৩. অন্তর্গত প্রেমের ভিতর

অন্তর্গত প্রেমের ভিতর :

মিস মারপলের জীবনে কোনো রোমহর্ষক ঘটনা নেই। তবু তিনি যা শোনেন দেখেন তার উপর ভিত্তি করেই তিনি রহস্য মনে করেন।

স্যার হেনরি কিন্তু মিস মারপলের অসাধারণ এক কীর্তির কথা জানেন। তাই বললেন, তার ভূমিকায় একজন নিরপরাধী ফাঁসির হাত থেকে বেঁচে যায়। সেই গল্পটা যদি অনুমতি করেন তবে তিনি সকলকে বলবেন।

মিস মারপল নিজের কীর্তির কথা বলতে সংকোচ করছেন। মিঃ পেনডোর মিঃ পেথোরিকের উৎসাহে শেষ পর্যন্ত স্যার হেনরি গল্প শুরু করেন।

ঘটনাটা ঘটেছিল তার রিটায়ার করার কয়েক মাসের মধ্যেই, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কমিশনার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করার পর এই গ্রামে পুরানো বন্ধু কর্নেল ব্যানট্রির বাড়িতে অতিথি হয়ে যান। মিসেস ব্যানট্রিও হাসিখুশিতে ভরা প্রাণবন্ত মহিলা। খেলা, বেড়ানো এবং মিসেস ব্যানট্রির নিত্য নতুন রান্না খেয়ে সুখেই দিন কাটছিল। শহরের ব্যস্ত ভিড় কর্মচাঞ্চল্য আর অপরাধ জগত থেকে মুক্তি পেয়ে হাঁফ ছাড়লেন।

একদিন সকালে প্রাতঃরাশের টেবিলে দেখেন গৃহকর্তা এবং গিন্নী দুজনেই গম্ভীর। মিসেস ব্যানট্রি খাবার গুছিয়ে দিয়ে চলে গেলেন কিন্তু এলেন না। অন্যদিন আমরা টেবিলে অন্তত ঘণ্টাখানেক গল্প করতাম। কফি খেতে খেতে ব্যানট্রি বলেন, তিনি যেন কিছু মনে না করেন, তার স্ত্রী ডলির মন ভোর থেকে খুবই খারাপ।

হেনরি জিজ্ঞাসা করেন, তার মন খারাপের কারণ তিনি কি কোনো দুঃসংবাদ পেয়েছেন?

তখন কর্নেল বলেন, তাদের গ্রামে একটি মেয়ে জলে ডুবে মারা গেছে। তার স্ত্রী ডলি এই সংবাদে খুব ভেঙ্গে পড়েছে। মেয়েটিকে তার স্ত্রী খুব স্নেহ করতেন।

হেনরি প্রশ্ন করেন, মেয়েটি কিভাবে জলে ডুবেছে। উত্তরে কর্নেল বলেন, মেয়েটি হল স্টু বোর সরাইখানার মালিক এমটকের মেয়ে। শোনা যায় মেয়েটি জলে ডোবেনি ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

হেনরি তাকে জিজ্ঞেস করে, কেন সে আত্মহত্যা করল? কোথায় করল, কারণ সেখানে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার মতো কোনো বড় জলাশয় ছিল না।

দুঃখিত স্বরে কর্নেল বলল, নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। রোজ সন্তানসম্ভবা ছিল। পরিণতির কথা না ভেবে নিজেকে সঁপে দিয়েছিল ছেলেটির কাছে। এটাই বোধহয় যৌবনের ধর্ম। তার স্ত্রী ডলির সঙ্গে এই ব্যাপারে বহু মতানৈক্য হয়। স্ত্রীর বক্তব্য এই অবস্থার জন্য শুধু পুরুষরাই দায়ী। কর্নেল স্ত্রীকে বোঝালেন উভয় পক্ষই দায়ী মেয়েটির লজ্জাকর পরিস্থিতির জন্য।

ছেলেটির পরিচয় জানতে পাওয়ায় কর্নেল বলেন, সে এই গ্রামের ছেলে নয় তবে সেখানে থাকে। নাম স্যান্ডফোর্ড। কিন্তু ছেলেটি অসৎ চরিত্রের নয়। কর্নেলকে হেনরি প্রশ্ন করেন, তারা কি নিশ্চিত যে, মেয়েটির পরিণতির জন্য দায়ী ছেলেটি? কর্নেল বলেন তিনি নিশ্চিত নন। কারণ দুজনের ঘনিষ্ঠতা ছিল, মেলামেশা ছিল। তাই পুরোটাই ছেলেটিকে অপরাধী ভাবা যায় না।

মানে ঘটনাটা গ্রাম্য গুজব। কারণ গ্রামে ঘটনা ঘটলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। গ্রামের লোক স্যান্ডফোর্ডকেই দোষী করছে। ছেলেটি মেয়েটির সর্বনাশের কারণ, ময়নাতদন্তে সবই বোঝা যাবে।

হেনরি প্রশ্ন করেন, ময়নাতদন্ত কেন? তিনি, বলেন মেয়েটি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তদন্ত হবেই। এবং তা দরকারই।

হেনরি বলেন, এই ধরনের ঘটনা আজকাল প্রতিদিন ঘটছে কারণ এখন ছেলেমেয়েরা বাধাবন্ধনহীন মেলামেশা করেন। শহরের ছেলেমেয়েদের কাছে এগুলি মামুলি ব্যাপার। কিন্তু মেয়েটি আত্মহত্যা না করে অন্যভাবেও ব্যাপারটা মেটাতে পারত।

কথার উত্তরে ব্যানট্রি বলে, মেয়েটির বাবা অত্যন্ত কড়া। এই ধরনের গুরুতর অন্যায় তার বাবা সহ্য করবেন না। তাই বাবার ক্ষমা না পাওয়ার আশংকায় নিজের জীবনকে বিসর্জন দেওয়াই শ্রেয় মনে করল।

মেয়েটি কোথায় ডুবেছে জানতে চাওয়ায় কর্নেল বললেন, গ্রামের কাছে যে কারখানাটি আছে তার কাছে নদীতে। নদীতে একটা কাঠের সাঁকো আছে। নির্জন ঘন জঙ্গলময় স্থান। প্রত্যেকের অনুমান সাঁকোর উপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছে।

মেয়েটিকে হেনরি চোখেই দেখেননি, কোনো দুঃখ না হলেও, যে কোনো অপরিণত মৃত্যুই শোকাবহ। বুঝলাম দম্পতিদের দুজনেই খুব আঘাত পেয়েছেন। তাদের বিরক্ত করা ঠিক হবে না ভেবে হেনরি খবরের কাগজটি নিয়ে বাইরের লনে চেয়ার নিয়ে বসলেন। এমন সময় বেয়ারা বলল, মিস মারপল দেখা করার উদ্দেশ্যে বসার ঘরে অপেক্ষা করছেন।

মিস মারপলের কথা হেনরি আগেই শুনেছিলেন। ধীর স্থির শান্ত প্রকৃতির, সাহস অসাধারণ, বুদ্ধিমতী। ব্যানট্রি দম্পতি এবং সেখানকার পুলিশ মহলও জানিয়েছে যে অনেক রহস্যময় অপরাধের জট এই শান্ত নিরীহ মহিলা অদ্ভুত অনায়াসেই খুলে ফেলেছেন। কিন্তু তার আসার কারণ বুঝতে পারলেন না।

সুন্দর প্রশান্ত মুখ। বুদ্ধিদীপ্ত চোখে কৌতুকের হাসি, হাতে বড় সজির ব্যাগ। তাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে অসময়ে এসে বিরক্ত করার জন্য ক্ষমা চাইলেন। আসন গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়ে বললেন, তিনি তার জন্য কি করতে পারেন।

শান্ত গলায় মারপল বলেন, তার দেখা পেয়ে খুব উপকার হয়েছে। তিনি শুনেছেন তিনি ব্যানট্রিদের বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছেন। এবং হঠাৎ আগমনের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন। কিন্তু না এলেও উপায় ছিল না। বাধা দিয়ে হেনরি বলেন, তার বিব্রত হওয়ার কারণ অবান্তর। তার সাক্ষাৎ পেয়ে তিনি খুব আনন্দিত। আরও জানালেন মিসেস ব্যানট্রি এসময় ঘরে উপস্থিত নেই। মারপল বলেন, প্রয়োজনটা মিসেস ব্যানট্রির সঙ্গে নয় তার সঙ্গেই। তার সঙ্গে প্রয়োজনের কথা বলতেই সে একটু অবাক হল। প্রকৃত কারণ হেনরি জানতে চাইল।

মারপল বলেন, তিনি এসেছেন রোজ এমটকের ব্যাপারে। ঘটনাটি তিনি নিশ্চয় শুনেছেন। হেনরি বললেন, কর্নেল ব্যানট্রির মুখে আজ তিনি শুনেছেন। হেনরি চিন্তা করতে লাগলেন এমটকের আত্মহত্যার সঙ্গে মারপলের আসার কোনো কার্যকারণ আছে কিনা। এই পর্যন্ত বলে হেনরি চুপ করলেন। এবং উৎসাহ নিয়ে প্রত্যেকের দিকে তাকালেন।

হেনরি আবার শুরু করলেন, গম্ভীর মুখে মারপল তাকে বলেন, তিনি তার মূল্যবান সময় নষ্ট করলেও তিনি কোনো ঘটনা ঘটলেই তার কার্যকারণ খোঁজার চেষ্টা করেন এবং সে ব্যাপারে তিনি মোটামুটি সফল। তিনি মারপলকে অনুনয় করে বলেন তার আসার প্রকৃত কারণ বর্ণনা করতে।

তিনি তখন বলেন–তিনি যদি সাধারণভাবে থানায় জানান তবে ওরা উড়িয়ে দেবেন। এবং বিশ্বাস তার বক্তব্য তিনি গুরুত্ব সহকারে শুনবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

হেনরি মারপলকে আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি তার প্রত্যেকটি কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনবেন এবং সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবেন।

জানলা দিয়ে তাকিয়ে মারপল বলেন, রোজ এমটক আত্মহত্যা করেনি। ওকে খুন করা হয়েছে এবং কে বা কারা খুন করেছে তাও তিনি জানেন। এই অদ্ভুত সংবাদে হেনরি বিমূঢ় হয়ে মারপলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মনে হল কাল মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে সবাই বলেছে আর আজ তিনি বলছেন যে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে অনেক সময় লাগল তার।

হঠাৎ স্বস্তি পেয়ে হেনরি বলেন, তিনি একটি গুরুতর অভিযোগ করলেন কিন্তু।

উত্তরে মারপল বলেন, অভিযোগটি গুরুতর বলেই তিনি তার কাছে এসেছেন।

তখন হেনরি বললেন, এই ব্যাপারে তার আর কিছু করণীয় নেই। সেটা এখন পুলিশি তদন্তের পর্যায়ে চলে গেছে। তিনি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। স্থানীয় পুলিশ এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে পারেন।

তখন মারপল বলেন, তার পক্ষে এখনই পুলিশের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। তার কাছে অভিযোগ প্রমাণ করার যথেষ্ট প্রমাণ নেই।

তখন হেনরি বলেন, তিনি কি অনুমানের উপর নির্ভর করে অভিযোগ করলেন।

মারপল তখন বলেন, অভিযোগটা শুধু অনুমান ভিত্তিক নয়। তিনি পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করে বলেন যখন কোনো অংকের উত্তরটা এবং একটি সংখ্যা মিলে যায় তখন অন্য সংখ্যাটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তিনি যদি ইনসপেক্টর ড্রেউইটকে বলেন তার ধারণা অমুক ব্যক্তি এমটককে হত্যা করেছে তাকে গ্রেফতার করুন তবে ব্যাপারটা হাস্যকর হয়ে উঠবে। তাকে দোষ দেওয়া যাবে না কারণ এই মুহূর্তে তিনি কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ দাখিল করতে পারবেন না। অনুভূতি এবং অপরাধীর চরিত্র বিশ্লেষণ করে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাও বুঝিয়ে বলা অসম্ভব। হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পর্কে শুধুমাত্র একটা ধারণাই কি যথেষ্ট?

মিস মারপল বলেন, তিনি একটা ব্যাপারে খুব আগ্রহী তা হল মানুষকে বোঝার চেষ্টা।

এত বছর এই গ্রামে থেকে প্রত্যেকের স্বভাব আচার-আচরণ খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। কোনো ঘটনাই তার দৃষ্টি এড়াতে পারে না। তিনি হেনরিকে প্রশ্ন করেন, তার উপর আস্থা রাখতে পারবেন কি না? মারপলের কণ্ঠে প্রত্যয়ের সুর।

মারপলকে আশ্বস্ত করে হেনরি বলেন, তার মতামতের উপর হেনরির যথেষ্ট আস্থা আছে কিন্তু তিনি কি ধরনের সাহায্য আশা করছেন, তিনি বুঝতে পারছেন না।

মিস মারপল চুপ করে থেকে বলেন, যেহেতু তার সাক্ষ্য প্রমাণ নেই তাই এই ব্যাপার নিয়ে তিনি অনেক ভেবেছেন। পুলিশের পক্ষে অনুসন্ধান সম্ভব নয়। যদি তিনি অনুসন্ধান চালান তবে পুলিশ তার ব্যাপারে যেন কোনো অসুবিধা না করে বরঞ্চ ইনসপেক্টর ড্রেউইট বা মেলচেটের পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন।

কিছুক্ষণ ভেবে হেনরি মারপলকে বললেন, মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে এবং কে খুন করেছে তাও তিনি জানেন। এবং তিনি সাক্ষ্য প্রমাণ দ্বারা খুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করবেন। কিন্তু তদন্ত শুরু করার আগে কিছু তথ্যের দরকার, সেই ব্যাপারে মারপল কি তাকে কোনো সাহায্য করতে পারবেন?

মিস মারপল তার দিকে তাকিয়ে বললেন, তিনি কোনো তথ্য দিতে পারবেন না। তবে একটা কাগজে খুনির নাম লিখে দেবেন। যাকে তিনি খুনি বলে ভেবেছেন। যদি অনুসন্ধান করে দেখা যায় তিনি প্রকৃত অপরাধী নন তবে পুরো ব্যাপারটা তিনি যেন ভুলে যান।

তিনি মনে করবেন তার অনুমান ভ্রান্ত। কিছুক্ষণ প্রায় অন্যমনস্ক থেকে বলেন, যদি একজন নিরপরাধ লোকের শাস্তি হয় এটা ভাবতেও তার শরীর শিউরে উঠছে। ব্যাপারটা খুবই মর্মান্তিক ঘটনা হবে।

হেনরি বলেন, তিনি বুঝতে পারছেন না, তিনি ঠিক কি বলতে চাইছেন। মিস মারপল তার কথা শুনে যখন মুখ ফেরালেন তখন তার মুখ দেখেই বোঝা গেল তিনি খুব বিচলিত এই প্রসঙ্গে।

তিনি পুনরায় বলেন, যদিও তার ভুল হতে পারে কিন্তু মিঃ ড্রেউইট একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিঃসন্দেহে। তবুও কোনো ভুল সূত্র তাকে ভুল পথে চালিত করতে পারে। এবং তার আরও সন্দেহ যে, বুদ্ধি বা পরিশ্রম খরচ করা উচিত আসল তথ্য বের করতে, তিনি ততটা পরিশ্রম করবেন কিনা সন্দেহ। কারণ সময় সময় এইসব ব্যাপার খুব বিপদজনক হয়ে ওঠে।

কয়েক মিনিট সময় লাগল তার কথার মর্ম বুঝতে। হেনরি বুঝলেন মিঃ ড্রেউইটের তদন্তের উপর তিনি আস্থা রাখতে পারছেন না। আরও ভয় পাচ্ছেন ইনসপেক্টর যদি ভুল পথে চালিত হয় তবে সে ক্ষেত্রে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন।

ইতিমধ্যে মারপল ব্যাগ থেকে একটি নোটবই থেকে পাতা ছিঁড়ে পেনসিল দিয়ে একটি নাম লিখলেন এবং সেটিকে ভাজ করে তার হাতে দিলেন।

হেনরি কাগজ খুলে নাম পড়লেন যার নাম লেখা আছে তাকে তিনি চেনেনও না জানেনও না। সুতরাং আবার ভাজ করে সেটি পকেটে রাখলেন। পুরো ব্যাপারটা তার কাছে রহস্যময় লাগছে।

হেনরি মারপলকে বলেন, ম্যাডাম, এই ধরনের তদন্ত তিনি পুলিশ-জীবনে করেননি। যেহেতু তার অনুমানকে, তার বিচার-বিবেচনাকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না, তাই তিনি এই তদন্তের দায়িত্ব নিলেন।

পরদিন সকালে তিনি স্থানীয় থানায় গেলেন এবং দেখলেন সেখানে উপস্থিত ইনসপেক্টর মিঃ ড্রেউইট এবং থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার মিঃ মেলচেট, দুজনে তাকে দেখে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাল। মিঃ মেলচেট খুবই যোগ্য অফিসার। চালচলন পুরোটাই ফৌজি অফিসারের মতন। ইনসপেক্টর ড্রেউইটকে আগে থেকে চিনতেন তিনি। খুঁটিনাটি সমস্ত ব্যাপারে তার ছিল সতর্ক। দৃষ্টি। তিনি তাদের তার আসার কারণ জানালেন। কারণ শুনে তারা অত্যন্ত হকচকিয়ে গেল। তিনি তখন বললেন, তাদের স্থানীয় ব্যাপারে নাক গলানোটা খুব অন্যায় কিন্তু ঘটনাটা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন নিজের অজান্তেই।

ড্রেউইট তখন বলেন, তার মতো একজন গুণী মানুষের সাহায্য পাবে জেনে তারা খুব আনন্দিত। মিঃ মেলচেটকে একটু চিন্তান্বিত দেখা গেল। যেন তিনি কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাকে সংশয়মুক্ত করতে হেনরি বলেন, ব্যানট্রিদের বাড়িতে গিয়ে বসে তার সময় কাটছিল না তাই সময় কাটাবার জন্য তাদের সঙ্গে তিনি ঘুরবেন এবং সময়ও ভালোই কেটে যাবে।

ড্রেউইট বলেন, কিন্তু একটা জলের মতো পরিষ্কার ব্যাপার ইংল্যান্ডের সবচেয়ে দামী মস্তিষ্ক, সাধারণ অনুসন্ধানে খরচ হবে।

মেলচেট ড্রেউইটের কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল, স্যার ঘটনাটি জলের মতো পরিষ্কার। মেয়েটি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় খুবই বিপদে পড়েছিল। পুলিশ সার্জেন হেডক যিনি মৃতদেহ পরীক্ষা করেছিলেন তিনি মেয়েটির দুই বাহুতে জোড়ে চাপ দেবার চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন। তার ধারণা কেউ মেয়েটিকে জোরে চেপে ধরে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।

হেনরি প্রশ্ন করলেন, মেয়েটির চেহারা কেমন ছিল এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলতে কতটা জোর খাটাতে হয়েছিল।

মিঃ মেলচেট বললেন, তার কিন্তু তা মনে হয়নি। মেয়েটিকে হঠাৎই আক্রমণ করা হয়েছিল। এবং সাঁকোটি কাঠের তৈরি। কাঠগুলি খুব পিছল। এবং সাঁকোর দুপাশে কোনো রেলিং ছিল না। তাই মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে খুব একটা শক্তির প্রয়োজন পড়েনি।

হেনরি প্রশ্ন করেন মেয়েটিকে কি সত্যিই সাঁকো থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটাই কি তার বিশ্বাস?

মিঃ মেলচেট বলেন, এটাই তার স্থির বিশ্বাস। কারণ জিমি ব্রাউন নামে গ্রামের একটি ছেলে তখন নদীর অপর পারে উপস্থিত ছিল। সাঁকোর উপর থেকে সে আর্তনাদ শুনতে পায় এবং ঝপ করে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পেল। তাকিয়ে দেখে সাদা মতো একটি জিনিস নদীতে ভেসে যাচ্ছে। ছেলেটি গ্রামবাসীকে জড়ো করে মেয়েটিকে জল থেকে তুলল। কিন্তু যখন তাকে ভোলা হল তখন সব শেষ।

হেনরি মেলচেটকে প্রশ্ন করে, ছেলেটি কি তখন সাঁকোর উপর কাউকে দেখেছিল?

মেলচেট সঙ্গে সঙ্গে বলল, না সে কাউকে দেখতে পাইনি। কারণ জায়গাটা নির্জন এবং সন্ধ্যার অন্ধকারে কুয়াশা থাকায় সব কিছু দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু ছেলেটির ধারণা মেয়েটি ঝাঁপ দিয়েছিল এবং গ্রামের লোকেরাও তাই বিশ্বাস করেছিল।

এই সময় ড্রেউইট বলে উঠল, আমরা কিন্তু মেয়েটির পোশাকের পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ উদ্ধার করেছি। হেনরি মেলচেটের দিকে তাকাতেই সে বলল, যে কাগজটি পাওয়া গেছে তাতে শিল্পীরা যে ধরনের স্কেচ পেন ব্যবহার করে তা দিয়ে লেখা ছিল, ঠিক সাড়ে আটটায় সাঁকোতে তোমার সঙ্গে দেখা করব। নিচে নাম ছিল (আর.এস.)। আর.এস. স্যানফোর্ডের নামের আদ্যক্ষর। আর ঘটনাটি ঘটে ঠিক সাড়ে আটটায়।

হেনরি স্যানফোর্ডের সম্পর্কে জানতে চাইলে মেলচেট বলেন, কয়েক মাস হল সে এই গ্রামে এসেছে এবং নিজেকে একজন স্থপতি বলেই পরিচয় দেয়। এই গ্রামে অর্লিটনদের বাড়ি সে তৈরি করেছে। স্বভাবেও ছেলেটি ভালো নয়। আজকালকার আধুনিক ছেলেদের মতো। মেয়েটিকে স্যানফোর্ডই নষ্ট করেছে।

মিঃ হেনরি মৃদু হেসে বলেন মেলচেটকে, ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করাটা অপরাধ নিশ্চয়ই কিন্তু খুনের অভিযোগ বা ধর্ষণের অভিযোগের মধ্যে বিরাট তফাৎ।

মেলচেট বলল, সেটা অবশ্য সত্যি।

ড্রেউইট এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিল। হঠাৎ বলে উঠল, তিনি যা তদন্ত করে জেনেছেন তাকে তা বলেছেন। প্রথমদিকে ছেলেটি রোজের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে। পরে ওর দুর্বলতার সুযোগ নেয়। এবং শেষে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। অন্যদিকে লন্ডনে আবার একটি মেয়েকে স্যানফোর্ড বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। ওদের বাগদানও হয়ে গিয়েছিল। এদিকে রোজ সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় স্যানফোর্ড বিচলিত হয়ে পড়ে। রোজ তাকে বিয়ে করার জন্য কাকুতি-মিনতি করত। ওর হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য চিঠি পাঠিয়ে তাকে সাঁকোর উপর ডেকে পাঠায়। এবং সুযোগ বুঝে নদীতে ঠেলে ফেলে দেয়। এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলে তার ধারণাই সত্যি।

হেনরি চুপচাপ সব শুনল এবং বুঝল স্যানফোর্ডকেই তারা নিশ্চিত খুনি বলে ধরে নিয়েছে। তার মনে হল নব্য শহুরে যুবক গ্রামে খুব জনপ্রিয় নয় এবং তার ক্ষেত্রে গ্রাম্য সনাতন বিশ্বাসই কাজ করেছে। হেনরি জিজ্ঞেস করল, রোজের সন্তানসম্ভবার কারণ ছেলেটিই?

ড্রেট তখনই জবাব দিল, রোজ স্যানফোর্ডের সন্তানের মা হতে চলেছে, এই কথা তার বাবার কাছে স্বীকার করেছে। এবং আরও বলেছে স্যানফোর্ড তাকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

গ্রামের অবুঝ তরুণী, শহুরে নব্য প্রণয়ী, দৃঢ় চরিত্রের পিতা, সবই নাটকের মতে, এই নাটকে দরকার শুধু গ্রাম্য প্রেমিক। হেনরি ড্রেউইটকে জিজ্ঞাসা করল–এই গ্রামের মেয়েটির কোনো প্রণয়ী আছে নাকি?

ড্রেউইট তাকে বলল, তিনি জো এলিমের কথা বলছেন কিনা। এলিম ছেলেটি খুবই ভালো ছেলে, ছুতোর মিস্ত্রী। রোজ যদি জোকে ভালোবাসত তবে খুব ভালো হত। কারণ জো রোজকে খুবই ভালোবাসত। কিন্তু মেয়েটা একটা বাজে ছেলের পাল্লায় পড়ল। মেলচেটও ড্রেউইটের কথায় সায় দিল।

হেনরি মেলচেটকে জিজ্ঞাসা করল, জো মেরীর আত্মহত্যাকে কিভাবে গ্রহণ করেছে?

সেটা বলা তার খুব দুঃসাধ্য। জো ধীর-স্থির প্রকৃতির। যদিও মেরী জোকে ছেড়ে চলে গেছে তবুও তার মনে বিশ্বাস ছিল একদিন ঠিক মেরী তার কাছে আবার ফিরে আসবে। এত অটুট ছিল তার ভালোবাসা। ওর চোখে রোজ কোনো দোষী ছিল না।

হেনরি জো’কে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বললে মেলচেট উত্তরে বলেন–তা তারা তাকেও এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। আরও বলেন প্রথমে এমটক, তারপর স্যানফোর্ড এবং সবশেষে জো-এর পালা। এইভাবে এগোলে তার আপত্তির কারণ না থাকার কথা।

হেনরি, ড্রেউইট এবং মেলচেট এই তিনজন জন ব্লু-বোর সরাইখানার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। সরাইখানাতেই টম এমটকের দেখা পাওয়া গেল। মধ্যবয়স্ক বিশাল চেহারার মানুষ। সন্দেহপ্রবণ ও কঠিন চোয়ালে বেশ রাগী প্রকৃতির মনে হল। তাদের দেখে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে নিয়ে বসাল। এবং তাদের খাদ্য বা পানীয় গ্রহণের অনুরোধ জানাল।

ভিতরে যেতেই টম এন্টক বলেন, তারা তার মেয়ের ব্যাপারে নিশ্চয় এসেছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, তার কন্যা রোজ খুব শান্ত প্রকৃতির মেয়ে ছিল। স্যানফোর্ডই তার মেয়েকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে তার জীবনের চরম সর্বনাশ ডেকে আনল। ছেলেটির জন্যই রোজ আত্মহত্যা করল শেষ পর্যন্ত। সে তাকে ছাড়বে না। কারণ তার পরিবারে কালি মাখিয়ে দিয়েছে সে।

টম এমটককে মেলচেট প্রশ্ন করে, তার মেয়ের এই পরিণতির জন্য সে স্যানফোর্ডকেই দায়ী করে কিনা।

টম উত্তেজিত হয়ে বলল, এই ঘরে বসেই তার মেয়ে বাবাকে সব খুলে বলেছে। হেনরি জিজ্ঞেস করেন, সব কথা শোনার পর তিনি কন্যাকে কি বলেছিলেন? আপনি কি তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন? হেনরি প্রশ্ন করেন।

এই ধরনের প্রশ্নের জন্য টম বোধহয় প্রস্তুত ছিল না। নিজেকে ধাতস্ত করে বলল, ঘটনাটা তার কাছে এতই আকস্মিক যে প্রথমে তার বিশ্বাস করতেই মন চাইছিল না। খুব বকাবকি করার পর রাগের মাথায় বলেছিল যে তার মতো মেয়ের মুখ দর্শন করাও উচিত নয়। তার মরণই শ্রেয়। মা হারানো মেয়েকে সত্যি সত্যি যেতে বলিনি।

তারপর গম্ভীর হয়ে জোরের সঙ্গে বলল, এই ধরনের অপরাধীর কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। মেলচেট প্রশ্ন করেন, মেয়েকে কখন তিনি শেষ দেখেছিলেন?

টমের উত্তর, গত পরশুদিন চা খাবার সময়।

 মেলচেট প্রশ্ন করেন, সে সময় তিনি তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পান?

উত্তরে টম বলেন, তেমন অস্বাভাবিকতা তিনি দেখেননি। যদি তিনি জানতেন যে, তার মেয়ে এই পথ বেছে নেবেন বলে কেঁদে ফেলেন।

সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে মেলচেট বলেন,টম প্রচণ্ড রেগে রয়েছেন। স্যানফোর্ডকে বাগে পেলেই শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে। হেনরি বলেন, টমের মধ্যে শোকের বিশেষ লক্ষণ দেখা গেল না। ব্যাপারটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক।

টমের বাড়ি থেকে বেরিয়ে, তারা হাজির হল স্যানফোর্ডের বাড়িতে। ড্রেউইট এবং মেলচেটের মুখে যে বর্ণনা শোনা গিয়েছিল, গিয়ে দেখলেন কোনো মিল নেই বর্ণনার সঙ্গে। লম্বাটে গড়ন, চব্বিশ-পঁচিশের কাছাকাছি বয়স। স্বপ্নালু নীল চোখ, ঝাকড়া ঝাকড়া চুল, এবং কণ্ঠস্বরটি খুব মোলায়েম। এই ধরনের পুরুষের প্রতি যে কোনো মেয়ের আকর্ষণ আসাটা প্রকৃতিগত ব্যাপার।

তাদের পরিচয় জানিয়ে তাদের আসার কারণ বর্ণনা করল। গত পরশু দিনের ঘটনার বিবরণ দিতে বলল, পুলিশি ভাবভঙ্গিতে এও জানাল এই ধরনের বিবৃতি দিতে সে অস্বীকার করতেও পারে। কিন্তু সে যা বলবে তার বিপক্ষে সাহায্য নেবার অধিকার পুলিশের আছে।

মেলচেটের কথা শুনে স্যানফোর্ড হকচকিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, তিনি কি বলছেন তা সে বুঝতে পারছে না।

মেলচেট তাকে প্রশ্ন করল, সে কি জানে যে রোজ এমটক নামে একটি মেয়ে গত পরশু রাতে জলে ডুবে মারা গেছে?

এতক্ষণে স্যানফোর্ড ব্যাপারটা বুঝতে পারল। সে স্বীকার করল ঘটনাটা শোনার পর থেকে রাতে ঘুমোত পারে না। কোনো কাজে মন বসাতে পারছে না। রোজ-এর শোচনীয় মৃত্যুর জন্য সে নিজেকে দায়ী করল। ডুকরে কেঁদে উঠে বলল, সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে, রোজ নিজেকে এইভাবে শেষ করে দেবে। কিন্তু কিছু পরে সে দুচোখ মেলে তাকাল।

মেলচেট ধীর কণ্ঠে বলল, তাহলে কি তারা ধরে নেবে যে সে গত পরশু দিনের ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতি দেবে না?

স্যানফোর্ড বলল, সে পরশু রাতে বেড়াতে বেরিয়েছিল।

 মেলচেট তাকে পাল্টা প্রশ্ন করল, সে রোজ-এর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল?

 স্যানফোর্ড উত্তর দেয় না, সে একাই বেরিয়েছিল। নদীর ধার দিয়ে বনের অনেক ভিতর।

এমন সময় ড্রেইট তার কোটের পকেট থেকে একটা আধ ভেজা কাগজ বের করে তাকে বলল, এই চিঠিটা সম্পর্কে তার বক্তব্য কি? চিঠিটা পাওয়া গেছে মৃতা রোজ-এর পকেট থেকে। চিঠিটা তাকে আস্তে আস্তে পড়ে শোনায় এবং প্রশ্ন করে সে কি অস্বীকার করতে পারে যে চিঠিটা সে লেখেনি?

স্যানফোর্ড নিজেকে ধাতস্থ করে বলল, চিঠিটা সেই লিখেছে। কারণ রোজ তার সঙ্গে দেখা করার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল।

স্যানফোর্ডের স্বীকারোক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ড্রেউইট তাকে বলল গত পরশু রাতে সাঁকোর উপর আসতে সেই অনুরোধ করেছিল।

স্যানফোর্ড বুঝল চিঠিটা লিখে সে বিপদে পড়েছে তাই উত্তরে বলল, সে নদীর পাড়ে যায়নি। না যাওয়াটাই তার পক্ষে মঙ্গল ছিল কারণ আগামীকাল তার লন্ডনে ফিরে যাবার কথা। তাই যাবার আগে দেখা করে তাকে কষ্ট দেবে না। লন্ডনে ফিরে গিয়ে তার জন্য কি ব্যবস্থা করা যায় তাও জানাবে।

মেলচেট গম্ভীরভাবে বলেন, তবে কি সে জানত তার পরিণতির জন্য সেই দায়ী?

অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে স্যানফোর্ড বলল, সেই দায়ী।

ড্রেউইটি হাল্কা স্বরে প্রশ্ন করল, যখন তিনি বেড়াতে বেরোচ্ছিলেন কেউ কি তাকে দেখেছিল বা তিনি কাউকে দেখেছিলেন কিনা?

স্যানফোর্ড উত্তর দেয়, কেউ তাকে দেখেছিল কিনা সে জানে না কিন্তু সে কাউকে দেখেনি। স্যানফোর্ড তাকে প্রশ্ন করে, তার বেড়ানোর সঙ্গে রোজ-এর মৃত্যুর সম্বন্ধ কোথায়, কারণ সে তো আত্মহত্যা করেছে।

ইনসপেক্টর গম্ভীরভাবে বলল, রোজ জলে ডুবে মারা যায়নি। কেউ জোর করে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল। ঘটনাটা নির্মম হত্যা।

স্যানফোর্ড কথাটা শুনে আর্তনাদ করে উঠল।

এইভাবে কয়েক মিনিট কাটায় যখন তারা বেরিয়ে আসছেন তখন মেলচেট বলেন, এই অবস্থায় কালকে লন্ডনে যাওয়া তার পক্ষে নিরাপদ নয়। তাদের বিনা অনুমতিতে সে এখান থেকে যেতে পারবে না।

রাস্তায় পা দিয়ে ড্রেউইট বলল, তার তদন্তের প্রয়োজন নেই। সাক্ষ্য প্রমাণ তাদের হাতের মুঠোয়। এবার স্যানফোর্ডের নামে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে ওকে গ্রেফতার করতে হবে।

কিন্তু হেনরি ঠিক সন্তুষ্ট হলেন না, কতগুলো বিষয়ে তার মনে সন্দেহ ছিল। তাই মেলচেট এবং ড্রেউইটকে এগিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়ে স্যানফোর্ডের কাছে ফিরে এসে বলল, তিনি তাকে সাহায্য করতে চান কিন্তু রোজ-এর সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং কি কি ঘটেছিল সব কথা তাকে খুলে বলতে হবে।

স্যানফোর্ড তার কাহিনী শুরু করল। এখানে আসার কিছু দিনের মধ্যে তার সঙ্গে মেয়েটির আলাপ হয়। রোজ ছিল সুন্দরী এবং অত্যন্ত ভালো মেয়ে। প্রথমদিনই বুঝতে পারি মেয়েটি আমার প্রতি আকৃষ্ট। তাছাড়া অজানা অচেনা জায়গায় ওর সাহচর্য তাকে সব ভুলিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে লন্ডনে তার বাগদত্তা আছে জেনেও সে কিছুই মানতে চাইল না। তার মতো প্রাণবন্ত মেয়ে তাকে দুর্বল করে দিয়েছিল। কিন্তু কোনো এক অসতর্ক মুহূর্তে তাদের মিলনের ফলে সে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। তাই সে ভেবেছিল ব্যাপারটা যখন এমন গুরুতর মোড় নিয়েছে তখন উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করে শেষে একটা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।

স্যানফোর্ড হেনরিকে বলে পুলিশ তাকে অকারণ সন্দেহ করছে। তার ধারণা রোজ আত্মহত্যাই করেছে।

হেনরি প্রশ্ন করে, রোজ কি তাকে এই আত্মহত্যার কথা কিছু বলেছিল? মাথা নেড়ে স্যানফোর্ড বলে এই ধরনের মানসিকতা তার ছিল না।

এরপর হেনরি জো-এর পরিচয় জানতে চাইল। উত্তর সে বলল, সে জোকে চেনে, ছেলেটি একটু বোকা ধরনের। রোজের জন্য সে পাগল ছিল। কথা বলার জন্য ছটফট করত কিন্তু রোজ তাকে পাত্তা দিত না।

হেনরি বলেন, তাহলে ঈর্ষান্বিত হয়ে জো রোজ-এর ক্ষতি করতে পারে, তখন স্যানফোর্ড বলে যদিও এটা হওয়া স্বাভাবিক তবুও ক্ষতি করার ছেলে জো নয়। হেনরি সব শুনে বিদায় নিলেন।

মেলচেট হেনরিকে স্যানফোর্ডের গ্রেফতারের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার কথা বলতেই তিনি বলেন, তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়। জো এলিম সম্পর্কে একটু খোঁজখবর নিতে হবে। যদি স্যানফোর্ডকে গ্রেফতার করার পর দেখা যায় সে নির্দোষ তবে ব্যাপারটা খুব অপমানজনক হয়ে দাঁড়াবে। হেনরির বারবার মনে হচ্ছিল স্যানফোর্ড সম্পর্কে তাদের ধারণা খুব মধুর নয়। এবং এই একটা সুযোগ; যাতে তাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরে যায়। তাই তিনি বলেন, জো এলিমকে সন্দেহের বাইরে রাখা উচিত নয় কারণ রোজকে সে ভালোবাসত। বিয়ে করতে চেয়েছিল কিন্তু রোজ তাকে পাত্তা দিত না। তাকে প্রত্যাখ্যান করে স্যানফোর্ডকে ভালোবাসত। সুতরাং খুনের পেছনে ঈর্ষাই অন্যতম কারণ হতে পারে।

এরপর জো-এর পালা এল। জো কোথায় থাকে হেনরি জিজ্ঞেস করলেন। মিঃ ড্রেউইট জানালেন সে থাকে মিসেস বারলেটের বাড়িতে। খুব সৎ মহিলা, ধোবীখানার মালিক। জো তার কাছে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকে।

পরদিন সকালে তিনজনে মিলে হাজির হল মিসেস বারলেটের বাড়িতে। ছোটোখাটো ঝকঝকে উঠোন সিঁড়ি। সর্বত্র পরিচ্ছন্নতার ছাপ, কড়া নাড়তেই একটি সুশ্রী মহিলা দরজা খুলে সামনে দাঁড়ালেন। দুটি ঘন নীল চোখ, মুখে লাবণ্যের ছোঁয়া। মিঃ ড্রেউইট সুপ্রভাত জানিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল জো এলিম বাড়িতে আছে কিনা।

মিসেস বারলেট জানালেন দশমিনিট আগে সে ফিরেছে। তাদের আসন গ্রহণ করার অভ্যর্থনা জানিয়ে হাঁক দিলেন, জো তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য একজন ভদ্রলোক এসেছেন, তাড়াতাড়ি এসো। উত্তরে জো জানাল, হাতমুখ ধুয়েই সে আসছে।

যথা সময়ে জো এলিম ঘরে প্রবেশ করল। লম্বা, বলিষ্ঠ চেহারা, নীল চোখে মাখানো লাজুক হাসি। মেলচেট জো-এর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, রোজ এমটক নামে যে মেয়েটি জলে ডুবে মারা গেছে তার তদন্তের ব্যাপারে তাদের এখানে আসা। সে তো মেয়েটিকে ভালোই চিনত।

ইতস্তত করে জো বলল, সে তাকে ভালোবাসত, ওকে বিয়ে করবে বলে ঠিকই করেছিল। মৃত্যুর সময় সে গর্ভবতী ছিল কথাটা শুনে হঠাৎ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলেছিল স্যানফোর্ড তাকে প্রত্যাখ্যান করলেও সে তাকে গ্রহণ করত।

মেলচেট তাকে আবার প্রশ্ন করে, এই অবস্থাতেও কি সে তাকে গ্রহণ করত? উত্তরে জো জানাল, তার এই অবস্থার জন্য দায়ী স্যানফোর্ড। সেই রোজকে ভুলিয়ে তার সর্বনাশ করেছে, মেয়েটির কোনো দোষ নেই।

হেনরির প্রশ্ন গত পরশু রাতে সাড়ে আটটায় সে কোথায় ছিল। উত্তরে জো বলল, সে বাড়িতেই ছিল। রান্নাঘরের তাক বানাচ্ছিল। তার উত্তরে হেনরি সন্তুষ্ট হতে পারলেন না; মনে হল উত্তর আগে-ভাগে সাজানো।

তারপর হেনরির বাচ্চা ছেলেটির কথা মনে পড়ল, যে সাঁকোর উপর আর্তনাদ শুনেছিল। তার সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানাল। মিঃ ড্রেউইটি ছেলেটির সন্ধানে লোক পাঠাল। ছোটোখাটো বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। হেনির তাকে প্রশ্ন করে সে তখন নদীর ওপারে ছিল। কিন্তু সাঁকো পেরিয়ে বনের দিকে যাবার সময় সে কি কাউকে দেখেছিল–উত্তরে সে জানাল যে স্যানফোর্ড স্থপতি তাকে দেখেছিল এবং সে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটছিল।

হেনরি প্রশ্ন করে, সে কি রোজকে সাঁকোর উপর দেখেছিল? সে ফিরবার সময় রোজ-এর আর্তনাদ শুনেছিল তার কত আগে স্যানফোর্ডকে বনের মধ্যে দেখেছিল?

সে উত্তর দিল, দশ মিনিট আগে। আবার প্রশ্ন, সে কি নদীর পাড়ে কাউকে দেখেছিল? জিমি উত্তরে বলল, আবছা অন্ধকারে একজন হেঁটে যাচ্ছিল। তার মনে হয়েছিল। যে লোকটি শিষ দিতে দিতে যাচ্ছিল সে জো এলিমই।

ড্রেউইট জিমিকে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন করে, সে অন্ধকার কুয়াশায় কি করে বুঝল যে, লোকটি জো এলিম?

জিমির উত্তর–যে গানটা শিষ দিয়ে গাইছিল সেটা সাধারণত জো গায়।

মেলচেট আবার প্রশ্ন করে, সে ফিরে আসার সময় আর্তনাদ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখল নদীতে সাদা মতো কি ভেসে যাচ্ছে। তখন সাহায্যের জন্য গ্রামবাসীদের কাছে ছুটে যায়। দৌড়বার সময় সাঁকোর আশেপাশে কাউকে দেখেছিল কিনা?

একটু ভেবে জিমি বলল, সে দেখল দুজন লোক ছোটো ঠেলা গাড়ির মতো কি যেন ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা দূরে থাকায় সে মিঃ জেলের বাড়িতে খবরটা দেয়।

জিমির সাক্ষ্যে স্যানফোর্ডই অপরাধী কিন্তু জো এলিমের সম্পর্কে তার যে ধারণা তা আইনসিদ্ধ নয়। শুধু শিষ শুনে কাউকে সনাক্ত করা যায় না।

হেনরি পকেট থেকে মিস মারপলের লেখা নামধারীকে অভিযুক্ত করতে না পেরে আবার মিস মারপলের কাছে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।

গল্প শুনে হেনরির মুখের দিকে সবাই তাকাল, মিস মারপলের মুখে মৃদু হাসির রেখা।

আবার শুরু করেন হেনরি, মিস মারপলের মুখ দেখে বুঝলেন তিনি অধীর হয়ে আছেন এই তদন্তে তিনি কতটা অগ্রসর হয়েছেন জানার জন্য।

হেনরি দুঃখের সঙ্গে জানাল তার উল্লিখিত অপরাধীর বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ জোগাড় করা যায়নি। সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে স্যানফোর্ডের পক্ষে। তাই স্যানফোর্ডকে রক্ষা করা অসম্ভব।

মারপল আশাহত গলায় বলেন, তারই ভুলে হয়েছে। নতুবা তার মতো দক্ষ অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারের চোখে নিশ্চয়ই কোনো সূত্র মিলত।

হেনরি বলেন, জো সেদিন রাত্রে তাক বানাচ্ছিল এবং মিসেস বারলেট সেখানে সারাক্ষণ উপস্থিত ছিলেন।

কথাটা শুনেই মিস মারপল চমকে ওঠেন। বলেন, সেদিন শুক্রবার ছিল। হেনরি প্রশ্ন করল, শুক্রবারের সঙ্গে ঘটনার কি সম্পর্ক?

মারপল বলেন, মিসেস বারলেট বাড়িতে থাকতেই পারেন না। কারণ প্রতি শুক্রবার তিনি কাপড় বিলি করতে বেরোন।

পুরো ব্যাপারটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। মিসেস বারলেট চোখে ধুলো দিতে এই গল্পের অবতারণা করেছেন। এবং দুজনের সম্পর্ক সম্বন্ধে তার একটা স্পষ্ট ধারণা হয়ে গেল।

সিদ্ধান্ত স্থির করে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছালেন এবং সরাসরি জোকে প্রশ্ন করেন, জো সেদিন রান্না ঘরে তাক বানাচ্ছিল না সেদিন ঐসময় নদীর পাড় ধরে শিষ দিতে দিতে যাচ্ছিল।

কথাটা শুনে বজ্রাঘাতের মতো চুপ করে থেকে তারপর ভাঙ্গা গলায় বলল, রোজকে সে খুন করেনি। সে জানতই না রোজ সাঁকোর উপর আছে। সে রোজকে ভালোবাসত এবং তার ক্ষতি সে বিন্দুমাত্র চায়নি।

সে কেন মিথ্যে বলেছে জানতে চাওয়ায়, জো বলল-মিসেস বারলেট নদীর পাড়ে বেড়ানোর সময় তাকে দেখেছে এবং পুলিশ তাকে সন্দেহ করতে পারে। পুলিশের কানে খবরটা পৌঁছালে পুলিশ তাকে রেহাই দেবে না এবং রান্নাঘরের তাক বানানোর ফন্দিটা তার মাথা থেকেই এসেছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বলবে তাক বানানোর গল্পটা। মিসেস বারলেট তাকে বিশেষ স্নেহ করেন বলে এত বড় ঝুঁকি নিয়েছে। মিসেস বারলেট কোথায় আছে জেনে তার মুখোমুখি হলেন।

এবার আসল পরীক্ষার শুরু। তার কাছে জো এবং মিসেস বারলেটের সম্পর্ক জলের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠল।

হেনরিকে দেখে অ্যানে হাত মুছে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কি তাকে কিছু বলবেন? হেনরি কঠিন মুখে বলেন তিনি সব জানতে পেরেছেন।

তিনি না বোঝার ভান করে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি কি জেনেছেন।

এবার হেনরি মোক্ষম অস্ত্রটি হানলেন। চোখের উপর চোখ রেখে বলেন, তিনি খুব ভালোই জানেন জো এলিম কোনো অপরাধ করেনি। তিনি কি চান তার ফাঁসি হোক?

মিসেস বারলেট নিচু স্বরে বলেন তাকে–তিনি কি জানতে পেরেছেন।

হেনরি ঘটনাটা সবিস্তারে বলতে শুরু করল–তিনি কাপড় বিলি করে ফেরার সময় দেখেন রোজ স্যানফোর্ডের জন্য সাঁকোর উপর দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন স্যানফোর্ড রোজকে বিয়ে করবেন না। অল্পদিনেই লন্ডনে ফিরে যাবেন। তখন রোজ আবার জো-র কাছেই ফিরে আসবে। কিন্তু জো-কে তিনি নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেন এবং চার বছরে জো-কে আপনার ভাবতে শুরু করেছেন। রোজ জো-কে কেড়ে নেবে এই কথা চিন্তা করে অধীর হয়ে উঠলেন। রাত্রির অন্ধকারে নির্জন সাঁকোর উপর রোজকে দেখে তিনি তাকে সরিয়ে দেবার স্থির করলেন। জো চিরদিনের জন্য তারই থাকবে এই ভেবে তিনি চুপিসারে সাঁকোর উপর উঠে, রোজ-এর কাধদুটো ধরে ঠেলে নদীতে ফেলে দেন। তীব্র স্রোতে সাঁতার না-জানা মেয়েটি ভেসে গেল। ফেরার পথে জো এলিমের সঙ্গে তার দেখা হয়। তারপর তারা দুজনে পেরামবুলেটের ঠেলে গ্রামের দিকে আসছিল। জিমি দূর থেকে সব দেখেছিল কিন্তু ঘন কুয়াশার অন্ধকারে আপনাদের চিনতে পারেনি।

নদীতে ফেলে দেবার পর কেউ যদি জো-কে সন্দেহ করে, এই আশঙ্কায় তাক বানানোর গল্পটা তৈরি করেন এবং জো-কে রাজি করান। আসলে জো-কে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নয় নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করতেই এই গল্প খাড়া করেছিলেন।

এরপর হেনরি প্রশ্ন করেন, তিনি সঠিক বলেছেন তো?

রুদ্ধ কণ্ঠে মিসেস বারলেট সব স্বীকার করে বলেন, এতকালের নিঃসঙ্গ একাকীত্ব জীবন স্নেহ ভালোবাসায় জো ভরিয়ে দিয়েছিল। বিয়ের পর স্বামী পঙ্গু হয়ে অল্প দিনেই মারা যায়। তার চুল পেকে গেলেও বয়স তিরিশের কোটায়। প্রেম ভালোবাসা পাবার আশায় যখন তিনি হাঁপিয়ে ওঠেন তখন জো এল তার জীবনে। জো কে পেয়ে তার শূন্য মন ভরে উঠল। কিন্তু জো-কে তিনি কোনোদিন জানতে দেননি। মিসেস বারলেট বলেন, যদি তার বয়স পঁচিশ তবুও সে বাচ্চা ছেলের মতো। সব কিছুই তাকে হাতে ধরে দিতে হয়, তার উপর জো-এর অগাধ আস্থা। জো শুধুই তার–এই কথা বলতে বলতে গাল বেয়ে নামল অশ্রু বন্যা।

কিছুক্ষণ পর প্রকৃতিস্থ হতেইমিসেস বারলেট তাকে প্রশ্ন করেন এইসব তিনি কি করে জানলেন?

হেনরি পকেট থেকে মিস মারপলের লেখাটা তার হাতে দিলেন, যাতে লেখা ছিল রোজ-কে নদীতে ফেলে খুন করেছে বারলেট।

বারলেট হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল কাগজটার দিকে।

একনাগাড়ে গল্পটা বলে ক্লান্ত হয়ে হেনরি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। সবাই মুগ্ধ এই অদ্ভুত প্রেমের পরিণতি ও তার রহস্য উদঘাটনের চাতুর্যে।

ডাঃ পেনডার মৃদুস্বরে বলেন–আশ্চর্য গল্প শোনালেন মিঃ হেনরি। মানুষের অতলে কি যে লুকিয়ে থাকে কেউ জানেন না। আর ঈশ্বরের এক আশ্চর্য সৃষ্টি মানুষ। আর তিনি বুঝতেই পারছেন না; কি করে মিস মারপল বুঝতে পারলেন মিসেস বারলেটই খুনি। রেমণ্ড উঠে দাঁড়িয়ে সমবেত অতিথিদের দিকে তাকিয়ে বলল, আজ আমাদের সান্ধ্য বৈঠকের প্রথম পর্বের পরিসমাপ্তি।