প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড

আমার স্বপ্নের মাছ

আমার স্বপ্নের মাছ

আমি বিশ্বাস করি, মনোমত পরিবেশ না হলে, যে মাছটি ধরা আমার চিরকালের স্বপ্ন সে মাছটি ধরলেও তা অনেকটা হয় কোনো টেনিস খেলোয়াড়ের পক্ষে সাহারা মরুভূমিতে ডেভিস কাপ জেতার মত।

আমি যে নদীটিতে ইদানীং মাছ ধরছি সেটা লম্বালম্বি প্রায় চল্লিশ মাইল মত বয়ে চলেছে একটা অপূর্ব গাছপালায় ঢাকা উপত্যকার মধ্যে দিয়ে–সেখানে জন্তু জানোয়ারও যেমন পাওয়া যায় তেমনই দেখা যায় বিচিত্র সব নানা ধরনের পাখির ভিড়। আমার একদিন কৌতুহল হয়েছিল সারা দিনে কত ধরনের জন্তু জানোয়ার আর পাখি দেখা যায় গুণে দেখার। সেদিন সন্ধের মধ্যে জানোয়ারের মধ্যে আমি দেখলাম সম্বর, চিতল, কাকার, ঘুরাল, শুয়োর, হনুমান আর লাল বাঁদর; আর চোখে পড়ল প্রায় পঁচাত্তর রকমের বিভিন্ন ধরনের পাখি যার মধ্যে ময়ুর, লাল জংলী মোরগ, শালিক, কালো তিতির আর ঝোপের কোকিল।

এ ছাড়াও নদীতে দেখলাম পাঁচটা ভোঁদড়ের একটা ঝাক, অনেকগুলো ছোট মেছো কুমির আর একটা অজগর সাপ। অজগরটা শুয়ে ছিল একটা বড় ধরনের জলাশয়ের স্থির, কাকচক্ষু জলের নিচে গা এলিয়ে দিয়ে–ওর শুধু চ্যাপ্টা মাথাটা আর চোখ জোড়া ছিল জলের ওপরে। এই ধরনের একটা ছবি তোলার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। কিন্তু ছবি তুলতে হলে জলাশয়ের ওপর নদীটা পেরিয়ে বিপরীত দিকের পাহাড়টার কাছে যাওয়া দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ওর ভেসে থাকা চোখ জোড়া আমায় দেখতে পেয়েছিল–আমি যেই আস্তে আস্তে পেছুতে আরম্ভ করেছি, সাপটা মনে হল প্রায় আঠার ফুট লম্বা ডুব মারল, চলে গেল জলের তলায় ঢিবি করা পাথরের মধ্যে ওর আশ্রয়ে।

নদীটা যে উপত্যকার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সেটা কোনো কোনো জায়গায় এত সরু যে একটা পাথর ছুঁড়লে সহজেই ওপারে চলে যায় আবার কোনো কোনো জায়গায় এক মাইল বা তারও বেশি চওড়া। এই ভোলা জায়গাগুলোয় জন্মায় দু ফুট লম্বা বোঁটার ওপর সোনালী ফুল নিয়ে অমলতাস, সাদা তারার মত ফুলসুদ্ধ করমচা আর অন্য নানারকমের ঝোপঝাড়। এই ফুলগুলোর সুগন্ধ বসন্তকালে বিচিত্র ধরনের সব পাখির কলকাকলীর সঙ্গে মিশে একটা অপূর্ব পরিবেশের সৃষ্টি করে। প্রকৃতির এই অবারিত দাক্ষিণ্যের মধ্যে মহাশোল মাছ মারা একটা রাজকীয় আনন্দের ব্যাপার। আমি কিন্তু মহাশোল মাছ ধরতে এই শিকারীদের স্বর্গে আসি নি, আমার উদ্দেশ্য ছিল দিনের আলোয় একটা বাঘের ছবি তোলা। যখন ছবি তোলার পক্ষে যথেষ্ট আলো থাকত না তখনই আমি আমার মুভি ক্যামেরা সরিয়ে রেখে ছিপ তুলে নিতাম।

আমি একদিন খুব ভোরে বেরিয়ে ছিলাম, ঘণ্টার পর ঘন্টা চেষ্টা করেছিলাম একটা বাঘিনী আর তার দুটো বাচ্চার ছবি তোলার। বাঘিনীটার বয়েস কম আর যে কোনো তরুণী মায়ের মতনই ওর সব সময় একটা সন্ত্রস্তভাব–আমি যতবারই তার। পিছু নিলাম সে বাচ্চা দুটিকে নিয়ে কোনো ঘন ঝোপের আড়ালে সরে গেল। কম বয়সী হক বা বয়স্কাই হ’ক সব বাঘিনীরই বিরক্তি সহ্য করার একটা সীমা আছে, বিশেষ করে যখন তাদের সঙ্গে বাচ্চা থাকে। সহ্যের শেষ সীমায় প্রায় পৌঁছেছে বুঝতে পেরে আমি আমার কৌশল বদলে ফেললাম। খোলা জায়গায় গাছের ওপরে বসে বা যে বদ্ধ জলাশয়ে বাঘিনীটা বাচ্চাদের নিয়ে জল খেতে আসে তারই পাশে উঁচু ঘাসের মধ্যে শুয়ে আমি বহু চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোনো লাভই হল না।

পড়ন্ত সূর্যের আলোয় যখন ভোলা জায়গাটার ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে তখন আমি হাল ছেড়ে দিলাম। প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘের ছবি তোলার চেষ্টা আরও যে কয়েকশো দিন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এ দিনটিকেও তারই সঙ্গে যোগ করলাম। ক্যাম্প থেকে যে দুটি লোককে আমি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলাম তারা নদীর ওপারে একটা গাছের ছায়ায় বসে দিনটা কাটিয়েছে। আমি তাদের জঙ্গলের রাস্তা ধরে ক্যাম্পে ফিরে যেতে বললাম আর ক্যামেরা বদলে একটা ছিপ নিয়ে রাতে খাবার মত একটা মাছ ধরার উদ্দেশ্যে নদীর ধার দিয়ে রওনা দিলাম।

ইদানীং কালে, ছিপ বঁড়শির ফ্যাশানও মেয়েদের ফ্যাশানের সঙ্গে তাল রেখে বদলাচ্ছে। কোথায় গেল আগেকার সেই ১৮ ফুট শক্ত ছিপ আর শক্ত মজবুত তার সব সাজসরঞ্জাম–সেই ছিপগুলি অবলীলাক্রমে টান মারতে পারবে সে গায়ের জোরই বা কোথায়। সে জায়গায় এসেছে এক হাতে ধরার সব হাল্কা ধরনের ছিপ।

আমার সঙ্গে ছিল ১১ ফুট প্রতিযোগিতা মডেলের ট্রাউট মাছ ধরার ছিপ, রিলে জড়ানো পঞ্চাশ গজ ছিপ ফেলার সুতো আর দুশো গজ মাছ খেলানোর সিল্কের সুতো, একটা নাড়িভূঁড়ির টোপ আর ঘরে তৈরি একটা পেতলের বঁড়শি।

সামনে মাছ ধরার মত প্রচুর স্থির জল থাকলে লোকে মাছ ধরার জায়গা সম্বন্ধে একটু খুঁতখুঁতে হবেই। কোনো পুকুর বাতিল হয়ে যায় কারণ পুকুরটায় পৌঁছনোর রাস্তাটা ভাল নয়, কোথাও চোরাগর্ত আছে বলে জায়গাটা ঠিক মনঃপুত হয় না। এ যাত্রায় প্রায় আধ মাইলটাক ঘোরার পরে আমি মনোমত একটা জায়গা খুঁজে পেলাম। প্রায় আশি গজ একটা খাঁড়ি, সেখানে সাদা ফেনা তুলে জল ভেঙে পড়ছে পাথরের ওপর–সেই খাড়ির শেষে দুশো গজ লম্বা আর সত্তর গজ চওড়া একটা গভীর স্থির জলের সঞ্চয়। এইখানেই রাতে খাওয়ার মাছটা ধরতে হবে।

সেই গভীর নিস্তরঙ্গ জলের সামনে দাঁড়িয়ে আমি বঁড়শি ফেললাম, রিল থেকে কয়েক গজ সুতো ছেড়ে দিলাম–তারপর ছিপটা তুলে ধরলাম যাতে সুতোটা ভালভাবে জলের নিচে যায়। তৎক্ষণাৎ পাড়ের খুব কাছে একটা মাছ বঁড়শিটা গিলে ফেলল। ভাগ্যক্রমে ছাড়া সুতোটাই ছিপের রিলের কাছে টানটান হয়ে গেল–ছিপের গোড়া বা রিলের হ্যাঁন্ডেলে হঠাৎ কোনো আচমকা টান পড়ল না যা এরকম ক্ষেত্রে প্রায়ই ঘটে থাকে।

বিদ্যুতের মত মাছটা স্রোতের মুখে পালাবার চেষ্টা করল–আর আমার মজবুত, তেল দেওয়া রিল যেন সুতো ছাড়তে ছাড়তে আনন্দে গান করে উঠল। পঞ্চাশ গজ ছিপ ফেলার সুলতার সঙ্গে একশো গজ মাছ খেলানোর সুতো বেরিয়ে গেল, আমার বাঁ হাতের আঙুলে জ্বলুনি ধরিয়ে গভীর দাগ কেটে। কিন্তু হঠাৎ মাছটার সেই পাগলের মত দৌড় থেমে গেল, সুতোর গতি হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল।

এই রকমের পরিস্থিতিতে সাধারণত লোকে যা ভাবে আমার মনেও সেই সব চিন্তারই উদয় হল, তবে মনের ভাব দমন করার জন্যে কিছুটা কড়া কথাও ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই। মাছটা নিশ্চয়ই ভালভাবেই আটকেছে। নাড়িভুড়ির টোপটাও কয়েকদিন আগে পাইলট গাট কোম্পানীর কাছ থেকে কেনা-সেটা পরীক্ষা করে বেশ ভালভাবেই বঁড়শির সঙ্গে লাগানো হয়েছে। শুধু ফাটা রিংটা সম্বন্ধেই যা দুশ্চিন্তা; আগে কোনো পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ফাটা রিংটা হয়তো আলগা হয়ে জলের তলায় চলে গেছে।

প্রায় ষাটগজ সুতো রিলে ফিরে এলো। হঠাৎ সুতোটা বাঁ দিকে মোড় নিয়ে জলের ওপর গভীর দাগ কেটে বিপরীত দিকে এগোতে থাকল-তার মানে মাছটা এখনও আছে আর ফেনায় সাদা জলের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছে। একবার ওখানে চলে যাওয়ার পর, স্রোতের মুখ থেকে, বিপরীত দিক থেকে বহু টানাটানি করেও মাছটাকে নড়াতে পারলাম না। সময় বয়ে চলল। আমার বিশ্বাস দৃঢ়তর হতে লাগল যে মাছটা নিশ্চয়ই সুতোটা কোনো পাথরের গর্তে আটকিয়ে নিজে পালিয়েছে। আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছি–এমন সময় সুতোটা একবার ঢিল হয়ে আবার টান হয়ে গেলমাছটা আবার বিদ্যুৎগতিতে স্রোতের মুখে দৌড়তে আরম্ভ করেছে। মনে হল মাছটা যেন এ পুকুর ছেড়ে নিচের তরঙ্গসঙ্কুল জলের মধ্যে চলে যেতে চায়। একটানা লম্বা দৌড়িয়ে মাছটা প্রায় পুকুরের শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌঁছল। এখানে পুকুরের জল এদিক সেদিক ছড়িয়ে কয়েকটা বদ্ধ জলাশয়ের সৃষ্টি করেছে। এখানে মাছটা কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থেকে আবার পুকুরের মধ্যে ফিরে এল। একটু পরে প্রথম তাকে জলের ওপর দেখতে পেলাম। ওপারের আবছা দেখা জীবটির সঙ্গে আমার ছিপের সুতোর টানাটানি চলছে, তা নাহলে বিশ্বাস করা কঠিন হত ওই পাঁচ ইঞ্চি পাখনাওয়ালা বিশাল মাছটা আমারই কয়েক গজের মধ্যে বঁড়শির টোপ গিলেছে।

 মাছটা গভীর জলে ফিরে আসার পরে আস্তে আস্তে তাকে পাড়ের অগভীর জলের দিকে টানতে থাকলাম। একা একটা ছোট মাছ ধরার ছিপে একটা বিশাল মাছ ধরা খুব সহজ কাজ নয়। চারবার মাছটা মাঝপথে আটকে রইল–ওর বিরাট পিঠের একাংশ জলের ওপর দেখা যাচ্ছিল। আমার সাবধানতাকে ব্যঙ্গ করে মাছটা চারবার দৌড়ে পালিয়েছিল গভীর জলে, আবার এক ইঞ্চি আধ ইঞ্চি করে টেনে টেনে তাকে আনতে হল। আমার পঞ্চম বারের চেষ্টায়, ছিপের গোড়াটা বুড়ো আঙুলের ফাঁকে ধরে, রিং তুলে দিয়ে যাতে রিলের হ্যাঁন্ডেলটা মাছটার গায়ে না লাগে, মাছটার গায়ে প্রথমে একটা হাত, তারপরে আরেকটা খুব সাবধানে রাখলাম। তারপর স্রোতহীন জল থেকে মাছটাকে আস্তে আস্তে ডাঙায় তুললাম।

আমি একটা মাছ ধরতে বেরিয়েছিলাম–মাছ ধরেওছি একটা। কিন্তু আমার নৈশ ভোজনে মাছটা কোনো কাজে লাগবে না কারণ আমার আর ক্যাম্পের মধ্যে সাড়ে তিন মাইল বন্ধুর রাস্তা যার অর্ধেকটাই আমাকে পার হতে হবে রাতের অন্ধকারে।

আমি আমার ১১ পাউন্ডের ক্যামেরাটা ফেরত পাঠানোর সময়, গাছে উঠতে ক্যামেরা বেঁধে তোলার জন্যে যে মোটা সুতোটা ব্যবহার করি সেটা রেখে দিয়েছিলাম। সেই সুতোটার এক প্রান্ত মাছটার কানকোর মধ্যে দিয়ে চালিয়ে দিলাম–সেটা মুখ দিয়ে বার করে একটা ফাস তৈরি করলাম। সুতোর জন্যে প্রান্তটা টাঙিয়ে দিলাম গাছের ডালে। সুতোটা ভাল করে বাঁধা হয়ে গেলে মাছটা অপেক্ষাকৃত স্থির জলে বেশ আরামে একটা বিরাট পাথরের গায়ে রইল। একমাত্র ভয় ছিল ভেঁদড়ের। তাদের ভয় দেখানোর জন্যে আমি আমার রুমাল দিয়ে একটা নিশান তৈরি করলাম আর নিশানটা মাছটা যেখানে ছিল তার একটু নিচে নদীর মধ্যে পুঁতে দিলাম।

পরদিন সকালে আমি যখন জলাশয়ের কাছে ফিরে এলাম তখন সূর্য পাহাড়ের চুড়ায় চুড়ায় সোনা মাখাচ্ছে। দেখলাম মাছটা ঠিক যেখানে রেখে গিয়েছিলাম সেখানেই আছে। সুতোর ফাঁসটা গাছ থেকে খুলে হাতে জড়িয়ে নিয়ে আমি পাথরটা বেয়ে মাছটার কাছে নেমে গেলাম। আমার এগনো দেখে ভয় পেয়েই হক বা সুতোর কম্পন অনুভব করেই হক মাছটা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল। হঠাৎ জল তোলপাড় করে মাছটা ওপর দিকে পালাবার চেষ্টা করল। আচমকা টান খেয়ে আমি ঢালু পেছলে পাথরের ওপর টাল সামলাতে পারলাম না। একেবারে সোজাসুজি গিয়ে পড়লাম জলের ভেতর।

এই সমস্ত পার্বত্য নদীর গভীর জলে যাওয়া সম্বন্ধে আমার একটা স্বাভাবিক বিতৃষ্ণা আছে কারণ কোনো ক্ষুধার্ত অজগর জড়িয়ে ধরা ব্যাপারটা মোটেই সুখপ্রদ নয়। তাই ভগবানকে ধন্যবাদ যে আমি কি ভাবে টেনে হেঁচড়ে জল থেকে উঠেছিলাম তা দেখার জন্যে কোনো সাক্ষী সেখানে ছিল না। আমি কোনোরকমে ওপরে উঠেছি, মাছটা তখনও আমার ডান হাতে জড়ানো–সেই সময় আমি যাদের অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলাম সেই লোকজন এসে উপস্থিত হল। তাদের হাতে মাছটা দিয়ে নদীর ধারে আমাদের ক্যাম্পে নিয়ে যেতে বলে আমি জামাকাপড় ছাড়তে ও ক্যামেরাটা নিতে এগিয়ে গেলাম।

মাছটাকে ওজন করার কোন উপায় আমার ছিল না কিন্তু আন্দাজে আমার এবং আমার লোকজনদের হিসেব মত মাছটা পঞ্চাশ পাউন্ডের কম হবে না।

মাছটা সম্বন্ধে ওজনটাই বড় কথা নয় কারণ ওজনের কথা লোকে সহজেই ভুলে যায়। কিন্তু যে পারিপার্শ্বিকে মাছ ধরা হয়েছে লোকে তা বড় একটা ভোলে না। ফার্নে, ঘেরা পুকুরের ইস্পাত নীল জল–যেখানে একটু দম নিয়ে পাথরের ওপর দিয়ে গড়িয়ে গিয়ে জল পড়ছে আরও সুন্দর একটা পুকুরের জলের ওপর। রোদ্দুরের আলোয় ঝলসে ওঠা রংচঙে একটা মাছরাঙা, তার আনন্দ যেন হীরে হয়ে ঝরে পড়ছে তার ডানা দিয়ে, আর সিঁদুর রঙের ঠোঁটে ধরা রুপোর মত ঝকঝকে একটা মাছের পোনা-দূরে সম্বরের ডাক আর ভেসে আসা চিতলের সুরেলা গলার হুঁশিয়ারী, যে নদীটির বালির পাড়ে কয়েক মিনিট আগে যে-বাঘটার থাবার ছাপ দেখা গেছে সে বেরিয়েছে তার রাতের খাবার খুঁজতে। এই অপূর্ব পারিপার্শ্বিকের কথা চিরদিন তোলা থাকবে আমার স্মৃতির মণিকোঠায়–চিরদিন আমাকে টানবে সেই উপত্যকাটির দিকে মানুষের স্পর্শে যাকে এখনও মলিন করতে পারে নি।