৪.০৪ লাস ভেগাস

০৪.

লাস ভেগাস।

জমকার্লোভাবে সাজানো হোটেলের একটা সুইট। দেয়াল-জোড়া জানালার সামনে দাঁড়ালে নিচে নকল রূপকথার দেশ দেখা যায়। অন্য জায়গা থেকে তুলে নিয়ে এসে লাগানো তাল গাছগুলো সার সার দাঁড়িয়ে আছে। কমলা রঙের আলোর লতা উঠেছে সেগুলোর গা বেয়ে। খানিক দূরে প্রকাণ্ড আকারের দুটো সুইমিং পুল, গাঢ় উজ্জল নীল পানিতে টইটুম্বুর। মরুভূমির তরালা রাতে ওখানে সাঁতার কাটবে। হোটেলের বোর্ডাররা।

উপত্যকার মাঝখানে নিয়নের আলোয় ঝলমল করছে লাস ভেগাস শহর। চারদিকের দূর দিগন্তরেখার কাছে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বালি আর পাথরের তৈরি পাহাড় সারি। সূক্ষ্ম কারুকাজ করা জানালার ভারি পর্দা নামিয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল জনি ফন্টেন।

জুয়া খেলার বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে সুইটে। একজন পিট বস। একজন ডিলার, একজন অতিরিক্ত সাহায্যকারী, আর একজন প্রায় নয় ওয়েট্রেস এই চারজন গোটা ব্যাপারটা সামলাচ্ছে। স্যইটের একটা অংশে, লিভিংরুমে, সোফায় বুয়ে আছে নিনো ভ্যালেন্টি, হাতে পানির একটা গ্লাস। তাতে পানি নেই রয়েছে নির্জলা হুইস্কি! লোকগুলো ক্যাসিনো থেকে এসেছে, ব্ল্যাক জ্যাক জুয়ার টেবিল সাজাচ্ছে তারা, একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে তাই দেখছে নিনো। টেবিলটার কাঠামো ঘোড়ার খুরের মত দেখতে, সেটাকে ঘিরে বসানো হয়েছে যথা নিয়মে গদিমোড়া ছয়টা চেয়ার। পুরোপুরি মাতাল নয় এখনও নিনো, তবু গলার স্বর জড়িয়ে যাচ্ছে তার।

খাসা! চমৎকার! বলল নিনো। এই শালা, জনি, ইধার আও! তুই আজ আমার হয়ে জুয়া খেলবি। ঘাবড়াও মাত, আমার পয় আছে। শালা বাস্টার্ডগুলোকে হারিয়ে একেবারে ফকির বানিয়ে ছাড়ব–আয়, চলে আয়।

আরাম কেদারার উল্টো দিকে, একটা পা রাখার টুলে বসে আছে জনি ফনে। তুই তো জানিস, ওসব আমি খেলি না। এখন তোর শরীর কেমন তাই বল।

নিঃশব্দে হাসল নিনো। শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়-খাসা লাগছে, দোস্ত, তাজা ঝরঝরে হয়ে গেছে শরীরটা। রাত বারোটা বাজতে কত দেরি আর? কয়েকটা মেয়েমানুষ আসবে, জানিস তো? তারপর সাপার খাব। তারপর আবার ব্ল্যাক জ্যাক খেলব। এই তো জীবন, দো! মেয়েমানুষ, মদ, আর জুয়া। চুটিয়ে উপভোগ করছি, ঠিক কিনা বল? জনির দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকল সে যেন উত্তরটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে তার। কিন্তু জনি চুপ করে আছে দেখে নিজেই আবার বকবক করতে শুরু করল। জানিস, ক্যাসিনো থেকে কত জিতেছি? পঞ্চাশ হাজার ডলার। সেজন্যেই তো হুঁড়িগুলো পুরো এক হপ্তা ধরে আমার পিছু ছাড়ছে না।

শান্তভাবে বলল জনি, একটা কথা জিজ্ঞেস করি। টাকা তো আর কম কামালি না। তারপর জুয়া খেলছিস, তাতেও হারার নাম নেই-বলি, এত টাকা দিয়ে যাবি কাকে? মানে, যদি মরেই যেতে হয়?

লম্বা একটা চুমুক দিয়ে গ্লাসটা খালি করে ফেলল নিনো। পাল্টা প্রশ্ন করল সে, আমি তো ভেবেই পাই না, উড়নচণ্ডী বলে নাম কিনলি কিভাবে তুই। তুই জ্যান্ত একটা মানুষ কিনা সে-ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে আমার। পুরুষমানুষ হবে তেজী ঘোড়ার মত, তুই ঠিক তার উল্টো। হ্যাঁরে, সন্ন্যাসী হয়ে যাবি নাকি? তোর পায়ে পড়ি, দোস্ত, ওরকম কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসিস না। যারা এই শহর দেখতে আসে তারাও তোর চেয়ে বেশি মৌজ লোটে। তোর ব্যাপারটা কি বল দেখি?

ঠিক, বলল জনি। নিজে যেতে পারবি, নাকি ব্ল্যাক জ্যাক টেবিলে তুলে নিয়ে যেতে হবে তোকে?

সাথে সাথে উঠে বসার চেষ্টা করল নিনো। নিজের সাথে ধস্তাধস্তি করে কোন রকমে উঠে বসতে পারল সে, পা দুটো নামাল কার্পেটের ওপর, তারপর টলতে টণতে উঠে দাঁড়াল। খুব সাবধানে, ধীর পায়ে এগোচ্ছে ব্ল্যাক জ্যাক টেবিলের দিকে। ডিলারের সাহায্যকারী লোকটা একটু তফাতে একটা চেয়ারে বসে আছে, নিনো ইঙ্গিত করামাত্র যাতে দেখতে পায়। গদিমোড়া চেয়ারে বসল নিনো, টেবিলে বিছানো সবুজ পশমী কাপড়ের ওপর আঙুলের গাঁট দিয়ে টোকা মারল সে, বল, চিপ দাও।

পকেট থেকে একটা প্যাড বের করল, পিট বস, খস খস করে একটা চিরকুটে কি যেন লিখল সে, তার কলমসহ, সেটা নিনোর সামনে রেখে বলল, নিন, মি. ভ্যালেন্টি। প্রথম বার বরাবর যা নিয়ে থাকেন, পাঁচ হাজার।

চিরকুটে নাম সই করল নিনো। সেটা পকেটস্থ করল পিট বস, তারপর ডিলারের দিকে ফিরে ছোট করে মাথা ঝাঁকাল।

বিস্ময়কর দক্ষতার সাথে টেবিলে বসানো খোপের ভেতর থেকে সোনালী আর কালো চিপ বের করছে ডিলার। পাঁচ সেকেণ্ড পর দেখা গেল নিনোর সামনে একশো ডলার চিপের পাঁচটা সমান থাক সাজানো হয়ে গেছে। প্রত্যেক থাকে দশটা করে চিপ। টেবিলে সবুজ বনাতের ওপর ছয়টা চতুষ্কোণ আঁকা রয়েছে। আকারে খেলার তাসের চেয়ে সামান্য একটু বড় রঙটা সাদা। সব খেলোয়াড়ের চেয়ারের সামনে এই রকম একটা করে চতুষ্কোণ। একাই খেলছে নিনো, কিন্তু একসাথে তিনটে খোপে বাজি ধরল সে। প্রত্যেকটি খোপে একটা করে চিপ রেখেছে। তার মানে প্রতিটি হাতে একশো ডলার বাজি ধরে খেলার সূচনা করল সে।

তিন হাতেই হিট দিতে রাজি হলো না ও, কারণ ডিলারের হাতে একটা ছয় আপ রয়েছে। ওটা একটা বাস্ট কার্ড। শেষে দেখা গেল ডিলার চিত্তির। আঁকশি দিয়ে জেতা চিপগুলো নিজের দিকে টেনে আনল নিনো। দেখলি তো? ঠিক এইভাবে শুরু করতে হয় রাতটা, জনিকে বলল সে।

হাসল জনি।

খেলার সময় চিরকুটে সই করা নিনো ভ্যালেন্টির মত জুয়াড়ীর পক্ষে মোটেও স্বাভাবিক নয়। বড় বড় বাজি ধরে খেলে যারা তাদের মুখের কথাই যথেষ্ট, সই করার দরকার হয় না। কিন্তু দেদার মদ খায় বলে নিনোর ওপর ভরসা রাখতে পারে না ওরা, তাই কোন রকম ঝুঁকি নেয় না। ওরা তো আর জানে না যে যত মাতালই হোক, কিছু ভুলে যাবার বান্দা নিনো ভ্যালেন্টি নয়।

পরের দান জিতল নিনো, তারপরের দানও। তিন দান খেলা শেষে আঙুল বাঁকা করে ওয়েটসকে ইশারা করুল সে। বারটা কামরার আরেকটা প্রান্তে, সেখান থেকে পানির গ্লাসে নাই হুইস্কি ভরে নিয়ে এল মেয়েটা। গ্লাসটা ধরল নিনো, তারপর হাত বদল করল সেটা, যাতে মেয়েটার কোমর জড়িয়ে ধরতে পারে। আমার পাশে বসো, সোনা মানিক। কহাত ধেলো, দেখি তুমি পয় আনতে পারো কিনা।

ওয়েট্রেস মেয়েটা অসাধারণ সুন্দরী। কিন্তু জনি ফন্টেন পরিষ্কার বুঝতে পারছে, এ মেয়ে ঠাণ্ডা বরফ, মরা সাপের মত নির্জীব। সজীবতা দেবার চেষ্টা অবশ্য পুরোমাত্রায় রয়েছে, নিনোর চোখাচোখি হলে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন তাতেই ওর চরম পুল পাওয়া হয়ে যাচ্ছে। আসলে কিন্তু ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বানোয়াট। নিনোর দিকে ঢুলুঢুলু লাল চোখে তাকিয়ে হাসলেও ওর লোভাতুর দৃষ্টি কিন্তু কার্লো আর সোনালী চিপসের দিকে, একটা পাবার জন্যে লালায়িত কুত্তী হয়ে উঠেছে। আহা, ভাবল জনি ফন্টেন, এই মেয়েই যদি যৌনমিলনের জন্যে ওরকম লালায়িত হয়ে উঠত, কি মজাই না হত তাহলে। রীতিমত বিস্ময়কর একটা স্কেল দিতে পারত ও। কিন্তু তা হবার নয়। মরা সাপ কখনও সাপড়ের বাঁশি শুনে দোল খায় না।

নিনোর পাশে বসে রাজ্যের ন্যাকামি জুড়ে দিয়েছে মেয়েটা। উদ্দেশ্যটা যে কি, বুঝতে পারছে জনি। একটা চিপ বাগানে। দুত্তোরি ছাই, নিজেকে তিরস্কার করল জনি। না হয় দুএকটা চিপ নিলেই মেয়েটা, আর নেবে নাই বা কেন? কি বা না নিক, সেটা কোন ব্যাপারই নয়। ওর মন খারাপের একমাত্র কারণ হলো, এত টাকা রোজগার করেও যাকে বলে ভালভাবে বেঁচে থাকা তা নিনোর কপালে জুটল না। একটা জিনিসও ডাল প্লে না বেচারা।

কয়েক দান খেলল মেয়েটা। তার হাতে একটা চিপ গুঁজে দিয়ে নিতম্বে এক থাবড়া মেরে টেবিল থেকে তাকে সরিয়ে দিল নিনো।

মেয়েটাকে ডেকে খানিকটা মদ চাইল জনি। ব্যস, শুরু হয়ে গেল নাটক। মদ এনে দিল সে, কিন্তু এমন ভঙ্গি আর কায়দা কসরৎ করে আল যে দেখলেও বমি পায়। জনি ভেবেই পায় না এই সব মেয়েরা কি মনে করে নিজেদেরকে। তাকে দেখে মনে হলো, দুনিয়ার সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ছায়াছবির সবচেয়ে রোমাঞ্চকর চরিত্রে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দৃশ্যে অভিনয় করছে এই মুহূর্তে। বিখ্যাত জনি ফন্টেনের ওপর তার সবটুকু মোহিনী মায়া ঢেলে দিয়ে জাদু করার চেষ্টা করছে মেয়েটা। হেসে ফেলল জনি। কলল, ধন্যবাদ।

পরের দৃশ্যটা আরও অবিশ্বাস্য। জনির সহাস্য ধন্যবাদ শুন্তে এমন একটা শিহরণ বয়ে গেল মেয়েটার শরীরে, যেন আরেকটু হলেই তীর একটা যৌন ঝংকার শোনা যেত। চোখ দুটো আশ্চর্য ধোয়াটে হয়ে এল, শক্ত হলো শরীরটা। ক্রমশ সরু হয়ে আসা লম্বা পা দুটো সোজা হয়ে আছে, কোমরের ওপরের অংশটা পিছন দিকে হেলিয়ে দিল–যেন জনি ফন্টেন ধন্যবাদ জানিয়েছে বলে সাথে সাথে চরম তৃপ্তি লাভ হলো তার।

সুন্দর অভিনয়, এর আগে এমনটি দেখেনি জনি। কিন্তু সবটাই ওই জিনিস, অভিনয়, তার বেশি কিছু না। এ-ধরনের অভিনেত্রীরা বিছানায় খুব কমই ভাল হয়। গ্লাসে ঘোট ঘোট চুমুক দিতে দিতে জনি দেখল ফিরে যাচ্ছে মেয়েটা নিজের চেয়ারে। চোখ ফিরিয়ে নিল জনি। দেখার সাধ মিটে গেছে ওর। আজ যদি মাতাল হত ও তাহলে আলাদা কথা ছিল। মন-মেজাজও আজ ভাল নেই।

পরাজয় স্বীকার করতে আরও এক ঘন্টা সময় নিল নিনো ভ্যালেন্টি। প্রথমে একদিকে হেলে পড়ল সে, কিন্তু কোনমতে সামলে নিয়ে সোজা হলে আবার, তারপরই একেবারে সটান ঝপ করে মেঝেতে। তবে পিট বস্ আর ডিলারকে আগেই সাবধান করে দেয়া হয়েছিল, তারা সাথে সাথে ধরে ফল নিনোকে। চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে গেল তাকে ওরা। পাশেই শোবার কামরা, সেখানে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়া হলো তাকে।

ওদের পিছু পিছু শোবার ঘরে এল জনি। নিনোকে ম্ম করার কাজে পুরুষদের চেয়ে বেশি তৎপর হয়ে উঠতে দেখা গেল ওয়েট্রেস মেয়েটাকে। লেপ দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো ওর শরীর। তারপর আবার ওরা সবাই খেলার ঘরে ফিরে এল।

নিনোর চিপগুলো ওল, পিট বস, তারপর কি যেন লিখে রাখল চিরকুটে। টেবিল আর ডিলারের চিপগুলো পাহারা দিচ্ছে সে।

কতদিন ধরে এইরকম চলছে? জানতে চাইল জনি।

শ্রাগ করল পিট বস। আজ তো খুব তাড়াতাড়ি জ্ঞান হারালেন, বলল সে। প্রথমবার হোটেলের ডাক্তারকে ডাকতে হয়েছিল। তিনি মি, ভ্যালেন্টিকে কি সব ওষুধ খাওয়ালেন, অমনি মি. ভ্যালেন্টি চাঙা হয়ে উঠলেন তারপর ডাক্তার তাকে একটা ছোট্ট বক্তৃতা শোনালেন। কিন্তু ডাক্তার চলে যাবার পর মি. ভ্যালেন্টি আমাদেরকে নিষেধ করে দিয়ে বললেন, আবার যদি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন কখনও, কেউ যেন ডাক্তারকে খবর না দেয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ধরে শুধু শুইয়ে দিলেই চলবে, পরদিন সকালে আবার তিনি সুস্থহয়ে উঠবেন। সেই থেকে তাই করি আমরা। ভাগ্যটা কিন্তু দারুণ, তাই না? এই দেখুন না, আজ রাতেও উনি তিন হাজার ডলার জিতলেন।

সে যাই হোক, বলল জনি, আমি যখন এখানে আছি, ডাক্তার ডাকতেই হবে। হোটেলের ডাক্তারকে একটা খবর পাঠান। ক্যাসিনোতে লোক পাঠাতে হলেও অবহেলা করবেন না।

পনেরো মিনিট পর ঘরে এসে ঢুকল ডাক্তার জুলস সীগল। তার সাজ-পোশাক দেখে মনে মনে সাংঘাতিক বিরক্ত হলো জনি। ছোকরা যেন রঙচঙে সঙ সেজে থাকে, দেখে ডাক্তার বলে মনেই হয় না। জুলসের পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুঁটিয়ে দেখছে ও। ঢিলেঢালা নীল পোলো শার্ট পরেছে, তাতে আবার সাদা পাড় বসানো। পায়ে মোজার বালাই নেই, সাদা সুয়েডের জুতো গলিয়েছে। হাতে ডাক্তারের চিরাচরিত কার্লো ব্যাগ। সব মিলিয়ে হাস্যকর লাগে।

দরকারী জিনিস-পত্ৰ গলফের একটা থলেতে ভরে আনলেই তো পারেন, বল জনি। আপনার রঙচঙে পোশাকের সাথে সেটাই বোধহয় বেশি মানাবে, না কি বলেন? থলেটা কেটে একটু ছোট করে নেয়া যেতে পারে।

সাথে সাথে তাকে সমর্থন করল জুল। বলল, ঋটি কথা। ডাক্তারের এই কার্লো ব্যাগ দেখেই রুগীর বুক ছ্যাৎ করে ওঠে, ভয়েই বেচারা আধমরা হয়ে যায়! আমি মনে করি, রঙটা তো অবশ্যই বদলানো দরকার। খাটের দিকে এগিয়ে গেল জুলস, নিনের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাগ খুলছে। আপনার পাঠানো কনসালটেশন ফী-র চেকটা পেয়েছি, বলল সে। সেজন্যে ধন্যবাদ। তবে, টাকার অঙ্কটা বেশি হয়ে গেছে। কিইবা করেছিলাম আমি।

করেনমি? তা বটে! হাসল জনি। সে যাক, ওসব বাসি হয়ে গেছে। নিনোর ব্যাপারটা কি বলুন তো?

নিনোর হার্টের অবস্থা, পালস আর ঝাড প্রেশার পরীক্ষা করল জুলর্স। একটা ইঞ্জেকশন বের করে হাতে পুশ করল। ঘুমাচ্ছে নিনো কিন্তু চেহারা থেকে ফ্যাকাসে ভাবটুকুদূর হয়ে গেল প্রয় সাথে সাথেই। বেড়ে গেছে রক্ত চলাচল।

প্রথমবারই ভাল করে পরীক্ষা করেছিলাম ওকে, বলল জুলস। রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষা করে তখনই বুঝতে পেরেছিলাম ডায়াবিটিস হয়েছে ওর। মাইন্ড অ্যাডাল্ট স্ট্যাবিলি। মুখ বেছে চললে আর ওষুধ-পত্র খেলে এটা কোন রোগই নয়। কিন্তু মুশকিল হলো, আমার কথা কানে তোলার পাত্র নন তিনি। ওঁর প্রতিজ্ঞাটা সম্পর্কে কিছু জানা আছে আপনার? চোখে প্রশ্ন নিয়ে জনির দিকে তাকাল জুল। কিন্তু জনি নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে দেখে আবার শুরু করল সে, মি, ভ্যালেন্টি পণ করেছেন, মদ খেয়ে মারা যাবেন তিনি। এ এক ধরনের আত্মহত্যার প্রবণতা লিভারটা প্রায় পচে গেছে, মগজটাও যেতে বসেছে। এখনকার এই অসুস্থতা আর কিছু নয়, ডায়াবিটিসের কোমা। আমার পরামর্শ চাইলে বলব ভদ্রলোককে কোথাও আটকে রাখার ব্যবস্থা করুন।

খানিক স্বস্তিবোধ করল জনি। যাক, সিরিয়াস কিছু নয় তাহলে। জানতে চাইল, আটকে রাখার কথা কি যেন বললেন? বদ্ধ মাতালদের চিকিৎসা করা হয় যেখানে সেখানে পাঠাতে বলছেন ওকে?

নিঃশব্দে বারের দিকে এগোচ্ছে জুস। গ্লাসে নিজের জন্যে খানিকটা হুইস্কি ঢালল। তারপর ঘুরে দাঁড়াল জনির দিকে! না। আমি ওকে বন্দী করে রাখার কথা বলছি। পাগলা গারদে।

কি! আপনি খেপলেন নাকি, ডাক্তার?

না। কথাটাকে ঠাট্টা বলে উড়িয়ে দেবেন না। মানসিক রোগের ব্যাপারে আমি বিশেষজ্ঞ নই তা ঠিক, কিন্তু কিছুটা অন্তত বুঝি আমি, পেশার খাতিরে খানিকটা বুঝতেই হয়। লিভারের খুব বেশি ক্ষতি না হয়ে থাকলে আপনার বন্ধুকে কিছুটা সুস্থ করে তোলা হয়তো সম্ভব। তবে লিভারের অবস্থা বোঝার জন্যে ময়না তদন্ত করতে হবে। কিন্তু ভদ্রলোকের রোগটা মাথায়, মানে, মানসিক ব্যামোতে ভুগছেন তিনি। যতটুকু বুঝতে পেরেছি, মৃত্যুকে ডেকে নিয়ে আসার অদ্ভুত একটা তাগিদ অনুভব করছেন মি, ভ্যালেন্টি। কে জানে, উনি বোধহয় আত্মহত্যাই করতে চান। সবচেয়ে আগে ওর এই রোগটা সারাতে হবে। তবেই আশা আচ্ছ, তা না হলে হাল ছেড়ে দেয়াই ভাল। আর যদি চিকিৎসা করতে চান, ঘোষণা করে দিন মি. নিলো ভ্যালেন্টি পাগল হয়ে গেছেন–তাহলে প্রয়োজনীয় মানসিক চিকিৎসা করা সম্ভব হবে। এর আর কোন বিকল্প নেই।

নক হলো দরজায়। ভেতরে ঢুকল লুসি মানচিনি। ছুটে জনির গায়ের ওপর এসে পড়ল সে, জনিকে চুমো খেয়ে হাসল একগাল। বলল, জনি! ও জনি! কি খুশিই যে হয়েছি তোমাকে দেখে।

হ্যাঁ, বলল জনি। অনেকদিন পরে দেখা হলো। লক্ষ করল লুসি আর সেই আগের লুসি নেই। মেদ ঝরে গেছে শরীর থেকে, কাপড়-চোপড়গুলো শুধু দানী নয়, সেগুলো পরেছেও সুন্দর করে। মুখের কাটিংয়ের সাথে ছেলেদের মত ছোট করে ছা চুল চমৎকার মানিয়েছে। আরও অনেক সুন্দর আর বয়সটাও খুব কম দেখাচ্ছে। ক্ষীণ একটা আশা জাগল জনির মনে, এখানে বেড়াতে এলে লোভনীয় সঙ্গিনী হতে পারে লুসি। এমন একটা মেয়েকে সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোতেও আনন্দ। কিন্তু হঠাৎ উপলব্ধি করল, তা হবার নয়। লুসি এখন ডাক্তারের বান্ধবী, হাত বাড়িয়ে কোন লাভ নেই। তাই লুসিকে মুগ্ধ করার কোন চেষ্টাই করল না ও। সেফ বন্ধুত্বের মিষ্টি হাসি দিয়ে দায় সারল! বলল, ব্যাপারটা কি? এত রাতে নিনোর ঘরে এসেছ কি মনে করে?

মুঠো পাকিয়ে জনির কাঁধে একটা কিল মারল লুসি। নিনোর অসুখ, জুলস্ দেখতে এসেছে, শুনেই চলে এলাম। যদি কোন কাজে লাগি। কেমন আছে এখন ও?

ভাল। ভালই আছে।

না, ভাল নেই, সোফার ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বলল জুল। জনির দিকে নয়, বুসির দিকে তাকিয়ে কথা বলছে সে তোমাদের দেশী বন্ধুর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত এসো সবাই জেগে বসে থাকি আমরা। তারপর ওকে বোঝাব, রাজী করার আটক থাকতে। ওর যা অবস্থা, চিকিৎসা করতে হলে পাগলা গারদে পাঠাতে হবে। তোমাকে ও খুব পছন্দ করে, লুসি, তাই না? তুমি হয়তো আমাকে সাহায্য করতে পারো। জনির দিকে ফিরল জুলস, তাকে বলল, আপনি যদি সত্যি মি, নিনো ভ্যালেন্টির ভাল চান তাহলে আমার দল থাকুন। ঠিক যেভাবে বলছি সেভাবে যদি ওর চিকিৎসা না হয়, কাঁধ ঝাঁকাল সে, হলপ করে বলতে পারি কোন মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবরেটরিতে ওর পচা লিভার প্রদর্শনীর জন্যে সাজানো অবস্থায় দেখতে পাবেন আপনারা।

কথাগুলো গুরুতর, কিন্তু জুলস্ হালকা সরে বলছে, ব্যাপারটা লক্ষ করে মনে মনে সাঙ্ঘাতিক চটে উঠছে জনি। কি মনে করে নিজেকে লোকটা? কড়া কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল জনি, এই সময় বিছানা থেকে নিনোর গলা পাওয়া গেল, দে না, ভাই, কেউ একটা মদ দে না আমাকে!

 ফিরে তাকাল সবাই। বিছানার ওপর উঠে বসেছে নিনো। লুসির দিকে চেয়ে হাসছে সে। হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এসো গো মেয়ে, এসো, নিনোবুড়োর কোলে এসো।

হাসতে হাসতে এগিয়ে গিয়ে খাটের ওপর বসল লুসি, জড়িয়ে ধরুল নিনোকে। অসুস্থ বলে মনেই হচ্ছে না তাকে। আঙুল মটকাল, জনির দিকে তাকিয়ে বলল, অ্যাই, শালা জনি তুই করছিসটা কি? আমাকে এক গ্লাস হুইস্কি দিতে পারিস না? এই তো সবে সন্ধ্যা, এরই মধ্যে আউট হয়ে যাওয়া চলে নাকি? যারে, আমার রাক জ্যাক, টেবিলটা কোন্ চুলোয় গেল কল দেখি?

মদ খাওয়া নিষেধ আপনার নিজের গ্লাসে লম্বা একটা চুমুক দিয়ে বলল জুল। আপনার ডাক্তারের নির্দেশ।

ভুরু কুঁচকে উঠল নিনোর। মুখ ভেটে বলল, জুতো মারো ডাক্তারের মুখে! পরমুহূর্তে চেহারায় একটা নাটুকে অনুতাপের ভাব ফুটিয়ে বলল, দুঃখিত! দুঃখিত। আমার ডাক্তার যে আপনি সেকথা একেবারে ভুলেই গিয়েছিলাম। ডাক্তার, তুমি কিছু মনে কোরো না। ধরে নাও, তুমি এখন, এই মুহূর্তে এখানে উপস্থিত নও। অ্যাই, জনি শালা, কি বললাম তোকে? কথা কানে যায় না, না? এই শেষ বার জিজ্ঞেস করছি, মদ এনে দিবি কিনা? না দিলে আমি নিজে উঠে গিয়ে নিয়ে আসব।

অসহায় ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকান জনি। উঠে দাঁড়িয়ে বার-এর দিকে এগোচ্ছে। পিছন থেকে মৃদু গলায়, উদাসীন ভঙ্গিতে বলল জুলস্, আমি কিন্তু বলেছি, ওসব খাওয়া উচিত নয় ওর।

কেন কে জানে, জুলসকে দেখলেই মেজাজ বিগড়ে যায় জনির। লোকটার চেহারা, হাবভাব, কথাবার্তা কিছুই ওর ভাল লাগে না। তার একটা কারণ সভবত এই হতে পারে যে যত গুরুতর ব্যাপারই হোক না কেন, লোকটা কখনও উত্তেজিত হতে জানে না। গলার সুরটা সব সময় শান্ত, ভাষাটা আশ্চর্য নিরপেক্ষ, যেন কিছুতেই কিছু এসে যায় না ওর। কাউকে যদি সাবধান করে দেবার ইচ্ছে হয়, নিজের মতামতটাই শুধু জানায়, অনুরোধ বা নির্দেশের সুরে কিছু বলে না। লোকটার এই নির্লিপ্ত ভাবটাই সহ্য করতে পারে না ও। নিনোর মদ খাওয়া উচিত নয়, কথাটা এমন সুরে বলল যে গুনেই একটা জেদ চেপে গেল ওর। ভেবেছিল সামান্য একটু মদ ঢেলে দেবে নিনোকে, কিন্তু তা না করে পুরো গ্লাস ভর্তি করে হুইস্কি আনল সে। গ্লাস্টা নিনোর হাতে ধরিয়ে দেবার আগে জুলসের দিকে তাকাল একবার, জানতে চাইল: বলো, ডাক্তার। এটুকু খেলে নিনো ভ্যালেন্টি কি মারা। যাবে?

না, তা যাবে না, শান্তভাবে বলল জুলস।

কামরার ভেতর একটা উত্তেজনা বেড়ে উঠছে, টের পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল লুসি। জুলসের দিকে ফিরে কি যেন বলতে গিয়েও চুপ করে গেল সে। ইতিমধ্যে গ্লাসের মদটুকু গলায় ঢেলে দিয়েছে নিনো।

আপন মনে হাসছে জনি। তার ধারণা, ডাক্তার ব্যাটাকে উচিত শিক্ষা দেয়া গেছে।

হঠাৎ ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলল নিনো। লাল মুখটা নীল হয়ে গেছে তার। নিবাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। তারপর মাছের মত লাফিয়ে উঠল তার শরীরটা। চোখ দুটো কোটছেড়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। দ্রুত উঠে দাঁড়াল স্কুল, ঘুরে খাটের আরেক দিকে চলে গেল। নিনোর গলাটা এক হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরুল ও, তারপর কাঁধ আর গলার মাঝখানে দক্ষ হাতে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করুন। সাথে সাথে ওর আলিঙ্গনের মাঝে স্থির হয়ে গেল নিনো। ধীরে ধীরে তাকে বালিশের উপর শুইয়ে দিল জুল। চোখ দুটোয় ঘুম নেমে আসছে নিনোর, বন্ধ হয়ে গেল। পাতা দুটো।

নিঃশব্দ পায়ে বসার ঘরে ফিরে এল ওরা তিনজন। মস্ত কফি টেবিলটাকে ঘিরে বসল। হাত বাড়িয়ে হালকা নীল টেলিফোনের রিসিভারটা তুলে নিল লুসি, স্যান্ডউইচ আর কফির অর্ডার দিল ও। নিঃশব্দে আবার উঠে দাঁড়াল জনি, বার-এর দিকে এগিয়ে যাবে। একটা হুইঞ্চি ঢালল, তাতে অল্প একটু পানি মেশাল। তারপর দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকাল জুলসের দিকে। আপনি জানতেন হুইস্কি খেলে নিনো অসুস্থ হয়ে পড়বে? তীব্র গলায় জানতে চাইল সে।

শ্রাগ করল জুলস। আশঙ্কা করেছিলাম।

তাণে সাবধান করেননি কেন আমাকে? বাধা দেননি কেন?

 দিয়েছিলাম। আপনি কানে তোলেননি, মৃদু গলায় বলল জুলস।

অনেক কষ্টে মেজাজ সংযত রেখেছে জনি। কিন্তু ওর চেহারা দেখে রাগের প্রচণ্ডতা টের পেতে অসুবিধে হচ্ছে না কারও। বলল, ওকে সাবধান করা বলে? আশ্চর্য মানুষ তো আপনি!  একজন ডাক্তারের কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করি না আমি। কিছুতেই যেন কিছু এসে যায় না আপনার, তাই কি? নিনোকে পাগলা গারদে পাঠাতে বললেন, কেন স্যানাটোনিয়াম বা ওই ধরনের কোন ভাল শব্দ উচ্চারণ করতে পারতেন না? মানুষের আঁতে ঘা দিয়ে কথা বলতে খুব ভাল লাগে বুঝি আপনার?

হাত দুটো কোলে ফেলে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছে লুসি।

কিন্তু জুলসের মধ্যে ভাবের কোন পরিবর্তন নেই। জনির দিকে তাকিয়ে আছে সে। হাসছে। হাসতে হাসতেই বলল, আরও কড়া ভাবে নিষেধ করলেও আপনাকে ঠেকানো যেত না, মদটুকু আপনি মি. ভ্যালেন্টিকে দিতেনই। আমাকে আপনি কেয়ার করেন না, এটা প্রমাণ করার জন্যে আপনি একেবারে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। আপনি বিখ্যাত জনি ফন্টেন, সবাই আপনাকে তোয়াজ করে, ওই জিনিসটা পাবার একটা লোভ জন্মে গেছে আপনার মধ্যে। জানি, আপনার সাথে আমার ভাল বনিবনা হবে না। তাই আপনার এই গলার ব্যাপারটার পর আপনি যখন আপনার ব্যক্তিগত ফিজিশিয়ানের পদে চাকরি দিতে চাইলেন আমাকে, হেসেই উড়িয়ে দিলাম প্রস্তাবটা, গ্রহণ করার কথা একবার ভেবেও দেখলাম না। আসল কথা কি জানেন? আপনি বিখ্যাত হতে পারেন, কিন্তু একজন ডাক্তারের বিখ্যাত হবার দরকার করে না। ডাক্তার মনে করে সে একজন গড, আধুনিক সভ্যতার মহাপুরোহিত-তার কাজের ওটা একটা পুরস্কার। কিন্তু আপনি আমার সাথে সেরকম আচরণ করবেন না। আপনার চাকরি করলে আমাকে হতে হত পা-চাটা গড। হলিউডে ওরাই তো আপনাদের দেখাশোনা করে। কোত্থেকে জোগাড় করেন ওদেরকে, বলুন তো? খ্রীস্ট, আসলেই কি ওরা কিছু জানে না, নাকি অবহেলা করে? জানে না একথা আমি বিশ্বাস করি না। মি. নিনোর অবস্থা যে হয়ে এসেছে নিশ্চয়ই জানে ওরা। কিন্তু সত্যিকার চিকিৎসার ধার দিয়ে না গিয়ে ওঁকে শুধুমাত্র। খাড়া করে রাখার জন্যে একের পর এক ওষুধ খাইয়ে যাচ্ছে। গায়ে শিল্কের কোট চাপিয়ে ওরা সবাই আপনাদের পা চাটে। আপনারা ফিল্ম লাইনের কেউকেটা কিনা, সাংস্কৃতিক জগৎটাকে উদ্ধার করছেন, দুনিয়ার সব ব্যাপারেই আপনাদের স্বচ্ছ ধারণা আছে, তাই ওই খুনেগুলোকে মনে করেন মুশকিল আসান, বিপদের একমাত্র বন্ধু, পরম ত্রাতা। আসলে যে ওরা আপনাদেরকে স্লো পয়জন করছে সে-কথা একবারও কেউ ভেবে দেখেন না। ওদেরকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন, শো বিজনেন, ডাক্তার, ক্ষমা ঘেন্না করে কড়াকড়ি একটু শিথিল করো! ঠিক বলিনি? আসলে আপনারা মরলেন কি বাচলেন তাতে ওদের কিছুই এসে যায় না। আমার ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। আমার আবার একটা বাজে হবি আছে। অনেকের কাছে সেটা হয়তো ক্ষমার যোগ্য নয়?

এতক্ষণে একটু গম্ভীর হলো জুলস। কয়েক সেকেও চুপ করে থাকার পর আবার বলল, হবিটা হলো মানুষকে আমি বাঁচিয়ে রাখতে চাই। মি. নিনোকে আপনি মদ দিলেনই, আমিও তেমন কড়া ভাবে নিষেধ করলাম না, কারণ ওঁর অবস্থা কতটা খারাপ সেটা আমি আপনাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছিলাম। হঠাৎ জনির দিকে ঝুঁকে পড়ল সে, চেহারা এবং কণ্ঠস্বর আবার আগের মত সংযত আর শান্ত হয়ে এসেছে তার। মন দিয়ে শুনুন, মি. জনি ফন্টেন। আপনার বন্ধুর প্রায় হয়ে এসেছে। কি বলছি বুঝতে পারছেন? উপযুক্ত চিকিৎসা আর কড়া ডাক্তারি নিয়মে ওর যদি সেবা যত্ন করতে পারেন তবেই একটা সুযোগ পাবেন তিনি, তা না হলে কোন আশাই নেই। ব্লাড প্রেশার, তার ওপর ডায়াবিটিস, তারপর বদভ্যাসগুলো একটাও তিনি ছাড়ছেন না–দেখবেন, বলে রাখছি, মগজটা সে ফেটে যাবে ওঁর। জুলসের ভাবলেশহীন চেহারায় একটু অসহায় ডাব ফুটে উঠল। এর চেয়ে পরিষ্কার করে অরি কি বলব? তা, বলেছি, পাগলা গারদ বলেছি। না বলে উপায় ছিল? না বললে আপনার টনক নড়ত? এবার আরও সোজা করে বলছি, বন্ধুকে যদি সত্যি ভালবাসেন, ওঁকে পাগল সাব্যস্ত করে কোথাও বন্দী করার ব্যবস্থা করুন, তবেই যদি ওঁকে বাঁচাতে পারেন। তা না হলে ওঁর গালে চুমু খেয়ে ধরা গলায় বলুন-বন্ধু বিদায়!

জুলস থামতেই ফিস ফিস করে কলল লুসি, গুরুত্বটা বুঝিয়ে দিলেই তো হলো, জুলস। এত কড়া কথা বলার দরকার কি?

উঠে দাঁড়াল জুলস। এতক্ষণে শান্ত ভাবটা অদৃশ্য হয়ে গেছে চেহারা থেকে। ব্যাপারটা লক্ষ করে আশ্চর্য একটা সন্তুষ্টি বোধ করুল জনি ফন্টেন। জুলসের ওই প্রশান্ত ভাবটাই তো যত রাগের কারণ তার! লোকটাকে খেপিয়ে দিতে পেরে আপন মনে হাসছে সে এখন।

আপনার বুঝি ধারণা, এই রকম একটা পরিস্থিতিতে এই প্রথম আপনার-মত একজন লোককে এই ধরনের কথা বলছি আমি? জী মা, বোকার দল দুনিয়ায় কয় নেই, আর আমাকেও রোজ এই সব কথা বারবার করে বলতে হয়। কড়া কথা বলতে নিষেধ করছে লুসি–কি যা-তা বকছে তা ও নিজেই জানে না। শুনুন তাহলে। সবাইকে কি বলতাম জানেন? বলতাম, অত খেয়ো না, মারা যাবে, অত খেটো না, মারা যাবে, অত ধোয়া গিলো না, মারা যাবে; অত মদ খেয়ো না, মারা যাবে কেউ কানেই তোলে না আমার কথা। কারণ কি, জানেন? কারণ কালকেই মরবে একথা বলি না ওদেরকে। কিন্তু মি. নিনোর ব্যাপারে কোন দ্বিধা না করেই বলতে পারি, ও যদি আগামীকালই মারা যায় আমি মোটেও আশ্চর্য হব না।

কাঁধ ঝাঁকাল জুলস, এগিয়ে গেল বার-এর দিকে, নিজের গ্লাসে আরও একটু হুইস্কি ঢালল সে। তারপর আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকাল জনির দিকে। কি ঠিক করলেন, মি. ফন্টেন? পাগল সাব্যস্ত করবেন বন্ধুকে?

ঠিক বুঝতে পারছি না।

কি জানেন, একজন মানুষ ধূমপানের ফলে মরতে পারে, বেশি খাটাখাটনির ফলে মরতে পারে, মদ খেয়ে মরতে পারে, এমনকি বেশি বেশি খেয়েও মরতে। পারে। এগুলো সম্ভব। কিন্তু ডাক্তারির দিক থেকে একটা জিনিস সম্ভব নয়। সেটা কি জানেন? রমণ করে করে মরা। কেউ রমণ করতে করতে মারা গেছে, ডাক্তারি শাস্ত্র এ-কথা স্বীকার করে না অথচ ওটার বেলাতেই সবার যত আপত্তি। মদের গ্লাসে চুমুক দিল জুলস। কিন্তু সে হলো পুরুষদের বেলায়। মেয়েদের বেলায় তাতেও। বিপদ। এমন অনেক মেয়ে আসতো আমার কাছে যাদের আর ছেলেপুলে হবার কথা নয়। বলতাম, এবার হওয়াতে বিপদ আছে জামাতাম, খুব বেশি ঝুঁকি আছে, আপনি মারা যেতে পারেন। সেই মেয়েই মাসখানেক পর আবার আমার। কাছে এসে হাজির। একমুখ হাসি নিয়ে আমাকে শোনাত ডাক্তার, ফের বোধহয় আমি অন্তঃসত্ত্বা। ঘটলও তাই। রাগ চেপে বলতাম কিন্তু এতে যে নেক ঝুঁকি। তখনকার দিনে গলার সুরে আমার ভাব প্রকাশ পেত। কিন্তু মেয়েগুলো। নির্লজ্জের মত হাসত, কলত, কিন্তু আমরা যে গোঁড়া ক্যাথলিক।

নক হলো দরজায়। চাকা লাগানো ট্রেতে খাবার আর কফি নিয়ে কামরায় ঢুকল দুজন ওয়েটার। একটা পোর্টেবল টেবিলের ভাঁজ খুলে সেটাকে দাঁড় করল তারা, খাবার সাজিয়ে দিয়ে চলে গেল। গরম স্যাণ্ডউইচ আর ধূমায়িত কফি শেষ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল জনি। একটা সিগারেট ধরাল। জুলসের দিকে তাকিয়ে বলল, তার মানে, আপনি মানুষের প্রাণ বাঁচাবার চেষ্টা করেন, কিন্তু গর্ভপাত ঘটানো তো ঠিক তার উল্টো ব্যাপার, সেটা করতেন কিভাবে?

মেয়েরা বিপদে পড়লে জুলস শুধু তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করত, এই প্রথম মুখ খুলল লুসি। তা নাহলে ওরা যে আত্মহত্যা করে বসবে। অথবা নিজেরাই ভ্রূণ নষ্ট করতে গিয়ে সাঙ্ঘাতিক কিছু একটা ঘটিয়ে বসবে… জুলস ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে দেখে চুপ করে গেল লুসি।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল জুলস। উহু, ব্যাপারটা অত সহজ নয়, বলল সে। যাই হোক, অবশেষে সার্জন হলাম আমি। একজন খেলোয়াড়কে যেমন বলা হয়, ভাল খেলে, আমাকেও তেমনি বলা হত খুব ভাল কাটা-চেরা করে। বড়াই করছি না, আমার হাত সত্যি খুব ভাল, এতই ভাল যে আমি নিজেই ভয় পেতাম। এক হতভাগার পেট কেটে সাথে সাথে বুঝে ফেললাম, তার আর কোন আশা নেই। বাঁচবে না। অপারেশন করতাম ঠিক, কিন্তু মনে মনে জানতাম, টিউমার বা ক্যানসারটা আবার গজাবে। তবু একমুখ হেসে, একরাশ মিথ্যে সান্তনা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম তাকে। ক্যানসার বাধিয়ে হয়তো এক বেচারা মেয়ে এল, তার একটা স্তন কেটে ফেলে দিলাম। পরের বছর আবার এল সে। এবার দ্বিতীয় স্তনটা কেটে বাদ দিলাম। এক বছর পর আবার আসবে ওই মেয়ে, জানতাম। এলও তাই। এবার পেঁপের ভেতর থেকে যেভাবে বিচি চেঁছে বের করে দেয় সেভাবে ওর বুক থেকেও পচামাংস চেঁছে বের করে দিলাম। এতসব করছি কিন্তু অযধা, মরে যে যাবে সে তো আর অজানা কোন ব্যাপার নয়। ওদিকে ওদের স্বামী দিনে অমন হাজারবার টেলিফোন করে জানতে চায়, ডাক্তার সাহেব, টেস্ট থেকে কি বোঝা গেল?

তাই বাধ্য হয়ে একজন লোক রাখতে হলো আমাকে, টেলিফোন এলে সেই কথা বলত। রোগীকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম আমি। সব পরীক্ষা শেষ হবার পর রোগী যখন অপারেশনের জন্যে তৈরি, তার স্বামীকে ডেকে পাঠিয়ে দুমিনিট কথা বলার সুযোগ করে দিতাম। জানাতাম, এটাই টার্মিনেল, মানে শেষ চেষ্টা। কিন্তু আমারা কথা শুনতেই পেত না ওরা। মানেটা যে বুঝতো না তা নয়, বিশ্বাস করত না। প্রথমদিকে মনে করতাম, বোধহয় শুনতে পায়নি। ভাবতাম, কথাটা বলার সময় নিজের অজান্তেই হয়তো গলাটা খাদে নেমে গিয়েছিল।পরের দিকে তাই স্পষ্টভাবে, গলাউ জোর এনে উচ্চারণ করতাম। উঁহু, তবু শুনতে পেত না ওরা। এক লোক তো আমাকে ধমকই মেরে বসল, কি যা-তা বকছেন, জার্মিনেল আবার কি? হাসছে জুলস। তা সে জার্মিনেলই হোক, আর টার্মিনেলই হোক, কিছু কি এসে যায়? যায় না। ওরা মরবেই, ওদেরকে বাঁচাবার সাধ্য আমার নেই। তাই, গর্ভপাত শুরু করলাম। একেবারে পানি মত সহজ কাজ, কেউ এখানে ভুল বোঝে না, বরং সবাই মহাখুশী। বাসন-পেয়ালা ধুয়ে সিঙ্ক সাফ করে রাখার মত, অল্পেই ঝামেলা মুক্ত হওয়া যায়। প্রথম থেকেই ভাল লেগে গেল কাজটা। গর্ভপাতক হওয়া বেশ মজারই তো ব্যাপার, অস্বীকার করব কেন? দুমাসের ভ্রূণ, ওকে আমি জ্যান্ত মানুষই বলি না। তার মানে, বিবেকের দিক থেকে আমার কোন সমস্যা ছিল না। কম বয়সী মেয়েরাই বেশি আসত, সবাই অবিবাহিতা। আবার বিবাহিত মেয়েরাও আসত, এদের বয়স বেশি। ওদের সবাইকে আমি সাহায্য করছিলাম, সেই সাথে দুহাতে টাকাও কামাচ্ছিলাম। কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে কিছুটা সম্মান হারাতে হয়েছিল আমাকে। প্রথম সারি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাই যখন ধরা পড়লাম, মনে হলো যেন ফেরারী আসামীকে ধরে আনা হলো। কিন্তু আমার কপালটা বরাবরই ভাল, এবারও কিভাবে যেন ছাড়া পেয়ে গেলাম। আমার এক বন্ধু সুপারিশ করল তাতেই কাজ হলো। তবে, এখন আমি কোন বড় হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ পাই না। সেজন্যই আজ আমাকে এখানে দেখতে পাচ্ছেন আপনারা। আবার আমি নিজের স্বভাব মত সবাইকে সৎ পরামর্শ দিচ্ছি, কিন্তু আমার কথা কেউ কানেই তুলছে না। ঠিক সেই আগের অবস্থা, কিছুই বদলায়নি।

আমাকে ভুল বুঝছেন আপনি, বলল জনি। আপনার পরামর্শ কানে তুলছি না, এ-কথা ঠিক নয় ভেবে দেখছি এখনও।

অনেকক্ষণ পর আবার কথা বলল লুসি, এবার প্রসঙ্গ বদলাবার জন্যে। জনির দিকে ফিরল সে, বলল, এই, জনি, ভেগাসে কেন এসেছ তা তো বললে না? ছুটি নিয়ে, নাকি কাজে?

মাইকেল কেন যেন আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে, বলল জনি। আজ রাতের প্লেনেই আসছে ও। সাথে টমও থাকবে। টেলিফোনে টম বলল, সে তোমার সাথেও দেখা করবে। ব্যাপারটা কি, কিছু জানো না কি?

আমি শুধু জানি কাল রাতে আমরা সবাই এক সাথে বসে ডিনার খাব, বলল লুসি। ফ্রেডিও থাকবে আমাদের সাথে। সম্ভবত হোটেলের কোন ব্যাপারে আলোচনা। শুনছি, ক্যাসিনো নাকি লোকসান দিচ্ছে, অথচ প্রচুর লাভ হবার কথা। গড ফাদার বোধহয় মাইকেলকে খোঁজ নিতে পাঠাচ্ছেন।

শুনলাম মাইক নাকি তার মুখটাকে মেরামত করিয়েছে, বলল জনি।

অনেক জেদাজেদি করে কে-ই বোধহয় রাজী করিয়েছে ওকে, বলল লুসি। বিয়ের সময় সবাই অত করে বলল, কই, রাজীই হলো না। কে জানে কেন! নাক দিয়ে সব সময় সর্দি গড়াত, কি বিচ্ছিরি! আরও আগে সারিয়ে নিলেই পারত। একটু থেমে জনির দিকে তাকাল লুসি, বলল, অপারেশনটার জন্যে কর্লিয়নি পরিবার থেকে ডাকা হয়েছিল জুলসকে। কনসালট্যান্ট হিসেবে।

আমিই তো ওর নামে সুপারিশ করেছিলাম।

তাই? জানতাম না তো। সে যাই হোক, মাইক নাকি জুলসের জন্যে কিছু করতে চায়। সেজন্যেই ডিনারে ডেকেছে আমাদের।

মাইকেলের কথা বলছ? বলল তুলস। কারও ওপর বিশ্বাস নেই ওর। শ্রামাকে অনুরোধ করেছে, আমি যেন সবার ওপর চোখ রাখি। ওর অপারেশনটা কিন্তু একেবারে সাদামাঠা ব্যাপার ছিল। যে-কোন সার্জন করতে পারত।

পাশের শোবার কামরা থেকে একটা শব্দ ভেসে এল। সবাই একযোগে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল পর্দার দিকে।

আবার জ্ঞান ফিরে পেয়েছে নিন। কামরায় ঢুকে খাটের ওপর তার পাশে বসল জনি। ক্ষীণ, দুর্বল ভাবে একটু হাসল নিনো। বলল, চিন্তার কিছু নেই, আমি আর অবাধ্য হব না। সত্যি, শরীরটা খুব খারাপ লাগছে রে। কথা শুরু করে নিনোর আর থামার লক্ষণ নেই, বকবক করে চলেছে সে, এই, জনি, মনে আছে তোর? সেই যে বছর খানেক আগে পাম স্প্রিংসে গিয়েছিলাম দুটো মেয়ের সাথে? মন থেকে বলছি, সেদিন ওখানে যা ঘটেছিল আমার তাতে দুঃখ হয়নি। বিশ্বাস কর, একটুও হিংসা হয়নি আমার। যীশুর কিরে, খুশিই হয়েছিলাম আমি। তুই আমার কথা বিশ্বাস করছিস তো?

করছি, অবিশ্বাসের সুরে বলল জনি।

মুখ চাওয়াচাওয়ি করল জুলস। এ কি শুনছোরা? জনি ফন্টেন, বিখ্যাত জনি ফন্টেন তার ঘনিষ্ঠতম বন্ধুর কাছ থেকে মেয়ে ভাগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল?. এ যে একেবারেই অবিশ্বাস্য, অসম্ভব ব্যাপার জনিকে চেনে ওরা, ওর সম্পর্কে শুনেছেও। অনেক কথা, তারপরও এমন অকল্পনীয় একটা অভিযোগ ওরা বিশ্বাস করে কিভাবে? অথচ, অভিযোগটা মিথ্যেও হতে পারে না, নিনো ভ্যালেন্টি তো আর নির অনুপস্থিতিতে কথাটা বলছে না। এর মধ্যে আরও একটা বিস্ময়কর ব্যাপার রয়েছে। যা ঘটে গেছে, ঘটে গেছে, ঝাড়া এক বছর ধরে সে-কথা মনেই বা রেখেছে কেন নিনো? তবে কি এক বছর আগে সেই মেয়েটা তাকে ছেড়ে চলে যাবার দুঃখ আজও ভুলতে পারেনি সে?, সেজন্যে কি জীবনের ওপর এত বিতৃষ্ণা তার, সেই বিতৃষ্ণার কারণেই কি দেদার মদ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে ও?

নিনোকে আরেকবার পরীক্ষা করল জুলস। আজ রাতে এখানে থাকার জন্যে। একজন নার্সকে ডাকছি আমি, বলল সে। আপনি কিন্তু অন্তত দুটো দিন বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না। কোন ওজর আপত্তি চলবে না।

আপনি যা বলবেন তাই হবে, ডাক্তার, মৃদু হেসে বলল নিনো। কিন্তু সাবধান, নার্সটা যেন খুব বেশি সুন্দরী না হয়।

টেলিফোনে নার্সের ব্যবস্থা করল জুল। তারপর লুসিকে সাথে করে বিদায় নিল।

খাটের পাশে একটা চেয়ারে বসে রয়েছে জনি, কখন নার্স আসবে তার জন্যে অপেক্ষা করছে।

আবার ঘুম পাচ্ছে নিনোর। চেহারায় ক্লান্তির গভীর ছাপ। একা একা বসে নিনোর বলা কথাগুলো চিন্তা করছে জনি। পাম প্রিংসে এক বছর আগে যা ঘটে গেছে সে ব্যাপারে নিনোর মনে কোন দুঃখ নেই, ঈর্ষা নেই। এটুকু জানে জনি।

কিন্তু জনির মনে সন্দেহটা উঁকিই দেয়নি যে নিনোর মনে ঈর্ষা হতে পারত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *