৪. অশুভ নিস্তব্ধতা

রোলোর অফিসে অশুভ নিস্তব্ধতা। রোলোর পিছনে শেলি এবং বুচ দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে। রোলোই প্রথম কথা বলল–মেয়েটা তাহলে এল না। তার মানে জো-ই মেয়েটাকে এখানে ঢুকিয়েছিল।

–হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হচ্ছে।

–ঐ মেয়েটা আমাদের অনেক কিছু জানতে পেরেছে। ওকে খুঁজে বার করতেই হবে। তাছাড়া ডাক্তারের ব্যাপারটাও আমাকে চিন্তায় ফেলেছে।

শেলিকে খুব করুণ দেখাচ্ছে। জীবনে অনেক বাজে কাজ করলেও, হত্যার মত ব্যাপারে তাকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছে।

–তোমার আবার কি হল? মনে হচ্ছে কিছু লুকোচ্ছো। ঠিক আছে কতক্ষণ চেপে থাকবে। চব্বিশ ঘণ্টা হয়ে গেল ডাক্তারের টিকির দেখা নেই। গিলোরী কেমন করে জানল ডাক্তার মৃত। কেমন করে জানল গিলোরী? রোলো চেঁচালে শেলি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, থামাও এসব। ঐ বুড়োটাকে নিয়ে রঙ্গ করার সময় আমার নেই।

ইতিমধ্যে বুচ বেরিয়ে গিয়ে মার্শকে নিয়ে ফিরে এল।

–হেডার বলে মেয়েটা কে? কাজ দেবার আগে তুমি ওর খোঁজ নাওনি?

না, স্যার। আমি–আমি ভাবতে পারছি না আমিনা–আমার কোন দোষ নেই। ফ্রেসবীর দোষ। ফ্রেসবী এর আগেও তো আমাদের অনেক মেয়ে পাঠিয়েছে।

রোলো বুচের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে ছুঁচোটার একটু দাওয়াই লাগবে।

–আমার গায়ে হাত দেবে না।

বুচ শয়তানের মত তার দিকে এগোতে লাগল। মার্শ লাফ মেরে দরজা দিয়ে পালাতে গেল। কিন্তু বুচ তার চুলের মুঠি ধরে মাথাটা নোয়াতে নোয়াতে চোয়ালে এক ঘুষি মারল।

রোলো বলল–এসব কি হচ্ছে? আমি একটু শিক্ষা দিতে বলেছি।

 বুচ হিপ পকেট থেকে একটা ৩৮ পুলিশ স্পেশাল বার করে তার বাঁট দিয়ে কাঁধে মারতে মারতে ঘরময় ঘোরাতে লাগল। মার্শ আর্তনাদ করতে লাগল। শেলি এই দৃশ্য সহ্য করতে পারছে না। মনে মনে ভাবল এই বুচের মত জাতখুনে লোকটা যদি জানতে পারে সে তার সঙ্গে ডাবলক্রস করছে, তার পরিণাম কি হবে?

থাম! রোলোর চীৎকারে বুচ থমকাল। পিস্তলের বাঁট দিয়ে মার্শের গালে আঘাত করে ঠেলে ফেলে দিল তাকে। ঘাড়ে কালসিটের দাগ নিয়ে মেঝেতে শুয়ে সে কাতরাতে লাগল।

–পুলিশ! টেবিলের লাল আলো জ্বলে উঠেছে। ওকে তাড়াতাড়ি এখান থেকে হঠাও।

বুচ মার্শকে টানতে টানতে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল।

রোলো শেলিকে বলল, চলে যাও। তোমার যে কি ব্যাপার ভাগবানই জানেন।

বছর খানেক আগে ক্লাবে একবার পুলিস এসেছিল, আজ আবার। এই পুলিস আসার পেছনে কি মেয়েটার হাত আছে! ওপরের ঘরে আবার ওয়েডম্যানকে তালাবন্ধ রাখা আছে। রোলো তাড়াতাড়ি খাতাপত্তর খুলে বসল।

দরজায় টোকা পড়াতে রোলো বলল–ভিতরে আসুন।

লোকটি ঢুকে বলল, আমি ডিটেকটিভ সার্জেন্ট অ্যাডামস, মিঃ রোলো।

লোকটাকে দেখতে পুলিশের মত না হলেও খুব একটা নিরাপদও নয়।

বসুন। চুরুট খান।

ধন্যবাদ। পুলিসের কাজে বেশী পয়সা নেই, ওসব চলে না। নাইট ক্লাবওয়ালাদের অনেক পয়সা।

আপনি কি নাইট ক্লাবের লাভের অলোচনা করতে এসেছেন?

বাঁ, আপনি আশা করি ডাঃ হার্বাট মার্টিনকে চেনেন?

–হ্যাঁ।

জলপুলিশ কয়েক ঘন্টা আগে জল থেকে তার মৃত দেহ উদ্ধার করেছে।

রোলো ভাবল ডাক্তার তো আত্মহত্যা করার লোক নয়, তাহলে কি হত্যা? এর ফলে পুলিশ তার সবকিছু পরীক্ষা করার সুযোগ পাবে।

রোলো বলল–আমি দুঃখিত, মিঃ অ্যাডামস।

সার্জেন্ট লক্ষ্য করল রোলো সত্যিই বিস্মিত। সে ভেবেছিল এর পেছনে বুঝি রোলোরই হাত আছে।কখন তার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে আপনার?

–আমার সঙ্গে দেখা করে ঠিক এগারোটার পরেই চলে গিয়েছিল।

–কি জন্য এসেছিল?

–খুব আড্ডাবাজ ছিল তো তাই। তার জন্যে আমার খুব খারাপ লাগছে।

–তার মনে কিছু ছিল বলে মনে হয়?

রোলোর মনে হল পুলিস এটাকে আত্মহত্যা বলে সন্দেহ করছে। বলল-হ্যাঁ। টাকাকড়ি নিয়ে খুব টানাটানি চলছিল। আমার কাছে ধার চেয়েছিল, আমি দিতে পারিনি। জানতাম যদি ও ডুবতে যাচ্ছে, তাহলে কি

আমি তো বলিনি ও আত্মহত্যা করেছে।

–তাহলে কি?

–হয় দুর্ঘটনাবশতঃ নদীতে পড়ে গেছে। নয় কেউ ঠেলে ফেলে দিয়েছে কিংবা আত্মহত্যা করেছে। যে কোন একটা কারণে তার মৃত্যু হতে পারে।

হত্যা, আঘাতের চিহ্ন আছে?

–ওসবের কোন প্রয়োজন নেই। বেঁটে মানুষ, এগানের মত যে কেউ একটা ধাক্কা মেরে ফেলে, দিতে পারে।

–এগানের নাম করলেন কেন?

উদাহরণ দিলাম। তা এগান কোথায়?

 জানি না, আজ সন্ধ্যেয় ক্লাবে আসেনি।

মজার ব্যপার মনে হল, আসবার সময় দেখলাম।

 ভুল করছেন বোধহয়।

–তাহলে ডাক্তারের ব্যাপারে আমাকে কোন রকম সাহায্য করতে পারবেন না?

না, আমি শুধু ওর টাকার অভাবটাই জানতাম।

–আচ্ছা, এমন তো হতে পারে, ডাক্তার যেরকম অনুসন্ধিৎসু লোক ছিলেন, তাতে কারোর ব্যাপারে কিছু জেনে ফেলেছিলেন। এগান সম্বন্ধে কিছু যদি জানতে পেরে থাকেন।

–আপনি বার বার এগান এগান করছেন কেন?

–ছোকরাটাকে আমি একবার হাতের মুঠোয় পেতে চাই।

রোলো ভাবল, ডাক্তার কি তাহলে এগান সম্বন্ধে কিছু জানতে পেরেছিল? শেলির অদ্ভুত ব্যবহারের কথা মনে পড়ছে। হাতের মুঠি শক্ত হয়ে এল।

আপনার কিছু মনে পড়ছে কি মিঃ রোলো?

না। দুঃখিত, আর কিছু সাহায্য করতে পারবো না।

–যাক আবার দেখা হবে। অনেক কিছু জানতে বাকী। চলি।

হঠাৎ দরজা খুলে ঢুকলেন ক্রেস্টার ওয়েডম্যান। ওয়েডম্যান উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘরে ঘুরপাক খেতে লাগলেন। এখানে আমার ভাল লাগছে না, বাড়ি যাব।

–আপনাকে যেন চেনা চেনা লাগছে। অ্যাডমস প্রশ্ন করল।

ওয়েডম্যান এ্যাডমসকে খেয়াল না করে উত্তেজিত হয়ে রোলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, আমার ভাইকে শীঘ্র খুঁজে বের কর। সে কোথায়?

ওয়েডম্যানকে কাঁধ চাপড়িয়ে শান্ত করার চেষ্টা করল। বসুন, অ্যাডমস চলে গেলে আমরা এ ব্যাপারে কথা বলব।

অ্যাডমস-এর মনে সন্দেহ দানা বাঁধল বেঁটে ওয়েডম্যানকে দেখে, ভাবল কিছু একটা ব্যাপার আছে।উনি কে?

রোলো অ্যাডমসকে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলল, ও আমার বন্ধু নিকোলাস। জন নিকোলাস। মাথার গণ্ডগোল আছে। ও মনে করে ওর ভাই হারিয়ে গেছে, কিন্তু আসলে কোনদিনই ওর কোন ভাই ছিল না।

অ্যাডমসকে বিদায় করে বুচের সঙ্গে মুখোমুখি হল রোলো–ওয়েডম্যানকে কে ছাড়ল? পুলিশটা ওকে দেখল।

-ওটা মার্শের কাজ। বদমাইসী করেছে। ওটাকে আমি খুন করব।

এদিকে রোলো ঘরে ফিরে আসতেই ওয়েডম্যান বলল কালকের মধ্যে আমার করনেলিয়াসকে খুঁজে বার না করতে পারলে আমি পুলিশের কাছে যাব।

–পুলিশ আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারবেনা। বরং আমাকে দশহাজার পাউন্ডের চেক লিখে দিন। কালই যদি ভাইকে ফিরে পেতে চান, ওকে আনবার জন্য ঐ টাকাটা আপনাকে খরচ করতে হবে।

–আমার কাছে টাকা নেই। করনেলিয়াসকে আমি সব টাকা দিয়ে দিয়েছি, সেই দেবে।

টাকা নেই মানে, কি ব্যাপার?

–তিন মিলিয়ন পাউন্ডের বন্ডে টাকাটা আমি ওর কোমরে জড়ান বেল্টের ভেতর রেখেছি। টাকাটা ওর কাছেই নিরাপদে থাকবে তাই।

.

দূরাগত মেঘের গুরুগুরু গর্জন। শহরের মাথায় কালো জমাট মেঘ। বৃষ্টি হয়ে থেমে গেছে কিছু আগে।

ট্যাক্সি থেকে ভারী ট্রাঙ্কটা নামাতে ফ্রেসবীরও কষ্ট হচ্ছিল। পেছন থেকে সুশান বলল, আমি ভেতরে আসতে চাই না।

ফ্রেসবী তিক্ত স্বরে বলল, তোমাকে আমার কথামতো কাজ করতে হবে, নইলে আমি এসব ব্যাপার থেকে সরে যাবো।

ফ্রেসবীর কথা তার কানে ঢুকল না। সে ভাবতে লাগল যদি কেউ তাদের ঐ গলিতে ট্রাঙ্ক সমেত দেখে ফেলে?কান খাড়া করে সে শোনবার চেষ্টা করল কিন্তু নিজের হৃদপিণ্ডের ধুকপুকুনি, ফ্রেবীর গভীর শ্বাসের শব্দ আর দূরাগত গাড়ির আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শুনতে পেল না।

একটা একঘেয়ে বিরক্তির সুরে ফ্রেসবী বলে চলল, আমি এ কাজ আপনা থেকে করতে পারব না। তোমাকে সাহায্য করতে হবে। পয়সার ঝনঝন্ আওয়াজ পেয়ে সুশান বুঝল ফ্রেসবী পকেটে কিছু খুঁজছে।–হ্যাঁ পেয়েছে। এক মুহূর্ত পরেই চাবি ঢোকানোর আওয়াজ সুশান শুনতে পেল।

দরজা খুলে গলিটায় এক ফালি আলো এসে পড়ল।

 ফিসফিস্ করে সুশান বলল, আমরা কোথায় এসেছি?

–এটা টেড (Ted) হুইটেবীর কারখানা।তাড়াতাড়ি এস। কেউ দেখে ফেলবে।

ট্রাঙ্ক সমেত ধরা পড়ার ভয়ে সুশান ফ্রেসবীর সঙ্গে হাত লাগিয়ে জরাজীর্ণ প্যাসেজ ধরে এগিয়ে চলল। হঠাৎ মেঘের গর্জনের আওয়াজে সুশান দেওয়ালে জড়সড় হয়ে দাঁড়াল। দেওয়ালে লাগানো কাগজের খখস্ আওয়াজে সুশান কাঠ হয়ে গেল।

ফ্রেসবী তাকে ঠেলা মেরে বলল, চলো আমরা মালটাকে গুদামে নিয়ে যাই।

কোন গুদাম ঘরে আমি যাচ্ছি না। আমার ভয় করছে। আমি অনেক করেছি, আর নয়।

কচি খুকী সেজো না, এতটা এগিয়ে ফিরে যাওয়া যায়?কাজ যখন একলাকরবে ভেবেছিলে তখন তো খুব সাহস দেখিয়েছিলে। এখন সময় নষ্ট না করে এগিয়ে এসে দেখি।

সুশান ভাবল তার দেখা দুঃস্বপ্নগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ। ফ্রেসবী তার হাত ধরে ঝাকুনী দিল–ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে কি হবে? তোমার মতই আমারও কাজটা করতে ভাল লাগছে না।

সুশান হাত ছাড়িয়ে পালাবার চেষ্টা করল। কিন্তু ফ্রেবীর অন্য হাতটা তাকে আটকে দিল। ফ্রেসবীর জামার দুর্গন্ধ, মুখে বিয়ারের গন্ধ তার নাকে এল।

নিজের ভয়কে সংযত করে, ছাড়াবার চেষ্টা করতে করতে সুশান বলল, আমাকে ছেড়ে দাও বলছি। আমার সঙ্গে ওরকম করলে–যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে চিঠিটা রয়েছে।

বিড়বিড় করতে করতে সেবী ছেড়ে দিল–বেশ তাই যদি মনে কর তো যাও, ট্রাকটা ফেরত নিয়ে গিয়ে ঘুমোওগে। দাঁড়াও একটা ট্যাক্সি ডাকি।

 ঘরের মধ্যে ট্রাঙ্কটা ফিরিয়ে নিয়ে যাবার চিন্তায় ভয়ে সিটকে গেল সুশান-নানা ওটা আমার ঘরে রাখতে পারব না।

–এসো, পথে এসো। তোমাকে দেখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এখানে কি ট্রাঙ্কটা নিয়ে ছেলেখেলা করতে এসেছি? খালি বকর বকর।

সুশানের হাতটা ট্রাঙ্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে নড়ে উঠল। ফ্রেসবী আগে আগে নামতে লাগল, সুশান পেছনে ধরে রইল যাতে ট্র্যাঙ্কটা গড়িয়ে না পড়ে যায়।

সিঁড়ির নীচে নামার পর ফ্রেসবী জিজ্ঞেস করল, সুইচটা খুঁজে পাচ্ছিনা। দেশলাই আছে তোমার কাছে?

কাঁপা গলায় সুশান বলল–নেই। ফ্রেসবীর সঙ্গে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে তার ভাল লাগছিল না। তার ভয় হচ্ছিল ফ্রেসবীহয়তো অন্ধকারের মধ্যে তাকে চেপে ধরবে। আবার বুঝল মাথা ঠিক রাখলে ফল আরো খারাপ হবে। হঠাৎ সে একটা পায়ের শব্দ এগিয়ে আসার শব্দ শুনতে পেয়ে সুইচটার আশায় এগিয়ে যেতে তার সঙ্গে কিছু একটা ছোঁয়াছুয়ি হয়ে গেল। সুশান থেমে গেল।

তুমি ফ্রেসবী নাকি? তার হাত দুটো শক্ত মুঠো হয়ে গেল।

ঘরের অন্যপাশ থেকে ফ্রেসবী জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার?

অনিচ্ছাসত্ত্বেও সুশান অন্ধকারে হাত বাড়াতে সে কোন পুরুষের মোটা জামার হাতার স্পর্শ পেল। সে জানত এ ফ্রেসবী নয়। কারণ ফ্রেসবী অন্যপ্রান্তে সুইচ খুঁজতে হাতড়িয়ে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ মেঘ গর্জনের আওয়াজ সুশানের আর্ত চীৎকারকে ডুবিয়ে দিল।

–কি ঝামেলা হল আবার?

দুহাতে মুখ ঢেকে সুশান বলল–এখানে কেউ আছে?

–মাথা ঠিক রাখ। এখানে সব ডামি। সেই মুহূর্তে সুইচটায় হাত ঠেকতেই ঘরটা আলোয় ভরে উঠল।

সুশান দেখল সে এক শয়তানের সামনে দাঁড়িয়ে আর সে তার জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে যেন তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে এল। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না মূর্তিটা মোমের তৈরী।

তার একটা হাত ধরে ফ্রেসবী বলল, উত্তেজিত হয়ো না, এগুলো মোমের প্রতিকৃতি মাত্র।

ভয়ার্ত চোখে সুশান বিশাল ঘরটা দেখতে দেখতে ফ্রেসবীর গা ঘেঁষে এল। সারা ঘরটা মোমের মূর্তিতে ভরা। কোনটা বসে, কোন মূর্তিটা দাঁড়িয়ে। সবগুলোই ঘৃণ্য, শয়তান আর ভয়ঙ্কর দেখতে।

ফ্রেসবী বলল, তোমাকে আগে থাকতে সাবধান করে দেওয়া উচিত ছিল আমার। হুইটেবী এলিফ্যান্ট আর ক্যাসেলএর ভায়ের জাদুঘরে মূর্তি সাপ্লাই করে। বেশ সুন্দর দেখতো, তাইনা! এদের সঙ্গে সারারাত কাটাতে তোমার কেমন লাগবে? আমি তোমায় বলেছিলাম না, আমি বেশ চালাকি করে এই মূর্তিগুলোর ভীড়ে মড়াটাকে ঢুকিয়ে দোব, আর কেউ খোঁজই পাবে না।

সুশানের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। নিশ্চল মূর্তিগুলোর দিকে তাকাবার সাহস তার হচ্ছিল না। যদি সে ভয়ে চীৎকার করে ফেলে ফ্রেসবী তাহলে তাকে আক্রমণ করে বসবে। আমাকে সাহসী হতেই হবে। আমি মূর্তিগুলোর দিকে তাকাবো না।

ইটবীর কাজকর্মের এই গা ছমছমে জায়গায় নিজের ইচ্ছেয় থাকতে চাই না।

ফ্রেসবীর ওয়েস্ট কোটটার দিকে দৃষ্টিটা স্থির রেখে সুশান প্রশ্ন করল, আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন?

–আমরা এখানে মড়াটার মুখে-হাতে মোম লাগাব। তাহলে ঐ মড়াটাও মোমের মূর্তি হয়ে যাবে। আমি বাজী রেখে বলতে পারি, টেড নিজেও নিজের তৈরী মূর্তির ভীড়ে মড়াটাকে খুঁজে পাবে না।

নিরুত্তেজ হয়ে সুশান বলল, মোম লাগাতে হবে?

–হ্যাঁ, খুব একটা কঠিন কাজ কিছু নয়, খালি মোম গলিয়ে মুখের ওপর ঢেলে দিলেই ওটা মুখোশের মত হয়ে যাবে। তবে তোমার সাহায্য ছাড়া একলার পক্ষে কাজটা কঠিন হয়ে যাবে।

-না। চীৎকার করে সুশান সিঁড়ির দিকে পেছোতে থাকল।না, আমি এসব সহ্য করতে পারছি না।

ফ্রেসবী হিংস্রভাবে তার দিকে এগিয়ে এলো, গালাগালি করতে করতে বলল–ছেলেমানুষী কোর না। স্থির হও।

সুশান সম্পূর্ণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সিঁড়ির দিকে ছুটল।

ফ্রেসবী তাকে ধরবার জন্যে ঝাঁপ দিল। থাম। দাঁড়াও। যেওনা। ফিরে এস।

অন্ধের মত সিঁড়ি বেয়ে সুশান প্যাসেজ বেয়ে এসে দরজা খুলে ছুটতে লাগল। ফ্রেসবী সিঁড়ির মাথায়। যথেষ্ট দেরী হয়ে গেছে। সুশান তার নাগালের বাইরে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখল অন্ধের মত সুশান ছুটে চলেছে।

.

এই ঘটনার কয়েক মাইল দূরে গ্রেসভেনর স্ট্রিট থেকে একটা সবুজ রং-এর প্যাকার্ড গাড়ি মার্টিনের ছোট্ট বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াল।

রোলো গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভার লংটমকে বলল, বেশী দেরী হবে না। যদি কোন পুলিশ নজরে আসে তাহলে বেল বাজাবে।

একগোছা চাবি নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে দরজাটা খুলে গেল। ছোট্ট ঘরটায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসবার ঘরে দিয়ে ঢুকল রোলো। সে যার খোঁজ করছিল কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে গেল। কোন এক সময় ডাক্তারের কাছ থেকে সে জানতে পেরেছিল যে সে ডায়েরী লেখে। আজ সে কথা মনে আসতেই ডায়েরীর খোঁজে এখানে এলো রোলো। যে মুহূর্তে সেটা পেয়ে গেল, দরজায় তালা লাগিয়ে আবার গাড়িটাতে এসে বসল। টমকে ফালতু গাড়িটা নিয়ে একটু ঘুরতে বলে ডায়েরীর পাতা ওল্টাতে লাগল। হাতের লেখা সুন্দর, সাজান।

 সুন্দর হস্তাক্ষরে মার্টিন লিখছে, আজ রাতেই আমাকে শেলির সঙ্গে দেখা করতে যেতে হবে। নইলে আর সুযোগ পাবোনা। ওয়েডম্যানের বিশাল সম্পত্তির একটা অংশ সে পাবে। কিন্তু রোলো যদি জানতে পারে বুচ আর শেলি প্রেমিক-প্রেমিকা তাহলে আমার কপালে কানাকড়িও জুটবে না।.. ফলে আমার মুখ বন্ধ রাখার জন্যে বুচকে কিছু খসাতেই হবে। মিটিং শেষে ওদের কাছে গিয়ে। চমকিয়ে দেব।

রোলোর কাছে পুরো ব্যাপারটা স্বচ্ছ হয়ে যেতে লাগল। বুচ আর শেলি প্রেমিক-প্রেমিকা এটা তার বোঝা উচিত ছিল।

নিজের ওপর খানিকটা রাগ নিয়েই ভাবতে শুরু করল ডাক্তার তাহলে শেলির বাড়ি গিয়েছিল, ওখানেবুচ তাকে খুন করেছে। শেলির অস্বাভাবিক আচরণের ছবিটা তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। দুটোকেই মজা দেখাতে হবে। তারপরেই ওয়েডম্যানের কথা মনে পড়ল। বেয়ারার বন্ডে তিন মিলিয়ন ডলার–অবিশ্বাস্য। এটা পেতে হলে তাকে প্রথমেই মড়াটাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং তার জন্যে বুচকেই তার প্রথম প্রয়োজন। প্রতিশোধের চিন্তাটা অবচেতন মনেই থাক।

মেয়েটাকে খুঁজে বার করাই তার প্রথম কাজ। বুচ রাস্তায় রাস্তায় মেয়েটার খোঁজ করছে, কিন্তু লন্ডনের মতো বিশাল শহরে হয়তো তাকে পাওয়াই যাবে না। কিংবা অনেক সময় লাগবে।

লংটমকে নির্দেশ দিল রোলো-গিলোরীর ওখানে চলো।

মিনিট কয়েক পরেই গাড়িটা এথেন কোর্টে এসে পৌঁছল।

লংটমকে অপেক্ষা করতে বলে সে বাড়ির ভেতর লিফটের দিকে এগিয়ে গেল। লিফটে চড়ল। শব্দ করে লিটটি তাকে পাঁচতলায় পৌঁছে দিল।

রোলো এটা ভেবে খুশী হলো যে সে ডায়েরীটার খোঁজ পেল বলে পরিকল্পনা মাফিক জরুরী কিছু কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছে, তা না হলে হয়তো হঠকারিতায় ভয়ানক কিছু একটা করে বসত। বুচ আর শেলিকে শাস্তি দিতে হলে তাকে ঠিক করে রাখতে হবে যাতে পুলিশ এর মধ্যে নাক গলাবার সুযোগ না পায়।

অধৈর্যের মতো বোম টিপল রোলো। দরজা খুলে গেল। গিলোরী দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল আপনি আমার এখানে কখনও আসেননি। কোন বিপদ

রোলো বড় ঘরটার দিকে এগিয়ে গেল। একটা সিগার ধরিয়ে চিন্তাগ্রস্তভাবে গিলোরীকে বলল, আমাদের করনেলিয়াসের মড়াটাকে খুঁজে বের করতে হবে।

গিলোরী ঘাড় বেঁকিয়ে বলল-কেমন ভাবে তা সম্ভব?

নিগ্রোটার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রোলো বলল–আমি বিশ্বাস করি একাজটা তুমিই পারবে। এত দিন তুমি বলে বেরিয়েছে আমার কাছে তুমি ঋণী, এখন আমি তোমায় বলছি মড়াটা খুঁজে তুমি আমার ঋণ শোধ কর। এ কারণেই আমার তোমার কাছে ছুটে আসা।

গিলোরী পায়চারী করতে করতে বলল–মেয়েটা জানে মড়াটা কোথায় আছে। ছোট কাঠের পুতুলের মাথায় আঠা লাগানো পুতিটা টোকা মারতে মারতে বলল, এটা আমাদের তার কাছে নিয়ে যেতে পারে।

-বুচ ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না, তুমি তাড়াতাড়ি মড়াটা খুঁজে পাবার একটা উপায় বলে দাও।

 গিলোরী কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলল, মেয়েটা কোথায় লুকিয়ে আছে আমাকে খুঁজে দেখতে হবে। এর জন্যে আমার ঘণ্টাখানেক বা তার কিছু বেশী সময় লাগতে পারে। আমি হাইড পার্কে ঢোকবার গেটের মুখে তার সঙ্গে আপনার দেখা হওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। ওখানে অপেক্ষা। করুন। একটু সময় লাগতে পারে কিন্তু ওখানে সে আসবেই।

রোলো তার মুখ বিকৃত করে বলল, কি, বলতে চাও কি তুমি?

গিলোরী পুতুলটাকে মেঝের ওপর দাঁড় করাল।কার্পেটের একটা চৌকো ঘরকে দেখিয়ে বলল, আসুন আমরা কল্পনা করি এটা হাইড পার্ক। যে মুহূর্তে পুতুলটা চৌকো ঘরটায় পৌঁছাবে সেই মুহূর্তে মেয়েটা হাইড পার্কে পৌঁছাবে। তাকে দেখলে আপনি কোন কথা বলে অনুসরণ করবেন। দেখবেন সেও যেন আপনাকে দেখতে না পায়, তাহলেই দেখবেন আপনি করনেলিয়াসের মৃতদেহের কাছে পৌঁছে গেছেন। বুঝেছেন?

রোলো অসহায়ভাবে পুতুলটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, গিলোরী দেখো ব্যাপারটা খুব জরুরী। আমাদের সময় নষ্ট করার সময় নেই। তুমি যা বলবে আমি তাই করব।

অন্যমনস্কভাবে গিলোরী বলল–যদি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার মত ধৈর্য আপনার থাকে তবেই তার দেখা পেতে পারেন।

রোলো সম্মতি জানিয়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে গাড়িতে এসে বসে থমকিয়ে কিছু শোনার চেষ্টা করল। ওপর তলা থেকে ঢাক বাজানোর শব্দ ভেসে আসছে। শব্দটা শুনতে শুনতে স্পষ্ট হয়ে উঠল। বুম…বুম…যেন বিশাল কোন জলরাশি তার দিকে গড়িয়ে আসছে।

অস্বস্তিকর কণ্ঠে লংটম রোলোকে প্রশ্ন করল, আপনি কি কিছু শুনতে পাচ্ছেন? শব্দটা কিসের? ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।

রোলো বলল–কিছুই নয়। গিলোরী তার ঢাক পেটাচ্ছে। তারপর খানিকটা সন্দেহভরা মনে মুখটায় হাতটা বুলিয়ে নিয়ে বলল, আমরা এখন হাইড পার্কে যাব। একটা ছুকরী মেয়ের সঙ্গে দেখা হবে সেখানে।

.

ডিটেকটিভ সার্জেন্ট অ্যাডমস বাসের কন্ডাক্টরকে শুভরাত্রি জানিয়ে নেমে ১৫৫এ, ফুলহাম রোডের বাড়ির দরজায় বেল টিপতে টিপতে একটু থমকাল। দেখল এখন প্রায় মধ্যরাত্রি। ভাইনস্ট্রিট পুলিশ স্টেশনের ডেস্ক সার্জেন্ট তাকে সেডরিক স্মাইথের চিরকূট দিলেও তার মেজাজ কিন্তু খুশী হয়নি। কিন্তু সে সেডরিকের বাড়ির কয়েকশ গজ দূরেই থাকে বলে দেখা করতে এসেছে।

সেডরিক দরজা খুলে তাকে হাসিমুখে স্বাগত জানিয়ে বলল, যা এসেছে তাহলে, ভেবেছিলাম আসবে না।

অ্যাডমস অধৈর্যের সঙ্গে বলল, আমি একটুও দাঁড়াতে চাই না, সারাদিনটাই দাঁড়িয়ে কাজে কাটিয়েছি। এখন শরীরটা বিশ্রাম চাইছে, বল ঝামেলাটা কি?

দরজা খুলে সেডরিক তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, আরে ভাই, ব্যাপারটা এতই গোলমেলে যে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলা যাবে না। ভেতরে এস। তুমি জান আমি সবসময় খুশী থাকার চেষ্টা করি, কিন্তু এখন আমি ভীষণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

অ্যাডমস মুখ বেঁকিয়ে বলল, বেশ চল। তোমার দুশ্চিন্তা আমার ভাল জানা আছে। বেড়ালের গায়ে মাছি বসলেও তুমি দুশ্চিন্তায় সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারোনা।

শান্তভাবে সেডরিক বলল, বেড়াল! আমি ঐ নোংরা জানোয়ারটাকে অপছন্দ করি। তাছাড়া আমার পোষা কোন বেড়াল নেই। তোমার উপদেশের আমার বিশেষ প্রয়োজন। জানি তুমি আমার পোষা কোন কর, হুইস্কি না বিয়ারলল, হুইস্কিই দাও

জেরী তার লম্বা পা ছড়াতে ছড়াতে বলল, হুইস্কিই দাও। কিন্তু ব্যাপারটা বেশী না ফুলিয়ে চট করে বল তো আসল ব্যাপারটা কি? কোন বোর্ডার কি তোমাকে পয়সা না দিয়ে পালিয়েছে?

সেডরিক ঠোঁট চেপে বলল, জেরীতুমি কি কিছুতেই আমার অবস্থাটা বুঝতে চাইবেনা? তুমি সত্যিই নিষ্ঠুর। আমি তোমায় বলছি ব্যাপারটা বেশ জটিল, তোমাদের পুলিশি আওতায় আসতে পারে।

অ্যাডমস চট করে তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, তাই নাকি কি করে বুঝলে?

আমি প্রথম থেকেই শুরু করি তাহলে, সেডরিক ধীরে ধীরে জবাব দিল। দুটো বড় গ্লাসে হুইস্কির সঙ্গে সোড়া মিশিয়ে একটা জেরীকে দিল, একটা নিজে নিল। তারপর মুখোমুখি বসে পড়ল।

জেরী আর্মচেয়ারটায় আরাম করে বসে বলল, ঠিক আছে, তাড়াহুড়োর দরকার নেই। ধীরে সুস্থে সাজিয়ে গুছিয়েই বল।

–হাসবার কিছু নেই। তিক্তস্বরে বলে হুইস্কিতে চুমুক দিয়ে সেডরিক বলল, এটা এখন আমার খাওয়া উচিত হচ্ছে কিনা জানিনা, সম্ভবতঃ সারারাত জেগে কাটাতে হবে।

হয়তো তাই হবে।নীরস ভাবে জেরীবলল, আজ জাগলে কাল তুমি ঘুমতে পারবে, আমার তা হবে না, পুলিশের কাজ বুঝতেই পারছ।

তুমি আমাকে ব্যঙ্গ করতে পারো কিন্তু আমি মিস্ হেডারের জন্যে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কোন একটা কিছু ঘটতে চলেছে, যা আমার ঠিক পছন্দ নয়।

–আবার তোমার সেই মিস্ হেডারের কথা। কেন সে কি ভদ্রলোকেরসঙ্গে মেলামেশা ছেড়ে দিয়েছে?

-না, তাকে অপরাধীসুলভ লোকজনদের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেখছি।

–অপরাধীসুলভ বলতে তুমি কি বোঝ? অ্যাডমস হাসল।

 –জো ক্রফোর্ডের মুখোমুখি হলে আমি অনেক কিছুই বুঝি।

 –জো ক্রফোর্ড? কে সে?

–আমিও সেটা জানতে চাই। সে এখানে আমাকে মিস্ হেডারের নামে একটা চিঠি দিতে এসে আমার সঙ্গে প্রচণ্ড অভদ্র ব্যবহার করেছে। না দেখলে বুঝতে পারবে না তার চোখের দৃষ্টি কি রকম! আমি কাউকে ভয় পাই না, আমাকেও সে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।

–সে চিঠি নিয়ে এসেছিল?

–তাহলে আর বলছি কি। এমনই বেপরোয়া লোক যে চিঠির মুখটা ভাল করে বন্ধও করেনি, তাই আমি চিঠিটা পড়া উচিত মনে করেছি।

–তোমার এই অভ্যাসই তোমাকে একদিন বিপদে ফেলবে।

–তা নিশ্চয়, কিন্তু খামের মুখটা খোলা ছিল বলেই পড়বার কথাটা মাথায় এলো। আমার অনেক দোষ থাকতে পারে, কিন্তু অহেতুক কৌতূহল আমার পছন্দ নয়। যতদূর মনে পড়ছে তাতে লেখা ছিল ২৪ সি, রুপার্ট কোর্টে ফ্রেসবীর এজেন্সিতে যাও। তোমাকে ঢুকিয়ে দেবে। সই ছিল জে-সি।

অ্যাডমস হঠাৎ উঠে বসে বলল, ঠিকানাটা ঠিক বলছে তো?

–নিশ্চয়। জেরীর কৌতূহল দেখে সেডরিক প্রশ্ন করল, তুমি ফ্রেসবীর এজেন্সী চেনো?

অ্যাডমস আবার ঠেস দিয়ে বসে পড়ল।

–শুনেছি। সতর্কভাবে সে বলল। মনে মনে চিন্তা করল যে, সম্প্রতি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জ্যাক ফ্রেসবীর কার্যকলাপ সম্পর্কে আগ্রহশীল হয়ে পড়েছে। ভেরা স্মল নামে ওয়েস্ট এন্ড স্টোরের এক কর্মচারিনীর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজের ব্যাপারে পুলিশ ফ্রেসবীকে সন্দেহ করছে। ভেরার নিখোঁজে ওর বাবা-মা-ইপুলিশকে ডায়েরীকরেছে। পুলিশের কাছে একটা ঝাপসা রিপোর্ট এসেছে ভেরাকে শেষ দেখা যায় ২৪ সি, রুপার্ট কোর্টে। তারপর থেকে তার আর কোন খোঁজ মেলেনি। সন্দেহজনক লোক বলে কয়েক সপ্তাহ পুলিশ তার ওপর নজর রেখেছে। ওয়েস্টএন্ডের সুসজ্জিত ফ্ল্যাট বেশ্যাদের ভাড়া দেওয়াটাই তার লাভজনক ব্যবসা। আর এর থেকে ফ্রেসবী বেশ টাকা কামাচ্ছে। ফ্রেসবী মেয়েদের কাজ খুঁজে দেয়, মানে দুনম্বরী কাজ।

বেশ তারপর? বল

সেডরিক ট্রাঙ্কটার আনা আর তা দেখে সুশান কেমন ভেঙ্গে পড়েছিল তাবলল,সেসারারাত দরজায় তালা দিয়ে বাইরে পড়েছিল। তারপর আজ সে একটা রোগা পাতলা বয়স্ক লোকের সঙ্গে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গিয়েই আবার ট্রাঙ্কটাকে টানতে টানতে নিয়ে নেমে এলো।

আমি সুশানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম, ওকে ডাকলাম কিন্তু বুঝলাম ও এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত যে আমার ডাক ও শুনতে পায়নি। উল্টে বয়স্ক লোকটা উদ্ধতভাবে আমাকে নিজের চরকায় তেল দেবার উপদেশ দিয়ে গেল। তারপর ট্রাঙ্কটা নিয়ে তারা ট্যাক্সিতে উধাও হয়ে গেল। অ্যাডমস হুইস্কিটা শেষ করে গেলাসটা রেখে প্রশ্ন করল, তুমি ঠিক দেখেছে মেয়েটা ভেঙ্গে পড়েছিল?

নিশ্চয়। ভয়ে ওর মুখ সাদা হয়ে গিয়েছিল। ও যে কোন মুহূর্তে জ্ঞান হারাতে পারত।

–তুমি কি লোকটার আরও একটু বিশদ বর্ণনা দিতে পারবে?

–হ্যাঁ। বছর পঞ্চাশের ওপর বয়স। লম্বা আর রোগা। তার লৌহধূসর রঙের ঝাটার মত গোঁফ আছে। নাক টিকালো। ঐরকম বিচ্ছিরি নোংরা বদমাইশ লোক সুন্দরী সুশানের সঙ্গে ঘুরে বেড়াবার মোটেই যোগ্য নয়।

–শুনে মনে হচ্ছে উনিই জ্যাক সেবী।

মরুক গে। তবে ফ্রেসবী খারাপ লোক বটে কিন্তু দুশ্চিন্তা করবার কোন কারণ দেখছি না।

–কিন্তু জেরী তোমাকে তো ট্রাঙ্কটার কথা এখনও বলিনি। ট্রাঙ্কটায় এমন কিছু আছে যা আমাকে ভীতিগ্রস্ত করে তুলেছে। জো বলে ছেলেটা যখন ট্রাঙ্কটা রেখে যায় তখন আমি ওটা পরীক্ষা করার চেষ্টা করে একটা অদ্ভুত গন্ধ পাই যেটা আমার বাবার শবযাত্রার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল।

আজকাল তুমি বোধহয় খুব ডিটেকটিভ গল্প পড়ছ। আমার তো মনে হয় গন্ধটা কর্পূরের গুলির।

সেডরিক মাথা নাড়িয়ে বলল, জেরী তুমি একটু সিরিয়াস হয়ে আমার কথা শোন। আমার ভাল মনে আছে গন্ধটা সেরকমই ছিল। তবে আমার ধারণা সঠিক নাও হতে পারে, আমার যেন আস্তে আস্তে মনে হচ্ছে ট্রাস্কটার মধ্যে কোন মৃতদেহ ছিল।

অ্যাডমস দাঁড়িয়ে উঠল, সেডরিক একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? তারপর চিন্তা করল। তাই কি ভেরা স্মল নিখোঁজ? পুলিশের সন্দেহ তাকে হত্যা করা হয়েছে। ফ্রেসবীই তাকে শেষবারের মতো দেখেছে। এখন ফ্রেসবীর সঙ্গে গন্ধওলা ট্রাঙ্ক? মিস্ হেডার বলে মেয়েটারই বা তার সঙ্গে কি সম্পর্ক? কি করছে তারা? ব্যাপারটা সহজ বলে মনে হচ্ছে না। কেশ জটিল।

সেডরিক অ্যাডমসকে লক্ষ্য করছিল। তার ধারণাটা যে অ্যাডমস এতক্ষণে ধরতে পেরেছে, এটা লক্ষ্য করে সে অর্থ বিজয়ী অর্ধ আশান্বিত হবার হাসি হাসল।

অ্যাডমস বলল–আমি ঠিক বুঝতে পারছি না সেডরিক। আসলে পুলিশের কাছে এত ভুল খবর আছে যে ব্যাপারটা আমাকে কেশ ভাবিয়েছে। তুমি জেনে রাখ ফ্রেসবীকে আমাদের লোক আজ বেশ কয়েক সপ্তাহ নজরে রেখেছে। আমরা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এমন এক তরুণীর খোঁজ করছি যার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে ফ্রেসবীর হাত আছে বলে পুলিশের সন্দেহ।

সেডরিক উৎসাহিত হয়ে বলল, তাহলে আমি ঠিকই বলেছিলাম। ট্র্যাঙ্কের ভেতর মৃতদেহটা পাবে বলেই আমার স্থির বিশ্বাস।

ধীরে বন্ধু ধীরে। অ্যাডমস বলল, এত তাড়াতাড়ি আমাদের কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছনো ঠিক হবেনা। ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে। আমি মি হেডারের সঙ্গে কথা বলে দেখতে চাই। ওর থেকে কোন নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে আমার আশা। কিন্তু যদি কোন কাজের না হয় তাহলে অকারণে তাকে ভয় পাওয়াতেও চাই না। এমন কিছু তথ্য চাই যাতে আমরা এগোতে পারি। এই মুহূর্তে আমাদের হাতে তেমন কোন সূত্র নেই।

সেডরিক হঠাৎ হাত তুলে বলল–ঐ শোন।

 তারা দুজনেই শুনতে পেল কারা যেন সদর দরজাটা বন্ধ করে ছুটে ওপর দিকে গেল।

সেডরিক লাফ মেরে দাঁড়িয়ে বলল–ঐ ওরা এল!

অ্যাডমসও দাঁড়িয়ে পড়েছিল।–একটু অপেক্ষা কর। এখন রাত বারোটা বেজে কুড়ি মিনিট। খুব বেশী তাড়াহুড়ো করা আমাদের উচিত হবে না। দেখ তুমি যদি ওকে কয়েকটা কথা বলবার জন্যে নীচে নামিয়ে আনতে পারো। তুমি বল তোমার কোন পুরোন বন্ধু এসেছে, ওর সঙ্গে আলাপ করতে চায়।

সেডরিক ঠোঁটের ওপর জিভ বুলিয়ে বলল, ও বড় অসামাজিক, একথা শুনলে আসবে বলে তো মনে হয় না।

–বেশ তাহলে বলো জো ক্রফোর্ডের কাছ থেকে আসছি, তবে যদি নামে।

 –ঠিক আছে, কিন্তু তুমি কি বলবে?

–সে সব তোমায় ভাবতে হবে না। যাও দেখ শুয়ে পড়ার আগে ডেকে আন।

সেডরিক ওপরে চলে গেল।

জেরী পেছনে হাত দিয়ে পায়চারী করতে লাগল। নিজেকে সে বলল, তাকে সেডরিকের ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে কেননা সেডরিককে পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না। সহজ ব্যাপারকে নাটকীয় করে গেল। হয়তো ট্র্যাঙ্কটায় সন্দেহজনক কিছু নেই, হয়তো গোঁফওলা লোকটাও ফ্রেসবী নয়। যা হোক যাতে বোকা না বনতে হয়, তার জন্যে সঠিক অনুসন্ধান করে তাকে এগোতে হবে।

পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পরই সেডরিকের পায়ের শব্দ পেল জেরী। সেডরিক একা নয়, সঙ্গে সুশান।

সুশান বুকের ধুকপুকুনি নিয়ে অ্যাডমসের দিকে তাকিয়ে ভাবল লোকটাকে বেশ নরম বলেই মনে হচ্ছে। অন্ততঃ পুলিশ থেকে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে শুনে সে যেরকম ভয় পেয়েছিল, সেরকম কিছু নয়।

দরজা ভেজিয়ে দিয়ে সেডরিক বলল, ইনি মিস্ হেডার আর ইনি জেরী অ্যাডমস।

জেরী হেসে বলল, এত রাতে এসে আপনাকে বিরক্ত করলাম নাতো? ক্ষমা করবেন। দয়া করে বসুন না।

সুশান প্রথমে সেডরিক তারপর জেরীর দিকে তাকিয়ে ইতস্ততঃ করে সামনের চেয়ারটায় এগিয়ে গিয়ে বসল, আর সেডরিকের দিকে অস্বস্তিভরা চোখ নিয়ে তাকাল।

অ্যাডমস সেডরিকের দিকে ঘুরে বলল, আমার মনে হয় মিস্ হেডার আমার সঙ্গে একা কথা বলতে চান।

সেডরিকের চ্যাপ্টা মুখটা ঝুলে পড়ল।

তাতো বটেই। নিশ্চয়। তোমরা দুজন কথা বল। আমি তোমাদের জন্যে চা করে নিয়ে আসি। সুশানের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার অ্যাডমসকে ভালই লাগবে। আমার প্রিয় বন্ধুও। আগে আমরা একই জায়গায় কাজ করতাম।

সুশান অ্যাডমসের দিকে অপেক্ষাকৃত কম সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল।

জেরী সেডরিককে দরজাটা খুলে ধরে বলল, যাও তুমি চা করে আনন, কথা শেষ হলে তোমাকে ডাকব।

সেডরিক চলে যেতে ঘরে যে নীরবতা নেমে এলো অ্যাডমস হঠাৎ কথা বলায় তা ভঙ্গ হল–সেডরিক বলছিল আপনি নাকি জো ফোর্ডকে চেনেন?

না তাকে ততটা ভালভাবে চিনি না। সুশান সতর্ক হয়ে উঠল।

আমরা দুজনে খুব বন্ধু ছিলাম। শান্তভাবে অ্যাডমস ভাবল, নিশ্চয় কিছু গোলমাল আছে, মেয়েটা বেড়ালের মতই সতর্ক। মেয়েটার চোখে ভয়ের ভাব দেখা যাচ্ছে।

–আমার সঙ্গে জোর অনেকদিন দেখা হয়নি, তাই সেডরিক যখন জানালো যে সে এখানে আসে, ভাবলাম আপনি যদি জোর খবরাখবর কিছু দিতে পারেন। যদি বলতে পারেন সে কোথায় আছে?

সুশানের ভালভাবেই মনে আছে যে জো জোর দিয়ে বলেছিল তার কোন বন্ধু নেই। তাই সে নিশ্চিত যে এই সুন্দর পুলিশটি তাকে মিথ্যে কথা বলছে। তার হৃদপিণ্ড শীতল হয়ে এলো।

–আমি-আমি তো জানিনা সে কোথায় থাকে। চোখ নামিয়ে উত্তর দিল, আমি তাকে ভাল করে চিনিও না।

–উত্তরটা খুবই হতাশাব্যঞ্জক হল তাহলে। এ্যাডমসের স্বর ক্রমেই শক্ত হয়ে উঠল। আমি আশা করেছিলাম আপনার কাছ থেকে কোন খোঁজ পাব, কিন্তু আপনি যখন বলছেন জানেন না তবে আমায় অন্য উপায়ে তাকে খুঁজে বার করতে হবে।

–তাই করুন। সশান দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, অনেক রাত হয়ে গেল, যদি অনুমতি করেন। সুশানের চোখ দুটো নিষ্প্রভ হয়ে এলো আর মাথায় হাত দিল।

অ্যাডমস তাকে ভাল করে নিরীক্ষণ করছিল। তার মনে হল মেয়েটা স্পষ্টতই সুস্থ নয়। আসলে তার চোখে ক্লান্তির ছায়া এবং নিজের উপস্থিতি সম্বন্ধে সচেতন নয়। চোখে শূন্য দৃষ্টি। সে মাথায় হাত দিয়ে এপাশে-ওপাশে দুলতে শুরু করল।

অ্যাডমস তাড়াতাড়ি তীক্ষ্ণ স্বরে প্রশ্ন করল, মিস হেডার আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন?

কিন্তু সুশানের কানে কথাগুলো পৌঁছল না।

–মিস্ হেডার! হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে অ্যাডমস জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে।

সুশান আপনমনে বিড়বিড় করে বলল, শুনুন, শুনতে পাচ্ছেন। ঢাক বাজছে।

অ্যাডমস কিছু শোনবার চেষ্টা করেও কোন শব্দ তার কানে এলো না। সুশানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল–আমি কিছু শুনতে পাচ্ছিনা।

সুশান চীৎকার করে বলল, আপনি বদ্ধকালা বলেই শুনতে পাচ্ছেননা। আমি পাচ্ছি। ঐ তো ঢাক বাজছে। ওটা আমার মাথার ভেতর বাজছে। আর হিস্টিরিয়া রোগীর মত গজরাতে লাগল, ওটা বাজছে, ওটা বাজছে বুম…বুম…বুম…কুম। বেজেই চলেছে বুমবুম…শুনতে পাচ্ছেন না?

যতসব বাজে কথা, অ্যাডমস তীক্ষ্ণস্বরে বলল। আপনি সব বাজে জিনিস কল্পনা করছেন নিজেকে সংযত করুন মিস্ হেডার। কোন ঢাক বাজছে না।

–আমার কি হল? নিজের মাথা চেপে ধরে বলল, ওটা আমার মাথার ভেতর বাজছে। থামান না এটা, থামান। আমি কি পাগল হয়ে যাবো। আঃ, আমি আর সহ্য করতে পারছি না।

মিস্ হেডার পাগলামী করবেন না, আমি কোন ঢাকের শব্দ শুনতে পাচ্ছি না। অ্যাডমস সতর্কভাবে বলল।

সুশান তার দিকে তাকিয়ে, তাকে ধরবার আগেই দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে লাগল। তার চাপা কান্নার আওয়াজে সেডরিক ছুটে এলো রান্নাঘর থেকে।

সেডরিক অ্যাডমসের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি নিশ্চয় ওকে যা কথা বলেছে। কি বলেছে?

অ্যাডমস হতবাক এবং উৎকণ্ঠায় ভরা মুখে সেডরিকের দিকে তাকাল, আমি তো কোন কথাই বলিনি, মনে হয় ওর স্নায়ু বিপর্যয় ঘটেছে। সে হঠাৎ বলল, কেউ একটা ঢাক বাজাচ্ছে।

ঢাক, কিসের ঢাক?

বুঝতে তো পারছি না আমিও, তবে কোন খারাপ কিছু ঘটেছে। আমার মনে হয় তোমার কথাই ঠিক।ব্যাপারটা দেখা দরকার। ঢাক বাজাচ্ছে ব্যাপারটা আসলে কি? সে কি বোঝাতে চাইছে।

–তবে আমার কি একজন ডাক্তার ডাকা উচিত জেরী? অসহায়ভাবে প্রশ্ন করল সেডরিক।

–শোন। তীক্ষ্ণস্বরে অ্যাডমস বলল।

তারা স্থির হয়ে সিঁড়ির ওপর দিকে তাকল। ওপর থেকে খুব আস্তে আস্তে একটা তালাবদ্ধভাবে ঠক্ ঠক্ আওয়াজ ভেসে আসছে।

তারা কোন ইতস্ততঃ না করেই সিঁড়ি বেয়ে সুশানের ঘরের দরজায় ছুটে গেল। দরজার বাইরে তারা কান পাতল।

অ্যাডমস বলল, মনে হচ্ছে মেয়েটা হাতের মুঠি দিয়ে টেবিল বাজাচ্ছে।

ঠক্ ঠক্ আওয়াজ হয়ে যেতে থাকল।

অ্যাডমস দরজায় ঠোকা দিল, মিস্ হেডার!

 সেডরিক ভীতিগ্রস্তভাবেবলল, তুমি এভাবে সবাইকে জাগিয়ে তুললে আমি কি পুলিশ ডাকব?

অ্যাডমস তিক্তস্বরে বলল, ভগবানের দোহাই, নিজেকে সংযত কর। আমি পুলিশ। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। আমার ওপর এটা ছেড়ে দাও।

যতটা ঠাণ্ডা স্বরে অ্যাডমস কথাগুলো বলল ব্যাপারটা আসলে ততটা ঠাণ্ডা ছিল না। মেয়েটার ঐ ক্রমাগত ঠক্ ঠক্ টেবিল বাজানোর আওয়াজটার মধ্যে একটা অদ্ভুত কিছু ব্যাপার আছে।

তারপর হঠাৎ আওয়াজ থেমে গিয়ে একটা পদশব্দ এগিয়ে আসতে লাগল আর সশব্দে দরজা খুলে সুশান করিডোরে বেরিয়ে এলো। সুশান এগিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাডমস চট করে একনজরে তার সাদা মুখ আর শূন্য দৃষ্টি দেখে নিল।

অ্যাডমস সেডরিককে জিজ্ঞেস করল সে কি সুশানকে লক্ষ্য করেছে? তার যেন দেখে মনে হল মেয়েটা ঘুমের ঘোরে হাঁটছে।

অ্যাডমস পিছু নিল এবং দেখল সুশান সদর দরজা খুলে রাস্তায় নেমে পড়ল।

অ্যাডমস দৌড়ে এসে বসবার ঘরের টেবিল থেকে টুপিটা নিয়ে সেডরিককে বলল, ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ও মন্ত্রমুগ্ধ। কোন খারাপ ঘটনা ঘটতে পারে। আমি ওকে অনুসরণ করছি। কোন চিন্তা কোর না। ব্যাপারটা রহস্যময়।

অ্যাডমস পাতলা ছায়াটার পেছন পেছন চলা শুরু করল।