৪. রোকো চুল আঁচড়াল

০৪.

স্যুট পরে রোকো চুল আঁচড়াল। নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে দেখল। মেইজি ভুল করে কিছু ফেলে যায়নি। একটা মধুর পাত্রী মেইজি যাকে রোকো খুব পছন্দ করে।

প্যারাডাইস ক্লাবে সে এলো। রোকো উপরে উঠে মেইজির দিকে তাকিয়ে, কোন্ ঘরে মেয়েটা আছে?

মেইজি বলল, তাতে তোমার দরকার কি?

 বললে আরো একশো ডলার পাবে।

পাগলামী করো না। তাতে বিপদ আছে।

বেশ, আমি উপরে গিয়ে দেখি। মনে রেখ তুমি কিছুই জান, না, কিছু দেখনি।

রোকো উপর তলায় চলে গেল। মেয়েটা ভয়ার্ত চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইল। হাতল ঘুরিয়ে করিডোরের শেষ ঘরটা খুলল।

মিস ব্লানডিস বিছানায় শুয়ে ধূমপান করছে। ঘরে একটা টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে।

রোকো বলল, বোধহয় ভুল করে ঢুকে পড়েছি।

মিস ব্লানডিস দুচোখ বুজে বললেন, আপনি চলে যান।

তুমি কে?

মনে করতে পারি না। মনে করতে চাইও না।

আমি জানি তুমি কে।

কি চান আপনি। এখানে এসে ঠিক করেন নি। ও পছন্দ করে না।

শহরের বাইরে গেছে। ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না।

আপনি চলে যান। আপনাকে দেখলে বুড়িটা আমায় মারধোর করবে।

তোমাকে ওরা ঘুমর ওষুধ খাইয়েছে বলে তুমি কে আর কেনই বা এখানে এসেছ মনে করতে পারছ না। রোকো কয়েক পা এগিয়ে গেল।

মিস ব্লানডিস বলল, আমাকে ছোঁবেন না। এখান থেকে যান, আমি ঘুমাতে চাই।

শোন তোমার নাম ব্লানডিস। তোমাকে এখানে চারমাস আগে ধরে আনা হয়েছে। পুলিশ ও তোমার বাবা তোমায় খুঁজছে। কি তোমার নাম ব্লানডিস নয়?

ব্লানডিস? না না ওটা আমার নাম নয়।

রোকো বিছানায় উঠে ব্লানডিসকে ঝাঁকিয়ে বলল, তোমার নাম ব্লানডিস। তোমাকে এখানে ধরে আনা হয়েছে।

মিস ব্লানডিস স্মরণ করতেই পারল না।

বেশ তুমি ঘুমোও। আমি আবার আসব।

রোকো নীচে এসে দেখল মেইজিকে হিস্টিরিয়া রোগীর মত দেখাচ্ছে। সে বলল, আমি ভয়ে আধমরা হয়ে গেছি তুমি কি করছ?

মেইজিকে টাকা দিয়ে সময় আর অর্থ দুই নষ্ট করেছি আমি।

তুমি দেখছি কৃপন নও।

মা প্রিসন রোকোকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন। রোকো, বলল, শুভ সন্ধ্যা, মা। মেইজিকে বলছিলাম ওকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে।

মা বললেন, আমার মেয়েদের কোন ঝামেলায় জড়াবে না। বলে উপরে চলে গেলেন।

রোকো বলল, ভয়ের কিছু নেই।

মেইজি বলল, আর এরকম কোরো না।

রোকো স্টুয়ার্ড ডগ ক্লাবে ঢুকল প্যারাডাইস ক্লাব থেকে বেরিয়ে। মদের অর্ডার দিল, তখন রাত দশটা।

মিস ব্লানডিসের যাতে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে এমনভাবে মা ঘরে ঢুকলেন। মেয়েটাকে আটকে রাখার পরিণাম ভালো করেই জানেন আর স্লিমের মনের ইচ্ছাও জানেন। তিনি ভাবলেন আর কতদিন এভাবে চলবে।

 ক্লাব জনশূন্য। মেইজি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, মা নিচে নেমে এলেন। বললেন, অপরিচিত লোক থেকে সাবধানে থেকো। লোকটা আমাদের পছন্দ করে না, ঝামেলা করতে পারে।

মেইজি বলল ঠিক বলেছেন। আমি ওকে একেবারেই পছন্দ করি না।

মেয়েদের পক্ষে লোকটা ক্ষতিকারক।

মেইজি চলে গেলে, মা ওপিকে বললেন, ব্লানডিসকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে এসো। আমি ওকে প্রস্তুত করে দিচ্ছি।

ওপি বলল, আজ রাতে না ঘুরলেও তত চলবে।

বড় রাস্তায় যাবেনা, কারুর সঙ্গে কথা বলবে না, জোরে হাঁটবে। আর বন্দুকটা সঙ্গে নিয়ে যাবে।

ওপি বলল, কাজটা তো এডি করতে পারে।

এডি অ্যানার সঙ্গে বাড়ি গেছে। তুমিই ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসো।

 মা ব্লানডিসকে বললেন, যাও বাইরে থেকে ঘুরে এসো।

মিস ব্লানডিস পোশাক পরে নিল। মা ভাবলেন, অতিরিক্ত ওষুধ মেয়েটাকে শেষ করে দিয়েছে।

ওপি তোমায় নিয়ে যাবে। কোনরকম বেয়াড়াপনা করবে না। করলে মার খাবে। এদিক-ওদিক তাকাবে না। তাড়াতাড়ি হাঁটবে। ওপির কোন ঝামেলা হলে বুঝতেই পারছে।

ওপি মিস ব্লানডিসের কনুই ধরে বলল, এসো। তারপর তারা রাস্তায় দ্রুত, পায়ে হাঁটতে লাগল।

একটা গলিতে রোকো দাঁড়িয়েছিল, ওপি আর ব্লানডিসকে দেখে বুঝল স্লিম এখনো ফেরেনি। ওপিকে কাবু করা সহজ, সে চুপিসাড়ে পিছু নিল। রোকো ওপির মাথায় আঘাত করতেই সে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল।

রোকো তার হাত ধরে বলল, আমায় চিনতে পারছ? গাড়ি আছে চল তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাবো।

আমাকে ছেড়ে দাও। আমি ফিরে যাব নইলে বুড়িটা আমায় মাররে।

বুড়িটা তোমার নাগাল আর পাবে না। মিস ব্লানডিস কেঁদে ফেলল, রোকো তাকে জোর করে গাড়িতে বসাল।

রোকো ফ্ল্যাটে ঢুকে নিশ্চিন্ত হলো। ব্লানডিস অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে। রোকো বলল, শান্ত হয়ে বসো।

আমাকে কি করতে হবে?

তোমাকে ওষুধ খাওয়ানো হয় বুঝতে পারছ তো? বার বার বোঝাবার পর মনে হল তার স্মৃতি জাগছে।

ব্লানডিস হরণের খবরের কাগজগুলো দেখাতে সে সাগ্রহে তাকিয়ে রইল।

মিস ব্লানডিসকে তার বাড়ির ফোন নাম্বারটা জিজ্ঞাসা করাতেই সে নাম্বারটা বলতে পারল।

স্লিম ও ক্লিন গাড়ি থেকে নামল। ডক গ্যারেজে গাড়ি রাখতে গেল।

এখন সকাল আটটা বাজে।

 মা দাঁড়িয়ে তার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ। মেয়েটা পালিয়ে গেছে।

কি করে পালিয়েছে বল।

ওপি ওকে বেড়াতে নিয়ে গেছে কিন্তু এখনো ফেরেনি।

সে বন্দুক চেপে ধরে, সে জন্য তুমি কি করছো?

কি বা করতে পারি। এতক্ষণে মেয়েটা বোধহয় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেছে।

এ তোমার চক্রান্ত–তুমি ওকে খুন করেছ, তাই না?

তুমি যা ভাল বোঝ কর।

 চারঘন্টা হলো ওরা গেছে।

এতক্ষণে ওরা এখানে এসে পড়ত, যদি মেয়েটা পুলিশের হাতে পড়ত। পুলিশ নয়, এর পেছনে অন্য কারো হাত আছে।

মা বললেন, রোকোকে টাকা দিতে দেখেছি মেইজিকে।

 রোকো–তাহলে ওর সঙ্গে দেখা করা দরকার।

মা বললেন, স্লিম তুমি আর ক্লিন মেয়েটার খোঁজ করো। আর ডক দেখুক বাইরের কি খবর।

ক্লিন বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল আর স্লিম মেইজির ফ্ল্যাটে ঢুকল।

মেইজি ঘুমে আচ্ছন্ন। কণ্ঠনালীতে চাপ দিতেই জেগে গেল।

 স্লিম বলল, উঠে বসো, তোমার সঙ্গে কথা আছে। গত রাতে বরাকো তোমায় টাকা দিয়েছে কেন?

রোকা আমায় টাকা দেয়নি।

 স্লিম তার মুখে আঘাত করতে, সে বলল, আমার সঙ্গে শুয়েছিল বলে আমায় টাকা দিয়েছে।

সত্যি কথা বল।

সত্যিই বলছি।

মেইজির মুখে মোজা খুঁজে হাত দুটো বেঁধে ফেলল।

ক্লিন অধৈর্য হয়ে উঁকি দিয়ে সেই দৃশ্য দেখে দুপা পিছিয়ে এলো।

স্লিম বেরিয়ে বলল, মেয়েটার কাছে খবর পেয়েছি। রোকোর ফ্ল্যাটে যাচ্ছি। ওকে সরিয়ে নাও। পুলিশ ওর কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করা সুযোগ পাক আমি চাই না।

ক্লিন বলল, জামাকাপড় পরে নাও। তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাব।

মেইজি কেঁদে বলল–আমি যাব না।

তোমাকে তো এখানে রাখা যাবে না।

আমি যাব না।

ক্লিন বন্দুক হাতে বলল, না গেলে অন্য পথ ধরতে হবে।

ভয় পেয়ে বলল, বেশ আমি যাব।

তার শরীর কাঁপতে থাকে। ক্লিন তাকে জোর করে এয়ারফ্লোতে ওঠালো। ক্লিন আর মেইজি পাশাপাশি বসল। ক্লিন মেইজির মুখে আঘাত করতেই সেগাড়ির পাটাতনে পড়ে গেল। ক্লিন গাড়ি ছোটাল।

রিসিভার নামিয়ে রাখল রোকো। মিস ব্লানডিস তখনো খবরের কাগজে ভয়ঙ্কর হরণ কাহিনী পড়ছে।

রোকো বলল, আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তোমার বাবা আশেপাশে কোথাও আছেন ওনাকে ফোনে পাচ্ছি না। তার কোন কথাই ব্লনডিসের কানে ঢুকল না। রোকো কাছে এসে তার বাহু চাপড়াল।

মিস ব্লানডিস বলল, আমাকে ছেড়ে দাও।

ভয় পেও না। নিজের ভাল চাও না?

না, না।

তুমি এদের হাত থেকে ছাড়া পেতে চাও না? তোমার বাবাকে দেখতে চাও না।

মিস ব্লানডিস কেঁদে বলল আমাকে ছেড়ে দাও।

রোকো বলল, আমাকে কিছু করতেই হবে। গুণ্ডার দল এখানে এসে পড়বে।

মেয়েটা দরজা খোলার চেষ্টা করে বলল, আমি যেতে চাই।

 রোকো তাকে টেনে এনে বলল, চুপ কর। মিস ব্লানডিস শান্তভাবে বিছানায় শুলো।

তোমাকে সাহায্য করতে চাই। অথচ তুমি এমন করছো কেন? অনেক সময় নষ্ট হয়েছে পুলিশে খবর দিতে হবে।

না, পুলিশে খবর দেবে না।

রোকো রিসিভার তুলতেই ব্লানডিস রিসিভার ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করল। সজোরে ধাক্কা মারতেই মেয়েটা পড়ে গিয়েও ফোনের তারের দিকে হাত বাড়াল।

রোকো বলল, হাত সরিয়ে নাও। নইলে তোমাকে আঘাত করতে বাধ্য হব।

সর্বশক্তি নিয়োগ করে মিস ব্লানডিস টেলিফোনের তার অচল করে দিল। রোকো কঠোর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল।

কুত্তি কোথাকার!

মিস ব্লানডিসের চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ।

এখান থেকে আমি চলে যাচ্ছি, তুমি আসতে পার–প্রিসনরা এখুনি এখানে এসে পড়বে। ওরা তোমাকে আদর করতে আসবে না। নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনলে।

না। না আসা পর্যন্ত তুমি যাবে না।

তুমি নিশ্চয়ই চাও না, ওরা তোমাকে ধরে নিয়ে যাক?

চাই না। কিন্তু ফিরে যাওয়া ছাড়া আর আমার অন্য পথ নেই, এতসব ঘটে যাওয়ার পর আমি বাবাকে মুখ দেখাতে পারব না।

সব ঠিক হয়ে যাবে। পাগলের মত কথা বলো না। এসো, রোকো মেয়েটির হাত ধরে টানল।

মিস ব্লানডিস পথ আগলালো। তুমি এখান থেকে যাবে না। আমি চাই এখানে তোমার সঙ্গে। ওর দেখা হোক।

দরজার চাবি খুলতে উদ্যত হলে মিস ব্লানডিস একটা চেয়ার দিয়ে তার মাথায় আঘাত করল। সে বসে পড়তেই আবার আঘাত করল। রোকো দরজার সামনে থেকে সরে গেল।

মিস ব্লানডিস চাবিটা জানালা দিয়ে ফেলে দিল। রোকো ডিভানে বসে পড়ল। মেয়েটা দূরে দাঁড়িয়ে।

রোকো চেঁচিয়ে উঠল–খুন করব তোমাকে। ঘড়িতে আটটা বাজে। রোকো বন্দুক থেকে গুলি বার করে ফেলল। সে ভাবল, মেয়েটা বন্দুকটা ছিনিয়ে নিয়ে কেলেঙ্কারী করতে পারে।

রোকো বলল, চাবি ছাড়া এ তালা খুলবেনা। গুলি করে তালা খুললে লোক জানাজানি হবে।

এখুনি সরে পড়া দরকার। তুমি কি এখানে বাকি জীবন কাটাবে। স্লিম না এলে?

ও আসবেই।

 ব্লানডিস দেখল রান্নাঘরের দরজা দিয়ে স্লিম ঢুকছে।

স্লিম তার পিছনে, রোকো বুঝতে পারল মৃত্যু তার সামনে। অন্ততঃ স্লিমের হাতে সে মরতে চায় না। স্লিমের ছোরা তাকে শক্তিহীন করে তুলল। ছুটে এসে ছোরাটা সব উলট-পালট করে দিল।

.

অ্যানা অনর্গল এডির সঙ্গে বকছে।

এডি বলল, তুমি নিজেকে যা নও তাই ভাব। তোমাকে ঠাণ্ডা করা দরকার।

আমি তোমাকে ভয় পাই না। রিলি তোমার চেয়ে অনেক বুদ্ধিমান।

 ঠিক বলেছ, তা রিলি এখন কোথায়?

টাকার পাহাড়ে, সেখানে তুমি পৌঁছতে পারবে না।

আজকাল তোমার সঙ্গে দেখা হলেই তুমি ঝগড়া কর কেন?

 তুমি কুঁড়ের মত বসে থাকলে আমি চলে যাব।

ইচ্ছা হলে যেতে পার। অনেকে তোমার বেশ্যাগিরি পছন্দ করে।

তুমি আমায় বেশ্যা বললে।

 না।

এডি অ্যানার মুখে এক চড় মারল। জামার বেল্ট খুলে বলল, তোমাকে একটু ওষুধ দেওয়া দরকার। বার কয়েক বেল্টের বাড়ি মারল। অ্যানা ছুটে বাথরুমে ঢুকল। এডি বাথরুমে ঢুকে তাকে বাথটবে ফেলে দিল। মেয়েটা ছটফট করতে লাগল।

এবার তুমি ঠাণ্ডা হবে। তারপর এডি বেরিয়ে এলো।

অ্যানা ঘরে এসে দেখে এডি চলে গেছে। অ্যানা উগ্র সাজে সাজলো। পিটের কাছে ফিরে গেলে খুশি হয়ে আমাকে কাজে নেবে। একটা সুটকেশ গোছাতে লাগল।

কলিংবেল বাজতে দরজা খুলে ব্রেনান আর দুজন সাদা পোশাকের লোককে দেখে আনা আড়ষ্ট হয়ে গেল।

ব্রেনান হেসে বলল, অ্যানা, তোমর সঙ্গে কথা আছে।

কি চাই? আমি তো কোন দোষ করিনি।

নিশ্চয়ই করনি। আমাদের হেড কোয়াটার্স তোমাকে কিছু প্রশ্ন করতে চায়।

ব্যস্ত আছি, যেতে পারব না।

ভয় পেও না। বেশি সময় নেব না। আমাদের সঙ্গে গাড়ি আছে।

বললাম তো আমি যেতে পারব না।

 একজন বন্দুক হাতে বেডরুমে ঢুকে জানাল এডি নেই, চলে গেছে।

বেশ চলুন, তবে তাড়াতাড়ি করবেন।

অফিসে এসে দেখল ফেনার বসে ধূমপান করছে। ফেনারকে দেখে তার চোখ স্থির হয়ে গেল।

ফেনার বলল, তোমাকে বলেছিলাম আবার দেখা হবে।

অ্যানা বলল, ব্যাপারটা কি? ও লোকটা কে?

ব্রেনান বলল, চেয়ার টেনে বস।

 অ্যানা তার ব্যাগটি চেপে ধরে বসে।

ফেনার বলল, এসেছ বলে খুশি হয়েছি। তোমাকে একটা গল্প বলব শুনে তুমি খুশি হবে।

 গল্পটা কি?

খোলাখুলি ভাবেই বলতে চাই। ব্লানডিসের মেয়েকে হরণের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাচ্ছি, তোমার প্রেমিক রিলি কাজটা শুরু করেছিল। এসব তোমার জানা। প্রিসনরা রিলির কাছ থেকে। মেয়েটাকে ছিনিয়ে নেয়। তোমার নতুন প্রেমিক সঙ্গীরা এ ব্যাপারে জড়িত। রিলি অদৃশ্য হওয়ায় তুমি ভেবেছিলে তোমায় ছেড়ে ওই মেয়েটাকে নিয়ে ফুর্তিতে মেতে আছে। তুমি এত নিশ্চিত ছিলে যে প্রিসনদের দলে নাম লেখাতে কার্পণ্য করনি। আসলে প্রিসনরা মেয়েটাকে আটকে রেখে তোমাকে, বোকা বানিয়েছে।

তাই কি হয়েছে?

ফেনার বলল, মিস বোর্গকে এক্সিবিটটা দেখাও।

 একজন পুলিশ বলল, আমার সঙ্গে আসুন।

ফেনার ব্রেনানের দিকে তাকিয়ে বলল, কাজ হবে মনে হচ্ছে।

 নারীকণ্ঠের আর্তনাদ শোনা গেল। কিছুক্ষণ পরে কম্পিত পায়ে, ভয়ে অ্যানা ফিরে এসে ধপ করে বসে পড়ল।

প্রিসনরা মেয়েটাকে হাতে পাওয়ার জন্য ওকে হত্যা করেছে। তারপর জনির আস্তানায় কবর দিয়েছে। এডি এসবের জন্য অনেক টাকা পেয়েছে। আর সেই টাকায় তোমাকে ভুলিয়ে রেখেছে। এখন তোমার সুযোগ এসেছে–আশা করি তুমি বলে দেবে কি করে ঐ ইস্পাতের তৈরী দুর্গের ভেতরে বিনাযুদ্ধে ঢোকা যায়।

অ্যানার সেখে-মুখে মৃতের মত দৃষ্টি। আপনমনে বিড়বিড় করছে।

লোকটা বিশ্বাসঘাতক। আপনাদের সাহায্য ছাড়াই আমি ওকে শাস্তি দেব। পুলিশের কাছে মুখ খুলিনি আজও খুলব না।

ফেনার বলল–একা কিছু করতে পারবে না। তেমন বুঝলে ওরা তোমায়ও সরিয়ে দেবে। তুমি সে সুযোগ দেবে কেন? বিনা যুদ্ধে কিভাবে ক্লাবের ভেতরে ঢোকা সম্ভব বল। আর কোন পথ আছে? বললে মুক্তি পাবে।

অ্যানা চেঁচিয়ে বলল–তোমরা জাহান্নামে যাও।

সময় নষ্ট হচ্ছে। ফেনার ব্রেনানকে দূরে সরিয়ে নীচু স্বরে বলল, মেয়েটাকে বশে আনতে চাই। কিছুক্ষণ ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই। তোমার লোকজনদের চলে যেতে বল।

ব্রেনান সঙ্গীদের নিয়ে চলে গেল। এখন ঘরে ফেনার ও অ্যানা। ফেনার ভাবল মেয়েটাকে বশে আনা শক্ত।

রিলি চারমাস হলো খুন হয়েছে। তারিখগুলো মিলিয়ে নাও। প্যালেস হোটেলে একমাস আগে হেনী খুন হয়েছিল, দোষ পড়েছিল রিলির উপর। ক্যারিবারের বন্দুকের সাহায্যে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল। এই বন্দুক মেয়েরা ব্যবহার করে। হেনী যেই তলায় থাকত তুমিও সেই তলায় থাকতে এবং খুব ভালবাসতে। আচ্ছা তোমার প্রেমিকের উপর হেনী কি গোয়েন্দাগিরি করত?

আপনার মাথা খারাপ হয়েছে?

হতে পারে। কিন্তু আমি জানতে চাই কে হেনীকে খুন করেছে। ব্লানডিস মেয়েটাকে ফিরে পেতে চাই। আমায় সাহায্য কর। যা জান খুলে বল।

আমাকে কি করতে হবে?

ক্লাবে গিয়ে দেখ মিস ব্লানডিস আছে কিনা। আমি ক্লাবের বাইরে অপেক্ষা করবো। মেয়েটা থাকলে বোমা চার্জ করতে পারব না। কাজটা পারবে?

কি করে পারব। ওরা মেয়েটাকে বন্দী করে রেখেছে। আমাকে ইচ্ছেমত ঘুরতে দেয়া হয় না বাড়ির ভিতরে।

চেষ্টা কর, উপায় খুঁজে পাবে।

দুজনে বেরিয়ে এলো। ব্রেনান বাইরের অফিসে অপেক্ষা করছিল। ফেনার হাঁটতে হাঁটতে চোখ টিপে ইশারা করল।

ফেনার অ্যানাকে রাস্তায় একা হেঁটে যেতে বলল, যা করবার তাড়াতাড়ি করবে।

অ্যানা প্যারাডাইস ক্লাবে অনেকবার ধাক্কা দিতে দারোয়ান দরজা খুলল। অ্যানাকে মার … মুখোমুখি পড়তে হলো। তিনি বললেন, হঠাৎ এসময় কি দরকার পড়ল।

মায়ের এমন দৃষ্টি আগে দেখেনি, অ্যানা ভয় পেয়ে বলল, এডির সঙ্গে আমার ঝগড়া হয়েছে। তাই খোঁজ করতে এসেছি ও এসেছে কিনা।

মা বললেন, এখানে আসেনি। আমি ব্যস্ত আছি। তিনি অফিসে ঢুকলেন। ঠিক সেই সময় ডক উপরে উঠে এল। ডক অফিসে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। অ্যানা ভাবলো এখানে কিছু ঘটেছে?

সে দ্রুত উপরে উঠে গেল। মা আর ডক তখনো অফিসে। এসব ব্যাপারে সে কখনো কৌতূহল প্রকাশ করেনি। এডি বলছিল শেষের ঘরটা ভাড়ার ঘর। তাই সব সময় তালা বন্ধ থাকে। ঘরের দরজা আধ ভেজান। ভেতরে কেউ নেই। সে ভাবল মেয়েটা নিশ্চয়ই ক্লাবের বাইরে গেছে, ফেনারকে বলতে হবে। একি মা উপরের দিকে তাকিয়ে সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে। অ্যানা ভয় পেল।

মা বললেন, আমি তোমায় চলে যেতে বলেছিলাম মনে আছে?

আমি এডিকে খুঁজছি।

ডক এসে মায়ের পাশে দাঁড়ায়। মা জিজ্ঞাসা করলেন, এখন কোথায় আছ।

ডক বলল, মেয়েটা জেনে গেছে।

অ্যানার কানে যেতেই সে বলল, কি বিষয়ে তোমরা বলছ, আমি জানি না।

 মা বললেন, তুমি এখান থেকে যাবে না।

নিশ্চয়ই। আমি এখানেই থাকব।

ক্লাবের বাইরে দাঁড়িয়ে ফেনার অধৈর্য হয়ে ভাবছে হয় অ্যানা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, নয় আটকে পড়েছে। ভাবল যা করবার নিজেই করব। গাড়িতে চেপে অ্যানার ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা হল।

.

মিস ব্লানডিস লক্ষ্য করল, রোকো ধীরে ধীরে হাঁটু ভেঙ্গে মেঝেতে বসে গেল। মেয়েটা দুহাতে মুখ ঢাকল, রোকো যন্ত্রণায় শুয়ে পড়ল। স্লিম বলল, আমার সঙ্গে তোমায় ফিরতে হবে।

মিস ব্লানডিস মুখ ঘুরিয়ে নিল যাতে রক্তঝরা শরীরটা না দেখতে হয়। ছোরাটা শরীর থেকে বার করে রোকোর কোটের কাপড়ে রক্ত মুছল। তারপর জানালার সামনে গিয়ে রাস্তাটা ঝুঁকে দেখল।

বেলা বাড়তে রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। যা করবার তাড়াতাড়ি করতে হবে। রোকোর চেহারা বেঁটে-খাটো। সে আলমারি খুলে কালো রঙের একটা স্যুট আর সাদা শার্ট বের করে বিছানায় ছুঁড়ে দিয়ে বলল, ওগুলো পরে নাও।

মিস ব্লানডিস জামা খুলে ফেলল। তারপর ইতস্ততঃ করে স্কার্টটাও খুলল।

সিমের বন্য দৃষ্টি তার উপর। মিস ব্লানডিস শার্টটা তুলে নিল। স্লিম শার্টটা ছিনিয়ে নিল। তার চোখে লোলুপতা, গলা থেকে গোঙানির শব্দ বেরিয়ে এলো। মেয়েটাকে ডিভানের উপর টেনে পা ছড়িয়ে উত্তেজিত ভাবে গর্জন করতে লাগল। কিছুক্ষণ সুখ ভোগ করল।

মিস ব্লানডিস যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল। সে ডিভানের চাদর খামচে ধরল।

.

অ্যানার কথা ভাবল এডি। মেয়েটার মুণ্ডুপাত করলেও মন তাকেই চাইল। মিস ব্লানডিসকে সিমের মন থেকে সরানো দরকার। এই মেয়েটার জন্যই দলের সর্বনাশ হবে।

এডি রাস্তায় নেমে ঠিক করতে পারছেনা অ্যানার কাছেনাক্লাবে যাবে। অ্যানাকে দেখার তাগিদ হতেই সে ট্যাক্সিতে চেপে বসল।

লিফট চালক এডিকে দেখে অবাক হয়ে বলল, উপরে গিয়ে লাভ নেই। আপনি চলে যাওয়ার দশ মিনিট পরে পুলিশ এসে বোর্গকে ধরে নিয়ে গেছে।

ঘাবড়ে গিয়ে এডি বলল, আমি এখানে আবার ফিরে আসিনি বুঝলে? এডি তার হাতে কয়েকটা নোট গুঁজে দিতেই সে বলল, ঠিক আছে, আপনি ফেরেন নি।

এডি রাস্তায় সন্দেহজনক কিছুই দেখল না। একটা ফোন বুথে গিয়ে ডায়াল করল।

ফেনার পিছন থেকে বলে উঠল, ফোন রেখে দাও, নড়াচড়া করবে না।

আড়চোখে এডি উদ্যত রিভলবার দেখে ফোন রেখে দিল।

 ফেনার বলল, তোমাকে দরকার।

আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকতে পারে না।

যদি নাও থাকে খুব শীঘ্রী হাতে আসবে।

এডিকে গাড়িতে তুলে নিল। বুথের পিছন থেকে দুজন পুলিশকে আসতে দেখে এডি ভয় পেল।

তারা ব্রেনানের অফিসে এলো। ব্রেনান বলল, এডি তোমাকে আমরা খুঁজছিলাম।

কি অভিযোগে আমাকে ধরে আনলেন জানতে পারি?

 জন ব্লনডিসের মেয়েকে চুরি। রিলি, বেইলী আর ওন্ডসামের হত্যার অভিযোগে।

 ভুল করছেন। আপনারা একটাও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবেন না।

ফেনার এডিকে বলল, তুমি যে রিলিকে খুন করেছ সেকথা কি ঠিক নয়?

আপনারা উন্মাদ হয়ে গেছেন।

 ফেনার তার মুখে ঘুষি মারল। এডি পড়ে যেতে গিয়ে সামলে নিল।

এভাবে কথা বলবে না। আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।

ব্রেনান বলল,আমাদের হাত থেকে ছাড়া পাবে না, যা জান স্বীকার কর। তোমার অনেককে আমরা শায়েস্তা করেছি।

এডি বলল, আপনি কে?

 ফেনার বলল, আমার প্রশ্নে যা জান তুমি উত্তর দেবে।

 ব্রেনান ঘণ্টা বাজাতেই তিনজন পুলিশ ঘরে ঢুকল।

 আমি কিছু জানি না। আমাকে ছেড়ে দিন।

যাও।

এডিকে পুলিশ একটা শব্দরোধী ঘরে নিয়ে গেল, মাটির সঙ্গে স্ক্রু দিয়ে একটা বড় চেয়ার আঁটা রয়েছে। চামড়ার ফিতে ঝুলছে চেয়ারের হাতল আর পায়া থেকে।

ফেনার বলল, চেয়ারে বস।

আপনি আমার উপর অত্যাচার করবেন না।

একজন পুলিশ রুলের একটা ঘা হাঁটুর উপরে বসাল। এডি উপুড় হয়ে পড়ে গেল। আর একজন পুলিশ পিছন থেকে লাথি মারল। তারপর চেয়ারে বসিয়ে হাত পা চামড়া দিয়ে বেঁধে ফেলা হল। ফেনার এসে জিজ্ঞাসা করল, রিলিকে কে খুন করেছে?

খানিকটা থুথু ছিটিয়ে এডি বলল, আমি তো আগেই বলেছি।

পুলিশ এডির কণ্ঠনালীর উপর এক ঘা বসাল। ফেনার বলল, না বললে কিন্তু আবার মারধোর করব।

এডি যন্ত্রণায় কাতরিয়ে বলল, জানি না। আমাকে ছেড়ে দিন। আমাকে ধরে ভুল করেছেন।

আবার রুলার মারলেও এডি মুখ খুলল না। ফেনার বলল, আরও কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে।

ইউনিফর্ম খুলে ফেলল একজন পুলিশ। এডি ভয়ার্ত চোখে তাকাল। সে বুঝতে পারল মুখ না খোলা পর্যন্ত এরা অত্যাচার চালিয়ে যাবে। শারীরিক যন্ত্রণা তাকে উন্মাদ করতে বসেছে? সে বলল, আমার উপর অত্যাচার করো না। আমি মিথ্যা বলতে পারব না।

এডি মাথা সরিয়ে নেওয়ার আগেই রুল তার মাথায় এসে পড়ল। এডি জ্ঞান হারাল।

একজন পুলিশ তার চোখেমুখে জল ছিটাতে কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান ফিরে এলো। ফেনার ইশারা করতে পুলিশ সরে গেল।

ফেনার বলল, রিলিকে কে খুন করেছে?

এডি বলল, স্লিম। সবাইকে স্লিম নিজেই খুন করেছে।

মেয়েটা কোথায়?

স্লিম তাকে আটকে রেখেছে।ক্লাবে বন্দী আছে–আমাকে আর মারবেন না–আমাকে ছেড়ে দিন।

ওকে নিয়ে যাও। যা জানবার জেনে নিয়েছি।

ফেনার অফিসে ঢুকে ব্রেনানকে বলল–মেয়েটাকে স্লিম আটকে রেখেছে।

 বুঝেছি। সময় নষ্ট না করে আমরা পুলিশ নিয়ে যাই।

ব্রেনান বন্দুকটা পকেটে ভরে বেরিয়ে চিৎকার করে আদেশ করছে।

.

স্লিম মিস ব্লানডিসকে নিয়ে নিচে নেমে এল। মেয়েটার আসল চেহারা রোকোর পোশাকে ঢেকে গেছে। স্লিমের হাতে বন্দুক। তার ধারণা মেয়েটা অবাধ্যতা করবে কিন্তু তেমন কিছু করল না। এয়ারফ্লোটা রাস্তার শেষে দাঁড় করালো। স্লিম মেয়েটার হাত চেপে ধরে এগোল।

স্লিম বলল, আমি গাড়ির দরজা খুলে ধরব তুমি গাড়ির ভিতরে ঢুকবে। পকে ছেড়ে দিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে দরজা খুলল। মিস ব্লানডিস নির্দেশমত গাড়িতে উঠে বন্সল। স্লিম তাকে মাথা নীচু করে থাকতে বলল।

প্যারাডাইস হোটেলের উদ্দেশ্যে এয়ারফ্লোছুটল।সহসা সাইরেনের আওয়াজ, স্লিম লক্ষ্য করল পুলিশ ভর্তি পাঁচটা গাড়ি তার গাড়িকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। সে গাড়ির গতি কমিয়ে নিল। গাড়িগুলোর গতি প্যারাডাইস হোটেলের দিকে। গাড়িগুলোকে সে অনুসরণ করল। গাড়িগুলি প্যারাডাইস হোটেলের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্লিম গাড়ি ঘুরিয়ে পাশের রাস্তায় যাওয়ার চেষ্টা করল। চিৎকার শুনে দেখল একজন মোটর সাইকেলে চড়া পুলিশ তার দিকে এগিয়ে আসছে। সে ব্যস্ত হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করাল। পুলিশটি এসে বলল, এত জোরে গাড়ি চালাচ্ছ কেন?

স্লিম মিস ব্লানডিসকে আড়াল করে বলল,কই জোরে চালাচ্ছি না তো। ঘেরাও করছেন নাকি?

বেরিয়ে এসো।

স্লিমের চোখ কঠিন, সে ক্লাচে চাপ দিল, পুলিশটি বলল, বেরিয়ে এসো।

স্লিমের বন্দুক গর্জন করে উঠল। পুলিশটি সামনে ঝুঁকে পেট চেপে ধরল। রক্তে লাল হয়ে উঠল। স্লিম প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি ছোটাল।

গাড়ি থেকে নামতে নামতে ফেনার গুলির আওয়াজ শুনতে পেল। দেখল ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে একটা এয়ারফ্লো ছুটে চলে যাচ্ছে। কিন্তু সে জানে তার প্রথম কাজ হবে মেয়েটাকে জীবন্ত এই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা। আহত পুলিশটির কাছে গিয়ে দেখল বেচারী মারা গেছে।

ব্রোনান বলল, লোকটা কে বলতো?

দলের কেউ হবে।

বিষণ্ণভাবে ব্রেনান বলল, পুলিশ ক্লাবের ভিতরে ঢুকতে পারছে না।

যে কোন উপায়ে ঢুকতে হবে।

আরও কয়েক গাড়ি পুলিশ এলো। ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে একটা দমকল এসে গেল। রাস্তায় জনতার ভীড়, পুলিশ তাদের সামলাতে ব্যস্ত।

বোমার আঘাতে ইস্পাতের দরজা ভাঙ্গা গেল না। ফেনার ব্রেনানকে বলল, আমাকে কয়েকজন পুলিশ দাও। পাশের বাড়ির ছাদ দিয়ে ঢুকতে চেষ্টা করি।

ফেনার কয়েকজন পুলিশ নিয়ে পাশে নাক্সহোমের ছাদে উঠে এলো। তারপর প্যারাডাইসের ছাদে নামল।

ফেনার একজন পুলিশকে বলল, তুমি যেপথে এসেছ সে পথে আরও কিছু পুলিশকে আসতে বল।

পুলিশটি ফিরে এলো।

ছাদ থেকে নেমে ফেনার করিডোরে এলো। সহসা ক্লিন বেরিয়ে এলো। ফেনার গুলি চালাল। এক ঝাঁপে বাকি সিঁড়িগুলো অতিক্রম করে নিচে নামল। ডক করিডোরে এসে ফেনারকে লক্ষ্য করে গুলি চালাল। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত পুলিশের বন্দুক গর্জে উঠল। ডক আর্তনাদ করে কোণের দিকে আত্মগোপন করল। বন্দুক তুলে ধরল কিন্তু তার আগেই চোখের তারা স্থির হয়ে গেল।

ফেনার বলল, দ্বিতীয় জন গেল। এখন মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে।

করিডোরের শেষপ্রান্তের ঘরটিতে এসে ভাবল মিস ব্লানডিস নিশ্চয়ই এখানে আছে। কিন্তু ঘর শূন্য, পালিয়ে গেছে।

তারা আবার সিঁড়ির মাথায় এলো। বাকি লোকগুলো নিশ্চয়ই এখানে আছে। বুড়িটাকেও আমরা ছেড়ে কথা বলব না।

ফেনার বলল, দেখা পেলে তোমার বন্দুকই যেন ওকে গুলি বিদ্ধ করে।

মা প্রিসন ক্লোকরুমের ঘেরাও জায়গা থেকে তাদের আসতে দেখে মোকাবিলা করার জন্য স্টেনগান তুলে নিলেন।

ফেনার ঘেরাও জায়গায় নড়াচড়া এবং স্টেনগানের সরু নল লক্ষ্য করল। সে সিঁড়ির তলায় আত্মগোপন করল। মা প্রিসনের গুলিতে তিনজন পুলিশ মারা গেল।

ফেনার বলল, শোনবন্দুক আমারও আছে। তুমি আমাকে পাওয়ার আগে আমি তোমাকে পাব। তাহলে কেন ভাল মেয়ের মত চুপচাপ হচ্ছে না।

মায়ের মুখে কটু কথা। ফেনার মাটিতে শুয়ে বন্দুকের নিশানা ঠিক করল।

ফেনার বলল, আড়াল থেকে বেরিয়ে এসো। আর যা অনিবার্য তা মেনে নাও।

মা বলুক সরিয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে ফেনারকে দেখতে পেলেন না। উভয়েই আয়নায় প্রতিফলিত দেখতে পেল।

ফেনার মাটিতে শোয়া অবস্থাতেই বলল–ঠিক ছায়াছবির মতো তাই না।

 মা বললেন, শোন বেজন্মা। আমি তোমাকে ঠিকই হাতের মুঠোয় পাব।

ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ইচ্ছে হলে চলে যেতে পার।

ব্রেনান সিঁড়ি থেকে দুজনকেই লক্ষ্য করল।

ফেনানের উপর মায়ের নজর। ব্রেনান মাকে লক্ষ্য করে বন্দুক তুলল। মা বুঝতে পেরে স্টেগান তুলে গুলি ছুঁড়লেন। ব্রেনান নিজেকে আড়াল করল।

ফেনার এই সুযোগ হাতছাড়া করলনা। সে মেঝেতে গড়িয়ে সরে গেল। বুকে হেঁটে রেস্তোরাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ভাবল স্লিম এখানে লুকিয়ে আছে। মায়ের সঙ্গে ব্রেনানের গুলি বিনিময়ের শব্দ শুনল।

ব্রেনান আলোর সুইচের জন্য হাতড়াল। সহসা রেস্তোরাঁ দেখল সেখানে কেউ নেই। সন্তর্পণে মায়ের অফিসে ঢুকল, সেখানে অ্যানা মেঝেতে পড়ে আছে, অনেকক্ষণ মারা গেছে। গুলি করে হত্যা করেছে।

সহসা হলঘরে আলো। তারপরই সব চুপচাপ। ব্রেনানের চিৎকার শুনল। ফেনার দরজার কাছে এল। ব্রেনান নামছে।

ব্রেনান বলল বুড়ি মরেছে, ওর গুলি ফুরতেই ওকে মেরেছি।

 হতাশভাবে ফেনার বলল, মেয়েটা এ বাড়ির কোথাও নেই।

ব্রেনান হেডকোয়ার্টার্সের অফিসে ফিরল। একজন পুলিশ বসে তার সারা শরীর ক্ষত বিক্ষত, পোশাক ছেঁড়া।

সে ব্রেনানকে দেখে দাঁড়াল।

স্লিম মার্ফিকে খুন করেছে। আমরা কয়েক মাইল তাকে অনুসরণ করেছিলাম কিন্তু সে আমাদের চোখে ধুলো দিয়েছে।

ও একা ছিল?

না। সঙ্গে আর একজন ছিল।

মেয়েছেলে?

না। যদি পুরুষের ছদ্মবেশে থাকে তবে আলাদা কথা। কাছে গিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি।

মিস ব্লানডিস সিটে বসে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। স্লিম এয়ারফ্লো ছুটিয়ে যাচ্ছে।

স্লিম আয়নায় দেখল দুজন পুলিশ মোটর সাইকেলে আসছে। একজন গুলি ছুঁড়ছে। সহসা গাড়ি সমেত একজন পুলিশ ছিটকে পড়ল। অন্য পুলিশটি গাড়ি থামাল। স্লিম গাড়ির গতি কমাল।

স্লিম দেখল ব্লানডিস পাথরের মূর্তির মতো বসে আছে। এই মেয়েটাকে নিয়েই চিন্তা তবুও তাকে রাস্তায় নামিয়ে দিতে পারল না। কয়েক মাইল এগিয়ে স্লিম গাড়ি থামাল। এই গাড়ি ছেড়ে এখন অন্য গাড়ি নেয়া উচিত।

স্লিম ব্লানডিসকে বলল, আমরা আর একসঙ্গে থাকতে পারব না।

অভিষ্ট সিদ্ধির জন্য স্লিমকে আরও এগিয়ে যেতে হলো। একটা গাড়ির পাশে তার গাড়ি দাঁড় করালো। দুজন মহিলা আরোহী খাবার খেতে ব্যস্ত। একজন যুবতী অন্যজন মায়ের বয়সী। স্লিম বন্দুক উঁচিয়ে বলল, তোমরাও গাড়িতে উঠে বসো। তাড়াতাড়ি, তোমাদের গাড়িটা ছিনতাই হবে।

প্রতিবাদ না করে দুজন এয়ারফ্লোতে উঠে বসল। তারা ভয় পেয়েছে। মিস ব্লানডিসকে হাত ধরে ছোট গাড়িতে বসাল। রোকোর পোশাকে তাকে বিশ্রী লাগছে।

স্লিম যুবতীকে বলল, তোমার পোশাক খুলে দাও বলছি।

সভয়ে যুবতী পোশাক খুলল। স্লিম সেগুলো নিয়ে ব্লানডিসকে ছুঁড়ে দিয়ে ছোট গাড়ি ছোটালো। স্লিম বলল খানিকটা এগিয়ে গাড়ি থামাব তুমি পোশাক বদলে নেবে।

গাড়ি থামালে মিস ব্লানডিস পোশাক বদলে নিল। আবার গাড়ি চালিয়ে একটা ছোট শহরে পোস্ট অফিসের সামনে গাড়ি থামাল।

স্লিম বলল, ফোন করতে যাচ্ছি চুপচাপ এখানে বসে থাকবে।

 স্লিম পিটের সঙ্গে যোগাযোগ করল।

পিট উত্তেজিত হয়ে বলল, তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারবনা। পুলিশ তোমাকে খুঁজছে। এখন তোমাকে সাহায্য করা মানে খাল কেটে কুমীর আনা। কানসাসে এসো না, নিরাপদ নয়।

স্লিম রিসিভার নামিয়ে ভাবল এখন সে কোথায় যাবে? চারিদিকে জাল পাতা হয়েছে তাকে ধরবার জন্যে।

রাস্তায় নেমে স্লিম দেখল একজন প্রৌঢ় লোক ব্লানডিসের সঙ্গে জানালা দিয়ে কথা বলছে। স্লিম দেখল লোকটার কোটের উপর শেরিফের ব্যাজ আঁটা। স্লিম ঘাবড়ে গেল।

কি ব্যাপার?

শেরিফ কৌতূহল জড়ান কণ্ঠে বললেন, ভদ্রমহিলাকে বলছিলাম, এখানে গাড়ি দাঁড় করানোর সময় নয়।

স্লিম জানাল, তার জানা ছিল না।

শেরিফ বলল, ভদ্রমহিলার মাথা খারাপ নাকি?

হঠাৎ মাকে হারাবার পর থেকে ও.এমন হয়ে গেছে।

মিস ব্লানডিস দুহাতে মুখ ঢেকে বসে। সে গতিবেগ বাড়াল শহরের বাইরে আসতেই মনে হল পুলিশ এই গাড়িটার খোঁজ করছে।

বনপথ ছেড়ে রাস্তা ক্রমশ পাহাড়ি পথে এগিয়ে চলেছে। কিছুদূর গিয়ে একটা মতলব উদয় হতেই সে গাড়ি থামাল।

স্লিম ব্লানডিসকে বলল, নাম। এখন আমরা হাঁটব।

স্লিম মেয়েটাকে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগল। রাস্তার বাঁকে পৌঁছে বলল, এখানে অপেক্ষা কর। ছুটে গিয়ে গাড়িটা খাদের মধ্যে ফেলে দিল। ব্লনডিসের কাছে ফিরে এসে হাত ধরে বলল, চল।

ধুলো আচ্ছাদিত পথে দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে লাগল। উপরে পৌঁছে দুজনে দাঁড়াল। স্লিম পথের পাশে বসে পড়ল।মিসব্লানডিসকে পাশে বসাল। আমরা একটা ট্রাক ধরব। গোলমাল করলে কিন্তু গুলি চালাব। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতেই হবে।

হিংস্র কণ্ঠে ক্লানডিস বলল, আমাকে কেন খুন করছ না? আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমার বাঁচার ইচ্ছে আছে?

স্লিম মেয়েটার গলা টিপে ধরল। মেয়েটা বাধা দিল না। তারপর সে পকেট থেকে রবারের লাঠি বের করে মারতে উদ্যত হলো।

ভয় পেয়ে মেয়েটা বলল, না, না, আমাকে মেরো না।

আবার আজেবাজে কথা বললে মার খাবে।

ব্লানডিস সরে গেল, ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেছে। একটা বন্য প্রাণীকে ভয় দেখালে যেমন করে সেও তেমনি শঙ্কিত চোখে লাঠির দিকে তাকিয়ে রইল।

স্লিম বলল, সঙ্গে এস।

তাঁরা হাঁটতে লাগল। সমতল রাস্তায়, পৌঁছতেই একটা ছোট লরী তাদের কাছাকাছি এসে পড়ল। স্লিম হাত নেড়ে গাড়িটা থামাল। ড্রাইভার মুখ বাড়িয়ে হাসল।

স্লিম বলল কোথায় যাচ্ছ?

জেফারসন শহরে–তোমরা দুজনে আমার গাড়িতে যেতে চাও?

স্লিম বলল, কিছু টাকা দেবো। মেয়েটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

উঠে পড়। কোথায় যেতে চাও?

আপাততঃ জেফারসন শহরে যাব।

তারা গাড়িতে বসল। স্লিম দেখল মিস ব্লনডিসের উপর ড্রাইভারের নজর।

আমার নাম জিম ও কেউক। কেউক বকবক করে চলছে। স্লিম কিছুই বলছে না। সে বলল, ও কি তোমার বউ?

তোমার জেনে দরকার কি?

কেউক রেডিও চালিয়ে দিল আর কোন কথা বলল না।

স্লিম জিজ্ঞাসা করল, কটায় জেফারসনে পৌঁছবো?

কেউক বলল, ঘন্টা খানেক লাগবে।

হঠাৎ রেডিওতে বলল, খুবই জরুরী সংবাদ জানান হচ্ছে। পুলিশ স্লিম প্রিসনকে খুঁজছে। হয়তো সে কানসাস শহরের দিকে যাচ্ছে। সঙ্গে একজন কম বয়সের পুরুষ আছে। ব্লনডিসের মেয়েকে অপহরণ আর তার দলের তিনজনকে হত্যার অপরাধে তাকে খোঁজা হচ্ছে। শেষ দেখা গেছে একটা ফোর্ড গাড়ি চালাতে। তার দেহের বর্ণনা এইরকম–ঘোষক বলে গেল। পুলিশের অনুমান তার সঙ্গী হল সেই মেয়েটি পুরুষের ছদ্মবেশে। এই লোকটি বিপজ্জনক। দেখলে পুলিশে জানান।

স্লিম রেডিও বন্ধ করে দিল। কেউক কোন কথা বলল না।

 স্লিম বলল, গাড়ি থামাবে না।

নিশ্চয়ই।

গাড়ি এগিয়ে চলল।

.

দুপুর একটা ত্রিশ মিনিট। ব্রেনান অফিসে বসে। টেবিলে একটি বড় ম্যাপ খোলা। ফেনার কানে ফোন ধরৈ বসে আছে।

একজন পুলিশ এসে বলল, মিঃ ব্লানডিস আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।

ফেনার ইশারায় পাঠিয়ে দিতে বলল।

জন ব্লানডিস ভিতরে এসে বলল, কোন খবর আছে?

ব্রেনান ম্যাপে আঙুল রেখে বলল, লোকটা এই পথে যাচ্ছে। পেছনে রেখে যাচ্ছে প্রমাণ। জানা গেছে তার সঙ্গে আপনার মেয়ে আছে। জেফারসন শহরে সব জায়গায় লোক রেখেছি। শীঘ্র ধরা পড়বে।

আপনি বুদ্ধিমানের মতই কাজ করেছেন।

আমরা এখুনি জেফারসনের দিকে রওনা দেব। ব্লানডিস বলল, আমিও আপনাদের সঙ্গে যাব।

ফেনার বলল, ওখানে.খণ্ডযুদ্ধ হবে। স্লিম জীবন থাকতে ধরা দেবে না। আপনি এখানেই। থাকুন।

মিঃ ব্লডিস বলল, মেয়েকে ফিরে পেতে চাই।

ফেনার বলল, নিশ্চয়ই পাবেন আপনার মেয়ের জীবন নিয়ে টানাটানি চলছে। আপনার চেয়ে আমরা ওকে সহজে উদ্ধার করতে পারব।

তীক্ষ্ণ চোখে ব্লানডিস বলল, বুঝতে পারছি না আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন?

আমি নিজেই ভাল করে জানি না।

কথা দিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। কথা দিচ্ছি।

আপনার উপর আমার বিশ্বাস আছে, বলেই ব্লানডিস চলে গেলেন।

 ব্রেনান বলল, ফেনার ব্যাপারটা তুমি কিভাবে চিন্তা করছ?

ফেনার বলল, মিস ব্লানডিস এই দলে চারমাস বন্দী অবস্থায় কাটিয়েছে। তুমি ওর ফটো দেখেছ? মেয়েটা সম্ভ্রান্ত মহিলা ওর চেহারাতেই বিদ্যমান। গুণ্ডা দল এত দিন কি ব্যবহার করেছে কে জানে। উদ্ধারের পর বাকী জীবন সুখী নাও হতে পারে।

ব্রেনান বলল, চল জেফারসন শহরে। একজন পুলিশ অফিসার এসে বলল, এইমাত্র খবর এসেছে-প্রিসন মেয়েটিকে নিয়ে জেফারসন শহরের বাইরে একটা খামার বাড়িতে আছে। খামারের মালিক ফোন করে বলল লোকটা যে প্ৰিসন কোন সন্দেহ নেই।

ফেনার ফোনে পলার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলল, বেনহাম হোটেলের ওপর তলায় একটা ঘর ভাড়া করে রাখ। মিঃ ব্লনডিসের মেয়েকে ওখানে নিয়ে যাব। ফোন ছেড়ে বলল মেয়েটা মারা গেলেই ভাল হতো।

ব্রেনান চলে গেলে ফেনার তাকে অনুসরণ করল।

.

আচমকা ফ্লিমের ঘুম ভেঙে গেল। সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়ে বন্দুকটা হাতে নিল। স্লিম ভাল করেই বুঝতে পারছে সে জড়িয়ে যাচ্ছে আর পালানো যাবে না। খাদ্য ও আশ্রয় মেলা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুজনে অলিগলির ভিতর দিয়ে জেফারসন শহরের বাইরে এই খামার বাড়ির গোলা ঘরে আশ্রয় পেয়েছে।

স্লিম টর্চ জ্বালাল। খানিকটা তফাতে মেয়েটা শুয়ে আছে। তার মাথার উপর হাত রাখল। ঘুম ভেঙে গেল। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট শুরু করল। স্লিমের কর্কশ ধমক তাকে চুপ করিয়ে দিল। স্লিম তার আদিম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করল।

পরে দুজনেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। রোদ আসতেই স্লিমের ঘুম ভেঙে গেল। ধড়ফড় করে উঠে কান সজাগ করল। ঘরের বাইরে কাউকে দেখতে পেল না। খামারের সদর দরজা বন্ধ, ব্যাপারটা সুবিধের নয়। তার মনটা ভীত হল।

হঠাৎ দুটো মানুষ ভর্তি গাড়িকে আসতে দেখে চমকে উঠল, তাদের মাথায় নীল টুপি। বন্দুকে রোদ পড়ে ঝকমক করছে। স্লিম ছুটে এসে বন্দুক তুলে নিল। পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে আসছে দেখে স্লিম গুলি চালাল। সামনের পুলিশটা গুলি বিদ্ধ হল অন্যরা আড়ালে গেল।

ব্রেনান আর ফেনার দ্বিতীয় গাড়ির পুলিশদের গোলার পিছন দিকে ঘিরে ফেলতে বলল। সারা বাড়িটা পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। স্লিম বুঝতে পারল জীবনের শেষ লগ্ন উপস্থিত। তাকে মরতেই হবে। ফেনার ভাবল যা করবার এখনই করতে হবে।

ব্রেনান বলল–আমরা ওকে একটা সুযোগ দেব। ও যদি ঝামেলা চায় ঝামেলা করব। সে চীৎকার করে বলল–হাত তুলে বেরিয়ে এস। প্রিসন তোমার উপর আমাদের নজর আছে। তাই ঝামেলা করো না।

স্লিমের সাড়া পাওয়া গেল না।

ফেনার বলল ও মেয়েটাকে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করবে।

ব্রেনান বলল যদি মেয়েটাকে মেরে না ফেলে তাহলে ঘটনার ইতি সহজে ঘটবে না।

স্লিম গোলাবাড়ির আড়াল থেকে নজর রাখতে লাগল। মনে মনে ঠিক করল মরার আগে কিছু লোক মেরে মরবে। ব্লানডিস ভয়ে সিঁটিয়ে রইল।

স্লিম, দেখল কয়েকজন পুলিশ একটা ঠেলাগাড়ি নিয়ে গোলাবাড়ির দিকে আসছে। গাড়িটা তাদের আড়াল করে আছে। সদর দরজা খোলা।

স্লিম হঠাৎ দৌড়তে লাগল। বেশিদূর পারল না। মেশিনগানের গুলি তার শরীর ঝাঁঝরা করল। সে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল।

ফেনার কাছে এসে দেখল স্লিম মৃত।

ব্রেনানকে রেখে ফেনার মিস ব্লানডিসকে নিয়ে গাড়ি করে চলেছে। একটা কথাও বলেনি আর তার দিকে তাকায়ওনি। ফেনার তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানাল। খুশি হল তবে সারাটা পথ কেঁদেছে।

পলার ঠিক করা হোটেলে উঠল। হোটেলের ঘর সাজানো চারিদিকে সেন্টের গন্ধ।

মিস ব্লানডিস ধীর পায়ে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ছেঁড়া মেঘের দিকে তাকাল। ফুলের গায়ে হাত বোলাল।

ফেনার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, খাবার মজুত আছে। আর কিছু দরকার আছে?

মিস ব্লানডিস মদ চাইল।

গ্লাসে মদ ভরে দিলে মিস ব্লানডিস ফোরকে চলে যেতে বলল। খাবার ইচ্ছে নেই।

ফেনার বলল বাবাকে ফোন করব?

না।

জানি এতদিন যেভাবে কাটিয়েছ, অনেক ব্যাপারে মানিয়ে নিতে হবে।

আপনি কে জানি না তবে দয়াল। একটু একা থাকতে দিন। কাল বাবার সাথে দেখা করব।

আমি যাচ্ছি, বিশ্রাম নাও। কোন ভয় নেই প্ৰিসন মারা গেছে, সব শেষ।

দাঁতে দাঁত চেপে মিস ব্লানডিস বলল, আপনি ভুল বুঝেছেন। ও মরেনি আমার মধ্যে বেঁচে আছে। কোনদিন আমায় ছেড়ে যাবে না।

ফেনার কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। কি মনে করে আবার ঘরে ঢুকল। ঘরশূন্য, মেয়েটার কোথাও চিহ্নমাত্র নেই।

.

নিচে পথচারীরা ছুটোছুটি আর চিৎকার করতে লাগল। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।

দামী পোশাক পরা এক ভদ্রমহিলা প্রিয় কুকুরকে নিয়ে মূল্যবান গাড়িতে চলেছেন। গাড়ি থামতেই বললেন, থামলে কেন গাড়ি চালক বলল, পথে কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে।

একজন লোককে ভদ্রমহিলা জিজ্ঞাসা করল, কি ঘটেছে?

বিরক্ত হয়ে লোকটি বলল–একটা পাগলি বাড়ির জানালা দিয়ে ঝাঁপিয়ে নিচে পড়েছে।

ভদ্রমহিলা দুঃখ প্রকাশ করল।