০৯. শৈশব, নিপীড়ন এবং ধর্ম থেকে মুক্তি

নবম অধ্যায়– শৈশব, নিপীড়ন এবং ধর্ম থেকে মুক্তি

প্রতিটি গ্রামেই একটি আলোর মশাল থাকে– একজন শিক্ষক, আর থাকে একজন, যে এই আলোর মশালটিকে নিভিয়ে দেয়– একজন ধমর্যাজক।
— ভিক্টর মারি ইউগো

উনবিংশ শতাব্দীর ইতালীর একটি কাহিনী দিয়ে শুরু করবো। তবে আমি কিন্তু এমন কোনো ধারণা দিতে চাইছি না যে, এধরনের কোনো ভয়াবহ ঘটনা আজও ঘটতে পারে। তবে এই গল্পটি যে ধরনের মানসিকতার উন্মোচন করে, সেটি অত্যন্ত হতাশাজনকভাবে এখনও সাম্প্রতিক, যদিও এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো হয়তো সাম্প্রতিক নয়। উনবিংশ শতাব্দীর এই মানবিক ট্রাজেডিটি বর্তমান সময়েরও শিশুদের প্রতি ধর্মীয় মনোভাবের স্বরুপটিকে নিষ্ঠুরভাবে উন্মোচন করে।

১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এডগার্ডো মোরতারা (১), ইহুদী বাবা মায়ের ছয় বছর বয়সী এই শিশুটি ইতালীর বোলোনিয়ায় বসবাস করতো। ইনকুইজিশনের (২) নির্দেশানুযায়ী পোপের পুলিশ তাকে আইনগতভাবে তাদের হেফাজতে নিয়ে নিয়েছিল। জোর করে শিশু এডগার্ডোকে তার ক্রন্দনরত মা আর বিপর্যন্ত কিংকর্তব্যবিমুঢ় বাবার সামনে থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় রোমের একটি ক্যাটিকিউমেন (ক্যাটিকিউমেন হচ্ছে একটি অস্থায়ী নিবাস, যেখানে ইহুদী এবং মুসলিমদের খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হবার পর্বে রাখা হতো।) এবং এরপর সেখান তাকে প্রতিপালন করা হয় রোমান ক্যাথলিক ধর্মমতে। মাঝে মাঝে সদা সতর্ক কোনো পাদ্রীর উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত দেখা হওয়া ছাড়া তার পিতা মাতা আর কোনোদিনও এডগার্ডোর দেখা পাননি। ডেভিড আই, কার্টজার এই গল্পটি বলেছিলেন তার ‘দ্য কিডন্যাপিং অব এডগার্ডো মোরতারা’ বইটিতে (৩)।

ইতালীতে সেই সময় এডগার্ডোর ঘটনা কিন্তু ব্যতিক্রমী বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ছিল না, এবং এভাবে ধর্মযাজক কর্তৃক বিভিন্ন সব। অপহরণের ঘটনার কারণও সব সময়েই ছিল একটাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে, শিশুটিকে এর আগের কোনো তারিখে গোপনে ব্যাপটাইজ বা খ্রিষ্টীয়করণ করা হতো, সাধারণত বাচ্চাটিকে দেখাশুনা করার জন্য নিযুক্ত ক্যাথলিক পরিচারিকারাই এই কাজটি করতো এবং পরে ক্যাথলিক ইনকুইজিশন সেই ব্যাপটিজমের খবরটি তাদের নজরে নিয়ে আসতেন। রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাসের একেবারে কেন্দ্রেই একটি বিশেষ ধারণা আছে, যদি কোনো শিশুকে একবার ব্যাপটাইজ করা হয়, আর তা যতই গোপনীয়ভাবে আর অনানুষ্ঠানিকভাবে করা হোক না কেন, শিশুটি চিরকালের জন্য ক্যাথলিক খ্রিষ্টানে রুপান্তরিত হয়। আর ক্যাথলিকদের মানসিক জগতে, ইহুদী বাবা মায়ের কাছে কোনো খ্রিষ্টান শিশুকে প্রতিপালিত সুযোগ দেয়া কোনো উপায় হতে পারেনা। এবং অদ্ভুতভাবে তারা তাদের এই গোঁড়া নিষ্ঠুর অবস্থানটি দৃঢ়তা আর চরম আন্তরিকতার সাথে সারা পৃথিবীর নিন্দা উপেক্ষা করে সুরক্ষা করতেন। এই বিশ্বব্যপী নিন্দা অবশ্য ক্যাথলিক সংবাদ পত্র ‘সিভিলটা ক্যাত্তোলিকা’ উড়িয়ে দেয় বিত্তশালী ইহুদীদের বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে– ব্যপারটা বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে, তাই না?

ঘটনাটি শুধু বাড়তি প্রচার পেয়েছিল, এছাড়া এডগার্ডো মোরতারার কাহিনীটি অন্য অনেক কাহিনীর মতই প্রায় একই রকম। কোনো একসময় তার দেখাশুনা করতে আনা মোরিসি নামের চৌদ্দ বছর বয়সী একজন অশিক্ষিত ক্যাথলিক বালিকা; একদিন হঠাৎ করে শিশু মোরতারা অসুস্থ হয়ে পড়লে আনা শঙ্কিত হয়ে পড়ে; যেহেতু ক্যাথলিক আবহে প্রতিপালিত আনার অন্ধ বিশ্বাস ছিল, কোনো শিশু যদি ব্যাপটিজম ছাড়াই মারা যায় সে সারাজীবন নরকের আগুনে পুড়বে, কি করা যায় এই ভেবে সে একজন ক্যাথলিক প্রতিবেশীর কাছে উপদেশ চেয়েছিল, সেই প্রতিবেশী আনাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে তাকে ব্যাপটিজম করাতে হবে। আনা বাসায় এসেই বালতি থেকে কয়েক ফোঁটা পানি এডগার্ডোর কপাল ছিটিয়ে দিয়ে উচ্চারণ করে, ‘আমি তোমাকে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মর নামে ব্যাপটাইজ করলাম’, ব্যাস এটুকুই এবং সেই মুহূর্ত থেকেই এডগার্ডো আইনগতভাবে খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। এবং বেশ কয়েক বছর পরে যখন ইনকুইজিশনে বসা যাজকরা বিষয়টি জানতে পারলেন, তারা দ্রুত এই বিষয়টিতে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আরোপ করেন, তাদের সেই সিদ্ধান্তের কি দুঃখজনক পরিণতি হতে পারে সেটি পুরোপুরি উপেক্ষা করে।

বিস্ময়করভাবে সাধারণ যে ধর্মীয় আচারটির ফলাফল কিনা এত বিশাল গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বিশাল সম্প্রসারিত কোনো পরিবারের জন্য, ক্যাথলিক চার্চ সেটি করার অনুমতি দিয়েছিল (এখনও তাই) যে কাউকেই, ফলে যে কোনো ব্যক্তি অন্য যে কোনো ব্যক্তিকে ব্যাপটাইজ করাতে পারবেন, এজন্য তাকে ধর্মযাজক হবার কোনো প্রয়োজন নেই। সেই অবোধ শিশুটি তো নয়ই, এমনকি তার বাবা মাও না, কারোই প্রয়োজন নেই সেই ব্যাপটিজমে সম্মতি দেবার। কোথাও কোনো কিছুতে স্বাক্ষর করা লাগবে না, কোনো আনুষ্ঠানিক সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র এই আচারটির জন্য যা দরকার তা হলো পানির ছিটা দেয়া এবং কিছু শব্দ উচ্চারণ, এবং একটি অসহায় শিশু, এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে অন্ধ, গোঁড়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন নির্বোধ একজন পরিচারিকা ব্যাস। আসলে প্রয়োজন শুধু শেষ ব্যক্তিটির, কারণ শিশুটির বয়স এত কম যে, সে না হতে পারে সাক্ষী, না দিতে পারে সম্মতি, তার কোনো কিছু বোঝার কি ক্ষমতা আছে আদৌ? যুক্তরাষ্ট্রে একজন সহকর্মী, যিনি ক্যাথলিক ঘরানায় প্রতিপালিত হয়েছেন আমাকে লিখেছিলেন: “আমরা আমাদের পুতুলকে ব্যাপটাইজ করাতাম, আমার মনে পড়ে না আমরা আমাদের কোনো ছোট প্রটেষ্ট্যান্ট বন্ধুকে ব্যাপটাইজ করেছিলাম কিনা তবে কোনো সন্দেহ নেই সেটা ঘটেছিল এবং আজো ঘটছে। আমরা আমাদের পুতুলদের ছোট ক্যাথলিক বানাতাম, তাদের চার্চে নিয়ে যেতাম, হলি কমিউনিয়ন দিতাম ইত্যাদি। ছোটবেলা থেকে ভালো ক্যাথলিক মা হবার জন্য আমাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছিল।

আমার আধুনিক সহকর্মীর মত যদি উনবিংশ শতাব্দীর মেয়েরা কিছুটা হয়ে থকে, তাহলে বিস্ময়কর ব্যপার হলো এডগার্ডো মোরতারার মত ঘটনা যতটা বেশী হওয়া উচিৎ ছিল তার চেয়ে কম ঘটেছে। তাসত্ত্বেও এমন ঘটনা হতাশাজনকভাবে উনবিংশ শতাব্দীল ইতালীতে বহু ঘটেছে, আর বিষয়টি অবধারিতভাবে একটি প্রশ্নের জন্ম দেয়: কেনই বা পোপের মালিকানাধীন কোনো রাষ্ট্রে বসবাসকারী ইহুদীরা আদৌ ক্যাথলিক কাজের লোকদের নিয়োগ দিত, বিশেষ করে যখন এধরনের ভয়াবহ ঝুঁকির সম্ভাবনা ছিল? কেন তারা সাবধানী হয়ে ইহুদী কাজের লোক নিয়োগ করেননি? এর উত্তর আবারো সম্পূর্ণ কাণ্ডজ্ঞান বর্জিত এবং তাদের ধর্মের সাথেই আবার সংশ্লিষ্ট। ইহুদীদের এমন কাজের লোক দরকার যারা সাবাথের দিনও কাজ করবে। একজন ইহুদী কাজের মেয়ে তাদের সন্তানকে ব্যাপটাইজ করে পোপের এতিমখানায়। নেবার মত ঘটনা ঘটবে না এমন নিশ্চিৎ হওয়া গেলেও, সে শনিবারে কোনো কাজই করতে পারবে না তার সাবাথের কারণে, যেমন চুলায় আগুন জ্বালানো বা ঘর পরিষ্কার, কারণ সেদিন কাজ করা ধর্মমতে তার মানা আছে। সে কারণে নিজেদের স্বার্থেই বোলোনিয়ার ইহুদী পরিবারগুলোর, যাদের সে সময় কাজের লোক রাখার সামর্থ ছিল, তারা বেশীরভাগ সময়েই ক্যাথলিক। গৃহকর্মীদের নিয়োগ দিতেন।

এই বইতে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে ক্রসেড বা ধর্মযুদ্ধের, বা স্পেনীয় কনকুইষ্টাডরদের (৪) বা যারা আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপন করতে গিয়েছিলেন বা ইনকিউজিশনের ভয়াবহতার বিবরণ দিতে চাইনি। নিষ্ঠুর আর অশুভ চরিত্রের নানা মতলবের মানুষের অভাব কোনো শতাব্দীতেই কম ছিল না। ইতালীয় ইনকুইজিশনের এই কাহিনী এবং বিশেষভাবে শিশুদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করে ধর্মীয় মানসিকতার আসল স্বরুপটি এবং অশুভ শক্তির উত্থান ঘটে শুধুমাত্র এটি ধর্মাশ্রিত হবার কারণে প্রথম, খেয়াল করুন ধর্মবাদী মানুষগুলোর সেই মানসিক ধারণা, পানির ছিটা দেয়া আর সংক্ষিপ্ত কয়েকটি বাক্য আর শব্দ উচ্চারণ পুরোপুরি বদলে দিতে পারে একটি অবুঝ শিশুর জীবন, আর এর গুরুত্ব এমন কি পিতামাতার কোনো সম্মতিরও উপরে, আর শিশুর সম্মতির উপরে তো বটেই, এছাড়া অবলীলায় অগ্রাহ্য করা হয় শিশুটির নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ এবং মানসিক স্বাস্থ্য। সামান্যতম কাণ্ডজ্ঞান এবং মানবিক অনুভুতি এ ক্ষেত্রে যা কিছুকে গুরুত্ব দেয়, ধর্মাশ্রিত মন সেসব কিছুকে অগ্রাহ্য করে নিজস্ব স্বেচ্ছাচারিতায়। কার্ডিনাল আন্তোনেলী সেই সময় ব্রিটেনের প্রথম ইহুদী সংসদ সদস্য লায়োনেল রথসচাইল্ডকে লেখা একটি চিঠিতে ব্যপারটি বিস্তারিত করেছিল, যখন রথসচাইল্ড শিশু এডগার্ডোর অপহরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কার্ডিনাল তাকে লিখেছিলেন এ বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতাহীনতার কথা উল্লেখ করে এবং সেখানে তিনি আরো যোগ করেন, ‘এখানেই বোধ হয় সবচেয়ে ভালো সময় পর্যবেক্ষণ করা যে, প্রকৃতির ডাক শক্তিশালী কিনা, এমন কি ধর্মের পবিত্র কর্তব্যর চেয়েও শক্তিশালী কিনা। হ্যাঁ, এখানেই সব প্রশ্নের জবাব মিলছে, তাই না?

দ্বিতীয়, আরো বেশী অসাধারণ একটি ব্যপার হলো, মনে হচ্ছে যেন ধর্মযাজকরা, কার্ডিনাল এবং পোপ কেউই আসলেই বুঝতে পারছেন না, শিশু এডগার্ডোর সাথে তারা কি ভয়াবহ রকম অবিচার করছেন। যে কোনো ধরনের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের সীমানার মধ্যে এটি পড়ে না। কিন্তু তারপরও তারা যেন আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করেছিলেন, এডগার্ডোর জন্য সবচেয়ে মঙ্গলজনক কাজটি তারা করছেন, বরং তারা বাবা মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করে তাকে খ্রিষ্টীয় ঘরানায় প্রতিপালিত হবার সুযোগ দিয়ে তারা তার যেন উপকারই করছেন। শিশুটিকে রক্ষা করা জন্য তারা কর্তব্য অনুভব করেছিলেন!! যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্যাথলিক সংবাদপত্র মোরতারা কেসে পোপের এই অবস্থানকে সমর্থন করে লিখেছিল, তারা যুক্তি দিয়েছিলো, ভাবাই যেতে পারে না কিভাবে কোনো খ্রিষ্টান সরকার একটি খ্রিষ্টান শিশুকে পরিত্যাগ করে কোনো ইহুদীদের দ্বারা প্রতিপালিত হবার জন্য এবং এখানে তারা ধর্মীয় স্বাধীনতার ধোঁয়াও তুলেছিলেন, একটি শিশুর খ্রিষ্টান হবার স্বাধীনতা আছে, তাকে ইহুদী হবার জন্য বাধ্য করার লক্ষ্যে কোনো ধরনের জোরজবরদস্তি অনাকাঙ্খিত। শিশুটির উপর আরোপিত পবিত্র পিতার সুরক্ষা, সব ধরনের হিংস্র মৌলবাদ এবং অবিশ্বাসী ও গোঁড়ামীর মুখোমুখি, আসলেই সবচেয়ে মহানতম একটি নৈতিক অবস্থান যা পৃথিবী বহুদিন দেখেনি। জোরপূর্বক’, ‘বাধ্যতামূলক হিংস্র’, ‘উগ্রতা’, ‘গোঁড়ামী এই শব্দগুলোর এ ধরনের নগ্ন দৃষ্টিকটুভাবে ভিন্নদিকে ব্যবহারের নির্লজ্জ উদাহরণ কি আর আছে? অথচ ক্যাথলিক ধর্মবাদীরা, পোপ থেকে শুরু করে, আন্তরিকভাবে বিশ্বাস কিরেছিলেন যে তারা যা করছেন সেটাই চূড়ান্ত নৈতিকভাবে সঠিক এবং শিশুটির কল্যানের জন্য তাদের সিদ্ধান্ত সর্বশ্রেষ্ঠ। ধর্মেও এটাই শক্তি (মূলধারার এবং মধ্যপন্থী) যা মানুষের বিচার বুদ্ধি করার ক্ষমতাকে গ্রাস করে, বিকৃত করে সাধারণ মানবিক শ্লীলতাকে। ইল কাত্তোলিকো পত্রিকাটি সুস্পষ্টভাবে হতভম্ব কারণ চার্চের এই মহানুভব কর্মটি, এডগার্ডো মোরতারার ক্ষেত্রে যা করা হয়েছিল, অর্থাৎ তাকে তার ইহুদী পরিবার থেকে রক্ষা করা হয়েছে– সেটা বুঝতে কেন এই সর্বব্যাপী ব্যর্থতা:

আমাদের মধ্যে যারাই বিষয়টি নিয়ে একটু গুরুত্ব সহকারে ভাববেন, তারা ইহুদীদের সাথে পরিস্থিতিটার তুলনামূলক একটি রুপ দেখতে পাবেন, কোনো সত্যিকারের চার্চ নেই, একজন রাজা নেই আর দেশ ছাড়া নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেন, সবসময় সেখানে তারা ভীনদেশী, উপরন্তু খ্রিষ্ট হত্যার সেই কুখ্যাত কুৎসিৎ কলঙ্ক চিহ্ন বহন করছে, তারা সাথে সাথেই বুঝতে পারবেন পোপের এই সময়োচিত বিশেষ অনুগ্রহ মোরতারা বালকের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিৎ করবে তার জীবনে।

তৃতীয়ত, ধর্মের সেই অতি-অহংকারী ভাব, যার মাধ্যমে ধর্মীয় মানুষরা জানে কোনো প্রমাণ ছাড়াই, যে তাদের জন্মের বিশ্বাসটি হচ্ছে একমাত্র সত্যি বিশ্বাস, বাকী সব কিছু ভ্রান্ত এবং চূড়ান্তভাবে মিথ্যা। উপরের উদ্ধৃতিটি খ্রিষ্টীয় মানসিকতার আসল স্বরুপ কেমন হতে পারে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সুতরাং দুই পক্ষকে একইভাবে দেখা অত্যন্ত অবিচার হবে এ ক্ষেত্রে। কিন্তু অন্য যে কোনো পরিস্থিতির মতই উত্তম হবে এটা মনে রাখা যে, মোরতারারা কিন্তু এক মুহূর্তের মধ্যে তাদের সন্তান এডগার্ডোকে ফিরে পেতে পারে, যদি তারা নিজেরা ধর্মযাজকের উপদেশ মোতাবেক তাদের নিজেদের ব্যাপটাইজ করতে রাজী হয়। এডগার্ডোকে অপহরণ করা হয়েছে শুধুমাত্র তার গায়ে পানির ছিটা এবং এক ডজন অর্থহীন কিছু শব্দ উচ্চারণ করার জন্য। ধর্মীয় দীক্ষায় দীক্ষিত মনের এই হচ্ছে নির্বুদ্ধিতা, আর এক জোড়া মানুষের উপর পানির ছিটা পড়লেই কিন্তু সব প্রক্রিয়ার বিপরীতমুখী গ্রহনযোগ্য একটি সমাধান হতে পারতো, পুরো বিচার বদলে যেতে মোরতারাদের পক্ষে। আমাদের কারো কারো কাছে, মোরতারা বাবা মার ধর্মান্তরিত হবার অস্বীকৃতি জানানোর ব্যপারটা মনে হতে পারে ইচ্ছাকৃত গোয়ার্তুমি। কিন্তু অন্যদের কাছে তাদের নীতিগত অবস্থান তাদেরকে যুগে যুগে বিশ্বব্যাপী ধর্মের জন্য আত্মত্যাগ করা মানুষদের দীর্ঘ তালিকায় সেই মর্যাদায় আসীন করেছে।

‘মাষ্টার রিডলী, আশ্বস্ত করুন নিজেকে, এবং আপনার দ্বায়িত্ব পালন করুন: ঈশ্বরের কৃপায় এই দিনে আমরা ইংল্যান্ডে এমন একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে যাবো, এবং আমি বিশ্বাস করি কোনোদিনও তা নিভে যাবে না (৫)। কোনো সন্দেহ নেই মরার জন্য মহৎ উদ্দেশ্যের কোনো অভাব নেই। কিন্তু কিভাবে শহীদত্রয় রিডলী, লাটিমার, ক্র্যানমার (৬) তাদের প্রটেষ্ট্যান্ট মতবাদ অস্বীকার করে ক্যাথলিক মতবাদ গ্রহন করার বদলে আগুনে পুড়ে শহীদ হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সিদ্ধ ডিম কোনো দিক দিয়ে ভাঙ্গা ভালো, ছোট না বড় প্রান্ত থেকে, এর সাথে কি কোনো পার্থক্য আসলেই আছে। এরকম ধর্মীয় মানসিকতার অন্ধ বিশ্বাস কি গোয়ার্তুমি বা প্রশংসাযোগ্য, যদি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিও সে রকম হয়ে থাকে, যে মোরতারা পরিববার কিছুতেই ব্যাপটিজমের সেই অর্থহীন ধর্মীয় আচারটির সুযোগ নেবার জন্য তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তারা কি মিথ্যাভাবে এই সুযোগটা নিতে পারতো না, ব্যাপটিজমের সময় তারা কি মনে মনে না বলতে পারতেন না? নিজেদের ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য এতটুকু ছলনা কি তারা কি করতে পারতেন না? না তারা সেটা করতে পারেননি, কারণ তারাও প্রতিপালিত হয়েছেন ধর্মীয় (মৃদুপন্থী) পরিমণ্ডলে, সুতরাং এই এসব হাস্যকর আচারকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই তারা বিচার করতে শিখেছেন। আমি শুধু সেই হতভাগ্য এডগার্ডোর কথা ভাবি, নিজের অনিচ্ছায় অজান্তে তার এমন একটি পৃথিবীতে জন্ম নিতে হয়েছে, যেখানে প্রাধান্য বিস্তার করছে ধর্মাশ্রিত মানসিকতা; এই দ্বিমুখী দ্বন্দ্বে নিষ্ঠুরতম একটি প্রক্রিয়ায় অসহায় এই শিশুটি এতিমে রুপান্তরিত হয়েছিল, যদিও চার্চের চোখে সেটি ছিল তার জন্যে সবচেয়ে উপকারী সিদ্ধান্ত।

চতুর্থত,এই ভাবনাটিকে আরো খানিকটা অগ্রসর করলে, সেই ধারণাটি আমরা অনুধাবন করতে পারি তা হলো এটি দাবী করছে যে একটি ছয় বছরের বালকও কোনো ধর্মাবলম্বী হতে পারে বা সত্যিকার অর্থে তার আদৌ কোনো ধর্ম থাকতে পারে, সেটি ইহুদীবাদ, খ্রিষ্টধর্ম বা যে কোনো ধর্মই হোক না কেন। অন্যভাবে বললে, কোনো একটি অবুঝ শিশুকে তার অজান্তেই ব্যাপটাইজ করার মাধ্যমে এক ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে রুপান্তরিত করাটাই আরো বেশী উদ্ভট। তবে নাবালক শিশুদেরকে কোনো একটি বিশেষ ধর্মের বলে চিহ্নিত করার চেয়ে অবশ্যই বেশী উদ্ভট নয়। এডগার্ডের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ তা তার ধর্ম না (যথেষ্ট ভালো করে জেনে বুঝে কোনো একটি ধর্মের অনুসারী হবার জন্য তার বয়স যথেষ্ট কম) বরং তার বাবা মা ও পরিবারের ভালোবাসা এবং যত্ন এবং এসব কিছু থেকে সে বঞ্চিত হয়েছে কিছু ক্যাথলিক চিরকুমার যাজকদের যাদের কুৎসিৎ নিষ্ঠুরতাকে হার মানাতে পারে শুধু তাদের সাধারণ মানবীয় অনুভূতিগুলোর প্রতি নগ্ন স্কুল অসংবেদনশীলতা, যে অসংবেদনশীলতা, ধর্ম কর্তৃক অপহৃত মানসিকতায় খুব সহজে জায়গা করে নেয়।

এমনকি শারীরিকভাবে অপহরণ ছাড়াও, শিশুদের কোনো ধর্মের অনুসারী বলে চিহ্নিত করাটা কি এক ধরনের শিশু নির্যাতন নয়? এ বিষয়ে আদৌ চিন্তাক্ষম হবার মত বয়স যখন তাদের হয় না? তারপরও শিশুদের প্রতি এই আচরণ আজো অব্যাহত আছে, প্রায় পুরোটাই কোনো প্রশ্নর মুখোমুখি না হওয়া ছাড়াই। আর এই আচরণটিকে প্রশ্ন করাই হচ্ছে এই অধ্যায়ে আমার মূল উদ্দেশ্য।

শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন

শিশুদের উপর যাজকদের নির্যাতন বলতে এখন বোঝায় যৌন নির্যাতনকে, এবং আমি অনুভব করতে বাধ্য হচ্ছি যে শুরুতেই, এই পুরো যৌন নির্যাতনের বিষয়টি এর সঠিক মাত্রানুযায়ী ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। অনেকেই নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন পিডোফিলিয়া বা শিশুকাম নিয়ে একধরনের হিস্টিরিয়াগ্রন্থ সময়ে আমরা বসবাস করছি, এই মব বা গণমনস্তাত্ত্বিকতা ১৬৯২ খ্রিষ্টাব্দে সালেম এর উইচ হান্ট (৭) এর কথা মনে করিয়ে দেয়। জুলাই ২০০০. নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড, যে পত্রিকাটিকে এধরনের বেশ কিছু প্রকাশনার মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে অনেকেই ব্রিটেনের সবচেয়ে জঘন্যতম পত্রিকা বলে মনে করেন, তথাকথিত একটি নামকরণ এবং লজ্জা’ দেবার ক্যাম্পেইন সূচনা করেছিল, যেখানে অভিযুক্ত পেডোফিলদের ( শিশুকামী) প্রতি সরাসরি উৎসাহী জনতার আক্রমণ করা শুধু বাকী ছিল; সেখানে উৎসাহী নির্বোধরা এমনকি হাসপাতালের একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের বাড়িও আক্রমণ করেছিল, কারণ তাদের বিদ্যায় বোঝার ক্ষমতা ছিল না যে পেডিট্রিশিয়ান আর পেডোফিল একই জিনিস না (৮)। এই গণ উন্মত্ততা এমন একটি পর্যায়ে চলে যায়, যে বাবা মায়েরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাদের শিশুদের নিয়ে। বর্তমান যুগের জাষ্ট উইলিয়াম (৯), বর্তমান যুগের হাক ফিনস (১০), আজকের যুগের সোয়ালো আর আমাজনরা (১১) শৈশবের সেই অতীতের মত চিন্তামুক্ত স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, যা শৈশবের সবচেয়ে মধুরতম অভিজ্ঞতা হতে পারতো (যখন নির্যাতিত হবার আসল ঝুঁকি, অনুমান করা কোনো ঝুঁকির চেয়ে কোনো অংশে সম্ভবত কম ছিল না)।

‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর প্রতি পক্ষপাতমুক্ত হয়ে মন্তব্য করা যেতে পারে, এই প্রচারণার সময় মানুষের আবেগ আসলে উসকে দিয়েছিল একটি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড; সাসেক্সে যৌন নির্যাতন,অপহরণ ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল আট বছরের একটি শিশুকে। যাই হোক, স্পষ্টতই সব পেডোফিলদের প্রতি একই ধরনের হিংস্র মনোভাব পোষণ খুব সঠিক নয় যখন পেডোফিলদের একটি ছোট অংশ একই সাথে খুনী, যারা এই আচরণের সত্যিকার নিশানা হতে পারে। তিনটি বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময়ই আমি সেখানে কর্মরত শিক্ষকদের সংস্পর্শে এসেছি, যাদের অনেকের ছোট ছেলেদের প্রতি স্নেহ অনেকের চোখে বাড়াবাড়ি রকম মনে হতে পারে। আসলেই যা নিন্দাযোগ্য। তাসত্ত্বে যদি পঞ্চাশ বছর পর, তারা যদি উকিল আর আইন হাতে তুলে নিয়ে মানুষদের তাড়া খেতে সব সময়, যে তারা শিশু হত্যাকারীদের চেয়ে কোনো অংশে ভালো কিছু না বলে, আমি বাধ্য হবো তাদের পক্ষে দাঁড়াতে এবং এমনকি তাদের একজনের শিকার হিসাবে (যদিও বিব্রতকর তবে কোনো ক্ষতিকর অভিজ্ঞতা না)।

রোমান ক্যাথলিক চার্চ এই অতীত অপমানের সিংহভাগ বহন করে। অনেক কারণে আমি রোমান ক্যাথলিক চার্চকে অপছন্দ করি, কিন্তু পক্ষপাতিত্ব আমি আরো অপছন্দ করি; এবং আমি মনে করি সম্ভবত এই একটি প্রতিষ্ঠান আমেরিকা ও আয়ারল্যাণ্ডকে কুৎসিভাবে চিহ্নিত করেছে এই বিশেষ প্রসঙ্গে। আমি মনে করি তাদের প্রতি বাড়তি জনরোষের কারণ সব যাজকদের ভণ্ডামী, যাদের পেশাগত জীবন মূলত পাপের প্রতি অপরাধবোধ জাগানোর কাজে নিবেদিত। এছাড়া ক্ষমতায় বা কর্তৃত্বে থাকা কোনো মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করার ব্যপার তো আছেই, প্রায় দোলনা থেকে শিশুকে শেখানো হয়েছে যাদের কোনো প্রশ্ন ছাড়া সন্মান করার জন্য। এই বাড়তি জনরোষ দেখেই আমাদের আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ, যেন দ্রুত কোনো বিচার বা সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে মিথ্যা স্মৃতি তৈরী করার জন্য মনের অসাধারণ ক্ষমতার কথা, বিশেষ করে যখন সেটা বাড়তি সহায়তা যায় অসাবধানী থেরাপিস্ট এবং ভাড়ায় যুদ্ধ করতে আসা অতি উৎসাহী আইনজীবিদের উস্কানীতে। মনোবিজ্ঞানী এলিজাবেথ লফটাস এক্ষেত্রে বিরল সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন, বিশেষ করে তীব্র বৈরী স্বার্থ হাসিলের এই সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি প্রদর্শন করেছিলেন, কত সহজে, মানুষের পক্ষে মিথ্যা স্মৃতি তৈরী করতে সক্ষম হওয়া কিন্তু যা কোনো ভিক্টিম বা নির্যাতনের শিকারের কাছে মনে হতে পারে সত্যিকারের স্মৃতির মতই বাস্তব (১২)। ব্যপারটা এতই প্রভাবশালী যে কোনো বিচারের জুরীরা তাদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের বীপরিতে গিয়ে এই ধরনের আন্তরিক মিথ্যা সাক্ষ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন।

আয়ারল্যাণ্ডের একটি বিশেষ ঘটনার ক্ষেত্রে, কোনো যৌন নির্যাতন না থাকা সত্ত্বেও খ্রিষ্টীয় ব্রাদার যাজকদের নৃশংসতা, যারা কিনা সেই দেশের সিংহভাগ পুরুষদের শিক্ষার জন্য দায়ী, আসলেই কিংবদন্তীতুল্য (১৩)। এবং একই কথা বলা যেতে পারে ধর্ষকামী নিষ্ঠুর নানদেরও কথা, যারা আয়ারল্যাণ্ডের মেয়েদের স্কুলগুলো পরিচালনা করেন। কুখ্যাত ম্যাগডালেন অ্যাসাইলামস, পিটার মুলানের চলচ্চিত্র ‘দ্য ম্যাগডালেন সিস্টারস’, এর যা কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল, টিকে ছিল ১৯৯৬ সাল অবধি (১৪)। এর ৪০ বছর পার হয়ে গেছে, বেত্রাঘাতের অপমানের যন্ত্রণার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেয়ে বরং যৌন আগ্রাসনের বিষয়টি নিষ্পত্তি বেশ সহজ মনে হতে পারে এবং আইনজীবিদেরও কোনো ঘাটতি নেই, ভিক্টিমদের কাছ থেকে এসব তথ্য খুঁজে বের করে ব্যপারাটাকে পয়সা বানানোর একটি চতুর উপায় হিসাবে রুপান্তর করার জন্য। বেশীর ভাগ নির্যাতনের শিকার হয়তো সেই অতীত বহু আগে বিস্মৃত হয়েছেন। অনেক অভিযুক্ত হয়তো বহু আগেই মৃত, সুতরাং তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলার সুযোগও নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে ক্যাথলিক চার্চ এক বিলিয়ন ডলারের বেশী ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এ ধরনের মামলাগুলোয় (১৫)। আপনি হয়তো তাদের সাথে খানিকটা সমবেদনা অনুভব করতে পারেন, তবে যখন জানবেন তাদের এই বিপুল অর্থটির উৎস কোথায়, আমার মনে হয় সেই অনুভূতিটির স্থায়ী হবার সম্ভাবনা খুব কম।

ডাবলিনে একটি লেকচারের শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আয়ারল্যাণ্ডে বহুল প্রচারিত ক্যাথলিক যাজকদের যৌন নিপীড়নের কিছুর ঘটনার ব্যপারে আমার মতামত কি। আমি উত্তর দিয়েছিলাম, যৌন নিপীড়নের মত জঘন্য কাজটি ক্ষতি করছে কোনো সন্দেহ নেই সেটা স্বীকার করেই আমি মনে করি, তার চেয়ে আরো সেখানে ক্যাথলিক ধর্মমতে শিশুদের প্রতিপালন করার মাধ্যমে বেশী মানসিক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। এটি, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মাথায় আসা, দ্রুত খুব বেশী চিন্তা না করে করা একটি মন্তব্য ছিল এবং আমি অবাক হয়েছিলাম, আইরিশ দর্শকরা হাততালি দিয়ে সেটি সমর্থন করেছিল (যদিও স্বীকার করতে হবে, দর্শকরা মূলত ডাবলিনের শিক্ষিত বুদ্ধিজীবি সমাজকে। প্রতিনিধিত্ব করে, কোনোভাবে তারা তাদের পুরো দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে এমন বলা সম্ভব নয়।); কিন্ত এই ঘটনাটি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল, যখন যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী চল্লিশের মাঝামাঝি বয়সের এক মহিলার চিঠি আমি পাই, যিনি রোমান ক্যাথলিক ধর্মমতে প্রতিপালিত হয়েছিলেন, তার সাত বছর বয়সে, তিনি চিঠিতে আমাকে জানান, দুটো অপ্রীতিকর ঘটনা তার জীবনে ঘটেছিল, একজন যাজক, তাকে যৌন নির্যাতন করেছিল তার গাড়ীতে, এবং প্রায় একই সময় তার স্কুলের একজন বন্ধুও দুর্ভাগ্যজনকভাবেই মারা গিয়েছিল এবং সে নরকে যায়, কারণ মৃত্যুর সময় সে ছিল প্রোটেস্টান্ট বা সেরকম কিছু যা তিনি আমাকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, তার বাবা মায়ের ধর্মবিশ্বাস ও চার্চ এর তৎকালীন আনুষ্ঠানিক অবস্থান ছিল। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক হিসাবে রোমান ক্যাথলিকদের শিশু নির্যাতনের দুটি ঘটনার মধ্যে, একটি শারীরিক আর আরেকটি মানসিক, তার মতে দ্বিতীয়টি বা মানসিক নির্যাতনই সবচেয়ে ক্ষতিকর মনে হয়েছিল। তিনি লিখেছিলেন,

‘আমার গায়ে যাজকের হাত রাখার ব্যপারটি আমার মনে যে ছাপ ফেলেছিল (একজন সাত বছরের বালিকা হিসাবে), তা হলে বিবমীষার, অপরদিকে আমার বন্ধুটির স্মৃতি, যে কিনা শুধু প্রোটেস্টান্ট হবার কারণেই নাকি অনন্তকাল নরকের আগুনের পুড়বে, সেই ভাবনাটি ছিল অত্যন্ত কষ্টকর, অকল্পনীয় ভয়ের, আমার বহু দুঃস্বপ্নের কারণ।

যাজকের কারণে তার কখনোই ঘুম নষ্ট হয়নি, কিন্তু বহু রাত সে ভয়ের সাথে জেগে কাটিয়েছে ভেবে যে, তার ভালোবাসার অনেক মানুষই একসময় নরকে যাবে, যা তার বহু বিভীষিকাময় দুঃস্বপ্নের কারণ। স্বীকার করতে হবে, যে যাজকের গাড়িতে বসে যে তিনি তার শরীরের সংবেদনশীল অংশগুলোয় যাজকের হাতের আগ্রাসনের শিকার হতে হয়েছিলেন তা আসলে অপেক্ষাকৃত মৃদু, যখন সেটি তুলনা করা হয় যাজকদের পায়ুকামের শিকার কোনো পুরুষ শিশু সেই কষ্ট আর ঘৃণার সাথে; ইদানীং অবশ্য ক্যাথলিক চার্চ আগে যেভাবে নির্যাতন করতো তেমন আর করার সুযোগ পায় না। কিন্তু এই উদাহরণটি বলছে অন্ততপক্ষে সম্ভব যে শিশুদের মানসিক নির্যাতন শারীরিক নির্যাতন থেকে ভয়াবহ হতে পারে। প্রচলিত একটি গল্প আছে, আলফ্রেড হিচকক, সেই বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, যিনি মানুষকে ভয় দেখানোর দক্ষ একজন শিল্পী ছিলেন, একবার সুইজারল্যাণ্ডের মধ্যে দিয়ে গাড়ী চালানোর সময়, তিনি হঠাৎ করে জানালা দিয়ে আঙ্গুল উঁচিয়ে একটি দৃশ্য দেখিয়ে বলেন, “আমার দেখা সবচেয়ে ভয়ের দৃশ্য হচ্ছে ওটা। সেই দৃশ্যটি হচ্ছে একজন যাজক একটি বালকের কথা বলছেন, বালকের কাঁধে তার হাত। হিচকক গাড়ীর জানালা দিয়ে মাথা বের করে চিৎকার করে বলেন, ‘পালাও, ছোট বাচ্চা, তোমার প্রাণ নিয়ে যত দূরে পারো পালাও।

‘লাঠি আর পাথর আমার হাড় ভাঙতে পারে, কিন্তু কথা কোনোদিনও আমাকে কষ্ট দিতে পারবে না। এই প্রবাদ সত্যি, যতক্ষণ না আপনি আসলে কারো কথা বিশ্বাস করছেন না। কিন্তু যদি আপনার সম্পূর্ণভাবে বেড়ে ওঠা এবং আপনার বাবা মা, যাজক, শিক্ষকরা যখন যা বলেছেন, সেসব যদি আপনি সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেন, সত্যিকারের বিশ্বাস, যা পুরোপুরি, শর্তহীন বিশ্বাসের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেমন ধরুন আপনি পুরোপুরি বিশ্বাস করেন যে, পাপীরা নরকের আগুনে পুড়বে (বা অন্য কোনো জঘন্য বর্বর মতবাদ, যেমন একজন নারী তার স্বামীর সম্পত্তি), তাহলে পুরোপুরিভাবে সম্ভাবনা আছে এই সব কথা বা উচ্চারিত শব্দ কোনো কাজের চেয়ে আপনার মনে দীর্ঘস্থায়ী আর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আমি অন্তত মেনে নিয়েছি যে ‘শিশু নির্যাতন’ শব্দটি কোনো বাড়াবাড়ি নয়, শিক্ষক আর যাজকদের শিশুদের সাথে করা কিছু আচরণের বর্ণনা আমি যখন দিচ্ছি। যেমন তারা শিশুদের কোনো প্রশ্ন ছাড়াই বিশ্বাস করতে উৎসাহ দেন, যে যাজকের কাছে পাপ স্বীকার না করে তার জন্য প্রায়শ্চিত্ত না পাওয়া কোনো পাপের শাস্তি হচ্ছে অনন্তকালের জন্য নরকবাস। ‘

টেলিভিশন প্রামান্যচিত্র ‘রুট অব অল ইভিল (১৬)?’ এ, যার কথা আগেও উল্লেখ করেছিলাম, আমি বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতার সাক্ষাঙ্কার নিয়েছিলাম, এবং আমাকে এর জন্য সমালোচনা করা হয়েছিল, আমি সাক্ষাৎকারের জন্য শুধু ধর্মীয় চরমপন্থীদেরকে বেছে নিয়েছি।কোনো মূলধারার, যেমন কোনো সন্মানিত কোনো আর্চ বিশপের সাথে কথা বলিনি (১৭)। শুনলে মনে হতে পারে সমালোচনাটি যুক্তিযুক্ত, শুধুমাত্র, একবিংশ শতাব্দীতে সারা বিশ্বে যা মনে করা হয় চরমপন্থী, যুক্তরাষ্ট্রে আসলে তা এখন মূলধারার। আমি যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, তাদের মধ্যে যাকে দেখে ব্রিটিশ টিভি দর্শকরা সবচেয়ে বেশী হতবাক হয়েছিলেন বীতশ্রদ্ধায়, তিনি ছিলেন কলোরাডো স্প্রিংস এর যাজক টেড হ্যাঁগার্ড, কিন্তু বুশ এর আমেরিকায় সংখ্যালঘু চরমপন্থী হবার বদলে এই যাজক টেড ত্রিশ মিলিয়ন সদস্যপুষ্ট ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন হব ইভানজেলিকালস এর সভাপতি এবং তার দাবীর সপক্ষে তিনি প্রতি সোমবার প্রেসিডেন্ট বুশের এর সাথে টেলিফোন পরামর্শ করার বিষয়টি জানান। যদি আমি সত্যিকারের চরমপন্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে চাইতাম আধুনিক এই যুক্তরাষ্ট্রর মানদণ্ডে তাহলে আমাকে রিকনস্ট্রাকশনিষ্টদের কাছে যেতে হতো, যাদের ‘ডমিনিয়ন থিওলজী’ প্রকাশ্যভাবে যুক্তরাষ্ট্রে খ্রিষ্টীয় ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে উৎসুক। যুক্তরাষ্ট্রের আমার এক উৎকণ্ঠিত সহকর্মী যেমন লিখেছিলেন আমাকে:

‘ইউরোপবাসীদের জানা প্রয়োজন, একটি ভ্রমণরত ধর্মীয় উন্মত্ত আজব একটি দল আছে, যারা ওল্ড টেষ্টামেন্ট এর বর্ণিত আইনই প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেমন সমকামিদের হত্যা করা ইত্যাদি, এবং জনপ্রতিনিধি হওয়া বা ভোটের অধিকার শুধু খ্রিষ্টানদের থাকা উচিৎ এমন মতবাদের পক্ষে যারা কাজ করে যাচ্ছেন। মধ্যবিত্ত বিশাল একটি জনসংখ্যা তাদের এই বাগ্মীতায় মুগ্ধ হয়ে উল্লসিত হচ্ছে। যদি ধর্মনিরেপক্ষতাবাদীরা সতর্ক না হন, তাহলে Dominionists আর Reconstructionists রা যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মতান্ত্রিকতায় মূলধারায় রুপান্তরিত হবে। (১৮)।

আমার টেলিভিশন প্রামান্যচিত্রের জন্য আমি আরো একজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, তিনি হচ্ছে যাজক কিনান রবার্টস, পাষ্টর টেড এর মত তিনিও কলোরাডোর রাজ্যের। পাষ্টর রবার্ট এর বৈশিষ্ট্যসুচক পাগলামী হচ্ছে এক ধরনের প্রতিষ্ঠান, যাকে তিনি বলেন হেল হাউস। হেল হাউস হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখানে বাবা মা বা খ্রিষ্টান স্কুলগুলো তাদের শিশুদের নিয়ে আসেন, তারা মরে যাবার পর কি হবে সেই বিষয়ে তাদের চূড়ান্ত ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে। অভিনেতারা বিশেষ কিছু পাপ কাজ, যেমন, গর্ভপাত এবং সমকামিতা সংক্রান্ত পাপ ও নরকে এই সব পাপের পাপীদের জন্যে কি ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তা অভিনয় করে দেখান, সেখান লাল কাপড় পড়া শয়তানকেও দেখা যায় তার অহংকারী রুপে; এগুলো হচ্ছে আসল নাটকের ভুমিকা মাত্র। আসল দৃশ্যপট হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরী করা নরক, সত্যিকারের ঝাঝালো সালফারের গন্ধ, ব্রিমস্টোন পুড়িয়ে সৃষ্টি করা হয় ধোয়া, এবং অভিশপ্তদের আর্তনাদ ইত্যাদি।

সেই নাটকের প্রস্তুতি দেখার পর, যেখানে এবং ভিক্টোরিয় যুগের কোনো মেলোড্রামার মত দৃষ্টিকটুভাবে শয়তান তার সুবিধাজনকভাবে শয়তানি করার সুযোগ পায়, আমি তার নাটকের দলের সামনে পাষ্টর রবার্টস এর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, হেল হাউজে বেড়াতে আসার জন্য আদর্শ বয়স হচ্ছে ১২; আমাকে খানিকটা হতবাক করেছিল তার উত্তর,

আমি তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কোনো একটি ১২ বছরের শিশু এই ভয়ঙ্কর নাটক দেখে যদি দুঃস্বপ্নে তাড়িত হয়, সে বিষয়টি কি তাকে আদৌ বিচলিত করবে না? তিনি উত্তর দেন, আমার ধারণা বেশ সতোর সাথেই:

‘আমি বরং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবো যে নরক হচ্ছে এমন একটি জায়গা, সেখানে ঘুণাক্ষরেও তারা যাবার কথা ভাবা দূরের কথা, কোনোদিনও যেতে চাইবে না। আমি বারো বছর বয়সে তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, তারা যেন কোনো পাপের জীবন না কাটায়, যে জীবনে যীশু খ্রিষ্ট্রের উপস্থিতি থাকবে না, বা তাকে তারা কোনোদিনও খুঁজে পাবে না। এবং এর ফলাফল যদি রাতের দুঃস্বপ্ন হয়, আমি মনে করি এর ফলে আরো বড় একটি মহৎ উদ্দেশ্য সফল হবে, শুধুমাত্র রাতের দুঃস্বপ্ন দেখার বদলে অনেক কিছুই অর্জিত হবে।

আমি মনে করি, পাষ্টর রবার্ট যা বিশ্বাস করেন বলে দাবী করছেন সেটি যদি আপনি আসলেই আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে থাকেন, শিশুদের ভয় দেখিয়ে পোষ মানানোর এই প্রক্রিয়ায় আপনিও তাহলে সায় দেবেন।

আমরা কিছুতেই পাষ্টর রবার্টসকে ব্যতিক্রম চরমপন্থী উন্মত্ত হিসাবে চিহ্নিত করে তালিকা থেকে বাতিল করে দিতে পারিনা, টেড হ্যাঁগার্ড এর মত তিনিও এখনকার আমেরিকার মূলধারারই প্রতিনিধি। আমি অবাক হবো এমনকি তারাও, তার সহধর্মবাদীদের কিছু কিছু আজগুবী বিশ্বাসে তেমন ভরসা করেন, যেমন, আপনি যদি আগ্নেয়গিরির ভিতরের আওয়াজ শুনতে পারেন, তাহলে অভিশপ্ত পাপীদের আর্তনাদ শুনতে পারবেন (১৯)। এবং গভীর সমুদ্রের ভেন্টে পাওয়া জায়ান্ট টিউব ওয়ার্ম হচ্ছে বাইবেল এর মার্ক ৯:৪৩-৪ এর সত্যতা প্রমাণ করে। এবং ‘যদি আপনার হাত আপনাকে অপমান করে, একে কেটে ফেলে দিন,পঙ্গুদের জীবন আলিঙ্গন করে নেয়াই আপনার জন্য উত্তম, বরং দুটি হাত নিয়ে নরকে যাবার বদলে, সেই আগুনে দগ্ধ হবার জন্য, যে আগুন কখনোই নেভেনা; যেখানে তাদের কৃমিগুলো কখনো মরে না। নরক আসলে কেমন তা নিয়ে তারা যাই ভাবুক না কেন, নরকের আগুন নিয়ে উৎসাহী এই মানুষগুলো সবারই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্যদের দুর্দশা নিয়ে আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করা, এবং সেই আত্মতুষ্টির মানসিকতা যখন তারা ভাবে, রক্ষা পেয়েছে এমন মানুষের দলে তারা আছেন। বিষয়টি সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছিলেন ধর্মতাত্ত্বিকদের অগ্রদুত সেন্ট থমাস আকোয়াইনাস তার সুমা থিওলজিকায়: ‘সাধু সন্তরাই সবচেয়ে আশীর্বাদপুষ্ট এবং ঈশ্বরের করুণা তারাই বেশী উপভোগ করেন, কারণ নরকে অভিশপ্তদের শাস্তি দেখার সুযোগ পান তারা। বেশ দারুণ মানুষ বলতেই হবে (২০)।

নরকের আগুনের ভয় কিন্তু ভীষণ বাস্তব অনুভূত হতে পারে, এমনকি অন্যথায় যৌক্তিক সেই মানুষগুলোর মধ্যেও সেটি দেখা যায়। আমার ধর্ম বিষয়ক টেলিভিশন প্রামাণ্য চিত্রটি প্রচারিত হবার পর আমার পাওয়া অনেকগুলো চিঠির মধ্যে একটি ছিল, বুদ্ধিমান ও স্পষ্টতই একজন সৎ ভদ্রমহিলার:

আমি পাঁচ বছর বয়স থেকেই ক্যাথলিক স্কুলে পড়েছি, এবং নানদের কাছ থেকে দীক্ষা পেয়েছি যারা কথায় কথায় বেত, লাঠি কিংবা চাবুক ঘোরাতো আমাদের উপর; আমার কৈশোরে আমি ডারউইন পড়ি, তিনি। বিবর্তন নিয়ে যা বলেছিলেন তা আমার কাছে এত বেশী যৌক্তিক আর বোধগম্য মনে হয়েছিল আমার মগজের যুক্তি প্রধান অংশে; তবে, আমার সারাজীবন আমি দারুণ দ্বন্দ্বে কষ্ট পেয়েছি আমার মনে গভীরে গেথে থাকা নরকের আগুনের ভয়, যা খুব সহজেই মনের ভিতর নানা কারণেই জেগে ওঠে। আমি কিছু মানসিক থেরাপীও পেয়েছিলাম, যা আমার আগের সমস্যাগুলো খানিকটা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল, তবে কোনো কিছু আমার নরকের আগুনের প্রতি গভীর ভয়টাকে কখনোই প্রশমিত করতে পারেনি। সুতরাং আমি যে কারণে আপনাকে লিখছি সেটা হলো আপনি কি আমাকে কোনো থেরাপিষ্ট এর নাম বা ঠিকানা পাঠাতে পারবেন, যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন আপনার এই সপ্তাহে প্রচারিত অনুষ্ঠানটিতে, যারা বিশেষ করে এই ধরনের ভয় নিয়ে কাজ করেন।

এই চিঠিটি আমাকে ভীষণ আন্দোলিত করেছিল এবং (সেই নানগুলোর শাস্তি হবার জন্যে যে আসলেই কোনো নরকের অস্তিত্ব নেই এই সাময়িক ও আমাহাত্ম্যপূর্ণ অনুশোচনাটি চেপে রেখে) তাকে উত্তর দিয়েছিলাম, উচিৎ হবে তিনি যেন তার যৌক্তিক মনটাকে বিশ্বাস করেন, যা তার একটি বিশেষ সম্পদ, অনেক দুর্ভাগা মানুষই তা থেকে বঞ্চিত। আমার প্রস্তাব ছিল, নরকের সেই অতিমাত্রায় বিভৎস আর বিভীষিকাময় বর্ণনা, যা নান এবং ধর্মযাজকরা প্রচার করেন, তা আসলে এর অসারতা আর অবাস্তবতাকে ঢাকতেই একে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। যদি নরকের অস্তিত্ব আসলেই থাকতো, সামান্য মাঝারী ধরনের একটু অপ্রীতিকর হওয়াই যথেষ্ট ছিল মানুষকে নরকে যাওয়ার মত কোনো কাজ করা থেকে বিরত রাখার জন্য। যেহেতু এটির কোনো সত্য হবার সম্ভাবনা নেই, এটিকে বিজ্ঞাপনের মতো ফুলিয়ে ফাপিয়ে খুবই ভয়ের একটি দৃশ্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে শুধু এর অসারতাকে ঢাকতে এবং নিষেধাজ্ঞামূলক কর্মকাণ্ডে সফল হবার জন্য সেই ভারসাম্যটি করতে তারা বাধ্য হয়। আমি তাকে সেই থেরাপিষ্ট, জিল মিটন এর সাথেও যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলাম, চমৎকার ও আন্তরিক একজন মহিলা, যার সাক্ষাৎকারও আমি নিয়েছিলাম ক্যামেরার সামনে। জিল নিজেও প্রতিপালিত হয়েছিলেন একটি সমতূল্যভাবেই অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একটি ধর্মগোষ্ঠীতে, যারা তাদের পরিচয় দেয় ‘এক্সকুসিভ ব্রেদরেন’ হিসাবে: এতই অপ্রীতিকর সেই গোষ্ঠী যে একটি ওয়েবসাইটই (www.peebs.net) আছে, যারা এই গ্রুপ থেকে পালিয়ে আসা সদস্যদের সহায়তা দেয়।

নারকীয় বিভীষিকার একটি গল্পের মধ্য দিয়ে জিল মিটন নিজেই প্রতিপালিত হয়েছিল, এরপর প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর। তিনি সেই খ্রিষ্টীয় গোঁড়া সেক্টটি থেকে পালিয়ে আসেন। শৈশবে যারা নির্যাতিত হয়েছিলেন নানাভাবে এখন তিনি মূলত তাদের কাউন্সেলিং ও সাহায্য করেন: “যদি আমার শৈশবের কথা চিন্তা করি, সেটি পুরোপুরি দখল করে ছিল ভয়, চোখ রাঙানী, ধমক, বর্তমান সেই সময়ে এবং অনন্তকালের ভবিষ্যতেও। আর কোনো শিশুর জন্যে, নরকের আগুন এবং দাঁতে দাঁত পিষ্ট করার শব্দ আসলেই খুব বাস্তব সম্মত। সেখানে রুপকের কোনো বিষয় ছিল না। এর পর আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি কি একটু বিস্তারিতভাবে আমাদের বলবেন, শৈশবে কি ধরনের নরকের কাহিনী তিনি শুনেছিলেন, এবং অবশেষে তার মূল উত্তরটি ছিল তার বাঙময় মুখচ্ছবির মতোই হৃদয়স্পর্শী, বেশ ইতস্তত করার পর তিনি বলেন, খুব অদ্ভুত তাই না? এতদিন পরও, এখনও আমার উপর সেই কাহিনীগুলো প্রভাব ফেলতে সক্ষম, যখন আপনি, যখন আপনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন সেই প্রশ্নটি; নরক হচ্ছে ভয়ানক সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের অনুগ্রহ বঞ্চিত একটি জায়গা, সেখানে সব বিচার সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে, আসল আগুনের লেলিহান শিখা, সত্যিকারের নিপীড়ন আর যন্ত্রণা এবং যা চলবে অনন্তকালব্যাপী, কোনোদিনও যেখান থেকে মুক্তি মিলবে না।”

এরপর তিনি তার পরিচালিত সাপোর্ট গ্রুপটির কথা বলেন, যেখানে তার মত শৈশবের অভিজ্ঞতাসহ পালিয়ে আসা মানুষদের তিনি সহায়তা দেন। এবং তিনি ব্যাখ্যা করেন এ ধরনের শৈশবের নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা অনেকের জন্য কত কঠিন একটি কাজ: ‘পরিত্যাগ করে আসার ব্যপারটি অস্বাভাবিকভাবেই কঠিন একটি কাজ, আপনি পুরো একটি সামাজিক বন্ধনের নেটওয়ার্ককে পেছনে ফেলে আসছেন, সেই পুরো সিস্টেমটি, যেখানে আপনি প্রতিপালিত হয়েছেন আপনার সারা জীবন, যে বিশ্বাসের ঘরানায় আপনি বড় হয়েছেন, যা আপনি বহু বছর আগলে রেখেছেন নিজের বিশ্বাস বলে, সেটি আপনি ছেড়ে আসছেন, প্রায়শই আপনি পরিবার আর বন্ধুদের ছেড়ে আসছেন, আপনার আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না আর তাদের কাছে। তার সাথে আমাকে লেখা বিভিন্ন চিঠির আবেগও যুক্ত করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সেই সব চিঠিগুলোর রচয়িতা আমার পাঠকরা, যারা বলেছেন আমার বই তারা পড়েছেন, এবং এর ফলশ্রুতিতে তারা তাদের ধর্মকে পরিত্যাগ করতে পেরেছেন। খানিকটা অস্বস্তিকর অনুভূতিও জাগায় যখন তারা জানায় তাদের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানোর সাহস পাচ্ছেন না বা পরিবারকে জানানোর ফলাফলটি সুখকর কিছু হয়নি। এই অভিজ্ঞতার একটি উদাহরণ দিতে পারি, যা বৈশিষ্ট্যসূচক হতে পারে, চিঠিটির তরুণ লেখক যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একজন ছাত্র।

এই ইমেইলটা আপনাকে পাঠানোর তাগিদ অনুভব করছি, কারণ ধর্ম সম্বন্ধে আপনার সাথে আমি সহমত পোষণ করি। আমি নিশ্চিৎ আপনি জানেন যে দৃষ্টিভঙ্গিটি যুক্তরাষ্ট্রে যে কাউকে বিচ্ছিন্ন করে দেবার ক্ষমতা রাখে। আমি। একটি খ্রিষ্টীয় পরিবারে বড় হয়েছি এবং যদিও সেই ধর্মের ধারণা কখনোই আমার মনের গভীরে রেখাপাত করেনি, তাসত্ত্বেও খুব সম্প্রতি সাহস অর্জন করে বিষয়টি আমি একজনকে জানিয়েছিলাম। সেই মানুষটি ছিল আমারই প্রেমিকা আর সে রীতিমত ভীত হয়ে পড়ে। আমি বুঝতে পারি, নাস্তিকতার কোনো ঘোষণা কি ধরনের বিস্ময় সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন যে, আমি তার কাছে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি মানুষ, আমাকে সে আর বিশ্বাস করেনা, কারণ তার মতে আমার নীতিবোধ ঈশ্বর থেকে আসেনি। আমি জানি না এই অবস্থা থেকে কোনো মুক্তি আছে কিনা আমাদের। এই ধরনের খারাপ কোনো প্রতিক্রিয়ারই ভয়েই বিশেষ করে অবিশ্বাসের কথা কাছের মানুষদের জানানোর ব্যপারে আমি আগ্রহী ছিলাম না। এই ইমেইলের কোনো উত্তর আমি আশা করছিনা, শুধু আপনাকে লিখলাম কারণ আমার পরিস্থিতি এবং হতাশায় আপনি সহমর্মিতা অনুভব করবেন। কল্পনা করুন আপনার ভালোবাসার সেই মানুষটিকে হারানো, যে শুধুমাত্র ধর্মের উপর ভিত্তি করে আপনাকে ভালোবাসতো। তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি এখন ঈশ্বরহীন বর্বর একটি মানুষ, সেটি ছাড়া আমরা পরস্পরের জন্যে অন্য সব দিক থেকেই সঠিক ছিলাম। এটি আমাকে আপনার একটি পর্যবেক্ষণের কথা মনে করিয়ে দেয়, বিশ্বাসের নামে মানুষ উন্মত্ত আর অস্বাভাবিক সব কাজ করে। আমার কথা শোনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই দুর্ভাগা আমি তরুণকে উত্তর দিয়েছিলাম, তাকে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, তার প্রেমিকা যেমন তার সম্বন্ধে কিছু জানতে পেরেছেন, তেমনি সেও তার প্রেমিকা সম্বন্ধে কিছু জানতে পেরেছে; সে কি আসলেই তার উপযুক্ত? আমি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলাম।

আমি এর আগেই আমেরিকার জনপ্রিয় কমেডিয়ান জুলিয়া সুইনী ও ধর্মের কিছু উপকারী দিক খোঁজার একান্ত প্রচেষ্টা ও বয়সকালে ক্রমবর্ধমান সন্দেহবাদীতার মধ্যে শৈশবের ঈশ্বরকে কিছুটা উদ্ধার করার জন্য তার হৃদয়গ্রাহী কৌতুকময় আর একগুয়ে সংগ্রামের কথা বলেছিলাম। সেই সংগ্রামের পরিণতি তার জন্য সুখকর ছিল। আনন্দের সাথে, তিনি এখন সর্বত্র তরুণ অবিশ্বাসীদের জন্য একজন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত– রোল মডেল। তার শেষ উপসংহারে পৌঁছানোর অংশটি মনে হয় সবচেয়ে বেশী হৃদয়স্পর্শী, তার ‘লেটিং গো অব গড’ শোটির মূল বিষয় সেটি (২১)। তিনি সবকিছুই চেষ্টা করেছেন, এবং তারপর ..

একদিন কাজ শেষে যখন আমি বাসার পেছনের বাগানের মধ্য দিয়ে বাড়ী ফিরছিলাম, আমি টের পেলাম আমার মাথার মধ্যে খুব ক্ষীণস্বরে কে যেন কিছু বলছে; আমি নিশ্চিৎ না কতক্ষণ ধরে সেই কণ্ঠস্বরটি সেখানে ছিল কিন্তু হঠাৎ করে সেটির তীক্ষ্মতার মাত্রা খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল, অস্ফুষ্ট স্বরে সেটি বলছিল, কোনো ঈশ্বরেরই অস্তিত্ব নেই।

আমি চেষ্টা করলাম বিষয়টিকে উপেক্ষা করতে, কিন্তু এটি আরো খানিকটা তীব্র হলো, কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। কোনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই.. হায় ঈশ্বর.. কোনো ঈশ্বর নেই….!

এবং আমি যেন বড় একটি ধাক্কা খেলাম, কেঁপে উঠলাম, মনে হলো আমি কোনো নৌকা থেকে ছিটকে পড়ে গেলাম এবং তারপর ভাবলাম, না আমি পারবো না, আমি জানি না, আমি আদৌ চাইলেও ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অবিশ্বাস করতে পারবো কিনা। আমার ঈশ্বরের প্রয়োজন আছে, মানে বলতে চাচ্ছি .আমাদের মধ্যে তো একটা দীর্ঘ দিনের একটা সম্পর্ক আছে, তাই না?

কিন্তু আমার জানা নেই কেমন করে ঈশ্বরকে অবিশ্বাস করতে হয়; আমি জানি না আপনি কেমন করে তা করতে পেরেছেন, কেমন করে আপনার দিন শুরু হয়, কিভাবে অবিশ্বাস নিয়ে দিনটা পার করেন আপনি। নিজেকে কেমন যেন ভারসাম্যহীন মনে হলো।

আমি ভাবলাম, “ঠিক আছে, শান্ত হও কিছুক্ষণ, চেষ্টা করে দেখা যাক ঈশ্বর-বিশ্বাস-না-করা বিষয়টি কেমন, কিছুক্ষণের জন্য। একবার ঈশ্বর নেই এমন চশমা পরে চারপাশে একটু দেখুন, তারপর চশমাটি না হয় তাৎক্ষণিকভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিলে হবে’, আমি সেই চশমাটা পরে, চারিদিকে তাকালাম। খানিকটা বিব্রত লাগছে বলতে যে প্রথমে মাথা খানিকটা ঘুরে উঠেছিল, কিন্তু আসলে যা অনুভব করেছিলাম, সেটি ছিল একটি চিন্তা, ‘বেশ, আকাশের মধ্যে পৃথিবীটা আসলে ভেসে আছে কিভাবে? আপনি বলতে চাইছেন, মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে প্রচণ্ড বেগে শুধু ছুটে চলছি। কিন্তু ব্যপারটা যে কোনো সময় তো সমস্যা তৈরী করতে পারে! আমি দৌড়ে গিয়ে মহাশূন্য থেকে ছিটকে পড়া পৃথিবীটাকে দুই হাতে ধরতে চাইলাম, এবং তারপর আমার মনে পড়লো, ওহহ হ্যাঁ, মাধ্যাকর্ষণ আর কৌনিক বেগ সূর্যের চারপাশে আমাদের ঘোরাটাকে টিকিয়ে রাখবে সম্ভবত অনেক অনেক দীর্ঘ একটা সময়।

যখন আমি লস এঞ্জেলেস থিয়েটারে প্রথমবারের মত তার ‘লেটিং গো অব গড’ শোটি দেখেছিলাম এই দৃশ্যটি আমাকে বিশেষভাবে স্পর্শ করেছিল, বিশেষ করে জুলিয়ার বর্ণনায় তার মা বাবার প্রতিক্রিয়াগুলো, যখন তারা প্রেস রিপোর্টে জুলিয়ার আরোগ্য লাভ সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন:

আমার মা ফোন করেই প্রথমে চিৎকার করেই বললেন, ‘নাস্তিক? নাস্তিক???’ এরপর আমার বাবা ফোন করে জানান, ‘তুমি তোমার পরিবার, স্কুল এবং শহরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। মনে হচ্ছিল আমি যেন রাশিয়ার কাছে কোনো গুপ্ত খবর পাচার জানালেন, আমার সাথে আর কোনোদিন কথা বলবেন না, বাবা বললেন, মরার পর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানেও যেন আমি না যাই। ফোন রাখার পর, ভেবেছিলাম, দেখি তোমরা থামাতে পারো কিনা।

জুলিয়া সুইনির অসাধারণ গুণের একটি অংশ হলো একই সাথে তিনি আপনাকে কাঁদাতে আর হাসাতে পারেন:

আমি মনে করি আমার বাবা-মা খানিকটা হতাশ হয়েছিলেন, যখন বলেছিলাম আমি আর ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না, কিন্তু নাস্তিক হওয়ার ব্যপারটা তাদের কাছে সম্পূর্ণ অন্যরকম একটি বিষয় ছিল।

ড্যান বার্কারের ‘লুসিং ফেইথ ইন ফেইথ: ফ্রম প্রিচার টু অ্যাথিস্ট’ (২২), একজন নিবেদিত প্রাণ মৌলবাদী এবং উৎসাহী ধর্মযাজকের ধীরে ধীরে বর্তমানে দৃঢ়চিত্তের একজন অবিশ্বাসী হয়ে ওঠার গল্প। গুরুত্বপূর্ণভাবে বার্কার কিন্তু অবিশ্বাসী হবার পরও অভ্যাস বশত কিছু দিন ধর্ম প্রচার অব্যাহত রেখেছিলেন। কারণ এটি ছাড়া আর কোনো পেশাগত দক্ষতা তার ছিল না, আর সামাজিক সেই দ্বায়িত্বের জালটা তিনি অস্বীকার করতে পারেননি। তিনি এখন জানেন যুক্তরাষ্ট্রের বহু যাজক ঠিক সেই পরিস্থিতির মধ্যেই আটকে আছেন, তাদের নিজেদের জগতে, শুধু হয়তো তার কাছে নিজেদের অবিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন বইটা পড়ার পর। ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া হতে পারে এমন কিছু অনুমান করে নিজেদের পরিবারের কাছে অবিশ্বাসের কথা প্রকাশ করতে তারা সাহস পাননি। বার্কারের নিজের কাহিনীর উপসংহার সুখকর ছিল। শুরুতে, তার বাবা-মাও অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু তারা তার যুক্তিগুলো মন দিয়ে শুনেছিলেন, এবং একসময় তারাও অবিশ্বাসের যৌক্তিকতাকে মেনে নেন নিজেরাই তার পথ অনুসরণ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপক তাদের বাবা মাকে নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে আমাকে দুটো চিঠি লিখেছিলেন। একজন লিখেছিলেন তার মা স্থায়ীভাবে বিষণ্ণতায় ভুগছেন তার ঈশ্বর অবিশ্বাসী নীতিবর্জিত আত্মার পরিণতি কি হবে সেই ভয়ে; অন্যজন লিখেছিলেন, তার বাবা হতাশ হয়েই মন্তব্য করেছিলেন, তার জন্ম হওয়াই উচিৎ ছিল না, কারণ তিনি নিশ্চিৎ তার ছেলে চিরকালের জন্য নরকের আগুনে পুড়ে মরবে। দুজনই উচ্চশিক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যারা তাদের চিন্তার পরিপূর্ণতা আর নিজেদের জ্ঞানের উপর ভরসা রাখেন, যারা স্পষ্টতই তাদের পিতামাতাকে ছাড়িয়ে গেছেন শুধু ধর্ম না, সাধারণ বুদ্ধিমত্তার সব বিষয়েও। এবার কল্পনা করুন কি পরিমান সংগ্রাম করতে হয় তাদের, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকে এতটা অগ্রসর নয়, এদের মত বা জুলিয়া সুইনির মত সেই শিক্ষার ঘাটতি যাদের আছে বা ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা নেই, পরিবারের গোঁড়া সদস্যদের সাথে যখন তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে যুক্তি দিতে হয়। হয়তো যেমন এর আগে উল্লেখ করা থেরাপিষ্ট জিল মিটনের অনেক রোগীদের একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত আমাদের এর আগের কথোপকথনে জিল ব্যাখ্যা করেছিলেন, এধরনের ধর্মীয় আবহে প্রতিপালন হচ্ছে একধরনের মানসিক অত্যাচারের শিকার হওয়া এবং আমি আমার সেই প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি এভাবে; আপনি ধর্মীয় নির্যাতন শব্দটি ব্যবহার করেন; আপনি যদি সত্যি সত্যি নরকের ভয় দেখিয়ে কোনো শিশুকে প্রতিপালন করার সাথে তার তুলনা করে দেখেন, আর সেই অত্যাচারটি যৌন নির্যাতনের আঘাতের সাথে আপনি কিভাবে তুলনা করেন? তার উত্তর ছিল, অবশ্যই সেটা কঠিন একটি প্রশ্ন উত্তর দেবার জন্য। আমি মনে করি এ দুটোর মধ্যেই অনেক মিল আছে, কারণ এটি হচ্ছে বিশ্বাসেরই অপব্যবহার, কোনো শিশুর নিজেকে স্বাধীন ও মুক্ত ভাবা এবং স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীর আর সবকিছুর সাথে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, এটি একধরনের অপমানজনক অবমূল্যায়ন, নিজের সত্যিকার সত্তাকে স্বীকার করা থেকে বঞ্চিত করা, যা দুই ক্ষেত্রেই একইভাবে ঘটে।

শিশুদের সুরক্ষার স্বার্থে ..

১৯৯৭ সালে, আমার সহকর্মী মনোবিজ্ঞানী নিকোলাস হামফ্রে ‘স্টিকস অ্যাণ্ড স্টোন’ এর সেই পরিচিত প্রবাদটি (২৩) দিয়ে অক্সফোর্ডে তাঁর অ্যামনেষ্টি লেকচারটি শুরু করেছিলেন (২৪)। অবশ্য হাম্পফ্রে তার বক্তৃতা শুরু করেন প্রবাদটি যে সবসময় সত্যি সেই যুক্তি দিয়ে। ক্ষতিকর যাদু টোনা করার পর হাইতির ভুডু বিশ্বাসীদের মধ্যে অনেকেই যারা মারা যান, সেটির কারণ হিসাবে বলা হয় আপাতদৃষ্টিতে শুধু আতঙ্ক কিংবা ভয়ের শরীরমনোবৃত্তীয় কিছু প্রভাব। এরপর তিনি অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি যে বক্তৃতা দিচ্ছেন এবং সেই সিরিজের জন্য যারা উপকৃত হবে, তাদের কি নির্দিষ্ট মানুষ বা কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ক্ষতিকর আর বিদ্বেষমূলক কথা বলা ও প্রকাশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো উচিৎ কি না? তার উত্তর ছিল সুস্পষ্টভাবে, না, এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা কিংবা সেন্সরশীপের বিরুদ্ধে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা অনেক মূল্যবান, এটি নিয়ে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা উচিৎ না। কিন্তু এরপর তিনি তার নিজের সেই উদার মানসিকতাকে ভড়কে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যতিক্রমের কথা উল্লেখ করে বসলেন, সেটি হলো শিশুদের বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সেন্সরশীপ আরোপের প্রতি সমর্থন জানিয়ে…

……নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যে শিক্ষাটি শিশুরা পায় তাদের বাড়িতে, যেখানে বিশেষ করে পিতামাতাদের অনুমতি আছে….এমনকি সেটা প্রত্যাশাও করা হয়, তারা তাদের শিশুদের হয়ে নির্ধারণ করে দেবেন কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, কোনটা ঠিক আর। কোনটা ভুল; শিশুদের ব্যপারে আমি যুক্তি দেবো, তাদেরও মানবাধিকার আছে অন্য মানুষের আজে বাজে আর মূর্খ ধারণার স্পর্শে এসে তাদের মন যেন পঙ্গু না হয়ে যায়, সেই মানুষগুলো যেই হোক না কেন। আর সেই সাথে কোনো বাবা-মায়েরই তাদের নিজস্ব পছন্দ অপছন্দগুলো সন্তানদের মাথার মধ্যে গেথে দেবার কোনো ঈশ্বর প্রদত্ত ছাড়পত্র নেই: সন্তানদের কৌতূহল আর জিজ্ঞাসার সীমানাকে সীমাবদ্ধ, গোঁড়া কোনো মতবাদ আর কুসংস্কারের আবহাওয়ায় তাদের প্রতিপালন কিংবা নিজেদের অন্ধবিশ্বাসের সংকীর্ণ পথে তাদের চলতে বাধ্য করার কোনো অধিকার নেই।

সংক্ষেপে উদ্ভট আজগুবী ধারণা থেকে নিজেদের মন অকলুষিত রাখার ক্ষেত্রে শিশুদেরও অধিকার আছে এবং সমাজ হিসাবে আমাদের এধরনের কোনো পরিবেশ থেকে তাদের রক্ষা করারও দ্বায়িত্ব আছে। সুতরাং কোনো বাবা মাকে সেই অনুমতি দেয়া আমাদের আর উচিৎ হবে না যে তারা তাদের সন্তানদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করেন, যেমন, বাইবেলের আক্ষরিক সত্যতা বা গ্রহরা তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে, ঠিক যেমন করে শিশুদের শারীরিক নির্যাতন করে দাঁত ভেঙ্গে দিতে, বা কোনো অন্ধকার ঘরে আটকে রাখতে আমরা তাদের আর অনুমতি দেই না।

অবশ্যই, এমন শক্তিশালী একটি মন্তব্যের যেমন ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে এবং এটি বহু ব্যাখ্যাও দাবী করে। কোনো একটি বিষয় আজগুবি আর অবিশ্বাস্য কিনা, সেটি কি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত মতামত নির্ভর নয়? মূলধারার বিজ্ঞান কি তার অগ্রগতিতে বহুবার আমাদের বিচলিত করেনি এ বিষয়ে সতর্ক হবার জন্য? বিজ্ঞানীরা। হয়তো ভাবতে পারেন জ্যোতিষবিদ্যা শিক্ষা দেয়ার কিংবা আক্ষরিক অর্থে বাইবেল পড়ার কোনো অর্থই হয় না। কিন্তু বহু মানুষ আছেন তারা ঠিক এর বিপরীতটাই ভাবছেন, তাদের সন্তানদের সেই শিক্ষা দেবার জন্য তারা কি অধিকার রাখেন না? শিশুদের বিজ্ঞান পড়ানো উচিৎ বিজ্ঞানীদের এমন ধারণার কি ঠিক একই রকম গোঁয়ার্তুমি নয়?

আমার নিজের বাবা-মাকে আমি ধন্যবাদ দেই, তাদের সন্তান কি ভাববে আর কিভাবে ভাববে সেটা বেশী জোর করে না শেখানো মত দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করার জন্য। যদি যথেষ্ট ও সঠিকভাবে সব বৈজ্ঞানিক প্রমাণের মুখোমুখি হয়ে তারা বড় হয় এবং তারপরও যদি যারা বাইবেলকে আক্ষরিকভাবে সত্য বা গ্রহের গতি তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা আসলেই তাদের মর্জি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে তারা কি চিন্তা করবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার শুধু তাদের, তাদের উপর সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত চাপিয়ে দেয়ার কোনো অধিকার বাবা-মায়ের নেই এবং এটি অবশ্যই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমরা ভাবি এই শিশুরাই পরবর্তী প্রজন্মের বাবা-মা হবে এবং তারা এমন একটি অবস্থানে থাকবে, তারা যেভাবে দীক্ষা পেয়েছে সেই দীক্ষাকে তারা অন্য প্রজন্মে হস্তান্তর করার সম্ভাবনা বহন করে।

হাম্পফ্রে প্রস্তাব করেন, যতদিন পর্যন্ত শিশুরা বয়সে নবীন এবং সহজেই বিশ্বাসপ্রবণ, ততদিন তাদের সুরক্ষার প্রয়োজন আছে; আর সত্যিকারের নৈতিক অভিভাবকত্বের পরিচয় পাওয়া যায় সেই সৎ ভাবনায়, যা দ্বিতীয়বার ভেবে দেখে, তারা নিজেরাই সেটি বেছে নিতেন কিনা, যদি তাদের তা করার মত যথেষ্ট বয়স হতো। তিনি বেশ আবেগের সাথে পেরুর একটি ইনকা (২৫) শিশুর উদাহরণ উল্লেখ করেন, যার ৫০০ বছর পুরোনো শরীরের অবশিষ্টাংশ ১৯৯৫ সালে পেরুর পর্বতমালায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। যে নৃতত্ত্ববিদ তাকে আবিষ্কার করেছিলেন তিনি লিখেছিলেন, শিশু মেয়েটি একটি ধর্মীয় আচারের শিকার। হাম্পেফ্রের দেয়া বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, এই তরুণ বরফ কন্যা বা আইস মেইডেন কে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশনে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়েছিলো এবং সেখানে দর্শকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল :

ইনকা পুরোহিতদের আধ্যাত্মিক দায়বদ্ধতা নিয়ে ভাবার জন্য, এই শিশু কন্যাটির শেষ যাত্রার সেই গর্ব আর উত্তেজনা অনুভব ভাগাভাগি করে নিতে, যখন বলি হিসাবে বিসর্জিত হবার সেই দুর্লভ সন্মানের জন্য তাকে একক ও বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল; সেই টেলিভিশন প্রোগ্রামটির বার্তা ছিল আসলে মানব বিসর্জনে আচারটি নিজ গুণে যেন গৌরবময় সাংস্কৃতিক একটি আবিষ্কার, বহুসংস্কৃতিবাদের মুকুটে আরেকটি রত্ন, যদি আপনি বলতে চান।

হাম্পফ্রে রীতিমত সেটি দেখে হতবাক হয়েছিলেন, আর আমারও অনুভূতি একই রকম:

তারপরও.. কোন সাহসে আর কিভাবে এধরনের প্রস্তাব কেউ দিতে পারে?, ধর্মীয় একটি আচারের মাধ্যমে সিদ্ধ বর্বর কোনো হত্যাকাণ্ড দেখে বিশেষভাবে মুগ্ধ হতে কোন সাহসে তারা.. আমাদেরই ড্রইং রুমে বসে, টেলিভিশনে দেখতে আমাদের নিমন্ত্রণ জানায়: কুসংস্করাচ্ছন্ন, নির্বোধ, অজ্ঞ, অহংকারী কিছু বৃদ্ধ মানুষ তাদের উপর নির্ভরশীল অসহায় শিশুকে যখন হত্যা করেছে যেখানে? কোনো সাহসে কারো বিরুদ্ধে ঘটানো অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে ভালো কিছু খুঁজে বের করার জন্য তারা আমাদের নিমন্ত্রণ করে?

আবারো, হয়তো ভদ্র কোনো উদারমনা পাঠক হয়তো খানিকটা অস্বস্তি অনভব করবেন। অনৈতিক, সে তো আমাদের মানদণ্ডে, অবশ্যই নির্বোধের মত একটি কাজ, তবে ইনকাদের সামাজিক মানদণ্ডে? নিশ্চয়ই ইনকাদের কাছে এই মানব শিশু বিসর্জন কোনোভাবেই নির্বোধ কোনো কর্মকাণ্ড তো নয়ই, বরং নৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত একটি কাজ, যার অনুমতি তারা পেয়েছে সমষ্টিগতভাবে, সবচেয়ে পবিত্র আর অবশ্য মান্য হিসাবে তারা যা ধারণ করে? সেই ছোট মেয়েটি, কোনো সন্দেহ নেই যে ধর্মে সে প্রতিপালিত হয়েছে সেই ধর্মের একজন অনুগত সমর্থক, হত্যা শব্দটি এখানে ব্যবহার করার আমরা কে? ইনকা পুরোহিতদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো মতামত দিতে গেলে আমরা কেন তাদের নৈতিক মানদণ্ডের বদলে আমাদের মানদণ্ড ব্যবহার করবো? হতে পারে এই মেয়েটি তীব্র আনন্দিত ছিল তার নিয়তি নিয়ে, হয়তো সে সত্যিই বিশ্বাস করেছিল যে সে অনন্তকালের জন্য স্বর্গে যাচ্ছে, যেখানে তাদের পরম আরাধ্য সূর্য দেবের সান্নিধ্যের উষ্ণতা পাবে সে। কিংবা হতে পারে.. যত অবিশ্বাস্য হোক না কেন, মেয়েটি তীব্র আতঙ্কে চিৎকার করেছিল।

হাম্পফ্রের বক্তব্য এবং আমারও সেটি, তা হচ্ছে, সে স্বেচ্ছায় এমন পরিণতি মেনে নিক বা না নিক, আমাদের খুব শক্ত কারণ আছে। মনে করার যে, যদি মেয়েটি সব সঠিক তথ্যগুলো পেত, সে হয়তো নিজেকে অকারণে অসময়ে এভাবে বিসর্জন দিতে রাজী হতো না। যেমন ধরুন, সূর্য আসলে হাইড্রোজেনের একটি গোলক ছাড়া আর কিছু না, মিলিয়ন ডিগ্রী কেলভিনের চেয়েও যার তাপমাত্রা বেশী, যা নিরন্তরভাবে নিউক্লিয়ার ফিউসনের মাধ্যমে হিলিয়াম তৈরী করে যাচ্ছে। এবং একটি গ্যাসের চাকতী থেকে এটি অতীতের কোনো এক সময় সৃষ্টি হয়েছিল, যেখান থেকে পৃথিবী ছাড়াও সৌরজগতের বাকী অংশও ঘণীভুত হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল দূর অতীতে। ধরে নেয়া যেতে পারে এসব তার জানা থাকলে সে নিশ্চয়ই একে দেবতা বলে পুজো করতো না। এটি নিশ্চয়ই তার বোধকে সতর্ক করতো এধরনের কিছুর জন্য নিজেকে বিসর্জিত করার বিরুদ্ধে।

ইনকা পুরোহিতদের তাদের অজ্ঞতার জন্য কোনো দোষ দেয়া যায় না। হয়তো তাদের নির্বোধ আর মহাপণ্ডিত ভাবাটা মনে হতে পারে বেশ কঠোর একটি অবস্থান। কিন্তু তাদের শুধু সেই অর্থেই দোষী করা যেতে পারে, সেটা হলো কোনো শিশুর উপর যখন তারা তাদের নিজেদের অন্ধবিশ্বাসকে চাপিয়ে দেয়, যে শিশুর বয়স এতই কম যে, সূর্য দেবতাকে পূজা করবে কিনা সে এখনও বুঝে উঠতে শেখেনি। হাম্পফ্রের অন্য বক্তব্যটি হলো যে, আজকের দিনের প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা এবং তাদের দর্শক হিসাবে আমরাও কিছুটা দোষের দায়ভার পেতে পারি এই ছোট মেয়েটির মৃত্যুর মধ্যে সৌন্দর্যকে দেখার জন্য, এমন কোনো কিছু যা আমাদের সামষ্টিক সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে। নৃতাত্ত্বিক বা জাতিগত ধর্মীয় আচরণের মধ্যে নানা বিশেষত্ব খুঁজে পাওয়া যার নামে নিষ্ঠুরতাকে যুক্তিযুক্ত করা হয় এমন ঘটনা প্রায়শই দেখা যায়, যে প্রবণতা বার বার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতেও আমরা লক্ষ করি। আর এটি হচ্ছে ভদ্র উদারমনা মানুষের মনে গোঙ্গাতে থাকা সেই অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণ, যারা একদিকে কোনো কষ্ট, যন্ত্রণা আর নিষ্ঠুরতাকে সহ্য করতে পারেনা, আবার অন্যদিকে উত্তর আধুনিকতাবাদী ও সাংস্কৃতিক আপেক্ষিকতাবাদের মন্ত্রে তারা প্রশিক্ষিত, অন্য কোনো সংস্কৃতিকে নিঃশর্তে শ্রদ্ধা করতে যা শেখায়, যা কিনা নিজের সংস্কৃতির চেয়ে কোনো অংশে কম না। মেয়েদের খৎনা বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন বা যৌনাঙ্গ বিকৃতিকরণ কোনো সন্দেহ নেই জঘন্য রকম কষ্টকর একটি অভিজ্ঞতা। এটি নারীর যৌনানুভূতিকে ধ্বংস করে (আসলেই সম্ভবত সেটাই হচ্ছে এর মূল উদ্দেশ্য) এবং অর্ধেকটা ভদ্র উদারপন্থী মন হয়তো চাইবে এই প্রথা বিলুপ্ত করার জন্য। অবশ্য অন্য অর্ধেক হয়তো শ্রদ্ধা করবে এটি কোনো একটি গোষ্ঠীর নিজস্ব জাতিগত সংস্কৃতি হিসাবে এবং অনুভব করবে আমাদের হস্তক্ষেপ করা উচিৎ না, যদি তারা তাদের মেয়েদের ধর্মীয় আচারের নামে অঙ্গ বিকৃত করে (২৬)। এখানে মূল বিষয়টি হলো তাদের মেয়েরা আসলে নিজের মেয়ে, এখানে কারো ইচ্ছাই উপেক্ষা করা হচ্ছে না। উত্তর দেয়া আসলেই কৌশলের, যেমন ধরুন কোনো একটি মেয়ে যদি বলে সে স্বেচ্ছায় তার নিজের খৎনা করাতে চাইছে? কিন্তু সে কি ভবিষ্যতে, পূর্ণবয়স্ক হবার পর অতীতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্যভাবে ভাবতে পারে, যেমন এরকম কোনো ঘটনা তার জীবনে না ঘটাই ভালো ছিল? হাম্পফ্রে যা বলতে চাইছেন তা হলো কোনো পূর্ণবয়ষ্ক রমনী যে শৈশবে স্বেচ্ছায় এরকম কোনো একটি অঙ্গহানি থেকে বেঁচে গিয়েছিল সৌভাগ্যক্রমে, তাদের কেউই কিন্তু পরবর্তীতে নিশ্চয়ই সেই অপারেশন আবার করার জন্য আগ্রহী হবে না।

আমিশদের (২৭) নিয়ে আলোচনা শেষে বিশেষ করে তাদের ‘নিজেদের আচার সংস্কৃতি অনুযায়ী তাদের নিজস্ব সন্তানদের প্রতিপালন করার অধিকার আলোচনা করার পর হাম্পফ্রে তীব্র ভাষায় সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যময় টিকিয়ে রাখার প্রতি সমাজ হিসাবে আমাদের অতি আগ্রহকে সমালোচনা করেন।

ঠিক আছে আপনি হয়তো বলতে চাইবেন, যেকোনো শিশুর উপর এটি দারুণ কঠোর একটি চাপ, আমিশদের বা হাসিডিজম (২৮) বা জিপসীদের (২৯) ক্ষেত্রে তাদের বাবা-মা যেভাবে চান সেভাবে বেড়ে ওঠা, যেভাবে তাদের বাবা মারা জীবন যাপন করেন, কিন্তু অন্তত নিদেনপক্ষে এই দারুণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটির ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। আমাদের পুরো সভ্যতা কি ম্লান হয়ে যাবে না যদি এগুলো না থাকে? লজ্জার ব্যপার হয়তো যখন একক মানুষকে বিসর্জন দেয়া হয় এই বৈচিত্রতাকে বাঁচাতে গিয়ে, কিন্তু তার ফলাফল এটাই… সমাজ হিসাবে আমাদের তার মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। শুধু, আমি বাধ্য হচ্ছি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে, আমরা এই মুল্য পরিশোধ করি না, তারা করে।

এই বিষয়টি জনতার দৃষ্টি কাড়ে ১৯৭২ সালে যখন ইউএস সুপ্রীম কোর্ট একটি কেসে তাদের রুল জারি করে। উসকনসিন বনাম ইয়োদার, যেখানে মূল বিষয়টি ছিল ধর্মীয় কারণে শিশুদের স্কুল থেকে প্রত্যাহার করার ব্যপারে পিতামাতার অধিকার কতটুকু। আমিশা সাধারণত বেশ বদ্ধ একটি সমাজে একসাথে বসবাস করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে। তাদের ভাষা প্রাচীন জার্মান ভাষার একটি ডায়ালেক্ট যার নাম পেনসিলভেনিয়া ডাচ এবং এসচিউইং; নানা মাত্রায় তারা বিদ্যুত, গাড়ী, বোতাম এবং আধুনিক জীবনের চিহ্ন বহন করে এমন বেশ কিছু জিনিসকে তাদের জীবনে পরিত্যাগ করে। আসলেই সপ্তদশ শতাব্দীর মত শান্ত জীবনের এই ছবি আধুনিক মানুষের চোখে বেশ আকর্ষণীয় কিছু আছে বলেই মনে হয়। তাহলে একে কি সুরক্ষা করা প্রয়োজন না, মানব বৈচিত্র সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে? এবং এসব সুরক্ষা করার একটি মাত্র উপায় হচ্ছে আমিশদের নিজেদের মত করে তাদের সন্তানদের প্রতিপালন করার অনুমতি দেয়া কারণ তাদের মতে সেটাই একমাত্র উপায় যেভাবে তারা তাদেরকে আধুনিক জীবনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু নিশ্চয়ই আমরা জানতে চাইতে পারি, শিশুদের কি এ বিষয়ে নিজেদের কোনো মতামত থাকা উচিৎ না?

১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টকে এ বিষয়ে রুল দিতে বলা হয়, যখন উইনকনসিনে বেশ কিছু আমিশ বাবা-মা তাদের সন্তানদের হাই স্কুল থেকে প্রত্যাহার করে নেবার জন্য আবেদন করেন। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর শিক্ষাগ্রহনের ধারণাটি আমিশদের ধর্মীয় মুল্যবোধের বিশেষভাবে পরিপন্থী, বিশেষ করে যে কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক শিক্ষা। উইসকনসিন সরকার কর্তৃপক্ষ সেই বাবা-মাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন এই অভিযোগ করে যে, প্রতিটি শিশুরই অধিকার আছে শিক্ষার সুযোগ পাওয়া, তার এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অবশ্যই একটি অপরাধ। নানা ধরনের কোর্ট পার হয়ে কেসটি সুপ্রীম কোর্টের সম্মুখে আসে একসময়, সেখানে একটি বিভাজিত রায় (৬ বনাম ১) শোনান বিচারকরা, যেখানে তারা পিতামাতার পক্ষে রায় দেয় (৩০)। প্রধান বিচারপতি ওয়ারেন বার্গার লিখেছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত যিনি ‘নথিপত্র যেমন নির্দেশ করছে যে, বাধ্যতামূলক স্কুলে উপস্থিতি ১৬ বছর। পর্যন্ত কোনো আমিশ শিশুর জন্য কিছু সমস্যা সৃষ্টি করে এবং আমিশ সমাজের সামাজিক এবং ধর্মীয় নানা আচরণ যা এখনও টিকে আছে তার উপর বিশেষ হুমকি সৃষ্টি করে; ফলাফল হয় তারা তাদের বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করবে ও বাকী সমাজের সাথে মিশে যেতে হবে, নয়তো বাধ্য হতে হবে অন্য কোনো অপেক্ষাকৃত সহিষ্ণ এলাকায় সরে যাবার জন্য।’

বিচারপতি উইলিয়াম ও ডগলাস এর সংখ্যালঘু মতামত ছিল, যে শিশুটিকে নিয়ে কথা হচ্ছে তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিৎ। তারা কি সত্যি সত্যি তাদের শিক্ষা সংক্ষিপ্ত করতে চাইছে? তারা কি সত্যি সত্যি আমিশ এলাকায় থাকতে চাইছে? নিকোলাস হাম্পফ্রে হয়তো আরো খানিকটা এগিয়ে যেতেন, এমন কি যদি শিশুদের জিজ্ঞাসাও করা হতো এবং তারা যদি আমিশ ধর্মের প্রতি তাদের পছন্দ প্রকাশও করে, আমরা কি এটা মনে করতে পারবো যে, তারা যদি আরো শিক্ষিত হতো এবং তাদের যদি অন্যান্য সম্ভাব্য বিকল্প বিষয়গুলো সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা থাকতো, তারা কি এই কাজটি করতো? এটাকে সম্ভব হতে হলে, বাইরের জগত থেকে আসা তরুণ তরুণীদের উদাহরণ কি আমাদের দেখতে পাওয়া উচিৎ ছিল না, যারা অতি উৎসাহের সাথে আমিশদের সাথে যোগ দিতে চাইতো? বিচারপতি ডগলাস আরো বলেন তবে একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে। তিনি কোনো বিশেষ কারণ দেখেননি পিতামাতার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশেষ মর্যাদা দেবার জন্য যা কিনা সিদ্ধান্ত নিতে পারে কতটুকু অবধি তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করবেন। যদি ধর্ম এধরনের ব্যতিক্রমের কারণ হয় তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাসও এধরনের বিশেষ সুবিধা কি দাবী করতে পারে না?

সুপ্রীম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্টরা কিছু মোনাস্টিক বা সন্ন্যাসসদৃশ সমাজের কিছু ইতিবাচক বিষয়গুলোর সাথে এর তুলনা করেন, এবং তারা দাবী করেন এধরনের গোষ্ঠীদের উপস্থিতি আমাদের সমাজকে তর্কসাপেক্ষে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু হাম্পফ্রে বিশেষভাবে আমাদের দৃষ্টিকে নিয়ে যান এই দুটির মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্যগুলোর প্রতি। মঙ্ক বা সাধুরা স্বেচ্ছায় তাদের সন্নাস জীবন বেছে নেন; আমিশ শিশুরা আমিশ হবার জন্য কখনো স্বেচ্ছায় রাজী হয় না, কারণ তারা সেই পরিবেশেই জন্ম নেয়, এবং তাদের বিকল্প কোনো পথ খোলা থাকে না।

এখানে বিস্ময়করভাবে এক ধরনের অহংবোধ আর পৃষ্ঠপোষকতার সুর ছাড়াও অমানবিক একটি বিষয় হলো তথাকথিত বহুবর্ণের মতের বৈচিত্র্যতার বেদীতে কাউকে বিসর্জন দেবার মানসিকতা, বিশেষ করে শিশুদের, কিংবা নানা ধরনের ধর্মীয় ঐতিহ্যকে লালন করার মানসিকতা। আমরা বাকীরা আমাদের গাড়ী আর কম্পিউটার, ভ্যাক্সিন আর অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে খুশী কিন্তু আপনারা আজব ধরনের একটি গোষ্ঠী মাথায় বনেট আর ব্রীচ পরা, ঘোড়ার গাড়ি, প্রাচীন ভাষা আর পুরোনো পায়ুখানা দিয়ে আপনার আমাদের জীবন সমৃদ্ধ করছেন, অবশ্যই আপনাদের অনুমতি আছে আপনাদের সন্তানদের আপনাদের সপ্তদশ শতাব্দীর সময়ের খাঁচায় বন্দী করে রাখতে; নয়তো এমন কিছু অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের হয়ে যাবে। মানব সংস্কৃতির চমৎকার বৈচিত্রতার একটি অংশ হারিয়ে যাবে। আমার ভিতরের একটি ক্ষুদ্র অংশ এই বক্তব্যের কিছু অনুভব করতে পারলেও আমার বিশাল একটি অংশ আমার ঠিকই গা গুলানো একটি অনুভূতি সৃষ্টি করছে।

শিক্ষাব্যবস্থা সক্রান্ত একটি স্ক্যান্ডাল..

আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার (৩১), বৈচিত্র্যতার মন্ত্র জপেছিলেন, যখন হাউস অব কমন্সে সংসদ সদস্য জেনী টঙ্গ তাকে চ্যালেঞ্জ করে জানতে চান, উত্তর পূর্ব ইংল্যাণ্ডের একটি স্কুলে সরকার তাদের ভর্তুকি দেয়ার বিষয়টিকে কিভাবে তিনি যুক্তিযুক্ত বলে দাবী করেন, যখন এই স্কুলটি (ব্রিটেনেরই বিশেষ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) আক্ষরিক অর্থে বাইবেলে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্ববাদ শিক্ষা দেয়। জনাব ব্লেয়ার এর উত্তরে বলেন, অত্যন্ত দূঃখজনক হবে যদি শুধু এই কারণেই আমাদের পক্ষে যতদূর সম্ভব ততটুকু বৈচিত্র্যময় বহুসাংস্কৃতিক একটি শিক্ষাব্যবস্থা পাবার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় (৩২)। প্রশ্নবিদ্ধ এই স্কুলটির নাম। ইম্যানুয়েল কলেজ, গেটসহেডে অবস্থিত এটি একটি অন্যতম সিটি অ্যাকাডেমী যার গর্বিত উদ্যোক্তা হলেন টনি ব্লেয়ারের সরকার। ধনী পৃষ্ঠপোষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে সামান্য কিছু অর্থ (২ মিলিয়ন পাউণ্ড ইমানুয়েল কলেজের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে, যা সরকারের অনেক বড় অনুদানের সাথে যুক্ত হবে (২০ মিলিয়ন পাউণ্ড স্কুলের জন্য, এছাড়া এটি চালানোর খরচ, বেতন তো আছেই); এই সামান্য অংশগ্রহন এর উদ্যেক্তাদের স্কুলের নীতিমালা নিয়ন্ত্রণেরও ক্ষমতা দেবে, এছাড়া এর সাথে আছে স্কুলের প্রধান প্রধান কর্মকর্তাদের নিয়োগ, কোনো ছাত্র ভর্তি হতে পারবে, আর কে ভর্তি হতে পারবে না সেই বিষয়ে স্কুল পলিসি এবং এছাড়া আরো অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণের একচেটিয়া অধিকার।

ইমানুয়েল কলেজের দশ শতাংশের পৃষ্ঠপোষক হলেন স্যার পিটার ভার্দি, একজন ধনাঢ্য গাড়ি বিক্রেতা যার প্রশংসাযোগ্য সদিচ্ছা আছে বর্তমান যুগের শিশুদের শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া, তার নিজের জীবনে যা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছিলেন একসময় এবং আর তার নিন্দনীয় ইচ্ছাটি হচ্ছে নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের ছাপ এই কলেজে পড়ুয়া সরল সব শিশুমনে গেথে দেয়ার বাসনা (৩৩)। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভার্দি জড়িয়ে পড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র অনুপ্রাণিত মৌলবাদী শিক্ষকদের একটি দলের সাথে, যাদের নের্তৃত্বে আছেন নাইজেল ম্যাককুওয়াড, ইমানুয়েলে কিছুদিন যিনি হেডমাষ্টার ছিলেন, এখন যিনি ভার্দির আরো বেশ কিছু স্কুলের একটি কসসোর্টিয়ামের পরিচালক। ম্যাককুওয়াড এর বৈজ্ঞানিক বুদ্ধিমত্তা যাচাই করা যেতে পারে, পৃথিবী বয়স দশ হাজার বছরের কম তার এমন বিশ্বাসটি পর্যবেক্ষণ করলেই, এছাড়া তার আরো একটি উদ্ধৃতিও এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য সহায়ক … ‘শুধু একটা বিস্ফোরণ থেকে আমরা বিবর্তিত হয়েছি এবং আমরা একসময় বানর ছিলাম এই ভাবনাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হবে যখন আপনি মানুষের শরীরের মত জটিল কোনো কিছুর দিকে তাকাবেন….। আপনি যদি শিশুদের বলেন তাদের জীবনের কোনো অর্থ আর উদ্দেশ্য নেই, শুধু রাসায়নিক মিউটেশন ছাড়া তারা আর কিছু না, সেটা কিছুতেই তাদের আত্মমর্যাদা গড়তে সহায়তা করবে না (৩৪)।

কোনো বিজ্ঞানী কখনোই বলেননি শিশুরা কোনো রাসায়নিক মিউটেশন’। এরকম একটি প্রসঙ্গে এ ধরনের কোনো বাক্য ব্যবহার করা অশিক্ষিত মানুষের অজ্ঞতা পরিচয় ছাড়া আর কিছুই না। যা ‘বিশপ’ ওয়েইন ম্যালকমের বক্তব্যের মতই, হ্যাঁকনী, পূর্ব লন্ডন এ যিনি ক্রিশ্চিয়ান লাইফ সিটি চার্চ এর নেতা। ২০০৬ এর এপ্রিল ১৮ তারিখের গার্ডিয়ান এ দেয়া তথ্যানুযায়ী তিনি তর্ক করেছিলেন “বিবর্তনের সপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলো’ নিয়ে; প্রমাণগুলো বোঝার ক্ষমতা সম্বন্ধে তার যোগ্যতা মাপা সম্ভব তার একটি উদ্ধৃতি দিয়ে: ‘স্পষ্টতই জীবাশ্ম রেকর্ডে অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়ের কোনো প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়না, যদি কোনো ব্যাঙ একটি বানর হয়, আমাদের তো তাহলে অনেক ব্যাঙ-বানর বা ‘ফ্রংকি’ দেখতে পাবার কথা না?

বেশ, বিজ্ঞান কিন্তু জনাব মাককুওয়াড এর বিষয়ও না, সুতরাং নিরপেক্ষভাবে আমাদের উচিৎ হবে বরং তার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান কি বলছেন তার দিকে দৃষ্টি দেয়া, স্টিফেন লেফিল্ড কি বলছেন এ বিষয়ে, ২০০১ এর ২১ সেপ্টেম্বর ইমানুয়েল কলেজে ‘দ্য টিচিং অব সায়েন্স: এ বিল্পিকাল পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি; সেই ভাষণটির বক্তব্য একটি খ্রিষ্টীয় ওয়েবসাইট (৩৬) প্রকাশ করে। কিন্তু আপনি এখন আর সেই ভাষণটি সেখানে খুঁজে পাবেন না। কারণ দ্য ক্রিশ্চিয়ান ইন্সস্টিটিউট সেই লেকচারটি প্রত্যাহার করে নেয়, যখন ২০০২ এ ১৮ মার্চ ডেইলী টেলিগ্রাফ প্রত্রিকায় আমি বিষয়টি সবার নজরে আনি, এটির সমালোচনা মূলক ব্যবচ্ছেদ করেছিলাম আমি (৩৬)। কিন্তু আসলে কোনো কিছু পুরোপুরি মুছে ফেলা খুব কঠিন বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে; কারণ সার্চ ইঞ্জিন তাদের দ্রুততার জন্য কিছুটা তথ্য তাদের নানা তথ্যের ক্যাশে রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে এবং সেগুলো অবধারিতভাবে টিকে থাকে এমনকি মূল লেখাটি ডিলিট করার পরও। একজন সতর্ক ব্রিটিশ সাংবাদিক, অ্যান্ড্র ব্রাউন, ইণ্ডিপেণ্ডেন্ট পত্রিকার ধর্ম বিষয়ক সংবাদদাতা, বেশ দ্রুততার সাথে লেফিল্ডের ভাষণটি খুঁজে বের করেন। তিনি গুগল ক্যাশ থেকে সেটি ডাউনলোড করে পুনপ্রকাশ করেন, মুছে ফেলা কোনো সুযোগ নেই এমনভাবে তার নিজের ওয়েব সাইটে (৩৭)।

আপনারা লক্ষ করবেন ব্রাউনের বাছাই করা শব্দগুলো যা লিঙ্কটিতে ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোই যথেষ্ট পরিমান বিনোদন প্রদান করে। কিন্তু সেই বিনোদন দেবার ক্ষমতা বেশীক্ষন স্থায়ী হয় না, যদি আমরা সেই ভাষণের বিষয়বস্তুর দিকে নজর দেই। ঘটনাচক্রে যখন একজন কৌতূহলী পাঠক ইমানুয়েল কলেজের কাছে জানতে চান কেন এই লেকচারটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে ওয়েবসাইট থেকে, এর প্রত্যুত্তরে তিনি যথারীতি আন্তরিক নয় এমন একটি বার্তা পান: যা আবারো অ্যান্ড্র ব্রাউন তার সাইটটিতে লিপিবদ্ধ করেছেন।

“ইমানুয়েল কলেজে স্কুলে সৃষ্টিতত্ত্ববাদ পড়ানোর বিতর্কের কেন্দ্রে অবস্থান করছিল; বলাবাহুল্য ইমানুয়েল কলেজে বহু সাংবাদিকরা ফোন করেছেন। যার জন্য এই কলেজের অধ্যক্ষ এবং পরিচালকদের যথেষ্ট পরিমান সময় ব্যয় করতে হয়েছে; আর এই সব মানুষগুলোর অন্য অনেক কাজ আছে; সেই কাজে সহায়তা করার জন্য আমরা স্টিফেন লেফিল্ড এর লেকচারটি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলেছি।

অবশ্যই, সাংবাদিকদের ব্যাখ্যা করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট ব্যস্ত থাকতে পারেন, ক্রিয়েশিনিজম বা সৃষ্টিতত্ত্ববাদ শেখানোর পেছনে তাদের যুক্তিটি কি? কিন্তু তাহলে কেন, তাদের ওয়েবসাইট থেকে ঠিক সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করা কোনো লেকচার সরানোর দরকার হল? তারা তো সাংবাদিকদের সেটি রেফার করতে পারতেন। যা তাদের বহু সময় কি বাঁচাতে না অবশ্যই? না, তারা তাদের বিজ্ঞান প্রধানের লেকচারটি সরিয়ে ফেলার কারণ, তারা শনাক্ত করতে পেরেছেন, তাদের লুকানোর কিছু আছে। নিচের এই অনুচ্ছেদটি সেই লেকচারের শুরুর দিকের একটি অংশ:

শুরু থেকে তাহলে আমাদের উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমরা সেই ধারণাটিকে পরিত্যাগ করছি, যা খানিকটা নিজের অজান্তেই সপ্তদশ শতকে ফ্রান্সিস বেকন জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন, যা দাবী করছে আসলে দুটি গ্রন্থ বিদ্যমান (প্রকৃতির গ্রন্থ এবং ধর্ম গ্রন্থ) স্বতন্ত্রভাবে যাদের মধ্যে সত্যের অনুসন্ধান করা যেতে পারে। বরং আমরা সেই সুস্পষ্ট প্রস্তাবের উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে বলছি ঈশ্বর তার বাণী দিয়েছেন কর্তৃত্বের সাথে, এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থে কোনো ভুল থাকার কথা না। যতই সুস্পষ্টভাবে ভঙ্গুর আর প্রাচীন কিংবা অবুঝ মনে হোক না কেন এই বিশ্বাসটি অবিশ্বাসীদের কাছে বা টেলিভিশন-মাতাল আধুনিক সংস্কৃতির মানুষগুলোর কাছে, আমরা নিশ্চিৎ হতে পারি এটি দৃঢ় সেই ভিত্তি, যা উপর কোনো কিছু তৈরী করা সম্ভব।

নিজেকে বার বার চিমটি দিয়ে দেখতে হবে আপনার, নাহ আপনি স্বপ্ন দেখছেন না সত্যি সত্যি। আলাবামার কোনো তাবুতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করা কোনো ধর্মযাজক না বরং এই কথা বলছেন এমন একটি স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান, যেখানে ব্রিটিশ সরকার টাকা ঢালছে, এবং যেটি টনি ব্লেয়ারের আনন্দ আর গর্বের প্রতীক। একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান হিসেবে জনাব ব্লেয়ার নিজেই ২০০৪ সালে ভার্দি স্কুলগুলোর কোনো একটির উদ্বোধন করেছিলেন (৩৮); বৈচিত্রতা একটি ভালো গুণ হতে পারে কিন্তু এখানে যে বৈচিত্রতার দাবী করা হচ্ছে তা পুরোপুরি উন্মত্ত।

এরপর লেফিল্ড বিজ্ঞান এবং ধর্মগ্রন্থের মধ্যে পার্থক্যগুলোর একটি তালিকা করেন, এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সমাপ্ত করেন এই উপসংহার টেনে যে যেখানেই কোনো সংঘর্ষ আসছে সেখানেই জিতছে ধর্মগ্রন্থ, ধর্মগ্রন্থকে প্রাধান্য দিতে হবে এসব ক্ষেত্রে। আর্থ সায়েন্স এখন জাতীয় কারিকুলামের অংশ উল্লেখ করে লেফিল্ড বলেন, সবার জন্য সমীচিন হবে এই কোর্সের জন্য হুইটকম্ব এবং মরিস এর ফ্লাড জিওলজীর সংক্রান্ত পেপারগুলো পড়া, হ্যাঁ, ফ্লাড জিওলজীর অর্থ আপনি যা ভাবছেন সেটাই। আমরা সেই নোয়া র আর্ক বা নৌকার কথা বলছি। নোয়ার আর্ক….!– যখন শিশুরা কিনা শিখতে পারে আফ্রিকা আর দক্ষিন আমেরিকা একসময় সংযুক্ত ছিল এমন কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা কিনা হাতের নোখ যে গতিতে বৃদ্ধি পায় সেই ধীর গতিতে তারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে মিলিয়ন বছর ধরে। আরো কিছু লেফিল্ডের বক্তব্য (বিজ্ঞানের প্রধান) নোয়ার সেই মহাপ্লাবন সম্বন্ধে, যা নাকি তার মতে সাম্প্রতিক এবং দ্রুততম একটি ব্যাখ্যা যা কিনা সত্যিকারের বৈজ্ঞানিক ভূতাত্ত্বিক প্রমাণ জানাচ্ছে শত শত মিলিয়ন বছরের ধীর লয়ে ঘটা ঘটনাগুলো:

আমাদের অবশ্যই স্বীকার করা দরকার পৃথিবীব্যাপী মহাপ্লাবনের সেই ঐতিহাসিক বাস্তবতার কথা যা বিশাল সব ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের মৌলিক কারণগুলো কেন্দ্রে অবস্থান করছে এবং যা জেনেসিস এ ৬-১০ এ লিপিবদ্ধ করা আছে। যদি বাইবেলের কাহিনী উৎস (যেমন জেনেসিস ৫ ক্রোনিকলস ১; ম্যাথিউ ১ এবং লিউক ৩) সঠিক থাকে এবং তালিকাভুক্ত এর জন্ম বৈশিষ্ট্য যথেষ্ট পরিমান সঠিক থাকে, তাহলে আমাদের অবশ্যই ধরে নিতে হবে এই বিশ্বব্যাপী মহাপ্রলয় ঘটেছে নিকটতম কোনো অতীতে। এবং এর পরিণতির প্রমাণ যথেষ্ট পরিমানে আছে। প্রধান প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জীবাশ্ম পূর্ণ পাললিক শিলার স্তরে, হাইড্রোকার্বন জ্বালানীর বিশাল ভাণ্ডার (কয়লা,তেল, গ্যাস), এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর কিংবদন্তীতে এই ভয়াবহ মহাপ্রলয় বেশ সুপরিচিত। এছাড়া একটি আর্ক ভর্তি সব প্রাণী প্রজাতিদের জোড়ায় জোড়ায় একটি বছর পানি স্তর যথেষ্ট পরিমান কমে যাওয়া পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখতে পারার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখেছেন অনেকের মধ্যে অন্যতম, জন উডমোরাপ্পে।

একভাবে ভাবলে এটি সম্পূর্ণ অজ্ঞ যেমন নাইজেল ম্যাককুওয়াড বা বিশপ ওয়েন ম্যালকম এর বক্তব্যর চেয়েও আরো বেশী খারাপ। কারণ লেফিল্ড বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত। আরো একটি বিস্ময়কর অনুচ্ছেদ :

যেমন আমরা শুরুতেই বলেছিলাম, আমরা মনে করি খ্রিষ্টান খুব ভালো যুক্তিসহ মনে করেন ওল্ড ও নিউ টেষ্টামেন্ট ধর্মগ্রন্থ যা আমরা কি বিশ্বাস করবো তার একটি উত্তম পথনির্দেশিকা। তারা শুধু মাত্র ধর্মীয় কোনো গ্রন্থ নয়, এই পৃথিবীর ইতিহাস সম্বন্ধে তারা আমাদের সত্যিকারের একটি বিবরণ প্রদান করে যা শুধুমাত্র আমাদের ক্ষতি করেই শুধু উপেক্ষা করা সম্ভব।

ধর্মগ্রন্থ পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের আক্ষরিক সত্যতা বর্ণনা প্রদান করে এমন কোনো দাবী শুনলে যে কোনো সন্মানজনক ধর্মতত্ত্ববিদও নাক সিটকাবেন। আমার বন্ধু রিচার্ড হ্যারিস, অক্সফোর্ডের বিশপ এবং আমি একটি যৌথ চিঠি লিখেছিলাম টনি ব্লেয়ার এর কাছে, যেখানে আমরা আরো আটজন বিশপ এবং নয়জন সিনিয়র বিজ্ঞানীর স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিলাম (৩৯)। এই নয় বিজ্ঞানীর মধ্যে ছিলেন, রয়্যাল সেসাইটির সভাপতি (ইতিপুর্বে টনি ব্লেয়ার এর প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা), রয়্যাল সোসাইটি জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের সচিবদ্বয়, রাজকীয় অ্যাষ্টোনোমার (রয়াল সোসাইটির বর্তমান সভাপতি), ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের এর পরিচালক, স্যার ডেভিড অ্যাটেনবরো, ইংল্যান্ডে যিনি সম্ভবত সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, বিশপদের মধ্যে আছেন একজন রোমান ক্যাথলিক ও সাতজন অ্যাঙলিকান বিশপ– সবাই অভিজ্ঞ উর্ধতন ধর্মীয় নেতা। আমরা দায়সারাগোছের কোনো ভাবনাচিন্তাহীন একটি উত্তরও পাই প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যা স্কুলটির ভালো ফলাফল এবং দাপ্তরিক অনুসন্ধানী দলের উত্তম রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে (৪০)। আপাতদৃষ্টিতে ব্লেয়ারের এটা মনে হয়নি যদি স্কুলের ইন্সপেক্টররা কোনো উত্তম রিপোর্ট দেয় এমন কোনো স্কুল সম্বন্ধে, যে স্কুলের বিজ্ঞানের প্রধান শেখাচ্ছেন যে, মহাবিশ্বর শুরু হয়েছিল, আমরা কুকুরদের গৃহপালিত প্রাণীতে রুপান্তরিত করারও পরে, তাহলে নিশ্চয়ই কোনো গলদ আছে এই ইন্সপেক্টরদের তদারকী করার মানদণ্ডে।

লেফিল্ডের ভাষণে হয়ত সবচেয়ে অস্বস্তিকর অংশ হচ্ছে, কি করা যেতে পারে? শীর্ষক উপসংহারে। যেখানে তিনি সেই কৌশল ব্যবহার করতে চেয়েছেন যা বিজ্ঞানের ক্লাসরুমে মৌলবাদী খ্রিষ্ট ধর্মের অনুপ্রবেশ করার জন্য সেই সব শিক্ষকরা ব্যবহার করে থাকেন। যেমন তিনি বিজ্ঞান শিক্ষকদের বিশেষ নজর রাখতে বলেন..

যখনই বিবর্তনীয়/প্রাচীন পৃথিবীর মতবাদ (যা মিলিয়ন বা বিলিয়ন বছর পুরোনো) স্পষ্টভাবে উল্লেখ বা বোঝানো হবে পাঠ্যপুস্তকে, পরীক্ষার প্রশ্নে বা কোনো পরিদর্শকের প্রশ্নে, তারা যেন সৌজন্যের সাথে সেখানে উল্লেখ করেন। এই মতবাদটির ভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা আছে বা আমোঘ কোনো সত্য নয়। যেখানে সম্ভব, আমাদের অবশ্যই বিকল্প (সবসময় যা উত্তম) বাইবেল নিভর ব্যাখ্যা দেয়া উচিৎ একই উপাত্তর।আমরা এমন বেশ কিছু উদাহরণ লক্ষ করবো পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে যথাসময়ে।

লেফিল্ডের বাকী লেকচার প্রচারণার নির্দেশিকা ছাড়া আর কিছু না, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থবিদ্যার ধর্মীয় শিক্ষকরা যা রিসোর্স হিসাবে ব্যবহৃত করতে পারেন জাতীয় কারিকুলামের সীমানায় থেকেই প্রমাণ নির্ভর বিজ্ঞান শিক্ষাকে পথভ্রষ্ট করার, সেখানে তারা বাইবেল নির্ভর জ্ঞান দিয়ে তা প্রতিস্থাপিত করার জন্য প্রস্তুত হতে পারেন।

২০০৬ সালে ১৫ এপ্রিলে জেমস নাউটি, বিবিসির সবচেয়ে অভিজ্ঞ সংবাদ উপস্থাপক স্যার পিটার ভার্দির একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন রেডিওর জন্য। সেই সাক্ষাৎকারের মূল বিষয় ছিল তার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের পুলিশী তদন্ত, যা ভার্দি অস্বীকার করেছিলেন, অভিযোগটি ছিল ব্লেয়ার সরকার টাকার বিনিময়ে ধনী ব্যবসায়ী এবং নিজেদের সমমনাদের নাইটহুড খেতাব প্রদান করেছিল, যেন তারা সিটি অ্যাকাডেমিগুলোয় তাদের অর্থ বিনিয়োগ করেন। নাউটি ভার্দিকে সৃষ্টিতত্ত্ববাদ নিয়েও জিজ্ঞাসা করেন এবং ভার্দি সরাসরি অস্বীকার করেছিলেন যে ইমানুয়েল কলেজ তাদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তরুণ-পৃথিবী সৃষ্টিতত্ত্ববাদ মতবাদ প্রচার করছে (৪১)। ইমানুয়েল এর একজন প্রাক্তন ছাত্র পিটার ফ্রেঞ্চ দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের শেখানো হয়েছে পৃথিবীর বয়স মাত্র ৬০০০ বছর (৪২)। কে এখানে তাহলে সত্যি কথা বলছে? বেশ, আমরা তা জানিনা, কিন্তু স্টিফেন লেফিল্ড এর বক্তৃতাটি সেখানে কিভাবে বিজ্ঞান পড়ানো হবে সেটা স্পষ্টভাবেই ব্যাখ্যা করেছিলো। ভার্দি কি লেফিল্ডের খুব স্পষ্ট ম্যানিফেষ্টোটি পড়েননি তাহলে? তিনি কি আসলেই জানেন না তার কলেজের বিজ্ঞানের প্রধান কি করছে? পিটার ভার্দি পুরোনো গাড়ি বিক্রি করে ধনী হয়েছেন, আপনি কি তার কাছ থেকে কোনো গাড়ী কিনবেন? আর আপনি কি, টনি ব্লেয়ারের মত ১০ শতাংশ দামে তার কাছে একটি স্কুল বেঁচে দেবেন, এবং সেই সাথে এটাও বলবেন এই স্কুল চালানোর সব খরচ আপনি দেবেন। বেশ খানিকটা সদয় হওয়া যাক ব্লেয়ার এর প্রতি এবং ধরে নেয়া যাক তিনি অন্তত লেফিল্ডের লেকচার পড়েননি। আমার ধারণা তার মনোযোগ এই বিষয়টির প্রতি নিবদ্ধ হবে এমন ভাবাটাও এখন বেশী আশা করা হয়ে যাবে।

হেডমাষ্টার ম্যাককোওয়াড এর সমর্থনে যা বলেছেন, তা স্পষ্টতই তার দৃষ্টিতে তার স্কুলের উন্মুক্ত মনের পরিচয়, এবং মন্তব্যটির মধ্যে অহংকারী আত্মতুষ্টির উপস্থিতি স্পষ্ট:

এখানে কি হচ্ছে তার সবচেয়ে ভালো যে উদাহরণ আমি দিতে পারবো সেটি হচ্ছে, ষষ্ঠ শ্রেনীতে আমি যখন দর্শনের একটি লেকচার দিচ্ছিলাম, শাকিলও সেখানে ছিল, সে বললো,’কোরান হচ্ছে সঠিক এবং সত্যি এবং অন্যদিকে বসা ক্লেয়ার তখন বলে ওঠে, না বাইবেলই হচ্ছে সত্যি, সুতরাং আমরা দুটি ধর্মগ্রন্থ কি বলছে, তাদের সাদৃশ্যগুলো নিয়ে কথা বলি এবং কোথায় তারা মিলছে না তা নিয়ে আলোচনা করি। এবং একসময় আমি বলি, ‘দুঃখিত শাকিল, তুমি ভুল, বাইবেলই হচ্ছে একমাত্র সত্যি। এবং সে বলে, “দুঃখিত জনাব ম্যাককোয়াড আপনি ভুল করেছেন, কোরানই ঠিক। এবং এরপর তারা লাঞ্চে যায় এবং তাদের আলোচনা অব্যাহত রাখে। এটাই আমরা চাই, আমরা চাই শিশুরা জানুক, তারা কি বিশ্বাস করে, কেন বিশ্বাস করেছে এবং কিভাবে সেই বিশ্বাসটির জন্য যুদ্ধ করতে হয় (৪৩)।

কি চমৎকার সেই দৃশ্য! শাকিল এবং ক্লেয়ার দুজনে একসাথে লাঞ্চ করবে এবং দৃঢ়তার সাথে তাদের মতামত নিয়ে তর্ক বিতর্ক করবে এবং পরস্পরের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ধর্মবিশ্বাসগুলোকে পৃথকভাবে সমর্থন দিয়ে যাবে। কিন্তু আসলেই কি বিষয়টি চমৎকার? আসলেই কি এটি নিন্দনীয় একটি দৃশ্য নয়, যার বর্ণনা ম্যাককোওয়াড দিলেন এই মাত্র? সর্বোপরি কিসের উপর ভিত্তি করে আসলে শাকিল ও ক্লেয়ার তাদের যুক্তি সাজাবে? যুক্তিসঙ্গত কি প্রমাণ আছে যা তারা তাদের সেই প্রাণবন্ত গঠনমূলক বিতর্কে যুক্ত করতে পারবে? ক্লেয়ার আর শাকিল দুজনেই যা করতে পারে তা হলো শুধু দাবী করা যে তাদের নিজ নিজ বিশ্বাসের ধর্মগ্রন্থটি ভালো এবং আপাতদৃষ্টিতে এর বেশী কিছু বলার নেই আর আসলে এর চেয়ে বেশী আর কিছু বলতে পারার কথাও না যখন কাউকে শেখানো হবে সত্যিটা আসে ধর্মগ্রন্থর পাতা দেখে, বাস্তব কোনো প্রমাণ থেকে না। ক্লেয়ার, শাকিল ও তাদের সঙ্গীদের কোনো ভালো শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না, স্কুল তাদের ফাঁকি দিচ্ছে, স্কুল প্রিন্সিপাল তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন, শুধু শারীরিকভাবে নয় বরং মানসিকভাবে তিনি নির্যাতন করছেন।

সচেতনতার স্তর উন্নীত করা..আবারো

এবার আমি আরেকটি চমৎকার দৃশ্যপট উল্লেখ করি: ক্রিসমাসের সময় এক বছর আমার দৈনিক পত্রিকা ইণ্ডিপেণ্ডেন্ট, একটি উৎসবের সাথে প্রাসঙ্গিক একটি ছবি খুজছিল এবং যা বেশ হৃদয় উষ্ণ করা ছবি হবে, সর্বজনীন খ্রিষ্টীয় স্কুলের একটি নেটিভিটি (যীশুর জন্ম সংক্রান্ত) নাটকের দৃশ্য। পূর্ব থেকে আসা তিনজন জ্ঞানী ব্যক্তির সেই ভূমিকায় অভিনয় করেছিল.. ছবির ক্যাপশন যা বেশ গর্ব করে বলছে তা হলো, শাদব্রীত (একজন শিখ), মুশাররফ (একজন মসুলমান) এবং অ্যাডেল (একজন খ্রিস্টান); সবারই বয়স মাত্র চার।

চমৎকার? ভালো লাগার মত? না, এটি তার কোনোটাই না, খুবই উদ্ভট একটি দৃশ্য; কিভাবে কোনো ভদ্রমানুষ ভাবতে পারেন যে তাদের.. চার বছর বয়সী শিশুদের তাদের বাবা-মায়ের মহাজাগতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শ মোতাবেক চিহ্নিত বা লেবেল করার অধিকার আছে? আর কেন সেটা ঠিক না, তা বুঝতে হলে, অন্য রকম একটি ছবি কল্পনা করুন, যার ক্যাপশনটি পরিবর্তিত করা হয়েছে এভাবে : শাদব্রীত (একজন কাইনেশিয়ান (৪৪)), মুশাররফ (একজন মনেটারিষ্ট (৪৫)) এবং অ্যাডেল (একজন মার্ক্সবাদী), সবার বয়স চার। এরকম কোনো খবর কি তীব্র প্রতিক্রিয়াপূর্ণ ক্রুদ্ধ চিঠির জন্য যথেষ্ট নয়? অবশ্যই তা হওয়া উচিৎ। তারপরও ধর্মের বিস্ময়কর রকম অদ্ভুত একটি পদমর্যাদার কারণে সেটা নিয়ে কেউ টু শব্দটিও করবে না, এবং একই ধরনের অন্য কোনো ঘটনার সময়ও তা কখনোই শোনা যায়নি। কল্পনা করুন, কি পরিমান শোরগোল হবে যদি ক্যাপশনটা বদলে দেয়া হয় এভাবে: শাদব্রীত (নিরীশ্বরবাদী) মুশাররফ (অজ্ঞেয়বাদী) এবং অ্যাডেল (ধর্মনিরেপক্ষ মানবতাবাদী), সবার বয়স চার। সত্যি কি তাদের বাবা-মাদেরকে কি পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ না, তারা কি আসলে তাদের সন্তানদের প্রতিপালন করতে যোগ্য কিনা? ব্রিটেনে যেখানে রাষ্ট্র এবং চার্চের সাংবিধানিকভাবে বিভাজনের অভাব, সেখানে অবিশ্বাসী পিতা-মাতারা সাধারণত বাকীদের সাথে সমঝোতা করে নেন এবং স্কুলকে অনুমতি দেন তাদের সন্তানকে যে ধর্মটাই তাদের সংস্কৃতিতে প্রাধান্য বিস্তার করেছে তা শিক্ষা দেবার জন্য। ‘The-Brights.net’ (একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় উদ্যোগ যারা নিরীশ্বরবাদীদের নতুন করে একত্রিত ও চিহ্নিত করতে চান Brights হিসাবে, ঠিক যেভাবে সমকামিরা তাদের নিজেদেরকে সফলতার সাথে নতুন করে ব্রান্ডিং করতে পেরেছেন Gay হিসাবে) খুবই সতর্ক শিশুদের সেখানে নাম লেখানোর ক্ষেত্রে : ‘ব্রাইট হবার সিদ্ধান্ত শিশুদের নিজেদেরই নিতে হবে অবশ্যই কোনো শিশু যাকে কিনা বলা হয়েছে তাকে অবশ্যই, বা তার উচিৎ হবে ব্রাইট হবার জন্য, তারা ব্রাইট হতে পারবে না। আপনি কি কল্পনা করতে পারবেন, কোনো একটি চার্চ বা মসজিদ এধরনের নিজেদের স্বার্থবিরুদ্ধ কোনো আদেশ দিচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে সেটি করতে কি বাধ্য করা উচিৎ না আমাদের? ঘটনাচক্রে আমি ব্রাইট এ আমার নাম লিখিয়েছি, আংশিক কারণ আমি সত্যিকারভাবে কৌতূহলী যে এধরনের কোনো শব্দ কি মিম হিসাবে ভাষার মধ্যে সন্নিবিষ্ট করা যায় নাকি। আমি জানি না এবং জানতে চাই, এধু শব্দটির বিবর্তন কি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছিল, নাকি বিষয়টি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটেছে (৪৬)। Brights দের প্রচারণা বেশ ধাক্কা। খেয়েছিল শুরুতে, বেশ কিছু নাস্তিক গ্রুপ খুব তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেছিল, খানিকটা থমকে গিয়েছিল তারা অহংকারী হিসাবে তিরষ্কার পেয়ে। গে প্রাইড আন্দোলনকে, সৌভাগ্যক্রমে এধরনের কপট ভদ্রতার মুখোমুখি হতে হয়নি কখনোই, হয়তো এ কারণে এটি সফল হয়েছিল।

এর আগের কোনো একটি অধ্যায়ে, সচেতনতা উন্নীত করার ধারণাটি আমি সাধারণভাবে ব্যাখ্যা করেছিলাম, শুরুতেই নারীবাদীদের কিছু অবদান, যেমন কিছু বাক্য, People of Goodwill এর বদলে Men of Goodwill শুনে আমাদের কুচকানো, এখানে আমিও সেই সচেতনতার স্তরটি উপরে উঠাতে চাইছি অন্য আরেকটি উপায়ে; আমি মনে করি আমাদের সবারই বিব্রত বোধ করা উচিৎ যখন আমরা একটি ছোট শিশুর গায়ে লেবেল লাগিয়ে দেবো, সে কোনো না কোনো একটি বিশেষ ধর্মের সম্পত্তি চিহ্নিত করে। ছোট একটি শিশুর কি আদৌ এমন কোনো বয়স হতে পারে, যেখানে সে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, জীবন এবং নৈতিকতা বিষয়ে কোনো নিজস্ব মতামতে পৌঁছাতে পারবে। ‘খ্রিস্টান’ শিশু বা ‘মসুলমান’ শিশু এই সব বাক্যের আওয়াজ অস্বস্তিতে ফেলার মত, যেন কোনো ব্ল্যাকবোর্ডের উপর নোখের আঁচড়ের শব্দ।

এখানে একটি রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক, আইরিশ রেডিও স্টেশন KPFT-FM এর এই রিপোর্টটি সময়কাল ২০০১ সালে ৩ সেপ্টেম্বর,

ক্যাথলিক স্কুল ছাত্রীরা লয়্যালিস্টদের প্রতিবাদের মুখে পড়ে, যখন তারা উত্তর বেলফাষ্টের আরডয়েন রোডে হলি। ক্রস গার্লস প্রাইমারী স্কুলে ঢুকবার চেষ্টা করছিল। রয়্যাল উলস্টার কনস্টবুলারী এবং ব্রিটিশ আর্মির সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের সেখান সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়, যারা স্কুলের চারপাশ অবরোধ করে রাখার চেষ্টা করেছিল। এই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে শিশুদের স্কুলে ঢোকার ব্যবস্থা করার জন্য বিশেষ ক্রাশ ব্যারিয়ার বসিয়ে সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হয়। সয়ালিস্টরা ঠাট্টা ও চিৎকার করে সেখানে নানা সাম্প্রদায়িক মন্তব্য আর গালমন্দ করছিল, যখন শিশুরা, যাদের কারো কারো বয়স এমনকি চার, তাদের বাবা-মার সাথে স্কুলে প্রবেশ করছিল। তারা যখন স্কুলের প্রধান দরজা দিয়ে যখন ঢুকছিল, লয়ালিস্টরা তখন তাদের লক্ষ্য করে বোতল আর পাথর ছুঁড়ে মারছিল।

স্বভাবতই যেকোনো ভদ্র মানুষই এই দুর্ভাগা স্কুলছাত্রীদের এই দুর্দশার কথা ভেবে শিউরে উঠবেন; আমি চেষ্টা করছি, তাদেরকেকে ‘ক্যাথলিক স্কুল ছাত্রী হিসাবে চিহ্নিত করার সেই বিশেষ ধারণাটিও যেন আমাদের এভাবে শিউরে উঠতে শেখায়। লয়ালিস্ট • প্রথম অধ্যায়ে আমি যা ইঙ্গিত করেছিলাম, উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রোটেষ্ট্যান্টদের পরিচয়ের একটি সুভাষণ, ঠিক যেমন ন্যাশনালিস্ট হচ্ছে ক্যাথলিকদের সুভাষণ। যে মানুষরা এমন কি শিশুদের ক্যাথলিক বা প্রোটেষ্ট্যান্ট হিসাবে লেবেল করতে ইতস্তত বোধ করে না, তারা আবার সেই একই ধর্মীয় লেবেল নিজেদের দিতে দ্বিধা বোধ করেন, যা আরো বেশী প্রযোজ্য। প্রাপ্তবয়স্ক সন্ত্রাসী ও উন্মত্ত গোষ্ঠীর জন্য।)

আমাদের সমাজ, এমনকি ধর্মীয় নয় এমন অংশগুলো সেই ভয়াবহ ধারণাটি মেনে নিয়েছে, অপরিণত অবুঝ শিশুদের তাদের বাবা মায়ের ধর্মে মগজ ধোলাই বা দীক্ষা দেয়াটা খুব স্বাভাবিক এবং তা করার অধিকারও আছে। এবং নানা ধরনের লেবেল এটে দেয়া যায় তাদের উপর, যেমন ‘ক্যাথলিক শিশু’, ‘প্রোটেষ্টান্ট শিশু’, ‘ইহুদী শিশু’ বা ‘মসুলমান শিশু’ ইত্যাদি। যদিও তুলনামূলক অন্য কোনো লেবেল কিন্তু দেখতে পাওয়া যায় না, যেমন ‘করসারভেটিভ বা রক্ষণশীল শিশু’, ‘লিবারেল বা উদারনৈতিক শিশু’ বা ‘রিপাবলিকান কিংবা ‘ডেমোক্রেট’ শিশু; দয়া করে এই বিষয়ে আপনার সচেতনা বৃদ্ধি করুন এবং সজোরে প্রতিবাদ করুন যখনই আপনি এভাবে এর ব্যবহার শুনবেন; একজন শিশু খ্রিস্টান বা মসুলমান শিশু নয় বরং খ্রিস্টান বাবা-মা বা মুসলিম বাবা-মায়ের সন্তান মাত্র। এই পরবর্তী নামকরণ, প্রসঙ্গক্রমে, কিন্তু শিশুদের সচেতনতা বৃদ্ধিতেও খুবই কার্যকর হতে পারে। কোনো শিশু যাকে বলা হচ্ছে যে সে মসুলমান বাবা মার সন্তান, সে সাথে সাথেই বুঝতে পারবে ধর্ম এমন কোনো কিছু যে সে নিজে বেছে নিতে বা বাদ দিতে পারে, যখন সেটা বোঝার মত সে যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক হবে।

বিভিন্ন ধর্মগুলোর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা বা তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের শিক্ষাগত উপকারিতার পক্ষে আসলেই বেশ জোরালো যুক্তি দেয়া যেতে পারে। অবশ্য আমার নিজের সন্দেহ প্রথম জেগে উঠেছিল, আমার নয় বছর বয়সে, আর যে শিক্ষাটি এর কারণ (শিক্ষাটি আমার স্কুল বা আমার বাবা মার কাছ থেকে আসেনি) সেটি হচ্ছে, খ্রিষ্ট ধর্ম যেখানে আমি প্রতিপালিত হয়েছি, সেটি ছাড়াও যে আরো পারস্পরিক অসামঞ্জস্যপূর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাস কাঠামোর অস্তিত্ব আছে পৃথিবীতে। ধর্মীয় সমর্থকরা নিজেরাও তা অনুধাবন করেছেন এবং এটি তাদের শঙ্কার অন্যতম একটি বিষয়। ইণ্ডিপেণ্ডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত নেটিভিটি নাটকটির ছবি প্রকাশের পর চার বছরের শিশুদের ধর্মীয় পরিচয়ে চিহ্নিত করার বিষয়ে কোনো অভিযোগ নিয়ে সম্পাদক বরাবর একটি চিঠিও আসেনি। একটি মাত্র নেতিবাচক চিঠি এসেছিল ‘দ্য ক্যামপেইন ফর রিয়েল এডুকেশন’ সংস্থা থেকে, যার মুখপাত্র নিক সিটন, তিনি বলেছিলেন যে, বহুবিশ্বাসভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা অত্যন্ত ক্ষতিকারক কারণ, ইদানীং শিশুদের শেখানো হচ্ছে যে সব ধর্ম সমমানের, যার অর্থ হচ্ছে তাদের নিজের ধর্মের বিশেষত্ব কিছুই নেই। হ্যাঁ, আসলেই, এর অর্থ ঠিক সেটাই। এই মুখপাত্র চিন্তা করতে পারেন, অন্য একটি পরিস্থিতিতে, এই একই ব্যক্তি বলেছিলেন, “সব ধর্মবিশ্বাস সমানভাবে সত্য, বিষয়টিকে এভাবে উপস্থাপন করা সঠিক নয়। তার নিজের ধর্মকে অন্যদের চেয়ে সেরা ভাবা অধিকার প্রত্যেকের আছে, হতে পারে তারা হিন্দু, ইহুদী, মসুলমান বা খ্রিষ্টান, তা না হলে ধর্মবিশ্বাস থাকার কি দরকার (৪৭)?

আসলেই কি? কি সুস্পষ্ট উদ্ভট ধারণা এটি! এই বিশ্বাসগুলো সব পারস্পরিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যথায় আপনার নিজের বিশ্বাসকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবার অর্থ কি হতে পারে? বেশীরভাগ ধর্মবিশ্বাসগুলো, সেকারণেই, ‘অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে না। শিশুদের বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস সম্বন্ধে শিখতে দেয়া হোক, ধর্মগুলোর অসামঞ্জস্যতাগুলো তাদেরকে ধরতে দিন, এবং এই অসামঞ্জস্যতাগুলো সম্বন্ধে তাদের নিজেদের উপসংহারে পৌঁছাতে দেন। এবং এদের মধ্যে কোনোটা সঠিক, সে বিষয়ে তারা যখন প্রাপ্তবয়ষ্ক হবে শুধুমাত্র তখনই তাদের মনস্থির করার সুযোগ দিন।

সাহিত্য সংস্কৃতির অংশ হিসাবে ধর্মীয় শিক্ষা

অবশ্যই স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, আমি বেশ অবাক হই, আমার চেয়ে সাম্প্রতিক দশকে শিক্ষিত মানুষদের মধ্যে যখন বাইবেল সম্বন্ধে সাধারণ জ্ঞানের অভাব দেখি। অথবা হয়তো এটি দশকের ব্যপার না, এমনকি সেই ১৯৫৪ সালেও, রবার্ট হিন্ড (৪৮) এর চিন্তা জাগানিয়া বই ‘হোয়াই গডস পারসিস্ট’এ উল্লেখিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি মতামত জরিপের ফলাফল বলছে, তিন চতুর্থাংশ ক্যাথলিক এবং প্রোটেষ্ট্যান্টদের একজনও ওল্ড টেষ্টামেন্টের কোনো নবীর নাম বলতে পারেননি। দুই তৃতীয়াংশ জানেনই না ‘সারমন অন দ্য মাউন্ট’ কে দিয়েছিলেন: উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মনে করেন মোজেস যীশুর বারো অনুসারীর অ্যাপোষ্টলদের একজন ছিলেন। এই জরিপটি, আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি.. করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে.. উন্নত পৃথিবীর যে কোনো দেশের তুলনায় যে দেশটি নাটকীয়ভাবে ধর্মপ্রিয় (৪৯)

১৬১১ সালে কিং জেমস বাইবেল (৫০)– এর স্বীকৃত সংস্করণে বেশ কিছু অনুচ্ছেদ আছে যেগুলোর দারুণ সাহিত্যগুণকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। যেমন, Song of Songs এবং অনন্য Ecclesiastes (আমি শুনেছি যা মূল হিব্রুতেও নাকি অসাধারণ); ইংরেজী বাইবেল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হওয়া উচিৎ, আর তার প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতিতে এটি অন্যতম একটি উৎস গ্রন্থ। বিষয়টি গ্রিক ও রোমান দেবদেবীদের পুরাণ কাহিনীর ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য এবং বিশ্বাস স্থাপন করার কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াও আমরা সেখান থেকে বেশ কিছু বিষয় সম্বন্ধে শিখতে পারি। এখানে আমি একটি তালিকা প্রস্তুত করেছি, যে বাক্যগুলো বাইবেলের বা বাইবেল অনুপ্রাণিত, এবং যেগুলো খুব সচরাচরই আমরা খুঁজে পাই ইংরেজী সাহিত্য বা কথোপকথনে… মহান কবিতা থেকে আটপৌরে বহুব্যবহৃত নানা বাক্যে, প্রবাদ থেকে শুরু করে গালপপ্লে, যেমন:

Be fruitful and multiply · East of Eden • Adam’s Rib • Am I my brother’s keeper?. The mark of Cain . As old as Methuselah . A mess of potage . Sold his birthright Jacob’s ladder • Coat of many colours • Amid the alien corn • Eyeless in Gaza • The fat of the land • The fatted calf. Stranger in a strange land • Burning bush • A landflowing with milk and honey • Let my people go . Flesh pots. An eye for an eye and a tooth for a tooth Be sure your sin will find you out. The apple of his eye · The stars in their courses. Butter in a lordly dish. The hosts of Midian • Shibboleth · Out of the strong came forth sweetness. He smote them hip and thigh • Philistine. A man after his own heart . Like David and Jonathan • Passing the love of women • How are the mighty fallen? . Ewe lamb • Man of Belial . Jezebel · Queen of Sheba • Wisdom of Solomon . The half was not told me . Girded up his loins • Drew a bow at a venture. Job’s comforters . The patience of Job I am escaped with the skin of my teeth • The price of wisdom is above rubies • Leviathan · Go to the ant thou sluggard; consider her ways, and be wise . Spare the rod and spoil the child. A word in season • Vanity of vanities. To everything there is a season, and a time to every purpose. The race is not to the swift, nor the battle to the strong. Of making many books there is no end I am the rose of Sharon. A garden inclosed . The little foxes • Many waters cannot quench love • Beat their swords into plowshares • Grind the faces of the poor . The wolf also shall dwell with the lamb, and the leopard shall lie down with the kid • Let us eat and drink; for tomorrow we shall die. Set thine house in order • A voice crying in the wilderness. No peace for the wicked · See eye to eye . Cut off out of the land of the living • Balm in Gilead. Can the leopard change his spots? . The parting of the ways A Daniel in the lions’ den . They have sown the wind, and they shall reap the whirlwind • Sodom and Gomorrah • Man shall not live by bread alone · Get thee behind me Satan . The salt of the earth. Hide your light under a bushel · Turn the other cheek • Go the extra mile • Moth and rust doth corrupt · Cast your pearls before swine • Wolf in sheep’s clothing · Weeping and gnashing of teeth . Gadarene swine . New wine in old bottles . Shake off the dust of your feet . He that is not with me is against me Judgement of Solomon • Fell upon stony ground. A prophet is not without honour, save in his own country. The crumbs from the table · Sign of the times Den of thieves. Pharisee. Whited sepulchre · Wars and rumours of wars • Good and faithful servant · Separate the sheep from the goats. I wash my hands of it. The sabbath was made for man, and not man for the sabbath • Suffer the little children. The widow’s mite • Physician heal thyself • Good Samaritan • Passed by on the other side • Grapes of wrath • Lost sheep • Prodigal son • A great gulf fixed • Whose shoe latchet! am not worthy to unloose • Cast the first stone • Jesus wept • Greater love hath no man than this. Doubting Thomas. Road to Damascus • A law unto himself. Through a glass darkly • Death, where is thy sting? • A thorn in the flesh • Fallen from grace . Filthy lucre • The root of all evil • Fight the good fight · All flesh is as grass · The weaker vessel · I am Alpha and Omega • Armageddon • De profundis • Quo vadis • Rain on the just and on the unjust

এই প্রত্যেকটি প্রবাদ, বাক্য বা বহুব্যবহৃত শব্দগুলো এসেছে কিং জেমস বাইবেলের স্বীকৃত সংস্করণ থেকে; নিঃসন্দেহে বাইবেল সম্বন্ধে কারো অজ্ঞতা ইংরেজী সাহিত্য অনুধাবন করার ক্ষেত্রে তার জন্যে কিছুটা অন্তরায় সৃষ্টি করবে এবং সেটি শুধু ভারী গম্ভীর কোনো সাহিত্য ক্ষেত্রেই না। নীচে লর্ড জাস্টিস বোয়েন এর বুদ্ধিদ্বীপ্ত ছড়াটি লক্ষ করুন:

The rain it raineth on the just, And also on the unjust fella.
But chiefly on the just because The unjust hath the just’s umbrella.

কিন্তু এই কবিতাটি বোঝার সেই মজা বেশ খানিকটা কমে যায় যদি আপনি ম্যাথিউ এর ৫:৪৫ এর প্রতি ইঙ্গিতটা না বুঝতে পারেন (‘For he maketh his sun to rise on the evil and on the good, and sendeth rain on the just and on the unjust’); এবং My Fair Lady র এলিজা ভুলিটলের (৫২) কল্পনার সূক্ষ্ম বক্তব্যটি অধরা থেকেই যাবে তাদের কাছে, যারা কিনা জন দ্য ব্যাপ্টিষ্ট (৫৩) এর পরিণতির কথা জানেন না।

‘Thanks a lot, King,’ says I in a manner well bred,
 ‘But all I want is ‘Enry ‘iggins’ ‘ead.’

আমি অন্তত বাজি রেখে বলতে পারি, ইংরেজী ভাষায় হালকা হাস্যরসের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখক পি, জি, উডহাউস এবং আমি আরো বাজী রাখতে পারবো বাইবেলের বাক্যের উপরের তালিকাটির অর্ধেকের বেশী তার লেখায় খুঁজে পাওয়া যাবে। (গুগল সার্চ সবগুলো হয়তো খুঁজে পাবে না, যেমন অবশ্য তার ছোট গল্পের। শিরোনাম ‘The Aunt and the Sluggard’ এর সাথে Proverbs ৬:৬ এর ইঙ্গিতটি হয়তো গুগল খুঁজে পাবে না); উডহাউসের বইয়ে আরো বহু বাইবেলের বাক্য আছে, যা উপরের তালিকাটিতে নেই এবং বাগধারা বা প্রবাদ বাক্য হিসাবে যা এখনও আমাদের ভাষার অংশ হয়নি। যেমন বার্টি উষ্টারের (৫৩) মুখে শুনুন আগের রাতে অতিরিক্ত মদ্যপানের পর সকালে খারাপ লাগার সেই অনুভূতিটি কেমন হতে পারে : ‘আমি যেন স্বপ্ন দেখছিলাম, একজন অসভ্য মানুষ আমার মাথার মধ্য লোহার কাটা ঢুকিয়ে দিচ্ছে, সাধারণ লোহার কাটা না হেবের এর বউ জায়েল যা ব্যবহার করেছিল, তপ্ত লাল। বার্টি নিজেও ভীষণ গর্বিত ছিলেন তার একটি অর্জন নিয়ে, ধর্মীয় গ্রন্থের জ্ঞান যাচাইয়ের পরীক্ষায় একবার তিনি পুরষ্কার জিতেছিলেন।

ইংরেজী ভাষার হাস্যরসাত্মক লেখার ক্ষেত্রে যা সত্য, গুরুগম্ভীর সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সেটি অবশ্যই সত্য। শেক্সপিয়ারের কাজে প্রায় ১৩০০ বাইবেলের প্রতি ইঙ্গিতবহ বাক্যের একটি তালিকা করেছেন নাসিব শাহীন (৫৫), যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখিত হয় ও খুবই বিশ্বাসযোগ্য (৫৬)। ফেয়ারফ্যাক্স ভার্জিনিয়া থেকে প্রকাশিত দ্য বাইবেল লিটেরেসি রিপোের্ট (কুখ্যাত টেম্পলটন ফাউণ্ডেশনের অর্থে প্রকাশিত) এ আরো উদাহরণ দেখা যায় এবং যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষকদের ঐক্যমত উল্লেখ করে জানাচ্ছে বাইবেল সম্বন্ধে জ্ঞান তাদের সাহিত্যের বিষয়টি সম্পূর্ণ বোঝার জন্য আবশ্যক (৫৭)। সন্দেহ নেই সমভাবে বিষয়টি সত্য ফরাসী, জার্মান, রুশ, ইতালীয়, এসপানিওল সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় ভাষায় লেখা সাহিত্যের ক্ষেত্রে। এবং আরবী আর উপমহাদেশের ভাষা ভাষীদের জন্য, কোরান বা ভগবৎ গীতা সম্বন্ধে ধারণা হয়তো ঠিক এমনভাবে গুরুত্বপূর্ণ তাদের সাহিত্যের পূর্ণ স্বাদ পাবার জন্য। পরিশেষে সেই তালিকা পূর্ণ করার জন্য, বলতে হচ্ছে আপনি ভাগনার (৫৮) এর সঙ্গীতের মূল রস আস্বাদন করতে পারবেন না (যার সঙ্গীত সম্বন্ধে বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ একটি মন্তব্য হচ্ছে এটি শুনতে যত ভালো লাগে তার চেয়েও অনেক বেশী ভালো) নর্স বা স্ক্যাণ্ডিনেভিয় পুরাণে বর্ণিত দেবদেবীদের সম্বন্ধে না জানলে।

অতএব বিষয়টি নিয়ে আর কষ্ট না করি,আমি সম্ভবত যথেষ্ট বলেছি অন্ততপক্ষে আমার বয়স্ক পাঠকদের বোঝানোর জন্য যে, একটি নিরীশ্বরবাদী জীবন ও পৃথিবী ভাবনা কিন্তু বাইবেল বা অন্য কোনো পবিত্র গ্রন্থকে আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে বাদ দেবার পক্ষে কোনো যুক্তি দেখে না। অবশ্যই আমরা একটি আবেগময় আনুগত্য বজায় রাখতে পারি, যেমন ধরুন জুডাইজম, অ্যাংলিকানিজম বা ইসলামের সাংস্কৃতিক বা সাহিত্যিক ঐতিহ্যর প্রতি, এমনকি আমরা অংশও নিতেও পারি নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে, যেমন, বিবাহ আর কোনো শেষকৃত্য অনুষ্ঠান, আর একাজটি অতিপ্রাকৃত কিছুর উপর বিশ্বাস না করেই করা সম্ভব, যা এইসব ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানের সাথে ঐতিহাসিকভাবে জড়িত। আমরা ঈশ্বর-বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করতে পারি মূল্যবান একটি ঐতিহ্যের প্রতি নিজেদের সংযোগ না হারিয়েও।

পাদটীকা:

(১) এডগার্দো লেভি মোরতারা (১৮৫১-১৯৪০) ইতালী বোলোনিয়া শহরে ইহুদী পরিবারে জন্ম নেয়া মোরতারাকে পোপের কর্মকর্তারা তার বাবা মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ক্যাথলিক হিসাবে প্রতিপালন করেছিল, পরে তিনি যাজক হয়েছিলেন।

(২) রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রতিষ্ঠান, যাদের মূল কাজ ছিল হেরেসী বা ধর্মীয় ভিন্নমতাবম্বীদের প্রতিরোধ করা। এর সুচনা হয়ে ফ্রান্সে দ্বাদশ শতকে।

(৩) David I. Kertzer. The Kidnapping of Edgardo Mortara. 1998

(৪) স্পেন ও পর্তুগীজ সেনা সদস্য ও অভিযাত্রীরা, যারা পৃথিবীর বহু অংশে উপনিবেশ সৃষ্টি করেছিল।

 (৫) এই উক্তিটি ধারণা করা হয় হিউ লাটিমার, নিকোলাস রিডলীর উদ্দেশ্যে উচ্চারণ করেছিলেন, তাদের একই সাথে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে।

(৬) অক্সফোর্ড এর শহীদ হিসাবে পরিচিত, অ্যাঙলিকান বিশপ হিউ লাটিমার, নিকোলাস রিডলী ও ক্যান্টারবুরীর আর্চ বিশপ থমাস ক্রানমারকে ধর্মদ্রোহীতার অভিযোগ এনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ১৫৫৫ সালে।

(৭) সালেম উইচ ট্রায়াল হিসাবে ইতিহাসে পরিচিত যুক্তারষ্ট্রের (ওখন ব্রিটিশ উপনিবেশ) ম্যাসাচুসেটস (প্রধাণত সালেম নামে একটি গ্রামে) ১৬৯২/৯৩ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত বেশ কিছু শুনানী যেখানে বিশ জনকে ডাইনীবিদ্যা চর্চা করার অভিযোগ এনে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল।

 (৮) এটি রিপোর্ট করেছিল বিবিসি নিউজ: http://news.bbc.co.uk/1/hi/wales/901723.stm. slot

(৯) উইলিয়াম, স্কুলের বালক উইলিয়াম ব্রাউন চরিত্রকে নিয়ে লেখা রিচমাল ক্রম্পটন ল্যাম্বাবার্ণ এর লেখা প্রথম উপন্যাস (১৯২২);

(১০) মার্ক টোয়াইন এর অ্যাডভেঞ্চার অফ হাকেলবেরী ফিন চরিত্র হাকেলবেরী ফিন (১৮৮৫)।

(১১) ব্রিটিশ লেখক আর্থার রানসোম এর ধারাবাহিক শিশুতোষ উপন্যাস সোয়ালোস অ্যাণ্ড অ্যামাজন এর চরিত্ররা (১৯৩০)।

(১২) Loftus, E, and Ketcham, K. (1994). The Myth of Repressed Memory:False Memories and Allegations of Sexual Abuse. New York: St Martin’s.

(১৩) আইরিশ টাইমস এ জন ওয়াটারস: http://oneinfour. org/news/news2003/ roots/.

 (১8) Peter Mullan. The Magdalene Sisters, Irish British drama film. (2002)

 (১৫) Associated Press, 10 June 2005: http://www. rickross. com/ reference/ clergy/ clergy426.html

(১৬) The Root of All Evil? পরবর্তীতে নামকরণ করা হয়েছে–The God Delusion, রিচার্ড ডকিন্সের উপস্থাপনা ও গ্রন্থনায় নির্মিত একটি প্রামাণ্য চিত্র। ব্রিটিশ চ্যানেল চোর টেলিভশিন চ্যানেলে এটি সম্প্রচার করা হয় ২০০৬ এ।

 (১৭) আমি সাক্ষাৎকারের জন্য ক্যান্টারবুরীর আর্চবিশপ, ওয়েষ্টমিনিষ্টারের কার্ডিনাল আর্চবিশপ ও ব্রিটেন এর প্রধান রাবাই এর কাছে আবেদন পাঠিয়েছিলাম, তারা সবাই সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সন্দেহ নেই ভালো কোনো কারণে নিশ্চয়ই। অক্সফোর্ডের বিশপ রাজী হয়েছিলেন এবং তিনি আসলেই চমৎকার একটি মানুষ, এবং চরমপন্থা থেকে তার। অবস্থান বহু দুরে, যেমনটা হওয়ার কথা।

 (১৮) যদি নীচের ঘটনাট সত্যি বলে মনে হচ্ছে যদিও আমি প্রথমে বিষয়টিকে ব্যঙ্গাত্মক একটি স্কেচ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলাম, The Onion: www. talk2action. org/story/ 2006/5/29/1 95 855/959.; এটি আসলে একটি কম্পিউটার গেম যার নাম Left Behind: Eternal Forces; পি. জে. মায়ারস তার অসাধারণ ফ্যারিঙ্গুলা ওয়েব সাইটে ব্যপারটির একটি সংক্ষিপ্ত রুপ তুলে ধরেছিলেন: কল্পনা করুন, আপনি হচ্ছে একজন পদাতিক সৈন্য কোনো একটি আধা-সামরিক বাহিনীর, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্টকে একটি খ্রিষ্টীয় ধর্মতন্ত্রে রুপান্তরিত করা এবং জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে খ্রিষ্টীয় দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেয়া; আপনি একটি মিশনের দায়িত্বে, যে মিশনের দ্বায়িত্ব ধর্মীয় এবং সামরিক ক্যাথলিক, ইহুদী, বৌদ্ধ, সমকামি এবং যারাই রাষ্ট্র থেকে চার্চের পৃথক থাকা সমর্থন করেন, তাদের হয় হত্যা করা হবে নয়তো ধর্মান্তর করাতে হবে: ‘এখানে দেখুন: http:// scienceblogs. com/ pharyngula/ 2006/05/

(১৯) http://www.avl611.org/hell.html.

(২০) অ্যান কোলটারের চমৎকার খ্রিষ্টীয় দয়ার নমুনার তুলনা করতে পারেন : ‘আমি আমার যে কোনো সহ-ধর্মযোদ্ধাদের চ্যালেঞ্জ করি, তারা আমাকে বলুক, নরকের আগুনে ডকিন্সের দগ্ধ হবার কথা ভেবে তারা তৃপ্তির হাসি হাসেন না।

(২১) Julia Anne Sweeney, যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেত্রী,কমেডিয়ান ও লেখক, তার তৃতীয় আত্মজীবনীমূলক মনোলোগ শোটির নাম Letting Go of God;

 (২২) Dan Barker. Losing Faith in Faith: From Preacher to Atheist.

 (২৩) Sticks and Stones, ইংরেজী ভাষায় লেখা শিশুতোষ একটি ছড়া। ধারণা করা হয় ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে African Methodist Episcopal Church এর একটি প্রকাশনায় এটি প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল। মূলত এটি শিশুদের নিষেধ করে কোনো তিরষ্কারকে উপেক্ষা করতে, শারীরিক কোনো আক্রমণ এড়িয়ে থাকতে: Sticks and stones will break my bones/ But words will never harm me;

 (২8) N. Humphrey, ‘What shall we tell the children?’, Williams, W, ed. (1998). The Values of Science: Oxford Amnesty থেকে। পুনর্মুদ্রিত করা হয়েছিল: Humphrey, N. (2002). The Mind Made Flesh: Frontiers of Psychology;

(২৫) দক্ষিন আমেরিকার আদি বাসী জাতি ইনকা, পঞ্চদশ শতকে স্প্যানিশ আগ্রাসনকারী কনকিস্টাডদের আক্রমণের পূর্বে পুরো দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিলো।

(২৬) ব্রিটেনে এটি নিত্য ঘটনা এখন। একজন ঊর্ধ্বতন স্কুল পরিদর্শক আমাকে বলেছিল লণ্ডনের একটি মেয়ে সম্বন্ধে, ২০০৬ সালে যাকে তার ব্রাডফোর্ডে আত্মীয়র বাসায় পাঠানো হয়েছি খতনা করার জন্য। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, তাদের কমিউনিটিতে সাম্প্রদায়িক চিহ্নিত হবার ভয়ে।

 (২৭) আমিশ, প্রাচীনপন্থী খ্রিষ্টান ধর্মগোষ্ঠী, যারা আধুনিক যুগের সব সুবিধা বর্জন করে সাধারণ জীবন ধারণ করে থাকে। আমিশদের সুচনা হয়েছিল সুইজারল্যান্ডে একটি ধর্মীয় বিভাজনের মাধ্যমে, ১৬৯৩ সালে যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জ্যাকব আম্মান। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আমিশ এবং সম্পর্কযুক্ত তবে ভিন্ন, মেনোনাইটরা যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় বসতি গড়েন নানা কারণে। এখনও তাদের উত্তরসূরীরা যারা সেই পুরোনো ধারা ধরে রেখেছেন, তারা পেনসিলভেনিয়া জার্মান বা পেনসিলভেনিয়া ডাচ ভাষায় কথা বলেন।

(২৮) হাসিডিক ইহুদীরা অর্থোডক্স ইহুদীদের একটি গ্রুপ, যারা ইহুদী আধ্যাত্মিকতাবাদকে তাদের ধর্মের সাথে একাত্ম করা প্রচেষ্টা করেছেন।

(২৯) জিপসী শব্দটি ইংরেজী ভাষাভাষীদের কাছে রোমানী বা রোমা জাতিগোষ্ঠীকে ইঙ্গিত করে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা রোমা জনগোষ্ঠী বেশীর ভাগ অংশের বাস ইউরোপে। ধারণা করা হয় তারা ইউরোপে এসে পৌঁছেছে প্রায় ১০০০ বছর আগে। জাতিগতভাবে তাদের উৎপত্তি ভারতবর্ষে। তাদের পূর্বসূরিরা ডোম জাতিগোষ্ঠীর মতই ষষ্ঠ থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে কোনো সময় ভারত ছেড়ে এসেছিল।

(৩0) http://www.law.umkc.edu/faculty/projects/ ftrials/conlaw/ yoder.html.

(৩১) টনি ব্লেয়ার, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।

(৩২) Guardian, 15 Jan, 2005: http:// www.guardian.co.uk/ weekend/ story/ 0,1389500,00.html.

(৩৩) এইচ এল মেনকেন (যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ও লেখক) এর সেই ভবিষ্যদ্বাণী.. প্রতিটি ইভানজেলিস্ট এর হৃদয়ে থাকে একজন ব্যর্থ গাড়ির সেলসম্যান।

 (৩8) Times Educational Supplement, 15 July 2005.

(৩৫) www.christian.org.uk

(৩৬) https://www.telegraph.co.uk./ weekend/storyéopinion/ main.jhtml/ xml=/ opinion/2002/03/18/do1801.xml

(৩৭) http://www.darwinwars.com/lunatic/liars/layfield.htm

(৩৮) Guardian, 15 Jan, 2005: http://www.guardian.co.uk/ weekend/story/ 0,, 1389500,00.html.

(৩৯) আমাদের চিঠির বিষয়বস্তু, যা প্রস্তুত করেছিলেন অক্সফোর্ডের বিশপ: প্রিয় প্রধান মন্ত্রী, এই চিঠিটা একত্রে লিখছি আমরা কয়েকজন বিজ্ঞানী এবং বিশপরা, গেটসহেড এ ইমানুয়েল সিটি টেকনোলজী কলেজ বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যপারে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য। বিবর্তন হচ্ছে এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যা ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা ব্যাপক, এবং বহু ধরনের প্রাকৃতিক বিষয়, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এটি ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। এটি আরো সুনির্দিষ্ট, নিশ্চিৎকরণ এবং এমনকি রাতারাতি বদলে দেয়া সম্ভব প্রমাণের মাধ্যমে। এটি অবশ্যই, যেমনটি কলেজের মুখপাত্র মন্তব্য করেছেন, কোনো ধর্ম-বিশ্বাস মুক্ত অবস্থান বাইবেল নির্ভর কোনো সৃষ্টিতত্ত্ববাদ ব্যাখ্যা করতে পারেনা যার ভিন্ন কার্যকারণ আর উদ্দেশ্য আছে। এই বিষয়টি আরো বিস্তারিত যা বর্তমানে কোনো একটি কলেজে পড়ানো হচ্ছে। ক্রমবর্ধমানহারে আশঙ্কা বাড়ছে কি এবং কিভাবে শিক্ষা দেয়া হবে এই সব নতুন প্রজন্মের ধর্ম বিশ্বাস নির্ভর স্কুলগুলোয়। আমরা বিশ্বাস করি এই স্কুলগুলোর পাঠ্যসূচী, এবং ইমানুয়েল সিটি টেকনিকাল কলেজ এর পাঠ্যসূচী সহ, প্রয়োজন আছে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়গুলো তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে গুরুত্ব দেবার লক্ষ্যে।

(8০) Office for Standards in Education, Children’s Services and Skills.

(8১) British Humanist Association News, March April 2006

(৪২) ভুলের মাত্রাটা বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণটি ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন কেউ যদি বলেন, নিউ ইয়র্ক থেকে সান ফ্রান্সিসকো দূরত্ব মাত্র ৭০০ গজ। ভুলটা সেই মাত্রার যখন কেউ বলেন পৃথিবীর বয়স মাত্র ৬০০০ বছর।

(8৩) Observer, 22 July 2004: http://observer.guardian.co.uk/ magazinel story/ 0,11913,1258506,00.html,

(৪৪) কাইনেশিয়ান একটি অর্থনৈতিক মতবাদ।

(৪৫) মনেটারিষ্ট, একটি অর্থনৈতিক মতবাদ।

(৪৬) অক্সফোর্ড ডিকশনারী ‘গে’ শব্দটার উৎস হিসাবে উল্লেখ করেছে ১৯৩৫ সালে আমেরিকার জেলখানায় ব্যবহৃত একটি কটু বাক্য হিসাবে। ১৯৫৫ সালে পিটার ওয়াইল্ডব্লাড, তার বিখ্যাত বই ‘এগেনেইষ্ট দি ল’ এ ‘গে’ শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করতে প্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন সমকামিতার একটি আমেরিকান সুভাষণ হিসাবে।

(৪৭) http://uepengland.com/forum/index.php?showtopic= 184&mode=linear,

 (৪৮) রবার্ট হিন্ড, ব্রিটিশ প্রাণীবিজ্ঞানী।

(8৯) Robert A. Hinde. Why Gods Persist: A Scientific Approach to Religion:

(৫০) কিং জেমস বাইবেল– খ্রিষ্টীয় বাইবেলের এর ইংরেজী অনুবাদ, যা করা হয়েছিল চার্চ অব ইংল্যাণ্ডের জন্য (১৬০৪ থেকে ১৬১১);

(৫১) বিচারপতি চার্লস বোয়েন (১৮৩৫-১৮৯৪), ব্রিটিশ বিচারক।

বৃষ্টি সৎ মানুষের উপর পড়ে, এবং অসৎ মানুষের উপরও পড়ে কিন্তু মূলত সৎ মানুষের উপর, কারণ অসৎ মানুষের কাছে আছে সৎ মানুষদের ছাতা।

(৫২) জর্জ বার্নাড শ’র পিগম্যালিয়ন নাটকটির উপর নির্মিত মিউজিক্যালটি, যার অন্যতম প্রধান চরিত্র ছিল এলিজা ভুলিটল।

 (৫৩) সেইন্ট জন দি ব্যাপ্টিষ্ট (ইসলামে ইয়াহিয়া) খ্রিষ্টান ধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় চরিত্র। গসপেল এর কাহিনী অনুযায়ী গ্যালীলির রাজা হেসড জন দি ব্যাপটিষ্টকে আটক করেছিলেন, তার জন্মদিনের দিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার মেয়ে সালোম এর ইচ্ছানুযায়ী জন দি ব্যাপটিষ্ট এর গলা কাটা হয়।

(৫৪) পি জি উডহাউস এর জীভস উপন্যাসের চরিত্র।

(৫৫) নাসিব আজীজ শাহীন (১৯৩১-২০০৯) যুক্তরাষ্ট্রের ইংরেজী সাহিত্যের গবেষক।

(৫৬) শাহীন মোট তিনটি বই লিখেছেন, আলাদা আলাদা ভাবে কমেডি, ট্রাজেডি এবং ইতিহাসের বাইবেল তথ্যসূত্রগুলো সংকলিত করে। ১৩০০ সংখ্যাটি উল্লেখিত হয়েছে: http://www. shakespearefellowship.org/ virtualclassroom/ StritmatterShaheen Rev.htm

(৫৭) http://www.bibleliteracy.org/Secure/Documents/ Bible Literacy Report2005 .pdf.

(৫৮) ভিলহেইম রিচার্ড ভাগনার (১৮১৩-১৮৮৩) জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *