ব্যর্থতা জিন্দাবাদ

ব্যর্থতা জিন্দাবাদ

বৃদ্ধ ও তরুণ উভয়েরই নিজের ইচ্ছামতো কাজ করার এমনকি ভুল করার অধিকার থাকা চাই, নইলে সমাজে প্রাণদৈন্যের অবধি থাকে না। প্রাণপ্রদায়ী ব্যাপারে যেমন বিয়ে, বৃত্তি নিরূপণ, বন্ধুনির্বাচন প্রভৃতি বিষয়ে যদি তরুণরা বৃদ্ধের উপদেশ মেনে চলে তো ভুল করবে। যে জাতির তরুণরা এসব বিষয়ে স্বাধীনতার পরিচয় দেয় না, সে জাতি মৃত, তার কাছ থেকে দুনিয়া কিছু আশা করতে পারে না। সে পৃথিবীর বোঝাস্বরূপ।

মনে করুন নটের পেশা আপনার মনঃপূত, সেদিকেই আপনার প্রতিভা সহজ পথ খুঁজে পাবে বলে আপনার বিশ্বাস। কিন্তু আপনার গুরুজনরা তা পছন্দ করেন না। তাদের কাছে হয় তা নীতির দিক দিয়ে নিন্দনীয়, নয় সামাজিকতার দিক দিয়ে নিম্নস্তরের। তাই তা থেকে বিরত করবার জন্যে যত প্রকারের চাপ সম্ভব তারা আপনাকে দেবেন। হয়, আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে আমরা তোমার সম্পর্ক ছিন্ন করব বলে তারা আপনাকে শাসাবেন, নয়, কিছুদিনের মধ্যেই তুমি তোমার একগুয়েমির জন্য অনুতপ্ত হবে বলে ভয় দেখাবেন। কিন্তু আপনার দমলে চলবে না। হয়তো এ-কথা ঠিক যে আপনার গলার স্বর খারাপ, অভিনয়ের প্রতিভা আপনার নেই। কিন্তু তাহলেও থিয়েটারে যোগ দিয়ে উপযুক্ত লোকের কাছ থেকেই তা জানা ভালো, অনুপযুক্ত লোকের কথায় কান পাতা ঠিক হবে না। সময়ের অপব্যয়ের কথা বলবেন জানি। কিন্তু চিন্তার কারণ নেই, এর পরেও বহু সময় হাতে থাকবে। অপচয়ের ভয়ে নিজেকে সঙ্কুচিত করবেন না। জীবন যে ধনী, অপচয়ের দ্বারাই তা প্রমাণিত হয়। অতএব ভাবনা কী? একেবারে নির্ভুল জীবনযাপনের চেষ্টা ভালো নয়। প্রাণশক্তির অভাব ঘটে বলে তাতে জীবনে মর্চে পড়ে। অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের কথায়ই আপনি কান পাতবেন, অভিজ্ঞতাহীনদের কথায় নয়। আপনি আপনার পথটি অনুসরণ করে চললে মুরব্বিরা একদিন না একদিন আপনাকে সমর্থন করবেনই–আপনি যত দেরিতে ভাবছেন তার বহু পূর্বেই। সুতরাং মাভৈ, নিষেধের কথা ভেবে না-হক নিজেকে বিচলিত করবেন না।

আপনি কি জানেন না, সমাজ-মরু সবসময়ই প্রতিভা-তরুর রস শুষে নিতে চায়; যন পারে না, তখন শত নির্যাতন সত্ত্বেও তরুটি ফুল ফোঁটায়, তখনই সে বলে ওঠে : দেখ দেখ কেমন ফুল ফুটিয়েছি। যেন এই ফুল ফোঁটানোর বাহাদুরিটা তারই। সমাজের মতো বেহায়া আর কে আছে? আপনি যে-পথে চলতে চেয়েছিলেন স্টেপথেই চলুন। দেখবেন সার্থক হলে পরিবারের লোকেরা আপনাকে গলার মালা করেই রাখবেন, না হলে অবশ্য ভিন্ন কথা।

কিন্তু সার্থক না হলেই যে আপনার জীবনটা বরবাদে গেল তা নয়। বরং আপনার মতো ব্যর্থলোকেরাই সমাজকে সমৃদ্ধ করে তোলে। যে সমাজে যত ব্যর্থলোকের বাস সে সমাজ তত ধনী। কেননা, ব্যর্থতার কথাটাই সাধনার কথা মনে পড়িয়ে দেয়। ব্যর্থলোকের সংখ্যা কম বলেই তো বাংলার মুসলমানসমাজ ব্যর্থ হল, বেশি বলে নয়। এ সমাজে-যে ব্যর্থলোকের সংখ্যা কম আশা করি কেউই তা অস্বীকার করবে না। আপনি কী বলবেন জানিনে, অমি তো দুচারটির বেশি দেখতে পাইনে। আপনি হয়তো বলবেন, কী বললেন? বাংলার মুসলমানসমাজে ব্যর্থলোক নেই? হায় আল্লা, আপনি অন্ধ, একেবারেই অন্ধ! আর আপনার অন্ধতার গোড়ায় রয়েছে আপনার রোমান্টিসিজম। রামাটিসিজমের হিটিজমে মুগ্ধ আছেন বলেই আপনি বাস্তবকে দেখতে পাচ্ছেন না; নইলে বলেন বাংলার মুসলমানসমাজে ব্যর্থলোক নেই, থাকলেও দুচারটি? না, আপনার সঙ্গে তর্ক বৃথা, আপনি একেবারে অবাস্তব। নইলে গরিবদের হাহাকারের কথা, আশান্বিত কর্মচারীদের নিরাশ হওয়ার কথা, নিশ্চয়ই জানতেন। কত লেকচারার-যে প্রফেসর, কত প্রফেসর-যে প্রিসিপ্যাল, কত প্রিসিপ্যাল-যে ডাইরেক্টর বাহাদুর হতে পারলেন না তার খবর রাখেন কি? রাখলে বাংলার মুসলমানসমাজে ব্যর্থলোক নেই, এমন কথা কখনো মুখে আনতেন না। চারিদিকে যেখানে ব্যর্থতা জড়ানো সেখানে ব্যর্থলোক দেখতে না-পারার মতো অন্ধতা আর কী হতে পারে?

আমি বলব, আপনি যে ব্যর্থতার কথা বলেছেন সে ব্যর্থতার প্রতি আমার দৃষ্টি নেই। পাকিস্তান হওয়ার পরে যেসব ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ম্যাজিস্ট্রেট কমিশনার, কমিশনার গভর্নর হতে না পেরে চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন তাদের প্রতি আমি সম্পূর্ণ সহানুভূতিসম্পন্ন। কিন্তু আমি তাদের ব্যর্থতার কথা বলছিনে, বলছি সাধনার ব্যর্থতার কথা। সত্য সুন্দর বা কাল্পনিক কল্পনার ফলে যে ব্যর্থতার আবির্ভাব হয় সে ব্যর্থতার কথা।

সাধনা বাইরের দিকে ব্যর্থ হলেও ভেতরের দিকে কোনোদিন ব্যর্থ হয় না। বামন হয়ে যারা চাঁদের দিকে হাত বাড়ায় চাঁদের আলো কিছু না কিছু তাদের চিত্তে লেগে থাকেই। চাঁদকে তারা হয়তো পায় না, কিন্তু চাঁদের আলোকে পায়। যারা একটা বড় জিনিস চেয়ে ব্যর্থ হয়, তাদের অন্তরে সেই বড় জিনিসের ছাপ থেকে পারে না। তাই ছোট ব্যাপারে সার্থকতার চেয়ে বড় ব্যাপারে ব্যর্থতা অনেক ভালো। তাতে করে মানুষটি বড় হয়–তার ভেতরের কালিমা-কলুষ দূরীভূত হয়ে সে সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আর এই ধরনের সুন্দর মানুষের সংস্পর্শে এসেই সমাজ সভ্যতা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। তাই বলেছি যে সমাজে যত ব্যর্থলোকের বাস সে সমাজ তত ধনী। (যে বনে যতবেশি ঝরা ফুল সে বনে ততবেশি বসন্তু এসেছে মনে করতে হবে। ব্যর্থলোকের সংখ্যা বাড়ার মানে কী? যারা সৌন্দর্যকে কামনা করে তাদের সংখ্যা বাড়া, যারা প্রেমকে কামনা করে তাদের সংখ্যা বাড়া, যারা সত্যকে কামনা করে তাদের সংখ্যা বাড়া, এক কথায় যারা সংস্কৃতিকে কামনা করে তাদের সংখ্যা বাড়া।

সাধনার দ্বারা সোনা হতে চেয়ে যদি আপনি ব্যর্থকাম হন তো তাতে দুঃখ নেই। কেননা, সোনা না হলেও আপনি কষ্টিপাথর হবেনই। আর সংস্কৃতিক্ষেত্রে কষ্টিপাথর হওয়াটাও কম কথা নয়। কষ্টিপাথর হওয়ার দরুন সোনা কী চিজ তা আপনি সহজেই বলতে পারবেন। তাই সভ্যতা-সৃষ্টির ব্যাপারে আপনার মূল্য অনেক–এমনকি প্রতিভাবানের চেয়েও বেশি। বেল সাহেব যখন বলেন, সভ্যতা প্রতিভার সৃষ্টি নয়, সমজদারির সৃষ্টি তখন ঠিকই বলেন। যে সমাজে সমজদারি যতবেশি সেসমাজ ততবেশি সভ্য। সমজদারি মানে মূল্যবোধ। মূল্যবান শিল্প রচনা করলেও সব প্রতিভাবান মূল্যবোধের পরিচয় দেয় না। আর্ট সৃষ্টি করলেও অনেক সময় তা প্রাকৃতই থেকে যায়, আর্ট হয় না। তাদের রচনার পশ্চাতে থাকে একটা অন্ধ প্রেরণা, চক্ষুম্মান প্রচেষ্টা নয়। সমজদারের বেলা কিন্তু বড় হয়ে ওঠে চক্ষুম্মান প্রয়াস। সে যা হতে চায় তাই হয়, অন্ধ প্রেরণার তাগিদে কিছু হয় না। প্রতিভাবান একতরফা, একঝোকা, সমজদার বহভঙ্গিম। বহু প্রতিভাকে হজম করেই সমজদার সমজদার। সে স্রষ্টা না হলেও ভোক্তা, ভোজ্যদ্রব্যের মূল্য সম্বন্ধে সচেতন। প্রতিভাবানদের অনেক সময়ই সে চেতনা থাকে না। কাজেই প্রতিভা প্রকাশ করতে গিয়ে যদি আপনি ব্যর্থ হন তো তাতে বিশেষ দুঃখ নেই। কেননা, পরিণামে আপনি সমজদার হবেনই, আর সমজদার না হলেও নয়, হলেই সমাজের লাভ।

(প্রতিভাবান যে কখনো সমজদার হয় না, এমন কথা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। হয়, কিন্তু তাদের সংখ্যা নগণ্য। গ্যেটে-রবীন্দ্রনাথ আর কটি জন্মে? বেশিরভাগ প্রতিভাবানই তো সৃষ্টিমুহূর্তে মহান, পরমুহূর্তে সাধারণ। তারা সৌন্দর্য সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু সৌন্দর্য কী বস্তু তা বলতে পারে না। তাই শিল্পী হলেও জীবনশিল্পী তারা হতে পারে না। মানুষের দুটো ক্ষমতা–নাড়া দেওয়ার ক্ষমতা আর সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা। নাড়া দেওয়ার ক্ষমতা প্রতিভাবানের, সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা রসিকের বা সমজদারের। নাড়া দেওয়ার ক্ষমতার অনুশীলনেই জীবন শিল্পমণ্ডিত হয়।

জীবনের দুটো শক্তি–নাড়া দেওয়ার শক্তি, আর সাড়া দেওয়ার শক্তি। নাড়া দেওয়ার শক্তি প্রতিভাবানের আর সাড়া দেওয়ার শক্তি সমজদারের। সাড়া দেওয়ার শক্তিটা খোদাদাদী, সমজদারের শক্তিটা সাধনা-লভ্য।

সমজদারি মানে মূল্যবোধের অনুশীলন। পিতার ধনে পোন্দারি করার সুযোগ পায় না বলে সমজদারদের মূল্যবোধের অনুশীলন করতে হয়। তাদের সাধনায় সমাজে মূল্যবোধ ছড়িয়ে পড়ে। সেটা একটা মদ-নয় ধরনের লাভ নয়, বিশেষ লাভ। এরই ফলে সমাজ সাধ্যানুসারে ক্ষমতা লাভ করে। মানুষের চলার পথটি সহজ করে দেওয়া নয়; কঠিন পথটি আনন্দময় করে তোলাই তার কাজ। শ্যামের বাঁশির দিকে কান রেখে পথের কাঁটা দলে চলার কায়দাটি সে বাতলে দেয়।

অধুনা সমজদারি কথাটা ক্রিয়েটিভিটির চেয়ে কম মূল্য পেলেও, আসলে কম মূল্য নয়। একটু তলিয়ে দেখলেই টের পাওয়া যাবে, সমজদারির হাতেই আত্মউৎকর্ষের ভার, ক্রিয়েটিভিটির হাতে নয়। ক্রিয়েটিভিটির হাতে কেবল আত্মপ্রকাশের ক্ষমতা। ভেতরে যা আছে তা বাইরে ঠেলে প্রকাশ করে দাও, এই তার হুকুম, ভেতরটা মেজেঘষে সুন্দর ও অনাবিল করে তোলো, অন্তরাত্মার পুষ্টিসাধন করো, এমন কথা সে বলে না। এই যে ভেতর থেকে বাইরে প্রকাশের তাগিদ এরই ফরাসি নাম ‘এলাভাইট্যাল’। বর্তমান জগৎ এরই প্রভাবে গতিচঞ্চল। প্রগতি এরই সন্তান। কেবল ব্যস্ততা, কেবল তাড়াহুড়া, কেবল ঠেলাঠেলি, অন্তরে কোনো গভীরতর প্রাপ্তির তাগিদ নেই। তাই, হালে কালচারের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ক্রিয়েটিভিটি কথাটা। গল্প কবিতা ও শিল্পসৃষ্টির দ্বারা সকলেই মানুষকে চমকে দিতে চায়, শিল্পসাহিত্যের প্রভাবে এসে নিজেকে সুন্দর ও মহান করে তুলতে চায় কম লোকই। আত্মমার্জিতির দিকে নয়, আত্মপ্রকাশের দিকেই সকলের ঝোঁক। সকলেই চায় প্রতিষ্ঠা। বছর বছর অজস্র পুস্তক প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও যে মানুষের তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না তার হেতুও এখানে। মানসভাণ্ডার পূর্ণ করে দেওয়ার দিকে ঝোঁক নেই বলে অধুনা মানুষের অন্তর জীবনটা ফাঁকা ও ফাপা হয়ে পড়ছে। গভীর অনুভূতিতে মূক হয়ে যাওয়ায়, নীরবতার গানে কান পাতার প্রবৃত্তি কারো ভেতরেই নেই। সকলেই চায় কেবল দিতে, নিতে নয়। প্রশংসালোলুপ লেখক আর পাঠকে সমাজ ছেয়ে যাচ্ছে। সকলের মুখে কেবল বিশ্বের কথা; নিজের কথা, নিজের অন্তরাত্মার কথা কেউ আর বলে না। কিন্তু যতই আমরা বিশ্ববিধ করছি, ততই-যে অন্তরের দিক দিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছি, সেদিকে কারো হৃক্ষেপ নেই। বিশ্ববুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তরের নিঃস্বতা ঢাকবার একটা উপায়, এমনি মনে হয়। গভীরতর প্রাপ্তির দিকে নজর নেই বলে রাজনীতির মতো সংস্কৃতি জিনিসটাও হইচই চর্চা হয়ে পড়েছে। সেখানেও দেখা দিয়েছে বুলিসর্বস্বতা। একটা আইডিয়ার প্রতিধ্বনি হয়ে চিন্তার বালাই থেকে মুক্তি পাওয়াই অধুনাতন সংস্কৃতির উদ্দেশ্য।

তাই পুঁথির প্রতাপ দেখে যখন মোহিতলাল শঙ্কিত হন তখন তার বিরুদ্ধে কিছুই বলার থাকে না। সত্যিই তো পুঁথি আজ জগদ্দল শিলার মতো মানুষের বুকের ওপর চেপে বসেছে, তার অন্তর বিকাশে সহায়তা করছে সামান্যই। ভূমাপ্রীতি তার লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য কেবল খণ্ডজ্ঞানে মস্তিষ্ক ভারাক্রান্ত করে তোলা। তাই আত্মার উজ্জীবন আর হয় না। লেখক কি পাঠক কেউই রূপান্তর কামনা করে না, সকলেই চায় শক্তির জলুস দেখিয়ে বাহবা পেতে। পাঠকদের যে গ্রহণ তাও যেন সেদিকে লক্ষ্য রেখেই। কথা বলে লোককে চমকে দেওয়ার জন্যেই তারা বই পড়ে, আত্মপুষ্টির জন্য নয়। বই পড়ার দরুন বুদ্ধিরই কসরত হয়, আত্মার অনুশীলন হয় না। মুখে মুখে আধুনিক ইনটেলেকচুয়াল বুলি, ভেতরে একটা ছদাবেশ, অসভ্যতার ওপর সভ্যতার পলেস্তারা। সকলেই চায় বিশ্বকে পরিবর্তিত করতে, নিজের রূপান্তরের দিকে কারোই কেঁক নেই। অথচ বিবের চেয়ে নিজের ওপরই যে আমাদের অধিকার বেশি, নিজেকেই যে সহজে বদলানো যায়, সে কথাটা আমাদের মনে থাকে না। নিজেকে নীরবে ফুলের মতো বিকশিত করে তোলার আনন্দ আজ আর কেউ চায় না, সকলেই চায় সমারোহ প্রকাশ। করার দিকেই সকলের ঝোঁক, হওয়ার দিকে নয়। অথচ কাশ্চারের উদ্দেশ্য-যে কিছু করা নয়, কিছু হওয়া সুন্দর হওয়া, প্রেমিক হওয়া, নবীন হওয়া এতো একরকম অবিসংবাদিত সত্য।

কিন্তু সচরাচর এই সত্যের প্রতি নজর রাখা হয় না বলে একপ্রকার সস্তা সংস্কৃতিতে জীবন ছেয়ে যায়। তাতে থাকে কেবল বুদ্ধির চটক, আত্মার গভীরতা নয়। তাই তা দিয়ে জীবনের দীনতা দূর হয় না। পুস্তক-বাহুল্যের দরুন এই-যে সস্তা সংস্কৃতি, এর অন্তঃসারশূন্যতার প্রতি গ্যেটে বহুপূর্বেই ইঙ্গিত করেছেন :

আমরা যে-যুগে বাস করছি, তাতে প্রকর্ষ এমন ছড়িয়ে পড়েছে যে, তরুণরা সেসব পাচ্ছে যেন নিশ্বাস প্রবাসের মতো সহজভাবে। কাব্য-দর্শন বিষয়ক চিন্তা আন্দোলিত হচ্ছে তাদের মধ্যে, তারা সেসব গ্রহণ করছে নিশ্বাস প্রশ্বাসের মতো, মনে করছে সেসব তাদের নিজস্ব সম্পদ, প্রকাশও করছে সেসব সেই ভঙ্গিতে। কিন্তু যুগের কাছ থেকে যা পেয়েছে তা যখন ফিরিয়ে দিচ্ছে সেই যুগকে, তখন তারা হয়ে পড়ছে নিঃস্ব। তারা যেন ফোয়ারা, কিছুক্ষণের জন্য চলে তাতে জলের খেলা কিন্তু জল নিঃশেষিত হবার সঙ্গে হয় তার শেষ।*[* কবিগুরু গ্যেটে ২য় খণ্ড–কাজী আবদুল ওদুদ]

 আমাদের বেলাও তাই ঘটছে। যুগের জিনিস যুগকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরে আমরাও নিঃশেষিত হয়ে পড়ি। গভীরতর প্রাপ্তির দিকে নজর নেই বলেই এমনটি ঘটে। নইলে জীবন এমন ফাঁকা হয়ে পড়ত না।

এই ধরনের বুদ্ধিসর্বস্ব অন্তঃসারশূন্য মানুষের দিকে তাকিয়ে গ্যেটে যে নৈরাশ্যব্যঞ্জক উক্তি করেছেন তাও এখানে উদ্ধৃতিযোগ্য। তিনি বলেছেন :

মানুষ আরো সচেতন আরো কুশাগ্রবৃদ্ধি হবে; কিন্তু থাকবে না তাদের মহত্ত্ব, সুখ, কর্মদক্ষতা, যদিও থাকে তবে বিশেষ বিশেষ যুগে। এমনকালের কথা ভাবতে পারি যখন ঈশ্বর মানুষে আর কোনো আনন্দ পাবেন না। তখন সব ভেঙেচুরে তিনি গড়বেন নতুন করে।*[ কবিগুরু গোটে ২য় খণ্ড-কাজী আবদুল ওদুদ]

আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার জীবন উপভোগ করবার জন্য। যদি উপভোগনীয় কিছুই না রইল তবে তাকে আর রেখে কী লাভ? আল্লাহ্ উপভোগ করেন মানুষের ভেতরের বেদনশীলতা; আর তা বুদ্ধির ব্যাপার নয়, আত্মার ব্যাপার; তাই আত্মার তাগিদ তথা সৌন্দর্যের তাগিদ। মহত্ত্বের তাগিদ যখন ফুরিয়ে যায় তখন মানুষে আর আল্লাহর রুচি না-হওয়ারই কথা। আল্লাহ্ বেদনাহীন তথা মহত্বহীন জীবন পছন্দ করেন না।

(‘Man is not the last word of God’ বলে একালের লেখক বার্নার্ড-শও মানুষকে ভয় দেখিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিখ্যাত গ্রহ ‘ব্যাক টু ম্যাথুশেলায়। আর হাক্সলির ব্রেভ নিউ ওয়ার্লড-এর অনুপম চরিত্র ‘স্যাভেজ’এর সৃষ্টিও এই বেদনাহীনতার প্রতিবাদেই।)

যেখানে পশুমানুষটি তলিয়ে গিয়ে মানুষ-মানুষটি বড় হয়ে ওঠে না; যেখানে প্রতিযোগিতা, প্রতারণা, প্রতিহিংসা প্রভৃতি নীচপ্রবৃত্তিসমূহের জয়জয়কার; সেখানে ক্রিয়েটিভিটি থাকতে পারে, কিন্তু সমজদারি নৈব নৈব চহারগীজ নিস্ত। রিফাইনমেন্ট সমজদারিরই দান, ক্রিয়েটিভিটির নয়। ক্রিয়েটিভিটির গায়ে অনেক সময় লেগে থাকে আদিমতার গন্ধ। তা দিয়ে বড়কিছু সৃষ্ট হলেও অনুপম কিছু সষ্ট হয় না। সমজদারির লক্ষ্য রূপান্তর–নিজের ভেতরের সুন্দর ও মহৎ মানুষটির উন্মোচন। যেখানে এই রূপান্তর নেই, সেখানে সমজদারি নেই সেখানে আছে কেবল চমক লাগানো শক্তির প্রকাশ। সমজদারি তো আর ক্রিয়েটিভিটির মতো একটা হঠাৎ-আসা ব্যাপার নয় যে, জীবনের ওপর প্রভাব না রেখে চলে যাবে। তা সাধনাল ব্যাপার আর সাধনার প্রভাব থাকেই। ক্রিয়েটিভিটি কথাটায় শক্তির প্রকাশই বড় হয়ে ওঠে, আত্মমার্জিতি নয়। সবচেয়ে বড় সৃষ্টি যে আত্মসৃষ্টি, ক্রিয়েটিভিটি বুলিবাদীদের পক্ষে তা বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাদের জীবন ও রচনা অসংস্কৃতির গন্ধমুক্ত হতে পারে না। জোয়ারের জলের মতো কোথাকার একটা শক্তি এসে তাদের তোলপাড় করে দিয়ে যায়, তারপরে যে দীনতা সে-দীনতা। জীবনের ওপর রচনার কোনো প্রভাব থাকে না বলে তাদের জীবন আর ইতর জীবনে বিশেষ কোনো পার্থক্য থাকে না। ক্ষণদ্যুতিকে স্থায়িত্ব দানের চেষ্টা হয় শুধু রচনায়, জীবনে নয়। তাই জীবন ফাঁকা থেকে যায়। (অথবা ভুল বলেছি, জীবন কোনোদিন ফাঁকা থাকে না, আল্লাহ না থাকলে সেখানে শয়তান থাকেই, সুন্দর না থাকলে তা অসুন্দরের আস্তানা হয়ে পড়েই।)

সমজদারদের কিন্তু ভিন্নধারা। অপরকে চমকে দেওয়া নয়, নিজেকে খুশি ও সুন্দর করাই তাদের উদ্দেশ্য। তা বিনয়ের সন্তান, অহমিকার নয়। নিজের কৃত্রিম ঔজ্জ্বল্যে পীড়া বোধ করা সমজদারিরই পরিচয়। অপরেরা যেখানে গর্বে মাথা উঁচায়, সমজদাররা সেখানে লজ্জায় অধোবদন হয়। মিথ্যা ঔজ্জ্বল্যে তারা তৃপ্ত হতে চায় না, ফাঁকি দিয়ে স্বর্গ কিনতে তারা নারাজ। তারা চায় আঁটি জিনিস। কৃত্রিমপণ্যে-যে জীবনের পরা ব্যর্থ হয়ে যায় তা তারা সবচেয়ে ভালো বোঝে।

বলেছি, সমজদারি ব্যর্থতার দান; প্রতিভা প্রকাশ করতে গিয়ে যারা ব্যর্থ হয় সাধারণত তারাই সমজদার হয়। অকৃতকার্যতাটা এখানে শাপে বর হয়ে দেখা দেয়। তাই ব্যর্থতা জিন্দাবাদ না বলে উপায় নেই। ব্যর্থতার দিকে মানুষকে ডাকুন, সমাজ সমৃদ্ধ হবে। বড় কাজে হাত দিয়ে যারা ব্যর্থ হয় তারাই তো সমাজকে সমৃদ্ধ করে তোলে। এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার :সমজদারও সৃষ্টি করে, কিন্তু সে বই নয়, শিল্প নয়, নিজের অন্তরাত্মা; আর অন্তরাত্মার চেয়ে বড় সৃষ্টি আর কী হতে পারে?

না, ব্যর্থতাকে ভয় করবেন না। সাহিত্যশিল্পের পথে পা বাড়ানো কি ব্যর্থতার পথে পা বাড়ানো নয়? ওপথে সার্থকতা লাভ করে আর কটি লোক? কিন্তু যারা ব্যর্থ হয় তাদের জীবনেও এমন একটা মূল্যবান জিনিসের আবির্ভাব হয় যা না হলে সমাজ-সভ্যতা সংস্কৃতির পথে এগিয়ে যেতে পারে না। এ ধরনের ব্যর্থলোকের দ্বারাই সমাজে নবপ্রাণ সঞ্চারিত হয়। পলিমাটি ফেলে-ফেলে এরাই সমাজকে উর্বর করে দিয়ে যায়, তাই এদের মূল্য অনেক। শুধু ঢাউস নামের অধিকারীদের মনে রাখা তো অনেক সময় একপ্রকারের মোহ, সত্যকার সচেতনতার পরিচয় দেওয়া হয় এদের মনে রাখলেই।

এই-যে সমজদার-সম্প্রদায়, এরা খুশি হওয়া আর খুশি করার মন্ত্রে দীক্ষিত। এদের সাধনা দুঃখ ভুলবার সাধনা, দুঃখ দূর করবার সাধনা নয়। মন ভোলাবার মন্ত্র এরা জানে। একটা বড়কিছুর কাছে আত্মসমর্পণ করে এরা নিজেদের অবিক্ষুব্ধ রাখে।

.

পরিশিষ্ট

ওপরে যে-গতির কথা বলা হয়েছে, সে সম্বন্ধে আরো কয়েকটি কথা বলতে হচ্ছে। গতিকে মানলে হয়তো চলে না, জীবনের জড়ত্ব ঘোচাবার ক্ষমতা তারই হাতে। কিন্তু অসহায়ের মতো কেবল গতিকে মানলে জীবনে কতৃত্ব থাকে না। গতির মধ্যে স্থিতিকেও জানতে হবে। আর তা সম্ভব হয় চিরন্তনকে উপলব্ধি করলেই। শিল্পী-সাহিত্যিকরা তা-ই করেন। গতি থেকে চিরন্তনকে ছিনিয়ে নিয়ে রূপায়িত করাই এঁদের কাজ। আর রূপায়ণ মানে স্থিরতা দান–’অসীমের সীমা রচনা করা।” অনন্ত কালপ্রবাহ এই-যে স্থির ধ্রুবতারাবৎ সৃষ্টিসমূহ এরাই সংস্কৃতির উপাদান। এদের সম্বন্ধে সচেতন হয়েই আমরা মূল্যবোধের পরিচয় দেই।

কালপ্রবাহ অনবরত বয়ে চলেছে। বিরতিহীন তার গতি। কিন্তু এই চিরপ্রবহমান কালধারার বাধাকে অগ্রাহ্য করে এমন কতিপয় লোক আকাশে মাথা তুলে দাঁড়ান, আলোকস্তম্ভের মতো নিয়ত সম্মুখে থেকে যারা মানুষের পথচলাকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলেন। তাঁরাই মানববন্ধু। তাঁদের দানে জীবন ভরে তোলাই সমৃদ্ধি।

বুদ্ধদেব-কনফুসিয়াস-সক্রেটিস-যিশুখ্রিস্ট-হজরত মুহম্মদ, কালিদাস-হাফেজ শেক্সপিয়ার-গ্যেটে-রবীন্দ্রনাথ, কালের গর্জন অগ্রাহ্য করে এঁরা দাঁড়িয়ে আছেন হিমালয়ের মতো উন্নতশিরে। এঁদের উন্নতশীর্ষকে অন্তরে ধারণ করতে না পারলে ‘সংস্কৃতিবান’ হওয়া যায় না। তাই সংস্কৃতির জন্য অতীতের জ্ঞান এত প্রয়োজনীয়। কেবল বর্তমান তরঙ্গের চূড়ায় চূড়ায় আবেগে উল্লাসি নৃত্য করলে সংস্কৃতি হয় না। অতীতে মানপর্যটন প্রয়োজনীয়। অতীতেরই একটা রূপ আছে, বর্তমানের নেই। বর্তমান চিরচলন্ত, চিরপরিবর্তমান, তাই রূপের সীমায় বাঁধা পড়ে না। অতীত রূপের সীমায় বাঁধা, সে একখানা ছবির বই। আর এই ছবির বইখানা হাতড়াতে হাতড়াতে অন্তরে যে সৌন্দর্য, যে-শ্রদ্ধা জাগে তা-ই সংস্কৃতি। (বলাবাহুল্য, এখানে অতীতের সুহৃদ সম্মিত রূপের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে, প্রভুসম্মিত রূপের প্রতি নয়। প্রভুসমিত রূপ-যে অন্তরাত্মাকে চেপে রাখে, বিকশিত করে না, সে তো একরকম জানা কথা।)।

এখানেই প্রগতির সঙ্গে সংস্কৃতির বিরোধ বাধে। প্রগতি মানে কালের যাত্রাপথটি মসৃণ ও অব্যাহত রাখা। যেখানে-যেখানে অন্যায়-অবিচারের আবর্জনা পুঞ্জীভূত হয়ে সমাজের সার্থক প্রকাশকে ব্যাহত করে সেখানে সেখানে সেই আবর্জনাপ সরিয়ে দিয়ে গতিধারাকে মুক্ত করাই প্রগতির কাজ। কিন্তু শুধু তা করলেই সংস্কৃতি হয় না। সংস্কৃতি মানে কেবল কল্যাণ নয়, সৌন্দর্যও। সৌন্দর্যই বেশি। অনেক সময় অকল্যাণকে বরণ করে নিয়েই সৌন্দর্য সাধন করতে হয়। আগে কল্যাণ পরে সৌন্দর্য এমন তক খাটে না।

এই সৌন্দর্যসাধনের জন্য স্থিতির প্রয়োজন। দিনের চলমান অবস্থায় যে-সৌন্দর্য চোখে পড়ে না, রাত্রের স্থির অবস্থায় তাই মানসচক্ষে ফুটে ওঠে। তখন সৌন্দর্য আমরা শুধু দেখিনে, সৃষ্টিও করি; কেননা চোখের কাজের চেয়ে মনের কাজটাই তখন বড় হয়ে ওঠে। দিনে যে-সৌন্দর্য চেতনের ওপর আলগাভাবে পরশ বোলায়, রাত্রে তাই ফুটে ওঠে অচেতনের মায়ায় উজ্জ্বল হয়ে। গ্রহ-তারা দীপ জ্বালে যেন দিনের স্মৃতিকে মধুরতর, উজ্জ্বলতর করবার উদ্দেশ্যেই। দিনে কাজ, ছুটাছুটি, রাত্রে ধ্যান, কল্পনা। রহস্যের উপলব্ধি করা যায় রাত্রেই, দিনে নয়।

তাই দরকার স্থিরতার। কি ব্যক্তির জীবনে, কি জাতির জীবনে স্থিরতার প্রয়োজন অনিবার্য। স্থিরতার মানেই একটা অবস্থাকে মেনে নেওয়া, সেই অবস্থায় দুঃখবেদনা নিয়ে ছটফট না-করা। সার্থক নেতৃসম্প্রদায় তাই সমাজকে এমন একটি কালের তীরে এনে পৌঁছে দেন যেখানে নিশ্বাস ফেলবার ফুরসত পাওয়া যায়। নইলে কেবল প্রগতির তাগিদে চলতে আত্মহারা হয়ে পড়তে হয়। তখন সৌন্দর্য দেখার দৃষ্টি আর থাকে না। কাটা তোলার কাজে অতিরিক্ত রত থাকার দরুন ফুল দেখার দৃষ্টিটা বেমালুম হাতছাড়া হয়ে যায়।

(কবির ‘বুতশিকন’কে যে-কথাটা বলেছিলেন এখানে তা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন : হে বুতশিকন তুমি-যে মূর্তি ভেঙে চলেছ তাতে তোমার ক্ষতিই হচ্ছে, কেননা তুমি কেবল মূর্তিই দেখতে পাচ্ছ, আল্লাহকে আর উপলব্ধি করতে পারছ না। তেমনি একালের প্রগতিবাদীদের সম্বোধন করে বলা যায় : হে প্রগতিবাদী সম্প্রদায়, তোমরা শুধু অন্যায়-অবিচারের কাঁটাই দেখলে–পৃথিবীপুষ্পে সৌন্দর্য আর উপলব্ধি করতে পারলে না। তোমরা দুর্ভাগ্য।)

বলাবাহুল্য এখানে প্রগতির বিরুদ্ধে বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। প্রগতি কোথায় সৌন্দর্যের গায়ে হাত তুলতে পারে সেদিকে ইঙ্গিত করাই আমার উদ্দেশ্য। প্রগতি আম-দরবারের ব্যাপার, সংস্কৃতি খাস-দরবারের। আম-দরবারের দাবি যখন প্রবল হয়ে ওঠে তখন খাস দরবারের দাবিটা বানচাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেটা যেন না হয়।

কাঁটা তোলার ব্যর্থতা এখানে যে, কাটার অন্ত নেই। একভাবে-না-একভাবে তা দেখা দেবেই। তাই কাঁটা তোলার ব্যর্থতা সম্বন্ধে সচেতন আধুনিক কবির মুখে শুনতে পাই :

ফুল্লধরার কাঁটা তুলে তুলে আঙুল রাঙাব কত,
আত্মঘাতীর মতো।
আমার ধরণী শ্যামা অপসরা
নাচে শিরে ধরি শোভার পসরা
কোথা রে মৃত্যু কোথা তব জরা
এ দেখা দেখিব কবে?
অন্য দেখায় কী আমার বলো হবে।*[*রাখী-অন্মদাশংকর রায়।]

এই-যে সৌন্দর্য দেখার দৃষ্টি, এ প্রগতির দান নয়, সংস্কৃতির দান। (ওস্তাদি গানের অনুশীলনে প্রগতির মাথাব্যথা থাকার কারণ নেই, কিন্তু সংস্কৃতির আছে।) সংস্কৃতি সৌন্দর্যভুক। প্রগতি কল্যাণভুক। তাই কাঁটা বাছার কাজে জীবন যাতে সাঙ্গ হয়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। মাঝে মাঝে জগতের দুঃখ-বেদনার কথা ভোলা ভালো। তাতে লাভ এই যে, নিজেকে আর কাঁটা করে তুলতে হয় না। ফলে অন্তত একটা কাটা থেকে জগৎ মুক্তি পেয়ে যায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *