২.২ ছোট বেসরকারী হাসপাতাল

০২.

এটা একটা ছোট বেসরকারী হাসপাতাল, ভিতরে ঢোকার একটাই পথ। জানালা দিয়ে নিচে রাস্তার দিকে তাকাল মাইকেল। উঁচু উঠান থেকে সিঁড়িটা রাস্তায় গিয়ে নৈমেছে, রাস্তার এদিক ওদিক কোথাও কোন লোক বা গাড়ি দেখা যাচ্ছে না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলিয়ে বুঝে নিল, সে হাসপাতালের ভিতর কেউ যদি ঢুকতে চায় তাকে ওই একটা প্রবেশ পথ দিয়েই ঢুকতে হবে। কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে, এ-ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই তার। সময়ও হয়ে এসেছে। কামরা থেকে ছুটে বেরিয়ে এল সে, চারটে সিঁড়ির সবগুলো ধাপ টপকে নিচে পৌঁছুল, তারপর সদর দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার সময় লক্ষ করল, পাকা চত্বরটায় কোন গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স নেই।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে ফুটপাথে দাঁড়াল মাইকেল, সিগারেট ধরাবার সময় লক্ষ করুল হাত দুটো একটু একটু কাঁপছে তার। কোটের বোম খুলে ফেলল সে, এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল একটা লাইট-পোস্টের নিচে, যাতে সবাই ওর মুখ দেখতে পায়। বগলে একটা প্যাকেট নিয়ে নাইনথ এভিনিউ থেকে হন হন করে এগিয়ে আসছে এক যুবক, পরনে কষ্যাট জ্যাকেট, মাথা ভর্তি একরাশ আঁকড়া চুল। আলোর নিচে আসতেই তাকে চেনা চেনা লাগল মাইকেলের, কিন্তু এর আগে কোথায় দেখেছে তা স্মরণ করতে পারল না। ঠিক ওর সামনে এসে দাঁড়াল যুবক, হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে প্রকট ইতালীয় সুরে বলল, ডন মাইকেল, আমাকে আপনি চিনতে পারছেন না? আমি এনজো, বেকারী মালিক নাজরিনির সহকারী, তার জামাইও। সরকারকে বলে আমার আমেরিকায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়ে আপনার বাবা আমার মস্ত উপকার করেছিলেন।

করমর্দনের জন্যে এনজের হাতটা ধরল মাইকেল, এখন তাকে চিনতে পারছে ও।

আপনার বাবাকে শ্রদ্ধা জানাব বলে এসেছি, বলছে এনজো। এত রাতে ওরা কি আমাকে ঢুকতে দেবে ভিতরে?

একটু হেসে এদিক ওদিক মাথা, দোলাল মাইকেল, বলল, না, তা দেবে না–তুমি এসেছ সেজন্যে তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তুমি যে এসেছিলে তা আমি ডনকে জানাব। ঝড়ের বেগে, প্রচণ্ড গর্জন তুলে একটা গাড়ি আসছে দেখে সতর্ক হয়ে উঠল মাইকেল, এনজোকে দ্রুত বলল, তুমি বরং শিগগির পালাও। এখানে একটা গোলমাল হবে। পুলিশের ঝামেলায় জড়িয়ে কাজ নেই।

ভয়ে শুকিয়ে গেল এনজোর মুখ। পুলিশেব কুনজরে পড়লে আমেরিকা থেকে বের করে দেয়া হতে পারে-ওকে, হয়তো নাগরিকত্বও পাবে না সে। তবু একচুল নড়ল না, সটান নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ফিসফিস করে ইতালী ভাষায় বলল, যদি গোলমাল বাধে, এখানে দাঁড়িয়ে আপনাকে সাহায্য করতে চাই। গড ফাদারের ঋণ শোধ করার একটা সুযোগ যদি পাই, মন্দ কি?

কথাগুলো হৃদয় স্পর্শ করল মাইকেলের। কেটে পড়ার জন্যে আবার তাড়া লাগাতে যাচ্ছিল, হঠাৎ কি মনে করে ভাবল, না হয়থেকেই যাক না ছোকরা। কাজ হাসিল করার জন্যে সলোমো যাদেরকে পাঠাবে তারা হাসপাতালের সামনে দুজনকে দেখলে হয়তো পিছু হটতেও পারে। একজনকে দেখলে অবশ্যই পিছু হটবে না। এনজোর হাতে একটা সিগারেট গুঁজে দিয়ে সেটা ধরিয়ে দিল মাইকেল। ডিসেম্বরের হাড় কাঁপানো শীতের রাতে লাইটপোস্টের আলোর নিচে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ওরা। বড়দিন উপলক্ষ্যে হাসপাতালের জানালাগুলো সবুজ পাতার মালা দিয়ে সাজানো হয়েছে, হলুদ সার্সিগুলো দুভাগ হয়ে গিয়ে জোড়া চোখের মত, লাগছে, জুল জুল চোখে তাকাচ্ছে ওদের দিকে।

ওদের সিগারেট প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এই সময় নিচু, লম্বা, কালো একটা গাড়ি নাইন এভিনিউ থেকে বাঁক নিয়ে থার্টিয়েথ স্ট্রীটে ঢুকল। ফুটপাথ ঘেঁষে আসছে গাড়িটা, সোজা ওদের দিকে।

প্রায় দাঁড়িয়ে পড়েছে গাড়িটা। সামনের দিকে ঝুঁকে নিচু হলো মাইকেল, উঁকি দিয়ে গাড়ির ভিতরটা দেখতে চেষ্টা করছে। নিজের অজ্ঞাতেই কুঁকড়ে যাচ্ছে তার শরীরটা। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে গাড়িটা, কিন্তু হঠাৎ স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে হুস করে ছুটে গেল। গাড়ির ভিতর থ্রেকে চিনতে পেরেছে ওরা মাইকেলকে। আরেকটা এনজোর দিকে সিগারেট বাড়িয়ে দিল মাইকেল লক্ষ করল, এনজার হাত দুটো কাঁপছে, কিন্তু এখন আর ওর নিজের হাত কাঁপছে না দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল সে।

সিগারেট ফুঁকছে দশ মিনিটও হয়নি, আচমকা রাতের বাতাস চিরে তীক্ষ্ণ সুরে বেজে উঠল পুলিশের সাইরেন। নাইনথু এভিনিউয়ের মোড়ে একটা টহলদার পুলিশ কারের নাক দেখা গেল, এত দ্রুত বাক নিচ্ছে য়ে টায়ারের সাথে রাস্তার প্রচণ্ড ঘ লেগে বিকট শব্দে গোটা এলাকা সচকিত হয়ে উঠল। য্যাচ করে কে কবে হাসপাতালের সামনে থামল কারটা। ওটার পিছনে এসে দাঁড়াল আরও দুটো স্কোয়াড কার। হাসপাতালের গেটের সামনে ইউনিফর্ম পরা পুলিশের ভিড় লেগে গেল। স্বস্তির হাঁফ ছাউল মাইকেল। মনে মনে প্রশংসা করল সনির ভাবল, পুলিশে খবর পাঠাতে দেরি করেনি ও। লাইটপোস্টের নিচ থেকে ভিড়টার দিকে এগোল সে।

যেন সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, মাইকেলকে নড়তে দেখেই দুদিক থেকে স্যাঁত করে এগিয়ে এসে ওর দুটো হাত চেপে ধরল দুজন পুলিশ। আরেকজন ওকে সার্চ করতে শুরু করল। ওদিকে ভিড় ঠেলে দ্রুত এগিয়ে আসছে একজন পুলিশ ক্যাপ্টেন, লোকটা যেমন লম্বা তেমনি চওড়া, চেহারায় রগচটা ভাব, সবাই তাকে, সসম্মানে পথ ছেড়ে দিচ্ছে। অমন প্রকাণ্ড শরীর নিয়ে এমন ক্ষিপ্রতার সাথে হাঁটছে, দেখে অবাক হয়ে গেল মাইকেল। সোনালী ফিতে বসানো টুপির নিচে পাকা চুল দেখা যাচ্ছে। কাঁচা গরুর মাংসের মত লাল মুখটা। সোজা এগিয়ে এসে মাইকেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, তোমার মত সব হারামী গুণ্ডাকে হাজতে ভরতে পেরেছি বলে মনে করেছিলাম, এখন দেখছি ভুল হয়েছে আমার। কোথাকার মস্তান তুমি, এখানে কোন মতলবে?

ওর কাছে কোন অস্ত্র নেই, ক্যাপ্টেন, মাইকেলের পাশ থেকে একজন পুলিশ জানাল।

কোন কথা বলছে না মাইকেল। আবেগ বা ভাবের কোন চিহ্নমাত্র নেই ওর চেহারায়, শুধু ইস্পাতের মত নীল চোখের তীক্ষ্ণ কিন্তু ঠাণ্ডা দৃষ্টি দিয়ে দেখছে ক্যাপ্টেনকে।

ডনের ছেলে, মাইকেল কর্লিয়নি ও, সিভিল ড্রেস পরা একজন ডিটেকটিভ বলল।

বাবাকে পাহারা দিচ্ছিল গোয়েন্দারা, তারা হঠাৎ গেল কোথায়? কে সরিয়েছে তাদেরকে? মৃদু, শান্ত গলায় জানতে চাইল মাইকেল।

প্রচণ্ড রাগে টকটকে লাল হয়ে উঠল ক্যাপ্টেনের মুখ। ব্যাটা বদমাশ, গুণ্ডা, স্পর্ধা তো কম নয়। হুংকার ছেড়ে বলল ক্যাপ্টেন, শালা হারামী, আমার কাছে জুবাবদিহি চাও? নরকের কীট যত, সব গুণ্ডারা কে কাকে খুন করল না করল তাতে আমার বয়েই গেল। সে-ক্ষমতা যদি থাকত আমার, তোমার ওই স্বনামধন্য বাপকে বাঁচাবার জন্যে একটা আঙুলও তুলতাম না যাও, এবার ভাগো এখান থেকে। ফের যদি ভিজিটিং আওয়ারের আগে বা পরে এখানে দেখি তোমাকে, হাড় গুড়ো করে ফেলব।

একদৃষ্টিতে, গভীর মনোযোগর সাথে এখনও ক্যাপ্টেনকে লক্ষ করছে মাইকেল। লোকটার কথায় একটুও রাগ হয়নি ওর। মাথার ভিতর শুধু ঝড়ের গতিতে চিন্তা চলছে। তবে কি ওই প্রথম গাড়িটায় সনোযো ছিল, ওকে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গেছে সে? এও কি সম্ভব যে সেই ফোন করে ক্যাপ্টেনকে বলেছে-ক্যাপ্টেন, তুমি কোন কাজেরই নও, কর্লিয়নি পরিবারের লোকেরা এখনও হাসপাতালের আশপাশে রয়েছে। এজন্যেই কি টাকা দেয়া হয়েছে তোমাদেরকে? গোটা ব্যাপারটাই পূর্বপরিকল্পিত, সনির এই কথাটাই কি তবে ঠিক? হ্যাঁ, ভাবছে মাইকেল, কাঁটায় কাঁটায় মিলে যাচ্ছে।

এতসব চিন্তা করেও মাথা ঠাণ্ডা রেখেছে মাইকেল। মৃদু শান্ত কণ্ঠে ক্যাপ্টেনকে জানাল, আগে তুমি বাবার কামরার চারদিকে পাহারা বসাও, তা নাহলে এখান থেকে যাচ্ছি না আমি।

ঝট করে পাশে দাঁড়ানো ডিটেকটিভের দিকে তাকাল ক্যাপ্টেন, ইঙ্কার ছেড়ে বলল, একে গ্রেফতার করো, ফিল।

ইতস্তত করছে ডিটেকটিভ। …মানে, ওর কাছে অস্ত্র পাওয়া যায়নি, ক্যাপ্টেন। যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়ে সুনাম কিনেছে, তাছাড়া এমনিতেও শান্ত প্রকৃতির ছেলে, কখনও কোন বেআইনী ঝামেলায় নিজেকে জড়ায়নি। এ নিয়ে কড়া সমালোচনা হতে পারে খবরের কাগজে।

মারমুখো হয়ে ডিকেটটিভের দিকে ফিরল ক্যাপ্টেন, রাগে অন্ধ হয়ে গেছে। ওকালতি করতে বলিনি, এই হারামজাদাকে গ্রেফতার করতে বলেছি তোমাকে, ফিল।

এখনও সম্পূর্ণ শান্ত মাইকেল। রাগের সাথে নয়, হিমশীতল বিদ্বেষের সাথে মৃদু গলায় বলল ও, বাবাকে শেষ করার জন্যে সলোযো তোমাকে কত টাকা দিয়েছে, ক্যাপ্টেন?

মাইকেলের দিকে ফিরল ক্যাপ্টেম। ওকে ধরো, মাইকেলের দুপাশে দাঁড়ানো ডিটেকটিভদের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে উঠল সে।

মাইকেল অনুভব করল দুই জোড়া হাত ওর শরীরটাকে পেঁচিয়ে ধরেছে শক্ত করে। দেখতে পাচ্ছে ক্যাপ্টেনের পাকানো মুঠো ধনুকের মত বাঁকা হয়ে এগিয়ে আসছে ওর মুখের দিকে। মাথাটা সরিয়ে নেবার চেষ্টা করল ও, নাকে না লেগে ঘুষিটা লাগল চোয়ালের হাড়ে। মাথার ভিতরটা যেন বিস্ফোরিত হলো ওর, রক্ত আর ছোট ছোট হাড়ের কুঁচিতে ভরে গেছে মুখের ভিতরটা, সেগুলো যে দাঁতের টুকরো, বুঝতে পারল মাইকেল। মাথার একটা দিক তেকোণা আলুর মত ফুলে উঠেছে ওর। শক্তি পাচ্ছে না পায়ে, পড়েই যাচ্ছিল, কিন্তু ওকে টেনে দাঁড় করিয়ে রাখল পুলিশ দুজন। তবে জ্ঞান আছে এখনও ওর। ক্যাপ্টেন আর ওর মাঝখানে সিভিল ড্রেস পরা সেই ডিটেকটিভ লোকটা এসে দাঁড়াল, অনেকটা ক্যাপ্টেনকে বাধা দেবার ভঙ্গিতে। সে বলল, হায়হায়, ক্যাপ্টেন, আপনি সত্যিই ওকে মারলেন!

সবাইকে শুনিয়ে চিৎকার করে বলল ক্যাপ্টেন, আমি? অসম্ভব। ওকে আমি চুইনি, ওই তো আমাকে প্রথম মারতে এসেছিল। খেয়াল থাকবে তো? আপত্তি করছিল গ্রেফতার হতে।

একটা লাল কুয়াশার ভিতর দিয়ে সব কিছু ঝাপসা দেখছে মাইকেল। দেখতে পাচ্ছে আরও কয়েকটা গাড়ি রাস্তার ধারে এসে দাঁড়াল, গাড়ি থেকে যারা নামছে তাদের মধ্যে, চিনতেও পারছে একজনকে, লোকটা ক্লেমেঞ্জার উকিল। দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সাথে ক্যাপ্টেনকে বলছে সে, মি. কর্লিয়নিকে পাহারা দেবার জন্যে তাঁর পরিবার একটা বেসরকারী গোয়েন্দা সংস্থাকে ভাড়া করেছে। আমার সাথে এরা যারা এসেছে, এদের সবার কাছে ফায়ার-আর্মসের লাইসেন্স আছে, ক্যাপ্টেন। কাউকে যদি গ্রেফতার করার দুর্মতি হয় আপনার। কাল সকালেই বিচারকের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে আপনাকে।

মাইকেলের দিকে ফিরল উকিল, বলল, আপনার এই অবস্থার জন্যে যে দায়ী তার বিরুদ্ধে আপনি অভিযোগ আনতে চান, মাইকেল কর্লিয়নি?

প্রচণ্ড ব্যথায় চোখে শর্ষে ফুল দেখছে মাইকেল, দুই চোয়াল এক করতে পারছে না, তবু বিড় বিড় করে বলল, আমি হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। দেখল, ওর দিকে ফিরে বিজয়ের উল্লাসে হাসছে ক্যাপ্টেন। জবাবে সেও একটু হাসতে চেষ্টা করল। যে-কোন মূল্যে শরীরের ভিতর প্রবাহিত ঠাণ্ডা আক্রোশের মোটা গোপন করতে চায় সে। ওর মনের ইচ্ছার কথাটা কেউ জেনে ফেলে সতর্ক হয়ে উঠুক তা চাইছে না। ডনও চাইতেন না। হঠাৎ টের পেল, তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারপর আর কিছু মনে নেই মাইকেলের।

.

সকালে ঘুম ভাঙতে মাইকেল দেখল তার চোয়াল দুটো তার দিয়ে বাঁধা হয়েছে, মুখের বাঁ দিকের চারটে দাঁত নেই। বিছানার পাশে বসে রয়েছে হেগেন।

ওষুধ দিয়ে অচেতন করা হয়েছিল আমাকে, টুম? জানতে চাইল মাইকেল।

এমনিতেও তুমি প্রায় বেহুশ হয়ে ছিলে, কিন্তু হাড়ের কুঁচি বের করার সময় খুব বেশি ব্যথা লাগবে বলে ওষুধ দেয়া হয়েছিল তোমাকে।

আর কোথাও চোট পেয়েছি?

না। লং বীচের বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইছে তোমাকে সনি, যেতে পারবে বলে মনে করো?

পারব, বলল মাইকেল। ডন কেমন আছে?

গভীর, লাল হয়ে উঠল হেগেনের মুখ, বলল, সংকটটা বোধ হয় এবারের মত কাটিয়ে ওঠা গেছে। একটা বেসরকারী গোয়েন্দা সংস্থাকে পুরো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, আমাদের লোক ভিড় করে আছে গোটা এলাকায়। গাড়িতে উঠে সব শুনবে।

গাড়ি চালাচ্ছে ক্লেমেঞ্জা, ব্যাক সীটে বসেছে হেগেন আর মাইকেল। মাথাটা দপ দপ করছে মাইকেলের। কাল রাতের রহস্যটা উদ্ধার করতে পেরেছ তোমরা? জানতে চাইল ও।

ফিলিপস বলে যে গোয়েন্দাটা তোমাকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিল সে হলো সনির পোষা লোক, শান্তভাবে রুলছে হেগেন। তার মুখ থেকেই জানা গেছে সব। ক্যাপ্টেনের নাম ম্যাকক্লাস্কি, চাকরিতে ঢোকার পর থেকেই ধুমসে ঘুষ খাচ্ছে। কর্লিয়নি পরিবারও প্রচুর টাকা দিয়েছে ওকে। সাংঘাতিক লোভী নোক, তার ওপর একবিন্দু বিশ্বস্ত নয়। সন্দেহ নেই, অঢেল টাকা দিয়েছে ওকে সলোযো। ভিজিটিং আওয়ার শেষ হবার পরপরই হাসপাতাল থেকে টেসিওর সব লোককে গ্রেফতার করে ও, তারপর অন্য একটা জরুরী কাজের নাম করে ডনের দূরজা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় সরকারী গোয়েন্দাদেরকে। তাদেরকে বলা হয়েছিল, আরেক দল পুলিশ এসে দায়িত্ব নেবে। এসব ওর চালাকি। উনকে খতম করার জন্যে পরিবেশ তৈরি করে দেবে, এর বিনিময়ে সলোহোর কাছ থেকে টাকা খেয়েছিল ও। ফিলিপস-এর ধারণা, নাছোড়বান্দা, ছ্যাচড়া লোক ম্যাকক্লাস্কি, সে আবার চেষ্টা করবে। সন্দেহ, নেই, কাজের আগেই প্রচুর টাকা দিয়ে রেখেছে ওকে সলোমো, তারপর কাজ শেষ হলে আরও অনেক দেবে বলে লোভ দেখিয়ে রেখেছে।

আমার কথা খবরের কাগজে কিছু লিখেছে নাকি?

কেউ চায় না ব্যাপারটা জানাজানি হোক, বলল হেগেন। আমরাও না, পুলিশও না। চেপে যাওয়া হয়েছে।

ভাল হয়েছে। আচ্ছা, এনজো কি কেটে পড়তে পেরেছিল?

পুলিশের গাড়ি থামতেই ছুটে পালায় ও, বলল হেগেন; এখন বলতে চাইছে, সোযোর গাড়ি যাবার সময় ও নাকি তোমাকে কাভার দিয়েছে। তাই কি?

তাই, স্বীকার করুল মাইকেল। ছেলেটা ভাল।

তাহলে তো ওর একটা ভাল ব্যবস্থা করতে হয়, বলল হেগেন। কেমন বোধ করহু তুমি এখন? উদ্বেগ ফুটে উঠল হেগেনের চেহারায়। দেখে তো অবস্থা বিশেষ সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না।

আমি ঠিক আছি, বলল মাইকেল! কি যেন নাম বললে ক্যাপ্টেনের?

ম্যাকক্লাস্কি, বলল হেগেন, তুমি হয়তো এনে খুশি হবে যে শেষ পর্যন্ত কর্লিয়নি পরিবার একটা চাল দিতে পেরেছে। ভোর চারটের সময়, ব্রুনো টাটাগ্লিয়া।

শিরদাঁড়া খাড়া হয়ে গেল মাইকেলের। সে কি! আমাদের না হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার কথা?

শ্রাগ করল হেগেন। হাসপাতালের ব্যাপারটা শক্ত হতে সাহায্য করেছে সনিকে। নিউ ইয়র্ক আর নিউজার্সিতে ছড়ানো আছে আমাদের বাটন-ম্যানরা, রাতের মধ্যে তালিকা তৈরি হয়ে গেল। সনিকে আমি বাধা দেবার চেষ্টা করছি, মাইক! আমি চাই তুমি ওর সাথে কথা বলো। আমি এখনও মনে করি বড় রকমের যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়েও গোটা ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলা যায়।

ঠিক আছে, ওর সাথে কথা বলব আমি, বলল মাইকেল। আজ সকালে আলোচনা হবে নাকি?

হ্যাঁ, বলল হেগেন। উপায় নেই দেখে অবশেষে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে সলোযো, একসাথে বসতে চায়। আয়োজনের খুঁটিনাটি দিকগুলো দেখছে একজন মধ্যস্থতাকারী। এর অর্থ আমাদের জিত হয়েছে। পরাজয় মেনে নিয়েছে সলোযো, প্রাণ নিয়ে পালাতে পারলে বাঁচে এখন। মিটিমিটি হাসছে হেগেন, তারপর আবার বলল, ওরা হয়তো ভেবেছিল দুর্বল হয়ে পড়েছি আমরা, কারণ পাল্টা আঘাত করিনি। কিন্তু টাটাগ্লিয়াদের একটা ছেলে হারিয়ে এখন ওরা বুঝতে পারছে আমরাও সহজে ছেড়ে দেব না। ডনকে আক্রমণ করে মন্ত ঝুঁকি নিয়েছিল ব্যাটা। ওদিকে, পাকা খবর পাওয়া গেছে লুকা সম্পর্কে। ডন যেদিন গুলি খেলেন তার আগের রাতে তাকে ওরা খুন করে। কোথায়, জানো? ব্রুনোর নাইট-ক্লাবে। ভাবতে পারো?

নিশ্চয়ই তাকে ওরা আচমকা আক্রমণ করেছিল, বলল মাইকেল।

.

লং বীচ।

প্রাঙ্গণে ঢোকার মুখে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে পথ আটকে রেখেছে কালো একটা লম্বা গাড়ি। গাড়ির হুডে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন লোক। দুপাশের বাড়ি দুটোর উপরতলার সবগুলো জানালা খোলা, লক্ষ করল মাইকেল। তার মানে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে সনি, সহজে ছাড়বে না সে।

প্রাঙ্গণের বাইরে গাড়ি দাঁড় করাল ক্লেমেঞ্জা, পায়ে হেঁটে ভিতরে ঢুকল ওরা। সেন্ট্রিরা ক্লেমেঞ্জার লোক, তাদের দিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকাল সে-এটাই তার অভিবাদনের ধরন। সেন্ট্রিরাও মাথা ঝাঁকিয়ে স্বীকৃতি জানাল। কেউ হাসল না বা ঠোঁট নাড়ল না। মাইকেল আর হেগেনকে নিয়ে বাড়ির অন্দরমহলে এল ক্লেমেঞ্জা, ওরা বেল বাজাবার আগেই একজন সেন্ট্রি ভিতর থেকে খুলে দিয়েছে দরজা। বোঝা গেল, উপরের কোন একটা জানালা দিয়ে ওদেরকে আসতে দেখেছে সে।

শেষ প্রান্তের অফিস কামরায় ওদের জন্যে অপেক্ষা করছে সনি আর টেসিও। মাইকেলকে দেখে উঠে দাঁড়াল সনি, এগিয়ে এসে ছোট ভাইয়ের মাথাটা দুহাতে ধরে বলল, চমৎকার, অপূর্ব!

ঠেলে বড় ভাইয়ের হাত দুটো সরিয়ে দিল মাইকেল, ধীর পায়ে হেঁটে ডেস্কের সামনে গিয়ে দাঁড়াল, গ্লাসে স্কচ হুইস্কি ঢেলে নিচ্ছে। তার দিয়ে বাঁধা চোয়াল দুটো ভীষণ ব্যথা করছে ওর, হুইস্কি খেলে যদি একটু কমে।

কামরার ভিতর পাঁচজন বসেছে ওরা, কিন্তু পরিবেশটা আর আগের বারের মত নেই। আরও খুশি আর উত্তেজিত দেখাচ্ছে সনিকে। এর অর্থ পরিষ্কার বুঝতে পারছে মাইকেল। সনির মনে এখন আর কোন সংশয় নেই। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সে, সেখান থেকে এখন আর তাকে টলানো যাবে না। গতরাতে সলোযোর ওই অপচেষ্টার পর আর কোন কথা নয়। আপস করার প্রশ্নই ওঠে না।

হেগেনকে বলছে সনি, যে লোকটা মধ্যস্থতা করছে তার কাছ থেকে খবর পেলাম ঈর্ক এখন সরাসরি দেখা করতে চায়। হাসছে সনি। শয়তানটার দুঃসাহস দেখেছ? কণ্ঠে শ্রদ্ধা আর প্রশংসার সুর। কাল অমন তাড়া খেয়ে আজই দেখা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ভেবেছে, ও যা বলৰে আমরা তাই মেনে নেব। কি স্পর্ধা, ভারতে পারো?

সতর্ক ভঙ্গিতে জানতে চাইল হেগেন, উত্তরে কি বলেছ তুমি?

নিঃশব্দে হেসে বলল সনি, এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম, বললাম, অবশ্যই দেখা করব না কেন? ওর যখন সময় হবে তখনই দেখা করব আমরা। আবার হাসছে সনি। আমাদের কোন ব্যস্ততা নেই। একশোর ওপর বাটন-ম্যান ছেড়ে দিয়েছি রাস্তায় আমরা। সলোযো তার পাছার ব্লোয়াটুকু একবার দেখালে হয় শুধু, অমনি তাকে ওরা দুটুকরো কররে। যত ইচ্ছা সময় নিক না ব্যাটা।

স্পষ্ট কোন প্রস্তাব দিয়েছে কি? জানতে চাইল হেগেন।

দিয়েছে বৈকি, বলল সনি, ও যা বলতে চায় তা মাইককে গিয়ে শুনে আসতে হবে। ওর জামিন হবে মধ্যস্থতাকারী লোকটা। চাওয়ার কোন কারণ নেই, জানে ও, তাই নিজের নিরাপত্তার জামিন চায়নি সোযো। সাক্ষাতের আয়োজন ওরাই করবে। ওরাই রাস্তা থেকে মাইককে তুলে আলোচনার জায়গায় নিয়ে যাবে। সোযো সেখানে প্রস্তাবটা ব্যাখ্যা করে শোনাবে মাইককে, তারপর ওকে ছেড়ে দেয়া হবে। ওরা জোর দিয়ে বলছে, প্রস্তাবটা এত ভাল যে আমরা নাকি তা প্রত্যাখ্যান করতে পারব না।

টাটাগ্লিয়াদের খবর? প্রশ্ন করল হেগেন। কনোর ব্যাপারটা নিয়ে কি করবে ওরা?

প্রস্তাবের মধ্যে এ-বিষয়টাও আছে, বলল সনি। টাটাগ্লিয়া পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা সলোযোকে সমর্থন দিয়ে যাবে। তার মানে, আলোচনাকারী দিয়ে বুলে পাঠিয়েছে, ব্রুনোর কথা মন থেকে মুছে ফেলবে ওরা। বাবাকে আহত করার বিনিময়ে এই দাম দিতে হয়েছে রুনোকে। সব নাকি শোধ-বোধ হয়ে গেছে। আবার হাসছে সনি। বিপদে পড়ে কেমন সহনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে, তাই না?

সতর্ক ভঙ্গিতে বলল হেগেন, ওদের বক্তব্য আমাদের শোনা উচিত।

দ্রুত এদিক ওদিক মাথা দোলাচ্ছে সনি। না, না কনসিলিয়রি, এবারটি নয়। ওর বুলার মধ্যে ইতালীয় ভঙ্গি এবং সুর ফুটে উঠল। কৌতুক করার জন্যে বাবার বাচনভঙ্গি নকল করে আবার বলল ও, আর আলোচনা নয়। আর মীটিং নয়। সলোযোরধূর্তামি আর নয়। আমাদের জবাব শোনার জন্যে ওরা যোগাযোগ করলেই, আমি চাই তুমি এক কথায় জানিয়ে দেবে-আমরা সলোযোকে চাই। তা না হলে সামগ্রিক লড়াই। ব্যবসার ক্ষতি হবে, নিরুপায় ভঙ্গিতে কাধ ঝাঁকাল সনি, কিছু করার নেই, সেটুকু মেনে নিতে হবে আমাদেরকে।

কিন্তু আর সব পরিবার সামগ্রিক লড়াইয়ে রাজি হবে না, বলল হেগেন। তাতে সবার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল সনি, ওদের সামনে সহজ একটা পথ খোলা রয়েছে। হয় সলোযোকে তুলে দিক আমার হাতে, নয়তো কর্লিয়নি পরিবারের সাথে লড়াই করার জন্যে তৈরি থোক। একটু থেমে আবার দৃঢ় গলায় বলল সে, আপসের বিষয়ে কোন কথা নয়, টম। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে। এখন তোমার কাজ হলো জেতার জন্যে আমাকে সাহায্য করা। বুঝেছ?

অনুগত ভঙ্গিতে মাথা নত করুল হেগেন। কয়েক মুহূর্তের জন্যে গভীর চিন্তায় ডুবে গেল সে। তারপর মাথা তুলে বলল, থানায় তোমার চর ফিলিপস-এর সাথে কথা হয়েছে আমার। সে বলছে, ম্যাকক্লাস্কি সলোযোর কাছ থেকে মোটা টাকাই শুধু খায় না, তাকে ড্রাগ ব্যবসা থেকে লাভের একটা ভাগও দেয়া হবে। সলোহোর বডিগার্ড হতে রাজি হয়েছে সে। সাথে পুলিশ ক্যাপ্টেন ম্যাককুাস্কি না থাকলে গর্ত থেকে নাকের ডগাও বের করবে না তুর্ক। আলোচনার টেবিলে মাইকেলের সামনে বসবে সে, তার পাশেই বসবে ম্যাকক্লাস্কি। সিভিল ড্রেসে থাকবে সে, সাথে অবশ্যই আগ্নেয়াস্ত্র থাকবে। ব্যাপারটা বুঝছ তো? এভাবে পাহারা নিয়ে থাকলে ওকে তুমি ছুঁতেই পারবে না। নিউ ইয়র্কের একজন পুলিশ ক্যাপ্টেনকে খুন করে আজ পর্যন্ত রেহাই পায়নি কেউ। এমন ঘটনা ভুল করে কেউ যদি ঘটায়, গনগনে আগুন হয়ে উঠবে শহর-ব্বরের কাগজ, আইন বিভাগ, পুলিশ বিভাগ, গির্জা পরিষদ সবাই একেবারে উন্মাদ হয়ে উঠবে। সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা, কল্পনা করা যায় না। শুলো ইতালীয় পরিবার তোমাদের বিপক্ষে চলে যাবে। একঘরে করা হবে কর্লিয়নি পরিবারকে। শুধু তাই নয়, ডনের রাজনীতিক বন্ধুরাও পিঠটান দেবে। আমি বলতে চাই, সব দিক ভালভাবে ভেবেচিন্তে দেখে নিয়ে তারপর কাজে হাত দাও।

আমরাও অপেক্ষা করব, বলল সনি, সনোযোকে তো আর চিরকাল পাহারা দিয়ে রাখতে পারবে না ম্যাকক্লাস্কি।

অস্বস্তিতে ছটফট করছে টেসিও আর ক্লেমেঞ্জা, ঘন ঘন চুরুট ফুকছে। কিছু বলতে চায়, কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। ঘেমে গোল হয়ে যাচ্ছে দুজনেই। সিদ্ধান্ত নিতে একটু যদি ভুল হয়, ওদেরই ছাল ছাড়িয়ে দড়িতে শুকাতে দেয়া হবে।

এতক্ষণে এই প্রথম কথা বলছে মাইকেল, হেগেনের দিকে ফিরে জানতে চাইল সে, হাসপাতাল থেকে বাবাকে এখানে নিয়ে আসা যায় না?

এদিক ওদিক মাথা দোলাল হেগেন। কথাটা প্রথমেই জানতে চেয়েছিলাম আমি। সম্ভব নয়। ডনের অবস্থা খুব খারাপ। নানারকম যত্ন আর বো পেলে তবেই টিকে থাকবেন তিনি। আরও অপারেশনের দরকার হতে পারে। না, অস্তব।

তাহলে আর দেরি করা যায় না, বলল মাইকেল, সলোযোকে এখুনি ধরতে হবে। লোকটা সাংঘাতিক, কখন কি মতলব আঁটে ঠিক নেই। জানো তো, বাবাকে সরাতে পারলেই জিতে যাবে ও। নিজের অবস্থা এখন ভাল নয়, তাই প্রাণের নিরাপত্তা পেলে সাময়িক পরাজয় মেনে নিতে আপত্তি নেই ওর। কিন্তু ওর কপালে যদি শেষ পর্যন্ত মৃত্যু লেখা থাকে, তাহলে ডনকে সরাবার আরেকবার চেষ্টা করবে ও। সাথে ওই ব্যাটা পুলিশ ক্যাপ্টেন থাকলে কখন কি হয় কিছুই বলা যায় না। কোন ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না। সলোযোকে এখুনি সরিয়ে ফেলতে হবে।

চিন্তিতভাবে দাড়ি চুলকাচ্ছে সনি। বলল, ঠিক বলেছিস, মাইক। একেবারে খাঁটি কথা। বাবার ওপর আরেকটা হামলা চালাবার সুযোগ ওকে আমরা দিতে পারি না।

ধীর, মৃদু গলায় জানতে চাইল হেগেন, ক্যাপ্টেন ম্যাকক্লাস্কির কি হবে?

ঠোঁটে অদ্ভুত একটা হাসি নিয়ে ছোট ভাই মাইকেলের দিকে তাকাল সনি, বলল, হ্যাঁ, জবাব দে, জাহাবাজ পুলিশ ক্যাপ্টেনের কি হবে?

আশ্চর্য শান্তভাবে বলল মাইকেল, সন্দেহ নেই, এটা একটা চরম ব্যবস্থা। কিন্তু এমন সময়ও আসে যখন শুধু চরম ব্যবস্থাই সব দিক থেকে ভাল আর একান্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দেয়। চিন্তার ধারা পাল্টাতে হবে আমাদেরকে, ম্যাকাঙ্কিকে মেরে ফেলতে হবে এটা ধরে নিয়েই এগোতে হবে এখন। একটু কৌশলে করতে হবে কাজটা, অর্থাৎ জটিল ভাবে জড়িয়ে ফেলতে হবে ওকে, যেন কেউ মনে করতে না পারে একজন আদর্শ, পুলিশকে খুন করা হয়েছে। সবাই যেন দেখতে পায় একজন দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশ অফিসার উচিত সাজা পেয়েছে, লোকটা নানান বেআইনী কীর্তিকলাপের সাথে জড়িত ছিল। পোষা সাংবাদিক আছে আমাদের, তাদেরকে ডেকে বিবৃতি দেয়া যায়, বিবৃতির সমর্থনে প্রয়োজনীয় প্রমাণও দেয়া। তাতে অনেকটা হালকা হবে পরিবেশ, গরম ভাবটা কমবে। তোমরা কি মনে করো? সবিনয়ে একে একে সকলের দিকে তাকাচ্ছে মাইকেল।

ক্লেমেঞ্জা আর টেসিওর মুখ গভীর, থমথম করছে, কিছু বলতে নারাজ ওরা।

বেড়ে বলেছিস, ভাই, সেই অদ্ভুত বাঁকা হাসিটা মুখে নিয়ে কথা বলছে সনি। থামলি কেন, চালিয়ে যা। ডন তো সব সময় বলতেন, শিশুদের মুখ থেকেই…। থামলি কেন, আরও বল শুনি।

একটু হেসে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে হেগেনও।

মুখটা লাল হয়ে উঠেছে মাইকেলের। কিন্তু রাগ বা দুঃখের চিহ্নমাত্র নেই ওর চেহারায়, ওর বিশ্বাস ও যা বলছে ভেবেচিন্তেই বলছে, এবং কেউ মানুক, বা না মানুক, নিজের কথা শেষ করবে ও। ওদের প্রস্তাব মতই ব্যবস্থা হোক। আমার সাথে কথা বলতে চায়, বেশ তো, যাব আমি। সলোযো, ম্যাকাঙ্কি আর আমি, এই তিনজন ছাড়া সেখানে আর কেউ থাকতে পারবে না। তারিখ দাও আজ থেকে দুদিন পর। ইতিমধ্যে আমাদের গুপ্তচরদের লাগাও, খুঁজে বের করুক তারা মীটিংয়ের জায়গাটা। জানিয়ে দিয়ে বৈঠকটা প্রকাশ্য কোন জায়গায় হতে হবে। আমি কোন ফ্ল্যাটে বা কারও বাড়িতে যেতে রাজি নই। রেস্তোরাঁ বা বার হলে চলবে, ডিনার খাবার ভিড় থাকলে নিরাপদ রোধ করব আমি। এই ব্যবস্থা ওদের মনেও নিরাপত্তা বোধ এনে দেবে। এই রকম আয়োজন করা গেলে এমন কি সলোযোও ঘুণাক্ষরে ভাবতে পারবে না যে ক্যাপ্টেনকে গুলি করতে যাচ্ছি আমরা। প্রথমেই ওরা আমাকে সার্চ করে দেখে নেবে আমার কাছে পিস্তল আছে কিনা, তার মানে তখন আমার কাছে অস্ত্র থাকলে চলবে না। ওদের সাথে আলোচনা চালাচ্ছি, এই সময় কি উপায়ে আমার কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেয়া যায় সেটা ভেবেচিন্তে বের করো তোমরা। তা যদি পারো, ওদের দুজনকেই খতম করব আমি।

অবিশ্বাস ভরা চার জোড়া চোখ অপলক তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও হতভম্ব। হেগেন অবাক হয়নি, কিন্তু বিষণ্ণ দেখাচ্ছে তাকে। শুধু কিউপিড় মুখটা কৌতুকে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সনির।

হঠাৎ পাগলের মত হো হো করে হেসে উঠল সনি। কৃত্রিম নয়, তলপেটের ভিতর থেকে উঠে আসা অট্টহাসি। মাইকেলের দিকে আঙুল তুলে প্রচণ্ড হাসির ফাঁকে কথা বলার চেষ্টা করছে সে। তুই, কলেজের সেরা ছেলে তুই, পারিবারিক ব্যবসার সাথে নিজেকে কখনও জড়াতে চাসনি, আর আজ হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই সেই তুই-ই কিনা দুদুজন লোককে একেবারে খুন করে ফেলতে চাইছিস? তাও শুধু সলোযোকে নয়, তার সাথে একজন পুলিশ ক্যাপ্টেনকেও? কারণ ক্যাপ্টেন ম্যাককুাস্কি তোর মুখ ভেঙে দিয়েছে। দেখ মাইক, ব্যাপারটাকে তুই ব্যক্তিগতভাবে নিচ্ছিস। আহা, বুঝছিস না কেন, এটা ব্যবসা-ব্যক্তিগত কিছু নয়। সামান্য একটা চড় খেয়েই তোর এই অবস্থা? এতেই দুজন লোককে মেরে ফেলতে চাইছিস? যত্তোসব! এই করেই এতগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছিস!

ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুল বুঝল ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও। ওরা ভাবছে ছোট ভাইয়ের এমন একটা দুঃসাহসিক প্রস্তাব শুনে প্রশংসায় হাসছে সনি। তাই ওরাও মাইকেলের দিকে ফিরে তাকে উৎসাহ দিয়ে হাসতে শুরু করল। শুধু হেগেন ব্যাপারটা ধরতে পেরে সাবধান হয়ে গেল, সতর্কতার সাথে সব রকম ভাব মুছে ফেলল মুখ থেকে।

এক এক করে সবার দিকে তাকাল মাইকেল, তারপর ফিরল সনির দিকে। এখনও হাসি থামাতে পারেনি সনি। বলে চলেছে, এ কি শুনছি আমি? আমার ছোট ভাই মাইকেল, তুই, তুই কিনা দুজন লোককে খুন করবি? দেখ ভাই, এ-কাজে তুই কিন্তু কোন পদক পাবি না। বিনিময়ে ওরা তোকে ইলেকট্রিক চেয়ারে বসাবে। জানিস তো? আবার একচোট হেসে নিল সনি। এটা ছেলেমানুষি কোন কাজ নয়, ভাই, এক মাইল দূর থেকে কাউকে গুলি করা নয়। একজন লোকের চোখের সাদা অংশটা পরিষ্কার দেখা গেলে তবে গুলি করতে হয়, মনে আছে, স্কুলে শেখানো হয়েছিল? একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে খুলি উড়িয়ে দিতে হয়, তাতে তোমার সুন্দর আইভি লীগের সটে তার মাথার মগজ ছিটকে এসে লাগে। এক ব্যাটা হাঁদারাম পুলিশ তোমাকে চড় মেরেছে আর তাতেই এইসব করতে ইচ্ছা করছে তোমার? হাসিটা এখনও থামাতে পারছে না সনি।

সবাই তাকিয়ে আছে ওর দিকে, বুঝতে পারছে মাইকেল। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল ও। এবার হাসিটা থামাও তোমার শান্ত কিন্তু আশ্চর্য দৃঢ়তার সাথে বলল মাইকেল। ঋজু ভঙ্গিতে, শক্ত পাথরের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ও। ওর মধ্যে এমন অভাবিত পরিবর্তন দেখে নিমেষে মুখের হাসি মুছে গেল ক্লেমেঞ্জা আর টেসিওঁর। মুহূর্তে বদলে গেছে পরিবেশটা। তেমন বিশালদেহী বা শক্তিশালী নয় মাইকেল, প্রচণ্ড রাগে গনগনে আগুনের মত চেহারা হয়েছে ওর, এখন ওর দিকে তাকিয়ে থাকার জন্যে সাহসের দরকার। সটান অনড় দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গির মধ্যে বিচ্ছুরিত হচ্ছে বিপদের সংকেত। চোখের রঙ হয়ে উঠেছে আশ্চর্য ফিকে বাদামী, মুখের চেহারা সম্পূর্ণ বিবর্ণ। ভয়ে টিপটিপ করছে সবার বুক, এই বুঝি বড় ভাইয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল মাইকেল। বুঝতে বাকি নেই কারও, এখন যদি হাতে অস্ত্র থাকত মাইকেলের, বিপদ হত অগ্রজের।

ধীরে ধীরে মুখের হাসি মান হয়ে গেল সর্নির।

মৃদু, ঠাণ্ডা গলায় জানতে চাইল মাইকেল, তুমি বলতে চাইছ কাজটা আমি করতে পারব না?

হাসির শেষ রেশটুকুও মুখ থেকে মুছে নিয়েছে সনি। আপসের সুর ফুটল তার গলায়, বলল, পারবি না তা বলিনি, আমি জানি তুই পারবি। আমি তোর বক্তব্য শুনে হাসিনি। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কি রকম অদ্ভুত দাঁড়াচ্ছে তাই ভেবে হাসছি। আর কেউ না জানুক, আমি তো জানি আর সব সময় বলেও এসেছি যে কর্লিয়নি পরিবারে তুই-ই সবচেয়ে শক্ত বান্দা, এমন কি ডনের চেয়েও কঠিন পাত্র। বাবার প্রভাব এড়িয়ে একমাত্র তুই-ই তো মাথা তুলে নিজের শক্তির জোরে গড়ে উঠেছিস। ছোট বেলার কথা ভুলে গেছি মনে করেছিস? এমন বেপরোয়া আর মেজাজী ছিলি, বাপরে! আমার সাথে মারামারি করতেও তুই পিছপা হতিস না, অথচ তোর চেয়ে আমি কত বড়। আর ফ্রেডিকে তো হপ্তায় অন্তত একবার না পেটালে তোর পেটের খাবার হজম হত না। কিন্তু এসব কথা জানে কে? সবাই জানে তুই ভীতুর ডিম না হলেও সাদাসিধে গোবেচারা তো বটেই, যাকে বলে ভাল-মানুষ। সলোয়যাও তোকে সেই রকম বোকাসোকা আর নিরীহ কিছু একটা ধরে নিয়েছে, সেজন্যে তাকে দোষ দেয়া যায় না। পারিবারিক হাঙ্গামা থেকে তুই তো সব সময় দূরে সরে থেকেছিস। ম্যাকক্লাস্কিও ধরে নিয়েছে তোর সাথে মুখোমুখি দেখা করলে বিপদের কোন ভয় নেই।

একটু থেমে, গলার স্বর খাদে নামিয়ে আবার বলল সনি, কিন্তু, ওরে হারামজাদা, তুইও একজন কর্লিয়নি! কথাটা শুধু আমারই মনে ছিল, তাই বাবা গুলি খাবার পর থেকে এখানে বসে অপেক্ষা করছি কখন তুই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়বি। অপেক্ষা করছি কখন তুই আমার ডান হাত হয়ে উঠবি। যারা আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করতে চাইছে তুই আর আমি মিলে তাদের সব কটাকে মুছে ফেলব দুনিয়ার বুক থেকে। আমি কি ছাই জানতাম, সেফ চোয়ালে একটা ঘুসির অপেক্ষায় আছে সব? জানলে তো…এবার কি বলবি, বল। সকৌতুকে একটা ঘুসি পাকাল সনি; তারপর আবার বলল, বল, এবার কি বলবি?

কামরার পরিবেশ থেকে আড়ষ্ট ভাবটা কেটে গেছে। মৃদু একটু মাথা নেড়ে বলল মাইকেল, আর কোন উপায় নেই দেখেই এই চরম ব্যবস্থার কথা বলছি আমি, সনি। যে লোক বাবাকে খুন করবে বলে জানি তাকে আর সুযোগ দেয়া যায় না। শুধু আমিই ওর সবচেয়ে কাছে যেতে পারব, তাই না? সুতরাং কাজটা আমার। একজন পুলিশ ক্যাপ্টেনকে খুন করার সুযোগ তোমরা কেউ পাবে বলে মনে হয় না। কাজটা তুমি হয়তো করতে পারো, সনি, কিন্তু তুমি একজনের স্বামী, তার ছেলে-মেয়ের বাবা–তাদেরকে বিপদে ফেলার ঝুঁকি তুমি নিতে পারো না। আরেকটা কারণ, বাবা যতদিন অসুস্থ থাকবেন ততদিন তোমাকেই তো দেখতে হবে পারিবারিক ব্যবসাটাও! বাকি রইলাম আমি আর ফ্রেডি। ফ্রেডি শক খেয়েছে, ওর কথা বাদ দাও। শেষ পর্যন্ত টিকে যাচ্ছি শুধু আমি। আমার কথায় যুক্তির কোন অভাব দেখতে পেলে বলো। চোয়ালে ঘুসির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।

নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সনি, এগিয়ে এসে ছোট ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরল। দরাজ গলায় বলল, কেন কি বলেছিস তাতে আমার কিছুই এসে যায় না। আমাদের দলে আছিস, এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তবে শোন, এতক্ষণ যা বলেছিস তার প্রতিটি কথা খাঁটি। একটাও বাজে কথা বলিসনি তুই। কিরলো, টম?

শ্রাগ করল হেগেন। যুক্তিতে খুঁত আছে তা বলতে পারি না। কারণ আপোসের ব্যাপারে সলোযো আন্তরিক নয়, তার কুমতলব আছে। আমার বিশ্বাস, মুখে যাই কলুক, ডনের ক্ষতি করতে চায় ও। তাই আমিও মনে করি, ওকে খতম করতে হবে। তা করতে হলে যদি পুলিশ মারতে হয়, তাতেও আমার আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু কাজটা যে করবে তার ওপর ভয়ংকর বিপদ নেমে আসবে। তাছাড়া আমি এ-কথাও ভাবছি, কাজটা মাইক করতে পারবে তো?

আমি পারব, মৃদুকণ্ঠে বলল সনি।

ধৈর্য হারিয়ে দ্রুত মাথা নাড়ল হেগেন, বলল, বুঝছ না কেন, বডিগার্ড হিসেবে দশজন পুলিশ ক্যাপ্টেন পাশে থাকলেও তোমাকে কাছে ঘেষতে দেবে না সলোযো। তাছাড়া আপাতত তুমি আমাদের পরিবারের মাথা, তোমাকে এ-ধরনের ঝুঁকি নিতে দিতে পারি না।ক্লেমেঞ্জা আর টেসিওর দিকে তাকাল সে। তোমাদের বাটন ম্যানদের মধ্যে দক্ষ, ওস্তাদ কেউ আছে নাকি, যে কাজটা করতে রাজি হবে? বাকি জীবনটা আর কোন কাজ না করেই সচ্ছলতার মধ্যে কাটাতে পারবে সে।

দুজনের হয়ে উত্তর দিল ক্লেমেঞ্জাই, এমন কেউ নেই যাকে সলোযো চেনে না। দেখলেই সব বুঝে ফেলবে সে। একই কথা আমি বা টেসিও গেলে।

এখনও নাম করেনি, কিন্তু খুব কঠিন পাত্র, এমন কেউ নেই? জানতে চাইল হেগেন।

ক্যাপোরেজিমিরা মাথা দোলাল। ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার ভঙ্গিতে একটু হেসে বলল টেসিও, নোক আমরা দিতে পারি, কিন্তু তা হবে আন্তর্জাতিক খেলায় রংরুট নামাবার মত।

অগত্যা সিদ্ধান্ত দেবার ভঙ্গিতে বলল সনি, মাইককেই যেতে হয় তাহলে। যেতে যদি হয়, ওর যাবার পক্ষেই লক্ষ লক্ষ কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কারণ, ওকে ওরা আনাড়ী বলে মনে করছে। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, কাজটা করতে পারবে ও। এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়, কারণ ব্যাটা তুর্ক বেন্নিককে খতম করার ওই একটা সুযোগই পাওয়া যাবে। একটা ব্যাপার নিয়েই শুধু মাথা ঘামাতে হবে এখন আমাদেরকে, তা হলো, কি উপায়ে যত বেশি সম্ভব সুবিধে করে দেয়া যায় মাইকের।

সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছে সনির কথা।

টম, ক্লেমেঞ্জা, টেসিও, খুঁজে বের করো তোমরা, কোথায় ওরা নিয়ে যাবে মাইককে। এর পিছনে যত খরচ হয় হবে। আগে জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে, তারপর ভাবা যাবে কিভাবেওর কাছে অস্ত্র পৌঁছে দেয়া যায়। ক্লেমেঞ্জা, তোমার গোপন সংগ্রহ থেকে সবচেয়ে নিরাপদ পি দেবে ওকে। একেবারে ঠাণ্ডা অস্ত্র, যার কোন সূত্র ধরা যাবে না। মনে রেখো, ব্যারেল ছোট আর বিস্ফোরণের ক্ষমতা বেশি হবে। লক্ষ্যভেদ করার ক্ষমতা খুব বেশি না হলেও চলবে, কারণ ওটা যখন ব্যবহার করবে মাইক, তখন একেবারে ওদের ঘাড়ের ওপর থাকবে ও। মাইক, গুলি করেই পিস্তলটা মেঝেতে ফেলে দিবি তুই। যদি ধরা পড়িস, হাতে ওটা নিয়ে ধরা পড়িস না, খবরদার!

ক্লেমেঞ্জা, ব্যারেল আর ট্রিগারে তোমার সেই বিশেষ জিনিসটা লাগিয়ে দিয়ো, তাহলে আর আঙুলের ছাপ পড়বে না। আবার মাইকেলের দিকে ফিরল সনি। মনে রাখিস, প্রত্যক্ষদর্শী ইত্যাদির সব ব্যবস্থা করতে পারব, কিন্তু অ্যারেস্ট হবার সময় হাতে যদি পিস্তল থাকে, কিছুই করতে পারব না আমরা। গাড়ি, নিরাপত্তা সব ব্যবস্থা, করা থাকবে-কাজ সেরে একবার সরে আসতে পারলে আর কিছু ভাবতে হবে না তোকে। একটু থেমে কণ্ঠস্বর খাদে নামাল সনি, তারপর একেবারে বাতাসে মিলিয়ে যেতে হবে তোক। লম্বা ছুটি নিয়ে চলে যাবি অনেক দূরে, যতদিন না

এদিকটা ঠাণ্ডা হয়ে আসে ততদিনের জন্যে। কিন্তু আমি চাই না তুই তোর বান্ধবীর কাছ থেকে বিদায় নিস না, তাকে ফোন করাও চলবে না তোর। তুই নিরাপদে বিদেশে পৌঁছুলে, এদিকটা ঠাণ্ডা হয়ে এলে, আমি ওকে জানাব যে তুই ভাল আছিস। এটা আমার আদেশ।

ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল সনি, তারপর আবার বলল, এখন থেকে ক্লেমেঞ্জার কাছাকাছি থাক, যে পিস্তলটা দেবে তোকে সেটা প্র্যাকটিস কর। বাকি সব ব্যবস্থা আমরা করব। ঠিক হ্যায়, ভাইয়া?

সারা শরীরে আরেকবার হিমশীতল একটা সজীবতার আবেশ অনুভব করল মাইকেল। সনিকে বলল, এ-ধরনের একটা বিষয়ে বান্ধবী বা আর কাউকে কিছু বলব বলে মনে করে আমাকে সাবধান করে দেবার কোন মানে হয় না। ফোন করে বিদায় নেব ওর কাছ থেকে তা তুমি ভাবলে কিভাবে?

তাড়াতাড়ি বলল সনি, ঠিক আছে, ভুল স্বীকার করছি কিন্তু এখনও তো তুই একজন রংরুট; তাই ভাবলাম বানান-টানানগুলো শিখিয়ে দেবার দরকার আছে। যাক, কি বলেছি ভুলে যা।

একমুখ হেসে বলল মাইকেল, এ আরার কি কথা হলো? রংরুট? তুমি যেমন মন দিয়ে বাবার কথা শুনতে, আমিও তেমনি শুনতাম। তা নাহলে এত চালাক হলাম কিভাবে?

ওরা দুজনেই হাসতে শুরু করল।

সবার জন্যে গ্লাসে হুইস্কি ঢালল হেগেন। গম্ভীর দেখাচ্ছে তাকে। রাজনীতিবিদকে জোর করে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে, আর আইনবিদকে শরণ নিতে হচ্ছে আইনের-গোটা ব্যাপারটাকে এভাবে দেখছে সে। অবশেষে বলল, তা সে। যাই হোক গে, কি করা হবে সেটুকু অন্তত জানা গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *