০৭. ‘পবিত্র’ গ্রন্থ এবং যুগের সাথে বদলে যাওয়া নৈতিকতার জাইটগাইষ্ট বা যুগধর্ম

সপ্তম অধ্যায়– ‘পবিত্র’ গ্রন্থ এবং যুগের সাথে বদলে যাওয়া নৈতিকতার জাইটগাইষ্ট বা যুগধর্ম

রাজনীতি হত্যা করেছে হাজারে, কিন্তু ধর্ম হত্যা করেছে হাজারে হাজারে।
— সন ও কাহাসি (১)

দুইটি উপায়ে ধর্মগ্রন্থ বা স্ক্রিপচার নৈতিকতা আর জীবন যাপন করার প্রয়োজনীয় বিধির উৎস হতে পারে। একটি হচ্ছে সরাসরি নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে, যেমন, টেন কম্যাণ্ডমেন্টস (২), যা যুক্তরাষ্ট্রের অনগ্রসর গ্রামাঞ্চলে সাংস্কৃতিক যুদ্ধের তীব্র তর্ক বিতর্কের একটি অত্যন্ত তিক্ত বিষয়। অন্য উপায়টি হচ্ছে উদহারণের মাধ্যমে, যেমন ঈশ্বর বা বাইবেলের অন্য কোনো চরিত্র হয়তো যাকে আধুনিক ভাষায় বলা যায়– কোনো রোল মডেল বা অনুকরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব– সেই দ্বায়িত্ব পালন করে; দুটোই ধর্মগ্রন্থ মোতাবেক নৈতিকতা শিক্ষা দানের পন্থা, যদিও খুব ধার্মিকভাবে (এই ক্রিয়াগুণটি কিন্তু ব্যবহার করা হয়েছে রুপাকার্থে তবে এর উৎসের প্রতি পূর্ণ নজর রেখে) মেনে চলা যায়, সেটি এমন একটি নৈতিক পদ্ধতিকে উৎসাহিত করে যা যে কোনো সভ্য আধুনিক মানুষই, সে ধার্মিক হোক বা না হোক, মনে করতে পারেন– অত্যন্ত জঘন্য– আর আমি এর চেয়ে মৃদুভাবে বিষয়টি বলতেও অক্ষম।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বললে, বাইবেল এর বেশীর ভাগ অংশ কিন্তু পদ্ধতিগতভাবে অশুভ নয় বরং বলা যায় স্পষ্টতই খুব অদ্ভুত, যেমনটা প্রত্যাশিত আসলে এধরনের কোনো এলোমেলোভাবে জোড়া লাগানো পরস্পর বৈসাদৃশ্য কতগুলো ডকুমেন্ট বা প্রামাণিক দলিলের সম্মিলনে তৈরী করা কোনো একটি সংকলনের ক্ষেত্রে। প্রায় নয় শতাব্দী জুড়ে যা রচিত, সংযোজিত, পুনসংশোধিত, সম্পাদিত, অনুদিত, বিকৃত এবং উৎকর্ষতা’ সাধিত হয়েছে শত শত নামহীন লেখক, সম্পাদক,অনুলিপিকারকদের দ্বারা, যারা আমাদের কাছে যেমন, তেমনি পরস্পরের কাছেও ছিল অচেনা। বাইবেলের খুব বেশী অদ্ভুত ব্যপারগুলোর ব্যাখা হয়তো দিতে পারে এই ব্যপারটি (৩)। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই একই অদ্ভুত বইটা ধার্মিক অতিউৎসাহীরা ব্যবহার করেন আমাদের নৈতিকতার এবং জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় বিধির কখনোই ভুল হতে পারে না এমন কোনো উৎস হিসাবে। যারা তাদের নৈতিকতাকে আক্ষরিক অর্থে বাইবেল ভিত্তিক করে তোলার ইচ্ছা পোষণ করেন, তারা হয় বাইবেল পড়েননি বা তা আদৌ বোঝেননি, যেমন বিশপ জন শেলবী স্পঙ (৪) তার ‘দ্য সিন্স অব স্ক্রিপচার’ বইটিতে সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন (৫)। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি বিশপ স্পঙ, উদারপন্থী বিশপদের মধ্যে একটি চমৎকার উদাহরণ, যার বিশ্বাস যথেষ্ট পরিমান অগ্রসর এবং সেটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা নিজেদের খ্রিষ্টান বলেন তাদের থেকে প্রায় সম্পূর্ণ ভিন্ন; তার ব্রিটিশ সমতুল্য হচ্ছেন রিচার্ড হলোওয়ে (৬), এডিনবরা বিশপের দ্বায়িত্ব থেকে যিনি সম্প্রতি অবসর গ্রহন করেছেন। বিশপ হলোওয়ে এমনকি নিজেকে আরোগ্য লাভের পথে একজন এক খ্রিষ্টান হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তার সাথে এডিনবরায়, একটি উন্মুক্ত আলোচনা করার সুযোগ হয়েছিল আমার, যা অন্যতম একটি কৌতুলোদ্দীপক সাক্ষাৎকার ছিল আমার জন্য (৭)।

ওল্ড টেষ্টামেন্ট (৮)।

জেনেসিস বা সৃষ্টির কাহিনী দিয়ে শুরু হওয়া, নোয়া’র (আরবী, নুহ) (৯) অত্যন্ত লোকপ্রিয় একটি গল্প, যার মূল উৎস ব্যাবিলনীয় উটনাপিশটিম (১০) এর পুরাণ কাহিনী এবং বেশ কয়েকটি সংস্কৃতির প্রাচীন পুরাণেও যা পরিচিত। জোড়ায় জোড়ায় সব প্রাণীদের নোয়ার বানানো আর্ক বা নৌকায় ওঠার পুরাণ কাহিনী বেশ আবেদনময় আর সুন্দর,তবে নোয়ার এই গল্পের নৈতিক শিক্ষাটা কিন্তু ভয়ঙ্কর: মানুষ সম্পর্কে ঈশ্বর এতটাই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছিলেন যে, তিনি একটি মাত্র পরিবার ছাড়া) বাকীদের সবাইকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেন, যাদের মধ্যে শিশুরাও ছিল, এবং সেই সাথে আর্কের (নৌকা) মধ্যে আশ্রয় নেয়া প্রাণীরা ছাড়া, বাকী সব প্রাণীদের হত্যা করা হয় (যারা ছিল স্পষ্টতই নির্দোষ)।

অবশ্য বিরক্ত ধর্মতত্ত্ববিদরা প্রতিবাদ করতে পারেন এই বলে যে, আমরা এখন আর জেনেসিসের বইটাকে আদৌ আক্ষরিকভাবে গ্রহন করিনা। আর সেটা আমারও কিন্তু মূল বক্তব্য। আমরা ধর্মগ্রন্থ থেকে বেছে বেছে ঠিক করি কোনো অংশটা বিশ্বাস করবো আর কোনো অংশটাকে প্রতীকী বা রুপক বলে চিহ্নিত করবো। আর এধরনের যাচাই বাছাই করার বিষয়টি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের একটি ব্যপার, যেমন, কম বা বেশী নিরীশ্ববাদীদের এই নৈতিক নির্দেশনা মান্য করার ক্ষেত্রে তাদের নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর মত বা সেগুলো ছিল। কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের মত যার চরম বা চূড়ান্ত কোনো ভিত্তি নেই। যদি এর মধ্যে কোনোটি ‘যখন যা প্রয়োজন সেই মোতাবেক কোনো নৈতিকতা’ হয়ে থাকে, তাহলে অন্যটিও তাই।

শিক্ষিত ধর্মতাত্ত্বিকদের ভালো উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও, ভয়ঙ্কর রকম একটি বিশাল সংখ্যক মানুষ নোয়ার গল্প সহ তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে আক্ষরিকভাবে সত্য বলেই মান্য করে থাকে করেন; গ্যালাপ কোম্পানীর গণ-জরিপ জানাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের মধ্যে তাদের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ। এছাড়া কোনো সন্দেহ নেই এশিয়ার বহু সাধু সন্তরা যাদের অনেকেই প্লেট টেকটোনিকের অবস্থান পরিবর্তন নয় বরং মানুষের পাপকর্মকে ২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামির কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, যেমন মদ্যাপান থেকে শুরু করে, মদ্যশালায় নাচ থেকে সাবাথ ( জেনেসিস এ বর্ণিত সপ্তাহের বিশ্রামের দিন হিসাবে চিহ্নিত দিনটি) এর কোনো ছোটখাট বিধি না মানার পাপ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে (১১)। নোয়া’র গল্পে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, বাইবেল শিক্ষা ছাড়া আর সবকিছু সম্বন্ধে অজ্ঞ, এইসব মানুষগুলোকে কে দোষ দিতে পারে? তাদের পুরো শিক্ষাই শিখিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের কর্মকাণ্ডের সাথেই যুক্ত, মানুষের পাপের ফলাফল, কখনোই প্লেট টেকটোনিক এর মত নৈর্ব্যক্তিক কোনো কিছুর কারণে হবার মত কিছু নয়। এছাড়া লক্ষণীয় যে কি পরিমান অহংকারী, অন্ধ আত্মকেন্দ্রিকতা থাকলে বিশ্বাস করা সম্ভব যে, পৃথিবী কাঁপানো ঘটনাগুলো, যে মাত্রায় সাধারণত একজন ঈশ্বর ( বা একটি টেকটোনিক প্লেট) কাজ করতে পারে, তার সাথে অবশ্যই আমরা মানুষদের কোনো সংযোগ থাকতে পারে। কেনই বা একজন স্বর্গীয় সত্তা, যিনি ব্যস্ত সৃষ্টি আর অনন্তকাল নিয়ে, মানুষের অপকর্মগুলো নিয়ে কেন মাথা ঘামাবেন? আমরা মানুষরাই বা কেন আমাদের নিজেদের এই প্রবোধ দেই, নিজেদের তুচ্ছ ছোটখাট ‘পাপগুলোকে’ এমনকি একেবারে মহাজাগতিক পর্যায়ে বিশাল আর মহাগুরুত্বপূর্ণ করে তুলি?

টেলিভিশনের জন্য আমি যখন রেভারেণ্ড মাইকেল ব্রে, যুক্তরাষ্টের সুপরিচিত গর্ভপাত বিরোধী আন্দোলনের এই নেতার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেন ইভানজেলিকাল খ্রিষ্টানরা একজন মানুষের ব্যক্তিগত যৌন পছন্দ, যেমন সমকামিতা নিয়ে কেন সারাক্ষণই এত মোহাবিষ্ট থাকে, যা কিনা অন্য কারো জীবনে কোনো সমস্যা করছে না। তার উত্তর ছিল খানিকটা আত্মপক্ষ সমর্থন। ঈশ্বর যখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাধ্যমে আঘাত হানেন কোনো শহরের উপর, কারণ যেখানে পাপীদের বসবাস, তার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কিংবা অনিচ্ছাকৃত ক্ষতির শিকার হয় নিষ্পাপ অবুঝ নাগরিকরাও। ২০০৫ এ চমৎকার শহর নিউ অরলিয়ন্স এর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হারিকেন কাটরিনা পরবর্তী ভয়ঙ্কর বন্যার কবলে আক্রান্ত হয়েছিল। রেভারেন্ড প্যাট রবার্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে সুপরিচিত টেলিভ্যানজেলিস্ট (যারা টেলিভিশনের মাধ্যমে ধর্ম প্রচার ও তহবিল সংগ্রহ করে থাকেন) এবং একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এই হারিকেন এর জন্য ঘটনাচক্রে নিউ অরলিয়েন্স শহরে বসবাসকারী একজন লেসবিয়ান কমেডিয়ানকে দায়ী করে মন্তব্য করেছিলেন, আপনি ভাবতেই পারেন মহাক্ষমতাধর ঈশ্বর পাপীদের শায়েস্তা করতে খানিকটা সুনির্দিষ্ট নিশানা মাফিক কোনো পথ কি বেছে নিতে পারতেন না, যেমন, সময় মত হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ যাওয়ার মত কোনো ঘটনা হয়তো বেছে নিতে পারতেন, নির্বিচারে সমস্ত শহরকে ধ্বংস করার বদলে, কারণ সেই শহর ঘটনাচক্রে একজন সমকামি কমেডিয়ানের বাসস্থান (১২)।

নভেম্বর ২০০৫, পেনসিলভেনিয়ার ডোভার শহরের নাগরিকরা পূর্ণাঙ্গ স্থানীয় স্কুল বোর্ডকে ভোট দিয়ে বাতিল করে দিয়েছিল, যারা ছিল ধর্মীয় মৌলবাদীদের পুরো একটি গ্রুপ— তাদের কর্মকাণ্ড শহরটিকে কুখ্যাতি এনে দিয়েছিল, হাস্যকর কোনো একটি ঘটনা হিসাবে এটি চিহ্নিত করা না হয় বাদই দিলাম, স্কুলে জোর করে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন পড়ানোর প্রচেষ্টা করার মাধ্যমে। পরে যখন প্যাট রবার্টসন জানতে পারেন যে মৌলবাদীরা গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটে পরাজিত হয়েছে ব্যালট বক্সে, তিনি ডোভারের প্রতি কঠিন একটি হুশিয়ারী বার্তা শোনান:

আমি ডোভারের সকল সুনাগরিকদের বলছি আপনাদের এলাকায় যদি কোনো মহাদুর্যোগ হয়, ঈশ্বরের কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করবেন না, আপনারা তাকে আপনাদের শহর থেকে বহিষ্কার করেছেন এইমাত্র এবং ভাববেন না যে কেন যখন বিপদ শুরু হলে, কেন তিনি আপনাদের সাহায্য করেননি। আমি বলছি না সেরকম কিছু হবে, কিন্তু যদি হয়, মনে রাখবেন, আপনারা ভোট দিয়ে তাকে শহর ছাড়া করেছেন মাত্র; সেক্ষেত্রে তাহলে তার সাহায্যর জন্য কোনো প্রার্থনা করবেন না, কারণ তিনি সেখানে নাও থাকতে পারেন (১৩)।

প্যাট রবার্টসন এই মন্তব্য নির্মল হাস্যরসের বিষয়বস্তু হতে পারতো, যদি না তিনি আজ যুক্তরাষ্ট্রে যারা ক্ষমতা আর প্রভাবের কেন্দ্রে অবস্থান করেন তাদের চেয়ে গুণগভাবে খানিকটা ভিন্ন কিছু হতেন।

সডোম আর গমোরাহ শহর দুটি ধ্বংসের সময়, ঈশ্বর নোয়ার সমতুল্য একজনকে তার পরিবারসহ বেছে নিয়েছিলেন সেই মহা ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা করার জন্য, কারণ সেখানে বসবাসকারীদের একমাত্র তিনি ছিলেন একজন সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি, তিনি আত্মীয়তার সূত্রে আব্রাহামের ভাইপো লট (১৪)। দুইজন পুরুষ ফেরেশতাকে সডোমে লটের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল তাকে আগেই সতর্ক করে দিতে, সে যেন দ্রুত তার পরিবারসহ শহর ছেড়ে চলে চায়, কারণ শহরের উপর ঈশ্বরের শাস্তি স্বরুপ আগুনের পাথর বা সেই বাইবেল কুখ্যাত ব্রিমস্টোন ( সালফার বা গন্ধক) নেমে আসছে। লট আতিথেয়তার সাথে ফেরেশতাদের তার বাসায়। স্বাগত জানান। খবর পেয়ে সডোমের অন্য পুরুষরা একসাথে জমায়েত হয় সেখানে, এবং তারা লটের কাছে দাবী করে, ফেরেশতা দুজনকে যেন তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়, যেন তারা তাদের পায়ু পথে ধর্ষণ করতে পারে (….আর কি?): “আজ রাতে আপনার বাসায় যে দুই জন ব্যক্তি এসেছে তারা কোথায়? আমাদের সামনে তাদের নিয়ে আসুন, যেন আমরা তাদের জানতে পারি (জেনেসিস ১৯:৫); ‘হ্যাঁ, এই ‘জানা’ শব্দটি বাইবেলের প্রামাণ্য স্বীকৃত সব সংস্করণে একটি প্রচলিত সুভাষণ আর যা এই প্রসঙ্গে খুবই হাস্যকর। শহরবাসীদের এমন দাবীকে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে লটের সাহসিকতা প্রথমে মনে হতে পারে, হয়তো ঈশ্বর ঠিকই লটের চরিত্রের মধ্যে আছে এমন কোনো একটি ব্যপার ধরতে পেরেছেন, যখন তিনি তাকে আলাদা করে বাছাই করেছিলেন সডোমের একমাত্র ভালো মানুষ হিসাবে, কিন্তু লটের এই ভালোত্ব কলঙ্কময় হয়ে যায় শহরবাসীদের সেই আবেদন অস্বীকার করার শর্তাবলী যখন তিনি উচ্চারণ করেছিলেন: “আমি আপনাদের কাছে প্রার্থনা করছি, আমার শহরবাসী ভাইগন, অশুভ কোনো আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন; এখন দেখুন, আমার দুটি কন্যা আছে যারা কোনো পুরুষকে কখনো জানেনি; আপনাদের কাছ মিনতি করছি, আপনাদের সামনে তাদের উপস্থিত করার জন্যে আমাকে অনুমতি দিন,আপনারা যা কিছু করতে চান তাদের সাথে করুন, এই দুই জনের সাথে কিছু করবেন না, কারণ তারা আমার ছাদের ছায়ার নীচে আশ্রয় নিয়েছে (জেনেসিস ১৯;৭-৮)।

এই আজব গল্পের যে অর্থই থাকুক না কেন, এটি নিঃসন্দেহে তীব্রভাবে ধর্মীয় সংস্কৃতিগুলোয় নারীদের প্রতি যে ধরনের সম্মান প্রদর্শন করা হয় সে সম্বন্ধে অবশ্যই আমাদের একটি ধারণা দেয়। এই গল্পটি আরো কিছুটা অগ্রসর হলে দেখা যায়, নিজের মেয়েদের কুমারীত্বকে বিলিয়ে দেবার লক্ষ্যে লটের এই প্রস্তাবের অবশ্য কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না, কারণ ফেরেশতারা সফল হয়েছিল উত্তেজিত আর আক্রমণ উদ্যত জনতাকে অতিপ্রাকৃত উপায়ে ঠেকিয়ে দিতে– শহরবাসী সেই সব পুরুষদের সব অন্ধ করে দেবার মাধ্যমে; তারপর তারা লটকে অনুরোধ করে সে যেন দ্রুত তার পরিবার ও তার পোষা প্রাণীদের নিয়ে এই মুহূর্তে শহর ছেড়ে চলে যান, কারণ পুরো শহরটা কিছুক্ষণের মধ্যে ধ্বংস হতে যাচ্ছে; লটের পুরো পরিবার পালাতে সক্ষম হয়, শুধুমাত্র লটের হতভাগ্য স্ত্রী ছাড়া, যাকে ঈশ্বর লবনের একটি স্তম্ভে রুপান্তরিত করেন কারণ তিনি একটি অপরাধ করেছিলেন– চিন্তা করলে দেখা যায়– যা তুলনামূলকভাবে খুবই সামান্য– শুধু পিছনের দিকে তাকিয়ে তিনি সডম এর ধ্বংশলীলা বা ঈশ্বরের ফায়ার ওয়ার্ক দেখেছিলেন।

লটের দুই কন্যা সংক্ষিপ্তভাবে আবার গল্পে ফিরে আসে। তাদের মা লবনের স্তম্ভে পরিণত হবার পর, তারা তাদের পিতার সাথে একটি গুহায় বসবাস করতো, পুরষসঙ্গ বঞ্চিত দুই বোন সিদ্ধান্ত নেয় তারা তাদের পিতাকে নেশাগ্রস্থ করে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হবে, লট মাতাল অবস্থায় লক্ষই করতে পারেননি যে তার বড় মেয়ে তার শয্যায় এসেছে বা কখন সে তার শয্যা ছেড়ে গেছে– কিন্তু স্পষ্টতই তিনি যথেষ্ট মাতাল ছিলেন না তার কন্যাকে অন্তস্বত্ত্বা করার জন্য, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এরপরের রাতে ছিল ছোট বোনের পালা, আবারো লট নাকি এমনই মাতাল যে লক্ষ করতে পারলেন না কি হয়েছে এবং তাকেও অন্তঃসত্ত্বা করে ফেললেন (জেনেসিস ১৯:৩১-৬); এই অদ্ভুত সমস্যাপূর্ণ পরিবার যদি সডমের সেরা পরিবার হয় ঈশ্বরের নৈতিকতার শিক্ষা দেবার জন্য, ঈশ্বর এবং তার বিচারের অস্ত্র ব্রিমস্টোন আর আগুনের পাথরের বৃষ্টি দিয়ে শহর পোড়ানোর শাস্তির ব্যপারে যে কেউই নির্দিষ্টভাবে খানিকটা সমবেদনা অনুভব করতে পারবেন।

লট এবং সডমবাসীদের গল্পটির বিস্ময়করভাবে ওল্ড টেষ্টামেন্ট এর ১৯ তম অধ্যায়, বুক অব জাজেস (১৫) এ খানিকটা ভিন্নভাবে পুনরাবৃত্তি ঘটে, যেখানে একজন নামহীন লেভাইট (বা যাজক) তার উপপত্নীকে নিয়ে গিবিয়াহতে ভ্রমণ করছিলেন, যাত্রার সময়। বিরতি হিসাবে তারা একজন সদয় অতিথিবৎসল বৃদ্ধের বাড়িতে একটি রাত কাটান; যখন তারা রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, শহরের পুরুষরা একসাথে জড়ো হয়ে সেই বাসার দরজায় কড়া নাড়ে, এবং তারা বদ্ধ গৃহস্বামীর কাছে দাবী জানান, তার পুরুষ অতিথিকে তাদের হাতে তুলে দেবার জন্য, যেন আমরা তাকে জানতে পারি। প্রায় হুবহু লটের সেই বাক্য ব্যবহার করে বৃদ্ধ গৃহকর্তা বলেন, “না, আমার ভাইরা, না, আপনাদের কাছে আমি প্রার্থনা করি, এতটা খারাপ আচরণ করবেন না, এই মানুষটা আমার বাসায় এসেছে দেখে এই আচরণ করবেন না, দেখুন আমার কন্যা একজন কুমারী এবং তার উপপত্নী এখানে আছে, তাদের আমি নিয়ে আসছি, তাদেরকে আপনারা আপনাদের অনুগত করে নেন ..তাদের সাথে যা খুশি করুন..যেটা করতে ভালো লাগে আপনাদের, কিন্তু এই মানুষটার সাথে কোনো খারাপ কিছু দয়া করে করবেন না (জাজেস ১৯:২৩-৪)। আবারো নারীবিদ্বেষী নৈতিকতার স্বরুপ দেখা গেল..সুস্পষ্টভাবে; বিশেষ করে এই বাক্যটা humble ye them বাক্যটি পড়লে আমি শিউরে উঠি; ‘আমার মেয়ে আর যাজকের উপপত্নীকে নিয়ে ইচ্ছামত অপমান আর ধর্ষণ করে আপনারা আনন্দ করুন, কিন্তু আমার অতিথির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদান করুন, কারণ আর যাই হোক তিনি পুরুষ মানুষ; দুটো গল্পের মধ্যে সদৃশ থাকা সত্ত্বেও এখানে ঘটনার প্লটটি লটের কন্যাদের ভাগ্যে ঘটা ঘটনার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম সুখকর হয়েছিল লেভাইট এর উপপত্নীর জন্য।

কাহিনীতে দেখা যায় যে লেভাইট তার উপপত্নীকে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেয়, যাকে সারারাত ধরে গণধর্ষণ করা হয় : ‘তারা তাকে ‘জানে’ এবং সকাল অবধি অত্যাচার করে, এবং যখন ভোরের আলো ফুটতে থাকে, তারা তাকে ছেড়ে দেয়। এরপর সেই নির্যাতিত রমনীটি খুব ভোরে সেই বৃদ্ধের ঘরের দরজার সামনে এসে শুয়ে পড়ে, যেখানে তার স্বামী অধিপতি অবস্থান করছেন।পুরোপুরি সকাল হবার আগে (জাজেস ১৯: ২৫-৬)। সকালে ঘুম থেকে উঠে লেভাইট তার উপপত্নীকে দরজার সামনে শুয়ে থাকতে দেখেন এবং বলেন .. যা কিনা আজ যে কোনো কারো কাছে মনে হতে পারে চরমতম অসংবেদনশীলতাপূর্ণ ‘ওঠো, আমাদের এখুনি বেরিয়ে পড়তে হবে, কিন্তু তার উপপত্নী অনড়, কারণ অত্যাচারের কারণে ইতিমধ্যে তার সেখানে মৃত্যু হয়েছে। সুতরাং লেভাইট একটি ধারালো ছুরি দিয়ে, তার উপপত্নীকে কেটে টুকরো টুকরো করে, তার হাড়সহ মোট ১২টি ভাগ করে টুকরোগুলো ইজরায়েলের বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরণ করে। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই পড়েছেন, জাজেস ১৯:২৯ দেখুন; খানিকটা করুণার সাথে এটিকে বাইবেলের সর্বব্যাপী উদ্ভট কিছু বিষয়ের একটি মনে করে নেই; এই গল্প সাথে এর আগেই উল্লেখিত লটের গল্পর সাথে এতই মিল যে মনে হতে পারে, ভুল করে মূল পাণ্ডুলিপির কিছু পাতা প্রাচীন কোনো স্ক্রিপটোরিয়াম বা পাণ্ডুলিপি অনুলিপি করার ঘরে ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল: পবিত্র গ্রন্থের বিষয়বস্তুর নানা খেয়ালীপূর্ণ উৎসের একটি উদাহরণ।

লটের চাচা আব্রাহাম (১৬) ছিলেন তিনটি প্রধান ও তথাকথিত ‘মহান’ একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রত্যেকটির মূল প্রতিষ্ঠাতা আদি পিতা। তার এই পৈতৃক অবস্থান তাকে ঈশ্বরের চেয়ে সামান্য খানিকটা নীচে অবস্থিত একটি অনুকরণীয় চরিত্র হিসাবে উপস্থাপন করেছে তার অনুসারীদের কাছে। কিন্তু আধুনিক যুগের কোনো নীতিবান মানুষ কি আসলেই তাকে অনুসরণ করার ইচ্ছা পোষণ করেন? তার সুদীর্ঘ জীবনের শুরুর দিকে, আব্রাহাম মিসরে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী সারাহকে নিয়ে দুর্ভিক্ষর ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে। কিন্তু তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এমন সুন্দরী একজন সহচরী রমনী নিশ্চয়ই মিশরীয়দের কাছে কাঙ্খিত হবে, সুতরাং তার স্বামী হিসাবে তার নিজের জীবনটাও সারাক্ষণ ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারে, সুতরাং তিনি তার স্ত্রীকে নিজের বোন হিসাবে পরিচয় দেন, আর সেই পরিচিতিতেই সারাহ ফারাওদের হারেম বা নারী মহলে সুরক্ষিত জায়গা দেয়া হয় এবং আব্রাহামও ফলাফলে ফারাওদের বিশেষ অনুগ্রহে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হন, ঈশ্বর নিজে অবশ্য আব্রাহামের এই সুবিধাবাদী ব্যবস্থা পছন্দ করেননি সুতরাং তিনি ফারাও এর প্রাসাদে মহামারী বা প্লেগ পাঠালেন (মজার বিষয় হচ্ছে আব্রাহামের উপর না কেন..? ), যথাযোগ্যকারণে ক্রুদ্ধ ফারাও আব্রাহামের কাছ জানতে চান কেন সে তাকে জানায়নি সারাহ তার স্ত্রী, এরপর তিনি সারাহকে আব্রাহামের কাছে ফিরিয়ে দেন এবং দুজনকে দেশ থেকে বের করে দেন (জেনেসিস ১২: ১৮-১৯); অদ্ভুতভাবে, এই দম্পতি আবারো সেই একই চালাকীর আশ্রয় নেবার চেষ্টা করে, এবার জেরার (১৭) এর রাজা আবিমেলেখ এর কাছে, আব্রাহামের প্ররোচনায় তিনিও সারাহকে বিয়ে করার চেষ্টা করেন, কারণ সারাহ তার বোন, স্ত্রী নয়, এমন একটি ধারণাই আব্রাহাম তাকেও দিয়েছিল (জেনেসিস ২০:২-৫); পুরো ব্যপারটা জানার পর তিনিও নিন্দা জানিয়েছেন ফারাও এর মত সেই ঠিকই একই শব্দাবলী ব্যবহার করে; উভয় ক্ষেত্রেই এই দুটি নৃপতির জন্য সমবেদনা অনুভব করাটাই স্বাভাবিক; এই সদৃশ্যতা কি বাইবেলের তথ্যগত বিচ্যুতির আরেকটি ইঙ্গিত?

আব্রাহামের গল্পের এই সব অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো খুব মামুলী অপরাধ মনে হবে যদি তার পুত্র আইজাককে (১৮) বিসর্জন দেবার সেই কুখ্যাত কাহিনীর সাথে তুলনা করা হয় (মসুলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে আব্রাহামের অন্য পুত্র ইসমায়েলকে নিয়ে একই ঘটনার বিবরণ আছে); ঈশ্বর আব্রাহামকে একটি চূড়ান্ত আত্মত্যাগের পরীক্ষা হিসাবে তাকে তার বহুঁকাঙ্খিত পুত্রকে তার প্রতি উৎসর্গ বা বিসর্জন করার নির্দেশ দেন, আব্রাহাম ঈশ্বরের নির্দেশ মোতাবেক বিসর্জনের বেদী তৈরী করেন, তার উপর জ্বালানী কাঠ সাজিয়ে আইজাককে শুইয়ে দেন; বিসর্জন দেবার জন্য প্রস্তুত ছুরি হাতে যখন তিনি আইজাককে জবাই করতে যাচ্ছেন ঠিক তখনই নাটকীয়ভাবে একজন ফেরেশতা সেখানে আবির্ভূত হন, এবং জানান যে শেষ মুহূর্তে ঈশ্বরের পরিকল্পনার কিছু পরিবর্তন হয়েছে, সুতরাং আপাতত এই বিসর্জন পর্ব স্থগিত। ঈশ্বর কি তাহলে আসলেই ঠাট্টা করছিলেন, আব্রাহামকে প্ররোচণা দিচ্ছিলেন তার বিশ্বাস কতটা মজবুত তা পরীক্ষা করার জন্য? একজন আধুনিক নৈতিকতাবাদী কেউ বিষয়টি না ভেবে পারেন না যে, কোনোদিনও কি এই শিশুটি এধরনের মনস্তাত্ত্বিক আঘাত থেকে নিজেকে নিরাময় করতে পারবে। আধুনিক নৈতিকতার মানদণ্ড অনুযায়ী, এই ন্যাক্কারজনক গল্পে একই সাথে শিশু নির্যাতন এবং দুটি অসম শক্তির সম্পর্কের একপক্ষের বিশেষ অন্যায় জোর খাটানো বা বুলি করা সুস্পষ্ট উদাহরণ আছে এবং এখানে প্রথম বারের মত লিপিবদ্ধ হয়েছে নুরেমবার্গ ডিফেন্স (১৯) ব্যবহারের উদাহরণ…’আমি শুধু উপরের নির্দেশ অনুসরণ করেছি মাত্র; তারপরও এই কিংবদন্তীর কাহিনীটি তিনটি একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রত্যেকটির প্রতিষ্ঠা সংশ্লিষ্ট মিথের ভিত্তি রচনা করেছে।

আবারো আধুনিক ধর্মতত্ত্ববিদরা প্রতিবাদ করবেন এই বলে যে, আব্রাহামের আইজাককে প্রায় বিসর্জন দেবার কাহিনীটি আক্ষরিকভাবে নেয়া উচিৎ হবে না।এবং আবারো এর উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দুইটি, প্রথমত, এমনকি আজ অবধি বহু মানুষ পুরো ধর্মগ্রন্থ আক্ষরিকভাবে সত্য বলে মনে করেন এবং তাদের যথেষ্ট পরিমান রাজনৈতিক শক্তি আছে আমাদের বাকী সকলে উপর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইসলামী বিশ্বে। দ্বিতীয়ত, যদি আক্ষরিক সত্য হিসাবে গ্রহন না করি, তাহলে এই গল্পগুলো আমাদের কিভাবে নেয়া উচিৎ, রুপকার্থে? তাহলে কিসের রুপকার্থে? নিশ্চয়ই প্রশংসা যোগ্য কিছু নয়। নৈতিক শিক্ষা হিসাবে? এই ধরনের ভয়ঙ্কর গল্প থেকে কোনো ধরনের নীতিবোধ এর শিক্ষা আমরা গ্রহন করতে পারি? পাঠকরা মনে রাখবেন, আমি মুহূর্তে যা চেষ্টা করছি তা হচ্ছে, আমরা আসলে আমাদের নীতিবোধ ধর্মগ্রন্থ থেকে গ্রহন করি না। অথবা যদি আমরা তা করি, আমরা ধর্মগ্রন্থ যাচাই বাছাই করে ভালো অংশগুলো খুঁজে বের করি আর খারাপ নোংরা অংশগুলো বর্জন করি, কিন্তু তারপর আমাদের অবশ্যই কোনো না কোনো স্বাধীন কিছু বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলীর মানদণ্ড থাকা উচিৎ কোনোটি নৈতিক অংশ সেটি নির্ধারন করার জন্য, যে মানদণ্ডটি আর যেখান থেকে তা আসুক না কেন, ধর্মগ্রন্থ থেকে আসবে না, এবং অবশ্যই যা আমাদের সবার কাছে স্পষ্টতই উন্মুক্ত গ্রহনযোগ্য হবে, আমরা ধর্ম মানি বা না মানি।

ধর্মীয় অ্যাপোলজিষ্ট বা সমর্থনকারীরা এমন কি এই নিন্দনীয়। কাহিনীতে ঈশ্বর চরিত্রটির খানিকটা শ্লীলতা রক্ষা করার চেষ্টা করে থাকেন,তারা বলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আইজাকের জীবন বাঁচিয়ে ঈশ্বর কি ভালো করেননি? এধরনের বিশেষ অশ্লীল অনুরোধের দ্বারা আমার কোনো পাঠক প্ররোচিত হতে পারেন এমন কোনো অসম্ভাব্য পরিস্থিতিতে আমি তাদের ওল্ড টেষ্টামেন্ট এ আরেকটি মানব বিসর্জনের কাহিনী সম্বন্ধে অবহিত করতে চাই, যার পরিণতি আদৌ এরকম কোনো সুখকর ছিল না। জাজেস এ অধ্যায় ১১, সামরিক নেতা জেফথাহ ঈশ্বরের সাথে একটি চুক্তি করেন, যদি ঈশ্বর অ্যামোনাইটদের(২০) বিরুদ্ধে তাকে জয়যুক্ত করে, তাহলে জেফতাহ, অবশ্যই একটি চূড়ান্ত বিসর্জন দেবেন তার উদ্দেশ্যে….’আমি যখন ফিরবো, আমার ঘরের দরজা দিয়ে প্রথম যে বেরিয়ে আসবে আমার সাথে দেখা করতে..’; যথারীতি জেফতাহ সত্যি সত্যি অ্যামোনাইটদের পরাজিত তরে। অসংখ্য হত্যার পর, বুক অব জাজের অন্য ঘটনার সাথে সমতুল্য হারে) এবং বিজয়ীর বেশে ঘরে ফেরেন, এবং আদৌ বিস্ময়কর না, তার কন্যা, একমাত্র সন্তান প্রথম বাড়ির বাইরে এসে তাকে স্বাগত জানায় (বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এবং নেচে); এবং হায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে .. সেই প্রথম দেখা করতে আসা জীবিত প্রাণী, তারই নিজেরই প্রিয় সন্তান– বোধগম্য কারণে তীব্র দুঃখ আর হতাশায় জেফতাহ তার কাপড় ছিঁড়েছে, কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না; ঈশ্বর নিশ্চয়ই অধীর আগ্রহে ছিলেন তাকে প্রতিজ্ঞা করা বিসর্জনের এই উপঢৌকনের, এবং এই পরিস্থিতিতে তার কন্যা কোনো প্রতিবাদ না করেই পিতার প্রতিজ্ঞা পূরণে আত্মবিসর্জনে রাজী হয়, তার একটাই দাবী ছিল তাকে যেন দুই মাসের জন্য পাহাড়ে যেতে দেয়া হয়, যেন সে তার কুমারীত্বের জন্য শোক করতে পারে, দুই মাস পরে সে যথারীতি ফিরে আসেন, এবং তার বাবা ঈশ্বরকে দেয়া তার প্রতিজ্ঞামত আগুনে পুড়িয়ে বিসর্জন দেন; এখানে কিন্তু ঈশ্বর আদৌ সঙ্গত মনে করেননি কোনো হস্তক্ষেপ করার জন্য।

যখনই তার বাছাইকৃত জনগোষ্ঠী প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো ঈশ্বর বা। দেবদেবীদের নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করে, ঈশ্বরের অতি তীব্রতম ক্রোধ যৌন ঈর্ষার সবচেয়ে কুৎসিততম রুপের সদৃশ মনে হতে পারে। এবং আবারো আধুনিক কোনো নৈতিকতাবাদীর কাছে সেটা কোনো রুপে অনুকরণযোগ্য আচরণ বা রোল মডেলের রুপ পারেনা; যৌন অবিশ্বস্ততার প্রলোভন খুব সহজে বোঝা সম্ভব; এমনকি যারা এ ধরনের প্রলোভনে আক্রান্ত নাও হয়ে থাকেন, তাদের পক্ষেও এটা বোঝা সম্ভব এবং নানা কাহিনী এবং নাটকেরও এটি মূল বিষয় শেক্সপিয়ার (২১) থেকে শুরু করে শয়নকক্ষের প্রহসনেও। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে ভীনদেশী কোনো দেবদেবীর নিবেদনে বেশ্যাবৃত্তি করার অপ্রতিরোধ্য প্রলোভন কখনো কখনো আমাদের আধুনিক মনে কোনো সহমর্মিতার জায়গা করে নেয় না। আমার অবুঝ চোখে ‘আমাকে ছাড়া তোমরা আর কোনো ঈশ্বরের উপাসনা করবে না, মনে হতে পারে পালন করার জন্য খুব সহজ একটা নির্দেশ: ছেলে খেলা মাত্র, যে কেউ তা ভাবতে পারেন, যদি এটি তুলনা করা হয় অন্য কোনো আদেশগুলোর সাথে, যেমন, তোমরা কেউই প্রতিবেশীর স্ত্রীকে বা তার গাধা বা গবাদী পশুকে কামনা করবে না; তারপরও ওল্ড টেষ্টামেন্টে সেই একই নিশ্চয়তার সাথে নিয়মিত ভাবে ঘটতে দেখি আমরা যেমনটা শয়নকক্ষের প্রহসনের ক্ষেত্রে হয়; ঈশ্বর শুধু কয়েক মুহূর্তের জন্য অন্য দিকে তাকালেই হলো এবং ইজরায়েল এর সন্তানেরা সব ভুলে বাল কিংবা অন্য কোনো মুর্তি পূজায় লিপ্ত হয়। (২২) বা একটি ভয়াবহ ঘটনায় যেমন সোনার তৈরী বাছুর।

মোজেস (২৩), যিনি আব্রাহামের চেয়ে আরো বেশী গ্রহনযোগ্য রোল মডেল তিনটি একেশ্বরবাদী ধর্মের অনুসারীদের কাছে; আব্রাহাম হতে পারেন আদি পিতা, যদি কাউকে চিহ্নিত করা হয়। জুডাইজম বা ইহুদীবাদ ও এর থেকে উদ্ভূত ধর্মগুলোর মূল মতবাদের প্রবক্তা হিসাবে, তবে নিশ্চয়ই তিনি নিশ্চয়ই মোজেস; সোনালী বাছুরের সেই ঘটনাটির সময়, মোজেস বেশ নিরাপদ দূরত্বে মাউন্ট সাইনাই এর উপরে ছিলেন, ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ এবং তার আদেশ সম্বলিত খোদাইকরা পাথরের ট্যাবলেটগুলো সংগ্রহ করছিলেন। পাহাড়ের নীচে (যাদের সেই পাহাড় স্পর্শ করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল, তার শাস্তি ছিল যন্ত্রণাময় মৃত্যু) তার অনুসারীরা কোনো সময় নষ্ট করেননি।

যখন তারা দেখলে পাহাড় থেকে নীচে নেমে আসতে মোজেসের বিলম্ব হচ্ছে, তারা সবাই মোজেসের ভাই অ্যারনের কাছে এসে তাকে বলেন, তাড়াতাড়ি, আমাদের কোনো দেব-দেবীর মূর্তি বানিয়ে দাও, যা আমরা অনুসরণ করতে পারবো, আর এই মোজেস এর ব্যপারে, যে মানুষটা আমাদের মিসর থেকে আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে, আমরা জানিনা তার কি পরিণতি হয়েছে। এক্সসোডাস ৩২:১)।

অ্যারন সবার কাছ থেকে সোনা সংগ্রহ করে, তা গলিয়ে একটি সোনার বাছুর বানিয়ে দেয়, যার জন্য তিনি একটি উপাসনার বেদী তৈরী করেন, যেখানে সবাই তাদের পূজা এবং বিসর্জনের উপঢৌকন রাখা শুরু করে।

বেশ, তাদের ভালো করেই জানার কথা ছিল, ঈশ্বরের আদের অমান্য করে তার পেছনে এধরনের কাজ করা তাদের উচিৎ হচ্ছে না, তিনি হয়তো পাহাড়ের উপর থাকতে পারেন চোখের আড়ালে, কিন্তু সর্বোপরি তিনি তো সর্বজ্ঞ আর অন্তর্যামী এবং দেরী করলেন না তিনি, তার দূত মোজেসকে দ্রুত সেখানে প্রেরণ করেন তার আজ্ঞা পালন করতে, মোজেস দ্রুত বেগে পর্বত থেকে নীচে নেমে আসেন পাথরের ট্যাবলেটগুলো নিয়ে, যার উপর ঈশ্বর তার দশটি নির্দেশ বা টেন কম্যান্ডমেন্টস খোদাই করে দিয়েছিলেন। পাহাড়ের নীচে পৌঁছে যখন মোজেস দেখলেন, তার অনুসারীরা সোনালী বাছুর পূজা করছে, তিনি এত রেগে গেলেন যে সব ট্যাবলেট মাটিতে ফেলে দিয়ে ভেঙ্গে ফেললেন (ঈশ্বর অবশ্য তাকে আরেক সেট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন পরে), এরপর সোনালী বাছুরটিকে পুড়িয়ে, সেটিকে ভালো করে পিষে পাউডারের মত করে পানিতে মিশিয়ে তিনি সবাই বাধ্য করলেন গিলে খেতে, তারপর তিনি একটি যাজক গোত্র লিভাইটদের বললেন তলোয়ার হাতে নিয়ে যে কয়জনকে হত্যা করা যায়, তাদের হত্যা করতে, যার ফলাফলে প্রায় ৩০০০ জনের মৃত্যু হলো; যা, অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন ঈশ্বরের অন্য দেবতাদের প্রতি উগ্র ঈর্ষাকে শান্ত করার জন্য যথেষ্ট পরিমান একটি সংখ্যা, কিন্তু না, ঈশ্বরের ক্রোধ শেষ হয়নি তখনও; এই ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের শেষ অনুচ্ছেদে তার শেষ আঘাত দেখা যায়, যে কয়জন বেঁচে ছিলেন তাদের উপর কঠিন অসুখ ছড়িয়ে দেয়া কারণ তারা বাছুরকে দেবতা বানিয়েছে যা অ্যারন তাদের বানিয়ে দিয়েছিল।

বুক অব নাম্বারস (২৪) বলছে কিভাবে ঈশ্বর মোজেসকে উস্কে দেন মিডিয়ানাইটদের (২৫) আক্রমণ করতে; তার সৈন্যরা খুব সহজে মিডিয়ানাইটদের সব পুরুষদের হত্যা করে এবং তাদের সকল শহর পুড়িয়ে দেয় কিন্তু তারা নারী ও শিশুদের তখনও হত্যা করেনি, তার সৈন্যদের এই দয়াশীল আচরণ মোজেসকে ক্ষুদ্ধ করে তোলে এবং তিনি আদেশ দেন সব ছেলে শিশুকে সব নারীকেও যারা কুমারী নয় হত্যা করতে হবে, কিন্তু সব নারী ও মেয়ে শিশু যারা এখন কোনো পুরুষের শয্যাসঙ্গী হয়নি তাদের বাঁচিয়ে রাখো তোমাদের ভোগের জন্য (নাম্বারস ৩১:১৮); নাহ, আধুনিক কোনো নৈতিকতাবাদীর কাছে মোজেস আদর্শ অনুকরণীয় কোনো চরিত্র হতে পারেনা।

আধুনিক ধর্মীয় লেখকরা যা আপাতত মিডিয়ানাইটদের গণহত্যার ব্যপারে কোনো ধরনের রুপক অর্থ যুক্ত করেছেন, সেই রুপক অর্থটি সংযুক্ত হয়েছে ভিন্ন দিক বরাবর; দুর্ভাগা মিডিয়ানাইটরা, বাইবেল এর কাহিনী অনুযায়ী যতটুকু বলা যায়, নিজের দেশেই গণহত্যার শিকার; তারপরও তাদের নাম খ্রিষ্টীয় রুপকথায় টিকে আছে একটি জনপ্রিয় হিম বা স্তব সঙ্গীতে ( যা আমি এখনও গাইতে পারবো আমার স্মৃতি থেকে প্রায় ৫০ বছর পরে, দুটি ভিন্ন সুরে যা প্রত্যেকে নীচের স্কেলে বেশ গম্ভীর) (২৬);

Christian, dost thou see them
 On the holy ground?
How the troops of Midian
 Prowl and prowl around?
Christian, up and smite them,
Counting gain but loss;
smite them by the merit Of the holy cross.

হায়, হতভাগা অকারণে মিথ্যাভাবে কলঙ্ককৃত, হত্যাকৃত মিডিয়ানাইটদের শুধুমাত্র স্মরণ করা হবে ভিক্টোরিয়া যুগের একটি স্তবসঙ্গীতে কাব্যিক রুপক হিসাবে।

প্রতিদ্বন্দ্বী দেবতা বাল (২৭) সম্ভবত ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় এধরনের ‘বিকল্প’ ঈশ্বর বিরোধী উপাসনার জন্য; নাম্বারস এ অধ্যায় ২৫ বলছে, বহু ইসরায়েলাইটদের (২৮) মোয়াবাইট (২৯) রমনীরা প্রলুব্ধ করেছিল তাদের দেবতা বাল এর প্রতি বিসর্জন দেবার জন্য; এই ঘটনায় ঈশ্বর তার স্বভাবসুলভ ক্রোধ প্রদর্শন করার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি মোজেসকে নির্দেশ দেন, এই সব মানুষেদের মস্তক কর্তন করে তাদের ঈশ্বরের সম্মুখে সুর্যের মুখোমুখি ঝুলিয়ে রাখো, যেন ঈশ্বরের ভয়ঙ্কর ক্রোধ ইসরায়েলকে স্পর্শ না করে; আবারো বিস্মিত না হবার কোনো কারণ নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো দেবতাকে পূজা করার পাপের ব্যপারে ঈশ্বর কেন এই ধরনের অস্বাভাবিক কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন; মূল্যবোধ আর ন্যায় বিচার সংক্রান্ত আমাদের আধুনিক বোধে মনে হতে খুব সামান্য একটি পাপ, নিজের কন্যাদের গণধর্ষণের জন্য নিবেদন করার সাথে যদি তুলনা করা হয়। এটি আরো একটি উদাহরণ ধর্মীয় গ্রন্থের আর আধুনিক (যদি কেউ নিজেকে সভ্য বলে দাবী করেন) নৈতিকতার মধ্যকার বিশাল পার্থক্যগুলোর।অবশ্যই এটি যথেষ্ট সহজে বোঝা সম্ভব মিম থিওরীর আলোকে এবং কোনো ঐশ্বরিক সত্তার কি প্রকৃতির হতে হবে মিম পুলে টিকে থাকার জন্য।

বিকল্প দেবতাদের প্রতি ঈশ্বরের উন্মত্ত তীব্র প্রতিহিংসা পরায়ন হিংসার ট্র্যাজিক প্রহসনের বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে ওল্ড টেষ্টামেন্টে; টেন কম্যাণ্ডমেন্ট বা ঈশ্বরের দশ নির্দেশিকার প্রথম নির্দেশটির প্রেরণা (যা পাথরের উপর খোদাই করা ছিল, এবং মমাজেস যা ভেঙ্গে ফেলেছিলেন, এক্সোডাস ২০, ডিউটেরোনমি ৫), এবং এটি আরো বেশী স্পষ্ট অন্য নির্দেশগুলোতে ( আপাতদৃষ্টে যদিও ভিন্ন), প্রতিস্থাপিত যে পাথরে নির্দেশগুলো যা ঈশ্বর মোজেসকে দিয়েছিলেন ভেঙ্গে যাওয়া পাথরের ট্যাবলেটগুলোর বদলে (এক্সোডাস ৩৪); তাদের জন্মভুমি থেকে হতভাগা আমোরাইটস (৩০), কানানাইট (৩১), হিটাইট (৩২), পেরিজজাইট (৩৩), হিভাইট (৩৪)এবং জেবুসাইট (৩৫) দের উৎখাত করার প্রতিজ্ঞা করার পর ঈশ্বর মূল বিষয়টাতে আসেন, যা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ: প্রতিদ্বন্দ্বী দেবতারা…

তোমরা তাদের পূজার বেদী ধ্বংস করবে, তাদের উপাসিত দেবতাদের সব মুর্তি আর প্রতিকৃতি ভাঙ্গবে, তাদের বপন করা বাগান উৎপাটন করবে; কারণ তোমরা আর কোনো ঈশ্বরকে পূজা করবে নাঃ কারণ মহান ঈশ্বর, যার নাম হচ্ছে ঈর্ষা, তিনি ঈর্ষান্বিত একজন ঈশ্বর। যদি তোমরা স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে চুক্তিতে আসো, এবং তারা তাদের দেবতাদের বেশ্যাবৃত্তি করে এবং অন্য দেবতাদের জন্য উৎসর্গ করে এবং তোমাদের আহবান করে, তোমরা তাদের বিসর্জন ভক্ষন করো এবং তোমরা তাদের কন্যাদের তোমার পুত্রদের সাথে বিবাহ দাও, এবং তাদের কন্যারা তাদের দেবতার বেশ্যাবৃত্তি অব্যাহত রাখে এবং তোমাদের পুত্রদেরও সেই দেবতারই বেশ্যাবৃত্তি করাবে, তোমরা তোমাদের জন্য কোনো গলিত ধাতুর দেবতা সৃষ্টি করবে না ( এক্সোডাস ৩৪:১৪-১৭)।

আমি জানি, হ্যাঁ অবশ্যই সময় বদলেছে আজকের দিনে কোনো ধর্মীয় নেতা (তালিবান বা তাদের সমতুল্য যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিষ্টানরা ছাড়া) মোজেসের মত করে চিন্তা করেন না; আর সেটাই আমারও মূল বক্তব্য, আমি যেটা প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করছি যে, আধুনিক নৈতিকতা যেখান থেকেই আসুক না কেন, বাইবেল থেকে সেটা আসেনি; ধর্মীয় তোষণবাদীদের দাবী যে ধর্ম তাদের অন্তর্গত একটি ধারণা দিয়েছে ভালো আর মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য,…যে বিশেষ সুবিধাজনক উৎসের প্রতি নিরীশ্বরবাদীদের কোনো দাবী নেই, বলে নিস্তার পেতে পারেন না, এমনকি যদি যখন তারা তাদের পছন্দের ছলাকলাও ব্যবহার করেন নির্দিষ্ট নির্বাচিত ধর্মগ্রন্থ আক্ষরিক না বলে রুপকার্থে ব্যাখ্যা করার জন্য; কিন্তু কি মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোন অংশটি প্রতীকী আর কোনটি আক্ষরিক?

যে জাতিগত বিশোধন শুরু হয়েছিল মোজেস এর সময় থেকে তা রক্তাক্ত পরিনতির দিকে পৌঁছায় বুক অব জোশুয়ায় (৩৬), যে বইটি বিখ্যাত রক্তপিপাসু গণহত্যার লিপিবদ্ধ ইতিহাস এবং বর্ণবাদী জাতিগত ঘৃণার জোশে পরিপূর্ণ যা এই সব রক্তাক্ত গণহত্যার কারণ; যেমন একটি পুরোনো গান প্রশংসার সাথে যার আভাস দিয়েছে; ‘জশুয়া জেরিকোর যুদ্ধে জয় হয় এবং সব দেয়াল ধ্বংস হয়, সেই পুরোনো জশুয়ার মত আর কেউ নেই, জেরিকোর যুদ্ধে; প্রাচীন মহৎ জশুয়া বিশ্রাম নেননি যতক্ষণ না পর্যন্ত তার সৈন্যরা শহরে যা আছে তা পুরোপুরি ধ্বংস না করেছে, পুরুষ নারী উভয়ে বৃদ্ধ এবং শিশু, ষাড় এবং ভেড়া এবং গাধা তলোয়ারের ধারালো প্রান্ত দিয়ে (জশুয়া ৬:২১)।

আবারো ধর্মতত্ত্ববিদরা প্রতিবাদ করবেন, এমন কিছু ঘটেনি, বেশ কোনো গল্পই বলে না, দেয়াল ভেঙ্গে পড়েছে শুধু মানুষের চিত্তার আর শিঙ্গার আওয়াজে, সুতরাং আসলেই এটা ঘটেনি কিন্তু সেটা বিষয় না, বিষয়টি হলো সত্য হোক বা না হোক, বাইবেল এটিকে আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে আমাদের নৈতিকতার উৎস হিসাবে এবং বাইবেলে জশুয়ার জেরিকোর ধ্বংসের কাহিনী এবং প্রতিশ্রুত ভূমিতে আগ্রাসনের সাথে সাধারণভাবে নৈতিকভাবে হিটলারের পোল্যাণ্ড আগ্রাসনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বা সাদ্দাম হোসেন এর কুর্দ (৩৭) এবং মার্শ (৩৮) আরবদের গণহত্যার সাথে; বাইবেল হতে পারে আকর্ষণীয় এবং কাব্যিক কাহিনীর কোনো নমুনা, তবে কখনোই এই বই আপনি আপনার সন্তানদের হাত তুলে দেবেন না নৈতিকতার শিক্ষা নেবার জন্য; ঘটনাচক্রে কিন্তু জশুয়ার জেরিকো অভিযান শিশু নৈতিকতার বিষয়ে একটি মজার পরীক্ষা হতে পারে, যে বিষয়টি এই অধ্যায়ের পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনায় আসবে।

যাই হোক, আপনি কি মনে করেন,এই গল্পে ঈশ্বর চরিত্রটির মধ্যে প্রতিশ্রুত ভূমি অধিকারের জন্য যেকোনো হত্যা কিংবা গণহত্যার আবশ্যিকতা যে অনৈতিক না তার সম্বন্ধে সামান্যতম সন্দেহ বা দ্বন্দ্ব পোষণ করেন? বরং এর বিপরীত, তার নির্দেশগুলো যেমন ডিউটেরোনোমী ২০ এ নিষ্ঠুরভাবে স্পষ্ট; তিনি সুস্পষ্টভাবে বিভাজন করেছেন, যে মানুষগুলো সেই দেশে বসবাস করে যা তার প্রয়োজন এবং সেই মানুষগুলো যারা সেই দেশ থেকে বহু দূরে বসবাস করে; প্রথমে তার প্রয়োজনের ভূমিতে বসবাসকারীদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে আত্মসমর্পণের, তারা যদি অস্বীকার করে, সব পুরুষদের তাহলে হত্যা করতে হবে এবং তাদের নারীদের বন্দী করা হবে প্রজননের কাজে ব্যবহার করার জন্যে এই আপেক্ষিক মানবিক আচরণের বিপরীত দেখুন কি ভাগ্যে আছে সেই সব হতভাগ্য গোত্রদের যারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই প্রতিশ্রুত ‘লেবেনসরম’ (৩৯) এ এত দিন বসবাস করে আসছিল: ‘কিন্তু সেই সব গোত্রের মানুষদের শহরগুলো, যা তোমাদের প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রদান করেছে, তোমরা এমন কিছুই বাঁচিয়ে রাখবে যা কিছু শ্বাস নেয়, তোমরা অবশ্যই তাদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করবে, যেমন হিটাইট আর অ্যামোরাইট, ক্যানানাইট এবং পেরিজজাইট, হিভাইট এবং জেবুসাইটদের, যেমন তোমাদের প্রভু তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।

যে মানুষগুলো বাইবেল হাতে নিয়ে দাবী করে যে তাদের নৈতিক দৃঢ়তার অনুপ্রেরণা হচ্ছে সেই বই, তাদের কি সামান্যতম ধারণা আছে আসলে কি লেখা আছে সেখানে?’ লেভিটিকাস ২০ মোতাবেক নিম্নলিখিত অপরাধের শাস্তি মৃত্যদণ্ড হবার দাবী রাখে: পিতামাতাকে গালি দেয়া,ব্যভিচার করা, সৎমা এবং পুত্রবধুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া, সমকামিতা, কোনো নারী এবং তার কন্যাকে একই সাথে বিবাহ করা, পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া (এবং এখানে আবার সেই দুর্ভাগা পশুটিকে মেরে ফেলতে হবে); এছাড়াও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে, সাবাথ বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করলে: এই বিষয়টি বার বার উল্লেখ করা হয়েছে ওল্ড টেষ্টামেন্ট এর জুড়ে। নাম্বারস ১৫ তে, ইসরায়েল এর শিশুরা যখন জঙ্গলের মধ্যে একটি মানুষকে দেখতে পায় কাঠ কুড়াচ্ছে সেই কাজ করার জন্য নিষিদ্ধ দিনে, তারা তাকে আটক করে, তারপর ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করে কি করা যেতে তার শাস্তি হিসাবে; স্পষ্টতই ঈশ্বর সেদিন কোনো কাজ হালকা ভাবে করার মেজাজে ছিলেন না; এবং প্রভু মোজেসকে বললেন, নিশ্চয়ই মানুষটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যেতে পারে; উপস্থিত সবাই তাকে পাথর ছুঁড়ে আঘাত করবে নির্বিচারে এবং সবাই তাকে খোলা জায়গায় নিয়ে এসে পাথরের ছুঁড়ে মারতে লাগলো এবং সে মারা যায়; এই নিরীহ কাঠ কুড়ানো মানুষটার কি কোনো স্ত্রী বা সন্তান ছিল, যারা তার জন্য শোক করবে? সে কি ভয়ে কুঁকড়ে উঠেছিল যখন প্রথম পাথরটি সে উড়ে আসতে দেখেছিল বা যন্ত্রণায় চিৎকার করেছিল যখন পাথরগুলো তার গায়ে এসে আঘাত করতে থাকে? আমাকে আজ যে বিষয়টি হতবাক করে এধরনের গল্পগুলোয় সেটি কিন্তু ঘটনাটি আদৌ ঘটেছিল কিনা তা নয়, হয়তো তা ঘটেনি, আমাকে যেটা বিস্মিত করে তাহলে আজকের যুগে মানুষ তাদের জীবন ভিত্তি হিসাবে বেছে নিয়েছে এধরনের ভয়ঙ্কর একজন রোল মডেল ইয়াহয়েকে– এবং আরো জঘন্য, তারা গায়ের জোরে সেই একটি অশুভ বর্বর দৈত্যটাকে (সত্য হোক বা কাহিনী হোক) আমাদের বাকী সবার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেন কম্যাণ্ডমেন্ট ট্যাবলেট ধারকদের রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতার প্রাবল্য আসলেই হতাশাজনক বিশেষ করে যে দেশে মহান প্রজাতন্ত্রের সংবিধান লিখেছিলেন প্রগতিশীল জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত মানুষরা সুস্পষ্টভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শে। আমরা যদি টেন কম্যাণ্ডমেন্টস গুরুত্বের সাথে নিতাম, তাহলে আমরা ভুল ঈশ্বরদের উপাসনা করা এবং তেমন কোনো উপসনার জন্য ছবি বা মুর্তি বানানোটাকে সব পাপের মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় পাপের পর্যায়ে বিবেচনা করতে হলো; আফগানিস্থানের পর্বতে ১৫০ ফুট উঁচু বামিয়ানের বুদ্ধমুর্তি (৪০) ডায়নামাইট দিয়ে ধ্বংস করার তালিবানদের জঘন্য, অকথ্য বর্বরতাকে ধিক্কার জানাবার বদলে আমাদের তাদের সত্যিকারের ন্যায় আর ধর্মপ্রেমকে প্রশংসাই করতাম। আমরা তাদের এই ধ্বংসলীলাকে ভাবতাম আন্তরিক ধর্মীয় উদ্দীপনার চিহ্ন হিসাবে; এ বিষয়টিকে উজ্জ্বলভাবে সত্যায়িত করেছে একটি খুব অদ্ভুত সত্য কাহিনী, যা ২০০৫ সালের আগষ্ট মাসে লন্ডনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার শীর্ষ সংবাদ, প্রথম পৃষ্ঠার The destruction of Mecca শিরোনামের নীচে পত্রিকাটি রিপোর্ট করে:

ঐতিহাসিক মক্কা, ইসলাম ধর্মের সূতিকাগার, ধর্মীয় অতিউৎসাহীদের অপ্রত্যাশিত আক্রমণে এই পবিত্র শহরের সমৃদ্ধ ও বহুস্তর বিশিষ্ট ইতিহাসের প্রায় সবটাই বিনষ্ট হয়েছে… এবং নবী মোহাম্মদের সত্যিকারের জন্মস্থান এখন বুলডোজারের সামনে, সৌদী ধর্মীয়। কর্তৃপক্ষদের যোগসংযোগে, যাদের ইসলামের কঠোরপন্থী ব্যাখ্যা তাদেরকে বাধ্য করেছে নিজেদের ঐতিহ্যকে মুছে ফেলতে, এই ধ্বংসলীলার প্রেরণা হচ্ছে ওয়াহাবীবাদীদের উগ্র গোঁড়া ভয় যে, এ ধরনের নানা ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো মূর্তিপূজা বা বহুঈশ্বরবাদের জন্ম দিতে পারে, যেখানে বহু এবং সম্ভাব্য সমক্ষমতা সম্পন্ন দেবতাদের পূজা করা হবে; সৌদি আরবে মূর্তিপুজার শাস্তি এখনও নীতিগতভাবে শিরোচ্ছেদ।

আমি বিশ্বাস করিনা, এমন কোনো নিরীশ্বরবাদী আছেন এই পৃথিবীতে, যিনি মক্কা বা শাত্রের ক্যাথিড্রাল (৪১),ইয়র্ক মিনিষ্টার (৪২) বা নতর দাম (৪৩) বা শেউই ড্রাগন, কিয়োটোর মন্দির (৪৪) এবং অবশ্যই বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করতে চাইবেন; যেমনটি যুক্তরাষ্টের নোবেল জয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়াইনবার্গ বলেছিলেন, “মানুষের সম্মানের উপর ধর্ম হচ্ছে একটি অপমান, এটি সহ বা ছাড়া, আপনি দেখবেন ভালো মানুষরা ভালো কাজই করছে এবং খারাপ মানুষ খারাপ কাজ করছে কিন্তু কোনো ভালো মানুষকে দিয়ে যদি খারাপ কাজ করাতে চান তাহলে আপনার প্রয়োজন শুধু ধর্ম। ব্লেইজ পাসকাল ( যিনি বিখ্যাত ঈশ্বর বিশ্বাস সংক্রান্ত বাজী রেখেছিলেন) একই রকম মন্তব্য করেছিলেন, ‘ধর্মীয় বিশ্বাসে বশবর্তী হয়ে করা ছাড়া মানুষ কখনোই চূড়ান্তভাবে কোনো খারাপ কাজ এত আনন্দের সাথে করে না।

এখানে আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সেটা দেখানো না যে ধর্মগ্রন্থ থেকে আমাদের নৈতিকতা শিক্ষা নেয়া উচিৎ না (যদিও সেটা আমার মতামত); আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেখানো যে আমরা (এবং এর মধ্যে বেশীর ভাগ ধর্মীয় মানুষরাও আছেন), সত্যিকারভাবে আমাদের নৈতিকতা কিন্তু ধর্মগ্রন্থ থেকে পাইনা; আমরা যদি তাই করতাম, আহলে কঠোরভাবে সাবাথ মানতাম এবং ভাবতাম যারা সাবাথের নিয়ম ভাঙ্গছে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ডেই দণ্ডিত করাই সঠিক এবং ন্যায়সঙ্গত; আমরা যে কোনো নবপরিনীতাকে পাথর ছুঁড়ে। হত্যা করতাম যে তার কুমারীত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, যদি তার স্বামী নিজে ঘোষণা দেয় সে সন্তুষ্ট হয়নি, বা আমরা অবাধ্য সন্তানদের হত্যা করতাম.. এবং আমরা হয়তো… কিন্তু একটু অপেক্ষা করুন, হয়তো আমি নিরপেক্ষ আচরণ করছি না, ভালো খ্রিষ্টানরা এই পুরো অনুচ্ছেদ জুড়ে প্রতিবাদ করবেন এই বলে যে : বেশ, সবাই জানে ওল্ড টেষ্টামেন্ট স্পষ্টতই বেশ অপ্রীতিকর, যীশু খ্রিষ্টের নিউ টেষ্টামেন্টততা এর ক্ষতিকর দিকগুলো খানিকটা সামাল দিয়েছে, এটিকে গ্রহনযোগ্য করেছে, তাই না?

নিউ টেষ্টামেন্ট ওল্ড টেষ্টামেন্টের চেয়ে আদৌ কি ভালো কিছু?

বেশ, অস্বীকার করার উপায় নেই, নৈতিকতার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, ওল্ড টেষ্টামেন্ট এর নিষ্ঠুর মানবরুপী দৈত্যের তুলনায় যীশু অনেক বড় মাপের একটি উন্নতি; আসলেই জিসাস, যদি তার অস্তিত্ব থেকে থাকে (বা যিনি তার গ্রন্থ রচনা করেছে, তিনি যদি তা না করে থাকেন) নিশ্চয়ই ইতিহাসের অনত্যম সেরা নৈতিকতার সংস্কারক; তার সারমন অব দি মাউন্ট স্পষ্টতই সময়ের চেয়ে অনেক অগ্রসর ছিল, তার এক গালে মারলে আরেক গাল বাড়িয়ে দেয়া’ মতবাদ এসেছে গান্ধী এবং মার্টিন লুথার কিং এর সেই মতবাদ গ্রহন করার দুই হাজার বছর আগে; কোনো কারণ ছাড়াই আমি কিন্তু সেই ‘অ্যাথিষ্ট ফর জিসাস’ প্রবন্ধটি লিখিনি, (এবং পরে বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম, পরবর্তীতে এটি লেখা একটি টি শার্ট উপহার পেয়ে)(৪৫)।

কিন্তু ঠিক জিসাস বা যীশু খ্রিষ্টের নৈতিক শ্ৰেষ্ঠতাই আমার বক্তব্যটাকে অর্থবহ করে তোলে, তার নিজের প্রতিপালনের সময় শেখানো ধর্মগ্রন্থ থেকে জিসাস তার নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহন করে সন্তুষ্ট ছিলেন না, তিনি প্রকাশ্যে সেখান থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন, যেমন যখন তিনি সাবাথের নিয়ম ভাঙ্গার কঠোর সর্তকতাকে গুরুত্বহীন করে দিয়েছিলেন এই বলে যে: ‘মানুষের জন্য সাবাথ তৈরী হয়েছে, সাবাথের জন্য মানুষ নয়’ একটি জ্ঞানগম্ভীর প্রবাদ হিসাবে নানা ক্ষেত্রেই বহুসাধারণীকৃত আর বহুব্যবহৃত হয়েছে, যেহেতু এই অধ্যায়ের মূল বিষয়টি হচ্ছে ধর্মগ্রন্থ থেকে আমরা নৈতিকতা গ্রহন করি না এবং করা উচিৎও না, আর এই মূল থিসিসটির বিষয়ে কাজটি করে দেখানো জন্য জিসাস একটি মডেল হিসাবে সন্মানিত হতে পারেন।

যীশুর পারিবারিক মূল্যবোধ, স্বীকার করতেই হবে যে, এমন কিছু ছিল না যে, কেউ সেটাকে গুরুত্ব দেবার ইচ্ছা পোষণ করতে পারেন; মায়ের সাথে তার আচরণে ঘাটতি ছিল, প্রায় রুঢ় বলা যেতে পারে সে আচরণ, তিনি তার শিষ্যদের উৎসাহিত করেছিলেন তাদের পরিবার পরিজন পরিত্যাগ করে তাকে অনুসরণ করার জন্য; যদি কেউ আমার কাছে আসে এবং সে তার বাবা এবং মা, এবং স্ত্রী এবং সন্তান এবং ভাই এবং বোনদের, হ্যাঁ, তার নিজের জীবনকেও ঘৃণা না করতে পারে, সে আমার শিষ্য হতে পারেনা। যুক্তরাষ্ট্রের কমেডিয়ান জুলিয়া সুইনী তার বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন তার ‘লেটিং গো অব গড’ স্টেজ শোতে (৪৬) : ‘এমন কাজই কি কাল্ট বা ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো করে না? আপনাকে দিয়ে আপনার পরিবারকে পরিত্যাগ করায়, যেন তাদের দীক্ষা আপনাদের আরো ভিতরে দৃঢ়ভাবে ঢোকানো যায় (৪৭)?’

তার এই খানিকটা ঘোলাটে পারিবারিক মূল্যবোধগুলো সত্ত্বেও যীশুর নৈতিকতার শিক্ষা– যদি ওল্ড টেষ্টামেন্টের ভয়ঙ্কর নৈতিকতার বিপর্যস্ত অংশগুলোর সাথে তুলনা করা হয় –তাহলে প্রশংসার দাবীদার; কিন্তু নিউ টেষ্টামেন্টে আরো শিক্ষা আছে যা কোনো ভালো মানুষের পক্ষে সমর্থন করা উচিৎ হবেনা। আমি এখানে বিশেষভাবে ইঙ্গিত করতে চাইছি খ্রিষ্ট ধর্মের একটি মূল মতবাদ বা ডকট্রিনের দিকে; সেটা হলো ‘অরিজিনাল সিন’ বা আদি পাপ এর প্রায়শ্চিত্ত; এই শিক্ষাটাই নিউ টেষ্টামেন্টের ধর্মতত্ত্বের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থান করছে; এবং এটিও আব্রাহামের আইজাককে পুড়িয়ে মারতে যাবার ঘটনাটির মত নৈতিকভাবেই অসহ্যরকম আপত্তিকর, যার সাথে ঘটনাটির সাদৃশ্যও আছে এবং সেটা আকস্মিক না, যেমন, গেজা ভেরমেস (৪৮) তাঁর ‘দ্য চেঞ্জিং ফেসেস অব জিসাস’(৪৯) বইয়ে স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। অরিজিনাল সিন বা আদি পাপের ধারণাটি সরাসরি এসেছে অ্যাডাম এবং ইভ (আদম ও হাওয়া) এর ওল্ড টেষ্টামেন্টের সেই পুরাণ কাহিনী থেকে; তাদের পাপ ছিল নিষিদ্ধ বৃক্ষ থেকে ফল খাওয়া, যথেষ্ট সামান্য একটা অপরাধ যার জন্য খানিকটা গালমন্দই এবং সতর্ক করে দেয়াই যথেষ্ট ছিল; কিন্তু ফলটি প্রতিকী রুপ (ভালো মন্দ পার্থক্য করার মত জ্ঞান, তবে সেই মুহর্তের বাস্তবতায় প্রায়োগিক ক্ষেত্রে যা শুধুমাত্র সে জ্ঞানটিকেই ইঙ্গিত করেছিল যে, তারা দুজনেই নগ্ন) যথেষ্ট ছিল তাদের এই নিষিদ্ধ ফলের বাগানে ফল চুরি করার অভিযানটিকে সকল পাপের জনক জননীতে রুপান্তরিত করার জন্য (৫০)। তারা দুজন এবং তাদের অনাগত সকল বংশধর স্বর্গীয় উদ্যান বা ইডেন থেকে চিরতরে বহিষ্কৃত হয়, চিরন্তন জীবনের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাদের, আদম ও হাওয়ার শাস্তি হয় কষ্টকর পরিশ্রমের জীবনের, যথাক্রমে, ফসলের মাঠে এবং সন্তান প্রসবের সময়।

এপর্যন্ত এতটাই প্রতিশোধপরায়ন, যা ওল্ড টেষ্টামেন্টর মতই চলছিল, তবে নিউ টেষ্টামেন্টে ধর্মতত্ত্ব আরেকটি অবিচার নির্বিকারভাবে যুক্ত করে, যার উপরে চেপে বসে একটি নতুন ধর্ষমর্ষকামীতা, যার হিংস্র ভয়াবহতা এমনকি ওল্ড টেষ্টামেন্টও কোনোমতে অতিক্রম করেছে; যখন আপনি ভাববেন, বিষয়টা কিন্তু লক্ষ করার মত যে, একটি ধর্ম, যা কিনা নীপিড়ন আর হত্যার একটি উপকরণকে এর পবিত্রতার রুপক হিসাবে গ্রহন করা উচিৎ মনে করে, প্রায়ই যা গলায় ঝুলিয়ে রাখা হয়; লেনী ব্রুস (৫১) সঠিকভাবেই মন্তব্য করেছিলেন,’যদি জিসাসকে বিশ বছর আগে হত্যা করা হতো, তাহলে ক্যাথলিক স্কুলের ছেলে মেয়েরা গলায় ক্রুসের বদলে ইলেক্ট্রিক চেয়ার ঝুলিয়ে রাখতো। কিন্তু এর পেছনে ধর্মতত্ত্ব এবং শাস্তির তত্ত্বটি আরো খারাপ। আদম হাওয়ার পাপ ধারণা করা হয় পুরুষ বংশধারার মাধ্যমে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত হয়ে, সেইন্ট অগাষ্টিনের (৫২) মতে পুরুষের বীর্যের মাধ্যমে এটি বংশগত ভাবে চলতে থাকে। এটি কোন ধরনের নৈতিকতার দর্শন, যা সকল শিশুকে দণ্ডায়িত করে, এমনকি তাদের জন্মের আগেও, দূর অতীতের কোনো পূর্বপুরুষের পাপ বংশগতভাবে তাদের উপর অর্পিত হয়? অগাষ্টিন (৫২), কিন্তু নিজেকে সঠিকভাবে তার নিজেকে পাপের ব্যপারে একজন ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ হিসাবে ভাবতেন, এবং অরিজিনাল সিন’ শব্দদ্বয়কে তিনি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন। তার আগে এই পাপটি পরিচিত ছিল ‘অ্যানসেস্ট্রাল সিন’ বা পূর্বপুরুষের পাপ নামে; অগাষ্টিনের যুক্তি তর্ক এবং নানা বক্তব্য আমার মনে হয় আদি খ্রিষ্ট ধর্মতত্ত্ববিদদের অতিমাত্রায় পাপ নিয়ে চিন্তা করার বিষয়টিকে প্রমাণ করে; তাদের সামন বা ধর্মকথনে পাতার পর পাতা তারা ব্যয় করতে পারতেন,তারায়। খচিত আকাশের বা পর্বতমালা এবং সবুজ বনভুমি বা ভোরের পাখিদের সমবেত সঙ্গীত বন্দনা করে; এসব কদাচিৎ উল্লেখ করেছেন তারা, কিন্তু খ্রিষ্ট ধর্মের মূল নিশানা অতিমাত্রায় পাপ পাপ পাপ পাপ পাপ পাপ পাপ; কি বাজে একটা চিন্তা যা কারো জীবনে প্রাধান্য বিস্তার করে থাকতে পারে; স্যাম হারিস দারুণভাবে তার ‘লেটার টু এ ক্রিশ্চিয়ান নেশন’ বইটিতে বিষয়টি ব্যবচ্ছেদ করেছেন এভাবে: “আপনার প্রধান চিন্তা আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা অসন্তুষ্ট হবেন এমন কিছু কাজে– যা মানুষ করে যখন তারা নগ্নাবস্থায় থাকে; আপনাদের এই অতি শিষ্টাচারপনা মানুষের কষ্টের অতিরিক্ত বোঝায় প্রতিনিয়ত যোগান দিচ্ছে।

কিন্তু এখন, স্যাডো ম্যাসোকিজম বা ধৰ্মমর্ষকামীতা বিষয়টি দেখা যাক; ঈশ্বর নিজেকে পুনর্জন্ম দেন মানুষ, জিসাস রুপে; তার উদ্দেশ্য, যেন তাকে নির্যাতন নীপিড়ন এবং দণ্ড দিয়ে হত্যা করা হয় আদমের সেই বংশগত পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য; যখন থেকেই পল এই বীতস্পৃহা সৃষ্টিকারী মতবাদটি ব্যাখ্যা করেছেন, তখন থেকেই জিসাসকে উপাসনা করা হচ্ছে মানবজাতির সকল পাপের ত্রাণকর্তা হিসাবে। আদমের সেই অতীত পাপের জন্যই না, ভবিষ্যতে ঘটবে এমন সব পাপের জন্যও, ভবিষ্যতের মানুষ সেই পাপ করার সিদ্ধান্ত নিক বা না নিক।

একটি ভিন্ন দিক, বহু মানুষের যা মনে হয়েছে যে, যাদের মধ্যে রবার্ট গ্রেভস (৫৩) ও তার মহাকাব্যিক উপাখ্যান ‘কিং জিসাস’ ও অন্তর্ভুক্ত, হতভাগ্য জুডাস ইসকারিওট ইতিহাসের অবিচারই শুধু পেয়ে এসেছেন, যখন তার বিশ্বাসঘাতকতা সৃষ্টিকর্তার মহাজাগতিক পরিকল্পনারই একটি প্রয়োজনীয় অংশ ছিল মাত্র। একই কথা বলা যাবে জিসাসের অভিযুক্ত হত্যাকারীদের ক্ষেত্রেও; যদি জিসাস নিজেই চান তিনি বিশ্বাসঘাতকার স্বীকার হয়ে। হত্যাকারীদের হাতে হত্যার শিকার হবেন, যেন তিনি আমাদের সবার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারেন, তাহলে ব্যপারটা বরং পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয় না যে, যারা কিনা নিজেদের পাপ থেকে অবমুক্ত মনে করেন, তারা আবার সেজন্য জুডাস এবং পরবর্তীতে যুগে যুগে ইহুদী নীপিড়নে লিপ্ত হন? আমি ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছিলাম আগের অধ্যায়ে, নন ক্যানোনিকাল গসপেল সংগ্রহর একটি দীর্ঘ তালিকা; একটি পাণ্ডুলিপি যা দাবী করা হয় জুডাসের হারিয়ে যাওয়া গসপেল, অতি সমপ্রতি অনুদিত হয়েছে এবং ফলাফলে বেশ প্রচারও পেয়েছে। এর আবিষ্কার সংক্রান্ত পরিস্থিতিটি বিতর্কিত, কিন্তু এটি আত্মপ্রকাশ করে মিসরে, ৭০ এর বা ৬০ এর দশকের কোনো সময়ে; এবং কপ্টিক হরফে লেখা, প্যাপিরাসের ৬২ টি পাতায় (৫৫); কার্বন ডেট এর মাধ্যেমে জানা গেছে এটির উৎপত্তি ৩০০ খ্রিষ্টাব্দের আশেপাশে, কিন্তু এটি সম্ভবত লেখা হয়েছে আগের একটি গ্রিক পাণ্ডুলিপির অনুকরণে; এর লেখক যেই হোক না কেন, গসপেলটি দেখা হয়েছে জুডাস ইসকারিওটের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে; এবং সেখানে যে প্রস্তাবটি করা হয়েছে, জুডাস জিসাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকা করেছিল জিসাসের নির্দেশে, জিসাসই স্বয়ং তাকে সেই ভূমিকা পালন করতে বলেছিলেন; পুরোটাই ছিল জিসাসের ক্রুশবিদ্ধ হয়ে আত্মবিসর্জন বা মৃতুবরণ করে মানবজাতিকে তার সকল পাপ থেকে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনার একটি অংশ মাত্র; যত অপ্রীতিকর সেই মতবাদ হোক না কেন, স্পষ্টতই এটি এর পর থেকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে জুডাসের চরিত্রহরণের অস্বস্তিকর বিষয়টিকে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয়।

আমি খ্রিষ্ট ধর্মের কেন্দ্রীয় মতবাদ হিসাবে আদি পাপের প্রায়শ্চিত্তের কথা উল্লেখ করেছি একটি হিংস্র, কলুষিত বিদ্বেষপূর্ণ ধর্ষ-মর্ষকামী এবং বীতস্পৃহা সৃষ্টিকারী একটি মতবাদ হিসাবে; চূড়ান্ত উন্মাদনা বলে এটিকে আমাদেরও বর্জন করা উচিৎ কিন্তু এটির সর্বব্যাপী পরিচিতি আর বিস্তার আমাদের বস্তুনিষ্ট বিচার করা ক্ষমতাকে খানিকটা ভোতা করে দেয়; যদি ঈশ্বর আমাদের পাপ ক্ষমা করতেই চেয়ে থাকেন, কেন তিনি শুধু সেগুলো মাফ করে দিলেন না নিজ ক্ষমতা বলে, নিজেকে নীপিড়ন করে, ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ মাথায় পেতে নেবার কি দরকার ছিল তার মূল্য পরিশোধ হিসাবে; এবং সেকারণেই ঘটনাচক্রে তিনি ইহুদীদের ভবিষ্যতের প্রজন্মকেও দণ্ডিত করেন জিসাস বা যীশুর হত্যাকারী হিসাবে ভয়াবহ পগ্রোম (ইহুদী ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহিংস আক্রমণ) এবং নিপীড়ন নির্যাতন আর হত্যার দণ্ডাদেশে; সেই বংশপরম্পরার পাপটিও কি বীর্যের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছিল?

পল (৫৬), ইহুদী ধর্মের ইতিহাসবিদ গেজা ভেরমেস এর মতে, স্পষ্টতই সেই প্রাচীন ইহুদী ধর্মতত্ত্বীয় মূল নীতিতে আকণ্ঠ মজে ছিলেন : রক্ত ছাড়া কোনো প্রায়শ্চিত্ত সম্ভব না (৫৭); সত্যি তার ‘এপিস্টল টু দ্য হিব্রুস’ (৯:২২) বা হিব্রু জাতির প্রতি চিঠিতে, তিনি সেরকম কথাই বলেছিলেন; প্রগতিশীল নৈতিকতাবাদীদের পক্ষে আজ কোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক শাস্তি প্রদানের কোনো। নীতিকে সমর্থন করা কঠিন, নিরীহ মানুষকে শাস্তি বা স্কেপগোট তত্ত্ব, যেখানে নিরপরাধ মানুষকে দণ্ডিত করা হয় অন্য অপরাধীর অপরাধের দণ্ডের শিকার হিসাবে; সব গুছিয়ে বললে, আদম, এই তথাকথিত প্ৰকত বা মূল পাপের মূল পাপী, তার তো কোন অস্তিত্বই ছিলনাঃ একটা বিব্রতকর সত্য, যে বিষয়টি সম্বন্ধে পলের অজ্ঞতা ক্ষমাযোগ্য কিন্তু অনুমান করা সম্ভব বিষয়টি সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের (এবং জিসাস, যদি আপনি বিশ্বাস করেন তিনি ঈশ্বর) অজানা থাকার কথা নয়; যা মৌলিকভাবে এই সম্পূর্ণ পেঁচানো বাজে গল্পটির মূল বিষয়টিকে ভিত্তিহীন করে দেয়; ওহ .. কিন্তু অবশ্যই, আদম আর হাওয়ার গল্পতো শুধু প্রতীকী ছিল, তাই না? প্রতীকী? তাহলে নিজেকে দেখানোর জন্য বা ইমপ্রেস করার জন্য ‘অস্তিত্বহীন’ এক মানুষের প্রতিকী একটি পাপের জন্য সবার প্রতিনিধি হয়ে শাস্তি হিসাবে হিসাবে জিসাস তার নিজের উপর নিপীড়নের ঘটনাটা ঘটিয়ে ছিলেন এবং নিজের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিৎ করে ছিলেন; আমি যেমনটা বলেছিলাম চূড়ান্ত পাগলামী, এবং খুবই জঘন্যরকম অপ্রীতিকর।

বাইবেল বিষয়ে আলোচনা শেষ করার আগে, আমি এর নৈতিক শিক্ষার সহ্য করার অনুপযুক্ত একটি বিশেষ দিক সম্বন্ধে আলোচনা করতে চাই; খ্রিষ্টানরা কদাচিৎ অনুধাবন করতে পারেন যে অন্যদের প্রতি তাদের বেশীর ভাগ নৈতিক বিবেচনা, যা আপাতদৃষ্টিতে ওল্ড এবং নিউ, উভয় টেষ্টামেন্টই শিক্ষা প্রদান। করেছে, মূলত খুবই সীমাবদ্ধ নির্দিষ্ট অন্তঃগোত্রের প্রতি প্রয়োগ করার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল, Love thy neighbour বা আপনার প্রতিবেশীদের ভালোবাসুন, এর অর্থ আমরা এখন যা করছি তা কিন্তু আগে ছিল না, এর অর্থ ছিল শুধুমাত্র আরেকজন ইহুদীকে ভালোবাসো; এই বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছে আমেরিকার চিকিৎসক এবং বিবর্তনীয় নৃতত্ত্ববিদ জন হারটাঙ (৫৮), তিনি অসাধারণ একটি পেপার লিখেছিলেন অন্তঃগ্রুপ (In-group) নৈতিকতার বিবর্তন ও বাইবেলের ইতিহাস নিয়ে। যেখানে তিনি জোর দিয়েছিলেন এর অপর পিঠটিরও, বহিঃগ্রুপ বা Out group শত্রুতা।

আপনার প্রতিবেশীকে ভালোবাসুন

জন হারটাঙ এর খানিকটা তীর্যক রসিকতা তার রচনাটির শুরু থেকেই দৃশ্যমান, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ব্যাপটিষ্ট উদ্যোগের কথা বলেছিলেন, যারা নরকে কয়জন আলাবামাবাসী আছেন তার সংখ্যা গণনা করার প্রচেষ্টা করছিল; নিউ ইয়র্ক টাইমস আর নিউজডে দৈনিকে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট বলছে, একটি গোপন পদ্ধতি অনুসারে এই সংখ্যা প্রায়। ১.৮৬ মিলিয়ন হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে, যেমন, মেথডিষ্টদের রোমান ক্যাথলিকদের চেয়ে বেশী সম্ভাবনা আছে নরক থেকে ত্রাণ লাভ করার এমন একটি প্রাকধারণা ছিল, অন্যদিকে মূলত সবাই, যারা কোনো না কোনো চার্চের সাথে যুক্ত নয়, তাদের নরকে যাওয়া ছাড়া বাঁচার কোনো উপায় রাখেননি তারা। এইসব মানুষগুলো এই অত্যধিক আত্মতৃপ্তি আজ প্রতিফলিত হয় রাপচার (৫৯) নামের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলোয়; যেখানে লেখক সবসময়ই পুরোপুরি নিশ্চিৎভাবে ধরে নিয়েছেন, যখন ‘শেষ সেই সময় আসবে, তিনি স্বর্গে ‘অদৃশ্য হওয়া মানুষেদের একজন হবেন; Rapture Ready র লেখকের লেখা থেকে একটি বৈশিষ্ট্যমূলক উদাহরণ, এই ধারার অন্যতম কদর্য ছলধার্মিক নমুনাঃ ‘যদি রাপচারের ঘটনাটি ঘটে, যা আমার অনুপস্থিতির কারণ হবে, তাহলে ট্রিকুলেশন সেইন্টদের (Tribulation saints) দ্বায়িত্ব নিতে হতে হবে এই সাইটির একটি মিরর সাইট বা এই সাইটটি আর্থিক সহায়তা করার জন্য (আপনি হয়তো জানেন না এই বাক্যে tribulation saints এর অর্থ কি, এটা নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই, আপনার অনেক ভালো কিছু করার আছে এর বদলে।

হারটাঙ এর বাইবেল ব্যাখ্যা প্রস্তাব করছে যে, বইটি খ্রিষ্টানদের মধ্যে কোনো এধরনের অতিরিক্ত আত্মতৃপ্তির সুযোগ রাখেনি; জিসাস তার এই অন্তঃগ্রুপ সদস্যরা, যাদের রাপচারের মাধ্যমে রক্ষা করা হবে, তা শুধু কঠোরভাবে ইহুদীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, যেক্ষেত্রে তিনি ওল্ড টেষ্টামেন্ট এর ঐতিহ্যকে অনুসরন করছিলেন, এর বাইরে তার কিছু জানাও ছিলনা তখন; হারটা স্পষ্টভাবে দেখান যে, ‘তুমি হত্যা করবে না বা Thou shall not kill, এই নির্দেশটির কখনোই সেই অর্থ ছিল না, এটির অর্থ আমাদের কাছে এখন যেমন; এর অর্থ হচ্ছে, খুব নির্দিষ্টভাবে, তোমরা কোনো ইহুদী হত্যা করবে না বা Thou shalt not kill Jews; এবং ঐ সব কমান্ডমেন্ট বা নির্দেশগুলো যা আপনার প্রতিবেশী (thy neighbour) বিষয়টির উল্লেখ করেছে, তারাও সমভাবে সুনির্দিষ্ট, এই প্রতিবেশী’ মানে আরেকজন ইহুদী; মোজেস মাইমোনাইডেস (৬০), অত্যন্ত সম্মানিত দ্বাদশ শতকের একজন র‍্যাবাই এবং ডাক্তার, এর বিষদ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এভাবে, ‘কাউকে হত্যা করবে না’ র অর্থ হচ্ছে: “যদি কেউ একজন ইসরায়লাইটকে (ইসরায়েলবাসী) হত্যা করে, সে ধর্মগ্রন্থের নিষিদ্ধ নির্দেশগুলোর প্রতি নেতিবাচক আচরণ বা অমান্য করে; কারণ ধর্মগ্রন্থ বলছে, তোমরা হত্যা করবে না, যদি কেউ ইচ্ছামূলকভাবে কোনো সাক্ষীর উপস্থিতিতে কাউকে হত্যা করে, তাকে তরবারী দিয়ে শিরোচ্ছেদ করে শাস্তি দেয়া হবে; মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন যে কোনো অবিশ্বাসীকে হত্যা করার জন্য কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে না।’ মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন বা বলার অপেক্ষা রাখে না!!

হারটাঙ সানহেড্রিন (ইহুদী সুপ্রীম কোর্ট, যা উঁচু পদমর্যাদার যাজকদের সমন্বয়ে যা গঠিত) এর কিছু উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন যা একই ধরনের অপরাধে এমন কাউকে দায়মুক্ত করে, হাইপোথেটিকালি ভুলক্রমে যখন কেউ কোনো পশু বা অবিশ্বাসীকে খুন করতে গিয়ে কোনো ইসরায়েলবাসীকে হত্যা করে বসে, এই বিদ্রুপাত্মক নৈতিকতার ধাঁধা একটি ভালো বিষয়ের অবতারণা করেন; কি হবে যদি সে এমন একটি পাথর ছুঁড়ে মারে নয়জন অবিশ্বাসী আর একজন ইসরায়েলবাসী একটি গ্রুপের দিকে এবং দুর্ভাগ্যক্রমে যদি ইসরায়েলাবাসী তাতে হত হয়? হুম, কঠিন। কিন্তু উত্তরও প্রস্তুত, তার দায়মুক্ততার ব্যপারটা নিশ্চিৎ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে তথ্যটি থেকে, যা বলছে অধিকাংশ অবিশ্বাসী ছিল সেখানে।

হারটাঙ একই বাইবেলের অনেকগুলো উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলেন, যা এই অধ্যায়ে আমি ব্যবহার করেছি; মোজেস, জশুয়া এবং জাজেসদের প্রতিশ্রুত ভূমি বিজয় সম্পর্কের ব্যপারে; আমি সতর্কতার সাথে স্বীকার করে নিয়েছি, যে ধার্মিক মানুষগুলো বাইবেলের মত একইভাবে চিন্তা করেনা; আমার কাছে এই বিষয়টি প্রতীয়মান করছে যে, আমাদের নৈতিকতাগুলো, আমরা ধার্মিক হই বা না হই, এসেছে ভিন্ন উৎস থেকে; এবং সেই অন্য উৎস, সেটা যাই হোক না কেন, আমাদের সবার জন্য যা উন্মুক্ত, ধর্ম বা ধর্মহীনতা কোনো ব্যপারই সেখানে প্রভাব ফেলে না; কিন্তু হারটাঙ একজন ইসরায়েলি মনোবিজ্ঞানী জর্জ তামারিন এর একটি ভয়ঙ্কর গবেষণার কথা উল্লেখ করেছিলেন; গবেষণাটিতে তামারিন ইসরায়েলের কয়েকটি স্কুলে আট থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী সহস্রাধিক শিশুদের সামনে বুক অব জশুয়ায় বর্নিত জেরিকোর যুদ্ধের বর্ণনা তুলে ধরেন:

জশুয়া (৬১) তার অনুগত মানুষদের বলেন, ‘চিৎকার করে বলো, মহান প্রভু ঈশ্বর তোমাদেরকে এই শহর প্রদান করেছেন এবং এই শহর ও তার মধ্যে সব কিছু ঈশ্বরের প্রতি বিসর্জনের লক্ষ্যে ধ্বংস করা হবে, কিন্তু সব রৌপ্য এবং স্বর্ণ এবং ব্রোঞ্জের পাত্র ও লোহা মহান প্রভুর কাছে পবিত্র, সেগুলো মহান প্রভুর ধনভাণ্ডারে যোগ করা হবে..; এরপর তারা পুরোপুরি ভাবে শহরটির সবকিছু ধ্বংস করে, পুরুষ, নারীদের উভয়ই ..তরুণদের আর বয়োবৃদ্ধদের, পালিত ষাড়, ভেড়া, গাধাদের সবকিছুই ধ্বংস করা হলো তলোয়ারের ধারালো আঘাতে। পুরো শহরটাকে তারা আগুন দিয়ে প্রজ্জ্বলিত করে, পুড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে যা ছিল সব কিছু, শুধুমাত্র রৌপ্য, সোনা এবং ব্রোঞ্জ আর লোহার পাত্রগুলো ছাড়া, যা তারা ঈশ্বরের ধন ভাণ্ডারে জমা করে।

এরপর তামারিন শিশুদের একটি সাধারণ নৈতিকতার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন: “তোমরা কি মনে করো যে, জশুয়া আর ইসরায়েলবাসীদের কি কাজটা ঠিক করেছিল? উত্তর হিসাবে পছন্দ করার তাদের সুযোগ দেয়া হয়েছিল তিনটির যে কোনো একটি; ‘এ’ (পুরো সম্মতি), ‘বি’ (আংশিক সম্মতি) এবং ‘সি’ (পুরোপুরি অসম্মতি); এই জরিপের ফলাফলে ছিল স্পষ্ট মেরুকরণের চিহ্ন: শতকরা ৬৬ ভাগ পুরো সম্মতির পক্ষে,২৬ ভাগ পুরো অসম্মতির পক্ষে এবং বরং কিছু কম প্রায় শতকরা ৮ শতাংশর অবস্থান মধ্যম, আংশিক সম্মতির সপক্ষে; এখানে প্রথম গ্রুপ (এ), পুরো সম্মতির সপক্ষে কারণ হিসাবে উল্লেখ করা তিনটি বৈশিষ্ট্যসুচক উত্তর দেয়া হলো:

আমার মতে জশুয়া এবং ইসরায়েলের সন্তানরা সঠিক আচরণ করেছিল, এবং এর কারণ হচ্ছে: ঈশ্বর তাদের এই ভূমি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং তাদের অনুমতি দিয়েছেন এই দেশটি জয় করবার, তারা যদি সেভাবে কাজ না করতে বা কাউকে হত্যা না করতো, তাহলে বিপদের সম্ভাবনা রয়ে যেত ইসরায়েল এর সন্তানদের গয়িমদের (৬২) সাথে মিশে যাওয়ার।

আমার মতে জশুয়া ঠিক কাজই করেছিলেন, একটি কারণ হচ্ছে ঈশ্বর নিজেই তাকেই নির্দেশ দিয়েছেন সব মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে যাতে, যেন ইসরায়েল এর অন্য গোত্ররা তাদের সাথে না মিশে যেতে পারে এবং তাদের খারাপ জীবনাচরণ না শিখতে পারে।

জশুয়া ভালো কাজ করেছিলেন কারণ যে মানুষরা এই দেশে বাস করতো তাদের ধর্ম ছিল ভিন্ন এবং যখন জশুয়া তাদের হত্যা করে, সে তাদের ধর্মকে পৃথিবী থেকে মুছে দেয়।

জশুয়ার গণহত্যার সপক্ষে এধরনের যুক্তি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মীয় প্রকৃতির; এমনকি যাদের উত্তর ‘সি’, অর্থাৎ পুরোপুরি অসম্মতির কথা বলেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারাও ধর্মের বিষয়টি হালকা ভাবে এনেছে; একটি শিশু যেমন জশুয়ার জেরিকো বিজয়ে অসম্মতি দিয়েছে, কারণ তার মতে এটা করতে হলে তাকে জেরিকোতে তাকে ঢুকতে হবে:

আমি মনে করি কাজটা খারাপ হয়েছিল, যেহেতু আরবরা অপবিত্র, সুতরাং কেউ যদি সেই অপবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করে, সে নিজেও অপবিত্র হয়ে যাবে এবং তাদের উপর বিদ্যমান অভিশাপেরও ভাগীদার হবে সে; আরো দুজন যারা পুরোপুরি অসম্মতি জানিয়ে ছিল, তাদের কারণ হচ্ছে, জশুয়া সবকিছু ধ্বংস করেছিল, সম্পত্তি এবং গবাদীপশু সহ, সেই সম্পদ ইসরায়েলবাসীদের জন্য কিছুই তিনি রাখেননি।

আমি মনে করি জশুয়া ঠিক কাজ করেননি,তারা কিছু গবাদী পশু ধ্বংস না করে নিজেদের জন্য রাখতে পারতেন।

আমি মনে করি জশুয়া ঠিক কাজটি করেননি, তিনি জেরিকোর সম্পদ বিনষ্ট করতে পারতেন কারণ তিনি যদি সম্পদ ধ্বংস না করতেন সেগুলো ইসরায়েলের সন্তানদেরই হতো।

আবারো, সাধু মাইমোনাইডেস, প্রায়শই জ্ঞানের পাণ্ডিত্যের জন্য যার উদ্ধৃতি ব্যবহৃত হয়, কোনো সন্দেহ নেই এই বিষয়ে তার অবস্থান কি ছিল; ‘সাত জাতিকে ধ্বংস করার জন্য এটি হ্যাঁ বাচক নির্দেশ ছিল, যেমনটি এটি নির্দেশ করেছে : তোমরা তাদের পুরোপুরি ধ্বংস করবে’, কেউ যদি তাদেরকে হত্যা না করে যখন সে পারে, তাহলে সে সরাসরি নির্দেশটি অমান্য করে, যেমন বলা হয়েছে: ‘জীবিত এমন কিছুকে তোমরা রক্ষা করবে না যারা শ্বাস নেয়।

মাইমোনাইডেস এর ব্যতিক্রম তামারিন এর পরীক্ষার সেই শিশুদের সবারই যথেষ্ট বয়স কম, নিষ্পাপ, সম্ভবত যে বন্য মনোভাবটি তারা প্রকাশ করছে, সেটি সম্ভবত তাদের পিতামাতার বা সেই সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর চিন্তাধারার প্রভাব, যেখানে তারা প্রতিপালিত হচ্ছে। আমার মনে হয়, প্যালেস্টাইনীয় শিশুদের ক্ষেত্রেও, যারা যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশে বসবাস করছে, তারাও সম্ভবত বিপরীত অভিমুখী ও একই মতামত দিতে পারে। এই বিবেচনাগুলোয় আমাকে হতাশাগ্রস্থ করে তোলে; বিষয়টি ধর্মের বিশাল শক্তিকে প্রদর্শন করছে বলেই অনুভুত হয় আমার কাছে এবং বিশেষ করে ধর্মীয় পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা শিশুদের ক্ষেত্রে, তাদের মধ্যে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ এবং ঐতিহাসিক শত্রুতা এবং বংশগতভাবে জীঘাংসাকে লালন করার বিশেষ প্রক্রিয়াটিতে; আমি বাধ্য হচ্ছি মন্তব্য করতে যে,তামারিন এর গবেষণায় উত্তর গ্রুপ ‘এ’ র প্রতি তিন জন উত্তরদাতার দুজনই মন্তব্য করেছে জাতিগত মিশ্রণের অশুভ প্রতিক্রিয়ার কথা, অপরদিকে তৃতীয়। মন্তব্যটি জোর দিয়েছে কোনো ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করতে সেই ধর্মর মানুষ হত্যার গুরুত্বর উপর।

তামারিন তার এক্সপেরিমেন্টে একটি বিস্ময়কর কন্ট্রোল গ্রুপও পরিচালনা করেন, ভিন্ন ১৬৮ জন ইসরায়েলী শিশুদের একটি গ্রুপকে ‘বুক অব জশুয়া থেকে একই অংশ পড়তে দেয়া হয়,তবে যেখানে জশুয়ার নামের বদলে নাম দেয়া হয় জেনারেল লিন এবং ইসরায়েল এর বদলে সেখানে লেখা হয়া প্রায় ৩০০০ বছর আগের। কোনো চীনা রাজ্যর নাম; এবার এই গবেষণার ফলাফল হলো বিপরীত, মাত্র ৭ শতাংশ সম্মতি দিল জেনারেল লিন এর আচরণের সাথে, অপরদিকে ৭৫ শতাংশই দ্বিমত পোষণ করে জেনারেল লিন এর এই কাজের যথার্থতা নিয়ে। অন্যার্থে যখনই তাদের আনুগত্য জুডাইজম থেকে সরিয়ে রাখা হয় এই হিসাব থেকে, বেশীর ভাগ শিশুই একমত হয় আধুনিক মানুষ যে নৈতিকতার বিচার সম্বন্ধে ধারণা পোষণ করে তার সাথে; জশুয়ার সেই কর্মটি একটি বর্বরোচিত গণহত্যা ছাড়া আর কিছু নয়; কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অনুভূত হয়; আর এই বৈষম্যটা শুরু হয় জীবনের শুরু থেকে; ধর্মই মূল বিভাজন সৃষ্টিকারী, এখানে শিশুদের এই গনহত্যাকে নিন্দা করা আর সমর্থন করার মধ্যে।

হারটাঙ এর পেপারের বাকী অংশে, তিনি নিউ টেষ্টামেন্ট নিয়ে আলোচনা করেন, তার মূল বক্তব্যর একটি সংক্ষিপ্ত রুপ এভাবে দেয়া যেতে পারে : জিসাসও সেই একই অন্তঃগ্রুপ নৈতিকতার অনুসারী, যার সাথে যুক্ত গ্রুপ বহির্ভুতদের প্রতি শত্রুভাবাপন্নতা; যে বিষয়টি ওল্ড টেষ্টামেন্টে স্বাভাবিক নিয়ম হিসাবে ধরা হয়েছে। জিসাস একজন অনুগত ইহুদী ছিলেন; পলই হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি আবিষ্কার করেছেন কিভাবে ইহুদী ঈশ্বরের ধারণাটি ইহুদী নয় এমন জনগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যাওয়া যায়; হারটাঙ কোনো রাখঢাক না করেই আমার চেয়ে সাহসী উচ্চারণ করেছেন, “জিসাস তার কবরে নড়ে উঠতেন যদি তিনি জানতেন যে পল তার পরিকল্পনাটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।

বুক অব রিভিলেশন নিয়ে হারটা বেশ মজা করেছেন, যা নিসন্দেহে বাইবেল এর সবচেয়ে আজব বই; বলা হয় বইটি লিখেছেন সেইন্ট জন (৬৩) এবং কেন স্মিথ এর ‘কেন’স গাইড ট্যু বাইবেল’ (৬৪) বইটিতে সুন্দরভাবে বলেছেন: “যদি তাঁর এপিস্টল (কারো উদ্দেশ্যে লেখা রচনা, চিঠি) পড়ে মনে করা যায় জন গাঁজা খেয়েছেন, তাহলে রিভিলেশন পড়লে মনে করতে হবে জন পুরো অ্যাসিড বা এলএসডির উপরে ছিলেন। হারটাঙ দুটো ভার্সে (রিভিলেশন) বা অনুচ্ছেদে, যেখানে পরিত্রাণ (sealed) পাওয়া মানুষের সংখ্যা (যা অন্য কিছু ধর্মীয় গোষ্ঠী যেমন জিহোভাস উইটনেস, যাদের কাছে এই sealed শব্দটি হচ্ছে উদ্ধারপ্রাপ্ত) সীমাবদ্ধ ১৪৪,০০০ এ; হারটাঙ এর বক্তব্য হলো তাদের সবাইকে ইহুদী হতে হবে, ১২ টি গোত্রের প্রতিটি গোত্র থেকে ১২,০০০; কেন স্মিথ আরো খানিকটা গভীরে ব্যাখ্যা করে উল্লেখ করেন যে, ১৪৪,০০০ নির্বাচিত মানুষ হবে তারা যারা তাদেরকে কোনো রমনীর সংসর্গে এসে নিজেদের দূষিত করেননি; যার সম্ভবত অর্থ হতে পারে, এদের কেউ নারী হতে পারবে না, বেশ, এমন কিছু আমরা প্রত্যাশা করতে শিখেছি।

হারটাঙ এর পেপারে আরো অনেক কিছু আছে, আমি শুধু আরো একবার এটি পড়ার জন্য প্রস্তাব করছি এবং একটি উদ্ধৃতির মধ্যে পুরো ব্যপারটির সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করবো:

বাইবেল হচ্ছে অন্ত বা ইন গ্রুপ নৈতিকতার একটি নীলনকশা, গণহত্যার, অন্য গোত্রের মানুষদের দাস হিসাবে বন্দী করার এবং পৃথিবীতে প্রাধান্য বিস্তার করার সব নির্দেশ সম্বলিত একটি বই। বাইবেল কিন্তু অশুভ না এর উদ্দেশ্যর কারণে বা খুন হত্যা, নিষ্ঠুরতা এবং ধর্ষণকে গৌরবমণ্ডিত করার অপরাধের জন্য, বহু প্রাচীন কাহিনীও ঠিক একই কাজ করেছে, যেমন, ইলিয়াড, অ্যাইসল্যান্ডের সেই গাথা, প্রাচীন সিরিয়াবাসীদের কাহিনী এবং প্রাচীন মায়াদের খোদাই করে রাখা ইতিহাস; কিন্তু কেউই ইলিয়াডকে বিক্রি করার চেষ্টা করছে না নৈতিকতার ভিত্তি হিসাবে, এবং সমস্যাটা সেখানেই; বাইবেল বিক্রি এবং কেনা হয় একটি গাইড বা নির্দেশিকা হিসাবে, কেমন করে মানুষ তাদের জীবন কাটাবে সেই নির্দেশ সম্বলিত একটি বই হিসাবে; এবং এটি সারা বিশ্বে আপাতত সবচেয়ে বেশী বিক্রিত একটি বই, বেস্ট সেলার।

যদি কেউ ভাবেন যে ঐতিহ্যবাহী জুডাইজমে শুধু নিজস্ব অন্তঃগোত্র সংকীর্ণতা আছে, তাহলে আইজাক ওয়াটস (১৬৭৪-১৭৪৮) এর লেখা একটি হিম বা প্রার্থনা সঙ্গীত লক্ষ করা যাক (৬৫):

Lord, I ascribe it to Thy Grace,
And not to chance, as others do,
That I was born of Christian Race
 And not a Heathen or a Jew

আমাকে যা বিস্মিত করে এই অংশটিতে শুধু নিজেদের বিশেষত্ব আর অনন্যতার যে দাবী করা হয়েছে সেটা নয় বরং এর যুক্তিটা; যেহেতু অসংখ্য মানুষ খ্রিষ্টান ছাড়াও আরো অনেক ধর্মে জন্মগ্রহন করেছেন, তাহলে কিভাবে ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভবিষ্যতে কোনো মানুষগুলোর বিশেষভাবে তার পছন্দের ধর্মে জন্ম হবে? কেন আইজাক ওয়াট বা সেই মানুষগুলো, যাদের তিনি কল্পনা করেছেন তার স্তবসঙ্গীত গাইছে, তাদের কেন বিশেষ খাতির করা হবে? যাই হোক না কেন, আইজাক ওয়াট তার মাতৃগর্ভে জ্বণ হিসাবে যাত্রা শুরু করার আগে, সত্তার আসলে কি প্রকৃতি থাকতে হবে যা তারা বিশেষ সুনজর পেতে পারে? গভীরতম বিষয়তো বটে তবে অবশ্যই অসীম গভীর নয়, বিশেষ করে যে মন ধর্মতত্ত্বের চিন্তায় অভ্যস্ত তাদের কাছে। আইজাক ওয়াটের এই স্তব সঙ্গীত মনে করিয়ে দেয় গোঁড়া এবং রক্ষণশীল (কিন্তু সংশোধন কিংবা সংস্কার হয়নি পুরুষ ইহুদীরা যা আবৃত্তি করার জন্য শেখেন, তাদের তিনটি দৈনন্দিন প্রার্থনার সময় পড়ার জন্য; ‘আপনার অসীম করুণা,আমাকে ইহুদী ছাড়া আর কিছু না বানানোর জন্য, আপনার অসীম করুনা আমাকে রমনী বানাননি, অনেক কৃতজ্ঞতা আপনি আমাকে ক্রীতদাস বানাননি।

ধর্ম নিঃসন্দেহে বিভাজন সৃষ্টিকারী একটি শক্তি এবং এর বিরুদ্ধে এটি অন্যতম প্রধান অভিযোগ। কিন্তু প্রায়ই এবং সঠিকভাবেই বলা হয়, ধর্মীয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর কিংবা উপগোষ্ঠীর মধ্যে যে যুদ্ধ এবং দ্বন্দ্ব, সেগুলো কিন্তু খুব সময়ই বা কদাচিৎ আসলে ধর্মতাত্ত্বিক মতানৈক্য থেকে সৃষ্টি হয়; যখন উত্তর আয়ারল্যাণ্ডে উলস্টার প্রোটেষ্টান্ট প্যারামিলিটারী মিলিশিয়া সদস্য কোনো ক্যাথলিককে হত্যা করে, সে কিন্তু স্বগোতক্তি করে না, নে এটাই তোর প্রাপ্য, ট্রান্সসাবস্টনশিয়ালিস্ট { ক্যাথলিক মাসের সময় রুটি এবং মদ জীসাসের শরীর ও রক্তে রুপান্তর হয় এমন মতবাদ বিশ্বাসী), মারিওল্যাটরাস ( যীশু খৃষ্ঠের কুমারী মা মেরী প্রতি অতি ভক্তি প্রকাশ বা পূজা করা), ধুপ এর গন্ধ ছড়ানো বেজন্মা! কারণ খুব সম্ভবত সে অন্য কোনো ক্যাথলিকের হাতে নিহত হওয়া অন্য কোনো প্রটেষ্ট্যান্ট এর খুনের বদলা নিচ্ছে, কয়েক প্রজন্ম ধরে বিদ্যমান থাকা সহিংস জীঘাংসার কারণে– এখানে ধর্ম কেবল একটি লেবেল বা তকমা এখানে, অন্তঃগ্রুপবহিঃগ্রুপ এর মধ্যকার শত্রুতা ও প্রতিশোধ স্পৃহার মানসিকতার, যা অন্য কোনো লেবেল এর চেয়ে বেশী খারাপ হতে হবে এমন আবশ্যিকতা নেই যদিও, যেমন গায়ের চামড়ার রঙ, ভাষা বা পছন্দের ফুটবল দল এবং যখন অন্য কোনো লেবেল থাকে না তখন ধর্মের লেবেল সেই শূন্যস্থানটি পূরণ করে।

অবশ্যই উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের সমস্যা রাজনৈতিক, একটি গ্রুপের অন্য গ্রুপকে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে শোষণ সেখানে সত্যিকারের বাস্তবতা বহু শতাব্দী ব্যাপী। যেখানে দীর্ঘদিনের অবিচারের প্রতি সত্যিকারের ক্ষোভের অস্তিত্ব আছে, যা মনে হয়। ধর্মের সাথে খুব সামান্যই সম্পর্কযুক্ত; শুধু মাত্র সেটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বস্তরে বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে কারণ ধর্ম ছাড়া কোনো লেবেলই সেখানে ছিল না, যেটা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় নিপীড়ন করতে হবে এবং কার উপর নিপীড়নের পাল্টা প্রতিশোধ নিতে হবে; এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে সত্যিকারের সমস্যা হচ্ছে এই লেবেলটি উত্তরাধিকার সূত্রে বহু প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বহন করে চলেছে, ক্যাথলিকরা, যাদের পিতামাতা, প্রপিতামহ এবং প্র প্রপিতামহ ক্যাথলিক স্কুলে যাতায়াত করেছেন, তারা তাদের সন্তানদেরও ক্যাথলিক স্কুলে পাঠিয়েছেন, প্রোটেষ্ট্যান্ট, যার পিতামাতা, প্রপিতামহ এবং প্র-প্রপিতামহ যেমন গিয়েছিলেন প্রোটেস্ট্যান্ট স্কুলে, তাদের অনুসরণ করে তাদের সন্তানরাও প্রোটেষ্ট্যান্ট স্কুলে যাতায়াত করেছে; এই দুই সেট মানুষ, যাদের একই চামড়ার রঙ, একই ভাষা,একই জিনিসের প্রতি আগ্রহ, কিন্তু তার আসলে যেন দুটি ভিন্ন প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত, এত গভীর তাদের ঐতিহাসিক বিভাজন; এবং ধর্ম ছাড়া, বা ধর্মীয় পৃথকীকৃত শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া, সেখানে সেই পার্থক্যটাই থাকার কথা না; কসোভো থেকে প্যালেস্টাইন, ইরাক থেকে সুদান, উলস্টার থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ, ভালো করে যে কোনো জায়গায় খেয়াল করুন, আপনি দেখতে পাবেন প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিদ্যমান অমিমাংসাযযাগ্য শত্রুতা এবং হিংস্র আক্রমণাত্মক সংঘর্ষ; যদিও আমি গ্যারান্টি দিতে পারবো না, যে আপনি ধর্মকে প্রধান লেবেল হিসাবে পাবেন নিজ গ্রুপ আর গ্রুপ বহির্ভুতদের পার্থক্যসূচক হিসাবে, তবে আত্মবিশ্বাসের সাথে বাজী রাখার মতই সেটি নিশ্চিৎ ভাবে বলা সম্ভব।

ভারতে, দেশভাগের সময়, এক মিলিয়নের বেশী মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন, হিন্দু মসুলমান ধর্মীয় দাঙ্গায় (এবং প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছিলেন); ধর্ম ছাড়া আর কোনো চিহ্ন নেই তাদের শনাক্ত করার জন্য, যা দিয়ে তাদের কাউকে চিহ্নিত করা যায়, কাকে হত্যা করতে হবে; অবশেষে ধর্ম ছাড়া তাদের মধ্যে পার্থক্য করার মতো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি; সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এমন একটি ধর্মীয় গণহত্যার প্রতিক্রিয়া বিচলিত হয়ে সালমান রুশদী(৬৬) একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, Religion, as ever, is the poison in India’s blood faciatica, 01768 অনুচ্ছেদটি এখানে উল্লেখ করছি (৬৭):

এইসব কিছু বা এই সব অপরাধ যা সারা পৃথিবীতে ধর্মের ভয়ঙ্কর নামে প্রতিটি দিন সংঘটিত হচ্ছে, তাদের শ্রদ্ধা করার মত কি আছে? কত অনায়াসে, এবং কত ভয়াবহ পরিণতিসহ ধর্ম তাদের বিশ্বাস বা টোটেমকে স্থাপন করে এবং আমরাও কত বেশী উদগ্রীব থাকি তার জন্য হত্যা করতে; এবং আমরা যখন কাজটি যথেষ্ট পরিমান নিয়মিত করতে থাকি, এর ক্রমশ ক্ষীণতর হয়ে আসা প্রভাব আরো সহজ করে দেয় কাজগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে। সুতরাং ভারতে সমস্যা পরিণত হয়েছে পৃথিবীর সমস্যায়, ভারতে যা ঘটেছে তা ঘটেছে ঈশ্বরের নামে; এই সমস্যার নামই ঈশ্বর।

আমি অস্বীকার করছি না যে, কোনো অন্তঃগ্রুপ বা কোনো গোষ্ঠী অভ্যন্তরের আনুগত্য এবং গোষ্ঠী বহির্ভূতদের প্রতি সহিংসতা প্রদর্শনে মানবজাতির শক্তিশালী প্রবণতা এমনকি ধর্ম ছাড়াও টিকে থাকবে। প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল টীমের সমর্থকরা এই বিষয়টির একটি জলজ্বান্ত প্রমাণ হতে পারেন; এমনকি ফুটবল সমর্থকরাও ধর্মীয় ধারায় কখনো কখনো বিভক্ত হয়, যেমন গ্লাসগো রেঞ্জারস এবং গ্লাসগো সেল্টিকদের ক্ষেত্রে; ভাষা (যেমন বেলজিয়ামে), রেইস বা বর্ণে এবং গোত্র (বিশেষ করে আফ্রিকায়) বিভাজনের গুরুত্বপূর্ণ টোকেন বা প্রতীক হতে পারে; কিন্তু ধর্ম কমপক্ষে তিনটি উপায়ে তার সৃষ্ট ক্ষতিগুলোকে আরো ক্ষতিকর করে তোলে তার ক্ষতির প্রভাবটি আরো বেশী বৃদ্ধি করার মাধ্যমে:

  • শিশুদের লেবেল বা চিহ্নিত করার মাধ্যমে: শিশুদের বর্ণনা করা হয়, ক্যাথলিক শিশু বা প্রটেষ্টান্ট শিশু ইত্যাদি, খুবই অল্প বয়স থেকে, এবং অবশ্য যথেষ্ট কম বয়স, যখন তারা ধর্ম সম্বন্ধে নিজেদের মন স্থির করার মত কোনো ক্ষমতাই থাকে না (আমি এই শিশু নির্যাতনের বিষয়টি আলোচনা করবো নবম অধ্যায়ে।)
  • বিভাজিত স্কুল বা শিক্ষা ব্যবস্থাকে উৎসাহ দেবার মাধ্যমে: শিশুদের শিক্ষা দেয়া শুরু হয় সাধারণত খুবই অল্প বয়স থেকে, ধর্মীয় গোষ্ঠী অভ্যন্তরে সদস্যদের দিয়ে এবং পৃথকভাবে অন্য শিশুদের থেকে, যাদের পরিবার হয়তো অন্য ধর্মের অনুসারী; মোটেও বাড়াবাড়ি হবে না এট বলা যে, উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের সমস্যা একটি প্রজন্মেই শেষ হয়ে যেতে পারতো, পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা যদি বিলুপ্ত করা যেত।

 ‘গোষ্ঠী বহির্ভুত বিবাহ’ বিরুদ্ধে সামাজিক টাবু বা প্রতিষিদ্ধতা: এটি বংশগতভাবে সংঘর্ষ এবং প্রতিশোধ স্পৃহাকে জিইয়ে রাখে দ্বন্দ্বরত গ্রুপগুলোর মধ্যে মিশ্রণে বাধা সৃষ্টি করার মাধ্যমে; অসবর্ণ বিবাহ, যদি অনুমিত হতো, স্বাভাবিকভাবে এটি বিদ্যমান শক্রতাকে কমিয়ে দিত।

উত্তর আয়ারল্যাণ্ডে গ্লেনার্ম গ্রামটি আনট্রিম আর্লদের মূল জমিদারী বা ক্ষমতার কেন্দ্র। আমাদের স্মরণকালের সময়েই একবার তৎকালীন আর্ল একটি অভাবনীয় কাজ করে বসেন: তিনি একজন ক্যাথলিক রমনীকে বিয়ে করেছিলেন, সাথে সাথে গ্লেনার্ম এর ঘরে ঘরে শোকের চিহ্ন হিসাবে পর্দা নামিয়ে দেয়া। অন্য ধর্মে বিয়ে করার ভয় ধার্মিক ইহুদীদের মধ্যেও প্রবল; বেশ কিছু ইসরায়েলী শিশু মন্তব্য করেছিল তামারিন এর ইতিমধ্যে উল্লেখিত জরিপটি (উপরের উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়েছে) যে জশুয়ার জেরিকো যুদ্ধর প্রতি তাদের সমর্থনে, প্রথমেই ভিন্ন জাতি গোষ্ঠী ধর্মের সংমিশ্রণের সমস্যা উল্লেখ করে; যখন ভিন্ন ধর্মের মানুষ বিয়ে করে, উভয় দিক থেকে এই ‘মিশ্র বিয়ে সম্বন্ধে আশঙ্কার কথা উচ্চারণ করা হয় এবং কখনো এই দীর্ঘ বিতর্ক হয় এই বিয়ের সন্তানরা কিভাবে প্রতিপালিত হবে সেই বিষয়ে। আমি যখন শিশু এবং অ্যাঙলিকান চার্চের আলো বহন করে বেড়াচ্ছি, আমার মনে আছে আমি হতবাক হয়েছিলাম, একটি নিয়মের কথা শুনে, যে যখন রোমান ক্যাথলিক কোনো অ্যাঙলিকানকে বিয়ে করে, তাদের সন্তানদের সবসময় প্রতিপালন করতে হবে ক্যাথলিক হিসাবে; আমি সহজে বুঝতে পারি কেন একজন যাজক, যে কোনো গ্রুপেরই সে হোক না কেন, এই শর্ত আরোপের জন্য চাপ দেবেন, তবে আমি বুঝতে পারি না (এখনও না) এই অসাম্যতাটা কেন? অ্যাঙলিকান(৬৮) যাজকরা এর বিরুদ্ধে তাদের সমরুপী শর্ত জুড়ে দিয়ে পাল্টা জবাব দেন না কেন? খানিকটা কম নিষ্ঠুর, আমার যা মনে হয়, আমার পুরোনো চ্যাপলেইন এবং বেতচামেন (৬৯) এর ‘আওয়ার পাদ্রে’ আসলে অনেক নিরীহ তুলনামূলকভাবে।

সমাজবিজ্ঞানীরা সার্ভে করে দেখেছেন ধর্মীয় হোমোগ্যামী (Homogamy বা এই ধর্মের কাউকে বিয়ে করা) এবং হেঁটেরোগ্যামী (Heterogamy বা অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করা) দুটি অবস্থাকে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, অস্টিন এর গবেষক নরভাল ডি, গ্লেন ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু গবেষণাকে সংগ্রহ করে নতুন করে পর্যালোচনা করেন (৭০)। এবং তার উপসংহার হলো ধর্মীয় হোমোগ্যামীর একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা আছে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে (প্রটেষ্টান্টরা বিয়ে করে প্রটেষ্ট্যান্টদের, ক্যাথলিকরা কাথলিকদের, যা সার্ভের ফলাফলে সাধারণ boy next door ইফেক্টে পরিসংখ্যানগত দিক থেকেও অনেক বাড়তি) তবে হোমোগ্যামির সবচয়ে বেশী হার দেখা যায় ইহুদীদের মধ্যে। জরিপটির বিবাহিত ৬২০১ জন উত্তরদাতাদের মধ্যে, ১৪০ জন ছিলেন যারা তাদের ইহুদী বলে পরিচয় দেন, যাদের ৮৫.৭ শতাংশ বিয়ে করেছেন ইহুদী ধর্মাবলম্বী অন্য কাউকে; যতটা সম্ভাব্য প্রত্যাশিত করা হয় এমন স্বধর্মে বিয়ের হার থেকেও অনেক বেশী; অবশ্য কারো কাছে এটি আশ্চর্যজনক কিছু মনে হয়নি; কারণ ধার্মিক ইহুদীদের অসবর্ণ বিয়ে করতে বিশেষভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়; এবং ট্যাবু বা প্রতিষিদ্ধটি দেখা যায়। ইহুদীদের কৌতুকে, যেখানে মারা তাদের ছেলেদের সাবধান করে দিচ্ছেন, সোনালী চুলের সুন্দরী নারীরা ফাঁদ পেতে অপেক্ষা করছে তাদের ধরতে, যুক্তরাষ্টের তিনজন রাবাই বা ইহুদী যাজকদের বৈশিষ্ট্যমূলক মন্তব্য:

  • আমি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিবাহ পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানাই।
  • আমি পরিচালনা করি যদি দম্পতি সিদ্ধান্ত নেয় তারা তাদের সন্তানকে ইহুদী হিসাবে প্রতিপালন করবে।
  • আমি পরিচালনা করি যদি দম্পতি বিবাহ পূর্ব পরামর্শ গ্রহন করতে রাজি হয়।

একজন খ্রিষ্টীয় যাজকের সাথে একই সাথে কোনো বিয়ে পরিচালনা করার মত রাবাই খুবই দুষ্প্রাপ্য, এবং তার চাহিদা অনেক বেশী।

এমনকি ধর্ম যদি নিজে আর কোনো ক্ষতিও না করে, এর স্বেচ্ছাচারী আর সুকৌশলে সাবধানতার সাথে গড়ে তোলা মানুষে মানুষে বিভাজন–নিজ গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব আর গোষ্ঠী বহির্ভূতদের প্রতি প্রদর্শিত শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবের প্রাকতিক আর স্বাভাবিক প্রবণতাকে পরিকল্পিত আর উদ্দেশ্যমূলকভাবে উস্কে দেয়াই যথেষ্ট এটিকে পৃথিবীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অশুভ শক্তি হিসাবে রুপান্তরিত করার জন্য।

মোরাল জাইটগাইস্ট : নৈতিকতার যুগধর্ম

এই অধ্যায় শুরু হয়েছিলো যে বিষয়টি প্রদর্শন করে, তা হলো, আমরা নৈতিকতার ভিত্তি– এমনকি আমাদের মধ্যে যারা ধার্মিক হিসাবে কোনো পবিত্র গ্রহের উপর নির্ভরশীল নই, আমরা যতই সেটা কল্পনা করতে ভালোবাসি না কেন; তাহলে, কিভাবে আমরা। সিদ্ধান্ত নেই, কোনো ঠিক আর কোনোটা ভুল? আমরা যেভাবেই এই প্রশ্নের উত্তর দেই না কেন, অন্তত একটি ঐক্যমত আছে ভালো বা খারাপ বিবেচনা করে আমরা আসলেই যা করছি সে বিষয়ে। যে ঐক্যমতটি বিস্ময়করভাবে সর্বজনীন; এবং এই ঐক্যমতটির কোনো সুস্পষ্ট সম্পর্ক নেই ধর্মের সাথে। যদিও এটি সম্প্রসারিত করা সম্ভব ধার্মিকদের ক্ষেত্রেও, তারা তাদের নৈতিকতা ধর্ম থেকে এসেছে বা আসেনি, যাই ভাবুন না কেন; উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম অবশ্য যেমন, আফগান তালিবান এবং তাদের সমতুল্য যুক্তরাষ্ট্রের উগ্র খ্রিষ্ট ধর্মবাদীরা ছাড়া, বেশীর ভাগ মানুষই একটি উদার নৈতিকতার মূলনীতিগুলোর সাথে অন্ততপক্ষে মৌখিকভাবে তাদের সমর্থন প্রদান করে। আমরা বেশীর ভাগ মানুষই অপ্রয়োজনীয় কোনো কষ্টের কারণ নই, আমরা বিশ্বাস করি স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারে, এবং সেই অধিকারকে রক্ষা করাকে জরুরী মনে করি, এমনকি যখন সেটা আমাদের মতের সাথে মেলে না; আমরা আমাদের কর প্রদান করি, প্রতারণা করিনা,হত্যা করি না, ইনসেস্ট বা অজাচারে লিপ্ত নই, এমন কিছু অন্য কারো সাথেই করি না, যা আমরা চাইনা অন্যরাও আমাদের সাথে তা করুক; এই ভালো নৈতিক মূলনীতিগুলো পবিত্র গ্রন্থেও পাওয়া যাবে, তবে সেগুলো লুকিয়ে আছে আরো অনেক কিছুর সাথে, যা কোনো ভদ্র সুশীল মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব; এবং পবিত্র কোনো গ্রন্থই আমাদের এমন কোনো নিয়ম নীতি বাতলে দেয় না, যা দিয়ে। আমরা খারাপ কোনো নীতির সাথে ভালো নীতির পার্থক্য করতে পারি।

আমাদের ঐক্যমতের মূলনীতিগুলো প্রকাশ করার একটি উপায় হচ্ছে নুতন বা নিউ টেন কম্যান্ডমেন্টস; বেশ কিছু মানুষ এবং প্রতিষ্ঠান এটি করার প্রচেষ্টা করেছেন; যেটা উল্লেখযোগ্য সেটা হচ্ছে তারা সবাইই বরং প্রায় একই রকম ফলাফলের পৌঁছে ছিলেন; তারা যেটা তৈরী করেছিলেন, তাদের সময়ের নৈতিকতার প্রতিচ্ছবি, তারা যে যুগে বেঁচে ছিলেন সেই সময়ের বৈশিষ্ট্যসূচক; নীচে আমি এই যুগের দশটি কম্যাণ্ডমেন্ট বা নির্দেশের এর একটি সেট উল্লেখ করলাম, যা একটি নিরীশ্বরবাদীদের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করেছিঃ

  • অন্য কারো সাথে এমন কোনো আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন, যে আচরণ অন্যদের কাছে আপনি প্রত্যাশা করেন না।
  • যে কোনো কাজে, আন্তরিকভাবে সবসময় চেষ্টা করুন। কোনো ক্ষতি না করতে।
  • সকল মানুষ, জীবিত প্রাণী এবং সাধারণভাবেই পুরো পৃথিবীর সবকিছুর সাথেই ভালোবাসা,সততা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার সাথে আচরণ করুন।
  • কখনোই অশুভ কোনো কিছু দেখলে উপেক্ষা করবেন না বা ন্যায় বিচার করা থেকে কখনোই পিছিয়ে আসবেন না, কিন্তু সবসময় প্রস্তুত থাকবেন, কোনো খারাপ কাজের জন্য অবলীলায় আন্তরিকভাবে দোষ স্বীকার এবং সতোর সাথে করা কোনো অনুশোচনাকে ক্ষমা করে দেবার জন্য।
  • জীবনে বাচুন আনন্দ আর অসীম বিস্ময়ের অনুভূতি নিয়ে।
  • সবসময় চেষ্টা করুন নতুন কিছু শেখার জন্য।
  • সবকিছুকে যাচাই করুন, বাস্তব তথ্যর সাথে সবসময় আপনার নিজস্ব ধারণাকে যাচাই করে দেখুন, দীর্ঘদিন ধরে লালন করা কোনো বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকুন যদি বাস্তব তথ্য প্রমাণের সাথে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
  • কখনোই কাউকে বাধা দেবার চেষ্টা বা ভিন্ন মত থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেবেন না, সবসময় অন্যদের আপনার সাথে একমত না হবার অধিকারকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবেন;
  • আপনার নিজস্ব যুক্তি এবং অভিজ্ঞতাগুলোকে ভিত্তি করে আপনার নিজস্ব মতামত গড়ে তুলুন, অন্যদের অন্ধভাবে অনুসরণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন;
  •  সবকিছুকেই প্রশ্ন করুন।

এই ক্ষুদ্র তালিকাটি কোনো মহান জ্ঞানী সাধু বা নবী বা পেশাজীবি কোনো নৈতিকতা বিশেষজ্ঞের লেখা নয়। খুব সাধারণ একজন ওয়েব ব্লগার হচ্ছেন এর রচয়িতা, বর্তমান যুগে একটি সুন্দর নৈতিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলনীতিগুলোকে সার সংক্ষেপ করে প্রকাশ করা আন্তরিক প্রচেষ্টা। একটি সার্চ ইঞ্জিনে নিউ টেন কমাণ্ডমেন্ট টাইপ করে আমি এটাই খুঁজে পেয়েছিলাম প্রথম, এবং ইচ্ছা করেই আমিও আর খুজিনি। মূল বিষয়টি হলো, এধরনের কোনো তালিকা যে কোনো সাধারণ, ভদ্র মানুষই করবেন, সবাই যদিও ঠিক একই দশটির তালিকা করবেন না। দার্শনিক জন রলস(৭১) হয়তো এমন কিছু যোগ করতে পারেন তালিকায় : ‘সবসময় নিজের নিয়ম তৈরী করে নিন যেন আপনার জানা নেই, সামাজিক প্রাধান্য পরম্পরার স্তর বিন্যাসে আপনার অবস্থান কোথায়; ইনুইটদের (৭২) একটি সামাজিক প্রথা, খাদ্য ভাগাভাগি করে নেবার একটি সিস্টেম আছে যা রলের এই নীতির বাস্তবসম্মত একটি উদাহরণ হতে পারে: যে ব্যক্তিটি খাদ্য কেটে ভাগাভাগি করে, সে সবচেয়ে শেষে তার অংশটি পছন্দ করার সুযোগ পায়;

আমার নিজের সংশোধিত টেন কম্যাণ্ডমেন্টস উপরের তালিকা থেকে বেশ কয়টি নির্বাচন করবো এবং আরো কয়েকটি যোগ করার চেষ্টা করবো:

  • আপনার যৌন জীবন উপভোগ করার চেষ্টা করুন (যতক্ষণ এটি অন্য কারো ক্ষতি করছে না) এবং অন্যদেরকে তাদের জীবন উপভোগ করতে দিন ব্যক্তিগতভাবে তাদের যে ধরনের পছন্দ থাকুক না কেন– যা আপনার চিন্তার কোনো বিষয় নয়।
  • লিঙ্গ, বর্ণ (এবং যতটুকু সম্ভব) প্রজাতির উপর ভিত্তি করে কাউকে নির্যাতন বা বৈষম্যমূলক আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন।
  •  আপনার শিশুদের কোনো মতবাদে দীক্ষিত করার থেকে বিরত থাকুন, তাদেরকে শেখান, নিজে কিভাবে চিন্তা করতে হবে, কিভাবে মুল্যায়ন করতে হবে উপস্থিত সব প্রমাণগুলোকে এবং শেখান কিভাবে আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে হবে।
  •  ভবিষ্যতকে মূল্য দিন, আপনার নিজের জীবনের সময়কালের চেয়ে বেশী।

কোনোটি অগ্রাধিকার পাচ্ছে সেই ছোট খাটো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই, মূল কথা হলো আমরা সবাই প্রায় সামনের দিকে এগিয়ে গেছি এবং সেই বাইবেলে বর্ণিত সময় থেকে এই অগ্রসর হবার পরিমানটাও অনেক বিশাল; দাসত্ব, যা বাইবেলে এবং ইতিহাসের প্রায় পুরো সময় ধরেই স্বাভাবিক হিসাবেই ধরে নেয়া হয়েছে, সভ্য সব দেশগুলো থেকেই তা বিলুপ্ত করা হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীতে। প্রায় সব সভ্য দেশই স্বীকার করে নিয়েছে যা কিনা ১৯২০ সাল পর্যন্ত সর্বজনীনভাবে অস্বীকৃত ছিল.. যে কোনো নারীদের ভোটাধিকার বা জুরি হিসাবে তাদের দ্বায়িত্ব পালনের অধিকার হচ্ছে যে কোনো পুরুষের সমান। আজকের যুগে অগ্রসর জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত সমাজে বা কোনো সভ্য দেশেই ( যে ক্যাটাগরীতে অবশ্যই কিছু দেশ, যেমন সৌদি আরব অন্তর্ভুক্ত নয়) নারীদের আর সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হয় না, বাইবেলে বর্ণিত সময়ে স্পষ্টতই তারা যেভাবে গন্য হতেন; যে কোনো আধুনিক আইন আলাদত আব্রাহামকে শিশু নির্যাতনের জন্য বিচার করতো এবং যদি সে আসলেই আইজাককে উৎসর্গ করার পরিকল্পনাটা শেষ পর্যন্ত কার্যকর করতো, তাহলে তার বিচার হতো প্রথম ডিগ্রী হত্যার জন্য; কিন্তু তার সময়ের নৈতিকতার, তার আচরণ পুরোপুরিভাবে প্রশংসার দাবীদার, কারণ ঈশ্বরের নির্দেশই মোতাবেক তিনি কাজ করেছিলেন; ধার্মিক হই বা না হই, আমরা সবাই বদলে গেছি ব্যাপকভাবে কোনোটা সঠিক আর কোনো ভুল সে সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে; এই পরিবর্তনের প্রকৃতিটা আসলেই কি, আর এটিকে পরিচালিত করছেই বা কি?

যে কোনো সমাজে খানিকটা রহস্যময় একধরনের ঐক্যমতের অস্তিত্ব আছে, যা পরিবর্তিত হয় কয়েক দশকের সময়ের পরিক্রমায় এবং যার জন্য একটি ধার করা জার্মান শব্দ জাইটগাইস্ট (Zeitgeist) ব্যবহার করা খুব একটা বাড়াবাড়ি হবে বলে মনে হয় না, শব্দটির অর্থ spirit of the times বা যুগ ধর্ম; আমি বলেছিলাম নারীদের ভোট দেবার অধিকার পৃথিবীর যে কোনো গণতন্ত্রে এখন সর্বজনীন; কিন্তু এই সংশোধনমূলক সংস্কারটি কিন্তু অপেক্ষাকৃত বেশ সাম্প্রতিক। নীচে কিছু সময়কাল দেয়া হলো বিভিন্ন দেশের নারীরা যখন তাদের ভোটাধিকার অর্জন করেছিলেন: নিউ জীল্যান্ড (১৮৯৩), অষ্ট্রেলিয়া (১৯০২), ফিনল্যান্ড (১৯০৬), নরওয়ে (১৯১৩), যুক্তরাষ্ট্র (১৯০৬), ব্রিটেইন (১৯২৮), ফ্রান্স (১৯৪৫), বেলজিয়াম (১৯৪৬), সুইজারল্যান্ড (১৯৭১), কুয়েত (২০০৬)।

বিংশ শতাব্দী ধরে বিস্তৃত এই সময়গুলো পরিবর্তিত হতে থাকা জাইটগাইস্ট বা যুগধর্মের একটি পরিমাপক; আরেকটি উদাহরণ হলো জাতি বা বর্ণ বা রেস নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি; আজকের মানদণ্ডে বিচার করলে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ব্রিটেনের সবাইকে (এবং অন্য অনেক দেশেও) বর্ণবাদী হিসাবে বিচার করা যেতে পারে; প্রায় বেশীর ভাগ সাদা চামড়ার মানুষরা বিশ্বাস করতেন কালো চামড়ার মানুষরা (যে শ্রেনীতে তারা ভীষণ বৈচিত্রময় আফ্রিকাবাসীদের, এবং তাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। এমন, যেমন ভারতীয়, অষ্ট্রেলীয় এবং মেলানেশিয়া দ্বীপবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করতেন। তাদের তুলনায় সবদিক থেকে নীচু স্তরের, শুধুমাত্র নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে জাহির করার লক্ষ্যে তাদের ছন্দজ্ঞান ছাড়া। ১৯২০ সালে জেমস বন্ড সমতুল্য অনেকের শৈশবের হিরো ছিলেন কেতাদূরস্ত বুলডগ ড্রামন্ড; একটি উপন্যাসে, ‘দ্য ব্ল্যাক গ্যাং অ্যান্ড ড্রামন্ড’ ‘ইহুদী বিদেশী এবং অন্যান্য অপরিষ্কার মানুষ’ এর কথা উল্লেখ করেছেন, ‘দ্য ফিমেল অব দি স্পিসিস’ এ এর চূড়ান্ত দৃশ্যে ড্রামন্ড খুব ধূর্ততায় নিজেকে ছদ্মবেশে সাজিয়ে ছিল পেড্রো হিসাবে, প্রধান খলনায়কের কৃষ্ণাঙ্গ চাকর; পাঠক এবং খলনায়কের কাছে নিজের নাটকীয় আত্মপ্রকাশের সময়, অর্থাৎ পেড্রো যে আসলে ড্রামন্ড নিজেই, তিনি কিন্তু বলতে পারতেন, ‘তুমি ভেবেছো আমি পেড্রো, কিন্তু তুমি বুঝতে পারোনি, আমি তোমার প্রধান শত্রু ড্রাম, কালো রঙ মেখেছি’; তার বদলে তিনি এই শব্দগুলো বাছাই করেছিলেন, ‘সব দাড়ি মিথ্যা না, কিন্তু সব নিগারদের গায়ে গন্ধ আছে; এই দাড়ি মিথ্যা নয় আর এই নিগারের গায়ে কোনো গন্ধ নেই; সুতরাং আমি ভাবছি কোথাও না কোথাও কিছু গণ্ডগোল আছে; আমি এটি পড়েছি ১৯৫০ এর দশকে, প্রায় এটি লেখার তিন দশক পর এবং তখনও কোনো অল্প বয়সী কিশোরের (কোনো মতে) এই বই পড়ে শিহরিত হওয়া সম্ভব এর নাটকীয়তায় এবং বর্ণবাদের দিকে নজর না দিয়ে। এ যুগে এটা অকল্পনীয়।

থমাস হেনরী হাক্সলী (৭৩) তাঁর সময়ের মানদণ্ডে একজন প্রগতিশীল, উদারপন্থী মানুষ; কিন্তু তার সময় আমাদের সময় না; এবং ১৮৭১ সালে তিনি লিখেছিলেন (৭৪):

কোনো যুক্তিশীল মানুষ, সব তথ্য ভালো ভাবে জেনে, বিশ্বাস করতে পারেন যে, একজন গড়পড়তা নিগ্রো একজন শেতাঙ্গের সমতুল্য বা আরো অসম্ভব, তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ হতে পারে; এবং যদি এটি সত্যি হয়, সত্যি স্পষ্টতই অবিশ্বাস্য যে, যখন তার সমস্ত অক্ষমতা অপসারণ করা হয় এবং আমাদের প্রোগন্যাথাস (যাদের চোয়াল সামনের দিকে বেশী বেরিয়ে থাকে) আত্মীয়রা যদি নিরপেক্ষ একটি ক্ষেত্র পায় কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব ছাড়া, সেই সাথে নির্যাতনকারী শোষকের অনুপস্থিতি, তারা তাহলে সফলতার সাথে তাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড় মস্তিস্ক এবং ছোট চোয়াল বিশিষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, এমন কোনো প্রতিযোগিতায়, যেখানে চিন্তার লড়াই হবে, কামড়ের না; সভ্যতার প্রাধান্য পরম্পরায় সবচেয়ে উঁচু জায়গাটি অবশ্যই আমাদের গাঢ় চামড়ার স্বজনদের নাগালের অনেক বাইরে।

সাধারণত ভালো ঐতিহাসিকরা অতীতের কোনো বক্তব্যকে তাদের নিজেস্ব সময়ের মানদণ্ডে বিচার করেন না; আব্রাহাম লিঙ্কন(৭৫), হাক্সলীর মতই, তার সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রসর ছিলেন; কিন্তু রেস বা বর্ণ সংক্রান্ত তার মতামত আমাদের সময়ের তুলনায় বর্ণবাদী মনে হতে পারে; ১৮৫৮ সালে স্টিফেন এ. ডগলাসের সাথে তার বিতর্কের কিছু অংশ পড়া যাক:

আমি বলবো, আমি এখন কিংবা কখনোই কোনোভাবেই সাদা এবং কালো, এই দুটি রেস বা বর্ণের মধ্যে সামাজিক এবং রাজনৈতিক সমতা আনার লক্ষ্যে কোনো পরিবর্তনের পক্ষে ছিলাম না, এবং আমি এখন কিংবা কখনই নিগ্রোদের ভোটার বা জুরির কাজের জন্যে অধিকার প্রদানের পক্ষে ছিলাম না, এছাড়া তাদের কোনো প্রতিনিধিত্বশীল দ্বায়িত্ব এবং সাদাদের সাথে তাদের অসবর্ণ বিবাহেরও সমর্থন করি না; এবং উপরন্তু আমি বলবো, সাদা ও কালো বর্ণের মানুষদের মধ্যে শারীরিক পার্থক্য আছে, যা আমি বিশ্বাস করি চিরকালের মত দুটি জাতিকে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমতায় বাস করা থেকে বিরত রাখবে চিরকাল; এবং যেহেতু তারা এভাবে বসবাস করতে পারবে না, সুতরাং যতক্ষণ তারা একসাথে সহাবস্থান করবে, উর্ধতন এবং অধস্তন এই দুটি অবস্থান অবশ্যই থাকতে হবে; এবং আমি আর যে কোনো মানুষের মতই এই উর্ধতন অবস্থানটিকে শেতাঙ্গ বর্ণের মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করার পক্ষে (৭৬)।

যদি হাক্সলী এবং লিংকন আমাদের সময়ে জন্মগ্রহন ও শিক্ষিত হতেন, আমাদের মধ্যে তারাই হয়তো সবার প্রথমে ঘৃণায় কুকড়ে উঠতেন আমাদের সবার সাথে তাদের নিজেদের ভিক্টোরিয়ান সময়কালের চিন্তাধারা এবং নৈতিকতায় ভারাক্রান্ত কণ্ঠ শুনে; আমি তাদের উদ্ধৃতি ব্যবহার করলাম শুধু মাত্র বোঝাতে যে, কিভাবে আসলে যুগে যুগে সময়ের পরিক্রমায় নৈতিকতার ধর্ম বা জাইটগাইষ্ট অগ্রসর হয়েছে সামনের দিকে; যদি এমনকি হাক্সলী যিনি তার সময়ের অন্যতম সেরা উদারপন্থী মানুষ ছিলেন এবং এমন কি লিঙ্কন, যিনি দাসদের মুক্ত করেছিলেন, এধরনের কথা বলতে পারেন, তাহলে চিন্তা করে দেখুন গড়পড়তা ভিক্টোরিয়ীয় যুগের মানুষরা কি ভাবতেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর দিকে গেলে, অবশ্যই সবার জানা যে, ওয়াশিংটন, জেফারসন এবং জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত যুগের প্রগতিশীল মানুষরা প্রত্যেকেই ক্রীতদাসের মালিক ছিলেন; জাইটগাইস্ট অগ্রসর হয়েছে, ক্রমাগত নিরবিচ্ছিন্নভাবে যে আমরা অনেক সময় ব্যপারটাকে স্বাভাবিক ধরে নেই এবং ভুলে যাই যে পরিবর্তন আসলেই একটি সত্য বিস্ময়কর ঘটনা তার নিজের যোগ্যতাতেই।

আরো অগণিত উদাহরণ আছে, যখন প্রথম নাবিকরা মরিশাস দ্বীপে পা রেখেছিলেন, এবং নিরীহ ডোডো পাখীদের দেখেছিলেন, তাদের কাছে আর কিছু মনে হয়নি শুধুমাত্র তাদের পিটিয়ে মারা ছাড়া; তারা এমনকি তাদের খাবারের জন্যেও হত্যা করেনি (তাদের খাবার অযোগ্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে)। স্পষ্টতই এই নিরীহ আত্মরক্ষায় অক্ষম, সহজে পোষ মানানো যায়, উড়তে অক্ষম পাখীদের মাথায় বাড়ি দিয়ে হত্যা করা তাদের জন্য কোনো একটা কিছু করার মত কাজ ছিল হয়তো; আজকের যুগে এমন ব্যবহার অকল্পনীয়, ডোডোর মত কোনো আধুনিক সমতুল্য প্রাণীর বিলুপ্তি, এমনকি কোনো দুর্ঘটনায় যদি তা ঘটে থাকে, বা ইচ্ছামূলকভাবে মানুষের দ্বারা হলে তো বটেই, তাকে ট্রাজেডি হিসাবে গণ্য করা হয়।

আজকের সাংস্কৃতিক পরিবেশের মানদণ্ডে বলা যেতে পারে এরকম একটি ট্রাজেডী, সাম্প্রতিক সময়ে Thylacinus বা তাসমানিয়ান উলফ (Tasmanian wolf) দের বিলুপ্তি হবার ঘটনাটিকে; বর্তমানে তাদের অবলুপ্তি নিয়ে বিলাপ করা হয় অথচ ১৯০৯ সাল পর্যন্ত তাদের হত্যা করলে মোটা অঙ্কের পুরষ্কারের ব্যবস্থা ছিল; আফ্রিকা নিয়ে ভিক্টোরিয়ীয় যুগের উপন্যাসে ‘হাতি’, ‘সিংহ’ এবং ‘অ্যান্টিলোপ’ (লক্ষ করুন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ একবচনের ব্যবহার) ছিল গেম বা শিকার করার মত প্রাণী; এবং এদের সাথে কি করা হতো তখন, দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে তাদের হত্যা করা হতো গুলি করে; এই হত্যা খাদ্যের জন্য না, আত্মরক্ষার জন্য না; শুধু শিকারের খেলার রোমাঞ্চ অনুভব করার জন্য; কিন্তু সেই যুগধর্ম বা জাইটগাইস্টও বদলে গেছে। স্বীকার করতে হবে, এখনও ধনবান ব্যক্তিরা, সাধারণত বসে থাকার জীবনযাত্রায়। অভ্যস্থ শিকারী খেলোয়াড়রা তাদের ল্যান্ড রোভার গাড়ীর নিরাপত্তায় বসে থেকে হয়তো আফ্রিকার প্রাণীদের হত্যা করতে পারেন এখনও এবং তাদের সংরক্ষণ করা মাথা নিয়ে বাড়ীও ফিরতে পারেন; কিন্তু তার জন্য তাদের চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হয়, এবং নির্বিচারে সবার ঘৃণার পাত্র হন তারা। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়টি একই নৈতিকতার গ্রহনযোগ্য মূল্যে পরিণত হয়েছে একসময় যেভাবে সাবাথের পবিত্রতা রক্ষা বা মুর্তি পূজা না করার কাজটিকে যেভাবে নৈতিকতার অবস্থান হিসাবে গন্য করা হতো।

উত্তাল উন্মুক্ত ষাটের দশক তারুণ্য আর উদারপন্থী আধুনিকতার জন্য কিংবদন্তীসম; কিন্তু সেই দশকের শুরুতেই একজন ব্যারিষ্টার, ‘লেডী চ্যাটারলী’স লাভার’ (৭৭) এর অশ্লীলতার বিরুদ্ধে করা মামলার সময় তখনও জুরিদের জিজ্ঞাসা করতে পারতেন, ‘আপনারা কি আপনাদের অল্পবয়সী পুত্র, কন্যাদের কারণ ছেলেদের মত মেয়েরাও পড়তে পারে ( আপনি কি বিশ্বাস করতে পারেন, তিনি সত্যি এই কথা বলেছেন) এই বই পড়তে সম্মতি দেবেন? এমন কোনো বই কে কি আপনার ঘরে জায়গা দেবেন? এই বইটাকে এমন কি আপনি আপনার স্ত্রী কিংবা চাকরদের পড়ার অনুমতি দেবেন?? তার শেষ প্রশ্নটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি উদাহরণ, যা প্রদর্শন করছে কি দ্রুত যুগের ধর্মের বা জাইটগাইষ্টের পরিবর্তন হয়েছে।

ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনার জন্য সর্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে অথচ এই হত্যার সংখ্যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যার তুলনায় বহু গুণে কম; নৈতিকভাবে কোনটি গ্রহনযোগ্য তার মানদণ্ডটি মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে স্থির একটি গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, পরিবর্তিত হচ্ছে দ্রুত; ডোনাল্ড রামসফেল্ড এর কথা শুনতে আজ এত অসহ্য আর অসংবেদশীল মনে হয়, অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার এই কথাগুলো শুনতে অতি সংবেদনশীল পর দুঃখে কাতর বা ‘ব্লিডিং হার্ট’ উদারপন্থী বলেই মনে হোত; মধ্যবর্তী দশকগুলো কিছু পরিবর্তন হয়েছে; আমাদের সবার মধ্যেও সেই পরিবর্তন এসেছে; এবং এই পরিবর্তনের কারণ ধর্ম না; ধর্ম ছাড়াই এটাই ঘটেছে, ধর্মের কারণে নয়।

আর এই পরিবর্তনে একটি স্থিতিশীল দিকও শনাক্ত করা সম্ভব, যা আমরা বেশীর ভাগ মানুষই চিহ্নিত করবো উন্নতি হিসাবে; এমনকি অ্যাডলফ হিটলার, ব্যাপকভাবে মানুষের ধারণায় ব্যক্তিটিকে বলা হয় চূড়ান্ত অশুভ আর অজানা একটি জগতের দিকে পৃথিবীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনিও ক্যালিগুলা(৭৮) বা গেনজিস খানের (৭৯) এর সময়ে নিষ্ঠুরতায় আদৌ চোখে পড়ার মত কোনো কিছু হবার যোগ্য হতেন না; কোনো সন্দেহ নেই হিটলার গেনজিস খান এর চেয়ে বেশী মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছেন, কিন্তু তার কাছে সেটা করার জন্য বিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি ছিল; এবং হিটলার কি সবচেয়ে বেশী আনন্দ পেতেন, যেমন গেনজিস খান স্বীকার করেছিলেন, তার হত্যার শিকারদের কাছের আর প্রিয় মানুষদের অশ্রুসিক্ত দেখাটা তার তীব্রতম আনন্দের কাজ ছিল; আমরা হিটলারের অশুভ কাজের মাত্রার পরিমাপ করি আজকের এই যুগের মানদণ্ডে, আর নৈতিকতার জাইটগাইষ্ট বা যুগ ধর্ম অনেকটুকু এগিয়েছে সেই ক্যালিগুলার সময় থেকে, ঠিক যেমন করে প্রযুক্তিও এগিয়েছে, আমাদের সময়ের মানদণ্ডেই হিটলারকে বিশেষ ভাবে অশুভ একটি চরিত্র মনে হয়।

আমার জীবনকালেই, বহু মানুষ কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়াই অবজ্ঞা আর অপমানসূচক নাম এবং জাতীয় স্টেরিওটাইপের আদান প্রদান P065: Frog, Wop, Dago, Hun, Yid, Coon, Nip, Wog ইত্যাদি; আমি দাবী করছি এধরনের শব্দগুলো ভাষা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে এখন, তবে ব্যাপকভাবেই ভদ্র সভ্য মানুষের স্তরে ব্যাপকভাবে এসব শব্দগুলো ব্যাপকভাবে নিন্দনীয়; নিগ্রো শব্দটা, যদিও এটি ব্যবহৃত হতে শুরু হয় অপমানসূচক শব্দ হিসাবে নয়, তবে শব্দটির উপস্থিতি দিয়ে যে কোনো ইংরেজী গদ্যের লেখার সময়কাল নির্ধারণ করা যেতে পারে; নানা ধরনের পূর্বসংস্কারের উপস্থিতি আসলেই কোনো লেখার সময়কাল সমন্ধে ধারণা দিতে পারে; তার নিজের সময় কেমব্রিজের একজন শ্রদ্ধেয় ধর্মতত্ত্ববিদ এ. সি. বুকে তার কমপ্যারেটিভ রেলিজিয়ন’ বইটিতে ইসলামের উপর তাঁর অধ্যায়টি এভাবে শুরু করতে পারতেন, সেমাইট বা আরব প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিকভাবে একেশ্বরবাদী, উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে যা ভাবা হতো, সে আসলে অ্যানিমিষ্ট বা সর্বপ্রাণ মতবাদী (৮০)।সংস্কৃতির ব্যতিক্রম বর্ণ বা জাত নিয়ে এই বাহুল্যতা এবং সুস্পষ্ট ভাবে একবচনের ব্যবহার The Semite ….. He is an animist, যা সমগ্র জাতির বহুত্বতাকে কেবল একটি টাইপে বা বৈশিষ্ট্যসূচক প্রকারে এনে সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টা হয়তো কোনো মাণদণ্ডে চূড়ান্ত ঘৃণ্য নয়, তবে তারা। পরিবর্তিত হতে থাকা জাইটগাইষ্ট বা যুগধর্মের ক্ষুদ্র সূচক। কেমব্রিজের ধর্মতত্ত্ব বা অন্য যে কোনো বিষয়ের কোনো অধ্যাপক আজ আর এই শব্দগুলো ব্যবহার করবেন না; পরিবর্তিত হতে থাকা নৈতিকতার যুগধর্মের এই সূক্ষ্ম আভাসগুলো আমাদের বলছে তার এই লেখাটি বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কোনো সময়েরও আগে লিখেছিলেন, এবং আসলে সেই সময়কাল ১৯৪১।

আরো চার দশক পেছনে দিকে যান, এই পরিবর্তিত মানদণ্ড আরো নির্ভুলভাবে দৃশ্যমান হবে; এর আগের একটি বইয়ে আমি এইচ জি. ওয়েলস (৮১) এর ইউটোপিয়ান (৮২) নিউ রিপাবলিক থেকে কিছু উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছিলাম; আমি আবারও তা করবো কারণ এটি আমি যা বলতে চাচ্ছি তার একটি হতবাক করার মতই দৃষ্টান্ত হতে পারে:

এবং এই নিউ রিপাবলিক কিভাবে অধস্তন বর্ণ বা রেসের সদস্যদের সাথে আচরণ করবে? কেমন ভাবে এটি কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে আচরণ করবে? .. পীত বর্ণের মানুষদের সাথে? ..এবং ইহুদীদের সাথে? এই সব কালো,বাদামী, ময়লা সাদা আর পীত বর্ণের মানুষদের দঙ্গল, যার নতুন দায়িত্ব পালনের দক্ষতায় যারা কোনো কাজে আসবে না? বেশ, পৃথিবী হচ্ছে পৃথিবী, এটি কোনো দাঁতব্য প্রতিষ্ঠান নয় এবং আমি ধরে নিচ্ছি তাদের সেখানে কোনো জায়গা নেই, সেখান থেকে তাদের বিদায় নিতে হবে– এবং সেই সাথে নতুন রিপাবলিক থেকে বিদায় নিতে হবে এই সব মানুষদের নৈতিকতার পদ্ধতিগুলোকে বিশ্বব্যাপী যে নৈতিকতার পদ্ধতিটি প্রাধান্য বিস্তার করবে, তা গঠন করা হবে মূলত মানবতার মধ্যে যা কিছু সুন্দর, ভালো এবং কর্মক্ষম, সুগঠিত বলবান শরীর এবং স্পষ্ট ও শক্তিশালী মন সৃষ্টি করার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেবার লক্ষ্যে; এবং প্রকৃতি এতদিন যে প্রক্রিয়া কাজ করে এসেছে এই পৃথিবীকে সেই রুপ দেবার লক্ষ্যে, যেখানে কোনো দুর্বলতাকে প্রতিহত করা হয় আরো দুর্বলতাকে জন্ম দেয়া থেকে .. তা হচ্ছে মৃত্যু নতুন রিপাবলিকে মানুষদের এমন একটি আদর্শ থাকবে যা এই লক্ষ্যে কোনো হত্যাকে অর্থবহ করে তুলবে।

এটা লেখা হয়েছিল ১৯০২ সালে, এবং ওয়েলসকে তার সময় প্রগতিশীল হিসাবে গন্য করা হতো; ১৯০২ সালে এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা মনোভাব, যদিও ব্যাপকভাবে সমর্থিত ছিল না, তা সত্ত্বেও তখনও ডিনার পার্টির তর্কের হিসাবে সহনীয় ও গ্রহনযোগ্য ছিল; আধুনিক পাঠকরা এর ব্যতিক্রম, আক্ষরিক অর্থেই এ ধরনের কোনো লেখা পড়লে হতবাক হয়ে পড়বেন; আমরা অনুধাবন করতে বাধ্য হবো, হিটলার যদিও জঘন্য ছিল, তাসত্ত্বেও সে কিন্তু তার সময়ের জাইটগাইষ্টের বাইরে ছিল না পুরোপুরি, যা আমাদের অবস্থান থেকে এখন যেমন তাকে মনে হয়; কত দ্রুত জাইটগাইষ্ট বা যুগের ধর্ম বদলে যায়; এটি সমান্তরালে এগিয়ে যায় যায় একটি প্রশস্ত এতটি ফ্রন্ট হিসাবে সমস্ত শিক্ষিত পৃথিবীতে।

কোথা থেকে তাহলে এই সামাজিক চেতনায় এই সম্মিলিত আর স্থির গতিতে হতে থাকা পরিবর্তনগুলো আসে? এর উত্তর দেবার। দায়ভার আমার উপরে ন্যস্ত নয়; আমার উদ্দেশ্য পূরণে এটুকু যথেষ্ট যে, নিশ্চয়ই এই পরিবর্তন ধর্ম থেকে আসে না; যদি কোনো একটি তত্ত্ব দেবার জন্য আমার উপর চাপ দেয়া হয়, আমি বিষয়টি নিয়ে এভাবে আগাতে চাই: আমাদের ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন, কেন এই বদলে যেতে থাকা নৈতিক জাইটগাইষ্ট এত ব্যাপক এবং প্রশস্তভাবে এই সাথে সংঘটিত হয় অগণিত মানুষের মধ্যে সারা বিশ্ব জুড়ে একটি সর্বজনীন রুপ নিয়ে; এবং আমাদের ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন এর পরিবর্তনের স্থির দিকটিকেও।

প্রথমে, এত অসংখ্য মানুষের মধ্যে এটি একই সাথে বা সিনক্রোনাইজ বা সমন্বয় হয়ে কিভাবে ঘটে? এটি একটি মন থেকে অন্য একটি মনে বিস্তার লাভ করে বিভিন্ন বারের, বা ডিনার পার্টির কথপোকথনে, বই এবং বই সমালোচনার মাধ্যমে, খবরের কাগজ বা টিভি সম্প্রচারের মাধ্যমে এবং বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে; নৈতিকতার পরিবেশ পরিবর্তনের সংকেত পাওয়া যায় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়তে, রেডিও টকশোতে, রাজনৈতিক বক্তৃতায়, কিংবা কমেডিয়ানদের কৌতুক নকশায়,সোপ অপেরার সংলাপে, পার্লামেন্টে ভোটর মাধ্যমে আইন বানানোর প্রক্রিয়ায় এবং আইন ব্যাখ্যা করে বিচারকের প্রদত্ত সিদ্ধান্তে। একভাবে এটিকে বলা যায় মিম পুলে মিম এর হারের রদবদলের মাধ্যমে কিন্তু সেই বিষয়ে আমি বিস্তারিতআলোচনায় যাবো না এখন।

আমাদের মধ্যে কেউ কেউ পরিবর্তিত নৈতিকতার জাইটগাইষ্ট বা যুগ ধর্মের অগ্রসরমান ঢেউ এর খানিকটা পেছনে পড়ে আছেন আর কেউ খানিকটা এগিয়ে আছেন; কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে বেশীর ভাগই আমরা সবাই প্রায় একই জায়গায় দলবেধে অবস্থান করছি, যা মধ্যযুগের আমাদের মত মানুষদের তুলনায় অনেক সামনে; বা আব্রাহামের সেই সময় থেকে বা এই সামপ্রতিক কালের ১৯২০ সালের চেয়েও; পুরো পরিবর্তনের এই ঢেউটা সামনের দিকে এগুচ্ছে এবং আগের শতাব্দীর সামনে সারির পথপ্রদর্শক বা ভ্যানগার্ডরা (টি, এইচ, হাক্সলী যেমন একটি স্পষ্ট উদাহরণ। পরবর্তী শতাব্দীর বহু পেছনে থাকা মানুষগুলোরও পেছনে অবস্থান করে; অবশ্যই এই অগ্রসর যাত্রা কখনোই মসৃণ উত্থান না বরং আকাবাকা করাতের দাঁতের মত উঁচু নীচু; এছাড়া স্থানীয় এবং সাময়িক কিছু প্রতিবন্ধকতা বা সেটব্যাকও আছে, যেমন ২০০০ এর প্রথম দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সরকারের দ্বারা যেভাবে এর যাত্রা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে; কিন্তু সময়ের বড় পরিমাপে পরিবর্তনের প্রগতিশীল প্রবণতা সুস্পষ্ট এবং যা অব্যাহত থাকবেই।

এই স্থির দিক নির্দেশনায় মদদ জোগাচ্ছে কোনো শক্তি? আমাদের অবশ্যই অবহেলা করা চলবে না, একক ব্যক্তি হিসাবে আমাদের কিছু নেতাদের চালিকা শক্তি হিসাবে ভুমিকার কথা, যারা সময়ের অনেক অগ্রসর ছিলেন, একটি অবস্থান নিয়ে আমাদের বাকী সবাইকে প্রণোদনা যুগিয়েছেন তাদের সাথে সামনে এগিয়ে যেতে: যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন বর্ণ, শেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বর্ণবৈষম্যের যুগে সমতার কথা লালন করেছেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র (৮৩) এর মত যোগ্য রাজনৈতিক নেতারা এবং বিনোদন ও ক্রীড়া জগতের অনেক সদস্যরা যেমন পল রোবসন (৮৪), সিডনী পোয়াটিয়ের (৮৫), জেসি ওয়েন্স (৮৬) এবং জ্যাকি রবিনসন (৮৭); ক্রীতদাস আর নারীদের মুক্তি এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মূল অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেছে অনেক অসাধারণ দক্ষ আর সৎ নেতা নেত্রীরা; এই সব নেতৃত্ব দানকারী মানুষরা ছিলেন কেউ কেউ ধার্মিক, কেউ আবার ধার্মিক ছিলেন না; যারা ধার্মিক ছিলেন তাদের কেউ ভালো কাজ করেছিলেন কারণ তারা ধার্মিক ছিলেন, আর অন্যান্য ক্ষেত্রে ধর্ম শুধু ঘটনাচক্রে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল; যদিও মার্টিন লুথার কিং খ্রিষ্টান ছিলেন একজন, তিনি তার অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সিভিল ডিসঅবিডিয়েন্স বা সামাজিক প্রত্যাখ্যান বা বয়কটের আন্দোলনের শিক্ষা নিয়েছিলেন সরাসরি মহাত্মা গান্ধী থেকে, যিনি খ্রিষ্টান ছিলেন না।

তারপরও, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে, অন্য ধর্ম আর বর্ণের এবং লিঙ্গের সব মানুষদের সাথে নিয়ে আমাদের এই বিশ্বমানবতা এই ধারণা সম্বন্ধে আমাদের বোধের আর জানার ব্যাপ্তি বাড়ার বিষয়টি– এই দুটি গভীর, অনেকটাই নাড়ীর মত মূল ধারণার উৎস ছিলে জীববিজ্ঞান, বিশেষ করে বিবর্তন; কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ আর নারীরা এবং নাৎসী জার্মানীতে ইহুদী আর জিপসীরা খারাপ আচরণের শিকার হয়েছে তার একটি কারণ ছিল, তাদের পুরোপরি মানুষ হিসাবে মনে করা হতো না; দার্শনিক পিটার সিংগার তাঁর ‘অ্যানিমল লিবারেশন’ বইটিতে সবচেয়ে সুন্দর করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করে যে আমাদের স্পেসিসইজম (প্রজাতির উপর নির্ভর করে মানুষের বৈষম্যমূলক খারাপ আচরণ বিশেষ করে যা প্রকাশ হয় বিভিন্ন প্রাণিদের অপব্যবহার ও তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের মাধ্যমে) এর পরবর্তী যুগে প্রবেশ করতে হবে যেখানে সকল প্রজাতি যাদের মস্তিস্কের ক্ষমতা আছে ভালো আচরণ বোঝা তাদের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে (৮৮)। হয়তো এটি আভাস দিচ্ছে ভবিষ্যতের শতাব্দীতে নৈতিকতার জাইটগাইষ্ট কোনো দিকে দিক বরাবর পরিবর্তিত হবে; প্রাকৃতিক ভাবেই এটি আগের সংস্কারগুলো যেমন ক্রীতদাস প্রথার বিলুপ্তি এবং নারীদের মুক্তির মতই একটি অবস্থান হবে।

আমার সখের মনোবিজ্ঞান বা সামাজিক বিজ্ঞানের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে মানতে হবে আমার পক্ষে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না কেন নৈতিকতার জাইটগাইষ্ট এভাবে প্রশস্ততার ব্যাপ্তি নিয়ে একই সাথে সম্মিলিতভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; আমার ব্যাখ্যার জন্য আপাতত এতটুকু যথেষ্ট যে, বিষয়টি বাস্তব একটি সত্য, এটি পরিবর্তিত হচ্ছে এবং এটি ধর্ম দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না এবং অবশ্যই ধর্মগ্রন্থ বা স্ক্রিপচারের মাধ্যমে তো নয়ই; হয়তো এটিও মাধ্যাকর্ষণের মত কোনো একক শক্তি নয় বরং জটিল বহুমাত্রিক শক্তিগুলো অন্তর্মিলনের একটি ফলাফল, যেমন সেই শক্তির মত যা মুরের সুত্রকে পরিচালিত করে, যা কম্পিউটারের ক্ষমতার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিকে ব্যাখ্যা করে; যে কারণই হোক না কেন, জাইটগাইষ্ট এর অগ্রগতির বিষয়টি যথেষ্ট সেই দাবীটির ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে, আমাদের ঈশ্বরের প্রয়োজন আছে। ভালো হবার জন্য বা কোনোটা ভালো সেটা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেবার জন্য।

কেন হিটলার (৮৯) আর স্ট্যালিন (৯০)? তারা কি নিরীশ্বরবাদী ছিলেন না?

জাইটগাইষ্ট হয়তো অগ্রসর হচ্ছে এবং সাধারণত এটি অগ্রসর হচ্ছে প্রগতিশীল একটি দিক বরাবর, কিন্তু আমি বলেছিলাম আঁকাবাঁকা উঁচু নীচু পথে এর উত্থান পতন, এবং বেশ কিছু ভয়ঙ্কর পশ্চাদপসরনের মত বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটেছে; উল্লেখযোগ বিপর্যয়গুলো, ভয়ঙ্কর সেই নৈতিকতার অধঃপতনের মূল কারণ বিংশ শতাব্দীর সব স্বৈরাচারী একনায়করা; গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো আগে পার্থক্য করতে হবে, হিটলার আর স্ট্যালিনের মত মানুষদের অশুভ উদ্দেশ্য এবং তাদের হাতে থাকা সেই অসীম ক্ষমতাটিকে, যা দিয়ে তারা তাদের ইচ্ছা চরিতার্থ করেছিল; আমি ইতিমধ্যেই লক্ষ করেছি যে হিটলারের পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্যগুলো স্বপ্রতীয়মানভাবে রোমের সম্রাট ক্যালিগুলা বা কয়েকজন ওটোমান সুলতানদের পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্যগুলোর তুলনায় বেশী অশুভ ছিল না, যাদের অকল্পনীয় নৃশংস আচরণের কাহিনী বর্নিত আছে নোয়েল বারবার(৯১) এর “লর্ডস অব দ্য গোল্ডেন হর্ন’ বইটিতে (৯২)। হিটলারের হাতে বিংশ শতাব্দীর অস্ত্র আর যোগাযোগের প্রযুক্তি ছিল; তাসত্ত্বেও কোনো সন্দেহ নেই হিটলার আর স্ট্যালিন দুজনেই অত্যন্ত খারাপ দুজন মানুষ।

হিটলার আর স্ট্যালিন তো নিরীশ্বরবাদী ছিলেন, এ বিষয়ে আপনার কি বলার আছে? ধর্ম বিষয়ে দেয়া প্রতিটি পাবলিক লেকচারের পরে এবং বেশী ভাগ রেডিও ইন্টারভিউর পরে এই প্রশ্নটি আমাকে করা হয়েছে। প্রশ্নটি আমাকে করা হয় খানিকটা আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে এবং যা ঘণ্যভাবে দুটি ধারণাকে বহন করে (এক) হিটলার ও স্ট্যালিন শুধু নাস্তিকই ছিলেন তা নয়, (দুই) তারা যে জঘন্য কাজগুলো করেছিল তার কারণ হচ্ছে তারা নাস্তিক ছিলেন; ধারণা (এক) টি স্ট্যালিনের জন্য সত্য, কিন্তু হিটলারের ব্যপারে সন্দেহ আছে; কিন্তু এই ধারণা আর যাই হোক অপ্রাসঙ্গিক কারণ ধারণা (দুই) হচ্ছে ভুল, মিথ্যা; এবং এটি অবশ্যই অযৌক্তিক যদি চিন্তাটি (এক) নং ধারণা থেকে আসে; এমনকি যদি আমরা মেনেও নেই হিটলার আর স্ট্যালিনের দুজনেরই নাস্তিক ছিলেন, তাদের দুজনেরও গোফ ছিল, যেমন সাদ্দাম হুসেন এরও ছিল; তাহলেই বা কি? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি কিন্তু এটা না যে, খারাপ (অথবা ভালো) কোনো মানুষ ধার্মিক অথবা নাস্তিক কিনা; খারাপ লোকদের মাথা গুনে তাদের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপে ভাগ করে তাদের খারাপ কাজের তালিকা করার কাজ আমাদের না। নাৎসীদের বেল্টের বাকলে খোদাই করা Gott mit uns (বা God with us) এই সত্যটি কিছুই প্রমাণ করেনা, অন্ততপক্ষে আরো অনেক দীর্ঘ আলোচনা ছাড়া। হিটলার আর স্ট্যালিন নাস্তিক ছিলেন কি ছিলেন না সেটা বিষয় না, বরং নাস্তিকতা পদ্ধতিগতভাবে মানুষকে খারাপ কাজ করতে বাধ্য করে কি করে না সেটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সামান্যতম কোনো প্রমাণই নেই যা সমর্থন করে নাস্তিকতা মানুষেকে খারাপ কাজ করতে প্রভাবিত করে।

সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই, আসলেই স্ট্যালিন একজন নাস্তিক ছিলেন; তিনি তার শিক্ষাদীক্ষা পেয়েছেন একটি অর্থোডক্স চার্চের সেমিনারীতে (যেখানে খ্রিষ্টীয় অর্থোডক্স যাজকদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়), তার মা কখনো তার সেই হতাশা কাটাতে পারেননি, কেন তার ছেলে ধর্মযাজক হলো না তিনি যেমন চেয়েছিলেন; যে বিষয়টি, অ্যালেন বুলোক এর মতে স্ট্যালিনকে বেশ আনন্দ দিত (৯৩), হয়তো যাজক হিসাবে তার ট্রেনিং এর অভিজ্ঞতা তাকে রুশ অর্থোডক্স চার্চ, খ্রিষ্ট ধর্ম এবং সামগ্রিক ভাবে ধর্মের কট্টর বিরোধীতে রুপান্তরিত করেছিল; কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই তার নাস্তিকতা তাকে নিষ্ঠুর কাজগুলো করার জন্য প্রণোদনা যুগিয়েছে। তার আগের ধর্মীয় প্রশিক্ষণও সম্ভবত তা করেনি, যদি না, অবশ্য সেমিনারীতে চূড়ান্ত বিশ্বাসকে প্রশ্নাতীত শ্রদ্ধা, কঠোর কর্তৃত্ব এবং সেই বিশ্বাস, ফলাফলই কাজ সম্পাদনের প্রক্রিয়াটির যৌক্তিকে প্রমাণ করে, এমন কিছু শেখানোর মাধ্যমে তা ঘটে থাকে।

আর হিটলার যে নাস্তিক এই কাহিনী খুবই যত্ন সহকারে পরিকল্পনা করে প্রচার করা হয়েছে, এমন ভাবে যে এখন অনেক মানুষই তা বিশ্বাস করেন কোনো প্রশ্ন করা ছাড়াই এবং মূল সত্যকে তোয়াক্কা করে নিয়মিত আর ব্যাপকভাবে বিষয়টি প্রচার করছেন ধর্মবাদীরা; কিন্তু আসল সত্য এত স্পষ্ট নয় কোনোভাবেই; হিটলারে জন্ম হয়েছিল ক্যাথলিক একটি পরিবারে, তিনি ক্যাথলিক স্কুলেই পড়াশুনা করেছিলেন শৈশবে; যদিও বিষয়টি এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ না, তিনিও খুব সহজে ধর্মকে পরিত্যাগ করতে পারেন পরবর্তীতে, যেমন স্ট্যালিন রুশ অর্থোডক্স বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করেছিলেন টিফলিস থিওলজীকাল সেমিনারী ছাড়ার পরপরই; কিন্তু হিটলার কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাথলিসিজম পরিত্যাগ করেননি, তার সমস্ত জীবনে যথেষ্ট ইঙ্গিত আছে তিনি ধার্মিক ছিলেন, যদিও ক্যাথলিক নন, তিনি কোনো একটি স্বর্গীয় সত্তার প্রতি তার বিশ্বাস কখনোই পরিত্যাগ করেননি; যেমন তার মাইন কামফ’ বইটিতে বলেছেন যে, তিনি যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণার খবর শোনেন, ‘আমি হাটু গেড়ে বসে পড়েছিলাম এবং স্বর্গীয় সত্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম আমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে, এরকম একটি সময়ে আমাকে বেঁচে থাকার অনুমতি দিয়ে ধন্য করার জন্য (৯৪)। কিন্তু তখন ১৯১৪, তার বয়স মাত্র ২৫; হয়তো বা তিনি বদলে গিয়েছিলেন পরে?

১৯২০ সালে যখন হিটলারের বয়স একত্রিশ, তার খুব কাছের সহযোগী রুডলফ হেস, পরবর্তীতে যিনি ডেপুটি ফুহরার (উপ– রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছিলেন, বাভারিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে হের (জনাব) হিটলারকে খুব ভালো ভাবে চিনি, এবং আমি তার বেশ ঘনিষ্ট একজন, তার একটি অসাধারণ মর্যাদাপূর্ণ চরিত্র আছে, যা গভীর দয়ায় পূর্ণ, ধার্মিক এবং একজন উত্তম ক্যাথলিক (৯৫)। অবশ্যই এটার ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, যেহেতু হেস ‘মর্যাদাপূর্ণ চরিত্র’ বা ‘গভীর দয়ায় পূর্ণ’ ইত্যাদি বিশেষণগুলো ব্যবহারে এত জঘন্যভাবে ভুল করেছেন, হয়তো তিনি ভালো ক্যাথলিক অংশটাও ভুল করেছিলেন; হিটলারের কোনো কিছু ভালো বলা রীতিমত কঠিন একটি কাজ। যা আমাকে মনে করিয়ে দেয়, হাস্যকরভাবে দুঃসাহসী সেই যুক্তির কথা, যা আমি শুনেছিলাম হিটলার নিশ্চয়ই একজন নাস্তিক ছিলেন এই মতবাদের সপক্ষে নানা উৎস থেকে পুনরুল্লেখ করে, হিটলার একজন খারাপ মানুষ, খ্রিষ্টধর্ম ভালো হবার শিক্ষা দেয়, সুতরাং হিটলার খ্রিষ্টান হতে পারেন না কোনো ভাবেই। গোয়েরিং হিটলার সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন, শুধু মাত্র একজন ক্যাথলিকই পারে জার্মানীকে ঐক্যবদ্ধ করতে। আমার কি মনে করে নিতে হবে যে তিনি এমন কেউ যিনি প্রতিপালিত হয়েছেন ক্যাথলিক হিসাবে, তবে বিশ্বাসী ক্যাথলিক ছিলেন না তিনি কোনোদিনও।

১৯৩৩ সালে বার্লিনে একটি ভাষণ দেবার সময় হিটলার বলেছিলেন, “আমরা সে বিশ্বাসে পৌঁছেছি যে, মানুষের জন্য এই ধর্ম বিশ্বাসের প্রয়োজন আছে, সুতরাং নাস্তিক্যবাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা করেছি। এবং এটি শুধুমাত্র তাত্ত্বিক কোনো ঘোষণা নয়, আমরা অবশ্যই এর নির্মুল করে ছাড়বো (৯৬)। এটি হয়তো শুধু মাত্র ইঙ্গিত দেয়, অন্য অনেকের মতই, হিটলার কোনো বিশ্বাসকে বিশ্বাস করতেন; ১৯৪১ সালে জানা যায় তিনি তার অ্যাডজুট্যান্ট, জেনেরেল গেরহার্ড ইঙ্গেলকে বলেছিলেন, “আমি আমৃত্যু ক্যাথলিক হয়েই থাকবো।

এমনকি যদি তিনি সত্যিকারের বিশ্বাসী খ্রিষ্টান নাও হয়ে থাকেন, হিটলার অবশ্যই খুবই ভিন্ন ধরনের কেউ হবেন, যদি খ্রিষ্ট হত্যাকারী হিসাবে ইহুদীদের দোষ দেবার দীর্ঘদিনের খ্রিষ্টান ঐতিহ্য তাকে প্রভাবিত করে না থাকে; মিউনিখে ১৯২৩ সালের এক ভাষণে হিটলার বলেছিলেন, প্রথম কাজ হবে (জার্মানীকে) ইহুদীদের হাত থেকে বাঁচানো, যারা আমাদের দেশটাকে ধ্বংস করছে, জার্মানীকে আমরা সেই কষ্ট সহ্য করা থেকে রক্ষা করতে চাই, যেমন আরেকজন করেছিলেন, ক্রুশ বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নেয়ার মাধ্যমে (৯৭)। জন টোল্যান্ড তাঁর ‘এডলফ হিটলার: দ্য ডেফিনিটিভ বায়োগ্রাফী’ বইটিতে লিখেছেন হিটলারের ধর্মীয় অবস্থান কি ছিল ফাইনাল সল্লুশন (বন্দী সকল ইহুদীকে হত্যা করার নাৎসী সিদ্ধান্ত) এর সময়টাতে (৯৮):

তখনও রোমের চার্চের একজন ভালো সদস্য, যদিও এর হায়ারার্কি বা প্রাধান্য পরম্পরা বিষয়টি তার পছন্দের ছিলনা, তবে তিনি তার মধ্যে এর সেই শিক্ষাটি ধারণ করে রেখেছিলেন যে, ইহুদীরাই ঈশ্বরকে হত্যা করেছিল; সে কারণে ইহুদী নিধনযজ্ঞ সংগঠিত করা সম্ভব হয়েছিল বিবেক এর সামান্যতম দংশন ছাড়াই, কারণ সেখানে হিটলার শুধু ঈশ্বরের প্রতিশোধ নেবার হাত হিসাবে কাজ করেছেন যতক্ষণ তা করা সম্ভব হয়েছে নৈর্ব্যাক্তিক ভাবে, কোনো নিষ্ঠুরতা ছাড়াই।

ইহুদীদের প্রতি খ্রিষ্টানদের ঘৃণা শুধুমাত্র ক্যাথলিকদের ঐতিহ্যই না, মার্টিন লুথার (৯৯) সমভাবে তীব্র ইহুদী বিদ্বেষী ছিলেন; তার ‘ডায়েট অব ওয়ার্মর্স’ এ তিনি বলেছেন, “সমস্ত ইহুদীকে জার্মানী থেকে বিতাড়িত করা উচিৎ; এবং “অন দ্য জিউস অ্যাণ্ড দেয়ার লাইজ’ নামে তিনি পুরো একটা বইও লিখেছিলেন, যা সম্ভবত হিটলারকে প্রভাবিত করেছিল; লুথার ইহুদীদের বর্ণনা করেছিলে বিষধর সাপের বংশধর (বা Brood of vipers) শব্দটি ব্যবহার করে এবং সেই একই শব্দ হিটলারও ব্যবহার করেছিলেন তার ১৯২২ সালের উল্লেখযোগ্য একটি বক্তৃতায়, যেখানে তিনি বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছিলেন যে তিনি খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী:

খ্রিষ্টান হিসাবে আমার অনুভূতি, একজন যোদ্ধা হিসাবে। আমাকে আমার প্রভু আর ত্রাণকর্তার দিকে নির্দেশনা দেয়; এটি আমাকে নির্দেশ করে সেই মানুষটির প্রতি, যিনি একবার একাকীত্বে, তার অল্প কিছু অনুসারী পরিবেষ্টিত হয়ে, শনাক্ত করেছিলেন যে এই সব ইহুদীরা আসলে কি এবং সবাইকে আহবান করেছিলেন এদের সাথে যুদ্ধ করতে এবং তারা, ঈশ্বরের সত্য, কষ্ট সহ্যকারী হিসাবে না বরং যোদ্ধা হিসাবে সর্বশ্রেষ্টই ছিলেন, খ্রিষ্টান হিসাবে অসীম ভালোবাসা, এবং একজন মানুষ হিসাবে আমি বাইবেল এর এই সব অনুচ্ছেদগুলো পড়ি যা আমাদের বলে, কিভাবে আমাদের প্রভু অবশেষে উদ্যত হয়েছিলেন প্রতিরোধে তার সর্বশক্তি দিয়ে এবং চাবুক হাতে নিয়ে। এইসব অভিশপ্ত শয়তানের বিষধর সাপের দঙ্গলকে বহিষ্কার করেছিলেন উপসনালয় থেকে। কি অসাধারণ ছিল ইহুদী বিষাক্ততার বিরুদ্ধে তার সেই যুদ্ধ; আজ দুই হাজার বছর পর, গভীর আবেগের সাথে আমি চিহ্নিত করতে পারছি আগের চেয়ে আরো বেশী ভালোভাবে সেই সত্যটাকে যে, এর জন্য তাকে তার রক্ত দিতে হয়েছে ক্রসের উপর। খ্রিষ্টান হিসাবে আমার দ্বায়িত্ব আমি যেন নিজেকে প্রতারিত হবার কোনো সুযোগ না দেই, আমার কর্তব্য হচ্ছে সত্য আর ন্যায় বিচারের জন্য যুদ্ধ করা; এবং যদি কোনো কিছু পারে প্রদর্শন করতে যে আমরা সঠিক দায়িত্ব পালন করছি, সে হবে সেই কষ্ট যা প্রতিদিনই পুঞ্জীভুত হচ্ছে; কারণ খ্রিষ্টান হিসোবে আমার আরো দায়িত্বে আছে আমার নিজেদের জনগনের প্রতি কর্তব্য পালন করার (১০০)।

যদিও জানা কষ্টসাধ্য যে, হিটলার এই বিষধর সাপের কুণ্ডলী শব্দবন্ধটি আসলে কোথায় পেয়েছিলেন লুথারের লেখা থেকে না সরাসরি ম্যাথিউ ৩:৭ থেকে,যেভাবে লুথার সম্ভবত পেয়েছিলেন। এছাড়া ইহুদী নিপীড়ন যে ঈশ্বরের ইচ্ছার একটি অংশ এই থীমটিতে হিটলার ফিরে এসেছেন তার আত্মজীবনী “মাইন কামফ’এ (১০১) : “যেহেতু আজ আমি বিশ্বাস করি যে, আমি কাজ করছি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছানুযায়ী: নিজেকে ইহুদীদের কাছ থেকে সুরক্ষা করে; আমি আমার প্রভুর নামেই যুদ্ধ করছি। এটি ১৯২৫ সালের ঘটনা; একই কথা আবার বলেন ১৯৩৮ সালে রাইখস্টাগ (জার্মান পার্লামেন্ট) একটি ভাষণের সময়;এবং এই একই কথা তার জীবনে তিনি বহুবার বলেছেন বিভিন্ন সময়ে।

এই ধরনের তার উক্তিগুলোকে অন্যসময়ে করা তার অন্য উক্তিগুলোর সাথে ভারসাম্য খুঁজে নিতে হবে যেমন তার সেক্রেটারী যে কথাগুলো লিপিবদ্ধ করেছিলেন টেবল টক (১০২) এ, যেখানে হিটলার আবার তীব্রভাবে অখ্রিষ্টীয় দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেছেন, যা তার সেক্রেটারী লিপিবদ্ধ করেছিলেন। নীচের উক্তিগুলো সব যেমন ১৯৪১ সালে কোন এক সময় করেছিলেন:

যে সবচেয়ে বিশাল আঘাতটিকে মানবতাকে সহ্য করতে হয়েছিল তা হলো খ্রিষ্ট ধর্মের আগমন; বলশেভিজম হচ্ছে খ্রিষ্ট ধর্মেরই একটি অবৈধ সন্তান। দুটোই ইহুদীদের আবিষ্কার– ধর্মের ব্যপারে পৃথিবীতে পরিকল্পিত মিথ্যার সূচনা করেছিল খ্রিষ্ট ধর্ম।

প্রাচীন পৃথিবী কেন এত পবিত্র, বিশুদ্ধ,ভারহীন আর শান্তিপূর্ণ ছিল কারণ তারা দুটি বিশাল ভয়াবহ অভিশাপের সে সময় অজানা ছিলা, গুটি বসন্ত আর খ্রিষ্ট ধর্ম;

যখন সব বলা শেষ হয়ে যায়, আমাদের আশা করার কোনো কারণই নেই যে, ইতালীয় আর স্পেনীয়রা তাদের নিজেদের খ্রিষ্ট ধর্মের মাদকাসক্তি থেকে মুক্ত করবে। আসুন আমরাই শুধু একটি মাত্র জাতি হই, যারা এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিষেধকের ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের মুক্ত হতে পেরেছে।

হিটলারের টেবিল টক বইটিতে এধরনে বহু উদ্ধৃতি আছে, যা প্রায়ই খ্রিষ্টধর্মকে বলশেভিজমের সাথে সমতুল্য হিসাবে উল্লেখ করেছে। কখনো তুলনামূলক সমরুপ আলোচনা এসেছে কার্ল মার্কর্স এবং সেন্ট পল প্রসঙ্গে; এবং কখনোই তিনি ভুলতে পারেননি যে তারা দুজনেই ইহুদী (যদিও হিটলার খুব অদ্ভুতভাবে দৃঢ় বিশ্বাস করতেন। যীশু নিজে ইহুদী ছিলেন না); সম্ভাবনা আছে ১৯৪১ সাল অবধি হিটলারের হয়তো কোনো এক ধরনের ধর্ম ত্যাগের বিষয়টি ঘটেছে বা খ্রিষ্টধর্ম সম্পর্কে তার মোহমুক্তি হয়েছিল বা এই পরস্পর বিরোধী এ ধরনের বক্তব্য কি শধুমাত্র আমাদের জানাচ্ছে যে,হিটলার একজন সুযোগ সন্ধানী মিথ্যাবাদী, যার কোনো কথা বিশ্বাস করার মত নয়,যে কোনো দিকেই সেটির অর্থ করা যেতে পারে?

তর্ক করা যেতে পারে,তার নিজের বক্তব্য বা তার কাছের সহযোগীদের দেয়া তথ্যে সত্ত্বে, হিটলার আসলে ধার্মিক ছিলেন না কিন্তু তার শ্রোতা ও দর্শকদের মনের ধর্মীয় ভাবকে তিনি দূরভিসন্ধীর সাথে অপব্যবহার করেছিলেন; তিনি হয়তো নেপোলিয়নের সাথে একমত ছিলেন, যিনি বলেছিলেন, “ধর্ম হচ্ছে চমৎকার একটি জিনিস, যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে শান্ত করে রাখা যায়’; বা সেনেকা দি ইয়োঙ্গার এর সাথে,যিনি বলেছিলেন, সাধারণ মানুষ ধর্মকে মান্য করে সত্য হিসাবে, জ্ঞানীরা মিথ্যা হিসাবে এবং শাসকরা শোষণের উপযোগী হিসাবে;। কেউই অস্বীকার করবে না যে হিটলারের পক্ষে এমন অসৎ হওয়া খুবই সম্ভব, যদি তার আসলে উদ্দেশ্য হয় ধার্মিক হবার ভান করা,আমাদের নিজেদের অবশ্যই মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন সেক্ষেত্রে হিটলারের নশংসতার কাজগুলো কিন্তু সে নিজেই একা হাতেই করেনি; সেই বর্বরোচিত ভয়াবহ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছিল তার নির্দেশ মানা সৈন্যরা ও তাদের অফিসাররা,যাদের বেশীর ভাগই অবশ্যই খ্রিষ্টান ছিলেন।

আসলে জার্মান জনগোষ্ঠীর খ্রিষ্টধর্ম, আমরা আলোচনা করছি সেই হাইপোথিসিসটির ভিত্তিতে অবস্থিত যে হাইপোথিসিসটি ব্যাখ্যা করবে, হিটলারে আপাতদৃষ্টিতে লোক দেখানো অনান্তরিক ধর্মীয় মনোভাবের প্রচারণা বা হয়তো হিটলার ভেবেছিলেন,তার হয়তো খ্রিষ্টধর্মের প্রতি কোনো টোকেন বা স্মারক হিসাবে হলেও কিছু সহমর্মিতা প্রকাশ করা উচিৎ,নয়তো তার দুঃশাসন চার্চ থেকে যে সমর্থন পেয়েছিল,সেটা পেত না; চার্চের এই সমর্থন বহুরুপে দেখা গেছে সেই সময়ে,যার মধ্যে আছে দ্বাদশ পোপ পায়াস এর নাৎসীদের প্রতি একটি দৃঢ় অবস্থান নেবার আহবানের প্রতি ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করে যাওয়ার ব্যপারটি– আধুনিক চার্চের জন্য যা এখনও যথেষ্ট পরিমান বিব্রতকর একটি অধ্যায়।

হয় খ্রিষ্ট ধর্ম নিয়ে হিটলারের সাফাই গাওয়াটা ছিল আন্তরিক ছিল অথবা তিনি তার খ্রিষ্ট ধর্ম প্রীতি নিয়ে ভান করেছিলেন তার নিজের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে– যেমন সফলভাবে জার্মান খ্রিষ্টান ও ক্যাথলিক চার্চের কাছ থেকে সাহায্য আদায় করেছিলেন; যে কোনো ভাবেই হিটলারে শাসনের ভয়াবহ অশুভ দিকগুলোকে কোনোভাবেই নাস্তিকতার কারণে ঘটেছে বলে এমনটি দাবী করা যাবে না;এবং এমনকি যখন তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছিলেন, হিটলার প্রভিডেন্স বা ঐশ্বরিক স্বর্গীয় সত্তা সংক্রান্ত শব্দগুলো তার ভাষায় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেননিঃ রহস্যময় একটি সত্তা, তিনি বিশ্বাস করতেন,যে তাকে বিশেষ ভাবে নির্বাচন করেছে জার্মানীকে নেতৃত্ব দেবার জন্য। তিনি এটিকে মাঝে মাঝে বলতেন প্রভিডেন্স আর কোনো কোনো সময় ঈশ্বর; ১৯৩৮ সালে আনসস (Anschluss,অষ্ট্রিয়া এবং জার্মানীর রাজনৈতিক পুনর্মিলন) এর পরে যখন ভিয়েনায় হিটলার বিজয়ীর বেশ প্রত্যাবর্তন করেন,তার উচ্ছ্বসিত বক্তৃতায় ঈশ্বরের প্রসঙ্গ এসেছে এই প্রভিডেন্স এর ছদ্মবেশে: “আমি বিশ্বাস করি এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা একটা বালককে এখান থেকে রাইখে প্রেরণ করেছিলেন,তাকে সেখানে বড় হবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন,তাকে হিসাবে উন্নীত করেছিলেন জাতির নেতা হিসাবে, যেন সে তার জন্মভুমিকে আবার রাইখের সাথে যুক্ত করার জন্য নেতৃত্ব দিতে পারে (১০৩)।

১৯৩৯ সালে মিউনিখে আততায়ীর হাত থেকে সামান্যর জন্যে বেঁচে যাবার পর কিন্তু হিটলার স্বর্গীয় শক্তিকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন সেদিন কার্যতালিকায় সামান্য পরিবর্তন করার মাধ্যমে তার জীবন রক্ষা করার জন্য : ‘এখন আমি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট; আমি যে বিরগারব্রাউকেলার সময়ের একটু আগেই ছেড়ে এসেছিলাম– সেটা হচ্ছে দৈব ইচ্ছার একটি ইঙ্গিত, আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করার জন্য (১০৪)।এই ব্যর্থ হত্যা প্রচেষ্টার পর মিউনিখ এর আর্চবিশপ কার্ডিনাল মাইকেল ফাউলহাবের নির্দেশ দেন তার ক্যাথিড্রালে Te Deum বা ঈশ্বরের প্রশস্তি সঙ্গীত গাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে, আর্চডাওসিস এর পক্ষ থেকে ফুয়েরারের সৗভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়ার জন্যে স্বর্গীয় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো উদ্দেশ্যে। বেশ কিছু হিটলারের অনুসারী, যেমন গোয়েবলস চেষ্টার কোনোই ক্রটি করেননি খোদ নাৎসি মতবাদকে নিজের যোগ্যতায় একটি ধর্মে রুপান্তরিত করার জন্য। নীচের কথাগুলো ইউনাইটেড ট্রেড ইউনিয়নের প্রধানের যার প্রার্থনার মত একটি রুপ আছে, ছন্দ আছে খ্রিষ্টান প্রভুর প্রতি প্রার্থনার মত (আমাদের পিতা) বা ক্রিড এর মত:

অ্যাডলফ হিটলার! আমরা শুধুমাত্র আপনার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি; আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞা নবায়ন করতে চাই এই মুহূর্তে: এই পৃথিবীতে আমরা শুধু। বিশ্বাস করি অ্যাডলফ হিটলারকে; আমরা বিশ্বাস করি ন্যাশনাল সমাজতন্ত্র (নাৎসী পার্টি) আমাদের জনগনের জন্য একমাত্র রক্ষাকারী বিশ্বাস; আমরা বিশ্বাস করি স্বর্গীয় একজন প্রভু ঈশ্বর আছেন, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন, আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমাদের দৃশ্যতই আশীর্বাদ করেছেন।এবং আমরা বিশ্বাস করি যে এই প্রভু ঈশ্বর অ্যাডলফ হিটলারকে প্রেরণ করেছেন যেন জার্মানী চিরকালের জন্য শক্তিশালী জাতির ভিত্তি রচনা করতে পারে (১০৫)।

স্ট্যালিন নাস্তিক ছিলেন, হিটলার সম্ভবত নাস্তিক ছিলেন না, কিন্তু এমনকি তিনি যদি নাস্তিকও হতেন, তাহলেও স্ট্যালিন/হিটলার বিতর্কের শেষ কথা খুবই সাধারণ; কোনো একক ব্যক্তি নাস্তিক হয়তো খারাপ কাজ করতে পারেন, কিন্তু তারা নাস্তিকতার নামে কোনো অশুভ কাজ করেন না। স্ট্যালিন এবং হিটলার অত্যন্ত খারাপ কাজ করেছিলেন– যথাক্রমে গোঁড়া মতবাদ কিংবা কট্টরপন্থী মার্ক্সবাদের নামে এবং উন্মত্ত ও অবৈজ্ঞানিক ইউজেনিকস তত্ত্বের কারণে– যা খানিকটা মিশ্রিত ছিল ভাগনারীয় (১০৬) পাগলামী। তবে ধর্মীয় যুদ্ধ আসলেই ধর্মের নামেই লড়াই করা হয়; এবং ইতিহাসে তাদের উপস্থিতি ভয়ঙ্কর ভাবে নিয়মিত; আমি এমন কোনো যুদ্ধের কথা মনে করতে পারছি না যা নাস্তিকতাবাদের নামে করা হয়েছিল। আর কেনই বা তা হবে? কোনো যুদ্ধের উদ্দেশ্য থাকতে পারে অর্থনৈতিক লালসা, রাজনৈতিক অভিলাষ, জাতি কিংবা বর্ণগত সংস্কার, গভীরভাবে লালন করা কোনো দুঃখ দুর্দশা বা প্রতিশোধ কিংবা কোনো জাতির নিয়তি নির্ধারণে দেশপ্রেম জনিত বিশ্বাস; এবং কোনো যুদ্ধের আরো সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে কারো ধর্মের প্রতি বিশ্বাস যে তাদের ধর্মটি একমাত্র সত্যিকারের ধর্ম; যা আরো দৃঢ় করে প্রবিত্র বইগুলো যা কোনো রাখ ঢাক না রেখেই সকল অবিশ্বাসী এবং অন্য ধর্মের বিশ্বাসীদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে, এবং স্পষ্টভাবে প্রতিজ্ঞা করেছে যে ঈশ্বরের যোদ্ধারা শহীদদের স্বর্গে প্রবেশ করবে সরাসরি। স্যাম হ্যারিস, প্রায়ই ঠিক নিশানা বরাবর যিনি আঘাত করে থাকেন, তার “দি এন্ড অফ ফেইথ’, বইয়ে লিখেছিলেন (১০৭):

ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপদ হচ্ছে যে এটি খুব সাধারণ কোনো মানুষকে এর উন্মত্ততার সুফল ভোগ করার সুযোগ করে দেয় এবং তাদেরকে মনে করা হয় পবিত্র’; কারণ প্রতিটি নতুন প্রজন্মের শিশুদের শেখানো হয় ধর্মীয় মতবাদ আর প্রস্তাবনার যৌক্তিকতা প্রমাণের কোনো প্রয়োজন পড়ে না, যেভাবে আমরা অন্য সব প্রস্তাবনার জন্য আবশ্যিকভাবে যৌক্তিকতা খুজি; মানব সভ্যতা এখনও সম্পূর্ণ যুক্তিহীনদের যোদ্ধা দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে আছে; আমরা এমনকি এখনও আমাদের হত্যা করছি, প্রাচীন এক সাহিত্যের জন্য; কে ভেবেছিল এরকম দুঃখজনক উদ্ভট কোনো কিছু সম্ভব হতে পারে?

আর এর ব্যতিক্রম, কেনই বা একজন যুদ্ধে যাবে অনুপস্থিত কোনো একটি বিশ্বাসের জন্য?

পাদটীকা:

(১) সন ও কাহাসি (১৮৮০-১৯৩৪) আইরিশ নাট্যকার।

 (২) টেন কম্যান্ডমেন্টস, যা ডেকালগ নামে পরিচিত, ধর্মীয় উপাসনা ও নৈতিকতা সংক্রান্ত মূল নির্দেশাবলী, ইহুদী ও খ্রিষ্টীয় ধর্মীয় বিশ্বাসের কেন্দ্রে এর অবস্থান। হিব্রু বাইবেলে এটি দুইবার আবির্ভূত হয়েছে, এক্সোডাস ও ডিউটেরোনমীতে। ধর্মীয় কিংবদন্তী অনুযায়ী ঈশ্বর মাউন্ট সাইনাই এ দুটি পাথরের ট্যাবলেটে দশটি নির্দেশ খোদাই করে মোজেস এর হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

(৩) Lane Fox, R. The Unauthorized Version. London: Penguin 97 Berlinerblau, J.The Secular Bible: Why Nonbelievers Must Take Religion Seriously. Cambridge: Cambridge University Press.

(৪) জন শেলবী ‘জ্যাক স্পঙ যুক্তরাষ্ট্রের একজন এপিসকোপাল চার্চ বিশপ ও লেখক।

(৫) The Sins Of Scripture: Exposing the Bible’s Texts of Hate to Reveal the God of Love: John S Spong

 (৬) রিচার্ড হলোওয়ে, স্কটিশ লেখক, ও স্কটিশ এপিসকোপাল চার্চের প্রাক্তন বিশপ।

(৭) Holloway, R. (1999). Godless Morality: Keeping Religion out of Ethics. Edinburgh: Canongate. Holloway, R. (2001). Doubts and Loves: What is Left of Christianity.Edinburgh: Canongate. রিচার্ড হলোওয়ের রিকভারিং ক্রিশ্চিয়ান পংক্তিটি, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৩ এ গার্ডিয়ানের একটি পুস্তক পর্যালোচনা থেকে নেয়া। http://books.guardian. co.uk/reviews/ scienceandnaturel 0,6121,894941,00.html; cout

সাংবাদিক মুরিয়েল গ্রে বিশপ হলোওয়ের সাথে আমার এডিনবরা সংলাপ নিয়ে চমৎকার একটি রিপোর্ট লিখেছিলেন (গ্লাসগো) হেরাল্ড পত্রিকায়: http://www.sunday herald.com/44517.

(৮) ওল্ড টেষ্টামেন্ট হচ্ছে খ্রিষ্টীয় বাইবেলের প্রথম অংশ, এটি মূলত হিব্রু বাইবেল নির্ভর, প্রাচীন ইসরায়েলাইটসদের ধর্মীয় রচনার একটি সংকলন।

(৯) আব্রাহামীয় ধর্মীয় কাহিনীতে নোয়া (আরবী– নুহ) জেনেসিসে বর্ণিত মহাপ্লাবনের পূর্বে দশম প্যাট্রিয়ার্ক বা পিতৃসুলভ চরিত্র, অন্যান্য আব্রাহামীয় ধর্ম যেমন ইসলামেও এর বিস্তারিত বর্ণনা আছে।

(১০) উটা নাপিসটিম বা উটনাপিসটিম, মেসোপটেমিয়ার উরুক এর রাজা গিলগামেশকে নিয়ে রচিত দি এপিক অফ গিলগামেশ (২৮০০ থেকে ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এর একটি চরিত্র, যাকে পানির দেবতা ইয়া বা এনকি নির্দেশ দিয়েছিলেন একটি জাহাজ বানাতে, যা মহাপ্লাবন থেকে জীবনকে রক্ষা করবে।

(১১) যুক্তরাষ্ট্রের যাজকদের সেই সব ধর্ম বক্তৃতাগুলো– যেগুলো হারিকেন কারিনার জন্য মানুষের ‘পাপ’ কে দায়ী করেছিল– সেগুলোর ভয়ঙ্কর একটি সংকলন দেখতে দেখুন: http:// universist. org/ neworleans.htm;

 (১২) ব্যপারটা স্পষ্ট নয় সেই কাহিনীটা, যার উৎস http://datelinehollywood. com/ archives 2005/09/05/robertson-blames-hurricane-on-choice of-ellen-deneres-to-hostemmys/,, 161g 70 fpart,

 তবে সত্য বা মিথ্যা যাই হোক, ব্যাপকভাবে এটি বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে, সন্দেহ নেই কারণ এটি ইভানজেলিকাল ধর্মযাজকদের স্বভাবজাত বক্তব্যের মত, যাদের মধ্যে রবার্টর্সনও আছেন, যারা নানা দুর্যোগ যেমন কাটরিনা সম্বন্ধে সাধারণত এধরনের মন্তব্য করেন; উদাহরণ হিসাবে দেখুন: http://www. emediawire.com/ releases/ 2005/9/emw281940.htm, যে ওয়েবসাইটটি বলছে কাটরিনা সংক্রান্ত এই গল্পটি মিথ্যা সেখানে রবার্টসনের আরো একটি উদ্ধৃতি আছে, একটি ওরলান্ডো, ফ্লোরিডায় একটি পুরোনো গে প্রাইড মার্চ সংক্রান্ত। “আমি হুশিয়ার করে দিতে চাই ওরল্যাণ্ডোকে, যে আপনারা সরাসরি কোনো একটি ভংঙ্কর হারিকেন এর আক্রান্ত হবার পথে আছেন, আমি মনে করিনা যদি আমি আপনাদের জায়গায় থাকতাম ঈশ্বরের মুখের সামনে ঐ সব পতাকা দেখাতাম।

(১৩) প্যাট রবার্টসন এর খবরটি রিপোর্ট করেছিল বিবিসি : http://news.bbc.co.uk/2/hi/ americas/4427144.stm;

(১৪) লট, বুক অব জেনেসিস এ বর্ণিত চরিত্র, যিনি আব্রাহামের ভ্রাতুস্পুত্র ছিলেন এবং সদোম ও গোরাহ ধ্বংসের সময় ঈশ্বরের নির্দেশে পালাতে পেরেছিলেন, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মেও তার বর্ণনা আছে। ইসলাম ধর্মে লুত হিসাবে পরিচিত তিনি, যিনি ইব্রাহিম এর ভ্রাতুস্পুত্র ছিলেন, নবী হিসাবে তাকে সডোম ও গমোরাহ শহর দুটিতে প্রেরণ করা হয় (জেনেসিসের মত কোরানে এই জায়গটি সুনির্দিষ্ট করা হয়নি) তাদের ঈশ্বরের নির্দেশ বিরোধী বিকৃত যৌনাচার বন্ধ করার জন্য আহবান জানাতে। কিন্তু তারা সে নির্দেশটি অমান্য করলে পরবর্তীতে সডোম ও গমোরাহকে ঈশ্বর নিশ্চিহ্ন করে দেন, লুত ও তার পরিবার রক্ষা পায়, তবে তার স্ত্রী ছাড়া।

(১৫) Book of Judges– হিব্রু বাইবেল এর সপ্তম বই।

(১৬) আব্রাহাম ( মূল আবরাম) বাইবেল এ বর্ণিত তিন প্রধান পিতৃতুল্য চরিত্রের প্রথম জন। বুক অব জেনেসিস এর অধ্যায় ১১ থেকে ২৫ অবধি তার কাহিনী বর্ণিত। তিনটি প্রধান ধর্ম, ইহুদীবাদ, খ্রিষ্ট ধর্ম ও ইসলামেই আমরা তার উপস্থিতি দেখি। নোয়া’র বংশধারা দশম প্রজন্মের তেরাহ’র তিন পুত্রের একজন ছিলেন তিনি। উর কাসদিম বলে বুক অব জেনেসিসে যে স্থানটিকে তার জন্মস্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে সেটিকে চিহ্নিত করা হয়ে দক্ষিন মেসোপটেমিয়া’র উর শহর হিসাবে। ঈশ্বরের নির্দেশে আব্রাহাম কানানের পথে যাত্রা করেছিলেন (কানান.. বর্তমান লেবানন, ইসরায়েল,জর্দান, প্যালেস্টাইন ও সিরিয়ার কিছু অংশ); ইসলামে তিনি পরিচিত ইব্রাহিম নামে, এখানে খ্রিষ্টান ও ইহুদী মতবাদের সাথে পার্থক্য লক্ষণীয়, ইহুদীরা যেমন মনে করে ইব্রাহিমের উত্তরসুরী হতে হবে জন্মের মাধ্যমে, খ্রিষ্টানরা মনে করে সেটি হতে হবে বিশ্বাসের মাধ্যমে, ইসলামে, তিনি সব বিশ্বাসীর পিতা, নবীদের দীর্ঘ ধারাবাহিকতার একজন। ইসলামে তিনি একেশ্বরবাদী এবং মুসলিম।

 (১৭) বুক অফ জেনেসিসে বর্ণিত একটি শহর, বর্তমানে দক্ষিন মধ্য ইসরায়েল।

 (১৮) ইসলাম ধর্মে ইব্রাহিম তার পুত্র ইসমাইলকে বিসর্জন দিতে উদ্যত হয়েছিলেন।

(১৯) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের নুরেমবার্গ বিচারের সময় যুদ্ধাপরাধীদের অনেকেই আত্মপক্ষ সমর্থনে যে আইনী কৌশল অবলম্বন করেছিল, তারা নিজেদের নিরাপরাধ হিসাবে দাবী করেছিলেন, কারণ তারা তাদেও উপরের কর্তৃত্ব রাখে এমন উর্ধতন কোনো কর্মকর্তার নির্দেশ অনুসরণ করেছিল।

(২০) আমোন রাজ্যের বাসিন্দারা, ওল্ড টেষ্টামেন্টে বর্ণিত, বর্তমান জর্ডানে এর অবস্থান।

 (২১) উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, ইংরেজ নাট্যকার।

 (২২) এই সমৃদ্ধ কৌতুকময় ধারণাটি আমার কাছে প্রস্তাব করেছিলেন জোনাথান মিলার যিনি, বিস্ময়করভাবে এটিকে বিশেষ কখনো ব্যবহার করেননি, আমি তাকে আরো ধন্যবাদ দিতে চাই এই ধারণাটি যে বই এর উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছিল: Halbertal, M. and Margalit, A. (1992). Idolatry. Cambridge, MA:Harvard University Press.

(২৩) মোজেস (মোশে, মুসা) হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী প্রাক্তন মিসরীয় রাজকুমার পরে যিনি ধর্মীয় নেতা হয়েছিলেন। ইহুদী। ধর্মের এই কেন্দ্রীয় চরিত্রকে মনে করা হয় তোরাহর সম্ভাব্য রচয়িতা। এছাড়াও খ্রিষ্ট, ইসলাম ও বাহাই মতবাদেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।

 (২৪) হিব্রু বাইবেল এর চতুর্থ বই।

 (২৫) মিডিয়ান বাসী, ওল্ড টেষ্টামেন্ট ও কোরানে বর্ণিত একটি এলাকা। ধারণা করা হয় এর অবস্থান আরব পেনিনসুলার উত্তর পশ্চিমাংশ।

(২৬) খ্রিষ্টানগন, তোমরা কি তাদের দেখতে পাচ্ছো না পবিত্র এই ভূমিতে? কিভাবে মিডিয়ান সেনারা চুপিসারে শিকারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে? খ্রিষ্টানগন, ওঠো তাদের সজোরে আঘাত করো ক্ষতি নয়, লাভ হিসাব করে; সজোরে তাদের আঘাত করো পবিত্র কুশের আশীর্বাদে।

(২৭) বাল বা বাহ’ল এশিয়া মাইনর এবং লেভান্ত ( পূর্ব ভুমধ্যসাগরীয় এলাকা, আনাতোলিয়া থেকে মিসর অবধি) অঞ্চলের বহু এলাকার পৃষ্ঠপোষক দেবতা, উত্তর-পশ্চিম সেমিটিক ভাষায় এর অর্থ হতে পারে মনিব কিংবা প্রভু।

(২৮) ইজরায়েলাইটন (বনি ইসরায়েল) প্রাচীন নিকট প্রাচ্যে বসবাস কারী সেমিটিক জনগোষ্ঠী, যাদের বাস ছিল কানান এর একটি অংশে, বাইবেল এটি লেভান্ট এর সাথে সংশ্লিষ্ট, বিশেষ করে দক্ষিন লেভান্টে (ইসরায়েল, ফিলিস্তা ও ফিনিসিয়া) হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপট।

 (২৯) মোয়াবাইটস, বাইবেলে বর্ণিত ঐতিহাসিক মোয়াব রাজ্যের বাসিন্দা (বর্তমান জর্ডানের একটি একটি অংশ)

(৩০) দক্ষিন মেসোপটিমায় বসতি স্থাপন করা প্রাচীন সিরিয়া’র প্রাচীন সেমিটিক-ভাষাভাষী জাতি, যাদের অন্যতম শহর ছিল। ব্যাবিলন।

 (৩১) কানান, প্রাচীন নিকট প্রাচ্যের একটি অংশ, বাইবেল এর বর্ণিত যে শহরটি লেভান্ট এর সামঞ্জস্যপূর্ণ ( আধুনিক লেবানন,ইসরায়েল,প্যালেষ্টাইন টেরিটরী,জর্ডান এর পশ্চিমাংশ, দক্ষিন পশ্চিম সিরিয়া। হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী কানানরা হচ্ছে। হামের বংশধর (হাম ছিলেন নোয়া’র পুত্র)।

(৩২) হিটাইট’রা আনাতোলিয়ায়, (বর্তমান তুরস্কের কিছু অংশ) একটি গড়ে তুলেছিল ১৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে।

(৩৩)পেরিজজাইটরা বাইবেলে উল্লেখিত জাতি, যারা কানানে বসবাস করতো ইহুদীদের আসার আগে।

(৩৪) হিভাইট জাতির মানুষরা বসবাস করতে কানান এর পার্বত্য এলাকা, বর্তমান লেবাননের কিছু অংশ।

(৩৫) জেবুসাইট, হিব্রু বাইবেল এ বর্ণিত এই জাতি কানানেই বসবাস করতে, যারা জেরুজালেম শহরের পত্তন করেছিল, কিং ডেভিডের এই এলাকা দখল করার আগে।

 (৩৬) হিব্রু বাইবেল ষষ্ঠ বই।

(৩৭) বর্তমান ইরাক, ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়ায় বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠী।

(৩৮) টাইগ্রিস-ইউফ্রেতিসে জলাভূমিতে বাস করা বহু জাতিগোষ্ঠী।

(৩৯) Lebensraum : নাৎসী জার্মানীর সেই প্রতিশ্রুত গণহত্যা মূলক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, যার অর্থ জার্মান জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আরো ভূখণ্ড সম্প্রসারণ।

(৪০) আফগানিস্তানের বামিয়ানে পাহাড়ের খাদে খোদাইকৃত বিশালাকৃতির বৌদ্ধমূর্তি, ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। পরে তালিবানরা এটি ধ্বংস করে।

(৪১) প্যারিস এর নিকট শার্জে শহরের ক্যাথিড্রাল, মধ্যযুগীয় গথিক স্থাপত্যর অসাধারণ উদাহরণ, নির্মিত হয়েছিল ১১৯৪ থেকে ১২৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে।

(৪২) ইংল্যান্ডের ইয়র্ক ক্যাথিড্রাল, এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১২২০ খ্রিষ্টাব্দে।

(৪৩) নতর দাম ক্যাথিড্রাল, প্যারিসে, ফরাসী গথিক স্থাপত্যকলায় এর নির্মান কাজ শেষ হয়েছিল ১৩৪৫ খ্রিষ্টাব্দে।

(৪৪) জাপানের কিয়োটো শহরে প্রায় ১৬০০ বৌদ্ধ মন্দির আছে, যার মধ্যে ১৭ টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে চিহ্নিত, বিভিন্ন সময়ে এগুলো নির্মিত হয়েছে।

(৪৫) R. Dawkins, ‘Atheists for Jesus’, Free Inquiry 25:1, 2005, 9-10

 (৪৬) জুলিয়া সুইনি সঠিক সেই বিষয়টিকে স্পর্শ করেছিলেন যখন তিনি সংক্ষেপে বৌদ্ধধর্ম নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। ঠিক যেমন খ্রিষ্ট ধর্মকে মাঝে মাঝে মনে করা হয় ইসলামের চেয়ে ভদ্র এবং মদু ধর্ম। বৌদ্ধধর্মকে সবসময় সবচেয়ে ভদ্র ধর্ম হিসাবে দাবী করা হয়। কিন্তু পূর্বজন্মের পাপের জন্য পুনর্জন্মের সেই সিঁড়িতে অধোঃপতিত হবার মতবাদটি বেশ দুঃখজনক। জুলিয়া সুইনী: আমি থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম এবং সেখানে ঘটনাচক্রে একটি মহিলার সাথে দেখা হয়েছিল, তিনি ভয়ঙ্করভাবে বিকলাঙ্গ একটি শিশুর দেখাশুনা করতেন। আমি তাকে বলেছিলাম, আপনি খুবই দয়ালু এই অসহায় ছেলেটির দেখাশুনা করছে। উত্তরে সেই মহিল বলেছিলেন, একে ‘অসহায়’ ছেলে বলবেন না, আগের জন্মে সে নিশ্চয়ই খুব খারাপ কিছু ঘটেছিল যার কারণে এ জন্মে এভাবেই জন্ম হলো।

(৪৭) বিভিন্ন ধর্মী কাল্ট বা গ্রুপগুলো কি ধরনের কৌশল ব্যবহার করে তার একটি বিশ্লেষণী পর্যালোচনার জন্য দেখুন: Barker, E. (1984). The Making of a Moonie: Brainwashing or Choice? Oxford: Blackwell, 47 asfaltas tant কাল্টগুলোর আরো অনুসন্ধানী গ্রন্থ: Lane, B. (1996). Killer Cults. London: Headline. Ges Kilduff, M. and Javers, R. (1978). The Suicide Cult. New York:Bantam;

(৪৮) গেজা ভেরমেস, হাঙ্গেরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ধর্মীয় ইতিহাসবিদ।

 (8৯) Geza Vermes. Changing Faces Of Jesus ( 2001)

(৫০) আমার জানা আছে যে, এখানে ব্যবহৃত scrumping শব্দটা যুক্তরাষ্ট্রের পাঠকদের কাছে সুপরিচিত নয়। কিন্তু আমি নিজে অপরিচিত আমেরিকান শব্দ পড়তে ভালোবাসি, এবং এগুলো খোঁজার মাধ্যমে আমার শব্দভাণ্ডারের পরিধিও বাড়ে, আমি ইচ্ছা করেই কিছু ধর্ম সংক্রান্ত শব্দ ব্যবহার করেছি এই কারণে; scrumping নিজেই একটি বেশ ব্যাপক অর্থবহ একটি mot juste বা সঠিক শব্দ; এর অর্থ কিন্তু চুরি না; এর একমাত্র অর্থ হচ্ছে আপেল চুরি, শুধুমাত্র আপেল চুরি, কোনো একটি শব্দ এতো নির্দিষ্ট হবার উদাহরণ বিরল; স্বীকার করতেই হবে জেনেসিসের গল্প নির্দিষ্ট করে বলে দেয়নি যে ফলটি আসলে আপেল কিনা, কিন্তু দীর্ঘদিনের প্রচলিত ধারণা অবশ্য সেটাই।

 (৫১) লিওনার্ড আলফ্রেড স্নেইডার (১৯২৫-১৯৬৬) আমেরিকার সামাজিক নানা বিষয়ে মন্তব্যকারী, কমেডিয়ান, স্যাটায়ারিষ্ট। পরিচিত ছিলেন লেনী ব্রুস নামে।

 (৫২) অগাষ্টিন অফ হিপো (৩৫৪-৪৩০), খ্রিষ্টান ধর্মের সূচনাপর্বের ধর্মতাত্ত্বিক, খ্রিষ্টীয় ধর্ম ও পশ্চিমা দর্শনের প্রভাবশালী। দার্শনিক।

(৫৩) রবার্ট গ্রেভস (১৮৯৫-১৯৮৫) ইংরেজ কবি,ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক।

(৫8) King Jesus: A Novel. Robert Graves

(৫৫) Paul Vallely and Andrew Buncombe, ‘History of Christianity: Gospel according to Judas’, Independent, 7 April 2006.

(৫৬) পল দ্য আপোষ্টল ( ৫-৬৭) ( সল অব টারসাস), প্রথম শতাব্দীর খ্রিষ্ট ধর্মের প্রচারক।

(৫৭) Vermes, G. (2000). The Changing Faces of Jesus. London: Allen Lane.

(৫৮) জন হারটাং, যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক, নৃতত্ত্ববিদ।

(৫৯) খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস, যে যীশুর দ্বিতীয়বার যখন আসবেন, তার সেই সেকেন্ড কামিং এর সময় পৃথিবীর বিশ্বাসীরা বাতাসে ভেসে সরাসরি প্রভু যীশুর সান্নিধ্যে যাবেন, এবং তখন কিছু মানুষ এই পৃথিবীতে রয়ে যাবে।

(৬০) মোশে বেন মায়মন (১১৩৫-১২০৪), স্পেনের কর্ডোভায় জন্ম নিয়েছিলেন, মধ্যযুগের অন্যতম প্রখ্যাত ইহুদী ধর্মতাত্ত্বিক, এছাড়াও তিনি যাজক ও চিকিৎসক ছিলেন।

(৬১) জোশুয়া : মোজেস এর খুব নিকট সহকারী, পরবর্তীতে তিনি কানান জয় করেছিলেন।

 (৬২) ইহুদী নয় এমন কোনো জাতি।

(৬৩) জন দি অ্যাপোষ্টল (৬-১০৬) খ্রিষ্টের মূল বারো অনুসারীর একজন, নিউ টেষ্টামেন্টের বেশ কিছু বইয়ের রচয়িতা হিসাবে তিনি চিহ্নিত।

 (৬৪) Ken’s Guide to the Bible.Ken Smith

 (৬৫) ঈশ্বর, আমি তোমার অনুগ্রহর কাছে ঋণী। এবং অন্যরা যা ভাগ্য বলে, আমি তা বলি না, যে, আমি খ্রিষ্টান জাতিতেই জন্ম নিয়েছি কোনো অসভ্য বর্বর অথবা ইহুদী হিসাবে নয়।

(৬৬) সালমান রুশদী, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক।

(৬৭) Guardian, 12 March 2002: http://books.guardian.co.uk/ departments/ politics philosophy andsociety /story/0,,664342,00.html

(৬৮) ইংলিশ চার্চ

(৬৯) জন বেটচামেন, ইংরেজ কবি।

 (৭০) N. D. Glenn, ‘Interreligious marriage in the United States: patterns and recent trends’, Journal of Marriage and the Family 44:3,1982, 555-66.

(৭১) জন বর্ডলে রলস, আমেরিকার দার্শনিক।

 (৭২) উত্তর মেরু বা আর্কটিক অঞ্চলের নগোষ্ঠী।

(৭৩) থমাস হেনরী হাক্সলী, ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী।

 (৭8) Huxley, T. H. (1871). Lay Sermons, Addresses and Reviews, New York: Appleton.

(৭৫) আব্রাহাম লিঙ্কন, আমেরিকার ষোলতম প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় তিনি নেতৃত্বে ছিলেন। এভাবে তিনি যুক্তরাষ্টকে রক্ষা করেন, দাসত্ব প্রথা বিলুপ্ত করেন।

 (৭৬) http://www.classic-literature.co.uk/american authors/19th-century/abraham-lincoln/the-writings of-abraharnlincoln-04/.

(৭৭) ইংরেজ লেখক ডি এইচ লরেন্স এর একটি উপন্যাস।

 (৭৮) ক্যালিগুলা, রোমান সম্রাট।

(৭৯) গেনজিস খান, মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা (মূল নাম তিমুজিন)।

(৮০) A. C. Bouquet. Comparative Religion (Pelican)

(৮১) এইচ জি ওয়েলস: ইংলিশ লেখক। ১৯০১ সালে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে হার্বার্ট জর্জ ওয়েলস একটি বই লিখেছিলেন Anticipations: Of the Reaction of Mechanical and Scientific Progress upon Human life and Thought., এই একই থিম নিয়ে ওয়েলস পরে ১৯২৮ সালে বিস্তারিত করেন The Open Conspiracy বইটিতে, যেখানে তিনি নিউ রিপাবলিকের উত্থানের কথা বলেন, যেখানে বৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণে একটি রাষ্ট্র কাঠামোর কথা প্রস্তাব করেছিলেন।

(৮২) নিখুঁত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো সহ কোনো স্বর্গরাজ্য। ইউটোপিয়া শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক ভাষায়, ১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দে স্যার টমাস মোর তার ইউটোপিয়ায় এই ধারণাটি প্রস্তাব করেন।

(৮৩) মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র (১৯২৯-১৯৬৮) যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা।

(৮৪) পল রোবসন (১৮৯৮-১৯৭৬) সঙ্গীতশিল্পী, কৃষ্ণাঙ্গ মানবাধিকার আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন।

(৮৫) সিডনী পোয়াটিয়ের্স, বাহামা-আমেরিকান অভিনেতা ও কুটনীতিবিদ। প্রথম অ্যাকাডেমী পুরষ্কার জেতা কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা।

 (৮৬) জেমস ওয়েন্স (১৯১০-১৯৮০) আমেরিকার অ্যাথলেট, অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী।

 (৮৭) জ্যাকি রবিনসন, মেজর লীগ বেসবলে খেলা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়।

(৮৮) Peter Singer. Animal Liberation: A New Ethics for Our Treatment of Animals (1975)

(৮৯) এডলফ হিটলার (১৮৮৯-১৯৪৫) অষ্ট্রিয়ায় জন্মগ্রহন করা জার্মান রাজনীতিবিদ, এবং নাৎসী পার্টি প্রধান (ন্যাশনাল সোসালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ অবধি তিনি নাৎসী জার্মানীর চ্যান্সেলর এবং একনায়ক ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর হলোকষ্ট এর কেন্দ্রীয় চরিত্র।

(৯০) জোসেফ স্টালিন বা যযাসিফ ভিসেরিয়োনাভিচ স্টালিন ( জন্ম না, ইয়োসেফ বেসারিওনিস যে যুগাসভিলি) (১৮৭৮-১৯৫৩)

জর্জিয়ায় জন্ম নেয়া স্টালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় ক্ষমতার নেতা ছিলেন মধ্য ১৯২০ এর দশক থেকে ১৯৫৩ অবধি তার মৃত্যু পর্যন্ত।

(৯১) নোয়েল বারবার (১৯০৯-১৯৮৮) ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক এবং সাংবাদিক।

(৯২) Noel Barber Lords of the Golden Horn:From Suleiman the Magnificent to Kamal Ataturk (1973)

 (৯৩) A. Bullock. Hitler and Stalin. London: HarperCollins.(1991).

(৯8) A. Bullock. Hitler: A Study in Tyranny. London: Penguin. (2005).

(৯৫) http://www.ffrf.org/fttoday/1997/march97/holocaust. html; রিচার্ড ই. স্মিথ এর এই নিবন্ধটি মূলত প্রকাশিত হয়েছিল ফ্রিথট টুডে এর মার্চ ১৯৯৭ সংখ্যায়, সেখানে বেশ কিছু সংখ্যক প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি আছে হিটলার এবং অন্যান্য নাৎসি, তাদের উৎস সহ। যদি না কিছু উল্লেখ করা হয় আমরা ব্যবহৃত উদ্ধৃতিগুলো স্মিথ এর নিবন্ধ থেকে।

(৯৬) http://homepages.paradise.net.nz/mischedj/ca_hitle r.htrnl

 (৯৭) A. Bullock. Hitler: A Study in Tyranny. London: Penguin. (2005).

(৯৮) John Willard Toland. Adolf Hitler: The Definitive Biography, 1976

(৯৯) মার্টিন লুথার, জার্মান ধর্মযাজক,প্রোটেস্টান্ট রিফরমেশনের সূচনাকারী।

(১০০) Adolf Hitler, speech of 12 April 1922. In Baynes (1942:19-20).।

(১০১) Adolf Hitler, Mein Kampf

(১০২) Hitler’s Table Talk, ১৯৪১ থেকে ১৯৪৪ থেকে যে বইটি হিটলারের নানা মন্তব্য লিপিবদ্ধ করেছিল। এগুলো লিপিবদ্ধ করেছিল হাইনরিশ হাইম, মার্টিন বোরবাম, হেনরী পিকার।

 (১০৩) A. Bullock. Hitler: A Study in Tyranny. London: Penguin. (2005).

(১০৪) এই উদ্ধৃতিটি এবং পরেরটির উৎস অ্যান নিকোল গেলর এর নিবন্ধ: Hitler’s religion, http:// www. ffrf. org/ fttoday/back/hitler. Html

(১০৫) http://www.contra mundum.org/schirrmacher/NS_Religion.pdf.

(১০৬) রিচার্ড ভাগনার, জার্মান সঙ্গীতজ্ঞ

(১০৭) Sam Harris. The End of Faith: Religion, Terror, and the Future of Reason (2004)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *