০৫. আগ্রাসন: স্থিতিশীলতা এবং স্বার্থপর মেশিন

অধ্যায় ৫: আগ্রাসন: স্থিতিশীলতা এবং স্বার্থপর মেশিন

এই অধ্যায়টি মূলত বহু ভুল বোঝা একটি বিষয়, আগ্রাসন সংক্রান্ত। আমরা প্রতিটি একক সদস্যকে স্বার্থপর মেশিন হিসাবে মনে করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবো, তাদের ধারণকৃত জিনের সর্বোপরি যেন ভালো হয় এমন সবকিছু করার জন্য যাদের প্রোগ্রাম করা হয়েছে। ব্যাখ্যার সুবিধার জন্যই এই ভাষার ব্যবহার। এই অধ্যায়ের শেষে আবার আমরা একক জিনের ভাষায় ফিরে আসবো।

 একটি সারভাইভাল মেশিনের জন্য অন্য একটি সারভাইভাল মেশিন (যে তার নিজের সন্তান নয় বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ও নয়) তার পরিবেশের একটি অংশ, একটি পাথর অথবা নদী বা এক টুকরো খাদ্যের মত। এটি এমন কিছু যা তার পথে বাধা হতে পারে বা এমন কিছু যাকে নিজের সার্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো একটি পাথর বা নদী থেকে এটি ভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে: এর পাল্টা আক্রমণ করার প্রবণতা আছে। এর কারণ এটি একটি যন্ত্র, ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষা করবে বলে যা এর অমর জিনকে ধারণ করে এবং এটিও তাদের সুরক্ষা করার জন্য কোন কিছু করতে পিছপা হয়না। প্রাকৃতিক নির্বাচন সেই সব জিনগুলোকে আনুকুল্য দেয়, যা তাদের সারভাইভাল মেশিনদের নিয়ন্ত্রণ করে এমনভাবে যে, তারা তাদের পরিবেশের সর্বোত্তম ব্যবহার করে। আর একই এবং ভিন্ন প্রজাতির অন্যান্য সারভাইভাল মেশিনদের সর্বোত্তম ব্যবহার করার প্রচেষ্টা তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে সারভাইভাল মেশিনগুলো পরস্পরের জীবনে খুব কমই হস্তক্ষেপ করে বলে মনে হয়, যেমন মোল আর ব্ল্যাকবার্ডরা পরস্পরকে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করেনা, তারা নিজেদের মধ্যে প্রজনন করে না বা বসবাসের জায়গার জন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেনা। এমনকি তারপরও, তাদের পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাবা অবশ্যই আমাদের উচিৎ হবেনা। তারা হয়তো অন্য কোনো কিছুর জন্য দ্বন্দ্বরত, হয়তো মাটিতে থাকা কেঁচোদের জন্য। এর মানে এই না যে, আপনি কখনো এমন কোনো দৃশ্য দেখবেন যেখানে একটা মোল ও একটা ব্ল্যাকবার্ড, একটা কেঁচোর জন্যে দড়ি টানাটানি করছে। আসলেই এমনও হতে পারে কোন একটি ব্ল্যাকবার্ড তার জীবনে কখনোই হয়তো কোনো মোলের সাথে দেখা হবার সুযোগ পায় না। কিন্তু যদি আপনি মোলদের জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেন, সেই ঘটনাটির একটি নাটকীয় প্রভাব পড়বে ব্ল্যাকবার্ডদের জীবনে। যদিও আমি বিস্তারিতভাবে খুঁটিনাটি কি হতে পারে বা কতটা ঘুরপথে পরোক্ষভাবে সেটি ঘটে, তা অনুমান করার কোনো ঝুঁকি নেবো না।

 ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির সারভাইভাল মেশিনগুলো নানা বিচিত্র উপায়ে একে অপরকে প্রভাবিত করে। তারা হতে পারে শিকারী প্রাণী বা শিকার হওয়া কোনো প্রাণী, পরজীবি বা তাদের পোষক, কোনো দুষ্প্রাপ্য সম্পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী। তারা স্বার্থের কারণে ব্যবহৃত হতে পারে বিশেষ বিশেষ উপায়ে, যেমন, যখন মৌমাছিদের তাদের পরাগরেণুর বাহক হিসাবে ব্যবহার করে ফুল। একই প্রজাতির সারভাইভাল মেশিনগুলো পরস্পরের জীবনে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে আরো। এবং এটি হয় বহু কারণে। একটি কারণ হচ্ছে, কারো নিজের প্রজাতির অর্ধেক হতে পারে তার সম্ভাব্য প্রজনন সঙ্গী এবং সম্ভাব্য কঠোর-পরিশ্রমী আর সার্থের জন্য ব্যবহারযোগ্য, কোনো সন্তানদের পিতামাতা। আরেকটি কারণ হচ্ছে যে, একই প্রজাতির সদস্যরা, পরস্পরের সদৃশ্য, একই ধরনের জায়গায় তাদের জিন সুরক্ষা করা, একই ধরনের জীবনাচরণসহ, জিন সংরক্ষণের মেশিন হবার কারণে সুনির্দিষ্টভাবে তারা জীবন ধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় সম্পদের জন্য তারা সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী।

কোনো একটি ব্ল্যাকবার্ডে জন্যে একটি মোল হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে অন্য একটি ব্ল্যাকবার্ড যতটা গুরুত্বপূর্ণ, মোল তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে কিছুই না। মোল আর ব্ল্যাকবারা হয়তো খাদ্য হিসাবে কেঁচোর জন্য দ্বন্দ্বরত, কিন্তু ব্ল্যাকবার্ডরা কেঁচোসহ আরো প্রয়োজনীয় সব সম্পদের জন্য নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বরত। যদি তারা একই লিঙ্গের সদস্য হয়, তারা হয়তো প্রজনন সঙ্গী পাওয়ার জন্যে দ্বন্দ্বরত। আমরা পরে জানতে পারবো কিছু কারণে, সাধারণত পুরুষরা স্ত্রী-সঙ্গী পাওয়ার জন্যে পরস্পরের সাথে দ্বন্দ্ব করে। এর অর্থ পুরুষরা হয়তো তাদের জিনদের কোনো উপকার করে, যদি সে এমন কিছু করে যা তার সাথে দ্বন্দ্বরত কোনো পুরুষ সদস্যদের প্রতি ক্ষতিকর হিসাবে প্রতীয়মান হয়।

একটি সারভাইভাল মেশিনের জন্যে যুক্তিসঙ্গত নীতি সুতরাং হয়তো হতে পারে এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করা এবং তারপর, বরং তাদের খাওয়া। যদিও হত্যা ও স্বজাতি ভক্ষণের ব্যপারটি প্রকৃতিতে ঘটে, কিন্তু সেই অর্থে তেমন ঘটনা খুব সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না, যেমন, স্বার্থপর জিনতত্ত্বের অতি সরল কোনো ব্যাখ্যা হয়তো পূর্বধারণা করতে পারে। আসলেই কনরাড লরে, তার On Aggression বইয়ে, প্রাণীদের দ্বন্দ্বের সংযত, ভদ্রোচিত প্রকৃতির উপর জোর দিয়েছিলেন। তার মতে প্রাণীদের মধ্যে যুদ্ধে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে সেগুলো আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতার কোনো। মত হয়, মুষ্টিযুদ্ধ কিংবা তলোয়ার লড়াইয়ের মত, যা কিছু নিয়ম মেনে চলে। প্রাণীরা যুদ্ধ করে হাতে ‘দস্তানা’ পরে বা ‘ভোতা” তলোয়ার ব্যবহার করে। সেখানে ভয় দেখানো বা ধোকা দিয়ে বোকা বানানো সব কিছু ঘটে তীব্র আন্তরিকতার সাথে। পরাজয় মেনে নেবার ভঙ্গিমা শনাক্ত করতে পারে বিজেতা, যিনি তারপর সংযত থাকেন কোন মরন আক্রমণ বা কামড় দেয়া থেকে, যা আমাদের সরল তত্ত্বটি হয়তো পূর্বধারণা করতে পারে।

প্রাণীদের আগ্রাসী আচরণের সংযত ও আনুষ্ঠানিক এই ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। বিশেষ করে, পুরোনো বেচারা Homo sapiens হচ্ছে একমাত্র প্রজাতি, যারা কিনা তাদের স্বজাতিদের হত্যা করে, কেইনের কলঙ্কের একমাত্র উত্তরাধিকারী এবং ইত্যাদি, নানা নাটুকে অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা অবশ্যই ভুল। একজন প্রকৃতিবিদের প্রাণীদের আগ্রাসনে সহিংসতা বা সংযম বিষয়ক দাবী আংশিক নির্ভর করছে কি ধরনের প্রাণীদের নিয়ে তিনি। গবেষণা করছেন এবং আংশিকভাবে নির্ভর করে তার বিবর্তনীয় পূর্বধারণার উপর– তবে যাই হোক না কেন, লরেন্জ, সর্বোপরি, ‘প্রজাতির সবার জন্য কল্যাণ’ ঘরানার মানুষ। এমনকি যদিও বিষয়টিকে নিয়ে অতিশয়োক্তিও করা হয়, মনে হতে পারে ‘দস্তানা’ পরে মুষ্টিবদ্ধ হাতে প্রাণীদের সংযত দ্বন্দ্বের দৃষ্টিভঙ্গিটির ন্যূনতম পর্যায়ে কিছুটা সত্যতা আছে। উপরিভাবে এটি দেখতে এক ধরণের পরার্থদের মত। আর ‘স্বার্থপর জিন’ তত্ত্বটিকে অবশ্যই সেটি ব্যাখ্যা করার কঠিন কাজটির মুখোমুখি হতে হবে। কেনই বা সব প্রাণীরা সুযোগ পাওয়া মাত্রই তাদের প্রজাতির প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্যদের হত্যা করছে না?

এই প্রশ্নটির সাধারণ উত্তর হচ্ছে এধরনের সরাসরি দ্বন্দ্বপ্রিয়তার মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সুবিধা যেমন আছে, তেমনি শুধুমাত্র সময় আর শক্তি ব্যবহার করা সুস্পষ্ট মূল্য ছাড়াও আরো অনেক বিনিময় মূল্য পরিশোধও করতে হয়। যেমন, মনে করুন যে ‘খ’ এবং “গ” দুজনেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী, ঘটনাচক্রে আগে ‘খ’ এর সাথে আমার আগে দেখা হয়, একজন স্বার্থপর সদস্য হিসাবে আমার জন্য বোধগম্য একটি ব্যাপার হবে তাকে হত্যা করার চেষ্টা করা। কিন্তু না অপেক্ষা করুন। ‘গ’ ও কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী এবং ‘গ’ আবার ‘খ’ এরও প্রতিদ্বন্দ্বী। ‘খ’ কে হত্যা করার ফলশ্রুতি হবে, আমি ‘গ’ এর জন্য সম্ভাব্য ভালো একটি কাজ করছি, তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে একজনকে সরিয়ে ফেলে। আমি হয়তো ভালো করতাম ‘খ’ কে বাঁচার সুযোগ দিয়ে, সে হয়তো তারপর ‘গ’ এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও যুদ্ধ করতে, এবং সেভাবে আমাকে পরোক্ষভাবে সুবিধা দিতো। এই সাধারণ হাইপোথেটিকাল উদাহরণের মূল নীতিবাক্যটি হচ্ছে, নির্বিচারে প্রতিন্দীদের হত্যা করার চেষ্টা করায় সুস্পষ্টভাবে কোনো উপকারিতা নেই। বিশাল ও জটিল প্রতিদ্বন্দ্বীতারপুর্ণ কোনো পদ্ধতিতে, কোনো একটি প্রতিদ্বন্দ্বীকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে দিলে আবশ্যিকভাবে সেটি কোনো উপকারী পদক্ষেপ নয়: সেখানে অন্য প্রতিদ্বন্দীদের এমনকি তার নিজের চেয়ে আরো বেশী সুবিধা পাবার সম্ভাবনা আছে। এই ধরনের একটি কঠিন শিক্ষা বহু দিন আগেই পেয়েছেন পেষ্ট-কন্ট্রোল অফিসাররা। ধরুন আপনাকে গুরুতর সমস্যা দিচ্ছে কৃষিকাজের জন্য ক্ষতিকর কোন একটি পতঙ্গ, এবং তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্য আপনি একটি ভালো উপায় আবিষ্কার করলেন। এবং খুব আনন্দের সাথে আপনি কাজটিও করলেন। এবং আপনি এরপরই আবিষ্কার করলেন যে মানুষের কৃষিকাজের চেয়ে এই নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়ায় লাভবান হয়েছে অন্য কোন একটি ক্ষতিকর পতঙ্গ। আর আপনার অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ।

আবার অন্যদিকে, কোনো নির্দিষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বীদের খানিকটা বৈষম্যমূলক উপায়ে হত্যা বা ন্যূনতম পর্যায়ে যুদ্ধ করা একটি ভালো পরিকল্পনা মনে হতে পারে। যদি ‘খ’ কোনো একটি এলিফ্যান্ট সীল হয়, যার বহু স্ত্রী এলিফেন্ট সীল এর একটি বিশাল হারেম আছে এবং যদি আমি, আরেকটি এলিফ্যান্ট সীল, তাকে হত্যা করে তার হারেমটির দখল নিতে পারি, সেটি করার চেষ্টা করাটা আমার জন্য ভালো হবে। কিন্তু এর সাথে যুক্ত ঝুঁকি ও মূল্য পরিশোধের ব্যাপার আছে, এমনকি যখন এই দ্বন্দ্বপ্রিয়তা সুনির্দিষ্ট কারো প্রতি নির্দিষ্ট। আর ‘খ’ এর জন্য সুবিধাজনক অবস্থানটি হবে তার মূল্যবান সম্পদ রক্ষা করার উদ্দেশ্যে এর উপরে আক্রমনের প্রতি আক্রমণ করা। যদি আমি যুদ্ধ শুরু করি, সেই যুদ্ধে তার কিংবা আমার মারা যাবার খুবই সম্ভাবনা আছে। হয়তো আমার মারা যাবার সম্ভাবনা খানিকটা বেশী। তার কাছে আছে মূল্যবান সম্পদ, আর সে কারণে আমি তার সাথে যুদ্ধ করতে চাইছি। কিন্তু সে কিভাবে সেই সম্পদের অধিকারী হয়েছিল? হয়তো কোনো যুদ্ধে সেটি সে জয় করেছিল, নিশ্চয়ই আমার আগে অন্য আরো চ্যালেঞ্জকারীদের সে যুদ্ধে হারিয়েছে। সম্ভবত সে খুব ভালো যুদ্ধ করতে পারে। এমনকি যদি আমি যুদ্ধে জিতি এবং হারেমটির উপর আমার কর্তৃত্ব স্থাপন করি, আমি সেই যুদ্ধে এতটাই আহত, ক্ষতবিক্ষত হতে পারি যে, আমি হয়তো আমার জয়ের সেই সুফলটি ভোগ করতে পারবো না। এছাড়া যুদ্ধ করতে সময় ও শক্তির খরচ হয়। হয়তো আপাতত কিছু সময়ের জন্য সেই শক্তিটা সঞ্চয় করতে পারি, যদি আমি খাওয়ায় ও সব ধরনের বিপদজনক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলি কিছু সময়ের জন্য, তাহলে আমি আকারে আরো বড় ও শক্তিশালী হবে। এবং আমি কোনো না কোনো এক সময় তার হারেম দখলের জন্য তার সাথে যুদ্ধ করবো ঠিকই কিন্তু আমার হয়তো জেতার ভালো সম্ভাবনা থাকে যদি আমি খানিকটা সময় অপেক্ষা করি, এক্ষুনি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার চেয়ে।

 এই আত্মগত সলিলোকুই বা আত্মকথন হচ্ছে দেখানোর একটি উপায় যে, সিন্ধান্ত, সেটি যুদ্ধ করার জন্য বা না করার জন্যই হোক না কেন, আদর্শগতভাবে সিদ্ধান্তটি নেবার পুর্বে একটি জটিল, যদিও সচেতন পর্যায়ে না, ‘লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ থাকে। সম্ভাব্য উপকারিতার সবটুকু যুদ্ধ করার পক্ষে থাকে না, যদিও নিঃসন্দেহে কিছুটা অবশ্যই থাকে। একইভাবে, যুদ্ধের সময়, প্রতিটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যুদ্ধটির তীব্রতা বাড়ানো বা কমানো হবে কিনা, সেটিরও নীতিগতভাবে লাভ ক্ষতির ব্যাপার আছে, যা বিশ্লেষিত হয়। খানিকটা অস্পষ্ট একটি উপায়ে প্রানি-আচরণবিদরা বহুদিন ধরে বিষয়টি অনুধাবন করেছেন, তবে এই ধারণাটি স্পষ্ট আরো দৃঢ়ভাবে ব্যাখ্যা করার জন্যে প্রয়োজন হয়েছে একজন জন মেনার্ড স্মিথ-এর, যদিও প্রচলিত অর্থে যাকে প্রানি-আচরণবিদ হিসাবে গন্য করা হয় না। জি. আর. প্রাইস ও জি, এ. পার্কারের সহযোগিতায়, তিনি গণিতের একটি শাখার ব্যবহার করেছিলেন এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করতে, সেটি হচ্ছে: ‘গেম থিওরী। তাদের চমৎকার ধারণাগুলো কোনো ধরনের গাণিতিক সংকেত ছাড়াই তারা প্রকাশ করেছিলেন বোধগম্য ভাষায়, যদিও কিছু অনমনীয়তার বিনিময় মূল্যে।

যে মূল প্রয়োজনীয় ধারণাটি মেনার্ড স্মিথ উপস্থাপন করেছিলেন, সেটি হচ্ছে evolutionarily stable strategy (ESS) বা ‘বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশল (ইএসএস)-এর ধারণা। তার এই ধারণাটির উৎস আরো আগে ডাবলিউ. ডি. হ্যামিলটন ও আর. এইচ, ম্যাকআর্থারের প্রস্তাবিত কিছু ধারণা। একটি কৌশল’ বা ‘স্ট্রাটেজী’ হচ্ছে আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা আচরণ নীতিমালা। একটি স্ট্রাটেজীর উদাহরণ যেমন, প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করো। যদি সে পালায়, তার পিছু ধাওয়া করো, যদি সে প্রতি আক্রমণ করে, তাহলে পালিয়ে আসো। এখানে মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা কিন্তু এমন কোনো স্ট্রাটেজীর কথা বলছি না, সচেতনভাবে কোন একক সদস্য হিসাব নিকাশ করে যে স্ট্রাটেজী বা কৌশলে উপনীত হয়েছে। মনে রাখবেন আমরা প্রাণীদের দেখছি রবোট সারভাইভাল মেশিনের মত, যাদের একটি আগেই প্রোগ্রাম করা কম্পিউটার আছে যা তাদের মাংসপেশীর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করছে। এই কৌশলটি একগুচ্ছ সাধারণ নির্দেশনা হিসাবে ইংরেজীতে লেখাটি বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবার জন্য শুধুমাত্র সুবিধাজনক একটি উপায় মাত্র। কিছু অনির্দিষ্ট অজানা প্রক্রিয়ায় কোনো প্রাণী আচরণ করে এমনভাবে যেন মনে হয় তারা এই সব নির্দেশাবলী অনুসরণ করছে।

কোনো একটি evolutionarily stable strategy বা ESS (ইএসএস)-কে সংজ্ঞায়িত করা হয় এমন কোনো একটি স্ট্রাটেজী হিসাবে, যদি কোনো একটি জনগোষ্ঠীর বেশীর ভাগ সদস্যরা এটিকে গ্রহন করে মেনে নেয়, এবং এর চেয়ে উত্তম কোনো বিকল্প স্ট্রাটেজী দিয়ে এটি প্রতিস্থাপিত হবার নয় (১)। এটি খুব সুক্ষ্ম আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। আরেকভাবে এটি বলা যেতে পারে, কোনো একক সদস্যের জন্যে সেরা স্ট্রাটেজীটি হচ্ছে তার জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা যা করছে সেটি করা। যেহেতু জনগোষ্ঠীর বাকী সদস্যরা একক সদস্য দিয়ে তৈরী, প্রত্যেকেই তাদের সাফল্য সর্বোচ্চ করতে আগ্রহী, শুধু একটি কৌশল যা টিকে থাকবে সেটি, একবার বিবর্তিত হবার পর, আর কোনো ভিন্নপন্থী সদস্যর অবলম্বনকৃত কৌশল দিয়ে উন্নতিকরণ সম্ভব না। কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত পরিবর্তনের পরে বিবর্তনীয় অস্থিতিশীলতার একটি সংক্ষিপ্ত পর্ব থাকে, হয়তো এমনকি দ্রুত কৌশল পরিবর্তন করা একটি দোদুল্যমানতা জনসংখ্যায় লক্ষ করা যায়। কিন্তু একবার যখন একটি ‘ইএসএস’ অর্জিত হয়, এটি টিকে থাকে, এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন এর থেকে কোনো বিচ্যুতিকে শাস্তি দেয় এবং আনুকুল্যতা বর্জন করে।

 এই ধারণাটিকে আগ্রাসী আচরণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে মেনার্ড স্মিথ সরলতম হাইপোথেটিকাল কেসগুলোর একটিকে বিবেচনা করুন। ধরুন, কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রজাতিতে শুধুমাত্র দুই ধরনের যুদ্ধ করার কৌশল বিদ্যমান, কৌশল দুটির নাম ‘হক’ এবং ‘ডোভ’ (hawk ও dove) : এই নামগুলো যে পাখিদের নাম থেকে নেয়া হয়েছে এখানে তাদের বৈশিষ্ট্য ও আচরণ সম্বন্ধে মানুষের প্রচলিত ধারণার কোনো সম্পর্ক কিন্তু নেই। (ডোভরা বাস্তবিকভাবেই বেশ আগ্রাসী আচরণের একটি পাখি)। আমাদের কল্পিত জনগোষ্ঠীর যেকোনো একক সদস্যকে শ্রেণীভুক্ত করা হয়, ‘হক’ অথবা ‘ডোভ’ হিসাবে। ‘হকরা সবসময় লাগামছাড়াভাবেই যুদ্ধ করে, তাদের পক্ষে যতটা শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করা সম্ভব ততটাই তীব্রভাবে। ‘ডোভরা’ শুধু প্রচলিত উপায়ে সম্মানজনকভাবে হুমকি দেয়, কখনো কাউকে আঘাত করে না। যদি কোনো ‘হক’, কোনো ‘ডোভের সাথে যুদ্ধ করতে আসে ‘ডোভ’ দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায় সুতরাং কখনোই আহত হয় না। যদি কোনো ‘হক’ আরেকটি ‘হকের সাথে যুদ্ধ করে তারা সেই যুদ্ধ থামায় না যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ মারা না যায় বা খুব ভয়ঙ্করভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। যদি কোন ‘ডোভের আরেকটি ‘ডোভের সাথে সাক্ষাৎ হয়, সেখানে কেউই আহত হয়না, তারা একে অপরকে ভয় দেখায় নানা ভঙ্গিমা করে অনেকক্ষণ ধরে, যতক্ষণ না একজন ক্লান্ত হয়ে পড়ে বা সিদ্ধান্ত নেয়। এসব করার আর কোনো মানে নেই, সুতরাং সে পিছু হটে আসে। আপাতত কিছু সময়ের জন্য আমরা ধরে সেই, কোনো একটি একক সদস্যর পক্ষে কোনোভাবেই আগে থেকে বলা সম্ভব না, যে বিশেষ প্রতিদ্বন্দীর মুখোমুখি সে দাঁড়িয়ে, সে কি ‘হক’ নাকি একটি ডোভ’। তার জন্যে এটি জানার উপায় হচ্ছে তার সাথে যুদ্ধ করা, এবং সেই নির্দিষ্ট সদস্যটির সাথে তার কোনো অতীত যুদ্ধের স্মৃতি নেই, কৌশল নির্ধারণে যা কিনা তাকে সহায়তা করতে পারতো।

এখন পুরোপুরি কাল্পনিক কোনো নিয়ম মেনে আমরা যোদ্ধাদের জন্য ‘নম্বর বরাদ্দ করি। ধরুন, ৫০ পয়েন্ট একবার জেতার জন্য, ০ পয়েন্ট একবার হারার জন্য, ১০০ খুব গুরুতরভাবে আহত হবার জন্য, দীর্ঘ যুদ্ধের পেছনের লম্বা সময় নষ্ট করার জন্য–১০। এই পয়েন্টগুলোকে জিনের টিকে থাকার সরাসরি রুপান্তরযোগ্য বিনিময় মূল্য হিসাবে ভাবা যেতে পারে। কোনো একক সদস্য যে অনেক বেশী নম্বর পায়, অনেক উঁচু গড়পড়তা উপকারিতা বা পে অফ পায়, সেটি হচ্ছে সেই সদস্য যে মারা যাবার আগে জিন পুলে অনেক জিন রেখে যায়। বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে সত্যিকারের গাণিতিক মানের বিশাল সীমানায় এটি অর্থবহ না, কিন্তু বিষয়টি আমাদেরকে সাহায্য করে সমস্যাটি নিয়ে ভাবতে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে ‘হকরা’ কি ‘ডোভদের পরাজিত করে যখন তারা তাদের সাথে যুদ্ধ করে, সে ব্যপারে আমরা আদৌ চিন্তিত নই। আমরা ইতিমধ্যেই এর উত্তরটা জানি, ‘হক’ সবসময়ই জেতে। আমরা জানতে চাই ‘হক’ অথবা ‘ডোভ’ কোনটি আসলে বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল একটি স্ট্রাটেজী। যদি এর মধ্যে কোনোটি তাদের জন্যে একটি ‘ইএসএস’ হয়, তাহলে অন্যটি ‘ইএসএস’ নয়। আমাদের অবশ্যই প্রত্যাশা করতে হবে যেটি ‘ইএসএস’, সেটি বিবর্তিত হবে। তাত্ত্বিকভাবে দুটি ‘ইএসএস’ হওয়া কিন্তু সম্ভব, এটি সত্য হবে জনগোষ্ঠীতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের যে স্ট্রাটেজিই থাকুক না কেন, সেটি ‘হক’ কিংবা ‘ডোভ’ যাই হোক না কেন, কোনো সদস্যের জন্য সেরা কৌশলটি হচ্ছে এটি অনুসরণ করা। এই ক্ষেত্রে জনগোষ্ঠীর প্রবণতা থাকবে এই দুটি স্থিতিশীল অবস্থার যে স্ট্রাটেজীতে তারা প্রথম উপনীত হয়েছে সেটি অনুসরণ করা। যদিও আমরা এখন দেখবো, এই দুটি স্ট্রাটেজীর কোনটাই, ‘হক বা ‘ডোভ’, আসলে বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল না সেই কৌশলটির একার উপর ভিত্তি করে এবং সেকারণে তাদের কোনোটা বিবর্তিত হবেই আমাদের এমন কিছু প্রত্যাশা করা উচিৎ না। সেটা করতে আমাদের গড়পড়তা চূড়ান্ত লাভক্ষতিটা হিসাব নিকাশ করে বের করতে হবে।

ধরুন আমাদের একটি জনগোষ্ঠী আছে, যাদের পুরোটাই তৈরী ‘ডোভ’ সদস্যদের নিয়ে। যখনই তারা দ্বন্দ্ব করছে কেউ আহত হচ্ছে না। তাদের দ্বন্দ্বের আচারটি দীর্ঘমেয়াদী, হয়তো চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকার কোনো প্রতিযোগিতা, সেটি শেষ হয় তখনই যখন এক পক্ষ পিছু হটে আসে। বিজয়ী তাহলে এখানে ৫০ পয়েন্ট পায় এই দ্বন্দ্বে জেতার জন্য, কিন্তু এর শাস্তি হিসাবে যে– ১০ পয়েন্ট পায়, এই দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় সময় নষ্ট করার কারণে। সুতরায় কোনো বিজেতা এই প্রতিযোগিতায় মোট ৪০ পয়েন্ট আশা করতে পারে। সময় নষ্ট করার জন্য পরাজিত যে তার শাস্তি হয়,–১০ পয়েন্ট। গড়ে, কোনো একটি একক ‘ডোভ’ তার প্রতিযোগিতায় অর্ধেকবার জেতার প্রত্যাশা করতে পারে, বাকী অর্ধেক সময় তার হারার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এখানে গড়ে তার পে-অফ বা লাভ হচ্ছে +৪০ আর–১০ এর গড়, সেটি হচ্ছে ‘+১৫’; সুতরাং ‘ডোভদের জনসংখ্যায় প্রতিটি ডোভ সদস্য মোটামুটি ভালোভাবেই তাদের জীবনধারণ করে।

 কিন্তু এবার ভাবুন একটি ‘মিউট্যান্ট’ বা পরিবর্তিত আচরণের ‘হক’ এই জনসংখ্যায় উদ্ভূত হলো। যেহেতু সে একাই ‘হক’ সেখানে, প্রতিটি যুদ্ধে তার প্রতিপক্ষ আরেকটি ‘ডোভ’। “হকরা সবসময়ই ‘ডোভদের পরাজিত করে। সুতরাং প্রতিটি প্রতিযোগিতায় সে +৫০ পয়েন্ট অর্জন করে। এবং এটাই তার গড় পে-অফ। ডোভদের উপর সে অত্যন্ত বেশী মাত্রায় সুবিধা পায়। যাদের মোট পে-অফ মাত্র +১৫। এর ফলাফলে ‘হক’ জিন খুব দ্রুত সেই জনগোষ্ঠীতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এখন প্রতিটি ‘হক আর আগের মত নিশ্চিৎ হতে পারে না, তার সব প্রতিপক্ষই হবে ‘ডোভ। আরো একটি চূড়ান্ত উদাহরণ আমরা নিতে পারি, যদি ‘হক’ জিন সফলভাবে দ্রুত বিস্তার লাভ করে যে পুরো জনগোষ্ঠীতে, দেখা যায় ‘হক’ ছাড়া আর কোনো কিছু নেই, তখন সব যুদ্ধ হবে ‘হকদের’ যুদ্ধ। পরিস্থিতি এখন খুবই আলাদা। যখন কোনো ‘হকের’ আরেকটি ‘হকের সাথে সাক্ষাৎ হয়, তাদের একজন খুব মারাত্মকভাবে আহত হয়, সুতরাং সে–১০০ পয়েন্ট পায়, অন্যদিকে যে জেতে সে পায় +৫০, হকদের জনগোষ্ঠীতে প্রতিটি হক প্রত্যাশা করতে পারে অর্ধেক সংখ্যক যুদ্ধে সে জিতবে আর অর্ধেক সংখ্যক যুদ্ধে সে হারবে; তার গড় পে-অফ হবে প্রতিটি যুদ্ধে +৫০ ও ১০০ র মাঝামাঝি একটি সংখ্যা, সেটি হচ্ছে ‘-২৫’। এবার সেই হকদের জনগোষ্ঠীতে একটি ‘ডোভ’ সদস্যর কথা ভাবুন। নিশ্চিৎভাবে সে সব যুদ্ধে হারবে কিন্তু অন্যদিকে সে কখনোই গুরুতরভাবে আহত হবে না। এই হক জনসংখ্যায় তার গড়পড়তা অর্জন হবে ‘০’, অন্যদিকে ‘হক’ জনসংখ্যায় গড়পড়তা ‘হকের’ অর্জন ‘-২৫’, ‘ডোভ’ জিন সে কারণে জনগোষ্ঠীতে বিস্তার লাভ করবে।

আমি যেভাবে গল্পটা বলেছি, মনে হতে পারে একটি নিরন্তর পরিবর্তনশীল দোদুল্যমানতা জনগোষ্ঠীতে কাজ করছে। ‘হক’ জিন পুরো জনসংখ্যায় ছড়িয়ে পড়বে প্রথমে, তারপর ‘হকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে ‘ডোভ’ জিনরা একটা বাড়তি সুবিধা পাবে এবং সংখ্যায় বাড়বে যতক্ষণ না অবধি ‘হক’ জিন আবার প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পারে এবং এভাবে পালাক্রমে চলতে থাকবে। যদিও এরকম পালাবদলের প্রয়োজন নেই।’ডোভদের তুলনায় ‘হকদের সংখ্যার একটি ভারসাম্যময় স্থিতিশীল অনুপাত আছে। একটি কাল্পনিক পয়েন্ট সিস্টেম, যা আমরা ব্যবহার করেছি, স্থিতিশীল অনুপাত, আপনি যদি সেটি হিসাব নিকাশ করে বের করেন, দেয়া যাবে ৭/১২ ‘হক’ প্রতি ৫/১২ ‘ডোভ’ আছে। যখন এই স্থিতিশীল অনুপাতটি অর্জিত হয়, ‘হকদের’ গড়পড়তা লাভ ‘ডোভদের’ গড়পড়তা লাভের সমান হয়। সুতরাং সেখানে প্রাকৃতিক নির্বাচন কোনোটাকেই অন্যটির চেয়ে বেশী আনুকুল্য প্রদর্শন করে না। যদি ‘হকদের সংখ্যা জনসংখ্যায় বাড়তে থাকে সেই অনুপাত বরাবর যে সেটি আর ৭/১২ নয়, ‘ডোভরা’ তখন বাড়তি সুবিধা পেতে শুরু করে, এবং অনুপাতটি আবার স্থিতিশীল পর্যায়ে ফিরে আসে। ঠিক যেমন করে আমরা একটি স্থিতিশীল লিঙ্গ অনুপাত পাই ‘৫০: ৫০, সেভাবেই এই কাল্পনিক উদাহরণে ‘ডোভ’ প্রতি ‘হকদের’ স্থিতিশীল অনুপাত হবে: ৭:৫। যেকোনো ক্ষেত্রেই, যদি স্থিতিশীল বিন্দুটির আশে পাশে কোনো দোদুল্যমানতা হয়, খুব বড় কোনো মাত্রায় তা হবার প্রয়োজন নেই।

বাহ্যত, এটি শুনতে খানিকটা গ্রুপ সিলেকশনের মত শোনায়, কিন্তু আসলে এটি সেরকম কোনো কিছু নয়। এটি গ্রুপ সিলেকশনের মত মনে হয় কারণ এটি আমাদের এমন একটি জনগোষ্ঠীর কথা ভাবতে শেখায় যেখানে একটি স্থিতিশীল ভারসাম্যতা আছে, যে বিন্দুতে এটি প্রত্যাবর্তন করে বা আবার ফিরে আসে যখনই কোনো কারণে এর ভারসাম্যটি ব্যহত হয়। কিন্তু গ্রুপ সিলেকশনের তুলনায় ‘ইএসএস’ আরো অনেক বেশী সূক্ষ্ম একটি ধারণা। কোনো একটি গ্রুপ অন্য একটি গ্রুপ থেকে বেশী সফল এমন কোনো ধারণার সাথে এর কোনো যোগাযোগ নেই। আমাদের এই হাইপোথেটিকাল উদাহরণে কাল্পনিক একটি পয়েন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে খুব সুন্দরভাবে এটি ব্যাখ্যা করা সম্ভব। একটি একক সদস্যের জন্য গড় পে-অফ, কোনো স্থিতিশীল জনসংখ্যায় যেখানে ৭/১২ ‘হক আর ৫/১২ ‘ডোভ’ থাকে,দেখা যায় ৬১/৪ (৬.২৫)। আর এটি সত্য সেই একক সদস্যটি একটি ‘ডোভ’ কিংবা ‘হক’ যাই হোক না কেন। এখন ৬ ১/৪ কিন্তু কোনো ‘ডোভ’ জনগোষ্ঠীতে একটি ডোভ গড় পড়তা পে অফের তুলনায় (+১৫) অনেক কম। যদি শুধুমাত্র সবাই রাজী হতো ‘ডোভ’ হবার জন্যে, প্রতিটি একক সদস্য সেখানে ‘লাভবান’ হতো। খুব সাধারণ গ্রুপ সিলেকশনের দ্বারা, কোনো গ্রুপ যেখানে সব সদস্যই ঐক্যমতে পৌঁছায় ‘ডোভ’ হবার জন্য তারা অনেক কম সফল কোনো একটি প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের তুলনায় যারা তাদের ‘ইএসএস’ অনুপাতে স্থিতিশীল আছে। (আসলেই বাস্তব সত্য হচ্ছে, কোনো ষড়যন্ত্র’ যে গ্রুপে ‘ডোভ’ ছাড়া আর কোনো কিছু নেই, সেটি কিন্তু সবচেয়ে সম্ভাব্য সফল গ্রুপ না, কোনো একটি গ্রুপ যেখানে ১/৬ ‘হক’ আর ৫/৬ ‘ডোভ’, সেখানে প্রতিটি প্রতিযোগিতায় গড় পে অফ হচ্ছে ‘১৬ ২/৩’; এটাই সবচেয়ে সফল ষড়যন্ত্র, কিন্তু বর্তমান উদ্দেশ্যের জন্য ব্যাপারটি আমরা উপেক্ষা করতে পারি। একটি সরলতর সব ‘ডোভ’-ষড়যন্ত্রতে, যার গড় পে-অফ প্রতিটি একক সদস্যর জন্য ১৫, যা অনেক বেশী ভালো প্রতিটি একক সদস্যর জন্য, কোনো ‘ইএসএস’ যা হতে পারে তার চেয়ে বেশী)। গ্রুপ সিলেকশন তত্ত্ব সেকারণে এমন কোনো বিবর্তন প্রবণতার ভবিষ্যদ্বাণী করবে, যেখানে সবাই ‘ডোভ’ হবে এমন ষড়যন্ত্রে থাকবে, কারণ কোনো গ্রুপ যার ৭/১২ অংশ ‘হক’ ধারণ করে সে। কম সফল হবে। কিন্তু ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা হচ্ছে, এমনকি যেগুলো পরিশেষে সবাইকে লাভবান করে, সেগুলো অপব্যবহৃত হবার জন্যে ‘উন্মুক্ত। যেকোনো একটি ‘ইএসএস’ গ্রুপের তুলনায় সত্যি যে, সবাই ‘ডোভ’ এমন কোনো গ্রুপে প্রত্যেকেই বেশী লাভবান হবে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ‘ডোভদের এই ষড়যন্ত্রে, একটি একক ‘হক’ এতটাই ভালো করে যে, কোনো কিছু সেখানে ‘হকদের’ বিবর্তনকে থামাতে পারেনা। সেকারণে এর অভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতার কারণে এই ‘ষড়যন্ত্র’ ভাঙতে বাধ্য। কোনো একটি ‘ইএসএস’ স্থিতিশীল, এর কারণ এখানে অংশগ্রহন করা সদস্যদের জন্যে এটি বিশেষভাবে ভালো তা কিন্তু না বরং এটি এর ভিতর থেকে উদ্ভুত কোন বিশ্বাসঘাতকতা থেকে সুরক্ষিত।

 মানুষের পক্ষে যদিও সম্ভব এমন কোনো চুক্তি বা ষড়যন্ত্রে জড়াতে যেখানে প্রত্যেকেই লাভবান হবে, এমনকি যদিও তারা ‘ইএসএস’ অর্থে স্থিতিশীল নয়। কিন্তু এটা শুধুমাত্র সম্ভব কারণ প্রতিটি একক সদস্য তাদের সচেতন পূর্বদষ্টি ব্যবহার করে এবং তারা সক্ষম এটি বুঝতে যে, এই ঐক্যমতের চুক্তি মেনে চললে তার নিজেরই দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থগুলো সুরক্ষিত হবে। কিন্তু এমনকি মানুষের এই চুক্তিতেও একটি সার্বক্ষণিক আশঙ্কা থাকে কারণ কোনো সদস্য যদি চুক্তি ভঙ্গ করে ‘স্বল্প মেয়াদী পর্যায়ে, তার এতটাই বেশী লাভ করার থাকে যে সেটা করার জন্যে তার প্রলোভন অত্যন্ত শক্তিশালী হবে। হয়তো সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে ‘প্রাইস ফিক্সিং’ বা কোন কিছু বিক্রয়মূল্য পূর্বনির্ধারণ। একক ভাবে সব গ্যারেজ মালিকদের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ হচ্ছে পেট্রোলের দাম একটি কৃত্রিম উচ্চ মাত্রায় ঠিক করা। এবং এভাবে জোট বদ্ধ হয়ে করা ‘প্রাইস রিং’, যা সচেতনভাবে ভবিষ্যতের স্বার্থরক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরী করা হয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে। কিন্তু প্রায়শই এর মাঝে কেউ কেউ, দ্রুত লাভ করার জন্যে তার দাম কমিয়ে সেই প্রলোভনের কাছে হার স্বীকার করে। সাথে সাথেই তার প্রতিবেশীরাও সেই একই কাজ করে এবং দেশ জুড়ে দাম কমানোর হিড়িক পড়ে যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বাকী সবার জন্য, গ্যারেজ মালিকদের সচেতন পূর্বদৃষ্টি এরপর আবারো ফিরে আসে, তারা আবার নতুন একটি দাম বেধে দেবার চুক্তিতে যোগ দেয়। সুতরায় এমনকি মানুষও, যে প্রজাতি সচেতন দূরদর্শিতার গুণে আশীর্বাদপুষ্ট, সেখানে দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ রক্ষার উপর ভিত্তি করে কোনো চুক্তি বা ষড়যন্ত্রটি, এই গ্রুপটির ভিতর থেকে উদ্ভূত কোনো বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ভেঙ্গে পড়ার সার্বক্ষণিক একটি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বন্যপ্রাণীরা, যারা জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি সংগ্রামে লড়ছে, এমনকি সেখানে সেই সব উপায়গুলো দেখা আরো বেশী কঠিন, যেখানে পদের উপকার অথবা ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত স্ট্রাটেজী সম্ভবত বিবর্তিত হতে পারে। অবশ্যই প্রত্যাশা করতে হবে বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশলগুলো আমরা সব জায়গায় খুঁজে পাবো।

আমাদের ‘হাইপোথেটিকাল’ উদাহরণে আমরা একটি সরল পূর্বধারণা করেছিলাম যে, কোনো একজন একক সদস্য হয় একটি ‘হক বা একটি ‘ডোভ’। পরিশেষে আমরা ‘ডোভদের সাথে ‘হকদের’ বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল একটি অনুপাত পাই। ব্যবহারিক পর্যায়ে, এর অর্থ হচ্ছে যে জিনপুলে ‘ডোভ’ জিনের সাথে ‘হক’ জিনগুলোর একটি স্থিতিশীল অনুপাত অর্জিত হবে। এই অবস্থাটির জিনগত কারিগরী নাম হচ্ছে ‘স্টেবল পলিমরফিজম’। যত দুর গণিতের সাথে জড়িত, একটি ঠিক সমতুল্য ‘ইএসএস’ আমরা অর্জন করতে পারি কোনো ‘পলিমরফিজম’ ছাড়া এভাবে। যদি প্রতিটি একক সদস্য’ সক্ষম হয় আচরণ করতে হয় “হকদের’ মত বা ‘ডোভদের মত প্রতিটি নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতায়, একটি ‘ইএসএস’ অর্জিত হতে পারে যেখানে সব একক সদস্যেরই ‘হকের মত আচরণ করার একই ‘সম্ভাবনা থাকবে, অর্থাৎ আমাদের সেই বিশেষ উদাহরণে: ৭/১২। ব্যবহারিক পর্যায়ে এর অর্থ হচ্ছে যে প্রতিটি একক সদস্য প্রতিটি প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করে একটি ‘র্যানডোম’ সিদ্ধান্ত নেবার মাধ্যমে, সেই বিশেষ ক্ষেত্রে সেকি ‘হকের মত আচরণ করবে, নাকি ‘ডোভের’ মত আচরণ করবে। র‍্যানডোম কিন্তু একটি ৭:৫ অনুপাত ‘হকদের অভিমূখে পক্ষপাতিত্ব করছে। খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, সিদ্ধান্তগুলো, যদিও হকের দিকে পক্ষপাতিত্ব করছে, সেটি হবার কথা র‍্যানডোমভাবে এমন অর্থে, যে কোনো এক প্রতিদ্বন্দ্বীর যেন কোনোভাবেই অনুমান করার কোনো উপায় না থাকে সেই নির্দিষ্ট প্রতিযোগিতায় তার বিপক্ষ ঠিক কিভাবে আচরণ করবে। যেমন, একটানা সাতটি যুদ্ধে ‘হকের’ মত আচরণ করা, তারপর পরের পাঁচটি যুদ্ধে পর পর ‘ডোভের’ মত আচরণ করা.. ভালো হবে না। যদি কোনো একক সদস্য এমন কোনো সরল অনুক্রম অনুসরণ করেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী খুব সহজে কৌশলটি বুঝে যাবে এবং তার সুযোগ নেবে। সাধারণ ধারাবাহিক এই পর্যায়ক্রমিক কৌশলের সুযোগ নেবার একটি পথ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ‘হকের’ মত আচরণ করা যখন আপনি জানবেন সে ‘ডোভের’ মত আচরণ করবে।

‘হক’ ও ‘ডোভের’ গল্প, অবশ্যই, খুবই সহজ সরল। এটি হচ্ছে একটি ‘মডেল’, এমন কিছু যা আসলে প্রকৃতিতে ঘটে না, কিন্তু এটি প্রকৃতিতে ঘটা নানা বিষয়গুলো বোঝার জন্যে বা কোনো ধারণা পাবার জন্য আমাদের সাহায্য করে। মডেল হতে পারে খুব সাধারণ, এটার মত এবং তারপরও উপযোগী মূল বিষয়টি বোঝার জন্য বা ধারণাটি অনুভব করার জন্য। সাধারণ মডেল বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে আর ধীরে ধীরে সেটি আরো জটিল হয়। যদি সব ঠিক মত কাজ করে, তাহলে তারা যতই বেশী জটিল হতে শুরু করবে তারা ততই বাস্তব পৃথিবী সদৃশ হতে শুরু করবে। ‘হক’ ও ‘ডোভ’ মডেলকে আরো বেশী বিস্তারিত করে গড়ে তোলা কাজটি শুরু করার একটি উপায় হচ্ছে আরো কিছু স্ট্রাটেজী সেখানে উপস্থাপন করা। ‘হক’ আর ‘ডোভ’ শুধুমাত্র একক সম্ভাবনা নয়, আরো জটিল একটি স্ট্রাটেজি যা মেনার্ড স্মিথ ও প্রাইস উপস্থাপন করেছিলেন, সেটি হচ্ছে ‘রিটালিয়েটর’ বা ‘প্রতিশোধ গ্রহনকারী।

একজন ‘রিটালিয়েটর’ প্রতিটি প্রতিযোগিতার শুরুতে ‘ডোভের’ মত খেলে, অর্থাৎ, ‘হকের মত সে সর্বস্ব নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে না বরং সেই ভয় দেখানোর প্রথাগত যুদ্ধ দিয়ে শুরু করে। যদি তার বিপক্ষ তাকে আক্রমণ করে, তখন অবশ্য সে পাল্টা আক্রমণ করে তার বদলা নেয়। অন্যভাবে বললে কোনো রিটালিয়েটর’ ‘হকের মত আচরণ করে যখন তাকে কোনো ‘হক আক্রমণ করে এবং ‘ডোভের মত আচরণ করে যখন তার প্রতিপক্ষ হয় একটি ‘ডোভ। যখন সে অন্য কোনো রিটালিয়েটরের মুখোমুখি হয় সে ‘ডোভের’ মত ব্যবহার করে। একজন ‘রিটালিয়েটর’ শর্ত স্বাপেক্ষে তার কৌশল নির্ধারণ করে। কারণ তার আচরণ নির্ভর করে তার প্রতিপক্ষের আচরণের উপর।

 আরো একটি শর্তাধীন কৌশুলী যাকে বলা হয় “বুলি। “বুলি’ ‘হকের মত আচরণ করে বেড়ায় যতক্ষণ না তাকে ‘হকের’ মতই কেউ পাল্টা আক্রমণ করে। তখন সাথে সাথেই সে পালিয়ে যায়। আরো একধরনের কৌশলী হচ্ছে ‘প্রোবার-রিটালিয়েটর’; একজন ‘প্রোবার-রিটালিয়েটর’ মূলত একজন রিটালিয়েটরের’ মত, কিন্তু মাঝে মাঝে সে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কোনো প্রতিযোগিতায় তার আচরণের তীব্রতা বাড়ায়, সে ‘হকের’ মত আচরণ ধরে রাখে, যদি তার প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতি আক্রমণ না করে। কিন্তু যদি এর বিপরীত, তার প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে, সে ‘ডোভের’ মত তার প্রথাগত ভয় দেখানোয় প্রত্যাবর্তন করে। আর যদি সে আক্রান্ত হয়, সেও যে কোনো সাধারণ ‘রিটালিয়েটরের’ মত পাল্টা আক্রমণ করে।

যদি এই পাঁচটি স্ট্রাটেজী যা আমি উল্লেখ করলাম তাদেরকে যদি পরস্পরের বিরুদ্ধে ছেড়ে দেয়া হয় একটি কম্পিউটার সিমুলেশনে, তাদের মধ্যে শুধু রিটালিয়েটর’, বিবর্তনভাবে স্থিতিশীল হিসাবে প্রমাণিত হয় (২)। “প্রোবার-রিটালিয়েটর’ প্রায় স্থিতিশীল। “ডোভ’ স্থিতিশীল নয়, কারণ কোনো ‘ডোভ’ পূর্ণ জনগোষ্ঠীতে অনুপ্রবেশ করবে ‘হক’ এবং ‘বুলিরা। হকও স্থিতিশীল নয়। কারণ ‘হকদের’ জনগোষ্ঠীতে অনুপ্রবেশ করবে ‘ডোভ’ ও ‘বুলিরা’। “বুলিরা’ স্থিতিশীল না, কারণ ‘বুলিদের’ জনগোষ্ঠীতে অনুপ্রবেশ করবে ‘হকরা। কোনো একটি রিটালিয়েটরদের’ জনগোষ্ঠীতে, অন্য কোনো স্ট্রাটেজীর অনুপ্রবেশ ঘটে না, কারণ অন্য কোনো স্ট্রাটেজী আসলে ‘রিটালিয়েটরদের চেয়ে বেশী ভালো কাজ করেনা। যদিও, ‘ডোভরা’ কোনো রিটালিয়েটর জনসংখ্যায় সমানভাবে ভালো থাকে। তার মানে হচ্ছে অন্য সব কিছু একই থাকলে, ‘ডোভদের’ সংখ্যা খুব ধীরে উপরের দিকে বাড়তে থাকতে পারে। এখন যদি ‘ডোভদের সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ কোনো একটি স্তর অবধি বেড়ে যায়, ‘প্রোবার-রিটালিয়েটর’ (এবং ঘটনাক্রমে, ‘হক’ এবং “বুলিরা’) ধীরে ধীরে সুবিধা পেতে শুরু করে কারণ তারা ‘ডোভদের সাথে ‘রিটালিয়েটরদের চেয়ে প্রতিযোগিতায় ভালো করে। প্রোবার রিটালিয়েটর’ নিজে, ‘হক’ ও ‘বুলির’ ব্যতিক্রম, প্রায় একটি ‘ইএসএস’, এই অর্থে যে, কোনো একটি প্রোবার-রিটালিয়েটর জনগোষ্ঠীতে, শুধু মাত্র অন্য আরেকটি স্ট্রাটেজী, রিটালিয়েটর ভালো করে এবং তাও শুধুমাত্র খানিকটা বেশী। যেমনটা আমরা আশা করতে পারি, ‘রিটালিয়েটর’ ও ‘প্রোবার-রিটালিয়েটরদের’ একটি মিশ্রণ সেখানে প্রাধান্য বিস্তার করে,হয়তো খুব সামান্য দুটি গ্রুপের মধ্যে দোদুল্যমানতাসহ, সংখ্যালঘু ‘ডোভদের ছোট একটি গ্রুপে দোদুল্যমানতাসহ। আরো একবার, আমাদের পলিমরফিজমের ভাষায় ভাবতে বাধ্য হতে হয় না, যেখানে প্রত্যেকটি সদস্য কোনো না কোনো একটি স্ট্রাটেজী ব্যবহার করে সবসময়। প্রতিটি সদস্য একটি জটিল মিশ্র স্ট্রাটেজী ব্যবহার করতে পারে, রিটালিয়েটর’, ‘প্রোবার-রিটালিয়েটর’ এবং ‘ডোভ।

এই তাত্ত্বিক উপসংহার সত্যিকারভাবে অধিকাংশ বন্য প্রাণীদের মধ্যে কি ঘটছে তার থেকে খুব বেশী দূরের না। আমরা এক অর্থে প্রাণীদের আগ্রাসনের ‘গ্লোভড ফিস্ট’ বা দস্তানা পরা হাত এর ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করলাম। অবশ্যই বিস্তারিত খুঁটিনাটি নির্ভর করছে সঠিক সংখ্যক নম্বর’ এর উপরে– যা দিয়ে বিজয়ীকে, আহত হওয়া, সময় নষ্ট এবং ইত্যাদি নানা পরিস্থিতিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এলিফ্যান্ট সীলদের ক্ষেত্রে কোনো কিছু জেতার পুরষ্কার হয়তো অসংখ্য স্ত্রী এলিফ্যান্ট সীলের হারেমের উপর প্রায় একচ্ছত্র আধিপাত্য করার অধিকার। এই যুদ্ধে জেতার পুরষ্কার তাই অবশ্যই মূল্যায়িত হয় খুব উঁচু হিসাবে। খুব অবাক হবার কোনো কারণ নেই যে সে কারণে যুদ্ধগুলো খুবই সহিংসতাপুর্ণ এবং গুরুতর আহত হবার সম্ভাবনাও অনেক বেশী। যুদ্ধে আহত হওয়া আর যুদ্ধে জিতার পর পাওয়া সুফলগুলো মূল্যের সাথে তুলনামূলক বিবেচনায় সময় নষ্ট করা মূল্য কম ধারণা করা হয়েছে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় কোনো একটি ছোট পাখির জন্য সময় নষ্ট করার মাশুল অত্যন্ত বেশী হতে পারে। কোনো একটি গ্রেট টিট যখন তার বাচ্চাদের খাওয়াবে, তখন প্রতিটি ত্রিশ সেকেন্ডে তাকে একটি করে শিকার ধরতে হয়, দিনের আলোর প্রতিটি মুহূর্ত তার জন্যে মহামূল্যবান। এইসব পাখিদের জন্যে এমনকি হক/হক যুদ্ধে অপেক্ষাকৃত কম সময় নষ্ট হওয়া হয়তো গুরুতর আহত হবার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ পরিগণিত হতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বর্তমানে প্রকৃতিতে এই সব প্রতিটি কৌশলের পরিণতির জন্যে সত্যিকার বাস্তবসম্মতভাবে নম্বর বন্টন করার বিষয়টি সম্বন্ধে আমরা খুবই কমই জানি (৩)। আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে এমন কোনো উপসংহার না টানার জন্য, যে ফলাফলগুলো শুধুমাত্র আমাদের কাল্পনিকভাবে পছন্দ করা নম্বরগুলোর উপর ভিত্তি করেই উপস্থাপন করা হয়েছে। সাধারণ যে উপসংহারটি আরো গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে যে ‘ইএসএস’ গুলো বিবর্তিত হতে থাকে, কোনো একটি ‘ইএসএস’ সবচেয়ে অনুকূল কৌশলের সমতুল্য নয়, যা কিনা কোনো গ্রুপ যৌথভাবে ষড়যন্ত্র করে অর্জন করতে পারে এবং সেই সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানটি বিভ্রান্ত করতে পারে।

অন্য আরেক ধরনের যুদ্ধ খেলার কথা মেনার্ড স্মিথ বিবেচনা করেছিলেন সেটি হচ্ছে war of attrition বা শক্তি ক্ষয়ের যুদ্ধ। কোনো একটি প্রজাতিতে এটি উদ্ভব হতে পারে বলে ভাবা যেতে পারে, যারা কখনো সহিংস দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় না, হয়তো বর্ম দিয়ে সুরক্ষিত কোনো প্রজাতি যাদের গুরুতর আহত হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই প্রজাতির মধ্যে সব দ্বন্দ্বের মীমাংসা হয় প্রথাগতভাবে নানা অঙ্গভঙ্গি করার মাধ্যমে। এবং প্রতিযোগিতা সবসময় শেষ হয় যখন একটি প্রতিদ্বন্দ্বী পিছু হটে যায়। জেতার জন্য এই প্রজাতির কোনো সদস্যকে শুধু তার জায়গায় আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে এবং প্রতিপক্ষের দিকে একটানা তাকিয়ে থাকতে হবে, যতক্ষণ না সে পিছু হটে। অবশ্যই ভয় দেখিয়ে কোনো প্রাণী অনির্দিষ্টকাল সময় অপচয় করতে পারে না, অন্য কোথাও করার জন্য আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। যে সম্পদের জন্য সে যুদ্ধ করছে সেটি হতে পারে খুব মূল্যবান, কিন্তু অসীমভাবে মূল্যবান না। এটির জন্য সীমিত একটি সময়ই শুধু খরচ করা যেতে পারে। এবং যেমন কোনো নিলামে বিক্রির সময়, প্রতিটি একক সদস্য শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমান টাকা তার পেছনে খরচ করার জন্য প্রস্তুত, সময় হচ্ছে দুজন ক্রেতার নিলামের বিনিময় মূল্য বা কারেন্সি।

মনে করুন, এরকম সব সদস্যরাই আগে থেকেই নির্ধারণ করে ঠিক কতটা সময় তারা কোনো একটি বিশেষ ধরনের ‘সম্পদ’, ধরুন, কোনো স্ত্রী সদস্যের জন্য ব্যয় করা যেতে পারে। কোনো একটি মিউট্যান্ট (পরিবর্তিত) সদস্য যে কিনা আরো অল্প খানিকটা দীর্ঘ সময় সেই কাজে ব্যয় করার জন্য প্রস্তুত, সে সবসময় সেখানে জয়লাভ করবে। সুতরাং স্ট্রাটেজী হিসাবে কোনো একটি নির্দিষ্ট মূল্যসীমা টিকিয়ে রাখাঁটি অস্থিতিশীল। এমনকি যদি সম্পদের মূল্য খুব সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যায় এবং সব সদস্যই সঠিক মূল্যটি দর হিসাবে প্রস্তাব করে, তারপও এই স্ট্রাটেজীটি অস্থিতিশীল। এই ম্যাক্সিমাম স্ট্রাটেজী অনুযায়ী দর ডাকা যেকোনো দুটি সদস্য এই সাথে হাল ছেড়ে দেয় এবং দুজনের কেউই সেই সম্পদটি পায় না! সুতরাং কেউই যদি শুরুতেই হাল ছেড়ে দেয়, প্রতিযোগিতার জন্যে অযথা সময় নষ্ট না করে, সে সময় বাঁচিয়ে লাভবান হয়। এই শক্তি ক্ষয়ের যুদ্ধ এবং সত্যিকারের নিলামের যুদ্ধের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে, মোটকথা, কোনো শক্তিক্ষয়ের যুদ্ধে ‘দুই প্রতিযোগীই মূল্য পরিশোধ করে তবে তাদের একজন সম্পদটি অর্জন করে। কোনো একটি জনসংখ্যায় যারা সবচেয়ে বেশী দাম প্রস্তাব করে, সেখানে শুরুতেই হাল ছেড়ে দেবার কৌশলটি সফল হবে এবং জনসংখ্যায় সেটি বিস্তার লাভে করবে। এর ফলশ্রুতিতে কিছু উপযোগিতা ধীরে ধীরে জমা হবে সেই সব সদস্যদের কাছে যারা সাথে সাথে হাল ছাড়ছেনা, বরং হাল ছেড়ে দেবার আগে কিছু সেকেন্ড তারা অপেক্ষা করে। আর এই স্ট্রাটেজী ভালোই পুরষ্কার দেয় যখন যুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে তাৎক্ষণিকভাবে হাল ছেড়ে দেয়া সদস্যদের বিরুদ্ধে এটি ব্যবহৃত হয়। নির্বাচন তখন ক্রমশ বাড়তে থাকা হাল ছেড়ে দেবার সময়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে আনুকুল্য প্রদর্শন করবে যতক্ষণ না এটি আরো একবার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায়, যে সর্বোচ্চ সীমানাটি কি হবে সেটি নির্ধারণ করে যে সম্পদের জন্য দ্বন্দ্ব হচ্ছে তার সত্যিকারের অর্থনৈতিক মূল্যের উপর।

আরো একবার, শব্দ ব্যবহারে, আমরা আমাদের জনসংখ্যায় দোদুল্যমানতার এই দৃশ্যকল্পটি বোঝার জন্য চেষ্টা করলাম। আরো একবার, গাণিতিক বিশ্লেষণ প্রদর্শন করে এটি সঠিক না। এটাই একটি বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশল। যাকে গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করে প্রকাশ করা যেতে পারে, কিন্তু এমন শব্দে এটি প্রকাশিত যে এটি দাঁড়ায় এমন কিছু, প্রতিটি সদস্য পূর্বে ভবিষ্যদ্বাণী। করা সম্ভব না এমন একটি সময় বেছে নেয়, যে কোনো নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য পূর্বধারণা করা সম্ভব না, অর্থাৎ সম্পদের সত্যিকার মূল্যে গড়পড়তার মূল্যের কাছাকাছি তার অবস্থান। যেমন ধরুন, যে সম্পদটির জন্য যুদ্ধ করছি সেটির আসল মূল্য হচ্ছে পাঁচ মিনিটের জন্য প্রদর্শনী। ইএসএস’ এর সেই পর্যায়ে, কোনো একটি নির্দিষ্ট সদস্য ৫ মিনিটের বেশীও চলতে পারে বা ৫ মিনিটের আরো কম হয়তো সে চালাতে পরে, বা সে এমনকি সঠিকভাবে ৫ মিনিটই ব্যয় করে। আসল বিষয়টি হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের বোঝার কোনো উপায় নেই সে আসলেই কতক্ষণ টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত।

অবশ্যই, এই শক্তি ক্ষয়ের যুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সদস্যরা কখন তারা হাল ছেড়ে দিচ্ছে সেই বিষয়ে আগে কোনো ধরনের আভাস দেবে না। কেউই যদি এই তথ্যটি লুকাতে ব্যর্থ হয়, সামান্যতম কোনো আভাস বা ইঙ্গিত তাদের গোপন তথ্যটি ফাস করে দেয়, যে হাল ছেড়ে দেবার জন্য সে চিন্তা শুরু করেছে, সে সাথে। সাথে সুযোগ বঞ্চিত হয়। ধরুন যদি, এই গোফ নাড়ানো বা শরীরের কোনো অঙ্গভঙ্গী পিছু হটার জন্যে নির্ভরযোগ্য একটি চিহ্ন হয়ে থাকে যে সে হাল ছেড়ে দিচ্ছে এক মিনিটের মধ্যে, তাহলে খুব সহজ একটি কৌশল থাকবে জেতার জন্য: যদি প্রতিপক্ষের গোফ নাড়ানো দেখা যায় তাহলে আরো এক মিনিট অপেক্ষা করা দরকার, হাল ছেড়ে দেবার জন্য অতীতে যে পরিকল্পনাই থাকুক না কেন আপনার, যদি আপনার প্রতিপক্ষের গোফ এখনও না কাপে এবং আপনি যদি এক মিনিট সময়ের মধ্যে থাকেন যখন আপনি নিজেই হাল ছেড়ে দেবার কথা ভাবছেন, এখনই হাল ছেড়ে দিন এবং আর কোনো সময় নষ্ট করবেন না, আপনার নিজেদের গোফ নাড়াবেন না কখনোই। সুতরাং প্রাকৃতিক নির্বাচন খুব দ্রুত গোফ নাচানো এবং অন্য কোনো সমরুপী আচরণ যা কারো পরিকল্পনা ফাস করে দেয় ভবিষ্যতের কোনো আচরণ সম্বন্ধে, সেগুলোকে শাস্তি দেয়, সুতরাং ভাবলেষহীন মুখ বা পোকার ফেস’ বিবর্তিত হবে।

কেন তাহলে পোকার ফেস, সরাসরি মিথ্যা বলা না কেন? আবারো, কারণ মিথ্যা স্থিতিশীল নয়। ধরুন, দেখা গেল বেশীর ভাগ সদস্য তাদের ঘাড়ের লোম খাড়া করে যখন তারা সত্যিকারভাবেই অনেক ক্ষণ ধরে শক্তি ক্ষয়ের যুদ্ধ চালাতে চায়। অবশ্যই এর বিপরীত কৌশল বিবর্তিত হবে: সেই সদস্যরা যারা সাথে সাথে হার স্বীকার করে যখন প্রতিপক্ষ তাদের ঘাড়ের লোম খাড়া করে, কিন্তু এখন, মিথ্যাবাদীরা হয়তো বিবর্তিত হতে শুরু করবে। সেই সব সদস্যরা যাদের আসলেই কোনো ইচ্ছা নেই দীর্ঘ সময় ধরে দ্বন্দ্ব করার, কিন্তু তারা তাদের ঘাড়ের লোম খাড়া করবে প্রতিবার এবং প্রতিবারই সহজ আর দ্রুত বিজয়ের সুফল ভোগ করবে। সুতরাং মিথ্যাবাদী জিনটি বিস্তার লাভ করবে। যখন মিথ্যবাদীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে, নির্বাচন তখন সেই সব সদস্যদের আনুকুল্যতা দেবে যারা তাদের ছলনাটি ধরতে পারে। সুতরাং মিথ্যাবাদীরা সংখ্যায় আবার কমে যাবে। শক্তিক্ষয়ের এই যুদ্ধে মিথ্যা কথা বলা সত্যি কথা বলার চেয়ে অধিকতর বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল না। ভাবলেশহীন মুখ বা পোকার ফেসই বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল। আত্মসমর্পন করুন, যখন এটি অবশেষে আসবে, খুব হঠাৎ করে হবে আর আর আগে থাকে যা ধারণা করা যায় না।

আপাতত আমরা শুধু সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি, যা মেনার্ড স্মিথ বলেছেন ‘সিমেট্রিক’ বা প্রতিসম প্রতিযোগিতা। এর মানে আমরা পূর্বধারণা করে নিয়েছি প্রতিযোগিরা সবাই একই রকম সব ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র তাদের যুদ্ধ করার কৌশল ভিন্ন। ‘হক আর ‘ডোভদের’ মনে করে নিয়েছি তারা সমপরিমান শক্তিশালী, এবং একই ভাবে তারা সুসজ্জিত নানা অস্ত্র আর বর্মে এবং বিজয়ী হলে তারা একই পরিমান সুফল পায়। কোনো একটি মডেল তৈরীর জন্য এটি সুবিধাজনক একটি ধারণা, কিন্তু বেশী বাস্তবসম্মত নয়। পার্কার ও মেনার্ড স্মিথ এর পর ‘অ্যাসিমেট্রিক’ বা অপ্রতিসম প্রতিযোগিতার কথা বিবেচনা করেন, যেমন, যদি সদস্যরা তাদের আকারে ও যুদ্ধ করার ক্ষমতায় ভিন্ন হয় এবং প্রতিটি সদস্য যদি তার নিজের তুলনায় তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের আকার মাপার মত দক্ষতা থাকে, সেটা কি’ইএসএস’ কে কোনোভাবে প্রভাবিত করে, যেটি বিবর্তিত হয়? অবশ্যই করে।

ধারণা করা হয় তিনটি প্রধান ধরনের এসিমেট্রি বা অসাম্যতা আছে। প্রথমটি আমরা কেবলই দেখলাম: সদস্যরা তাদের আকার আর যুদ্ধ করার অস্ত্রে ভিন্ন হতে পারে, দ্বিতীয়ত, সদস্যরা হয়তো ভিন্ন হতে পারে জেতার পরে তারা কতটা সুফল ভোগ করবে সেই ক্ষেত্রে। যেমন, একজন বৃদ্ধ মানুষ, যার বেশী দিন বেঁচে থাকার কথা না এমনিতেও, হয়তো অনেক কম কিছু হারাবার আছে যদি সে আহত হয়, কোনো একটি তরুণ পুরুষদের চেয়ে, যার অনেক বেশী প্রজনন জীবন পড়ে আছে।

 তৃতীয়ত, এই তত্ত্বটির অদ্ভুত একটি পরিণতি হচ্ছে যে, পুরোপরিভাবে মনগড়া, আপাতদৃষ্টিতে অপ্রাসঙ্গিক অপ্রতিসাম্যতা একটি ‘ইএসএস’ এর জন্ম দিতে পারে, কারণ এটি যে কোনো দ্বন্দ্ব দ্রুত নিরসনে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, সাধারণত যা ঘটে থাকে, কোনো একজন প্রতিযোগী প্রতিযোগিতার স্থানে আগে এসে উপস্থিত হয় অন্যদের তুলনায়। তাদের ডাকা যেতে পারে যথাক্রমে ‘রেসিডেন্ট বা স্থানীয় এবং “ইনট্রডার’ বা অনুপ্রবেশকারী। তর্কের খাতিরে, আমি ধরে নিচ্ছি যে, স্থানীয় কিংবা অনুপ্রবেশকারী হবার কারণে কেউই সাধারণত কোনো বাড়তি সুবিধা পাবে না। যেমনটা আমরা দেখবো পরে, খুব ব্যবহারিক কারণে আমরা বলতে পারি, কেন এই ধারণাটি সত্যি নাও হতে পারে, কিন্তু সেটি মূল বিষয় না। মূল বিষয়টি হচ্ছে যে, এমনকি যদি সাধারণ কোনো কারণ নাও থাকে যে অনুপ্রবেশকারীদের উপর স্থানীয়দের বাড়তি সুবিধা আছে, কোনো একটি ‘ইএসএস’ যা অপ্রতিসাম্যতার উপর নির্ভর করে, নিজেই সেটি বিবর্তিত হবার সম্ভাবনা থাকে। একটি খুব সাধারণ তুলনামূলক দৃষ্টান্ত হচ্ছে মানুষের ক্ষেত্রে, যারা দ্রুত কোনো তর্ক মিমাংসা করে কোনো বাড়তি ঝামেলা ছাড়া, কয়েন বা মুদ্রা টস করে।

শর্তসাপেক্ষে একটি কৌশল, আপনি যদি স্থানীয় হন, আক্রমণ করুন: আপনি যদি অনুপ্রবেশকারী হন, পালান, হতে পারে একটি ‘ইএসএস’, কারণ অপ্রতিসাম্যতা যা এখানে ধারণা করা হয়েছে সেটি মনগড়া, এর বিপরীত কৌশলটি: যদি আপনি স্থানীয় হন, প্রস্থান করুন, যদি অনুপ্রবেশকারী হন, তাহলে আক্রমণ করুন’ এটাও স্থিতিশীল হতে পারে। এই দুটোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে কোনটা গ্রহনযোগ্য হবে সেটা নির্ভর করবে কোনটি প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। যখনই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা এই দুটি শর্তাধীন কৌশলের যেকোনো একটিকে অনুসরণ করবে, সেই কৌশল থেকে যারা ভিন্ন, তারা শাস্তি পাবে। সেকারণে সংজ্ঞানুযায়ী, এটি একটি ‘ইএসএস’।

 যেমন, ধরুন সব সদস্যরা খেলছে, “স্থানীয়রা জিতবে, অনুপ্রবেশকারীরা পালাবে নিয়ম মেনে, এর মানে তারা তাদের অর্ধেক যুদ্ধ জিতবে আর অর্ধেক যুদ্ধ হারবে। তারা কখনোই আহত হবে না এবং তারা কখনোই সময় নষ্ট করবে না। কারণ সব দ্বন্দের মিমাংসা হচ্ছে দ্রুত খেয়ালমাফিক নিয়ম মেনে। এবার বিবেচনা করুন, একটি নতুন ‘মিউট্যান্ট’ বিদ্রোহী। ধরুন, সে বিশুদ্ধভাবে ‘হকদের’ স্ট্রাটেজী অনুসরণ করে, সবসময় আক্রমণ করছে, কখনোই পিছু হটে না। সে জিতবে যখন তার বিরোধীপক্ষ একজন অনুপ্রবেশকারী। যখন তার বিরোধীপক্ষ একজন স্থানীয়, তার গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হবার সম্ভাবনা আছে। সেই সব সদস্যদের তুলনায় গড়পড়তা তার লাভ হবে কম, যারা সেই ‘ইএসএস’ এর মনগড়া নিয়ম মেনে চলছে। কোনো একটি বিদ্রোহী সে এর বিপরীত নিয়মটি চেষ্টা করে, “যদি স্থানীয়, পালিয়ে যাও,যদি অনুপ্রবেশকারী, আক্রমণ করো, তারা আরো কম সুফল পায়। শুধুমাত্র যে প্রায়শই আঘাতপ্রাপ্ত হবে না, সে মাঝে মাঝে যুদ্ধেও জিতবেও। ধরুন যদিও, কোনো একটি ঘটনাচক্রে সেই সদস্যরা যারা এর বিপরীত নিয়মে খেলে, তারা কোনোভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারলো, এই ক্ষেত্রে তাদের কৌশলটি হবে স্থিতিশীল কোনো নর্ম বা সাধারণ প্রচলিত নিয়ম, এবং এর কোনো ব্যতিক্রম শাস্তি পাবে। বোধগম্যভাবে, যদি কোনো জনগোষ্ঠীকে আমরা বহু প্রজন্ম ধরে পর্যবেক্ষণ করি, আমরা ধারাবাহিক মাঝে মাঝে বিপরীতমুখী কৌশলকে ব্যবহার করতে দেখবো একটি স্থিতিশীল অবস্থা থেকে অন্য আরেকটি স্থিতিশীল অবস্থায়, যার রদবদল হয়।

যদিও বাস্তব জীবনে, সত্যিকারের খেয়ালমাফিক অপ্রতিসাম্যতার কোনো অস্তিত্ব নেই। যেমন, স্থানীয়দের অনুপ্রবেশকারীদের চেয়ে একটি বাড়তি সুবিধা পাবার প্রবণতা থাকে, তাদের স্থানীয় ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত ভালো ধারণা থাকে। কোনো একজন অনুপ্রবেশকারী হয়তো ক্লান্ত হয়ে প্রবেশ করে, পরে যুদ্ধক্ষেত্রে আসে অথচ সেখানকার সবসময়ই অবস্থান করছে স্থানীয়রা। আরো কিছু বিমূর্ত কারণও আছে কেন, এই দুটি স্থিতিশীল অবস্থার, স্থানীয়রা জেতে, অনুপ্রবেশকারীরা পিছু হটে’, প্রকৃতিতে এটি ঘটার সম্ভাবনা বেশী; সেটি হচ্ছে সেই বিপরীতমুখী কৌশলটির, “অনুপ্রবেশকারীরা জিতবে, স্থানীয়রা পিছু হটবে’- একটি আত্ম-ধ্বংস করার অন্তর্নিহিত প্রবণতা আছে- এটাই যা মেনার্ড স্মিথ বলবেন, একটি ‘প্যরাডক্সিকাল’ বা আপাতদৃষ্টিতে স্ববিরোধী একটি কৌশল। এই প্যরাডক্সিকাল ‘ইএসএস’ এ অবস্থান করছে এমন কোনো জনগোষ্ঠী, যারা সবসময়ই চেষ্টা করবে স্থানীয় হিসাবে ধরা না দিতে তারা সবসময়ই প্রতিটি যুদ্ধে নিজেদের অনুপ্রবেশকারী হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে; এবং নিরন্তর আর অন্যথায় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করার মাধ্যমে তারা এটি অর্জন করবে। অর্থহীনভাবে সময় ও শক্তির মূল্য পরিশোধ যা তাদের করতে হবে, সেটি ছাড়াও এই বিবর্তনীয় প্রবণতাটি, নিজেই, স্থানীয় শ্রেণীটির বিলুপ্তির কারণ হবে। কোনো একটি জনগোষ্ঠী যারা স্থিতিশীল পর্যায়ে বসে আছে, স্থানীয়রা জিতবে আর অনুপ্রবেশকারীরা পিছু হটবে, প্রাকৃতিক নির্বাচন সেই সব সদস্যকে আনুকুল্যতা দেবে যারা স্থানীয় হবার চেষ্টা করবে। প্রতিটি সদস্যের জন্য, এটি হচ্ছে কোনো একটি নির্দিষ্ট টুকরো মাটি আঁকড়ে ধরে থাকা, সেটিকে কদাচিৎ ছেড়ে যাওয়া, এবং সেটি সুরক্ষা করার প্রচেষ্টার একটি আপাতগ্রাহ্য রুপ। প্রদর্শন করা। যেমন, এখন এটি সবাই জানে, এমন আচরণ খুব সাধারণভাবে প্রকৃতিতে প্রায়শই দেখা যায় এবং এটি পরিচিত ‘টেরিটরিয়াল ডিফেন্স বা আঞ্চলিক সুরক্ষা নামে।

 এ ধরনের আচরণগত অপ্রতিসাম্যতার সবচেয়ে সুস্পষ্ট উদাহরণ যা আমি জানি সেটি ব্যাখ্যা করেছিলেন বিখ্যাত প্রানি-আচরণ বিজ্ঞানী নিকো টিনবার্গেন, তাঁর উদ্ভাবনী ও বুদ্ধিমত্ত্বাময় সরলতার বৈশিষ্ট্যসূচক একটি পরীক্ষার মাধ্যমে (৪)। তিনি এজন্য দুটি পুরুষ স্টিকলব্যাক মাছকে একটি মাছের ট্যাঙ্কে রাখেন। পুরুষ মাছ দুটি প্রত্যেকেই একটি করে ঘর তৈরী করে সেই ট্যাঙ্কের দুই বিপরীত প্রান্তে, এবং প্রত্যেকে তার এলাকা প্রতিরক্ষা করে, তার নিজের বানানো ঘরের আশে পাশের এলাকাটি। এরপর টিনবার্গেন দুটি পুরুষ মাছকে আলাদা আলাদাভাবে একটি কাঁচের টিউবে রাখন, এবং তিনি এই দুটি টিউবকে একে অপরের পাশাপাশি রাখেন এবং লক্ষ করেন পুরুষ মাছ দুটি কাঁচের টিউবের মধ্য দিয়েই পরস্পরের সাথে যুদ্ধ করার চেষ্টা করছে। এরপর আসে পরীক্ষার সবচেয়ে মজার অংশ, যখন তিনি এই দুটি টিউবকে পুরষ ‘ক’ মাছের ঘরের কাছে আনেন, ‘ক’ মাছটি আক্রমনাত্মক অবস্থান নেয় এবং ‘খ’ মাছটি পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু যখন তিনি টিউব দুটি পুরষ ‘খ’ এর বাসার কাছে নিয়ে আছে, ঠিক বিপরীত জিনিসটি ঘটে। শুধুমাত্র দুটি টিউব ট্যাঙ্কের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত নাড়াবার মাধ্যমে, টিনবার্গেন দেখাতে পেরেছিলেন কোন পুরুষটি আক্রমণ করে আর কোনটি সেই যুদ্ধ থেকে সরে আসে। দুটি পুরুষই সেই সাধারণ শৰ্তমূলক কৌশলটি অবলম্বন করে, ‘যদি স্থানীয়, আক্রমণ, যদি অনুপ্রবেশকারী, পলায়ন।

 জীববিজ্ঞানীরা প্রায়ই প্রশ্ন করেন, এই আঞ্চলিক প্রতিরক্ষার আচরণটির কি কিছু ‘জৈববৈজ্ঞানিক সুবিধা আছে? অসংখ্য মতামত ও প্রস্তাব আছে, তাদের কিছু পরে উল্লেখ করা হবে। কিন্তু আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি সেই প্রশ্নটাই আসলে বাহুল্য মাত্র হতে পারে। আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা হয়তো সাধারণভাবে একটি ‘ইএসএস’, যার উদ্ভব হয় কারণ সেখানে উপস্থিত হবার সময়ের অসাম্যতা যা সাধারণ কোনো এক টুকরো জায়গা দুটো একক সদস্যর সম্পর্ক নির্ধারণ করে।

প্রাণীদের আকার ও যুদ্ধ করার সাধারণ যোগ্যতা সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরনের খামখেয়ালী নয় এমন অপ্রতিসাম্যতার উদাহরণ হতে পারে। কোনো যুদ্ধে জেতার জন্য আকারে বড় হওয়া আবশ্যিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ নয়, কিন্তু সম্ভবত সেটি তাদের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ। যদি সবসময়ই দ্বন্দ্বরত দুই সদস্যদের মধ্যে যে আকারে বড় সে জেতে এবং যদি প্রতিটি সদস্য জানে নিশ্চিভাবে যে সে তার প্রতিপক্ষ থেকে আকারে বড় কিংবা ছোট, সেখানে একটি কৌশলই অর্থবহ হয়: “আপনার বিপক্ষ আপনার চেয়ে যদি বড় হয়, তাহলে প্রস্থান করুন সেখান থেকে, শুধু আপনার চেয়ে আকারে ছোট এমন কারো সাথে যুদ্ধ করুন। কিন্তু বিষয়টি আরো খানিকটা জটিলতর হয় যদি আকারের গুরত্ব অপেক্ষাকৃতভাবে অনিশ্চিৎ থাকে। যদি কোনো বড় আকৃতি আপনাকে অল্প কিছু সুবিধা দেয়, যে কৌশল আমি এই মাত্র উল্লেখ করলাম, সেটি তখনও স্থিতিশীল। কিন্তু যদি গুরুতর আহত হবার ঝুঁকি বেশী থাকে, সেখানে হয় আরো একটি প্যারাডক্সিকাল স্ট্রাটেজী থাকতে পারে। সেটি হচ্ছে, আপনার চেয়ে যারা আকারে বড় তাদের বেছে নিন যুদ্ধ করার জন্য, এবং আপনার চেয়ে যারা আকারে ছোট তাদের থেকে দূরে পালান’! খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে কেন এটিকে ‘প্যারাডক্সিকাল’ আপাত স্ববিরোধী কৌশল বলা হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণভাবে সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের বিপরীত। যে কারণে এটি স্থিতিশীল হবে সেটি হচ্ছে এটি:কোনো একটি জনগোষ্ঠী যা পুর্ণ শুধুমাত্র প্যারাডক্সিকাল কৌশুলীদের দিয়ে, কেউ কখনো আঘাতপ্রাপ্ত হয় না। এর কারণ প্রতিটি প্রতিযোগিতায়, একজন প্রতিযোগী, যে বড়, সবসময় পালিয়ে যায়। গড়পড়তা আকারের কোনো ‘মিউট্যান্ট’, যে যুক্তিসঙ্গত কোনো স্ট্রাটেজী নিয়ে খেলে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের প্রতিপক্ষ বাছাই করে, সে তার দেখা হওয়া অর্ধেক সদস্যদের সাথে গুরুতরভাবে তীব্র হয়ে ওঠা যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়ে। এর কারণ, যদি সে এমন কারো দেখা পায় তার চেয়ে আকারে ছোট, সে আক্রমণ করে, আকারে ছোট সদস্যরাও তীব্রভাবে এর প্রতি আক্রমণ করে, কারণ তিনি প্যারাডক্সিকাল খেলা খেলছেন; যদিও কাণ্ডজ্ঞান সম্পন্ন কোনো কৌশুলীর প্যারাডক্সিকাল কৌশুলীর চেয়ে যুদ্ধে জেতায় বেশী সম্ভাবনা থাকে, তাসত্ত্বেও তার হারার বা গুরুতর আহত হবার বেশী সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী প্যরাডক্সিকাল, কোনো বুদ্ধিমান কৌশুলীর কোনো একজন প্যারাডক্সিকাল কৌশুলীর চেয়ে আহত হবার অপেক্ষাকৃত বেশী সম্ভাবনা থাকবে।

এমনকি যদিও কোন প্যারাডক্সিকাল স্ট্রাটেজী স্থিতিশীল হতে পারে, সেটি সম্ভবত অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্ট বা গবেষণা খাতিরে কৌতূহল জাগাতে পারে মাত্র। প্যারাডক্সিকাল যোদ্ধারা শুধুমাত্র গড়পড়তার বেশী পুরষ্কার পায় যদি তারা বুদ্ধিমানদের তুলনায় সংখ্যা অনেক বেশী হয়। খুব কঠিন কল্পনা করা যে, শুরুতেই কিভাবে এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এমনকি যদি সেটি হয়ও,প্যারাডক্সিকাল এর সাথে কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্নদের অনুপাত জনসংখ্যায় শুধুমাত্র কিছুটা কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্নদের দিকে সরে যেতে হবে অন্য ‘ইএসএস’ এর ‘আকর্ষণীয় জোনটিতে পৌঁছাতে, সেই ‘সেন্সিবল স্ট্রাটেজী। আকর্ষণের জোনটা হচ্ছে পপুলেশন অনুপাতের একগুচ্ছ অনুপাত যেখানে, এই ক্ষেত্রে কোনো সেন্সিবল কৌশুলীরা কিছু বাড়তি সুবিধা আছে, যখনই জনসংখ্যা এই জোনটিতে পৌঁছায়, এটি সাথে সাথেই অবশ্যম্ভাবীভাবে জনগোষ্ঠীর অনুপাতকে ‘সেনসিবল’ স্থিতিশীল গন্তব্য-বিন্দুর দিকে নিয়ে আসে। আসলেই খুব উত্তেজনার ব্যপার হতো, যদি প্রকৃতিতে প্যারাডক্সিকাল ‘ইএসএস’ এর উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যেত, কিন্তু আমার সন্দেহ আমরা কি আসলেই পারি এমন কিছু আশা করতে?(আমি মনে হয় বেশী তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, এই শেষ বাক্যটি লেখার পর, অধ্যাপক মেনার্ড স্মিথ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, মেক্সিকোর একটি সামাজিক মাকড়শা প্রজাতি, ০ecobius civitas সংক্রান্ত জে. ডাবলিউ, বুরজেসের নিম্নে উল্লেখিত বিবরণটির প্রতি: ‘যদি একটি মাকড়শা কোনো কারণে বিরক্ত করা হয় এবং তার বিশ্রামের জায়গা থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়, এটি দ্রুত পাথরের উপর দিয়ে সরে যায় এবং কোনো খালি খাজে লুকোনোর জায়গার অভাবে, সে হয়তো অন্য আরেকটি একই প্রজাতির মাকড়শার লুকোনোর জায়গায় আশ্রয় খুঁজতে পারে। যদি অন্য মাকড়শাটি সেখানে উপস্থিত থাকে, যখন এই অনুপ্রবেশকারী সেখানে প্রবেশ করে, সে কোনো প্রতি আক্রমণ করে না, বরং দ্রুত নিজেই সেখান থেকে সরে যায় এবং তার জন্য অন্য একটি আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করে। এভাবে একবার যখন প্রথম মাকড়শাকে বিরক্ত করা হয়, এই ধারাবাহিকভাবে একটি মাকড়শার জাল থেকে অন্য একটি মাকড়শার জালে এই অবস্থান পরিবর্তনের ধারাটা চলতে থাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। প্রায়ই যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মাকড়শাকে একসাথে তাদের ঘর থেকে উৎখাত করে নতুন অজানা কোনো ঘরে আশ্রয় নেবার কারণ হয় (Social Spiders, Scientific American, March ১৯৭৬)}, আর ইতিপূর্বে উল্লেখ করা ধারণাটি অর্থে এটি প্যারাডক্সিকালই বটে (৫)।

কি হতে পারে সেই সদস্যদের ক্ষেত্রে যারা তাদের অতীত যুদ্ধের পরিণতি সংক্রান্ত কিছু স্মৃতি ধারণ করে? এটি নির্ভর করে এ-ধরনের স্মৃতিটি কি ‘সাধারণ’, নাকি খুব বেশী ‘সুনির্দিষ্ট। ক্রিকেট বা ঝিঁঝি পোকাদের একটি সাধারণ স্মৃতি আছে, অতীতের যুদ্ধে কি হয়েছিল তারা সেটি মনে রাখতে পারে। কোনো ঝিঁঝি পোকা যে কিনা সাম্প্রতিক কোনো সময়ে বহু যুদ্ধে জিতেছে, সে ‘হকের মত আচরণ করতে শুরু করে। আর যে ঝিঁঝি পোকাটি সম্প্রতি বেশ কয়েকবার হেরেছে, সে আচরণ করে ‘ডোভদের’ মত। খুব স্পষ্টভাবে এটি দেখিয়েছিলেন আর, ডি, আলেক্সান্ডার। তিনি একটি নকল ঝিঁঝি পোকা ব্যবহার করেছিলেন আসল ঝিঁঝি পোকাদের যুদ্ধে হারানোর জন্য। এই আচরণের পর আসল ঝিঁঝি পোকারা অন্যান্য আসল ঝিঁঝি পোকাদের সাথে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে হারতে দেখা যায়। প্রতিটি ঝিঁঝি পোকাকে তার জনগোষ্ঠীতে গড়পড়তা সদস্যদের তুলনায় ভাবা যেতে পারে সারাক্ষণই সে তার যুদ্ধ করার যোগ্যতাকে হালনাগাদ করছে। যদি ঝিঁঝি পোকার মত কোনো প্রাণী যারা তাদের অতীতে করা যুদ্ধের ফলাফলের একটি সাধারণ স্মৃতি নিয়ে কাজ করে, তাদের যদি কিছু সময়ের জন্য একটি আবদ্ধ গ্রুপ হিসাবে আটকে রাখা হয়, সেখানে প্রাধান্য বিস্তারের একটি পরম্পরা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে (৬)। কোনো একজন পর্যবেক্ষক একটি ক্রমানুসারে প্রতিটি সদস্যকে সাজাতে পারবেন। যারা নীচের স্তরের সদস্য তারা উপরের স্তরের সদস্যদের সাথে দ্বন্দ্বে সহজে পরাজয় মেনে নেয়। এমন কিছু মনে করার কোনো প্রয়োজন নেই যে প্রতিটি সদস্য একে অপরকে শনাক্ত করতে পারে। সেখানে যা ঘটে তাহলো, সদস্যরা যারা বিজয়ী হতে অভ্যস্ত তাদের বিজয়ী হবার আরো সম্ভাবনা বাড়বে। অন্যদিকে যে সদস্যরা, যারা হারতে অভ্যস্ত তারাও ক্রমেই আরো হারতে অভ্যস্ত হবে। এমনকি যে সদস্যরা যারা বিজয় বা পরাজয় দিয়ে শুরু করেছিল কোনো গবাধা নিয়ম না মেনে, তারা নিজেদের নানা স্তরে ক্রমানুসারে সাজিয়ে ফেলে। ঘটনাচক্রে এর প্রভাব হচ্ছে, সেই গ্রুপে কোনো গুরুতর যুদ্ধ হবার ঘটনা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।

আমাকে সেই বাক্যটি ব্যবহার করতে হবে, এক ধরনের প্রাধান্য বিস্তারের পরম্পরা’, কারণ বহু মানুষ প্রাধান্য বিস্তারের পরম্পরা শব্দটি ব্যবহার করেন সেই সব ক্ষেত্রে যেখানে একক সদস্যদের স্বীকৃতি সংশ্লিষ্ট থাকে। এই সব ক্ষেত্রে সাধারণ কোনো পরিস্থিতির বদলে অতীতের যুদ্ধের স্মৃতি খুব সুনির্দিষ্ট। ঝিঁঝি পোকারা তাদের নিজেদের আলাদা আলাদা সদস্য হিসাবে শনাক্ত করে না, কিন্তু মুরগী বা বানররা তা করতে পারে। যদি আপনি একটি বানর হন, যে বানরটি আপনাকে অতীতে কোনো যুদ্ধে হারিয়েছে, সে আপনাকে ভবিষ্যতেও হারাতে পারবে। একটি সদস্যের জন্য সবচেয়ে ভালো কৌশল হচ্ছে, কিছুটা ‘ডোভের মত আচরণ করা সেই সব সদস্যদের সাথে যারা ইতিপুর্বে তাকে হারিয়েছিল। যদি কোনো একদল মুরগী, পরস্পরের সাথে যাদের পূর্বে কখনো দেখা হয়নি, পরস্পরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়, সাধারণত তাদের মধ্যে বেশ যুদ্ধ হয়, কিন্তু কিছু সময় পর পারস্পরিক যুদ্ধের সংখ্যা কমে আসে। কিন্তু ঝিঁঝি পোকাদের মত একই কারণে না, যদিও। মুরগীদের ক্ষেত্রে এর কারণ প্রতিটি সদস্য অন্য সদস্য অপেক্ষা তার নিজের অবস্থানটি সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করে। এবং বিষয়টি ঘটনাচক্রে পুরো গ্রুপের জন্য ভালো, এবং এর নির্দেশক হিসাবে বিষয়টি লক্ষ করা হয়েছে মুরগীদের প্রতিষ্ঠিত গ্রুপের মধ্যে, যেখানে তীব্র কোনো সহিংস যুদ্ধ কদাচিৎ হয়ে থাকে, সেখানে ডিম উৎপাদনের সংখ্যা অন্য মুরগীর গ্রুপের চেয়ে অনেক বেশী, যেখানে তাদের সদস্য কাঠামো প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এর ফলশ্রুতিতে যেখানে সহিংসতা অনেক বেশী মাত্রায় সংঘটিত হয়।

জীববিজ্ঞানীরা প্রায়শই প্রাধান্য পরম্পরার যে জৈববৈজ্ঞানিক সুবিধা বা ফাংশনের কথা বলেন, সেটি হচ্ছে এটি কোনো গ্রুপের মধ্যে এটি প্রকাশ্য সহিংসতা হ্রাস করে। তবে, এটি মূল বিষয়টাকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করছে না। কোনো একটি প্রাধান্য পরম্পরাকে বলা যেতে পারে না যে বিবর্তনীয় অর্থে এর কোন কাজ আছে, কারণ এটি কোনো গ্রুপের বৈশিষ্ট্য, কোন একক সদস্যের কোনো বৈশিষ্ট্য নয়। একক সদস্যদের ব্যবহারের প্যাটার্ন, যা তাদের নিজেদের প্রকাশ করে প্রাধান্য পরম্পরা রুপে, যখন তাদের গ্রুপ পর্যায়ে দেখা হয়, হয়তো বলা যেতে পারে তার কিছু কাজ কাছে। তবে, ভালো হয় যদি এই ‘ফাংশন’ শব্দটি পুরোপুরি বাদ দেয়া যায় এবং বিষয়টি নিয়ে ESS (ইএসএস)-এর ভাষায় অপ্রতিসম কোনো প্রতিযোগিতার কথা ভাবা যায়, যেখানে একক সদস্যরা পরস্পরকে চেনে এবং তাদের স্মৃতি আছে।

আমরা এতক্ষণ একই প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে যুদ্ধে কথা ভাবছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে তাহলে কি ঘটে? যেমনটি আমরা এর আগে দেখেছিলাম, ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির সদস্যরা পারস্পরিকভাবে অপেক্ষাকৃত কম প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের একই প্রজাতির সদস্যদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রকৃতির তুলনায়। আর একারণে আমাদের আশা করা উচিৎ সম্পদের কারণে তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বিতর্ক হবে এবং আমাদের প্রত্যাশাটাও সঠিক হয়। যেমন, রবিন অন্য রবিনদের বিরুদ্ধে তাদের আধিপাত্য এলাকা প্রতিরক্ষা করে, কিন্তু গ্রেট-টিটদের বিরুদ্ধে নয়। কোনো একটি বনভুমিতে কেউ চাইলে একক রবিন সদস্যদের আধিপাত্য করার এলাকার মানচিত্র আঁকতে পারবেন এবং এই একই ম্যাপের উপর প্রতিটি গ্রেট টিট পাখির আধিপাত্য করার এলাকা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে। দুই প্রজাতির এলাকা কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম না মেনেই একে অপরের এলাকায় অনুপ্রবেশ করে। অন্য কোনো গ্রহেও সেটা হতে পারে।

কিন্তু আরো উপায় আছে যেখানে কোনো একক সদস্যদের স্বার্থ ভিন্ন প্রজাতির সদস্যদের স্বার্থের সাথে তীব্রভাবে সাংঘর্ষিক হয়। যেমন, কোনো একটি সিংহ অ্যান্টিলোপের শরীর খেতে চায়, কিন্তু অ্যান্টিলোপদের তাদের শরীর নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিকল্পনা আছে। সাধারণত এটিকে কোনো সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা হিসাবে গণ্য করা হয়না কিন্তু যৌক্তিকভাবে এটিকে প্রতিযোগিতা হিসাবে না দেখতে পারাটা কিন্তু কঠিন। এখানে যে সম্পদের কথা বলা হচ্ছে সেটি হচ্ছে ‘মাংস’। সিংহের জিন ‘মাংস’ চাইছে খাদ্য হিসাবে তাদের সারভাইভাল মেশিনের জন্য। অ্যান্টেলোপের জিন ‘মাংস’ চাইছে তার শরীরের কাজের জন্য, এবং তার নিজের সারভাইভাল মেশিনের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য। মাংসের এই দুটি ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন, পারস্পরিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, সুতরাং সেখানে স্বার্থের সংঘাত আছে।

নিজের প্রজাতির সদস্যরাও মাংস দিয়ে তৈরী। তাহলে স্বজাতি ভক্ষণ বা ক্যানিবালিজম এত দূর্লভ কেন? আমরা যেমনটি দেখেছিলাম ব্ল্যাক হেডেড গালদের ক্ষেত্রে, পূর্ণবয়স্ক সদস্যরা মাঝে মাঝে সেখানে নিজেদের প্রজাতির শিশু সদস্যদের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু তারপরও পূর্ণ বয়স্ক কোনো মাংসাশী প্রাণীকে সক্রিয়ভাবে খাদ্য বানানো ইচ্ছায় তার নিজের প্রজাতির কোনো পুর্ণবয়স্ক প্রাণীদের তাড়া করতে দেখিনা। কেন নয়? আমরা এখনও এত বেশী অভ্যস্ত প্রজাতির জন্য কল্যাণকর’ এই শর্তাধীন বিবর্তন সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবতে যে, আমরা পায়শই খুবই যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন করতে ভুলে যাই, যেমন, ‘কেন সিংহরা তাহলে অন্য সিংহদের শিকার করেনা”? আরো একটি ভালো প্রশ্ন হচ্ছে জিজ্ঞাসা করা, যা কদাচিৎ আমরা জিজ্ঞাসা করি, সেটি হচ্ছে, পাল্টা আক্রমণ করার বদলে কেনই বা অ্যান্টিলোপরা সিংহ থেকে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে?

কেন সিংহরা অন্য সিংহদের শিকার করেনা তার কারণ তাদের জন্য সেটি করা বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল স্ট্রাটেজী বা ‘ইএসএস’ হবে না। স্বজাতি-ভক্ষণ বা ক্যানিবলিজম কৌশল হবে খুব অস্থিতিশীল, সেই একই কারণে, আমাদের আগের উদাহরণে যে কারণে ‘হক’ কৌশলটি অস্থিতিশীল। কারণ পাল্টা আক্রমণে বিপদের আশংকা সেখানে অনেক বেশী। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে এটি ততটা সত্যি না হবার সম্ভাবনা বেশী, সেকারণে অনেক বেশী প্রাণী, যারা শিকার হয় অন্য প্রাণীদের, তারা পালিয়ে বেড়ায় প্রতিআক্রমণ না করে। সম্ভবত এর উৎস হচ্ছে মূলত সেই বাস্তব সত্যটি, দুটি ভিন্ন প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে একটি অন্তর্নিহিত অপ্রতিসাম্যতা টিকে থাকে, যা একই প্রজাতির সদস্যেদের মধ্যে থাকা অসাম্যতার চেয়ে অনেক বেশী। যখনই কোনো প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী অসাম্যতা থাকে, ‘ইএসএস’ খুব সম্ভবত শর্তসাপেক্ষ কোনো কৌশল হয় যা অপ্রতিসাম্যতার উপর নির্ভর করে। কোনো কৌশল যেমন: “যদি আকারে ছোট, পালিয়ে যাও, যদি বড় আকারের, আক্রমণ করো’ এর সমতুল্য কোনো কৌশল বিবর্তিত হবার খুব সম্ভাবনা আছে ভিন্ন প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্বে, কারণ বহু ধরনের অসাম্যতা সেখানে বিদ্যমান। সিংহ আর অ্যান্টিলোপরা বিবর্তনীয় বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে এক ধরনের স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে, যা প্রতিযোগিতার মূল অপ্রতিসাম্যতাকে ক্রমবর্ধিষ্ণুভাবে আরো প্রকট করেছে। তারা তাদের কৌশল, যথাক্রমে, পিছু ধাওয়া ও পালিয়ে বাঁচার প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত দক্ষতা অর্জন করেছে। কোনো পরিবর্তিত (মিউট্যান্ট) অ্যান্টিলোপ, সিংহদের বিরুদ্ধে যে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পাল্টা আক্রমণ করার কোনো কৌশল গ্রহন করে, সে অপেক্ষাকৃত কম সফল হবে সেই অ্যান্টিলোপটি থেকে, যে কিনা সিংহকে দেখে দিগন্তের ওপারে দৌড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।

আমার একটি অনুমান যে, কোনো এক সময় আমরা অতীতের দিকে তাকিয়ে ‘ইএসএস’ ধারণাটির আবিষ্কারকে ডারউইনের পর বিবর্তন তত্ত্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসাবে দেখবো (৭)। এটি প্রযোজ্য সবক্ষেত্রে যেখানে আমরা স্বার্থের সংঘাত খুঁজে পাই এবং তারমানে প্রায় সব জায়গায়। প্রাণি-আচরণ বিদ্যায় শিক্ষার্থীদের ‘সামাজিক সংগঠনের মত কিছু নিয়ে আলোচনা করার অভ্যাস করতে হবে। প্রায়শই কোনো একটি প্রজাতির সামাজিক সংগঠনকে তাদের একটি একক সত্তা হিসাবে ভাবা হয়ে থাকে, যাদের নিজেদের জৈববৈজ্ঞানিক সুবিধা আছে। একটি উদাহরণ আমি ইতিমধ্যেই দিয়েছিলাম, সেটি হচ্ছে ‘ডমিনেন্স হায়ারার্কি’ বা ‘প্রাধান্য পরম্পরা। আমি বিশ্বাস করি এই গোপন গ্রুপ সিলেকশনবাদী ধারণাগুলোকে আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব, যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জীববিজ্ঞানীদের বক্তব্যে আমরা পাই, যখন তারা সামাজিক সংস্থাগুলো নিয়ে কথা বলেন। মেনার্ড স্মিথের ‘ইএসএস’ এর ধারণাটি আমাদের সক্ষম করেছে, প্রথমবারের মত, স্পষ্টভাবে দেখাতে, কিভাবে একগুচ্ছ স্বতন্ত্র স্বাধীন স্বার্থপর সত্তাগুলো সুসংগঠিত একটি একক কোনো সত্তা সদশ আচরণ করতে পারে। আমি মনে করি প্রজাতির সামাজিক সংগঠনের মধ্যেই শুধুমাত্র এটি সত্যি নয়, বরং বহু প্রজাতি সম্বলিত কোনো ইকোসিস্টেম বা কমিউনিটিতেও এটি সত্যি। দীর্ঘমেয়াদীভাবে, আমি আশা করি, ‘ইএসএস’ ধারণাটি ইকোলজী বিজ্ঞানে বিপ্লবের সূচনা করবে।

আমরা এটিকে আরো একটি বিষয়ে প্রয়োগ করতে পারি, যে বিষয়টি আমি তৃতীয় অধ্যায়ের আলোচনায় স্থগিত রেখেছিলাম। এটিও এসেছে নৌকা প্রতিযোগিতার নৌকা-চালকদের তুলনামূলক উদাহরণ থেকে (যারা কোনো শরীরে থাকা জিনদের প্রতিনিধিত্ব করে), যাদের প্রয়োজন ভালো ‘টিম স্পিরিট। জিনরা নির্বাচিত হয়, একক বিচ্ছিন্ন ভাবে তারা “ভালো’ সে কারণে না, বরং তারা ‘ভালো’ কারণ জিনপুলে থাকা অন্যান্য জিনদের প্রেক্ষাপটে তারা ‘ভালো’ কাজ করতে পারে। কোনো একটি ‘ভালো’ জিনকে অবশ্যই, অন্যান্য সব জিনদের সাথে সংগতিপুর্ণ ও পরিপুরক হতে হয়, যাদের সাথে সুদীর্ঘ একটি সময় ধারাবাহিকভাবে নানা শরীরে তাকে সহাবস্থানে থাকতে হয়। কোনো গাছের পাতা পিষ্ট করার উপযোগী দাঁত তৃণভোজী প্রজাতির জিনপুলে একটি ‘ভালো’ জিন, কিন্তু কোনো মাংশাসী প্রাণীর জিনপুলে এটি খারাপ’ একটি জিন।

একটি সুসংগতিপুর্ণ জিনদের সন্নিবেশ কল্পনা করা সম্ভব, যারা নির্বাচিত হয় একটি ইউনিট’ হিসাবে। তৃতীয় অধ্যায়ে প্রজাপতির মিমিক্রি বা অনুকরণের উদাহরণে, এটাই ঠিক ঘটে, কিন্তু ‘ইএসএস’-এর ধারণার শক্তি হচ্ছে এটা এখন আমাদের দেখতে সক্ষম করে তুলেছে, কিভাবে একই ধরনের ফলাফল বিশুদ্ধভাবে স্বাধীন জিনের স্তরে অর্জন করা যেতে পারে। একই ক্রোমোজোমে জিনদের সংযুক্ত থাকতে হবে এমন কোনো আবশ্যিকতা নেই।

নৌকাবাইচের অনুরুপ উদাহরণ আসলেই এই ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে যথেষ্ট নয়। এর সবচে নিকটবর্তী যে তুলনায় আমরা আসতে পারি সেটি হচ্ছে, ধরুন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, সত্যিকারের কোনো সফল নৌকাবাইচ দলের সদস্যরা তাদের ভাষা ব্যবহার করে কাজ সুসমন্বয় করে, আরো খানিকটা ভাবুন যে, কোনো একটি নৌকা চালকদের পুল বা সমষ্টি, যেখান থেকে কোচ সবচেয়ে আদর্শ টিমটি নির্বাচন করতে পারবেন, তারা কেউ শুধু ইংরেজী ভাষায় কথা বলে, আর কেউ কেউ শুধু জার্মান ভাষা জানেন। ইংরেজীভাষীরা জার্মানভাষীদের চেয়ে নিয়মমাফিকভাবে খারাপ নৌকাচালকও না আবার ভালো নৌকাচালকও না। কিন্তু যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে শুধু ইংরেজীভাষী অথবা শুধু জার্মানভাষী দলের চেয়ে মিশ্র ভাষাভাষীদের দল অপেক্ষাকৃত কম প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়।

কোচ বিষয়টি অনুধাবন করেননি, তিনি যেটা করেন তাহলে প্রতিটি দলের সদস্যদের বহু বার অদল বদল করেন, এবং প্রতিবার বিজয়ী নৌকার দলের প্রতিটি সদস্যদের জন্য ক্রেডিট পয়েন্ট” দেবার ব্যবস্থা করেন, আর কম পয়েন্ট দেন সেই নৌকার দলের সবাইকে যারা হারছে। এখন যদি বাছাই করার জন্য যে খেলোয়াড়রা তার কাছে আছে, সেই পুলটি যদি ইংরেজী ভাষাভাষীরা প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে, তাহলে কোনো একটি শুধু জার্মানভাষী যে সেই নৌকায় ওঠে, নৌকাটি হারার জন্য তার সম্ভাব্য ভূমিকা থাকতে পরে, কারণ সেখানে খেলোয়াড়দের পারস্পরিক সংযোগ হোঁচট খাবে। এর বিপরীত, যদি সেই পুলে জার্মানভাষীদের প্রাধান্য থাকে, শুধু ইংরেজীভাষী কেউ তাদের একটি দলে থাকলে সে নিজেকে পরাজিতদের দলেই আবিষ্কার করবে। তবে সেরা টিম বাছাই করার জন্য কোচের খেলোয়াড় অদল বদল করার প্রক্রিয়ার শেষে সর্বোপরি সেরা দল হবে দুটি স্থিতিশীল অবস্থার যে কোনো একটি– বিশুদ্ধ ইংলিশ অথবা বিশুদ্ধ জার্মান, কিন্তু কোনো মিশ্রণ নয়। উপরিভাবে মনে হতে পারে যে যেন কোচ পুরো একই ভাষাভাষীদের গ্রুপ নির্বাচন করেছেন ‘একক ইউনিট হিসাবে’, কিন্তু তিনি সেটা করেননি। তিনি আলাদা আলাদাভাবে নৌকাচালকদের প্রতিযোগিতা জেতার ক্ষমতা বাছাই করার মাধ্যমে সেটি করেছেন। কিন্তু যেটা ঘটে সেটি হলো কোনো একজন একক সদস্যের প্রতিযোগিতায় জয়ী হবার প্রবণতা অন্য সদস্যদের উপর নির্ভর করে, সে উপস্থিত আছে সেই প্রার্থীদের পুলে। সংখ্যালঘু প্রার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই শাস্তি পায়, তারা যে খারাপ নৌকা চালায় সে কারণে না, বরং শুধুমাত্র তারা সংখ্যালঘু সে কারণে। একইভাবে, বাস্তব সত্য হচ্ছে যে জিনরা তাদের পারস্পরিক সুসংগতিপূর্ণতার কারণে নির্বাচিত হয়, আবশ্যিকভাবে তার মানে এমন নয় যে, আমাদের ভাবতে হবে যে, এক গ্রুপ জিন নির্বাচিত হয়েছে ইউনিট হিসাবে, যেমনটি হয় প্রজাপতির ক্ষেত্রে। একক জিন পর্যায়ে নীচু স্তরের নির্বাচন উঁচু পর্যায়ের নির্বাচনের ধারণা দিতে পারে।

এই উদাহরণে, নির্বাচন সাধারণ প্রথাগত নিয়ম মানাকে সহায়তা করে। আরো বিশেষভাবে, জিনরা নির্বাচিত হতে পারে কারণ তারা একে অপরের পরিপুরক। তুলনামূলক উদাহরণের ভাষায়, ধরুন কোনো একটি আদর্শ আর ভারসাম্যপুর্ণ দল হবে চার জন ডানহাতি ও চারজন বাহাতি সমন্বয়ে। আবারো মনে করুন যে কোচের এই সত্যটি সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই, তিনি অন্ধভাবে দলের সদস্য নির্বাচন করলেন শুধুমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে, এখন যদি প্রার্থীদের পুলে প্রাধান্য বিস্তার করে ডান-হাতিরা, কোনো একজন বা-হাতির বাড়তি সুবিধা পাবার কথা, যে কোনো নৌকায় তার উপস্থিতি বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়াবে এবং আপাতদৃষ্টিতে তাকে দক্ষ নৌকাচালক মনে হবে। এর বীপরিতে, যদি পুলে বা-হাতিরা প্রাধান্য বিস্তার করে, কোনো ডান-হাতির সেখানে বিশেষ সুবিধা পারে। এই কেসটি অনুরুপ কোনো ‘হকের ক্ষেত্রে যেমন, যে ভালো করে কোনো ‘ডোভ’ জনগোষ্ঠীতে এবং ‘ডোভ’ ভালো করে কোনো ‘হক’ জনগোষ্ঠীতে। পার্থক্যটা হচ্ছে সেখানে আমরা কথা বলছি একক শরীরগুলো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ে স্বার্থপর মেশিন– কিন্তু এখানে আমরা কথা বলছি, অনুরুপ তুলনামূলক উদাহরণ ব্যবহার করে, শরীরের মধ্যে থাকা জিনদের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে।

কোচের অন্ধভাবে নির্বাচন করা নৌকা চালকরা অবশেষে দেখা যাবে আদর্শদল হবে, যেখানে চারজন বাহাতি আর চার ডানহাতি থাকবে। দেখে মনে হবে যেন সে তাদের একটি সম্পূর্ণ, ভারসাম্যপূর্ণ ইউনিট হিসাবে একসাথে নির্বাচন করেছে। আমি মনে করি এটি আরো বেশী মিতব্যয়ী মনে হবে তাকে এমন ভাবা যে– সে আরো নীচের স্তরে নির্বাচনে কাজ করে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পর্যায়ে। বিবর্তনীয় স্থিতিশীল কোনো অবস্থা (স্ট্রাটেজী এখানে ভুল ইঙ্গিত করবে এ-প্রসঙ্গে) চার ডানহাতি বা চার বাহাতির উদ্ভব হবে শুধুমাত্র নীচু স্তরে আপাতদৃষ্টিতে মেধার উপর ভিত্তি করে নির্বাচনের মাধ্যমে।

 জিনপুল হচ্ছে জিনদের দীর্ঘমেয়াদী পরিবেশ। ‘ভালো’ জিনগুলো অন্ধভাবেই নির্বাচিত হয়, যারা জিনপুলে টিকে থাকে সেই ভাবে। এটি কোনো তত্ত্ব না, এটা কোনো পর্যবেক্ষিত বাস্তব সত্য নয়: এটা একটি টটোলজী বা অর্থহীন পুনরাবৃত্তি। কৌতূহল জাগানো প্রশ্নটি হচ্ছে, একটি জিনকে ভালো বানায় আসলে কোন জিনিসটি। প্রাথমিক একটি ধারণা হিসাবে আমি বলেছিলাম যেকোনো একটি জিন, সারভাইভাল মেশিন, শরীর তৈরীর ক্ষেত্রে তার যোগ্যতার ভিত্তিতে ভালো হয়। আমাদের এখন এই বাক্যটি খানিকটা সংশোধন করতে হবে। জিনপুল রূপান্তরিত হবে ‘বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল জিনদের’ সেট হিসাবে, যা সংজ্ঞায়িত করা হয় জিনপুল হিসাবে যেখানে কোনো নতুন জিন অনুপ্রবেশ করতে পারবেনা। বেশীর ভাগ নতুন জিন যাদের উদ্ভব হয়, পরিব্যক্তি (মিউটেশন) বা পুনঃবিন্যাস (রিঅ্যাসর্টমেন্ট) বা অভিবাসনের (ইমিগ্রেশন) মাধ্যমে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের ছাকুনীতে তারা দ্রুত বাতিল হয়ে যায়: বিবর্তনীয় স্থিতিশীল জিনদের সেটটি পুনর্বহাল হয়। মাঝে মাঝে একটি নতুন জিন সেই সেটে অনুপ্রবেশ করতে সফল হয়: এটি জিনপুলে বিস্তার লাভ করতে সফল হয়। একটি অস্থিতিশীল অন্তবর্তীকালীন পর্ব সৃষ্টি হয় যার পরিসমাপ্তি ঘটে নতুন বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল জিনের সেট তৈরী করার মাধ্যমে– সামান্য কিছুটা বিবর্তন সংঘটিত হয়েছে। আগ্রাসন কৌশলের সমরুপ উদাহরণ অনুসারে, কোনো জনগোষ্ঠীর হয়তো একাধিক বিকল্প স্থিতিশীল পয়েন্ট আছে এবং এটি হয়তো কখনো কখনো পারে একটি থেকে অন্যটিতে পরিবর্তিত হতে। ক্রমশ বিবর্তন হয়তো সেরকম বেশী মাত্রায় স্থিতিশীল ধাপে ধাপে উপরে ওঠা না, যেখানে সুস্পষ্ট আলাদা আলাদা ধাপ আছে একটি স্থিতিশীল কোন সমতল স্তর থেকে অন্য একটি স্থিতিশীল সমতল অবধি (৮)। দেখে মনে হতে পারে যে পুরো জনগোষ্ঠী একসাথে এমনভাবে আচরণ করছে যেন কোন একটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত ইউনিট, কিন্তু এই বিভ্রমটি তৈরী করে নির্বাচন, যা কাজ করে একক জিনদের স্তরে। জিনগুলো নির্বাচিত হয় তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী, কিন্তু যোগ্যতাকে বিচার করা হয় ‘বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল এক সেট জিনের প্রেক্ষাপটে’ জিনটি কেমন কাজ করে তার উপর ভিত্তি করে, যেটি বর্তমান জিনপুল।

পুরো একক সদস্যদের মধ্যে আগ্রাসী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার উপর নজর দিয়ে, মেনার্ড স্মিথ বিষয়টি খুব সুস্পষ্ট করে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ‘হক শরীর’ আর ‘ডোভ শরীরের’ স্থিতিশীল একটি অনুপাতের কথা ভাবা খুবই সহজ, কারণ শরীর আকারে একটি বড় জিনিস যা আমরা দেখতে পারি। কিন্তু এ-ধরনের কোনো জিনদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যারা ভিন্ন ভিন্ন’ শরীরে বাস করে আসলেই ডুবে থাকা হিমশৈলের উপরিভাগ মাত্র। জিনদের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার একটি বিশাল অংশ, যা বিবর্তনীয় স্থিতিশীল সেটের জিনদের মধ্যে সংগঠিত হচ্ছে– জিনপুল– সেটি একক সদস্যর শরীরে ‘অভ্যন্তরে’ ঘটে। এই সব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখা বেশ কঠিন, কারণ সেটি ঘটে কোষের মধ্যে, বিশেষ করে বিকাশমান ভ্রণের কোষে। সুসংগঠিতভাবে সৃষ্ট শরীরদের অস্তিত্ব আছে কারণ তারা বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল এক সেট স্বার্থপর জিনের সৃষ্টি।

কিন্তু আমাকে অবশ্যই পুরো প্রাণীদের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গে ফিরে আসতে হবে, যা এই বইয়ের মূল বিষয়। আগ্রাসন বোঝার জন্য, সুবিধাজনক একটি উপায় হলো প্রতিটি একক সদস্য প্রাণীকে স্বতন্ত্র স্বার্থপর মেশিন হিসাবে ভাবা। এই মডেলটি ভেঙ্গে পড়ে যখন সংশ্লিষ্ট একক সদস্যরা নিকটাত্মীয়– ভাই ও বোন, কাজিন, পিতামাতা ও সন্তান। এর কারণ তারা গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ পরিমান জিন ভাগাভাগি করে। সুতরাং প্রতিটি স্বার্থপর জিনের সেহেতু আনুগত্য ভাগ হয়ে যায় ভিন্ন ভিন্ন শরীরে। পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা সেটি আলোচনা করবো।

নোটস (অধ্যায় ৫)

(১) আমি এখন কোনো একটি ‘ইএসএস’-এর মূল ধারণাটি আরো মিতব্যায়ীতার সাথে ব্যাখ্যা করতে চাই। “ইএসএস’ হচ্ছে একটি স্ট্রাটেজী যা এর নিজের অনুলিপিগুলোর বিপক্ষে ভালো করে। আর এর যৌক্তিকতা হচ্ছে এরকম। কোনো একটি সফল কৌশল হচ্ছে সেটি, যা জনগোষ্ঠীতে প্রাধান্য বিস্তার করে। সুতরাং এটি এর নিজের অনেক অনুলিপির মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা থাকবে। সেকারণে এটি তার সফলতা ধরে রাখতে পারবে না যদি সে তার নিজের অনুলিপিদের বিরুদ্ধে ভালোভাবে কাজ না করতে পারে। এই সংজ্ঞাটি মেনার্ড স্মিথ এর গাণিতিক সংজ্ঞার মত অতটা সুনির্দিষ্ট নয় আর এটি তার সংজ্ঞাকে প্রতিস্থাপিতও করতে পারবে না, কারণ আসলে এটি অসম্পূর্ণ। কিন্তু এর সেই গুণটি আছে, এটি ‘ইএসএস’ ধারণাটির সারসংক্ষেপকে সহজাত প্রবৃত্তিগত ধারণার মধ্যে ধারণ করতে পারে। ইএসএস’ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিন্তা করা এই অধ্যায়টি যে সময় লেখা হয়েছিল, সেই সময়ের তুলনায় এখন জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে এটি নিয়ে আলোচনা ব্যাপক হারে বেড়েছে। মেনার্ড স্মিথ নিজেই ১৯৮২ সালে অবধি এই নতুন অগ্রগতিগুলোর পর্যালোচনা করেছিলেন তার Evolution and the Theory of Games বইটিতে। জিওফ্রে পার্কার, এই ধারণাটির আরেকজন প্রথম সারির প্রতিবেদক, সাম্প্রতিক সময়ের আরো কিছু ভাবনা নিয়েও লিখেছেন রবার্ট অ্যাক্সেলরড তার The Evolution of Cooperation বইয়ে, এটি ‘ইএসএস’-এর তত্ত্বটি ব্যবহার করেছে। কিন্তু আমি সেটা এখানে আলোচনা করবো না, কারণ এই বইয়ে আমার নতুন দুটি অধ্যায়ের একটি, Nice guys finish first মূলত অ্যাক্সেলরডের গবেষণাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। এই বইটির প্রথম সংস্করণের পরে আমার নিজের ESS সংক্রান্ত লেখা মূল একটি প্রবন্ধ Good Strategy or Evolutionarily Stable Strategy? এবং ডিগার ওয়াস্পদের নিয়ে একটি যৌথ প্রবন্ধ যা আমি নীচে আলোচনা করেছি।

 (২) এই বক্তব্যটি, দুঃখজনকভাবে ভুল। মেনার্ড স্মিথ ও প্রাইসের মূল প্রবন্ধটিতেই ভুলটি ছিল এবং আমি এই অধ্যায়ে তার পুনরাবৃত্তি করেছিলাম এবং খানিকটা সম্প্রসারিত করেছি বরং বোকার মত একটি প্রস্তাব দিয়ে যে, পোবার-রিটালিয়েটর হচ্ছে একটি প্রায়’ ‘ইএসএস’, (যদি কোনো স্ট্রাটেজী একটি প্রায় ‘ইএসএস’ হয়, তাহলে এটি ‘ইএসএস’ নয় এবং অন্যান্য কৌশল সেখানে অনুপ্রবেশ করবেই)। রিটালিয়েটর বা প্রতিশোধগ্রহনকারী কৌশল দেখতে উপরিভাবে একটি ‘ইএসএস’, কোনো একটি রিটালিয়েটর জনসংখ্যায় আর কোনো স্ট্রাটেজী ভালো করে না। কিন্তু ‘ডোভরা’ একই রকম ভালো করে কারণ কোনো একটি রিটালিয়েটর জনসংখ্যায়, ‘রিটালিয়েটরদের আচরণ থেকে তাদের আচরণ অভিন্ন। ডোভা’ তাই সেই জনগোষ্ঠীতে ধীরে ধীরে ঢুকতে পারে। কিন্তু তারপর যা ঘটে সেটাই হলো সমস্যা। জে, এস, গেল, ও রেভারেন্ড এল, জে, ইভস একটি গতিময় কম্পিউটার সিমুলেশন করেছিলেন যে তারা একটি মডেল প্রাণীর জনগোষ্ঠীকে বহু সংখ্যক প্রজন্মের বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যান। তারা দেখান যে এই কম্পিউটার গেমে সত্যিকারের ‘ইএসএস’ আসলেই ‘হক’ আর ‘বুলিদের একটি স্থিতিশীল মিশ্রণ। শুরুর দিকের ‘ইএসএস’ প্রবন্ধগুলোয় এটাই শুধু একমাত্র ভুল না, যা এই ধরনের কোনো ডায়নামিক উপস্থাপনা উন্মোচন করেছে। আমার নিজের একটি ভুলের সুন্দর উদাহরণ অধ্যায় ৯ পরবর্তী নোটে আমি আলোচনা করেছি।

(৩) আমাদের কাছে এখন মাঠ পর্যায়ে ভালো কোনো কিছুর জন্য মূল্য পরিশোধ ও তার বিনিময়ে সুবিধা পাওয়া বা কস্ট বেনেফিট বিশ্লেষণ সংক্রান্ত পরিমাপ ও উপাত্ত আছে, যা কোনো একটি নির্দিষ্ট ‘ইএসএস’ মডেলের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল। অন্যতম একটি ভালো উদাহরণ এসেছে উত্তর আমেরিকার গ্রেট গোলডেন ডিগার ওয়াস্পদের মডেল থেকে। ডিগার ওয়াস্পরা হচ্ছে আমাদের জ্যামের পাত্রের কাছে হেমন্তের সময় আসা সামাজিক ওয়াস্পরা নয়, যারা মূলত বন্ধ্যা স্ত্রী ওয়াস্প, যারা তাদের কলোনীর জন্য পরিশ্রম করছে। কিন্তু প্রতিটি স্ত্রী ডিগার ওয়াস্পকে এককভাবে তার নিজের উপর ভরসা করে বাঁচতে হয়। এবং তার বেশ কয়েক প্রজন্মের লার্ভাদের জন্য আশ্রয় আর খাদ্য অনুসন্ধানে সে তার জীবনের বেশ বড় অংশ নিবেদন করে। সাধারণত, কোনো স্ত্রী ডিগার ওয়াস্প শুরু করে। মাটিতে একটি সরু গভীর গর্ত খোঁড়ার মাধ্যমে, যার একেবারে নীচে থাকে ভোলা একটি ফাপা জায়গা। এরপর সেই স্ত্রী ডিগার ওয়াস্পটিকে শিকার ধরতে বের হয় (ক্যাটিডিড কিংবা লং হর্ন গ্রাসহপারদের, যদি গ্রেট গোল্ডেন ডিগার ওয়াস্প হয়ে থাকে); যখন সে তার পছন্দ মত শিকার খুঁজে পায়, সেটিকে সে হুল ফুটিয়ে অবশ করে ফেলে, তারপর সেটিকে টেনে নিয়ে আসে মাটিতে তার করা সেই গর্তে। এভাবে মোট চার থেকে পাঁচটি ক্যাটিডিড সে জড়ো করে তার মাটির ঘরের মুখে, এরপর তাদের উপর ডিম পাড়ে ও গর্তটির মুখ বন্ধ করে দেয়। সেই ডিম থেকে প্রথমে লার্ভা বের হয়, তারা সেই অবশ কিন্তু জীবিত ক্যাটিডিডদের খাদ্য হিসাবে খায়। এখানে মূল বিষয়টি হচ্ছে তারা তাদের শিকারকে হত্যা করার বদলে নড়াচড়া করতে অক্ষম বা অবশ করে রাখে, এর ফলে তার শিকারটি পঁচে যায় না, বরং জীবিত অবস্থায় তার লার্ভারা ভিতর থেকে তাদের খায়, এবং তাদের মাংসটিও তাজা থাকে। এদের ও সম্পর্কযুক্ত আরেকটি প্রজাতি, ইখনিউমন (lchneumon) ওয়াস্পদের এই ভয়ঙ্কর পৈশাচিক আচরণ ডারউইনকে লিখতে প্ররোচিত করেছিল: ‘আমি নিজেকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছি না যে, কোনো কল্যাণময় দয়ালু ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ইখনিউমোনিডির মত কোনো কিছু পরিকল্পনা করে সৃষ্টি করতে পারেন যার একটাই সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য শুয়োপোকার জীবন্ত শরীরের ভিতর থেকে তারা খাদ্য গ্রহন করা। তিনি অবশ্যই একই ভাবে ফরাসী শেফদের উদাহরণও দিতে পারতেন, যারা লবস্টারদের স্বাদ অটুট রাখার জন্য তাদের জীবন্ত দগ্ধ করে। স্ত্রী ডিগার ওয়াস্পদের জীবনে আবার ফিরে আসি, মূলত তাদের জীবন কাটে একাকী, শুধুমাত্র একই এলাকা স্বাধীনভাবে বেশ কিছু স্ত্রী ডিগার ওয়াস্প তাদের ঘর বানায়। কিন্তু কখনো কখনো তারা একে অন্যের মাটির গর্ত ভাগাভাগি করে নেয় নতুন কোন গর্ত খোঁড়া ঝামেলা এড়াতে।

ডঃ জেন ব্রকম্যানকে বলা যেতে পারে ওয়াস্পদের জেন গুড়ল এর মত কেউ। তিনি আমেরিকা থেকে অক্সফোর্ডে, এসেছিলেন আমার সাথে কাজ করতে, তার সাথে তিনি নিয়ে এসেছিল বিশাল পরিমান রেকর্ড, প্রতিটি সদস্যকে আলাদা আলাদা করে শনাক্ত করা দুটি পুরো স্ত্রী ডিগার ওয়াস্পদের কলোনীর জীবনে যা কিছু ঘটেছে, তার লিপিবদ্ধ ইতিহাসসহ তার রেকর্ড এতটাই সম্পূর্ণ ছিল যে প্রতিটি একক ওয়াস্পদের সময়-বাজেট সুস্পষ্টভাবে হিসাব করা সম্ভব ছিল। সময় অর্থনৈতিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে একটি ভোগ্যপণ্য: জীবনের কোনো একটি অংশে যতটা বেশী সময় ব্যয় করা হয়, অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য ততটাই কম সময় পাওয়া যায়। অ্যালান গ্রাফেন আমাদের দুজনের সাথে যোগ দেন এবং আমাদের শিখিয়েছিলেন কিভাবে সময়-মূল্য ও প্রজনন সুবিধার বিষয়টি সঠিকভাবে ভাবতে হয়। আমরা প্রমাণ পেয়েছিলাম, একটি সত্যিকারের মিশ্র ‘ইএসএস’ এর, স্ত্রী ডিগার ওয়াস্পদের নিউ হ্যাঁম্পশায়ার কলোনীতে সেটি পাওয়া গেলেও, মিশিগানের ডিগার ওয়াস্প জনগোষ্ঠীতে আমরা তেমন কিছু খুঁজে পাইনি। সংক্ষেপে বললে, নিউ হ্যাঁম্পশায়ার ওয়াস্পরা হয় তারা নিজেদের গর্ত নিজেরা খোড়ে অথবা অন্য ওয়াস্পের খোঁড়া ঘর ব্যবহার করে। আমাদের ব্যাখ্যানুযায়ী ওয়াস্পরা সুবিধাপ্রাপ্ত হয় যখন তারা অন্য কারো বানানো ঘরে ঢোকে, যে ঘরটি এর মূল মালিকের দ্বারা পরিত্যক্ত ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য। যে গর্ত এর আগে থেকে দখল করা সেখানে ঢোকার কোনো অর্থ নেই, কিন্তু অনুপ্রবেশকারীর জানার কোনো উপায় নেই কোন ঘরটি দখল করা আর কোনটি পরিত্যক্ত। দ্বৈতভাবে কোনো একটি গর্তে বাস করারও ঝুঁকি থাকে তার জন্য, এবং এমনকি পরে সে তার বানানো ঘরে এসে দেখতে পারে তার সেই গর্ত অন্য কেউ বন্ধ করে দিয়েছে ডিম পেড়ে এবং তার সব কষ্টই ব্যর্থ হয়– এই সুযোগে অন্য কোন ডিগার ওয়াস্প সেখানে ডিম পেড়ে তার কষ্টের সুফলটি ভোগ করে। যদি কোনো একটি জনগোষ্ঠীতে বেশী মাত্রায় এই ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে, তাহলে ডিম পাড়ার মত যথেষ্ট গর্ত খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে, এবং দ্বৈতভাবে কারো সাথে সেই গর্ত ব্যবহার করার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এবং সে কারণে নিজের গর্ত নিজে খোঁড়াই তখন সুবিধাজনক স্ট্রাটেজী। এর বীপরিতে যদি বহু ওয়ারা গর্ত খুড়তে থাকে, তাহলে যথেষ্ট পরিমান গর্ত থাকবে যা অনুপ্রবেশকারীদের সেখানে ঢোকার সুযোগও বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং একটি সুনির্দিষ্টভাবে গর্তে অনুপ্রবেশ করার হারটির একটি হার থাকে, যেসময় গর্ত খোঁড়া আর কারো খোঁড়া গর্তে অনুপ্রবেশ করা সমানভাবে লাভজনক হয়। যদি এর প্রকৃত হারটি ক্রিটিকাল হারটির চেয়ে নীচে থাকে, প্রাকৃতিক নির্বাচন অনুপ্রবেশকারীদের সুবিধা দেয়, কারণ তখন অনেক বেশী পরিমান পরিত্যক্ত গর্ত থাকে দখল করার। আর যদি আসল হারটি ক্রিটিকাল হারের চেয়ে বেশী হয়, তাহলে ব্যবহার উপযোগী গর্তের সংখ্যা কম হয় এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন গর্ত করাকে সহায়তা করে। সুতরাং জনগোষ্ঠীতে একটি ভারসাম্য বজায় থাকে। বিস্তারিত এই গাণিতিক প্রমাণগুলো প্রস্তাব করে যে আসলে একটি সত্যিকারের মিশ্র ‘ইএসএস’ সেখানে বিদ্যমান। কোনো একটি জনগোষ্ঠীতে গর্ত খোঁড়ার আর অনুপ্রবেশ করার বিশেষজ্ঞ ওয়াস্প থাকার বদলে বরং দেখা যায় প্রতিটি একক ওয়াস্পেরই সম্ভাবনা থাকে গর্ত খোঁড়ার বা অনুপ্রবেশ করার। (৪) টিনবার্গেনের স্থানীয়রা সবসময় জয়ী হয় এই প্রপঞ্চটির আরো স্পষ্ট উদাহরণ এসেছে এন, ডব, ডেভিসের স্পেকলড উড প্রজাপতির নিয়ে গবেষণা থেকে। টিনবার্গেন তার গবেষণা করেছিলেন ‘ইএসএস’ তত্ত্বটি আবিষ্কার হবার বহু আগেই। আর আমার ‘ইএসএস’ ব্যাখ্যাটি যা প্রথম সংস্করণে আমি উল্লেখ করেছি, সেটি করা হয়েছে বর্তমানের তথ্যপুষ্ট হয়ে অতীত ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে। ডেভিস তার প্রজাপতি গবেষণাটি পরিকল্পনা করেছিলেন ‘ইএসএস’ তত্ত্বের আলোকে। তিনি লক্ষ করেছিলেন যে অক্সফোর্ডের কাছে ভাইথাম উডে প্রতিটি পুরুষ প্রজাপতিরা মাটি কিংবা কোথাও পড়া সূর্যের আলোর টুকরোগুলোকে পাহারা দেয়। স্ত্রী প্রজাপতিরা এই সুর্যের আলো পড়া জায়গাগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় সুতরাং এই সূর্যের আলো পড়া অংশগুলো খুবই মূল্যবান সম্পদ, যার জন্য যুদ্ধ করা যেতে পারে। কিন্তু সূর্যের আলোর টুকরোর সংখ্যার চেয়ে পুরুষদের সংখ্যা অনেক বেশী। এবং বাকী পুরুষরা গাছের পাতার চাদরে তাদের সুযোগের অপেক্ষা করে। পুরুষ প্রজাপতিদের ধরে এবং তাদের একটা পর একটা মুক্তি দেবার মাধ্যমে ডেভিস দেখান যে দুটি একক প্রজাপতি যাকে কোনো সূর্যের আলোর টুকরোয় প্রথম মুক্তি দেয়া হয়, দুজন সদস্যই তাকে সেই এক চিলতে রোদ্দুরের মালিক হিসাবে গণ্য করে। যে পুরুষটি সূর্যের আলোয় পূর্ণ টুকরোয় দ্বিতীয় এসে পৌঁছায় তাকে গন্য করা হয় অনুপ্রবেশকারী হিসাবে। সবসময় অনুপ্রবেশকারী, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া, দ্রুত তার পরাজয় স্বীকার করে নেয়, পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রথম যে প্রজাপতি সেখানে এসেছে তার হাতে ছেড়ে দেয়। সর্বশেষ চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসাবে, ডেভিস দুটো প্রজাপতিকে বোকা বানাতে সক্ষম হন, দুটো প্রজাপতিকে তিনি ভাবতে প্ররোচিত করেন যে, সেই আসল মালিক, অন্যজন অনুপ্রবেশকারী, এবং শুধুমাত্র এই পরিস্থিতিতে সত্যিকারভাবে গুরুতর আর দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ হয় তাদের মধ্যে। যাইহোক, এই সব ক্ষেত্রে যেখানে, সহজতরভাবে বোঝানোর জন্য, আমি বলছি এমনভাবে যে শুধু মাত্র এক জোড়া প্রজাপতি আছে, কিন্তু আসলেই পরিসংখ্যানগত যুক্তিযুক্ত এমন সংখ্যক প্রজাপতি জোড়া সেখানে ছিল অবশ্যই।

(৫) আরেকটি উদাহরণকে ভাবা যেতে পারে যা কোনো একটি প্যারাডক্সিকাল ‘ইএসএস’ এর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে তা লিপিবদ্ধ হয়েছে দি টাইমস পত্রিকায় লেখা জেমস ডসন এর লেখা একটি চিঠিতে (The Times, লন্ডন, ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭৭): ‘বেশ কয়েক বছর ধরে আমি লক্ষ করছি একটি ‘গাল পতাকা ওড়াবার স্তম্ভটি ব্যবহার করে আসছে, দূরে ভালো করে দেখার একটি অবস্থান বিন্দু হিসাবে, এবং অন্য কোনো ‘গাল’ যদি সেই ফ্ল্যাগপোলে তার বসার জায়গায় বসতে চায়, সে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া তার জন্য জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে, দুটির পাখির আকার যাই হোক না কেন। এই প্যারাডক্সিকাল স্ট্রাটেজীর সবচেয়ে সন্তোষজনক উদাহরণটি আমার জানা মতে হলো কোন স্কিনার বক্সে গৃহপালিত শূকররা। এই কৌশলটি স্থিতিশীল কোনো একটি ‘ইএসএস’ এর মত একই অর্থে। কিন্তু ভালো হয় যদি এটিকে ‘ইএসএস’ বা বিকাশ প্রক্রিয়াগতভাবে স্থিতিশীল কোনো কৌশল বলা হয়। কারণ বিবর্তনীয় সময়ের পরিবর্তে এটির উদ্ভব হয় প্রাণীদের নিজেদের জীবদ্দশায়। একটি স্কিনার বক্স হচ্ছে একটি যন্ত্র, যেখানে একটি প্রাণী তার নিজের জন্য খাদ্য খুঁজে পায় এটি বিশেষ লিভার বা সুইচ চাপার মাধ্যমে। কোনো একটি লিভার চাপলে, খাদ্য সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি বিশেষ ছিদ্র দিয়ে বক্সে প্রবেশ করে। পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানীরা কবুতর বা ইঁদুরদের ছোট স্কিনার বক্সে রেখে গবেষণা করতে অভ্যস্ত, যেখানে তারা খুব দ্রুত ছোট একটি লিভার বা সুইচ চাপতে শেখে, খাদ্য পুরষ্কার পাবার লোভে। শূকররা ও সেই একই জিনিস শিখতে পারে, তবে তাদের মত করে আকারে বড় করে বানানো কোনো স্কিনার বক্সে যেখানে বেশ মোটা বা তাদের নাকের সাহায্যে নাড়ানো সম্ভব একটি লিভার থাকে (আমি একটি গবেষণার ফিল্ম দেখেছিলাম। বহু বছর আগে, আমরা মনে আছে খুবই হেসেছিলাম। বি, এ, বল্ডউইন ও জি, বি. মিসী, তারা স্কিনার স্টাইতে শূকরদের ট্রেনিং দিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তারা একটি বিষয় যোগ করেছিলেন। স্টাই এর এক প্রান্তে ছিলো সেই স্নাউট বা শুকরের নাক চালিত লিভারটি, আর এটি থেকে যেখানে খাবারটি সরবরাহ করা হয় সেই ফুড ডিসপেন্সারটি ছিল অন্য আরেক প্রান্তে। সুতরাং শূকরটিকে লিভারটিতে চাপ দিতে হবে, তারপর খাবার পুরষ্কার পাবার জন্য অন্য প্রান্তে দৌড়ে যেতে হবে, তারপর আবার দৌড়ে লিভারের কাছে আসতে হবে, এভাবে চলতে থাকে। আপাতত সব ঠিক আছে, কিন্তু বাল্ডউইন ও মিসি এক জোড়া শূকরদের সেখানে রেখেছিলেন। এখন বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে একটি শূকর অন্য শূকরকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। ক্রীতদাস’ শূকরটি বার বার দৌড়ে গিয়ে লিভারটি চাপ দেবে আর ‘মনিব’ শূকরটি খাওয়া আসার টিউবের মুখের সামনে বসে থাকবে এবং খাওয়া আসার সাথে সাথে সে খেয়ে ফেলে। এক জোড়া শূকর আসলে একটি স্থিতিশীল মালিক-ক্রীতদাস। সম্পর্কে এসে থিতু হয় সেখানে। একজন দৌড়িয়ে কাজ করে অন্যজন মূলত বসে বসে খায়।

এখন প্যারাডক্সটি কি? মালিক বা ক্রীতদাস এই লেবেলটি দেখা গেছে পুরো উল্টা পাল্টা। যখনই একজোড়া শূকর এই স্থিতিশীল প্যাটার্নে থিতু হয়, যে শূকরা মালিক বা স্বার্থপর ব্যবহারীর ভুমিকায়। অবতীর্ণ হয়, সেই শূকরটি অন্য সব ভাবেই অধীনস্থের মতো আচরণ করে। তথাকথিত ক্রীতদাস শুকরটি, যে সব কাজগুলো করে, সে হচ্ছে সেই শূকর যে সাধারণত অন্যক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করে। যে কেউ যারা শূকর সম্বন্ধে জানেন তারা হয়তো আগে থেকে ধারণা করবেন এর বিপরীত, প্রাধান্য বিস্তারকারী কোনো শূকরেরই মালিকের ভুমিকায় থাকার কথা, আর অধস্তন শূকরের প্ররিশ্রমী কাজ করা ও কদাচিৎ খাদ্য খাবার কথা।

কিভাবে এই উল্টো, প্যারাডক্সিকাল বিষয়টি ঘটছে তাহলে? সহজ বিষয়টি বোঝা, একবার যখন আপনি স্থিতিশীল স্ট্রাটেজীর ভাষায় ভাববেন। আমাদের শুধু যেটা করতে হবে সেটি হচ্ছে ধারণাটি বিবর্তনীয় সময় থেকে মাত্রায় নামিয়ে বিকাশ বা ডেভেলপমেন্ট এর। সময়ে নিয়ে আসতে হবে, যে সময়-স্কেলে দুটি একক সদস্যর মধ্যে কোনো একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই কৌশল, যদি প্রাধান্য বিস্তারকারী, তাহলে খাবারের কাছে বসে থাকে, যদি অধস্তন হয় তাহলে লিভারের ওখানে কাজ করে, শুনতে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। কিন্তু সেটি স্থিতিশীল হবে না। অধস্তন কোনো শূকর, লিভারে চাপ দিয়ে, আবার সেখানে দৌড়ে আসতে হবে, যেখানে এসে সে দেখবে প্রাধান্য বিস্তারকারী শূকরটা খাওয়ার সেই নলটির মুখ বন্ধ করে রেখেছে, যাকে সেখান থেকে সরানো যাবে না। এবং অধীনস্থ শূকরটি খুব শীঘ্রই লিভার চাপা বন্ধ করে দেবে কারণ তার সেই আচরণ তাকে কখনোই পুরস্কৃত করে না। কিন্তু এবার বিপরীত স্ট্রাটেজী লক্ষ্য করুন যদি ‘প্রাধান্য বিস্তারকারী তাহলে লিভার নিয়ে কাজ করতে হবে, অধীস্থ, খাবারের নলের মুখে বসবে। এটি স্থিতিশীল হবে, এমনকি যদিও এর সেই প্যরাডক্সিকাল ফলাফল আছে যে অধীনস্থ শূকর বেশীর ভাগ খাওয়া পায়। যা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে সেখানে কিছু খাদ্য অবশিষ্ট থাকে প্রাধান্য বিস্তারকারী শূকরের জন্য যখন সে স্টাই এর অন্য প্রান্ত থেকে ছুটে আসে। আর যখনই সে খাবারের প্রান্তে আসে, তার কোনো সমস্যা হয়না অধস্তন শূকরটাকে খাদ্য আসার নলের মুখ থেকে সরিয়ে দিতে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেখানে খাদ্য আছে লিভারটি চাপার জন্য তার পুরষ্কার হিসাবে এবং নিজের অজান্তে তার অধস্তন শূকরকে সে খাওয়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। আর সেখানে সেই অধস্তন শূকরটির আলসেমী করে খাদ্যর টিউবের কাছে বসে থাকাও পুরস্কৃত হবে। সুতরাং পুরো স্ট্রাটেজী, যদি যে প্রাধান্য বিস্তারকারী সে ক্রীতদাসের মত আচরণ করে, এবং যদি অধস্তন, যে আচরণ করে মালিকের মত, তাহলে তারা পুরষ্কার পাবে আর সে কারণে কৌশলটি স্থিতিশীল থাকবে।

 (৬) টেড বার্ক, আমার তৎকালীন গ্রাজুয়েট ছাত্র, আরো প্রমাণ পেয়েছিলেন ঝিঁঝি পোকাদের মধ্যে, এই ধরনেরই ছদ্ম প্রাধান্য বিস্তারকারীদের প্রাধান্য পরম্পরার সিস্টেমের। তিনি দেখিয়েছিলেন একটি পুরুষ ক্রিকেটের কোন স্ত্রী ক্রিকেটকে প্রজনন সঙ্গী বানানো প্রচেষ্টা করার সম্ভাবনা বেশী থাকে, যদি সে খুব সম্প্রতি অন্য কোনো পুরুষের সাথে যুদ্ধে জিতে থাকে, একে বলা উচিৎ ‘ডিউক অব মার্লবরো ইফেক্ট’, প্রথম ডাচেস অব মার্লবরোর রোজনামচায় নিম্নলিখিত লেখা অনুযায়ী : ‘সন্মানিত ডিউক মহোদয় আজ যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন এবং আমাকে দুবার তৃপ্ত করেছেন তার বুট না খুলে। একটি বিকল্প নাম হয়তো প্রস্তাব করা যায় New Scientist ম্যাগাজিনের পুরুষালী হরমোন টেস্টোষ্টরনের মাত্রা সংক্রান্ত এই রিপোর্ট মোতাবেক; বড় ম্যাচ খেলার ২৪ ঘন্টা আগে টেষ্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যায়, এরপর বিজয়ীদের ক্ষেত্রে সেটি তার উচ্চ মাত্রা ধরে রাখে কিন্তু পরাজিত শরীরে মাত্রা কমে যায়।

 (৭) এই বাক্যটি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে, আমি সম্ভবত সমসাময়িক জৈববৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্রিকাগুলোয় ‘ইএসএস’ ধারণার প্রতি বিদ্যমান অবহেলার প্রতি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলাম, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। যেমন,এই শব্দটি কোথাও ব্যবহৃত হয়নি ই, ও. উইলসন এর বিশাল Sociobiology বইটিতে। আর অবহেলিত নয় এটি এবং আমি এখন আরো বেশী বিচক্ষণ এবং কম ইভানজেলিকাল দৃষ্টিভঙ্গি নিতে পারবো। আপনাকে আসলেই ‘ইএসএস’ এর ভাষা ব্যবহার করতে হবে না, যদি আপনি সুস্পষ্টভাবে চিন্তা করেন সবকিছু। কিন্তু পরিষ্কারভাবে চিন্তা করার জন্য একটি অত্যন্ত সহায়ক একটি দৃষ্টিভঙ্গি, বিশেষ করে সেই সব ক্ষেত্রে– যা ব্যবহারিকভাবে বলতে গেলে প্রায় সব ক্ষেত্রে– যেখানে বিস্তারিত জিনগত তথ্য এখনও আমাদের অজানা। মাঝে মাঝে বলা হয় যে ‘ইএসএস’ মডেলগুলো ধরে নেয় প্রজনন অযৌন, কিন্তু এই বাক্যটি ভ্রান্ত যদি মনে করার হয় অযৌন প্রজনন সম্বন্ধে কোনো ইতিবাচক কিছু বলছে যৌন প্রজননের বীপরিতে। সত্যিটা বরং হচ্ছে যে ‘ইএসএস’ মডেলগুলো জেনেটিক সিস্টেমের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখে না। এর পরিবর্তে তারা ধরে নেয় যে, খানিকটা কোনো অস্পষ্ট অর্থে, কোনো কিছু তার সদৃশ কোনো কিছুরই জন্ম দেয়। অনেক কারণে এই ধারণাটি যথেষ্ট না। আসলেই এর অস্পষ্টতা উপকারীও হতে পারে কারণ এটি আমাদের মনকে নিবদ্ধ করে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর উপর, বিস্তারিত খুঁটিনাটি সব ছাড়িয়ে, যেমন জিনগত প্রাধান্য বিস্তার, যা কোনো কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আসলেই অজানা, উঝঝ ভাবনাগুলো সবচেয়ে উপযোগী এর নেতিবাচক ভূমিকায়। এটি আমাদের সাহায্য করে তাত্ত্বিক ভুলগুলো এড়াতে যা অন্যথায় আমাদের প্ররোচিত করে।

(৮) সুপরিচিত তত্ত্ব পাংচুয়েটেড ইকুইলিব্রিয়াম এর ধারণাটি একভাবে প্রকাশ করার জন্য এই অনুচ্ছেদটি বেশ ভালো একটি সার সংক্ষেপ হতে পারে এখন। আমি লজ্জিত হচ্ছি বলতে যে, যখন আমি আমার ধারণাটি লিখেছিলাম, ইংল্যান্ডের অনেক জীববিজ্ঞানীর মত আমিও, এই তত্ত্বটি সম্বন্ধে পুরোপুরি অজ্ঞ ছিলাম, যদিও এটি প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় তিন বছর আগে, এরপর থেকে অবশ্য, যেমন, The Blind Watchmaker আমি কিছুটা শিশুসুলভ বিরক্তিও প্রকাশ করেছি– হয়তো একটু বেশী মাত্রায়– যেভাবে পাংচুয়েটেড ইকুইলিয়রিয়াম ধারণাটি যতটা না তার চেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যদি এটি কারো অনুভূতিকে আহত করে, আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তারা হয়তো লক্ষ করতে পারেন, অন্তত ১৯৭৬ সালে আমার হৃদয়টি ঠিক জায়গায় ছিল। ((পাংচুয়েটেড ইকুইলিয়ব্রিয়াম ধারণা বিবর্তন জীববিজ্ঞানে প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন স্টিফেন জে গ্যল্ড এবং নিল এলড্রেজ। তারা দাবী করেছিলেন যখন কোনো একটি প্রজাতি জীবাশ্ম রেকর্ডে আবির্ভূত হয়, প্রজাতিটি একটি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছায়, যখন নেট বিবর্তনীয় পরিমান খুব সামান্য সেই ভূতাত্ত্বিক রেকর্ডে।))

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *