২. ফুলহাম রোডের আবাসিক বাড়িটা

১৫৫এ ফুলহাম রোডের আবাসিক বাড়িটা সেডরিক স্মাইথ-এর। সুশান হেডার সুন্দরী, বুদ্ধিমতী হওয়ায় তার ওপর প্রখর দৃষ্টি ছিল সেডরিকের। এটা সে নিজের দায়িত্ব মনে করত। ফলে জর্জের চিঠিগুলো সে বাষ্প দিয়ে খুলত এবং পড়ত। সেডরিকের মনেও আঘাত হেনেছিল জর্জের শেষ চিঠিটা এবং দেখেছিল সুশান চিঠিটা পড়ে রাস্তায় ছুটে বেরিয়ে গেল। ভেবেছিল ফোলা ফোলা চোখ নিয়ে সে ফিরে আসবে।

বদলে সুশানের উজ্জ্বল চোখ দেখে সেডরিক অবাক হয়ে গেল। আরও অবাক হলো যখন দেখল পোস্টম্যান তার চাকরী এবং বীমার কাগজপত্র ফিরিয়ে দিয়ে গেল। অর্থাৎ সুশানের চাকরী নেই। সে ভাবতে লাগল, মেয়েটার কি জর্জ কিংবা চাকরীর জন্যে কোন দুঃখ নেই? করছে কি মেয়েটা? কাল অত রাত পর্যন্ত কি করছিল, কোথায় ছিল? চিন্তায় জর্জরিত হয়ে উঠল। এমন সময় চিন্তাভগ্ন করে বেল বাজতে দেখল দরজায় একটা ছোকরা দাঁড়িয়ে।

মিস্ হেডার এখানে থাকেন?

–হ্যাঁ, কিন্তু এই মুহূর্তে নেই।

ছোকরাটি বিন্দুমাত্র ভাবনানা করে একটা খাম বাড়িয়ে দিয়ে বলল,ও এলেই এটা দিয়ে দেবে। বাষ্প দিয়ে যেন এটা খুলনা। তোমার মতো হোঁৎকা বদমায়েসদের আমার ভাল চেনা আছে। সেডরিক ভীত চকিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

আজকালকার ছোকরাগুলো যেন কেমন–মনে মনে ভাবতে লাগল সেডরিক। ঐ ছেলেটা কে? কি মানে এসবের? তারপর কেটলীর বাম্প দিয়ে চিঠিটা খুলল সে।

চিঠিতে লেখা–২৪সি রুপার্ট স্ট্রিটে ফ্রেসবীর এজেন্সীতে যাও। সে তোমায় ঢুকিয়ে দেবে। জে.সি।

.

সুশান দরজা ঠেলে ঢুকল। রোগা একটা লোক ডেস্কে বসে। সামনে এক কাপ চা আর রুটি।

-মাপ করবেন। কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।

–আর চা নেই, চায়ের আশা কোরনা। লোকে মরতে যে কেন ঠিক চায়ের সময় আসে? পাউরুটি কামড়াতে কামড়াতে বলল।

চা আমি চাই না। আমি চাকরীর খোঁজে এসেছি।

–চাকরী? কিসের চাকরী?

–গিল্ডেড লিলি ক্লাবে চাকরী। সুশান ভাবল মিঃ ফ্রেসবীকে দেখে মনে হচ্ছে কাজ দেবার মত লোক ও নয় বরং ওকেই একটা চাকরি জোগাড় করে দিতে পারলে বেঁচে যায়।

বসতে পারি? মিঃ হো ক্রফোর্ড আপনার কাছে আমাকে পাঠিয়েছে।

জানি। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল ফ্রেসবী।

ফ্রেসবীর ব্যবহারেসুশান রেগে গিয়ে বলল, থাকে তোবলুন,না হলে আমার সময় নষ্ট করবেন না। আমার এত সময় নেই।

–কে বলল চাকরী নেই? তবে এত তাড়া কিসের?

 টেলিফোন বেজে উঠল–নানা জো তোমায় কিছু চিন্তা করতে হবেনা। টেলিফোন নামিয়ে সুশানের দিকে তাকিয়ে বলল-শয়তান ছেলেটার থেকে দুরে থাকবে, সাবধানে থাকবে।ও ভাবছে আমি তোমার সঙ্গে অভদ্র ব্যবহার করছি। তাই কি? আমি ভেবেছিলাম তুমি চাকরী খুঁজতে আসা অন্য মেয়েদের মতই কেউ। চা খাবে?

–অন্যান্য মেয়েদের মতো? মানে?

-হা হা। সবাই তো এখানে চাকরী, ঘর খুঁজতে আসে।

— গিল্ডেড লিলিতে কি চাকরী আছে?

–এই মুহূর্তে নেই। কিন্তু ব্যবস্থা করে দোব। কাল সকালে মিঃ মার্শের সঙ্গে দেখা কর। আমার পরিচিত। ওদের সুন্দরী মেয়ে নিয়ে কারবার। তুমি তো বেশ সুন্দরী, তোমার পেছনে ছুক ছুক করে বেড়াবে। সাবধানে থেকো। কাল সকাল দশটায় ওর সঙ্গে দেখা কোর।

ধন্যবাদ। তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগোল। তার মনে হল একটা বুনো জানোয়ার যেন ওর দিকে চেয়ে বসে আছে।

.

বুড়িটা বলল–পাঁচ মিনিট আগেও কুচ্ছিত লম্বা লোকটা জঙ্গলের ওদিকে ছিল। টুপীটা মুখ পর্যন্ত নামিয়ে বিশ্রী মুখটা ঢাকতে চাইছে।

প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে জো বলল, কি চায় ও?

কি করে জানব আমি? বলল ইস্যুরেন্সের লোক। জিজ্ঞেস করছিল কে কে থাকে? আমি মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।

ঠিক আছে তুমি যাও তোমার কাজ করো। আমি ওকে দেখছি।

এটা একটা গরম দুপুরবেলা। ভয় পাবার মতো কিছু ঘটেনি। তবু জো-এর হাত-পা পেটের মধ্যে সেধিয়ে যাচ্ছে। তবু সে কাল জামা পরা লোকটার সন্ধানে যাবেই। লোকটাকে দেখাতেই হবে ব্যাপারটা অত সোজা নয়। এটা যদি বোঝাতে পারে তাহলেই হয়ত তারা ক্রেস্টার ওয়েডম্যানকে একা শান্তিতে থাকতে দেবে।

জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সে হেঁটে চলল। মনে হয় কালো জামা পরা লোকটা তার দিকে চোখ রাখছে। আঃ, তার কাছে যদি একটা ছুরি বা পিস্তল থাকত। তবুও তাকে যেতে হবে। নইলে ওয়েডম্যানকে রক্ষা করার কেউ থাকবেনা।

বুচ পড়ে থাকা একটা এলম গাছের গুঁড়িতে বসেছিল। জো তাকাল।

-হ্যালো, বুচ বলল।

 –জো উত্তর দিল না।

–আমাকে চেন?

 জো ঘাড় নাড়ল। বুচের মত শক্তি যদি তার বুকে থাকত। ভাবতে লাগল জো।

তুমি আর ঐ বুড়ীটা এখানে থাকো? না।

–অনেক হয়েছে। বল।

বুড়িটা তো কোন কম্মের নয়। তুমি একা আর কি করতে পারবে? আমি হলে তো পালাতাম।

–আমি পালাব না। আমাকে নিয়ে যদি লোকে ঝঞ্জাট পাকায়, আমিও তবে পাকাবো।

–বেশ। এটাই তাহলে তোমার শবযাত্রা হবে।

–ওকে একা থাকতে দিচ্ছ না কেন? ও তোমার কি ক্ষতি করেছে?

সরে যাও। মরার ইচ্ছে থাকলে কেটে পড়।

–আমি থাকবই।

আমার কথা না শুনলে তোমায় আমি খুন করব। বুঝলে আমি একজন খুনে। অনেকদিন খুন করিনি। হাতটা সুড়সুড় করছে।

–তোমাকে আমি ভয় পাইনা, জো মিথ্যে বলল।

–তুমি তো গড়িয়ে যাওয়া এক স্টীম রোলার থামাবার চেষ্টা করছ। মারা পড়বে বলে দিলাম।

–ওসব আগেও থামানো হয়েছে, এখনও হবে। আমাকে ওসব ভয় দেখিও না।

 বুচ বলল-তোমার মত বাচ্চা ছেলে কি করতে পারবে?

জো অনুভব করলো সে লোকটাকে কিছুমাত্র ভয় ধরিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু আর অপেক্ষা নয়। এখনই পেছন ফিরতে হবে। সে একটা কথাও না বলে বনের ভেতর সোজা হাঁটা দিল। যদিও ভয়ে হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে গেছে। তবুও তো সেকালো শার্ট লোকটার মুখোমুখি হতে পেরেছে। ব্যাপারটা তাকে বোঝাতে পেরেছে।

সেবিশাল গ্যারেজের ভেতর দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে বসবার ঘরে গেল। তারপর কয়েক মুহূর্ত কাঁচের জানলার কাছে দাঁড়িয়ে রইল।

.

বুচ কঠিন চোখে শেলির দিকে তাকিয়ে ছিল। সে জানত ক্রেস্টার ওয়েডম্যানক্লাবে গিয়েছিল। সেখানে সে ছাড়া আর সকলের সঙ্গেই তার দেখা হয়েছে। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শেলি ক্লাব থেকে বেরোতেই সে পিছু নিয়েছে। তাকে জানতেই হবে ঘটনাটা।

–এদিকে এস। ওখানে পুতুলের মতো বসে থাকতে হবেনা। ঝেড়ে কাশ, আমি সব কথা শুনে তবেই নড়বো।

শেলি ঠোঁটে সিগারেট চেপে বিছানায় শুয়ে মেঝেতে পা ঠুকতে ঠুকতে বলল–আমার এ ব্যাপারে নাক গলাবার দরকার নেই। ওয়েডম্যান চাইছে তার মৃত ভাইকে জীবন্ত করতে। তার বিশ্বাস ডাক্তার এটা পারবে।

বুচ খিঁচিয়ে উঠল,–তা টাকার কথা কি হল?

শেলি চেঁচিয়ে বলল–সেসব কথা কিছুই হয়নি।

–আমাকে ধোঁকা দেবার চেষ্টা কোরনা। রোলো টাকার ব্যাপারটাই আগে ঠিক করবে. তুমি, কি টাকাটা নিজে হাতাবার ধান্দায় আছো?

–তুমি সবসময় আমাকে সন্দেহ করো। বলছি তো রোলোআর ডাক্তার ব্যাপারটা সামলাচ্ছে। আমার কি করার আছে এখানে?

-গিলোরী কি করতে এসেছিল?

–ভুডুর ব্যাপারটা ঐ করবে।

টাকার লেনদেনের সময় আমি ওখানে হাজির থাকব। দুমিলিয়ন ডলার ওয়েডম্যানের কাছে কিছুই নয়।

–ওসব চিন্তা মাথা থেকে ছাড়ো। ওসব রোলোর আর ডাক্তারের দুজনের ব্যাপার। সে যদি কিছু দিতে ইচ্ছে করে তো দেবে, নইলে নয়।

কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি যে কিছু রোজগার করি তুমি তা চাও না;বুচের কণ্ঠস্বর ভয়ঙ্কর রকমের ঠাণ্ডা শোনালো।

বুচের মুখের দিকে তাকিয়ে শেলি বুঝলো কুচকে আর বেশি ঘাটানো ঠিক নয়। তুমি তো জানো আমি ওসব ধান্দা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

–জানি, তুমি আমাকেও কেটে পালাবার ধান্দায় আছে। ও কাজ করলে তোমাকেই আগে আমি খুন করব, জেনে রেখো।

.

এটা নিশ্চিত যে যদি এই ব্যাপারটা নিয়ে তার নাম জড়িয়ে পড়ে তো বুচ তাকে খুন করবেই। সেমরলেওয়েডম্যানকে কে দেখবে? বুড়িটাকে দিয়ে কোন কাজ হবেনা। পুলিশেরতাকে বোধগম্য করাতেই সময় পেরিয়ে যাবে। তাছাড়া তারা ওয়েডম্যানকে পাগলা গারদে ভরবে। কিন্তু তা হতে পারেনা। বেঁটে লোকটারকাছে কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তাকে ভাইয়ের মৃতদেহের কাছে থাকতে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। অন্য জায়গায় সরিয়ে দিলে বেশিদিন বাঁচবে না।

– উস্কোখুস্কো চুলে আঙ্গুল চালাল জো। মেয়েটা কি কোন কাজে আসবে? তবে মেয়েটার সাহস আছে। কিন্তু সে যদি তাকে পরামর্শ দিতেনা থাকে তবে মেয়েটা কি করবে?তবু সে এই মেয়েটাকে বিশ্বাস করতে পারে।

হঠাৎ সে উঠে ঘরের একটা দেওয়াল আলমারীখুলল। ছইঞ্চি বর্গাকার একটা বাক্স বের করল। তারপর টেবিলে কাগজকালি নিয়ে বসে পড়ল। একটা লম্বা পাতলা চাবি দিয়ে বাক্সটা খুলল। বাক্সটা এক পাউন্ড নোটে ঠাসা। করনেলিয়াসের কাছে পাওয়া বকশিশ। দুর্দিনের জন্যে সে জমিয়ে রেখেছিল। মোট তিনশ পাউন্ড আছে। সুশানকে যদি টাকাটা দেওয়া যায় তাহলে নিশ্চয় সে প্রয়োজন মত কাজগুলো করতে রাজি হবে।

একটা চিঠি লিখে সে খামে ভরল। আবার আর একটা চিঠি লিখল। এই চাবিটা রেখে দিও যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি স্টিলের একটা বাক্স পাচ্ছ। চাবি দিয়ে বাক্সটা খুলবে। তারপর চাবি আর চিঠিটা একটা খামে ভরল।

.

সন্ধ্যে ছটার পর ডিউক হেডে ফ্রেসবীর সন্ধানে জো হাজির হল। অফিস থেকে বাড়ি যাবার পথে ফ্রেসবীকে এখানেই পাওয়া যায়। সে একটা টেবিলে বসেছিল। পাশে মদের গ্লাস।

জো পাশে বসে বলল, হ্যালো জ্যাক।

ফ্রেসবী সজাগ হয়ে বলল, হ্যালো জো।

সে জানে ফ্রেসবী তাকে ভয় পায়। জো কালো জামা পড়ে আর ফ্রেসবী জো কে ভয় পায়। মজার ব্যাপার।

–তুমি কি আমার একটা কাজ করতে পারবে?আমার এই বাক্সটা তোমার কাছে রাখ হারাবে না। নাহলে তোমার ব্যাপারে সব আমি পুলিশকে জানাব।

ফ্রেসবী ভয়ে কেঁপে উঠে বলল, হারাবো না, এতে কি আছে? আমি কোন ঝাটে জড়াতে চাই না।

–আমার কথামতো কাজ না করলে আরো বিপদে পড়বে তুমি। এতে মারাত্মক কিছু নেই। তবে কিছু লোক এটা নেবার চেষ্টা করবে। মন দিয়ে শোন, আমি তোমাকে রোজ সাড়ে দশটায় ফোন করব। যেদিন না করব তুমি সেদিনই বাক্সটা সুশান হেডারকে দিয়ে আসবে। ওর ঠিকানা ১৫৫ এ, ফুলহাম রোড।

ফ্রেসবী বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিয়ে মুখ মুছে বলল, তোমার কিছু ঘটতে যাচ্ছে তাহলে?

জো বলল–হতে পারে। কিন্তু তুমি আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা কোরনা, বাক্সটা সঠিক সময়ে সঠিক জনের কাছে পৌঁছনো চাই।

–ঠিক আছে, কিন্তু তোমার পিছু কারা নিয়েছে?

-তোমার ঐ মোটা নাকটা না গলালেও চলবে। হয়তো আমি একমাস ধরে তোমায় ফোন করব, তারপর একদিন হঠাৎ ফোন পাবেনা। সেদিনই বাক্সটা পৌঁছনো চাই। আর তা যদি না হয় বুঝতে পারছো তোমার কি হবে?

ফ্রেসবী চমকে উঠল। সে ভাবতেই পারেনি এটা একটা ফাঁদও হতে পারে। তিক্ত স্বরে মুখে বলল, সে ক্ষেত্রে তুমি পুলিশের কাছে যাবে।

–ঠিক তাই। সুতরাং বিপদে ফেলার চেষ্টা কোর না।

–কে বলেছে আমি তোমায় বিপদে ফেলব?

–যাক ওসব ছাড়ো। যা বললাম ঠিক তাই করবে।

 ফ্রেসবীর মুখ চোখ ঘৃণা আর ভয়ে বিকৃত হয়ে উঠল।

.

স্লেম মার্শ গিল্ডেডলিলির রিসেপশান ডেস্কের পেছনে দাঁড়িয়ে গতরাতের গেস্ট টিকিটগুলো দেখছিল। মার্শের চেহারা সুল। পরনে দামী পোষাক। হাতে মার্গারেট বলে একটা মেয়ের দেওয়া ঘড়ি। কোটের পকেট থেকে উঁকি মারছে সোনার সিগারেট কেস। এটা মে তাকে দিয়েছে। এই দুজন যুবতীকেই সে ভাগাভাগি করে ভোগ করে। দুজনেরই ভয় মার্শ অন্য কোন সোসাইটি সুন্দরীর খপ্পরে না পড়ে।

মার্শ যদিও টিকিট গুনছিল কিন্তু মন পড়েছিল ফ্রেসবীর কাছে। সুশান হেডার কে? কেন সে ক্লাবে কাজ চায়?তার মানে সেই মেয়েটির মাইনে নিজের পকেট থেকে দিতে হবে। রোলোবাড়তি লোক রাখবে না। ফ্রেসবীর কথা না রেখেও তার উপায় নেই। সে মার্গারেট আর মের কাছে জোয়ানের কথা ফাঁস করে দেবে। তাহলে ঝামেলার একশেষ হবে। জোয়ানের কথা ফ্রেসবী যে কি করে জানল কে জানে! সুশানকে পকেট থেকে তিন পাউন্ড দিতে হবে ঠিকই তবু সময় তো সে পারে প্রচুর।

একজন যুবক এসে জানাল, একজন যুবতী তার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে।

-বেশ, তাকে নিয়ে এস, তবে তুমি তোমার ঐ নোংরা দৃষ্টিতে তার দিকে চাইবে না।

সুশান এগিয়ে এসে বলল, মিঃ মার্শ সুপ্রভাত। আমি সুশান হেডার।

–ও তুমি। হ্যাঁ তোমার কথা ফ্রেসবীর মুখে শুনেছি।

–আপনি নাকি আমাকে একটা কাজ দিতে পারেন।

হু। মার্শ চিন্তা করল সুশান সুন্দরী। মার্গারেট ও মের সঙ্গে মনে মনে তুলনা করল। হঠাৎ তার মনে হল সুশানের ওপর খরচটা ফলবতী হতে পারে। মেয়েটাকে ঠিকমত কায়দা করতে পারলে প্রচুর টাকা উঠে আসবে।

-দেখ হপ্তায় তিন পাউন্ডের বেশি দিতে পারব না। তবে কাজ হাক্কা। সন্ধে সাতটায় আসবে আর মাঝরাতে চলে যাবে।

-ঠিক আছে। আমায় কি করতে হবে?

-তোমার টুপী আর কোটটা খুলে আমার কাছে এসো। সহজ হয়ে বসো আমারকাছে। যদিও জায়গা বেশি নেই, তবু এটুকু জায়গাতে দুজনের হয়ে যাবে।

মোটা বিচ্ছিরি লোকটার কাছে যেতে সুশানের একটুও ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু সে নিরুপায় হয়ে কাউন্টারে ঢুকল। পেছনে পেছনে মার্শ।

–তুমি কি উত্তেজক কিছু খুঁজছো?

মাত্রাতিরিক্ত কিছু নয়।

মার্শের মোটা উরু তার পায়ে চাপ দিচ্ছিল।

–আসলে আমি এখানে কাজের দরকারেই এসেছি। কিন্তু এখন দেখছি অফিসটা বন্ধ হয়ে গেছে।

–তোমার মতো সুন্দরীর চিন্তা কি?

 হঠাৎ ডাঃ মার্টিন ভেতরে ঢুকল।

গুড মর্নিং ডাক্তার। মার্শ বলল।

 হায় ভগবান এসব কি ব্যাপার?

এ হচ্ছে আমাদের নতুন রিসেপসনিস্ট মিস্ হেডার।

সুশানের দিকে চেয়ে মার্টিন বলল, ভগবান মঙ্গলময় তুমি এই যুবকটির থেকে সাবধানে থেকো। ওর ঐ হাত দুটো যতক্ষণ পকেটে ততক্ষণই নিরাপদ।

সুশান লজ্জায় লাল হয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বললো। মার্শ জ্বলন্ত দৃষ্টি হেনে ডাক্তারকে বলল–তোমাকে এখানে এসব বাজে কথা বলতে কে ডেকেছে আঁ?

–রোলো একটা মিটিং ডেকেছে। সেখানেসববড় বড় লোকেদের নামের লিস্ট থেকে তোমার নামবাদ। সুশানের দিকে চোখ টিপে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রোলোর অফিসের দিকে পা বাড়ালো ডাক্তার।

বুড়ো ভাল। কি দরকার ডাক্তারের?

 সুশান মনে মনে চিন্তা করে চলেছিল রোলোর মিটিংটা কি তাহলে ক্রেস্টার ওয়েডম্যানের ব্যাপারে?

–মিস্ হেডার, শোন তোমার এখানে কাজ হচ্ছে। বাধা পেল মার্শ। কথা থামিয়ে দেখল বুচ কাউন্টারে কনুইয়ের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে।

সুশান মনে মনে ভয় পেয়েও বাইরে নির্ভয়ে বুচের পাথরের মতো চোখের দিকে তাকাল।

–ইনি আমাদের নতুন রিসেপশনিস্ট মিস হেডার।

বুচ বলল, তোমায় মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি।

 সুশান চোখ সরিয়ে নিল বুচের দিক থেকে নিজের হৃদপিণ্ডের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।

আমাদের রিসেপসনিস্টের দরকার আছে কে বলল?

–এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যবস্থা। মিস্ হেডারকাজের দরকারে আমার কাছে এসেছিল, আমার দরকার একটু সময়ের। আমি নিজের পকেট থেকে যদি ওর মাইনে দিয়ে দিই, তবে সেটা নিজের ব্যাপার নয় কি?

বুচের মনে সন্দেহ দানা বাঁধছে। সে তাকাল সুশানের দিকে। চোখে সন্দেহের দৃষ্টি।

–সুশান হঠাৎচট করে বলে উঠল, মনে পড়েছে। তোমার শার্টের কথা আমার মনে পড়েছে। গত হপ্তায় গ্লাস হাউস স্ট্রিটে ছোট্ট কাফেতে তোমায় দেখেছিলাম। তাই না?

বুচ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সুশানের দিকে তাকালো। মনে হয় সন্দেহ তার মন থেকে সরে গিয়েছে।

–হ্যাঁ তাই। ঠিক।

 বুচ চলে গেল।

 বুচ চোখের দৃষ্টিতে অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত তারা দুজন নড়ল না।

তারপর মার্শ বলল–খুঃ। আমি তো ভাবতেই পারছি না রোলো এই ধরনের মাল নিয়ে কি করে কাজ কারবার চালায়। ঐ লোকটার জন্যে আমাদের ক্লাবের বদনাম হয়ে যাবে।

সুশান বুচের সন্দেহকে কাটাতে পেরেছে বলে মনে মনে প্রফুল্ল বোধ করতে লাগল। আর ভগবানকে ধন্যবাদ জানালো।

প্রশ্ন করলেও কে?

ওর আসল নাম মাইক এগান। সবাই ওকে বুচ বলেই জানে।ও সম্ভবতঃ শিকাগোর বন্দুকবাজ ছিল। ওর কাছ থেকে দূরে, সাবধানে থেকো। ওবাইকে সন্দেহের চোখে দেখে। কাউকে বিশ্বাস করেনা। মহা ঝাটে লোক একটা। তারপর হঠাৎ মার্শ বলে উঠল-জানিনা রোলো তোমাকে রাখবে কিনা। ও হয়তো তোমাকে ভাগিয়েও দিতে পারে।

সুশান শক্ত হয়ে উঠল। সেক্ষেত্রে আমায় ফ্রেসবীর শরণাপন্ন হতে হবে আমি তো ভেবেছিলাম এটা আমার স্থায়ী চাকরী।

মার্শ হাত চাপড়িয়ে বলল, অত উত্তেজিত হোয়না।আমি অনুমানকরছি মাত্র। আমি রোলোকে তোমার সম্বন্ধে বুঝিয়ে বলবো।

ফ্রেসবীকে যে মার্শ বেশ ভয় পায় এটা লক্ষ্য করে সুশান বলল, একটু সরে দাঁড়াও। আমি তোমার চাপে চ্যাপ্টা হতে চাই না।

ফোনে কথা না বলে মার্শ কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এলো ঠিক আছে হেডার। তুমি এখন আসতে পারো। তোমার কাজ সন্ধ্যে সাতটা থেকে মাঝরাত্তির পর্যন্ত।

হঠাৎ বাইরের দরজা খুলে শেলি ভিতরে ঢুকে ডানবায়েনা তাকিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল।

মার্শ তার দিকে সপ্রংশস দৃষ্টিতে তাকাল।

মার্শ তার দিকে তাকাতে সুশান জিজ্ঞেস করল ও কে?

মাদমোয়াজেল শেলী। রোলের নিজস্ব জিনিস।কালো হলে কি হবে, চোখ টিপে মার্শ বলল মাল বেশ খাসা। তাই নয় কি?

সুশান উত্তর দেবার আগেই গিলোরী এসে ঘরে ঢুকল।গিলোরী বেশ কাছাকাছি এসে সুশানকে লক্ষ্য করতে থাকায় সুশানের নজর পড়ল তার ওপর। তারপর হঠাৎ সিঁড়ি বেয়ে চোখের আড়াল হয়ে গেল।

মার্শ তার চকচকে দৃষ্টি হেনে বলল, তুমি সুন্দরী তাই গিলোরী তোমায় ঐভাবে দেখছিল। তোমার সঙ্গে আজ সকালে সবাইকার দেখা হল। আমি ভাবছি ওপরে কি ব্যাপার হচ্ছে আজ।

–লোকটা কে? যদিও ওপরে কি হচ্ছে ভেবে সুশান খুব আশ্চর্য হচ্ছিল।

–ও হচ্ছে গিলোরী। এখানকার ড্রামবাদক। নিগ্রোদের সঙ্গে আমার খুব একটা হৃদ্যতা নেই। তবে লোকটা খুব খারাপও নয়। মার্শ এখন সুশানের চেয়ে মিটিং নিয়েই বেশি কৌতূহলী।

সুশান ভাবল যে করেই হোক ওকে একবার ওপরে যেতেই হবে।যাবার আগে আমি কি একটু সেজে নেব?

মার্শ বলল, সিঁড়ি দিয়ে উঠে ডানদিকে মেয়েদের প্রসাধনী ঘর, লেখা আছে। ওখানে গিয়ে সেজে নাও।

–তাহলে টুপী আর কোট পরার আগে আমি একবার ওপরটায় ঘুরে আসি।

ঠিক সেই মুহূর্তে টেলিফোন বেজে উঠতেই মার্শ গিয়ে ধরতে গেল। ফাঁক বুজে সুশানও ওপরে উঠে গেল। অর্ধচক্রাকার সিঁড়ি খানিকটা উঠতেইমহিলা লেখাটয়লেট। সুশান সেখানেনা থেমে সামনের লম্বা প্যাসেজের পাশের ঘরগুলোর প্রতিটা দরজায় কান পেতে শোনবার চেষ্টা করল। পুরু কার্পেটের জন্য পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছিল না। তারপর প্রাইভেট লেখা ঘরটায় কান চেপে কিছু স্পষ্ট কথাবার্তা শুনতে পেল।

.

 উইম্বিলডন কমনে ঐ বিশাল নির্জন বাড়িটার অসংখ্য ফাঁকা ঘরগুলোর কোন একটা থেকে টেলিফোনের শব্দ ভেসে আসতে থাকল।

অন্ধকার ঘরে বুড়ী পরিচারিকা সারা আলু ছাড়াতে ছাড়াতে জো কেবলল, কে আবার জ্বালাচ্ছে। জো, ফোনটা তুমি ধর।

সারা বলার আগেই জো ফোনের দিকে এগিয়ে গেল। ভেবেছিল বোধহয় রং নাম্বার। বলল, হ্যালো।

ওপারে সুশানের উত্তেজিত কণ্ঠ, মিঃ ক্রফোর্ড আছেন কি?

গলার স্বর চিনতে পেরে জো বলল, হ্যাঁ, বলল জো বলছি।

–আমি গিল্ডেড লিলির চাকরীটা পেয়েছি।বলে প্রশংসা শোনার আশায় সুশান একটু থামল।

জানতাম। ফ্রেসবীকে আমি যা বলি ও তাই করে। বল কি হল?

–ওরা সবাই রোলোর ঘরে মিটিংকরছিল। আজ রাতে মিঃ ওয়েডম্যানকে ওরা আশা করছে।

–ওরা কারা? সবকিছু খুলে বলল।

-বলছি বিরক্তির সুরে সুশান বলল,ওখানে ডাঃ মার্টিন বলে একজন ছিল। সেই বেশিরভাগ কথা বলছিল। ওদের কাছে মাদমোয়াজেল শেলি বলে এক নিগ্রো মেয়ে ছিল, রং কালো কিন্তু প্রচণ্ড আকর্ষণীয়।

ওসব ছাড়ো আর কে কে ছিল বলো?

–আর একজন কালো জামা পরা গিলোরী বলে এক নিগ্রো। ড্রামবাজায়। সে আমাকে চিনে ফেলেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম সে আমায় সন্দেহ করছে।কিন্তু পরে তাকে আমি কেশ ভাল ধোকা দিতে পেরেছি।

জো-এর মুখ বিকৃত হল। সুশান সত্যি ধোঁকা দিয়েছে নাকি মিথ্যে কথা? কালো লোকটার সম্বন্ধে নিজের ভয়ের কথা মনে এল।

তুমি কি বলতে চাইছ!সুশানের কথা সে বিশ্বাস করতে পারছিল না। হয়ত বুচ ভান করছে। ফাঁদে ফেলার মতলবে।

জো এর কথায় সুশান হতাশ হল এই ভেবে যে, সে হয়তো জো কে খুশি করতে পারেনি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, তুমি কি খুশী হওনি জো?

–ঠিক আছে। আমি একটু চিন্তিত ছিলাম। তুমি ভাল কাজই করেছে।

 –ওরা আজ রাতে ওয়েডম্যানকে আশা করছে। তারা ভুডু নিয়ে কি সব কথাবার্তা বলছিল।

–কি বলছিল?

–ভুডু এক ধরনের ডাকিনীবিদ্যা। ডাঃ মার্টিন গিলোরীকে কি সব বোঝাচ্ছিল। একটা কথা বারবার বলছিল, জুমবি। ওটার মানে ঠিক বুঝলাম না। তুমি কি জান ওটার মানে?

না খোঁজ করে দেখব।

–আমি সন্ধ্যে সাতটা থেকে মাঝরাত্তির অবধি থাকব। ওরা মিঃ ওয়েডম্যানকে রাত এগারোটায় আশা করছে।

না উনি যাবেন না। আমি গাড়ি খারাপ করে রাখবো। ওনাকে ওসব লোকের সঙ্গে মিশতে দেবনা।

-হা ওরা খুব ভাল লোক নয়। আমাদের সাবধান থাকা উচিত। এক মিলিয়ন অবিশ্বাস্য ধরনের বিশাল অঙ্ক তাই না?

–দেখ আমি তোমায় একটা চাবি পাঠিয়েছি। সাবধানে রেখো ওটা। আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি একটা স্টিলের বাক্স পাবে। ঐ চাবি দিয়ে বাক্সটা খোলা যাবে।

সন্দিগ্ধ সুশান প্রশ্ন করল, তোমার কি হবে? কি বলতে চাইছ?

আমি হয়তো ঐ কালো জামা পরা লোকটার দ্বারা গাড়ি চাপা পড়তে পারি। আমি প্রস্তুত থাকা পছন্দ করি। হয়তো কিছু হবেনা। তবু বলা তো যায়না।

সুশান ভীষণ ভয় পেল। আমাদের কি পুলিশের কাছে যাওয়া উচিত?

না। আমার যা কিছুই ঘটুক তুমি পুলিশের কাছে যাবেনা। কারণটা তত তোমায় বলেছি। এ ব্যাপারে তোমায় কথা দিতে হবে।

–আমি ঐ ধরনের কোন প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না।

-তোমাকে করতেই হবে। তোমার কথা ওরা বিশ্বাস করবে না। আর ওনাকে দূরে সরিয়ে রাখবে। কথা দাও।

–ঠিক আছে কথা দিচ্ছি, কিন্তু এত কাজ একসঙ্গে চালিয়ে যেতে পারব না।

জো তাড়াতাড়ি বলল, পারতেই হবে। জানি তুমি খুব সাহসী মেয়ে।

কালকে আমি তোমাকে ফোন করব। আমরা দেখা করলে কোন ক্ষতি হতে পারে। ওরা লক্ষ্য রাখবে হয়তো!

–ঠিক আছে। আমার কিছু হলে ফ্রেসবী আছে, ও তোমায় সাহায্য করবে। ফ্রেসবীর কোন একটা গোপন ব্যাপার আমি জানি। সেকথা ঐ স্টিলের বাক্সের ভেতরে একটা চিঠিতে লেখা আছে। ঐ চিঠির ভয় দেখিয়ে তুমি কাজ হাসিল করবে। গুডবাই।

জো লাইব্রেরীতে গিয়ে ওয়েবস্টারের কলেজিয়েট অভিধানটা খুলল। জুমবি। এক অলৌকিক শক্তি যা মৃতদেহকে জীবন্ত করে তোলে বলে বিশ্বাস করা হয়। কিছুক্ষণ ব্যাপারটা চিন্তা করে বুঝল রোলোরা কি চাইছে। তারপর চলল ওয়েডম্যানের ঘরের দিকে।

ওয়েডম্যানের ঘরের দরজায় গিয়ে টোকা দেবার পর সে খুলে ফেলল, এই প্রথম ওয়েডম্যান তাকে না ডাকতেই সে এসেছে।

–কে, কে ওখানে? ওয়েডম্যানের কৌতূহলী প্রশ্ন।

ঘরটা অন্ধকার। ডেস্কের ওপর একটা শঙ্কু আকৃতির আলো জ্বলছে। ঘরের পর্দা টানা। সারা ঘর বাসি গন্ধে ভরা। ডেস্কের ওপরে সুপাকার কাগজে ভরা। ওয়েডম্যান ডেস্কের ধারে বসে। লেজার বই ভোলা।

–কি চাও। আমি তো তোমায় ডাকিনি।

না। গাড়ির ম্যাগনেটটা খারাপ হয়ে গেছে। হঠাৎ যদি আপনার গাড়ির প্রয়োজন হয় তাই বলে রাখি।

ক্রেস্টারের মুখ শক্ত হল।

–কখন ঠিক হবে?

এক সপ্তাহ লাগবে মনে হয়। কাজটায় সময় লাগবে। হটাৎ জো-এর খেয়াল হল ঘরে ওয়েডম্যান আর সে ছাড়া কেউ রয়েছে। ক্রেস্টারের সামনের চেয়ারে কে যেন জো-এর দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসে আছে। হঠাৎ জো ভীষণভাবে চমকে উঠল।

এক সপ্তাহ। ভীষণ অসুবিধা হল তো! তুমি কি শুনতে পাচ্ছো করনেলিয়াস? জো বলছে গাড়িটা সারাতে সপ্তাহখানেক লাগবে।

জো এর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল, করনেলিয়াস? কিন্তু সে তো মৃত। চেয়ারে বসা লোকটা করনেলিয়াস?

আমার আজ রাতেই গাড়িটা প্রয়োজন। তোমাকে নিয়ে বেরোবো।

জো দাঁতে দাঁত চেপে বলল, গাড়ি আজ রাতে পাওয়া যাবে না। তারপর নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল, ঐ চেয়ারে বসে ও কে?

ক্রেস্টার হেসে বলল–কেন জো একে চিনতে পারছো না? এ করনেলিয়াস। তুমি কি ওকে ভুলে গেলে?তারপর পাগলাটে ছোট ছোট চোখ নিয়ে নিশ্চল মূর্তিটার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখো জো তোমায় চিনতে পারছে না। জো এদিকে এসে দেখে যাও।

জো মাথা নেড়ে বলল,না, মিঃ করনেলিয়াস মৃত। আর আমি তো আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।

ক্রেস্টার বলল–না করনেলিয়াস শীঘ্রই আবার হেঁটে চলে বেড়াবে।

জো পালিয়ে যাবার চেষ্টা করল। কিন্তু ক্রেস্টার তার কব্জির ওপর চেপে বসল–জো এটা খুবই গোপন ব্যাপার। তুমি আমাদের পরিবারের একজন। এসব কথা কাউকে ফাস করবেনা।

সম্মোহিতের মতো জো চেয়ারের দিকে এগিয়ে যেতে ক্রেস্টার আলোটা তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল,করনেলিয়াসকে ভাল দেখাচ্ছে জো?

জো ভয় পেয়ে জোর করে করনেলিয়াস-এর দিকে তাকালো। দেখতে পেল সেই নিষ্প্রাণ দেহের মুখটা তার দিকেই চেয়ে রয়েছে। মুখটা হাঁ করা, ফ্যাকাসে জিভ আর হলদে ছোপ দাঁত দেখা যাচ্ছে।

তীব্র কটু গন্ধে জো অসুস্থতা অনুভব করল। তার বমি পেল। ঘাম ঝরতে লাগল।

–তুমি শীঘ্রই হেঁটে চলে বেড়াবে।ওরা তোমাকে জুমবিবলে বলুক।কবরের ঐ ঠাণ্ডার চেয়ে আমার কাছে থাকা ভালো।

ক্রেস্টার-এর প্রলাপ শুনে জো-এর মনে হল লোকটা বোধহয় পাগল হয়ে যাবে। ঝড়ের মতো ঘর থেকে বেরিয়ে ছুটতে ছুটতে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল।

কিছুক্ষণ পরে ভয়টা সহজ হতে সে চিন্তা করে বুঝল–রোলোরা বুঝিয়েছে যে তারা করনেলিয়াসকে আবার জীবন্ত করে দিতে পারে। বদলে ক্রেস্টার তাদের মিলিয়ন পাউন্ড দেবে। কিন্তু মৃতকে কখনও জীবন্ত করা সম্ভব নয়। ওরা ধোঁকা দিয়ে ক্রেস্টারের সমস্ত পয়সা হাতিয়ে নিয়ে ওকে ছিবড়ে করে ছাড়বে।

জো হাত মুঠো করে ঠিক করল এবার থেকে ক্রেস্টারের বেরোনোই বন্ধ করে দেবে। যেকরে হোক ক্রেস্টারকে ওদের খপ্পর থেকে বাঁচাতেই হবে। কালো জামা পড়া লোকটার ভয় ও মন থেকে তাড়াতে পারছেনা। ঐ লোকটা মিলিয়ন ডলার হাতাবার জন্য পারেনা এমন কাজ নেই।

রাত দশটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি হঠাৎ তার খেয়াল হল ক্রেস্টার কি করছে দেখবে। হঠাৎ একটা সতর্ক পদশব্দ তার ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে শুনতে পেল। তারপর যেন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। জোর বুঝতে অসুবিধা হল না যে সে নিশ্চয় কিছু শোনার চেষ্টা করছে।

দরজাটা কাঁচক্যাচ করে উঠল। জোর সন্দেহ হল এখুনি বুঝি কালো জামা পরা লোকটা ঘরে ঢুকে পড়বে। না, কেউ এলো না।

এবার পদশব্দটা ফিরে চলল। এবার সতর্কভাবে নয়, বেশ জোরে জোরেই।

ভয়ে জো চীৎকার করে উঠল, কে? কে ওখানে? একটা গাড়ির শব্দে জো দরজার দিকে ছুটে গেল। দরজা খুলতে পারল না। লকটা জ্যাম হয়ে গেছে। জানলার কাছে ছুটে এসে দেখল ড্রাইভওয়েতে রোলস রয়েসটা ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে আর গাড়ি চালাচ্ছে ওয়েডম্যান।

বুচ কঠিণ চোখেসন্দেহের দৃষ্টিতে শেলির দিকে তাকিয়ে ছিল। সে নিশ্চিত জানতো যে ক্রেস্টার ওয়েডম্যান ক্লাবে গিয়েছিল। বুচকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। শেলি ক্লাব থেকে ফিরতেই সে তাকে ধাওয়া করেছে।

আগে পুরো ঘটনাটা জানতেই হবে।

–মাটির পুতুলের মতো শুয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি এখানে এসো।

ঠোঁটে সিগারেট রেখে শেলি উদাসীনভাবে শুয়ে ছিল বিছানাতে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে খুবই চিন্তামগ্ন আর বিষাদগ্রস্ত।

এ ব্যাপারে নাক গলাবার দরকার নেই। ওয়েডম্যানের ইচ্ছে তার ভাইকে জীবন্ত করবে। সে বিশ্বাস করে ডাক্তার এটা পারবে।

বুচ মাথার চুলে আঙুল চালিয়ে বলল, টাকার বিষয়ে কি কথা হলো?

শেলি চীৎকার করে বলল কোন কথাই হয়নি।

–তুমি কি ভাবছো আমি এত বোকা?

 তুমি কি সে টাকাটা নিজে দিতে চাইছো?

–তুমি আমাকে কেন অহেতুক সন্দেহ করছো? বলছি তো এ ব্যাপারে আমাকে কিছু করার নেই। ডাক্তার আর রোলো সব কিছু করছে।

-গিলোরী কেন এসেছিল?

–ডুডুর ব্যাপারটা ঐ তো করবে।

–টাকার লেনদেনের সময় আমি হাজির থাকবো। ওয়েডম্যানের কাছে দুমিলিয়ন পাউন্ডটা কিছুই নয়।

–এটা রোলোর নিজস্ব ব্যাপার। এ বিষয়ে তোমার কিছু বলার নেই।

মনে হচ্ছে তুমি চাও না যে আমি কিছু পাই।

বুচের গলা অসম্ভব ঠাণ্ডা।

তার মুখে নিষ্ঠুর হাসি। শেলি বুঝতে পারলে আর কথা বলা ঠিক হয়নি।

–তুমি তো জানো আমি ঐ জগত থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা করছি।

–তাহলে তোমাকে আগেই খুন করবো।

 –পাগলামী কোরনা মাইক। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি?–হেসে বলল শেলি।

বুচ মুখ বিকৃত করে বলল, তোমাকে কি করে মারবো জানো? হাঁটুর ওপরে শুইয়ে তোমার শিরদাঁড়াটা ভেঙ্গে দোব। যাতে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে তোমার সাতদিন সময় লাগে।

শেলি মুখের হাসি বজায় রেখে বলল, যাক ছাড়ো না ওসব কথা। ওসব নিয়ে মাথা খারাপ কোরনা। আমিও এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করব।

হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে শেলি বলল,ও! এসব কথা ভুলে যাও মাইক। যাও বাড়ি যাও। আমিক্লান্ত।

— মাইক শেলিকে জড়িয়ে ধরল–আমি যখনই আসি তখনই তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়। বেশ ঠিক আছে আমি ধৈর্য ধরতে জানি। তারপর শেলিকে সরিয়ে দিয়ে বলল, ওয়েডম্যানের ভাইয়ের মৃতদেহটা ওর বাড়িতেই আছে, না?

শেলি হঠাৎ শক্ত হয়ে গেল। জানি না। কেন?

ধর আমি গিয়ে মৃতদেহটা লুকিয়ে ফেললাম। ওটা না পেলে কোন কিছুই করতে পারবে না কেউ। ওটা ফিরে পেতে গেলে ওয়েডম্যানকে আরও কিছু টাকা খরচ করতে হবে।

শেলির চোখ বড় বড় হয়ে উঠল-তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? তুমি কখনও এরকম কাজ করতে পারো না।

-কেন পারবনা? মৃতদেহটা লুকিয়ে ফেলতে পারলেই একমিলিয়ন ডলার আমি পেতে পারি।

শেলি সরে গেল যাতে বুচ ওর মুখের ভাব বুঝতে না পারে। তুমি কি পাগলামী করছে বুচ! এসব করলে সব কিছু ভেস্তে যাবে এই ভেবে বলল-বোকামী কোরনা। তুমি রোলোর কত কাছের লোক। এসব করলে রোলোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকরা করা হবে। এটা ঠিক নয়।

–এটাই ঠিক। আসলে এসবঝাটে তুমি নিজেকে জড়াতে চাও না, তা বেশ। আমি একাই করব।

–তোমার সাহস হবে এসব করার? শেলি হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল।

বুচের মুখ হিংস্রতায় ভরে উঠল। শেলিকে মারবার জন্যে সে হাত তুলল। ঠিক সেই সময় কলিংবেল বেজে উঠল।

কারোর আসার কথা আছে?

–না।

–তাহলে বাজিয়ে যাক। বেল বাজিয়ে বাজিয়ে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়বে। বেল আবার দীর্ঘসময় ধরে বেজে উঠল।

–জাহান্নামে যাক।

—জানালায় আলো দেখে বুঝতে পারছে আমি আছি।

বেলটা অবিরামভাবে বেজে উঠল।

–অসহ্য! পাগল হয়ে যাব নাকি? দেখি কে এল। বুচ অটোমেটিক একটা ভোতা নাকের পিস্তল নিয়ে ভয়ালভাবে দাঁত বের করে হেসে বলল–দেখো, সাবধান। যাকে তাকে ঢুকিও না।

–আমি কাউকেই ঢুকতে দোবনা।

 বুচ কাঁচ লাগানো আলমারিটা দেখিয়ে বলল, আমি ওর ভেতরে লুকচ্ছি। নেহাৎবাধ্য না হলে দরজা খুলবে না।

বেলটা অবিরাম বেজে চলেছে। শেলিনীচে নেমে গেল।

দরজাটা সামান্য ফাঁক করে শেলি দেখল একটা ছায়ামূর্তি।–কে?

–তুমি কি স্নান করছিলে, নাকি তোমার প্রেমিক তোমায় এতক্ষণ ধরে রেখেছিল? ডাক্তার মার্টিন প্রশ্ন করল।

–ডাক্তার আপনি এতরাতে এখানে? কম্পিত কণ্ঠে শেলি প্রশ্ন করল।

 দেওয়ালে ঠেস দিয়ে ডাক্তার বলল, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

না, এখন আমি কথা বলবনা। আমি জামাকাপড় পরে নেই।

–ওতে আমার কোন ভাবান্তর হবেনা। আমি চোখ বন্ধ করে থাকব, কাপড়-জামা ছাড়া তোমাকে একটা হাড়গিলে ইঁদুর মনে হবে।

দূর হয়ে যাও মাতাল, লম্পট।

–শেলি!

না।

–তাহলে কি রোলোকে বলব বুচ তোমার প্রেমিক?

পাগলের মত কি যা তা বকছ!

চল, চল আমাদের কিছু কাজের কথা আছে, ডাক্তার শেলিকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে এল।

ডাক্তার আলমারীর দিকে পেছন ফিরে আর্মচেয়ারে বসল আর শেলি ফায়ার প্লেসের কাছে দাঁড়িয়ে। আলমারীর ফাঁক দিয়ে বুচ জ্বভঙ্গী করল।

–মিটিংটা বেশ মজার তাই না। একটু কায়দা করে চললে আমরা বেশ কিছু টাকা কামিয়ে নিতে পারি।

এক অশুভ আশংকায় শেলির বুক ধুকপুক করছিল, সে কোন কথা বলল না।

দুর্ভাগ্যক্রমে টাকাটা পেতে দেরী হবে। অথচ বেশ কিছু টাকা আমার এখুনি চাই। পাওনাদাররা ছিঁড়ে খাচ্ছে। তোমার নিশ্চয়ই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা, আমি কি বোঝাতে চাইছি।

–তুমি আমাকে ব্লাকমেল করতে চাও? বদমায়েস।

রোলোকে নিশ্চয় তোমার অবিশ্বস্ততার কথা আমায় বলতে হবেনা। রোলো তোমায় কুড়ি হাজার পাউন্ড দেবে বলছে। তাই না!

শেলি বুঝতে পারল বুচ তার কঠিণ দৃষ্টি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে এবং প্রতিটি কথা শুনছে।

বুচ আমার কেউ নয়। কোন প্রমাণ নেই।

–আছে আছে। বুচ এসে দুবার হর্ণ বাজায়।

শেলি রাগে অস্থির হয়ে বুচের দিকে তাকালে। বুচ আলমারী খুলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল।–হ্যালো ডক!

ডাক্তার ঘুরে বুচের দিকে তাকালো। বুচের চোখ ঠিকরে আগুন বেরিয়ে আসছে। বুচ শেলির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আবার বলল–হ্যালো ডক্। তোমার কাছে সব প্রমাণ আছে না?

না না। আমি ঠাট্টা করছিলাম। ডাক্তারের গলা কাঁপছিল।

–নিশ্চয়। তোমার মত শিক্ষিত লোক শেলিকে কি করে ব্লাকমেল করবে, আমি ভাবছি তাই।

নিশ্চয়। ডাক্তার প্রাণপণে হাসবার চেষ্টা করল।

 বুচ শেলিকে বলল, যাও তুমি স্নান করতে যাও। ডাক্তারের সঙ্গে আমার একটু কথা আছে।

 বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শেলি বললস্নান করব!

 ডাক্তার ঠেলেঠুলে উঠেচলে যেতে চাইল। আমি যাচ্ছি। আমি আর তোমাকে বিরক্ত করতে আসব না।

ডাক্তার, বস। নরম গলায় বুচ বলল।

–ডাক্তারের সারা শরীর যেন অসাড় হয়ে এল, সে ঝপ করে চেয়ারে বসে পড়ল।

শেলিকে দরজার দিকে ঠেলে দিয়ে বলল যাও স্নান সেরে এস। জল বেশি গরম কোরনা। আমি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলি।

শেলি ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমে জলের কল খুলে দিল।

–কিহে ডাক্তার। এবার নিশ্চয়ই ভুল বলে ফেলেছে! কিন্তু তোমার কি জীবন সম্বন্ধে ক্লান্তি এসে গেছে?

ডাক্তার ভয়ে কেঁপে উঠল। তার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোল না।

পরের বার এরকম কথা বলবার সময় সাবধান থেকো।

ধীরে ধীরে ডাক্তার উঠল। ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, পরের বার মানে? মানে, আমি এখন যেতে পারি?

বুচ খেঁকিয়ে উঠল। তোমায় মেরে ফাঁসিতে ঝোলবার ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু তুমি যদি তোমার ঝাঁপ খোলার চেষ্টা কর, তাহলে আমি গলায় দড়ি পরার ঝুঁকিটা নেব।

আমি রোলোকে কিছু বলব না। শুধু একটু মজা করছিলাম আর কি! হিস্টিরিয়া রোগীর মত ডাক্তার বলে।

যাও ভাগো বুড়ো বাঁদর কোথাকার। তোমায় দেখলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

ডাক্তার দরজার দিকে তাড়াতাড়ি পাবাড়াল, যেতে যেতে শেলিকে দেখে একটু থামল। শেলির মুখে প্রচণ্ড আতঙ্কের ছায়া। সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল ডাক্তার। হঠাৎ শেলির গলা দিয়ে অস্ফুট একটা শব্দ বেরিয়ে আসায় ডাক্তার পিছন ফিরল। মুহূর্তের জন্য প্রবল এক আতঙ্কের মধ্যে দেখল বুচ দুহাতে একটা কম্বল নিয়ে তারই দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে তীক্ষ্ণ চীৎকার করে ঝাঁপিয়ে সেসিঁড়িটা পার হতে চাইল। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে।ঝকরে তার মাথার ওপর কম্বলটা এসে পড়ল আর সে জড়িয়ে একটা পুটলীতে পরিণত হয়ে গেল। পুটলী বাঁধতে বাঁধতে বুচ বলল–ডাক্তার তোমার আর ফেরা হল না। সবাই ভাববে তুমি জলে ডুবে মরেছে। অসহায় পুটলীটা হাতে ঝুলিয়ে নিল।

শেলি ভয়ে আর্তনাদ করে বলে উঠলনা, কোরনা, কোরনা। তুমি পাগল হয়ে গেছনাকি।

সরে যাও কালো কুত্তী।বুচ এক লাথি মেরে শেলিকে ফেলে দিল। হুমড়ি খেয়ে পড়ল সে।

 বুচ বাথরুমে ঢুকে বাথটবের কাছে দাঁড়ালসহজভাবেনাও ডাক্তার। যত সহজভাবে নেবে তত তাড়াতাড়ি মরতে পারবে।

বাথটবের জলে কিছু পড়ার শব্দটা না শোনার জন্যে শেলি বাথরুমের দরজাটা লাথি মেরে বন্ধ করে দিল।