ট্রেঞ্জ জেস্ট

স্ট্রেঞ্জ জেস্ট

এবং এটা বলল জেন হেলিয়ার তার উপস্থাপনা শেষ করে। এটা কি মিস মার্পল?

অভিনেত্রী হওয়ার জন্য সে তার লক্ষ্য তৈরীতে সক্ষম ছিল। এটা ছিল তার স্পষ্টত চরম পরিণতি। সাফল্যের শেষ সীমা। তার সুরও প্রকাশ পেয়েছিল তার সশ্রদ্ধ ভয়মিশ্রিত অনুভূতি এবং সাফল্য।

সবথেকে অযৌক্তিক অংশটি ছিল এর মধ্যে যে, সেটাতে বলা হত, সেটা খুব নম্র, ভদ্র, ব্যস্ততাপূর্ণ বড় অবিবাহিতা স্ত্রীলোক ছিল, দুজন যুবক লোকের চোখে যারা এই মাত্র এসেছে, তারা জেনের সঙ্গে দেখা করা মাত্র তাদের মধ্যে একটা অবিশ্বাস এবং আতঙ্ক দেখা গেল। তারা খুব সুন্দর দেখতে ছিল, মেয়েটির নাম ছিল চারমিয়ান স্টাউড। সে ছিল কালো এবং রোগা এবং লোকটির নাম হল এডওয়ার্ড রোলিটার, যার চুলগুলো খুব সুন্দর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ যুবক দৈত্য।

চারমিয়ান হাঁফ ছেড়ে বলল–ও! আমরা তোমার সঙ্গে দেখা করতে পেরে খুব আনন্দিত এবং সশ্রদ্ধ ভীতও। কিন্তু তার চোখে সন্দেহ দেখা গেল। সে তৎক্ষণাৎ জেন হেলিয়ারের দিকে জিজ্ঞাসামূলকভাবে তাকাল।

–ডার্লিং, জেন বলল, তার তাকানোর উত্তর দেওয়ার পর, সে হল সত্যিই বিস্ময়কর, এটা সমস্তটা তার উপর ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমি এখানে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি এবং আমার আছে, সে মিস মার্পলকে আরও বলল তোমাকে এটা স্থির করতে হবে ওদের জন্য, আমি জানি এটা তোমার পক্ষে খুব সহজ হবে।

মিস মার্পল তার শান্ত, নীল চোখে মি. রোলিটার-এর দিকে ঘুরে তাকালেন। বললেন–তুমি আমাকে বলবে না, এগুলো কী হচ্ছে?

চারমিয়ান বলে উঠল অধৈৰ্য্যভাবে জেন-এর বন্ধু আমাদের বন্ধুও বটে। আমি এবং এডওয়ার্ড দুজনে স্থির সিদ্ধান্তে এসে গেছি। জেন বলল, যদি আমরা তার পার্টিতে আসতে পারি, তাহলে সে আমাদের কারোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে, এরা এই লোকটি কে,–কে হতে পারে বা কে ছিল

এডওয়ার্ড আসল পুনরুদ্ধারের জন্য, জেন আমাদের বলল, তোমরা হল স্লিউথস এর শেষ শব্দ, মিস মার্পল!

বৃদ্ধা মহিলাটি চোখ পাকাতে লাগলেন, কিন্তু সে বিনম্রভাবে প্রতিবাদ করলেন–ওহ, না, না! এই রকম কিছু ব্যাপার নয়, এটা হচ্ছে আমরা যেরকম গ্রামে বাস করি সেরকম, একজন খুব বেশি জানতে পারে মানুষের প্রকৃতি সম্বন্ধে। কিন্তু সত্যিই তুমি আমাকে বেশি কৌতূহল উদ্দীপক করে তুলেছ, চলো তোমার সমস্যাগুলো আমাকে বল।

-আমি কিন্তু একজন ভয়ঙ্করভাবে স্ক্রৈন–সেটা, একটা গুপ্ত সম্পদের মত, এডওয়ার্ড বলল–প্রকৃতপক্ষে সত্যিই? কিন্তু শব্দগুলি খুবই উত্তেজনাদায়ক!

–আমি জানি এটা সম্পদ দ্বীপ-এর মত কিন্তু আমাদের সমস্যা, সাধারণ রোমান্টিক অনুভুতিগুলোর অভাববোধ করে কোন উদ্দেশ্যই এখানে খাটে না সেটা যাই হোক, হয় মস্তিষ্ক এবং ক্রসডের তালিকা, বা আদেশ যেমন চারটে ধাপ বামদিকে, কিংবা উত্তর পশ্চিম দিকে এটা ভয়ঙ্কর ভাবে গদ্যতুল্য–ঠিক যেমন সেখানে, আমাদের খনন করা উচিত।

-তুমি কি এটা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছ।

–আমাদের দুটো নিখুঁত বর্গাকার একর বাগান খুঁড়তে হবে, পুরো জায়গাটা তৈরি করা হয়েছে বাজারের বাগান হিসাবে পরিসর করার জন্য। আমরা এখন আলোচনা করছি। কিভাবে এখানে শাকসবজি যেমন আলু কিংবা কলাই ফলানো যায়।

চারমিয়ান বরং সংক্ষিপ্তভাবে বলল–আমরা কি তোমাকে সবকিছু বলতে পারি এটার সম্বন্ধে?

কিন্তু, অবশ্যই, আমার প্রিয় বল।

–তবে চল আমরা একটা নিরিবিলি জায়গা খুঁজি, এস এডওয়ার্ড, সুতরাং সে জনাকীর্ণ এলাকা থেকে বেরিয়ে একটা ধোঁয়াময় ঘরের দিকে নিয়ে গেল। তারপরে তারা সিঁড়িতে উঠে গেল এবং একটা ছোট বসার ঘরে পৌঁছল, সেটা ছিল দ্বিতীয় ফ্লোরে।

যখন তারা সেখানে বসল, চারমিয়ান সংক্ষিপ্তভাবে শুরু করল–ঠিক আছে, চল! গল্পটা শুরু হয় কাকা ম্যাথিউজকে নিয়ে। কাকা বরং বলা যায় মহান, মহৎ কাকা আমাদের কাছে, সে অবিশ্বাস্যভাবে বহু পুরনো ছিল। এডওয়ার্ড এবং আমি ছিলাম তার একমাত্র আত্মীয়, সেও আমাদের প্রতি গভির অনুরক্ত ছিল এবং সবসময় বলত যে যখন সে মারা যাবে, সে তার সমস্ত টাকা আমাদের মধ্যে ভাগ করে দেবে। যাইহোক, কাকা মারা গেল গত মার্চ মাসে এবং সমস্ত কিছু রেখে গেল যেগুলো আমাদের দুজনের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার কথা ছিল। আমি এখন খুব উদাসীন হয়ে গেছিলাম, আমি এটা বলতে চাইনি যে, সে মারা গেছে এটা ঠিক

সত্যি বলতে আমরা তার অন্ধ ভক্ত ছিলাম, কিন্তু সে খুব অল্প সময়ের জন্য অসুস্থ হয়েছিল।

বিষয়টা হচ্ছে যে সবকিছু যা সে রেখে গেছিল, সেগুলোর কিছুই মূল্য নেই। সুতরাং এটা আমাদের কাছে স্পষ্টতই একটা বড় আঘাত! তাই নয় কি, এডওয়ার্ড?

বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে এডওয়ার্ড সম্মতি জ্ঞাপন করল। তুমি দেখ, সে বলল–আমরা এটার সম্বন্ধে খুব অল্প গণনা করেছি, আমি বলতে চাই, যখন তুমি জানো যে অল্প টাকা তোমার কাছে আসছে–তুমি কি জানতে না–ঠিক আছে, ধরে রাখ এবং এটা নিজের জন্য করার চেষ্টা কর। আমি সৈন্যবাহিনীতে আছি, আমার কোনও অধিকার নেই আমার এক্তিয়ারের বাইরে কিছু বলা এবং চারমিয়ানও একটা মটরশুটিও পায়নি। সে কাজ করে একজন স্টেজ ম্যানেজার হিসাবে, একটা রিপারটরি রঙ্গমঞ্চে, সত্যিই আগ্রহোদ্দীপক, এবং সে এটা উপভোগ করে–কিন্তু এখানে কোনও টাকা নেই। আমরা এটা হিসাব করেছি আমাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর। কিন্তু আমরা কি সত্যিই টাকাটা নিয়ে ভীত ছিলাম না। কারণ আমরা উভয়েই জানতাম আমরা একদিন না একদিন অনেক টাকার মালিক হব।

এবং এখন, তুমি দেখ, আমরা কি সত্যিই খুশী নই। চারমিয়ান বলল, আর কি বলার আছে, অ্যানেস্টে–এটা হচ্ছে একটা পারিবারিক জায়গা, এবং এডওয়ার্ড এবং আমি দুজনে এটা খুব ভালোবাসি–উইলটাকে সম্ভবত বিক্রি করে দিতে হবে। কারণ এডওয়ার্ড এবং আমি মনে করি, যে আমরা এটাকে টেনে নিয়ে যেতে পারব না। কিন্তু আমরা যদি কাকা ম্যাথিউজ-এর টাকা খুঁজে না পাই, তাহলে আমাদের বিক্রি করতে হবে।

এডওয়ার্ড বলল–তুমি জান, চারমিয়ান, আমরা কিন্তু আমাদের মূল বিষয়বস্তুতে আসিনি।

-ঠিক আছে, তুমি বল, তাহলে।

এডওয়ার্ড মিস মার্পল-এর দিকে ঘুরে তাকাল, এটা এটার মত, তুমি দেখ যেহেতু কাকা ম্যাথিউজ বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, সে অনেক অনেক সন্দেহবাতিক হয়েছিল, সে কাউকেই বিশ্বাস করত না।

-খুব বুদ্ধিমান লোক ছিলেন তিনি,–মিস মার্পল বলল, মানুষের প্রকৃতির মহার্ঘত হল তার অবিশ্বাস্যতা।

-ঠিক আছে, তুমিই ঠিক হতে পার এই বিষয়ে, ঠিক আছে। কাকা ম্যাথিউজ হয়তো এটাই ভেবেছিল। তার একজন বন্ধু ছিল সে সমস্ত টাকা হারিয়ে ফেলে একটা ব্যাঙ্কে। এবং আর একজন বন্ধু, তার সর্বনাশ করেছিল একজন আত্মগোপনকারী তোলাবাজ, তাছাড়া সে নিজে কিছু টাকা হারিয়েছিল একটা প্রতারিত কোম্পানির ফাঁদে পড়ে, যেহেতু সে শিক্ষা পেয়েছিল, তাই সে সবসময় বলত, যে একমাত্র নিরাপদ, নিশ্চিত বিষয় হল যে টাকাকে স্বর্ণ বা রৌপ্যের পিণ্ডতে পরিণত করা এবং মৃত্তিকাগর্ভে স্থাপন করা। আ, মিস মার্পল বল, আমি দেখছি।

-হ্যাঁ, বন্ধুরা তার সঙ্গে তর্ক করে চলল, এটা লক্ষ্য করা গেল যে তার কোনও আগ্রহ নেই এই বিষয়ে, কিন্তু সে এটা এমনভাবে উপস্থাপনা করল যে এটা তার কাছে কোন ব্যাপারই নয়। সে বলল, তোমার গচ্ছিত টাকা রাখা উচিত একটা বাক্সে। তোমার বিছানার তলায় অথবা পুঁতে দাও বাগানে। এগুলো ছিল তার উপদেশ।

চারমিনার বলতেই থাকল এবং যখন সে মারা গেল, তার গুপ্ত সম্পদ কিছুই পাওয়া গেল না, যদিও সে খুব ধনী ব্যক্তি ছিল, সুতরাং আমরা ভাবলাম এইজন্যই সে এটা করেছে।

এডওয়ার্ড বিস্তারিতভাবে বলল, আমরা দেখেছিলাম সে তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছিল এবং তার বদলে সে সময়ে সময়ে বড় অঙ্কের টাকা পেত। এবং কেউই জানত না সে তার সম্পদগুলো কি করেছে। কিন্তু এটা স্পষ্টতই বোঝা গেল যে, সে তার আদর্শ ও নীতিতে সজাগ ছিল, এবং সেই জন্যই সে সোনা কিনত এবং মাটিতে পুঁতে রাখত।

-সে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কিছু বলেনি এ ব্যাপারে। এমনকি কোনও কাগজ কিংবা কোনও চিঠি রেখে যাননি এ ব্যাপারে।

এটা একটা পাগলামির মত। সে অনেকদিন অচেতন ছিল। কিন্তু সে আমাদের ডেক পাঠিয়েছিল। তার মৃত্যুর আগে আমরা গেলাম। তারপর সে আমাদের দিকে তাকাল এবং মুখ টিপে হাসল–একটু মূচ্ছা, তারপরে দুর্বল মুখটেপা হাসি। সে বলল তুমিই ঠিক, আমার সুন্দর জোড়া ঘুঘু তারপর সে তার চোখ বুজে ফেলল–তার ডান চোখ–এবং তারপর পিটপিট করে তাকাল। এবং তারপর সে মারা গেল। খুবই করুণ, বৃদ্ধ কাকা ম্যাথিউজ-এর এভাবে চলে যাওয়া।

–সে কি তার চোখ বুজে ফেলেছিল, মিস মার্পল চিন্তামগ্ন হয়ে বললেন।

এডওয়ার্ড কৌতূহলভাবে বলল–এটা কি তোমাকে কিছু আভাস দেয়? এটা আমাকে আরসেন লুপিন গল্পের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেখানে বলা হয়েছিল যে কিছু লুকানো ছিল একজন মানুষের স্বচ্ছ কাঁচের মত চোখে।

মিস মার্পল তার মাথা নাড়লেন। না–এই মুহূর্তে আমি অন্য কিছু চিন্তা করতে পারছি না।

চারমিয়ান হতবাক হয়ে বললেন-জেন আমাদের বলেছিল, তুমি আমাদের একবার বল কোথায় খুঁড়তে হবে।

মিস মার্পল হাসতে লাগলেন–আমি জাদুকর নই, তুমি জান। আমি তোমার কাকাকে জানি না। এবং আমি এটাও জানি না যে সে কি ধরনের মানুষ ছিল। এবং আমি এটাও জানি না তার ঘর কিংবা মাঠ।

চারমিয়ান বলল-তুমি যদি তাকে জানতে?

–ঠিক আছে, এটা খুব সহজ হত, সত্যি, সহজ হত না কি? মিস মার্পল বলল।

চারমিয়ান বলল।–তুমি অ্যাস্ট্রেতে অ্যাশ এবং দেখ এটা কতটা সহজ!

এটার মানে যে সে কোনরকম গভীর আমন্ত্রণ নির্দেশ করেনি, কিন্তু মিস্ মার্পল তৎপর হয়ে বলল–ঠিক আছে, সত্যি, আমার প্রিয়, এটা তোমার মত আমি সর্বদা চেষ্টা করেছি গুপ্ত সম্পদ দেখার এবং সে তার দিকে তাকিয়ে নিচু হয়ে ভিক্টোরিয়ান হাসি হেসে বলল।–ভালবাসার আগ্রহও বটে। চারমিয়ান তখন নাটকে যেরকম ঘটে সেরকম অঙ্গভঙ্গি করতে লাগল।

তারা অ্যানস্টিতে একটা ভ্রমণ শেষ করে ফিরেছে, তারা শাকসবজির বাগান পরিদর্শন করেছে। সেখানে পরিখা খনন করা ছিল। তারা গহন জঙ্গলের মধ্যে দিয়েও গেছে। সেখানে জঙ্গলে অনেক প্রয়োজনীয় গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। তারপর তারা সেখানে একটা সরু গলির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল তারা চিলেকোঠার উপরেও উঠেছিল, সেখানে অনেক ট্রাঙ্ক ছিল এবং কিছু বাক্স ছিল, যেগুলো বিভিন্ন জিনিস দ্বারা ভর্তি ছিল। তারা নিজের ঘরগুলোও পরিদর্শন করেছে। তারা সমস্ত কিছুই পরিমাপ করে দেখেছে এবং দেওয়ালগুলো পুনরায় তৈরী করেছে। মিস মার্পলকে পুরনো সমস্ত আসবাবপত্র দেখানো হয়েছে। সেখানে একটা সন্দেহজনক ড্রয়ারও ছিল।

সকালে যেখানে প্রাতরাশ খাওয়া হয় সেই ঘরে একটা টেবিল ছিল। সেই টেবিলে কাগজের স্তূপ ছিল–এই কাগজগুলো ম্যাথিউজ স্ট্রাউড রেখে গেছে। কোনও কিছুই ক্ষতি হয় নি। চারমিয়ান এবং এডওয়ার্ড সেই কাগজগুলো ফেরৎ পাঠায়নি। সেখানে কিছু নথিপত্র, আমন্ত্রণলিপি এবং ব্যবসার কাগজপত্র ছিল। তারা পাঠায়নি কারণ তারা ভেবেছিল এখান থেকে যদি কোনও সূত্র পাওয়া যায় এই ঘটনাটার। চারমিয়ান বলল তুমি কি মনে কর আমরা এগুলো কোথাও দেখিনি?

মিস মার্পল তার মাথা নাড়লেন। এবং বললেন–তোমাকে খুব সহজ সাদাসিধে মনে হচ্ছে। যদি আমি এটা বলি, যে তুমি খুব সহজ, সাধারণ নও, আমি মনে করি প্রত্যেকের একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত। আমার একজন বন্ধু মিসেস এল্ডরিচ, তার একজন সুন্দর পরিচারিকা ছিল। এই পরিচারিকা লিনোলিয়াম-এর ব্যবহার খুব ভালো জানত। এমনকি সে এতটাই সাধারণ ছিল যে সে বাথরুমের মেঝেও লিনোলিয়াম দিয়ে মাজত। আর মিসেস এল্ডরিচ যখনই বাথরুম থেকে বেরোত তখনই সে পিছলে পড়ে যেত এবং তার পা ভেঙ্গে গিয়েছিল। এটা খুব খারাপ ব্যাপার। কারণ ওই সময় বাথরুমের দরজা বন্ধ ছিল। এবং বাগানের মালি তখন ছিল না। সে মই আনতে গিয়েছিল। তারপর মালী জানালা দিয়ে মিসেস এল্ডরিচের করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছিল। মিসেস এল্ডরিচ খুব বিনয়ী স্বভাবের মহিলা ছিল।

এডওয়ার্ড অস্বস্তিকরভাবে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াল।

মিস মার্পল তৎপর হয়ে বললেন-আমাকে ক্ষমা কর, কারণ একটা ঘটনা, অন্য ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। কখনো কখনো এই সমস্ত ঘটনা সাহায্যও করে বটে। যদি আমরা আমাদের জ্ঞান বাড়াতে চাই এবং একটা সুন্দর জায়গার কথা ভাবতে শুরু করি তাহলে

এডওয়ার্ড বলল–আপনি একজনের কথা ভাবুন, মিস মার্পল। কারণ চারমিয়ান এবং আমার মাথায় এবং মনে কিছুই নেই জ্ঞান পাওয়ার মত অথবা দেওয়ার মত।

তারপর মিস মার্পল কাগজের দিকে তাকিয়ে বললেন-যদি তুমি কিছু মনে না কর, তাহলে কি আমি ওই কাগজগুলো দেখতে পারি। তিনি আরও বললেন–যদি সেখানে ব্যক্তিগত কিছু থাকে, অমি তাহলে এগোব না।

–ওহ, ঠিক আছে। আমি ভয় পাচ্ছি, তুমি কিছু এখন দেখবে না।

মিস মার্পল টেবিলের পাশে বসলেন; তারপর কাগজপত্র নিয়ে দেখতে লাগলেন। সে যখন একটা একটা করে কাগজ দেখতে লাগল, তখন কাগজগুলো বিভিন্ন স্কুপে আলাদা আলাদা ভাবে রাখা হল। যখন সে কাগজপত্র দেখা শেষ করল সে সেখানে কিছুক্ষণ ধরে বসে থাকল এবং এক দৃষ্টিতে কাগজগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকল।

এডওয়ার্ড বিদ্বেষপূর্ণভাবে মিস মার্পলকে বললেন–সবকিছু কি ঠিক আছে?

মিস মার্পল উদাস হয়ে গেলেন, এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করাতে তিনি স্বজ্ঞানে ফিরে আসলেন, এবং বললেন–হ্যাঁ এটা সত্যিই সাহায্য করবে।

–তুমি কি কিছু প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পেয়েছ?

-না সেরকম কিছুই পাই নি। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি তোমার কাকা ম্যাথিউজ কী ধরণের লোক ছিল। কিছুটা আমার কাকা হেনরির মত। আমার কাকা হাসিঠাট্টা খুব ভালবাসত। সে অবিবাহিত ছিল–কিন্তু আমি বিস্মিত হই, কেন সে এত হতাশায় ভেঙ্গে পড়েছিল? এটা ঠিক যে অনেকে বিয়ে করতে পছন্দ করে না। কিন্তু তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম।

মিস মার্পলের পিছনে চারমিয়ান এডওয়ার্ডকে ইশারা করল।

 মিস মার্পল তার অসুস্থ কাকা হেনরির কথা আনন্দ সহকারে বলতে লাগলেন। –আমার কাকা হেনরি মজা, কৌতুক খুব ভালবাসত। কিন্তু অনেকের কাছে কৌতুক কিংবা মজা বিরক্তিকর ছিল। শুধুমাত্র কথা তাকে ভীষণ বিরক্ত করে তুলত, সে একজন সন্দেহজনক লোক ছিলও বটে। সবসময় সে ভাবত যে তার চাকর-বাকরেরা কিছু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য কখনো কখনো তারা চুরি করত। কিন্তু সবসময় চুরি করত না। কিন্তু কাকা হেনরি তাদের সবসময় সন্দেহ করত। এমনকি শেষের দিকে সে তাদের খাবার-দাবার নিয়েও সন্দেহ করতে লাগল এবং শেষ পর্যন্ত সে খাওয়া ছেড়ে দিল। পাছে তার খাবার চুরি হয়ে যায়। সে সবসময় সিদ্ধ ডিম খেতে লাগল। কিন্তু আমার কাকা হেনরি একটা সময় খুব হাসিখুশি লোক ছিল। সে রাতের খাবারের পরে কফি খেতে পছন্দ করত। কিন্তু সে সবসময় বলত, এই কফিটা খুব জঘন্য। কারণ সে কফি পছন্দ করত কিন্তু কম পরিমাণে খেত।

এডওয়ার্ড ভাবল, যদি সে কাকা হেনরির সম্বন্ধে আরো বেশি কিছু শুনত। তাহলে সে পাগল হয়ে যেত।

মিস মার্পল বললেন –কাকা হেনরি যুবক ছেলেদের ভীষণ ভক্ত ছিল। তাদেরকে উত্যক্ত করতে পছন্দ করত। সে এক ব্যাগ মিষ্টি এমন এক জায়গায় রেখে দিত। সেখানে একজন ছেলেও প্রবেশ করতে পারবে না।

চারমিয়ান নম্র সুরে বলল–কাকা হেনরি সত্যিই খুব ভয়ঙ্কর লোক ছিল।

কারণ সে অবিবাহিত ছিল, তাই তার কোনো বাচ্চা ছিল না, কিন্তু হেনরি বোকাও ছিল না। সে সবসময় বাড়িতে টাকা পয়সার ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করত। এবং সে অনেক টাকাও সঞ্চয় করেছিল। এবং সে খুঁটিনাটি ব্যাপারে অতি সতর্কও ছিল বটে, তার অত্যধিক কথা বলার জন্য। একদিন রাত্রিবেলা কিছু বদমায়েশ তার ঘরে জোর করে প্রবেশ করল। তারপর যেখানে হেনরি টাকা রেখেছিল, সেখানে একটি গর্ত কাটল। টাকা-পয়সাগুলো ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য।

এডওয়ার্ড বলল, তোকে ঠিক পথে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

মিস মার্পল বললেন-সেখানে কোনও কিছু নিরাপদ ছিল না। সে অনেক টাকা পাঠাগারে বইয়ের তলায় রেখেছিল এবং সে লোকজনদের বারণ করত ওই পাঠাগার থেকে বই নেওয়ার জন্য।

এডওয়ার্ড বাধা দিয়ে বলল–আমি মনে করি, এটা খুব ভালো বুদ্ধি। পাঠাগার সম্বন্ধে আপনি কি জানেন?

চারমিয়ান বিদ্রুপাত্মকভাবে তার মাথা নাড়াল। তুমি কি মনে কর আমি এই বিষয়ে ভাবিনি। আমি প্রত্যেকটি বই গত সপ্তাহের মঙ্গলবার পড়েছি, যখন তুমি পোর্টমাউথে ছিলে। যতই তুমি নাড়াচাড়া কর, সেখানে কিছুই পাবে না।

এডওয়ার্ড দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল–তারপর সে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে লাগল। সে বলল–সত্যিই এটা খুব ভাল মিস মার্পল আপনি আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন। কিন্তু আমি বলছি যে এগুলো সব আলোচনা হয়ে গেছে। আমরা এখানে অনেক সময় অতিবাহিত করলাম। যাইহোক এবার আমরা গাড়ি নিয়ে বেরোব। এবং আপনি ৩ টে ৩০-এর গাড়িটা ধরতে পারবেন। কিন্তু মিস মার্পল বললেন, আমাদের কিছু টাকা নিতে হবে। তাই নয় কি মিঃ রোসিটার। তুমি এই ব্যাপারটা ছেড়ে দিয়ো না। যদি তুমি প্রথমে সাফল্য না পাও, তাহলে বার বার চেষ্টা কর।

–তার মানে তুমি চলে যাচ্ছ, আমি চেষ্টা করে যাব।

মিস মার্পল বললেন–আমি একদমই শুরু করিনি। মিসেস বিটন তার রান্নার বইতে বলে, প্রথমে তোমার খরগোসটা ধর। কিন্তু তার রান্নার বই অনেক দামী। এবং প্রত্যেকটা রান্নার প্রণালী শুরু হত এইভাবে। একটু ক্রিম নাও এবং ১২টা করে ডিম নাও। আমাকে দেখতে দাও, আমি কোথায় ছিলাম? ওহ হা মনে পড়েছে। আমি বলছিলাম আমাদের খরগোস ধরার কথা। তোমার কাকাকে ম্যাথিউজকে খরগোস বানিয়ে আমাদের দেখতে হবে কোথায় সে টাকাটা লুকিয়ে রেখেছে। এটা খুব সহজ, সাধারণ হবে বলে মনে হয়।

চারমিয়ান বলে উঠল–আপনি ভাবছেন এটা সহজ হবে?

–হ্যাঁ আমি মনে করি সে সঠিক কাজটাই করেছে–একটা গোপন ড্রয়ার যেখানে সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।

এডওয়ার্ড মনমরা হয়ে বলল–তুমি নিশ্চয়ই এই গোপন ড্রয়ারে সোনা লুকিয়ে রাখনি।

এডওয়ার্ড বলল-না একদমই না। কারণ টাকা কখনো সোনা হতে পারে না।

সে সবসময়ই এটা বলত–কিছু আমার কাকা হেনরি এ বিষয়ে খুব নিশ্চিত ছিল, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি সেখানে কিছু গুপ্ত রহস্য আছে। কারণ সেখানে হিরেও একটা গোপন ড্রয়ারে থাকতে পারে।

–আমরা সমস্ত গোপন ড্রয়ারগুলো খুঁজে দেখেছি। আমাদের একজন কেবিনেট প্রস্তুতকারী ছিল সে আসবাবপত্রগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত।

-সত্যি, এটা খুব চালাকিপূর্ণ কাজ আমি বলব, তোমার কাকার ডেস্কও এইরকম ছিল।

হ্যাঁ আছে। আমি তোমাকে দেখাব, সেখানে দেখা গেল পায়রার কোটরের মত কুঠুরি, এবং ছোট ছোট ড্রয়ারগুলো। মিস মার্পল মাঝখানের ছোট দরজাটা খুলল এবং একটা স্প্রিং পেল বাম হাতের দিকে ড্রয়ারে। তারপর চারমিয়ান সেটাকে বার করে আনল এবং দেখা গেল সেটা কার।

মিস মার্পল বললেন–তুমি কি মনে কর না এটা কোইনসিডেন্ট, কাকা হেনরিরও এরকম একটা ডেক্স ছিল, তার ডেক্স ছিল ওয়ালনাটের তৈরি এবং এটা মেহগনি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

চারমিয়ান বলল–যদি তুমি দেখ, তাহলে দেখবে সেখানে কিছুই ছিল না।

 মিস মার্পল বললেন–আমি মনে করি, তোমার কেবিনেট প্রস্তুতকারী একজন যুবক মানুষ ছিল। সে কিছুই জানত না। মানুষ যখন এই সমস্ত গোপন জায়গাগুলো খুঁজে বার করে তাহলে এটা মনে যে লোকেরা খুব অঙ্কন শিল্পে মনোযোগ দিতে পারে। এবং একটা গোপন তথ্যের মধ্যে আর একটা গোপন তথ্য থাকতে পারে। তারপর মিস মার্পল তার ধূসর চুল থেকে পিন বার করল। তারপর সে সেটাকে গোপন ড্রয়ারে লাগাল, খুলতে চেষ্টা করল। তারপর সে সফল হল তার মধ্যে ছোট ড্রয়ারটা খুলতে। সেখানে অনেক পুরনো চিঠিপত্র এবং একটা মোড়া কাগজ ছিল।

এডওয়ার্ড এবং চারমিয়ান দুজনেই ঝাঁপিয়ে পড়ল এটা দেখার জন্য। কাঁপতে কাঁপতে এডওয়ার্ড কাগজটা খুলল। সে তারপর আবার বিরক্তিতে সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিল।

চারমিয়ান রিবনটা খুলতে লাগল, যেটাতে সমস্ত চিঠিগুলো একসঙ্গে বাঁধা ছিল। সে একটা বার করল এবং দেখল এগুলো ভালবাসার চিঠি।

মিস মার্পল তার ভিক্টোরিয়ান ভঙ্গিতে এর প্রতিক্রিয়ার উত্তর দিলেন এবং বললেন–এটা সত্যিই আগ্রহজনক এবং এই কারণের জন্য তোমার কাকা কখনো বিয়ে করেনি। চারমিয়ান সশব্দে পড়তে শুরু করল।

আমার চিরদিনের প্রিয় ম্যাথিউজ, আমি অবশ্যই স্বীকার করব যে সময়টা অনেক দিন পেরিয়ে গেছে, যখন আমি তোমার চিঠিটা পেয়েছিলাম। আমি নিজেকে অনেক কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে চেয়েছিলাম। এবং নিজেকে বলতাম যে আমি পৃথিবীর একজন ভাগ্য জনক ব্যক্তি। এবং আমি আমেরিকায় গেছি এবং অনেক দ্বীপ ঘুরে বেড়িয়েছি।

চারমিয়ান থেমে গেল–এটা কোথা থেকে? ওহ, হাওয়াই! মিস মার্পল পড়তে লাগলেন? সত্যিই এটা দুর্ভাগ্যজনক, এই সমস্ত প্রতিবেশী দেশের লোকেরা কখনো ভালো দেখতে পায় না। তারা সমসময় অসভ্য এবং অমার্জিত অবস্থায় বিরাজ করে, সবসময় তারা সময় কাটায় হয় সাঁতার কেটে কিংবা মালা পরে নিজেদের সাজায়। সে এবং মিসেস গ্রে সত্যিই নিরুৎসাহিত ছিল। আমরা সমস্ত কিছু করতে পারি তাকে আনন্দ দিতে। কিন্তু আমরা একটা কারণের জন্য দুঃখিত। তুমি কি জান ম্যাথিউজ কারণটা কি? সত্যি, অনুপস্থিতি হল খুব খারাপ ভালোবাসার হৃদয়ে। তোমার স্নেহপূর্ণ প্রতিবাদমূলক আচরণ আমাকে অনেক আনন্দ প্রদান করেছে। তোমার খুব অনুরক্ত এবং বিশ্বস্ত হৃদয় আছে। এবং আমি তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা, বেটি মার্টিন।

আমি আমার বন্ধু মার্টিন গ্রেভসকে চিঠি দিয়েছিলাম। আমি আশাকরি, স্বর্গে আমাদের ক্ষমা করে দেবে।

এডওয়ার্ড সশব্দে বলল–একজন মহিলা মিশনারি। যে কাকা ম্যাথিউজ এর ভালোবাসা ছিল? কিন্তু আমি বিস্মিত হয়ে যাই এটা ভেবে যে কেন তারা বিয়ে করেনি।

আমার মনে হয় সে সমস্ত পৃথিবীটা ঘুরে দেখেছে।

চারমিয়ান বলল, চিঠিগুলো দেখে। সে মেয়েটি মাউরিটিয়াম-এও গেছে। সম্ভবত সে মেয়েলি হলুদ জ্বর কিংবা অন্য অসুখে মারা গেছে।

তারা একটু হাসল এবং তাদের যাত্রা শুরু করল। মিস মার্পলকে খুব আনন্দিত দেখাচ্ছিল।

মিস মার্পল বললেন–এটা খুবই মজার।

মিস মার্পল একটা রান্নার প্রস্তুত প্রণালী পড়েছিলেন। তাদের অনুসন্ধিৎসা দেখে, মিস মার্পল পড়তে লাগলেন। সেঁকা শাকসবজি, একটা স্যামন-এর সুন্দর টুকরো নাও, লবঙ্গ দাও, এবং বাদামী চিনি দিয়ে ঢেকে দাও। অল্প তাপে গরম কর। তারপর সেটাকে শাক দিয়ে পরিবেশন কর। এটাকে কেমন খাবার বলে মনে হচ্ছে?

এডওয়ার্ড বলল–এটা খুব নোংরাজনক খাবার বলে মনে হচ্ছে।

-না না, এটা খুব ভালো হবে। কিন্তু তুমি পুরো ঘটনাটা নিয়ে কি ভাবছ?

এডওয়ার্ডের মুখ হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠল–তুমি কি মনে কর এটা এক ধরনের ক্রাইপটোগ্রামী, সে এটা বাজেয়াপ্ত করেছিল এখানে দেখ, চারমিয়ান, তুমি তাহলে জানতে পারবে। সেখানে গোপন ড্রয়ারে আর কোন রান্নার প্রস্তুত প্রণালী রাখতে হবে না। মিস মার্পল বললেন–ঠিক বলেছ? খুব তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছ।

চারমিয়ান বলল–আমি জানি এটা কি হতে পারে–এটা কি অদৃশ্য কালি এটাকে গরম হতে দাও। এটাকে ইলেকট্রিকের আগুনে ঘোরাও।

এডওয়ার্ড তাই করল, কিন্তু কোনও লেখা দেখা গেল না।

 মিস মার্পল কাশতে শুরু করলেন–তুমি জান আমি মনে করি যে তুমি এটাকে আরো কঠিন বানিয়ে ফেলছ। এই রান্নার প্রস্তুত প্রণালী একটা নির্দেশ বহন করছে। তাহলে বল সেই নির্দেশটা কী। আমি মনে করি চিঠিগুলো খুব তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ।

–চিঠিগুলো গুরুত্বপূর্ণ?

মিস মার্পল বললেন–সম্ভবত সইগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

 কিন্তু এডওয়ার্ড মিস মার্পলের কথায় কান দিল না। সে উত্তেজিত হয়ে বলল –চারমিয়ান, এখানে এস, মার্পল সত্যি কথা বলছেন, খামগুলো দেখ এগুলো পুরনো। কিন্তু চিঠিগুলো অনেক পরে লেখা হয়েছিল।

মিস মার্পল বললেন–ঠিক বলেছ।

–সত্যিই এগুলো নকল চিঠি, কিন্তু পুরনো। আমি এটা হলফ করে বলতে পারি যে কাকা ম্যাট এই সমস্ত জাল চিঠিগুলো নিজে তৈরি করেছে। মিস মার্পল বললেন–হ্যাঁ, খুব অল্প চিঠি জাল করেছে।

সেখানে কোনও মিশনারি নেই আমার বাচ্চারা। এটাকে কঠিন করার কোনও প্রয়োজন নেই। তোমার কাকা একজন সহজ সাধারণ মানুষ। সে অনেক সময় কৌতুক, মজা করতে ভালোবাসে, এটুকুই এর বেশি কিছু নয়।

এই প্রথম চারমিয়ান এবং এডওয়ার্ড মিস মার্পলের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনতে লাগল।

চারমিয়ান জিজ্ঞাসা করল–মিস মার্পল আপনি কি বলতে চাইছিলেন।

–আমি বলতে চাইছি যে তোমরা টাকাটা নিজের হাতেই রেখেছিলে।

চারমিয়ান মাথা নিচু করল এবং আর কারোর দিকে তাকাল না। এই সইটা যেটা সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে গেছে। রান্নার প্রস্তুত প্রণালীটা একটা নির্দেশ মাত্র। এই রান্নার প্রণালীতে লবঙ্গ এবং বাদামি চিনি মেশানো ছিল। এবং অবশিষ্ট কি কি ছিল এগুলো বাদে? তাহলে কেন শূকরের জঙ্ঘা এবং শাক বাদ যাবে। শূকরের জঙ্ এবং শাক! সত্যিই এটা খুব দুর্বোধ্য। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এই চিঠিগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং যদি তুমি বিবেচনা কর যে তোমার কাকা মরার আগে কি করেছিল। সে নাকি তার চোখ বন্ধ করেছিল, তুমি বলেছিলে। ঠিক আছে এইগুলিই তোমাকে কিছু সংকেত জ্ঞাপন করবে।

চারমিয়ান বলল–আমরা কি পাগল, না তুমি পাগল? তুমি নিশ্চিতভাবে জান যে কিছু ঘটনা সত্যি ছিল না। আবার কিছু ঘটনা এখনকার দিনে কেউ বিশ্বাস করে না। মিস মার্পল বলল–আমি বেটি মার্টিনকে স্পষ্টভাবে চিঠিতে দেখতে পেয়েছি।

এডওয়ার্ড হাঁপাতে লাগল। সে চিঠিটার দিকে তাকাল এবং বেটি মার্টিনের নাম দেখতে পেল।

মিঃ রোসিটার বলল–সত্যিই এটা ঠিক। তুমি সেটা বলেছিলে। এখানে সেরকম কোনও লোকই নেই। এই চিঠিগুলো তোমার কাকা লিখেছে, এই খামে যে লেখাটা রয়েছে সেটা অনেক পুরনো, এই খামটির সঙ্গে এই চিঠিগুলোর কোনও সম্পর্ক নেই। কারণ একটা খামে পোষ্টমার্ক দেওয়া রয়েছে ১৮৫১ সালের।

মিস মার্পেল থামলেন। তারপর সে জোর দিয়ে বলল–সত্যিই কি এটা ১৮৫১ সালের, তাহলে এটা থেকে কি সবকিছু বোঝা যাবে না?

এডওয়ার্ড বলল–আমি বুঝতে পারব না, মিস মার্পল বলল–ঠিক আছে মার্পল আমি হলফ করে বলতে পারি যদি এটা আমার ভাইপো লিওনেলের না হয়, তাহলে এটা তোমারও হতে পারে না। এরকম একটা হৃদয়গ্রাহী ছেলে এবং আবেগপূর্ণ স্ট্যাম্প সংগ্রহকারী। কারণ লিওনেল স্ট্যাম্পের ব্যাপারে সবকিছু জানত। সে আমাকে অনেক বিরল এবং মূল্যবান স্ট্যাম্পের কথা বলেছিল এবং আরো বলেছিল একটা নতুন স্ট্যাম্প নীলামের জন্য গেছিল। আমি একটা নাম উল্লেখ করতে পারি যেটা লিওনেল আমাকে বলেছিল। স্ট্যাম্পটা হল ১৮৫১ সালের ব্লু টু সেন্ট। এটার দাম ২৫ হাজার ডলার ছিল। আমি মনে করি অন্য স্ট্যাম্পগুলোও খুব বিরল এবং মূল্যবান ছিল। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় তোমার কাকা এগুলো কিনেছিল এবং সেগুলো খুব যত্ন করে রাখত। এইগুলোর সম্বন্ধে জানতে পারি তার গোয়েন্দা গল্প পড়ে।

এডওয়ার্ড আর্তনাদ করে উঠল, সে বসে পড়ল এবং তার নিজের মুখটা হাত দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখল।

চারমিয়ান জিজ্ঞাসা করল কী ব্যাপার? এডওয়ার্ড বলল–কিছু না, এটা সত্যিই একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা, কিন্তু মিস মার্পলের জন্য আমরা সেই চিঠিগুলো সুন্দর করে পুড়িয়ে ফেলেছি।

মিস মার্পল বললেন–এই ভদ্রলোকেরা যারা ঠাট্টা পছন্দ করত, তারা এর গুরুত্ব কখনোই বুঝতে পারে নি। কাকা হেনরি আমাকে খ্রিস্টমাসে পাঁচ পাউন্ড টাকা পাঠিয়েছিল। সে খ্রিস্টমাস কার্ডের মধ্যে এই টাকা রেখেছিল। তারপর কার্ডটাকে আঠা দিয়ে সাঁটিয়ে দিয়েছিল এবং কার্ডটার ওপরে লিখেছিল আমার ভালবাসা এবং ওভকামনা, আমি সবকিছুই এই বছর ব্যবস্থা করে নিতে পারব।

মিস মার্পল এটা দেখে খুব রেগে গিয়েছিলেন এবং আগুনে সেই কার্ডটাকে ফেলে দিয়েছিলেন। ফলে এটা শুনে তার কাকা তাকে আর একটা কার্ড পাঠিয়েছিল।

এডওয়ার্ডের যে অনুভূতি ছিল তারা কাকা হেনরির প্রতি, সেটা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেল।

এডওয়ার্ড মিস মার্পলকে বললেন আমি এক বোতল শ্যামন আনতে যাচ্ছি। আমরা সবাই মিলে পান করব কাকা হেনরির স্বাস্থ্যের কথা ভেবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *