১০. লিউড ডেথ

পর্ব– ছয়

এ হলিউড ডেথ

১০.

ক্যামেরার মিটিমিটি চোখকে সম্ভাষণ জানাতে একসাথে দশ নগ্ন নারীর নিতম্ব জেগে উঠল। চিত্রগুলো এখনো অবহেলিত অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও, ডিটা টমি ম্যাসেলিনায় অ্যাথেনা অ্যাকুইটেনের সাথে পাছা প্রদর্শনের জন্যে নায়িকাদের মহড়া নিচ্ছিল।

অ্যাথেনা নগ্ন হয়ে অভিনয় করা প্রত্যাখ্যান করল। সে তার স্তনদ্বয় ও পাছা নগ্নভাবে প্রদর্শন করবে না। একজন তারকার জন্য বিস্মিত হবার মতো অহংকার হলেও কিন্তু মারাত্মক কিছু না। ডিটা বিভিন্ন নায়িকার মধ্যে থেকে কিছু নায়িকাকে খোলামেলাভাবে স্তনদ্বয় ও নিতম্ব প্রদর্শনের জন্য বিকল্প হিসেবে নিল। সে এখন মহড়া করছে।

অবশ্য সে নায়িকাদের সমস্ত দৃশ্যেই সংলাপসহ চিত্র ধারণ করছিল। সে তাদেরকে অশ্লীল কোনো দৃশ্যে প্রদর্শন করে তাদেরকে নিচু করতে চায়নি। কিন্তু নির্ধারিত বিষয় উপস্থাপন করতে, শেষে যৌন দৃশ্য আনতে হয়েছিল। বিছানায় গড়াগড়ি করার সময় তারা তাদের নগ্ন নিতম্ব ক্যামেরায় দেখানোর জন্য উদগ্রীব থাকে।

তার যৌন দৃশ্যে পুরুষ অভিনেতা স্টিভ স্টেলিংয়ের সাথে গড়াগড়ি মোচড়া-মুচড়ি ভালোভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল।

ববি বানজ ও স্কিপি ডিরি টেষ্ট দেখার জন্য ডিটা টমির সাথে ছিল। সেটে অন্য লোকদের মধ্যে কেবল প্রয়োজনীয় লোকেরা ছিল। ডিরি দেখল এতে টমি কিছু মনে করেনি, কিন্তু ববি বানজ তখন যা করেছিল তা ছিল যন্ত্রণাদায়ক। সেট থেকে তাকে অল্প সময়ের জন্য বাদ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ম্যাসেলিনা থেকে বাতিল করা হলে সে সবচেয়ে দুর্বল শক্তিতে পরিণত হয়ে যাবে। সে। তার ব্যবসায়িক সুনাম ব্যবহার করল।

বানজ অস্থিরভাবে জিজ্ঞেস করল, আসলে আমরা এখানে কি খুঁজছি?

যৌন দৃশ্যে অভিনয়কারী উইলিস নামের এক যুবক, সে লস অ্যাঞ্জেলেসে এব্যালেট কোম্পানির প্রধান ছিল।

 সে খোশ মেজাজে বলল, পৃথিবীতে অনেক মহিলার খুব আকর্ষণীয় নিতম্ব আছে। সাথে মাংসপেশিও আছে। আমরা নোংরা চাই না, আমরা মারাত্মক কিছু চাই না।

ঠিক, বানজ বলল, নোংরা কিছু না।

স্তন সম্পর্কে কি? ডিরি জিজ্ঞেস করল।

 তারা লাফানোর অনুমতি পাবে না, কোরিওগ্রাফার বলল।

আমরা আগামীকাল স্তন দৃশ্যের মহড়া করব টমি বলল, সম্ভবত অ্যাথেনা ছাড়া কোনো মহিলারই সুন্দর স্তন ও সুন্দর নিতম্ব নেই। আর সে তাদের দেখাবে না।

বানজ গোপনভাবে বলল, ডিটা তুমি মেনেছিলে। টমি তার দুর্বল শক্তির অবস্থা ভুলে গেল।

ববি তোমার পাছা খুব সন্দর আমরা যেমন খুঁজছি ঠিক তেমনিই। সে তোমার সাথে যৌন সংসর্গ করবে না। অতএব তুমি ধরে নাও সে একজন পুরুষ সমকামী।

ঠিক ঠিক, বানজ বলল, আমি একশর মতো ফোন কল পেয়েছি, আমি অবশ্যই ফিরে যাব।

আমাকেও ডিরি বলল।

আমি তোমাদের মতো অভিনয়কারীদের বিশ্বাস করি না টমি বলল।

ডিরি বলল, ডিট একটু সমবেদনা অবশ্যই আছে। ববি আর আমি কি বিনোদনইবা পেয়েছি। আমরা গলফ খেলায় খুব ব্যস্ত থাকি। ছবি দেখা আমাদের কাজ। থিয়েটার বা অপেরায় যাবার সময় আমাদের নেই। আমাদের পরিবারের সাথে সময় ব্যয় করার পরে সম্ভবত কৌতুক করার মতো দিনে এক ঘন্টা সময় কোনো মতে বের করতে পারি। নাকি দিনে এক ঘণ্টা কি তোমার সাথে কাজ করতে পারি? উদ্ভট। এটা প্রায় শ্রমিকদের নিবিড় বিনোদন।

ওয়াউ, স্কিপি, এটা দেখো। বানজ বলল, আমি আদৌ এত সুন্দর পাছা দেখেনি!

 বিস্ময়ে ডিরি মাথা ঝাঁকাল। ববি-ই ঠিক। ডিটা এই একজন, তাকে স্বাক্ষর করাও।

টমি অবিশ্বস্তভাবে মাথা নাড়াল। যিশু, তোমরা অভিনয়কারীরা কম বুদ্ধির অধিকারী। সে বলল, এটা একটা কালো পাছা।

যে কোন ভাবে তাকে স্বাক্ষর করিয়ে ফেল। ডিরি উচ্ছাসিত আনন্দের সাথে বলল।

 হ্যাঁ, বানজ বলল। ম্যাসালিনার জন্য এক ইথিওপিয়ান ক্রীতদাসী বালিকা। কিন্তু কেন সে মহড়ায় যন্ত্রণায় যাবে?

ডিটা টমি ঔৎসুক্যের সাথে উভয় লোককেই দেখল। এখানে ছবি ব্যবসায় দুইজন ভয়ঙ্কর লোক আছে। ফিরে যাবার জন্যও তাদের কাছে একশর ওপর ফোন কল আসে। তারা ওই দুইজন টিনেজারের মতো যারা তাদের যৌন উত্তেজনার সর্বোচ্চ পর্যায়ের খোঁজে ব্যস্ত। সে ক্লান্তভাবে বলল, যখন আমরা  কাউকে বাছাই করে ফেলব তখন আর আমরা বলতে পারব না আমরা ঠিক সাদা পাছা চাই।

বানজ বলল, আমি ঐ মেয়েটির সাথে দেখা করতে চাই।

 আমিও, ডিরি বলল।

কিন্তু মেলো স্টুয়ার্ট সব থামিয়ে সেটে এলো। সে বিজয়ীর মতো হাসছিল। আমরা সবাই কাজে ফিরে যেতে পারি। সে বলল, অ্যাথেনা ছবিতে ফিরে যাচ্ছে। তার স্বামী বজ স্কানেট স্বয়ং ঝুলে গেছে। বজ স্কানেট ছবি থেকে দূরে। সে যখন এটা বলল, তখন সে হাততালি দিল যেমন কর্মীরা সর্বদা হাততালি দেয়, কোনো ছবির অভিনেতার রোল শেষ হলে। স্কিপি ও ববি তার সাথে হাততালি দিল। ডিটা টমি বিরক্ত হয়ে তাদের তিন জনের দিকে চেয়ে রইল।

এলি চায় তোমরা দুজনে ঠিক করে ফেল, মেলো বলল, তুমি নও ডিটা। সে হাসল। এটা কি একটা ব্যবসায়িক আলোচনা, কোনো সৃষ্টিশীল সিদ্ধান্ত হবে না। সব লোক শব্দ মঞ্চ ত্যাগ করল।

যখন তারা চলে গেল তখন ডিটা টমি সুন্দর পাছাওয়ালা মেয়েটিকে তার ট্রেইলারের কাছে ডাকল। সে খুব সুশ্রী, অথচ কালো কিছুটা তামাটে তা ছিল নির্লজ্জ প্রাণোচ্ছলতা। ডিটা লক্ষ্য করল সে ছিল প্রকৃতি প্রদত্ত কিছু যা কোনো অভিনেতার থাকে না।

 ইমপ্রেস ম্যাসালিনায় আমি তোমাকে এক ইথিওপিয়ান ক্রীতদাসী বালিকার রোল দিচ্ছি, ডিটা বলল, তোমার এক লাইন সংলাপ বলতে হবে কিন্তু আসলে আমরা তোমার পাছা দেখাব।

দুভার্গ্যক্রমে আমাদের প্রয়োজন ছিল একটা সাদা পাছা, মিস অ্যাকুইটেন ও তোমারটাও কালো। অন্যদিকে তুমি অবশ্যই ছবি চুরি করবে। মেয়েটি বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি উপহার দিল। Falene fant, এটা একটা ছবির নাম।

তখন মেয়েটি বলল। আপনাকে ধন্যবাদ।

দিকনির্দেশনা ও চাকরি উভয়ের জন্য ধন্যবাদ।

একটা শুভ খবর ডিটা বলল, আমাদের প্রযোজক স্কিপি ডিরি বলে, পৃথিবীতে তোমার পাছা খুব সুন্দর। স্টুডিওর সভাপতি ও প্রোডাকশনের প্রধান মিস্টার বানজ তাই মনে করে। তুমি তাদের কাছ থেকে শুনতে পাবে।

ফ্যালেন ফ্যান্ট দুষ্ট হাসি দিল, আর আপনি কি মনে করেন? সে বলল।

 ডিটা টমি কাঁধ ঝাঁকাল। পুরুষেরা যে রকম পাছা নিয়ে ভাবে, আমি সে রকম ভাবি না।

কিন্তু আমি মনে করি তুমি আকর্ষণীয় এবং একজন খুব ভালো অভিনেত্রী। আমি ভাবি ছবিতে তুমি একলাইনের বেশি সংলাপ ভালোভাবেই করতে পারবে। আর আজ রাতে আমার বাড়িতে তুমি এলে আমরা তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে পারি। আমি তোমার জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করব।

সেই রাতে ডিটা টমিও ফ্যালেন ফ্যান্ট বিছানায় দুই ঘণ্টা ব্যয় করল। ডিটা রাতের খাবার রান্না করল। তারা ফ্যালেনের ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করল। এটা কৌতুক ডিটা বলল, কিন্তু আমি এখন থেকে মনে করি আমরা ঠিক বন্ধু হয়ে যাব, আর এই রাতের ঘটনা তুমি গোপন রাখবে।

 অবশ্যই, ফ্যালেন বলল, কিন্তু সবাই জানে তুমি পুরুষ সমকামী। এটা কি আমার কালো পাছা? সে দাঁত বের করে হাসছিল।

ডিটা পুরুষ সমকামী শব্দটা উপেক্ষা করল।

এটা ছিল একটা ইচ্ছাকৃত নির্লজ্জতা প্রত্যাখ্যানের জন্য ফিরিয়ে দেয়া কালো, সাদা, সবুজ অথবা হলুদ যাই হোক, এটা একটা সুন্দর পাছা। ডিটা বলল। কিন্তু তুমি আসলেই প্রতিভার অধিকারী। আমার ছবিতে তোমাকে নিলে তোমার প্রতিভার মূল্য পাবে না আর প্রতি দুই বছরে শুধু আমি একটা ছবি বানাই। তোমাকে এর চেয়ে আরো বেশি কাজ করতে হবে। বেশিরভাগ পরিচালক পুরুষ, তারা তোমার মতো কাউকে ছবিতে নিলে, তারা সর্বদা একটু আধটু যৌন সঙ্গমের আশা করে। তুমি পুরুষ সমকামী জানতে পারলে তারা হয়তো তোমায় এড়িয়ে যাবে।

একজন প্রযোজক স্টুডিওর প্রধান আমার থাকলে, কার প্রয়োজন পরিচালকের? ফ্যালেন উল্লসিতভাবে বলল।

 তুমি পারবে ডিটা বলল, অন্য অভিনেতারা তোমার দরজায় যেতে পারে। কিন্তু পরিচালক চলচ্চিত্রের সম্পাদনার কামরায় তোমাকে ত্যাগ করতে পারে। অথবা তোমাকে সে গুলি করতে পারে। যাতে তোমার চেহারা ও কথা বলা নষ্ট হয়ে যায়।

ফ্যালেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার মাথা ঝাঁকাল।

আমি ববি বানজ, স্কিপির সাথে অবশ্যই যৌন সঙ্গম করব। আর ইতিমধ্যে তোমার সাথে আমি সঙ্গম করেছি। এটা কি নিঃশর্তভাবে প্রয়োজন? সে সরলভাবে তার চোখ বড় করল।

 ডিটা আসলেই তৎক্ষণাৎ তার প্রিয় হয়ে গেল। এখানের এই বালিকাটি ক্ষুয়া হতে চেষ্টা করল না। আজকের রাত আমার জন্য খুব ভালো সময়। সে বলল, তুমি যথাযথভাবে আসল কাজে আঘাত দিয়েছ।

ভালো, আমি কখনো বুঝতে পারি নাই জনসাধারণের যৌন বিষয়ে বাড়াবাড়ি। ফ্যালেন বলল, এটা আমার জন্য কঠিন কিছু নয়। আমি ড্রাগ গ্রহণ করি না, বেশি মদও পান করি না। আমার অবশ্যই কিছুটা মজা থাকতে হবে।

 খুব সুন্দর, ডিটা বলল, এখন ডিরি ও বনজ সম্পর্কে আমি তোমাকে বলব, ডিরি কেন অধিকতর নিশ্চিত। ডিরি আত্মমগ্ন। সে নারীদের ভালোবাসে। সে আসলেই তোমার জন্য কিছু করবে। সে তোমার ভালো দিক উন্মুক্ত করবে। তোমার প্রতিভা দেখায় সে যথেষ্ট দক্ষ। এখন বানজ সম্পর্কে বলি। এলি ক্যারিয়ার ছাড়া কাউকে পছন্দ করে না। তাছাড়া তার কোনো পছন্দ ছিল না, প্রতিভার জন্য তার কোনো দৃষ্টি ছিল না। বানজ তোমাকে একটা স্টুডিওতে স্বাক্ষর করাবে এবং পরে তুমি পচে যাবে। সে তার স্ত্রীকে শান্ত রাখার জন্য তার সাথে থাকে। বেশি ডলারের জন্যে সে অনেক কাজ পায় কিন্তু শালীন কোনো কাজ পায় না। স্কিপি ডিরি তোমাকে পছন্দ করলে তোমার ক্যারিয়ারের জন্যে কিছু করতে পারবে।

এই কথা কিছুটা অনুভূতিহীন, ফ্যালেন বলল।

ডিটা তাকে বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরল। আমাকে বাজে ভেব না। আমি একজন পুরুষ সমকারি কিন্তু আমি একজন নারীও। আমি অভিনেতাদের চিনি। তারা যে কোনো কিছু করবে পুরুষ কিংবা নারী তুমি ওই মইয়ে চড়ো দেখাবে। আমরা সবাই বড় বাজির জন্যে খেলি। তুমি কি জানো নয়টা-পাঁচটা চাকরি করে থাকতে হবে ওকলাহামায় অথবা তুমি কি জানো ছবির একজন তারকা হয়ে তুমি বাস করবে ম্যালিবুতে? তোমার গড়ন দেখে বুঝতে পারছি যে তোমার বয়েস তেইশ বছর। ইতিমধ্যে তুমি কতবার যৌন সঙ্গম করেছ?

তুমি চালাচ্ছ? ফ্যালেন বলল। সম্ভবত পঞ্চাশ। কিন্তু সমস্তই মজার জন্য, সে আত্মপক্ষ সমর্থনে তামাশা করে বলল।

 এর চেয়ে একটু তোমাকে দিতে বড় আঘাত পারবে না ডিটা বলল, এবং কে জানে, এটাও হয়তো মজা করাই হবে আবার।

 তুমি জান ফ্যানেল বলল, আমার তারকা হওয়া নিশ্চিত না হলে আমি এটা করব না।

অবশ্যই, ডিটা বলল, আমাদের কেউই পাবে না।

ফ্যানেল হাসল। তোমার সম্পর্কে কি? সে জিজ্ঞেস করল, আমার বাছাই করার কোনো উপায় ছিল না। ডিটা বলল, নিছক প্রতিভার আচ্ছন্নতায় এটা আমি গড়ে নিই।

দুর্ভাগ্য তোমার, ফ্যানেল বলল।

লডস্টোন স্টুডিওতে এলি ম্যারিয়নের সাথে তার অফিসে ববি বানজ, স্কিপি ডিরি এবং মেলো স্টুয়ার্ট মিটিং করছিল। বানজ রাগান্বিত ছিল। বোকা লেওড়াটা যে সবাইকে মৃত্যুর ভয় দেখায় এবং পরে সেই আত্মহত্যা করবে।

 ম্যারিয়ন স্টুয়ার্টকে বলল, আমার ধারণা, তোমার মক্কেল কাজে ফিরে আসছে।

অবশ্যই, মেলো বলল।

তাকে পুনরায় করতে হবে না, তাকে আলাদা উৎসাহ প্রদান করার প্রয়োজন নেই। শান্ত ও মৃদু স্বরে ম্যারিয়ন জিজ্ঞেস করল। প্রথমে মেলা স্টুয়ার্ট সজাগ হলো যে ম্যারিয়ন রাগান্বিত রয়েছে। না, মেলো বলল, সে আগামীকাল কাজ আরম্ভ করতে পারে। খুব ভালো ডিরি বলল, আমরা হয়তো এখন নিম্ন বাজেটে আসতে পারব।

আমি চাই তোমরা সবাই কথা বন্ধ করে আমার কথা শুন ম্যারিয়ন বলল। এই রূঢ়তা এতই নাজিরবিহীন যে, তারা চুপ করতে বাধ্য হলো। ম্যারিয়ন সাধারণ নিয়মে হাসি-খুশি স্বরে বলছিল, কিন্তু তার রাতের বেলায় এখন কোনো ভুল নেই।

স্কিপি ছবির বাজেট ভালো, আমরা কি নগ্ন দৃশ্য দেব? আমরা কোনোভাবেই ছবির মালিক না। আমরা আতঙ্কগ্রস্ত, আমরা একটা বোকামীপূর্ণ ভুল করেছি।

আমাদের সবাই দোষী। এই ছবির মালিক আমরা নই। এটা বাইরের।

স্কিপি ডিরি তাকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা করছিল। চিতরনে লডস্টোন একটা ভবিষ্যৎ তৈরি করবে। আর লাভের ওপর তুমি একটা পার্সেন্টেজ পাবে। এটা এখনো একটা ভালো ব্যবস্থা।

 কিন্তু ডি লিনা আমাদের চেয়ে বেশি উপার্জন করবে। বানজ বলল, এটা ঠিক না

এক্ষেত্রে ডি লিনা সমস্যার সমাধানে কিছুই করবে না। ম্যারিয়ন বলল, অবশ্যই আমাদের স্টুডিওর ছবি পাবার ক্ষেত্রে কিছুটা বৈধ ভিত্তি আছে।

 এটা সত্য, বানজ বলল, তার সাথে যৌন সঙ্গম করো। আমাদের আদালতে যেতে হবে।

ম্যারিয়ন বলল, আমরা তাকে আদালতের ভয় দেখিয়ে তার অর্থের অংশ কেটে নেব। আমরা তাকে তার অর্থ ফিরিয়ে দশ শতাংশে মোটের ওপর সমন্বয় করব।

ডিরি হাসল। এলি ও মলি ফ্লাডারস তোমার অংশ তাকে নেবার অনুমতি দেবে না।

 আমরা ডি লিনার সাথে সরাসরি আলোচনা করব, ম্যারিয়ন বলল, আমার মনে হয়। আমি তাকে বুঝতে পারব। সে একটু সময় বিরতি নিল। আমি খবর পাওয়া মাত্র তাকে বলব। সে খুব তাড়াতাড়ি আমার সাথে যোগদান করবে। আর তুমি জানো তার একটা নিংসন্দেহ পটভূমি রয়েছে। এই আত্মহত্যা তার জন্য খুবই সৌভাগ্যের কারণ হয়েছে। আমি মনে করি না যে আদালতে কেসের প্রচারণার ব্যাপারে সে তোয়াক্কা করবে।

ক্রস ডি লিনা জানাদু হোটেলের চিলেকোঠায় বসে সংবাদপত্রে স্কানেটের মৃত্যুর ওপর রিপোর্ট পড়ছিলেন। সবকিছু যথাযথভাবে চলে গেল। এটা একটা পরিষ্কার আত্মহত্যার কেস ছিল। এটা প্রমাণের জন্য দুটা সুন্দর নোট দেয়া হয়েছে।

 হাতের লেখার বিশেষজ্ঞদের জালিয়াতি তদন্ত করার কোনো সম্ভাবনা নেই। বজ স্কানেট বড় সাংবাদিকের কাউকেই ছাড়েননি। আর লিওনার্ডো সোসা ছিল খুব ভালো। স্কানেটের হাত ও পায়ের বেড়ি উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিথিল করা হলো। আর এতে কোনো দাগ লাগেনি। লিয়া ভাজি ছিল একজন বিশেষজ্ঞ।

ক্রসের রিসিভ করা প্রথম কলটি তার প্রত্যাশিত ছিল। কুওগের ফ্যামিলি ম্যানশনে জর্জিও ক্লেরিকুজিও তাকে ডাকল। ক্ৰস নিজেকে কখনো বিভ্রান্ত করতে পারেনি। সে যা করেছিল ক্লেরিকুজিও তা বের করতে পারল না।

 এলি ম্যারিয়নের দ্বিতীয় কলটি রিসিভ করল ক্রস। তার আইনজীবীকে ছাড়াই লস অ্যাঞ্জেলেসে আসতে বললেন। ক্রস বলল, সে অবশ্যই যাবে। কিন্তু লাস ভেগাস ত্যাগ করার আগেই সে মলি ফ্লাভারকে কল করে। আরো জানায় যে, ম্যারিয়ন তাকে ফোন করেছিল। সে রাগান্বিত ছিল। ঐ সব নোংরা জারজরা, সে বলল, আমি তোমাকে বিমানবন্দরে আটকাব এবং আমরা একত্রে ভেতরে যাব। তুমি একজন আইনজীবী ফলে কখনো একজন স্টুডিওর। প্রধানকে সুপ্রভাত বলবে না। যখন তারা দুজন লডস্টোন স্টুডিও ও ম্যারিয়নের অফিসের দিকে হাঁটছিল তখন তারা জানল সেখানে সমস্যা আছে। সেখানে চারজন লোক অপেক্ষা করছিল। মারাত্মক হিংস্র লোকদের হাতে ছিল কিছু ঘটাবার মতো শক্তিশালী অস্ত্র।

আমি আমার আইনজীবীকে আনার সিদ্ধান্ত নিলাম। ক্রস ম্যারিয়ানকে বলল, আমি আশা করছি তুমি কিছু মনে করবে না।

 তুমি যেটা ইচ্ছে করো ম্যারিয়ন বলল, আমি তোমার অস্বস্তি থেকে তোমাকে কিছুটা রক্ষা করতে চেষ্টা করব।

কঠিন ও রাগি মুখে মলি ফ্লাভারস বলল, এটা আসলেই ভালো হতে যাচ্ছে। তুমি ছবি ফিরত চাও, কিন্তু আমাদের চুক্তি কঠিন।

 সে ইতিমধ্যে ঝুঁকির মধ্যেই আতুমি সঠিক ম্যারিয়ন বলল। কিন্তু ক্রসের ন্যায্য নাটকের অনুভূতির প্রতি আমরা আপিল করতে যাচ্ছি। সে এ সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারল না। যেহেতু লডস্টোন স্টুডিও বিনিয়োগ করেছে বেশ সময়, টাকা ও সৃষ্টিশীল প্রতিভা। যা ছাড়া এই ছবি বানানো সম্ভব নয়। ক্রস তার অর্থ ফেরৎ পাবে। সে যৌথ সমন্বয়ের দশ শতাংশ পায় এবং আমরা সমন্বয়ে সিদ্ধান্তে উদার হব। যে কোনো ঝুঁকিতে পড়বে না।

মলি বলল, তোমাকে সুযোগ দেয়া অপমানজনক।

পরে আমাদের অবশ্যই আদালতে যেতে হবে। ম্যারিয়ন বলল, ক্রস আমি।

আমি নিশ্চিত তুমি জানবে যে আমি কি রকম খারাপ কাজ করতে পারি। সে ক্রসের দিকে তাকিয়ে হাসল। এটা ছিল একটা দয়ালু হাসি, যার ফলে তার গরিলার মতো মুখকে বানিয়েছিল স্বর্গীয় দূতের মতো।

 মলি ছিল অসংযত। এলি এক বছরে তুমি বিশ বার আদালতে যাও এবং তোমাকে অপসারণ করে, কারণ তুমি সর্বদা পায়খানা টানছিলে এর মতো। সে ক্রসের দিকে ফিরে বলল, আমরা ছাড়ছি।

কিন্তু ক্রস জানত যে আদালতে দীর্ঘমেয়াদি কেস চালানোর সামর্থ্য তার নেই। তার ছবি কি-না স্কানেটের মৃত্যর পেছনের সব ঘটনার খোঁজ নিয়েছে। তারা তাকে এমনভাবে চিহ্নিত করেছে যাতে সে জনসাধারণের সাথে খুবই পরিচিত মুখ হয়ে যায়। আর একে বড় ডন এখনো সহ্য করবে না। কোনো ভুল ছিল না। ম্যারিয়ন এর সব জেনেছিল।

চলো আমরা সব দিকে দিয়েই কঠিন হই।

ক্রস মলিকে বলল। পরে সে ম্যারিয়ন বানজ, স্কিপি ডিরি ও মেলো স্টুয়ার্টের দিকে ঘুরল।

একজন জুয়াড়ি আমার হোটেলে এসে জুয়া খেলে জয়ী হলে আমি তাকে আলাদা কিছু দেব। এমনকি আমি বলছি না আমি তাকে অর্থ দেব। ভদ্রলোক হিসেবে তুমি এখানে তাই করছ? অতএব কেন তুমি এটা পূর্ণ বিচার করবে না?

 বানজ অবজ্ঞাভরে বলল, এটা ব্যবসা, জুয়া খেলা নয়। মেলো স্টুয়ার্ট ক্রসকে বলল, রক্ষণশীলভাবে তোমার বিনিয়োগে তুমি দশ মিলিয়ন ডলার বানাবে। নিশ্চিতভাবেই এটা সহজ।

 আর এমনকি তুমি কোনো কিছু করছিলে না বানজ বলল শুধু স্কিপি ডিরিকে তার পাশে আছে বলে মনে হলো। ক্রস তুমি আর যোগ্য হও। কিন্তু আদালতে লড়াই করার চেয়ে তারা যে অফার দিয়েছে তা ভালো। ক্ষতির ঝুঁকি নিই। এই একজন চলে যাক। তুমি আর আমি স্টুডিও ছাড়াই আমরা ব্যবসা শুরু করব। আর আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি তুমি সহজ ঝাঁকুনি পাবে।

 ক্রস বুঝল হুমকির মতো মনে না হলেও এটা গুরুত্বপূর্ণ। বিনা প্রতিবাদে গ্রহণ করে সে হাসল। সম্ভবত তুমি সম্পূর্ণ সঠিক, সে বলল, আমি ছবির ব্যবসায় ভালোর জন্য সবার সাথেই থাকতে চাই। আর দশ মিলিয়ন লাভ কোনো খারাপ শুরু নয়। মলি কাগজপত্রের সব দায়িত্ব নেবে। তখন আমাকে অবশ্যই একটা প্লেন ধরতে হবে। Please excuse me. সে কামরা থেকে বের হলো আরো মলি তাকে অনুসরণ করল।

আদালতে আমরা জিততে পারি, মলি তাকে বলল, আমি আদালতে যেতে চাই না। ক্রস বলল, সুযোগ তৈরি করো।

 মলি তাকে খুব সর্তকতার সাথে বোঝাল। পরে সে বলল, ঠিক আছে, কিন্তু দশ শতাংশের চেয়ে আমি বেশি পাব।

 যখন পরের দিন ক্রস কুওগের ম্যানশনে পৌঁছল, তখন ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও, তার পুত্র জর্জিও, ভিনসেন্ট ও পেটি এবং নাতি ডেন্টি তার জন্যে অপেক্ষা করছিল। তারা ইতালির ঠাণ্ডা শূকরের রান, পনির, কাঠের বাটি ভর্তি প্রচুর সালাদ ও বড় বড় কেত্তাদুরস্ত ইতালির রুটি দিয়ে বাগানে দুপুরের খাবার খেল।

ডনের জন্য ছিল গুঁড়ো পনিরের বাটি। তারা খাচ্ছিল, ডন বলল, ক্রকসিফিজিও আমরা শুনলাম তুমি ছবির ব্যবসায়ের সাথে জড়িত হয়েছ। লাল মদে চুমুকের জন্যে সে বিরতি নিল। সে পরে এক চামচ ইতালির পারামিসান গুড়া পনির খেল।

হ্যাঁ, ক্রস উত্তর দিল।

জর্জিও বলল, এটা কি সত্য যে, ছবির অর্থের জন্য জানা তোমার শেয়ার থেকে কিছু তুলেছে।

এটা আমার অধিকারের মধ্যে গণ্য। ক্রস বলল, আমি সর্বোপরি তোমার পশ্চিমের ব্ৰগ লিওন। সে হাসল।

ব্রিগ লিওন, ডেন্টি বলল।

 ডন তার নাতির দিকে অসমর্থনের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সে ক্রসকে বলল, তুমি পরিবারের পরামর্শ ছাড়া খুবই মারাত্মক একটা ঘটনার সাথে জড়িত হয়েছিলে।

তুমি আমাদের প্রজ্ঞা খোঁজনি। সবার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ, তুমি একটা অবাধ্যতার কাজ করেছ। এর জন্য অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া অবশ্যই তীব্র হবে। এর জন্য প্রথা হলো তুমি অবশ্যই আমাদের সম্মতিতে রাজি হবে। না হলে, তোমার নিজের পথে যাবে এবং পরিণতি ভোগ করবে।

 আর তুমি পরিবারের সম্পদ ব্যবহার করতে, জর্জিও কর্কশভাবে বলল। সিয়েরার হান্টিং লজ লিয়া ভাজি, লিওনার্ডো সোসা এবং পোলার্ড তুমিও নিরাপত্তা এজেন্সির সাথে ব্যবহার করবে। অবশ্য তারা তোমার পশ্চিমের লোক কিন্তু তারাও পরিবারে সম্পদ। সৌভাগ্যক্রমে সবকিছু যথাযথভাবে চলে গেল। কিন্তু এটা থাকল না? আমরা সবাই অবশ্যই ঝুঁকিতে রয়ে গেলাম।

 ডন ক্লেরিকুজিও অস্থিরভাবে বললেন, সে সবকিছু জানে। প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন। ভাগ্নে তুমি কয়েক বছর আগে জরুরি কাজে অংশগ্রহণে অপারগতা জানিয়েছিলে, যে কাজ অবশ্য কিছু লোকে করে। এ ঘটনা সত্ত্বে আমি তোমার অনুরোধ রক্ষা করেছিলাম। কারণ তুমি ছিলে খুবই মূল্যবান। এখন তুমি তোমার নিজের লাভের জন্য এটা করলে। ভালোবাসার ভাগ্নে হিসেবে এটা নয় কি, আমি সব সময় অবশ্যই জানি।

ক্রস পরে জানল যে, ডন তার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। সে জেনেছিল যে সত্য বলছিল না। আসলে সে অ্যাথেনার রূপে প্রলুব্ধ হয়েছিল।

এটা আসলে ব্যাখ্যা করার মতো কারণ হতে পারে না। বাস্তবে এটাকে অপমানিত করা হচ্ছিল। আরো সম্ভাব্যভাবে ভয়ানক ছিল। একটা আকর্ষণীয় অদ্ভুত মহিলার চেয়ে অমার্জনীয় হয়েছিল তা যা রাজকীয় ক্লেরিকুজিও পরিবারের গুরুত্ত্ব অধিক ছিল। সে সতর্কভাবে বলল, বেশি পরিমাণ উপার্জনের সুযোগ আমি দেখলাম। আমি একটা নতুন ব্যবসা করার সুযোগ পেলাম। আমার জন্যে এবং আমার পরিবারের জন্য। একটা ব্যবসায়ে কালো টাকা সাদা বানানো যাবে। কিন্তু আমাকে অবশ্যই তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নিতে হবে। আমার নিশ্চতভাবেই এটা গোপন রাখার ইচ্ছে নেই।

 সত্য যে, পরিবারের সম্পদ ব্যবহার করব যা তুমি অবশ্যই জানবে। আমি চেয়েছিলাম কাজ সম্পন্ন করার সাথে সাথে তুমি আসবে।

ডন তার কথা শুনে হেসে ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করল, কাজ সম্পন্ন করাটা কি?

 ক্রস তৎক্ষণাৎ বুঝতে পালে যে, ডন সবকিছু জেনে গেছে। অন্য একটা সমস্যা আছে ক্রস বলল এবং ম্যারিয়নের সাথে করা নতুন ব্যবস্থা সে ব্যাখ্যা করল। ডন উচ্চস্বরে হেসে উঠলে, সে বিস্মিত হয়ে গেল।

তুমি যথার্থই করেছিলে, ডন বলল, একটা আদালতের মামলা অবশ্যই দুর্ঘটনা বয়ে আনে। তাদের বিজয় তাকে অর্জন করতে দাও। কিন্তু তারা যে পাঁজি। এটা খুব ভালো বিষয় যে আমরা সবসময় ঐ ব্যবসায়ের বাইরে ছিলাম। তিনি কিছুক্ষণের বিরতি নিলেন। বড় জোর দশ মিলিয়ন তুমি উপার্জন করতে পারতে। সেটা বিরাট অঙ্ক।

না, ক্রস বলল, পাঁচ আমার জন্য এবং পাঁচ পরিবারের জন্য। আমি ভাবি না, আমরা সহজে পিপি হয়ে যাব। আমার কিছু পরিকল্পনা আছে কিন্তু আমার অবশ্যই পরিবারের সাহায্য লাগবে।

পরে আমরা অবশ্যই বেশি ভাগের জন্য আলোচনা করব, জর্জিও বলল। সে ছিল বানজের মতো। ক্রস ভাবল সে সর্বদা বেশির জন্য চাপ দিত।

ডন অস্থিরভাবে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন। প্রথমে খরগোস ধরব, পরে আমরা এটা ভাগ করব। তোমার ওপর পরিবারের করুণা কিন্তু একটা বিষয়। সবকিছুর জোরালো আলোচনার পর এটা করা হবে। তুমি কি আমার কথা বুঝেছ ভাগ্নে?

হ্যাঁ ক্রস বলল।

সহায়তা-অনুভূতি নিয়ে সে কুওগ ত্যাগ করল। ডন তার মায়া দেখল।

ডন ডোমেনিকো ক্লেরিকুজিও’র বয়স আশি বছর, এখনও তিনি তার সাম্রাজ্যে তার আদেশ বহাল রেখেছেন। অনেক প্রচেষ্টায় অনেক মূল্য দিয়ে তিনি তার পৃথিবী সৃষ্টি করেছে। তিনি অনুভব করেন, এটা তার উপার্জিত সম্পদ।

 যখন অনেক লোক পাপ কাজের জন্য আচ্ছন্ন থাকে, দুঃস্বপ্নের জন্য অনুতাপ করে এমনকি তাদের নিজস্ব সততায় সন্দেহ করতে শুরু করে অথচ ডন এখনো তার গুণে সে অনড়, যেমন তিনি তার চল্লিশ বছর বয়সে ছিলেন।

ডন ক্লেরিকুজিও তার বিশ্বাস ও রায়ে এখন কঠিন। ঈশ্বর একটা বিপজ্জনক পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আর এর মাঝে এমনকি মানব জাতিকে করেছে আরো বিপজ্জনক। ঈশ্বরের পৃথিবী একটা কয়েদখানা যার মধ্যে মানুষ তার প্রতিদিনের রুটি-রোজগার করে এবং সহকমী লোক ছিল একজন সহকারী জানোয়ার, মাংসাশী এবং করুণাহীন। ডন ক্লেরিকুজিও গর্বিত ছিল যে, তার প্রতিরক্ষায় তার ভালোবাসার লোকেরা নিয়োজিত ছিল তাদের সারাটা জীবনের মধ্য দিয়ে।

তার বেশি বয়স নিয়ে সে তৃপ্ত ছিল। তার শত্রুদের মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচিয়ে দেবার ইচ্ছা তার ছিল। নিঃসন্দেহে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। তিনি কি একজন খ্রিস্টান ছিলেন না যিনি তার নিজের ঘরে পবিত্র চ্যাপেলের ব্যবস্থা রাখতেন? কিন্তু তিনি তার শত্রুদের ক্ষমা করে দিতেন যেমন ঈশ্বর সব মানুষকে ক্ষমা করে।

 ক্লেরিকুজিও’র সৃষ্টি করা সংসারে অনেক শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন। তার পরিবারের হাজার হাজার লোক ব্রঙ্কস এনকেভে বসবাস করছিল। ব্ৰগ লিওন বিভিন্ন এলাকা শাসন করছিল। তাদের অর্থ তার কাছে রাখার বিশ্বাস করেছিল। চলমান সমাজ ব্যবস্থার সাথে চলতে তারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে, তার মধ্যস্থতার জন্য তারা আসত। তারা জেনেছিল যে, ডন সঠিক। প্রয়োজনে অসুস্থতা অথবা যে কোনো সমস্যার সময় তারা তার কাছে আসত আর তিনি দুর্ভাগ্যের একটা নির্দেশনা দিয়ে দিতেন। আর এই কারণেই তারা তাকে ভালোবাসত। ডন জানলেন যে, ভালোবাসা বিশ্বাসযোগ্য কোনো আবেগ নয়; কত গভীর তাও একটা বিষয় না। ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা নিশ্চিত করে না, মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করে না, অত্যধিক জটিল এই পৃথিবীতে ঐক্যের কোনো ব্যবস্থা করে না। কোনো মানুষই এটা ডন ক্লেরিকুজিও’র চেয়ে বেশি বুঝে না। সত্য ভালোবাসা উদ্বুদ্ধ করতে একজন লোক শুধুই ভয় পায়। নিঃসঙ্গ ভালোবাসা ঘূণ্য। ভালোবাসায় বিশ্বাস ও বাধ্যতা না থাকলে এটা কিছুই না। তার শাসন স্বীকার না করলে তার প্রতি কি ভালোবাসা থাকত?

কারণ তিনি তাদের জীবনের জন্য দায়ী ছিলেন। তিনি তাদের ভাগ্যোন্নয়নের শিকড় ছিলেন। আর সেই কারণেই তিনি তার কোনো কাজে, ভয়ে দ্বিধান্বিত হতেন না। তিনি তার রায়ে সব সময় শক্ত থাকতেন। কেউ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে, কেউ তার সংসারে অখণ্ডতা ধ্বংস করলে, তাকে অবশ্যই শাস্তি ভোগ করতে হতো। এবং এমনকি তাকে দমন করা হতো, যার অর্থ ছিল মৃত্যুদণ্ড। এখানে কোনো ক্ষমা নেই, অবস্থার কোনো কমতি ছিল না। দয়া ভিক্ষার জন্য কোনো আপিল ছিল না। যা অবশ্যই করতে হবে তা অবশ্যই করা হবে। তার পুত্র জর্জিওকে একদা বলা হতো যে জেকেলে। সে যা গ্রহণ করত তার কোনো বিকল্প ছিল না।

এখন তিনি অনেক কিছুই বিবেচনা করেন। সান্তাডিও যুদ্ধে থেকে গত পঁচিশ বছর ভালোভাবেই পরিকল্পনা তিনি করছিলেন। প্রয়োজনে তিনি ছিলেন দূরদর্শী ধূর্ত, নিষ্ঠুর এবং এগুলো রক্ষা করতে তিনি ছিলেন দয়ালু আরো এখনও ক্লেরিকুজিও পরিবার ক্ষমতার শীর্ষে, যে কোনো আক্রমণ হতে রক্ষার ক্ষমতা রাখে। শিগগিরই সমাজের বৈধ গঠনে এটা অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং এটা ফেরানো যাবে না।

কিন্তু অদূরদর্শী আশাবাদিতা দিয়ে ডন ডোমেনিকোকে বেশি দিন বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তিনি জমিতে আগাছা মাথা গজিয়ে ওঠার পূর্বেই ক্ষতিকর আগাছা চিনতে পেরেছেন। এমন বড় বিপদ ছিল অভ্যন্তরীণ। ডেন্টির বেড়ে ওঠা, ডনের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়– এ মনোভাব নিয়ে বড় হয়ে ওঠা ছিল ডনের জন্য বড় বিপদ।

তারপর গ্রোনিভেল্টের  উত্তরাধিকারী দ্বারা ক্রস ধনী হয়ে গেল। পরিবারের তত্ত্বাবধান ছাড়াই সে বাস্তবিকই বড় পদক্ষেপ নিয়ে নিলেন। সুদক্ষভাবে যুবক তার যাত্রা আরম্ভ করলেন। তার বাবা পিপির মতো একজন যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। তারপর ভারজিনো ব্যালাজো চাকরি তাকে আহার ও পরিধেয় নিয়ে খুঁতখুঁতে পরিণত করল। আর পরিবার কর্তৃক সক্রিয় কর্তব্য থেকে তাকে অব্যাহতি দেবার পরও, তার কোমল হৃদয়ের কারণে তার নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের জন্য সে মাঠে ফিরে গিয়েছিল এবং সম্পদনা করেছিল স্কানেট। স্বয়ং ডনের অনুমতি ছাড়াই এটা করেছিল। কিন্তু তার বিরল ভাব প্রবণতায় স্বয়ং ডন ক্লেরিকুজিও এই কাজের জন্য ক্ষমা করেছিলেন। ক্রস তার সংসার রক্ষার চেষ্টা করছিল এবং অন্য কোথাও ঢুকতে চেয়েছিল। যদিও এই কাজগুলো বিশ্বাসঘাতকের বীজ থেকে এটা ডন ক্লেরিকুজিও বুঝতে পেরেছিলেন। এখন পিপি এবং ক্রস যৌথভাবে পরিবারের প্রতি হুমকি হয়েছে। তাছাড়া ডি লিনার জন্য ডেন্টির ঘৃণা বিষয়ে ডন অসচেতন ছিলেন। পিপি এটা জানার মতো এত চালাক ছিলেন না। আরো সে ছিল একজন বিপজ্জনক লোক। তার প্রমাণিত আনুগত্য সত্ত্বেও তার ওপর একটি চোখ অবশ্যই রাখা হতো।

 ডনের ধৈর্য ক্রসের প্রতি মমতা জন্মিয়েছিল এবং তার পুরনো ও বিশ্বস্ত সৈনিক, তার বোনের ছেলে পিপির প্রতি জন্মেছিল ভালোবাসা।

সর্বোপরি তার ছিল ক্লেরিকুজিও’র রক্ত। ডেন্টির দ্বারা উপস্থিত পরিবারের প্রতি বিপদ সম্পর্কে তিনি আসলেই অধিক উদ্বিগ্ন ছিলেন।

নানা ডন ক্লেরিকুজিও’র সব সময় স্নেহ ও ভালোবাসা ছিল ডেন্টির প্রতি। প্রায় দশ বছর বয়সের বালক হওয়া পর্যন্ত এবং নিশ্চিত মোহমুক্তি তাদের মধ্যে স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত তারা খুব অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। ডন বালকদের চারিত্রিক শনাক্ত করেছিলেন যা তাকে সমস্যায় ফেলেছিল। দশ বছর বয়সে ডেন্টি ছিল সরলভাবে বর্ধনশীল, প্রতারণাপূর্ণভাবে কৌতুকপ্রবণ শিশু। সে ছিল সুঠাম শারীরিক সমন্বয়ের ভালো একজন ক্রীড়াবিদ। সে বিশেষভাবে তার নানার সাথে কথা বলতে ভালোবাসত। আর তার মা রোজ ম্যারির সাথে তার অনেক গোপন আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু পরে দশ বছর বয়সের পরে সে বিদ্বেষপরায়ণ ও ত্রুটিপূর্ণ হয়ে যায়।

সে তার বয়সের ছেলেদের সাথে অযোগ্য তীব্রতা নিয়ে লড়াই করত। সে করুণাহীনভাবে মেয়েদের বিরক্ত করত, লাম্পট্য দেখাত। এগুলো ছিল খুবই জঘন্য। যদিও সে এটা মজা করা হিসেবে করত; কিন্তু ছোট ছেলেদের সাথে নয়। কিন্তু স্কুলের সুইমিং পুলে একটা ছোট বালককে একবার সে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা করেছিল, তা ডন জেনেছিল।

 ডন ঐ বিষয়ে বিশেষভাবে কঠিন সংকটপূর্ণ অবস্থায় ছিলেন। সর্বোপরি শিশুরা পশুর মতো, সভ্যতা তাদের বারবার মস্তিষ্কে ও পেছনে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। ডেন্টির মতে শিশুরাই একদিন বড় হয়ে দরবেশ হবে। তার বাঁচালতা উনকে বিরক্ত করত, তার মার সাথে তার অধিকক্ষণ কথাবার্তা এবং সবচেয়ে স্বয়ং ডনের প্রতি অবাধ্যতা তাকে বিরক্ত করছিল।

সম্ভবত ডন বিরক্ত হচ্ছিলেন। পনের বছর বয়সের সময় ডেন্টির বেড়ে ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। তার উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি হয়েছিল। ডাক্তার পরামর্শ দিল যে, সে সর্বোচ্চ আরো ৩ ইঞ্চি বাড়বে এবং ক্লেরিকুজিও পরিবারের সাধারণ উচ্চতা ৬ ফুট হবে না। ডন ডেন্টির খাটো হয়ে যাওয়াকে বিপদ সংকেত হিসেবে বিবেচনা করলেন।

.

ডন ডেন্টির উচ্চতায় খাটো হওয়া বিপদের বার্তা মনে করেছিল। তাছাড়া তিনি যমজ হিসেবেও বিবেচনা করলেন। তিনি দাবি করলেন, জন্মটা ছিল আশীর্বাদ পুষ্ট অলৌকিক, যমজের ব্যাপারটা তখন অনেক দূরে ছিল। সে সময় ব্রঙ্কস এনক্লেভ এক সময়ে তিন সন্তানের জনক, এক সৈন্য ছিল। ডন আতঙ্কিত হয়ে তাদেরকে পোটল্যান্ডের ওরগন নামের এক সুন্দর অথচ নিঃসঙ্গ এক বাড়িতে আনলেন। তাছাড়া বাঁহাতি লোক এবং যারা তোতলা, তাদের সম্বন্ধে ডনের কুসংস্কার ছিল। যে কোনো লোকই বলছিল, এ লক্ষণগুলো ভালো হতে পারে না। ডেন্টি প্রাকৃতিকভাবেই বাঁহাতি ছিল।

কিন্তু এমনকি ডনের নাতির প্রতি সতর্ক বা তার মমতা বাড়ানোর জন্য এত কিছুও যথেষ্ট ছিল না। তার রক্তের যে কেউ ছিল স্বাভাবিকভাবেই দায়মুক্ত। কিন্তু ডেন্টি বড় হয়ে উঠলে সে ডনের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের ঘোর বিরোধী হয়ে ওঠে।

ষোল বছর বয়সে ডেন্টি স্কুল ছাড়ল এবং সম্প্রতি পরিবারের ঘটনায় সে নাক গলাতে শুরু করল। রেস্টুরেন্টে ভিনসেন্টের সঙ্গে কাজ করত। তার সততা ও বুদ্ধির কারণে সে জনপ্রিয় ওয়েটার হিসেবে পরিচিত হয় এবং অনেক বখশিস পায়। এতে সে ক্লান্ত হয়। ওয়ালস্টিট অফিসে জর্জিও’র সাথে দুই মাস কাজ করেছিল। কিন্তু এটাকে সে ঘৃণা করল। কাগজ সম্পদের জটিলতা বিষয়ে তাকে শিক্ষা দিয়ে জর্জিও’র পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও, সে কোনো কাজের প্রতি তার প্রবণতা দেখাল না। শেষে পেটির সাথে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে সে স্থায়ী হলো। আর এনক্লেভের সৈন্যদের সাথে কাজ করতে ভালোবাসত, তার বাড়ন্ত শরীরের পেশির জন্য সে গর্বিত ছিল। কিন্তু এতে সে তার তিন চাচার বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছিল। আর তার চাচাদের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য ডন খুব গর্ববোধ করত। সে ছিল ভিনসেন্টের স্পষ্টতা, জর্জিও’র শান্ত এবং পেটির হিংস্রতা। যে কোনো জায়গায় এ দ্বারাই সে তার ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে আসলেই চালাক, ধূর্ত ও চাতুর্যপূর্ণ কিন্তু এর সাথে ছিল কৌতুকের অনুভূতি, যাতে সে আরো আকর্ষণীয় হয়েছিল। আরো পরে সে তার পুনর্জাগরণের টুপি পরা শুরু করলেন। কেউ জানত না, সে তাদেরকে কোথায় নিচ্ছিল। টুপিগুলো রংধনুর মতো রঙিন সুতায় তৈরি ছিল। কোনোটি ছিল গোলাকার, কিছু ছিল আয়তক্ষেত্রকার এবং এগুলো তার মাথায় এমনভাবে বসা থাকত যেন এগুলো পানির উপরে ছিল। আর এই টুপি তাকে অধিকতর লম্বা, অধিকতর সুদর্শন ও অধিক পছন্দীয় করে তুলেছিল। কিছুটা কৌতুক অভিনেতার মতো ও নিরস্ত্রীর মতো। কতকটা দ্বিমুখাকৃতির মতো মনে হতো। টুপিতে তাকে মানিয়েছিল। ক্লেরিকুজিও’র মতো তার চুল এলো, কুচকুচে ও নিম্নমানের সব টুপিতে ঢেকে যেত।

 এতদিন সিলভির ফটো এখনো সম্মানের স্থান হিসেবে দখল করে রেখেছে। সেই আখড়ায় ডেন্টি তার নানাকে জিজ্ঞেস করল, সে কিভাবে মারা গেল? ডন সংক্ষিপ্তভাবে বলল, একটা দুর্ঘটনা। সে আপনার প্রিয় পুত্র ছিল ঠিক? ডেন্টি জিজ্ঞেস করল। এতে ডেন্টি চমকে উঠল। ডেন্টির বয়স এখনো মাত্র পনের। এটা কেন সত্য হবে? ডন জিজ্ঞেস করল।

কারণ সে মৃত, ডেন্টি ধূর্ত হেসে বলল। আর এটা বুঝতে ডন কিছুক্ষণ সময় নিল। এই কচি যুবক কেমন করে এমন কৌতুক করার সাহস পেল।

ডন আরো জানল যে, যখন ডন ডিনার খাবার জন্য নিচে আসে তখন ডেন্টি উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘোরাফেরা করে এবং অফিসের কর্মচারীদের খোঁজা খুঁজি করে। এটা তাকে বিরক্ত করে না। শিশুরা সব সময় বয়স্কদের সম্পর্কে উৎসুক থাকে।

উনের কখনো কাগজে কোনো কিছু ছিল না; যাতে তার কোনো প্রকার গোপন কথা ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। ডন ক্লেরিকুজিও’র মস্তিষ্কে কোনো একটা বিরাট ব্ল্যাকবোর্ড আছে যাতে সমস্ত দরকারি তথ্য লেখা রয়েছে। এর মধ্যে তার প্রতি আনুগত কারীদের অপরাধও গুণাসমূহ সবিস্তারে লেখা হয়েছে।

কিন্তু ডন ক্লেরিকুজিও ডেন্টির প্রতি সতর্ক হলেও তার প্রতি অধিক মমতা দেখাত এবং তাকে আশ্বস্ত করত। তার পরিবারের সম্পত্তির একজন উত্তরাধিকারী হবে। আর তার মামারা প্রথমত জর্জিও তাকে তিরস্কার ও হুশিয়ার করত। শেষে উন ডেন্টির বৈধ সমাজে যোগদান করার হতাশ হয়েছিল এবং একজন হ্যাঁমার হবার জন্য তার প্রশিক্ষণে ডেন্টিকে অনুমতি দিয়েছিলেন।

ডন শুনেছিলেন তার মেয়ে রোজ ম্যারি রান্নাঘরে তাকে ডেকে নিয়ে রাতের খাবার খায় আর খাবার সময় শুধু তারা দুজনই সেখানে থাকে। সে ভেতরে গিয়ে টমেটোর সাথে পেশতা মোড়ানো রাজকীয় খাবারে মেশানো তার বাগানের তাজা পুদিনা পাতার বড় রঙিন বাটির সামনে রাখত। পনির ছিল খুবই হলদে, যা দেখে মনে হতো এটা খুবই মিষ্টি। রোজ ম্যারি এসে তার বিপরীত দিকে বসত। সে ছিল হাসি-খুশি, উজ্জ্বল এবং তার সুন্দর মেজাজের জন্যে সে খুবই আনন্দিত থাকত। আজ রাতে তার কোনো ভয়াবহ মূৰ্ছা হবে না। সে সান্তাডিও যুদ্ধের পূর্বে যেমন ছিল ঠিক তেমন।

কি বিয়োগান্তক ঘটনা সেদিন ঘটেছিল! একটি ভুলের জন্যে তাকে এমন করতে বাধ্য করে। আর এটা প্রমাণিত, একটা বিজয় সব সময় বিজয় থাকে না। কিন্তু কে ভাবত যে, রোজ ম্যারি চিরদিন বিধবা হয়ে থাকবে! প্রেমিকরা সব সময়আবার ভালোবাসে, সে সব সময় তাই বিশ্বাস করত। সে সময়, তার মেয়ের জন্যে মমতায় অভিভূত হয়ে যেত। সে ডেন্টির ছোট অপরাধগুলো মাফ করে দিত। ডনের ধূসর মাথায় মমতাময় পরশ দিয়ে তাকে রোজ ম্যারি সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করল।

 সে গুড়ো পনিরের এক চামচ খেয়ে এটাতে বাদামের মতো স্বাদ অনুভব করল। সে তার মদে চুমুক দিয়ে বোজ ম্যারির শেষাংশের পা কাটতে দেখল। সে তিনটে কঠিন আবরণমুক্ত বাদামি, গোল আলু ও মসৃণ চর্বিযুক্ত খাবার পরিবেশন করল। তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পরিষ্কার হলো। তার চেয়ে কি ভালো?

সে এমন ভালো মানসিকতায় ছিল যে এর পরের সপ্তাহে বসার রুমে রোজ ম্যারির সাথে বসে টেলিভিশন দেখার জন্যে তাকে সে বুঝিয়েছিল।

চার ঘণ্টা দেখার পর আতঙ্কিত হয়ে সে রোজ ম্যারিকে বলল, এমন সংসারে কি বাস করা সম্ভব, যেখানে যার মনে যা চায় তাই করবে! ঈশ্বর বা মানুষ কাউকে শান্তি দেবে না এবং জীবন চালানোর জন্য কারো কোনো উপার্জনের অধিকার নেই? এমন কোনো মহিলা আছে যে সব পাগলামি অনুসরণ করে? এমন কোনো দুর্বল পুরুষ কি আছে যে প্রতিটা ছোট আশায় বশীভূত হয়, প্রতিটা ছোট সুখের স্বপ্নে বিভোর হয়? কোথায় সেই স্বামী যে তার খাবারের জন্য পরিশ্রম করে। যে ভাগ্য ও নিষ্ঠুর পৃথিবী ভালো উপায় নিয়ে ভাবে? কোথায় সেই মানুষ যে বুঝে। একটু করা পনির, এক গ্লাস মদ ও দিনের শেষে একটা উষ্ণঘর যথেষ্ট পাওয়া? কারা সেই লোক যারা কিছু রহস্যময় মুখের জন্য আকুলভাবে আকাক্ষা করে থাকে? কি হৈচৈ তাদের জীবনে তৈরি করে নেয়। ডন তার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সমর্থন জানালেন। তিনি টিলিভিশনের পর্দায় দুলনী বন্ধ করে দিলেন। তিনি বললেন, তাদের সম্পর্কে সাগরের তল থেকে সাঁতারের অনুমুতি দেয়া হলো। তারপর সে তার প্রজ্ঞার শেষ অংশটুকু দিলেন। প্রতিটা মানুষ যা করে তার জন্য সে নিজেই দায়ী।

 ডন সেই রাতে তার শোবার ঘরে একাকী ছিল। সে তার বেলকনিতে বের হলো। ঘরগুলো ছিল উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত।

সে টেনিস খেলায় টেনিস বলের শব্দ শুনতে পেল এবং দেখল আলোর কিনারের খেলোয়াড়দের। অনেক দেরিতে বিধায় বাইরের এই খেলায় কোনো শিশু ছিল না। তিনি গেটে ও বাড়ির চারদিকে রক্ষীদের দেখতে পারলেন।

ভবিষ্যতের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য কি পদক্ষেপ তিনি নিতে পারেন তা নিয়ে তিনি ভাবছিলেন। তার মেয়ে ও নাতির জন্য তার ভালোবাসা তার মধ্যে জেগে উঠল, যা তাকে যথার্থ সময়ে বুড়ো করে দিয়েছিল তাকে। কতটা ভালো করতে পারত সে সাধারণভাবে তাদেরকে রক্ষা করত। পরে তার নিজের সাথে তিনি রাগান্বিত ছিলেন। কেন তিনি সব সময় দুর্ঘটনার খবর অগ্রিম জানছিলেন? তিনি অবশ্যই তার জীবনে সকল সমস্যার সমাধান করবেন এবং এই একটি সমাধানও তিনি করলেন। এখন তার মন পরিকল্পনায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তিনি সিনেটরের কথা ভাবছিলেন। বৈধতা নিশ্চিত করতে আইন পাসের জন্য লোকটাকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছিল বছর বছর। কিন্তু সিনেটর ছিল নীতি বিবর্জিত লোক। এটা খুবই খারাপ। গ্রোনিভেল্ট তখন জীবিত ছিলেন না। ক্রস ও জর্জিও দরকারি দক্ষতা তাকে উৎসাহিত করার অধিকার ছিল না। সম্ভবত জুয়া খেলার বিষয়টা কখনো পাশ কাটায় তারপর তিনি তার পুরনো বন্ধু ডেভিড রেডফেলোর কথা ভাবল। যে এখন রোমে খুব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে। সম্ভবত এটা ছিল তাকে পরিবারে ফিরিয়ে আনার সময়। তার হলিউডের পার্টনারের প্রত্যাবর্তনের দাবি না করা ক্রসের জন্য সবদিক দিয়ে খুব ভালো ছিল। সে জানত না যে, দুর্বলতার একটা লক্ষণ অবশ্যই ভয়াবহ কিছু হবে। ডন সিদ্ধান্ত নিয়ে বোম থেকে ডেভিড রেডফেলোকে ডেকে পাঠাল ছবির ব্যবসা সম্পর্কে কোনো কিছু করার জন্য।

.

১১.

বজ স্কানেটের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর ক্রস অ্যাথেনা একই ট্রেনে ম্যালিবু বাসাতে দাওয়াতে ক্লডিয়াকে কাছে পেল।

ক্রস ভেগাস থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে এ পাড়ি জমাল। তার পর তারা গাড়ি ভাড়া নিয়ে ম্যালিবু কলোনিতে পৌঁছল। সেখানে বিশেষ কোনো নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না। যদিও সেখানে অতিথি হাউজে নিরাপত্তা প্রহরী ছিল, তারা তাকে পরীক্ষা করে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিল। সে লংজিটিভ ডিনাল বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে সমুদ্র সৈকতের উপরের বাড়িতে পৌঁছল। সেখানে একজন দক্ষিণ আমেরিকান কুমারী পরিচালিকা ছিল, তাকে সুন্দর শয়ন কক্ষটি দেখাল। যা তার কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউয়ের মতো মনোরম মনে হলো।

অ্যাথেনা তার জন্য অপেক্ষা করছিল এবং তাকে অন্য দিনের তুলনায় খুবই সুন্দর দেখাচ্ছিল। সে সবুজ ব্লাউজ ও স্নেক পরেছিল, তার সৌন্দর্যের কাছে সাগরের সৌন্দর্য যেন কুয়াশার মতো বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল, তারপর হাত মিলিয়ে স্বাগত জানাল কিন্তু হলিউডের মতো তার গালে চুম্বন করল না।

সে পানীয় প্রস্তুত করে তার হাতে দিল। এটা ছিল এক প্রকার লেবু মিশ্রিত ইডার্ন পানীয়। তারপর তারা সবুজ টাকশাল গদিসম্পন্ন চেয়ারে বসল। তখন হেলে যাওয়া সূর্য সোনার মুদ্রার মতো রুমের মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

 ক্রস তার সৌন্দর্যের প্রতি এতই সতর্ক ছিল যার কারণে সে তার মাথা সরিয়ে নিল যাতে তাকে দেখা যায়।

 সোনালি চুল আর দুধের সরের মতো ত্বক, চেয়ারে ছড়ানো তার লম্বা দেহ– সব কিছুই ক্রসের রঙিন চোখে আরো রঙিন হয়ে উঠল। তাকে কিছুটা মালবাহী জাহাজের ছায়ার মতো দেখাল। অ্যাথেন কোনো কিছুর প্রতি মোটেই সতর্ক ছিল না। সে একটি উদ্দেশ্যের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। সে একটু একটু করে পান করল এবং শান্তভাবে বলল, আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিতে চেয়েছিলাম, আমাকে চলচ্চিত্র ব্যবসায় আনার জন্য। তার গলার স্বরে পুনরায় ক্রস তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো। তার কথায় আহ্বান ছিল না। কথাগুলো ছিল আত্মবিশ্বাস পূর্ণ, যা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গরম করে ফেলল। যাতে সে তার সঙ্গে কথা বলতে না চায়।

যিশু এটা আমার জন্য বড় কষ্টের। সে তার প্রতি সমস্ত ক্ষমতা অর্পণ করল। তার মাথা নুয়ে গেল, সে কিছুটা হতবুদ্ধি হলো, আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে পুনরায় কাজের মাধ্যমে পাব। এটা আমার দুর্বলতা, অ্যাথেনা বলল। তার পর সে তার মাথা ঘুরাল যাতে তাকে সরাসরি দেখা যায়। ক্লডিয়া আমাকে বলল, স্টুডিওর রিজেন্ট তাদেরই ছিল এবং আমার স্বামী নিজে নিজেই আত্মহত্যা করল। তুমি এটাকে চলচ্চিত্রে রূপ দেবে, যার জন্য তুমি একটি লভ্যাংশ পাবে।

ক্রসের চেহারার ছাপ পরিবর্তিত হলো। সে সবকিছু আয়ত্তে আনার আশা করল। সে তাৎক্ষণিক বিষয়গুলো কিছুটা অনুভব করল, আমি মনে করি আমি কোনো স্বনামধন্য ব্যবসায়ী নই। সে বলল, আমি তোমাকে সবকিছুই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি সে সময় আগ্রহী ছিলে না। ক্লান্ডার তোমার আবেদন লিখেছিল অ্যাথেনা বলল, সে খুবই ভালো, তুমি ইচ্ছে করলে তার সঙ্গে কাজ করতে পারো।

ক্রস মাথা ঝাঁকাল, এটা একটা রাজনীতির বিষয়, আমি এটা চলচ্চিত্রের ব্যবসার মধ্যে পেতে চাই এবং আমি লডস্টোনের স্টুডিওতে শত্রুতা বাড়াতে চাই না।

 আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারতাম অ্যাথেনা বলল, আমি পুনরায় ছবির জগতে ফিরে আমাকে পরিত্যাগ করতে পারতাম। ক্রস একটি আতঙ্ক অনুভব করেছিল, যে তার জন্য এটা করতে চাইল। সে তার প্রস্তাবকে প্রস্তাব বিবেচনা করল। কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য ছিল। যদিও অ্যাথেনা খুব সুন্দরী ছিল কিন্তু তার অর্থ এটা নয় যে, সে চালাক ছিল না।

 তুমি কেন এটা করতে চাও? সে জিজ্ঞেস করল। অ্যাথেনা চেয়ার থেকে উঠে জানালার কাছে দাঁড়াল, সমুদ্র সৈকতে বাদামি ছায়া নেমে এসেছিল, সূর্য ডুবে যাচ্ছে। সে অনুমান করল, তারপর সে জানালা দিয়ে নীল, কালো পানি এবং ছোট ছোট ঢেউ দেখছিল।

 এতে একজন সুন্দরী মহিলার ভয় করার তেমন কিছু নেই। ক্রস জানত যদি সে সত্য সত্য উত্তর দিত, সে তাকে চিরদিনের জন্য হারাত। হঠাৎ সে তার বাহু তার শরীরের সঙ্গে লেপটে ধরল, তুমি খুবই সুন্দর, কেউ তোমার মতো এত সুন্দর না–আসলে মনে মনে সকলেই সুন্দরের পূজা করে।

 না, সে বলল, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না তুমি যা করিয়েছ। সে তার থেকে একটু দূরে গেল।

 তাছাড়া বজের জন্য তোমার কোনো দায়িত্ব নেই ক্রস বলল, সে নিজে নিজেই ইত্যাদি হয়েছিল অ্যাথেনা মনে মনে তাকে অনুমান করে নিল। সে তার হাত ধরল, তুমি কি বিশ্বাস করো আমি বজকে হত্যা করেছি?

সে জিজ্ঞেস করল।

তারা হাসল। তারা দুজনেই নিজেদের নিষ্পপতা ঘোষণা করল। সে তার হাত ধরল এবং বলল, আমি তোমার জন্য রাতের খাবার তৈরি করছি এবং তারপর আমরা বিছানায় যাব। তারপর অ্যাথেনা খাবার তৈরি করিতে রান্নাঘরে গেল।

 সে আর কতটা সময় রান্নাঘরে থাকবে? ক্রসের যেন আর দেরি সহ্য হচ্ছিল না। এই সুন্দরী রাণী গৃহিনীর কাজ করছে! তাও আবার একজন নারীর মতো। সে তার রান্না করা দেখল। সে রান্না করার সময় এক্সট্রা কোনো কাপড় পরিধান করেনি। তাছাড়া সে বেশ মনোযোগ দিয়েই রান্না করছে। অ্যাথেনা তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে কাজ করছিল। সে একা একা রান্না করে টেবিলের ওপর রাখল। সে তাকে একটি মদের বোতল দিল ঢাকনা খোলার জন্য। তারপর তারা আধা ঘণ্টা ধরে খাবার খেল। সে বলল, আমি ছোট খাটো সব কাজই কম-বেশি করতে পারি। কারণ একজন মেয়ে হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। যখন অ্যাথেনা অভিনয় করে তখন সে অভিনেত্রী অ্যাথেনা একজন তারকা কিন্তু সে একজন সাধারণ গৃহিণী।

খাবারগুলো ছিল খুবই মজার। সবজি সঙ্গে গরুর মাংস, সালাদ আর তার সঙ্গে রুটি। তাছাড়া সেই সময় ঘরের মধ্যে সবুজ যেমন আলো ছড়াচ্ছিল, তেমনি সব মিলে তারা খুব দারুণ উপভোগ করল।

এই মুহূর্তে তোমার জন্য কোক দরকার। ক্রস বলল, আমার চাচাতো ভাই ভিনসেন্ট তার হোটেলে তোমাকে দাওয়াত করতে পারে। আহ! তাহলে বেশ মজা হবে। অ্যাথেনা বেশ রসিকতার সঙ্গে বলল।

রাতের খাবার খেতে খেতেই তারা একে-অপরকে স্পর্শ করে আসছিল। যার কারণে উভয়ের মধ্যেই যৌনতার আবেশ ছড়িয়ে পড়ল। তারা দুজনেই উন্মত্ততার চরম শিখরে অবস্থান করছিল।

 বড় শোবার ঘরটি ছিল বাড়িটির এক পাশে এবং তার সঙ্গে ছিল এক বিশাল বারান্দা। যেখান থেকে সাগর দেখা যায়। তাছাড়া ঘরের প্রতিটি দেয়াল ছিল ছবিতে পরিপূর্ণ। তাই সবুজ আলোর ঝলকানিতে ঘরটিকে আরও বেশি মনোরম মনে হচ্ছিল। তখন কিছুক্ষণ পর তারা দুজনেই বারান্দাতে এসে দাঁড়াল। তারা বাইরের সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করল, দেখল ম্যালিবুর বাড়িগুলো যেন সবুজ বৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ছোট ছোট পাখিরা গান গাচ্ছিল, বৃষ্টি টপটপ করে করে ওয়াল ছেয়ে মাটিতে পড়ছিল।

অ্যাথেনা ক্রসকে জড়িয়ে ধরে, তার মুখে মুখ রাখল। তারা একে-অপরকে দীর্ঘক্ষণ ধরে আদর করল। তারা উভয়েই গরম শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া শুরু করল। তার পর অ্যাথেনা তাকে পুনরায় শোবার ঘরে নিয়ে গেল। সে খুব তাড়াতাড়ি পোশাক খুলে ফেলল, শরীর থেকে সবুজ ব্লাউজ, ব্ল্যাক আলাদা করে ফেলল। তার সাদা শরীর অন্ধকার রাতে জোছনা ছড়াল। সে এমনই সুন্দী ছিল ক্রস যেমন অনুমান করেছিল। তার শরীরের গন্ধ যেন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল, তার আহ্বানে যেন প্রকৃতিও পাগল। তারপর তারা দুজনেই উন্মত্ততার জোয়ারে ঘুড়ির মতো উড়তে লাগল। ক্রস নতুন করে ভালোবাসা গড়ল। কখনো এমন ভালোবাসা তার জীবনে আসেনি। সে তার শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলল। তারা পাশাপাশি শুয়ে এবং পুনরায় আরম্ভ করল। অ্যাথেনা ছিল পূর্বের চেয়েও বেশি সক্রিয়, আরো বেশি আবেগময়ী। তাদের মধ্যে যেন প্রতিযোগিতার ছন্দ বয়ে যাচ্ছে। পরিশেষে তারা অবসন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

 ক্রস ঠিক সূর্য উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠল। এই প্রথম তার জীবনে মাথাব্যথা অনুভব করল। বস্ত্রহীন অবস্থায় সে বারান্দায় গিয়ে একটি কাঠের চেয়ারে বসল। সে সাগরের ওপর সূর্যের বিচ্ছুরণ দেখতে লাগল। অ্যাথেনা একজন ভয়ানক নারী। সে তার মেয়ের হত্যাকারী এবং বিছানায় সে একজন দক্ষ নারী, যে তার শেষ দেখতে চেয়েছিল। ঐ মুহূর্তে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে কখনও আর তাকে দেখবে না। যখন ক্রস ফ্রেস হয়ে পুনরায় বারান্দাতে এলো অ্যাথেনা তখন একটি ট্রেতে কেসিনিও, কফি এবং কমলা লেবুর জুস তার সামনে নিয়ে এলো। আমি তোমার জন্য বেকন এবং ডিম নিয়ে আসি, সে বলল।

বেশ, ক্রস বলল।

তুমি আবার কখন আসবে?

অ্যাথেনা জিজ্ঞেস করল।

 লাস ভেগাসে আমার অনেক কাজ আছে, ক্রস বলল।

আমি তোমাকে আগামী সপ্তাহে ফোন করব।

 অ্যাথেনা তাকে গভীরভাবে দেখল। তার মানে বিদায়, তাই নয় কি?

সে জিজ্ঞেস করল, সত্যিই গত রাতে আমি বেশ উপভোগ করেছি।

 ক্রস মাথা ঝাঁকাল। তুমি তোমার চাহিদা পূরণ করেছ।

সে তখন মুগ্ধ করা হাসি দিল এবং বলল, তুমিও কম ছিলে না, তা কি ভেবেছ?

ক্রস হাসল, না।

সে পুনরায় গত রাতের কথা স্মরণ করল। গত রাতে তারা একসঙ্গে ঘুমিয়েছিল। সকালে তার শরীরে কোনো শক্তি নেই। আসলে তার সৌন্দর্য তার সমস্ত শক্তি কেড়ে নিয়েছে। তাই তার সম্পর্কে এক প্রকার ভয় কাজ করল। তাই বারবার গতরাতের দৃশ্যগুলো তার চোখের সামনে ভেসে উঠল তারপর অ্যাথেনা বলল, আমি জানি তুমি ব্যস্ত, কিন্তু তোমাকে কিছু দেখাতে হবে। তুমি কি সকালে থেকে বিকালের প্লেনে যেতে পারো? কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে কিছু জায়গা দেখাতে চাই।

ক্রস কখনোই তার চাওয়াকে অপূরণ রাখেনি। আজকেও রাখতে চাইল না। তাই সে বলল, হ্যাঁ।

অ্যাথেনা মারসিডিস SL 300তে তাদের নিয়ে উঠল, তার পর সান্তাডিও’র দিকে ধাবিত হতে লাগল, কিন্তু পৌঁছার আগে তারা একটি শহরে পৌঁছল, তারপর তারা একটি পাতলা রাস্তা অনুসরণ করে পাহাড়ের পাদদেশ অভিমুখের দিকে যাওয়া আরম্ভ করল। পনের মিনিটের মধ্যে তারা বারবেড ওয়ারির কাছে এলো। সেখানে ছিল ছয়টি লাল ইট নির্মিত বাড়ি, যার দেয়ালে অনেক ছবি আঁকা। সেখানে ছিল একটি সবুজ মাঠ। মাঠে বিশ জন ছেলে মেয়ে বল খেলছিল। অন্য সবুজ মাঠটিতে আরো দশজন ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। তিন থেকে চার দল যুবক তাদের খেলা দেখছিল। কিন্তু কিছু বিষয় আমার কাছে সন্দেহপ্রবণ মনে হয়। ছেলে-মেয়েরা বলের পেছনে দৌড়াছিল। অন্য দিকে তাদের একটি ঘুড়ি আকাশের নীলমায় হারিয়ে গেল। তারা আর ফিরে পেল না।

জায়গাটির নাম কি? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

অ্যাথেনা তার দিকে আবেদনময়ী হয়ে তাকিয়ে থাকল। এখন তুমি শুধু আমার সঙ্গে থাকো। পরে তোমার প্রশ্ন শুনব। অ্যাথেনা প্রবেশ গেটে পৌঁছল এবং একটি সোনার আইডি ব্যাজ পরা নিরাপত্তা প্রহরী সে দেখল। গেটের মধ্য দিয়ে পার হয়ে তারা একটি বড় বিল্ডিংয়ের কাছে গাড়িটি পার্ক করল। যার এক পাশে ছিল অভ্যর্থনা টেবিল। অ্যাথেনা অভ্যর্থনাকারীকে মৃদু কণ্ঠে কিছু জিজ্ঞেস করল। ক্রস তার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু সে গভীরভাবে তার উত্তর শুনল। সে খুব মুডে ছিল, তাই সে আর কোনো আগ্রহ দেখাল না।

ঘটনাটা কি? ক্রস জিজ্ঞেস করল।

 কিন্তু অ্যাথেনা কোনো উত্তর করল না।

সে তার হাত ধরল এবং তাকে নিয়ে একটি বড় বিল্ডিংয়ের মধ্যে প্রবেশ করল।

প্রবেশপথে একজন সেবিকা তাদের নাম জিজ্ঞেস করল। যখন সে তা নোট করল। অ্যাথেনা ক্রসকে অন্য একটি বড় হলরুমে নিয়ে গেল দরজার পাশ দিয়ে। পরিশেষে সে একটি দরজা খুলল। তারা একটি সুন্দর বেড রুমে দাঁড়াল, যেটা লাইটে পরিপূর্ণ ছিল। সেখানেও অ্যাথেনার বাড়ির ওয়ালের মতো অদ্ভুত একই রকম ছবি আঁকানো ছিল। কিন্তু একটু ভিন্নতা ছিল, তা হলো মেঝেতেও বিভিন্ন প্রকার ছবি আঁকানো। ওয়ালের সঙ্গে একটি ট্রাক, ট্রাকে পুতুলের অনেক পোশাক।

 একটি ছোট বেড যা বেগুনি রঙের কম্বল দ্বারা আবৃত। একটি সাদা বালিশ যার চারদিকে লাল কাপড়ের কাজ করা। কিন্তু বেড়ে কোনো শিশু নেই।

অ্যাথেনা হেঁটে একটি বড় বাক্সের দিকে গেল এবং বাক্সটির ঢাকনা উপরের দিকে তুলল। যখন ক্রস পাশ থেকে তাকাল, দেখল একটি শিশু শুয়ে আছে। সে তাদের দিকে লক্ষ্য করল না।

সে একটা দশ বছরের ছোট বালিকা, অ্যাথেনার যেন বিকল্প ছোট ছবি, কিন্তু তার মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই এবং তার সবুজ চোখগুলো দেখতে পুতুলের মতো। ক্রস কিছুই বুঝতে পারল না। তাছাড়া সেই মুহূর্তে অ্যাথেনার তাদের দিকে কোনো প্রকার নজর দিল না।

অ্যাথেনা কাঠের তৈরি বাক্সের দিকে গেল। সে সুইচ নিয়ন্ত্রণ করল যাতে সে শিশুটিকে বাহিরে আনতে সক্ষম হলো। শিশুটির ওজন আছে বলে মনে হলো না।

অ্যাথেনা শিশুকে বুকে জড়িয়ে নিল এবং শিশুটির গালে চুমু খেল কিন্তু শিশুটির মধ্যে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।

 অ্যাথেনা বলল, আমি তোমার মাম্মি। তুমি কি আমাকে আদর করতে পারবে না?

তার গলার স্বর ক্রসের হৃদয়ে গুলির মতো বিদ্ধ হলো। এটা ছিল এক প্রকার শোচনীয় অপরাধ স্বীকার। পরিশেষে অ্যাথেনা আস্তে করে শিশুটিকে মেঝেতে রাখল। শিশুটি কনুইয়ের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে একটি ছবি আঁকার বাক্স হাত নিল। সে ছবি আঁকতে নিমগ্ন হলো। ক্রস স্থির দাঁড়িয়ে থেকে অ্যাথেনা এবং শিশুটির সকল কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করল। সে শিশুটিকে আঁকতে সাহায্য করতে চাইল কিন্তু শিশুটির মধ্যে কোনো প্রকার সাড়া পেল না। অ্যাথেনা নিজেও একটি ব্রাশ নিল এবং তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করল, কিন্তু যখন শিশুটি দেখল, তখন সে অ্যাথেনার কাছ থেকে বাটি কেড়ে নিল। কিন্তু সে কোনো কথাই বলল না। পরিশেষে অ্যাথেনা পরিত্যাগ করল।

আমি আগামীকাল ফিরে আসব প্রিয়তমা। আমি তোমার জন্য একটি রাইড এবং একটি নতুন পেন্থ বক্স আনব। দেখ, সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, তুমি Youre running out of reds বিপদের মধ্যে বাহিরে যাচ্ছ। সে শিশুটিকে একটি সুন্দর কিস দেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু শিশুটি তার সুন্দর দুটো হাত দিয়ে বাধা দিল।

 পরিশেষে অ্যাথেনা এবং ক্রস রুম থেকে বের হলো। অ্যাথেনা তাকে গাড়ির চাবি দিল, যাতে সে ম্যালিবুতে যেতে পারে। অ্যাথেনা গাড়িতে চড়ার সময় তার মাথায় হাত রেখে কেঁদে ফেলল। সেই সময় ক্রস গাড়ি ঘোরানোর কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য কিছুই বলতে পারল না।

যখন তারা গাড়ি থেকে নামল, অ্যাথেনা কোনো মতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করল। তারপর সে ক্রসকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল এবং তারা একে অপরের মুখোমুখি হলো। ঐ শিশুটি, আমি বজকে বলেছিলাম, আমি তাকে মরুভূমিতে সমাধিত করেছি। এখন কি তুমি আমাকে বিশ্বাস করছ? এই প্রথম ক্রস বিশ্বাস করল যে অ্যাথেনা তাকে ভালোবাসত।

অ্যাথেনা তাকে রেখে রান্নাঘরে গেল এবং কফি তৈরি করল। তারা সাগর দেখার জন্য বেলকনিতে বসল। তারা কফি খাচ্ছিল, অ্যাথেনা কথা বলা শুরু করল, সে সাধারণ কথাবার্তা বলছিল, তার কণ্ঠে ও চেহারায় কোনো আবেগ ছিল না।

যখন আমি বজের কাছ থেকে পালিয়ে গেলাম, আমি আমার বাচ্চাকে দূর সম্পর্কের এক চাচাতো ভাইয়ের কাছে রাখলাম। তখন তারা সান্তাডিওতে নতুন বিবাহিত কপোত-কপোতী। সে এটাকে খুবই সাধারণভাবে নিল। আমি জানতাম না যে সেও ছিল প্রতিবন্ধী। তারপরও আমি তাকে সেখানে রাখলাম, কারণ আমি একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম। আমাকে আমাদের সকলের জন্য টাকা উপার্জন করতে হতো। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমি বুদ্ধিমতী এবং ঈশ্বর জানে সবাই আমাকে কেন সুন্দরী বলত। যখনই আমি সাফল্য পেতাম, তখন আমি তা ভাবতাম। তারপর আমি আমার বাচ্চা ফেরত পেলাম।

সুতরাং আমি লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করতাম এবং যখনই সুযোগ পেতাম তখন তাকে দেখার জন্য সান্তাডিও ছুটে যেতাম। তারপর আমি তাকে এক মাস সময় দিতাম। পরিশেষে যখন আমি তাকে বাড়িতে এনে তার তৃতীয় জন্মদিন পালন করার প্রস্তুতি নিলাম ঠিক তখনই ব্যাথেনি তার শারীরিক ভারসাম্য হারাল। আমি নিজেও চরম উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সময় কাটাতে লাগলাম। আমি ভাবলাম সম্ভবত তার ব্রেন টিউমার হয়েছে। আমি স্মরণ করলাম একদিন বজ তাকে মেঝের ওপর আছাড় দিয়েছিল, সম্ভবত তখনই সে ব্রেনে আঘাত পেয়েছিল। যার প্রতিফলন ঘটছে এখন। তারপর আমি তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। সে তার সবকিছুই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল। তারপর আমি একজন বিশেষজ্ঞের কাছে গেলাম। তিনিও সব কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেন। কিন্তু সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ার জন্য আমি তাকে টেক্সাস শিশু হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলাম। সে আমাকে বলল– সে একজন প্রতিবন্ধী।

 আমি কখনো বিশ্বাস করিনি যে তার এমন কিছু হতে পারে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়া সম্ভব। না ডাক্তার বলল আসলে ঘটনা তেমন না। সে তার নিজের মতো পৃথিবীতে বাস করতে পারবে। সে অন্য মানুষের প্রতি কোনো আকর্ষণ খুঁজে পাবে না, সে কারও প্রতি কোনো প্রকার অনুভূতির বিচরণ ঘটাতে পারবে না। মোট কথা হলো, সে সবকিছুই তার নিজ মনের মতো করতে পারবে। তার ওপর কোনো জোর করা যাবে না। তারপরও আপনি তার জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেখতে পারেন।

ক্রস কোনো কারণ ছাড়াই বলল, কিন্তু তখন অ্যাথেনা প্রতিনিয়ত কথা বলছিল। প্রতিবন্ধী অর্থ সে কখনই আমাকে ভালোবাসতে পারবে না। কিন্তু ডাক্তার আমাকে বলেছেন কিছু কিছু প্রতিবন্ধী খুব বুদ্ধিমান হয়, অর্থাৎ তারা সবকিছুই বুঝতে পারে কিন্তু প্রকাশ করতে পারে সেই অনুযায়ী কম। আমি মনে করি ব্যাথেনি বুদ্ধিমতী। সে বুঝল ছবি আঁকতেই পারদর্শী না অন্য ক্ষেত্রেও তার বেশ দক্ষতা আছে বলে আমি মনে করি। ডাক্তার আমাকে বলেছিল কঠিন প্রশিক্ষণের পর কিছু কিছু লোকের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। তখন দেখা গেছে তারা তাদের দেরিতে হলেও মানুষকে বুঝতে সক্ষম হয়। যা আমরা আমাদের বিগত জীবনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছি।

 সে আমাকে মেনে নিতে পারে না কিন্তু এর জন্য আমি তার প্রতি বিরক্তও নই। আমি মনে করি তাকে একা রাখার জন্য এটা আমার শাস্তি। কারণ আমি সাফল্য চেয়েছিলাম। বিশেষজ্ঞ আমাকে বলেছিল তার ব্যবহারে আপনি সময় সময় বিরক্ত বোধ করতে পারেন, কিন্তু তার পরেও তাকে মেনে নিতে হবে। ডাক্তার আমাকে আরো বলেছিল, তার এমন ব্যবহারকে গুরুত্ব দিলে চলবে না। সবকিছুর মধ্য দিয়েই তাকে অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। তাই আমি সর্বদা তাকে আমার সঙ্গেই রাখতে চাইতাম। আমি তাকে আমার সাথে মেসিলিয়াতে রাখার জন্য মনে মনে চিন্তা করলাম।

কেন? ক্রস জিজ্ঞেস করল, তুমি কি করতে চাচ্ছ?

সেখানে অনেক দামি ক্লিনিক আছে, আছে অনেক ভালো ডাক্তার, অ্যাথেনা ব্যাখ্যা করল। আমি ছবি শেষ হওয়ার পর তাকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার কথা ভাবছি। বজ আমাকে খুন করতে চায়– যাতে ব্যাথেনি একা হয়ে যায়। কিন্তু আমি এমন সুযোগ দেব না। আমি তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমি থাকতে ব্যাথেনির জীবনে আর কোনো প্রকার আঘাত আমি মেনে নেব না। তারপর অ্যাথেনা কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে ক্রসের দিকে তাকিয়ে হাসল। এটা কি তোমার জন্য ভালো হবে বলে তুমি মনে করছ? ক্রস বলল।

অ্যাথেনা হাসল। ক্রস সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিল। তখন সূর্যের তীব্র আলো সাগরের ওপর পড়ে এক সোনালি আবরণ ছড়াচ্ছিল। ক্রস ভাবল তার মতো অনেক মানুষই এই সব সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত।

বাক্সটি কিসের? সে জিজ্ঞেস করল। অ্যাথেনা হাসল। এটা আমার আশা পূরণ করবে। দুঃখিত, তাই নয় কি? এটা একটি হাগ বক্স। প্রতিবন্ধি ছেলে মেয়েরা এটা ব্যবহার করে। যখন তারা হতাশা অনুভব করে, তখন তারা এটাকে একজন মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে কিন্তু তারা কোনো দিনও মানব জাতিকে এমন মনে করতে পারে না। অ্যাথেনা গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল, ক্রস কিছু দিন আমি আমার সঙ্গে বাক্সটি রাখতে চাই। এখন এটাই আমার জীবনের বড় উদ্দেশ্য। এটা ছাড়া জীবনে আর কোনো চাওয়া পাওয়া নাই। এটা কি শুধুই কৌতুক? স্টুডিওর লোকজন আমাকে বলেছে, আমি মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসার হাজার হাজার পত্র পাই। মানুষ আমাকে পেতে চায়। তারা আমাকে ভালোবাসে। প্রত্যেকেই আমাকে চাই কিন্তু আমি শুধু আমার ব্যাথেনিকে চাই।

ক্রস বলল, আমি তোমাকে যে কোনো ক্ষেত্রে সাহায্য করব, যতটুকু পারি। তাই তুমি আগামী সপ্তাহে ফোন দেবে।

ম্যাসেলিনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলল আমরা একসঙ্গে থাকি।

আমি তোমাকে ফোন করব, ক্রস বলল। আমি আমার নিষ্পপতা প্রমাণ করতে পারেনি, কিন্তু আমার জীবনের যে কোনো কিছুর চাইতে তোমাকে বেশি ভালোবাসি।

তুমি কি আসলেই নিষ্পাপ? অ্যাথেনা জিজ্ঞেস করল।

 হ্যা, ক্রস বলল, তুমি কি তার প্রমাণ চাও?

আমার তা প্রমাণ করতে ভয় নেই।

ক্রস ব্যাথেনিকে নিয়ে ভাবল।

তার চেহারা আনন্দে ভরে উঠল। তার মনে হলো সে আসলেই পাপমুক্ত। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি মানব জাতির এমন পাপমুক্ত হওয়া উচিত। এক বড় ধরনের আঘাত তার জীবনে নেমে এলো, যখন সে দেখল সে যথেষ্ট সুন্দরী, বুদ্ধিমতী হওয়া সত্ত্বেও সবাই তার সঙ্গে প্রতারণা করল। সে ভাবল, তাহলে আমার ভদ্রতা, বুদ্ধিমত্তা, মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসার মূল্য কোথায়।

যখন বজ তাকে প্রহসন করল এবং যদিও বজকে কেউই জারজ বলে আখ্যায়িত করল না। তাই সে সকলকেই সন্তুষ্টের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখল। প্রথমে সে এমন কল্পনা করেছিল যে তা যথেষ্ট আবেগপ্রবণ। যখন বজ তাকে দ্বিতীয় বারের মতো প্রহসন করল তখন সে তার দিকে পুনরায় ফিরে তাকাল, তাতে সে খুব আঘাত পেল এবং সেই সময় সবকিছুই পুরোপুরি বুঝতে পারল।

অবশ্য তারা তাকে ভালবাসত, তার এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। এটাকে সে অশুভ বিরোধিতাপূর্ণ মনে করল না। মহৎ যে কোনো হিংসাকে প্রতিরোধ করতে পারে।

আর এমন একটি কারণেই সে ক্লডিয়াকে ভালোবাসত, কারণ ক্লডিয়া তার সঙ্গে কখনোই বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করেনি। এই কারণেই সে ব্যাথেনিকে দিনের পর দিন গোপন করে লালন-পালন করত। সে ঐ ধারণাকে ঘৃণা করত। মানুষ তার সৌন্দর্যের মোহে তাকে ভালোবাসত, কারণ সে এই সৌন্দর্যের কারণে অনেক বেশি শান্তি পেয়েছিল। সে বুঝল তার সকল ক্ষমতাই তার সৌন্দর্যকে ঘিরে। সে হতাশ হলো, যতদিন তার সৌন্দর্যময় চেহারা থাকবে, বুদ্ধিমত্তা থাকবে ততদিন মানুষ তাকে ভালোবাসবে। মানুষ তার প্রশংসা গাইবে। কিন্তু মানুষ চিরদিন তার সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে পারে না। আমিও একদিন আমার দাঁতগুলো পড়ে যাবে তখন হাসলে আমাকে বিশ্রী দেখাবে, আমার হাসি মানুষ আর পছন্দ করবে না। একদিন যে আমি শরীরের মাধ্যমে মানুষ অর্জন করেছিলাম তা আমি হারাব। এই ভাবনা তাকে ক্লান্ত করে ফেলল। সুতরাং সে ক্রস ডি লিনার ওপর সতর্ক মনোভাব ব্যক্ত করল। যখন সে ব্যাথেনির সঙ্গে সাক্ষা করল, প্রথমে তার হালকা প্রতিক্রিয়া দেখাল, কিন্তু কিছুই বলল না। সে জানত তার প্রতি ভালোবাসার কারণেই তার এই অসহায়তা এবং সে দেখল তার মধ্যে নিশ্চিত কোনো সন্তোষজনক প্রতিক্রিয়া নেই যখন সে জানল দুর্ভাগ্যবশত সে ব্যাথেনির আছে।

.

১২.

ক্লডিয়া এলি ম্যারিয়নের সাথে তার যৌন আকর্ষণের সুযোগ নিতে চেয়েছিল। সে আর্নেস্ট ভেইলকে লজ্জা দেবার বিষয়টা তার উপন্যাসে বর্ণনা করতে চেয়েছিল। এটা ছিল বড় শট; কিন্তু সে তার নীতিতে অবিচল ছিল। ববি বানজ পুরো বিষয়ের ওপর নাখোশ ছিল। কিন্তু এলি ম্যারিয়ন তার কোনো শট নেয়ায় কোনো অনুমতি দিল না। অন্যদিকে চলচ্চিত্র ব্যবসায় যৌনতা প্রদর্শনটা সম্মানজনক প্রথায় পরিণত হয়েছে। বলার প্রয়োজন নেই ভদ্র সমাজে এটার চাহিদা আছে।

ভেইলের আত্মহত্যার হুমকি দিয়েই মিটিংয়ের আলোচনা শুরু হলো। তার উপন্যাসে তার সাবেক স্ত্রী ও তার বাচ্চাদের আনা হলে মলি ক্লান্ডার খুব ঝগড়া করবে। কেউ তার হুমকিতে বিশ্বাস করে না, এমনকি ক্লডিয়াও নয়। কিন্তু যা করে তারা অর্থ উপার্জন করে সে বিষয়ে ববি বানজ ও এলি ম্যারিয়ন সবসময় উদ্বিগ্ন থাকে।

যখন ক্লডিয়া, আর্নেস্ট ও মলি লডস্টোনে এলো তখন তারা শুধু ববি বানজকে নির্বাহী হিসেবে সেখানে দেখল। তাকে মলিন দেখল। যদিও সে বিশেষ করে ভেইলকে উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে এটা গোপন করতে চেষ্টা করল। আমাদের সুখ। আর্নেস্টকে ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে সে বলল।

মলি তৎক্ষণাৎ সতর্ক হলো। এলি কোথায়, সে বলল। সে-ই একমাত্র ব্যক্তি যে এটার ব্যাপারে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

 বানজের স্বর মদ হয়ে এলো। এলি হাসপাতালে। তেমন কিছুই হয়নি। তার, শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই হবে। সে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল, লডস্টোনের ওঠা-নামার সাথে সাথে তার স্বাস্থ্যও ওঠানামা করছে। ক্লডিয়া কর্কশভাবে বলল, তার বয়স এখন আশির ওপরে। তাকে এখন অনেক কিছুই আক্রমণ করবে।

না, না বানজ বলল, আমরা প্রতিদিনই তাকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। সে কিছুটা ভালো, তোমার কথা বলতে পারো। আমি যখন পরিদর্শনে যাব তখন তাকে তোমার গল্প বলো।

না, মলি ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বলল

কিন্তু আর্নেস্ট ভেইল বলল, চলো আমরা ববির সঙ্গে কথাবার্তা বলি।

তারা তাদের ব্যাপারটা উপস্থাপন করল। বানজ তা সহজেই উপলব্ধি করল। কিন্তু তত বেশি মনোযোগ দিল না। সে বলল, আমি সব কিছুই শুনেছি। আমার ভালো লেগেছে। আমি আমার আইনজীবীকে ব্যাপারটা অবগত করেছিলাম, কিন্তু সে আমাকে বলল ভেইল সে ব্যাপারে তাকে তেমন ইঙ্গিত দেয়নি। যদিও ব্যাপারটা পুরোপুরি লিগ্যাল। তোমার লোজন দ্বারা এটাকে আরো প্রচার করো। ক্লডিয়া বলল, যদি আর্নেস্ট এটা করে তাহলে লডস্টোনের সবাই এটাকে সুন্দর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবে। এলি হয়তো পছন্দ করবে না। তার চিন্তা-চেতনা আরও বেশি নৈতিক।

তারপর আমি ব্যাপারটা দেখব। ববি বানজ বলল, কেন লোকজন বুঝতে পারে না। এলির অনুমোদনকৃত সবকিছুই আমি করি। সে আর্নেস্টের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কিভাবে নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজটি করলে?

আমরা কেউই ব্যাপারটা সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে অবগত না। মলি বলল, আমরা কেন এলিকে দেখার জন্য হাসপাতালে যাই না।

 ভেইল বলল, আমি টাকার অভাবে রোগী দেখতে হাসপাতালে যেতে পারি না। তারা সবাই তার দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিকোণ দিয়ে তাকাল। অবশ্যই এটা একটা হৃদয়বিদারক ঘটনা।

মলি ঠাণ্ডাভাবে বলল, তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখো। মি. আর্নেস্ট; তুমি যদি আমার লোক থেকে বিরত থাকতে চাও পারো। মলি বলল, ম্যারিয়নকে হাসপাতালে দেখতে যেতে পারি। কিন্তু ববি তার ব্যবসা তাকে করতে দাও। তুমি অবশ্যই লডস্টোন থেকে একটা লভ্যাংশ পাবে। তুমি প্রয়োজনবোধে ইস্যুরেন্স করতে পারো। বানজ কিছুটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করল। লভ্যাংশ কখনো না।

তা ঠিক আছে। মলি বলল, কিভাবে সে পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ পেতে পারে। বিজ্ঞাপন বিল নেই। কোনো সুদ নেই। তাহলে সে কিভাবে এমন অংকের টাকা পেতে পারে!

বানজ ভেবেচিন্তে বলল, তার লভ্যাংশ সর্বদাই মোট টাকার ওপর হবে। আমরা সকলেই জানি আর্নেস্ট নিজে নিজের সর্বনাশ করল। সে যতটা বোকা তার চেয়েও বেশি চালাক। প্রকৃতপক্ষে তার চাওয়া কি তা আমাদের জানতে হবে।

 কে জুয়াখেলার আলোচনায় পুনরায় আসছে? মলি বলল, আমি ইতিমধ্যে তার সীমা অতিক্রম করেছি। তোমার পরিকল্পনা তিনটা বিষয় নিয়ে। তার মধ্যে একটি পরিকল্পনায় টাকা দাঁড়াবে আধ বিলিয়ন ডলার যা বৈদেশিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তার টাকা টিভি, ভিডিওর কাজে ব্যবহার করা হয়নি। যিশু জানে আর কত টাকা সে বিভিন্ন হাত থেকে আত্মসাৎ করেছে।

 বানজ এটা পরিপূর্ণভাবে ভাবল। তারপর সে কিছুটা সতেজ হলো। আর্নেস্ট, সে বলল, একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে তুমি জাতীয় সম্পদ।

কিন্তু কেউই তোমাকে আমার চাইতে বেশি সম্মান করে না। এলি তোমার প্রত্যেকটা-বই পড়েছে। সে সত্যিকারে তোমাকে ভালোবাসে। সুতারাং আমরা চাই তুমি আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার বাজে কাজ করো না।

ক্লডিয়া হতবৃদ্ধি হলো, তারা কিভাবে আর্নেস্টকে সামান্য ভুলের জন্য এমনভাবে নিচু করতে পারল। কে সে আর কিছু না হোক, সে আমাদের জাতীয় সম্পদ।

সে উল্লেখ করে বলল, ক্লডিয়া তার জন্য গর্ববোধ করে।

বানজ মলিকে বলল, কিভাবে একজন লেখক সপ্তাহে মাত্র দশ গ্রান্ডের বিনিময়ে স্ক্রিপ্ট লিখতে পারে। তারপরও আবার সেটাকে চিত্রনাট্যে রূপ দিতে পারে। আর অতিরিক্ত লেখার জন্য তাকে প্রতি সপ্তাহে আরো পঞ্চাশ গ্রান্ড বেশি দেওয়া উচিত। সে গত পাঁচ বছর যাবৎ। বাৎসরিক দশ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কাজ করে আসছে।

 দ্বিগুণ টাকা? মলি বলল, তারপর আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারি। কেউই মোর মতো ঝুঁকি নেবে না। সে বলল, এটা আমি খুব সাধারণভাবে গ্রহণ করেছি। ববি, তোমার ব্যবসা তুমি তারপরও চালাতে পারো। তুমি কখনোই আমার কাছ থেকে মূল স্ক্রিপ্ট কিনবে না। তাছাড়া আমি নিজেও করব না। তুমি কখনোই আমাকে তোমার লেখা দেবে না। তাহলে তুমি কিভাবে বাকি কাজটুকু করবে। তাহলে তুমি এক বিলিয়ন অর্জন করতে পারো। তারপর ভেইল সত্যিকারের আনন্দ উপভোগ করতে আরম্ভ করল। আড়াই মিলিয়ন ডলার আমাকে সাহায্য করতে পারো।

 তুমি-হাসতে পারো? ববি বলল, ভেইল সব সময়ই খামখেয়ালীপনা। আমি কখনোই আমার জীবনে এমন ঘটনা ঘটতে দিতে পারি না। তাছাড়া এক মিলিয়ন ডলার আমাকে সাহায্য করতে পারে না।

ক্লডিয়া ভেইলের রসিকতা সম্পর্কে জানত। সে বলল, এটা তোমাকে সাহায্য করতে পারে না? কারণ আমি এখন পর্যন্ত জীবিত। ভেইল বলল, আমার পরিবারের যেগুলো প্রয়োজন। তারা আমাকে বিশ্বাস করে এবং আমিও তাদেরকে সম্মান করি। তারা সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে। তদুপরি বাজে, ভেইল ছাড়া তুমি অবশ্যই বিপদে পড়বে। তারপরেই তুমি ইচ্ছামতো কাজ করতে পারবে।

মলি ফ্লাডার বলল, চলো আমরা এলির কাছে যাই।

ভেইল তার রাগ হারিয়ে ফেলল এবং চিৎকার করা আরম্ভ করল। আমি তোমার মত লোকের সঙ্গে ব্যবসা করব না। তাছাড়া আমি একজন রোগীর জন্য প্রার্থনা করতে পারব না।

যখন সে চলে গেল। ববি বানজ বলল, তুমি তার জন্য দুটি বিষয় চাইতে পারো।

মলি বলল, মেয়েটি আসলেই উন্মাদ। সে অনেক সময় অসাবধানতার সঙ্গে অনেক কিছু করে ফেলে।

বানজ উদ্বিগ্নের সাথে জিজ্ঞেস করল, সে কি ওষুধ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত?

 না। ক্লডিয়া বলল, আর্নেস্টের বেশ জটিল, সে আসলেই আর কি কাজ করে তা বোঝা বেশ মুশকিল।

 বানজ কিছুক্ষণ বিরতি দেয়ার পর বলল, তাদের বিষয়টা বেশ জটিল, আমি কখনোই কাজকর্ম বিশ্বাস করতে পারেনি, আজও পারতাম না। আমি আমার কাজের জন্য মলি ফ্লাডারের বিরুদ্ধে যেতে চাই না। কারণ মেয়েটি আসলেই খারাপ প্রকৃতির। আমি মলিকে কল করব। যদি সে বিষয়টাকে রায় দেয় তাহলে আমি তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব। আমি নিশ্চিত যে ম্যারিয়ন বিষয়টাকে প্রত্যাখ্যান করবে। তারপরও আমি তোমার জন্য চেষ্টা করব। যাতে করে সে কাজটি গ্রহণ করতে রাজি হয়।

তারা বানজের লিমুজিন গাড়িতে করে হাসপাতালে গেল। এটা একটি বড় গাড়ি হলেও তেমন আরামদায়ক ছিল না। গাড়িটির সঙ্গে কমপিউটার, ফ্যাক্স এবং সেলুলার ফোন যুক্ত ছিল। গাড়িতে তিনজন দেহরক্ষী ছিল। যার মধ্যে দুজন গাড়ির পেছনে ও একজন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল।

তারা হাসপাতালে পৌঁছল। সেখানে তারা হাসপাতালের কেবিনেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করল। মহিলা ছিল বেশ সুন্দরী এবং সেবিকার পোশাক পরা। সে ক্লডিয়াকে ভেগাস হোটেলের হোস্ট মনে করল। সে তাদেরকে বিশেষ চলন্ত লিফটের মাধ্যমে উপরে নিয়ে গেল।

সুইটটির দরজা বেশ চমৎকার। তাছাড়া দরজাটি কমপিউটারের মাধ্যমে খুলে আবার বন্ধ হয়। সুইটটির মধ্যে একটি খাবার টেবিল, বেশ কিছু চেয়ার, সোফা, পাশে আরো একটি বড় টেবিল। সুইটটির এক কোণে কমপিউটার, ফ্যাক্স ও টেলিফোন। তাছাড়া পাশে ছোট রান্নাঘর এবং অতিথি বাথরুম আছে। তার পারে রোগীর জন্য বিশেষ বাথরুম আছে।

সিলিং পাখাটি বেশ উপরে এবং সুইটটির আর এক কোণে একটি টিভি সেট আছে।

সাদা কাপড় বিছানো বেডের ওপর ম্যারিয়ন শুয়েছিল। সে একটি সবুজ কভার আঁকা স্ক্রিপ্ট পড়ছিল। তার পাশে টেবিলের ওপর তার চলচ্চিত্র ব্যবসার অনেক মূল্যবান কাগজপত্র রাখা ছিল।

একজন সুন্দরী সেক্রেটারি বেডের অপর পাশে বসে ছিল। ম্যারিয়ন আগে থেকেই সুন্দরী নারীদের সঙ্গ পছন্দ করত।

 ববি বানজ ম্যারিয়নের গালে চুমা দিয়ে বলল, এলি তোমাকে দেখতে খুব ভালো লাগছে। মলি এবং ক্লডিয়াও তাকে চুমা দিল। ক্লডিয়া তাকে কিছু ফুলের তোড়াও দিল। সে তা তার বেডের পাশে রাখল। অন্যান্য পারিবারিক রীতি ব্যবহার করা হলো না। কারণ ম্যারিয়ন অসুস্থ। ম্যারিয়ন বলল, আমি তোমার সমস্ত কথা বুঝতে পেরেছি! তারপর তার সেক্রেটারিকে সকল কিছু বুঝিয়ে দিয়ে সে রুম ত্যাগ করল। সেই সময় তার কর্তব্যরত সুন্দরী সেবিকা ডাইনিং টেবিলে বসে বই পড়ছিল।

ম্যারিয়ন তাকে অবগত করে বে হলো।

সে তার হাতে হাত মিলাল। তখন সে পড়তে ব্যস্ত ছিল।

ম্যারিয়ন মুচকি হাসি দিল। সে সবাইকে বলল, সে একজন ক্যালিফোর্নিয়া, সবচেয়ে ভালো সেবিকা হবে বুঝতে পেরেছি। আমার জন্য ডাক্তার যা করেছে তার চেয়ে সে বেশি করেছে। আমি তাকে আজীবন স্মরণ করতে চাই। তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সে হাতপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো।

মলি বলল, আমি সর্বোচ্চ বিশ মিলিয়ন তার কাজের দাম দিতে রাজি থাকব। যদি এ ব্যাপারে সে নিশ্চয়তা চায় তাহলেই তাকে নিশ্চয়তা দেব। তার কোনো ঝুঁকি থাকবে না। ঝুঁকি যা নেওয়ার তা আমিই নেব।

বাজ রাগান্বিত স্বরে বলল, এটা খারাপ না। সে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করল। ব্যাপারটাকে খেয়াল করো, মলি বলল।

আর্নেস্ট এমন একজন লোক যার কোনো অবাক করার মতো জিনিস নেই। ক্লডিয়া বলল, সে তার পরিবার ভরণপোষণ করার দায়িত্ব নিতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এলি একজন লেখক সে সব সময়ই অন্য একজন লেখককে ভালোবাসে। এটা তার মানবিক গুণাবলির মধ্যে অন্যতম। তুমি মেট্রোপলিটন জাদুঘরে বিশ মিলিয়ন ডলার দিয়েছ। তাহলে কেন আর্নেস্টের জন্য কিছু করতে পারবে না।

 বেশ ভালো, তোমাকে ধন্যবাদ। সে তার গালে চুমু দিল। ঠিক আছে আমি আগামীকালকের মধ্যেই তোমার অফিসে টাকার মেমো পাঠাব এবং আমি আশা করি তুমি তোমার কাজ ঠিকমতো খুব তাড়াতাড়ি করতে পারবে।

ক্লডিয়া তার কথাগুলো বুঝতে পারল না। সে এলির হাত ধরে বলল, তোমার অনেক কিছু আছে। তোমার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ তুমি আর্নেস্টের জীবনটাকে বাঁচাও।

ঠিক এই মুহূর্তে এলি ম্যারিয়নের কন্যা তার দুই সন্তান নিয়ে রুমে প্রবেশ করল। তার সহকারী পাশ থেকে তাদের বসানোর জন্য চেয়ার আনল। তার কন্যা বর্তমানে তার দুই সন্তান নিয়ে তার সঙ্গেই লডস্টোন স্টুডিওতে কাজ করছে। কারণ এলি ম্যারিয়ন তার নাতিদের খুবই ভালোবাসে।

ক্লডিয়া এবং মলি বেরিয়ে মলির অফিসে এলো এবং আর্নেস্টকে কল করে বলল, তোমার একটি ভালো খবর আছে। সে তাকে রাতের খাবার আয়োজন করতে বলল।

উপন্যাসটি আমি আমার মেয়ের জন্য ক্রয় করি। তাই আমি কি এটা ছবি বানাব? ম্যারিয়ন জিজ্ঞেস করল, এটা দিয়ে কম বাজেটের ছবি বানাতে হবে। কিন্তু তোমার মেয়ে তো বড় ছবি ছাড়া ছোট ছবি তৈরি করবে না, বানজ বলল।

 ম্যারিয়ন বলল, আসলেই এই উপন্যাস দিয়ে ছবি তৈরি করলে আমি আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তারপরও যখন কিনেছি একবার চেষ্টা করে দেখি।

তুমি কি আসলেই ভেইলকে হারাতে যাচ্ছ? বানজ জিজ্ঞেস করল, যদি সে মারা যায় তাহলে আমরা কোটে জিততে পারি।

ম্যারিয়ন বলল, যদি আমি এটা ভালোভাবে পাই। আর পেলে তোমাকে দিয়ে দেব। তুমি যদি মারো তাহলে আইনের লড়াইয়ে দিয়ে ভিলাটি অর্জন করবে।

বানজ তার প্রস্তাবে অবাক হয়ে গেল। এলি তুমি কি সম্পূর্ণ সুস্থ আছ? অবশ্যই এবং আমি তোমাকে যা বলছি তাই সত্যি। তুমি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত থাকতে পারো।

 আমি এলি ম্যারিয়ন যা বলি তা মন থেকেই বলি। আমার মধ্যে কোনো ভণিতা নেই। যার প্রমাণ তুমি পরে পাবে। তুমি শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা। করো এবং একজন ভালো আইনজীবী ঠিক করো। তোমাকে জিততেই হবে।

 আমাদের এখন কি নিয়ে ভাবতে হবে। ভেইল বলল, আমরা তিনটি কাজের মধ্যে দুটিতে জয়লাভ করেছি। অতি বেশি লোভী হওয়ার প্রয়োজন নেই। মলি বলল, ইতিমধ্যে ব্যবসাটি তৈরি হয়ে গেছে। ভেইল ছবির তারকা স্টাইলে তার হাতে চুমু দিল এবং বলল, মলি তুমি সত্যিই জিনিয়াস।

তারপর মলি তার রুটির সঙ্গে টমেটোর সস নিল। আর্নেস্ট, সে বলল। তুমি কখনোই এই শহরের হাবভাব বুঝতে পারবে না। এখানে কোনো করুণা নেই। তুমি মদ পান করো না, রান্না করো না। তুমি ভালোবাসা ভাগাভাগি ভাঙাভাঙি করো না। কেন তোমাকে অসুস্থতার মতো জীবনযাপন করতে হবে।

ক্লডিয়া বলল, স্কিপি ডিরি আমাকে বলেছিল যখন তুমি ওটা কিনেছিলে? মানুষ যেটাকে চায়নিজ রেস্টুরেন্ট হিসেবে গ্রহণ করেছিল যখন তুমি বিক্রয় করলে তখন ওটাকে মানুষ ইতালিয়ান রেষ্টুরেন্ট হিসেবে গ্রহণ করল। বিষয়গুলো সব সময় খেয়াল রেখ। তুমি জানো, আর্নেস্ট, তুমি হলিউডে দীর্ঘদিন জড়িত। তোমার মধ্যে যথেষ্ট পাগলামি আছে।

আমার মধ্যে মোটেই ভিন্নতা নেই। ভেইল বলল, আমি ঠিক তোমাদের মতো নই কিন্তু তাই বলে আমি পাগলামি করি না।

ক্লডিয়া অধৈর্যভাবে বলল, তুমি কেমন করে পাগলামি চিন্তা-ভাবনা করতে পারো? তুমি দশটা বই লিখেছ। তুমি কিছু পুরস্কারও জিতেছ। তুমি একজন আন্তর্জাতিক লেখক।

মলি বলল, তুমি পাগল না, তুমি উন্মাদ। আর্তচিৎকার থামাও। কারণ তুমি ধনী না, তুমি গরীবও না। তুমি এখানে থাকতেও পারবে না। তুমি তোমার শিল্পকর্ম নিয়ে আর বেশিদিন ভোগান্তিও করবে না।

ভেইল মলির বাহু ধরল। তোমার ধারণা ঠিক আছে। সব কিছুই সত্য বলেছ। আমি প্রতি মুহূর্তে আমার জীবন উপভোগ করতে চাই। কিন্তু আমার শিল্পকর্ম আমাকে অনেক নিচে নামিয়ে দিয়েছে। সে মদ পান করতে করতে কথা বলে চলল। আমি আর পুনরায় লিখতে চাচ্ছি না। নভেল লিখা অর্থ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছা। আমি আর নভেল লিখব না।

তুমি অলস মলি বলল, তোমার কোনো অনুরোধই মানার যোগ্য না। আরো এটাই প্রধান কারণ। সেজন্য তুমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলে। তারা সকলেই হাসল। আর্নেষ্ট তাদের কাছ থেকে দ্বিতীয় বার বাছুরের মাংস পেল। এটা ছিল অতিরিক্ত পাওয়া, ফলে সেই সময় তাকে বেশি খেতে হলো। সে মনে করে নিজে খাওয়ার চাইতে মানুষ খাওয়াতে সে বেশি আনন্দ পায়।

 তা ঠিক আছে সে বলল, কিন্তু একজন ঔপন্যাসিক একটি সাধারণ উপন্যাস লিখে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে না। যেমনটা তুমি পেরেছ।

 একটি উপলক্ষ কখনোই একটি ছবির মতো সাধারণ হতে পারে না। ক্লডিয়া রাগান্বিতভাবে বলল, তুমি কেন ছবির কাজটি নিলে? আমি তোমাকে ভালো ছবিতে কাঁদতে দেখেছি এবং তা ছিল একটা শিল্প।

ভেইল নিজে নিজেই আনন্দ করছিল। তাছাড়া সে সেই সময় স্টুডিওর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছিল। তার নমুনা দিল। ক্লডিয়া, আমি রাজি। সে বলল, চলচ্চিত্র একটা শিল্প। অতএব কোনোভাবেই আমাদের কারণে এই শিল্পটাকে নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না। আমরা যতদিন পারি আমাদের পক্ষ থেকে এই শিল্পিটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করব। এজন্য আমাদের সবার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

সে কিছুক্ষণ বিরতি নিল। তারপর ভেইল বলল, আমি দুজন মেয়ের সন্ধান পেয়েছি। তারা নামি-দামি, দেখতে খুবই সুন্দরী।

আমি আজই তাদের কাছে যাব। আমি বেশ কিছুদিন দুজন নতুন নারী খুঁজছি। আমার বিশ্বাস, হয়তো তাদের দ্বারা আমার পরিশ্রম লাঘব হবে। তারা যদি অভিনয়ের ব্যাপারে সাড়া দেয় তাহলে আমি অবশ্যই আমার ছবিতে তাদের সুযোগ করে দেব।

আমি তোমাদের সঙ্গে কোনো উপহাস বা কৌতুক করছি না। আমি শুধু তোমাদের কাজ থেকে সাহস চাচ্ছি। তারপর সে কিছুক্ষণ হাসল। এক্ষেত্রে তোমাদের চাইতে আমার অভিজ্ঞতা কোনো অংশে কম নয়।

ক্লডিয়া হাসিতে ফেটে পড়ল। এতদিন জানতাম তুমিই বোকা। আমি শুধু একটা নতুন জীবন অন্বেষণ করছি।

ভেইল বলল, আমরা কি ব্যবসা নিয়ে কথাবার্তা বলতে পারি মলি বলল, আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবার সবকিছুর ওপর তাদের অধিকার বসাতে পারবে। আমি মনে করি তারা লডস্টোন থেকেও পাঁচ পার্সেন্ট পাবে।

কমপক্ষে পাঁচ। মলি বলল, তুমি তোমার নিজের সবকিছুকে বিনষ্ট করতে যাচ্ছ। তুমি আমাকেও সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্লডিয়া তার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে তার সকল কথা অবিশ্বাস ভাবে গ্রহণ করল। আর্নেস্ট তুমি এখন পর্যন্ত অসুখী। আমরা তোমাকে একটি নতুন ব্যবসা দেব। আমি এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে ব্যবস্থা নিয়েছি।

 ভেইল বলল, ক্লডিয়া বর্তমান পৃথিবী সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই। যা তুমি পর্দায় ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারবে।

 আমাকে দিন। আমি সবকিছুতেই জয়লাভ করেছি। আমি আমার নিজেকে বিনষ্ট করিনি। আমি খাওয়ার মধ্যে আনন্দ উপভোগ করি। আমি আমার ভালোমন্দ আমার দুজন সুন্দরী সঙ্গীর সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আমি আমার স্ত্রীকেও ভালোবাসি, আর আমার সন্তানদের জন্য আমি অনেক কিছু করতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে তুমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারোনি। মলি বলল, তুমি তোমার মূল্যবান সময় নষ্ট করছ।

 কারণ আমি ভালো লিখতে পারি না। ভেইল বলল, তাছাড়া আমি এই কাজটিকে তেমন মূল্যায়ন করি না। তার কথা শুনে দুজন মহিলা হাসিতে ফেটে পড়ল। ভেইল তাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। আমরা এলির বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি, সে বলল।

 তুমি তোমার লেখায় আরও বেশি উদ্যমী হও। আর বেশি যদি বাড়াও ক্লডিয়া বলল, যেহেতু আমি লিখতে পারি না। তাই আমি তোমাকে এ ব্যাপারে কিছুই বলতে চাচ্ছি না। আমি এখন মজার বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি। যে ছবি তৈরি করতে পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে এবং যার আয় ধরেছ একশত মিলিয়ন ডলার সেখান থেকে আমি কিভাবে দশ শতাংশ লভ্যাংশ পাব বুঝতে পারছি না।

তখন মলি তাকে হিসাব বোঝানোর জন্য নোট বই বের করল এবং তাকে টাকার ফিগারগুলো বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল। আমি তোমাকে যে হিসাব দিলাম তা তার মধ্যে কোনো ভুল নেই। তারপরও সে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য বেশ কিছুদিন সময় চাইল।

ঠিক আছে স্টুডিও ছবি বানানোর জন্য পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলার পাবে। তারপর বাকি আরো ত্রিশ মিলিয়ন ডলার থাকে। সেটা স্টুডিওর সবার মধ্যে ভাগবণ্টন করা হবে। আর বাকি বিশ মিলিয়নের মধ্যে পাঁচ মিলিয়ন ছবির প্রিন্ট ও বিজ্ঞাপন ব্যয়। পাঁচ মিলিয়ন ছবির পরিচালক-তারকা পাবে। তুমি কি এবার বুঝতে পেরেছ? ভেইল হাসল। মোটেই না, সে বলল। তাহলে টিভি এবং ভিডিওর টাকা? হিসাব নিয়ে পুনরায় আমি আলোচনা করার জন্য অনুরোধ করছি। তাছাড়া আজকের আলোচনায় এলি উপস্থিত নেই। এই হিসাব যদি সবাই মেনে নেয় তাহলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। তাছাড়া আমি আর পুনরায় লেখালেখির কাজটি করতে চাইব না। তুমি সত্যিই একটা পাগলাটে, ক্লডিয়া বলল।

না-না, আমি কেবলমাত্র আমার অভিমত প্রকাশ করলাম। ভেইল বলল, লেখকের স্বভাব যদি এমন হয় তাহলে হয়তো দর্শকও তোমার লিখা ছবি সেভাবেই গ্রহণ করবে, ক্লডিয়া বলল।

এলি ম্যারিয়নের বয়স এখন আশির ওপরে। সে আবারও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার জীবন-মরণ সমস্যা। যে কোনোভাবেই অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারছে না। তাকে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন সববরাহ করা হচ্ছে।

 আমাদের সবার উচিত এই মুহূর্তে তার পাশে থাকা। ব্যবসা পরেও করা যাবে। একজন মানুষের জীবনের চাইতে ব্যবসা বড় হতে পারে না। সে দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগছিল। কিন্তু কাজের চাপের কারণে আমাদের দিকে চেয়ে সে সেদিকে নজর দেয়নি। কিন্তু আজ তাকে মরণব্যাধি পেয়েছে। তার রোগমুক্তির জন্য আমাদের সবার উচিত আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করা। আমাদের সারাক্ষণ কাউকে না কাউকে তার পাশে থাকা উচিত। বিশেষ করে ববি বানজ যেভাবে তার সেবায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের উচিত তার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কারণ আমরা সবাই এক সঙ্গে একই পেশায় জড়িত।

এলি ম্যারিয়ন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। সে তখন কারেন্টের শক গ্রহণ করছিল। তার হার্টবিটের কম্পাঙ্ক কমপিউটারের স্ক্রিনে বারবার ওঠানামা করছে। চলচ্চিত্র জগতের সবাই যখন নিজ নিজ কাজ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তখন একজন সেবিকা প্রিসিলিয়া তার কর্তব্যে ব্যস্ত আছে। সে তার জন্য দুই শিফটে কাজ করছে। কারণ সে দুজন ছোট ছেলেমেয়েকে ভরণ-পোষণ করে। এটা তার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। তার শিফটে এলি মারা যাওয়ার কারণে সে হতাশ হলো। সে মৃত্যুকে ঘৃণা করল। সে সেবিকার বাইরে একজন ছবি মেকার হতে চেয়েছিল। সে এলি ম্যারিয়নের অনেকটা নির্ভরশীল হয়েছিল। সে চেয়েছিল এলি রোগমুক্ত হলে তার সঙ্গে ছবির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবে।

সে চিরদিন সেবিকা হয়ে থাকবে না। কিন্তু এখন সে আর আশা করতে পারছে না। হাসপাতালের টপ ফ্লোরে হলিউডের লোকের উপচেপড়া ভিড়। সবাই হলিউডের মহান ব্যক্তিকে দেখার জন্য সমস্ত কাজকর্ম ছেড়ে চলে এসেছে। আর সে সবার সামনে দাঁড়িয়ে চির বিদায়ী সেই মহান ব্যক্তিকে শেষ দেখা দেখে নিচ্ছে।

ম্যারিয়নের মৃত্যুর আগে অনেকেই তার সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেছিল।

 সেবিকা বলল, তার মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগেও আমি পাশে ছিলাম। তখন সে সংজ্ঞাহীন হয়ে বেড়ে পড়ে আছে। তার মৃত্যু ছিল আমার কাছে অকল্পনীয়। মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে সে জানালার কাছে গিয়ে সূর্য উদয় দেখেছিল। তারপর সে আস্তে আস্তে বিছানায় এলো। আমি তখন তার পাশে ছিলাম। এভাবেই হয়তো একদিন আমাকে চলে যেতে হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *