১৩. জেরাম-৫২৫

১৩. জেরাম-৫২৫

সকাল ১০টা ৩৪ মিনিট।
হুলুহুলুই-আমলোজি প্রিজার্ভ
 জুলুল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা।

কাদা-মাটি দিয়ে বানানো কুঁড়েঘরে বসে আছে পেইন্টার ক্রো। ওর চারপাশে বিভিন্ন রকম ম্যাপ আর নকশা ছড়িয়ে আছে। পশুর মলের দুর্গন্ধ আর ধুলো ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। কিন্তু সুবিধে হলো জুলুদের এই ক্যাম্প থেকে ওয়ালেনবার্গ এস্টেটের দূরত্ব মাত্র দশ মিনিট।

রুটিন মোতাবেক নির্দিষ্ট সময় পর পর সিকিউরিটি হেলিকপ্টার ক্যাম্পের ওপর দিয়ে উড়ে এস্টেটের সীমানায় টহল দিচ্ছে। কিন্তু পলা কেইন ঘাগু মহিলা। হেলিকপ্টার থেকে কেউ যদি এই গ্রামের ওপর দিয়ে টহল দিয়ে যায় তাহলে এটাকে একটা সাধারণ জুলু গ্রাম ছাড়া আর কিছুই ভাববে না। কেউ ভুলেও চিন্তা করবে না জুলুদের একটা কুঁড়েঘরে এতবড় মিটিং হচ্ছে।

এখানে উপস্থিত সবাই বিভিন্ন তথ্য ও পরিকল্পনা জড়ো করেছে।

একসাথে বসে আছে পেইন্টার, অ্যানা ও গানথার। পেইন্টারের কনুইয়ের কাছে রয়েছে লিসা… আফ্রিকায় আসার পর থেকে ক্রোর সাথে লেগে রয়েছে সে। লিসার চেহারায় উদাসীন ভাব থাকলেও চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ ঠিকই ফুটে উঠেছে। ওদের পেছনে ছায়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে মেজর ব্রুকস। সে হোলস্টারে থাকা পিস্তলের ওপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

সাবেক গেম ওয়ার্ডেন খামিশি এখন ফাইনাল ডিব্রিফিং করবে। ওরা সবাই তার কথা শোনার জন্য মনোযোগী হয়ে আছে। তার সাথে এখানে চমক হিসেবে আরও একজন যোগ দান করেছে।

মনক।

পেইন্টারকে অবাক করে দিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত এক তরুণকে সাথে এনেছে মনক। ওদের দুজনকে এই ক্যাম্পে নিয়ে আসার কাজটা খামিশি করেছে। তরুণটিকে পাশের আরেকটি কুঁড়েঘরে রাখা হয়েছে, বিশ্রাম নিচ্ছে সে। তবে মনক বিশ্রাম নিতে যায়নি। মিটিঙে উপস্থিত থেকে পুরো ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেছে, প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, অজানা জিনিস জানিয়েছে।

এইমাত্র মনক একসেট প্রতীক আঁকা শেষ করল। সেগুলোর দিকে তাকালেন অ্যানা। তার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। কাঁপা হাতে কাগজটা তুলে নিয়ে বললেন, হিউগো হিরজফিল্ডের বইতে এগুলো পাওয়া গেছে?

 মনক মাথা নাড়ল। এবং সেই বুড়ো ভাম বিশ্বাস করে এগুলো নাকি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার পরবর্তী পরিকল্পনায় নাকি এগুলোর অনেক বড় ভূমিকা আছে।

পেইন্টারের দিকে তাকালেন অ্যানা। মূল ব্ল্যাক সান প্রজেক্টের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন ড. হিউগো হিরজফিল্ড। আপনার মনে আছে, আমি বলেছিলাম, হিউগো বিশ্বাস করতেন বেল-এর রহস্যের সমাধান করে ফেলেছেন তিনি। সেই বিশ্বাসের ওপর ভর করে শেষবারের মতো একটা পরীক্ষা চালিয়ে ছিলেন। একদম গোপনে, পরীক্ষার সময় শুধু নিজে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত সেই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল এমন একটা শিশুর জন্ম দেয়া, যেটা একদম নিখুঁত হবে। শিশুটির কোনোরকম সমস্যা থাকবে না, বাহ্যিক… অভ্যন্তরীণ… কোনো ধরনের সমস্যাই নয়। সূর্যের এক নিখুঁত বীরকিন্তু তার সেই পদ্ধতি… কীভাবে পরীক্ষাটা করেছিলেন… সেটা কেউ জানে না।

 আর তিনি তাঁর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে যে চিঠিটা লিখেছিলেন, বলল ক্রো, তাতে উল্লেখ ছিল, এমন কিছু একটা তিনি আবিষ্কার করেছেন যেটা তাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। একটা সত্য… যেটা এতটাই সুন্দর যে মেরে ফেলা যাচ্ছে না… আবার এতটাই দানবীয় যে মুক্তও করা যাচ্ছে না। যার ফলে তিনি সেই গোপন জিনিসটাকে প্রাচীন বর্ণমালার প্রতীক দিয়ে কোডে লুকিয়ে ফেলেন।

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অ্যানা। ব্যালড্রিক ওয়ালেনবার্গ খুবই আত্মবিশ্বাসী যে তিনি সেই কোড ভাঙতে সক্ষম। আর সেজন্যই তিনি আমাদের বেল ধ্বংস করে দিয়েছেন।

আমার মনে হয় বিষয়টা এত ছোট নয়, ক্রো বলল। আপনি এর আগে হয়তো ঠিকই বলেছিলেন। আপনার ওখানে থাকা বিজ্ঞানীরা বাইরের পৃথিবীর বিজ্ঞানযাত্রায় সামিল হতে চাচ্ছিল। সেটা রুখে দিতেই আপনাদের হিমালয়ের ক্যাসলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল ব্যালড্রিক। সফলতার এত কাছে এসে তিনি বাড়তি কোনো ঝামেলা কিংবা ঝুঁকি নিতে চাননি।

মনকের আঁকা ছবির দিকে তাকিয়ে অ্যানা বললেন, যদি হিউগো সাহেবের কথা সত্য ধরে নিই তাহলে তার কোডগুলো আমাদের এই অসুখের বিরুদ্ধে কাজে আসলেও আসতে পারে। বেল এখনও আমাদের এই দুরারোগ্য ব্যাধি সারিয়ে দিতে পারবে যদি আমরা এই কোড ভাঙতে পারি।

 আলোচনাটা বেশি কল্পনাপ্রবণ হয়ে যাওয়ায় লিসা বাস্তবসম্মত একটা কথা বলল। কিন্তু তার আগে আমাদেরকে তো ওয়ালেনবার্গদের বেল-এ ঢাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর নাহয় অসুখ সারার ব্যাপারটা ভাবা যাবে।

ভাল কথা, গ্রের কী খবর? মনক প্রশ্ন করল। আর সেই মেয়েটা?

চোখ-মুখ শক্ত করে রাখল ক্রো। গ্রে কী লুকিয়ে আছে নাকি ধরা পড়েছে, নাকি মারা গেছে সে-সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্যই নেই। এইমুহূর্তে কমান্ডার পিয়ার্স এখন দলছুট অবস্থায় আছে।

মনক মুখ হাঁড়ি করে বলল, আমি তাহলে আবার ফিরে যাই। খামিশির তৈরি করা ম্যাপ ধরে এগোলে ভেতরে ঢুকে যেতে পারব।

না। এখন আমাদের আর আলাদা হওয়া চলবে না। ডান কানের পেছনে মাথাব্যথা হওয়ায় সেখানে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে বলল পেইন্টার।

মনক ওর দিকে তাকাল।

 হাত নাড়িয়ে মনককে আশ্বস্ত করল গ্রে। কিন্তু মনক আশ্বস্ত হতে পারল না। বসের শারীরিক অবস্থা নিয়ে এখন মাথা ঘামাচ্ছে না ও। মনক ভাবছে, পেইন্টার কী সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? তার মানসিক অবস্থা কেমন? সন্দেহটা ওকে নাড়া দিল। পেইন্টার প্রকৃতপক্ষে এখন কতটা পরিষ্কারভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারছে?

অবস্থা বুঝে ক্রোর হাঁটুর ওপর হাত রাখল লিসা।

 আমি ঠিক আছি। লিসাকে নয় যেন নিজেকে বিড়বিড় করে শোনল ও।

আপাতত আলোচনায় ছেদ পড়ল। ঘরের দরজা খুলে যাওয়ায় বাইরের আলো আর তাপ দুটোই ঢুকল ভেতরে। সেইসাথে পলা কেইনও ঘরে প্রবেশ করলেন। তার পেছন পেছন একজন পূর্ণবয়স্ক জুলু তাদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে হাজির হলো। জুলুর বয়স ৬৫ হলেও চেহারায় সেভাবে বলিরেখা পড়েনি, পাথরের মতো শক্ত মুখ তার, মাথায় কোনো চুল নেই, একদম কামানো। পালকযুক্ত একটা কাঠের বস্তু তার হাতে শোভা পাচ্ছে। এছাড়াও একটা প্রাচীন অস্ত্র আছে তার সাথে। তবে অস্ত্রটা দেখে মনে হলো এটা যতটা না কাজের তারচেয়ে বেশি ঐতিহ্যমণ্ডিত।

অস্ত্রটা চিনতে পেরে উঠে দাঁড়াল ক্রো। ব্রাউন বিস, বলল ও। নেপোলিয়নিক যুদ্ধে এই পাথুরে অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল।

জুলুকে পরিচয় করিয়ে দিলেন পলা। ইনি হলেন মশি ডিগানা, জুলু প্রধান।

বয়স্ক জুলু চোস্ত ইংরেজিতে বললেন, সবকিছু তৈরি।

আপনার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ, সৌজন্যবোধ থেকে বলল ক্রো।

মশি একটু মাথা নেড়ে ধন্যবাদ গ্রহণ করলেন। তবে এই অস্ত্র আপনাদের জন্য নয়। আপনাদেরকে বর্শা-বল্লম ধার দেব। ব্লাড রিভারের ব্যাপারে ওদের সাথে আমাদের বিশেষ বোঝাপড়া আছে।

জুলুর কথার পুরোটা বুঝতে না পেরে পেইন্টার ভ্রু কুঁচকাল। পলা কেইন বিষয়টাকে খোলাসা করার জন্য মুখ খুললেন, কেপ টাউন থেকে ইংরেজরা যখন ডাচদেরকে বিতারিত করছিল তখন এখানে বিস্তর ঘটনা ঘটেছিল। অভিবাসী আর স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়েছিল তখন। ক্লোসা, পড়ো, সোয়াজি এবং জুলু সম্প্রদায়। ১৮৩৮ সালে, শাসকদের দ্বারা বাফেলো রিভারে জুলুরা বিশ্বাসঘাতকার স্বীকার হয়। হাজার হাজার জুলু প্রাণ হারিয়েছিল। ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিল ওরা। নির্দয়ভাবে নরহত্যা ছিল ওটা। তারপর থেকে বাফেলো রিভারকে ব্লাড রিভার বলে ডাকা হয়। অর্থাৎ, রক্তাক্ত নদী। আর সেই বিশ্বাসঘাতকতার নেতৃত্বে যিনি ছিলেন তার নাম পাইট ওয়ালেনবার্গ।

 প্রাচীন অস্ত্রটা পেইন্টারের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মশি বললেন, আমরা সেটা কখনও ভুলিনি।

পেইন্টারের মনে আর কোনো সন্দেহ রইল না সেই যুদ্ধে নিশ্চয়ই এই অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছিল। অস্ত্রটা গ্রহণ করল ও। খুব ভাল করেই জানে, অস্ত্রের এই হাতবদলের সাথে সাথে ওদের সাথে জুলুদের একটা সন্ধি-চুক্তি হয়ে গেল।

দুই পা আড়াআড়ি রেখে অবলীলায় বসে পড়ল মশি। আমাদেরকে অনেক পরিকল্পনা করে নিতে হবে।

পলা খামিশির দিকে মাথা নেড়ে একটা চাদর উঁচু করে ধরে বললেন, খামিশি, আপনার ট্রাক রেডি। তাউ আর নজঙ্গো ইতোমধ্যে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। হাতঘড়িতে একবার চোখ বুলালেন তিনি। তাড়াতাড়ি করতে হবে।

উঠে দাঁড়াল সাবেক গেম ওয়ার্ডেন। ওদের প্রত্যেককে যার যার দায়িত্ব রাতের মূল মিশনের নামার আগেই পালন করতে হবে।

মনকের সাথে পেইন্টারের চোখাচোখি হয়ে গেল। মনকের চোখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে। অবশ্য এই দুশ্চিন্তা পেইন্টারের জন্য নয়, এটা গ্রের জন্য। সূর্যাস্ত হতে আর ৮ ঘন্টা বাকি। আপাতত অন্ধকার না নামা পর্যন্ত অ্যাকশন নেয়ার কিছু নেই।

 ওদিকে গ্রে তো দলছুট হয়ে রয়েছে।

.

দুপুর ১২ টা ০৫ মিনিট।

মাথা নিচু করে রাখো, ফিসফিস করে ফিওনাকে বলল গ্রে।

হলের শেষপ্রান্তে থাকা গার্ডের দিকে এগোচ্ছে ওরা। গ্রের পরনে একটা ইউনিফর্ম, সাথে জ্যাকবুট আর কালো ক্যাপ, ক্যাপের ব্রিম চোখের ওপর নামানো। একটু আগে এক গার্ডকে অজ্ঞান করে গ্রে পোশাকটা বাগিয়ে নিয়েছে। উপরতলার এক বেডরুমের ক্লোজিটে গার্ডকে আটকে রেখে এসেছে ওরা।

শুধু ইউনিফর্মই নয় গার্ডের রেডিওটাও নিয়ে এসেছে গ্রে। কোমরের বেল্টের সাথে রেডিও রেখে একটা ইয়ারপিস ঢুকিয়েছে কানে। রেডিওতে যা কথা হচ্ছে সব ডাচ ভাষায়। অর্থ উদ্ধার করতে বেশ বেগ পেতে হলেও কোনমতে কাজ চলে যাচ্ছে আরকি। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।

গ্রের হায়ার আড়ালে থেকে এগোচ্ছে ফিওনা। ওর পরনে কাজের মেয়ের (মেইড) পোশাক। ক্লোজিটে গার্ডের শরীর রেখে আসার সময় পোশাকটা সংগ্রহ করেছে ওরা। মেইডের পোশাকটা একটু বড় হলেও তাতে শাপে বর হয়েছে। ফিওনার শরীরের আকার ও বয়স ঢাকা পড়ে গেছে ওতে। এস্টেটের ভেতরে যারা কাজ করে তাদের অধিকাংশই স্থানীয় এবং তাদের গায়ের রং বিভিন্ন রকমের কালো। আফ্রিকায় যেমনটা হয়ে থাকে। ফিওনার ত্বকের রং বাদামি-কফির মতো, মেয়েটা পাকিস্তানি, এখানকার জন্য বেশ মানিয়ে গেছে। মাথায় থাকা চ্যাপ্টা টুপির নিচে সোজা চুলগুলোকে লুকিয়ে রেখেছে ও। খুব কাছ থেকে না দেখলে ওকে যে কেউ স্থানীয় মেয়ে হিসেবে মেনে নেবে। ছদ্মবেশের মোলআনা পূর্ণ করতে মেয়েটা একটু বশ্যতামূলক ভঙ্গিতে হাঁটছে। হাঁটার ভঙ্গিতে একধরনের জ্বী হুজুর ভাব স্পষ্ট। কাঁধ নামিয়ে, মাথা নিচু করে হাঁটছে ফিওনা।

তবে ওদের ছদ্মবেশকে কোনো পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হলো না।

খবর ছড়িয়ে পড়েছে ফিওনা আর গ্রেকে জঙ্গলে দেখা গেছে। তাই সব গার্ড জঙ্গল, ভবনের বাইরে আর সীমান্তে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। মূল ভবনের এখানে একটা প্যাট্রল ছাড়া কেউ নেই।

এখানে সিকিউরিটি একটু ঢিলে হলেও বাইরে কোনো ফোন রাখেনি কেউ। ইসকির কি কার্ড ব্যবহার করে মূল ভবনের পেছন দিক দিয়ে ঢুকল ওরা। কয়েকটা ফোন পরীক্ষা করল গ্রে। সংযোগ পেতে হলে কোড করা সিকিউরিটি নেটের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। আর ওই নেট দিয়ে কথা বলতে যাওয়া মানেই নিজেদের অস্তিত্ব। প্রকাশ করে দেয়া।

হাতে বিকল্প রাস্তা একদম কম।

লুকিয়ে পড়া যেতে পারে। কিন্তু তারপর? শেষপর্যন্ত কী হবে? কে জানে, কবে 1 কিংবা কখন মনক এখানকার খবর নিয়ে বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছুতে পারবে? তাহলে পা আরও হিসেব করে ফেলতে হবে এখন। প্রথমেই এই অট্টালিকার নকশা দরকার। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, নিচ তলায় থাকা সিকিউরিটির ডেরায় হানা দিতে হবে। অস্ত্র বলতে গ্রের কাছে আছে একটা সাইডআর্ম আর ফিওনার পকেটে একটা হ্যান্ড টেজার।

সামনে হলের শেষপ্রান্তে বেলকুনিতে একজন সেট্রিকে দেখা যাচ্ছে। অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে মূল প্রবেশপথ পাহারা দিচ্ছে সে। গ্রে সেই সেন্ট্রির দিকে লম্বা লম্বা পা ফেলে এগোতে শুরু করল।

লোকটা বেশ লম্বা, চেহারার হাবভাবে শুকরের সাথে মিল আছে, বেশ লোভী বলে মনে হলো। মাথা নেড়ে সিঁড়ির দিকে এগোল গ্রে। ফিওনা ওকে অনুসরণ করল।

সবঠিক আছে। কোনো গোলমাল হলো না।

হঠাৎ লোকটা ডাচ ভাষায় কী যেন বলল। গ্রে কথাগুলো বুঝতে পারল না তবে একটু ভয় পেল। নিচুস্বরের হাসিও শোনা গেল কথার শেষে।

একটু ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে ফিরল গ্রে। দেখল, গার্ডটা ফিওনার পাছায় হাত দিয়ে চিমটি দিচ্ছে। কনুই ধরার জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরেক হাত।

ফিওনার সাথে এরকম আচরণ করা মোটেও উচিত হয়নি।

গার্ডের দিকে ফিরল ফিওনা। সর, হারামজাদা!

ওর স্কার্ট লোকটার হাঁটুর সাথে ঘষা খেল। পকেট থেকে নীল রঙের ঝলসানির কী যেন বের করে লোকটার উরুতে ঠেসে ধরল ও। চিৎকার করে লোকটা পিছু হটল।

গার্ড আছড়ে পড়ার আগেই গ্রে তাকে ধরে ফেলল। শরীরটাকে টেনে নিয়ে পাশের একটা রুমে রাখল ও। মেঝেতে শুইয়ে রশি দিয়ে বেঁধে রাখল।

ওরকম করলে কেন? ফিওনাকে প্রশ্ন করল।

পেছনে গিয়ে গ্রের পাছায় শক্ত করে চিমটি কাটল।

 অ্যাই! ফিওনার চিমটি খেয়ে গ্রে পেছন ফিরল।

 কেমন লাগল তোমার? রাগে ফিওনা অগ্নিশর্মা হয়ে আছে।

কথা সত্য। তারপরও গ্রে বলল, কিন্তু বারবার এই বেজন্মাদেরকে তো বেঁধে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না।

দুই হাত আড়াআড়ি রেখে দাঁড়াল ফিওনা। ওর চোখে একই সাথে ভয় ও রাগ দুটোই দেখা যাচ্ছে। অবশ্য সে এই মেয়েটার এরকম আচরণের জন্য দোষারোপও করতে পারছে না। নিজের চোখের ঐর ওপর জমা ঘাম মুছল গ্রে। এখন ওদের লুকিয়ে পড়াটাই ভাল হবে। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।

গ্রের রেডিও ঘড়ঘড় করে উঠল। মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করল ও। সিঁড়িতে ওরা যে ঘটনা ঘটিয়েছে সেটা কারও চোখে পড়ে যায়নি তো? রেডিওতে যা শুনতে পাচ্ছে সেটার অনুবাদ করল ও, … বন্দীকে… মূল দরজায় নিয়ে আসো…

আরও কথা হচ্ছে কিন্তু আসল কথা ঘ্নে শুনে ফেলেছে।

 বন্দী!

তার মানে একটাই হতে পারে।

মনককে ওরা ধরে ফেলেছে… ভয়ে ফিসফিস করল গ্রে।

আড়াআড়ি করে রাখা হাত দুটো ফিওনা এখন সোজা করল, বেচারি এখন সিরিয়াস।

চলো, দরজার দিকে এগোল গ্রে। ধরাশায়ী হওয়া গার্ডের কাছ থেকে রাইফেলটা নিলো ও।

 সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে ওরা। নিচে নামতে নামতে গ্রে ফিওনাকে প্ল্যানটা শুনিয়ে দিলো। এই সিঁড়ি ধরে ওরা নিচের হলের মূল প্রবেশপথে যাবে। নিচ তলা ফাঁকা, সামনে খোলা জায়গাও আছে।

পলিশ করা মেঝের ওপর দিয়ে পা ফেলে এগোচ্ছে ওরা। ওদের পা ফেলার শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

সামনের খোলা অংশের দিকে এগোল গ্রে। একটা পালকযুক্ত ডাস্টার তুলে নিলো ফিওনা। ওর ছদ্মবেশটা আরও মজবুত হলো এবার। দরজার এক পাশে দাঁড়াল ফিওনা। হাতে রাইফেল নিয়ে অন্যপাশে গ্রে দাঁড়াল।

মনকের সাথে এখন কতজন গার্ড আছে?

তবে যা-ই হোক, ও জীবিত আছে এটাই বড় কথা।

মূল প্রবেশপথে থাকা ধাতব শাটার উঁচু হতে শুরু করল। নিচু হয়ে ঝুঁকে পা গুনল গ্রে। ফিওনাকে দুই আঙুল দেখাল। সাদা জাম্পস্যুট পরিহিত বন্দীর সাথে দুজন গার্ড আছে।

পুরো শাটার খোলার পর গ্রেকে দেখা গেল।

গার্ড দুজন দেখতে পেল ওদের মতোই একজন হাতে রাইফেল নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা সতর্ক হওয়ার কোনো প্রয়োজনবোধ করল না। এমনকি খেয়ালও করল না গ্রের হাতে টেজার আছে অন্যদিকে ফিওনাও প্রস্তুত।

মুহূর্তের মধ্যে হামলা হয়ে গেল।

দুই গার্ডের মাথায় আচ্ছামতো কষিয়ে পাখি মারল গ্রে। যতটুকু জোরে মারার দরকার ছিল তারচেয়েও জোরে মেরে ফেলেছে। গার্ডদের ওপর ওর অনেক রাগ, রাগটুকু এখন আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। পাখির ভেতর দিয়ে উগরে দিয়েছে সেটা।

কিন্তু বন্দী তো মনক নয়।

পাশের ক্লোজেটে একটা গার্ডকে রেখে আসতে আসতে গ্রে প্রশ্ন করল, কে আপনি?

ধূসর চুলের অধিকারিণী মহিলাটি তার এক হাত দিয়ে আরেক গার্ডের ব্যবস্থা করতে ফিওনাকে সাহায্য করছে। তাকে দেখতে যেরকম মনে হয় আদতে সে তারচেয়েও শক্তিশালী। তার বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ দেয়া। কাঁধে বাঁধা অবস্থায় ঝুলছে সেটা। চেহারার বামপাশটায় অনেক খামচির দাগ দেখা যাচ্ছে। কিছু একটা তাকে আক্রমণ করেছিল। এই ক্ষতগুলো ছাড়া সে একদম ঠিক আছে। আত্মবিশ্বাসী চোখ নিয়ে গ্রের দিকে তাকাল সে।

আমার নাম ড. মারশিয়া ফেয়ারফিল্ড।

.

দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিট।

ফাঁকা লেনে নামল জিপটা।

হুইলের পেছনে বসা ওয়ার্ডেন জেরাল্ড কেলজ তার ড্র-তে জমা ঘাম মুছলেন। তার দুই পায়ের মাঝে একটা ড্রিংক্সের বোতল রাখা আছে।

সকালে যথেষ্ট ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও রুটিন ভাঙতে তিনি নারাজ। অবশ্য এখন তার করার মতো তেমন কিছু ছিল না। ওয়ালেনবার্গ এস্টেটদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পার্ক রেঞ্জারদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন কেলজ। প্রত্যেকটা গেটে গার্ড বসিয়েছেন। ওয়ালেনবার্গ এস্টেটের ভেতর থেকে তার কাছে বিভিন্ন ছবি ফ্যাক্স করে পাঠানো হয়েছে।

আপাতত কেলজের অফিসে ফিরতি খবর না আসা পর্যন্ত বাসায় গিয়ে দুই ঘণ্টার লাঞ্চ সেরে নেয়া ছাড়া তার কোনো কাজ নেই। আজ মঙ্গলবার, অর্থাৎ লাঞ্চের মেনুতে থাকবে রোস্ট করা মুরগি আর মিষ্টি আলু। পুরো এক একর জমির ওপর নির্মিত দোতলা ভবনের সামনে এসে জিপ থামালেন। এত বড় ভবনটা শুধু তার জন্য। বয়স হয়েছে ঠিকই কিন্তু বিয়ে করার কোনো তাড়া নেই তার।

বাসায় নতুন একটা মেয়ে কাজ করছে। নাম : আইনা, বয়স : মাত্র ১১ বছর। নাইজেরিয়ার মেয়ে, একদম কুচকুচে কালো। জেরাল্ড অবশ্য এরকম আলকাতরা রঙের মেয়েদেরই পছন্দ করেন। কালো চামড়ায় আঘাতের দাগ সেভাবে ফুটে ওঠে না, তাই। এখানে কেলজকে কোনো কিছুতে মানা করার কেউ নেই।

পুরুষ কাজের মানুষও আছে এখানে। নাম : ম্যাক্সালি। জেল থেকে ধরে এনে কেলজ ওকে এখানে কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। ম্যাক্সালির কাজ হলো বাড়িতে ভীতি বজায় রেখে পুরো বাড়ি পরিচালনা করা। বাড়ির ভেতরের কোনো সমস্যা দূর করতে সে যেমন দক্ষ তেমনি বাইরের সমস্যা দূর করতেও তার জুড়ি নেই। ওয়ালেনবার্গদের জন্য কেউ সমস্যা হয়ে দাঁড়ালে সেটাকে যদি কেউ গায়েব করে দিতে সাহায্য করে তাহলে যারপরনাই খুশি হয় বার্গরা। হেলিকপ্টারে করে ওয়ালেনবার্গ এস্টেটে এসে নামার পর কী হয়েছে না হয়েছে সেটা জানার কোনো অধিকার নেই জেরাল্ডের। কিন্তু গুজব তার কানে এসেছে।

মধ্যদুপুরের তপ্ত আবহাওয়ার ভেতরেও তার শরীরে কাঁপুনি ধরে গেল।

 জানার দরকারই নেই, প্রশ্ন যত কম করা যায় ততই মঙ্গল।

গাছের ছায়ার নিচে গাড়ি পার্ক করে বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন তিনি। পাশের দরজা দিয়ে রান্নাঘরে গেলেন। দুইজন মালি বাগানের ফুল পরিচর্চা করছে। জেরাল্ডকে দেখে দুইজন চোখ নিচু করে রাখল। মনিবকে দেখে চোখ নিচু করে রাখতে হবে–এটাই শিখানো হয়েছে তাদের।

মুরগির রোস্টের ঘ্রাণ নাকে আসতেই কেলজের খিদে আরও বেড়ে গেল। রান্নাঘরে ঢুকলেন তিনি। পেটের ভেতরে যেন খাবারের জন্য আন্দোলন চলছে।

রান্নাঘরে ঢুকে তিনি দেখলেন, কুক (যে রান্না করে কাঠের তক্তার ওপর পড়ে রয়েছে, মাথাটা ওভেনে ঢোকানো। এরকম আজব পরিস্থিতি দেখে ভ্রু কুঁচকালেন জেরাল্ড। কয়েক মুহূর্ত পর তিনি বুঝতে পারলেন এটা কুক নয়।

ম্যাক্সালি…? রোস্টের ঘ্রাণ ছাড়াও নতুন একটা গন্ধ তার নাকে এলো। বিষাক্ত ক্ষতের গন্ধ। ম্যাক্সালির হাতে ক্ষতটা হয়েছে। একটা পালকঅলা ডার্ট। ম্যাক্সালির পছন্দের অস্ত্র এটা। সাধারণত এটায় বিষ মাখানো থাকে।

মারাত্মক গোলমাল হয়েছে কোথাও।

পিছু হটলেন কেলজ।

বাগানে থাকা দুই মালি তাদের কাজ বাদ দিয়ে এখন দুটো রাইফেল কেলজের চওড়া ভুড়ির দিকে তাক করে রেখেছে। হাত উঁচু করলেন তিনি, ভয়ে তাঁর চামড়া ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

কাঠের শব্দ শুনে ঘুরে তাকালেন তিনি।

পাশের রুমের ছায়া থেকে একটি কালো অবয়ব বেরিয়ে এলো।

আগন্তুককে চিনতে পেরে ঢোঁক গিলল কেলজ… আগন্তকের চোখে তীব্র ঘৃণা।

 সে কোনো সাধারণ ডাকাত নয়। তারচেয়েও জঘন্য কিছু।

 জ্বলজ্যান্ত ভূত।

 খামিশি…

.

দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিট।

আসলে ওর হয়েছেটা কী? মনক জিজ্ঞেস করল। এইমাত্র ৬, পলার স্যাটেলাইট ফোন নিয়ে পাশের কুঁড়েঘরে গেছে ক্রো। লোগ্যান গ্রেগরির সাথে কথা বলে যোগাযোগ করবে।

লিসা জবাব দিলো। অ্যানার ভাষ্যমতে, ওর কোষগুলো অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে, গলে যাচ্ছে ভেতর থেকে। অ্যানা অতীতে বেল-এর রেডিয়েশনের প্রভাব স্বচক্ষে দেখেছেন। তার ভাই গানথার এই রোগের দীর্ঘস্থায়ী ভার্সনে আক্রান্ত হয়ে রয়েছে। কিন্তু গানথারের অতিরিক্ত রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় তার শারীরিক অবনতি তুলনামূলকভাবে ধীরে ধীরে হচ্ছে। অ্যানা ও পেইন্টার একদম রেডিয়েশনের খপ্পরে পড়েছিল, কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকায় ওরা অনেক বেশি আক্রান্ত হয়েছে।

বিস্তারিত আরও কিছু জানাল লিসা। কারণ ও জানে মেডিসিন সম্পর্কে মনকের বেশ পড়াশোনা করা আছে।

সব শোনার পর একটা প্রশ্নই উত্থাপিত হলো।

কতদিন সময় পাচ্ছে ওরা? বলল মনক।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেইন্টার যে কুঁড়েঘরে ঢুকেছে সেদিকে তাকাল লিসা। একদিনের বেশি নয়। যদি আজকেও চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয় তারপরও হয়তো কিছু স্থায়ী ক্ষতি সারানো সম্ভব হবে না।

আপনি ওর কথা বলার ধরন লক্ষ্য করেছেন… শব্দগুলো কীরকম ছাড়া ছাড়া? এটা কী ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাকি…. নাকি অন্যকিছু…?

 মনকের দিকে ফিরল লিসা। এটা ওষুধের চেয়েও বেশি কিছু।

ভয় ও হতাশার বিষয়। মনক দেখল লিসাও এটা নিয়ে অনেক ভুগেছে। লিসার দুশ্চিন্তা দেখে বোঝা যায় সে পেইন্টারের ব্যাপারে স্রেফ একজন ডাক্তার কিংবা সাধারণ বন্ধু হিসেবেই দুশ্চিন্তা করছে না… আরও বেশি কিছু আছে এতে। লিসা পেইন্টারকে যত্ন নিয়ে দেখভাল করে, অন্যদিকে নিজের আবেগকেও বাইরে বের হতে দেয় না। হৃদয়কে খুব সংযমে রেখেছে বেচারি।

দরজায় পেইন্টারের আবির্ভাব ঘটল। মনককে বলল, ক্যাট লাইনে রয়েছে…।

 দ্রুত উঠল মনক। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো হেলিকপ্টার আছে কি না। তারপর পেইন্টারকে পাশ কাটিয়ে স্যাটেলাইট ফোনটা তুলে নিলো। মাউথপিসটা হাত দিয়ে ঢেকে বলল, বস, আমার মনে হয় ড. লিসাকে কেউ সঙ্গ দেয়া উচিত।

চোখ মটকাল ক্রো। চোখ দুটো লাল হয়ে রয়েছে। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে লিসার দিকে এগোল ও।

ওকে যেতে দেখার পর মনক ফোনে কথা শুরু করল। হেই, বেবি!

আমাকে বেবি বলবে না! আফ্রিকাতে কী করছ তুমি, হুম?

মনক হেসে ফেলল। ক্যাটের কপট রাগ ওর কানে মধুর মতো মনে হলো। তবে প্রশ্নটা কিন্তু সে ঠিকই করেছে। নিশ্চয়ই ক্যাট জেনে ফেলেছে বিষয়টা।

তুমি বলেছিলে এই মিশনটা নাকি অনেক সহজ? বলল ক্যাট।

অপেক্ষা করল মনক। বেচারির রাগগুলোকে বের হওয়ার সুযোগ দিলো।

বাসায় আসো। তোমাকে আমি তালা মেরে আটকে…

 আরও মিনিট খানেক বকা-ঝকা করল সে।

মান-অভিমান পর্ব শেষ হওয়ার পর মনক জবাবে বলল, আমিও তোমাকে অনেক মিস করেছি, বাবু।

আহ্লাদে পাত্তা না নিয়ে ক্যাট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমি শুনলাম গ্রেকে নাকি এখনও পাওয়া যায়নি।

আশা করি, সে ভাল আছে।

ওকে খুঁজে বের করো। যে-কোনোভাবে হোক খুঁজে বের করো।

বিষয়টার সাথে মনকও একমত। ক্যাট পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছে। তাই সাবধানে থাকতে হবে, হেন তেন এসব কোনো প্রমিজ চায়নি। এরপর ক্যাট যে শব্দগুলো বলল তার সাথে কান্নার আওয়াজও শোনা গেল।

আই লাভ ইউ।

যে-কোনো পুরুষকে সাবধান হওয়ার জন্য এই শব্দগুলোই যথেষ্ট।

আই লাভ ইউ, টু। গলা নিচু করে বলল, তোমাদের দুজনকেই ভালবাসি।

বাসায় আসো।

 অবশ্যই আসব, পারলে ঠেকাও!

এবারও ক্যাট আহ্লাদে পাত্তা দিলো না। লোগ্যান আমাকে তাড়া দিচ্ছে। ফোন রাখব। ৭টার সময় সাউথ আফ্রিকান অ্যাম্বাসির সাথে আমাদের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। দেখি আমরা এখান থেকে কোনো চাপ প্রয়োগ করতে পারি কি-না।

ফাটিয়ে দাও, বেবি!

 দেব, বাই, মনক।

 ক্যাট, আমি… কিন্তু লাইন ততক্ষণে কেটে গেছে। ধুর।

ফোন রেখে লিসা আর পেইন্টারের দিকে তাকাল মনক। সামনে ঝুঁকে কথা বলছে। দুজন। মনক খেয়াল করে দেখল, কথা বলার জন্য এতটা না ঝুঁকলেও চলতো। ফোনের দিকে তাকাল ও। যা-ই হোক, ক্যাট তো নিরাপদে আছে।

.

দুপুর ১২ টা ৩৭ মিনিট।

ওরা আমাকে নিচের একটা সেল রুমে নিয়ে যাচ্ছিল, বললেন ড. মারশিয়া। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতো। কিছু একটা ওদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

 ড. মারশিয়াকে উদ্ধার করে ওরা দোতলার ল্যান্ডিঙে চলে এসেছে। ফিওনাকে যে গার্ডটা ইভটিজিং করেছিল সে এখনও অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে, রক্ত ঝরছে নাক থেকে।

 ড. ফেয়ারফিল্ড অল্পকথায় তার কাহিনি শোনালেন। কীভাবে ওয়ালেনবার্গদের পোষা প্রাণী তার ওপর হামলে পড়েছিল, টেনে-হেঁচড়ে এনেছিল… সব বললেন তিনি। ওয়ালেনবার্গরা কোনো এক উৎস থেকে জানতে পেরেছিল মারশিয়া ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের সাথে যুক্ত। তাই তারা সিংহ কর্তৃক আক্রমণ-এর নাটক সাজিয়ে তাকে কিডন্যাপ করে আনে। তার শরীরের ক্ষতগুলো এখনও ফুলে রয়েছে। আমি ওদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম–আমার সাথে যে সঙ্গী ছিল সেই গেম ওয়ার্ডেন দানবের আক্রমণে মারা গেছে। বেচারা হয়তো আক্রমণের ঘটনাটা বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছিল।

আচ্ছা। কিন্তু ওয়ালেনবার্গরা কী লুকোচ্ছে? জানতে চাইল গ্রে। কী করছে তারা?

 মাথা নাড়লেন মারশিয়া। ম্যানহ্যাটন প্রজেক্টের ভয়ঙ্কর সংস্করণ করছে হয়তো। এরচেয়ে বেশি কিছু আমি জানি না। তবে আমার ধারণা আরও কিছু করছে ওরা। এই প্রজেক্টের পাশাপাশি অন্য একটা পার্শ্বপ্রজেক্ট আছে। সেটা কোনো হামলা হতে পারে। আমি গার্ডদেরকে বলতে শুনেছি। সেরাম নামের কিছু একটা নিয়ে ওরা কথা বলছিল। জেরাম-৫২৫, এরকম কিছু একটা বলছিল ওরা। এই বিষয়ে কথা বলতে বলতে ওরা ওয়াশিংটন ডি.সি-এর নামও উচ্চারণ করেছিল।

গ্রে ভ্রু কুঁচকাল। কোনো টাইমটেবিল সম্পর্কে শুনতে পেরে ছিলেন?

না। কিন্তু ওদের কথা বলার ধরন আর হাসাহাসি দেখে আন্দাজ করতে পারছি যা হওয়ার সেটা হতে খুব বেশি দেরি নেই। শীঘ্রই হবে।

থুতনিতে হাত বুলাতে বুলাতে পা চালাল গ্রে। সেরাম… এটা হয়তো কোনো প্রাণনাশকারী কোনো এজেন্ট… রোগবালাই… কিংবা ভাইরাসও হতে পারে… মাথা ঝকাল ও। খুব দ্রুত আরও তথ্য লাগবে ওর।

 আমাদেরকে বেসমেন্টে থাকা ল্যাবগুলোতে ঢুকতে হবে, গ্রে বিড়বিড় করল। দেখতে হবে ওখানে কী হচ্ছে।

ওরা আমাকে শিবিরে নিয়ে যাচ্ছিল, বললেন মারশিয়া।  

গ্রে বিষয়টা বুঝতে পেরে মাথা নাড়ল। আমি যদি আপনার একজন গার্ডের বেশ ধরে যাই, তাহলে হয়তো নিচে সুবিধে করতে পারব।

দ্রুত করতে হবে। ওরা হয়তো ভাবছে আমার আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন।

ফিওনার দিকে ফিরল গ্রে। তর্ক সামাল দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে ও। ফিওনা যদি এই রুমের কোথাও লুকিয়ে থাকে সেটাই নিরাপদ হবে। তাছাড়া বন্দী ও গার্ডের পাশে একজন মেইডের উপস্থিতি দৃষ্টিকটু ও অপ্রয়োজনীয়। তাতে বরং অন্য গার্ডদের সন্দেহ দেখা দেবে।

 আমি জানি! কাজের মেয়েদের কোনো দাম নেই, গ্রেকে চমকে দিয়ে বলল ফিওনা। পা দিয়ে গার্ডটাকে গুতো মারল ও। তুমি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি এই হারামিটাকে দেখে রাখব।

মুখে সাহসী কথা বললেও ফিওনার চোখে ভয়ের ছায়া দেখা গেল।

 আমরা বেশি সময় নেব না, কথা দিলো গ্রে।

না নিলেই ভাল।

 ফিওনার সাথে কথা শেষ করে নিজের রাইফেল তুলে নিলো গ্রে। ড. ফেয়ারফিল্ডকে দরজার দিকে এগোতে ইশারা করে বলল, চলুন, যাওয়া যাক।

কয়েক মুহূর্ত পর দেখা গেল, মারশিয়ার দিকে রাইফেল তাক করে রেখে গ্রে তাঁকে কেন্দ্রীয় লিফটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওদেরকে কেউ বাধা দিলো না। ভূগর্ভস্থ লেভেলে ঢোকার সময় একটা চেক পোস্ট পড়ল। ইসকির পকেট থেকে চুরি করা ২য় কার্ডটা ব্যবহার করল গ্রে। চেক পোস্টের লাল আলো নিভে সবুজ আলো জ্বলে উঠল।

কোথা থেকে শুরু করব সে-সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে?

গুপ্তধন যত বড় হয় সেটা মাটির তত গভীরে সুকোনো থাকে। বললেন মারশিয়া। ভূগর্ভস্থ লেভেলের সবচেয়ে শেষ লেভেল অর্থাৎ ৭ম লেভেলের বাটনে চাপ দিলেন তিনি। লিফট নিচ দিকে নামতে শুরু করল।

নিচে নামতে নামতে মারশিয়ার কথাগুলো গ্রের মাথায় ঘুরতে লাগল।

একটা হামলা। সম্ভবত ওয়াশিংটনে হবে।

 কিন্তু প্রশ্ন হলো–হ্যামলাটা কীরকম? কোন ধরনের?

.

সকাল ৬ টা ৪১ ইএসটি।
ওয়াশিংটন, ডি.সি.।

ন্যাশনাল মল থেকে অ্যাম্বাসির দূরত্ব মাত্র ২ মাইল। গাড়িতে করে সাউথ আফ্রিকান অ্যাম্বাসির দিকে এগোচ্ছে ওরা। লোগ্যানের সাথে গাড়ির পেছনের সিটে বসেছে ক্যাট। ফাইনাল নোটগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। সূর্য উঠেছে বেশিক্ষণ হয়নি। দেখতে দেখতে অ্যাম্বাসি (দূতাবাস) এসে গেল।

 অ্যাম্বাসি ভবন চারতলা। অ্যাম্বাসির আবাসিক শাখার দিকে এগোল ড্রাইলার। এত সকালে অ্যাম্বাসেডর (রাষ্ট্রদূত) ওদের সাথে তার ব্যক্তিগত স্টাডিতে দেখা করার জন্য রাজি হয়েছে। ওয়ালেনবার্গদেরকে নিয়ে তিনি একটু গোপনে আলোচনা করতে চান।

এ বিষয়ে অবশ্য ক্যাটের কোনো আপত্তি নেই।

ওর গোড়ালির গাঁটের হোলস্টারে পিস্তল রাখা আছে।

গাড়িতে থেকে বেরিয়ে ক্যাট লোগ্যানের জন্য অপেক্ষা করল। ওদের গাড়িকে দেখে সামনের দরজা খুলে দিলো ভোরম্যান।

সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে লোগ্যান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। তারচেয়ে দুকদম পেছনে থেকে এগোল ক্যাট। পথের দিকে সতর্ক নজর রেখেছে সে। ওয়ালেনবার্গদের টাকার গরম অনেক বেশি। তারা যে টাকা দিয়ে কাকে কাকে কিনে রেখেছে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই ক্যাট এখানকার কাউকেই বিশ্বাস করে না… এমনকী স্বয়ং অ্যাম্বাসেডর জন হাউরিগ্যানকেও নয়।

চওড়া হলে ঢুকল ওরা। নেভি বিজনেস স্যুট পরিহিত একজন সেক্রেটারি ওদেরকে স্বাগত জানাল।

অ্যাম্বাসেডর হাউরিগ্যান একটু পরেই নিচে চলে আসবেন। আমি আপনাদেরকে স্টাডিতে নিয়ে যাব। ততক্ষণ পর্যন্ত কী খাবেন? চা? কফি?

লোগ্যান ও ক্যাট দুজনই মাথা নাড়ল। কিছুই খাবে না।

কিছুক্ষণ পর সেক্রেটারি ওদেরকে স্টাডিরুমে নিয়ে এলো। ডেস্কের পাশে বসলেন লোগ্যান। ক্যাট দাঁড়িয়ে রইল। তবে ওদেরকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না।

দরজা খুলে হালকা-পাতলা গড়নের লম্বা একজন ব্যক্তি রুমে প্রবেশ করলেন। তার মাথার চুলের রঙ বাদামি-সাদা। তার কাছে নেভি স্যুট থাকলেও সেটা গায়ে না পরে তিনি হাতে রেখেছেন। ক্যাট সন্দেহ করল অ্যাম্বাসেডরের এরকম আনঅফিসিয়াল ও বন্ধুত্বপূর্ণ হাবভাব পুরোটাই মেকি। তিনি বোঝাতে চাচ্ছেন এটা তার বাসায় একটা ব্যক্তিগত মিটিং মাত্র।

ক্যাট অবশ্য এসবে পটলো না।

লোগ্যান পরিচয়পর্ব সারতে সারতে রুমটাকে পর্যবেক্ষণ শুরু করল ক্যাট। ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে ও আন্দাজ করতে পারছে, এই রুমে এখন যা যা কথাবার্তা হবে সেটা রেকর্ড করা হচ্ছে কোথাও। রেকর্ডারটা কোথায় লুকোনো আচ্ছে সেটাই খুজছে ক্যাট।

অ্যাম্বাসেডর সাহেব চেয়ারে বসার পর বললেন, ওয়ালেনবার্গ এস্টেট সম্পর্কে আপনারা জানতে এসেছেন… আমি তো সেরকমটাই শুনেছি। তো বলুন, আপনাদেরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

আমরা মনে করছি তাদের কোনো লোক জার্মানিতে কিডন্যাপিঙের সাথে জড়িত।

অ্যাম্বাসেডর জন হাউরিগ্যানের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। এরকম অভিযোগ শুনে। আমি আশ্চর্য হলাম। জার্মান বিকেএ, ইন্টারপোল কিংবা ইউরোপোল থেকে তো এরকম খবর আসেনি।

আমাদের সোর্স একদম নিখাদ, জোর দিয়ে বললেন লোগ্যান। আমরা চাচ্ছি আপনাদের স্করপিয়ন যেন আমাদেরকে সাউথ আফ্রিকায় সাহায্য সহযোগিতা করে।

ক্যাট খেয়াল করে দেখল অ্যাম্বাসেডর তাঁর চেহায়ায় বিষণ্ণতা ফুটিয়ে তোলার ভান করলেন। সাউথ আফ্রিকার স্করপিয়ন আমেরিকার এফবিআই-এর মতো। সাহায্য করবে না সেটা জানা কথা। লোগ্যানের আসল চাওয়া হলো, সিগমার কাজে যেন স্করপিয়নরা কোনো বাধা না দেয়। ওয়ালেনবার্গদের মতো বিত্তবান ও ক্ষমতাশালীদের সাথে তো আপসে কিছু করা সম্ভব না তাই স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী যেন সিগমার মিশনে কোনো বাধা না দেয় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে এই বাধা না

দেয়ার বিষয়টা বেশ ছোট বলে মনে হলেও এর প্রভাব অনেক বড়।

ক্যাট বসেনি, এখনও দাঁড়িয়ে আছে। দুই ব্যক্তির লড়াই দেখছে ও… দুজনই একে অপরের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ফায়দা লোটার মতলবে ব্যস্ত।

দেখুন, ওয়ালেনবার্গরা অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার। আন্তর্জাতিক, সরকারি পরিমণ্ডলে তারা বেশ সম্মানিত। বিভিন্ন ত্রাণ, দাঁতব্য সংস্থা ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সাথে তারা জড়িত। এছাড়াও সম্প্রতি তারা তাদের উদারতার নিদর্শনস্বরূপ পৃথিবীর সব জায়গায় অবস্থিত সাউথ আফ্রিকান অ্যাম্বাসিতে সোনার তৈরি ঘন্টা উপহার দিয়েছে। সাউথ আফ্রিকায় প্রথম সোনার কয়েন চালু করার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে এই মহাযজ্ঞ।

তা নাহয় বুঝলাম, তারা অনেক ভাল ভাল কাজ করে, কিন্তু তার মানে এই নয়…

লোগ্যানকে থামিয়ে দিয়ে এই প্রথমবারের মতো মুখ খুলল ক্যাট। আপনি একটু আগে কী বললেন? সোনার ঘষ্টা? অর্থাৎ, গোন্ড বেল?

ক্যাটের দিকে তাকালেন অ্যাম্বাসেডর। হ্যাঁ, স্যার ব্যালড্রিক ওয়ালেনবার্গ এই উপহার দিয়েছেন সবাইকে। একশটা সোনার বেল। আমাদের এখানে যে বেলটা আছে সেটাকে আবাসিক ভবনের পাঁচ তলায় বসানো হয়েছে।

লোগ্যান আর ক্যাটের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে গেল।

আমরা কী সেটা দেখতে পারি? বলল ক্যাট।

কথার মোড় হঠাৎ এভাবে ঘুরে যাওয়ার কারণে অ্যাম্বাসেডর কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেছেন। তবে না করার মতো উপযুক্ত কারণ তিনি খুঁজে পেলেন না। ক্যাট মনে মনে ভাবল, তিনি হয়তো ভাবছেন, ওয়ালেনবার্গদেরকে নিয়ে আলোচনা করার চেয়ে বেল দেখানোই ভাল এবং সহজ।

 আপনাদেরকে দেখাতে পারলে আমি বরং খুশিই হব। উঠে দাঁড়িয়ে হাতঘড়ি দেখলেন তিনি। আমাদেরকে একটু দ্রুত করতে হবে। সকালের নাস্তা করতে করতে আমাকে আরেকটা মিটিং সেরে নিতে হবে। দেরি হলে বিপদ।

ক্যাটও মনে মনে এরকমটাই ভাবছিল। হাউরিগ্যান এখন বেল দেখানোর উসিলায় কথাবার্তা এখানেই শেষ করে দিতে চাচ্ছেন। এদিকে স্করপিয়ন সম্পর্কে কোনো কথাও তিনি দিলেন না। চোখ-মুখ শক্ত করে ক্যাটের দিকে তাকালেন লোগ্যান। ক্যাট আশা করল ওর সিদ্ধান্ত যেন ভুল না হয়।

লিফটে চড়ে ভবনের সবচেয়ে উঁচুতলায় চলে এলো ওরা। হলওয়ে পার হওয়ার পর বিশাল একটা হল পড়ল সামনে। থাকার জায়গার চেয়ে এটাকে জাদুঘর বললেই বেশি মানাবে। ডিসপ্লে ক্যাবিনেট, লম্বা টেবিল, বড় বড় সিন্দুকসহ বিভিন্ন জিনিস আছে এখানে। একসারি জানালা আছে, ওগুলো দিয়ে পেছনের বাগানের ওপর চোখ বুলিয়ে নেয়া যায়। এক কোণায় একটা বিশাল ঘন্টা ঝুলছে। সোনার তৈরি। গোল্ডেন বেল। বেলটাকে দেখে মনে হচ্ছে এটা একদম আনকোরা নতুন। লম্বায় পুরো এক মিটার। মুখ আর চওড়ায় হবে আধ মিটার। সাউথ আফ্রিকার প্রতীকস্বরূপ কোট অভ আর্মস খোদাই করা আছে বেলের গায়ে।

কাছে এগোল ক্যাট। একটা মোটা পাওয়ার ক্যাবল বেলের মাথার ওপর থেকে বেরিয়ে মেঝেতে প্যাচানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

 ক্যাটকে উদ্দেশ্য করে অ্যাম্বাসেডর বললেন, দিনের নির্দিষ্ট একটা সময়ে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেজে উঠবে। ইঞ্জিনিয়ারিঙের এক দারুণ নিদর্শন। যদি বেলের ভেতরে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন ভেতরে অনেক গিয়ার ও কলকজা আছে। একটা রোলেক্স ঘড়িতে যেরকম থাকে অনেকটা সেরকম।

 লোগ্যানের দিকে ফিরল ক্যাট। লোগ্যানের মুখ শুকিয়ে গেছে। অ্যানা শোরেনবার্গ মূল বেল-এর যে ছবি এঁকে পাঠিয়ে ছিল সেটা তিনি দেখেছেন। এই সোনার বেল সেই ছবির সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। দুটো বেল থেকেই রেডিয়েশন বেয়োয় সন্দেহ নেই। পাগলামো আর মৃত্যু। উপরে থাকা একটা জানালার দিকে তাকাল ক্যাট। এই উচচতা থেকে ক্যাপিটোলের সাদা গম্বুজ ছাড়া আর কিছু ওর চোখে পড়ল না।

অ্যাম্বাসেডর একটু আগে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলো আতঙ্ক সৃষ্টি করল এখন।

পুরো পৃথিবীতে… ১০০টা সোনার বেল।

এটা সেট করতে স্পেশাল টেকনিশিয়ান লেগেছে, বললেন অ্যাম্বাসেডর। তার কণ্ঠে বিরক্তির সুর পাওয়া যাচ্ছে, হয়তো মিটিং খুব শীঘ্রই শেষ করে দেবেন। সেই টেকশিয়ান বোধহয় এখানেই কোথাও আছে।

ওদের পেছনে থাকা দরজাটা খুলে গেল। একটু জোরেই খুলেছে সেটা।

তিনজন ঘুরল সেদিকে।

এই যে, চলে এসেছে, বললেন হাউরিগ্যান। কিন্তু তার কণ্ঠস্বর দমে গেল যখন তিনি দেখতে পেলেন আগন্তুকের হাতে একটা সাব-মেশিন গান শোভা পাচ্ছে। তার চুলগুলো ধবধবে সাদা। রুমের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়েও ক্যাট তার অস্ত্র ধরে থাকা হাতের কালো ট্যাটুটা দেখতে পেল।

গোড়ালিতে থাকা হোলস্টারের দিকে হাত বাড়াল ক্যাট।

কোনো কথা না বলে আততায়ী গুলি ছুঁড়তে শুরু করল।

 কাঁচ ও কাঠের গায়ে এসে মুখ খুঁজতে শুরু করল বুলেট।

বুলেটের ছিটে আসা টুকরো ওর পেছনে থাকা সোনার বেলের গায়ে এসে লাগায়। বেলটা ঢং ঢং করে বাজতে শুরু করল।

.

দুপুর ১২টা ৪৪ মিনিট।
 সাউথ আফ্রিকা।

ভূগর্ভস্থ লেভেল সাতে এসে খুলে গেল লিফটের দরজা। গ্রে বেরিয়ে এলো লিফট থেকে, হাতে রাইফেল। ধূসর হলওয়ের দুদিকে চোখ বুলাল ও। ফ্লোরেসেন্ট লাইটে আলোকিত হয়ে আছে হলওয়ে। দেয়ালগুলো ধূসর রঙের, ছাদ বেশ নিচু। ইলেকট্রনিক লকগুলোর আলো মসৃণ স্টিল দরজাগুলোর গায়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। এছাড়া অন্য যেসব দরজা আছে ওগুলো একদম সাধারণ।

একটা দরজার ওপর হাতের তালু রাখল গ্রে।

কম্পন অনুভূত হলো। ছন্দময় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

পাওয়ার প্লান্ট? আকারে নিশ্চয়ই বড় হবে।

মারশিয়া ওর পাশে এসে দাঁড়ালেন। আমরা বোধহয় অনেক নিচে চলে এসেছি, ফিসফিস করে বললেন তিনি, স্টোরেজ (সংরক্ষণ কেন্দ্র) এবং ইউটিলিটি (পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহ কেন্দ্র বলে মনে হচ্ছে এটাকে।

 গ্রে তাঁর সাথে একমত। তারপরও…

লক করা একটা স্টিলের দরজাকে পাশ কাটাল গ্রে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা কী স্টোর করছে?

দরজার ওপরে লেখা আছে: embryonaal.

ভ্রূণ সংক্রান্ত ল্যাব, মারশিয়া অনুবাদ করে শোনালেন।

চারদিকে সতর্ক নজর রেখেছেন তিনি। হাতের ব্যান্ডেজটা একটু সরাতেই তার মুখ কুঁচকে গেল।

ইসকির কার্ডটা গ্রে আবার ব্যবহার করল। ইনডিকেটর সবুজ হয়ে খুলে গেল ম্যাগনেটিক লক। দরজা ধাক্কা দিলো ও। রাইফেলটাকে কাঁধে ঝুলিয়ে এবার পিস্তল হাতে নিয়েছে।

মাথার ওপরে থাকা লাইটগুলো একটু দপদপ করে স্থির হলো।

রুম না বলে এটাকে বড় একটা হল বলাই ভাল। প্রায় ৪০ মিটার লম্বা। গ্রে খেয়াল করল এখানকার বাতাস বেশ ঠাণ্ডা। দেয়ালের একপাশ জুড়ে মেঝে থেকে ওপরের ছাদপর্যন্ত লম্বা স্টিলের ফ্রিজার দেখা যাচ্ছে। গুঞ্জন করছে কমপ্রেসরগুলো। অন্যপাশে আছে দুচাকার কার্ট, তরল নাইট্রোজেন বোঝাই ট্যাঙ্ক আর বড়সড় মাইক্রোস্কোপ টেবিল।

দেখে মনে হচ্ছে এটা এক ধরনের ক্রাইয়োনিক ল্যাব।

মাঝখানে ওয়ার্কস্টেশনে একটা কম্পিউটার বসানো আছে। স্ক্রিনসেভার ঘুরছে এলসিডি মনিটরে। কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের সামনে একটা রুপোলি প্রতীক। প্রতীকটা পরিচিত। উইউইলসবার্গ ক্যাসলে গ্রে এই প্রতীক দেখে এসেছে।

দ্য ব্ল্যাক সান। কালো সূর্য। বিড়বিড় করল গ্রে।

মারশিয়া ওর দিকে তাকালেন।

ঘুরতে থাকা সূর্যের দিকে নির্দেশ করে গ্রে বলল। এই প্রতীক হিমল্যারের ব্ল্যাক অর্ডারের পরিচয় বহন করে। ঠুলি সোসাইটি নামের এক গুপ্ত সংঘ… যাদের সদস্য ও বিজ্ঞানীরা সুপারম্যান দর্শনে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতো। ব্যালড্রিকও নিশ্চয়ই সেখানকার সদস্য।

গ্রে অনুভব করল ওরা একটা পূর্ণ বৃত্ত রচনা করে ফেলেছে। রায়ানের প্রপিতামহ থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত। কম্পিউটারের দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, মৃল তালিকা খোঁজা যাক। দেখুন প্রয়োজনীয় কিছু পান কি-না।

মারশিয়া ওয়ার্কস্টেশনের দিকে এগোতেই গ্রে একটা ফ্রিজারের দিকে পা বাড়াল। ফ্রিজ খুলল ও। ঠাণ্ডা বাতাস বেরিয়ে এলো ফ্রিজ থেকে। ভেতরে অনেক ড্রয়ার দেখা যাচ্ছে। সবকটি নির্দেশক ও নাম্বার দেয়া। ওর পেছনে কম্পিউটারে খটাখট শব্দ তুলে কাজ শুরু করেছেন মারশিয়া। গ্রে একটা ড্রয়ার টান দিয়ে বের করল। ভেতরে সুন্দর সারি সারি কাঁচের ছোট স্ট্র-তে হলুদ তরল পদার্থ দেখা গেল।

হিমায়িত ভ্রূণ, ওর পেছন থেকে মারশিয়া বললেন।

ড্রয়ার বন্ধ করে হলে থাকা অন্যান্য ফ্রিজার গুনতে শুরু করল গ্রে। যদি মারশিয়ার কথা সত্য হয়ে থাকে তাহলে এখানে হাজার হাজার ভ্রণ সংরক্ষণ করা আছে।

মারশিয়া বললেন, এই কম্পিউটার হলো একটা ডেটাবেজ। জেনোম ও জিন্যেলজি সম্পর্কে তথ্য আছে এতে। মানুষ ও প্রাণী.. দুটোরই। স্তন্যপায়ী প্রজাতিও আছে। এটা দেখুন।

মনিটরে অদ্ভুত সব লেখা উঠে রয়েছে।

মিউটেশন করার পর কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে এটা হলো তার তালিকা, মারশিয়া বললেন।

উপরের দিকে থাকা একটা নামের ওপর টোকা দিলো গ্রে। ক্রোকুটা ক্রোকুটা, পড়ল ও। ছোপঅলা হায়না। কিন্তু রিসার্চের পর ওটার কী হাল হয়েছে সেটা দেখেছি আমি। ব্যালড্রিক ওয়ালেনবার্গ বলেছিলেন তিনি কীভাবে প্রজাতিগুলোকে নিখুঁত করছেন। এমনকি জানোয়ারগুলোর মগজে মানুষের কোষ পর্যন্ত ঢুকিয়েছেন তিনি!

বিস্মিত হয়ে মারশিয়া মূল ডিরেকটরিতে ফিরলেন। পুরো ডেটাবেজের নামকরণের সার্থকতা এবার বুঝলাম। Hersenschim, যাকে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় কিইমিরা; সিংহের মাথা, ছাগলের দেহ ও সাপের লেজঅলা এক দানব। অর্থাৎ, এখানে বিভিন্ন প্রাণীর কোষ এনে একটা প্রণে প্রবেশ করানো হচ্ছে। কিন্তু এর শেষ কোথায়?

গ্রে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দ্রুণ ল্যাবের বিশাল পরিসরের ওপর চোখ বুলাল। এখানকার সবকিছুতে তাহলে সেই অর্কিড আর বনসাই গাছের মতো পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার আরেকটা উপায় এটা? নিজের মনগড়া নিখুঁত ডিজাইন করার চেষ্টা।

হুম… বিড়বিড় করলেন মারশিয়া। অভুত।

তার দিকে ফিরল গ্রে। কী?

আমি তো বলেছিলাম এখানে মানুষের দ্রুণ আছে। জিন্যেলজির ক্রস রেফারেন্স অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এখানকার সব দ্রুণ জিনগত দিক থেকে ওয়ালেনবার্গদের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অবাক হওয়ার খবর সামনে আছে।

মারশিয়া বললেন, ওয়ালেনবার্গদের প্রত্যেকটা ভ্রুণের একটা স্টিম কোষের সাথে সম্পর্ক আছে যেটা ধরে এগোলে আমরা ক্রোকুটা ক্রোকুটাকে পাচ্ছি।

হায়না?

 মাথা নাড়লেন মারশিয়া। হ্যাঁ।

বিষয়টা বুঝতে পেরে আতঙ্ক বেড়ে গেল। তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন নিজের সন্তানদের স্টিম কোষ ওই দানবগুলোর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়েছে? ধাক্কাটা সুকোতে পারল না গ্রে।

এই ব্যালড্রিকের জঘন্য কাজ-কারবার, নিজেকে বেশি বুদ্ধিমান ভাবার কী কোনো শেষ নেই?

শুধু তা-ই নয়, মারশিয়ার কথা এখনও শেষ হয়নি।

অসুস্থবোধ করল গ্রে। কারণ মারশিয়া এখন যেটা বলতে চাচ্ছেন সেটা ও ইতোমধ্যে আন্দাজ করতে পেরেছে।

মনিটরে ভেসে ওটা জটিল চার্ট দেখালেন তিনি। এই চার্ট বলছে, হায়নাদের স্টিম কোষগুলো আবার পরবর্তী প্রজন্মের মানব ভ্রুণের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

হে খোদা…

গ্রের মনে পড়ে গেল খেপে যাওয়া হায়নাকে স্রেফ একটা হাত উঁচু করে ইসকি থামিয়ে দিয়েছিল। ওটা শুধু মনিব আর পোষা প্রাণীর সম্পর্ক ছিল না। ওটা ছিল পারিবারিক সম্পর্ক। ব্যালড্রিক সাহেব তার নিজের সন্তানদের কোষ হায়নাদের ভেতরে ঢোকানোর পর হায়নাদের কোষ আবার নাতি-নাতনীদের ভেতরে ঢুকিয়েছেন।

 খারাপের এখানেই শেষ নয়… মারশিয়া ফাঁকাসে হয়ে গেছেন। ওয়ালেনবার্গদের…

 গ্রে তাকে থামিয়ে দিলো। যথেষ্ট শোনা হয়েছে। আরও অনেক কিছু সার্চ করতে হবে। আমাদের এগোতে হবে।

কম্পিউটারের দিকে তাকালেন মারশিয়া, উঠতে ইচ্ছে করছে না। তবুও মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। দৈত্যাকার ল্যাব থেকে বেরিয়ে হলের পথ ধরল ওরা। পরের দরজায় লেখা রয়েছে : foetussen, ফিটাল ল্যাব। কোনো জায়গায় না থেমে গ্রে এগিয়ে চলল। ভেতরের ভয়াবহ কাহিনি জানার কোনো শখ নেই ওর।

তারা এরকম ফলাফল হাসিল করছে কীভাবে? মারশিয়া প্রশ্ন করলেন। মিউটেশন, সফল কিইমিরা…? নিশ্চয়ই কোনো না কোনো উপায়ে তারা জেনেটিক রূপান্তরটাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

হতে পারে, বিড়বিড় করল গ্রে। কিন্তু এটা নিখুঁত নয়… এখনও নয়।

হিউগো হিরজফিক্তের প্রতীকগুলোর কথা মনে পড়ল ওর। ওগুলোর ভেতরে তিনি কোড লুকিয়ে রেখেছেন। এবার ও বুঝতে পারল ব্যালড্রিক কেন ওই কোডের জন্য এতটা উন্মাদ হয়েছেন। ওই কোডের মধ্যে নিখুঁত হওয়ার উপায় লুকোনো আছে। সেটা এতই সুন্দর যে মেরে ফেলা সম্ভব না, আবার এতটাই দানবীয় যে মুক্ত করে দেয়াও অসম্ভব।

আর এখানে ব্যালড্রিক সাহেব দানবদের ব্যাপারে কোনো ভয়ই পাচ্ছেন না। পাবেন কেন? দানবগুলোকে তো তিনি নিজের পরিবারের সদস্য বানিয়ে ফেলেছেন। এবার শুধু হিউগোর কোডটা ভাঙতে হবে। কোড ভাঙার পর ব্যালড্রিক এরপর কী করবেন? তার ওপর সিগমা ফোর্স এখন তার পিছু নিয়েছে। আর এজন্যই তিনি এখন পেইন্টার ক্রোর খবর জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন।

আরেকটা দরজার কাছে পৌঁছুলো ওরা। দরজার ওপাশে থাকা রুমটাও নিশ্চয়ই বিশাল হবে। ফিটাল ল্যাব থেকে এটার দূরত্ব দেখে সেরকমটাই মনে হচ্ছে। দরজার উপরে থাকা নামটা খেয়াল করল গ্রে।

জেরাম-৫২৫।

 মারশিয়ার দিকে তাকাল ও।

 সেরাম নয়।

জেরাম, বোঝার ভুল ছিল বুঝতে পেরে মাথা নাড়লেন মারশিয়া।

চুরি করা কার্ড গ্রে ব্যবহার করল। সবুজ বাতি জ্বলে খুলে গেল তালা। দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকল ও। দপদপ করেলাইট জ্বলে উঠল। উঠল রুমের বাতাসে ক্ষার ও ওজোনের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। রুমের মেঝে আর দেয়ালগুলো কালো রঙের।

সীসা। দেয়াল স্পর্শ করে বললেন মারশিয়া।

কথাটা গ্রের কাছে সুবিধের মনে হলো না। তবুও ওকে আরও জানতে হবে না। ভেতরটা দেখে মনে হচ্ছে বিপজ্জনক পদার্থ রাখার কোনো এক স্টোরেজ এটা। রুমের ভেতর পর্যন্ত তাক সাজানো রয়েছে। হলুদ রঙের দশ গ্যালন ড্রাম রাখা আছে ওগুলোতে। প্রত্যেকটার গায়ে ৫২৫ ছাপ দেয়া।

প্রাণনাশকারী এজেন্ট সম্পর্কে নিজের সন্দেহের কথা ভাবল গ্রে। কিংবা এমনও তো হতে পারে, এতে বিস্ফোরক পদার্থ আছে, নিউক্লিয়ার বর্জ্যও তো হতে পারে? পুরো রুম সীসা দিয়ে ঘিরে রাখার মানে কী?

মারশিয়া একটু আগ্রহী হয়ে তাকগুলোর পাশ দিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন। প্রত্যেকটা তাকে লেবেল লাগানো আছে। এছাড়াও ড্রামের গায়ে নাম লেখা আছে। পড়লেন তিনি, আলবেনিয়া… পরের ড্রামের পাশে থামলেন। আর্জেন্টিনা…

অক্ষর অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের নাম লেখা আছে।

তাকগুলোর দিকে তাকাল গ্রে। এখানে কম করে হলেও ১০০টা ড্রাম আছে।

মারশিয়া ওর দিকে তাকালেন। এবার গ্রে বুঝতে পেরেছে কেন মারশিয়া আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন।

ওহ নো…

রুমের ভেতরে দ্রুত এগোল গ্রে। একটু পর পর তাকের লেবেল পড়ার জন্য থামছে। বেলজিয়াম,… ফিনল্যান্ড… গ্রিস…

দৌড়ে চলল ও।

অবশেষে যেটা খুঁজছিল সেটা পেয়ে গেল।

আমেরিকা।

ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে হামলা সম্পর্কে মারশিয়া কিছু একটা শুনেছিলেন। গ্রে ড্রাম ভরা তাকগুলো দেখল। হুমকির মুখে শুধু ওয়াশিংটনই নয়, আরও অনেক দেশ আছে। পেইন্টার ক্রো ও সিগমা ফোর্সকে নিয়ে ব্যালড্রিকের মাথাব্যথা আছে। কারণ সিগমা তাঁকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

সেজন্য ব্যালড্রিক নিশ্চয়ই তাঁর টাইম-টেবিল বদলে ফেলেছেন।

 যে তাকের গায়ে আমেরিকা লেখা আছে সেটা খালি পড়ে রয়েছে।

 জেরাম-৫২৫-এর ড্রামটা সেখানে নেই।

.

সকাল ৭ টা ৪৫ ইএসটি।
 জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল,
 ওয়াশিংটন, ডি.সি,।

ইটিএ অন মিডস্টার? প্রশ্ন করল রেডিও অপারেটর। হাসপাতালের টাচস্ক্রিন প্রোগ্রামের সাথে ওয়্যারলেস হেডসেট নিয়ে বসে আছে সে।

হেলিকপ্টার থেকে জবাব এলো৷ আসছি, আর দুই মিনিট।

ইআর আপডেট জানতে চাচ্ছেন। অ্যাম্বাসি এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা সবাই জেনে গেছে। কাজে লেগে পড়েছে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। সতর্ক ও হুশিয়ারি সংকেত জারি করা হয়েছে পুরো শহরে। সব জায়গায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অ্যাম্বাসির মেডিক্যাল পার্সন জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে তাদের দুজন আক্রান্ত হয়েছে। দুজনই সাউথ আফ্রিকান। তাদের মধ্যে একজন অ্যাম্বাসেডর স্বয়ং। সেইসাথে দুইজন আমেরিকানও আক্রান্ত হয়েছে।

তাদের কী অবস্থা?

একজন মৃত… আরেকজনের অবস্থা গুরুতর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *