১. জানলার ধারে বসে

দি মিরর ক্রাকড ফ্রম সাইড টু সাইড (মিস মারপল)

জানলার ধারে বসে নিজের বাগানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন মিস মারপল। এই সেদিন পর্যন্ত বাগানের পরিচর্যায় সময় কাটানোই ছিল তার আনন্দ, কি অসীম গর্ব আর পরিতৃপ্তি ছিল একে নিয়ে। কিন্তু উপায় কি? বয়সের শৃংখল আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে, ডাক্তারের কঠোর অনুশাসনে কোনোরকম শারীরিক পরিশ্রম করাই বারণ হয়ে গেছে। কিন্তু জেন মারপলের মনে কিশোরীর মতো অনুসন্ধিৎসা আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির খবর রাখে কজন?

নিজের আশৈশব পরিচিত এই সেন্ট মেরী মিড-এরও কি পরিবর্তন। পথ-ঘাট ও আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টে গিয়েছে। বদলে গেছে দোকানগুলোর চেহারা। বেশির ভাগ বাড়িই হাতবদল হয়েছে, তাদের বাইরের চেহারা অবিকৃত রেখে ভেতরে তৈরি করা হয়েছে আধুনিক নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। প্রচুর ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি হয়েছে, সেখান থেকেই আসে মিস মারপল-এর ঘরের কাজে সাহায্য করার মেয়েটি। লেখাপড়া জানা মেয়ে বউরাও আজকাল এই ধরনের কাজ করতে উৎসাহী। কিন্তু মনে মনে পুরানো দিনের পরিচারিকাদের কাজের গুণগত মানের সঙ্গে এদের তুলনা করে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া উপায় নেই।

অন্যমনস্ক ভাবেই হাতের বোনাটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন মিস মারপল। কাঁধের কাছে ঘর কমাতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন, বহুক্ষণ আগেই একটা ঘর পড়ে গিয়েছে। এই ক্ষীণদৃষ্টি নিয়ে সেটিকে ঠিক লাইন পর্যন্ত তুলে আনা তার পক্ষে এখন আর সম্ভব নয়। মিস নাইট-এর জন্য অপেক্ষা করতেই হবে।

ওঃ, মিস নাইট-এর কথা মনে পড়লেই মনে মনে অস্বস্তিবোধ করেন যেন মারপল। ভাইপো রেমন্ড কিছুতেই একা বাড়িতে থাকতে দেবেনা তাকে, তাই মিস নাইট-কে নিযুক্ত করে দিয়েছে তার সঙ্গিনী হিসেবে। ভদ্রমহিলা অবশ্য খুবই উৎসাহী, কর্মদক্ষ, কিন্তু তার সস্নেহ ব্যবহারের মধ্যে যেন প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি মমতা দেখানোর প্রয়াস আছে বলে মনে হয় মিস মারপল-এর। আর এটাই ভীষণ বিরক্তিকর বলে মনে হয় তার।

আজ কিন্তু আর ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না তার। মিস নাইটকে কয়েকটা কাজের ছুতোয় বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে একাই বেরিয়ে পড়লেন তিনি। ঐ নতুন ফ্ল্যাটগুলো তো দেখাই হয়নি তাঁর। নতুন মুখগুলোর সঙ্গে তার ফেলে আসা অতীতের মানুষজনের মিল খুঁজে বার করতে পারলে ভারি খুশি হন মিস মারপল। এতে মানুষগুলোকে বুঝতে সুবিধা হয় তার।

একটি অর্ধ সমাপ্ত বাড়ির জানলার ধারে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল একজোড়া তরুণ তরুণী। কথা শুনে মনে হলো, শিগগিরই বিয়ে করতে যাচ্ছে ওরা। এত বড়ড়া বাড়ি কেনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই ছেলেটির, এত টাকা খরচ করতে চায় না সে। কথাবার্তায় এ-ও বোঝা গেল ভাবী শাশুড়ীটিকেও মোটেই পছন্দ নয় ছেলেটির। এমন সময় ঘটলো এক অভাবনীয় দৃশ্য। খোলা জানলায় আড়াআড়িভাবে রাখা একটি আলগা বোর্ডে অন্যমনস্কভাবে হাতের চাপ একটু বেশি দিয়ে ফেলেছিল মেয়েটি। শেষ মুহূর্তে দেওয়াল আঁকড়ে ধরতে না পারলে নির্ঘাৎ ওপর থেকে আছড়ে পড়তো মাটিতে। ছেলেটি কিন্তু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দিয়ে একটু পিছিয়ে পড়লো।

একটু পরেই নিচে নেমে এলো মেয়েটি। ফ্ল্যাটটিতে তালা বন্ধ করে ছেলেটির নামতে যতটুকু দেরি হলো, তার মধ্যেই মিস মারপল ছেলেটি সম্বন্ধে মেয়েটিকে সতর্ক করে দিতে ভুললেন না। দেখে খুশি হলেন তার কথাটি উড়িয়ে দিল না মেয়েটি, রীতিমতো চিন্তিত দেখালো তাকে।

ছেলেটির মুখোমুখি হতে চান না মিস মারপল, একটু তাড়াতাড়িই পা চালালেন তিনি, এবং ভুলটা হলো এখানেই, একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে একেবারে পপাত ধরণীতল। বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষটির হাত-পা অবশ্য ভাঙলো না, কিন্তু বিলক্ষণ নাড়া খেলেন তিনি। সামনের বাড়ির মধ্যবয়স্কা মহিলাটি ব্যাপার দেখে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে হাত ধরে তুলে নিয়ে এলেন নিজের বাড়িতে। তাড়াতাড়ি চা নিয়ে এলেন তার জন্য।

অত্যন্ত আলাপী মহিলা এই মিসেস বেডকক। টুকটাক সমাজসেবা করে আনন্দ পান এই প্রাণোচ্ছল মহিলা। একবার যেটা মনে হয়, করেই ছাড়েন। অনেকদিন আগের একটা ঘটনা বললেন, বিখ্যাত অভিনেত্রী মেরিনা গ্রেগ, যিনি বহুবিবাহ করার জন্যও বিশেষ প্রসিদ্ধ, তার সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ পেয়ে ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও অসুস্থ শরীর মেক-আপ-এ ঢেকে চলে গিয়েছিলেন মিসেস বেডকক। আরও জানালেন, একটি বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে মেরিনা, চলে যান যবনিকার অন্তরালে। এখন আবার পর্দায় ফিরে আসছেন তিনি। আর ঐ মেরিনা গ্রেগ ও তার পরিচালক স্বামী এই সেন্ট মেরী মিড-এর গসিংটন হলটি কিনেছেন, যে বাড়ির লাইব্রেরিতে একসময় একটি তরুণীর মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়ে যথেষ্ট উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।

পরদিন গসিংটন হল-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন মিস মারপল। ঐ বাড়িটির আদি মালিক মিসেস ব্র্যান্ট্রি তার অনেকদিনের বন্ধু। স্বামীর মৃত্যুর পর এই বাড়ির সংলগ্ন একটি কুটির আর কিছুটা ঘেরা বাগান নিজের জন্য রেখে, ঐ বিশাল বাড়ি ও জমি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। অতএব প্রাসাদ রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁর পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। বছরের অনেকটা সময়ই তিনি দেশে বিদেশে ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনিদের কাছে ঘুরে বেড়ান। মাঝে মাঝে এই আরামদায়ক ছোট্ট বাড়িটিতে কাটিয়ে যান।

মিসেস ব্র্যান্টির কাছে জানা গেল, বেশ কয়েকবার হাতবদল হওয়ার পর বাড়িটি সত্যিই এখন মেরিনা গ্রেগ কিনেছেন, বাড়িটির ভেতরের অংশ বহু অর্থব্যয় করে বিপুল সুবিধাজনক পরিবর্তন করেছেন, এবং বর্তমানে এখানেই থাকতে আসছেন। মেরিনা-র সঙ্গে বেশ কিছুদিন আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় আলাপ হয়েছিল মিসেস ব্র্যান্টি-র। খুবই আকর্ষণীয় মহিলা এই চিত্রতারকাটি। এই জনপদের কয়েক মাইলের মধ্যেই হেলিংফোর্থ-এর নতুন স্টুডিওটিতে মেরিনার স্বামী জ্যাসন হ্যাড-এর পরিচালনায় একটি ছায়াছবি তৈরির কাজ চলছে। তাতে অস্ট্রিয়ার এলিজাবেথ-এর ভূমিকায় অভিনয় করছেন মেরিনা।

কিছুদিন পরেই গসিংটন হলে সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্স-এর উদ্যোগে একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তাতে অংশ নেবেন মেরিনা।

মেরিনার প্রসঙ্গ শেষ করে এবার মিস মারপল-এর খবরাখবর নিয়ে ব্যস্ত হলেন মিসেস ব্র্যান্টি। তিনি শুনেছেন, ফ্ল্যাটবাড়িগুলি দেখতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন জেন মারপল। কিন্তু ওখানে যাওয়ার দরকার কি ছিল?

অবাক হলেন জেন?

–তুমি কি করে জানলে?

-আরে, ঐ ফ্ল্যাটবাড়িগুলির একটি থেকেই তো আমার বাড়ি রোজ কাজ করতে আসে। মিসেস মিভি। এই সেন্ট মেরী মিড-এ কোনও খবর গোপন থাকে না জেন। তা তুমি কি করতে গিয়েছিলে সেখানে?

-দেখতে গিয়েছিলাম জায়গাটা কেমন, ওখানকার মানুষগুলো কেমন?

–কেমন দেখলে?

 –অন্য আর পাঁচজনের মতোই, খুবই চেনা চরিত্র। দেখে বেশ স্বস্তি পেলাম।

–কেন?

–চরিত্রগুলো চেনা হলে খুব সুবিধে হয়, ধরো যদি কোনো তেমন ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে কেন হলো, কার জন্য হলো, এসব বুঝতে তেমন অসুবিধে হয় না।

ঘটনা মানে? খুন জখমের কথা ভাবছো নিশ্চয়ই?

–আমি যে সব সময় খুন-এর কথাই ভাবি, এ কথা মনে করছো কেন?

–তোমাকে তো কম দিন ধরে দেখছি না জেন, আচ্ছা নিজেকে অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলে জাহির করতে আপত্তি কোথায় তোমার?

-কেননা, আমি সেরকম কিছুই নই। এরকম একটা গ্রামে থাকলে মানব চরিত্র সম্বন্ধে মোটামুটি একটা জ্ঞান অর্জন করাটা তেমন অসম্ভব কিছু নয়। যাই হোক, এবার আমি চলি, নইলে মিস নাইট ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

সত্যিই উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠেছিলেন মিস নাইট, এই ভদ্রমহিলাকে নিয়ে পেরে ওঠা মুস্কিল। মিস মারপলকে নিরাপদে ফিরতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন তিনি। সর্বনামে বহুবচন ব্যবহার করা অভ্যেস তার, গম্ভীরভাবে বললেন।

–আমরা এখন নিশ্চয়ই খুবই ক্লান্ত?

–তুমি ক্লান্ত হলেও হতে পারো, আমি কিন্তু একটুও ক্লান্ত নই।

–আগুনের পাশে একটু আরাম করে বসুন। এক কাপ ওভালটিন খাবেন, না কি হরলিক্স?

–একটু ড্রাই শেরী নিয়ে এসো। প্রস্তাবটা পছন্দ হলো না মিস নাইট-এর,ডাক্তার এ ব্যাপারে মত দেবেন কি না–

–সে কাল সকালে তাকে জিজ্ঞেস করে নিলেই হবে, এখন নিয়ে এসো তো।

গসিংটন হল-এ চায়ের নেমন্তন্নে যোগ দিতে এলেন মিসেস ব্যান্ট্রি। পুরোনো বাড়িটিকে ভেঙে-চুরে মনের মতন করে সাজিয়েছেন নতুন বাসিন্দারা। সুমধুর ব্যবহার মেরিনার। এই মধ্যবয়সেও যথেষ্ট মনোহারিনী। তার স্বামী জ্যাসন হাড, আপাতদৃষ্টিতে কুদর্শন হলেও, গভীর চোখের দৃষ্টি ও অকপট হাসিতে ভেতরের মানুষটিকে চিনিয়ে দেয়। মেরিনা বারে বারেই বলছিলেন, এই বাড়িটি খুব ভালো লেগেছে তার, এখানেই থাকতে চান সারাজীবন। কিন্তু এমন কথা হয়তো আরও বহুবার বহু-জায়গার ক্ষেত্রেই মনে হয়েছে তার। মেরিনার সেক্রেটারি এলা-র সঙ্গে পরিচয় হলো। তারও ধারণা শিল্পীরা, বিশেষ করে চিত্রতারকারা এক জায়গায় বিশেষ করে বেশিদিন আটকে থাকতে পারে না। অশান্ত মন ছুটিয়ে নিয়ে যেতে থাকে তাদের। বাস্তবের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক নেই তাদের। আর, জীবনে এত বেশি উত্থান-পতন আর সুখ-দুঃখের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছে মেরিনা, যে তার ভাবাবেগগুলিও একটু অস্বাভাবিক ভাবেই প্রবল। এলার কাছ থেকেই জানতে পারলেন মিসেস ব্যান্ট্রি, জ্যাসন প্রচণ্ড ভালোবাসেন স্ত্রী মেরিনাকে। তাকে আনন্দে রাখার জন্য সব কিছুই করতে পারেন।

বহুদিনের বন্ধু ডাক্তার হেডক মিস মারপলকে দেখতে এসে একটি আশ্চর্য প্রেসক্রিপশান দিয়ে গেলেন, নতুন কোনো রহস্য সমাধানের চেষ্টা করাই জেন মারপলের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একমাত্র প্রয়োজনীয় ওষুধ। মিস নাইট মন্তব্য করলেন, ঐ নতুন আবাসনগুলিতে খুন জখমের মতো ঘটনা ঘটা অসম্ভব নয়, কেননা, ওখানে প্রচুর ছেলেছোকরা আছে, যাদের চেহারা ও গতিবিধি বেশ সন্দেহজনক বলে মনে হয়।

খুনটা সত্যিই হলো, তবে আবাসন-এ নয়।

সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্সের মেলা-র জন্য গসিংটন হল খুলে দেওয়া হয়েছে। এত ভিড় হয়েছে যে বলার কথা নয়। প্রবেশ মূল্যের পাহাড় জমে যাচ্ছে। চমৎকার আবহাওয়া আজ, পরিষ্কার রৌদ্রজ্জ্বল দিন, কিন্তু এত দর্শক সমাগমের সেটাই একমাত্র কারণ নয়, সকলেই গসিংটন হল-এর নতুন চেহারাটা দেখতে চায়, সেই সঙ্গে যদি মেরিনা গ্রেগকে একঝলক দেখতে পাওয়া যায়, তবে তো সোনায় সোহাগা।

সবথেকে বেশি আকর্ষণ করছে সুইমিং পুলটা। যদিও এখানকার আবহাওয়ায় সাঁতার কাটার মতো দিন খুবই কম পাওয়া যায়। এসব জিনিস হলিউড-এই মানায়। তবু বিস্ময় বিস্ফারিত নেত্রে মানুষজন এই বিপুল অর্থব্যয়ে গড়ে তোলা নয়নাভিরাম জলাশয়টি দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে লাগলো।

বিকেলবেলা বাড়তি এক শিলিং দক্ষিণার বিনিময়ে দর্শকরা গসিংটন হলের ঘরগুলি ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়ে উফুল্ল হয়ে উঠলো মেলার জনতা। স্থানীয় লোকেদের তো বিশ্বাসই হতে চাইলো না যে, এটা সেই তাদের বহুবার দেখা প্রাচীন গসিংটন হল।

বাগানের বড়ো ছাউনির তলায় চা এবং জলযোগের আয়োজন করা হয়েছিল। ভিড়ে ও গরমে সেখানে প্রাণ ওষ্ঠাগত ব্যান্ট্রি-এর। কিন্তু সব ব্যাপারটা বেশ সুদক্ষ হাতে পরিচালিত হচ্ছে, এবং মেলার মুখ্য উদ্দেশ্য যে সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, সেটাও আশাতীতভাবে সফল হতে চলেছে দেখে মনে মনে উৎফুল্লও হলেন তিনি।

এমন সময় জ্যাসন হ্যাড-এর একজন সহকারী হেইলি প্রেস্টন খুঁজে বার করলো মিসেস ব্যাট্রিকে। মেরিনা এবং জ্যাসন কয়েকজন বিশিষ্ট অতিথিকে আপ্যায়ন করছে চান, এই বাড়ির পুরোনো মালিক হবার সুবাদে ব্যান্ট্রিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সিঁড়িতে ওঠার মুখে কাউন্সিলার অ্যালকক ও তার পৃথুলা স্ত্রীর সঙ্গে দেখা। রীতিমতো হাঁপাচ্ছেন ভদ্রমহিলা, তবু ব্যাট্রিকে দেখে তার মনের সাধটি ব্যক্ত করতে ভুললেন না। এইসব চিত্রতারকাদের বিলাসবহুল বাথরুমগুলি কেমন হয়, সেটা দেখার খুব ইচ্ছে তাঁর, কিন্তু সেটা আর সম্ভব হবে?

সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন জ্যাসন হাড ও মেরিনা গ্রেগ। ভারি সহজ স্বাভাবিক ও সুন্দরী দেখাচ্ছে মেরিনাকে। কি গভীর অধ্যবসায়ের সাহায্যে নিজের এই ভাবমূর্তিটি তৈরি করেছেন মেরিনা, সেকথা কজনই বা জানে?

মিসেস ব্যাট্রিকে স্বাগত জানালেন মেরিনা। জ্যাসন তাঁর ও তাঁর সঙ্গীদের হাতে তুলে দিলেন তাদের পছন্দমতো পানীয়ের পাত্র। ইতিমধ্যে পরবর্তী অভ্যাগতরা এসে গেছে। এঁদের মধ্যে আছেন মিস্টার ও মিসেস বেডকক। মিসেস বেডকক সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্সের স্থানীয় সম্পাদিকা। আজকের এই অনুষ্ঠানটি সংঘটিত হওয়ার পেছনে তার পরিশ্রমই সবথেকে বেশি। মেরিনাকে কাছে পেয়ে উৎসাহে যেন টগবগ করে ফুটছিলেন এই ভদ্রমহিলা। সবিস্তারে শোনাতে লাগলেন বারো তেরো বছর আগে বাড়াতে কিভাবে মেরিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য অসুস্থ শরীরে ডাক্তারের নিষেধ অমান্য করার জন্য চলে গিয়েছিলেন তিনি। অত্যন্ত ভদ্র হাসি ঠোঁটে রেখে মহিলার বকবকানি সহ্য করে যাচ্ছিলেন মেরিনা, দেখে মায়া হচ্ছিল মিসেস ব্যান্ট্রিরহঠাৎ মেরিনার দিকে চেয়ে চমকে উঠলেন তিনি, মেরিনার দৃষ্টি কিন্তু মিসেস বেডকক-এর দিকে নেই। সিঁড়ির ওপর টাঙানো শিশুকোলে ম্যাডোনার একটি ছবির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন মনে হলো। মুখ হয়ে গেছে কাগজের মতো সাদা। দেখে কেন জানি না টেনিসনের লেডি অব শ্যালট কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়লো মিসেস ব্যান্ট্রির।

এই অবস্থা থেকে মেরিনাকে উদ্ধার করলেন তার স্বামী জ্যাসন। মেরিনা-র প্রিয় পানীয়ের দুটি পাত্র তিনি তুলে দিলেন স্ত্রী ও মিসেস বেডককের হাতে। পানীয়ের পাত্র হাতে নিয়ে এবার এগিয়ে যেতে বাধ্য হলেন মিসেস বেডকক। মেরিনা সদ্য আগত অতিথিদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

মিসেস ব্যান্ট্রি তখন চললেন কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে দোতলার বাথরুমগুলো দেখতে। এমন জিনিস তারা আগে কখনো দেখেননি। বিলাস ও বৈভবের মণিকাঞ্চন যোগ ঘটেছে যেন এখানে।

এমন সময় মেরিনার সেক্রেটারি এলাকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখা গেল বাথরুমের দিকে। মিসেস বেডকক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, বাথরুমের ম্যাডিকেল ক্যাবিনেটে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ পাওয়া যায় কিনা দেখতে এসেছে সে।

সদলবলে হন্তদন্ত হয়ে ঘটনাস্থলে ফিরে এলেন মিসেস ব্যান্ট্রি, সিঁড়ির মুখে জ্যাসন হাড-এর সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লাগছিল তার। জ্যাসনের কাছেই জানা গেল, আর কোনো সাহায্যেরই দরকার নেই মিসেস বেডকক-এর। সেই স্বাস্থ্যবতী প্রণোচ্ছল মহিলাটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।

মিস মারপলের বিছানায় প্রাতরাশের ট্রে নিয়ে এলেন মিস নাইট। জানালেন, একটু আগে মিসেস ব্যান্ট্রি ফোন করেছিলেন, কিন্তু প্রাতরাশ খাওয়ার আগে মিস মারপলকে এটা জানানো তিনি উচিৎ বলে মনে করেননি। কথাটা শুনে একটু অসন্তুষ্ট হলেন মিস মারপল। জানালেন, বন্ধুদের ফোন এলে, সেটা তিনি সঙ্গে সঙ্গেই জানতে চান। প্রাতরাশটা বেশ যত্ন নিয়েই তৈরি করেন মিস নাইট, সেটা অবশ্য জানাতে বাধ্য হলেন মিস মারপল। জলযোগ শেষ করে মিসেস ব্যাট্রিকে ফোন করলেন তিনি, কিন্তু জানা গেল, তিনি বাড়ি নেই, মিস মারপল বুঝতে পারলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্যই আসছেন বান্ধবীটি।

বাইরে ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের আওয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে তরুণী মিসেস চেরী বেকার-এর গান। মিস নাইট মোটেই পছন্দ করেন না ব্যাপারটা, আগেকার দিনের পরিচারিকারা গান গাইতে গাইতে কাজ করছে, এটা ভাবাই যেত না। জেন মারপলের কিন্তু বেশ লাগে এই প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে। নিজে প্রায় গৃহবন্ধীর জীবনযাপন করেন, বাইরের জগৎ সম্বন্ধে তার চিরকালের অনুসন্ধিৎসা কিন্তু একটুও কমেনি। সেই অভাবটা অনেকটাই মিটিয়ে দেয় এই মেয়েটি।

দরজায় টোকা দিয়ে ঘরে ঢুকলো চেরী। উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে সে, কালকের খবরটা শুনেছেন কি মিস মারপল?

-কিসের খবর?

কালকে গসিংটন হল-এ যে মেলা বসেছিল, সেখানে হঠাৎ একজন মারা গেছেন?

–শুনিনি তো, কে মারা গেছেন?

–আপনি চিনবেন না। আমাদের ওদিকে থাকেন। মিসেস বেডকক।

মিসেস বেডকক? হ্যাঁ, চিনি বই কি, ওঁর বাড়ির সামনেই তোত আমি পড়ে গিয়েছিলাম। খুবই সহৃদয় ব্যবহার করেছিলেন আমার সঙ্গে।

-ওঃ হিথার বেডকক দয়ালু ছিলেন তো বটেই, বোধহয় একটু বেশিমাত্রাতেই দয়ালু, মানে লোকে তাই বলে আর কি। তিনিই মারা গেছেন।

-কিভাবে? তাকে তো যথেষ্ট স্বাস্থ্যবতী বলেই মনে হয়েছিল।

–ঠিক জানি না, সেন্ট জন-এর সেক্রেটারি হিসেবে ওপরের পার্টিতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে নাকি একপাত্র পানীয় পান করার পাঁচ মিনিটের মধ্যে মারা গেছেন। কারণটা কেউ বুঝতেই পারছে না।

–কি ভয়ংকর ঘটনা! ওঁর কি হার্টের কোনো রোগ ছিল?

-সেরকম তো কিছু শুনিনি, তবে শুনলাম, ওঁর মৃতদেহ নাকি পোস্টমর্টেম-এর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, তিনি আগে মিসেস বেডকক-এর কোনো অসুখের চিকিৎসা করেননি। বুঝতে পারছেন না ঠিক কিভাবে এই মৃত্যু হলো।

ভদ্রমহিলাকে চিনতে তুমি?

-খুব একটা আলাপ ছিল না। এমনিতে উনি খারাপ লোক নন। কিন্তু অন্যের উপকার করার উৎসাহে বা কথা বলার সময়, অন্যের ওপর সেটার কি প্রতিক্রিয়া হবে, সেটা একটুও ভাবতেন না।

চেরী চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই মিসেস ব্যান্ট্রি এসে ঢুকলেন।

-তোমার সঙ্গে অনেক কথা আছে জেন।

কাল যে মৃত্যুটা ঘটেছে গসিংটনে, সে সম্বন্ধে?

–তুমি সব সময়েই সব খবর পেয়ে যাও, কিভাবে পাও, কিছুতেই বুঝতে পারি না।

–যেভাবে সকলে পায়। আমার রোজকার সহকারিণী চেরী বেকার খবরটা দিয়েছে এখনই। দেখো, মিস নাইটও নিশ্চয়ই এতক্ষণে রুটিওয়ালার কাছ থেকে খবরটা জানতে পেরে গেছেন।

-তা, এ বিষয়ে তোমার কি মনে হয়?

–কি বিষয়ে?

–না বোঝার ভান কর না জেন, আমি তোমাকে হাড়ে হাড়ে চিনি। এই যে সম্পূর্ণ সুস্থ ও প্রাণোচ্ছল মিসেস বেডকক হঠাৎ এ ভাবে মারা গেলেন, এ বিষয়ে তুমি মনে মনে কি ভাবছো?

–এ রকম তো যে কোনো মানুষেরই হতে পারে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে হয়তো জানা যাবে

-অত সহজ নয় ব্যাপারটা, শুনলাম ডক্টর স্যানফোর্ড পুলিশকে ফোন করেছেন।

–সেটা আবার জানলে কিভাবে?

–পুরানো পদ্ধতি। মালী বুড়ো বিগ্রস ওঁর স্টাডির কাছেই বাগানের কাজ করছিল, সে শুনেছে সে তার মেয়েকে বলেছে, সেখান থেকেই এসেছে খবরটা। যাই হোক, এ বিষয়ে তুমি কি ভাবছো?

-প্রথমে অবশ্য মহিলার স্বামীর কথাই মনে হচ্ছে। সে কি ওখানে উপস্থিত ছিল?

 নিশ্চয়ই। আচ্ছা, তুমি কি এটাকে আত্মহত্যা বলে ভাবছে।

–না, আমি তাকে যতটুকু দেখেছি সেদিন, ঐ মনের মানসিকতা তার থাকতেই পারে না।

-স্বামীকেও তো দেখেছো, কেমন লোক বলে মনে হলো? সে কি স্ত্রীকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে পারে? এই ধরনের তোমার চেনা কোনো চরিত্রের সঙ্গে কি তার কোনো মিল খুঁজে পেয়েছে?

-না, তবে মিসেস বেডকক-এর সঙ্গে অ্যালিসন ওয়াইল্ড-এর মিল পেয়েছি। অর্থাৎ অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক চরিত্র। মানে স্বার্থপর বলছি না, তবে পৃথিবী, বা তার লোকজন সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই যাদের। নিজের দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখে সবকিছু। এমন কিছু বলে বা করে ফেলে, যার প্রতিক্রিয়া অন্যের মধ্যে কিভাবে হবে, তা একবারও ভেবে দেখে না। কাজেই বিপদে পড়লে আত্মরক্ষাও করতে পারে না।

-বুঝলাম না কিছুই।

দাঁড়াও, একটা কাল্পনিক গল্পের উদাহরণ দিয়ে বোঝাই তোমাকে। মনে কর, কোনো দোকানে গিয়ে তুমি পরিচিত দোকানদারের কাছে নিতান্ত অকারণেই বলে ফেললে তোমার ঘরে খুব একটা দামী জিনিস বা বেশ কিছু টাকা আছে, কিন্তু চাবি তালা লাগানোর ব্যাপারে তোমার খেয়াল খুব কম। সপ্তাহের কোনো একদিন সন্ধ্যেয় বাড়ি খালি রেখে তোমাকে কোথাও একটা যেতে হবে সে কথাও জানালে। দোকানীর বিগড়ে যাওয়া ছেলেটি যে সব কথা শুনছে, সেটা খেয়াল করলে না। সেই নির্দিষ্ট দিনে তুমি কোনোও কারণে হঠাৎ অসময়ে বাড়ি ফিরে দেখলে, সেই ছেলেটি চুরি করার উদ্দেশ্যে তোমার ঘরে ঢুকেছে। হাতে-নাতে ধরা পড়ে গিয়ে মরিয়া হয়ে সে তোমাকে আক্রমণ করে বসলো। এইভাবে নিজের বিপদ, নিজের স্বভাবের দোষেই তুমি ডেকে আনলে না কি?

তার মানে তুমি বলতে চাইছো মিসেস বেডকক না বুঝেই একটা বিপদজনক কাজ করে ফেলেছিল?

হতে পারে, আবার এ-ও হতে পারে, খুনটা অন্য কাউকে করার উদ্দেশ্যে ছিল, ভুলক্রমে উনি খুন হয়ে গেছেন।

আচ্ছা ডলি, তুমি তো পুরো ব্যাপারটা দেখেছো, ঠিক বলো তো, কি করে কি হলো?

–ওপরে গিয়ে দেখলাম, সিঁড়ি দিয়ে উঠেই যে বাড়তি বেডরুমটা ছিল সেটা ভেঙ্গে একটা চাতাল মতো করা হয়েছে। সেখানেই হচ্ছিল পার্টিটা। মেরিনা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে অতিথিদের সঙ্গে দু-একটা কথা বলছেন, তারপর তার স্বামী ও তাদের সহকারীরা অতিথিদের নিয়ে গিয়ে পানীয় দিয়ে আপ্যায়িত করছেন। আমার পরেই সিঁড়ি দিয়ে উঠেছিল মিস্টার ও মিসেস বেডকক। ভদ্রমহিলা বেশ কিছুক্ষণ একাই অধিকার করে রাখলেন মেরিনাকে। বকবকানি আর থামতেই চায় না, সেই কবে তরুণ বয়সে চিকেন পক্স নিয়েই মেরিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন না, কি যেন! ইত্যাদি ইত্যাদি, ভদ্রতাবশত মুখে হাসি নিয়ে শুনছিলেন মেরিনা। হঠাৎ একবার সেদিকে তাকিয়ে চমকে উঠেছিলেন, একদৃষ্টে মিসেস বেডককের মাথা ছাড়িয়ে বাঁদিকে তাকিয়ে আছেন মেরিনা, মুখে কেমন একটা বিবর্ণতা, যেন সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে তার। অবশ্য পরক্ষণেই জ্যাসন হাড স্ত্রীকে সচকিত করে দুজনের হাতে একইরকম পানীয়ের গ্লাস তুলে দিয়ে মিসেস বেডকককে সরিয়ে এনে অন্য অতিথিদের মেরিনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দিলেন।

–যেদিকে তাকিয়ে ছিলেন মেরিনা, সেদিকে কি ছিল?

হতে পারে যীশু কোলে ম্যাডোনার ছবিটির দিকে, অথবা সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসা কোনো অতিথি বা ক্যামেরা নিয়ে থাকা মেয়েটির দিকে, বা অন্য কোনো পরিচালকদের দিকে, তা বলতে পারবো না।

যাই হোক, তারপর কি হলো?

–তারপরে তো আমি মহিলাদের সঙ্গে বাথরুমগুলো দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানেই মেরিনার মহিলা সেক্রেটারিটি এসে জানালো কেউ একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খুব সাদাসিধে ভাবেই ইনকোয়েস্ট হয়ে গেল। জানা গেল খুব বেশি মাত্রায় স্নায়ু উত্তেজনা প্রশমনকারী একটি ওষুধ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল মিসেস বেডককের পানীয়ের মধ্যে। কিভাবে এটা করা হয়েছিল, তা জানা যায়নি।

ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর ফ্র্যাংক কর্ণিশ একান্তে ডেকে নিলেন আর্থার বেডকককে। বললেন, তার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান তিনি। এই কদিনেই যেন আরও শীর্ণ ও অবসন্ন হয়ে পড়েছেন আর্থার বেডকক। কি করে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল, তা বুঝতে না পেরে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছেন তিনি।

কর্ণিশের গাড়িতেই আর্থার-এর বাড়িতে নিরিবিলিতে কথা বলতে এলেন দুজন। পাশের বাড়ির একজন বিধবা মহিলা এদের জন্য চা-এর ব্যবস্থা করে দিয়ে গেলেন। আর্থারের কাছ থেকে অবশ্য তেমন কিছু শোনা গেল না। তবে জানা গেল, কোনো অসুখের ইতিহাস নেই মিসেস বেডকক-এর। এখানে বাড়ি নেওয়ার পর বছর ঘুরে গেছে ওদের, তার মধ্যে একবারও ডাক্তারের কাছে যেতে হয়নি তাকে। যে ওষুধের প্রয়োগে তার মৃত্যু হয়েছে সেটার নামও শোনেননি কখনও।ইনসপেক্টর জানালেন ওষুধটি ক্যালমো নামে আমেরিকায় প্রচলিত। সাধারণত ছায়াছবির জগতে বাসিন্দারা অতিরিক্ত টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটা অল্প মাত্রায় সেবন করে থাকেন। গসিংটন হলের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ওই ওষুধের শিশি পাওয়া গেছে।

আর্থার দৃঢ়ভাবেই জানালেন টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার বা মানসিক প্রফুল্লতা আনার জন্য কোনো ওষুধই ব্যবহার করার অভ্যেস ছিল না তার স্ত্রীর।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আর্থার বললেন, কারো হাত লেগে তার স্ত্রীর হাতের পানীয়ের গ্লাসটি পড়ে ভেঙে যায়। মেরিনা তাঁর নিজের হাতের গ্লাসটি নিতে অনুরোধ করেন তাকে। সেটি নিয়ে একটু এগিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসেন মিসেস বেডকক, এবং গ্লাসে দু-এক চুমুক দিয়েই ঢলে পড়েন, ডাক্তার এসে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সব ব্যাপারটা যেন এক লহমার মধ্যে ঘটে গেল, যে এখনও সত্যি বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে আর্থারের।

স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের চীফ ইনসপেক্টর ক্র্যাডক সেন্ট মেরী মিড গ্রামটির নাম শুনেই চমকে উঠলেন। সেখানকার গসিংটন হল-এ একটি মৃত্যু হয়েছে, সেই সমস্যার সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের দ্বারস্থ হয়েছে। ঐ গ্রামের বাসিন্দা মিস জেন মারপল-কে বহুদিন আগে থেকেই চেনেন ডার্মাট ক্র্যাডক। বহু রহস্য সমাধানে তার কাছ থেকে পেয়েছেন অমূল্য সাহায্য। অ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার মেরিনা গ্রেগ, গসিংটন হল, মিসেস বেডকক সম্বন্ধে সব কিছু জানালেন ক্র্যাডক-কে। অবিলম্বে একজন সহকারীকে নিয়ে সেন্ট মেরী মিড-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পরামর্শ দিলেন তাকে।

ক্র্যাডককে দেখে আনন্দে গোলাপী হয়ে উঠলো জেন মারপলের মুখ। কতদিন পরে দেখা এই ছেলেটির সঙ্গে, অবশ্য এখন আর একে ছেলেটি বলা যায় না, চাকরিতেও যথেষ্ট উন্নতি করেছে, সেটা পদমর্যাদা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ক্র্যাডক জানালেন, এখানকার গসিংটন হলের কাজটা পেয়েই তিনি আন্টি জেন-এর কাছে চলে এসেছেন, কেননা এটাকেই তিনি এখানকার হেডকোয়ার্টার বলে মনে করেন।

কিন্তু আমি তো এখন আর তেমন বাইরে বেরোতেই পারি না, কাজেই সেরকম কোনো খবরও পাই না।

-কিন্তু আপনি একদিন বেরিয়েই মিসেস বেডকক-এর বাড়ির সামনে পড়ে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলেন। সেই মহিলাই তো খুন হয়েছেন?

–কোথা থেকে এত খবর পেলে?

–আপনি তো নিজেই একবার বলেছিলেন, গ্রামে সবাই সবারকার কথা জানতে পারে। তা আপনি কি তখনই মহিলাকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, যে তিনি খুন হতে চলেছেন?

-কি অসম্ভব কথা! সেরকম মনে হবে কেন?

-তার স্বামীকে দেখে কিছু মনে হয়নি? অতীতের কোনো পত্নীহন্তার সঙ্গে তার মিল খুঁজে পাননি?

-মোটেই না, আর্থার বেডকক খুবই সাদাসিধে, ভালোমানুষ। অবশ্য আমার মনে হয় না স্ত্রীর অভাবে তেমন কষ্ট পাবেন ভদ্রলোক। কেননা ভদ্রমহিলা খুব সহৃদয় এবং সেবাপরায়ণ ছিলেন বটে, তবে অন্য লোকের মনের কথা তেমন বুঝতে পারতেন না, অথবা, চেষ্টা করার কথা ভাবতেনই না। এসব ক্ষেত্রে স্বামীরা খুবই একা মনে করে নিজেকে। সে যাক, মূল ঘটনা আমি তেমন ভাবে জানি না। তুমি আমার বান্ধবী ডলি ব্যান্ট্রির সঙ্গে দেখা কর। অনেক কিছু জানতে পারবে।

–তিনি কি ঐ ফিল্ম জগতের লোক?

-না না। এখানকার পুরোনো বাসিন্দা, গসিংটন হল-টা ওঁদেরই ছিল, বিক্রি করে দিয়েছেন। উনি সেদিন পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি পার্টিতে ছিলেন? বিশেষ কিছু লক্ষ্য করেছিলেন?

–উনিই বলবেন, উনি কি দেখেছেন, তবে বিশেষ করে লেডি অব শ্যালট-এর কথা জিজ্ঞেস করো। তাহলে ওর সেই কথাটি মনে পড়বে।

-ওটা কি কোনো কোড ওয়ার্ড নাকি?

–শুনেই দ্যাখো।

 মিসেস ব্যান্ট্রি, ক্র্যাডককে দেখে একটু অবাক হলেন তা-ও আবার জেন পাঠিয়েছে ওঁকে?

–কি শুনতে চান বলুন?

 এটা কি তাহলে সত্যিই হত্যা?

–আপনার কি তা-ই মনে হয়?

–দুর্ঘটনাও হতে পারে। কেউ-ই এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। আর যদি হত্যাও হয়, তবে এটা কার পক্ষে করা সম্ভব, তাও তো বোঝা যাচ্ছে না। মিসেস বেডককের কি প্রচুর টাকা ছিল?

-না, তেমন কিছুই ছিল না।

–আচ্ছা, উনি কি কাউকে ব্ল্যাকমেল করতে পারতেন, বা কারো গোপন কথা জানতেন বলে মনে করেন?

ঘাড় নাড়লেন মিসেস ব্যান্ট্রি।

-না, আমার তা মনে হয় না, কোনো গোপন কথা জানলেও প্রথম সুযোগেই জানিয়ে দিতেন উনি, ওঁকে বিশ্বাস করে কেউ কোনো গোপন কথা বলবে বলেও মনে হয় না। আর, ব্ল্যাকমেইলের মতো নিচ কাজ করার চিন্তা ওর মাথায় আসা সম্ভব নয়।

-মিস মারপল আপনাকে লেডি অব শ্যালট-এর কথা মনে করিয়ে দিতে বলেছিলেন।

-ওঃ, সেই টেনিসনের কবিতায় আছে না, আয়নাটা চূর্ণ হয়ে গেল, তার ওপর ধ্বংস নেমে আসছে? সেই কবিতা মনে পড়ে গিয়েছিল মেরিনা-কে দেখে।

তার মানে?

–জেন আপনাকে অনেক ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে পারতো। যাই হোক, ব্যাপারটা হচ্ছে, মিসেস বেডকক-এর একঘেয়ে কথা শুনতে শুনতে একসময় যেন মনে হলো, মেরিনা মোটেই মন দিচ্ছেন না, মিসেস বেডককের পেছনে অনির্দিষ্ট কিছুর দিকে তাকিয়ে আছেন, মুখ হয়ে উঠেছে পাংশু, যেন কোনো সর্বনাশের ইঙ্গিত পেয়েছেন। সেই মুখটা দেখেই আমার লেডি অব শ্যালটের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল।

গসিংটন হল-এ সরেজমিন তদন্তে গেলেন ক্র্যাডক। জ্যাসন হাড-এর সেক্রেটারি হেইলি প্রেসটন-এর কাছ থেকে জানা গেল, সেদিন পার্টিতে কাদের ওপরে ডাকা হয়েছিল, কর্মচারীদের মধ্যেই বা কে কে উপস্থিত ছিল। আরও জানা গেল বাড়ির সবাই ঐ ক্যালমো ড্রাগটি প্রয়োজন হলে অল্পমাত্রায় সেবন করে থাকে। মহিলাদের তো হ্যান্ডব্যাগেই থাকে, যখন দরকার হয়, পানীয়ের সাথে মিশিয়ে নেন। এমনকি সেটন নিজেও তাই করে।

মেরিনা-র সঙ্গে অবশ্য দেখা করা গেল না। ডাক্তার গিলক্রিস্ট জানালেন, মেরিনা অত্যন্ত সংবেদনশীল। সব শিল্পীর মতোই আবেগপ্রবণ। এই আকস্মিক দুর্ঘটনা তাকে শয্যাশায়ী করে ফেলেছে। অগত্যা ক্র্যাডক জ্যাসন হাড-এর সাক্ষাৎ প্রার্থী হলেন।

একনজরেই জ্যাসনকে অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং দৃঢ়চরিত্র বলে চিনে নিতে ভুল হলো না ক্র্যাডক-এর। সেদিনের ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন তিনি। ক্ষণিকের জন্য তার স্ত্রী যে আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়েছিলেন, সে কথাও স্বীকার করলেন। এবার ক্র্যাডক জিজ্ঞেস করলেন, জ্যাসনের কি মনে হয় না, এই মৃত্যুটা একটা দুর্ঘটনা। আসলে হত্যাকারীর লক্ষ্য ছিল অন্য কেউ? সম্ভবত তার স্ত্রী?

একটু চুপ করে থাকলেন জ্যাসন, তারপর বললেন, তারও সেরকমই ধারণা হয়েছিল। তবে স্ত্রী শুনলে বিচলিত হবেন মনে করেই কাউকে সেই সন্দেহের কথা জানাননি। মেরিনাকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, জানেন, সে একটু সুখ, একটু শান্তি পাবার জন্য কতটা কাঙাল। বহুবার এই সুখের মুহূর্ত তার কাছে এসেছে, আবার পরক্ষণেই সেই সুখের আশা চূর্ণ হয়ে গেছে। এখানে এসেও খুবই সুখী হয়েছিল সে, সেই আনন্দটুকু স্থায়ী হোক, এটাই চেয়েছিলেন তিনি।

বেশ কয়েকবার বিবাহ করেছে মেরিনা। ছোট্ট মেয়ের মতো রূপকথার রাজপুত্র আশা করেছে। সে, কিন্তু বাস্তব জীবনটা তা নয়। বিশেষতঃ ফিল্ম জগতে বিয়ে টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব বলা চলে, তাই বারবার বিয়ে ভেঙেছে তার, এজন্য মরিনার টেম্পারমেন্ট-ও কম দায়ী নয়। সন্তান লাভ করার অদম্য ইচ্ছে ছিল তার। একটি মেয়ে ও দুটি ছেলেকে দত্তক নিয়েছিল সে, কিন্তু তাতে মন ভরেনি বেশিদিন। এগারো বছর আগে যখন প্রথম সে অন্তঃসত্ত্বা হয়, আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছিল মেরিনা। কিন্তু ছেলেটি জন্মালো মানসিক প্রতিবন্ধী। সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল তার। বিয়ে ভেঙে গেল। বহুদিন মানসিক চিকিৎসা করানোর পর অতি সম্প্রতি সুস্থ হয়েছে মেরিনা। বহুদিনের বন্ধু জ্যাসন বিয়ে করেছেন তাকে। এই ক্ষমতাশীল অভিনেত্রীটিকে আবার আনতে চেষ্টা করছেন পাদপ্রদীপের আলোয়। এই সময় এই দুর্ঘটনা। তবে জ্যাসন তাঁর স্ত্রীর ওপর ভবিষ্যতে কোনোরকম আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়ে তৈরি থাকবেন, সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করবেন। তবে, কথাটা মেরিনাকে জানতে দিতে চান না।

এরপর ক্র্যাডক দেখা করলেন মেরিনা-র সেক্রেটারি এলা জেলেনেস্কির সঙ্গে। মেয়েটি খুবই দক্ষতার সঙ্গে সেদিনকার অতিথি ও কর্মচারীদের নামের তালিকা জানিয়ে দিল ক্র্যাডককে। মেরিনার স্বভাবের উত্তেজনা প্রবণতার কথা, যে কোনো ঘটনাকে নাটকীয় করে তোলার ক্ষমতার কথা জানা আছে তার। মুহূর্তের মধ্যেই মুড পরিবর্তিত হয়ে যায় তার। বিশেষ করে, কেউ নিজের সন্তান বা কোনো শিশুর কথা তুললেই কেমন আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়ে মেরিনা, এটাও সে লক্ষ্য করেছে। তার একমাত্র সন্তান যে মানসিক ভারসাম্যহীন, এ কথা বোধহয় সে কখনো ভোলে না।

মিস মারপল এদিকে তার হোম-ওয়ার্ক নিজের মতো করেই শুরু করে দিয়েছেন। বিউটি পার্লার থেকে পুরোনো ফিল্ম ম্যাগাজিন সংগ্রহ করে, ফিল্ম জগৎ সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ক্র্যাডক এসে তারিফ করলেন মিস মারপল-এর। গসিংটন হল-এ গিয়ে সাম্প্রতিক যে সব কথাবার্তা হয়েছে, সবই সবিস্তারে বললেন মিস মারপল মেরিনা-র দত্তক নেওয়া ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে বললেন ক্র্যাডক-কে। কেননা তার ধারণা দুঃস্থ অবস্থা থেকে তুলে এনে মেরিনা যাদের কয়েক বছর বিলাসব্যসনে রেখেছিলেন, এবং নিজের সন্তান সম্ভাবনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকাপয়সার ব্যবস্থা করে দিয়ে বিভিন্ন ফস্টার হোম-এ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, তাদেরও মনে ক্ষোভ থাকতে পারে, প্রতিহিংসার কামনা থাকতে পারে।

অবাক হলেন ক্র্যাডক, ঐ ছেলেমেয়েদের কথা তারও মনে হয়েছিল, কিন্তু মিস মারপল কেন সেকথা ভাবছেন?

এই ফিল্ম ম্যাগাজিনগুলো থেকেই জেনেছি তারা আর মেরিনার কাছে থাকে না। তার মানে, মেরিনা তাদের ওপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। শিশুরা খুবই সংবেদনশীল হয়, তারা এটা কখনই ভালোভাবে নিতে পারে না।

–তারা তো এখন অনেক বড়ো হয়ে গেছে। তবে দেখি, তাদের খোঁজখবর নিয়ে, কে কি করছে। আচ্ছা, হত্যাকারীর যে আসল লক্ষ্য ছিল মেরিনা গ্রেগ, সেটা আপনি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলেন?

-মিসেস বেডককের খুন হওয়ার পেছনে কোনো মোটিভ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না যখন, তখন তো অন্য কিছু ভাবতেই হবে।

-ঐ মহিলা সেক্রেটারিকে বেশ এফিসিয়েন্ট বলে মনে হলো, সেই সঙ্গে জ্যাসন হাড-এর প্রতি বেশ অনুরক্তও।

বহু সেক্রেটারিই তাদের বস্-এর প্রেমে পড়ে, তাই বলে তারা তাদের বস-এর স্ত্রীকে খুন করে না। আচ্ছা, মেরিনা কি জানে, তাকে খুন করার চেষ্টা হয়েছিল?

ডাক্তার গিলক্রিস্ট-এর কথা থেকে তো সেরকমই মনে হলো, মেরিনা জানে, কিন্তু স্বামীকে জানাতে চায় না। এদিকে জ্যাসনও এরকমই সন্দেহ করে, কিন্তু স্ত্রীকে জানাতে চায় না, তার ধারণা, এত অতিরিক্ত আবেগসম্পন্ন মেরিনার আবার নার্ভাস ব্রেকডাউন হতে পারে।

শহরের মেয়রকে সন্দেহের তালিকায় রাখা গেলে খুবই খুশি হতেন ইনসপেক্টর কর্ণিশ। আত্মগর্বী, ধূর্ত স্বভাবের এই লোকটি সব সময়েই আইন বাঁচিয়ে কাজ করেন, এটাই তার আক্ষেপ। যাই হোক, এখন ক্র্যাডকের সঙ্গে বসে মিসেস বেডকক-এর আগে এবং ঠিক পরে যে কজন অভ্যাগত এসেছিলেন, তাদের মধ্যে কার পক্ষে পানীয়ের সঙ্গে ঐ বিষটি মিশিয়ে দেওয়া সম্ভব হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তিনি। বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা মিঃ ফেন এবং অভিনেত্রী লোলা ব্রিডস্টার এসেছিলেন। অতীতে মিঃ ফেন-এর সঙ্গে মেরিনার যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছিল, আর মেরিনার তৃতীয় স্বামী মেরিনাকে বিয়ে করার জন্য ঐ লোলা ব্রিডস্টারকে ডিভোর্স করেছিলেন। কাজেই ঐ দুজনের মেরিনার ওপর রাগ থাকতেই পারে।

কিন্তু পনেরো বছর পরে খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে এই মানুষের ভিড়ের মধ্যে তারা আসবেন কি?

সম্ভব নয়। সমবেত সকলেই তো তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। বিখ্যাত অভিনেতা অভিনেত্রী বলে কথা। তাদের পক্ষে ঐ অল্প সময়ে সবার অলক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।

-মাগৰ্ট বেনস নামে যে মহিলা ফোটোগ্রাফারটি সিঁড়ি থেকে ছবি তুলছিল, সে হয়তো কিছু দেখতে পারে। এছাড়া বাটলার গিসিপ্পি, পানীয় তো সেই ঠিক করে রাখছিল, কোনো পাত্রে ক্যালমো মিশিয়ে দেওয়া তার পক্ষেই তো সবথেকে সুবিধে। স্টুডিওর ক্যানটিনের দুজন মহিলা কর্মীও সেদিন এই পার্টিতে কাজে সাহায্য করতে এসেছিল, এদের সকলের সঙ্গেই কথা বলতে হবে।

এছাড়া এরকম ক্ষেত্রে স্বামীকেই তো সর্বপ্রথম আসামীর তালিকায় রাখা হয়।

–হ্যাঁ, জ্যাসন হাড। তবে সে যে তার স্ত্রীকে খুবই ভালোবাসে, একথাটাও স্টুডিও-মহলে খুবই উচ্চারিত তথ্য। স্ত্রীকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যই বিপুল অর্থব্যয়ে একটি ছবি করছে সে। মেরিনার হাত থেকে মুক্তি পাবার বাসনা থাকলে তাকে তো ডিভোর্স করতেই পারতো সে।

দুজনের কথোপকথনের মধ্যেই টেলিফোন বেজে উঠলো। গসিংটন হল থেকে জানানো হচ্ছে মেরিনা গ্রেগ ইনসপেক্টরের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত আছেন। একটুও সময় নষ্ট না করে ঝড়ের গতিতে গসিংটন হল-এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন ক্র্যাডক। চিত্রতারকা বলে কথা, এদের মত পরিবর্তিত হতে কতক্ষণ।

দোতলায় নিজের শোবার ঘর সংলগ্ন ব্যক্তিগত বসার ঘরে ক্র্যাডককে দর্শন দিলেন মেরিনা। ডার্ট ক্র্যাডক ভেবেছিলেন অসুস্থ, শয্যাশায়ী মেরিনাকে দেখবেন। কিন্তু দেখলেন, সোফায় গা এলিয়ে বসে আছেন মেরিনা, বেশ প্রাণোচ্ছল চেহারা। খুব অল্প প্রসাধন সত্ত্বেও তাঁর প্রকৃত বয়স বোঝা যাচ্ছে না, যথেষ্ট আকর্ষণীয়া দেখাচ্ছে। ক্র্যাডককে দেখে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন মেরিনা।

চীফ ইনসপেক্টর ক্র্যাডক? আমি অত্যন্ত লজ্জিত, আপনার সঙ্গে আগে কথা বলতে পারিনি বলে। এই দুর্ঘটনা ঘটার পর আমি নিজেকে সংযত রাখতে পারিনি। বড়ো রকমের একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম, তাই এই অসুস্থতা।

–আপনি আপসেট হয়ে পড়বেন, এটাই তো স্বাভাবিক।

–সে তো সকলেই অল্পবিস্তর হয়েছে, মাঝ থেকে আমিই একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললাম।

–তার কি বিশেষ কোনো কারণ ছিল না?

-হ্যাঁ, আপনি ঠিকই অনুমান করেছেন, বিশেষভাবে বিচলিত হওয়ার কারণ অবশ্যই ছিল আমার। আমি একেবারেই সাহসী নই। বুঝতে পেরেছিলাম, কেউ আমাকে মারার চেষ্টা করছে, কিন্তু ইনসপেক্টর, আমি মরতে চাই না।

-কেন আপনার মনে হচ্ছে যে কেউ আপনাকে হত্যা করতে চাইছে?

 চক্ষু বিস্ফারিত হয়ে গেল মেরিনার।

— কেননা যে গ্লাসে বিষ মেশানো ছিল, সেটা আমার ছিল! ঐ হতভাগ্য ভদ্রমহিলা ভুল করে সেটা পান করেছিলেন, অবশ্য পরিস্থিতির প্রয়োজনেও বলতে পারেন। এছাড়া

এছাড়া কি মিসেস গ্রেগ? খুলে বলুন।

–হ্যাঁ, জ্যাসন বলেছে, সবকিছুই যেন আমি বলে দিই।

–আপনি ওঁকে আপনার সন্দেহের কথা জানিয়েছেন?

–প্রথমে জানাতে চাইনি, কিন্তু ডাঃ গিলক্রিস্ট বললেন, আমার ওকে জানানো উচিত। দেখলাম, আমার মতো একই বিশ্বাস জ্যাসনেরও। কিন্তু আমি বিচলিত হয়ে পড়বো মনে করে আমাকে কিছু জানাতে চায়নি। বেচারা! আমাকে একেবারে বোকা বলে মনে করে।

–আপনি এখনও বলেননি, কেন আপনার সন্দেহ হয়েছে যে আপনাকে কেউ হত্যা করতে চাইছে।

একটু সময় অপেক্ষা করে থাকলেন মেরিনা, তারপর নিজের হ্যান্ডব্যাগটা টেনে নিয়ে তার থেকে একটুকরো কাগজ বের করে নিয়ে বাড়িয়ে দিলেন ক্র্যাডক-এর দিকে।

ইনসপেক্টর দেখলেন, একটি কাগজে টাইপ করে লেখা আছে, পরের বার আর তুমি রেহাই পাবে না।

–এটা কোথায় পেলেন?

–স্নান করে এসে দেখি, এটা আমার ড্রেসিংটেবিলের ওপর রয়েছে।

–তাহলে বাড়ির মধ্যেকারই কোনো লোক–

তা না হতেও পারে। আমার জানলার ধারের ব্যালকনিতে যে কেউই বেয়ে উঠে আসতে পারে, তারপর সেখান থেকেই ওটা ড্রেসিংটেবিলের ওপর ফেলে দিতে পারে।

–এ ধরনের বার্তা কি এই প্রথম পেলেন?

একটু ইতস্তত করলেন মেরিনা, তারপর বললেন,-না, তা নয়।

–অন্যগুলি সম্পর্কে কি আমাকে বলবেন?

–তিন সপ্তাহ আগে, আমরা যখনই এই বাড়িতে থাকতে এলাম, তখন একদিন, এ বাড়িতে নয়, স্টুডিওতে আমার হাতে এসেছিল এরকম একটা চিরকুট, তাতে লেখা ছিল, মৃত্যুর জন্য তৈরি হও। আমি ভেবেছিলাম কেউ ঠাট্টা করেছে আমার সঙ্গে। চিরকুটটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।

–কাউকে বলেননি এসব কথা?

-না, আসলে অত গুরুত্ব দিইনি। সেই সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিলাম।

-তারপর কি আর এরকম চিঠি এসেছিল?

-হ্যাঁ, ঐ মেলা যেদিন বসেছিল, সেদিনই। একজন মালি এসে বললো, একজন লোক আমাকে একটা চিঠি দিতে বলে চলে গেছে। আমি ভেবেছিলাম, সেদিনের উৎসবের আয়োজন বিষয়ে কিছু হবে। চিঠিটা খুলে দেখি, তাতে লেখা আছে, আজই তোমার জীবনের শেষ দিন।

–চিঠিটা কোথায়?

-ওটা তো মুড়ে তখন যে ড্রেসিংগাউনটা পরেছিলাম, তারই পকেটে রেখেছিলাম, পরে আর খুঁজে পাইনি।

-কে এই ধরনের চিঠি পাঠাতে পারে বলে আপনার মনে হয় মিস গ্রেগ?

–বিন্দুমাত্র ধারণা নেই আমার।

–আপনি একজন বিখ্যাত মহিলা। জীবনে বহুবার সার্থকতার মুখ দেখেছেন। পেশাগত ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত জীবনে। বহু মানুষ আপনার প্রেমে পড়েছে, আপনাকে বিবাহ করতে চেয়েছে। মহিলারা আপনাকে ঈর্ষা করেছে। আপনার কাছে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বহু পুরুষ। আপনার জীবনে এধরনের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রটা খুবই বিস্তৃত। তবু, এর মধ্যে থেকে কোনো ইঙ্গিত কি আপনি পাচ্ছেন না?

–এরকম চিঠি এদের মধ্যে যে কেউই লিখতে পারে। বিশেষ করে কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না।

-না মিস গ্রেগ, যে কোনো লোকই হতে পারে না। কোনো একটি বা দুটি বিশেষ নামের কথা কি আপনার মনে পড়ছে না? স্টুডিও-র কোনো কর্মী, বা আপনার বন্ধুগোষ্ঠীর মধ্যে কেউ?

এমন সময় দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন মেরিনা-স্বামী জ্যাসন হাড। তার দিকে ফিরে আবেদনের হাত বাড়িয়ে দিলেন মেরিনা।

-জ্যাসন, প্রিয়তম; ইনসপেক্টর বলছেন ঐ চিঠিগুলো কে লিখেছে সেটা আমার জানা উচিত। কিন্তু তুমি তো জানো, আমি তা জানি না, এ সম্বন্ধে আমাদের দুজনেরই কোনো ধারণা নেই।

ইনসপেক্টর ক্র্যাডকের মনে হলো, মেরিনা যেন ভয় পাচ্ছেন, তাঁর স্বামী কিছু বলে ফেলতে পারেন, তাই আগে থেকে তাকে সাবধান করে দিলেন।

চোখে একরাশ ক্লান্তি ও মুখে বিমর্ষতা নিয়ে এগিয়ে এলেন জ্যাসন হাড।

-আমি জানি, কথাটা আপনার কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না ইনসপেক্টর। কিন্তু সত্যি বলছি এ ব্যাপারে মেরিনা বা আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।

–তার মানে আপনাদের কোনো শত্রু নেই বলে মনে করেন? ইনসপেক্টরের গলায় চাপা বিদ্রুপের সুর।

-শত্রু? না ঠিক সেই অর্থে শত্রু কেউ নেই। আমাদের সঙ্গে স্বার্থে সহমত নয়, আমাদের কাজকর্ম পছন্দ করে না, এমন অনেক লোক হয়তো আছে, কিন্তু তাই বলে পানীয়ে বিষে মিশিয়ে হত্যা করতে চাইবে, এমন প্রতিহিংসাপরায়ণ কেউ নেই।

-কিন্তু সেই কাজটা করার সুযোগ তো অল্প কয়েকজনেরই ছিল সেদিন, তাই না মিস গ্রেগ?

-কিন্তু আমি তো কিছুই দেখিনি, আমার নিজের গ্লাসের পানীয়ে অন্য কেউ কিছু মেশাতে গেলে আমি নিশ্চয়ই দেখতে পেতাম ইনসপেক্টর।

–অমার মনে হচ্ছে, আপনি যতটুকু জানেন, ততটুকু বলছেন না মিস গ্রেগ।

–না, এটা সত্যি নয়, জ্যাসন! তুমি ওঁকে বল এটা সত্যি নয়, আমি কিছুই গোপন করছি না। আর একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করি মিস গ্রেগ। সেদিন সমবেত অতিথিদের মধ্যে একজন বলেছেন, মিসেস বেডককের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আপনি একসময় সম্পূর্ণ অন্যমনস্ক হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলেন। আপনার মুখে ফুটে উঠেছিল আতংকের ছাপ, আপনি কি কাউকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন?

-কে বলেছে একথা? কাকে দেখে ভয় পাবো?

–তখন সিঁড়ি দিয়ে যারা উঠে আসছিলেন, তাদের কাউকে দেখে?

–অসম্ভব। আমি ওঁদের দেখে ভয় পাবো কেন? তবে একটা কথা আপনাকে বলতে পারি। আমাদের জীবনটাই এমন, ভক্ত দর্শকদের কাছ থেকে আমাদের দিনের পর দিন একই ধরনের কথা শুনতে হয়। মুখে হাসি ফুটিয়ে সেই সব কথা শোনার চেষ্টাও করি। কিন্তু সব সময়, সব অবস্থায় সেটা বেশিক্ষণ সহ্য করা যায় না। তাই সে সময় আমরা মাঝে মাঝে কিছুই শুনি-না, কিছুই দেখি না, মনকে সম্পূর্ণ শূন্য করে দিই, নাহলে সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বো। সেরকমই কিছু হয়তো ঘটেছিল সেদিন, তাই না জ্যাসন?

-হ্যাঁ ডারলিং, তুমি অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলে, আমি তোমাকে সচকিত করার জন্য মৃদু ধাক্কা দিয়েছিলাম, তারপরেই তোমাদের দুজনকে পানীয়ের গ্লাস দেওয়া হয়।

–মিঃ হাড, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আপনার স্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ে চিন্তিত হবার যথেষ্ট কারণ আছে? ওঁর জীবনের ওপর একবার আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে, ভয় দেখানো চিঠি এসেছে বেশ কয়েকটি। এতে কি এটাই মনে হয় না, যে এমন কেউ সেদিন মেলায় এসেছিল, হয়তো এখনও এ বাড়িতেই আছে, আপনাদের খুবই পরিচিত কোনোও মানুষ, সেই অপরাধী হতে পারে? কাজেই ওনার নিরাপত্তার জন্যই সবকিছু জানা দরকার আমার।

স্ত্রীর দিকে ফিরে বললেন জ্যাসন হাড,-শুনলে তো ইনসপেক্টর কি বললেন? দোহাই তোমার মেরিনা, এমন যদি কোনো কথা থাকে, যা আমি জানি না, অথচ তুমি জানো, সেটা এখন প্রকাশ করে দাও।

প্রায় কান্নার মতো শোনালো মেরিনার কথাগুলি।

-কিন্তু সত্যিই আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। বিশ্বাস করো আমাকে।

–সেদিন আপনি ভয় পেয়েছিলেন?

–আমি কাউকে ভয় পাই না।

-শুনুন মিস গ্রেগ। সিঁড়ি দিয়ে তখন আপনার দুজন পুরোনো বন্ধু উঠছিলেন, যাঁদের দেখে আপনি খুব অবাক হয়েছিলেন। এঁদের সঙ্গে বহুদিন যোগাযোগ ছিল না আপনার। আমি মিঃ ফেন ও মিস লোলা ব্রিডস্টার-এর কথা বলছি। আপনি জানতেন না ওঁরা আসবেন, তাই না?

-না, ওঁরা যে আমেরিকা থেকে ইংলন্ডে এসেছেন, সেকথাই জানতাম না আমরা। জ্যাসন হাড বললেন।

মেরিনা বললেন, কিন্তু আমি ওঁদের দেখে আনন্দিত।

-লোলা ব্রিডস্টার আপনার তৃতীয় স্বামী রবার্ট ট্রাসকট-এর প্রথমা স্ত্রী ছিলেন, তাই না? এবার অসহিষ্ণু হলেন মেরিনা।

–ওঃ! সেকথা সবাই জানে। ওটা আপনি আবিষ্কার করেছেন বলে মনে করবেন না। সে সময় ব্যাপারটা নিয়ে একটু হট্টগোল হয়েছিল ঠিকই, তবে এর কোনোও রেশ থেকে যায়নি।

–মিস লোলা কি তখন আপনাকে ভয় দেখিয়েছিলেন?

-হ্যাঁ, কিন্তু এ ধরনের ভীতিপ্রদর্শনকে কেউ গুরুত্ব দেয় না। একটা পার্টিতে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল বটে। যদি লোলার হাতে তখন পিস্তল থাকতো, হয়তো আমায় গুলি করেই দিত, তবে সৌভাগ্যক্রমে সেটা ছিল না। এ সবই ঘটেছিল বহুবছর আগে। এই ধরনের ভাবাবেগগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই না জ্যাসন।

-হ্যাঁ, মেরিনার কথার মধ্যে সত্যতা আছে ইনসপেক্টর। তবে আমি আপনাকে বলতে পারি, সেদিন আমার স্ত্রী-র পানীয়ে বিষ মেশানোর কোনোও সুযোগই ছিল না। আমি লোলা ব্রিডস্টার-এর প্রায় সবসময়ই কাছেই ছিলাম। আর, এতবছর পরে ইংলন্ডে এসে লোলা আমার স্ত্রীকে খুন করতে উদ্যত হবে, এটা পুরোপুরি কল্পনা। এছাড়া মেরিনার গ্লাসের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগই পায়নি সে।

আর মিঃ ফেন?

-সে আমার এবং জ্যাসনের অনেকদিনের বন্ধু। বিশেষ করে আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন ছিল। তাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই আমার। ওঁকে দেখে আমি যেমন বিস্মিত, তেমনি আনন্দিত হয়েছিলাম। আমেরিকার টেলিভিশন জগতে এখন তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের আসন অর্জন করেছেন।

–ধন্যবাদ মিস গ্রেগ। পরে যদি কখনো মনে হয় আমাকে বিশ্বাস করে আরো কিছু কথা বলতে চান, তবে তা করতে দ্বিধা করবেন না।

.