মেরুদণ্ড

মেরুদণ্ড

If the wicked flourish and the fittest survive, Nature must be the God of rascals.— G.B.S.

যেদিন ‘সারভাইভাল অব দি ফিটেস্ট’–এই সাধারণ সত্যটি দার্শনিকের কণ্ঠে প্রথম ঘোষিত হল, সেদিন থেকেই পৃথিবীর সর্বনাশের সূত্রপাত। কেননা, মূল্যবোধ বিস্মৃত হয়ে সেদিন থেকেই মানুষ তার শ্রেষ্ঠ গুণরাজিকে অবহেলা করে নিকৃষ্ট শক্তিসমূহের পূজার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলে, আর শুধু বাঁচার কথাটা বড় হয়ে উঠল বলে সৌন্দর্য, প্রেম ও আনন্দ মানুষের দৃষ্টিসীমা থেকে অনেক দূরে সরে গেল। সে বুঝতে পারলে, এসব গৌণ ব্যাপার, বাঁচার জন্য এসবের কোনো প্রয়োজন নেই, যদি পাওয়া যায় ভালো। অধিকন্তু ন দোষায়- না পাওয়া গেলেও তেমন দুঃখ নেই।

দার্শনিকের চেষ্টা হয় অনেক সময় ‘মাচ এডো এবাউট নাথিং’ অথবা পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো। অনেক মাল-মশলা সংগ্রহ ও গবেষণার ফলে তারা যে-সত্যে এসে পৌঁছোন, অনেক সময় তা মামুলি সত্য ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু দর্শনের সমর্থনে তাই হয়ে ওঠে সকলের শ্রদ্ধেয় সাধারণ ব্যাপারটাও অসাধারণ হয়ে দেখা দেয়। ফিট লোকেরাই সবসময় বেঁচেছে ও বাঁচবে একথাটা বলার জন্য দার্শনিকের গবেষণার প্রয়োজন হয় না, সামান্য পর্যবেক্ষণশীলেরাও তা বলতে পারে। সুতরাং এ সিদ্ধান্তের জন্য দার্শনিকের কোনো কৃতিত্ব নেই তাঁর কৃতিত্ব সত্যে পৌঁছার জন্য তার যে আয়োজন–তাতে; উপাদান সংগ্রহ ও বিচিত্র তথ্য আবিষ্কারে মানুষ হঠাৎ-সৃষ্ট জীব নয়, জীবপরম্পরার ধারাবাহিক পরিণতি, এই সত্যের উদঘাটনে।

অথচ মানুষ সেইটেই বড় বলে গ্রহণ করলে–নাচুনে বুড়ি ঢোলের তালি পেলে যেমন আনন্দে আত্মহারা হয়, মানুষও তেমনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিজের ভিতরের যুদ্ধংদেহী ভাবটিকে আঁকড়ে ধরলে–তেল সিঁদুর দিয়ে দেবতার মতো তার পূজা শুরু করলে। নিজেরা যা স্বভাবতই ভালোবাসে, দার্শনিকের সমর্থনে তাই তাদের কাছে অধিকতর প্রিয় হয়ে উঠল আর দার্শনিকরা যা ধরতে ছুঁতে পান না, মানবজীবনের সেই শ্রেষ্ঠ সম্পদ ধ্যান-কল্পনা, প্রেম-সৌন্দর্যের কদর কমতে লাগল। এসব কী? বিজ্ঞান তো এসব ঠাহর করতে পারে না। সুতরাং এদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দিহান না হয়ে উপায় কী? সত্য তাই বিজ্ঞানের সহায়তায় যাচাই করতে গেলে মূল্যের তো কথাই নেই, এসবের কোনো অস্তিত্বই থাকে না। কেননা, মানুষ যেখানে প্রকৃতির সৃষ্টি সেখানেই বিজ্ঞানের অধিকার, যেখানে সে নিজের রচনা সেখানে বিজ্ঞান বেকার। প্রেম, সৌন্দর্য ইত্যাদি মানুষের নিজের সৃষ্টি বলে বিজ্ঞান এদের সম্বন্ধে নির্বাক অথবা সন্দিহান। কিন্তু এদের সাধনাই মনুষ্যত্বের সাধনা, তথা সভ্যতার সাধনা। যোগ্যতমের উদ্বর্তন নীতি এই সাধনার পরিপন্থী, কেননা তা শুধু বাচবার জন্য প্রয়োজনীয় নখদন্ত ও নখদন্তের স্থানীয় বন্দুক-বোমা-সঙ্গিনকেই বড় করে তোলে-উদার বুদ্ধিকে বর্জন করে সঙ্কীর্ণ বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ করতে শেখায়। ফলে মানুষের অধোগতি ঘটে।

মানুষ শুধু উদ্বর্তনে তৃপ্ত থাকতে পারে না, বিকাশই তার জন্য প্রয়োজনীয় আর তাতেই মনুষ্যত্বের জয়। উদ্বর্তনের জন্য অত্যধিক উদ্বেগ বিকাশের প্রতিকূল। কেননা, তা শুধু সঙ্কীর্ণ বৃদ্ধি-আশ্রিত সন্দেহ ও ঘৃণা-বিদ্বেষকে বড় করে তোলে, আর সন্দেহ-বিদ্বেষ বিকাশের সহায় নয়, অন্তরায়। সেজন্য প্রয়োজনীয় উদার বুদ্ধি লালিত আনন্দ আর প্রেম আলোক আর মাধুর্য। কথায় বলে সাবধানের মার নেই, কিন্তু আসলে অতি-সাবধানেরই আত্মিক মৃত্যু ঘটে। ভয়ার্ততার ফলে তার আত্মা সঙ্কুচিত ও মলিন হয়ে যায়। আত্মরক্ষার তাগিদে যে জীবনের অধোগতি ঘটে, অন্তত উন্নয়ন হয় না, উদ্ভিদজগতের দিকে তাকালে তা সহজে উপলব্ধি করা যায়। পশুদের সঙ্গে সগ্রামে টিকে থাকার উদ্দেশ্যেই কোনো কোনো বৃক্ষ তিক্ত বা উগ্রগন্ধযুক্ত দেহ নিয়ে অঙ্কুরিত হয়। বেল ও লেবু পাতার উগ্রগন্ধ ও তাদের দেহে কাটার উৎপত্তি পশুদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকার তাগিদেই। এমন যে গোলাপ, এককালে সেও বন্যপুষ্প ছিল, গায়ের কাঁটা দেখলেই তা টের পাওয়া যায়। মানুষের হাতে পড়ে এখন সে সভ্য-ঘ্য হয়েছে। এখন সে দুর্বল, অসহায়–বেড়ার ভিতর ছাড়া বাড়তে পারে না। সভ্য মানুষও একপ্রকার দুর্বল মানুষ রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধান ছাড়া বাঁচতে পারে না! গোলাপের জন্য যেমন বেড়া, মানুষের জন্য তেমনি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রছাড়া মানুষ সভ্য-ভব্য হয়ে বাঁচতে পারে না। রাষ্ট্র যেমন মানুষকে রক্ষা করে, রাষ্ট্রকে রক্ষা করাও তেমনি মানুষের কর্তব্য হয়ে পড়ে। কিন্তু যেদিন রাষ্ট্র বলে : আমিই, আমাকে রক্ষা করো, তোমাদের নিজের দিকে তাকাবার দরকার নেই, আমার পূজা করাই তোমাদের জীবনের সার্থকতা; সেদিন সত্যই মানুষের দুর্দিন, সেদিন মানুষের সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়।

গোলাপের কাছে যদি ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ নীতি বারবার আওড়ানো যায়, আর বলা হয় যে, গরু-ছাগলরা তাকে গ্রাস করবার জন্য চারদিকে ওত পেতে আছে, তো পাপড়িগুলি কাঁটায় পরিণত হয়ে গোলাপের গোলাপত্ব নষ্ট হতে বিলম্ব হবে না। অচিরেই তার সৌন্দর্য যাবে ধসে, আর তার কদর্যতা ও কাঠিন্য মাথা উঁচিয়ে আত্মঘাষণা করবে।

মনুষ্যত্ব সম্বন্ধেও একথা খাটে। সঙ্কীর্ণতা মনুষ্যত্ব-গোলাপের পাপড়িগুলিকে কাটায় পরিণত করে। সঙ্কীর্ণতার গোড়ায় ভয়–খেয়ে ফেলবে এই শঙ্কা ‘সারভাইভাল অব দি ফিটেস্ট নীতি এই ভীতির পরিপোষক। তা শত্রুর কথা মনে করিয়ে দেয়, ভুলিয়ে দেয় না; আর শত্রুকে না-ভুলতে পারলে সুন্দর হওয়া যায় না। হিন্দু-মুসলমান পরস্পরকে কালো রঙে চিত্রিত করে দেখলে তাদের লাভ হবে না, ক্ষতি হবে-সে কালোর প্রভাব কালিমা লেপনকারীর চরিত্রেও লাগবে। অপরকে ভালো ভেবেই আমরা ভালো হতে পারি, খারাপ ভেবে নয়। বাঘ বা সাপের সঙ্গে বাস করছি এই সচেতনতা মনুষ্যত্বের পরিবর্তে পশুত্বকেই বঁচিয়ে রাখে। কূটবুদ্ধি ও হ্রস্বদৃষ্টি রাজনীতিক তা বুঝতে পারেন না বলে ভিন্ন সমাজের দুরভিসন্ধি ও চক্রান্তকে বড় করে তুলে নিজের সমাজের ক্ষতিই করেন, কল্যাণ নয়। মানুষকে ভালো ভাবতে হবে নিজের ভালোর জন্যই নিজের ভিতরের শ্রেষ্ঠ বৃত্তিগুলিকে সক্রিয় রাখবার এই একমাত্র উপায়। ভয় ও সন্দেহ জীবনের পক্ষে মারাত্মক, এই বিশ্বাস না থাকলে জীবন অসুন্দর হয়ে পড়ে, খোশমেজাজ ও বহাল তবিয়ত নষ্ট হয় আর তা নষ্ট হলে মানুষের ভালো কাজের মূল্য দেওয়া যায় না। উত্তেজনার বশে কৃত মহৎ কাজেরও মূল্য কম। তাই ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ নীতি জোরেশোরে প্রচার না করাই ভালো। যদি একান্তই বলতে হয়, তবে তা যেন দুর্বলের কানে কানে বলা হয়, সবলের কানে কানে নয়। সবলকে তা করে তুলবে অত্যাচারী ও স্বাধিকার প্রমত্ত অত্যাচারের দার্শনিক সমর্থন পেয়ে সে শক্তির অপব্যবহার করবে।

মানুষের জন্য বড় নীতি প্রেমের নীতি, হিংসা বা বিদ্বেষের নীতি নয়। যোগ্যতমের উদ্বর্তন মতবাদ এই প্রেমের নীতিতে অবিশ্বাসী করে মানুষকে সর্বনাশের পথে চালায়। প্রয়োজনীয় মন্দ ব্যাপার ( Necessary evil) যখন জীবনের সারবস্তু ( Summum bonum of life) হয়ে ওঠে, তখন জীবনের আর কিছুই থাকে না প্রকৃত ঐশ্বর্যের ব্যাপারে তা একেবারেই ফতুর হয়ে পড়ে। বাঁচার সাধনা আর ঐশ্বর্যের সাধনা এক নয়, ঐশ্বর্যের জন্য ত্যাগের প্রয়োজন। ছোট জিনিসের দাবিকে না দমালে বড় জিনিসের দাবি বড় হয়ে উঠতে পারে না। বাঁচার সাধনার আধিক্যের ফলে মানুষের ভেতরের ছোট মানুষটিই প্রাধান্য লাভ করে, বড়মানুষটি নষ্ট হয়ে যায়। সেবার অভাবে দেবতা অন্তর্হিত হন, মন্দির খালি পড়ে থাকে।

‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ নীতির সুস্পষ্ট প্রকাশ অর্থ-প্রতিপত্তির লোভে। চরিত্রকে কলুষিত করতে এর মতো আর দ্বিতীয় কিছুই নেই। এই লোভের হাতে যারা ধরা দেয়, তাদের অবস্থা সত্যই মারাত্মক হয়ে পড়ে। অচিরেই তারা জীবন্ধনে বঞ্চিত হয়ে দীন হয়ে পড়ে। তাদের না থাকে সৌন্দর্যবোধ, না থাকে আনন্দ গ্রহণের ক্ষমতা। তাদের জীবন হয়ে পড়ে ফাঁকা, আর সেই ফাঁক পূর্ণ করবার জন্য তাদের অর্থ প্রতিপত্তি লাভের চেষ্টা আরও বেড়ে চলে। ফলে ধন যত বাড়ে, জীবন তত নির্ধন হতে থাকে। সিন্দুক যত ভর্তি হয়, অন্তর তত শূন্য হতে থাকে। এই শূন্য জীবন নিয়ে অর্থ প্রতিপত্তির জোরে তারা সমাজের নেতা হয়ে দাঁড়ায়, আর নিজের শূন্যতা তথা কদর্যতা (কেননা, বাগান খালি থাকে না, ফুলগাছ না থাকলে কাঁটাগাছ থাকে) সমাজদেহে সংক্রমিত করে সমাজের অশেষ ক্ষতি করে।

শ্ৰেষ্ঠতার আরাধনাই মানুষের কর্তব্য, নিকৃষ্টতার পূজা নয়। আর শ্রেষ্ঠতার আরাধনার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় প্রকৃত অনুরাগ। অনুরাগই কঠিন ব্যাপারকে সহজ করে তোলে, পকে গিরি লঙ্ঘন করায়। শ্রেষ্ঠ বৃত্তিসমূহকে ভালোবাসলেই নিকৃষ্ট বৃত্তিসমূহের দাবি কমে আসে, নইলে তাদের জুলুমের অন্ত থাকে না। বড়কিছুকে ভালো না বাসলে ছোটকিছুর অত্যাচারে জীবন জীর্ণ হয়ে আসে, ভালোবাসাকে বড় না জানলে ঘৃণা-বিদ্বেষের জয় অনিবার্য হয়ে ওঠে। যোগ্যতমের উদ্বর্তন নীতি প্রয়োজনের ভাওতায় বড় জিনিসকে ছোট, আর ছোট জিনিসকে বড় করে তুলে মানুষের অশেষ অকল্যাণ করে। সৌন্দর্য ও আনন্দের ওপর জোর না দিয়ে টিকে থাকার প্রবৃত্তির ওপর জোর দেয় বলে তা জীবনের কদর্য ক্ষুধাকেই বড় করে তোলে। সুতরাং’আগে টিকে থাকা পরে সৌন্দর্য এই নীতির প্রশ্রয় না দেওয়াই ভালো। কেননা, তাতে শালীনতার ও শোভনতার দাবি নিচে পড়ে যায়, আর বর্বর অধিকার বৃত্তি লেলিহান জিহ্বা মেলে ধেই ধেই নৃত্য করতে থাকে। তাকে সংযত করতে পারে সৌন্দর্যপ্রেম, অন্য কিছু নয়। নীতির শাসন এখানে ব্যর্থ। যোগ্যতমের উদ্বর্তন নীতি মানুষকে ইতরতা থেকে মুক্ত হতে দেয় না, ছোটখাটো স্বার্থের নিগড়ে বেঁধে রেখে তাকে নীচনা করে গড়ে তোলে। ছোট ভাব সবসময়ই বড় ভাবকে ব্যর্থ করেছে ও করবে। অতএব, বড় ভাবের প্রতি বিশেষ অনুরাগ না থাকলে তার কোনো ভরসা থাকে না। সত্যের জয় হবেই একথা ভুল; জয় হোক না হোক, সত্যের জন্য প্রাণপাত করা উচিত, এ-কথাই ঠিক। মিথ্যা আশায় সত্যের জয় কমে আসে– পরাজয়ের লক্ষণ দেখলে মন দ্বিধান্বিত হয়।

দর্শন সম্বন্ধে ওপরে যা বলা হয়েছে তার আর-একটি নজির সম্প্রতি আমার চোখে পড়েছে। দার্শনিক যখন বলেন, মানুষের বিকাশের পশ্চাতে অর্থনীতিই প্রধান, তখন তিনি সাধারণ সত্যই প্রচার করেন, কিন্তু দর্শনের সমর্থনে এই সাধারণ সত্যই মহামূল্য হয়ে দেখা দেয় এবং একে অতিক্রম করার শক্তি-যে ব্যক্তিমানুষের আছে, মানুষ তা ভুলে যায়। ফলে মানুষের ইচ্ছাশক্তি সঙ্কুচিত হয়ে আসে–মানুষ মহৎ ও সুন্দর জীবনের দায়িত্ব অস্বীকারের পথ খুঁজে পায় এবং অপরের মহত্ত্ব ও সৌন্দর্যকে ছোট করে দেবার সুযোগ লাভ করে। এতে তার ক্ষতি হয় বিস্তর বাস্তব-উত্তীর্ণ হওয়ার আত্মিক শক্তি থেকে বঞ্চিত হয় বলে তার স্বাধীনসত্তা কিছুই থাকে না, সে অবস্থার দাসমাত্র হয়ে পড়ে। একপ্রকারের নিরুদ্বেগ জীবন সে লাভ করে বটে, কিন্তু এই নিরুদ্বেগতা নিষ্প্রাণতার নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়। মনের কান্না তার থেমে যায়, আর এই মনের কান্নাই-যে মহৎ সৃষ্টির প্রেরণা, তা সে উপলব্ধি করতে পারে না। অথবা মনের কান্নাও থামে না, তার উদ্দেশ্যই শুধু পরিবর্তিত হয়–অর্থ সৌন্দর্য ও আনন্দের স্থান দখল করে বসে, আর সঙ্গে সঙ্গে তার ভিতরে কী একটা শক্তির অপমৃত্যু ঘটে। এই শক্তি আর কিছুই নয়, সৌন্দর্য ও আনন্দের ক্ষুধা। এর অবসানের সঙ্গে সঙ্গে আত্মিক শক্তি রহিত হয়ে মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়।

সৃষ্টির গোড়ায় বুভুক্ষা বা বেদনা। বেদনার ফলেই অসম্ভব সম্ভব হয়। দার্শনিকের শিক্ষার ফলে কী করে এই বেদনার মৃত্যু হয়; ইদানীং তার একটি প্রমাণ পেয়েছি। আমার তরুণ বয়সে জনৈক কিশোর বয়স্ক ছাত্রকে আমার খুব ভালো লাগত। তিনি মাঝে মাঝে মুসলমানসমাজের মানসিক দীনতা সম্বন্ধে দুঃখ প্রকাশ করতেন, আর যারা সেকালে এই দৈন্য দূর করার আন্তরিক চেষ্টা করছিলেন, তাদের প্রশংসা করতেন। তার মুখে কবি-সাহিত্যিকদের কথাই ছিল, রাজনীতিকদের কথা নয়। তিনি বলতেন, রাজনীতিকরা অধিকার আদায় করেন বটে, কিন্তু সুন্দর ও আনন্দিত জীবনের প্রেরণা দেন কবি-সাহিত্যিকরা; তাই তারা সমাজের প্রকৃত স্রষ্টা, মানুষের অন্তরে তাদেরই সিংহাসন। তবে মাঝে মাঝে যে রাজনীতিকরা বড় হয়ে ওঠেন, তার কারণ সমাজের রুগ্ণ অবস্থা; পীড়িতের কাছে ডাক্তারই বড়, বন্ধু নয়। কিন্তু সুস্থ অবস্থায় এর বিপরীতটাই ঠিক। আধুনিককালে যে রাজনীতিকরা পৃথিবীতে বড় স্থান লাভ করেছেন, তার কারণ পৃথিবীর পীড়িত অবস্থা। এক হিসাবে দেখতে গেলে সমাজের অভ্যন্তরীণ বিকাশের বাহ্যিক প্রকাশ বলে রাজনৈতিক আন্দোলন একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার-সমাজ যে সুস্থ ও প্রকৃতিস্থ নয়, তারই লক্ষণ। কিন্তু বন্ধুদের ছেড়ে যে রোগী ডাক্তারকেই বড় করে তোলেন, বুঝতে হবে তিনি চিররোগী। তার মুক্তির উপায় স্বল্পই। চিররোগ প্রায়ই মানসিক ব্যাধি। অতএব, বন্ধুবান্ধবের প্রীতিকর সঙ্গই তা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়–বোতল বোতল ঔষধ সেবনে ফায়দা পাওয়া কঠিন। যে জাতি বা সমাজ কবি-সাহিত্যিক ও সৌন্দর্যশিল্পীদের অবজ্ঞা করে কেবল রাজনীতিকদের বড় করে দেখে, চিররোগীর ন্যায় তারও মুক্তি সুদূরপরাহত।*[*রুগণ অবস্থায় মানুষের কুপথ্যে রুচি হয়; প্রবল রাজনৈতিক আন্দোলনের যুগেওকুপ্রবৃত্তি বড় হয়ে ওঠে। তাই সামাজিক সমর্থন লাভ করে নিষ্ঠুরভাকে নগ্নমূর্তিতে রাজপথে বের হতে দেখা যায়।]

রাজনীতিজ্ঞের প্রিয় হওয়ার একটি কারণ, মানুষের ঝগড়াটে মনোবৃত্তি। মানুষ স্বভাবতই কোন্দলপ্রিয় রাজনীতি কোন্দলপ্রিয়তার খোরাক যোগায়। ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষা সমাজ সহ্য করে না, চোখ রাঙিয়ে তা দমাতে চায়কিন্তু বিজাতির প্রতি ঈর্ষায় সমাজের বাহবা পাওয়া। ব্যক্তির প্রতি গালাগালি পাপ, বর্বরতা; কিন্তু বিজাতির নিন্দা পরম শ্লাঘার ব্যাপার। রাজনীতি এই ঈর্ষা ও নিন্দার পথ খোলাসা করে দেয় বলে মানুষের জীবনে তার এত প্রভাব। মানুষ মনুষ্যত্বের বড়াই করে বটে, কিন্তু আসলে তার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেলেই বেঁচে যায়। যুদ্ধের উন্মাদনা এই মুক্তির সুযোগ হয়ে দেখা দেয়, তাই যুদ্ধের নামে ছেলে বুড়ো সকলেরই উল্লাস। রাজনীতিও একপ্রকারের যুদ্ধ-স্নায়ুর সংগ্রাম। তাই মানুষের কাছে যুদ্ধের মতো রাজনীতিরও আদর। সাধারণ অবস্থায় মানুষের গায়ে কাদা কি থুতু দেওয়া যায় না। কিন্তু প্রবল রাজনীতির যুগে তা সহজেই করা যায়। রাজনীতির যুগে অসুবিধা হয় শুধু চিন্তাশীলদের। মোটা সুরের সঙ্গে মিহি সুর মেলাতে পারেন না বলে তাদের অস্বস্তির অন্ত থাকে না। লম্বা লোকেরা হাঁটু ও কোমর ভেঙে বেঁটে হওয়ার চেষ্টা করে শুধু দুঃখই পান। রাজনীতির অশ্লীলতা ও উচ্ছলতা দূর করার একমাত্র উপায় রাজনীতিকে জীবনের সারবস্তু মনে না করে মাত্র বেঁচে থাকার উপায় বলে মনে করা। তা হলেও শাশ্বত নীতির চরণে মাথা ঠেকিয়ে তা সুন্দর ও সংযত হতে পারবে। নতুবা তার কদর্যতার অন্ত থাকবে না। সংসার-ধর্ম সকলেরই পালন করতে হয় এবং করা উচিত; কিন্তু একটা উঁচু লক্ষ্যের দিকে নজর না রাখলে সংসার হয়ে পড়ে একটা কারাগার-বদ্ধকূপের জলের মতো তা মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়।

কিশোর বন্ধুটির কথার প্রতিবাদ করা আমার পক্ষে সম্ভব হত না। তিনি সত্যকথাই বলতেন, কবি-সাহিত্যিকের শ্রেষ্ঠতা স্বীকার না করে উপায় নেই। তাঁরাই জীবনের সুকুমার বৃত্তিগুলি বাঁচিয়ে রাখেন। গৃহনির্মাণে গৃহস্বামীর যে-স্থান, রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারেও কবি সাহিত্যিকদের সেই স্থান! গৃহস্বামীর ইচ্ছা, অভিরুচি, খেয়াল ও কল্পনার খোঁজ নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার গৃহের প্রান বা পরিকল্পনা তৈরি করেন; পরে ওভারশিয়ার, রাজমিস্ত্রি ও যোগালির সহায়তায় গৃহনির্মাণ কার্য সমাধা করেন। রাষ্ট্রও এভাবেই গঠিত হয়। রাষ্ট্রে বাস করে জীবন। জীবন মূক; তার প্রতিনিধি কবি ও সাহিত্যিক জীবনের ভালোলাগা, মন্দলাগা, আশা-আকাক্ষা, বিচিত্র সাধ ও গভীর অভীপ্সা এঁদের মারফতেই অভিব্যক্ত হয়। রাজনৈতিক চিন্তাবীররা এঁদের জীবনবোধের সহায়তা নিয়ে আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা করেন। তার পরে আসেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছোট বড় কর্মীদের সহযোগিতায় তারা গড়ে তোলেন জীবনের আকাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রসৌধ। কবি-সাহিত্যিকের জীবনবোধের দিকে না তাকালে তা হয়ে পড়ে শ্রী-মাধুহীন কাজ-চলা গোছের ইমারত। তাতে সাধারণ জীবন তথা ব্যবসায় বাণিজ্য চলে ভালোই, কিন্তু সুন্দর জীবনযাপন হয়ে পড়ে অচল।

এ-সম্বন্ধে আরেকটি কথা মনে রাখা ভালো। সৌন্দর্যের সাধনা পূর্ণাঙ্গ চেহারার সাধনা, শুধু শিরদাঁড়ার সাধনা নয়। তাই চেহারা সম্বন্ধে আমরা যতটা সচেতন, মেরুদণ্ড সম্বন্ধে ততখানি নই। আমাদের খাওয়া-পরা বিলাস ব্যসন সমস্ত কিছু এই চেহারার সৌন্দর্যের জন্যই। অবশ্য খাওয়াদাওয়ার ফলে শিরদাঁড়াও শক্ত হয়। কিন্তু সেদিকে আমরা সজাগ নই, আমাদের সচেতনতা কেবল চেহারা নিয়ে। আর চেহারার সৌন্দর্য কেবল খাওয়া-পরার উপর নির্ভর করে না, সেজন্য ভাবসাধনারও প্রয়োজন। এমনকি সৌন্দর্যসাধনার ব্যাপারে খাওয়া-পরার চেয়ে ভাবসাধনার দানই বেশি; আর এই ভাৰসাধনার প্রবণতা মেরুদণ্ড বঁকিয়ে দেয়ার দিকে যতখানি, সিধা রাখবার দিকে ততখানি নয়। তথাপি সাধনাকেই আমরা ভালোবাসি। বিশ্রী চেহারার দৃঢ়মেরুদণ্ড মানুষের চেয়ে সুন্দর চেহারার দুর্বলমেরুদণ্ড মানুষই আমাদের প্রিয়–ক্ষীণকায় শিল্পবীরের সঙ্গেই আমরা হাত মেলাতে চাই, বিপুলকায় মপ্লবীরের সঙ্গে নয়। এখানেই মানুষের মনুষ্যত্বের জয়, কেননা এখানেই সে তার আত্মার মূল্য দেয়।

ব্যক্তির জীবনে শিরদাঁড়ার যে-স্থান, জাতির জীবনে রাজনীতির সেই স্থান। শিরদাঁড়া ছাড়া ব্যক্তি চলতে পারে না। আর রাজনীতি ছাড়া জাতি অচল। তথাপি মাত্রাজ্ঞানহীন মেরুদণ্ডের সাধনা যেমন ব্যক্তির পক্ষে মারাত্মক, মাত্ৰাজ্ঞানহীন রাজনীতির সাধনাও তেমনি জাতির পক্ষে অশুভকর। কেননা, উভয় ক্ষেত্রেই সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে আত্ম বিকৃত হয়ে যায়। জাতি যদি কেবল রাজনীতির সাধনা করে তো তার মেরুদণ্ড ষাড়ের মতো শক্ত হয় বটে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারাটিও ষাড়ের মতোই কদর্য হয়ে ওঠে। রাজনীতিসর্ব ষণ্ডামার্কা জাতিরা মৌতাতের জন্য মানুষের মতো কোলাকুলি বা করকম্পন না করে ষাড়ের মতো গুঁতোগুঁতি করে। ফলে শান্তি ও শৃঙখলা লণ্ডভণ্ড হয়ে পৃথিবীর সর্বনাশ হয়–মানুষের জীবনে মূল্যবান বলে আর কিছু থাকে। না। প্রতিকারস্বরূপ মনে রাখা দরকার, মেরুদণ্ড বাঁচার লক্ষ্য নয়, উপায় মাত্র রাজনীতিও জাতির লক্ষ্য নয়, উপলক্ষলক্ষ্য সৌন্দর্যধ্যান ও আনন্দসাধনা। লক্ষ্যের স্থান উপলক্ষ তথা দেবতার স্থানে বাহনকে বসিয়ে পূজা করলে কালের হাতে শাস্তি পেতে হয়, আর যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার ভেতর দিয়ে আমরা সেই শাস্তিই পেতে থাকি।

ওপরের যে বন্ধুটির কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে আবার আমার দেখা হয় কিছুদিন আগে। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ল ও অর্থনীতিতে এম, এ. পড়ছেন। দেখলুম, তার চেহারার পরিবর্তন হয়েছে–আত্মতুষ্টি আর স্ফুর্তি বেদনার স্থান নিয়েছে। তবু সমব্যথী পেয়েছি ভেবে আমার স্বভাব অনুযায়ী তাকে সমাজের মানসিক দৈন্যের কথা বললুম–সমাজ-যে প্রগতিশীল হওয়ার পরিবর্তে দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে ঝাঝালো সুরে ইঙ্গিত করলুম; কিন্তু তাতে তাঁর পূর্বপরিচিত সংবেদনশীল চিত্তের সাড়া পেলুম না। বরং আমার কথায় একটুখানি হেসে নিশ্চিন্তে সিগারেট টানতে টানতে ও পান চিবুতে চিবুতে বললেন : সমাজের দোষ কী? এখন অর্থনীতির ক্ষেত্রে সমাজ যে-স্তরে দাঁড়িয়ে আছে তাতে তার কাছে এর বাড়া আর কিছুই আশা করা যায় না। অর্থনীতিই তো জীবনের ভিত্তি কাজেই আফসোস করে লাভ নেই।

আমি নৈরাশ্যমিশ্রিত সুরে বললুম: কিন্তু সেই অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা হচ্ছে কি? কতিপয়ের বড় হওয়ার দিকেই তো সমাজের দৃষ্টি, সাধারণের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার দিকে নয়।

তিনি আশ্বাসের সুরে বললেন :হ্যাঁ হচ্ছে বৈকি? এই-যে লোকেরা চাকরি পাচ্ছে এতেই সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

আমি : কিন্তু খুব আশানুরূপ এগিয়ে যাচ্ছে কি?–অন্তত চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে?

 তিনিঃ হ্যাঁ, যাচ্ছেই তো। হিন্দুসমাজ কি আর একদিনে এতদূর এগিয়ে এসেছে? আস্তে আস্তে এগিয়ে এসেছে। আমরাও আস্তে আস্তে এগিয়ে যাব। রোম নগরী একদিনে নির্মিত হয়নি, মনে রাখবেন।

আমি আর কিছু না বলে সিগারেটটি জ্বেলে ধীরে ধীরে টানতে লাগলুম, আর মনে মনে ভাবলুম : লোকটা ভাগ্যবান, লেখাপড়ার ফলে বেদনার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আমি বদনসিব, আমার আর মুক্তি হল না। বেদনা থেকে মুক্তি আর আত্মিক মৃত্যু এক নয় কি? সহজ নিশ্চিন্ত জীবনের মূল্য কতটুকু? অসম্ভবের ক্ষুধা না থাকলে জীবনে আর থাকে কী? বন্ধুর মসৃণ জীবনের ক্রমবিকাশটি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল :এমএ ডিগ্রী, বিসিএস পরীক্ষা, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, এমএলএ অথবা মন্ত্রীকন্যা, এসডিও, ম্যাজিস্ট্রেট, তার পরে সকলের যা হয় তাই। সেই শেষ অনিবার্য পরিণতি, আর বিস্মৃতি। মানে ‘তরককি’ যাকে বলে, তার সবটাই তিনি করবেন, কিন্তু প্রকৃত উন্নতি কতটুকু করবেন, তা বুঝতে পারলুম না।

মানুষ সব জায়গাতেই অর্থনীতির হাতে বন্দী, শুধু এই সৌন্দর্য ও আনন্দের ব্যাপারেই সে মুক্ত। এর জন্য প্রয়োজনীয় কেবল প্রকৃত ক্ষুধা, আর কিছু হলে ভালো, না হলেও চলে। একবার যার অন্তরে এই ক্ষুধা জেগেছে, সে-ই তার স্বাধীনতা উপলব্ধি করেছে এক অবস্তুনির্ভর আলোকে তার জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। যারা দুদিক সামলাতে চান-শ্যাম ও কুল–উভয় দিক রক্ষা করতে চেষ্টা করেন, বুঝতে হবে, তাদের জীবনে সত্যিকারের ক্ষুধার অভাব–সৌন্দর্যের ডাকে তাদের আত্মা উতলা হয়নি। এই ক্ষুধা, জাদুমন্ত্রের মতো এ এক অদ্ভুত জিনিস। যে অনুভব করলে, সে বেঁচে গেল; আর যে অনুভব করতে পারলে না, সে হতভাগ্য, এক অনির্বচনীয় আনন্দ থেকে তাকে বঞ্চিত থাকতে হল। তার কাছে তাই বড় হয়ে ওঠে অর্থ আর আচার পূজা–নিজেকে ফাঁকি দেওয়ার সবচেয়ে বড় উপায়।

ওপরের দার্শনিক মতবাদ সৌন্দর্য ও আনন্দের ব্যাপারে ক্ষুধামান্দ্য ঘটিয়ে নিশ্চেষ্টতার প্রশ্রয় দেয় বলে তাকে সাবধানে গ্রহণ করা উচিত। মানুষ অবস্থার দাস নয়, প্রভু–এটাই মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় আশ্বাসের কথা। সাধারণভাবে মানুষের দৈন্য-দুর্দশা দূর করার চেষ্টা ভালো। কিন্তু অর্থ না হলে সৌন্দর্য ও আনন্দচর্চা চলতে পারে না এবং তা ধনেরই একটা By-product–এর মতো মারাত্মক ধারণা আর নেই।

সৌন্দর্যের কথা মনে রাখলে খাওয়া-পরার কথা আপনাআপনি এসে পড়ে, কিন্তু খাওয়া-পরার কথা মনে রাখলে সৌন্দর্যের কথা মনে নাও আসতে পারে। আর সৌন্দর্যপ্রেমই খাওয়া-পরার ব্যাপারে সংযম ও শালীনতা এনে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। শুধু নিজের তৃপ্তির দিকে নজর রাখলে চলবে না, সকলেরই তৃপ্ত হওয়া দরকার–একমাত্র সৌন্দর্যপ্রেমই তা আমাদের শেখাতে পারে। কেননা, প্রকৃত সৌন্দর্যপ্রেমিকের কাছে মানুষের হাসিমুখের মূল্য অনেক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *