ। গলা ফিরে পেয়েছে বলে এত কেন খুশি হবে জানি? গোটা ব্যাপারটা থেকে এক্ষণে একটা সত্যই প্রকটভাবে প্রকাশ পাচ্ছে-নিনো ভ্যালেন্টি দুনিয়ার কোন কিছুকেই এতটা ভালবাসে না যে তার জন্যে বেঁচে থাকার তাগিদ অনুভব করবে। তার কাছে কোন আনন্দই আনন্দ নয়, কোন পাওয়াই পাওয়া নয়। জীবনকে নিনো ভ্যালেন্টির মত এমন ঘৃণা করতে আর কাউকে দেখেনি জনি ফন্টেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *