৪.৩ আর্মির গ্রুপটা

আর্মির গ্রুপটা চপারের কাছে পৌঁছাল।

 ন্যাশ, লরেন, মার্টি এবং কোপল্যান্ড লাফ দিয়ে উঠে পড়ল ব্ল্যাক হক টু-র পেছনের কমপার্টমেন্টে। একই সঙ্গে ওটার ত্রুরাও উঠে বসল পাইলট ও গানারের সিটে।

ব্ল্যাক হক টু-র রোটর ঘুরতে শুরু করল।

ব্ল্যাক হক টু-র পেছনের কমপার্টমেন্টের ভেতর থেকে তাকাল, দেখল রেস এবং রেনে সুপার স্টেলিয়নের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।

ব্ল্যাক হক টু-র রোটর ঘুরতে শুরু করল।

পেছনের কম্পার্টমেন্ট থেকে বাইরে তাকিয়ে ন্যাশ দেখল রেনেকে নিয়ে সুপার স্ট্যালিয়নের দিকে ছুটছে রেস।

চপারের পেছনে বসান ভলকান মেশিনগানে বসে আছে একজন ক্রুম্যান, তার উদ্দেশে চেঁচিয়ে উঠল ন্যাশ। চপারটাকে শেষ করে দাও।

ইতোমধ্যে ব্ল্যাক হক টু-এর রোটর ঘুরতে শুরু করেছে এবং বিশাল হেলিকপ্টারটা ধীরে ধীরে মার্টি ছেড়ে উপরে উঠতে শুরু করেছে। লক্ষ্য স্থির করে ট্রিগার চেপে ধরল কো-পাইলট, ভলকান থেকে বিস্ফোরিত হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ঝাঁকে ঝাকে বুলেট।

 বুলেটের আঘাতে অনবরত ঝাঁকি খাচ্ছে সুপার স্ট্যালিয়ন। ওটার রি এনফোর্সড সাইডে অন্তত কয়েক হাজার গর্ত তৈরি হল, প্রতিটি মানুষের ঘুসির সাইজের।

রেস এবং রেনে যখন আরেক দিক থেকে ওটার কাছাকাছি পৌঁছাচ্ছে, তখন, সুপার স্ট্যালিয়ন বিস্ফোরিত হল এবং প্রকাণ্ড একটা আগুনের বল ছেয়ে ফেলল ওটাকে।

 জ্বলন্ত ধাতব আবর্জনার ঝড়টা মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাবার এক সেকেন্ড আগে ডাইভ দিল দুজনেই। মাথার ওপর দিয়ে পোড়া-উত্তপ্ত মেটাল উড়ে গেল বিভিন্ন দিকে। দুই টুকরো উত্তপ্ত ইস্পাত ছুটে এসে ধাক্কা মারল রেনের কাঁধে। সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে গেল জায়গাটা। অসহ্য যন্ত্রণায় আর্তনাদ করে উঠল সে।

এবার ওদেরকে শেষ করো! চেঁচিয়ে বলল ন্যাশ, রেস এবং আহত রেনের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল।

ব্ল্যাক হক টু মার্টি থেকে পনেরো ফুট উপরে উঠে পড়েছে, আরো উঠে যাচ্ছে দ্রুত আকাশের দিকে। নির্দেশ পাওয়ামাত্র গানার বিশাল ভলকানকে ঘুরিয়ে সরাসরি রেসের মাথায় লক্ষ্যস্থির করল।

ব্লাম!

ক্রুর মাথাটা প্রচণ্ড ঝাঁকি খেল পেছন দিকে, গুলিটা ঢুকেছে তার দুই চোখের ঠিক মাঝখানে।

বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে ঘাড় ফেরাল ন্যাশ, নিচের মার্টিতে চোখ বুলিয়ে গুলির উৎস খুঁজছে, যে গুলিতে মারা গেল তার গানার।

লোকটাকে দেখতে পেল সে।

ডুগী।

পরিখার ধারে এক হাঁটু গেড়ে পজিশন নিয়েছে সে, কাঁধে চেপে ধরা চুরি করা নেভির একটা এমপি-৫, সরাসরি লক্ষ্যস্থির করছে ব্ল্যাক হক টুর দিকে। তার পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে গ্যাবি লোপেজ।

আরেকটা গুলি করল ডুগী, ন্যাশের মাথার উপর, ইস্পাতের ছাদের কিনারায় লাগল সেটা।

পাইলটের উদ্দেশে চেঁচিয়ে বলল ন্যাশ, এই জায়গা থেকে সরে পড়!

রেনের আহত কাঁধটাকে একহাতে জড়িয়ে রেখেছে রেস, তাকে নিয়ে হুড়মুড় করে এটিভিতে উঠে পড়ল।

আদিবাসী ইন্ডিয়ানরা এখন আর্মির দুটো হেলিকপ্টারের নিচে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে, রাগের সাথে চেঁচাচ্ছে, লাঠি নাড়ছে, কেউ কেউ ইস্পাতের ফড়িংগুলোকে লক্ষ্য করে তীরও ছুঁড়ছে দুএকটা।

 লাফ দিয়ে এটিভির পেছনে উঠে হ্যাচকা টানে ছোট আকারের গোল হ্যাচটা খুলে ফেলল রেস, তারপর রেনেকে সাহায্য করল ভেতরে ঢুকতে।

 তার পিছু নিয়ে নিজেও ঢুকতে যাবে, এই সময় দেখতে পেল ডুগী এবং গ্যাবি প্রধান সড়ক ধরে ছুটে আসছে, হাতের অস্ত্র উঁচিয়ে নাড়ছে। ডুগী খোঁড়াচ্ছে, তাকে সাহায্য করছে গ্যাবি।

ছুটে এসে এটিভিতে চড়ল ওরা।

এখানে ঠিক কী ঘটছে বলুন তো? দম নেওয়ার ফাঁকে জানতে চাইল ডুগী। তার বাঁ পায়ের ক্ষতটা দেখল রেস। শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে। ফিরে আসছি, দেখলাম লিও-র মাথায় গুলি করল কর্নেল! আবার বলল ডুগী চোখেমুখে অবিশ্বাস ও বিস্ময়।

 ওই কর্নেল লোকটা অন্যের হয়ে কাজ করছে, তিক্তকণ্ঠে বলল রেস। সেখানে আমাদের প্রয়োজন নেই।

এখন তা হলে কী হবে? ডুগী জিজ্ঞেস করল।

রেস চিন্তিতভাবে ঠোঁট কামড়ে ধরল।

ভেতরে ঢোকো, বলল সে। আমরা তখনো এর বাইরে নেই।

আর্মি দুই হেলিকপ্টার, ব্ল্যাক হক টু ও কোমাঞ্চি ভিলকাফোরের মূল রাস্তা থেকে আকাশে উঠে পড়েছে।

 পাশের দরজা দিয়ে নিচে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত ইন্ডিয়ানদের দেখছে ন্যাশ, এখনো তারা হুঙ্কার ছাড়ছে, হেলিকপ্টারের দিকে তীর ও বর্শা ছোঁড়ার ভঙ্গি করছে। খানিকটা হেসে ঘাড় ফিরিয়ে নিল সে, তাকাল সামনের উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে বাইরে।

আর্মির হেলিকপ্টার দুটো বনভূমির মাথা ছাড়িয়ে আরো খানিক উপরে উঠে এসেছে।

ন্যাশের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল।

সব মিলিয়ে আটটা ব্ল্যাক হক ১ হেলিকপ্টার তাদের ব্ল্যাক হক ২-র মতোই– তবে পুরানো; এই মডেলটা বেশ কবছর আগে বাতিল করে দিয়েছে আর্মি। সবগুলো কালো রঙ করা গায়ে কোনো মার্কিং দেখা যাচ্ছে না, চওড়া একটা বৃত্ত রচনা করে শূন্যে ঝুলে আছে, ৫০০ গজ ঘিরে রেখেছে ভিলকাফোরকে। ক্ষুধার্ত শেয়ালের মতো লাগছে ওগুলোকে, উচ্ছিষ্ট খাওয়ার অপেক্ষায়।

.

হঠাৎ একটা চিহ্নহীন ব্ল্যাক হকে সামান্য ধোঁয়া দেখা গেল, বিনা নোটিশে একটা মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে ওটার একটা ডানা থেকে।

লম্বা আঙ্গুলের মতো ধোয়ার ট্রেইল, সোজা আর্মি কোমাঞ্চির দিকে এগোচ্ছে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে, আকাশে বিস্ফোরিত হল কোমাঞ্চি, আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বিধ্বস্ত হল ভিলকাফোরের প্রধান সড়কের পাথরের একটা দালানের মাথায়। আগুন ধরে গেল বাড়িটায়।

অন্যদেরকে নিয়ে দুর্গে ঢুকেছে রেস। কোয়েঙ্কোতে নামতে যাবে, ঠিক সেই সময় বিস্ফোরণের শব্দ শুনল ওরা।

তাড়াতাড়ি এটিভিতে ঢুকল আবার, সরু ফাটলের মতো জানালা দিয়ে দুর্গের বাইরে তাকিয়ে দেখল কী ঘটছে।

দেখল ভিলকাফোরের পাথুরে দালানের গায়ে জ্বলন্ত কোমাঞ্চিটা কাত হয়ে পড়ে রয়েছে।

ওরা আরো দেখল ন্যাশের হেলিকপ্টার শহরের মাথায় স্থির হয়ে ভেসে রয়েছে। নড়তে সাহস পাচ্ছে না।

আর্মি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটা উড়ে যাবার সময় ছন্দগতভাবে পাখা ঘুরছিল আর ভিলকাফোরের ওপর বড় হেলিকপ্টারটা ঠিক বৃত্তের কেন্দ্রে কালো হেলিকপ্টারগুলোর সাথে ভাসছে।

 হঠাৎ, দুটো চিহ্নহীন চপার ওই ফরমেশন ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে সোজা গ্রামের দিকে এগিয়ে গেল।

কালো কাপড় পরা যোদ্ধারা খোলা দরজায় বসে নিচের দিকে ফায়ার ওপেন করল। সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে গেল আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের বিক্ষোভ সমাবেশ, যে যেদিক পারল লগব্রিজ পার হয়ে ছুটছে, ঢুকে পড়ছে জঙ্গলের ভেতরে।

একটা চপার থেকে লাউডস্পিকারে কণ্ঠস্বর ভেসে এল, কথা বলছে কেউ ইংরেজিতে।

আর্মির ব্ল্যাক হক সদয় অবগতির জন্যে জানান হচ্ছে, তোমাদের এয়ারক্রাফটে মিসাইল লক করা হয়েছে। এই মুহূর্তে ল্যান্ড করো। এই মুহূর্তে ল্যান্ড করে আইডলটা হস্তান্তরের প্রস্তুতি নাও। যদি ল্যান্ড না করো, তাহলে আকাশে তোমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে আইডলটা খুঁজে নেব আমরা।

ন্যাশ এবং মার্টি দৃষ্টি বিনিময় করল।

তাই করল লরেন এবং কোপল্যান্ড।

মিসাইল লক সম্পর্কে কথাটা ওরা মিথ্যে বলছে না, স্যার, বলল পাইলট, ঘাড় ফিরাল ন্যাশের দিকে।

আমাদের নিচে নামাও বলল ন্যাশ।

চিহ্নহীন দুটো ব্ল্যাক হক-এর প্রহরায় ন্যাশের ব্ল্যাক হক ২ ধীরে ধীরে ফিরে এলো ভিলকাফোর শহরে মার্টিতে।

তিনটে চপার একসঙ্গে ল্যান্ড করল। আমি চপারের চাকা কাদা স্পর্শ করার সাথে সাথে আবার শোনা গেল যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর।

এবার মাথার পেছনে হাত রেখে হেলিকপ্টার থেকে বেরিয়ে এসো তোমরা।

 ন্যাশ, লরেন, কোপল্যান্ড এবং মার্টি তাই করল, পিছুপিছু চপারের পাইলটও।

এটিভি-র নিরাপদ আশ্রয় থেকে সামনের নাটকীয় দৃশ্যটা দেখল রেস এবং অন্যারা।

রেস ঘটনাটা বিশ্বাস করতে পারছে না। এ যেন সেই কাহিনি যে কাহিনিতে বলা হয়েছে, বড় মাছ খেয়ে ফেলল ছোট মাছকে, তারপর সেটাকেও খেয়ে ফেলতে এল আরো বড় এটা মাছ।

দেখা যাচ্ছে ফ্রাঙ্ক ন্যাশ তার চেয়েও বড় একটা মাছের সামনে পড়ে গেছে।

এরা কারা? ডুগী জিজ্ঞেস করল।

আমার ধারণা, বলল রেনে এই মাত্র তার কাঁধের ক্ষতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছে রেস, দুদিন আগে এরাই ডারপা হেডকোয়ার্টারে ঢুকেছিল। ঢুকেছিল নেভি সুপারনোভা চুরি করতে।

.

বিশ্বের অন্য পাশে, স্পেশাল এজেন্ট জন পল ডিমোনাকো আর কমান্ডার টম মিশেল বসে আছে ব্লুই জেমসের সমৃদ্ধশালী অ্যাপার্টমেন্টে, ফোনের অপেক্ষায় আছে। একটা কলের অপেক্ষায় আছে। যে কলে নির্দেশ থাকবে রুই-র জন্য, বিটটেকারের ভিসডি-ম্যাসেজ প্রতিটি টিভি নেটওয়ার্কে পাঠিয়ে দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে, রুই-র ফোন এফবিআইর ট্রেসিং ইকুইপমেন্টের সাথে সংযুক্ত আছে।

দরজায় একটা নক হল।

মিশেল দরজাটা খুলে দিল, ডিমোনাকোর ডমেস্টিক টেররিস্ট ইউনিটের দুজন এজেন্ট দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, একজন পুরুষ আর একজন মহিলা, দুজনই বয়সে কম, পরিষ্কার তিরিশ-আরো কিছু বেশি।

কি পেলে তোমরা? ডিমোনাকো জিজ্ঞেস করল।

আমরা হেনরি নর্টনকে চেক করেছি, মহিলা এজেন্ট বলল, লোকটার কার্ডকি এবং কোড ব্যবহার করা হয়েছে দরজা খেলার জন্য। আমাদের নিজেদের তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি যে তার কোনো পরিচিত প্যারামিলিটারি কন্ট্রাক্ট নেই।

তাহলে সে কার সাথে কাজ করছে? কে দেখেছে ওর কোড ব্যবহার করে ঢুকতে এবং তারপর কারো কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে?

আপাতত দৃষ্টিতে সে একজন মার্টিন রেসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে মার্টিন এরিক রেস। সে একজন ডারপা-র লোক যে ওই প্রজেক্টটা নিয়ে কাজ করছে, ইগনিশন সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার।

কিন্তু তাকেও চেক করে বের করা হয়েছে, পুরুষ এজেন্ট বলল।

সে পরিষ্কার। নেই কোনো মিলিশিয়া লিঙ্ক, নেই কোনো যে-কোনো চরমপন্থি গ্রুপের সাথে তার কন্ট্রাক্টের ইতিহাস। উচচ পর্যায়ের আর্মি বিজ্ঞানী লরেন ওকোনোরকে বিয়ে করেছে। টেকনিক্যালি লরেন একজন মেজর, কিন্তু লড়াইয়ের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। র‍্যাঙ্কটা সম্মানীয়। রেস এবং ওকোনোর বিয়ে করেছে ১৯৯৭ সালে। নিঃসন্তান। নেই কোনো বিরোধ। তবে…

তবে কি?

তবে ঠিক তিন সপ্তাহ আগে, লরেনের এফবিআই ফাইলটায় বেরিয়ে এসেছিল যখন তাকে গেইনসভাইলের এক মোটেলে এই লোকটার সাথে দেখা গিয়েছিল, এজেন্ট ৮X১০ সাইজের একটা সাদা-কালো মোটেল রুমে একজন মানুষের ছবি বাড়িয়ে দিল ডিমোনাকোর দিকে, ট্রয় কোপল্যান্ড। সেও একজন মেজর, আর্মির স্পেশাল প্রজেক্ট ইউনিটের। মনে হচ্ছে গত মাস থেকে মিস্টার কোপল্যান্ডের সাথে মিসেস ও কোনোরের একটা অ্যাফেয়ার হয়েছে।

 তো…? ডিমোনাকো আরো কিছুর আশায় জিজ্ঞেস করল।

তো। কোপল্যান্ডকে গত বছর সাময়িকভাবে নজরে রাখা হয়েছিল, নির্দিষ্ট একটি মিলিশিয়া গ্রুপকে আর্মি সিকিউরিটি কোড পাচারের সন্দেহে, তার ভেতর একটি হল রিপাবলিকান আর্মি অভ টেক্সাস।

কিন্তু সম্পর্কটা মাত্র একমাসের, মহিলা এজেন্ট বলল, তারপর সম্ভবত কোনো ফলো-আপ চেক করেনি।

ডিমোনাকো দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর আর্মি এবং নেভি কখনোই একসাথে শুতে পারে না। তারা একেক জনের গায়ের কাপড় খুলে দেখছে বছরকে বছর ধরে। ঘুরল সে। কমান্ডার মিশেল?

জি।

আর্মির কাছে কি সুপারনোভা আছে?

 বিশ্বাস হয় না।

প্রশ্নের জবাব দাও।

 হ্যাঁ, আমরা ভাবছি ওরা একটা নিয়ে কাজ করছে।

এটা সম্ভব তাহলে, ডিমোনাকো বলল। এই ওকোনোর মহিলা তার স্বামীকে ডারপা-র কোড সরবরাহ করেছে আর আর্মিকেও, এবং তারপর সে কোপল্যান্ডকেও দিয়েছে, জানেন না যে কোপল্যান্ড ওগুলো ট্যাক্সানদের কাছে পাচার করেছে?

এটাই আমরা বের করেছি, পুরুষ এজেন্ট বলল।

ডেম ইট!

.

জনগণের আত্মাকে হাতে নিয়ে ব্ল্যাক হক ২ থেকে বেরিয়ে এলো ন্যাশ। তার পিছু নিয়ে লরেন, মার্টি, কোপল্যান্ড এমনকি পাইলটও।

চিহ্নহীন ব্ল্যাক হক দুটো ওদের আর্মি চপারের দুই পাশে ল্যান্ড করেছে, দুটোরই রোটর ব্লেড ঘুরছে এখনো।

 হেলিকপ্টারের কাছ থেকে দূরে সরে এসো! লাউডস্পিকার থেকে নির্দেশ ভেসে এলো।

ন্যাশ ও তার সঙ্গীরা তাই করল।

সাথে সাথে আবার আঙুলের মতো ধোয়ার একটা সরু রেখা আকাশ থেকে দ্রুত নেমে এলো গ্রামের ওপর ভাসমান ব্ল্যাক হকগুলোর একটা থেকে, মিসাইলটা সরাসরি ছুটে এসে আঘাত করল ব্ল্যাক হক ২-তে। বিস্ফোরিত হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

ঘুরে দাঁড়াল ন্যাশ।

চিহ্নহীন দুটো হেলিকপ্টারের রোটরের ছন্দবদ্ধ হোয়াম্প-হোয়াম্প ছাড়া কোথাও আর কোনো শব্দ নেই।

প্রায় এক মিনিট পার হতে চলেছে, এতক্ষণে চিহ্নহীন কপ্টার দুটোর একটা থেকে এক লোক বেরিয়ে এলো।

 পুরোদস্তুর কমব্যাট ড্রেস পরে আছে লোকটা বুট, ফেটিগ, কমব্যাট ওয়েবিং–তার বাঁ হাতে অদ্ভুতদর্শন একটা সেমি অটোমেটিক পিস্তল।

বন্দুকটা বড়, কালো, বিখ্যাত আইএমআই ডেজার্ট ঈগল-এর চেয়ে বড়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তৈরি সেমিঅটোমেটিক পিস্তল। এই বন্দুকের অন্যদিকে রয়েছে একটা মজবুত হাতল এবং অদ্ভুত মসৃণ পৃষ্ঠদেশ যার পুরোটাই চলে গেছে ব্যারেল পর্যন্ত।

দেখেই চিনতে পারল ন্যাশ।

ওটা সেমি অটোমেটিক পিস্তল নয়। ওটা দুর্লভ, অসম্ভব দামী ক্যালিকো পিস্তল ওটা, বিশ্বের একমাত্র সত্যিকারের অটোমেটিক পিস্তল। ট্রিগারে চাপ দিলেই বুলেটের একটা প্রবাহ ছুটবে ব্যারেল থেকে। এম-১৬ মতোই, ক্যালিকো থেকেও প্রতিবার তিন রাউন্ড গুলি করা যায়, কিংবা পুরোপুরি অটোতেও করা যায়।

 ক্যালিকো হাতে নিয়ে ন্যাশের দিকে এগিয়ে আসছে লোকটা। তাকে কাভার দিচ্ছে পেছনের চিহ্নহীন চপারে বসে থাকা যোদ্ধারা, হাতে এম-১৬ তাক করা।

লোকটা খালি হাতটা বাড়িয়ে দিল।

আইডলটা, প্লিজ, বলল সে।

লোকটাকে খুঁটিয়ে দেখছে ন্যাশ। মধ্যবয়স্ক তবে লোকটার শরীরে একটুও মেদ জমেনি। হাতের পেশি ফুটে আছে। লম্বাটে মুখ, পাতলা হয়ে আসা কয়েক গোছা সোনালি চুল চোখে এসে ঠেকেছে। নীল সেই চোখ থেকে বেরিয়ে আসছে ঘৃণা।

আইডলটা ন্যাশ দিল না।

এবার লোকটা, হাতের পিস্তল তুলে গুলি করল, তিন রাইন্ড গুলি উড়িয়ে দিল আর্মি পাইলটের খুলি।

আইডলটা, প্লিজ, আবার বলল নোকটা।

এবার অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার হাতে আইডলটা ধরিয়ে দিল ন্যাশ।

 ধন্যবাদ, কর্নেল, বলল লোকটা।

 কে তুমি? জানতে চাইল ন্যাশ।

মাথাটা একদিকে একটু কাত করল লোকটা। তারপর ধীরে ধীরে বাঁকা একচিলতে হাসি ফুটল তার ঠোঁটের কোণে।

নাম হল আর্ল বিটটেকার।

কোথাকার আর্ল বিটটেকার? খেঁকিয়ে উঠল ন্যাশ।

এবার লোকটার চোখে-মুখে পাগলাটে হাসি দেখা গেল।

আমি হলাম সেই লোক যে বিশ্বকে উড়িয়ে দেব।

.

রেস, রেনে, গ্যাবি এবং ডুগী এটিভি থেকে বাইরে তাকিয়ে আছে, বাইরের নাটকটা দেখছে।

ওরা জানল কি করে এখানে আসতে হয় কীভাবে?

রেনে বলল, বাইরে নিশ্চয়ই আর কোনো ম্যানুস্ক্রিপ্ট নেই?

না, নেই, রেস বলল। তবে আমার মনে হয় আমি জানি কীভাবে ওরা এখানে এসেছে।

এটিভি-র চারপাশে একবার তাকাল, কিছু একটা খুঁজছে। কয়েক সেকেন্ড পরে পেয়েও গেল। বিকেএ টিমের ল্যাপটপ। অন করল। কয়েক সেকেন্ড পর জার্মান ভাষায় লেখা চেনা স্ক্রিনটা ভেসে উঠল।

গতকাল ওরা স্ক্রিনে এইটাই দেখেছিল, নাজিদের এসে পৌঁছানোর আগে, দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ সিগন্যালই পেরুভিয়ান বিকেএ-র টিম রিসিভ করেছে।

রেস দেখল যে লাইনটা সে দেখতে চেয়েছিল। দ্বিতীয় লাইনটা :

 ২১.৪.৯৯ ১৯৫০ বর্ধিত সিগনাল সিগনেচার ইউএইচএফ সিগন্যাল

ডুগী, বলল সে, তুমি গতকাল ইউএইচএফ এই সিগন্যাল সম্পর্কে বলেছিলে। সেটা কি?

 ওটা একটা স্ট্যান্ডার্ড হোমিং সিগন্যাল। গতকাল আমি একটা পাঠিয়েছি এয়ার সাপোর্ট টিমকে তাই তারা জানে কোথা থেকে আমাদের তুলতে হবে।

রেনে স্ক্রিনের দিকে আঙুল দিয়ে দেখাল। কিন্তু এই ইউএইচএফ সিগন্যাল দুইদিন আগে জানুয়ারির ৪ তারিখ সন্ধ্যা ৭.৫০ মিনিটে পাঠান হয়েছে। আমার টিম এখানে এসে পৌঁছানোর আগে।

ঠিক তাই, রেস বলল। আর তাই ওই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ।

কীভাবে? ডুগী জিজ্ঞেস করল।

কারণ ঠিক ৭.৪৫ মিনিটে প্রথম রাতে, লরেন এই তখনকার ওপর নিউক্লিওটাইড রিজোন্যান্স স্ক্যান করেছে এবং নিশ্চিত হয়েছে থাইরিয়াম এই গ্রামের আশেপাশেই আছে। ইউএইচএফ সিগন্যাল সাকসেস ফুল স্ক্যানের ঠিক পাঁচ মিনিট পর পাঠান হয়েছে। আর আমরা ঠিক সেই সময় কি করেছিলাম?

আমরা চপার থেকে মালামাল নামাচ্ছিলাম, ডুগী বলল কাঁধ ঝাঁকিয়ে। আমাদের সরঞ্জাম প্রস্তুত আছে।

যথাযথভাবে, রেস বলল। কেউ দেখছে না এই সময়টাই হল সঠিক সময় ইউএইচএফ সিগন্যাল পাঠানোর, একটা সিগন্যাল যাতে তার বন্ধুদের জানান যে নিশ্চিতভাবে, থাইরিয়াম পাওয়া গেছে।

কিন্তু কে করেছে কাজটা? গ্যাবি জিজ্ঞেস করল।

রেস জানালা দিয়ে মাথা বাইরে বের করল। আমার মনে হয় খুঁজে বের করতে হবে।

কোমরে ঝোলান দ্বিতীয় হোলস্টার থেকে আরেকটা ক্যালিকো পিস্তল বের করে ট্রয়। কোপল্যান্ডের দিকে ছুঁড়ে দিল আর্ল বিটটেকার।

হাই, কোপাল্যান্ড, বলল সে।

তোমাদের পেয়ে খুশি হলাম, জবাবে বলল কোপল্যান্ড, পিস্তলটা লুফে নিয়ে কক করল।

ছাইয়ের মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেল লরেনের চেহারা, ট্রয়? অবিশ্বাসে গলায় বলল সে।

তার দিকে ফিরে হাসল কোপল্যান্ড স্কুল, নোংরা হাসি। কার সঙ্গে থাক, সে ব্যাপারে একটু সাবধান হওয়া উচিত ছিল তোমার, লরেন, কারণ তাদের মধ্যে মতলবি লোকও থাকতে পারে।

লরেনের চেহারা গাঢ় হয়ে উঠল।

লরেন? পাশে দাঁড়ান মার্টি বলল।

 বিচ্ছিরি শব্দে হাসতে শুরু করল কোপল্যান্ড। মার্টি, মার্টি, মার্টি। মার্টি কি।

আশায় ডারপাকে বেঁচে দিলে। তোমার দেখা উচিত ছিল ইনফরমেশনগুলো কার মাধ্যমে পাচার করছ। তবে তুমি তো আর জানতে না তোমার স্ত্রী অন্য একজনের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক রাখছে।

রেস বাইরের দৃশ্যটা লক্ষ্য করছে, উত্তেজিত।

মার্টিকে বলা কোপাল্যান্ডের প্রতিটি শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে, অপমানের চূড়ান্ত করছে সে।

তোমার স্ত্রীর ভালো লেগেছিল বলল বোল্ডউইন। আসলে, আমি নিয়ে বেশি ভাবতে চেয়েছিলাম তোমার স্ত্রীর আনন্দ চিৎকার শোনার চেয়ে।

অপমানে ঘৃণায় ও রাগে লাল হয়ে উঠেছে মার্টির চোখ-মুখ।

আমি তোমাকে খুন করব, গর্জে উঠল সে।

সুযোগ নেই, বলে উঠল কোপল্যান্ড, কেলিকোর ট্রিগার টিপে তিন রাউন্ড গুলি করল মার্টির তলপেটে।

মার্টির শার্ট ছিঁড়ে ঢুকল তিন রাউন্ড বুলেট, পেট হয়ে উঠল রক্ত-মাংসের দলা। রেস দেখল মার্টিতে পড়ে গেল। বন্দুকে গুলির শব্দ শোনার সাথে রেস প্রায় লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল।

 মার্টি… রেস নিঃশ্বাস নিতে নিতে ডাকল।

.

শহরের প্রধান সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরা, লরেনের পিস্তল এবার কোপল্যান্ডের দিকে ঘুরে গেল। সেই সঙ্গে বিটটেকার তার পিস্তল তাক করল ফ্রাঙ্ক ন্যাশের দিকে।

এটাকে তুমি কী বলবে, ফ্রাঙ্ক? ন্যাশকে বলল কোপল্যান্ড। অনিচ্ছাকৃত পরিণতি, সুপারনোভার ওপর টেররিস্ট গ্রুপের হাত পড়ল, শেষপর্যন্ত। তাকিয়ে দেখলে দেখবে অস্ত্রটা একটা ধাপ্পাবাজি, যে অস্ত্রটা তুমি প্রসেস করেছ, তার ব্যবহারের কোনো দৃঢ়তা তোমার নেই। অন্য ভাবে চিন্তা করতে পার এটা যে জিনিস ব্যবহার করতে পারবে না সে জিনিস বানাবে না।

কোপল্যান্ড এবং বিটটেকার একই সময়ে গুলি করল।

ন্যাশ এবং লরেন একসঙ্গে ছিটকে পড়ে কাদা-পানি ছলকাল। লরেন সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেছে, তিনটে বুলেটের অন্তত একটা লেগেছে হার্টে। ন্যাশ গুলি খেয়েছে পেটে, কাদায় পড়ার পর ব্যথায় চিৎকার করছে সে।

ওদের দিকে পেছন ফিরল বিটটেকার এবং কোপল্যান্ড আইডল নিয়ে চিহ্নহীন। ব্ল্যাক হকের দিকে ফিরে যাচ্ছে। একটু পরেই উঠে পড়ল আকাশে।

দুটো বড় বড় কালো চপার দ্রুত আকাশের উঠে পড়ল। গাছের মাথার ওপর থেকে সরে গেল, দ্রুত দক্ষিণ দিকে রওনা হল, ভিলকাফোর ছেড়ে।

টেক্সান আর্মির চপারগুলো চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটিভির পেছনের হ্যাচ খুলে দুর্গ থেকে প্রধান সড়কে বেরিয়ে এল রেস, ছুটে এসে হাঁটু গেড়ে বসল মার্টির পাশে। দুর্বল, নিস্তেজ হাতে বেরিয়ে আসা নাড়িভুড়ি নিজের পেটের ভেতরে ঢোকাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। মুখের ভেতর জমা রক্ত গাৰ্গলের মতো আওয়াজ করছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে শুধু ভয় ও অসহায়ত্ব দেখতে পেল রেস। ওহ, উইল…উইল, বলল মার্টি, ঠোঁট কাঁপছে। রক্তভেজা হাত দিয়ে রেসের হাত চেপে ধরল সে।

কেন, মার্টি? এ ভুল তুমি কেন করলে?

 উইল… বলল সে। ইগনিশন…

রেস নিজের হাতে ওকে চেপে ধরল। কী? কী বলতে চাইছ তুমি?

আমি…সত্যি দুঃখিত,.. ইগনিশন,..সিস্টেম… প্লিজ, থামাও…ওদেরকে।

পরক্ষণে স্থির হয়ে গেল তার চোখ, তাতে দৃষ্টি নেই। রেসের হাতে ওর রক্তাক্ত দেহটা অসাড় হয়ে গেল।

ওর পেছনে এই প্রথম গার্গল করার মতো আওয়াজ শুনতে পেল রেস।

ঘুরে তাকাতে দেখল কয়েক গজ দূরে কাদার মধ্যে শুয়ে রয়েছে ফ্রাঙ্ক ন্যাশ। তারও শরীরের মাঝখানটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। কাশির সঙ্গে রক্ত বেরুতে দেখল

এই সময় হঠাৎ নড়াচড়া দেখতে পেল রেস, ন্যাশের পেছনের জঙ্গলে।

সেদিকে ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারল, জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে প্রথম একজন উৎসুক আদিবাসী।

প্রফেসর, এটিভি থেকে চাপা গলায় ডাকল ডুগী। ওখান থেকে আপনি চলে এলেই ভালো হয়।

জঙ্গলের ভেতর থেকে আরো আদিবাসী বেরিয়ে আসছে। এখনো প্রিমিটিভ অস্ত্রগুলো বয়ে বেড়াচ্ছে তারা, কুঠার, লাঠি, তীর, বর্শা, চেহারায় এখনো প্রচণ্ড রাগের ছাপ।

মার্টিকে মার্টিতে সাবধানে শুয়ে রেখে ধীর ধীরে উঠে দাঁড়াল রেস। তারপর সাবধানে ধীরে, খুব ধীরে এগোল এটিভি-র দিকে।

ইন্ডিয়ানরা ওর দিকে তাকালই না।

তাদের চোখ পড়ে আছে ন্যাশের উপর।

অকস্মাৎ রোমহর্ষক তীক্ষ্ণ হুঙ্কার ছেড়ে একযোগে ছুটল তারা একঝাঁক পিরানহার মতো। মুহূর্তের মধ্যে আর্মির কর্নেল রেসের দৃষ্টিপথ থেকে হারিয়ে গেল। সেই জায়গায় শুধু ইন্ডিয়ানদের তামাটে শরীর কিলকিল করতে দেখছে ও, সবাই মিলে অনবরত বল্লম দিয়ে খোঁচাচ্ছে, লাঠি দিয়ে মেরে খুলি ফাটাচ্ছে। তারপর হঠাৎ একটা অন্তিম চিৎকার শোনা গেল, যে চিৎকারটা শুধু একজনের কণ্ঠ থেকেই বেরুতে পারে।

ফ্রাঙ্ক ন্যাশ।

এটিভির পেছনের হ্যাচ বন্ধ করে দিয়ে ঘুরল রেস, একে একে তিনজনের দিকে তাকাল।

ঠিক আছে, বলল ও। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আবার আমাদেরকে প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। ওই আইডল নিয়ে কোনো সুপারনোভার কাছে পৌঁছানোর আগেই বাধা দিতে হবে ওদেরকে।

কীভাবে? জানতে চাইল ডুগী।

 আমাদের প্রথম কাজ, বলল ডুগী, এটা জানা যে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওটাকে।

সরু কোয়েঙ্কোর টানেল ধরে ছুটছে রেস এবং অন্যরা, তবে সবাই আহত হওয়ায় ছোটার গতি খুব একটা বেশি নয়।

অস্ত্র বলতে তেমন কিছু নেই ওদের, উপরের গ্রাম থেকে ডুগীর নিয়ে আসা দুটো এসআইজি-সায়ের ও একটা এমপি-৫ মাত্র সম্বল। আর্মার প্রসঙ্গ যদি ওঠে, ডুগী এখনো কমব্যাট ফেটিগ পরে আছে, আর রেস পরে আছে কেভলার ব্রেস্টপ্লেট। ব্যস এই।

 কিন্তু কোথায় যাচ্ছে কিংবা যেতে হবে, জানে ওরা এবং সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ওদের গন্তব্য জলপ্রপাতটা।

যেখানে, নদীর তীরে, লুকনো আছে নাজিদের সেই গুজ সী-প্লেন।

প্রায় দশ মিনিট ছোটার পর কোয়েঙ্কোর শেষ মাথায়, জলপ্রপাতের কাছে উঠে এল ওরা। গুজের কাছে পৌঁছাতে লাগল আরো চার মিনিট। ঠিক যেখানে রেস, ডুগী এবং ভ্যান লিওয়েন ওটাকে রেখে গিয়েছিল সেখানেই আছে, নদীর কিনারা ঘেঁষা গাছগুলোর ঝুলে থাকা ডালপালার নিচে। উলিকে দেখে খুশি হল রেস, সী-প্লেনের ভেতরে ঘুমাচ্ছে সে।

পাঁচ মিনিট পর নদীর পানি কেটে ছুটল গুজ, রেস একটু পরেই টেক-অফ স্পিড় পাওয়া গেল, সাবলীল ভঙ্গিতে নদীর সারফেস ছেড়ে আকাশে উড়াল দিল। আকাশে ওড়ার পর ডুগী বাক নিয়ে দক্ষিণে রওনা হল, টেক্সান ব্ল্যাক হক যেদিকে গেছে।

দশ মিনিট ওড়ার পর ওগুলোকে দেখতে পেল ডুগী দিগন্তে আটটা কালো বিন্দু। তির্যক একটা ফ্লাইট পাথ ধরে ডান দিকে ছুটছে, যাচ্ছে পাহাড়ের উপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে।

কুজকোয় যাচ্ছে ওরা। ডুগী বলল।

 ওদের পিছু থাক, রেস বলল।

এক ঘণ্টা পর কুজকোর ঠিক বাইরে একটা প্রাইভেট এয়ারফিল্ডে ল্যান্ড করল আটটা ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার।

ধুলো ঢাকা রানওয়েতে ওদের জন্য রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে রয়েছে একটা অ্যান্টোনভ এএন-২২ হেভি-লিফট কার্গো প্লেন।

শক্তিশালী কোয়াড্রপল প্রপেলার সিস্টেম ও পেছনে চওড়া লোডিং র‍্যাম্প থাকায় রাশিয়ার এই এএন-২২ ট্যাঙ্ক-লিফটার হিসাবে খুবই নির্ভরযোগ্য। একই সঙ্গে এটা একটা মূল্যবান রফতানী পণ্যও বটে, বিভিন্ন দেশে বিক্রি হচ্ছে, যারা আমেরিকান কার্গো লিফটার কিনতে পারে না বা পছন্দ করে না।

স্নায়ুযুদ্ধের পর ব্ল্যাক মার্কেটেও সহজ প্রাপ্য হয়ে ওঠে এএন-২২। মুভি স্টার ও প্রফেশনাল গলফাররা যেখানে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জেট কিনছে, সেখানে প্যারামিলিটারি প্রতিষ্ঠানগুলো ১২ মিলিয়ন ডলারে একটা সেকেন্ডহ্যান্ড এএন-২২ কিনতে না পারার কোনো কারণ নেই।

 নিজেদের কপ্টার থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে কার্গো প্লেনটার লোডিং র‍্যাম্পের দিকে হাঁটছে আর্ল বিটটেকার এবং ট্রয় কোপল্যান্ড, বিশাল কার্গো প্লেনটার লোডিং র‍্যাম্পটার কাছে চলে এলো।

 প্লেনটার পেছনে এসে মুখ তুলে ওটার গুহাসদৃশ কার্গো বে-র দিকে তাকাল বিটটেকার, ভেতরে তার গর্বের বস্তুটি বসে রয়েছে।

একটা এম-১এ-১ অ্যাবরামস ব্যাটল ট্যাঙ্ক।

দেখবার মতোই একটা জিনিস। হিংস্র, পোষ মানতে রাজি নয় এমন একটা শক্তি। এটা কালো রঙ করা কমপোজিট আর্মার চকচক করে না, অবিশ্বাস্য চওড়া ট্র্যাক কার্গো ডেকে যেন গেঁথে আছে।

গান টুরেটের উপর চোখ বুলাল বিটটেকার। সামনের দিকে মুখ করা ওটা, ৩০ ডিগ্রি কোণ বরাবর ওটার ১০৫ মিমি লম্বা কামান উপরদিকে তাক করা।

সন্তুষ্টির সঙ্গে ট্যাঙ্কটার দিকে তাকিয়ে আছে বিটটেকার। চুরি করে আনা সুপারনোভা রাখার জন্য এটাই হল আদর্শ জায়গা। এককথায় দুর্ভেদ্য।

আইডলটা ফ্রিডম ফাইটার টেকনিশিয়ানদের একজনের হাতে ধরিয়ে দিল সে, সেটা নিয়ে ট্যাঙ্কের দিকে এগোল ছোট্টখাট্টো মানুষটা।

জেন্টেলম্যান, রেডিওর মাধ্যমে বিটটেকার হেলিকপ্টার পাইলটদের উদ্দেশে মেসেজ পাঠাল। লয়েল সার্ভিস দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এখন থেকে সব দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। পরবর্তী জীবনে দেখা হবে।

এরপর রেডিওটা বন্ধ করে দিয়ে পকেট থেকে নিজের সেল ফোনটা বের করে ডায়াল করল ব্লুই জেমস-এর নাম্বারে।

ব্লুই-র অ্যাপার্টমেন্টে ফোন বেজে উঠল। এফবিআই-র টেসিং ইকুইপমেন্টগুলো ক্রিসমাস ট্রি-র মতো হলে উঠল।

ডিমোনাকো সুড়ুৎ করে হেডফোনের ভেতর ঢুকে পড়ল, তারপর ব্রুই-র দিকে মাথা নাড়াল।

ব্লুই ফোনটা তুলল। ইয়ো।

ব্লুই, বিটটেকার বলছি। আমরা থাইরিয়ামটা পেয়ে গেছি। মেসেজটা পাঠিয়ে দাও।

 ঠিক আছে, আর্ল।

বিটটেকার ফোনটা রেখে দিল, কোপল্যান্ড তার ঠিক পেছনে, লোডিং র‍্যাম্পের দিকে এগিয়ে গেল সরাসরি অ্যান্টোনোভের পেছনে।

তখন বাজে রাত ১১.১৩।

.

জেসাস! ওরা টেক-অফ করছে! হতাশায় চেঁচিয়ে উঠল, হাত লম্বা করে পুরানো অ্যান্টোনভটাকে দেখাচ্ছে রানওয়ে ধরে সগর্জনে ছুটতে ছুটতে টেক-অফ করল আকাশে।

সাইজটার দিকে তাকাও, রেনে বলল।

আমার মনে হচ্ছে ওটার মধ্যেই ওদের সুপারনোভাটা আছে, বলল রেস।

অ্যান্টোনভ আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে, ওটার ছড়ান দুটো ডানা চকচক করছে ভোরের আলোয়।

বড়সড় গুহার মতো কার্গো বে-তে বসে আছে অ্যাবরামস ব্যাটল ট্যাঙ্কটা, ওটায় ঢোকার পর একটা ভ্যাকুম সিলড ওঅর্ক চেম্বারে কাজ করছে দুজন ফ্রিডম ফাইটার টেকনিশিয়ান। একটা লেয়ার কাটার-এর সাহায্যে থাইরিয়াম আইডলে গোড়া থেকে সিলিন্ডার আকৃতির খানিকটা অংশ অত্যন্ত সাবধানে কেটে নিচ্ছে। তারা।

 টেকনিশিয়ান দুজনের পেছনে বড় আকারের ট্যাঙ্কটার প্রায় সবটুকু জায়গা দখল করে বসে রয়েছে সুপারনোভা—এই সুপারনোভা সেদিনও ডারপা হেডকোয়ার্টারের ভল্টে নিরাপদে রাখা ছিল।

সিলিন্ডার আকৃতির থাইরিয়াম কেটে নেওয়ার পর, কার্গো বে-র দেয়ালের দুটো আইবিএম সুপার-কম্পিউটারের সাহায্যে আলাদা ওয়েভ অগমেন্টেশেন, গ্যাস বিশুদ্ধকরণ ও প্রোটন সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে থাইরিয়ামের টুকরোটাকে সাবক্রিটিকাল ম্যাস-এর রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হল।

তৈরি হতে কতক্ষণ লাগবে ওটার? হঠাৎ করে তাদের মাথার উপর থেকে জানতে চাইল একজন।

 মুখ তুলে দুজন দেখল ট্যাঙ্কের গোল আপার হ্যাচ থেকে তাদেরকে দেখছে আর্ল বিটটেকার।

আর পনেরো মিনিট, তাদের একজন জানাল।

বিটটেকার তার ঘড়ির দিকে তাকাল।

১১:২৮ বাজে।

কাজ শেষ হলে আমাকে জানিও, বলল সে।

ডুগী, রেস বলল নিজেদের মাথার উপরে প্রকাণ্ড কার্গো প্লেনটাকে দেখতে দেখতে। ওই বড় বড় কার্গো প্লেনের লোডিং র‍্যাম্প কিভাবে খুলবে?

ভুরু কোঁচকাল ডুগী। দুভাবে খোলা যায়। কার্গো বে-র ভেতরে কনসোল আছে, তার একটা বোতাম টিপে খুলতে পার, কিংবা ব্যবহার করতে পার এক্সটিরিয়ন কনসোলটা।

প্যানেলটা খুলতে কোনো কোড দরকার নেই?

না, দরকার নেই, বলল ডুগী। আকাশে থাকার সময় বাইরে থেকে লোডিং র‍্যাম্পটাকে আর খোলার চেষ্টা করবে, এখন কি করবে কেউ?

কথা শেষ করে রেসের দিকে তাকাল সে। হঠাৎ তার চোখ দুটো বিস্ফোরিত হয়ে উঠল।

তুমি নিশ্চয়ই সিরিয়াস নও?

কিন্তু সুপারনোভায় ওরা কাজে লাগাবার আগেই আইডলটা উদ্ধার করতে হবে, বলল রেস। এটা একেবারে পানির মতো পরিষ্কার।

কিন্তু কীভাবে?

আমাদেরকে ওটার ঠিক পেছনে নিয়ে যাবে। ওটার ঠিক নিচে থাকব, ওরা তা হলে আমাদেরকে দেখতে পাবে না। তারপর ধীরে ধীরে যতটা সম্ভব ওটার কাছাকাছি হব।

তারপর কী করবে তুমি?

রেস ঘুরে দাঁড়াল, তাকাল প্লেনের চারপাশে করুণ দলের দিকে : ডুগী পা এবং কাঁধে গুলির আঘাতে আহত; রেনে, কাঁধে আঘাতপ্রাপ্ত; গ্যাবি, এখন পর্যন্ত হালকা আঘাত পেয়েছে ওদের হালকা পাতলা লড়াই-এ; উলি, সম্ভব না।

রেস নাক টেনে একবার হাসল। আমি এখন কি করব? আমি কি বিশ্বটাকে রক্ষা করব?

এই বলে উঠে দাঁড়াল অপর হাতে চেপে ধরল ওদের একমাত্র সাব মেশিনগান, নেভি এম পি-৫।

ঠিক আছে তাহলে। ওপরে তোলে আমাদের।

সকালের উজ্জ্বল আলোর ভেতর দিয়ে ছুটছে প্লেন দুটো।

 মার্টি থেকে ১১,০০০ ফুট, অর্থাৎ তিন কিলোমিটার উপরে রয়েছে অ্যান্টোনভ, গতি ঘণ্টার ২০০ নট।

অথচ অ্যান্টোনভের কেউ জানে না ওটার লেজের কাছে পৌঁছে গেছে ছোট্ট একটা প্লেন, গুজ।

 সীপ্লেনটার প্যানেল থরথর করে কাঁপছে, কারণ ম্যাক্সিমাম স্পিড় প্রতি ঘণ্টায় ২২০ নটে ছুটছে ওটা। স্টিয়ারিং ভেইনটা যত জোরে সম্ভব চেপে ধরল ডুগী, প্লেনটাকে স্থির ও সোজা রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

খুব খারাপ। গুজের অপারেশনাল সিলিং হল ২১,৩০০ ফুট। অ্যান্টোনভ যদি উপরে ওঠা বজায় রাখে, খানিক পরেই গুজের নাগালের বাইরে চলে যাবে ওটা।

ক্রমশ, একটু একটু করে, বিশাল কার্গো-লিফটারের কাছে পৌঁছচ্ছে গুজ। দুটো প্লেন যেন শূন্যে অনুষ্ঠিত অদ্ভুত কোনো ব্যালে নৃত্যে অংশ নিচ্ছে। ধীরে, খুবই ধীরে, বড় বিমানের পেছনে নাক ঠেকাতে যাচ্ছে ছোট বিমানটা।

তারপর হঠাৎ কোনো নোটিশ ছাড়াই গুজের নাকে বসান হ্যাচ সশব্দে খুলে গেল, সেটা থেকে কোমর পর্যন্ত বেরিয়ে এল একটা মানুষের আকৃতি।

গুজের সামনের হ্যাচ থেকে মাথাটা বের করতেই বাতাসের তীব্র ঝাঁপটা অনুভব করল রেস।

হ্যাচটা তার শরীরে আছড়ে পড়ছিল, ধাক্কা দিচ্ছিল। কেভলার ব্রেস্টপ্লেটটা পরা থাকাতে বাতাসের প্রচণ্ড চাপ ঠেকিয়ে দিয়েছে।

রেস, অ্যান্টোনভের ঢালু পেছন দিকটা ঝুলে থাকতে দেখতে পেল, খুব বেশি হলে পনেরো ফুট দূরে।

ক্রাইস্ট, কী বিশাল…

 এটা এমন যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখির শেষ প্রান্তটা দেখছে সে।

তারপর নিচের দিকটায় চোখ পড়ল রেসের।

ওওওওহ…!

পৃথিবী অনেক নিচে অনেক অনেক নিচে। তার ঠিক নিচে সে দেখতে পেল মাঠ এবং পাহাড়ের প্যাঁচওয়ার্ক, পুব দিকে যাচ্ছে, প্লেন দুটোর সামনে কেউ যেন সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখে সীমাহীন রেইনফরেস্ট।

নিচে পড়ে যাওয়ার কথা ভেব না, নিজের কেউ যেন চেঁচিয়ে বলল। কাজে মন দাও।

ঠিক।

ঠিক আছে। দম ফুরিয়ে যাওয়ার আগে, আর দুটো প্লেন বেশি উপরে ওঠারও আগে, কাজটা করতে হবে ওকে। বেশি উপরে উঠতে বাধ্য হলে পাতলা বাতাস আর হিম ঠাণ্ডায় মারা যেতে পারে।

হাত নেড়ে একটা নির্দেশ দিল ডুগী, অ্যান্টোনভের আরো কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

আরও এগোচ্ছে গুজ।

 মাত্র আট ফুট দূরে রয়েছে।

.

অ্যান্টোনভের ককপিটে বসে রয়েছে আর্ল বিটটেকার আর ট্রয় কোপল্যান্ড দুজনের কেউই জানে না ওদের প্লেনের পেছনে কী ঘটছে।

বিটটেকারের পাশে, দেয়ালে বসান টেলিফোনটা বেজে উঠল।

 ইয়েস, বলল বিটটেকার।

স্যার, একজন টেকনিশিয়ান বলল, সুপারনোভাকে আর্ম করার দায়িত্বে রয়েছে সে। ডিভাইসে থাইরিয়াম বসিয়েছি আমরা। এখন ওটা রেডি।

ঠিক আছে। আমি আসছি। বলল বিটটেকার।

অ্যান্টোনভ থেকে তিন ফুট দূরে গুজ, ১৫,০০০ ফুট উপরে রয়েছে প্লেন দুটো, আরো উঠছে।

রেস দাঁড়িয়ে আছে, ওর উর্ধাঙ্গের সবটুকুই গুজের নোজ হ্যাচের বাইরে বেরিয়ে রয়েছে। অ্যান্টোনভের লোডিং র‍্যাম্পটা ওর সামনেই। ওটার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে এক সেট সরু রেখা দেখে, প্লেনের পেছন দিকে চৌকো একটা ঘর তৈরি করেছে ওগুলো।

র‍্যাম্পের বাম দিকে ছোট একটা প্যানেল দেখল রেস, প্লেনের বাইরে দেয়ালের গায়ে।

ডুগীর উদ্দেশে হাত নেড়ে গুজকে আরো কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল ও।

আপার ডেক থেকে সরু একটা মেটাল ক্যাটওয়াকে বেরিয়ে এসে নিচে তাকাল বিটটেকার। গারগান্টিয়াম ট্যাঙ্কের উপর চোখ বুলাল সে, দেখল ওটার বিরাট কামান সরাসরি তার দিকে তাক করা রয়েছে।

হাতঘড়িটা চোখের সামনে তুলল সে।

এখন ১১:৪৮। আধাঘণ্টা আগে ভি-সিডি প্রকাশ হয়েছে। বিশ্ব এখন আতঙ্কিত। কেয়ামত এসে গেছে।

মইয়ের ধাপ বেয়ে তরতর করে নেমে এলো বিটটেকার। ট্যাঙ্কের টুরেটে উঠল, তারপর ভেতরে নামল।

অ্যাবরামসের পেটে বেরিয়ে এসে সুপারনোভাটাকে দেখতে পেল সে, দেখল দুটো থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ার হেড নিজেদের আওয়ার গ্লাস কাঠামো নিয়ে ঝুলে রয়েছে, ওগুলোর ঠিক মাঝখানে ভ্যাকুয়াম সিলড চেম্বারে হরিজেন্টাল ভঙ্গিতে শুয়ে রয়েছে সিলিন্ডার আকৃতির থাইরিয়াম।

সন্তুষ্ট চিত্তে মাথা ঝাঁকাল সে।

 ডেটোনেশন সিকোয়েন্স স্টার্ট করো, বলল সে।

ইয়েস, স্যার, টেকনিশিয়ানদের একজন বলল, ডিভাইসটার সামনে রাখা ল্যাপটপ কম্পিউটারে তুলল সে।

বারো মিনিটে সেট করো, বলল বিটটেকার। দুপুর বারোটা।

দ্রুত টাইপ করল টেকনিশিয়ান, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ল্যাপটপে একটা কাউন্টডাউন স্ক্রিন ফুটল :

তোমার হাতে সময় আছে
০০.১২:০০
ডিজআর্ম করতে কয়েক মিনিট বাকী
ডিজআর্ম কোর্ড ঢোকাও

টেকনিশিয়ান এন্টার বাটন চাপ দিতেই দ্রুত সময় কাউন্টডাউন হতে লাগল। বিটটেকার তার সেল ফোনটা তুলে ব্লুই জেমসকে আবার ডায়াল করল।

ব্লুই-র অ্যাপার্টমেন্টে ডিজিটাল ট্রেসিং ইকুইপম্যান্ট জ্বলে উঠল ক্রিসমাস ট্রির মতো।

ব্লুই ফোনটা তুলল। ইও।

ম্যাসেজ কি পাঠান হয়েছে?

 পাঠান হয়েছে, আর্ল, ব্লুই মিথ্যা বলল জন পল ডিমোনাকোর দিকে তাকিয়ে।

 রাস্তায় কি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে?

তুমি দেখলে বিশ্বাস করবে না, ব্লুই বলল।

অ্যান্টনভের পেছনে পৌঁছে গেছে গুজ, দুটো প্লেনের মাঝখানে আর মাত্র দুই ফুট ব্যবধান।

তীব্র বাতাস অগ্রাহ্য করে এক হাতে গুজের হ্যাচ ধরে আছে রেস, অপর হাত যতটা সম্ভব লম্বা করে দিয়েছে কার্গো প্লেনের ছোট্ট প্যানেলটার দিকে।

 এখনো ওটা অনেকটা দূরে গুজকে আরো কাছাকাছি সরিয়ে আনছে ডুগী, সাহসে যতটুকু কুলায় তারু…

…প্যানেলটা ধরে ফেলল রেস, চাপ দিয়ে খুলে ফেলল।

ভেতরে দুটো বোম দেখতে পাচ্ছে–একটা লাল, একটা সবুজ-সময় নষ্ট না করে সবুজ বোতামটা টিপে ধরল ও।

মেঘ ডাকার মতো গুরুগম্ভীর আওয়াজ করে প্লেনটার লোডিং র‍্যাম্প নিচু হতে শুরু করল, নেমে আসছে সরাসরি গুজের নাকের উপর।

বিড়ালের মতো ক্ষিপ্রতায় লোডিং র‍্যাম্পের পথ থেকে গুজকে সরিয়ে আনল ডুগী, কিন্তু তা করতে গিয়ে সী-প্লেনের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে থাকা রেসকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিল। ভারসাম্য হারিয়ে শূন্যে ছিটকে পড়তে যাচ্ছিল ও, ওর শরীরের বেশির ভাগই হ্যাচের বাইরে বেরিয়ে পড়েছে, শুধু হ্যাচের দেয়ালে পা বাঁধিয়ে রেখেছিল ঠিক তখনি ডুগী সী-প্লেনটাকে অ্যান্টানভের পেছনে নিয়ে এলো, প্লেনটার র‍্যাম্প হাঁ করে খুলে যাচ্ছে।

পেরুর আকাশে সগর্জনে ছুটছে দুটো প্লেন, একটা বিশাল অ্যান্টনভ অন্যটা ছোট্টো গুজ সী-প্লেন, একটার পেছনে আরেকটা, ব্যবধান মাত্র দুই ফুট, পৌঁছে যাচ্ছে ১৮,০০০ ফুট উচ্চতায়। তবে প্রকাণ্ড কার্গো প্লেনের পেছনের লোডিং র‍্যাম্প এখন পুরোপরি খোলা, একেবারে গুজের নাকের সামনে!

তারপর, সেই মুহূর্তটা ফিরে এলো, র‍্যাম্পটা পুরোপুরি খুলে গেল ১৮,০০০ ফুট উচ্চতার। রেস প্রচণ্ড বাতাস উপেক্ষা করে গুজের নাক থেকে লাফ দিল, ঢুকে পড়ল অ্যান্টনভের হাঁ করা লোডিং র‍্যাম্পে।

বিশাল কার্গো প্লেনের লোডিং র‍্যাম্পের মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ল রেস।

মুহূর্তে অনুভব করল প্লেন থেকে ওকে বের করে নিয়ে যেতে চাইছে উন্মত্ত বাতাস, নিজের পেটের ওপর শুয়ে, হাতের ওপর হাত, বাতাসের ঝাঁপটা লাগছে চারদিকে। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল। তার পেছনে গুজ এবং ১৮,০০০ ফুট উচ্চতায় পরিষ্কার আকাশ।

জীবন আপনাকে যেখানে নিয়ে যাবে সেটা মজার…

বিশাল কার্গো যে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে ওর সামনে।

দেখল কার্গো বে-র মাঝখানে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে রয়েছে অ্যাবরামস ট্যাঙ্কটা। দেখল প্রচণ্ড বাতাস আটকে রাখা হয়নি এমন প্রতিটি জিনিস প্লেন থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। লাল ওয়ার্নিং আলো ঘনঘন জ্বলছে ও নিভছে, সেই সঙ্গে বাজছে অ্যালার্ম, জানান দিচ্ছে যে লোডিং র‍্যাম্প খুলে গেছে।

আগেই জেনেছে আর্ল বিটটেকার।

লোডিং র‍্যাম্প ফুটখানেক খোলার সঙ্গে সঙ্গে কার্গো বে-তে ঢুকে পড়া বাতাসের প্রচণ্ড আওয়াজ শুনেছে সে। এক সেকেন্ড পরেই তীক্ষ্ণ শব্দে বেজে উঠেছে ক্ল্যাক্সন অ্যালার্ম।

অ্যাবরামস ট্যাঙ্কের পেটের ভেতরে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে, সেলুলার ফোন চেপে ধরেছে কানে।

ব্যাপারটা কী? ট্যাঙ্কের মই বেয়ে উঠছে সে, বাইরে বেরুবে।

নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কোমরের বেল্টে গুঁজে রাখা এমটি-৫ টেনে নিল রেস, তারপর বিশাল ট্যাঙ্ক ও কার্গো হোল্ডের মাঝখানে সরু ফাঁকটা দিয়ে এগোল।

হঠাৎ ওর বাম দিকে, ট্যাঙ্কের মাথার হ্যাচ থেকে মাথা তুলল এক লোক।

ঘুরে লোকটার দিকে অস্ত্র তাক করল রেস।

ফ্রিজ! চেঁচিয়ে বলল সে।

স্থির হয়ে গেল লোকটা।

রেসের চোখ বড় বড় হয়ে গেল লোকটাকে চিনতে পেরে।

এই লোকটাই ভিলকাফোরের ফ্রাঙ্ক ন্যাশের কাছ থেকে আইডলটা নিয়েছিল, সন্ত্রাসীদের লিডার।

হলি শিট।

অদ্ভুত ব্যাপার, লোকটা একটা সেলুলার ফোন ধরে রেখেছে হাতে।

মাথার ওপর হাত তুলে নেমে এসো! চেঁচিয়ে বলল রেস।

প্রথমে নড়ল না বিটটেকার। সে ভাবছে মাথায় নিউইয়র্ক ইয়াঙ্কি ক্যাপ, নীল জিনস, টি-শার্টের উপর কালো কেভলার ব্রেস্টপ্লেট পরা লোকটা কে হতে পারে। এমটি-৫ তুলে তাকে অর্ডার করছে।

 রেসের পেছনের খোলা লোডিং র‍্যাম্পের উপরও একবার চোখ বুলাল বিটটেকার, দেখল অ্যান্টোনভের বিশ ফুট পেছনে রয়েছে গুজ সী-প্লেনটা, বিশাল কার্গো প্লেনের সঙ্গে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

ধীরে ধীরে ট্যাঙ্কের টুরেন্ট থেকে নিচে নেমে রেসের সামনে দাঁড়াল বিটটেকার।

 ফোনটা আমার কাছে দাও, রেস বলেই টেররিস্টের হাত থেকে সেলুলার ফোনটা কেড়ে নিল। কার সাথে তুমি কথা বলছিলে?

রেস কানে ঠেকাল ফোনটা এবং বিটটেকারের দিকে বন্দুক তাক করে চোখ রাখল। কে কথা বলছেন? ফোনে বলল সে।

আমি কে? বাজে একটা কণ্ঠস্বর ফিরে এলো। তুমি কে এটাই হল সঠিক প্রশ্ন।

আমার নাম উইলিয়াম রেস। আমি একজন আমেরিকান সিটিজেন, আমাকে পেরুতে নিয়ে আসা হয়েছে সুপারনোভায় ঢোকানোর জন্য থাইরিয়ামের নমুনা সংগ্রহে আর্মিকে সাহায্য করার জন্য।

ওপাশে বেশ জোরে সোরে নড়াচড়ার আওয়াজ পাওয়া গেল।

মিস্টার রেস, নতুন এক কণ্ঠ বলে উঠল আচমকা, আমার নাম ডিমোনাকো এফবিআই-র স্পেশাল এজেন্ট। আমি ডিফেন্স অফিস থেকে একটা সুপারনোভা চুরি যাবার ঘটনা তদন্ত করছি—

 ইউ কাইন্ট স্টপ ইট! বিটটেকারের টেক্সান উচ্চারণ স্পষ্ট হয়ে উঠল সাথে সাথে। আপনি থামাতে পারবেন না।

কেন নয়? বলল রেস।

কারণ আমিও জানি না ডিজআর্ম করতে হবে কীভাবে। নিশ্চিত করেছি, আমার লোকজন যাতে শিখে নেয় কীভাবে আর্ম করতে হয়, ব্যস। একবার শুরু হলে শেষ হবেই। থামাথামি নেই।

কেউ ডিজআর্ম কোড জানে না?

কেউ না। জানতে পারে, ডারপা-র কোনো প্রিন্সটন সায়েন্টিস্ট। তাতে কোনো লাভ হবে কি?

হতাশায় ঠোঁট কামড়ে ধরল রেস।

অ্যালার্ম বাজছে তারস্বরে। যে কোনো মুহূর্তে

গুলির আওয়াজ।

তীব্র, আচমকা।

গড়িয়ে গেল রেস। চারপাশে গুলি বিধছে। গায়ে লাগছে না কেন সেটাই বিস্ময়কর। ট্রয় কোপল্যান্ড আরো দুজন টেক্সানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাটওয়াকে। গুলি ছুড়ছে তাদের লক্ষ্য করে কার্গো বে থেকে।

 সুযোগটা নিল বিটটেকার। হারিয়ে গেল রেসের চোখের আড়ালে।

ট্যাঙ্কের বিশাল ট্র্যাকার হুইলের আড়ালে চলে গেল রেসও।

 এখন কী করবে, উইল?

এমন সময় শুনতে পেল সে, একজন ডাকছে তার নাম ধরে।

 আপনি নাকি, প্রফেসর রেস? কোপল্যান্ড বলছে কথাগুলো কুত্তার বাচ্চা?

পুরোপুরি অ্যাসহোল হওয়ারচে ভালো। পাল্টা চিৎকার ছুঁড়ে দিল রেস। রেগে গিয়ে বেরিয়ে এসে গুলি ছুড়ল সন্ত্রাসীদের দিকে। মিস করল।

ডেম ইট, ভাবছে। কী করবে এখন? বেশি কিছু ভাবতে পারছে না।

 মাথার ভেতরে এক কণ্ঠ মনে করিয়ে দিল, সুপারনোভা!

অন্তত এই সফরে সে একটা সুপারনোভা ডিজআর্ম করতে পেরেছে।

উঠে দাঁড়াল রেস সাথে সাথে, এমপি ৫ ট্রিগারে চাপ দিল আরো জোরে। আসতে থাকা লোকগুলোর দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে লাফিয়ে উঠে পড়ল ট্যাঙ্কের ওপর। তারপর সে ট্যাঙ্কের টুরেটের ওপর উঠল এবং লাফ দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল হ্যাচ গলে।

.

ও সুপারনোভার দায়িত্বে থাকা ফ্রিডম ফাইটার টেকনিশিয়ান দুজনের হতবাক চেহারার মুখোমুখি হল।

বেরোও! এখনি! চিৎকার তাদের নাকের দিকে তার এমপি-৫ নাচিয়ে চিৎকার করে বলল।

টেকনিশিয়ান দুজন মই বেয়ে দ্রুত ওঠে গেল আর হ্যাচ দিয়ে টারেটে বেরিয়ে গেল, তাদের পেছনে বন্ধ হয়ে গেল ওটা। রেস ওটার বোল্ট আটকে দিল, এবং তারপর নিজেকে ট্যাংকের কমান্ড সেন্টারে একা পেল।

সুপারনোভার সাথে একা।

তার এখন অনুভূতি শুরু হল যে এমন পরিস্থিতিতে আগেও পড়েছে।

পেছনের পকেটে মোবাইল ফোনের অস্তিত্ব অনুভব করল, সেটা আঁকড়ে ধরল।

এফবিআই-ম্যান, তুমি কী এখনো সেখানে আছ? সে বলল।

জন-পল ডিমোনাকো তার মাইক্রোফোনের জন্য লাফ দিল।

আমি এখানে, মিস্টার রেস, সে দ্রুত বলল।

আপনি কি নাম বলেছিলে? রেসের গলা শোনা গেল।

আরেকজন এজেন্ট বলল, ট্রেস বেরিয়ে আসছে। আরে একি? এটা বলা হচ্ছে তারা পেরুর কোথাও রয়েছে… আর মার্টি থেকে ২০,০০০ ফুট ওপরে।

 আমার নাম ডিমোনাকো, ডিমোনাকো বলল। স্পেশাল এজেন্ট জন-পল ডিমোনাকো। এখন, আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন মিস্টার রেস। আপনি যেখানেই থাকুন, আপনাকে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনার সাথের লোকেরা খুব ভয়ানক।

নোশিট, শার্লক।

আহ– রেসের কণ্ঠ বলল।

–আমি মনে হচ্ছে এখান থেকে বের হওয়া কোন উপায় নয়, রেস ফোনে বলল। কথা বলতে বলতে, সে সুপারনোভার টাইমার কাউন্টডাউন দেখল।

 ০০: ০২ : ০১

০০: ০২:০০

০০: ০১:৫৯

ওহ, নিশ্চয়ই আমার সাথে মজা করছেন, সে বলল। এটা ঠিক নয়।

প্রফেসর রেস, ট্যাংক থেকে বেরিয়ে আসুন। আব্রামসের বাইরে একটা লাউডস্পিকার থেকে একটা কুৎসিত কণ্ঠস্বর বেরিয়ে আসতে শোনা গেল। কপল্যান্ডের কণ্ঠস্বর।

রেস বিশাল যানটার গানারস সাইট দিয়ে বাইরে তাকাল আর কার্গো বিমানের সামনের প্রান্তে ক্যাটওয়াকের ওপর কোপল্যান্ডকে মাইক্রোফোন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল।

 হোন্ডের ভেতর বাতাস পাগলের মতো দাপাদাপি করছে। ট্যাংকের পেছনের লোডিং র‍্যাম্প তখনো খোলা।

রেস বিশাল ট্যাংকটার ভেতরে তাকাল।

সুপারনোভা কমান্ড সেন্টার অংশের পুরোটা দখল করে আছে। তার ওপরে, সে টারেটে এন্ট্রি হ্যাচ দেখতে পেল। সামনে ট্যাংকের ফায়ারিং কন্ট্রোল, যেগুলো দিয়ে ১০৫ মিমি কামান নিয়ন্ত্রণ করা হয় আর ওগুলোর পেছনে নিচে, ট্যাংকের সামনের অংশে মেঝেতে অর্ধ গাঁথা একটা সিট আর একটা স্টিয়ারিং যন্ত্র, ট্যাংকের ড্রাইভ কন্ট্রোল।

যদিও ড্রাইভ কন্ট্রোলটার কিছু একটা খুব অভূত। ড্রাইভারের সিটের ওপরের অংশ বাস্তবিক অর্থে এর ওপরের ছাদের নিচু অংশের সাথে লেগে গিয়েছে।

আর তারপর রেস বুঝতে পারল।

এ ধরনের ট্যাংকে ড্রাইভার তার সিটের ওপরের একটা ছোট হ্যাচ দিয়ে মাথা বের করে ড্রাইভ করে।

রেসের মেরুদণ্ড বেয়ে একটা বরফের শীতল স্রোত নেমে গেল।

সামনে ওপরে আরেকটা হ্যাচ!

সে লাফিয়ে সামনে পড়ল, পেছনে ড্রাইভারের সিটে গেল, আর সাথে সাথে ওপরে তাকিয়ে দেখল আসলেই তাই। সেখানে আরেকটা হ্যাচ আছে। আর সেই মুহূর্তে সেটা ভোলা।

এতে দুই পা ফাঁক করে সোজা রেসের মাথার দিকে তার ক্যালিকো পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর্ল বিটটেকার।

তুমি কে? বিটটেকার ধীরে ধীরে জানতে চাইল।

আমার নাম উইলিয়াম রেস, হ্যাচ দিয়ে বিটটেকারের দিকে তাকিয়ে, রেস বলল। তার মাথা দ্রুত কাজ করছিল, পালানোর উপায় খুঁজছিল।

এক মিনিট, একটা সম্ভাবনা আছে…।

আমি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ভাষাতত্ত্বের একজন প্রফেসর, সে দ্রুত যোগ : করল, বিটটেকারকে কথা বলায় ব্যস্ত রাখতে চেষ্টা করল।

প্রফেসর? বিটটেকার খেঁকিয়ে ওঠল। জেসাস।

 রেস বুঝতে পারল যেখানে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে, বিটটেকার তার হাতগুলো দেখতে পাবে না, হ্যাচের নিচে লুকান, বিটটেকার দেখতে পাচ্ছে না তখন রেস নিচে ট্যাংকের স্টিয়ারিং কন্ট্রোলগুলো অনুভব করছে নিজ হাতে।

বলুন তো দেখি, এখানে এসে আপনি কি পাবেন বলে ভেবেছন?

আমি ভেবেছি সুপারনোভাটা নিষ্ক্রিয় করতে পারব। মানে বুঝতেই পারছেন, পৃথিবীটাকে বাঁচাতে পারব।

এখনো অনুভব করছে।

 ড্যাম ইট, এটা এখানে নিচে কোথাও থাকার কথা…।

আপনি কী আসলেই ভেবেছেন বোমাটা নিষ্ক্রিয় করতে পারবেন।

 পেয়েছি।

রেস কঠিন চোখে বিটকোরের দিকে তাকাল। এক সেকেন্ড বাকি থাকলেও, আমি এটাকে নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা করব।

আসলেই কী তাই?

 হ্যাঁ, তাই, রেস বলল। কারণ আমি আগেও এটা করেছি।

ঠিক সেই মুহূর্তে, বিটটেকারকে না দেখিয়ে, রেস তার বুড়ো আঙুল আব্রামস এর স্টিয়ারিং কন্ট্রোলগুলোর নিচে খুঁজে পাওয়া রাবার-সিলড় বাটনটায় কঠিনভাবে চাপ দিল। আমেরিকানদের তৈরি প্রতিটা যানে একই রাবার-সিলড় বাটন থাকে। ভুরুরুম।

সঙ্গে সঙ্গে ট্যাঙ্কের বিরাট এ্যাভকো-লাইকোমিং ইঞ্জিন গর্জে উঠল। বিশাল কার্গো বে-তে একটা কাঁপন ধরে গেল।

আকস্মিক গর্জনে ভারসাম্য হারাল বিটটেকার। চমকে উঠল ক্যাটওয়াকে দাঁড়ান ট্রয় কোপল্যান্ড।

ড্রাইভার হ্যাচের ভেতরে, এদিক-ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে রেস—

 ওহ ইয়াহ। দেটস নাইস।

 ট্রিগারসহ একটা কন্ট্রোল স্টিক পেল সে, গায়ে লেখা মেইন গান।

স্টিকটা ধরে ট্রিগারে চাপ দিল রেস, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করল, অ্যাবরামসের প্রধান কামানের ভেতরে অন্তত একটা গোলা যেন থাকে।

আছে।

.

অ্যান্টোনোভের কার্গো বে-তে ১০৫ এমএম গোলাটা তার জীবনের একাধারে প্রচণ্ড বিস্ময় ও হতাশার সঙ্গে উপলব্ধি করল রেস।

 পুরো কার্গো প্লেনটা মারাত্মকভাবে কেঁপে উঠল অ্যাবরামসের বিশাল কামান থেকে বেরিয়ে এল গোলা।

১০৫ মি, মি, ভেতরে বিস্ফোরিত হল অনেকটা ছুটে যাওয়া অ্যাস্টেরয়েডের মতো। প্রথমে, ট্রয় কোপল্যান্ডের মাথাটা উড়ে গেল, পরিষ্কারভাবে, দ্রুত, মাথাটা আলাদা হয়ে গেল, অনেকটা গুলির আঘাতে বার্বি পুতুলের মাথা যেমন আলাদা হয়ে যায়, তেমন এক ন্যানোসেকেন্ডে কোপল্যান্ডের দেহ থেকে, একটা পুরো সেকেন্ড মাথাহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইল তার দেহ।

কিন্তু সেল তখনো আঘাত হেনে যাচ্ছিল।

কোপল্যান্ডের দেহের পেছনে মিশাইলের মতো স্টিলের বডিতে আঘাত হানতে লাগল, অ্যান্টোনোভের প্যাসেঞ্জার ডেক কেঁপে কেঁপে উঠছিল, ককপিটের দেয়ালে প্রচণ্ড গতিতে আঘাত হানছে, পাইলটের বুকের সামনে বিস্ফোরণে প্লেনের উইন্ডস্ক্রিনের কাঁচের গুড়ো শাওয়ারের মতো ঝরে পড়ল।

এটা ঠিক যে পাইলটটা মারা গেছে, অন্টোনোভ পাগলের মতো একদিকে কাত হয়ে গেল, এরপর নাকের ওপর গোত্তা খেতে লাগল নিচের দিকে।

কার্গো বে-তে সবকিছু পাগলের মতো উল্টেপাল্টে গেল। রেস দেখল যে কি ধ্বংসটা সে প্লেনের করেছে, দেখল প্লেনটা কোথায় যাচ্ছে।

এক সেকেন্ড সময় হাতে পেলে, আমি প্লেনের ভেতরের বোমাটা ডিজআর্ম করার চেষ্টা করতাম।

 বিটটেকার তখনো পর্যন্ত ট্যাঙ্কের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে তখনো ক্যালিকো পিস্তল, কিন্তু কামানের নল থেকে গোলা বের হওয়াতে নিজের ব্যালেন্সটা হারিয়ে ফেলল সে।

রেস ট্যাঙ্কের গিয়ার ধরার সিদ্ধান্ত নিল, পেয়েও গেল একটা।

 তারপর সে তার পাটা চেপে ধরল অ্যাক্সেলেটরে, চেপে ধরল মেঝের সাথে।

ট্যাঙ্কটা সাথে সাথে জীবন্ত হয়ে উঠল, ওটার ট্র্যাঙ্ক হুইলগুলো সচল হয়ে উঠল–আর বিশাল স্টিলের দানবটা রেসিং কারের মতো ছুটল। একটাই ব্যাপার ঘটল, ছুটল পেছনের দিকে, লোডিং র‍্যাম্পের দিকে, কিনারার দিকে ছুটে গেল, কিনারা পেরিয়ে গেল আর তারপর বেবিয়ে এলো পরিষ্কার খোলা আকাশে।

.

অ্যাবরামস ট্যাঙ্কের পতন শুরু হল।

দ্রুত। সত্যি সত্যি মারাত্মক দ্রুত।

অ্যান্টোনোভের লোর্ডিং র‍্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসেছে ট্যাঙ্ক, এক মুহূর্ত পর ট্যাঙ্কের কামান থেকে বিস্ফোরিত হল কার্গো প্লেন, প্রকাণ্ড একটা আগুনের হল তারপর ছিন্নভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে।

অ্যাবরামস আকাশ থেকে নিচে পড়ছে, পেছনের দিকটা তাক করে, অবিশ্বাস্য গতিতে। বিশাল বড়, অবিশ্বাস্য ওজনের ট্যাঙ্কটা বাতাস কেটে নিচে পড়ছে, পড়ছে। সাতষট্টি টন ওজনের ট্যাঙ্কটা।

ট্যাঙ্কের ভেতরে, সমস্যার কোনো শেষ নেই রেসের।

প্রতিটি জিনিস কাত হয়ে আছে, গোটা ট্যাঙ্ক প্রচণ্ড কাঁপছে এবং বাতাসের সাথে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা লাগছে।

ট্যাঙ্কটা লোডিং র‍্যাম্প থেকে শূন্যে লাফ দেওয়ার সময় ড্রাইভারের সিট থেকে ছিটকে কমান্ড সেন্টারের মাঝখানে এসে পড়েছে ও। ওর পাশে রয়েছে সুপারনোভা। ওটা হরিজন্টাল ভঙ্গিতে বসে আছে, সিলিং ও মেঝের মাঝখানে শক্তভাবে আটকান।

টাইমারের ডিসপ্লে স্ক্রিনে তাকাল রেস :

০০:০০:২১

০০:০০:২০

০০:০০:১৯

উনিশ সেকেন্ড।

প্রায় ওই একই সময় পাবে সে ২০,০০০ ফুট নিচে আছড়ে পড়ে ট্যাঙ্কটা ভাঙতে।

জাহান্নামে থাক।

 হয় সুপারনোভার বিস্ফোরণে বাকি বিশ্বের সঙ্গে মারা যাও, নয়তো ওটাকে ডিজআর্ম করে ট্যাঙ্কের ভেতর একা মারা যাও আগামী সতেরো সেকেন্ডের মধ্যে।

অন্য অর্থে, পৃথিবীকে বাঁচাবার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হবে ওকে।

 আবারো।

 গট ড্যাম ইট, রেস ভাবল। একই ব্যাপার এত তাড়াতাড়ি দুবার কী করে হয়?

কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকাল সে:

তোমার হাতে সময় আছে
০০:০০১৬
ডিজআর্ম করতে কয়েক মিনিট বাকী
ডিজআর্ম কোর্ড ঢোকাও

ষোলো সেকেন্ড…

 সর্গজনের বাতাস কেটে নিচে নামছে ট্যাঙ্ক।

রেস অবহেলিতের মতো টাইমারের দিকে তাকাল, দেখল সময় নিচের দিকে নামছে।

হঠাৎ চোখের কোণে নড়াচড়া ধরা পড়ল। তাকাতেই দেখতে পেল আর্ল বিটটেকারকে, ড্রাইভারের হ্যাচ দিয়ে ট্যাঙ্কের ভেতরে ঢুকছে সে, হাতে ক্যালিকো পিস্তল।

ওহ ঝামেলা!

০০:০০:১৫

 তার কথা ভুলে যাও!

 চিন্তা করো!

কী চিন্তা করব? ক্রাইস্ট, কিভাবে একজন মানুষ, যখন সে একটা অ্যাবরামস ট্যাঙ্কের ভেতরে থাকা অবস্থায় ঘণ্টায় একশো মাইল বেগে মার্টিতে পড়তে থাকবে, আর সেই সাথে ড্রাইভার হ্যাচের দিকে পিস্তল হাতে আরেকজন এগিয়ে আসতে থাকে তাকে হত্যা করার জন্য, তাতে কি চিন্তা করা যায়?

০০:০০:১৪

মনটাকে পরিষ্কার করতে চাইছে রেস।

ঠিক আছে, গতটার ক্ষেত্রে ওয়েবার ডিজসার্স কোড জানত। কিন্তু এবার, তার কাছে কোডের কোনো ক্লু নেই, আসলে সে জানেই না ডিভাসটার ইগনিশেন সিস্টেম তৈরি করেছে।

০০:০০:১৩

ইগনিশেন সিস্টেম…

ওটাই ছিল মার্টির শেষ কথা, রেসের হাতের ওপর মারা যাওয়ার সময় ওই কথাটাই শেষ বলেছিল সে।

০০:০০:১২

অ্যাবরামস গতি চরম বেগে, বোমা পড়ার মতো তীক্ষ্ণ শব্দ হতে শুরু করল।

ড্রাইভারের হ্যাচ গলে বিটটেকার অর্ধেক শরীর ট্যাঙ্কের ভেতর ঢুকে পড়েছে। রেসকে দেখতে পেয়ে গুলি করল সে।

ডাইভ দিল রেস, আড়াল নিল সুপারনোভার পেছনে, পকেট থেকে সেলুলার ফোনটা বের করল আর ঠিক সেই সময় আরো কয়েকটা বুলেট ট্যাঙ্কের স্টিলের দেয়ালে আঘাত করল।

ডিমোনাকো! পড়ন্ত ট্যাঙ্কের আওয়াজ ছাপিয়ে চেঁচিয়ে বলল ও।

 জ্বী বলুন, প্রফেসর?

তাড়াতাড়ি বলুন তো! নেভির সুপারনোভার ইগনিশেন সিস্টেম কে ডিজাইন করেছিল?

দুই হাজার মাইল দূরে জন-পল ডিমোনাকো হাতের কাছের কাগজটা টান দিয়ে নিল। নেভি-ডারপা সুপারনোভা টিমের সদস্যদের তালিকা।

তার দৃষ্টি একটা লাইনের ওপর স্থির হয়ে আছে :

রেস, মার্টিন ই, ইগনিশেন সিস্টেম ডারপা ডি/৩২৭৯-৭৯
ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার

রেস নামে একজনের নাম দেখা যাচ্ছে। মার্টিন রেস! ডিমোনাকো ফোনের মধ্যে চেঁচিয়ে বলল।

মার্টি, রেস ভাবল।

০০.০০.১১

মার্টি যদি ইগনিশন সিস্টেমের ডিজাইন করত, তাহলে মারা যাওয়ার আগে বলে যেত।

ডিজআর্ম কোডও নিশ্চয়ই সে-ই সেট করেছে।

 ০০:০০:১০

আট ডিজিটের নিউমেরিকল কোড।

 ইতোমধ্যে বিটটেকারের পুরো শরীর ট্যাঙ্কের ভেতর ঢুকে পড়েছে।

 মার্টি কী কোড ব্যবহার করতে পারে?

 ০০:০০:০৯

বাতাস কাটতে কাটতে প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার ফুট নেমে যাচ্ছে ট্যাঙ্ক।

 রেসকে দেখতে পেয়ে আবার ক্যালিকো তুলল বিটটেকার।

মার্টি কী কোড ব্যবহার করতে পারে?

 ০০:০০:০৮

জন্মদিন? গুরুত্বপূর্ণ তারিখ?

না। মার্টির না।

যদি সে নিউমোরিক্যাল কোড ব্যবহার করে, যেমন এটিএম কার্ড কিংবা পিন। নাম্বার, সে সব সময় একই নাম্বার ব্যবহার করে।

এলভিস প্রিসলির আর্মি সিরিয়াল নাম্বার।

০০:০০:০৭

বিটটেকার তার ক্যালিকোটা রেসের বরাবর তাক করল।

ক্রাইস্ট, নাম্বারটা কি?

একদম মগজের মাথার রয়েছে…

 ০০:০০:০৬

রেস মাথাটা নিচু করল সুপারনোভার পেছনে

বিটটেকারের অত সাহস নেই ওটার দিকে গুলি করতে–দেখল তার সামনে ডিভাইস আর্মিং কম্পিউটার।

ঈশ্বর, নাম্বারটা কি?

৫৩৩….

ভাব, উইল! ভাব!

০০:০০:০৫

৫৩৩১…

…০৭…

…৬১…

 ৫৩৩১০৭৬১!

এটাই!

আর্মিং কম্পিউটারের বোতাম টিপতে শুরু করেছে রেস ঝড়ের বেগে টাইপ করল ৫৩৩১০৭৬১, তারপর এন্টার লেখা বাটনে চাপ দিল।

বিপ!

ডিজআর্ম কোর্ড এন্টারড
 বিস্ফোরণের কাউন্টডান তখন
০০:০০:০৪
মিনিট।

রেস স্ক্রিনের দিকে তাকাবার প্রয়োজন বোধ করল না।

তার চেয়ে বরং বিটটেকারের সামনে থেকে সরে গেল। ডিজআর্ম করা সুপারনোভার আড়াল নিয়ে ছুটল ছোট্ট মইটার দিকে, যেটা ট্যাঙ্কের টুরেট হ্যাচের দিকে উঠে গেছে।

 নিজেও রেস বলতে পারবে না কেন যাচ্ছে ওদিকে। সম্ভবত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটা ধারণা কাজ করছে, মার্টিতে আছড়ে পড়ার সময় ট্যাঙ্কের বাইরে থাকলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি।

সংঘর্ষের সময় নিশ্চয়ই ঘনিয়ে এসেছে।

আড়াআড়িভাবে ফেলা মই বেয়ে এগোবার সময় আইডলটা পড়ে থাকতে দেখল সে, এখন ওটার গোড়ায় একটা গর্ত দেখা যাচ্ছে এবং ক্রল বন্ধ না করে হাত বাড়িয়ে তুলে নিল ওটা।

হ্যাচে পৌঁছাল সে, ধাক্কা দিয়ে খুলল। সঙ্গে সঙ্গে বাতাস ঝাঁপটা মারল মুখে, দ্রুত বয়ে যাচ্ছে বাতাস, অন্ধ করে দিল ওকে।

অ্যাবরামসের ছাদটা এখন খাড়া, সেটা আঁকড়ে ধরল শক্ত করে, পা দিয়ে ধাক্কা মেরে ভেতরে আটকা পড়েছে বিটটেকার, তবে বন্ধ হ্যাচের ওপাশে অটোমেটিকের গুলির শব্দ হচ্ছে।

অনেক কষ্টে চোখ খুলে নিচে তাকাল রেস, মনে হল ঘণ্টায় দশ লক্ষ্য মাইল গতিতে উঠে আসছে, সবুজ রেইনফরেস্ট।

সগর্জনে পৃথিবীর বুকে এগিয়ে যাচ্ছে ট্যাঙ্ক।

 সংঘর্ষ আর দুই সেকেন্ড বাকি।

সব শেষ।

এক সেকেন্ড।

 পৃথিবী এগিয়ে আসছে ওর দিকে।

এবং এই শেষ সেকেন্ডে অ্যাবরামস ট্যাঙ্ক পৃথিবীর দিকে প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, উইলিয়াম রেস চোখ বুজল শেষবারের মতো দোয়া পড়ার জন্য।

আর ঠিক তখন ঘটল ব্যাপারটা।

আঘাত হানল।

.

প্রচণ্ড গতিতে মার্টিতে আঘাত হানল ট্রাঙ্কটা।

 সাতষট্টি টনী ট্যাঙ্কটা আঘাত হানার পর সারা বিশ্ব যেন কেঁপে উঠল। তারপর প্রথম মিলিসেকেন্ডে চ্যাপ্টা হয়ে গেল, পরবর্তী মিলিসেকেন্ডে হাজার হাজার টুকরো হয়ে ছুটল চারদিকে।

মার্টিতে পড়ার সময় আর্ল বিটটেকার ওটার ভেতরে ছিল সংঘর্ষের ফলে ইস্পাতের মেঝেটা অবিশ্বাস্য গতিতে ছুটে এল ছাদের দিকে, এক মুহূর্ত পর রক্ত মাংস-হাড় কিছুই আর অবশিষ্ট থাকল না তার। এটা অবশ্য ঠিক যে, আর্ল বিটটেকার মৃত্যুর আগে চিৎকার করেছে।

আর উইলিয়াম রেস, সংঘর্সের সময় ট্যাঙ্কটার আশেপাশে কোথাও ছিল না।

মার্টিতে নামার সেকেন্ড আগে, যখন আশি ফুট উপরে ছিল ট্যাঙ্কটা, ওই সময় আশ্চর্য একটা অভিজ্ঞতা হল রেসের।

একটা আওয়াজ শুনল ও, সনিক বুমের সঙ্গে খুব একটা পার্থক্য নেই। ওর খুব কাছাকাছি, পেছন থেকে এল আওয়াজটা। আর তারপর, অকস্মাৎ! অনুভব করল অদৃশ্য কোনো শক্তি জোরে টান দিয়ে আকাশে তুলে নিল ওকে।

তবে টানটা কর্কশ কিংবা চাবুক মারার মতো নয়, বরং নরম ও সাবলীলই বলতে হবে যেন স্বর্গের সাথে সংযোগ সৃষ্টিকারী বাঙ্গী কর্ড টানছে তাকে।

ফলে বিটটেকারকে নিয়ে ট্যাঙ্কটা যখন মার্টি স্পর্শ করল, রেস তখন ওটার ত্রিশ ফুট উপরে ঝুলে রয়েছে, সম্পূর্ণ নিরাপদে।

এবং তারপর সে নিচের দিকে তাকাল, বুঝতে পারল কী ঘটেছে।

সাদা গ্যাসের দুটো মোটা রেখা দেখতে পেল সে, কেভলার ব্রেস্টপ্লেট পরে আছে ও, ওটার সঙ্গে আটকান A আকৃতির ইউনিট হল ওই গ্যাসের উৎস। আসলে A-র গোড়ায় ছোট দুটো এগজস্ট পোর্ট আছে, একজোড়া প্রপেলান্ট হিসাবে ওখান থেকে বেরিয়ে আসছে সাদা গ্যাস।

 যদি রেস ব্যাপারটা জানত না, এই ব্রেস্টপ্লেট উলি দিয়েছিল তাকে রিফিউজ পিটে। আসলে ওই জে-৭ জেট প্যাক, ইউনাইটেড স্টেটস আর্মির সহায়তায় ডারপা হেডকোয়ার্টার এবং ৮২ এয়ার বেস ডিভিশনে ওটা সংযোগ ঘটান হয়।

আর্মির সাম্প্রতিক প্যারাসুট এমসি ওয়ান ওয়ান বি ল্যান্ডিং এর কয়েকমিনিট আগে শত্রুকে সম্পূর্ণ দৃশ্য দেখতে সাহায্য করে, জেট প্যাকে আশি ফুটের নিচে নামার পর ব্যবহারকারী এনগেজ করতে ব্যর্থ হলে প্রপালশান সিস্টেম নিজেই সচল হয়ে মাথার উপর মেলে ধরবে জেট প্যাককে, ঠিক যেমনটি পাখিদের ল্যান্ডিং-এর বেলায় ঘটেছে।

প্যারাসুটের মতো প্রতিটি জে-৭ জেট প্যাকে থাকে আল্টিমিটার সুইচ, অল্টিচিউড-ট্রিগার্ড সেফটি ম্যাকানিজম যা প্রপালশন সিস্টেমে শক্তি বাড়ায়, যখন আশি ফুট নিচে নেমে যাবার পর সিস্টেম ফেল করে। রেস সেই কাজটাই করতে ভুলে গেছে।

১৯৯৭ সালের ২৫ ডিসেম্বরে কোনোভাবেই তার জানার কথা ছিল না, ঠিক সেই সময় আটচল্লিশটি ক্লোরিন-বেসড আইসোটোপিক চার্জ বান্টিমোর বেল্টওয়ে স্টর্মস্ট্রুপার দ্বারা পাহারা রত অবস্থায় ডারপ-র ট্রাক থেকে চুরি যায়, আরো চুরি যায় ষোলটি জে-৭ জেট প্যাক।

ধীরে সাবধানে জেট প্যাকটি রেসকে নামিয়ে আনে নিচে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল, দম বন্ধ করে নিজের শরীরটাকে নরম করে এগিয়ে দিল যাতে রেইনফরেস্টের ঘন গাছের ভেতর ঢুকে পড়তে পারে।

সেকেন্ড পরে, ওর পা মার্টি স্পর্শ করল, ঠিক তার হাঁটু ওপর নামল, ক্লান্ত।

চারপাশের রেইনফরেস্টের দিকে একবার তাকাল আর মনের কোণ অবাক হয়ে দেখছে কি করে এখান থেকে বের হবে।

 তারপর সিদ্ধান্ত নিল যে সে কোনো কিছু পরোয়া করে না। ১৯,০০০ ফিট ওপর থেকে সাতষট্টি টন ওজনের একটা ট্যাঙ্কসহ পড়তে পড়তে সুপারনোভা নিষ্ক্রিয় করেছে মাত্র।

না, সে কোনো কিছুতে অল্পের জন্য পরোয়া করে না। এবং তারপর হঠাৎ করেই তার সমস্যার সমাধান পাওয়া গেল, একটা ছোট্ট সী-প্লেন গাছের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল। পাইলটের জানালা থেকে একটা হাত তার উদ্দেশে নাড়ল।

ডুগী এবং তার গুজ।

 চমৎকার।

.

তিরিশ মিনিট পর, নদীর পাশে একটা চওড়া সুবিধাজনক জায়গা পেয়ে ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানাল, রেস গুঁজে ওঠে বসল অন্যদের সাথে, সান্ধ্য আকাশে উড়াল দিল গুজ, রেইনফরেস্টের ওপর দিয়ে চলে গেল।

ককপিটের জানালায় মাথাটা ঠেকিয়ে রেখে, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সামনের দিকে। খুবই পরিশ্রান্ত সে।

পাশ থেকে ডুগী বলল, আমি কি ভাবছি জানেন, প্রফেসর? ভাবছি এটাই হল উপযুক্ত সময় এই জঘন্য দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। আপনি কি ভাবছেন?

তার দিকে ফিরল রেস। না, ডুগী। এখনই নয়। যাবার আগে আর মাত্র একটা কাজ সারতে হবে।

.

সপ্তম ষড়যন্ত্র
বুধবার, জানুয়ারি ৬, ১৭:৩০ ঘণ্টা

১৯৯১ সালের জানুয়ারি ৬ তারিখে সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে ভিলকাফোরের পাশের নদীতে ল্যান্ড করল ওদের গুজ।

আবার নিজেদের গায়ে বাদরের প্রস্রাব মেখে উপরের গ্রামটার উদ্দেশে রওনা হল রেস এবং রেনে। ডুগী এবং গ্যাবিকে গুঁজে রেখে যাচ্ছে ওরা। গ্যাবির সেবা শ্ৰষা দরকার, তরুণ এই গ্রিন বোরেট বিভিন্ন জায়গায় আহত হয়েছে।

ক্লান্তিতে ভেঙে পড়তে চাইছে ওদের দুজনের শরীর, ভিলকাফোরের ভেতর দিয়ে এগোবার সময় রেস খেয়াল করল প্রধান সড়কে একটা লাশও পড়ে নেই।

কয়েক ঘণ্টা আগে নেভি ও ডারপা-র বিজ্ঞানী ছাড়াও এখানে খুন হয়েছে মার্টি, লরেন, ন্যাশ এবং ভ্যান লিওয়েন, কোথাও তাদের লাশ দেখা যাচ্ছে না।

ফাঁকা রাস্তাটার দিকে বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকল রেস। ওর কোনো ধারণা নেই লাশগুলো নিয়ে কে কী করেছে।

আন্ডিয়ান পর্বতমালার ওপর সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে, এই সময় রেনেকে নিয়ে উপরের গ্রামটায় উঠে এলো সে।

 গ্রামের কিনারায় পরিখার ধারে আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের সর্দার ও অ্যানথ্রোপলজিস্ট মিগুয়েল মোরোস মারকুয়েজের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ওদের।

 আমি মনে করি এটা আপনাদের কাছেই থাকা উচিত, বলল রেস, হাতের আইডলটা ইঙ্গিতে দেখাল।

রোয়া ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। আপনি সত্যি নির্বাচিত একজন, বলল সে। একদিন আমার লোকজন আপনাকে নিয়ে গান তৈরি করে গাইবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, স্পিরিট ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

বো করল রেস। সে মনে করে না সে নির্বাচিত একজন। সে মনে করে সে যেটা ভালো মনে করে সেটাই করেছে।

 শুধু আমাকে একটা কথা দিতে হবে, রেস বলল রোয়াকে। কথা দিতে হবে, আমরা চলে যাবার পর এই গ্রাম ছেড়ে জঙ্গলের গভীরে হারিয়ে যাবেন আপনারা। এই আইডলের খোঁজে আরো লোক আসবে এখানে, এ-ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। এটা নিয়ে এমন জায়গায় চলে যাবেন কেউ যাতে কখনো আপনাদেরকে খুঁজে না পায়।

মাথা ঝাঁকাল রোয়া। আছে, চুজেন ওয়ান। সেখানেই যাব।

এখনো আইডলটা রোয়ার হাতে তুলে দেয়নি রেস।

আপনি যদি অনুমতি দেন, স্যার, বলল ও, আরো একটা কাজ বাকি আছে। এখানে আমার, সেটা করতে হলে এই আইডলটা আমার দরকার হবে।

.

রক টাওয়ারকে ঘিরে থাকা প্যাচান পথের উপরে জড়ো হয়েছে আদিবাসীরা।

ইতোমধ্যে রাত নেমেছে, গায়ে বাঁদরের প্রস্রাব ঢেলে তারা সবাই তৈরি।

রাপাগুলো, মারকুয়েজ জানালেন, টেম্পলে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে গরটার গোড়ায় গাঢ় ছায়ার ভেতর লুকিয়ে ছিল সারাটা দিন।

প্যাঁচান পথের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে রেস, লেকের উপর দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ওপারে, এই লেকটার উপরেই ঝুলে ছিল রোপ ব্রিজটা।

এখনো টাওয়ারের গায়ে ঝুলে রয়েছে রোপ ব্রিজ, চব্বিশ ঘণ্টা আগে ঠিক যেখানে লুপ খুলে ফেলে দিয়েছিল নাজিরা।

রোয়ার বাছাই করা দক্ষ একজনের গায়ে আরো খানিকটা বাঁদরের প্রস্রাব মেখে দেওয়া হল, ক্যানিয়নের গোড়ায় নেমে লোকটা, সেখান থেকে রক টাওয়ারে প্রায় খাড়া পাচিল বেয়ে উপরে উঠছে।

কিছুক্ষণ পর রোপ ব্রিজের শেষ মাথার বাড়তি রশিটার নাগাল পেয়ে গেল। ওটা আরেকটা রশির এক প্রান্তের সঙ্গে বাঁধল সে, অপর প্রান্তটা রয়েছে প্যাচান পথে দাঁড়ান আদিবাসিদের হাতে। টান দিয়ে বাড়তি রশিটাকে লেকের এপারে, নিজেদের দিকে নিয়ে এলো তারা।

জায়গা তাড়াতাড়ি মতো বেঁধে লেকের উপর টানটান করা হল রোপ ব্রিজ।

তুমি কি নিশ্চিত যে এটা করতে চাইছ? টাওয়ারের মাথার দিকে তাকিয়ে থাকা রেসকে জিজ্ঞেস করল রেনে।

 ওই টেম্পল থেকে বেরুবার আরো একটা পথ আছে, বলল সে, রেনকো পেয়েছিল সেটা। আমিও পাব।

তারপর এক হাতে আইডল, আরেক হাতে মশাল ও কাঁধে চামড়ার তৈরি চৌকো ব্যাগ নিয়ে ঝুলে থাকা ব্রিজ ধরে রওনা হল ও।

স্বাস্থ্যবান দশজন রোয়ার দক্ষ সৈন্য অনুসরণ করল ওকে, তাদের কাছেও জ্বলন্ত মশাল রয়েছে।

এক সময় ওরা রক টাওয়ারে পৌঁছে গেল, টেম্পলের সামনে ফাঁকা জায়গাটায় থামল রেস। চামড়ার ব্যাগ থেকে পানির ছোট একটা ব্লাডার বের করে থাইরিয়াম আইলটাকে ভিজিয়ে নিল।

 সঙ্গে সঙ্গে আইডল থেকে গুঞ্জন উঠল। আশ্চর্য একটা সম্মোহনী আওয়াজ, রাতের বাতাস ছুরি দিয়ে কেটে যেন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

কয়েক মিনিটের মধ্যে ফাঁকা জায়গাটায় পৌঁছে গেল প্রথম রাপা।

এবং তৃতীয়টা পর দ্বিতীয়টা, তারপর একে একে খালি জায়গাটায় জড়ো হল বিশাল বিশাল সাইজের একেকটা কালো বিড়াল, তাকে ঘিরে বড়সড় একটা বৃত্ত তৈরি করেছে। রেস গুনে দেখল বারোটা।

 আবার আইডলটা ভেজাল ও এবং সুরেলা গুঞ্জনটা আরো জোরাল হয়ে উঠল।

এরপর পিছু হটতে শুরু করল সে, মন্দিরে ঢুকছে।

দশ পা পিছু হটার পর বিশাল কালো শয়তানগুলো ওকে ঘিরে ফেলল। বিশাল, কালো, এবং ভীতিকর রাপাগুলো ওকে অনুসরণ করল, টেম্পলে ঢোকার পর রেসের নির্দেশ মতো দক্ষ সৈন্যরা বোল্ডারটা ঠেলে প্রবেশপথ বন্ধ করে দিচ্ছে।

বিশাল বড় পাথরটিকে জায়গা মতো নিতে প্রচণ্ড আওয়াজ হচ্ছে।

টেম্পলের ভেতরে আর চাঁদের আলো ঢুকছে না। বিশাল বড় পাথরটা জায়গা মতো বসে যাওয়ার পর নিশ্চিদ্র অন্ধকার চারিদিকে।

ওটা এবার প্রবেশপথটা ভরে দিল, বন্ধ হয়ে গেল, ঠিক একই সময়ে উইলিয়াম রেস টেম্পলের ভেতর আটকে গেল একদল রাপার সাথে।

.

অন্ধকার।

সম্পূর্ণ অন্ধকার, কাঁপা কাঁপা কমলা আলো বাঁচানোর জন্য।

রেসের চারপাশের সেঁতসেঁতে দেয়াল চিকচিক করছে। টেম্পলের ভেতরে কোথায়ও একনাগাড়ে শুনতে পাচ্ছে, প্রতিধ্বনিত ড্রিপ, ড্রিপ, ড্রিপ শব্দ।

ভীতিকর অবস্থা তারপরেও রেস কোনো ভয় পাচ্ছে না, অন্তত তাকে বেরিয়ে যেতে হবে, অনেক দূরে ফেলে এসেছে ভয়।

বারোটি রাপা, বারবার নিভে জ্বলে টর্চের আলোর শয়তানগুলো তাকিয়ে আছে, শুধু তাকিয়ে আছে গুন গুন শব্দ তোলা রেসের হাতের আইডলটার দিকে, অভিভূত হয়ে।

 মাথার ওপর টর্চটা তুলে, রেস এগিয়ে গেল প্যাচান টেম্পলের সিঁড়ির দিকে। টানেলটা একটা জায়গায় নিচু হল এবং ডানদিকে ধীর হয়ে গেল, অপ্রত্যাশিত বাক আসাতে। ছোট্ট বর্ধিতাংশ দেয়াল জুড়ে।

রেস সেই বর্ধিতাংশ পেরিয়ে গেল যা সে শেষ বার টেম্পলে ঢুকেছিল এবং এই বর্ধিতাংশ দেখেছিল, দেখেছিল ভেঙেচুরে পড়ে আছে একটা কঙ্কাল মাথার খুলিটা ফাটা। কঙ্কালটা রেনকোর মনে করেছিল কিন্তু তখন সে জানে বুড়ো প্রভু যে রেনকোর পান্নার হার চুরি করেছিল।

প্যাঁচান প্যাসেজওয়ের শেষ মাথায় এসে দাঁড়াল টানেলে ভন ডার্কসেন এবং তার দলবল ভয়াবহ শেষ মাথায় এসে পৌঁছেছিল।

রেসের পেছনে ঢালু পথ দিয়ে রাপাগুলো বেরিয়ে এলো, নীরব আবছা, অশুভ, এমনকি কোনো শব্দ না করে চোরের মতো নরম থাবার ওপর ভর দিয়ে এগিয়ে এলো।

টানেলের শেষ মাথায়, রেস দেখতে পেল মেঝেতে বিশাল বড় একটা গর্ত। অনেকটা চৌকোন এবং প্রায় পনেরো ফিট চওড়া, পুরো টানেলটা যেন তার সামনে উপস্থিত।

ওটা থেকে সবচাইতে জঘন্য গন্ধ বেরিয়ে আসছে যা সে অনেক অনেকদিন যাবত শোকেনি।

গন্ধের জন্য সে সরে পড়ল এবং মেঝের চওড়া গর্তটা নিরীক্ষা করে দেখল।

দূরে সে দেখতে পেল দেয়াল ছাড়া কিছু নেই, নিরেট, পাথরের দেয়াল গর্তের ভেতর কালির মতো অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পেল না।

 তারপরই, যাহোক, ও দেখতে পেল হাত এবং পা রাখার স্থান যা ডান দিকের দেয়াল কেটে বেরিয়ে গেছে। ওরা ওভাবে এমন ধরনের বাকটা তৈরি করেছে, একটার ওপর আরেকটা, সিঁড়ির মতো, একজনের সহজেই গর্তের ভেতর নেমে যাওয়া যায়।

আবার আইডলটা তার নিজের পানির আধারে ডুবিয়ে দিল এবং দ্বিখণ্ড টর্চটা মুখে কামড়ে ধরে দেয়ালের গায়ে হাত এবং পা রাখার স্থান ব্যবহার করে গন্ধময় অন্ধকার গর্ত দিয়ে নেমে গেল।

 রাপাগুলো ওকে অনুসরণ করে যাচ্ছে। তবে ধাপগুলোয় পা দিল না, কাস্তে আকৃতির নখর ব্যবহার করে ঢালু দেয়াল বেয়ে নামছে।

 পঞ্চাশ ফুট নিচে নামার পর মেঝেতে পা পড়ল রেস।

উৎকট দুর্গন্ধটা আরো বেশি এখানে। পচা মাংসের মতো লাগছে।

মশালটা দাঁতের ফাঁক থেকে হাতে নিল রেস, তারপর দেয়াল ঘুরে এগিয়ে গেল।

দেখল তাতে তার দম বেরিয়ে গেল।

পাথরের তৈরি বিরাট হলরুমের ভেতরে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে, রক টাওয়ারের পেট কেটে গুহার আকৃতিতে বানান হয়েছে।

সত্যিই দেখার মতো।

 বিশাল পাথরের দেয়ালের ক্যাথড্রাল।

উঁচু সিলিং পঞ্চাশ ফুট উপরে, হারিয়ে গেছে অন্ধকারে। পাথরের অনেকগুলো কলাম অবলম্বন হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। রেসের সামনে সমতল মেঝে পড়ে রয়েছে। এটাও হারিয়ে গেছে অন্ধকারে।

ক্যাথড্রালের দেয়ালগুলো, ধাঁধা লাগন গঠন।

রাপার ছবি, মানুষের ছবি, রাপা দ্বারা মানুষ হত্যার ছবি। কোনো ছবিতে দেখা যাচ্ছে হাত-পা ও মাথা ছিঁড়ে ফেলেছে রাপা। আবার এমন ছবিও আছে আতঙ্কে চিৎকার করছে আহত মানুষ দুহাত ভর্তি লুট করা জিনিসপত্র, এমনকি তাদেরকে হত্যার দৃশ্যও।

উপরে দরজায় যেমনটা প্রিজিটিভ খোদাই পিকটোগ্রাফ রয়েছে, ঠিক তেমনটা এখানেও রয়েছে।

এমনকি মৃত্যুর সময়ও উচ্ছল আকাঙ্খা স্পষ্ট।

খোদাই করা শিল্পকর্মের ফাঁকে ফাঁকে পাথরের প্রকোষ্ঠ দেয়াল, সেগুলো রাপার মাথার আদলে তৈরি করা হয়েছে।

ঘন মাকড়সার জাল ঢেকে রেখেছে প্রতিটি প্রকোষ্ঠ যার ফলে রাপার দেয়ালগুলো ওপর রূপোলি পর্দা তৈরি করে রেখেছে।

একটা তাকের সামনে দাঁড়াল তারপর রাপার মুখ থেকে ছিঁড়ে নিল মাকড়সার পুরু জাল।

 চোখ দুটো ওর বড় হয়ে উঠল। হ্যাঁ করা মুখের ভেতর ছোট একটা বেদি তৈরি করা হয়েছে, তাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে একজন মোটা মানুষের স্ট্যাচু, স্ট্যাচুটা সম্পূর্ণ সোনার তৈরি।

গুড গড… স্ট্যাচুটার দিকে তাকিয়ে দম ফেলে বলল।

 ধীরে ধীরে চোখ বুলাচ্ছে হলরুমের চারদিকে। সব মিলিয়ে বড় আকৃতির চল্লিশটা তাক দেখা যাচ্ছে। প্রতিটিতে যদি অন্তত একটি করেও আর্টিফ্যাক্ট থাকে, এখানকার গুপ্তধনের মূল্য…।

এটা সোলোন-এর গুপ্তধন।

রেস তার সামনে সুসজ্জিত প্রকোষ্ঠের দিকে তাকিয়ে দেখছে, রাপার খোদাই এর মাথার দিকে তাকিয়ে আছে, দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

এটা এমন যেন টেম্পল সৃষ্টিকারী এমনভাবে তৈরি করেছে যেন দুঃসাহসী অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় কেউ ধনদৌলতের জন্য ভেতরে ঢুকেই বিড়ালগুলোর মুখে পড়ে যায়। কিন্তু রেস তো কোনো ধনদৌলত চায় না।

সে শুধু বাড়ি ফিরে যেতে চায়।

ভীতিকর দেখতে তাকগুলোর কাছ থেকে সরে এলো সে, বিশাল পাথরের ক্যাথেড্রাল কেন্দ্রে চলে এলো, হাতের টর্চের আলো ফেলল।

তারপর দুর্গন্ধের উৎসটা দেখতে পেল।

ওহ, ক্রাইস্ট, দম ফেলল সে।

ক্যাথেড্রালের এক কোণে পড়ে আছে, বিশাল স্তূপ।

 একটার উপরে আরেকটা, এভাবে পড়ে আছে দেহের পাহাড়।

 মানুষের দেহ।

অন্তত একজন, আর সেগুলোর অঙ্গ-প্রতঙ্গের বিচ্ছিন্ন ওগুলোর চারপাশের দেয়ালগুলো রক্তে এমনভাবে চকচক করছে যেন মনে হয় কেউ রক্ত দিয়ে রং করছে।

কয়েকটা মৃতদেহের গায়ে কাপড় নেই, অন্যগুলোতে আংশিক কাপড় পরা, কোনটার মাথা নেই, অন্যগুলোর হাত-পা, বাকিগুলোর দেহ দুভাগ করা। এলাকা জুড়ে রক্ত মাখা হাড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, কয়েকটার সাথে না খাওয়া মাংসের বড় টুকরো তখনো লেগে আছে।

আতঙ্কিত রেস কয়েকটা মৃতদেহ চিনতে পারল।

ক্যাপ্টেন স্কট, চকি উইলসন টেক্স রেইকার্ট, জার্মান জেনারেল, কন্য। সে এমনকি বাজ কোচরেনের দেহ স্কুপের ওপর উল্টো পড়ে থাকতে দেখল। তার দেহের পুরো নিম্নাংশ চিবিয়ে খাওয়া হয়েছে।

আরো কৌতূহলী হয়ে, রেস স্কুপের ওপর বেশ কিছু সংখ্যক হলুদাভ-সবুজ চামড়ার মৃতদেহ দেখল।

নেটিভ।

অবশেষে হঠাৎ মৃতদেহগুলোর বীভৎস স্তূপের পেছনের দেয়ালে একটা ছোট গর্ত দেখতে পেল।

এবড়োথেবড়ো গোলাকার, ব্যাস প্রায় আড়াই ফুট, চওড়া কাঁধের একজন মানুষের প্রস্থ।

রেসের মনে পড়ে গেল সারফেসে সে একই রকম আকৃতির একটা পাথর দেখেছে, মন্দিরের পেছনের বারান্দার মতো রাস্তায়, বর্গাকৃতির পাথরগুলোর মাঝে একটা অদ্ভুত গোলাকার পাথর।

বুঝতে পেরে রেস ভাবল, ওহ, না।

এটা কোন গর্ত নয়।

একটা ঢালু সুড়ঙ্গপথ।

যে পথটা সারফেসের ওপর শুরু হয়েছে এবং এখানে, বিশাল পাথুরে ক্যাথেড্রালে শেষ হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে, রাপাগুলো কিভাবে মন্দিরের ভেতর চারশ বছর বেঁচে ছিল সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল।

রেসের মনের চোখে, মিগুয়েল মারকুয়েজের কথাগুলো ভেসে ওঠল। যদি তুমি কুমিরের আক্রমণ থেকে না বাঁচতে, তোমার বন্ধুদের রাপাগুলোর উদ্দেশে উৎসর্গ করা হত।

রাপাগুলোর উদ্দেশে উৎসর্গ।

রেস দেয়ালের গোলাকার গর্তের দিকে তাকিয়ে থাকল, ভয়ে তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

এটা উৎসর্গ করার কুয়ো।

যে কুয়োতে স্থানীয়রা ওপরের গ্রাম হতে রাপাগুলোর জন্য উপহার পাঠায়।

মনুষ্য উপহার।

উৎসর্গকৃত মানুষ।

তারা তাদের নিজেদের লোকদের এখানে নিক্ষেপ করত।

কিন্তু এটা সম্ভবত ওভাবে থামেনি, মৃতদেহগুলোর স্কুপের ওপরে পড়ে থাকা স্থানীয়দের দেহ দেখে রেস ভাবল।

রাপাগুলোকে তুষ্ট করার জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের নিজেদের, এবং শত্রুর মৃতদেহগুলোও সম্ভবত এখানে নামিয়ে দিত।

আর সত্যিকারের অভাবের সময়, রেস কল্পনা করল, রাপাগুলো সম্ভবত নিজেরা নিজেদের খেয়েছে।

ঠিক তারপর, মৃতদেহগুলোর স্তূপের পেছনে, মেঝের একটা ছোট, বর্গাকৃতির গর্তের পাশে সে আরো পাঁচটা রাপাকে শুয়ে থাকতে দেখল।

রাপাগুলো একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে, ভেজা আইডলের স্থির গুঞ্জনে সম্মোহিত হয়ে।

 ওগুলোর সামনে দাঁড়ানো প্রায় দশটা ছোট বিড়াল-বাচ্চা, রাপার বাচ্চা প্রত্যেকটার আকার আর আকৃতি একটা বাঘের বাচ্চার মতো। সেগুলোও রেসের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হল যেন আইডলের সম্মোহনকারী গুঞ্জন শুনে ওগুলো মাঝ পথে খেলা থামিয়ে দিয়েছে।

জেসাস, রেস ভাবল, একটা পুরো গোষ্ঠী। রাপাগুলোর একটা গোষ্ঠী।

এগিয়ে যাও, উইল।

ঠিক আছে।

এরপর রেস তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটা কিছু বের করল।

নকল আইডল।

রেস নকল আইডলটা বিশাল বর্গাকৃতির গর্তের গোড়ায়, যা ক্যাথেড্রালে উন্মুক্ত হয়েছে, মেঝেতে রাখল, যাতে মন্দিরে প্রবেশরত কেউ এটা সাথে সাথে খুঁজে পায়।

সে নিশ্চিন্তভাবে জানত না, কিন্তু যে কল্পনা করল চারশ বছর আগে রেনকো ঠিক তাই করেছিল।

ভাবল, সে এবার এখান থেকে বের হবার সময় হয়েছে।

রেস পাঁচ মাদি রাপা এবং বাচ্চাগুলোর আশেপাশে মেঝেতে একটা ছোট গর্ত দেখল, সুড়ঙ্গ বেয়ে ওপরে ওঠা এবং তার জন্য কেউ এটা খুলে দেবে সে আশা করার চেয়ে নিচে নামাই শ্রেয়।

তাই আসল আইডলটা বগলদাবা করে খুব সতর্কভাবে রাপাগুলোকে অতিক্রম করল এবং ওগুলোর পাশে মেঝেতে বর্গাকৃতির গর্তটার ওপর দাঁড়ালো।

গর্তের ভেতর তাকাল।

প্রায় ছয় ফুটের বর্গ আর এটা পাথুরে মেঝেতে সোজা নিচে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর আগের বড় গর্তটার মতো, এতেও পা আর হাত রাখার জন্য এর খাড়া দেয়ালগুলোতে খোদাই করা আছে।

কি ভয়ানক, রেস ভাবল।

ওর টর্চটা আবার শক্ত করে মুখে ধরে ব্যাগের ভেতর গুঞ্জনরত আইডলটা রেখে, রেস খাড়া সুড়ঙ্গ বেয়ে নামতে থাকল।

এক মিনিট বা তার পর, সে গর্তটার মুখ হারিয়ে যেতে দেখল। এরপর থেকে, চারপাশের সুড়ঙ্গকে আলোকিত করা কমলা গোলাকার ছোট বৃত্তটা ছাড়া চারপাশ অন্ধকারে ঢাকা।

দুটো রাপা তাকে নিচে অনুসরণ করল, টর্চের আলোর প্রান্তে সুড়ঙ্গের দেয়াল ধরে চুপিসারে নামল, তার ওপর উল্টো হয়ে ঝুলে থাকল, ওগুলোর ঠাণ্ডা হলুদ চোখগুলো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল তার দিকে।

কিন্তু আক্রমণ করল না।

রেস নামছে। মনে হল সে কয়েক মাইল নেমে গেছে, কিন্তু নেমেছে মাত্র দুশো ফুট বা সে রকম।

অবশেষে, পা আবার মার্টি স্পর্শ করল।

 রেস তার টর্চ তুলে ধরল আর দেখল একটা গুহার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সে, যার প্রতিটা পাশ নিরেট পাথরের দেয়ালের।

গুহার একপাশে পানি।

একটা পুকুরের মতো, ছোট একটা পুকুর, তিনদিকে পাথরের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। পুকুরের চতুর্থ পাশটা সমতল যার ওপর রেস এখন দাঁড়িয়ে আছে।

 পানির কিনারে গেল, স্পর্শ করার জন্য নিচু হল, যেন এটা সত্যি। রাপা দুটো ধীরে ধীরে তার পেছনে সুড়ঙ্গ থেকে নামল।

রেস পানিতে হাত ডুবালো।

 আর হঠাৎ, সে কিছু অনুভব করল।

কোন বস্তু বা ওরকম কিছু নয়, বরং পানির একটা স্রোত।

রেস ভ্রুকুটি করল। পানিতে স্রোত আছে।

আবারো পুরো পুকুরটার দিকে তাকাল আর দেখল এর ছোট ঢেউগুলো ধীরে ধীরে ডান থেকে বামে যাচ্ছে।

আর সাথে সাথে সে বুঝতে পারল সে কোথায় রয়েছে।

পাথুরে টাওয়ারটার ঠিক নিচে, যেখানে অগভীর লেকটা গহ্বরের তলায় মিলেছে। কোনোভাবে পানি এ গুহার ভেতরে ঢুকছে আর বেরোচ্ছে।

আইডলটা তখনো তার ব্যাগে গুঞ্জনরত।

রাপা দুটো নিবিষ্টভাবে রেসকে দেখছে।

আত্মবিশ্বাস নিয়ে, রেস তার জ্বলন্ত মশাল নিভিয়ে ফেলল আর পুকুরের কালো পানিতে নামল, আর সারফেসের নিচে মাথা নামাল।

.

ত্রিশ সেকেন্ড পর, একটা লম্বা আন্ডারওয়াটার টানেলের ভেতর দিয়ে সাঁতার কাটার পর, গহ্বরের তলার অগভীর লেকে মাথা তুলল।

বুক ভরে শ্বাস নিল আর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

আবার বাইরে বেরিয়ে এসেছে।

.

পাথরে টাওয়ারের তলা থেকে বের হবার পর, রেস ওপরের গ্রামে ফিরল। কিন্তু এর আগে, সে টাওয়ারের চূড়ায়, মন্দিরের প্রবেশদ্বারে থামল। যে যোদ্ধারা পাথরটাকে তোরণে ফিরিয়ে এনেছিল তারা চলে গিয়েছে, ইতোমধ্যে গ্রামের পথ ধরেছে, আর রেস অশুভ পাথরটার সামনে একা দাঁড়িয়ে রয়েছে।

কয়েক মুহূর্ত পর, সে কাছে থাকা একটা পাথর তুলে পাথরটার দিকে এগোল। অ্যালবার্তো সান্তিয়াগোর কথার নিচে, তার নিজের একটা ম্যাসেজ লিখল।

কিছুতেই প্রবেশ করবে না।
ভেতরে মৃত্যু ওৎ পেতে আছে।
উইলিয়াম রেস, ১৯৯৯।

আবার যখন গ্রামে ফিরে গেল, দেখল রেনে তার জন্য পরিখার প্রান্তে অপেক্ষা করছে, সাথে দাঁড়িয়ে আছে মিগুয়েল মারকুয়েজ আর সর্দার রোয়া।

 রেস আইডলটা রোয়াকে দিল। রাপাগুলো মন্দিরের ভেতরে ফিরে গেছে, সে বলল সে। এখন আমাদের বাড়ি যাবার সময়।

 আমার লোকজনের জন্য আপনি যা করেছেন এর জন্য তারা আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে, রোয়া বলল। যদি আপনার মতো পৃথিবীতে আরো কেউ থাকত।

রেস বিনয়ের সাথে বো করল, রেনে তার অক্ষত হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।

কেমন লাগছে, হিরো? বলল সে।

আমার ধারণা আমি মাথায় আরেকটা আঘাত পেয়েছি, সে বলল। আমি কিভাবে এসব দুঃসাহসিক কাজের ব্যাখ্যা দেব? অবশ্যই অ্যাড্রেনালিন কথাবার্তা।

রেনে তার মাথা নাড়ল, তার চোখ জোড়া কুঁচকে গেল। না, বলল সে, আমার মনে হয় না এটা অ্যাড্রেনালিন।

 রেসকে চুমো খেল—-চমৎকারভাবে–তার ঠোঁট দুটো রেসের ঠোঁট চেপে ধরল। যখন অবশেষে ছেড়ে দিল তখন সে বলল, এসো, হিরো। বাড়ি যাবার সময় হয়েছে।

রেস আর রেনে স্থানীয়দের উল্লাসের মাঝে ওপরের গ্রাম ত্যাগ করল।

তারা গহ্বরে নেমে ভিলকাফোরের দিকে রওনা হতেই, তাদের অনেক পেছনে গ্রামের কোন জায়গা থেকে একটা চাপা আর্তনাদ শোনা গেল।

এটা চারটা পোস্টের মতো গাছের সাথে বাধা বাঁশের খাঁচা থেকে এলো।

খাঁচার ভেতর, মার্টিতে শুয়ে, পেটের ব্যথায় গড়াগড়ি খাচ্ছে, দুই হাতই কাটা, ফ্র্যাংক ন্যাশ।

স্থানীয় অধিবাসীরা আগে ভিলকাফোরের প্রধান রাস্তায় তাকে হত্যা করেনি। বরং, তারা তার চুরি করার হাত দুটো কেটে ফেলেছে আর উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য এখানে নিয়ে এসেছে।

.

এক ঘণ্টা পর, সোলোনের টেম্পলে যাবার শেষ ইন্ডিয়ান শোভাযাত্রা বের হল। মৃতদেহগুলো অনুষ্ঠানের খাটিয়ায় করে তুলে ধরে টেম্পলের যাবার দড়ির সেতু অতিক্রম করল শোভাযাত্রা।

 একটা খাটিয়ায় ন্যাশ যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল, যখন অন্য খাটিয়াগুলোতে এক সারি শবদেহ–ভ্যান লিওয়েন, মার্টি, লরেন, রোমানো, আর নেভি-ডোরপা টিমের সব মৃতদেহের। মৃত বা জীবিত, যে কোন ধরনের নরমাংসই টেম্পলের ভেতরে থাকা বিড়াল দেবতাদের সন্তুষ্ট করবে।

পুরো গ্রাম টেম্পলের পেছনে জমা হয়েছে, একসাথে সুর করে গাইছে, দুজন শক্তিশালী যোদ্ধা সিলিন্ডার আকৃতির পাথরটা পথ থেকে সরালো, উৎসর্গের সুড়ঙ্গ উন্মুক্ত করল।

 প্রথমে মৃতদেহগুলো গর্তের ভেতর ছুঁড়ে দেয়া হল, ভ্যান লিওয়েন, তারপর মার্টি, তারপর লরেন আর নেভির লোকদের।

সবার শেষে ফ্র্যাংক ন্যাশকে নিয়ে আসা হল। সে দেখেছে অন্য মৃতদেহগুলো কি করা হয়েছে আর তার কি হবে বুঝতে পেরে তার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল।

 উৎসর্গের পুরোহিতরা তার বাঁধতে শুরু করতেই সে চাপা কণ্ঠে আর্তনাদ করে ওঠল। ইন্ডিয়ান যোদ্ধা দুজন তাকে সুড়ঙ্গের কাছে আনতেই সে পাগলের মতো ছটফট শুরু করল।

তারা প্রথমে তার পা নামাল আর শেষ বারের মতো আকাশ দেখে, ভয়ে। ফ্র্যাংক ন্যাশের চোখগুলো ছারপোকার মতো বড় বড় হয়ে গেল।

যোদ্ধা দুজন তাকে সুড়ঙ্গে ফেলে দিল।

 ন্যাশ চিৎকার করতে করতে নেমে গেল।

পাথরটা আগের জায়গায় পুনরায় স্থাপন করা হল আর স্থানীয়রা চিরদিনের মতো টাওয়ারের চূড়া ত্যাগ করল, কখনো ফিরে আসবে না। তাদের গ্রামে ফেরার পর, তারা দীর্ঘ যাত্রার প্রস্তুতি শুরু করল, যে যাত্রা তাদের রেইনফরেস্টের গভীরে নিয়ে যাবে, এমন জায়গায় যেখানে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।

গুজটা আন্দেজের ওপর শূন্যে উড়াল দিল লিমার উদ্দেশে, বাড়ির উদ্দেশে।

ডুগী সামনে ককপিটে বসা, ব্যান্ডেজ বাঁধা কিন্তু জীবিত। রেস, রেনে, গ্যাবি আর ইউলি পেছনে বসা।

প্রায় এক ঘণ্টা উড়ার পর, গ্যাবি লোপেজ ডুগীর সাথে ককপিটে যোগ দিল।

হেই, বলল সে।

হেই, কে দেখে নিয়ে ডুগী জবাব দিল। সে ঢোক গিলল, নার্ভাস। এখনো ভাবছে গ্যাবি খুবই সুন্দরী আর তার নাগালের বাইরে। সে তার ক্ষতগুলো ভালোভাবে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে, নরম হাতে। ডুগী পুরো সময় তার দিকে তাকিয়ে ছিল।

পরিখার কুমির থেকে বাঁচাতে সাহায্য করায় ধন্যবাদ, সে বলল।

ওহ, ডুগী লজ্জা পেল। ওটা কিছু না।

যাই হোক, ধন্যবাদ।

 নো প্রবলেম।

একটা অদ্ভুত নীরবতা নেমে এলো।

আমি ভাবছিলাম, গ্যাবি নার্ভাসভাবে বলল, যদি বাড়ি ফিরে কাউকে না পাও, তাহলে, বলতে চাচ্ছি, আমার ওখানে চলে এসো আমি তোমার জন্য ডিনার তৈরি করব।

ডুগীর হৃৎপিণ্ড একটা বিট মিস করল। সে মুখ বড় করে হাসল।

খুবই ভালো হয়, সে বলল।

তাদের দশ ফুট পেছনে, প্লেনের প্যাসেঞ্জার অংশে, রেনে রেসের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।

রেস আর্ল বিটটেকারের সেল ফোনে জন-পল ডিমোনাকোর সাথে কথা বলছে। সে ভিলকাফোরে ঘটে যাওয়া সবকিছু ডিমোনাকোকে জানাচ্ছে। বিকেএ থেকে নাজি, নেভি আর আর্মি, আর তারপর টেক্সান পর্যন্ত।

এক মিনিট, ডিমোনাকো বলল। আপনার কী কোন মিলিটারি অভিজ্ঞতা ছিল?

একটুও না, রেস বলল।

জেসাস। আপনি কি, কোন অজ্ঞাত হিরো?

 সেরকমই।

আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর, ডিমোনাকো রেসকে লিমার আমেরিকান দূতাবাসের ফোন নাম্বার এবং ঠিকানা আর সেখানকার এফবিআই-লিয়াজোর নাম দিল। এফবিআই তাদের আমেরিকায় ফিরে আসার ব্যবস্থা করবে।

ফোন রাখার পর, রেস জানালা দিয়ে তাকিয়ে তার নিচে পর্বতগুলোকে ছুটে যেতে দেখল, দুমড়ানো ইয়াঙ্কি ক্যাপ গ্লাসের সাথে ঠেকানো, ডান হাত তার গলায় ঝুলতে থাকা পান্নার হারটায় হাত বুলাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর, সে চোখ পিটপিট করল আর তার পকেট থেকে কিছু একটা বের করল।

পাতলা চামড়ায় বাধাই করা মারকুয়েজের নোটবুক যেটা সে ভোজের দিন সকালে দিয়েছিল।

 রেস ওটায় টোকা দিল। বেশি মোটা নয়। আসলে, মাত্র কয়েকটা হাতে লেখা পৃষ্ঠায় এটা তৈরি।

কিন্তু হাতের লেখাটা পরিচিত।

রেস প্রথম পাতা উল্টালো, পড়া শুরু করল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *