০৬. সাময়িকপত্র সম্পাদনা

০৬. সাময়িকপত্র সম্পাদনা

কবিতা-রচনার পাশাপাশি সাময়িকপত্র সম্পাদনার ক্ষেত্রেও রুদ্র ছিলেন সমান মনোযোগী। তার সম্পাদিত কোনো পত্রিকাই দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। কিন্তু একথা স্পষ্ট যে, একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি সম্পাদনাকর্মে ব্রতী হয়েছিলেন। বলা যায়, তাঁর কবিতাকর্ম এবং সম্পাদনাকর্ম প্রায় একই সময়ে শুরু হয়েছে। স্কুলজীবনেই তার সম্পাদনার হাতেখড়ি। তখনো তিনি ‘রুদ্র’ নন কেবলই ‘মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। তার সম্পাদনায় প্রথম যে-সংকলনটি বেরিয়েছিল তার নাম ‘দুর্বিনীত’। পরবর্তীকালে ‘অনামিকার অন্য চোখ ও চুয়াত্তোরের প্রসব যন্ত্রণা’, ‘অশ্লীল জ্যোৎস্নায়’, ‘স্বরূপ অন্বেষা’, ‘poiema’ প্রভৃতি সাহিত্যপত্রের সম্পাদক এবং ‘সাহস’ নামের একটি সাহিত্যপত্রের প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দুর্বিনীত

১৯৭৩ সালে, রুদ্রের বয়স সবে সতের-য় পড়েছে, বের করলেন ‘দুর্বিনীত’ নামের একটি সাহিত্য-সংকলন। রুদ্র তখন ওয়েস্ট এড হাইস্কুলের ছাত্র, এসএসসি পরীক্ষার্থী। এটি ছিলো একুশের সংকলন। প্রকাশকাল লেখা ছিল ‘আটই ফাগুন, ১৩৭৯’। প্রকাশক হিসেবে মুদ্রিত হয়েছে দুর্বিনীত শিল্প সাহিত্য গোষ্ঠীর’-র নাম। রুদ্র ছিলেন এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। তখনো তিনি ‘রুদ্র’ নাম গ্রহণ করেন নি। এই সংগঠনের ঠিকানা ছিলে রুদ্রের মামার বাসার ঠিকানা–৫০, লালবাগ। রুদ্র তখন এই বাসায় থাকতেন। ‘দুর্বিনীত’ সংকলনটি ছাপা হয়েছিল মিছ-ওয়ান প্রিন্টার্স, ১৫/এফ আজিমপুর রোড, ঢাকা থেকে। প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন রুদ্র এবং ইকবাল হাফিজ। প্রকাশনায় যারা সহযোগিতা করেছেন তারা হলেন– হেলাল আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, আতিকুল আলম, ইকরামুল হুদা, জাহিদ রেজা সানি, মাসুদ আহমেদ, মাহবুব ইফতেখার, ফারুক আহমেদ ও ইরশাদুল্লাহ। ‘দুর্বিনীত’-র ঘোষণা হিসেবে ছাপা হয়েছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ‘আমি চির দুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, …থেকে প্রথম সাতটি চরণ। বোঝা যায় ‘দুর্বিনীত’ নামটি নজরুলের কবিতা থেকেই গৃহীত হয়েছিল। আর সম্পাদকীয় হিসেবে ছাপা হয়েছিল ‘দুর্বিনীত’ নামে একটি কবিতা। কবিতাটি হুবহু উদ্ধৃত হতে পারে।

দুর্বিনীত
মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

আমি দুর্বিনীত নির্ভীক সৈনিক;
জন্মেছি এঁদো বস্তির দুর্গন্ধতায়
অন্ধকার কালরাতে জলন্ত স্ফুলিঙ্গ যেন–
প্রচণ্ড এক বুক উত্তপ্ত নক্ষত্র।

দ্বন্দ্বের মুখোমুখি ভাঙ্গনের উল্লাসে
আমি অট্টহাসে কঁপাই ভুবন,
শোষণের স্বর্ণলঙ্কা পোড়াই
লেজের বীভৎস হনুমান অগ্নিতে।
ঘুণে ধরা সমাজের ঘরখানা
পদাঘাতে ভেঙ্গে ফেলি চুরমার
আমি শাসন শোষণ ভয় করি না।

আমি শ্মশানে কবরে শত
মৃতের বুকে বিদ্রোহ আনি,
পৃথিবীর সহস্র পুনর্জন্মে
আমি নির্বিঘ্নে জন্ম নেই,
আমি অমর পাপিষ্ঠ–আমি মরি না।
তোমাদের বিশ্বাসী স্রষ্টার কলিজা
ছিঁড়ে ফেলে পান করি এক বুক রক্ত।
ধর্মের কণ্ঠনালী ভেঙ্গে
পান করি দুর্গন্ধ পুঁজ–
বিষাক্ত এ পাপিষ্ঠ মুখে।

কবিতাটি রুদ্রের কচিহাতের লেখা। নজরুল-প্রভাবিত এই কবিতায় মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ‘দ্রোহী’ ও ‘রুদ্র’ রূপটি ধরা পড়ে। এরপর থেকেই তিনি নামের আগে ‘রুদ্র’ শব্দটি জুড়ে দেন। সংকলনটির সম্পাদনার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন রুদ্র। কিন্তু তার নাম ছাপা হয়েছে ‘সম্পাদক সহযোগী হিসেবে। সম্পাদক হিসেবে নাম ছাপা হয়েছে ‘দুর্বিনীত শিল্প সাহিত্য গোষ্ঠী’-র সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান-এর। ইনি ছিলেন রুদ্রের স্কুল-শিক্ষক।

অনামিকার অন্য চোখ এবং চুয়াত্তোরের প্রসব যন্ত্রণা

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সম্পাদিত দ্বিতীয় সাময়িকী হচ্ছে ‘অনামিকার অন্য চোখ এবং চুয়াত্তোরের প্রসব যন্ত্রণা।’ প্রকাশকাল ১৯৭৪ সালের শহিদ দিবস। পত্রিকায় উল্লেখ ছিল ‘আটই ফালগুন ত্যারোশা আশি। এটি ‘আমরা পদাতিক সম্প্রদায়’-এর পক্ষ থেকে তমদ্দন প্রেস, ৫০ লালবাগ থেকে মুদ্রিত, প্রকাশিত ও প্রচারিত। সম্পাদনা-সহকারী ছিলেন আহমেদ হেলাল। এই সংকলনের সঙ্গে রুদ্রের যে-সব বন্ধু ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তাদের প্রত্যেকের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য মুদ্রিত ছিল। যেমন :

জীবনের বিধ্বস্ত পান্ডুলিপিখানা নোতুন আংগিকে সংশোধন কোরতে চাই।–শাহজান। মাখন

সোনার হরিন চাই না, মাটির কাছাকাছি যাবো।–মাহমুদ হাসান

মুখোমুখি হোতে হবে জেনেই এ্যাতোটা দুঃসাহসী হোতে পেরেছি।–-ইকবাল আহমেদ দুলু

প্রতিবন্ধকতার জলোচ্ছাস আমার নিপুন ভিত টলাতে পারবে না। সংশপ্তক প্রত্যয়ে নিষিদ্ধ পদাতিক হবো।–আহমেদ হেলাল

অন্য চোখ আছে বোলেই অনামিকা তোর বুকের উত্তপ্ত সোঁদা ঘ্রানে চিরকাল বুনবো প্রেমের বীজ আমি তুখোর তুমুল জারজ।–রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

সম্পাদকীয় হিসেবে ‘একুশ তুই আর আসিস না’ এবং ‘উপলব্ধির সাদা কালো’ নামে দুটি রচনা প্রকাশিত হয়েছে। নাম উল্লেখ করা না-হলেও কারো বুঝতে বাকি থাকে না যে রচনাদুটি লিখেছিলেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ নিজেই। এই রচনাদুটিতে রুদ্রের সাহিত্য সম্পর্কিত চিন্তা-ভাবনার ছায়া পড়েছে। রুদ্রের সাহিত্যজীবনের ঊষাকালের খবর জানতে এ-দুটি রচনা সহায়ক হতে পারে। এখানে বানান-সম্পর্কিত নতুন চিন্তার প্রকাশ রয়েছে। উদ্ধৃতিতে রুদ্র-ব্যবহৃত বানান-ই অক্ষুণ্ণ রাখা হল।

একুশ তুই আর আসিস না

ক্যানো আসবি, কার কাছে আসবি? তোর বুকের গরোম রক্তের স্পর্শে একদিন নিষিদ্ধ বিক্ষোভ হোয়েছি। অপ্রতিরোধ্য ব্যারিকেড গোড়েছি। কৃষ্ণচূড়ার বিক্ষুব্ধ লাল ছুঁড়ে দিয়েছি তোর সুনীল করতলে। কিন্তু আজ তোর খোঁপায় রজনীগন্ধা অথবা স্মিত হাসি ভালো লাগে না আর। আমরা তোর অন্তর্বাসে হাত দিয়েছি। কী কোরবো বল, কিছুই। পাই নি যে আমরা! মেনড্রাক্স আজ একমাত্র সংগী–সম্বল একবুক জারজ স্মৃতির। বিষ। তোর মর্যাদা দেবার মতো কিছুই নেই।

আর আসিস নে হতভাগী। সত্যি বোলছি এবার এলে নিশ্চয়ই তুই সতীত্ব হারাবি।

‘উপলব্ধির সাদা কালো রচনাটি এর পাশাপাশি ভিন্ন পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছিল। উপলব্ধির ভিন্নতা বোঝাতে হয়তো এরকম করা হয়েছিল। লেখাটি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে–

উপলব্ধির সাদা কালো

নিশ্চয়ই। যোদি কিছু ভুল দৃষ্ট হয় তীব্র সমালোচনা করুন। উৎসাহ পাবে, উদ্দীপনা বাড়বে। অনর্থক শিশুসুলভ স্নেহের প্রত্যাশী নই। নিশ্চয়ই চোখে পোড়বে অনেক স্থানেই অশ্লীল শব্দ ব্যবহৃত হোয়েছে। কী কোরবো বলুন আমরা সকলেই যে ভদ্রবেশী অশ্লীলতার পরোম পূজারী। অস্বীকার কোরতে পারবেন? সাহিত্যে অশ্লীলতা অনাবশ্যক বোলে তর্কো কোরতে পারেন কিন্তু জাগতিক জীবনে কী অশ্লীলতা নিষিদ্ধ কোরতে পারবেন? যেহেতু জীবন এবং জগৎ বাদ দিয়ে সাহিত্য অসম্ভব তাই সাহিত্যে অশ্লীলতা অনাবশ্যক নয় বরং জীবনকে বেঁধে রাখার নিপুণ প্রয়াস।

হয়তো প্রতিবাদ কোরবেন অনাবশ্যক দুঃশ্চিন্তায় নরোকগামী হোচ্ছি। তবে স্বীকার আপনাকে কোরতেই হবে যে গতানুগতিকতার চিরশত্রু ব্যতিক্রমধর্মী আমরা স্পষ্টতই অসম্ভব দুঃসাহসী।

আবহমান এই বাংলায় একদিন স্বাচ্ছন্দের স্বচ্ছ বাতাস ছিলো। সোনালী সম্ভাবনার সবুজ পাল তুলে ভেসে যেতো দৈনন্দিন জীবন আশার রূপোলী নদীতে। শালিকের ধূসর চোখ কাকের মসৃন পালোক আশ্বিনের ভরা ক্ষেত বৈশাখের মাতাল বাতাস আর অনংগ বধুর সিথির সিঁদুর নিয়ে একটি নিবিড় সংসার পেতেছিলো আজীবন দুঃখিনী এক মা।

হঠাৎ একদিন আকাশে মেঘ উঠলো সমস্ত সবুজ ওরা কেড়ে নিতে চাইলো। আমরা। চিৎকার কোরলাম নিজস্ব কণ্ঠে। ওরা শেকল দ্যাখালো। আমরা কারাগার চিনলাম বিক্ষোভের লাল ঠোঁটে চুমু খেলাম। মৃত্যুর সাথে সংগম কোরলাম আজন্ম সম্পর্কে, তাই মেঘ গাঢ় কালো হোলো। আর মেঘের ভেতোর সঞ্চিত হোতে থাকলো বিক্ষুব্ধ বজ্র। আসন্ন ভাংগোনের সম্ভাবনা।

মেঘে ঢাকা সূর্য মুক্ত হোলো। কিন্তু তখোন সমস্ত সবুজগুলো পুড়ে গ্যাছে। সে নিবিড় সংসারে অভাবের টর্নেডো, সমস্যার মহামারী আর যন্ত্রনার শ্মশান হোলো বুকের কাছাকাছি কবর শিয়রে জেগে আছে।

এই সংখ্যায় শহীদুল্লাহ কায়সার, হাসান হাফিজুর রহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শামসুর রাহমান, ফজল শাহাবুদ্দিন, আবদুল গনি হাজারী, আবু কায়সার, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, উমাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, দাউদ হায়দার, মখদুম মাশরাফী, মিয়া মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ওমর আলী এবং রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতা ছাপা হয়েছে।

অশ্লীল জ্যোৎস্নায়

অনিয়মিত কবিতাপত্র পরিচয় নিয়ে ‘অশ্লীল জ্যোৎস্নায়’-এর ১ম বর্ষের ১ম সংখ্যা বেরিয়েছিল ১৯৭৫ সালে ফেব্রুয়ারিতে। এর একটি মাত্র সংখ্যাই প্রকাশিত হয়েছিল। এর সহকারী সম্পাদক ছিলেন আহমেদ হেলাল। প্রকাশনায় পদাতিক সম্প্রদায়ের সাহিত্য বিভাগ। কার্যালয়ও ছিল পূর্ববৎ–৫০ লালবাগ, ঢাকা। এই পত্রিকার মাধ্যমে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সাহিত্যের একটি নতুন সংযোজন হিসেবে উপলিকা’ রচনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। লক্ষ করা যায় যে, মূর্ধণ্য ‘ণ’ বর্জনের প্রবণতা থাকলেও এ লেখাদুটিতে তা ঘটে নি। উপলিকা’ সম্পর্কে তার নিজের ব্যাখ্যা ও ঘোষণা এখানে তুলে ধরা যায়–

উপলিকা সম্পর্কিত উপস্থাপনা

না কবিতা। না গল্প। সুরটা হবে কাবিতিক। এবং উপস্থাপনাটা হবে গাল্পিক। মূলত কবিতার স্বচ্ছন্দ গতি নিয়ে এর শুরু এবং গল্পের বিন্যাসে বিন্যস্ত। জটিলতা সবসময় পরিত্যাজ্য। যতোটা সম্ভব তার ধারাবাহিকতা আবশ্যক। সমাপ্তিটা ছোটগল্পের মতোন। সহজ শব্দের ব্যবহার বাঞ্ছনীয়।

নিঃসন্দেহে সাহিত্যে এটা একটা নোতুন সংযোজন। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘ক্ষমা নেই’ গ্রন্থের রচনাগুলোয় অবশ্য উপলিকার গুণগত দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে। তবে ঐ রচনাগুলোর প্রথম অবস্থায় খুব একটা উদ্বিগ্নতা ছিল না, য্যামোন থাকে না রচনাটা শেষ হলে।

উপলিকার প্রধান উপজীব্য হচ্ছে রচনার প্রথম থেকে পাঠককে যে পরিবেশ বা যে ধারণার মাঝে নিয়ে যাওয়া হবে ঠিক শেষ মুহূর্তে সেই পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ নোতুন। একটা পরিবেশ বা অবস্থানে পাঠককে ছুঁড়ে দিতে হবে।

অর্থাৎ ঠিক সেই নোতুন পরিস্থিতির কথা না বলা পর্যন্ত পাঠক সে-সম্পর্কে সামান্যতম আভাষও পাবে না। তাই সে বিষয়বস্তু ভাবগত হোক আর বস্তুগত হোক।

এ দেশের আবদুল মান্নান সৈয়দের কয়েকটা কবিতাকে মোটামুটিভাবে উপলিকা বলে ধরা যেতে পারে। কিন্তু ঐ একই কারণে সম্পূর্ণভাবে ধরা যায় না। তাছাড়া সৈয়দের কবিতায় দুর্বোধ্য শব্দের ব্যবহার একটু বেশি।

ফরহাদ মজহারের কয়েকটি কবিতায় উপলিকার কিছু কিছু গুণ লক্ষ্যণীয়। আবুল হাসানেরও তাই।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশির ভাগ কবিতাকেই উপলিকা বলা যেতে পারতো, যদি না ঐ কবিতাগুলোয় কবিতার ঘ্রাণ একটু কম থাকতো।

উপলিকার আর একটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ কোরছি। তা হলো এর আকার খুব বেশি দীর্ঘ করা যাবে না। মোটকথা উপলিকা হোচ্ছে না-গল্প না-কবিতা।

এরপরে সম্পাদকীয় ঘোষণা হিসেবে লেখা হয়—

উপলিকা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা এবং এ-সম্পর্কে লেখকদের মতামত আগামী সংখ্যায় ছাপা হবে।

যে-কোনো লেখকই ‘উপলিকা’ বিভাগে লেখা পাঠাতে পারবেন। সেগুলোকে উপলিকা

হোতে হবে। সবশেষে নমুনা হিসেবে ‘একটি মারাত্মক স্বপ্নভুক দিন’ এবং ‘একদিন ওনামে কাউকেই চিনতাম না’ শীর্ষক দুটি উপলিকা প্রকাশিত হয়েছে। রুদ্র ছাড়াও এ-সংকলনে কবিতা লিখেছেন আলাউদ্দিন আল আজাদ, মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, মাকিদ হায়দার, দাউদ হায়দার, কামাল চৌধুরী প্রমুখ।

স্বরূপ অন্বেষা

আলী রীয়াজ, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এবং মঈনুল আহসান সাবের যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘স্বরূপ অন্বেষা’ নামের একটি প্রবন্ধ-সংকলন। এঁরা তিনজনেই সত্তর দশকের সাহিত্যে শীর্ষস্থানীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বর্তমানে বিবিসি-র বাংলা সার্ভিসের সিনিয়র প্রডিউসার ডক্টর আলী রীয়াজ প্রাবন্ধিক হিসেবে, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কবি হিসেবে এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রার সাবেক সহকারী সম্পাদক মঈনুল আহসান সাবের কথাসাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতিমান। ১৯৭৮ সালের মে মাসে সংকলনটি প্রকাশ করেছিলেন তিতাস প্রকাশনী, ৪ শান্তিনগর বাজার, ঢাকা ১৭-এর পক্ষে নীয়াজ আহমেদ। ছাপা হয়েছিল শিলালিপি মুদ্রায়ণ, ৪৫/৩ রামকৃষ্ণ মিশন রোড থেকে। প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল কাজী হাসান হাবীবের করা নামলিপি এবং কামরুল। হাসানের করা উডকাঠের প্রতিলিপি। ‘স্বরূপ অন্বেষায় প্রবন্ধ লিখেছিলেন, স্ত্ৰিআবিদ রহমান (সাম্প্রদায়িকতা), সলিমুল্লাহ খান (শিক্ষার সংকট), আলী রীয়াজ (বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ) এবং মোরশেদ শফিউল হাসান (কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা : চুর্ণচিন্তা)।

সাহস

১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয় ‘সাহস’ নামের একটি কবিতা-সংকলন। এর প্রিন্টার্স লাইনে লেখা হয়েছে, ‘রাখাল প্রকাশনীর পক্ষে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কর্তৃক সিদ্ধেশ্বরী সড়ক, ঢাকা ১৭ থেকে প্রকাশিত।’ অর্থাৎ রুদ্র এখানে সম্পাদক নন, প্রকাশক। সম্পাদক হিসেবে ছাপা হয়েছিল আলী রীয়াজ ও সাজ্জাদ হোসেনের নাম। এ-সংকলনে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ছাড়াও জাফর ওয়াজেদ, সাজ্জাদ হোসেন, কামাল চৌধুরী প্রমুখের কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।

Poiema

Poiema-এর একটিমাত্র সংখ্যা বেরিয়েছিল ১৯৮০ সালের মার্চ মাসে। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ছিলেন এর যুগ্মসম্পাদক (joint editor)। সম্পাদক মুহম্মদ নূরুল হুদা, নির্বাহী সম্পাদক মুহম্মদ সিরাজুল হক, সহকারী সম্পাদক কাজী রোজী ও মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস, ডিজাইনার রাজা মিয়া। প্রকাশক শাহানা হুদার ঠিকানা ৬৬/১ জামাল খান রোড, চট্টগ্রাম উল্লেখিত হলেও এটি ছাপা হয়েছিল শাহাজাহান প্রিন্টিং ওয়ার্কস ৯৭/২ সিদ্দিক। বাজার, ঢাকা থেকে। এর সম্পাদকীয় দপ্তর হিসেবেও একই প্রেসের ঠিকানা ব্যবহৃত হয়েছে। এর মূল্য রাখা হয়েছিল ৩০ টাকা (বাংলাদেশ) ও দুই ডলার (বিদেশ)। ত্রৈমাসিক হিসেবে প্রকাশের পরিকল্পনা থাকলেও এটি পরে আর কোনো সংখ্যায় প্রকাশিত হয় নি। এটি মূলত ইংরেজি ভাষার সাহিত্য-পত্রিকা। পরিচিতিতে লেখা হয়েছে ‘poems from Bangladesh’। সেই হিসেবে এটি বাংলা কবিতার অনুবাদ পত্রিকা। প্রথম সংখ্যায় কবি আবুল হাসানের দুটি কবিতা, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর প্রবন্ধ ‘The poetry of Shamsur Rahman’ এবং আহসান হাবীবের সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। ‘Poems : First wave’ শিরোনামে পঞ্চাশের দশক ও পূর্ববতী কবি এবং ‘Poems : Second wave’ শিরোনামে ষাটের দশক ও পরবর্তী কবিদের কবিতার অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতাও সেখানে ছিল। কবিতাটি অনুবাদ করেছিলেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। এছাড়া এ-সংখ্যায় যাদের নাম সূচিপত্রে পাওয়া যায় তারা হলেন মাসুদ মাহমুদ, সিদ্দিকুর রহমান ও মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *