২.৫ চাকরটাকে হাত নেড়ে বিদায়

০৫.

চাকরটাকে হাত নেড়ে বিদায় করে দিয়ে জনি ফন্টেন বলল, সকালে দেখা হবে, বিলি নিগ্রো বাটলারুপ্রকাণ্ড ডাইনিং-কাম-সীটিং রুম থেকে বেরিয়ে যাবার আগে বাও করল, অনেকটা ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মত, তাও,ডিনারের জন্যে একজন মেহমান উপস্থিত রয়েছে বলে, নাহলে বাও-ও করত না সে।

শ্যারন মুর নামে-র অতিথিটি নিউ ইয়র্ক শহরের গ্রিনিচ ভিলেজ থেকে হলিউডে এসেছে তার পুরানো প্রেমিক প্রযোজিত একটা ছায়াছবিতে অভিনয় করার চান্স পাওয়া যায় কি না দেখতে। মেয়েটা যখন সেটা দেখতে আসে জনি তখন ওলটসের ছবিতে অভিনয় করছে। ও লক্ষ করে, মেয়েটা অল্প বয়েসী, তাজা ঝরঝরে, মিষ্টি, আর সুরসিকা। নিজের বাড়িতে ওকে ডিনার খাওয়ার নিমন্ত্রণ জানায় সে। জনির ডিনারের নিমন্ত্রণ এরই মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে, তা অনেকটা অলঙ্ঘনীয় আদেশের মতও বটে, এবং বলাই বাহুল্য যে নিমন্ত্রণটা সানন্দে গ্রহণ করেছিল মেয়েটি।

জনি সম্পর্কে যে-সব কথা প্রচলিত আছে তার প্রেক্ষিতে শ্যারন মুর ভেবে নিয়েছে ও তাকে প্রথমেই গপ্‌ করে গিলে নিতে চেষ্টা করবে। কিন্তু গোগ্রাসে মাংস গেলার হলিউডি ভঙ্গিটি ঘৃণার উদ্রেক করে জনির মধ্যে। ভুবন ভুলানো কোন গুণ, দেখতে না পেলে সে-মেয়ের সাথে শোয়না জনি। অবশ্য মাঝে মধ্যে খুব বেশি মদ খাবার পর সকালে যখন ঘুম ভাঙে, দেখে পাশে যে মেয়েটি শুয়ে রয়েছে তাকে সে চেনে না বা কখনও দেখেছে বলেও মনে পড়ে না। এখন যেহেতু পঁয়ত্রিশ বছর বয়স জনির, বিয়ে ভেঙেছে একটা, দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বনিবনা হচ্ছে না, হাজার মেয়ের শরীর অধিকার করলেও, আগের সেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে ও। তবে শ্যারন মুরের মধ্যে এমন কিছু দেখেছে ও যে মেয়েটির প্রতি ওর ভিতর থেকে স্নেহ উথলে উঠেছে। সেটাই ওকে দাওয়াত করার কারণ।

খাওয়াদাওয়ার প্রতি তেমন আকর্ষণ নেই জনির, কিন্তু জানা আছে ওর, সুন্দরী মেয়েরা অভুক্ত থেকে টাকা জমায়, সেই টাকায় দামী পোশাক কেনে, আর কেউ দাওয়াত করলে অনেক দিনের জমে থাকা খিদে মিটিয়ে নেবার সুযোগটা হাতছাড়া করে না, তাই টেবিলে প্রচুর খাবারের আয়োজন রাখা হয়েছে। সাথে যথেষ্ট পানীয়ও রয়েছে বালতি ভর্তি শ্যাম্পেন ছাড়াও রয়েছে স্কচ, রাই, ব্রাণ্ডি, আর সাইডবোর্ডের উপর লিকার। প্লেটে সাজানো খাবার আর পানীয় পরিবেশন করল জনি। খাওয়া শেষ করে শ্যারনকে বিশাল সীটিংরুমে নিয়ে এল। কামরাটার একদিকের দেয়াল সম্পূর্ণ কাঁচের, বাইরে তাকালে প্রশান্ত মহাসাগর দেখা যায়। হাইফাই-এর উপর এলাফ্রিটজেরাল্ডের একগাদা রেকর্ড রেখে সোফার উপর শ্যারনের পাশে এসে বসল জনি। কিছুক্ষণ গল্প করে শ্যারন ছোটবেলায় কেমন ছিল তা আবিষ্কার করার চেষ্টা করল ও। শ্যারন কি ছেলে ঘেঁষা ছিল, নাকি ছেলে দেখলেই তাদেরকে ভাড়া করত? সে কি সাদামাঠা ভাবে থাকতে পছন্দ করত, নাকি খুব স্টাইল করত? নির্জনতা ভালবাসত, নাকি দলে ভিড়ে হৈ-হুঁল্লোড়ে মেতে থাকত? শুধু কথা বলার জন্যে নয়, এই সব ছোটখাটো তথ্য হৃদয় স্পর্শ করে ওর, এগুলো জেনে নরম হয়ে ওঠে ওর মনটা। মেলামেশা করার জন্যে কোমলতার প্রয়োজন হয়,ওর, এসব থেকে সেটুকু পেয়ে যায়।

সোফার উপর পাশাপাশি আরাম করে বসে আছে ওরা, শ্যারনের ঠোঁটে চুমা খেলো জনি। নিষ্কাম বন্ধুত্বের চুমো। নির্মল ভঙ্গিটা শ্যারনও বজায় রাখছে দেখে আর এগোল না জনি। বিশাল জানালার বাইরে চাঁদের আলোয় গভীর নীল মহাসাগরের সমতল বিস্তার দেখা যাচ্ছে।

তোমার কোন রেকর্ড বাজিয়ে শোনাচ্ছ না যে? একটু বিক্রপের সুরে জানতে চাইল শ্যারন। ওর দিকে ফিরে হাসল জনি। তাকে শ্যারন পরিহাস করছে দেখে মজা লাগছে ওর। আমাকে তুমি অতটা হলিউডি না ভাবলেও তো পারো, বলল ও।

কিছু বাজাও, বলল শ্যারন। না হয় গান গেয়ে শোনাও। সিনেমায় যেমনটি করে ওরা। তুমি গাইবে আর আমি উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে একেবারে গলে পড়ব তোমার ওপর।

হেসে ফেলল জনি। অল্প বয়সে এই কাণ্ডই করত বটে ও, আর তার ফলও হত বেশ নাটকীয়। চেহারায় কামনার ভাব ফুটিয়ে বিগলিত মোহিনীর রূপ ধারণ করার সে কি আপ্রাণ চেষ্টা, মেয়েদের। মনগড়া একটা ক্যামেরার উদ্দেশে চোখে কামনামদির দৃষ্টি এনে নিজেদেরকে লোভনীর করে তোলার সাধনা শুরু হয়ে যেত। এখন আর কোন মেয়েকে গান গেয়ে শোনাবার কথা ভাবতেও পারে না জনি। একটা কারণ, কয়েক মাস ধরে গান গাইছে না ও, নিজের গলার উপর আস্থা নেই। দ্বিতীয় কারণ, পেশাদার গায়করা যে এত ভাল গান করে তা কতটা যান্ত্রিক সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল সে-ব্যাপারে সাধারণ মানুষ বা সৌখিন শিল্পীদের কোন ধারণাই নেই। তবে, নিজের রেকর্ড বাজিয়ে শোনাতে পারে ও, কিন্তু আগের সেই তাজা উদ্দীপ্ত কণ্ঠস্বর শুনতে আজকাল কেমন যেন কুণ্ঠাবোধ করে ও। গলাটা তেমন সুবিধে লাগছে না, বলল-জনি, তাছাড়া কত আর নিজের গান শোনা যায়, বিরক্তি ধরে গেছে।

গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে ওরা। শুনলাম এই ছবিটায় তুমি নাকি দারুণ অভিনয় দেখিয়েছ, যাকে বলে একেবারে মাত করে দেয়া। সত্যি টাকা পয়সা কিছু নাওনি?

ওই না নেবার মতই, বলল জনি।

শ্যারনের ব্র্যাণ্ডির গ্লাস আবার ভরে দেবে বলে উঠে দাঁড়াল জনি। সোনালী মনোগ্রাম করা একটা সিগারেট দিল ওকে, লাইটার জ্বেলে বাড়িয়ে দিল সেটা ধরাবার জন্যে। সিগারেট টানছে আর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে শ্যারন। আবার তার পাশে বসল জনি।

নিজের গ্লাসে অনেক বেশি ব্র্যাণ্ডি নিয়েছে জনি, শরীর গরম আর মনটাকে চাঙা করে তুলতে এটুকু দরকার। ওর অবস্থা সাধারণ প্রেমিকদের ঠিক উল্টো। মেয়েটিকে নয়, নিজেকেই উত্তেজিত করে তুলতে হয়। সাধারণত মেয়েটিই উন্মুখ, অস্থির হয়ে থাকে, কিন্তু ও নিজে নড়ে চড়ে না। গত দুবছর ধরে ওর আত্মসম্মানে বড় বেশি আঘাত লেগেছে, সেই ঘা সারাবার জন্যে অতি সহজ একটা উপায় বেছে নিয়েছে ও সুন্দরী কুমারী তরুণীকে এক রাতের জন্যে পাশে নিয়ে শোয়ার পর, কয়েকবার তাকে ডিনার খেতে নিয়ে গিয়ে, দামী কিছু একটা উপহার কিনে দিয়ে, খুব নযভাবে খসিয়ে ফেলা, যাতে মনে দুঃখ না পায়। পরে এইসব মেয়েরা বলে বেড়াতে পারে যে বিখ্যাত জনি ফন্টেনের সাথে তাদের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। এর মধ্যে সত্যিকার প্রেম নেই, কিন্তু মেয়েটি যদি আশ্চর্য সুন্দরী আর ভাল হয় তাহলে তাকে সহজে ভুলে যাওয়াও যায় না। কড়া, রাক্ষুসী টাইপের মেয়েগুলোকে দুচোখে দেখতে পারে না ও, এরা ওর সাথে সহবাস করেই বন্ধু-বান্ধবদেরকে বলতে ছোটে যে বিখ্যাত জনি ফন্টেনের সাথে আজ প্রেম হয়েছে। সেই সাথে এ-কথাও বলতে ভোলে না যে জনি ফন্টেনের চেয়ে যৌন অভিজ্ঞতা অনেক বেশি তার। সবচেয়ে বিমূঢ় করে জনিকে এইসব মেয়েদের সহানুভূতিশীল, মহৎপ্রাণ স্বামীরা। তারা প্রায় ওর মুখের ওপর বলতে দ্বিধাবোধ করে না যে কিছু মনে না রেখেই তারা তাদের স্ত্রীদের ক্ষমা করে দিয়েছে, কারণ, আদর্শ সতী স্ত্রীকেও জনি ফন্টেনের সাথে অবৈধ অন্যায় ব্যভিচার করতে দেয়া যেতে পারে, তাতে দোষের কিছু নেই। এসব শুনে হতভম্ব না হয়ে উপায় কি জনির!

রেকর্ডে এলাফিটজেরাল্ডকে ভাল লাগে ওর। গলায় ব্যাণ্ডির উষ্ণতা অনুভব করছে ও, রেকর্ডের সাথে সুর মিলিয়ে গাইতে ইচ্ছে করছে এখন ওর, কিন্তু বাইরের একজনের সামনে তা তো আর সম্ভব নয়। এক হাতে গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে ও, অপর হাতটা শ্যারনের কোলের উপর রাখল। ছল-চাতুরির ধার দিয়ে গেল না, উষ্ণতার সন্ধানে শিশুর মত শ্যারনের কোলে রাখা হাতটা দিয়ে রেশমী পোশাক টেনে তুলল একটু, সাদা বুনটের মোজার উপর খানিকটা উরু দেখা যাচ্ছে সাদা দুধের মত। ওইটুকু দেখে এতগুলো মেয়ে, এতলো বছর, এতদিনের অভ্যাস, সব বেমালুম ভুলে গেল জনি। উত্তপ্ত লাভার মত কামোত্তেজনার স্রোত বয়ে যাচ্ছে তার শরীরে। উত্তেজিত হওয়া প্রায় অভব একটা ব্যাপার, কিন্তু সেই অসম্ভবও সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু যখন আর তা হবে না, ওর গলার মত যখন অসভব অবই থেকে যাবে, তখন কি করবে জনি?

লম্বা ককটেল টেবিলের উপর হাতের গ্লাস নামিয়ে রেখে শ্যারনের দিকে শরীরটা ঘুরিয়ে নিল জনি। চুমো খেলো ওর ঠোঁটে, হাত দিয়ে বুক ছুঁলো, কোমল আর মসৃণ উরুতে হাত বুলাচ্ছে। সামনে আরও সরে এসে শ্যারনও চুমো খেলো ওকে, তার এই চুমোয় মমতা আছে, কিন্তু, কামের নামগন্ধ নেই। ভালই লাগছে জনির। হঠাৎ গরম হয়ে ওঠে যেসব মেয়েরা তাদেরকে পছন্দ করে নাও।

যা সব সময় করে, এইবার তাই করল জনি। এটা এমন একটা পন্থা যা কখনও ব্যর্থ নিরাশ করেনি ওকে। চরম সতর্কতার সাথে, ধীর এবং কোমলতার সাথে, যাতে মাত্র ছোঁয়াটুকু শুধু টের পাওয়া যায়, ওর মধ্যম আঙুলের ডগাটী শ্যারনের দুই উরুর মাঝখানের গভীর গহন অন্তঃপুরে পৌঁছে গেল। এমন অনেক মেয়ে আছে, প্রেম করার এই পদ্ধতি টেরই পায় না, তারা এর মজাটা বুঝে উঠতে অক্ষম। এটা যে আলাদা কিছু, তাই জানে না। আবার কোন কোন মেয়ে প্রচণ্ড বিহ্বল হয়ে উঠে, তাদের বুঝতে কষ্ট হয় ওটা শারীরিক স্পর্শ কিনা, কেননা একই সাথে ওদের ঠোঁটে গভীর আশ্লেষে চুমোও খায় জনি। কিছু মেয়ে ওর এই মধ্যম আঙুলটাকে প্রিয় সুখাদ্যের মত লেহন করত, চুষে খেত, যেন কত দিনের ক্ষুধার্ত। তবে, একথাও ঠিক যে নাম করার আগে এই কাণ্ডের জন্যে জনির গালে টেনে চড় মারত কোন কোন মেয়ে। কিন্তু এটাই জনির গোপন কৌশল, সাধারণত খুব ভাল ফল আদায় হয় এর সাহায্যে।

অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলো শ্যারনের। অনায়াসে, নির্দ্বিধায় সবটুকু গ্রহণ করল সে-আঙুলের ছোঁয়াটুকু, চুমোটা, কিছুতেই আপত্তি জানাল না। তারপর জনির মুখ থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে, জনির শরীর থেকে নিজেকে সামান্য একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে। হাত বাড়িয়ে ব্রাণ্ডির গ্লাসটা তুলে নিল টেবিল থৈকে। শীতল নির্দয়তার সাথে, কিন্তু। সুনিশ্চিত প্রত্যাখ্যান। নিজের গ্লাসটা তুলে নিয়ে জনিও অগত্যা সিগারেট ধরাল একটা।

অদ্ভুত মিষ্টি সুরে, আশ্চর্য হালকা ভঙ্গিতে কি যেন বলছে শ্যারন। তোমাকে যে আমার ভাল লাগেনি, ব্যাপারটা তা নয়, জনি। যতটা ভাল লাগবে বলে আশা করেছিলাম, তোমাকে আমার তার চেয়ে বেশি ভাল লেগেছে। আমি সে-ধরনের মেয়ে নই, ব্যাপারটা তাও নয়। আসলে ওরকম কিছু একটা করতে হলে সঙ্গীর সাথে তার মত মেতে ওঠার জন্যে আমার কিছু প্রেরণার দরকার হয়। ঠিক কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছ তুমি?

ওর দিকে ফিরল জনি ফন্টেন, নিঃশব্দে হাসল একটু। এখনও ভাল লাগছে, মেয়েটাকে ওর। বলল, আমি তোমাকে অনুপ্রাণিত করতে পারছি না, এই তো?

একটু কুণ্ঠিত হয়ে উঠল শ্যারন। বলল, শোনো, তুমি যখন খুব বিখ্যাত গায়ক ছিলে, আমি তখনও ছোট, একেবারে কচি খুকী। আমি তোমার এক পুরুষ পরে জন্মেছি, ঠিক নাগালের মধ্যে পাই না তোমাকে। স্বীকার করি, যাকে বলে সতী মেয়ে, আমি তা নই। তুমি যদি আমার সাথে বেড়ে উঠতে, যাকে ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি, প্রায় সমবয়েসী, তোমার সামনে কাপড় খুলতে এক সেকেণ্ডও লাগত না আমার।

 এখন আর শ্যারনকে আগের মত ভাল লাগছে না জনির। মেয়েটা মিষ্টি, বুদ্ধিমতী, সুরসিকা, সন্দেহ নেই। ওর সাথে সহবাস করার জন্যে হন্যে হয়ে ছুটেও আসেনি, ওর সাথে ভাল সম্পর্ক থাকলে ছবিতে কাজ পেতে সুবিধে হবে ভেবে নিজেকে নির্লজ্জের মত মেলেও দেয়নি বা প্রেমেও গদ গদ হয়ে ওঠেনি–সন্দেহ নেই, খাঁটি মানুষ, সরল মানুষ। কিন্তু ব্যাপারটার মধ্যে আরেকটা বিষয় আবিষ্কার করতে পেরেছে জনি। এর আগেও কয়েকবার এমনটি হয়েছে। কিছু মেয়ে, ওর। সাথে সন্ধ্যা কাটাতে আসার আগেই মনে মনে ঠিক করে রাখে বিছানায় উঠবে না। তারা, কাপড় খুলবে না, তা সে যত ভালই লাগুক না কেন ওকে তাদের। এর কারণ, মেয়েরা চায়, ফিরে গিয়ে তারা যেন বন্ধু-বান্ধবদের, এবং নিজেদেরকেও বলতে পারে যে বিখ্যাত জনি ফন্টেনের সাথে শোবার সুযোগ পেয়েও তারা সুযোগটা নেয়নি। জনির এখন বয়স হয়েছে, সব বুঝতে পারে ও। শ্যারনের মনোভাব বুঝতে পেরেও তার ওপর রাগ হলো না ওর। শুধু আগের মত আর আকর্ষণ বোধ করছে না ওর প্রতি।

মোহটা কেটে গেছে বলে স্বস্তিবোধ করছে জনি। জানালা দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে তাকাল ও, মাঝে মধ্যে চুমুক দিচ্ছে গ্লাসে।

আশা করি আমার ওপর রাগ করোনি তুমি, জনি, বলল শ্যারন। হলিউডের নিয়ম হয়তো রক্ষা করতে পারিনি। হয়তো আমার ব্যবহার অদ্ভুত লাগছে তোমার কাছে। সঙ্গীকে বিদায় জানাবার সময় চুমো খাওয়াও যা, তার সাথে সহবাস করাও তাই-হলিউডের এই রকমই বোধ হয় নিয়ম। এসব ব্যাপারে এখানে কেউ কিছু মনে করে না, একেবারে পানির মত সহজ ব্যাপার ভেবে নেয় সবাই। আমার ব্যাপারটা হলো, আমি তো আর এখানে খুব বেশি দিন আসিনি।

মৃদু হেসে শ্যারনের মুখে একবার হাত বুলিয়ে দিল জনি, তারপর হাতটা নামিয়ে স্কার্টটাকে টেনে ঢেকে দিল মসৃণ হাঁটু দুটো। না, রাগ করিনি। সেকেলে মেয়েদের সাথে কাটাতে ভালই তো লাগে। খোঁচাটা ইচ্ছা করেই দিল ও।

আরেকটু ব্র্যান্ডি খেলো ওরা। আরও কিছু ঠাণ্ডা চুমোর দেয়া নেয়া হলো। এবার ঠিক করল শ্যারন, তার যাবার সময় হয়েছে।

সৌজন্যের খাতিরে বলল জনি, তোমাকে কোথাও একদিন ডিনার খেতে নিয়ে যেতে পারি?

শেষদিকে খোলা মন নিয়ে কথা বলল শ্যারন, বলল, সময় নষ্ট করে নিরাশ হতে চাও না তুমি, এ আমি জানি। আজকের এই আশ্চর্য সুন্দর সন্ধ্যাটির জন্যে তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার ছেলেমেয়েদেরকে একদিন গল্প শোনাব, বিখ্যাত জনি ফন্টেনের সাথে তার অ্যাপার্টমেন্টে আমি একা একটা সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম।

এবং তুমি ধরা দাওনি, মৃদু হেসে বলল জনি। তারপর দুজনেই হেসে উঠল।

যদি বলিও, তা ওরা কক্ষনও বিশ্বাস করবে না।

তুমি চাইলে লিখে দিই, বলল জনি, এখনও হাসছে ও। তাই চাও নাকি?

 মাথা নাড়ল শ্যারন।

শোনো, কেউ যদি বিশ্বাস না করে, তাকে বলো আমাকে যেন ফোন কয়ে, আমি তোমার হয়ে সাক্ষী দেব। তাকে জানাব, গোটা বাড়িময় আমি তোমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছিলাম, তবু তুমি নিজের সতীত্ব বিসর্জন দাওনি, ঠিক আছে?

শেষ পর্যন্ত একটু নির্দয় হয়ে গেল ব্যবহারটা, শ্যারনের কচি মুখে বেদনা দেখে নিজেই খুব দুঃখ পেল জনি। জনি বলতে চাইছে যথেষ্ট চেষ্টা করেনি সে, বক্তব্যটা বুঝতে পেরে মন খারাপ হয়ে গেল তার। হার না মানার আনন্দটুকু কেড়ে নিল তার কাছ থেকে জনি। এখন ওকে ধরে নিতে হবে জনি ফন্টেনকে আকৃষ্ট করার মত যথেষ্ট মাধুর্য ছিল না তার মধ্যে, সেজন্যেই তেমন জোর দিয়ে চেষ্টা করেনি জনি। কিন্তু শ্যারন যে-ধরনের মেয়ে, যখনই কাউকে বলবে যে জনি ফন্টেনের ফাঁদ ও এড়িয়ে যেতে পেরেছিল, জয় করেছিল তার প্রলোডন, সেই সাথে এই কথাটাও জুড়ে দেবে যে, তবে সে তেমন চেষ্টাও করেনি। এইসব ভেবে শ্যারনের প্রতি করুণবোধ করল জনি।

বলল, কখনও যদি খুব বিষণ্ণ বোধ করো, একটা ফোন কোরো আমাকে, কেমন? আমি যত মেয়ের সাথে পরিচিত হই, তাদের সবার সাথে শুই না।

ফোন করব, বলে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল শ্যারন মুর।

মস্ত একটা ফাঁকা, নির্জন সন্ধ্যা পড়ে রয়েছে জনির সামনে। জ্যাক ওলটস যাকে বলে মাংসের কারখানা সেখানে যেতে পারে ও, যেতে পারে উৎসুক হবু তারকাদের খুদে আস্তানার যে-কোন একটাতে, কিন্তু, জনি এসব চাইছে নাও চাইছে সত্যিকার একজন মরমী মানুষের সাথে মন খুলে কথা বলতে। ওর প্রথমা স্ত্রী ভার্জিনিয়া, তার কথা মনে পড়ল ওর। ছবির কাজ শেষ হয়েছে, এখন একটু সময় দেয়া যাবে মেয়েদেরকে। ওর ইচ্ছে করছে আবার সে ওদের জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠে। ভার্জিনিয়ার কথা ভেবে চিন্তা হয় ওর। হলিউডের মস্তানগুলোকে সামাল দেবার ক্ষমতা নেই ওর, তারা হয়তো পিছু নিয়ে বিরক্ত করবে তাকে, পরে যাতে গর্ব করে বলে বেড়াতে পারে যে জনি ফন্টেনের স্ত্রীর সাথে তাদের প্রেম ছিল। যতদূর জানে জনি, এখন পর্যন্ত এ-ধরনের কথা কেউ বলতে পারেনি। পরমুহূর্তে মনে পড়ল, ওর দ্বিতীয় স্ত্রী সম্পর্কে এ-কথা প্রায় সবাই বলতে পারে। মনটা বিরূপ হয়ে উঠল সাথে সাথে। ফোনের রিসিভারের দিকে হাত বাড়াল জনি।

কানে ঢুকতেই ভার্জিনিয়ার কণ্ঠস্বর চিনতে পারল ও। ওর যখন দশ বছর বয়স, এক সাথে ফোর-বি ক্লাসে পড়ত দুজনে, সেই প্রথম শুনেছিল ওই কণ্ঠস্বর। শোনো, জিনি, তুমি কি খুব ব্যস্ত থাকবে আজ রাতে? একটু সময়ের জন্যে আসতে পারি তোমার কাছে?

বেশ, বলল জিনি। মেয়েরা কিন্তু সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি ওদের ঘুম ভাঙাতে চাই না।

ঠিক আছে, বলল জনি। আমি তোমার সাথেই একটু কথা বলতে চাই আর কি।

অপরপ্রান্তে একটু ইতস্তুত করুল জিনি, তারপর খুব সাবধানে, যাতে কোন দুশ্চিন্তার ভাব প্রকাশ না পায়, ধীরে শান্ত গলায় বলল, গুরুতর কোন ব্যাপার নাকি? জরুরী কিছু?

না, বলল জনি। ছবির কাজ শেষ হয়ে গেছে কিনা, তাই ভাবলাম তোমাকে একটু দেখে আসি, একটু গল্প করে আসি। যদি মনে করে ওদের ঘুম ভেঙে যাবে না তাহলে হয়তো মেয়েদেরকেও একবার দেখা হয়ে যায়।

ঠিক আছে, বলল জিনি। ছবিতে যে ভূমিকাটা চেয়েছিলে তুমি সেটা পেয়েছ শুনে খুশি হয়েছিলাম।

ধন্যবাদ, বলল জনি। আধঘণ্টার মধ্যে আসছি আমি।

বেভারলি হিলসের বাড়িটার সামনে পৌঁছুল জনি, এটাই একদিন বাসস্থান ছিল ওর। গাড়ির ভিতর চুপ করে বসে থাকল ও, তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে বাড়িটার দিকে। গড ফাদারের একটা কথা মনে পড়ে গেল তার, তিনি বলেছিলেন, জীবনটাকে যেভাবে ইচ্ছা গড়ে নেয়া যায়। ইচ্ছাটা কি জানা থাকলেই চলে, তাতেই যেটুকু সুবিধে দরকার পাওয়া যায়। কিন্তু, ভাবছে জনি, ওর নিজের ইচ্ছাটা কি?

ওর প্রথম স্ত্রী ভার্জিনিয়া ওর জন্যে অপেক্ষা করছে দরজায়। ছোটখাটো গড়ন, লাবণ্যময়ী, সুন্দর গাঢ় রঙের চুল, মিষ্টি ইতালীয় মেয়ে। পাশের বাড়ির যুবতী, অন্য কোন পুরুষের দিকে তাকাবে না কখনও, সে সময় এই ব্যাপারটাকেই সবচেয়ে বড় কথা বলে মনে হয়েছিল। ওকে কি তার এখনও আপন করে পেতে ইচ্ছে করে, প্রশ্নটা করে নিজের কাছ থেকে উত্তর পেল জনি, না। তার একটা কারণ হলো, জিনির সাথে আর প্রেম করা চলে না, পরস্পরের প্রতি যে ভালবাসা ছিল সেটায় এখন ঘুণ ধরেছে। যৌন সম্পর্কের কথা বাদ দিলেও আরও কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা কখনও সহ্য করতে বা ক্ষমা করতে পারে না জিনি। তবে এখন আর ওদের মধ্যে কোন শত্রুতাও নেই।

ওকে কফি খেতে দিল জিনি, বসার কামরায় আরাম করে বসিয়ে বাড়িতে তৈরি মিষ্টি খাওয়াল। বলল, পা মেলে দিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ো তুমি, তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

জুতো আর কোট খুলে ফেলল জনি, টাইটা ঢিলা করে দিল।

জনির সামনে একটা চেয়ারে বসল জিনি, মৃদু গাম্ভীর্যের সাথে একটু হেসে বলল, ভারি মজার ব্যাপার তো!

কফিতে চুমুক দিচ্ছিল জনি, হাতটা কেঁপে যাওয়ায় কাপ থেকে ছলকে একটু কফি পড়ে গেল শার্টের উপর। কি ভারি মজার ব্যাপার? জানতে চাইল ও।

বিখ্যাত জনি ফন্টেন সন্ধ্যা কাটাবে, কিন্তু তার কোন সঙ্গী নেই।

বিখ্যাত জনি ফন্টেন যদি আবার সুস্থ হয়ে উঠতে পারে তাহলে সেটাই তার সবচেয়ে বড় ভাগ্য!

এত স্পষ্টভাবে সাধারণত কথা বলে না জনি। জিনি জানতে চাইল, সত্যি কিছু ঘটেছে নাকি?

নিঃশব্দে হাসল জনি। একটা মেয়ের সাথে ডেট ছিল, আমাকে সে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য কি জানো, তাতে সাংঘাতিক স্বস্তি বোধ করেছি আমি।

কথাটা শেষ করেই পলকের জন্যে লক্ষ করল জনি, নিমেষের জন্যে জিনির মুখে রাগের ভাব ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল।

ওসব বাজে মেয়েদের ব্যাপার নিয়ে মন খারাপ কোরো না, বলল জিনি। মেয়েটা হয়তো ভেবেছে ধরাছোঁয়া না দিলেই তোমার আগ্রহ বেড়ে যাবে।

মেয়েটা ওকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মেয়েটার উপর রেগে যাচ্ছে জিনি, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মজা লাগছে জনির। বলল, ধেত্তেরী হাই, এসব কথা থাক, চুলোয় যাক ওসব, আমার বিরক্তি ধরে গেছে। এক দিন তো আমাকে পরিণত হতে হতই, সুতরাং নারী জাতির ব্যাপারে একটু কষ্ট তো আমাকে পেতেই হবে। তুমি অন্তত জানো, শুধু চেহারার জোরে খুব একটা সুবিধে করতে পারি না আমি।

বিশ্বস্ততা বজায় রেখে বলল জনি, ক্যামেরায় তোলা তোমার ছবির চেয়ে তুমি আসলে অনেক ভাল দেখতে।

এদিক ওদিক মাথা নাড়ল জনি। মেদ জমছে শরীরে, মাথায় টাক পড়ছে। এই ছবিটার গুণে যদি হারিয়ে ফেলা খ্যাতি ফিরে না আসে, পিটসা পাই তৈরি করতে শেখা উচিত আমার। তা নাহলে তোমাকে পর্দায় নামানো যেতে পারে, খাসা চেহারা তোমার।

জিনির দিকে তাকালে বোঝা যায় পঁয়ত্রিশের কম নয় বয়স। সযত্নে লালিত হলেও, পঁয়ত্রিশ তো বটে। আর হলিউডে পঁয়ত্রিশ যা একশোও তাই। সুন্দরী তরুণী মেয়েরা হাজারে হাজারে ছড়িয়ে আছে শহরে, এদের কেউ এক বছর টেকে, কেউ বা দুবছর। এদের মধ্যে এমন রূপসী মেয়েও আছে যাদের দিকে তাকালেই হার্টবিট বন্ধ হয়ে আসে। যতক্ষণ না বুলি ছাড়ছে, যতক্ষণ না সাফল্যের নির্লজ্জ লোভে চেহারার অপরূপ মাধুর্য ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। শারীরিক সৌন্দর্যের দিক থেকে সাধারণ মেয়েরা এদের সাথে প্রতিযোগিতায় কখনোই পেরে উঠতে পারে না। বুদ্ধিমত্তা, মাধুর্য, ব্যক্তিত্ব আর গাম্ভীর্যের কথা তুলে লাভ নেই, ওইসব মেযেদের আনকোরা সৌন্দর্যের কাছে সব মান হয়ে যায়। হলিউডে এত সুন্দরী মেয়ে না থাকলে সাধারণ সুশ্রী মেয়েরাও কিছু সুযোগ সুবিধে পেত। আর কে না জানে যে এই সব সুন্দরী মেয়েদের প্রায় সবাইকে চাইলেই অধিকার করতে পারে জনি ফন্টেন। তার মানে, ভাবছে জিনি, কথাগুলো শুধু তাকে খুশি করার জন্যেই বলা হলো। এসব ব্যাপারে জনি বরাবরই ভাল ব্যবহার করে থাকে। সাফল্যের শিখরে উঠেও মেয়েদের প্রতি সৌজন্য দেখাতে বা তাদের প্রশংসা করতে কার্পণ্য করে না কখনও। সিগারেট ধরাবার জন্যে লাইটার জ্বেলে দেয়, নিজে উঠে গিয়ে খুলে দেয় দরজা।

প্রীতিমধুর হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল জিনির মুখ। ওকে বলল, তোমার দখলেই তো ছিলাম আমি, মনে নেই? একটানা বারো বছর। আমি সুন্দরী এ-কথা বলে আজ আমাকে ভোলাবার কোন দরকার নেই।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফার উপর লম্বা হলে জনি।. না, ঠাট্টা নয়, জিনি-তুমি দেখতে সুত্যি খুব ভাল। তোমার তুলনায় আমি এখন একটা কুৎসিত পশু ছাড়া কিছুই নই।

বুঝতে পারছে জিনি, ওর মন খারাপ। প্রসঙ্গটা চাপা দিয়ে জানতে চাইল, ভালই তো হয়েছে ছবিটা, তাই না? পরিস্থিতি আরও ভাল হবে, কি বলো?

তা হয়তো হবে, বলল জনি, বলা যায় না, আগের প্রতিষ্ঠা ফিরে পেতেও পারি। একাডেমির প্রাইজটা যদি পেয়ে যাই, আর বোকার মত কিছু করে না বসি, তাহলে গান না গাইলেও কিছু এসে যাবে না, আগের মত আবার নাম করতে পারব। তা যদি হয়, মেয়েদেরকে আর তোমাকে আরও কিছু বেশি টাকা দিতে পারব আমি।

আরও টাকার দরকারটা কি? প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে আমাদের।

মেয়েদের জন্যে মন কেমন করে আমার, ওদেরকে আরও ঘন ঘন দেখতে চাই। এবার একটু সুস্থির হতে, না পারলে চলবে না আমার। আচ্ছা, খানিক ইতস্তত করে বলল জনি, প্রত্যেক শুক্রবার তোমার কাছে এসে যদি খাওয়াদাওয়া করি, তোমার অসুবিধে হবে?:বিশ্বাস করো, একটা শুক্রবারও বাদ দেব না, যতদূরেই থাকি বা যত কাজই থাকুক না কেন, তাছাড়া শনি রবিগুলো যখনই সম্ভব এখানে এসে কাটিয়ে যেতে পারি আমি, অপঘা ওরা আমার কাছে গিয়ে দুটির কিছুটা কাটিয়ে আসতে পারে।

জনির বুকের উপর একটা অ্যাশট্রে রাখল জিনি। আমার কোন অসুবিধে হবে না। আবার বিয়ে করলাম না তো এই জন্যেই, তুমি ছাড়া আর কেউ যাতে ওদের বাবার ভূমিকায় আসতে না পারে। তার কথায় আবেগের লেশমাত্র নেই। কিন্তু সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবছে জনি, সেই যখন অবনতি শুরু হয়েছিল ওর, বিয়েটা যখন,ভেঙেই গেল, তখন যে-সমস্ত হৃদয়হীন নিষ্ঠুর কথা বলেছিল জিনি এখনকার কথাগুলো তারই ক্ষতিপূরণের চেষ্টা মাত্র।

আচ্ছা, বলো তো, জানতে চাইল জিনি, কে ফোন করেছিল আমাকে?

অনুমান করার ব্যাপারে কোনদিনই ছিল না জনি, আজও নেই। পাল্টা প্রশ্ন করল ও, কে?

আহা, একবার না হয় আন্দাজ করে দেখে না।

কিন্তু কথা না বলে চুপ করেই থাকল জনি।

তোমার গড ফাদার।

আকাশ থেকে পড়ল জনি। বলো কি? উনি তো কাউকে ফোন করেন না। কি বললেন তোমাকে?

বললেন আমি যেন তোমাকে সাহায্য করি। বললেন, আস্থা রাখতে পারো এমন একজন মানুষ দরকার তোমার!

জিনির দিকে অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জনি, যেন জানতে চাইছে, উত্তয়ে তুমি কি বললে?

জিনিও ব্যাপারটা ধরতে পেরে বলল, তোমার গড ফাদারকে প্রশ্ন করলা, আমার কি দায় পড়েছে যে জনিকে আমি সাহায্য করতে যাব? ক্ষীণ একটু হাসল জিনি। উনি বললেন, জনি ভোমার সন্তানদের বাবা, তাই। একটু থেমে আবার বলল ও, আশ্চর্য বিচক্ষণ আর মিষ্টি স্বভাবের মানুষ, অথচ লোকে কত আজেবাজে কথাই না বলে ওঁর সম্পর্কে।

এই সময় বেজে উঠল কিটেনের টেলিফোনটা। তাড়াতাড়ি উঠে গেল জিনি। প্রায় সাথে সাথে চোখে মুখে একরাশ বিস্ময় নিয়ে ফিরে এল সে, বলল, জনি, তোমার ফোন। খুব নাকি জরুরী ব্যাপার, টম হেপেন তোমাকে ডাকছে।

কিচেনে এসে টেবিল থেকে ফোনের রিসিভার তুলল জনি। কি ব্যাপার, টম?

অপর প্রান্ত থেকে নিরুদ্বেগ গলায় টম হেগেন বলল, অনি, গড ফাদার চাইছেন, তোমার ওখানে গিয়ে কিছু ব্যবস্থা সেরে আসি আমি, তোমার ভাল হবে তাতে, ছবির কাজ তো শেষই হয়ে গেছে। সকালের প্লেন ধরতে বলছেন আমাকে, তুমি কি লস এঞ্জেলসে আসবে আমাকে রিসিভ করতে? আমি আবার রাতের মধ্যেই ফিরব নিউ ইয়র্কে, সুতরাং আমার জন্যে তোমাকে পুরো রাতটা অপচয় করতে হবে তা ভেব না।

অবশ্যই, টম, বলল জনি, আমার একটা রাত নষ্ট হবে মনে করে দুশ্চিন্তা কোরো না তুমি আসছ যখন, একটু বিশ্রাম নিয়ে যেয়ো। একটা পার্টির আয়োজন করছি আমি, এই সুযোগে সিনেমা জগতের কিছু হোমরা-চোমরাদের সাথে পরিচয় হয়ে যাক তোমার। এ-ধরনের আমন্ত্রণ সুযোগ পেলেই করে থাকে জনি, যাতে ওর পুরানো শুভানুধ্যায়ীরা মনে না করে যে তাদেরকে নিয়ে লজ্জিত সে।

ধন্যবাদ,বলল হেগেন, কিন্তু জরুরী কাজ আছে আমার, ভোরের প্লেন ধরে ফিরতেই হবে আমাকে। তুমি কি সকাল এগারোটায় নিউ ইয়র্ক-এর প্লেন নামার সময় এয়ারপোর্টে থাকতে পারবে?

একশোবার থাকতে পারব।

সীটিংরূমে ফিরে এসে জিনির প্রশ্নবোধক দৃষ্টির উত্তরে জনি জানাল, আমার কিছু সুবিধে করে দেবার ফন্দি এঁটেছেন-গড ফাদার। জানো, কিভাবে যে ওই ছবিটায় আমাকে ঢোকালেন তা আজও একটা রহস্য হয়ে আছে আমার কাছে। একটু চিন্তিতভাবে বলল, কিন্তু আর কোন ব্যাপারে ওঁর জড়িয়ে না পড়লেই বোধ হয় ভাল হত। সোফায় ফিরে এল ও, ক্লান্ত বোধ করছে।

আমাদের গেস্টরুমে শুতে পারো তুমি, বলল জিনি। তাহলে এত রাতে আর গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় না, মেয়েদের সাথে ব্রেকফাস্টও খেতে পারবে। ওই বাড়িতে তোমাকে একা থাকতে হয় ভেবে খারাপ লাগে আমার। একা লাগে না তোমার?

বাড়িতে আর থাকি কতক্ষণ?

তার মানে আগের মতই আছ তুমি, বলল জিনি। একটু থেমে আবার বলল, গেস্ট রূমটা তাহলে ঠিক করে দিই?

তোমার শোবার ঘরে জায়গা হয় না আমার?

রাঙা হয়ে উঠল জিনির মুখ। বলল, না।

ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে জিনি। হাসছে জনিও। এখনও সদ্ভাব বজায় আছে ওদের মধ্যে। পরদিন অনেক বেলায় ঘুম ভাঙল জনির। দেখল জানালার পর্দাগুলো সরানো হয়েছে, সেই ফাঁক দিয়ে রোদ ঢুকছে ঘরে। তুমি কোথায়, জিনি? চেঁচিয়ে উঠল জনি। অনেক দেরি করে ফেলেছি। ব্রেকফাস্ট পাব?

দাঁড়াও, একসেকেণ্ড, দূর থেকে ভেসে এল জিনির কণ্ঠস্বর।

সত্যি এক সেকেণ্ড। নিশ্চয়ই সব কিছু তৈরি করে রেখেছিল জিনি, দিনের প্রথম সিগারেট ধরাতে না ধরাতে খুলে গেল দরজা, চাকা লাগানো ব্রেকফাস্টের ট্রেটা ঠেলে নিয়ে ভিতরে ঢুকছে ওর ছোট ছোট মেয়ে দুটো।

কচি মুখগুলো এত সুন্দর, দেখে ব্যথায় বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল জনির। পরিষ্কার, উজ্জল চোধগুলোয় চিকচিক করছে কৌতূহল, ওর কাছে ছুটে আসার জন্যে ব্যর্থতায় উদ্ভাসিত হয়ে আছে মুখগুলো। সেকেলে ঢংয়ে লম্বা লম্বা বেণী করে বাঁধা ওদের চুল। পরনের ফ্রকগুলোও সেকেলে। পেটেন্ট লেদারের সাদা জুতো পায়ে। ইশারা করতেই ছুটে এল ওরা। ট্রের পাশে দাঁড়িয়ে বাবার সিগারেট নেভানো দেখছে, অপেক্ষা করছে কখন ওদেরকে দুহাত বাড়িয়ে ডাকবে বাবা। ইশারা করতেই ছুটে এল ওরা। ওদের কচি মুখে কর্কশ দাড়ি গজানো মুখ ঘষে দিচ্ছে জনি, ওরাও চেঁচামেচি জুড়ে দিয়েছে। দরজায় উদয় হলো জিনি, ব্রেকফাস্ট ট্রেটা ঠেলে নিয়ে এল সে বাকি পথটা, যাতে বিছানায় শুয়েই নাস্তা সারতে পারে জনি। খাটের কিনারায় ওর পাশে বসল জিনি, কাপে কফি ঢেলে দিচ্ছে, মাখন লাগিয়ে দিচ্ছে রুটিতে। সোফায় বসে মেয়ে দুটো দেখছে বাবাকে। বালিশের দখল নিয়ে লড়াই করার বয়স পেরিয়ে এসেছে ওরা, বাবার কাছ থেকে আদর পাবার পর এরই মধ্যে যে যার এলোমেলো চুল ঠিকঠাক করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কি সর্বনাশ, ভাবছে জনি, কদিন পরই যে সেয়ানা হয়ে যাবে ওরা! ছায়ার মত লেগে থাকবে ওঁদের পিছনে হলিউডের ছোকরাগুলো। মেয়েদেরকে টোস্ট আর বেকনের ভাগ দিচ্ছে জনি, কফির কাপে চুমুক দিতে দিচ্ছে।

দুচারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর জিনি ছাড়া কেউ জানে না, মেয়েদেরকে কি ভীষণ ভালবাসে জনি। বিয়ে ভেঙে বাড়ি ছাড়া হবার সময় এই তীব্র ভালবাসাই সবচেয়ে বেদনাময় হয়ে উঠেছিল। ওদের বাবার পদে যাতে আসীন থাকতে পারে তার জন্যে জনি কোর্টে মামলা পর্যন্ত লড়েছে। কৌশলে জিনিকে জানিয়ে দিয়েছিল ও, সে যদি আবার বিয়ে করে তাহলে খুশি হবে না ও, ঈর্ষাজনিত কোন কারণে নয়, মেয়েদের বাবার পদ হারাতে হবে বলে। ওদেরকে টাকা-পয়সা দেবারও এমন ব্যবস্থা করেছিল যাতে বিয়ে না করলেই বেশি লাভ হয় জিনির। আভাসে দুজনের মধ্যে এমন কি এই বোঝাঁপড়াও হয়ে গেছে যে জিনি ইচ্ছা করলে গোপন প্রেমিক পর্যন্ত জোটাতে পারবে, কিন্তু ওদের পারিবারিক জীবনে তার বা তাদের প্রবেশ করা চলবে না।

জিনিকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে জনি। তাছাড়া জানে, যৌন বিষয়ে সব সময়ই গোড়া আর লাজুক সে। জনি তাকে কত টাকা দিয়েছে তা জানার আশায় তার পিছনে ঘুর ঘুর করে বেড়ায় হলিউডের রোমিওরা, স্বামীর কাছ থেকে আরও কত রকম সুযোগ সুবিধে আদায় করে দেয়া যায় সে-ব্যাপারে অযাচিত পরামর্শ দান করে তাকে। এখন পর্যন্ত সবাইকে শুধু নিরাশই করেছে জিনি।

গতরাতে একসাথে শুতে চাওয়ায় জিনি ভুল বুঝবে, সে ভয় নেই জনির। দুজনের কেউই আর আগের সম্পর্কে ফিরে যেতে চায় না। সৌন্দর্য আর রূপের পূজারী জনি, এটা জিনি বুঝতে পারে। তার চেয়ে শতগুণ সুন্দরী মেয়েদের প্রতি জনির আকর্ষণ দুর্নিবার। কে না জানে সহকর্মী চিত্রনায়িকাদের সাথে কমপক্ষে একবার করে শোবেই জনি। জনির সুকুমার মাধুর্যের প্রতি মেয়েদেরও রয়েছে অদম্য আকর্ষণ।

টমের প্লেন আসতে খুব বেশি দেরি নেই, বলল জিনি। কাপড়চোপড় পরে তৈরি হয়ে নাও। আদরের ধমক লাগিয়ে মেয়েদেরকে ঘর থেকে বের করে দিল সে।

হুঁ, বলল জনি। ভাল কথা, জিনি, তুমি জানো বিয়েটা ভেঙে যাচ্ছে আমাদের? আবার একজন বন্ধনহীন মুক্ত পুরুষ হয়ে যাচ্ছি আমি।

জনির কাপড় পরা দেখছে জিনি। কনি কর্লিয়নির বিয়ের পর পরই ওদের মধ্যে গড়ে উঠেছে নতুন একটা সুসম্পর্ক। সেই থেকে এ-বাড়িতে এক প্রস্থ পোশক রাখে জনি।

আর মাত্র দুহপ্তা বাকি বড় দিনের, বলল জিনি। তুমি এখানে থাকবে ধরে নিয়ে উৎসবের আয়োজন করব?

ছুটির কথা এই প্রথম মাথায় ঢুকল জনির। যখন ভাল গাইতে পারত তখম কত জায়গা থেকে লোভনীয় আমন্ত্রণ আসত, তবু সে-সব দিনে বড় দিনকে পবিত্র একটা উৎসব বলেই মনে হত ওরা, এবারের বড় দিনটাও যদি হারাতে হয়, এই নিয়ে দুবার হবে। গত বছর বড়দিনে স্পেনে ছিল ও, দ্বিতীয় স্ত্রীকে বিয়েতে রাজি করাবার সাধনায়।

হ্যাঁ, বলল জনি। বড়দিন আর তার আগের দিনটা। নিউ ইয়ারস ঈভ অর্থাৎ নতুন বছরের আগের রাত সম্পর্কে কিছু বলল না ও। কিছুদিন পরপরই উন্মত্ত, বেপরোয়া একটা রাতের দরকার হয় ওর, ওটা হবে সেই রকম একটা রাত। বন্ধু বান্ধব নিয়ে হৈ-চৈ করবে, প্রাণ ভরে মদ খাবে। তখন সেখানে বউ-টউ থাকলে পোষাবে না।

জ্যাকেটটা পরতে ওকে সাহায্য করল জিনি, ব্রাশ দিয়ে ঝেড়ে দিল সেটা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সব সময়ই একটা খুঁতখুঁতে ভাব থেকে যায় জনির মধ্যে। লক্ষ করল জিনি, আজ যে শার্টটা পরেছে সেটার ধোলাই পছন্দসই হয়নি বলে ভুরু কোঁচকাল জনি। অনেক দিন ব্যবহার করা হয়নি হাতার বোতামগুলোও, আজকাল ও এত জমকালো আর রঙচঙে বোম পরে না।

মৃদু হেসে বলল জিনি, তুমি যে বদলেছ, তা টেরই পাবে না টম।

মেয়েরাও বেরিয়ে এসে গাড়ি পর্যন্ত এল জনিকে বিদায় জানাতে। মেয়েরা ওর হাত দুটো ধরে আছে। স্ত্রী একটু পিছনে। কত সুখী দেখাচ্ছে জনিকে, লক্ষ করে অদ্ভুত এক আনন্দে ভরে উঠল জিনির বুকও।

গাড়ির কাছে পৌঁছে পালা করে দুই মেয়েকে শূন্যে, অনেক উঁচুতে তুলে মিল জনি, তারপর নামাবার সময় চুমো খেলো। সবশেষে জিনিকে চুমো খেয়ে উঠে বসল, গাড়িতে। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে অনেকক্ষণ ধরে বিদায় নেয়া পছন্দ করে সে।

ওর সহকারী এবং জনসংযোগ কর্মী সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। সোফার সহ একটা ভাড়াটে গাড়ি অপেক্ষা করছে ওর বাড়িতে। জনসংযোগ কর্মী অর্থাৎ পি. আর, অপর এক সহযোগীকে নিয়ে বসে আছে গাড়িতে। নিজের গাড়ি পার্ক করে ওই গাড়িতে চড়ল জনি। সাথে সাথে গাড়ি ছেড়ে দিল সোফার, এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে ওরা।

এয়ারপোর্টে পৌঁছে পি, আর, নেমে গেল টম হেগেনকে রিসিভ করতে, গাড়ি থেকে নামল না জনি। একটু পরই গাড়িতে উঠল টম হেগেন। জনি তার সাথে হ্যাণ্ডশেক করল। গাড়ি আবার ছুটতে শুরু করেছে ফিরতি পথে।

জনির বাড়িতে পৌঁছুল গাড়ি। নিরিবিলি লিভিংরূমে টম হেগেনের মুখোমুখি হলো জনি। দুজনের সম্পর্কের মধ্যে ঠাণ্ডা, নিস্তেজ একটা ভাব আছে। কনি কর্লিয়নির বিয়ের আগে, ডন যখন ওর উপর রেগে ছিলেন, তখন তার সাথে যোগাযোগ করার পথে একমাত্র বাধাদানকারীর ভূমিকা নিয়েছিল এই টম হেগেন, কথাটা আজও ভোলেনি জনি। রাগটা তার রয়েই গেছে।

এই অবাঞ্ছিত ভূমিকার জন্যে হেগেন কখনও কোন অজুহাতও দেখায়নি। ওর পক্ষে তা সম্ভবই ছিল না। গরম লোহা দিয়ে অপ্রীতিকর ছ্যাঁকা দেয়াটাও ওর চাকরির একটা অংশ, কিন্তু এই শাস্তিটা যে ডনের তরফ থেকে এল তা লোকে ভয়ে আর শ্রদ্ধায় বিশ্বাস করতে প্রস্তুত থাকে না কখনও। যত রাগ তাদের এই টম হেগেনের ওপর, অথচ এ সবই ডনের প্রাপ্য।

তোমার গড ফাদার কেন আমাকে পাঠিয়েছেন তা তো তোমাকে আমি আগেই বলেছি, আনুষ্ঠানিক ভঙ্গিতে শুরু করল টম হেগেন। নিশ্চয়ই জানো যে তোমার জন্যে ভাল হবে এমন সব কাজ তিনি করতে চান। যে দায়িত্বটা আমার ঘাড়ে চেপেছে সেটা আমি বড়দিনের আগেই নামিয়ে ফেলতে চাই।

কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল জনি, ছবির কাজ তো শেষ। পরিচালক চৌকশ লোক, কাজ দেখাবার প্রচুর সুযোগ করে দিয়েছে আমাকে সে। ওলটস এখনও আমার ক্ষতি করতে চাইলেও ছবিতে আমার দৃশ্যগুলো এতই গুরুত্বপূর্ণ যে কাঁচি দিয়ে সেগুলো কেটে ফেলে দিতেও পারবে না। আর যাই হোক, এক কোটি ডলারের একটা ছবির বারোটা বাজানো তো আর সম্ভব নয় তার পক্ষে। তার মানে আমার অভিনয় দর্শকরা কতটা ভাল হয়েছে বলে মনে করবে তার ওপর নির্ভর করছে সব।

সতর্ক ভঙ্গিতে জানতে চাইল হেগেন, এখন প্রশ্ন হলো, এই একাডেমি পুরস্কারটা কি সত্যিই একজন অভিনেতার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ? এতে কি আরও উন্নতির পথ সুগম হবে? যশ, খ্যাতি সত্যিই কি বাড়বে? নাকি আর সব সাধারণ ব্যাপারের মত প্রচারণার খাতিরে, নেহাত মোহের বশে এই পুরস্কার পেতে চায় লোকে?

নিঃশব্দে হাসছে জনি। বলল, যশ, খ্যাতি এসব তো আমার গড ফাদারের দরুকার নেই। বা তোমারও। না টম, জিনিসটা অত ঠুনকো নয়। একটা,একাডেমি পুরস্কার একজন অভিনেতাকে দশ বছরের স্থায়ীত্ব দিতে পারে। চরিত্র বাছাই করার অধিকার এসে যায় তার। লোকজন তার সাথে দেখা করতে যায়। সব কিছু নয় বটে, অমরত্ব প্রাপ্তি নয়, কিন্তু একজন অভিনেতার জীবনে এরচেয়ে বড় কিছু আর হতেও পারে না। পুরস্কারটা আমি পাব বলে ভরসা রাখি। আবার যদি উঠি, এটাই আমাকে ওঠাবে। পাব, কিন্তু আমি খুব বড় অভিনেতা বলে নয়, একজন গায়ক হিসেবে প্রাথমিক পরিচিতিটা আছে আর এই ছবিটায় আমার ভূমিকা সব দিক থেকে নিচ্ছিদ্র বলে পাব। ঠাট্টা নয়, সত্যি খুব ভাল অভিনয় করেছি আমি।

কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল হেগেন, পরিস্থিতির সব দিক বিবেচনা করে তোমার গড ফাদার আমাকে ঠিক উল্টো কথা বলছেন। তিনি বলছেন, পুরস্কারটা পাবার কোন সম্ভাবনা নেই তোমার।

কথাটা শুনেই রেগে ঠাঁই হয়ে উঠল জনি। কি আবোল-তাবোল বকছ। ছবিটা এখনও সম্পাদনাই করা হয়নি, দেখানো CT দূরের কথা। আর ডন তো সিনেমা। ব্যবসার ধারে কাছেও নেই। স্রেফ এ ধরনের প্রলাপ বকার জন্যে তিন হাজার মাইল উড়ে কেন আমার কাছে এসেছ তুমি? হেগেনের কথায় এমন ধাক্কা খেয়েছে জনি যে চোখে প্রায় পানি বেরিয়ে আসার অবস্থা হয়েছে ওর।

কণ্ঠরে উদ্বেগ ফুটিয়ে তুলে বলল হেগেন, দেখো, জনি, ছবির জগতের এসব বিষয়ে বিন্দুবিসর্গ কিছুই আমি জানি না। মনে রেখো, আমি ডনের নিজস্ব সংবাদদাতা ছাড়া কিছুই নই। তবে তোমার এ-বিষয়টা নিয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি আমরা। তিনি তোমার সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, তোমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তিত। তিনি মনে করেন, তার সাহায্য এখনও দরকার তোমার। এমন একটা সমাধান দিতে চান তিনি যাতে তোমার সমস্ত সমস্যার স্থায়ী সুরাহা হয়ে যাবে। সেই উদ্দেশ্যেই এখানে আমার আসা, যাতে বাক নিয়ে তোমার অনুকূলে বইতে শুরু করে বাতাস। কিন্তু আর ছেলেমানুষি নয়, জনি, এবার তোমাকে গুরুত্ব দিয়ে সব ব্যাপার বুঝতে শিখতে হবে। নিজেকে একজন গায়ক বা অভিনেতা ধরে, নিয়ে চিন্তাভাবনা করা থামাও দেখি। নিজেকে প্রধান ব্যক্তি বলে মনে করতে শেখো, মনে করো তুমি হর্তাকর্তা-বিধাতা। দাপট দেখিয়ে বেড়াবার জন্যে তৈরি হয়ে নাও।

হেসে নিজের গ্লাসে হুইস্কি ভরে নিল জনি। ওই অস্কার পুরস্কারটা আমি যদি পাই, আমার ছোট্ট মেয়েদের মত দাপট দেখাবার শক্তিও আর অবশিষ্ট থাকবে না আমার মধ্যে। গলাটা গেছে, ওটা যদি ফিরে পেতাম, চিন্তা করতাম না, আবার আমি কেউকেটা হয়ে উঠতে পারতাম। বুঝতে পারছি, অভাগার কপাল পুড়েছে, গলাটা ফিরে পাবার কোন আশাই নেই। কিন্তু আমার গড ফাদার জানলেন কিভাবে পুরস্কারটা আমি পাচ্ছি না? ঠিক আছে, বিশ্বাস করছি তিনি জানেন। তার জানায় কখনও ভুল থাকে না।

মোটা একটা চুরুট ধরাল হেগেন। আমরা জানতে পেরেছি তোমার প্রার্থীপদ সমর্থন করার জন্যে স্টুডিওর একটা কানাকড়িও খরচ করবে না জ্যাক ওলটস। শুধু তাই নয়, যারা ভোট দেবে তাদের প্রত্যেককে খবর পাঠিয়ে জানিয়ে দিয়েছে। যে পুরস্কারটা তুমি পাও তা সে চায় না। আরেকজন সভাব্য প্রার্থী যাতে তোমার মতই বিরোধীতার সম্মুখীন হয় তার জন্যেও যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সে। ঘষ দেবার সমস্ত কায়দা কাজে লাগাচ্ছে–চাকরি, টাকা, মেয়েমানুষ–সব। আর এসব সে করছে ছবিটার কোন ক্ষতি না করেই বা যতটা কম ক্ষতি করে পারা যায়।

কাঁধ ঝাঁকাল জনি। গ্লাসে হুইস্কি ভরে সেটা ঢকঢক করে গিলে নিল। তাহলে শেষ হয়ে গেছি আমি।

ঠোঁটের একদিকের কোণ বেঁকে গেল, তীর তিরস্কারের দৃষ্টি ফুটে উঠল হেগেনের চোখে। কি মনে করো, মদ গিললে ভাল হয়ে যাবে তোমার গলা? বলল সে।

দূর হও তুমি! খেঁকিয়ে উঠল জনি।

নিমেষে নিভাঁজ, গম্ভীর হয়ে উঠল হেগেনের চেহারা। বলল, ঠিক আছে, শুধু কাজের কথাই হবে তোমার সাথে।

গ্লাসটা কাত করে হুইস্কিটুকু ফেলে দিল জনি, উঠে পড়ল সোফা ছেড়ে, এগিয়ে এসে দাঁড়াল হেগেনের সামনে। কথাটা বলে অন্যায় করেছি আমি, টম, বলল সে। দুঃখিত। আসলে জ্যাক ওলটসকে খুন করতে চাই, কিন্তু কথাটা গড ফাদারকে বলার সাহস আমার নেই, সেই রাগের ঝালটা তোমার ওপর ঝাড়ছি আমি। চোখ দুটো ছলছল করছে জনির। হাতের খালি গ্লাসটা ছুঁড়ে মারল সে, কিন্তু এমন দুর্বলভাবে যে মোটা কাঁচের ভারি গ্লাসটার কোথাও চিড় পর্যন্ত ধরল না, দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ওর পায়ের কাছে গড়িয়ে ফিরে এল সেটা। প্রচণ্ড রাগে সেটার দিকে তাকিয়ে আছে ও। তারপর হঠাৎ হেসে উঠল। বলল, হায় যীশু?

কামরার অপর প্রান্তে সরে গিয়ে হেগেনের দিকে মুখ করে বসল ও। তুমি তো জানো, একটানা অনেকদিন সব কিছু ঠিক নিজের ইচ্ছা মত করে পেয়েছি আমি। তারপর জিনিকে শ্রাগ করার সাথে সাথে সব কিছু বিরূপ হয়ে উঠল আমার জীবনে। গলাটা হারালাম। আমার রেকর্ড আর বিক্রি হয় না। কোন ছবিতে কাজ করার জন্যে আমাকে কেউ আর ডাকে না। আর এই ঠিক সময়ে মুখ ফিরিয়ে নিলেন আমার গড় ফাদার, ফোনে কথা বলেন না; নিউ ইয়র্কে এলে দেখা দেন না। তাঁর আর আমার মাঝখানে সব সময় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছ তুমি, তোমার ওপরই রাগ হয়েছে আমার, কিন্তু সেই সাথে এও জানতাম যে ডনের নির্দেশ ছাড়া এ-কাজ করছ না তুমি। কিন্তু তার ওপর কিভাবে চটি আমি! সষ্টিকর্তার ওপর চটে ওঠার মত অসম্ভব একটা ব্যাপার নয় সেটা? তাই তোমার ওপরই যত রাগ আমার। কিন্তু তুমি বরাবরই সঠিক পথ দেখিয়ে এসেছ। আমি যে সত্যি ক্ষমাপ্রার্থী তা তোমার পরামর্শ গ্রহণ করে প্রমাণ করব। গলাটা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত মদ ছোঁব না, ঠিক আছে?

মাফ চাওয়াটা আন্তরিক বুঝতে পেরে রাগ পানি হয়ে গেল হেগেনের। পঁয়ত্রিশ বছরের এই খোকার মধ্যে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু একটা আছে, তা নাহলে ডন এত স্নেহ করতেন না। ভুলে যাও, জনি। জনির কাতর অনুভূতির গভীরতা উপলব্ধি করে অস্বস্তিবোধ করছে ও, অস্বস্থিবোধ করছে এই সন্দেহ করে যে এই কাতরতার উৎস ভীতিও হতে পারেন তার বিরুদ্ধে চলে যাবেন এই ভীতি। অথচ কারও কথায় প্রভাবিত হয়ে কখনই কোন কারণে কারও বিরুদ্ধে চুলে যান না ডন। স্নেহ ভালবাসার ব্যাপারেও ডন শুধু নিজের ইচ্ছেয় পরিচালিত হন।

অবস্থা অতটা খারাপ নয়, জনিকে বলল ও! ডন জানিয়েছেন ওলটস তোমার বিরুদ্ধে যাই করুক না কেন, সবই তিনি বাতিল করতে পারবেন। বলেছেন, প্রায় নিশ্চিত ভাবে ধরে নিতে পারো পুরস্কারটা তুমিই পাবে। কিন্তু তিনি মনে করেন, পুরস্কার পেলেই তোমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। তিনি জানতে চেয়েছেন, তুমি নিজেই একজন প্রযোজক হবার মত যোগ্যতা এবং সাহস রাখো কিনা। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত একটা ছবি বানাতে পারবে?

দুই চোখে অবিশ্বাস নিয়ে কয়েক সেকেণ্ড তাকিয়ে থাকল জনি। কিভাবে? কিভাবে তা সম্ভব? কিভাবে ডন আমাকে পুরস্কারটা পাইয়ে দিতে পারেন?

তীক্ষ্ণ গলায় বলল হেগেন, এটাই বা তুমি এত সহজে বিশ্বাস করতে পারছ কিভাবে যে ওলটস যা পারবে তোমার গড ফাদার তা পারবেন না? আমাদের চুক্তির অপর অংশ সম্পর্কে তোমার মনে আস্থার ভাব আনা দরকার, তাই কথাটা তোমাকে না বলে পারছি না। দেখো, কথাটা যেন দুকান না হয়। তোমার গড ফাদার জ্যাক ওলটসের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাবান। এর চেয়ে আরও অনেক কঠিন পরিবেশেও তার প্রভাব আর ক্ষমতার তুলনা হয় না। তোমাকে তিনি পুরস্কারটা পাইয়ে দেবেন-কিভাবে? তিনি পরিচালনা করেন বরং বলা উচিত, যারা এই শিল্পের ইউনিয়নগুলো পরিচালনা করে, তিনি তাদেরকে পরিচালনা করেন। যারা ভোট দেয় তাদের সবাই, বা তাদের প্রায় সবাই তার কথা মেনে চলে। তবে, অবশ্যই তোমাকেও ভাল হতে হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মোগ্যতা তোমারও থাকতে হবে। জ্যাক ওলটসের চেয়ে অনেক অনেক বেশি বুদ্ধি রাখেন তোমার গড ফাদার। সংশ্লিষ্ট লোকদের কাছে গিয়ে তিনি তাদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলবেন না যে, জনি ফন্টেনকে ভোট দাও তা না হলে চাকরি হারাও। যেখানে গায়ের জোর খাটে না বা খাটালে মানুষের মন আহত হয় সেখানে তিনি এসব প্রয়োগ করেন না। তিনি এদেরকে তোমার পক্ষে ভোট দেওয়াবেন, কারণ এরা তোমাকেই ভোট দিতে চায়। কিন্তু তা এরা চাইবে না, যদি না তোমার গড ফাদার এ-ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। এখন তুমি আমার কথায় পূর্ণ আস্থা রেখে বিশ্বাস করো, পুরস্কারটা তুমিই পাচ্ছ। মনে রেখো, তিনি না চাইলে সারা জীবন চেষ্টা করলেও ওটার নাগাল পাবে না তুমি।

ঠিক আছে, বলল জনি। তোমার ওপর বিশ্বাস রাখছি আমি। একজন প্রযোজক হবার যোগ্যতা আর সাহসও আমার আছে, কিন্তু টাকা নেই। কোন। ব্যাংক টাকা পয়সাও ধার দেবে না আমাকে। একটা ছবি করা তো আর মুখের কথা নয়, লক্ষ লক্ষ ডলার লাগে।

শান্ত ভঙ্গিতে বলল হেগেল, পুরস্কারটা পাবার পর একসাথে নিজের তিনটে ছবি তৈরি করার পরিকল্পনা হাতে নাও। এই ব্যবসায় জড়িত সেরা লোকদেরকে ভাড়া করবে-সেরা টেকনিশিয়ান, সেরা তারকা, যাকে যাকে দরকার। তিন থেকে পাঁচটা ছবির জন্যে প্রস্তুতি নেবে তুমি।

পাগল হয়ে গেছ! বলল জনি! অতগুলো ছবি করতে প্রায় দুকোটি ডলার দরকার।

যখন দরকার হবে টাকাটার, বলল হেগেন, আমার সাথে যোগাযোগ কোরো। টাকা মোগান দেবার জন্যে ক্যালিফোর্নিয়ার কোন ব্যাঙ্ককে অনুরোধ করতে হবে তা জানিয়ে দেব তোমাকে আমি চিন্তার কিছু নেই, ছবির জন্যে টাকা তো দেয়ই ওরা। সঙ্গত কারণ দেখিয়ে সাধারণ নিয়ম মত টাকাটা চাইবে তুমি, ঠিক যেভাবে ব্যবসায়ীরা চেয়ে থাকে। তুমি চাইলেই দেবে ওরা। তবে তার আগে আমার সাথে একবার দেখা করতে হবে তোমাকে দেখা করে টাকার অঙ্ক আর, প্ল্যানটা জানাতে হবে আমাকে। ঠিক আছে?

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে কি যেন ভাবল জুনি। তারপর খুব ধীর গলায় জানতে চাইল, এ প্রসঙ্গে আর কিছু বলবে তুমি?

হাসল হেগেন। বলল, তার মানে, জানতে চাইছ, দুকোটি ডলার ধার পাবার বিনিময়ে তোমাকে দিয়ে কোন কাজ আদায় করে নেয়া হবে কিনা? অবশ্যই হবে। জনি, কিছু বলে কিনা শোনার জন্যে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুল সে। ডন যদি এর বিনিময়ে কিছু চাও, তোমার পক্ষে দেয়া সম্ভব জেনেই তা চাইবেন।

ব্যাপারটা যদি গুরুতর ধরনের কিছু হয় তাহলে স্বয়ং গড ফাদারের মুখ থেকে শুনতে চাই আমি, বলল জনি। তোমার বা সনির মুখের কথা আমি শুনব না।

জনির বুদ্ধিমত্তা লক্ষ করে আশ্চর্য হয়ে গেল হেগেন। নাহ, ছোকরা একেবারে হাঁদা নয়। এটুকু বেশ ভালই বোঝে যে ডন ওকে অত্যধিক ভালবাসেন, তাঁর বিবেচনা বোধও প্রখর, সুতরাং তিনি ওকে এমন কিছু করতে বলবেন না যা ওর জন্যে বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে কিন্তু সনির পক্ষে তা বলা সম্ভব। একটা ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি তোমাকে, তোমার গড ফাদার সনি আর আমাকে কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন আমরা যেন তোমাকে এমন কোন ব্যাপারে না জড়াই যাতে আমাদের ভুলে প্রকাশ্যে তোমার বদনাম হয়। এ-ধরনের কোন কাজ তিনি নিজেও কখনও করবেন না। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, কোন কাজ যদি তিনি তোমাকে দিয়ে করাতে চান, তিনি অনুরোধ করার আগে কাজটা করে দেবার প্রস্তাব তুমিই তাকে দেবে।

হাসল জনি। বলল, ঠিক আছে।

হেগেন বলল, তোমার ওপর আস্থার কোন অভাব নেই ডনের। তার ধারণা, তোমার যা বুদ্ধি তাতে ব্যাংক টাকা খাঁটিয়ে বেশ ভাল মুনাফাই লুটবে, এর অর্থ হলো এ থেকে তিনিও টাকা কামাবেন। তারমানে গোটা ব্যাপারটাই একটা ব্যবসা, কথাটা ভুলো না। টাকাগুলো হাতে পেয়ে ঘুড়ির মত উড়িয়ে কাটা খেয়ো না। তুমি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সন্তান হতে পারো, কিন্তু দুকোটি ডলারও ছেলেখেলা ব্যাপার নয়। টাকাটা তোমাকে পাইয়ে দেবার জন্যে কিছু কাঠখড় তাকে তো পোড়াতেই হবে।

তিনি যেন দুশ্চিন্তা না করেন, বলল জনি। জ্যাক ওলটস যদি সিনেমা জগতের প্রতিভা হতে পারে, আমিও পারব।

তোমার গড ফাদারও ঠিক তাই মনে করেন, বলল হেগেন। তুমি কি আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেবে? যা বলতে এসেছিলাম সবই বলেছি। তোমাকে আর বলার কিছু নেই আমার। সমস্ত কাজের জন্যে তুমি যখন কন্ট্যাক্ট সই করতে শুরু করবে, নিজের আইন উপদেষ্টা জোগাড় করে নিয়ো, এর সাথে কোনভাবে জড়িত থাকব না আমি। তবে, যার সাথে যে-কোন ব্যাপারেই চুক্তিতে আলো না কেন, সই করার আগে লেখাগুলো আমি একবার দেখব। অবশ্য, তাতে যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে। ভাল কথা, শ্রমিক আন্দোলন কখনও.তোমার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। এতে তোমার ছবির খরচ বেশ অনেকটা কম।

সতর্কতার সাথে জানতে চাইল জনি, আর কোন ব্যাপারে কি তোমার অনুমোদন লাগবে- স্ক্রিপ্ট, অভিনেতা-অভিনেত্রী, কিংবা আর কোন ব্যাপারে?

এদিক ওদিক মাথা দোলাল হেগেন। না, বুলল সে। হয়তো কোন ব্যাপারে আপত্তি তুলতে পারেনন, কিন্তু তা যদি তিনি তোলেনও, সরাসরিতোমাকেই তিনি জানাবেন। তবে কি ব্যাপারে তিনি আপত্তি তুলতে পারেন তা তো আমি ভেবে পাচ্ছি না। সিনেমা তাকে কোনভাবেই আকৃষ্ট করে না, এ ব্যাপারে তিনি আগ্রহ দেখাবেন বলে মনে হয় না। তাছাড়া কারও ব্যাপারে নাক গলানো তিনি পছন্দ করেন না, আমার অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু তোমাকে বলতে পারি।

গুড, বলল জনি। আমি নিজেই তোমাকে গাড়ি করে পৌঁছে দেব এয়ারপোর্টে। শোনো, গড ফাদারকে আমার কৃতজ্ঞতা জানিয়ো। আমার ইচ্ছা ফোন করে তাকে আমার ধন্যবাদ জানাই, কিন্তু ফোনে তো তাকে কখনও পাওয়াই যায় না। আচ্ছা, ব্যাপারটা কি বলো তো?

কাঁধ ঝাঁকাল হেগেন। ফোনে তিনি কদাচ আসেন। তাঁর কণ্ঠস্বর রেকর্ড হোক তা তিনি চান না। একেবারে নির্দোষ কিছু বলার থাকলেও আর কাউকে দিয়ে বলান, কারণ শব্দগুলো চালাচালি করে অন্য কিছু দাঁড় করাবার ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে ভয় করেন তিনি। আমার অন্তত তাই মনে হয়। যাই হোক, সুযোগ পেলে কর্তৃপক্ষ। একদিন তাঁকে ফাসাবে, এব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তাই তাদেরকে তিনি কোন সুযোগ দিতে চান না।

জনির গাড়িতে চড়ে এয়ারপোর্টে আসছে ওরা। হেগেন ভাবছে, যতটা বাজে বলে ভেবেছিল তার চেয়ে অনেক ভাল লোক জনি ফন্টেন। এরই মধ্যে কিছুটা ভব্যতা শিখেছে সে, গাড়ি করে তাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেবার মধ্যেই প্রমাণিত হয় সেটা। এই ব্যক্তিগত সৌজন্য জিনিসটা ডন নিজে খুব পছন্দ করেন। তাছাড়া, ওর এই ক্ষমা চাওয়াটা পুরোপুরি আন্তরিক, কোন খাদ ছিল না। জনিকে তো আর সে আজ থেকে চেনে না, তাই বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না ভীতি এর উৎস নয়। বেপরোয়া আর দুঃসাহসী বলতে যা বোঝায়, জনি চিরকালই তাই। সেজন্যেই তো। সিনেমা জগতের হোমরাচোমরা আর মেয়েমানুষদেরকে নিয়ে সব সময় গোলমালে জড়িয়ে আছে সে। আঙুলে গোণা যায় এমন দুএকজন লোকের মধ্যে সেও একজন যে উনকে ভয় করে না। জনি আর মাইকেলই বুঝি দুজন লোক হেগেন চেনে যাদের সম্পর্কে এ-কথা বলা যায়। সুতরাং মাফ চাওয়াটায় কোন ভেজাল নেই। আগামী কয়েকটা বছর জনি আর সে পরস্পরকে খুব কাছ থেকে দেখবে। তবে পরবর্তী পরীক্ষাটা পাস করতে হবে জনিকে, তাতেই প্রমাণ হয়ে যাবে কতটা বুদ্ধি রাখে সে। ডনের জন্যে এমন একটা কাজ করে দিতে হবে তাকে যা ডন কখনোই করে দিতে বলবেন না, বা মনে করিয়ে দেবেন না যে কাজটা করা জনির জন্যে চুক্তির একটা অলংঘনীয় শর্ত। সেই কাজটা যে কি তা জনি ফন্টেন নিজের বুদ্ধিতে টের পাবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়, মুচকি হেসে ভাবছে টম হেগেন।

.

হেগেনকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিল জনি। প্লেন আসার অপেক্ষায় থাকতে চাইল ও, কিন্তু হেগেনই ওকে তার সাথে ঘুর ঘুর করতে নিষেধ করে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিল। গাড়ি চালিয়ে সোজা জিনির বাড়িতে চলে এল জনি। ওকে দেখে অবাক হয়ে গেল জিনি। আসলে জিনির বাড়িতে থাকতে চাইছে জনি, নিরিবিলিতে বসে গোটা ব্যাপারটা ভাল করে ভেবে দেখতে চাইছে, কিভাবে কি করতে হবে তার একটা ছক কষে নেবে মনে মনে। জানে, হেগেন ওকে যা বলেছে তার গুরুত্ব অপরিসীম, এখন থেকে আমূল বদলে যাবে ওর জীবন। এক সময় খুব বড় একজন তারকা ছিল ও, কিন্তু আজ মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে সব খুইয়ে অতি সাধারণ নগণ্য একজন লোকে পরিণত করেছে নিজেকে সে। এব্যাপারে কোন ভুল ধারণা নেই তার, নেই নিজের সাথে কোন ছলচাতুরী। সেরা অভনেতার পুরস্কারটা যদি পায়ও সে, কতটুকুই বা লাভ হবে তাতে! ওটা কোন কাজেই আসবে না, যদি না তার কণ্ঠস্বর ফিরে আসে। বড়জোর তার স্থান হবে দ্বিতীয় সারিতে, সত্যিকার কোন ক্ষমতা থাকবে না, খাঁটি কোন সার বস্তু খুঁজে পাবে না কেউ ওর মধ্যে। ওই যে মেয়েটা তাকে অমন কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে প্রত্যাখ্যান করল, সে যদি এখনও সাফল্যের শিখরে থাকত তাহলে কি ওকে এতটা ঠাণ্ডাভাবে ফিরিয়ে দিতে পারত? যাই হোক, ডন তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করলে এবার তাকে কেউ এড়িয়ে যেতে পারবে না, হলিউডের সব রথী-মহারথীদের সারিতে উঠে যাবে সে। রাজা বনে যাবে। আপন মনে হাসছে জনি। ঠাট্টা নয়, সে এমন কি একজন উনও হয়ে উঠতে পারে!

কয়েক হপ্তা, চাই কি আরও বেশি কিছু দিন জিনির সাথে থাকলে মন্দ হয় না। মেয়েদেরকে হয়তো সে রোজই একবার করে বেড়াতে নিয়ে যাবে। এবার সত্যি সত্যি নিজের যত্ন নেবে সে, ছেড়ে দেবে মদ গেলা আর সিগারেট ফোকা। বলা যায় না, গলায় হয়তো আবার শক্তি ফিরে আসবে তার। তা যদি ঘটে, আর এর সাথে ডনের টাকা যোগ হলে, কে তাকে হারায়। আগেকার দিনের রাজা বা সম্রাটদের মত হয়ে উঠবে সে, আজকের আমেরিকায় যতটা সম্ভব। আর এসবের জন্যে তার গলার অবদান না থাকলেও চলবে, দর্শকরা তাকে খুব বড় একজন অভিনেতা বলে মনে না করলেও কিছু এসে যাবে না। এই নতুন সামাজ্য তৈরি হবে পুরোপুরি টাকা দিয়ে, আর কে না জানে টাকা দিয়ে তৈরি সামাজ্যই সবচেয়ে টেকসই আর শক্তিশালী হয়।

গেস্টরুমটা ওকে খুলে দিল জিনি। কোন আলোচনা ছাড়াই ওদের মধ্যে যৌন সমঝোতা হয়ে গেছে। এক ঘরে শোবে না ওরা, পরস্পরের সাথে স্বামী-স্ত্রীর মত আচরণ করবে না। সেই সম্পর্ক আর কোন দিন ফিরে আসতে পারে না ওদের মধ্যে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, বাইরে থেকে গুজব রটিয়ে কলামিস্টরা আর সিনেমার পোকারা ওদের বিয়েটা ভেঙে যাবার সমস্ত দোষ জনির ঘাড়ে চাপালেও, দুজনের মধ্যে ওরা নিজেরা জানে, জনির চেয়ে জিনিই বরং একটু বেশি দায়ী।

 গায়ক আর অভিনেতা হিসেবে জনি যখন খ্যাতির তুঙ্গে তখনও স্ত্রী এবং মেয়েদেরকে শ্রাগ করার কথা মনে আসেনি তার। বড় বেশি ইতালীয় সে, প্রাচীন পন্থী। স্ত্রীর বিশ্বাস ভঙ্গকরাটা, সে তো স্বাভাবিক। ওর যা পেশা তাতে মেয়েদের সান্নিধ্য আর টোপ এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। তার চেয়েও বড় কারণ, মেয়েদেরকে ভাল লাগে ওর। বিশেষ করে অক্ষত যোনি মেয়ে হলে তো কথাই নেই। সবাই জানে কুমারী মেয়ে দেখলে জনিকে ধরে রাখা মুশকিল। ব্যাপারটা নিয়ে সবাই খুব হাসাহাসিও করে। তাদের ধারণা কুমারী মেয়েরা তো আনাড়ী, তাদের নিতম্ব শক্ত রাবারের মত, তালে তালে পাছা দোলাতেই তো শেখেনি তারা। তাছাড়া প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মত সুলিন ঘটাতে একজন কুমারী কতটা সময় নেয় তাও লক্ষ করো। কিন্তু জনির কাছে ব্যাপারটা অন্য রকম। একটা মেয়ে, যে এই প্রথম নিজের ভেতর একজন পুরুষকে গ্রহণ করছে, তাকে চরম পুলক দেয়ার মধ্যে যে আনন্দ আর মহত্র রয়েছে, আর কিসের সাথে তুলনা চলে তার?আহা, পর্দা ছিঁড়ে ভেতরে ঢোকার সে কি পরম তৃপ্তি! দুই পা দিয়ে ওরা যখন তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, কি ভালই না লাগে। আর অন্য ধরনের মেয়ে, যারা ধরি-করি-উড়ি নীতিতে বিশ্বাসী যারা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মত স্থলন ঘটাতে চায়, তাদেরকে মোটেও পছন্দ করে না জনি। এরা তাকে সন্তুষ্ট করতে অপারগ। ওর দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে শেষ পর্যন্ত বনিবনা হলো না, তার কারণ, পুরানো ঢংয়ে ইংরেজি সিটি-নাইন ভঙ্গিতে যৌন কম এত বেশি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল,সে যে আর কোন ভঙ্গির নাম পর্যন্ত শুনতে রাজি হত না। এর ফলে যা হবার তাই হলো, জনি এড়িয়ে যেত। ওকে নিয়ে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করতে শুরু করল সে, নাম রাখল খোকা বাবু, আর চারদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ল যে শুনি ফন্টেন আনাড়ী কিশোরের মত সহবাস করে। হয়তো সে জন্যই গতরাতে ওই মেয়েটা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে, ঢাতে কোন দুঃখ নেই ওর। যা হবার হয়েছে, মেয়েটাও এমন কিছু লোভনীয় ছিল না। যে মেয়ে, সত্যি রতিক্রিয়া পছন্দ করে তাকে দেখলেই চেনা যায়, আর তৃপ্তি দিতেও তাদের জুড়ি নেই। বিশেষ করে সেই সব মেয়েরা যারা এখনও খুব বেশি অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে ও সেই সব মেয়েদের যারা তাদের বারো বছর বয়স থেকেই প্রবেশ করাতে শিখে গেছে আর বিশ বছর বয়সেই সমস্ত রমণ রপ্ত আর হজম করে ফেলেছে, অথচ এখনও এরা সেরা সুন্দরীদের দলে পড়ে, দেখে টেরই পাওয়া যায় না যে এদের দুই উরুর মাঝখানটা নরম কাদার মত পচে থকথকে হয়ে আছে।

ওর বেডরূমে কেক আর কফি নিয়ে এসে লম্বা টেবিলটার উপর রাখল জিনি। দুএক কথায় তাকে শুধু বলল জনি যে কয়েকটা ছবি তৈরির জন্যে প্রয়োজনীয় টাকা ধার দিয়ে তাকে সাহায্য করছে হেগেন, একটু শুনেই আনন্দ উত্তেজনায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল জিনির মুখ। আবার খ্যাতি হবে জনির। আবার জনপ্রিয়তা হবে ওর। কিন্তু ডন কর্লিয়নি কতটা ক্ষমতাবান সে সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই, তাই হেগেনের নিউ ইয়র্ক থেকে ছুটে আসার তাৎপর্যটুকু বুঝতেই পারল না সে। কফি শেষ করার পর তাকে বলল জনি, আজ রাত থেকেই কাজে হাত দিতে যাচ্ছে সে, একে তাকে ফোন করবে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে। আয়ের অর্ধেক যাবে মেয়েদের নামে, বলল ও। দুচোখ ভরা কৃতজ্ঞতা নিয়ে হাসল জিনি, মুখে চুমো খেয়ে শুভরাত্রি জানিয়ে বেরিয়ে গেল কামরা থেকে।

কাঁচের একটা ডিশ ভর্তি ওর প্রিয় মনোগ্রাম করা সিগারেট আর পেন্সিলের মত সরু কালো কিউবান চুরুট রয়েছে, কিন্তু সেদিকে পিছন ফিরে ফোনের দিকে হাত বাড়াল সে। সত্যি মাথা খুলে গেছে ওর। বেস্ট সেলার-এর লেখকের নাম্বারে ডায়াল করছে ও, এই উপন্যাসটার উপর ভিত্তি করেই শেষ ছবিটা তৈরি করাহয়েছে। এর লেখক ওরই সমবয়েসী, অনেক জায়গায় অনেক ধাক্কা খেয়ে, অনেক ভোগান্তির শিকার হয়ে, অনেক বাধা পেরিয়ে এসে তবে নাম করতে পেরেছে। সাহিত্য জগতে তার নাম এখন অতি পরিচিত। হলিউডে গ্নে এসেছিল মহারাজার অভ্যর্থনা আর সমাটের খাতির যত্ন পাবার আশা নিয়ে, কিন্তু সব লেখকের কপালে যা জোটে এর কপালেও তার চেয়ে বেশি কিছু জোটেনিহলিউড তাকে ঠকিয়ে ভূত করেছে, সম্মান তো দেয়ইনি, বরং ছেঁড়া কাগজের মত অবহেলা করেছে। ব্রাডন ডারবিতে এই লেখককে একবার অপদস্থ হতে দেখেছিল জনি। পীনোন্নত পয়োধর হিসেবে সুপরিচিতা এক অপরূপ সুন্দরী অভিনেত্রীর সাথে ডেট ছিল তার, স্বভাবতই একবিছানায় শোবার ব্যাপারেও সমঝোতা হয়েছিল ওদের মধ্যে। কিন্তু ডিনার-এর সময় বিখ্যাত নায়িকাটি তাকে কিছু না বলেইকেটে পড়ে, কারণ, দুচোমুখো একজন কমেডিয়ান তার দিকে আঙুল তুলে তাকে সেই রাতের জন্যে নির্বাচিত করেছিল। এই ঘটনার ফলে চোখ খুলে যায় লেখকের। হলিউডে কার জায়গা কোয়, কার রয়েছে হুকুম দেবার অধিকার, এসব পানির মত পরিষ্কার হয়ে যায় তার কাছে। তার লেখা বই দুনিয়াজোড়া নাম কিনেছে, কিন্তু তাতে কিছু এসে যায় না।, নায়িকা এখানে ছুঁচোমুখো, নেহাত বদ স্বভাবের একজন ফিল্মী লোককেই বেশি পছন্দ

সেই লেখককেই ফোন করছে জনি তার নিউ ইয়র্কের বাড়িতে, বইটাতে ওর জন্যে অমর একটা চরিত্র সৃষ্টি করেছে বলে ধন্যবাদ জানাতে চায়। উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে হতাশ লোকটাকে চাঙা করে তুলল ও, তারপর কথাচ্ছলে জানতে চাইল, তার পরবর্তী উপন্যাসটা কতদূর লেখা হয়েছে, গল্পটা কি নিয়ে। লেখক যখন তার উপন্যাসের বিশেষ আকর্ষণীয় পরিচ্ছেদ-এর অংশ পড়ে শোনাতে শুরু করল ধীরে সুস্থে একটা চুরুট ধরাল জনি। লেখক থামতে বলল ও, চমৎকার! তাড়াতাড়ি শেষ করো, পুরোটা পড়তে চাই আমি। পাণ্ডুলিপির একটা কপি পাঠাবে নাকি আমাকে? আমি হয়তো ভাল দামে বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে পারব ওটা, অন্তত ওলটস তোমাকে যে দাম দিয়েছে তার চেয়ে ভাল দাম পাইয়ে দিতে পারব।

লেখকের আগ্রহের মাত্রা দেখে সন্দেহটা দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত হলো জনির, ওলটস নাম মাত্র কিছু টাকা দিয়ে ভাগিয়ে দিয়েছিল বেচারাকে। ছুটির পর নিউ ইয়র্কে যেতে পারে ও, কথাটা উল্লেখ করে জানতে চাইল, তখন কি লেখক ওর আর ওর কয়েকজন বন্ধুর সাথে ডিনার খেতে আসতে পারবে? পরীর মত সুন্দরী কয়েকটা মেয়েকেও চিনি আমি, ঠাট্টা করে বলল জনি।

হেসে ফেলে লেখক জানাল, ঠিক আছে।

এরপর ছবির পরিচালক আর ক্যামেরাম্যানকে ফোন করল জনি, ছবিতে কাজ করার সময় ওদের সহযোগিতা পেয়েছে, সেজন্যে ধন্যবাদ জানাল। তারপর বলল, ওলটস যে ওর বিরুদ্ধে লেগে ছিল তা সে জানত, তাই ওদের সহযোগিতা পেয়ে আরও বেশি কৃতজ্ঞতা বোধ করছে নে, এবং কখনও যদি কোন ব্যাপারে ওদের কোন উপকার দরকার হয়, তাকে শুধু একবার জানালেই হবে।

সব শেষে সবচেয়ে কঠিন ফোনটা করল জনি জ্যাক ওলটসকে। ছবিতে ওকে অভিনয় করার সুযোগদানের জন্যে ধন্যবাদ জানাল তাকে। সেই সাথে জানাল, যে কোন সময় আবার তার কাজ করে দেবার সুযোগ পেলে মহা আনন্দ লাভ করবে ও। ব্যাপারটা ঘটাবার একমাত্র কারণ, ওলটসকে একটা মস্ত ধোকা দেয়া। এতদিন বড় বেশি সরলতা দেখিয়ে এসেছে ও। কয়েক দিনের মধ্যেই ওর নিজের ছবি প্রযোজনার তৎপরতা শুরু করে দেবে ও, তা টেরও পাবে ওলপস, তখন এই ফোন কনের গূঢ় রহস্য উপলব্ধি করে হতভম্ব হয়ে যাবে সে।

এরপর ডেস্কের পিছনে বসে চট করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফুঁকতে শুরু করল জনি। পাশের টেবিলেই রয়েছে হুইস্কির বোতল কিন্তু হেগেন আর নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে জিনিসটা ছোবে না। সিগারেট খাওয়াও উচিত হচ্ছে না তার। এক অর্থে বোকামি ছাড়া কিছুই নয় এসব, যে কারণেই তার গলায় রোগ হয়ে থাক না। কেন, মদ আর সিগারেট ছেড়ে দিলেই যে উপকার হবে তা হয়তো ঠিক নয়। অন্তত খুব বেশি কিছু উপকার আশা করা বৃথা। দূর ছাই, ভাবছে জনি, নিজের সাথে ছলচাতুরীর কোন মানে হয় না, ছেড়ে দিলে উপকার তো সামান্য একটু হলেও হতে পারে, আর ওই সামান্য উপকারও হাতছাড়া করা উচিত নয় ওর, এখন যখন টিকে থাকার জন্যে যুদ্ধ করার একটা সুযোগ পাওয়া গেছে।

বাড়িটা এখন নিস্তব্ধ। ওর পরিত্যক্ত স্ত্রী আর মেয়েরা ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন সে তার জীবনের সেই ভয়ঙ্কর সময়ের কথা ভাবতে পারে, যখন ওদেরকে শ্রাগ করেছিল সে। শ্রাগ করেছিল একটা বেজন্মা বেশ্যার জন্যে, যে ছিল তার দ্বিতীয়। স্ত্রী। কিন্তু এখন, এই মুহূর্তে ওর কথা মনে পড়ে যেতে খুশির সাথে হাসল জনি, যত যাই হোক, ভাবছে সে, শুধু যে সুন্দরী ছিল তা তো আর নয়, কত দিকে কত ভাল গুণও তো ছিল। আসলে যেদিন সে মন স্থির করে ফেলে যে আর কোন মেয়েকে ঘৃণা করা নয়, আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে, যেদিন সে সিদ্ধান্ত নেয় তার প্রথম স্ত্রী আর মেয়েদেরকে, তার বান্ধবীদেরকে, তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে এবং নতুন বান্ধবীদের মধ্যে শ্যারন মুর পর্যন্ত কাউকেই আসলে সে ঘৃণা করার সামর্থ্য রাখে না, সেদিন থেকেই রক্ষা পেয়েছে তার জীবন।

প্রথম দিকে ব্যাণ্ড-পার্টির সাথে ঘুরে ঘুরে গান করত জনি, তারপর এল রেডিওতে গাইবার সুযোগ। কিছুদিন পর সিনেমার মঞ্চে পঁড়িয়ে গান করার আমন্ত্রণ পেল ও। এই পুরো সময়টা যা খুশি তাই করে বেড়িয়েছে জনি, নিজের খেয়াল খুশি মত উপভোগ করেছে জীবনটাকে। কোন মেয়েকে মনে ধরেছে, হাত বাড়িয়েছে তার দিকে, দখল করতেও ব্যর্থ হয়নি কখনও। সেই সাথে মদ গিলেছে দেদার। কিন্তু তার ব্যক্তিগত অর্থাৎ পারিবারিক জীবনকে এসবের কারণে প্রভাবিত হতে দেয়নি কখনও। এরপরই মোহিনী নারী মার্গট অ্যাশটনের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ল সে। সুন্দরী হিসেবে দুনিয়া জোড়া খ্যাতি, তার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেল জনি, পাগল হয়ে উঠল। সুনাম থোয়াল সে, গলা ভাঙল, ধ্বংস করল পারিবারিক জীবন, একটা অমানুষ হয়ে উঠে হেয় করল নিজেকেই। তারপর এমন একদিন এল, যখন নিজের বলে আর কিছুই রইল না তার, একা এবং নিঃস্ব হয়ে গেল সে।

তবে একটা কথা, উদারতা আর বিবেচনাবোধ কখনও হারায়নি সে। প্রথম স্ত্রীকে ত্যাগ করার সময় যা কিছু ছিল তার, সবই দান করেছে। এমন ব্যবস্থা। করেছিল যাতে তার প্রত্যেকটি ছবি, প্রতিটি রেকর্ড, প্রতিটি ক্লাব অনুষ্ঠান থেকে যা। আয় হবে তা থেকে একটা অংশ মেয়েরাও পাবে। আর যখন সে ধনী এবং খ্যাতির শীর্ষে ছিল তখন প্রথম স্ত্রীর কোন দাবি মেটাতেই সে অস্বীকার করেনি। জিনির সবগুলো ভাই আর বোনকে সাহায্য করেছে সে, সাহায্য করেছে ওর মা আর বাবাকে। এমন কি জিনির বান্ধবী ছিল যারা তাদেরকেও আর্থিক সাহায্য করতে ইতস্তত করেনি সে। ইচ্ছা না থাকা সত্তেও জিনির দুই বোনের বিয়েতে গান গেয়েছে, না গাইলে মনে দুঃখ পাবে জিনি, তাই। একটা মাত্র জিনিস, শুধু নিজের ব্যক্তিত্ব ছাড়া আর সব কিছুই প্রথম স্ত্রীকে বিলিয়ে দিয়েছিল সে।

তারপর যখন নামতে নামতে একেবারে তলিয়ে যাবার পর্যায়ে পৌঁছে গেল সে, যখন আর অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছে না, যখন আর গাইতে পারছে না, যখন তার দ্বিতীয় স্ত্রী তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তখন সে তার প্রথম স্ত্রী আর মেয়েদের সাথে কয়েকটা দিন কাটাবার জন্যে এল। সেই সময়, এক রাতে, নিজের উপর সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে ফেলল সে, স্ত্রীর করুণার উপর ছেড়ে দিল নিজেকে। একটা রেকর্ডিং শুনতে গিয়েই ঘটল বিপত্তিটা, এমন বিদঘুঁটে শোনাল গলাটা যে রাগে দিশেহারা হয়ে অভিযোগ করল, সাউণ্ড টেকনিশিয়ানরা ইচ্ছা করে নষ্ট করেছে রেকর্ডটা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টের পেল সে, গলদটা তার নিজেরই, বর্তমানে এই-ই দাঁড়িয়েছে তার গলার অবস্থা। মাস্টার রেকর্ডটা আছড়ে ভাঙল সে, এবং স্থির করল আর কখনও গাইবে না। এত লজ্জা আর দুঃখ পেয়েছিল যে কনি কর্লিয়নির বিয়ের আগে পর্যন্ত কোথাও আর গায়নি সে।

ওর দুর্দশার সমস্ত বিবরণ শোনার পর জিনির চেহারা যা দাঁড়িয়েছিল, কখনও ভুলবে না জনি। জিনির মুখে সেই ভাবটুকু মাত্র এক সেকেণ্ড স্থির হয়েছিল, কিন্তু ওই এক সেকেণ্ডের মধ্যেই যা দেখেছে জনি চিরকাল মনে রাখার জন্যে যথেষ্ট। বিদ্যুৎ চমকের মত নির্মম উল্লাস আর আনন্দময় সন্তুষ্টি ঝিলিক দিয়ে গিয়েছিল তার চেহারায়। এতগুলো বছর ওকে জিনি সৃণ করে এসেছে, হঠাৎ বুঝতে পেরেছিল জনি। অবশ্য দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে ঠাণ্ডা ভঙ্গিতে নরম সুরে সহানুভূতি জানাতে ভুল করেনি জিনি। এর পরের কটা দিন মানসিক শান্তি পাবার জন্যে ওর অতি প্রিয় তিনটে মেয়ের কাছে যাওয়া আসা শুরু করে সে। বেশ কয়েক বছর ধরে এদের আদর-যত্ন নিচ্ছে সে, ওর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী এরা, শখ হলে মাঝে মধ্যে পালা করে শোয়, এই মেয়েগুলোর জন্যে তার ক্ষমতা অনুযায়ী যত রকম সাহায্য করা সম্ভব সব করেছে সে। কয়েক লক্ষ ডলার মূল্যের উপহার, লোভনীয় চাকরি, সাধ্য মত দিতে কিছুই বাকি রাখেনি। অথচ এদের মুখেও জিনির মত সেই একই নির্মম উল্লাস আর বিকৃত আনন্দ দেখতে পেয়েছে জনি।

ঠিক এই সময় বুঝতে পেরেছিল সে, একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে তাকে। হলিউডের আর সরু সফল প্রযোজক, লেখক, পরিচালক, অভিনেতাদের মত একজন হতে পারে সে, যারা সুন্দরী মেয়েদেরকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ঘৃণ্য লোলুপতার সাথে চুটিয়ে ভোগ করে চলেছে। ইচ্ছা করলে টাকার ক্ষমতা খাঁটিয়ে, প্রভাব প্রয়োগ করে মেয়েদেরকে কাছে টানতে পারে সেও, তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে ভেবে। সজাগ থাকতে হবে তাকে, সজাগ থাকতে হবে কখন না জানি তাকে ওরা ছেড়ে চলে যায়। অথবা, মেয়েদেরকে ঘৃণা না করে তাদের উপর বিশ্বাস বজায় রাখতে পারে সে।

আসল কথাটা জানা আছে তার, মেয়েদেরকে ভাল না বেসে থাকতে পারবে না সে, হোক তারা বিশ্বাসঘাতক, প্রবঞ্চক তবু তাদেরকে ভালবাসতে হবে, তা নাহলে অন্তরের খানিকটা মরে যাবে তার। দুনিয়ায় যাদেরকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসে সেই তারাই ওর দুর্দশা আর লাঞ্ছনা দেখে মনে মনে উল্লসিত হয়ে ওঠে, কিন্তু তাতেও কিছু এসে যায় না তার। ওরা ওই রকমই, সুতরাং মেনে না নিয়ে উপায় কি! শুধু যৌন সম্পর্ক ছাড়া আর সব ব্যাপারে তারা ওকে ঠেকায়, ওর সাথে। বেঈমানী করে, তবু এসব গ্রাহ্য করে না ও। প্রেম করে সবার সাথে, দামী উপহার কিনে দেয়, ওর সর্বনাশ দেখে ওরা আনন্দ পেলে ব্যথা পায়, কিন্তু তা গোপন করে রাখে, কাউকে জানতে দেয় না। বরং ওদেরকে ক্ষমা করে দেয়, কারণ জানে, এতদিন ওদেরকে ফাঁকি দিয়ে এসেছে সে, ওকে বেঁধে ফেলার ওদের আশায় বালি ছড়িয়ে এসেছে, অথচ ওদের কাছ থেকে সেবা, আদরযত্ন, ভালবাসা গ্রহণ করতে আপত্তি করেনি কখনও। সুতরাং প্রতিশোধ তো এখন ওরা নেরেই। কিন্তু ওদের সাথে অন্যায় আচরণ করেছে বলে নিজেকেও এখন অপরাধী লাগে না তার। জিনির সাথে অন্যায় আচরণ করেছে বলেও কোন অপরাধবোধ নেই তার মধ্যে, বরং দাবি করে থাকে তার মেয়েদের বাবার আসন থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া চলবে না। আবার যে জিনি বিয়ে করবে সেটিও হবে না-তাকে, পরিত্যক্তা হয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে, এসব কথা জিনিকে জানাতেও কুণ্ঠাবোধ করে না সে। সাফল্যের চূড়া থেকে পতনের পরও এই ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আগের জেদ আর ইচ্ছা অটুট রেখেছে সে। মেয়েদেরকে আঘাত দেয়, কিন্তু গায়ের চামড়া এত মোটা করে নিয়েছে যে ভাল-মন্দ কিছুই অনুভব করে না।

প্রচণ্ড ক্লান্তিতে ভেঙে পড়তে চাইছে শরীর, শুয়ে পড়তে ইচ্ছা করছে ওর, তবু মনের পর্দা থেকে কোনমতে সরছে না একটা স্মৃতি। চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে এখনও নিনোর সাথে গান করার দৃশ্যটা। আচমকা বিজলী চমকে উঠল তার মনের পর্দায়, এক নিমেষে বুঝতে পারল, তাকে দিয়ে কি কাজ করিয়ে নিতে চাইছেন তার গড ফাদার, কি করলে তিনি সব চেয়ে খুশি হরেন। ঝর্ট করে হাত বাড়িয়ে ফোনের রিসিভারটা তুলে নিল্প জনি। অপারেটরকে ডেকে নিউ ইয়র্কের যোগাযোগ চাইল।

সনি কর্লিয়নির সাথে কথা বলে নিনো ভ্যালেন্টির ফোন নম্বর চাইল জনি। অপরপান্তে এল নিনো। সব সময়ের মত এখনও মাতাল হয়ে রয়েছে নিনো।

অ্যাই, নিনো, বল দেখি, এখানে আমার কাছে এসে কাজ করতে কেমন লাগবে তোর? বলল জনি। খুব বিশ্বাসী একজন লোক দরকার আমার।

ব্যঙ্গ করার এই মহা সুযোগটা ছাড়ল না নিনো। ঠাট্টার সুরে বলল, ঠিক বুঝি না, জনি,– আমার এই ট্রাক ড্রাইভারির চাকরিটাই বা মন্দ কি! রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে পাড়ার বউগুলোর সাথে রঙ-তামাশা করি, হপ্তা শেষ হওয়া মাত্র কড়কড়ে দেড়শো ভলার পকেটে খুঁজি। এর চেয়ে বেশি কিইবা দিতে পারবি তুই আমাকে?

শুরুতে পাঁচশো ডলার তো দিতেই পারব, বলল জনি। উপরি পাওনা হিসেবে সুন্দরী অভিনেত্রীদের সাথে অবাধ মেলামেশা আর যত খুশি ডেট, কেমন লাগবে? আর আমার দেয়া পাটিগুলোতে তোক হয়তো গান গাইতেও হতে পারে।

সত্যি বলছিস? শুনতে তো মন্দ লাগছে না। ব্যাপারটা তাহলে একটু ভেবে দেখতে হয়। তবে, আমার উকিল, অ্যাকাউন্টেন্ট, ট্রাকের হেলপার এদের সাথে আলোচনা না করে তো কিছু বলা সম্ভব নয়, দেখি কি পরামর্শ দেয় ও আমাকে।

ফের যদি ঠাট্টা করবি, কান ধরে ছিঁড়ে দেব। শোন, নিনো, তোকে আমি চাই এখানে। প্লেনে করে কালই চলে আয় তুই। এসে হপ্তায় পাঁচশো ডলার বেতনের একটা এক বছরের চুক্তিপত্রে সই করে যা। এতে তোরই লাভ হবে, কারণ, পরে যদি তুই আমার সবচেয়ে প্রিয় মেয়েমানুষটাকে ভাগিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাস, আর আমি তোর চাকরি খেয়ে দিই, তবু অন্তত এক বছরের বেতন তো পাবি! ঠিক হ্যায়? রাজি?

অনেকক্ষণ কোন কথা বলছে না নিনো। তারপর জানতে চাইল সে, অ্যাই, জনি, তুই আমার সাথে ঠাট্টা করছিস তাই না? নেশার ঘোর কেটে গেছে তার।

এই, শালা, তোর সাথে কোন দুঃখে ঠাট্টা করতে যাব আমি। বলল জনি। শোন, নিউ ইয়র্কে আমার এজেন্টের অফিস আছে, ওখানে চলে যা তুই। ওরাই তোকে প্লেনের টিকিট আর টাকা পয়সা যা লাগে দিয়ে দেবে, বুঝলি? কাল সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন করে সব কথা ওদেরকে জানানোই আমার প্রথম কাজ হবে। বুঝতে পারছিস তো? আর এখানের এয়ারপোর্টে একজনকে পাঠার, সেই তোকে নিয়ে আসবে আমার কাছে। কেমন?

এবারও অনেকক্ষণ কথা বলছে না নিনো। তারপর আশ্চর্য স্থির, সংযত কণ্ঠে কিন্তু অনিশ্চিত ভঙ্গিতে বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *