৬. জরুরী ডাক

জরুরী ডাক

 একটা ছোট্ট কুকুরছানাকে নিয়ে আদর করছিল লোরেন।

প্রায় বিশ মিনিট পরে প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে সেখানে এসে হাজির হলো বান্ডল। এমন তার মুখের চেহারা যা বর্ণনা করাও যায় না।

একটা চেয়ারে বসে সে তখনও হাঁফাতে থাকলো।

-তোমার কি হলো? লোরেন অবাক হলো।

–জর্জ লোম্যাক্স আমাকে বিয়ে করবে বলছে। বান্ডল তখনও স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছে না। একটু চুপ করে থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, মনে হয় কোনো বই পড়ে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তোতলানো পুরুষ আমি একদম পছন্দ করি না। ওকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। এর উত্তরও আমার অজানা সেটাই আমার দুর্ভাগ্য।

–সেটা জানবে কি করে?

–জর্জের মত একটা বোকা তোতলাকে আমি বিয়ে করতে চাই না, এটাই স্বাভাবিক। নহমত শাখায় বইয়ের কোনো উত্তর আমার জানা ছিল না, সেটাই আমায় অসুবিধায় ফেললো। মুখের ওপর স্পষ্ট করে বলতেও পারিনি, যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। বরং আমার বলা উচিত ছিল, আপনার এই অসামান্য সম্মান দেখানোর জন্য আমি কৃতার্থ হয়েছি। এই ধরনের আর কি। আসলে প্রস্তাবটি শুনেই আমার সংজ্ঞা লোপ পাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কোনোরকমে জানলা গলিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।

-বান্ডল, এটা কিন্তু স্বভাবের বিরুদ্ধে হয়ে গেছে।

–এরকম কিছু যে একটা ঘটতে পারে সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। আমি আগাগোড়া জানতাম জর্জ আমাকে পছন্দ করে না, ঘৃণা করে। এখন খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি, কোনো পুরুষের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা কতখানি সাংঘাতিক। লোরেন, তুমি যদি একবার শুনতে, জর্জ কেমন আমার প্রশংসা করে চলেছে। বলে কিনা, আমার মনকে প্রস্ফুটিত করে তুলতে চায়। ও যদি বুঝত তখন আমার মনে কি উদয় হচ্ছিল তাহলে ভয়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে যেতো।

বান্ডলের কথা বলা ধরন দেখে লোরেন হেসে উঠলো।

যাক, ছাড়ো ওসব কথা। ঐ যে বাবা রডোডেনড্রন গাছের ফাঁকে বেড়াচ্ছেন। হ্যালো, বাবা।

লর্ড কেটারহ্যাম এগিয়ে এলেন।

–লোম্যাক্স বিদেয় হয়েছে? বেশ জোর করেই খুশী ভাব প্রকাশ করলেন।

–বেশ ঝামেলায় ফেলেছিলে তুমি, বান্ডল বললো, জর্জ বললো, তুমি নাকি সায় দিয়েছে।

–বুঝলাম, আমি এ ধরনের কোনো কথাই বলিনি, বুঝেছিস।

–আমি জানি। বান্ডল বললো, আসলে তোমাকে কোণঠাসা করে দিয়েছিল। ফলে ও বক্তব্য গড়গড় করে বলতে কোনো অসুবিধা হয়নি আর তোমাকেও বাধ্য ছেলের মত ঘাড় নেড়ে যেতে হয়েছে।

–তুই ঠিক ধরেছিস। ওকে কেমন মনে হলো? খুব বাজে তাই না?

–ওসব দেখতে আমার বয়ে গেছে। আমি তার আগেই ওখান থেকে পালিয়েছি।

–এটাই ভালো হয়েছে। লর্ড কেটারহ্যাম বললেন। ঝামেলা যা করার করে গেছে। আর দ্বিতীয় দিন এসে আমাকে জ্বালাবে না। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। আমার গলফের স্টিকটা কোথায়?

–দু একবার খেললে আমার স্নায়ুগুলো টানটান হয়ে যাবে? বান্ডল বললো। লোরেন, তুমিও মাঠে যাবে খেলতে।

একট ঘণ্টা নিরুপদ্রবে কাটলো। তিনজনে প্রফুল্ল মনে বাড়িতে ঢুকলো।

টেবিলের ওপর পড়ে থাকা একটা চিঠি ওদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।

-মিঃ লোম্যাক্স, আপনার জন্য এটা রেখে গেছেন, মাই লর্ড। ট্রেডওয়েল খামটা এগিয়ে দিলো। আপনার সঙ্গে ফের দেখা না হওয়াতে উনি মর্মাহত হয়েছেন।

ট্রেডওয়েল চলে যেতে লর্ড কেটারহ্যাম খাম ছিঁড়ে চিঠি বের করলেন। একটা বিস্ময়সূচক শব্দ তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো।

-বান্ডল, তোর উচিত ছিল ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেওয়া।

–কি বলছো?

–বেশ, তুমি নিজে পড়ে দেখ।

বান্ডল চিঠির দিকে দৃষ্টি দিলো।

 প্রিয় কেটারহ্যাম
তোমাকে বলেছিলাম, এইলিনের সঙ্গে কথা বলার পর তোমার কাছে আসছি। কিন্তু, তোমাকে পেলাম না। ভীষণ দুঃখ পেলাম। বেচারা ছোট্ট এইলিন, বুঝতে পারেনি, ওর সম্পর্কে আমি কি মনোভাব পোষণ করি। আমার মনে হয়, আমার প্রস্তাব শুনে ও ঘাবড়ে গেছে। আমি এই মুহূর্তে ওর সিদ্ধান্ত শুনতে চাই না। ও ভেবেচিন্তে জবাব দেবে। ওর বালিকাসুলভ আচরণ আমায় মুগ্ধ করে। ওর রমণীসুলভ মনোভাবও আমার কাছে প্রশংসনীয়। ওর এই বিহ্বলতা দেখে আমার মনে হয়েছে, এ বিয়েতে ও রাজী আছে। আমিও জানি, আমি শেষ পর্যন্ত জয়ী হবো, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ রাখি না।
আমার ওপর বিশ্বাস রাখো, প্রিয় কেটারহ্যান।
তোমার একান্ত প্রিয় বন্ধু
জর্জ লোম্যাক্স

 উঃ, আমি বুঝি পাগল হয়ে যাবো। বান্ডল মাথায় হাত দিলো।

নিশ্চয় লোকটার মাথা খারাপ হয়েছে। লর্ড কেটারহ্যাম বললেন। মাথা না বিগড়ে গেলে কেউ তোর সম্বন্ধে এমন চিঠি লিখতে পারাত। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মত। ধৈৰ্য্য আছে যথেষ্ট। এবার বুঝতে পারছি, ও ক্যাবিনেটে ঢোকার ক্ষমতা পেয়েছে কোথা থেকে। ওকে বিয়ে করলে, ও জব্দ হতো।

এসবের মধ্যে বেজে উঠলো ফোন।

বান্ডল রিসিভার তুলে নিলো। মুহূর্তের মধ্যে তার মন থেকে উধাও হলো জর্জ লোম্যাক্সের বিয়ের প্রস্তাব। সে লোরেনকে আহ্লাদিত স্বরে ডাকলো। লর্ড কেটারহ্যাম নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।

–লোরেন, জিমি ফোন করেছে। বান্ডল বললো, মনে হয় কোনো ব্যাপারে ও ভীষণ উত্তেজিত হয়ে আছে।

-শোনো বান্ডল, নষ্ট করার মত সময় নেই। লোরেন কোথায়? এখানে আছে?

–হ্যাঁ, এখানে আছে।

–শোন, সংক্ষিপ্ত সময়। সব কথা বলা যাবে না। তাছাড়া ফোনেও সব কথা বলা অসম্ভব। বিল আমার সঙ্গে দেখা করে যে কাহিনী শোনালো সেটা যেমন অবিশ্বাস্য তেমনি অদ্ভুত। তবুও এটা সত্যি। নিখাদ সত্যি। বলতে পারো, এই শতকের সবচেয়ে চমকপ্রদ খবর। তোমরা কি করবে সেটা মন দিয়ে শোন। এখনই তোমরা দুজনে শহরে চলে আসবে। তোমার গাড়ি যে কোনো গ্যারেজে রেখে সোজা চলে যাবে সেভেন ডায়ালস-এ। আচ্ছা, তুমি কি ওখানে পৌঁছে ঐ ফুটম্যান লোকটাকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে পারবে?

-তুমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকো জিমি। অ্যালফ্রেডের ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।

চমৎকার। তোমার কাজ শেষ করে তুমি সোজা ভেতরে ঢুকে যাবে। বিল আর আমি সেখানে থাকবো, বুঝেছো।

–ঠিক আছে।

–আর একটা কথা। কেউ যেন জানতে না পারে যে তোমরা লন্ডনে আসছে। যাইহোক একটা মিথ্যে বলে দিও। তোমার সঙ্গে যে লোরেন যাচ্ছে, সেটা জানিও। কি পারবে তো?

-অবশ্যই পারবো। ভেবে আমার যা উত্তেজনা হচ্ছে তোমায় কি বলবো, জিমি।

–হওয়া স্বাভাবিক, বেরোনোর আগে তোমরা বোধ হয় উইল করতে পারো।

–খুব ভালো হবে, তাই না? তবে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ জানলে আরো ভালো হতো।

–এখন এই পর্যন্ত থাক। আমার সঙ্গে দেখা হলেই সব জানতে পারবে। তবে এটুকু জেনে রাখো, সাত নম্বরের জন্য আমরা একটা বিরাট চমক হাজির করতে চলেছি।

রিসিভার নামিয়ে রাখলো বান্ডল। ফোনে যা কথা হলো তার সারাংশটুকু লোরেনকে চটপট বলে ফেললল। লোরেন ছুটে গেল নিজের ঘরে। সুটকেস গোছাতে বসলো। বান্ডলও দ্রুতপায়ে বাবার ঘরে গিয়ে উঁকি দিলো।

-বাবা, লোরেন বাড়ি যাচ্ছে। আমি ওকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছি।

–সে কি, ও যে আজ চলে যাবে জানতাম না তো!

–টেলিফোন এসেছিলো, ওরা যেতে বলেছে। বান্ডল বললো। আমি আসছি।

–বান্ডল দাঁড়া। কখন বাড়ি ফিরবি?

–সেটা বলতে পারবো না। যখন ফিরবো, তখন তুমি দেখতেই পারবে।

বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বান্ডল দ্রুত পায়ে ওপরে ফিরে এলো। গাড়ি আগেই বের করতে বলেছিলো। একটা টুপি নিলো, লোমের কোটটা গায়ে পরে নিলো।

লন্ডন পর্যন্ত পৌঁছলো বিনা উত্তেজনায়। শুধু বান্ডল গাড়ি চালালে যেটুকু হয় কেবল সেইটুকু সম্বল ছিলো। গ্যারেজে গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়ে ওরা পা বাড়ালো সেভেন ডায়ালস ক্লাবের উদ্দেশ্যে।

দরজা খুললো অ্যালফ্রেড। প্রায় ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বান্ডল ও লোরেন ভেতরে ঢুকে পড়লো।

-দরজা বন্ধ করো, অ্যালফ্রেড, বান্ডল বললো। শোন, তোমাকে পুলিস অনুসরণ করছে। তুমি সেদিন আমার যা উপকার হয়েছিলে তার বিনিময়ে তোমাকে সাবধান করে দিতে চাই।

-ওহ, মাই লেডি। বান্ডল বলে চললো। মিঃ মসগোরোভস্কির নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বেরিয়েছে। তাই তুমি যদি কোথাও পালাও সেটা তোমার পক্ষে মঙ্গলজনক ব্যাপার হবে। তোমাকে এখানে না পেলে, তোমার জন্য কেউ আর মাথা ঘামাবে না। তুমি যাতে সহজে পালাতে পারো তাই তোমাকে এই দশ পাউন্ড দিলাম। তুমি যেখানেই যাও নিরাপদে যেতে পারবে।

অ্যালফ্রেডের তখন ভয়ে হৃৎপম্পন শুরু হয়ে গেছে। তিন মিনিটের মধ্যে সে বেরিয়ে পড়লো ১৪ নং হান্সটন স্ট্রিট ছেড়ে। আপন মনে বিড় বিড় করতে লাগলো–একবার যেতে পারলে আর এখানে ফিরছি না।

শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারটা ভালোয় ভালোয় মিটলো। বান্ডল খুশী।

এত বাড়াবাড়ি করার কি প্রয়োজন ছিল? লোরেন প্রশ্ন করলো।

–এটাই নিরাপদ। বান্ডল বললো। কিন্তু ওদের মতলবটা যে কি সেটা বুঝতে পারছি না। তবে সব কিছুর মধ্যে অ্যালফ্রেডের উপস্থিতি সমস্ত পরিকল্পনাটা মাটি করে দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মনে হয় ওরা কোথাও লুকিয়ে থেকে অ্যালফ্রেডের চলে যাওয়া দেখছে। লোরেন, তুমি এক কাজ করো, দরজাটা খুলে রাখো।

লোরেন বান্ডলের কথামত কাজ করলো। ঠিক তখনই জিমি ওর গাড়ি থেকে নামলো।

–বিল, তুমি এখানে অপেক্ষা করো। কেউ লক্ষ্য করলে হর্ন বাজিও।

 জিমি প্রায় দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলো।

ওদের দেখে খুশীতে প্রায় চিৎকার করে উঠলো-হ্যালো, বান্ডল, তোমরা এসে গেছে। এবার তাহলে অভিযান শুরু হোক। তুমি আগেরবার যে ঘরে ঢুকেছিলে তার চাবি কোথায়?

নিচের তলায় চাবির গোছর মধ্যে ছিল। সবগুলো নিয়ে এলেই হবে।

 –তাহলে চটপট চাবি নিয়ে এসো। হাতে সময় খুব কম।

চাবি আনা হলো। সহজেই দরজা খুলে নির্দিষ্ট ঘরে তিনজনে ঢুকে পড়লো।

এর আগের দিন বান্ডল ঘরের চেহারা যেমন দেখেছিল তেমনিই আছে। মাঝখানে বড় টেবিল, তার চারপাশে সাতখানা চেয়ার সাজানো। জিমি সহজ দৃষ্টি মেলে ঘরের চারদিকে দেখলো। দেওয়াল আলমারি দুটোর দিকে ওর দৃষ্টি আটকে গেল।

-বান্ডল, তুমি কোনো আলমারির মধ্যে ঢুকেছিলে?

–এটা। বান্ডল আঙুল তুলে দেখালো।

জিমি এগিয়ে গিয়ে পাল্লা দুটো মেলে ধরলো। একরাশ বাসনে আলমারি ভর্তি।

–এগুলো এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে। জিমি বললো, লোরেন, তুমি বিলকে ডেকে আনো, ওর আর বাইরে থাকার দরকার নেই।

লোরেন চলে গেল।

–তুমি কি করতে বলছো? বান্ডল অসহিষ্ণু গলায় বললো।

 আলমারি পরীক্ষা করতে করতে জিমি বললো–দাঁড়াও, আগে বিল আসুক। ওর সবকথা আগে শোন। এসব ওরই কাজের ফল। আরে লোরেনের কি হলো? ওকে পাগলা কুকুরে ধাওয়া করেছে?

লোরেন সত্যি প্রাণপণে ছুটে আসছিল। সিঁড়ি বেয়ে উঠে হাঁফাতে লাগলো। মুখ সাদা, চোখে রাজ্যের ভয়

-বিল-বিল-ওহ-বান্ডল-বিল?

–বিলের কি হলো?

জিমি ওর কাঁধে ঝাঁকুনি দিলো। লোরেন ভগবানের দোহাই, কি হয়েছে বলো?

লোরেন অস্পষ্ট স্বরে বললো-বিল-বিল, মনে হচ্ছে মরে গেছে। গাড়ির মধ্যে রয়েছে। নড়ছেও না, কথাও বলছে না। নিশ্চয়ই ও মরে গেছে।

কি একটা শপথ উচ্চারণ করতে করতে জিমি সিঁড়ি থেকে লাফিয়ে নামলো, পেছনে বান্ডল।

-হায় ভগবান, বিলের একি পরিণতি হলো। না কখনোও না।

 লোরেনও ওদের পেছন পেছন গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো।

জিমি যখন বাড়ির মধ্যে ঢুকেছিল তখন বিল যেমন অবস্থায় ছিল এখনও সেইভাবে আসনে পিঠ রেখে বসে আছে। চোখ বন্ধ। ওর হাত ধরে টানলো জিমি। কিন্তু একটুও কেঁপে উঠলো না।

কি হলো? জিমি বললো। তবে ও মারা যায়নি। বান্ডল, তুমি মন খারাপ করো না। ওকে আগে বাড়ির মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, এখন যেন পুলিস এসে হাজির না হয়। তাহলেই বিপদ। কেউ কিছু জানতে চাইলে বলবে, আমাদের বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাই বাড়ির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছি।

সহজেই তিনজনে ধরাধরি করে বিলকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির মধ্যে নিয়ে গেল। একজন ভদ্রলোক দেখতে পেয়ে কিছু বললেন, মনে হয় পেটে একটু বেশি রঙিন জল পড়ে গিয়েছিল।

নিচের তলার পেছনের ঘরে একটা সোফায় শুইয়ে দিলো।

 বান্ডল ওর একটা হাত নিজের হাতে তুলে নিলো।

বুকে ধুকপুকানি চলছে। বান্ডল বললো, তাহলে ওর কি হলো?

একটু আগে আমি যখন এলাম, তখন তো ভালোই ছিল। জিমি বললো। মনে হয় কেউ ওকে ইনজেকশান দিয়েছে। এ তো আর কঠিন কাজ নয়। একজন ডাক্তার ডাকতে হবে। ততক্ষণ ওর ওপর লক্ষ্য রাখা।

দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিমি আবার ফিরে তাকালো।

-তোমরা কিন্তু নির্ভয়ে থাকবে। আমি বরং আমার রিভলবারটা রেখে যাই। প্রয়োজন হলে কাজে লাগাবে। আমি কাজ সেরেই ফিরে আসবো।

রিভলবার সোফার ওপর রেখে জিমি লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল। সদর দরজা বন্ধ করার শব্দ ওদের কানে পৌঁছলো।

বাড়িটায় কেমন থমথমে ভাব। ওরা দুজন চুপ করে বিলের পাশে বসে ছিল। বিলের নাড়ী আস্তে আস্তে চলছে ওরা সেটা টের পেলো।

–কিছু যদি করতে পারতাম। বান্ডল প্রায় ফিস ফিস করে বললো।

লোরেন ঘাড় নেড়ে বললো–ঠিক বলেছো। জিমি মাত্র দেড় মিনিট হয়ে গেছে। অথচ মনে হচ্ছে কখন গেছে।

–কি সব আমার কানে আসছে। মনে হয় ওপরে কারা যেন আসছে। বান্ডল বললো, নাকি এ আমার কল্পনা মাত্র।

–জিমি কেন রিভলবারটা রেখে গেছে, এবার বুঝতে পারছি। লোরেন বললো, সত্যিই কোনো বিপদ নেই কোথাও।

–যদি ওরা বিলের সন্ধান পেয়ে যায় তাহলে–শেষটা আর গলা দিয়ে বেরোলো না বান্ডলের।

–ঠিকই। তবে আমরা রয়েছি বাড়ির মধ্যে। আমাদের জানিয়ে তবে ওদের ঢুকতে হবে। তাছাড়া আমাদের সঙ্গে অস্ত্র আছে।

বান্ডল বিলের দিকে তাকালো–এ অবস্থায় একটু গরম কফি হলে ভালো হতো।

–আমার ব্যাগে ব্র্যান্ডি আর স্মেলিং সল্ট আছে। লোরেন বলল। ব্যাগটা রেখেছি ওপরের ঘরে।

দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি। বান্ডল বললো, ফল ভালো হতে পারে।

বান্ডল সিঁড়ি দিয়ে উঠে খেলার ঘরের দিকে হন হন করে চললো। দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখলো, টেবিলের ওপর লোরেনের ব্যাগটা পড়ে আছে।

ব্যাগটা হাতে নিয়ে ফিরতেই পেছনে একটা আওয়াজ শুনতে পেলো। একটা বালির ব্যাগ নিয়ে একটা লোক দরজার আড়ালে লুকিয়ে ছিলো। বান্ডল মাথা ঘোরাবার আগেই ঐ বালির বস্তার আঘাত লাগলো তার মাথায়। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো অস্ফুট শব্দ। তারপরেই জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো।

.

সেভেন ডায়ালস

ধীরে ধীরে বান্ডলের জ্ঞান ফিরে আসছিল। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করলো। চারপাশে চাপ চাপ অন্ধকার যেন তাকে ঘিরে ধরেছে। বহুদূর থেকে যেন ভেসে আসছে কোনো চেনা প্রিয় কণ্ঠস্বর।

অন্ধকার আস্তে আস্তে ফিকে হলো। মাথার একপাশে যন্ত্রণায় দপদপ করছে। এবার সে কান পেতে রইলো, কে যেন বলছে।

-বান্ডল, আমার প্রিয় বান্ডল। নিশ্চয়ই ও আর বেঁচে নেই।

–বান্ডল, তুমি আমার একান্ত নিজের। তোমায় আমি ভালোবাসি। দারুণ ভালোবাসি। বান্ডল এখন সম্পূর্ণ সচেতন। চোখ বন্ধ করে নীরবে শুনে যাচ্ছিল। বিলের দুহাতের মধ্যে ও নিজেকে আবদ্ধ রেখেছে।

-ভগবান, আমি যে এখন কি করি? বান্ডল, আমার সোনা, তোমাকে আমিই মেরে ফেলেছি। এর জন্য আমি-ই দায়ী প্রিয়তমা।

বান্ডলের শুনতে খুব ভালো লাগছিল। চোখ খুলতে ইচ্ছা করছিল না। তবু আস্তে আস্তে ঠোঁট খুললো সে।

-না, তুমি আমাকে মারোনি। হাঁদারাম কোথাকার।

–বান্ডল তুমি বেঁচে আছো? বিল চমকে প্রায় লাফিয়ে উঠলো।

–নিশ্চয়ই, বেঁচে আছি।

–কখন তোমার জ্ঞান ফিরেছে?

–প্রায় পাঁচ মিনিট আগে।

–তুমি পাঁচ মিনিট ঘাপটি মেরে শুয়েছিলে।

–তোমার কথাগুলো শুনতে বেশ ভালো লাগছিল। এত সুন্দর সুন্দর কথা তুমি তো আর বলবে না কখনোও। কারণ তুমি সারাক্ষণ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকো।

বিলের মুখ লাল হয়ে উঠলো।

-বান্ডল, তুমি কিছু মনে করো না। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। এটি আমি বহুদিন ধরে মনের মধ্যে পুষে রেখেছি। তোমাকে বলার সাহস হয়নি কখনো।

-তুমি একটা আহাম্মক। বান্ডল মিষ্টি সুরে ধমকে উঠলো। কেন বলতে পারোনি?

–কথাটা শুনে যদি তুমি ব্যঙ্গ করো। আমার মত সাধারণ একটা ছেলেকে বিয়ে করবে, এটা তো ভাবতে সাহস হয় না।

–তাহলে কি জর্জ লোম্যাক্সের মত লোককে বিয়ে করবো?

–আমি কর্ডাসের কথা বলছি না। বিল বললো। এমন কোনো নামী প্রতিষ্ঠিত লোক যে তোমার সবদিক থেকে উপযুক্ত, তেমন কেউ তোমার আছে কিনা জানি না।

-সত্যি, বিল তোমার তুলনা হয় না।

-বান্ডল, তাহলে তুমি কি কোনোদিন তোমার মনকে তৈরি করতে পারবে, আমাকে বিয়ে করার জন্য। আমি জানি, তোমার কাছে আমি নির্বোধ। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। পোষা কুকুর যেমন মনিবের কথা শুনে চলে, তেমনি আমি তোমার ক্রীতদাস হয়ে থাকবো।

সত্যি, কুকুরের সঙ্গে তোমার কোনো তফাত নেই। বান্ডল বললো।কুকুর আমি ভালোবাসি। ওরা ভীষণ বিশ্বাসী হয়, প্রভুভক্ত হয়, ওদেরও ভালোবাসা আছে। অবশ্য তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমি আমার মনকে জোর করে পাল্টে দিতে পারি।

বিল বান্ডলকে ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।

-তুমি কি অন্তর থেকে একথা বলছো?

–এবার চুপ করো, বান্ডল বলে উঠলো। মনে হচ্ছে, আবার অজ্ঞান হয়ে যাই।

–বান্ডল, তুমি জানো, তোমাকে আমি কতখানি ভালোবাসি। উত্তেজনায় বিল কাঁপছিল।

 পরের দশ মিনিট একই কথাবার্তার মধ্যে কেটে গেল।

-তুমি এবার তোমার কথা বন্ধ করে মন দিয়ে আমার কথা শোনো। বান্ডল বললো, আমার মাথার ভেতরটা এখনও যন্ত্রণা করছে। তাছাড়া তুমি এমন জোরে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে যে আমার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এখন বলল, আমরা কোথায় এবং কি ঘটেছে?

বান্ডল দৃষ্টি মেললো চারপাশে। ওর বুঝতে দেরি হলো না, ওরা সেই গোপন ঘরে বন্দী হয়ে আছে। কারণ বাইরের লুকোনো দরজাটা বন্ধ।

-বিল, বান্ডল বললো, নিজেকে সংযত করো। আমাদের এখান থেকে বেরোবার পথ বাতলাতে হবে।

–আঁ, বিল যেন সম্বিত ফিরে পেলো, তাই বুঝি। এর জন্য ভেবো না।

-তোমার মাথার কলকজা বিগড়ে দিয়েছে ঐ ভালোবাসা। বান্ডল বললো। আমারও মনে হচ্ছে, কাজটা কোনো কঠিন নয়।

-সত্যিই তাই। আমার আর কিসের ভাবনা, তুমি আমায় ভলোবাসো, একবার যখন জেনেছি, তখন কুছ পরোয়া নেহি।

-তুমি দয়া করে চুপ করবে? বান্ডল একটু ধমকে উঠলো। আসল কথাই চাপা পড়ে যাবে। তুমি নিজেকে সংযত করো। নতুবা দেখবে আমি মত পাল্টে ফেলেছি।

-না না, বান্ডল কখনো ওটা করো না। তোমাকে যখন একবার পেয়েছি, তখন আর পালিয়ে যেতে দিচ্ছি না।

আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুমি নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে যেতে পারবে না। বালের কণ্ঠে গর্বিত ভাব।

–তাই বুঝি? বিল বললো। একবার পরখ করে দেখবে নাকি?

–সত্যি তোমার ভালোবাসা অতুলনীয়, ভেবেছিলাম, তুমি বুঝি ভীতু। এখন দেখছি তুমি সাংঘাতিক। মনে হয় আবার আধ ঘন্টা পরেই তুমি আমাকে হুকুম করা শুরু করবে। কিন্তু বিল, আবার বোধহয় আমরা সেই আগের মতো শুরু করতে চলেছি। শোন বিল, এখান থেকে বেরোবার চেষ্টা করতে হবে আমাদের।

–আমি তো আগেই বলেছি, এর জন্য ভেবো না। আমি

 বান্ডল ওর হাতে এটা ছোট্ট চাপ দিল। বিল চুপ করে গেল। বান্ডল কান সজাগ করলো।

হাঁ, একটা শব্দ আসছে। পায়ের শব্দ দরজার কাছে এসে থামলো। তালায় কেউ চাবি লাগাচ্ছে। বান্ডল ভাবলো, জিমি কি তাদের উদ্ধার করতে এসেছে না কি অন্য কেউ?

দরজা খুলে গেল। ওদের চোখের সামনে আবির্ভূত হলেন মিঃ মসগোরোভস্কি, কালো দাড়ির বিশাল চেহারা।

বিল মুহূর্তের মধ্যে বান্ডলকে আড়াল করে লোকটির মুখোমুখি দাঁড়ালো।

-শুনুন আপনার সঙ্গে আমি কিছু কথা বলতে চাই। বিল বললো।

রুশ লোকটি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। রেশমের মতো দাড়িতে হাত বোলাতে লাগলেন, ঠোঁটে স্মিত হাসি।

ধীরে ধীরে তিনি বললেন, ঐ লেডিকে একবার আমার সঙ্গে আসতে হবে।

-বান্ডল, বিল বললো। ঘাবড়ে যেও না। সব ঠিক আছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। তুমি ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। ওর কথা মত ওর সঙ্গে তুমি যাও। আমি যা করছি সেটা আমার ঈশ্বর জানেন, তুমি ভীত হয়ো না।

শান্ত মেয়ের মত বান্ডল নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বিলের কণ্ঠস্বরে যেন আদেশের ভঙ্গী। এরকমটা বান্ডল এই প্রথম লক্ষ্য করলো, যেন সমস্ত ব্যাপারটা সে আগেই খুঁটিয়ে দেখে নিয়েছে। তাই সাহস করে বান্ডলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। বিলের যে একটা মতলব আছে সেটা ভেবে অবাক হলো।

বান্ডল ও রুশ লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। দরজায় আবার তালা পড়লো।

একটা সিঁড়ি ইঙ্গিত করতে বান্ডল বাধ্য মেয়ের মত সেটা অনুসরণ করলো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ও একটা ঘরে এসে ঢুকলো। ঘরটা যে অ্যালফ্রেডের সেটা বান্ডল নিশ্চিত করে বলতে পারে।

-কোনো রকম টু শব্দ না করে এখানে আপনি অপেক্ষা করুন।

মসগোরোভস্কি একথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

 বান্ডল একটা চেয়ারে বসে রইলো।

কয়েক মিনিট কাটলো এই ভাবে। চিন্তা করার ক্ষমতাও যেন লোপ পেয়েছে বান্ডলের। মনে হচ্ছে এক ঘন্টা ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে। কি যে ঘটতে চলেছে?

এমন সময় দরজা খুলে প্রবেশ করলেন মসগোরোভস্কি।

-লেডি এইলিন ব্রেন্ট, সেভেন ডায়াল সোসাইটির এক জরুরী সভায় আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দয়া করে আপনি আমার সঙ্গে আসুন।

এবার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো ওরা। কি আশ্চর্য, সেই ঘরটা। একবার সে আলমারির ফুটো দিয়ে যে ঘর দেখেছিল। ঘরের সব কিছু দেখেছিল। মুখোস পরা সেই মানুষগুলি টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে। বান্ডল তাজ্জব বনে গেল। ততক্ষণে মসগোরোভস্কি নিজের আসনে বসে মুখোসটা পরে নিচ্ছিলেন।

টেবিলের মাথার চেয়ারে একজন ছিলেন। তার মানে সাত নম্বর আজ হাজির।

বান্ডলের বুকে ধড়ফড়ানি বেড়ে গেল বহুগুণ। বান্ডল সেই সাত নম্বরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছিল। মুখোসের ওপর ঘড়ির সেই সংখ্যা বান্ডল হাঁ করে স্তম্ভিত ভঙ্গীতে লক্ষ্য করছিল।

লোকটি চুপ করে বসে আছে ঠিকই কিন্তু বাস্তলের মনে হলো যেন একটা ক্ষমতা ওর মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে। লোকটি কাঠের পুতুলের মত বসে না থেকে কিছু বলুক বা কোনো অঙ্গভঙ্গী করুন। বান্ডলের একঘেয়ে লাগলোলা। বান্ডলের মনে হলো, মকড়সা যেন তার শিকারের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে আছে।

এই সময় কানে ভেসে এলো মসগোরাভস্কির গলার আওয়াজ, যেন কত দূর থেকে কথা বলছেন।

-লেডি এইলিন, আপনি এই সভায় উপস্থিত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু কোনো মুখোস পরেননি। তাই আমাদের নীতি ও উদ্দেশ্য আপনাকে মানতে হবে। এটা এই সমিতির নিয়ম। তাকিয়ে দেখুন, দুই নম্বর চেয়ার শূন্য। আপনাকে ঐ চেয়ারে বসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

এসব কি শুনছে বান্ডল। রাতের দুঃস্বপ্নে মনে হলো। প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এটা কি সম্ভব, যে সমিতিকে সে ঘৃণা করে সেই রক্তপিপাসুক্লাব তাকে সদস্যা হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে? এই প্রস্তাব বিলকেও কি দেওয়া হয়েছিল? ও কি ঘেন্নায় তা ঠেলে দিয়েছিল?

–আমি এ প্রস্তাবে রাজী নই। বান্ডল স্পষ্ট জবাব দিলো।

–ভেবে চিনেত উত্তর দিন লেডি এইলিন।

 মসগোরোভস্কি মুখোসের আড়ালে যে হাসছেন সেটা বান্ডল বুঝতে পারলো।

–আপনি কি আন্দাজ করতে পারছেন, কি প্রস্তাব আপনি প্রত্যাখ্যান করছেন?

–খুব ভালো ভাবেই সেটা ধরতে পারছি। বান্ডল বললো।

এবার সাত নম্বর ওকে চমকে দিলো। কণ্ঠস্বর বেশ পরিচিত। এই গলার আওাজের লোকটিকে সে চেনে। বান্ডলের মনে খুশীর দোলা লাগছে। দম বন্ধ করা অবস্থা তখন ওর। জানতে পারবে সব কিছু। যেটা জানার জন্য ওরা এতদিন উৎকণ্ঠিত হয়েছিল।

ধীরে ধীরে মুখোস খুলে গেল, লোকটির আসল মুখ বেরিয়ে পড়লো। কাঠের পুতুলের মত ওর সামনে ভেসে উঠলো সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটলের মুখ।

.

বান্ডল স্তম্ভিত

 প্রায় লাফ দিয়ে উঠে এলেন মিঃ মসগোরাভস্কি। বান্ডলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন-খুব ধাক্কা খেয়েছে দেখছি। একটা চেয়ার দাও।

চোয়ারে গা এলিয়ে দিলো বান্ডল। বিস্ময়ের ধাক্কা ও সহ্য করতে পারেনি। ওর শরীর যেন ওর আয়ত্তের মধ্যে আর নেই। স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ব্যাটল তার নিজের স্বভাব অনুযায়ী কথা বলে উঠলেন।

লেডি এইলিন, আমাকে দেখে আপনি স্তম্ভিত হয়ে গেছেন, তাই না? এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারাও আশা করেনি আমাকে এখানে দেখবেন বলে। বলতে গেলে এক্ষেত্রে মিঃ মসগারোভস্কি আমার সহকারীর কাজ করেছেন। এটা চালনার দায়িত্ব তার ওপর ছিল। অন্যেরা তার নির্দেশ অন্ধের মত পালন করেছেন মাত্র।

বান্ডলের কথা বলা দূরে থাক, ঠোঁট পর্যন্ত নড়লো না। কোনো এক অক্ষম শক্তি তার ওপর যেন ভর করে আছে।

ব্যাটল মাথা হেঁট করলেন, বোঝাতে চাইলেন যে, তিনি বান্ডলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছেন।

-আমি জানি, আপনার মনে দুএকটা কথা কাটার মত বিধে আছে। সেগুলো আপনাকে তুলে ফেলতে হবে। লেডি এইলিন, আপনি হয়তো অনেক এই ধরনের সমিতির গল্প পড়েছেন যাদের পেছনে থাকেন একজন পাকা অপরাধী যাকে কেউ কখনো দেখতে পায় না। বাস্তবে যে এমন কোনো সমিতি থাকতে পারে সেটা আমার জানা নেই। অবশ্য আমার অভিজ্ঞতা নেহাত কম নয়।

..তবে পৃথিবীতে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে আছে অনেক। এই ধরনের বই পড়ে অল্প বয়েসের ছেলেমেয়েরা এ কাজে লিপ্ত হয়। আমি এরকম কয়েকজনকে জানি, যারা পেশাদার নয়, কিন্তু আমাদের দপ্তরের জন্য প্রশংসনীয় কাজ করেছে। অনেক সময় তাদের নাটক করতে হয়েছে চাপে পড়ে। এছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না; যখন ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখি হয় তারা। দেশের জন্য তারা বিপদকে অগ্রাহ্য করেছে, ভালোবেসেছে।

..লেডি এইলিন, আপনি সামনে তাকিয়ে দেখুন। সকলের সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিই। মিঃ মসগোরোভস্কি, একে আপনি নিশ্চয় চিনেছেন। এই সমিতি এবং আরো কিছু তিনি পরিচালনা করেন। এর সবচেয়ে বড় পরিচয়, ইনি হলেন ইংল্যান্ডে আমাদের সবচেয়ে বড় বলশেভিক বিরোধী বন্ধু এবং সিক্রেট এজেন্ট।

…হাঙ্গেরিয় দূতাবাসের কাউন্ট আন্দ্রাস হলেন পাঁচ নম্বর। মৃত জেরি ওয়েডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। চার নম্বর যাকে দেখছেন, তিনি হলেন মার্কিনী সংবাদিক এবং আমাদের বন্ধু মিঃ হেওয়ার্ড ফেলপস্। আর তিন নম্বর হলেন।

ব্যাটল মুচকি হেসেই বলতে বলতে থেমে গেলেন। বান্ডল ভয়চকিত দৃষ্টিতে তাকালো। দেখলো সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে বিল এভারসেল।

-যে সাহসী যুবক দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, ব্যাটল বলতে শুরু করলেন, সেই রনি ডেভেরার জন্য দুই নম্বর চেয়ারটি নির্দিষ্ট ছিল। সেটা আপততঃ খালি। আর এক নম্বর আসনটি মৃত জেরাল্ড ওয়েডের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সে-ও বীরের মত একইভাবে প্রাণ দিয়েছেন। এখন সেই জায়গায় বসেছেন আমাদের একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী একজন মহিলা, আমাদের কাজে ভীষণ ভাবে সাহায্য করেছেন।

এতক্ষণে এক নম্বর তার মুখোস খুলে ফেললো। চমৎকার, সুন্দর কাউন্টেস র‍্যাডকির মুখের ওপর বান্ডলের নজর পড়লো।

আমার বোঝা উচিত ছিল। বান্ডল এতক্ষণে ধাতস্থ হয়ে উঠেছে। আপনি কোনো উত্তেজনা শিকারী হতে পারেন না।

কিন্তু বান্ডল, তুমি এখনও এর শেষ চমকপ্রদ কথাটি জানো না। বিল বললো। যার কথা তোমাকে আগেই বলেছিলাম ইনি সেই সেন্ট মাউর। ও প্রমাণ করে দিয়েছে যে কি দারুণ অভিনয় সে করতে পারে।

আমি গর্বিত বোধ করছি না, কারণ আমার বাবা-মা ইওরোপের ঐ এলাকা থেকেই আসে। একটু বিদেশিনী সুলভ নাকি সুর মিস মাউরের কথায় ফুটে উঠলো। তবে অ্যাবীতে যখন বাগান নিয়ে আলোচনা হয়েছিল তখন প্রায় ধরা পড়েছিলেন আর কি। তবে এর সবটাই মজা নয়। আমি রনির বাগদত্তা ছিলাম। যারা ওকে খুন করেছে তাদের ওপর আমি প্রতিশোধ নেবোই, এই আমার প্রতিজ্ঞা।

–সব যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। বান্ডল বললো, সব কি সত্যি?

লেডি এইলিন, ব্যাটল বললেন, এর সবকিছু জলের মত সহজ। কিছু উত্তেজনা উপভোগ করার জন্য কিছু তরুণ উদ্যোগী হয়ে এই কাজ শুরু করে।

…কথাটা প্রথম আমাকে জানান মিঃ ওয়েড। গোপন সমিতি গড়ে তুলে গোপন গোয়েন্দাগিরি করা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। আমি তাকে বলি, এসব কাজে অনেক ঝুঁকি আছে, জীবনও সংশয় হতে পারে। কিন্তু তারা তাদের প্রতিজ্ঞায় ছিল অটল। অতএব শুরু হলো এই ব্যাপারটা।

কিন্তু এর উদ্দেশ্য কি? বান্ডল প্রশ্ন করলো।

আমরা এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে অপরাধ জগতে অসাধারণ ব্যক্তি, তার কাজ ছিল মিঃ ওয়েডের মত নানা রকমের রাইফেলের ব্যবস্থা করা, তবে তার কাজ সাধারণ ছিল না। আন্তর্জাতিক ব্যাপারে তার টান ছিল অত্যন্ত বেশি। এর আগে মূল্যবান গোপন কাগজপত্র এবং আবিষ্কার দুবার খোয়া যায়। এর সঙ্গে যে ভেতরের কেউ রয়েছে, সেটা আমাদের বুঝতে দেরি হয় না। পেশাদার গোয়েন্দারাও এর কোনো কূল-কিনারা করতে পারলো না। ফলে এইসব অপেশাদারী গোয়েন্দারা কাজে হাত লাগালো, অবশেষে সফল হলো।

–সফল হয়েছে?

হয়েছে। তবে এর বিনিময়ে আমাদের দিতে হয়েছে দুটি বীরের প্রাণ আর সে পালায়। লোকটি দারুণ বিপজ্জনক। কিন্তু সেভেন ডায়ালস পরাজয় স্বীকার করতে জানে না। তারা আঠার মতো লেগেছিল। অবশেষে জয় হলো সেভেন ডায়াল-এর। ধন্যবাদ জানাই বিল এভারসলেকে। গতকাল হাতে হাতে ধরা পড়েছে লোকটি।

আমি তাকে চিনি? বাঙল প্রশ্ন করলো। লোকটার নাম কি?

-লেডি এইলিন, আপনি তাকে খুব ভালো ভাবে জানেন। তার নাম মিঃ জিমি থেসিজার। আজ বিকেলে তাকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।

.

ব্যাখ্যা করলেন ব্যাটল

 আয়েস করে বসলেন সুপারিন্টেন্টে ব্যাটল। সমস্ত রহস্য ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন।

জিমি থেসিজার যে অপরাধী একথা প্রথমে আমার মনে আসেনি। কিন্তু মি ডেভেরো শেষ কথাগুলো শোনার পর আমার মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। মিঃ থেসিজারকে মিঃ ডেভেরো জানাতে বলেছেন সেভেন ডায়ালস তাকে মেরেছে।

..আদৌ ব্যাপারটা তা নয়। মিঃ ডেভেরো বলতে চেয়েছিলেন যে জিমি থেসিজার সম্পর্কে সেভেন ডায়ালসকে জানাতে।

..মিঃ ডেভেরো আর মিঃ থেসিজার ছিলেন অন্তরঙ্গ বন্ধু, অতএব এটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য লাগবে। তবে আমি নিশ্চিত ছিলাম অপরাধী বাড়ির মধ্যেই আছে। সে পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ না করেও সেখানকার অনেক কথা জানতো। তাছাড়া কোনো কাজ কর্ম না করে বিলাসিতার মধ্যে দিন কাটাতে মিঃ থেসিজার প্রচুর টাকা কোথা থেকে পেতেন?

…এরপর চিমনির ঘটনা আমাকে আরো নিশ্চিত করে দিয়েছিলো। সবাই জানে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে মিঃ ওয়েডের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু রনি ডেভেলরা এটা মেনে নিতে পারেনি। তিনি বুঝেছিলেন, খুনী বাড়ির মধ্যে আছে। সে কথা মিঃ থেসিজারকে জানাতে গিয়েও জানাননি।

–তাহলে ফুটম্যান বাওয়ার নির্দোষ?

-হ্যাঁ, বাওয়ার আমাদেরই একজন, লেডি এইলিন, বাওয়ারের ওপর নজর রাখার নির্দেশ ছিলো। কিন্তু সে বিশেষ কিছু করতে পারেনি।

…মিস লোরেন ওয়েডের মাধ্যমে মিঃ থেসিজার সমস্ত খবরাখবর পেনে। লোরেন ওয়েডকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন। থেসিজার যা বলতেন তাই তিনি নিৰ্বিাদেরতেন।মিস ওয়েড জেরি ওয়েডের বোন নন। তিনি মিস ওয়েডকে ভালোবাসতেন। এই কারণে মিঃ থেসিজারের হাতে তাকে খুন হতে হয়েছিল। ঐ একই কারণে রনি ডেভেরো তার মৃত্যু ডেকে আনে।

…তার ওপর আবীতে যখন আপনি আসতে চাইলেন তখন বিল এভারসলে আরো ঝামেলায় পড়লেন। আপনার এবং মিঃ থেসিজারের ঘনিষ্ঠতা ওকে অস্বস্তিতে ফেললো। যখন তিনি জানতে পারলেন সেভেন ডায়ালস-এ আপনি প্রবেশ করেছেন এবং সবকিছু শুনে ফেলেছেন তখন আরো আশ্চর্য হয়ে যান।

…সত্যি, লেডি এইলিন, আপনি আমাকেও টেক্কা দিয়েছিলেন।

— …আপনি সব কথা মিঃ থেসিজারকে বলে দেবেন এই ভেবে বিল এভারসেলে আপনাকে সব কিছু জানায়নি।

অ্যাবীতে রাতে পাহারা দেবার দায়িত্ব ভাগ করে নিলেন মিঃ থেসিজার আর মিঃ এভারসলে। মিস সেন্ট মাউর লাইব্রেরিতে জানলার পাশে পাহারায় ছিলেন। মিঃ থেসিজারকে আসতে দেখে উনি পর্দার আড়ালে আত্মগোপন করেন।

…এরপর মিঃ থেসিজার যা বলেন সব ঠিক। কিন্তু এমন কিছু ঘটলো যা আমার তদন্তে সাহায্য করলো।

দাঁতের কামড়ের দাগ বসানো একটা পোড়া দস্তানা আমি পেয়ে গেলাম।

মিস ওয়েড ও মিঃ থেসিজার আগেই পরিকল্পনা করে নিয়েছিলেন। অতএব নির্ধারিত সময়ে বেড়া ডিঙিয়ে মিস ওয়েড ভেতরে প্রবেশ করেন, আমার লোকজন তাকে ঢুকতে দেখে, কিন্তু আমার নির্দেশ ছিলো, ঢোকার মুখে কাউকে বাধা দেবে না। পরিকল্পনা মত তিনি বারান্দায় উঠে আসেন। পায়ের সামনে প্যাকেট পেয়ে তুলে নিয়ে ছোটেন। ওদিকে লাইব্রেরি ঘরের মধ্যে চলছে গল্পের মারামারি। চেয়ার টেবিল ছোঁড়াছুড়ি চলছে। ঐ সময় সকলেরই ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা। সেই ফাঁকে ফর্মুলা নিয়ে পালাবেন মিঃ ওয়েড।

কিন্তু দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়ে ধরা পড়লেন আমার হাতে। এদিকে প্যাকেট ফেলে দিয়ে মিঃ থেসিজার নকল মারামারি শুরু করেছেন। চাপা স্বরে নিজেই কিছু বলে ওঠে। তারপর নিজের কোল্ট রিভলবার দিয়ে কাল্পনিক আততায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। পরক্ষণে দস্তানা পরে নিয়ে একটা মাউসার পিস্তল বের করে নিজের হাতে গুলি করে অস্ত্রটা তিনি বাগানে ছুঁড়ে ফেলেন। আমি এসে দেখি তিনি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। দস্তানাটা পেলাম চুল্লির মধ্যে। বুঝতে বেশি সময় নিলো না যে দস্তানাটাই আসল রহস্য।

…তাছাড়া মিঃ থেসিজার কোনো একজনকে লক্ষ্য করে প্যাকেটা ছুঁড়ে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু মিস ওয়েড যদি আচমকা সেখান এসে থাকেন তাহলে আসল লোকটি কে? কাউন্টেস হতে পারে না, কারণ উনি আমাদের লোক। মিঃ থেসিজারকে সন্দেহ করলেও প্রমাণ না থাকায় কিছু করতে পারছিলাম না। মিঃ থেসিজারও মনে মনে ভীত হয়ে পড়ে। সেভেন ডায়ালস-এর সঙ্গে তাকে লড়তে হচ্ছে। তাই তো সাতনম্বরের জন্য মরীয়া হয়ে ওঠে। কুটদের বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার পেছনে ওর একটা উদ্দেশ্য ছিল, কারণ স্যার অসওয়াল্ডকে ও সাত নম্বর বলে সন্দেহ করেছিল।

আমি কিন্তু সন্দেহ করেছিলাম তার সেক্রেটারিকে যাকে আপনারা পঙ্গো বলেন। সেক্ষেত্রেও আমার সন্দেহ টিকলো না। কারণ তিনি বাঁ-হাতি হলেও ডান হাত তার অকেজো নয়। যার ডান হাত অকেজো হবে তাকে দাঁত দিয়ে দস্তানাটা খুলতে হবে। অতএব তিনি রইলেন সন্দেহের বাইরে।

…তবে এটা স্বীকার করতেই হবে বিল এভারসেলে নিজের জীবন বিপন্ন করে ওকে ধরতে সাহায্য করেছে।

…মিঃ এভারসলে মিঃ থেসিজারকে একটা বানানো উকিলের চিঠি দেখালেন যেটা রনি ডেভোরোর উকিল পাঠিয়েছে। কাগজগুলি দেখে থেসিজারের কেমন সন্দেহ হয়। আমরা এটাও জানতাম, থেসিজার দোষী বলে বিলকে পথ থেকে সরিয়ে দিতে চাইবেন। হলোও তাই। তিনি বিলকে একটা পানীয় দেন যেটা গলায় যাওয়ার পর ধীরে ধীরে বিল এলিয়ে পড়বে। কিন্তু বিল সেটা পান না করে মিঃ থেসিজারের বাইরে যাওয়ার ফাঁকে একটা জারে পানীয়টা ঢেলে দেন। কিন্তু পানীয় খেয়ে তার যে ক্রিয়া শুরু হয়েছে সেটা মিথ্যে করে দেখাতে থাকেন। জিমি ভাবলেন ওষুধে কাজ হচ্ছে, তাই তিনি অকপটে সব কিছু স্বীকার করলেন এবং মিঃ এভারসলে তার তৃতীয় শিকার বলে জানায়।

..বিল এভারসলের বেহুঁশ দেহটা নিচে নিয়ে এসে গাড়িতে তোলেন। এরই মাঝে আপনাকে ফোন করেছিলেন, তাই না? মিঃ থেসিজার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর আমার দুজন লোক সেখানে গিয়ে জারের পানীয় সংগ্রহ করে নিয়ে আসে যার মধ্যে ছিল মরফিয়ার হাইড্রোক্লোরাইড। তারপর মিঃ এভারসলেকে গাড়িতে বসিয়ে তিনি সেভেন ডায়ালস ক্লাবে ঢুকে পড়েন।

…তারপর ডাক্তার ডাকার নাম করে তিনি ওপরে এই ঘরে দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। মিস ওয়েড আপনাকে কায়দা করে ঐ ঘরে পাঠিয়ে দিলেন।

এরপর বিল এভারসলে বলতে শুরু করলো।

–আমার হুশ থাকলেও আমি কাউকে কিছু বুঝতে দিলাম না। সোফায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছি। লোরেনের গলা পেলাম, দারুণ ভাবে কাজ হাসিল হয়েছে।

থেসিজার বললো–ওদের দুজনকেই এক ঘরে রাখবো। তুমি আমায় একটু সাহায্য করো। এবার সাত নম্বর আঁৎকে উঠবে।

লোরেন বললো, ওর আর জ্ঞান ফিরবে না তো?

-না না, যা একখানা মোম আঘাত দিয়েছি, তুমি নিশ্চিত থাকো।

…ওরা দরজা বন্ধ করে চলে গেলে চোখ খুললাম। তোমাকে দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, তুমি মরে গেছে।

–আপনারা কি ওকেও ধরেছেন? বান্ডল জানতে চাইলো।

 সুপারিন্টেন্ডন্ট ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন।

তবে, মনে হয় না ওর ফাঁসি হবে। কিন্তু জিমি থেসিজারকে ফাঁসির দড়িতে গলা দিয়ে হবে। এইবার লেডি এইলিন আপনি যদি এখন এখটু সুস্থ মনে করেন তাহলে চলুন আমরা সকলে মিলে আজকের দিনটাকে সেলিব্রেট করি। কাছে একটা ভালো রেস্তোরাঁ আছে।

বান্ডল খুশী হলো।

সেভেন ডায়ালস। বিল বলে উঠলো, হুররে। আজ শ্যাম্পেনের ফোয়ারা ছুটবে।

–সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যাটল, বান্ডল বললো, আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, কিন্তু আপসোস হচ্ছে যে আপনার বৌ আছে। অগত্যা বিলের সঙ্গে আমাকে ঘর বাঁধতে হবে।

.

লর্ড কেটারহ্যাম সমর্থন করলেন

-বাবা, বান্ডল বললো, তোমাকে একটা খবর জানাই। এবার তুমি আমাকে হারাতে যাচ্ছো।

–কেন, লর্ড কেটারহ্যাম বললেন, তোর কি হয়েছে যে তোকে হারাবো। বুকে কোন অসুখ নেই বা অন্য কিছু নেই, যার জন্য তুই একথা বলছিস।

–আমি আমার বিয়ের কথা বলছি, বাবা।

বাঃ ভালোই বলেছিস। বিয়ের সময় সেজেগুজে জর্জ লোম্যাক্সের হাতে তোকে তুলে দিতে হবে, এই তো।

তুমি কি মনে করছে, আমি জর্জকে বিয়ে করছি? ওর থেকে অনেক ভালো লোককে আমি বিয়ে করছি।

–ভালো হলেই ভালো। তবে লোকের চরিত্র বড় বিচিত্র। লর্ড কেটারহ্যাম বলতে থাকেন। তোর মুখে শুনেছি, জিমি কত ভালো ছেলে। অথচ দ্যাখ, একটা পাকা খুনী। চেহারা দেখে কিছু বোঝা যেতত? তার সঙ্গে আমার আলাপ হয়নি, এটাই আমার দুর্ভাগ্য। ভাবছিলাম একটা জীবনী লিখবো।

বাবা, আমার মনে হচ্ছে, আমি না থাকলে তোমার ভীষণ কষ্ট হবে, বান্ডল বললো।

-সেটা মানিয়ে নিতে হবে। লর্ড কেটারহ্যাম বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সামনে এগোলেন। একটু থেমে জিজ্ঞেস করলেন, হারে, তুই কাকে বিয়ে করছিস?

–এতক্ষণে তোমার একটা জানার কথা মনে পড়লো। বান্ডল বললো, বিল এভারসলেকে আমি বিয়ে করছি।

তিনি খুশীতে মাথা দোলাতে লাগলেন–খুব ভালো ছেলে তাই না? তবে মনে হয় মাথায় একটু গণ্ডগোল আছে। ঠিক বলেছি, চমৎকার। আসছে শরতে আমরা দুজনে জমিয়ে গলফ খেলতে পারবো।