০৯. বাবুবিলাসীদের গণিকাযাপন

০৯. বাবুবিলাসীদের গণিকাযাপন

‘বাবু কালচার’ নিয়ে আলোচনা হবে আর গণিকা আসবে না, তা কখনো সম্ভব? তা না-হলে যে সানি লিওনকে ‘ভার্জিন’ বলার সামিল হবে! বাবু, অথচ তিনি গণিকা সঙ্গ লাভ করেননি বা সঙ্গ লাভের জন্য উতলা হননি, এমন ‘বাবু’ বিরল। পরে আসছি সে কথায়। ‘নববাবুবিলাস’ ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি ব্যঙ্গকৌতুক নকশা। প্রকাশকাল ১৮২৫। প্রমথনাথ শর্মন ছদ্মনামে প্রকাশিত। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও আশুতোষ ভট্টাচার্য এটিকে প্রথম বাংলা উপন্যাস’-এর মর্যাদা দিলেও অধিকাংশ সমালোচক এটির উল্লেখ করেছেন একটি কৌতুক নকশা হিসাবেই পরে নববিবিবিলাস’ নামে ভবানীচরণ এই গ্রন্থের একটি দ্বিতীয় পর্বও রচনা করেন। ‘নববাবুবিলাস’ গ্রন্থের মূল উপজীব্য বিষয় উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতার উচ্চবিত্ত সমাজের বহুসমালোচিত বাবু’ সংস্কৃতির অন্ধকার দিক। বলা যায়, এটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত প্রথম বাংলা কথাসাহিত্য। গ্রন্থটি চারটি খণ্ডে বিভক্ত–অঙ্কুর খণ্ড, পল্লব খণ্ড, কুসুম খণ্ড ও ফল খণ্ড। অঙ্কুর খণ্ড, অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের অঙ্কুর অধ্যায়ে সেকালের উদ্ধৃঙ্খল যুবসমাজের ও ঔপনিবেশিক শিক্ষাপ্রণালীর প্রতি কৌতুক কটাক্ষ নিক্ষেপ করা হয়েছে। পল্লবখণ্ড, অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের পল্লব অধ্যায়ে নব্যবাবুদের কুসঙ্গে পড়ার চিত্র বর্ণিত হয়েছে। কুসুমখণ্ড, এই খণ্ডে বাবুদের অধঃপতনের চরম পর্যায়। বাবুর ‘নব্যবাবু’ নামধারণ, গণিকাগমন ও বিলাসব্যসন এবং ফল খণ্ড অর্থাৎ বাবুরূপ বৃক্ষের ফল অধ্যায়ে বাবুপত্নীর বিরহ, খেদোক্তি ও অবশেষে করুণ পরিণতি বর্ণিত হয়েছে।

ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে—‘বাবুর উপাখ্যান’ বা ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যঙ্গ আখ্যানগুলি অর্ধশিক্ষিত ধনী সন্তানদের কুৎসিত আমোদপ্রমোদের কথা সাধুভাষায় বলা হলেও উদ্দেশ্যটি তত সাধু ছিল না। বাইরের দিক থেকে এসব নকশায় রঙ্গকৌতুক, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও গল্পের আমেজ থাকলেও ভিতরে ছিল ‘পর্নো’ (porno), কেচ্ছা-কেলেংকারি। সমাজের কুরীতি দেখিয়ে সভ্যভব্য মানসিকতা সৃষ্টি, এই জন্যই ভবানীচরণ ও অন্যান্য নকশাকারেরা কলম ধরেছিলেন। কিন্তু রোগের চেয়ে ঔষধই হয়েছিল প্রাণঘাতী। যাই হোক, উনিশ শতকের কলকাতার বাবু কালচারের একটি উলঙ্গ রূপ চিত্রিত করে বাংলা সাহিত্য ও সামাজিক ইতিহাসে এই গ্রন্থটি এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে।

এখন প্রশ্ন হল এই বাবু সমাজের সৃষ্টি এবং বাবু কালচারের উত্থান হল কেন? বাবুরা আকাশ থেকে পড়ল নাকি! না, হিন্দু বাঙালির অধঃপতন হল দীর্ঘ আটশো বছরের মুসলিম শাসনে নয়, অধঃপতন হল খ্রিস্টান শাসনের শুরুতেই। ১৭৫৭ সালে সিরাজের বিরুদ্ধে পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের মধ্য দিয়ে ইংরেজ ব্রিটিশরা বাংলার শাসন ক্ষমতা লাভ করে। খ্রিস্টান ইংরেজরা ক্ষমতা লাভ করেই তাঁদের প্রণীত শাসনব্যবস্থা ও ভূমিব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এর ফলে বাংলার গ্রাম্যসমাজের প্রচলিত কাঠামোটা ভেঙে পড়ল। ব্রিটিশরা বাংলার ক্ষমতা লাভের পর ক্রমাগত করের চাপে, দুর্ভিক্ষে গ্রামের দরিদ্র মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ে। অস্তিত্ব রক্ষায় তাঁরা একে একে গ্রাম ছেড়ে শহর কলকাতার আসতে শুরু করে দিল। কলকাতা শহর হয়ে উঠল এই সব ছিন্নমূল মানুষের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। খ্রিস্টান ইংরেজদের সৃষ্ট এইসব নিম্নবর্গের ছিন্নমূল এবং উচ্চবর্গের শোষকরা একসঙ্গে কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করতে থাকল। সতেরো শতকের শেষদিকে ইংরেজদের দ্বারা কলকাতা নগরী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

সতেরো শতকের শেষার্ধে খ্রিস্টান (ইংরেজ) শাসন স্থাপিত হওয়ায় রাতারাতি কলকাতার গুরুত্ব রাজধানী মুর্শিদাবাদকে ছাড়িয়ে গেল। গ্রাম থেকে কলকাতার নতুন নতুন মানুষের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন রঙ্গও জমে উঠছিল। বিনয় ঘোষ লিখেছেন—কলকাতা শহরে প্রথমে যে ইংরেজরা এসেছিল, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ ছিল অস্তগামী মধ্যযুগের উচ্ছিষ্টতুল্য প্রতিনিধি। নতুন শিক্ষা বা নতুন সভ্যতার অগ্রদূত তাঁরা ছিল না। তাঁরা দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হত, হিন্দুদের পুজোপার্বণে অংশগ্রহণ করত, তৎসহ হিন্দুদের মতোই তুকতাকে বিশ্বাস করত। উচ্ছিষ্টতুল্য প্রতিনিধিদের পিছন পিছন চুল পরিচর্যাকর, বাজিকর ইংরেজরাও এসেছিল। বাংলার জমিদারদের মতো খানাপিনা ও জীবনযাপন করাটাকেই তখন ইংরেজরা আভিজাত্য মনে করত।

বঙ্গদেশে খ্রিস্টান শাসন চালু হলে ছিন্নমূল মানুষের পাশাপাশি ইংরেজদের স্পর্শ পেয়ে প্রতাপশালী ‘বাবু’ নামে এক নতুন শ্রেণির উদ্ভব হল। প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে শিক্ষিত, ধনী পুরুষদের নামের আগে ‘বাবু’ শব্দের ব্যবহার শুরু হয়। অবশ্য তখনও ‘বাবু’ শব্দের ব্যবহার মোটামুটি ধনী, শিক্ষিতদের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল। বাবু’ পদ পূর্বে নিজে থেকে কারও ব্যবহার করার অধিকার ছিল না। এটা ছিল মুসলিম নবাব প্রদত্ত উপাধি। সম্মানিত ধনাঢ্য ব্যক্তি ছাড়া নবাবেরা অন্য কাউকে এই উপাধি দিতেন না। কিন্তু ইংরেজ শাসনের অবসানের পর সকলেই যত্রতত্র ‘বাবু’ হয়ে গেলেন।

এ সময়ে পুরোনো ধনী সম্প্রদায় বিদায় নিলেন। আবির্ভাব হল এক নব্য ধনী সম্প্রদায়ের। এই নব্য ধনী সম্প্রদায়ই বাবু’। এঁরাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং কোম্পানির সাঙ্গোপাঙ্গদের আশীর্বাদে অল্পকালের মধ্যেই বেশ ধনী হয়ে ওঠেন। রাজা, মহারাজা উপাধি নিয়ে জুড়িগাড়ি, প্রাসাদোপম বাড়ি, মোসাহেব আর দাসদাসীদের নিয়ে কলকাতার জাঁকিয়ে বসেন। এর পাশাপাশি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ চালু হওয়ার পর বাংলায় নতুন জমিদার শ্রেণির উদ্ভব হয়। এঁদেরই একটি অংশ প্রজাদের যারপরনাই শোষণ করে নিঙড়ে নিয়ে প্রভূত বিত্তশালী হয়ে উঠছিলেন। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এই ধনিক এবং নতুন জমিদাররাই কলকাতার বসবাস করে ‘বাবু’ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হয়ে ওঠেন। গণিকাবিলাস সহ বিভিন্ন কিসিমের আমোদপ্রমোদই এই বাবুকুলের একমাত্র আরাধ্য ছিল। নানারকম পুজো উপলক্ষে বা কোনোরকম উপলক্ষ ছাড়াই নাচ, গান, যাত্রা, থিয়েটার, বুলবুলির লড়াই, হাফ-আখড়াই, কবিগানের আয়োজনে এই বাবুরা থাকত সদাব্যস্ত। কার আয়োজন সব থেকে জমকালো হল, তা নিয়ে রীতিমতো অলিখিত প্রতিযোগিতা চলত। জলের মতো অর্থ ব্যয় হত। ইংরেজরা নিমন্ত্রিত হত। ইংরেজরা বাবুদের তারিফ করত। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ধনী ও জমিদারদের উপাধি দিত। এই উপাধির লোভে নব্য ধনীরা উৎসবের আয়োজনে বহগুণ বৃদ্ধি করত। এ বলে আমায় দেখ, ও আমায় দেখ। বাবু’ নামের রম্যরচনায় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন–“যিনি উৎসবার্থ দুর্গাপূজা করিবেন, গৃহিণীর অনুরোধে লক্ষ্মীপূজা করিবেন, উপগৃহিণীর অনুরোধে সরস্বতী পূজা করিবেন, এবং পাঁঠার লোভে গঙ্গাপূজা করিবেন, তিনিই বাবু।”

ইংরেজরা ক্ষমতায় এসে প্রথম নিজেরাই জমিদার হল। তারপর নতুন একশ্রেণির জমিদার-তালুকদার সৃষ্টি করল এবং নিজেদের লুণ্ঠনের বকযন্ত্র চালু রাখার জন্য দালাল, গোমস্তা, মুৎসুদ্দি, দেওয়ান নিয়ে একপ্রকার এদেশি ‘জেন্টু’ গড়ে তুলল। জমিদার ও জেন্টু উভয় শ্রেণির হাতে যথেষ্ট পয়সা জমল, কিন্তু পয়সার কোনো সদগতি হল না। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিকের মতো এই মজুত পয়সা শিল্পবাণিজ্যের ক্ষেত্রে অবাধে নিয়োগ করা গেল না। সুতরাং হক্কের ধন ফক্কে উড়তে লাগল। বাঁদরের বিয়েতে ও বাপের শ্রাদ্ধে লাখ লাখ টাকা খরচ করে, বাইজি নাচে, টপ্পা খেউড়ে, বুলবুলির আর মেড়ার লড়াইয়ে, ইংরেজ প্রভুদের উপঢৌকন দিয়ে, উৎসব-পার্বণে বিদেশি প্রভুদের ও দেশি দরিদ্র নারায়ণের সেবা করে।

নতুন জমিদারদের সম্পর্কে হুতোম প্যাঁচার নক্সায় কালীপ্রসন্ন সিংহ লিখছেন, ক্ষুদ্র নবাব, ক্ষুদ্র নবাব দিব্যি দেখতে দুধে আলতার মতো রং, আলবার্ট ফ্যাশানে চুল ফেরানো, চীনের শূয়রের মতো শরীরটি ঘাড়ে-গদ্দানে, হাতে লাল রুমাল ও পিচের ইস্টিক, সিমলের ফিনফিনে ধুতি মালকোঁচা করে পরা, হঠাৎ দেখলে বোধ হয়, রাজারাজড়ার পৌত্তর; কিন্তু পরিচয়ে বেরোবে ‘হৃদে জোলার নাতি!’ কোনো কোনো বাবু আবার নিজস্বতার কারণেও প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন–“গোবিন্দরামের ছড়ি/উমিচাঁদের দাড়ি/নকু ধরের কড়ি/মধু সেনের বাড়ি”। হুতোম প্যাঁচার নকশায় কালীপ্রসন্ন সিংহ লিখেছেন–“সহরে ইংরাজী কেতার বাবুরা দুটি দল হয়েছেন; প্রথম দল উঁচুকে সাহেবের গোবরের গস্ত, দ্বিতীয় ‘ফিরিঙ্গীর জঘন্য প্রতিরূপ’; প্রথম দলের সকলি ইংরাজি কেতা, টেবিল-চেয়ারের মজলিস, পেয়ালা করা চা, চুরোট, জগে করা জল, ডিকান্টরে ব্রান্ডি ও কাঁচের গ্লাসে সোলার ঢাকনি, সালুমোড়া; হরকরা ইংলিশম্যান ও ফিনিক্স সামনে থাকে, পলিটিক্স ও ‘বেস্ট নিউজ অব দি ডে’ নিয়েই সর্বদা আন্দোলন। টেবিলে খান, কমড়ে হাগেন এবং কাগজে পোঁদ পৌঁছেন। এঁরা সহৃদয়তা, দয়া, পরোপকার, নম্রতা প্রভৃতি বিবিধ সগুণে ভূষিত, কেবল সর্বদাই রোগ, মদ খেয়ে জুজু, স্ত্রীর দাস, উৎসাহ, একতা, উন্নতির ইচ্ছা একেবারে হৃদয় হতে নির্বাসিত হয়েছে; এঁরাই ওল্ড ক্লাস।” হুতোম প্যাঁচার নকশায় কালীবাবু বাবুদের চরিত্র নিয়ে একটা ছড়া লিখলেন। আপনিও পড়ন–“আজব শহর কলকেতা।/রাঁড়ি বাড়ি জুড়ি গাড়ি মিছে কথার কি কেতা।/হেতা খুঁটে পোড়ে গোবর হাসে বলিহারি ঐক্যতা;/যত বক বিড়ালে ব্ৰহ্মজ্ঞানী, বদমাইসির ফাঁদ পাতা/পুঁটে তেলির আশা ছড়ি, শুড়ি সোনার বেনের কড়ি,/খ্যামটা খানকির খাসা বাড়ি, ভদ্রভাগ্যে গোলপাতাহদ্দ হেরি হিন্দুয়ানি, ভিতরে ভাঙ্গা ভড়ং খানি,/পথে হেগে চোখ রাঙ্গানি, লুকোচুরির ফেঁরগাঁতা।/গিলটি কাজে পালিস করা, রাঙ্গা টাকায় তামা ভরা,/হুতোম দাসে স্বরূপ ভাসে, তফাৎ থাকাই সার কথা।” শিবনাথ শাস্ত্রীর কলম সাক্ষ্য দিচ্ছে–“রাত্রিকালে বারাঙ্গণাদিগের গৃহে গৃহে গীতবাদ্য ও আমোদপ্রমোদ করিয়া কাল কাটাইত এবং খড়দহের ও ঘোষপাড়ায় মেলা এবং মাহেশের স্নানযাত্রা প্রভৃতির সময়ে কলিকাতা হইতে বারাঙ্গণাদিগকে সঙ্গে লইয়া দলে দলে নৌকাযোগে আমোদ করিতে যাইতেন।”

‘বাবু’ সম্পর্কে চমৎকার সব কথা লিখেছেন কালীপ্রসন্ন সিংহ—বাবু মাত্রেই ধনী, কিন্তু ধনী হলেই বাবু হয় না। রামদুলাল সরকারের টাকা ছিল, কিন্তু বাবু হননি। তিনি অতি দরিদ্র থেকে বাংলার শ্রেষ্ঠ ধনী হয়েছিলেন। খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। রামদুলাল দু-বেলা নিরামিষ খেতেন। দুপুর বেলা ভাত দুধ আর দু-একটি। মিঠাই আর রাতে আটার রুটি। খুব সাধারণ পোশাক পরতেন। নিজের ছেলের বিয়েতে তিনি শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কয়েকদিনের জন্য একজন সিপাহীকে নিয়োগ করেন। সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত রামদুলাল সাধারণ বেশে বিবাহ সংক্রান্ত কাজ দেখাশুনা করতে গিয়ে কাজ শেষে পুনরায় গৃহে প্রবেশ করতে চাইলে সিপাহী রামদুলালকে চিনতে না পেরে পথরোধ করে। কারণ ধনী লোকদের জীবনযাপন এত সাধারণ হতে পারে সিপাহীটি ভাবতেই পারেনি। সাদাসিধা জীবনযাত্রায় অভ্যেস্ত মানুষ ‘বাবু’ হতে পারে না। বাবু হতে গেলে কুকুরের বিয়েতে লাখ টাকা খরচ করা, চার ঘোড়ার গাড়ি চড়ে ভেঁপু বাজিয়ে স্নান করতে যাওয়া, দু-একটি রাঁড় রাখা, রক্ষিতাদের দালানকোঠা করে দেওয়া, পায়রা ওড়ানো, বিদ্যাসুন্দরের আসর বসানো, শনিবারের রাতে বাই-বেশ্যা নিয়ে আসর বসানো ইত্যাদি করতে হয়। বহু বাবু পাল্লা দিয়ে লোক দেখানো এসব করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। মোট কথা—বাবু শুধু ভোগ করতে চান না, খ্যাতি চান, সকলের সঙ্গে টাকা। ওড়ানোর প্রতিযোগিতা করে সবার উপরে থাকতে চান। কলকাতার বিখ্যাত আট বাবু ছিলেন এর মধ্যে অগ্রগণ্য। কলকাতার আট বাবুর মধ্যে ছিলেন নীলমণি হালদার, রামতনু দত্ত, গোকুলচন্দ্র মিত্র, রাজা রাজকৃষ্ণ, কালীপ্রসন্ন সিংহের পূর্বপুরুষ ছাতু সিংহ, দর্পনারায়ণ ঠাকুর, রাজা সুখময় রায় এবং চোরাবাগান মিত্র বংশের এক বাবু—এঁরাই ছিলেন আট বাবু। পরবর্তীকালে নামডাক সম্পন্ন আরও বাবু এসেছিলেন, কিন্তু উপরে উল্লিখিত আটবাবুই হলেন কলকাতার প্রথম বাবু।

সিরাজদৌলার বিরুদ্ধে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের সাহায্য করার পুরস্কার হিসেবে নবকৃষ্ণ দেব পান প্রভূত ধনসম্পত্তি, জমি ও মহারাজা উপাধি। তার স্বল্পকালের মধ্যেই উত্তর কলকাতার শোভাবাজারে প্রাসাদোপম ভদ্রাসন ও দুর্গাপুজোর উপযোগী বিশাল ঠাকুর দালান তৈরি করে দুর্গাপুজো আরম্ভ করে মহারাজ কৃষ্ণদেব। প্রধানত ক্লাইভ ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের আপ্যায়নের জন্যই নবকৃষ্ণের এই দুর্গাপুজোর আয়োজন। ইংরেজদের খেতাবধারী মহারাজা নবকৃষ্ণ তাঁর এক বন্ধুকে লিখেছিলেন—“এবার পূজার সময় লর্ড ক্লাইভ আমার বাটিতে অনুগ্রহপূর্বক প্রতিমা দর্শন করিতে আসিবেন। তাঁহার সহিত কোম্পানির বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থাকিবেন।” নবকৃষ্ণের বাড়িতে ইংরেজ সাহেবরা দুর্গাপুজো দেখতে আসবে বলে সকাল থেকে চিৎপুরে রাস্তায় লোক চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। এসব দুর্গাপুজোর অধিকাংশেরই মূল উদ্দেশ্য ছিল বিত্ত ও প্রাচুর্য। প্রদর্শন এবং পুজো উপলক্ষে আমোদপ্রমোদের আয়োজন করে ইংরেজ রাজপুরুষদের তোষণ। শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার সময়ে অথবা পরবর্তীকালে আঠারো শতকে কলকাতায় এই ধরনের যে দুর্গাপুজোগুলো আরম্ভ হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়ি ও দর্জিপাড়ার জয়রাম মিত্রের বাড়ি, দক্ষিণ কলকাতার চক্ৰবাড়িয়া সড়কের মিত্র বাড়ি, উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটের ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়ি, খিদিরপুরের ভূ-কৈলাশ রাজবাড়ি, মধ্য কলকাতার রানি রাসমণির বাড়ি। দুর্গাপুজো ছিল বাবুদের সবচেয়ে জমকালো উৎসব। সাহেবরাও এই উৎসবে যোগদান করার জন্য সবসময়ই আমন্ত্রিত হতেন এবং উৎসবের কর্তারাও নানারকম ফলমূল দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা করতেন। উৎসবকালে প্রতি সন্ধ্যায় নাচগানের ব্যবস্থা করা হত। আমন্ত্রণ করা হত নামকরা সব বাঈজি-বেশ্যাদের। ধণিক শ্রেণি ছাড়াও এই প্রসাদ পেত সাহেবরাও। হঠাৎ কোনো বাইজী বা গণিকার প্রসিদ্ধি ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে ‘বাঁধা মেয়েমানুষ’ হিসাবে রাখার জন্যে বাবুদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেত। এই গণিকাঁচর্চাই ছিল বাবু কালচারের অঙ্গ। কালীপ্রসন্নের লেখা থেকে জানা যায়, রাজরাজড়ারা রাতে নিজ বিবাহিত স্ত্রীর মুখ দেখতেন না। বাড়ির প্রধান আমলা, দারওয়ান, মুৎসুদ্দিরা যেমন হুজুরের বিষয়কর্ম দেখেন, তেমনই রাজরাজড়ার স্ত্রীদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়দায়িত্বও তাঁদের উপর বর্তাত। সুতরাং তাঁরাই-বা ছাড়বেন কেন! এই ভয়ে কোনো কোনো বুদ্ধিমান স্ত্রীকে বাড়ির ভিতর ঘরে পুরে বাইরে দিয়ে তালা-চাবি মেরে সারারাত নিশ্চিন্তে রাঁড় নিয়ে বা বাইজী-গণিকাদের সঙ্গে ফুর্তি করে সকালে বাড়ি ফিরতেন ‘বাবু’। ভাবছেন বাবুদের এত মদন-দহন! সেকালের মদন-দহন কেমন ছিল? কয়েকটি পংক্তি পড়ে নিন–“মদন-আগুন জ্বলছে দ্বিগুণ, কি গুণ কল্প ঐ বিদেশী,ইচ্ছা করে উহার করে প্রাণ সঁপে দিই হইগো দাসী।/দারুণ কটাক্ষ-বানে, অস্থির করেছে প্রাণে,/মনে না ধৈরজ মানে, মন হয়েছে তাই উদাসী।”

তৎকালে বিদেশে স্ত্রী-পরিবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার প্রথা না-থাকায় প্রায় সকল আমলা-আইনজীবী ও মোক্তারদের এক একটি উপপত্নীর দরকার হত। অতএব এই ‘উপপত্নী’র সাপ্লাই যাতে নিরবচ্ছিন্ন হতে পারে, সেই কারণে তাঁদের বাসস্থানের সন্নিহিত স্থানে স্থানে গণিকালয় প্রতিষ্ঠা পেতে থাকল। সেজন্যই উত্তর কলকাতার প্রাচীন ও সম্ভ্রান্ত শহরবাসীদের বসতি কেন্দ্রের আশেপাশেই শহরের বিখ্যাত গণিকালয় প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যায়। শহর কলকাতায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল এইসব গণিকালয়। বাবুদের মেয়েমানুষ নিয়ে আমোদ করার জন্য যেমন, তেমন সাধারণের জন্যও শহরে গড়ে উঠেছিল নতুন তীর্থক্ষেত্র, গণিকালয়। সুতরাং এমন পাড়া ছিল না যেখানে অন্তত দশঘর গণিকা নেই। শহরে তখন যত্রতত্র এদের বসবাস। গৃহস্থের বাড়ির পাশে, সদর রাস্তার উপর, যেখানে ইচ্ছা গণিকারা বাস করত। এমনকি জোড়াসাঁকোর মূল ব্রাহ্মসমাজটি গণিকালয়ের মাঝখানেই। হুতোম প্যাঁচার নকশার মন্তব্যে কলকাতা শহর তখন ‘বেশ্যাশহর’ হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর গণিকার সংখ্যা বাড়ছে বই কমছে না। এমনকি একজন বড়ো মানুষের বাড়ির পাশে গৃহস্থের বৌ-ঝি নিয়ে বাস করবার জো পর্যন্ত ছিল না। গণিকারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি আর গালিগালাজ করত। সাধারণ পথিকরাও তাদের হাত থেকে নিস্তার পেত না। কখনো দেখা গেল এক গণিকা রসিক বাবুকে দেখে পানের পিক ফেলতে গিয়ে তা অফিস ফেরত এক কেরানির মাথায় পড়ল। কিন্তু কেরানিটি ভয়ে কিছু না-বলে মানসম্মান নিয়ে চলে গেল। দু-একজন কেরানি এসব ইতরামি সহ্য করতে না-পেরে প্রশাসনের ভয় দেখাত। গণিকারা তখন খিলখিল শব্দে হেসে উঠে বলত–“বেশ্যাবৃত্তি করি বটে, কিন্তু তোদের মতন সাতটা কেরানিকে পুষতে পারি। কলম পিষে তোর তিন পুরুষ যা না করতে পারবে আমরা একপুরুষে তাই করেছি।”

কলকাতায় গণিকাদের পসরা এতটাই বাড়বাড়ন্ত হয়ে উঠেছিল যে, কলকাতার এক বর্ণনায় দেখা যায়–“গৃহস্থের বাড়ির পাশে বেশ্যা, ছেলেদের পাঠশালার পাশে বেশ্যা, চিকিৎসক কবিরাজ বাসস্থানের পাশে বেশ্যা, এমনকি ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরের আষ্টেপৃষ্ঠে বেশ্যা।” ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পত্রিকার খবরে জানা যায়–“গণিকারা প্রত্যহ সন্ধ্যা হতে রাত দশটা পর্যন্ত রাজপথে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেদের মধ্যে যে-সব কুভাষা বা কদৰ্যালাপ করত, তাতে সাধারণ পথিকরা বিব্রত হতেন। স্বভাবতই পথিকদের দেখলে গণিকারা আমন্ত্রণ জানাত, পথিকদের নানাভাবে উৎপাত করত, এমনি পথিকদের উদ্দেশে নানারকম কুকথাও বলত।” কলকাতার পুলিশ ধনীদের আশ্রিত প্রমোদপল্লি এলাকায় হস্তক্ষেপ করতে সাহস পেত না। স্থানীয় বর্ধিষ্ণু সাধারণ মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকদের নীতিবোধ ও রুচিবোধ গণিকাদের এই প্রকাশ্য ইতরামিতে ক্ষুণ্ণ হত এবং তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন নিবেদন করত। কিন্তু তাতে ফল কিছুই পাওয়া যেত না। বিত্তবানদের আশ্রিত গণিকারা শহরের প্রকাশ্য রাজপথে নৃত্য করতেও ভয় পেত না। স্বয়ং দ্বারকানাথ ঠাকুর কলকাতার একটি এলাকাতেই ৪৩টি গণিকালয়ের মালিক ছিলেন। মানে বাড়িগুলোর ভাড়াটেদের পেশা ছিল গণিকাবৃত্তি। কলকাতায় তাঁর আরও এরকম অনেক বাড়ি ছিল। সেকালে গণিকাদের কাছে বাড়ি ভাড়া দিলে ভাড়াটা বেশি পাওয়া যেত।

বাবু কলকাতার সেই কদর্য বেলেল্লাপনার ছবি এখন আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। শহরের যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে গণিকপল্লি। বিত্তশালী বাবুদের প্রশ্রয়েই এইসব গণিকাপল্লী গজিয়ে উঠেছিল। অতএব প্রশাসনের সাধ্য ছিল না এহেন কালচারের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার। এইসব বাবুদের আদর্শ ছিল মূলত ইংরেজ রাজকর্মচারীরা। শ্রীপান্থ তাঁর কলকাতা’ গ্রন্থে ‘রোটি আউর বেটি অংশে লিখেছেন—-“সতীদাহ কলকাতায় তখন প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। সারা ব্ল্যাক টাউন চিতার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, অন্ধকার। সেই অন্ধকারে চলছে বাবুবিলাস, গুরু-প্ৰসাদী কৌলীন্য রক্ষা। সতীর আর্তনাদে, বিধবার কান্না আর বারবনিতার কাতর আহ্বানে অষ্টাদশ শতকের কলকাতা প্রেতপুরী। পা যেন লজ্জায় জড়িয়ে আসে সেদিকে বাড়াতে।”

গণিকালয় যে শুধু সাহেব আর বাবুদের জন্য গড়ে উঠেছিল ব্যাপারটা এমন নয়। চোর-ডাকাত, বদমাস এবং ইতরজনরাও এসব গণিকাদের কাছে যৌনক্ষুধা মেটাতে যেত। তাই বলে সব গণিকালয় একরকম ছিল না। মানুষভেদে, শ্রেণিভেদে নানা ধরনের গণিকালয় গড়ে উঠেছিল সেসময়। সন্দেহ নেই এই গণিকালয়গুলো কলকাতা শহরের এক বৈচিত্র্য ছিল এবং বিভিন্ন গণিকালয়ে বিভিন্ন ধরনের রঙ্গ চলত। মধ্য রাতে শহরের রাস্তায় সজ্জিতভাবে বহু গণিকাকে খদ্দেরের হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। ভদ্রলোক বাবুরা তখন নিজেদের ঘরের স্ত্রী-কন্যাদের পর্দানসীন করে ফেলেছিলেন, আর নিজেরা ইয়ার-বন্ধুদের নিয়ে বাগানবাড়িতে বসে সেরা গণিকাদের হাট বসাতেন। ঘরের স্ত্রী-কন্যাদের এসব জেনেও মুখ বন্ধ করে বসে থাকতে হত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা দ্বারকানাথ ঠাকুরের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি। তিনি গোমাংস খেতেন, ইংরেজদের সঙ্গে একত্রে বসে মদ আর নারী নিয়ে হৈ হুল্লোড় করতেন। তাঁর বাগানবাড়িতে বাইজিদের নাচ-গানের আসর বসত প্রায় রাতেই।

সেসময়ের শনিবারের কলকাতা ছিল শহরজুড়ে সারারাত মদ, গাঁজা আর মেয়েমানুষ নিয়ে বেহদ্দ মজা করার দিন। বিশেষ করে রামবাগান, সোনাগাছি, মেছোবাজার, সিদ্ধেশ্বরীতলা, হাড়কাটা, চাঁপাতলা, ইমামবক্স, চিৎপুর মদের গন্ধে মম করত। একেবারে নরক গুলজার! বাবু কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় যখন খ্রিস্টান হল দ্বারকানাথ মন্তব্য করেছিলেন—এই ধর্মান্তরের কারণ ‘গোরুর মাংস ও মদ্যপান’-এর সুযোগ লাভ। মধুসূদন দত্ত, রাজনারায়ণ বসু, ভুদেবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় যখন হিন্দু কলেজে পড়তেন তখন প্রকাশ্য স্থানে বসে নিকটস্থ মুসলিম দোকান থেকে গোরুর মাংসের কাবাব এনে খেতেন এবং মনে করতেন সেটাই পুরোনোকে বর্জন করার একটা বাহাদুরি। সঙ্গে মদ্যপান তো ছিলই। বাবুরা তখন তিন ‘ম’-তে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন—মদ, মাংস ও মেয়েমানুষ। কিন্তু মধুসূদন, রাজনারায়ণ, ভুদেবের মতো ইয়ংবেঙ্গলরা মেয়েমানুষের ব্যাপারটাকে ঘৃণার চোখে দেখতেন। এই দোষটি তাঁদের ছিল না।

কলেজের ছাত্ররা সুরাদেবীর আরাধনা করতেন বটে, তবে গণিকাসক্ত ছিল না। তাঁদের একপুরুষ পূর্বে যুবকরা আবার গণিকাসক্ত ছিলেন, কিন্তু মদ্যপান করতেন না। গাঁজা, চরস বা আফিম খেতেন। ইংরেজি শিক্ষার ফলে পুরোনো নেশা চণ্ডু, গুলি, আফিম বা কালাচাঁদ, তড়িতানন্দ বা গাঁজা বিদায় নিল নতুন জাতে ওঠা অভিজাতদের কাছ থেকে। আগে নেশাখোর বোঝাতে ‘গুলিখোর’, ‘গাঁজাখোর’, ‘চণ্ডুখোর’, আফিমশোর’, প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হত। ইংরেজি শিক্ষিতদের কল্যাণে জন্ম হল নতুন শব্দ মদখোর’। ক্রমে এঁদের হাত ধরে মদের নেশা শুরু হল বাংলার ঘরে ঘরে। একদিন এমন হল যখন মদই নেশার জগতে একনম্বর স্থান পেল। তবে সবাই তো আর ভদ্রলোক হয়ে উঠতে পারেননি। নিম্নবর্গের যে মানুষ, এঁরাই ছিলেন সংখ্যায় বেশি। শুড়ির দোকানে বা চিকিৎসকের ডিসপেনসারিতে মদ বিক্রি হত এদের জন্য। অনেকেই সেখানে দাঁড়ভোগ’ খেয়ে টলতে বাড়ি ফিরতেন। এ দৃশ্য তখন কলকাতায় গা-সওয়া। মোদ্দা কথা, তখন হয় গণিকাবাড়ি, নয় রাস্তায় গড়াগড়ি। অথবা

পুরো গড়াগড়িটাই গণিকাবাড়িতে। বাঙালি শিক্ষিতদের কল্যাণে জন্ম হল আরও একটি নতুন শব্দ ‘মাগিখোর’ বা মাগিবাজ’।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *