২১. একটা দুঃস্বপ্ন

২১.

মনে হচ্ছে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে উঠলাম। বুক খালি করে নতুন করে শ্বাস নিলো হিলারি।

তাঞ্জিয়েরের একটা হোটেলের চত্বরে ওরা বসেছিলো। সকালের প্লেনেই পৌঁছেছে এখানে। হিলারী আবার বললো, এতসব ঘটনা কি সত্যিই ঘটেছিলো? নাকি স্বপ্নই।

সত্যিই ঘটেছিলো, বললো টম বেটারটন, মনে হয় সত্যিই যেন দুঃস্বপ্ন। শেষপর্যন্ত তাহলে ওখান থেকে বেরোতে পারলাম।

জেসপ চত্বর পেরিয়ে ওদের পাশে এসে বসলেন।

হিলারী জিজ্ঞেস করলো, অ্যান্ড্রু পিটার্স কোথায় গেলেন?

–এখুনি এসে পড়বে। কয়েকটা টুকিটাকি কাজ সারছে, জেসপ বললো।

–তাহলে-পিটার্স আপনারই লোক। হিলারী বললো, কিছু ফরফরাসের গুড়ো আর তেজস্ক্রিয় পদার্থে ভরা এক সীসার সিগারেট কেস দিয়ে সে এতসব কাণ্ডকারখানা করে ফেললো। আমি কিন্তু ওকে এতটুকুও সন্দেহ করতে পারিনি।

-সেই জন্যই দুজনেই যথেষ্ট সতর্কতার পরিচয় দিয়েছে। তবে, ঠিকমতো বলতে গেলে পিটার্স আমার লোক নয়। উনি আমেরিকার পক্ষ থেকে এসেছেন।

–সেইজন্যই তখন আপনি বলেছিলেন, সত্যিই যদি আমি টমের কাছে পৌঁছতে পারি সেখানে আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে? অ্যান্ড্র পিটার্সের কথাই আপনি বলতে চেয়েছিলেন, তাই না?

-হুঁ, ঘাড় নাড়লেন জেসপ।

ওই যে আমার বন্ধু লেবল্যাঙ্ক আসছে। যাই ওর সঙ্গে একটু কথা বলি, জেসপ উঠে পড়লেন। চত্বর পেরিয়ে চলে গেলেন।

সঙ্গে সঙ্গেই টম বেটারটন ব্যস্ত হয়ে বললো, আমার জন্য আরও একটা কাজ তোমাকে করতে হবে অলিভ, করবে না? এখনও তোমাকে অলিভই বলছি–কেমন যেন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।

-হা হা বলবেন। তাতে কী হয়েছে?

-তুমি আমার সঙ্গে চত্বরের ওধারে চলো। তারপর এখানে ফিরে এসে ওদের বলবে আমি আমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ছি।

বিস্মিত চোখ তুললো হিলারী, কেন? কী করবেন আপনি

–চলে যাবো, অলিভ। চলে যাওয়াই আমার পক্ষে ভালো।

–চলে যাবেন। কোথায়?

–যেখানে হয়।

–কিন্তু কেন?

–এখানকার অবস্থা আমার জানা নেই। এই তাঞ্জিয়ের এক অদ্ভুত জায়গা নির্দিষ্ট কোনো রাষ্ট্রের আইনের আওতায় পড়ে না। কিন্তু আমি জানি, তোমাদের সঙ্গে জিব্রাল্টার পৌঁছলেই কী ঘটবে। সেখানে আইন আছে, সরকার আছে। প্রথমেই ওরা আমাকে গ্রেপ্তার করবে সেখানে।

হিলারীর চোখে মুখে গভীর চিন্তার রেখা পড়লো। অ্যারিস্টাইডসের মরণফাঁদ থেকে মুক্তি পাবার উত্তেজনায়, টম বেটারটনের দুশ্চিন্তার কথা সে ভুলেই গিয়েছিলো। বললো, আপনি কি ভাবছেন, সরকারী গোপন তথা ফাঁসের অভিযোগে আপনাকে অভিযুক্ত করা হবে? তা যদি হয়, তাহলে কি আপনি পালিয়ে বাঁচতে পারবেন? কোথায় যাবেন আপনি? ওরা অনেক বেশি শক্তিশালী। এই দুনিয়ার যেখানে যেভাবেই থাকুন-না-কেন ওরা আপনাকে খুঁজে বের করবেই।

সেটা খুব সহজ হবে না। আমার যে বর্ণনা ওদের কাছে আছে তার সঙ্গে আমার বর্তমান চেহারার কোনো মিলই নেই। আমার উদ্দেশ্য ছিলো-ইংল্যান্ড থেকে পালিয়ে, কিছু টাকা-পয়সার ব্যবস্থা করে নিজের চেহারা সম্পূর্ণ পালটে ফেলা, যাতে বাকি জীবনটা নিরাপদে কাটাতে পারি।

দু চোখে সন্দেহ ঘনালো হিলারীর। বললো, আপনি ভুল করছেন। এর চেয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে বিচারের সামনে দাঁড়ানো অনেক ভালো।

এখন তো আর যুদ্ধের সময় নয়। হয়তো অনেক বছরের জেল হবে। সারাজীবন পুলিশের তাড়া খাওয়ার কী দরকার?

–তুমি বুঝছে না। যাকগে, নষ্ট করার মতো আর একটুও সময় আমার নেই।

চত্বরের শেষ প্রান্তে পৌঁছলো ওরা। দেওয়ালের গায়ে ছোট্ট একটা দরজা। সেই দরজা দিয়ে সরু একটা রাস্তা পাহাড়ী পথ বেয়ে এঁকে-বেঁকে বন্দরের দিকে চলে গেছে।

বেটারটন বললো, এই পথ দিয়ে আমি বেরিলয়ে যাচ্ছি। কেউ লক্ষ্য করবে না। বিদায়।

–আপনার সৌভাগ্য কামনা করি, বিদায়! স্থির দাঁড়িয়ে সে বেটারটনকে দেখতে লাগলো। দরজাটা খুলে যেতেই বেটারটন এক পা পিছিয়ে এসে নিশ্চল দাঁড়িয়ে পড়লো। দরজা জুড়ে তিনজন লোক দাঁড়িয়ে। তাদের মধ্যে দুজন বেটারটনের দিকে এগিয়ে এলো।

-টমাস বেটারটন, আপনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রয়েছে আমার কাছে। যতক্ষণ না আপনাকে মার্কিন সরকারের হাতে বিচারের জন্য সমর্পণ করা হচ্ছে, ততক্ষণ আপনি আমাদের হাতে বন্দী হয়ে থাকবেন।

হো হো করে হেসে উঠলেন বেটারটন।

–সবকিছুই আপনারা ঠিকঠাক বলেছেন, শুধু একটু ভুল করে আমাকে টমাস বেটারটন ভেবেছেন। আমি বেটারটন নই।

তৃতীয় লোকটি পিটার্স এবার ভেতরে এসে বেটারটনের মুখোমুখি দাঁড়ালো। আপনিই বেটারটন–টমাস বেটারটুন আপনিই।

বেটারটন আবার হেসে বললো, আমার মনে হচ্ছে, গত একমাস একসঙ্গে থেকে, আমাকে টমাস বেটারটন নামে ডাকতে শুনে, আপনি হয়তো বিশ্বাস করেছেন যে আমিই টমাস বেটারটন। আসলে কিন্তু আমি টমাস বেটারটন নই। বিশ্বাস না হয় ওই ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করুন। উনি আমার কাছে এসেছিলেন, আমার স্ত্রীর ছদ্মবেশে। আমি ওঁকে আমার স্ত্রী বলে মেনেও নিয়েছিলাম। তাই না? আপনি কি বলেন?

হিলারী ধীরে ধীরে মাথা নাড়লো। তার কারণ, বেটারটন বলে চললো, যেহেতু আমি টমাস বেটারটন নই, স্বভাবতই টমাস বেটারটনের স্ত্রীকেও আমার চেনার কথা নয়।

বেটারটন হাসলো, আত্মবিশ্বাসের হাসি। আমি বেটারটন নই। বেটারটনের যে-কোনো ছবির সঙ্গে আমার চেহারা মিলিয়ে দেখুন, দেখবেন সত্যি কথাই বলছি আমি।

পিটার্স এগিয়ে এসে বললো, বেটারটনের ছবি আমি দেখেছি। স্বীকার করছি, টমাস বেটারটন হিসেবে আপনাকে আমি চিনতে পারিনি। কিন্তু আপনিই যে টমাস বেটারটন তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং তা আমি প্রমাণ করবো।

হঠাৎ সে শক্ত মুঠোয় বেটারটনের হাতটা চেপে ধরে, তার জামাটা ফড়ফড় করে ছিঁড়ে ফেললো। আপনি যদি টমাস বেটারটন হন, তাহলে আপনার ডান হাতের কনুইয়ের ওপর ইংরেজী জেড় অক্ষরের মতো একটা কাটা দাগ হবে। বলতে বলতেই সে বেটারটনের ডান হাতটা সবার সামনে মেলে ধরলো।

দাগটা দেখিয়ে বললো পিটার্স, এইখানেই আপনি আটকে গেলেন, মিঃ বেটারটন। যুক্তরাষ্ট্রে আপনার গবেষণাগারের দুজন সহকারী এই দাগ সনাক্ত করবে। এই দাগটার কথা আমি জানি, কারণ আপনার হাতে যখন এই ক্ষতটা হয় এলসা আমাকে চিঠিতে জানিয়েছিলো।

এলসা? বেটারটনের চোখদুটো কৃত্রিম পাথরের চোখের মতো স্থির হয়ে গেলো, এলসা? এলসার কথা কী বলছিলেন?

পুলিশ অফিসার এগিয়ে এসে বললেন, আপনার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ–ঠান্ডা মাথায় খুনের। আপনার স্ত্রী, এলসা বেটারটনকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে আপনার বিরুদ্ধে।

.

২২.

 –আমি দুঃখিত, অলিভ, তোমাকে সাবধান করে দিয়ে সেদিন বলেছিলাম, ও থাক। অ্যারিস্টাইডসের ওখানেই ও নিরাপদে থাকতে পারবে। ওকে ধরার জন্য আমি দুনিয়া চষে বেড়িয়েছি। এলসাকে ও যা করেছে, তার ক্ষমা নেই আমার কাছে।

আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কে?

ভেবেছিলাম, তা তুমি জানো। আমি–বোরিস আন্দ্রেই পাভলভ-গ্লাইদর। এলসার পিসতুতো ভাই। আমি আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে অ্যান্ড্রু পিটার্স হয়ে গেলাম। তারপর এলো মহাযুদ্ধ। ইউরোপে ফিরে গিয়ে আমি প্রতিরক্ষার কাজে যোগ দিলাম। এলসার কথা তোমাকে আগেও বলেছি। সেই সময়ে সে একজন প্রথম শ্রেণীর বিজ্ঞানী। আসলে এলসাই শূন্যশক্তি বিভাজনের আবিষ্কত্রী। বেটারটন একজন কানাডিয়ান যুবক, নিজের গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সেই সময়ে সে ম্যানহেইমারের অধীনে কাজ করতে আসে। সে ভেবেচিন্তে এলসার সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাকে বিয়ে করলো, যাতে এলসার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এলসার গবেষণা যখন শেষ হওয়ার মুখে, বেটারটন উপলব্ধি করলো–এই শুন্যশক্তি বিভাজন, কী যুগান্তকারী আবিষ্কার হতে চলেছে। সে এলসাকে বিষ খাওয়ালো।

-ওঃ। না, না।

-হ্যাঁ, তখন কারো কোনো সন্দেহ হয়নি। কাজের মধ্যে ডুবে রইলো সে। নতুন উদ্দীপনায় কাজ করে কিছুদিনের মধ্যে সে শূন্যশক্তি বিভাজনকে তার নিজের আবিষ্কার বলে ঘোষণা করলো। সে যা চেয়েছিলো তাই হলো। খ্যাতি, যশ এবং প্রথমশ্রেণীর বিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃতি পেলো।

যুদ্ধ শেষ হবার পরেও বেশ কিছুদিন আমাকে ইউরোপে থাকতে হয়েছিলো। মৃত্যুর আগে লেখা এলসার একটা চিঠি পেয়ে আমি ভীষণ চঞ্চল হয়ে উঠলাম। যে রোগে সে ভুগছিলো এবং যাতে সে মারা গেল দুটোই আমার কাছে কেমন যেন রহস্যজনক বলে মনে হলো। শেষ পর্যন্ত যখন আমেরিকায় ফিরলাম, এ নিয়ে নানারকম অনুসন্ধান শুরু করলাম আমি। যা আমি খুঁজছিলাম, সেটা পেয়ে গেলাম। বেটারটন দেখলো, হত্যার অপরাধে ধরা পড়ার এবং শাস্তি এড়াবার চমৎকার পথ খোলা রয়েছে তাই অ্যারিস্টাইডসের শর্ত মেনে নিয়ে সে ওখানে চলে গেলো। তার নিজের একমাত্র দাবি ছিলো,–অস্ত্রোপচার করে তার মুখের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে দিতে হবে। আসলে সে দেখলো, এক বন্দীশালা এড়িয়ে সে অন্য এক ভয়ঙ্কর বন্দীশালায় এসে পড়েছে। আরও বিপদ–সে দেখলো, সে এদের চাহিদা মতো নতুন কিছু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করতে পারছে না–এ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। নতুন আবিষ্কার করা তার পক্ষে সম্ভব ছিলো না–কারণ সে কোনোদিনই বৈজ্ঞানিক প্রতিভার অধিকারী ছিলো না।

-আর-আপনি ওকে অনুসরণ করলেন?

-হা কাগজের পাতায় পাতায় যখন কৃতী বিজ্ঞানী টমাস বেটারটনের নিরুদ্দেশ নিয়ে তোলপাড় চলছে, আমি ইংল্যান্ডে এসে আবিষ্কার করলাম স্পীডার নামে এক ভদ্রমহিলা, বেটারটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। মোটামুটি খোঁজখবর করে আমি ভদ্রমহিলার সাথে আলাপ জমালাম। ভান করলাম, যেন আমি অতি বড় বামপন্থী চিন্তাধারার সমর্থক। প্রথম থেকেই আমার ধারণা ছিলো বেটারটন নিশ্চয়ই কোনো কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে তাই কমিউনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গীর সমর্থক সেজেছিলাম। কারণ আমি জানতাম–আর কেউ না পারুক, সমস্ত ঝুঁকি নিয়েও আমাকে যে তার কাছে পৌঁছতেই হবে।.এলসা একজন প্রথম শ্রেণীর বিজ্ঞানী ছিলো, কী সুন্দর শান্ত নম্র মেয়ে। সেই শান্ত মেয়েটা যাকে ভালোবেসেছিলো, যাকে বিশ্বাস করেছিলো–সেই তাকে খুন করলো, তার সর্বস্ব অপহরণ করে তাকে নিঃস্ব করে দিলো। যদি প্রয়োজন হয়, নিজের হাতে বেটারটনকে খুন করতেও একটুকু হাত কাঁপবে না আমার।

এবার আমি সব বুঝতে পারছি।

পিটার্স বললো, ইংল্যান্ডে পৌঁছে আমি তোমাকে চিঠি লিখে সবকিছু জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো উত্তর দাওনি তুমি। ধরে নিয়েছিলাম, তুমি আমার কথা বিশ্বাস করোনি। তারপরেই আমি গোয়েন্দা দপ্তরে যাই। সেখানে নিজেকে পোল্যান্ডের গোয়েন্দা দপ্তরের একজন অফিসার বলে পরিচয় দিই। যাই হোক শেষ পর্যন্ত জেসপের সহায়তায় একসঙ্গে কাজে লেগে গেলাম। আজ সকালে আমার অভিযান শেষ হয়েছে। বেটারটনকে আমেরিকায় পাঠানো হবে, সেখানেই তার বিচার হবে। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে সে উদাস চোখে দূরে সমুদ্র দেখলো। অস্থির হয়ে সে বললো, সবচেয়ে বিশ্রী ব্যাপার হলো–হঠাৎ এর মধ্যে তুমি এসে পড়লে। আমি তোমাকে দেখলাম। মিথ্যা বলবো না-ভালোবেসেও ফেললাম। সবচেয়ে দুঃখ আমার এটাই, অলিভ। বিশ্বাস করো, অবস্থাটা এমন দাঁড়ালো যে, তোমাকে ভালোবেসেছি যে আমি সেই আমিই তোমার স্বামীকে বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসানোর জন্য প্রধান দায়ভাগী হলাম। এ অবস্থা থেকে মুক্তির কোনো উপায় আমাদের নেই, অলিভ। উঠে দাঁড়ালো পিটার্স। যাক সম্পূর্ণ ঘটনা আমি তোমাকে নিজের মুখে বলতে চেয়েছিলাম। বলা শেষ, এবার আমি বিদায় নেবো।

একটু দাঁড়াও। ঘুরে দাঁড়ালো পিটার্স। আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে, যা তুমি জানো না। আমি-বেটারটনের স্ত্রী নই। বেটারটনের স্ত্রী অলিভ, ক্যাসাব্লাঙ্কার প্লেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। জেসপ আমাকে অলিভের ছদ্মবেশ নিয়ে এই অভিযানে আসতে অনুরোধ করেন

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো পিটার্স। তুমি অলিভ বেটারটন নও?

-না।

–হা ঈশ্বর! সে ধপ করে হিলারীর পাশে বসে পড়লো। অলিভ, আমার অলিভ।

–আমাকে অলিভ বলে ডেকো না। আমি হিলারী ক্র্যাভেন। হিলারী? উঁ…এ নামটায় অভ্যস্ত হতে আমার বেশ সময় লাগবে। হিলারীর কাঁধে একটা হাত রাখলো পিটার্স।

–চত্বরের ও প্রান্তে জেসপ, নানারকম জটিলতা নিয়ে লেবল্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। কথার মাঝে হঠাৎ তিনি থেমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হা কী বলছিলেন যেন?

আমি বলছিলাম–অ্যারিস্টাইডসের মতো একটা জানোয়ারের বিরুদ্ধে আমরা বোধহয় বেশিদূর এগোতে পারবো না।

না-না, অ্যারিস্টাইডসরা চিরকালই জয়ী হয়। কিন্তু ওর প্রচুর টাকা লোকসান হয়ে গেলো, এ শোক ও ভুলতে পারবে না। ওর চোখ মুখ দেখে মনে হলো ও মৃত্যুকে বেশিদিন ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ওপরওয়ালাই ওকে শীঘ্র শাস্তি দেবেন।

-আপনি এমন হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠছেন কেন বলুন তো?

-ওই দেখো–না, ওই দুটি। আমি কিনা হিলারী ক্র্যাভেনকে পাঠালাম অজানা মৃত্যুর ঠিকানায়, কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত ওর যাত্রারও সেই একই পরিণতি হলো। হাঃ হাঃ!

বিভ্রান্ত হয়ে একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে লেবল্যাঙ্ক হেসে ফেললো। ও আচ্ছা আপনাদের শেক্সপীয়রের সেই কথা!

তোমরা ফরাসিরা বাপু বড়ো বেশি পড়াশোনা করো। জেসপ তার হাসির সঙ্গে গলা মেলালেন।