১. সূর্য মাথা তুলেছে

পয়জনাস অর্কিড

০১.

গ্রীষ্মের জুলাই মাসের এক সকালে সূর্য মাথা তুলেছে কুয়াশা সরিয়ে। মাটিতে পড়া শিশির বাষ্প হয়ে যাচ্ছে, বাতাসে গন্ধ আর গুমোট ভাব। ভীষণ গরম। বাতাসে ধুলো উড়ছে, বৃষ্টির আশা নেই।ওল্ডসামকে প্যাকার্ড গাড়িতে বসিয়ে বেইলী খাবারের দোকান মিনিতে ঢুকলো। গত রাতে বেশি মদ টেনেছে বলে গরমে সহ্য হয়নি। চোখ মুখ ফোলা রুক্ষ দৃষ্টি।

কেউ নেই মিনিতে, আসার সময় হয়নি। দোকান পরিষ্কার করছে মেয়েটা। রান্নার বাজে গন্ধ পেয়ে সে নাক বন্ধ করলো।

কাউন্টারে দাঁড়ানো সোনালী চুলের মেয়েটা বেইলীকে পিয়ানোর সুরের ঝংকার স্মরণ করিয়ে দিলো। মেয়েটি কাছে আসার আগে পর্যন্ত মনে হয় সে কোন সিনেমা জগতের নায়িকা।

মেয়েটি বলল–আমি জানি ভ্যাপসা গরমে তোমার রাতে ঘুম হয়নি, তাই না?

বেইলী ভ্রুকুটি করে স্কচ দিতে বলল। মেয়েটি একটি বোতল একটি গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল, তুমি হাসি-খুশিতে ভরা মানুষ। রাত করে খুব হৈচৈ করেছে দেখছি।

বেইলী বোতল আর গ্লাস নিয়ে একটা টেবিলে বসলো। তার দিকে তাকিয়ে থাকা সানালী চুলের মেয়েটিকে রূঢ় কণ্ঠে বলল, কাজে মন দাও, বিরক্ত কর না।

মেয়েটি শরীর টান টান করে বলল–আমি কি করলাম?

বেইলী পিছন ফিরে মাগাজিনে মন দিল। মদ খেয়েছে। শেষে ব্যাঙ্ক ডাকাতিগোয়েন্দার

মেয়েটি তাচ্ছিল্য ভরে ম্যাগাজিনে মন দিল। মদ খেয়ে চেয়ারে আধশোয়া হয়ে টুপি টেনে চোখ ঢাকলো। মনটা চিন্তিত। রিলি টাকার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। শেষে ব্যাঙ্ক ডাকাতিই করতে হবে, যদি তাড়াতাড়ি কিছু টাকা হাতে না আসে। ব্যাঙ্ক লুটের পক্ষে বেইলী নেই। পুলিশ গোয়েন্দার চারিদিকে নজর। আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা তল্লাশি করছে যখন-তখন। ওল্ডসাম প্যাকার্ডে বসে নাক ডাকছে সে এমন একটা জায়গায় রয়েছে দেখা যাচ্ছে। ঘুমন্ত লোকটার দিকে তাকিয়ে বেইলী মুখভঙ্গী করলো। লোকটা অপদার্থ। ঘুম আর খাওয়ার চিন্তা, রিলিকে আর তাকে কাজ করতে হয়। বেইলী আরও খানিকটা মদ খেয়ে সিগারেট ধরালো।

বেইলী ডাকলো–এই যে সুন্দরী একবার এসো দেখি। মেয়েটি কোমরে হাত দিয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তার গায়ের গন্ধ নাকে যেতেই মনটা কেমন করে উঠলো।

ডিম আর শুয়োরের মাংস পাওয়া যাবে?–মেয়েটির বুকে আঙুলের খোঁচা মেরে বললো। মেয়েটি চট করে সরে গেল।

সভ্য হও, রোমিও-মাথা ঝাঁকিয়ে মেয়েটি বলল, আমার সাথে শাবার আগে খুনসুটি করতে চাইছে?

বেইলীর ভাল লাগল মেয়েটির রেগে যাওয়া। মেয়েটি তাড়াতাড়ি গিয়ে অভ্যস্ত হাতে একটা ডিম ফাটিয়ে প্যানের মধ্যে দিল। বেইলী অপেক্ষা করতে লাগল। হেনী ঘরে ঢুকলো। বেইলী তার দিকে হাত বাড়াতেই হেনীর চর্বিবহুল মুখ হাসিতে ভরে উঠলো।

বেঁটেখাটো মানুষটা স্বল্প দৈর্ঘের পায়ে দ্রুত এগিয়ে বেইলীর এলিয়ে দেওয়া চেয়ারে ক্লান্তভাবে বসে পড়লো। রুমালে মুখ মুছতে লাগল তেল চিটচিটে টুপি খুলে।

বেইলী জানতে চাইলো-নতুন কোন খবর আছে?

ইতস্ততঃ করে হেনী বলল–আছে। মনে হচ্ছে তোমার কোন কাজ নেই? অবশ্য একটা কাজ আছে। বেশ বড়, কিন্তু তোমাকে দিয়ে হবে না।

বেইলী নেকড়ের মত হেসে বলল, হাতে কোন কাজ নেই হে।

কুতকুতে চোখে হেনী দেখলো বেইলী উগ্রীব হয়ে তাকিয়ে। জন ব্লানডিসের মেয়ের কথা বলল হেনী। বেইলী আড়চোখে তাকিয়ে সোনালী চুলের মেয়েটাকে দেখলো। চেয়ার ছেড়ে উঠলো নিজেকে সামলে নিয়ে। সে বলল, তোমার সঙ্গে পরে দেখা করবো।

তুমি হঠাৎ যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লে? হেনী বললো।

বাইরে অপেক্ষা করছে ওল্ডসাম। উঃ কি গরম। এমন গরম আগে দেখেছো?

মাথা নেড়ে হেনী বলল, হ্যাঁ, অসহ্য গরম।

বেইলী হাত নেড়ে দরজার দিকে গেল। সোনালী চুল মেয়েটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গালে টোকা মারল। মেয়েটা সাপের মত ফণাতুলেআঃ ভদ্ৰহওদুজনে একইসঙ্গেবলল। মেয়েটি হেসে উঠল। বেইলী প্যাকার্ডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। ওল্ডসামনাক ডাকছে। মাথায় সহস্র চিন্তা। তাহলে আবার দেখা যাবেব্লানডিসের মেয়েকে। খবরটা ছড়ালে কনসাসের প্রত্যেক মানুষ কানাঘুষা করবে। হেনীর খবর ছড়ায়। আর বাছ-বিচার নেই, প্রত্যেককে খবর পরিবেশন করে।

একটা ওষুধের দোকানে বেইলী ফোন করার জন্য ঢুকল। ফোনে রিলিকে বললো হেনী যা যা বলেছে কিন্তু রিলিকে ফোনের অপর প্রান্তে অর্ধমৃত মনে হল। তাকে অ্যানার বিছানায় বেইলী দেখে এসেছে। ফোনে রিলির কথা শুনে মানুষটাকে অসুস্থ মনে হল।

ভগবানের দিব্যি চুপ করবিলি সহসা বলল। একটু অপেক্ষা কর। কথা শুনতে পাচ্ছি না মেয়েটা চেঁচাচ্ছে।

– অ্যানার চিৎকার শোনা গেল, তারপর চড় মারার শব্দ, বেইলী মনে মনে হাসলো।

বেইলী বলল-শোন রিলি, অসহ্য গরম যাতে এখান থেকে তাড়াতাড়ি বের হতে পারি কান পেতে শুনে নাও।

অপরপ্রান্তে শোন, গরমের কথা মাথা থেকে সরাও। এখন আমার কথা শোন।

ব্লানডিসের মেয়ের খবর আছে। ঠিকই বলছি-ধনকুবের জন ব্লনডিসের মেয়ে। তোমাকে আগেও বলেছি একটা পার্টিতে বন্ধু ম্যাকগনের সঙ্গে আসবে। তুমি কিছু ভেবেছো না কি?

এখানে এখুনি চলে এসো। রিলি যেন প্রাণ ফিরে পেল। এ ব্যাপারে আলোচনা করবো–তাড়াতাড়ি এসো।

বেশ আসছি–বেইলী রিলিকে যতটা অপদার্থ ভেবেছিল ততটা নয়। রিসিভার নামিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। প্যাকার্ডে ঢুকে ওল্ডসামকে মুখ ভেঙিয়ে ওঠে। হুইলের সামনে বসতে বসতে বললো, ঘটনা শুরু হওয়ার পথে।

.

ছড়ানো চেয়ার টেবিলের মধ্যে দিয়ে বেইলী এগিয়ে গেল। গোল্ডেন স্লিপার ভাল ব্যবসা করছে। পাঁচক-পাচিকারা ট্রে হাতে নিয়ে যন্ত্রের মত ছুটছে। মানুষের চিৎকার বাজনার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। ঘরের ভিতরটা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পরিষ্কার ভাবে কিছু দেখা যাচ্ছে না। বেইলী বিরক্তবোধ করলো। পাচিকাটি তাকাল টেবিলের সামনে বসে মুখে শব্দ করতেই। ঘরের চারদিকে তাকালো এক গ্লাস হাইবল দিতে বলে। মিস ব্লনডিসের আসার সময় হয়নি। মেয়েটাকে চেনে না। তার জন্য সংরক্ষিত কোন টেবিল জানা দরকার। সিগারেটের ধোঁয়ায় কিছুই নজরে পড়ছেনা। বেইলী ধূমপান আর মদ্যপান করতে করতে চিন্তা করলো। সহসা বাজনা বন্ধ হলো। একজন মাইকের সামনে দাঁড়ালো।

একটা নিবেদন আছে আপনাদের কাছে।–লোকটি ঘোষণা করলো। মিস ব্লানডিস ও ডেরি ম্যাকগন এসে পৌঁছেছেন। আজ ওঁর জন্মদিন। উনি আমাদের মধ্যে কিছুক্ষণ অতিবাহিত করবেন। আশা করি ওঁর প্রতি আপনারা সহযোগিতা করবেন কিন্তু ভীত করবেন না। আমরা জেনেছি উনি গলায় মুক্তোর হার পরেছেন। সুতরাং মহিলারা নিজের চোখেই দেখার সুযোগ পাবেন, উনি এসেছেন।

 ঘরের প্রত্যেকের চোখ দরজার দিকে। মিস ব্লানডিস ঢোকার সাথে সাথে সাদা আলো তার উপর এসে পড়লো। তার পেছনে যে যুবক ঢুকলে সে ধোঁয়ায় ঢাকা বন্ধুদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল। বেইলী তাকে খুঁটিয়ে দেখছে, মেয়েটির রূপের খ্যাতি শুধু শুনেছিল এখন নিজের চোখে দেখল। মেয়েটার লাল চুলে আর সারা দেহে আলো এসে পড়ছে। চোখ দুটি উজ্জ্বল। বেইলী ব্লানডিসের সৌন্দর্যে একেবারে হতবাক। আজ পর্যন্ত অনেক যুবতী দেখেছে কিন্তু মেয়েটি আলাদা, খুব স্বতন্ত্র। নজর কাড়ার মতো নিষ্পাপ চেহারা।

নাচ শুরু হলো বাজনার তালে তালে বেইলী দেখলো এত মদ্য পান করেছে নাচতে পারছে না। মিস ব্লানডিস তাকে কিছু বলল। দুজনে তাদের টেবিলের সামনে গিয়ে বসলো। ব্লানডিস ম্যাকগনকে মদ্যপান করতে বারন করা সত্ত্বেও ম্যাকগন গ্লাসের পর গ্লাস পান করেই চলেছে।

হৈ চৈ করতে লাগল উপস্থিতেরা, উছুজ্জ্বল হয়ে উঠলো। কলেজে পড়া একটা ছেলে একটা মেয়ের হাত ধরে টেবিলে তুলল। কাপ ডিস ভেঙ্গে চুরমার। মেয়েটা চেঁচাচ্ছে সকলে তাকে ঘিরে চিৎকার করতে লাগলো। বেইলী দেখলো, মিস ব্লানডিস অসহিষ্ণুভাবে ম্যাকগনকে ধাক্কা দিচ্ছে। ম্যাকগন স্বলিত পায়ে তাকে অনুসরণ করলো।

বেইলী তাদের দুজনকে বেরিয়ে যেতে দেখে তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগিয়ে গেল। রাস্তায় আসতেই তার প্যাকার্ড গাড়ি এগিয়ে আসতেই সে পিছনের সীটে উঠে বসলো।

ওল্ডসাম চালক আর রিলি পাশে বসা।

বেইলী বলল,–ওরা মিনিট খানেকের মধ্যে বেরিয়ে আসবে। মেয়েটি গাড়ি চালাবে। সঙ্গের লোকটা নেশায় কাহিল।

সামনে খামার বাড়ির গেট পেরিয়ে গাড়ি দাঁড় করাবে।–রিলি ওল্ডসামকে বলল। আমাদের পেরিয়ে যাক তারপর অনুসরণ করবো। ওল্ডসাম গাড়ি ছোটালো বেইলী বন্দুক পাশে রেখে সিগ্রেট ধরালো। সামনের বাঁকে খামার বাড়ি। বাঁক ঘুরে গাড়ি একটা অন্ধকার জায়গায় থামল।

রিলি বলল রাস্তায় নেমেনজর রাখো। বেইলী নেমে কোন গাড়ি আসছে কিনা দেখতে লাগলো। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করার পর বেইলী উত্তেজিত ভাবে গাড়ির কাছে গিয়ে বলল, ওরা আসছে।

রিলি বলল–গাড়িটা একটু এগিয়ে যেতে দাও। তারপর অনুসরণ করে পথরোধ করবে।

তাদের গাড়ির আলো মিস ব্লানডিসের গাড়িতে পড়ছে। রাস্তা নির্জন ও চওড়া, পিছনের জানালা দিয়ে ম্যাকগনের মাথা দেখা যাচ্ছে।

লোকটা এত মদ খেয়েছে আমাদের কোন অসুবিধা করতে পারবে না–বেইলী বলল।

 রাস্তার পরের জঙ্গলের কাছে এলে রিলি বলল,–গাড়িটার সামনে যাও।

আরো মাইল খানেক ছোটার পর ওল্ডসাম সামনের গাড়িকে অতিক্রম করলো তারপর পিছনের গাড়ির গতিরোধ করে গাড়ি থামলো।

বাধ্য হয়েই ব্লানডিসকে গাড়ি দাঁড় করাতে হলো।

বেইলী বন্দুক হাতে গাড়ির কাছে গিয়ে বলল, বেরিয়ে এসো, আমরা ছিনতাই করবো।

গাড়ির ভেতর থেকে রিলি সব লক্ষ্য করছে। ওল্ডসাম তাকিয়ে দেখার প্রয়োজন বোধ করল না।

গাড়ির আলোয় মিস ব্লানডিস বেইলীর মুখ দেখতে পাচ্ছে না। বন্দুকের নলটা ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। ব্লানডিস রাস্তায় নেমে বেইলীকে দেখে প্রচণ্ড অবাক হয়েছে। ম্যাকগন চেঁচিয়ে কিছু বলে অনেক কষ্টে মাথা তুলল। কোনরকমে এসে ব্লানডিসের পাশে দাঁড়ালো। বেইলীর হাতের বন্দুকটা যেন ভীতিপ্রদ মনে হল।

বেইলী বলল–উত্তেজিত হয়ো না আমরা লুঠ করবো।

ম্যাকগন গম্ভীর হয়ে বলল, সাবধান, জান না তোমরা কার সঙ্গে কথা বলছে।

বেইলী ম্যাকগনকে পাত্তা না দিয়ে বলল,-মুক্তোর হারটা দাও।

মিস ব্লানডিস দুপা পিছিয়ে গলায় হাত চাপা দিল।

বেইলী বলল–ওটা খুলে দাও। নইলে জোর করে নিতে হবে।

বেইলী এগোতেই মেয়েটি চিৎকার করে উঠলো। ওল্ডসাম বন্দুক চেপে ধরলো মিস ব্লানডিসের পাঁজরায়। ম্যাকগন বেইলীর মাথায় আঘাত করতেই বেইলীর বন্দুক থেকে গুলি ছুটে গেল। সে বেসামাল হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। ম্যাকগন ছুটে আসতেই বেইলী তার চোয়ালে ঘুষি মারতেই সে ঘুরে পড়ল। তারপর ম্যাকগনকে ক্রমাগত লাথি মারতে লাগল। ম্যাকগনের কাছে মিস ব্লানডিস যেতে পারল না কারণ ওল্ডসামের বন্দুক তার শরীরে ধরা। রিলি গাড়ি থেকে নেমে এল। বেইলীর লাথি মারার শব্দ কেমন যেন। ভোতা নয়। রিলি তাকে মাড়িয়ে দিতেই মাটিতে পড়ে থাকা ম্যাকগনের দিকে সবাই তাকাল।

সে বেইলীকে বলল–কুত্তির বাচ্চা।

বেইলী লম্বা ঘাসে জুতো মুছতে লাগল। ভয় পেয়ে বন্দুক সমেত ওল্ডসামের হাত ঝুলে পড়েছে। মিস ব্লানডিস দুহাতে মুখ ঢাকলো। রিলি ম্যাকগনকে পরীক্ষা করে বেইলীকে বলল, তুমি একটা জানোয়ার, তুমি তাকে খুন করেছ।

বেইলী বলল, খুন করতে বাধ্য করেছে, তোমরা তা স্বচক্ষে দেখেছ।

খুন তাদের জীবনে এই প্রথম তিনজনেই ভাবল। রিলি মিস ব্লানডিসের দিকে এগিয়ে যেতেই মেয়েটি তার মুখ থেকে হাত সরালো।

রিলি বলল, চেঁচালে তোমার অবস্থাও এইরকম হবে। তুমি সব দেখেছ..তোমাকে মেরে ফেলতে হবে।

রিলি এগোতেই মেয়েটি পিছিয়ে গেল। গাড়ির আলোতে মেয়েটির সারা শরীর ও পা দুটো নজরে পড়তেই সে ব্যাকুল হয়ে উঠলো তাকে পাওয়ার জন্যে। তার শীতল হাত মেয়েটার নগ্ন বাহু স্পর্শ করতেই সে চিৎকার করার জন্য মুখ খুললো। রিলি তার মুখে ঘুষি মারতেই হাঁটু ভেঙে। সে বসে পড়লো। তারপর প্যাকার্ডের পেছনের আসনে ছুঁড়ে ফেলে দুজনের দিকে ঘুরে রিলি চেঁচিয়ে বলল, মৃতদেহটা জঙ্গলের মধ্যে রেখে এসো।

বেইলী ও ওল্ডসাম মৃতদেহ সমেত গাড়ি জঙ্গলে রেখে প্যাকার্ডের কাছে ফিরে এলো।

বেইলী জিজ্ঞাসা করল–মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে কি করবে?

রিলি বলল–উঠে এস, চুপচাপ বসো।

বেইলী বলল, তুমি নিশ্চয় মেয়েটাকে হরণ করে নিয়ে যাবে না?

বেইলীর কোট চেপে ধরে রিলি বলল, শোন হাঁদারাম, তুমি এসেই এই জঘন্য কাজ করেছে–এখন না হয় আমি করছি।

কোট ছেড়ে দিতেই বেইলী গাড়ির সামনে ওল্ডসামের পাশে উঠে বসলো। গাড়ির পেছনে মিস ব্লানডিস পড়ে আছে।

রিলি বলল, এটা খুনের ঘটনা। পুলিশ জানতে পারলে মৃত্যু নিশ্চিন্তু, মেয়েটা যতক্ষণ আমাদের কজায় থাকবে ততদিনই ভালো। মেয়েটার বাবা ধনী, মোটা টাকা বাগানো যাবে। শোন, আমরা এখন জনির আস্তানায় যাবো। পুলিশ কোনদিনই আমাদের খুঁজে পাবে না যদি পথে আটকে না পড়ি।

ওল্ডসাম মৃদু আপত্তি জানায়। রিলি বলল, আমাদের আর কোন রাস্তা নেই।

বেইলী বলল,–এমনিতেই বেশ গরম, মেয়েটা গরম আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

রিলি চেঁচিয়ে বলল, গাড়ি চালাও।

ঘুটঘুটে অন্ধকারে প্যাকার্ডের গাড়িকে আরও কয়েকটি গাড়ি অতিক্রম করে গেল। মিস ব্লানডিসকে তুলে সীটের কোণে বসিয়ে দিল রিলি। অনেক কষ্টে মেয়েটার গলার হারটা খুলে পকেটে পুরে নিল। আবার হাত বাড়িয়ে সিল্কের পোশাকে ঢাকা নরম আর মাংসল উরু স্পর্শ করলো। ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে রিলির মুখের উপর ফেললো।

বেইলী জিজ্ঞাসা করলো, আলো দরকার? রিলি হাত তুলে আলো আড়াল করলো। বেইলী এবার ব্লানডিসের শরীরে আলো ফেলে, মালটা ভালই কি বল?

রিলির ঘুষি খেয়ে মেয়েটার মুখে কালশিরা পড়ে গেছে, এখনো অচৈতন্য। মেয়েটা সিটের এককোনে জবুথুবু হয়ে বসে আছে। সিল্কের কালো চাদরটা পড়ে যাওয়ায় পরণের সাদা পোশাক ও হারটা নেই দেখে বেইলীর ভ্রু কুঁচকে গেল।

রিলি খিঁচিয়ে উঠল, আলো নেভাও।

বেইলী বলল, আলোর দরকার হলে বোলো।

ওল্ডসাম ঘণ্টা দুয়েক বাদে জানাল গাড়িতে তেল নিতে হবে। বেইলী মিস ব্লানডিসের ওপর আলো ফেললো মেয়েটা যেন ঘুমোচ্ছে।

রিলি বলল, আরো অনেকক্ষণ এভাবে থাকবে।

ওল্ডসাম একটা পেট্রল পাম্পে গাড়ি দাঁড় করালো। তেল ভরে ঢাকা বন্ধ করছে, সেই সময়ে একটা এয়ারফ্লো গাড়ি প্যাকার্ডের পাশে এসে দাঁড়ালো। তিনজনই চমকে উঠলো। বেইলী বন্দুকটা চেপে ধরলো। একজনদীর্ঘাকৃতি স্বাস্থ্যবান লোক এয়ারফ্লো থেকে নেমে প্যাকার্ডের দিকে তাকায়। বেইলীর ক্রিয়াকলাপও তার নজর এড়ায়নি।

সে জিজ্ঞাসা করলো, বেশ ঘাবড়ে গেছে, তাই না বন্ধু?

 রিলি জবাব দিলো–তাতে তোমার কি?

 লম্বা লোকটা গাড়িতে উঁকি দিয়ে বলল, আরে রিলি না?

 রিলি, বলল, তুমি সেই এডি না?

হ্যাঁ ঠিক ধরেছো, এডিই।–লোকটি বলল, বদমাইসির চেষ্টা করো না, ক্লিন বন্দুক উঁচিয়ে বসে আছে।

শোন, এডি আমরা কোন রকম ঝামেলায় যেতে চাই না।

এডি সিগারেট ধরালো। রিলি মিস ব্লানডিসকে আড়াল করলেও এডির নজর এড়ালো না।

সুন্দরী মেয়েছেলে বলে মনে হচ্ছে।

নিশ্চয়ই। রিলি বলল, এখন আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। পরে তোমার সঙ্গে কথা হবে।

এডি বলল সুন্দরী মেয়েছেলে বলেছি নিশ্চয়ই কানে গেছে?

 রিলি বলল, নিশ্চয়ই, তাতে হয়েছে কি?

মেয়েটা চোখ উল্টে আছে কেন? ট্যারা বুঝি? তাহলেও দেখতে ভাল। একটু উঁকি মেরে দেখলে তুমি কিছু মনে করবে নাকি?

এবার পথ ছাড়বে?

কর্কশ কণ্ঠে–মেয়েটাকে একবার দেখতে চাই। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রিলি সরে দাঁড়াল। এডি ফ্লাস লাইটের আলো মিস ব্লানডিসের শরীরে ফেলে। দামী মাল, জান নেই নাকি।

রিলি বলল–না। এখন রসিকতা রাখ, আমাদের যেতে দাও।

এডি বলল, বেশ যাও, দেখো, অজ্ঞান মেয়েছেলেটার উপর কোন সুযোগ নিও না। মনে হচ্ছে মদে আসক্তি আছে। বোতলের ঘা লেগে কপালে কালশিরার দাগ। নিশ্চয়ই নিজে করেনি।

এডি তাদের গমনের পথের দিকে তাকায়। পেট্রল পাম্পের লম্বা ছেলেটা এগিয়ে জানালা দিয়ে মাথা গলালো।

এডি জিজ্ঞাসা করতেই ক্লিন বললো ব্যাপারটা গোলমেলে মনে হচ্ছে।

এই বড়লোকের মেয়েছেলেটাকে নিয়ে করছে কি? সেটাই বা কে? নিজের মনে চিন্তা করা দরকার।

ক্লিন বলল, অনেকটা পথ গাড়ি চালিয়ে এখন একটু ঘুমের প্রয়োজন। সে সিগারেট ধরিয়ে বলল, যা করবার তাড়াতাড়ি কর। আমারও একটু ঘুমের প্রয়োজন। এডি বলল, তোদের ফোনটা কোথায়?

ছেলেটি গুমটিতে নিয়ে গেল। ফোনে স্লিমের সঙ্গে যোগাযোগ করল।

শোন স্লিম, রিলি ও তার দলবলেরা একটি বড়লোকের সুন্দরী মেয়েকে গাড়ি করে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

স্লিম বলল, ধরো মায়ের সঙ্গে কথা বলে দেখি।

কিছুক্ষণ বাদে, মা জানতে চাইছেন, পোশাক কেমন ছিল।

স্লিমের সাদা পোশাক। কালো রঙের চাদর আর বকলেশ দেওয়া জুতোন দেখে মনে হচ্ছিল কোন জমজমাট পার্টিতে গিয়েছিল। এরকম সুন্দরী এখনো দেখিনি। মেয়েটিকে দেখলে মরা মানুষেরও বদ মতলব আসবে।

শোন এডি মা বলছেন ও নাকি ব্লানডিসের মেয়ে, ধনকুবের ব্লানডিস। রিলি এরকম একটা দাও মারবে আর আমরা দেখব নাকি!

মা বলছেন, বর্তমানে এই ব্লানডিসের মেয়েটির বেশ সুনাম আছে। গোল্ডেন স্লিপার পার্টিতে যাবার কথা ছিল। রিলি বোধ হয় ওখান থেকেই দাও মেরেছে। এডি, এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। তবে রিলির জায়গা হলো জনির ডেরা।

এডি ঘোকরাকে এক ডলার দিয়ে এয়ারফ্লোতে উঠে গাড়ি চালাতে বললো। স্লিমের ধারণা বুড়ো ব্লানডিসের মেয়েটিকে রিলি উঠিয়ে নিয়ে গেছে।

ক্লিন বলল, বিদায় নিদ্রাদেবী। কি চমৎকার আমাদের জীবন।

এয়ারফ্লো এগিয়ে চলল।

ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়ল।ওল্ডসামকে গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ওরা দুজন জানালা দিয়ে লক্ষ্য করছে কেউ অনুসরণ করছে কিনা। মিস ব্লানডিসের জ্ঞান ফিরতেই সে নিজেকে রিলির থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে। মেয়েটা কিছু বলতে চাইলে রিলি তাকে চুপ থাকতে বলল। চিন্তা করল, এডি মাথা ঘামালে স্লিমকে জানাবে তখন সব বেজন্ম গুলো আসবে দেখবার জন্যে।

বেইলী ভাবছে এমন সময় সে বলল, মেয়েটাকে কি আমরা পথে নামিয়ে দেবো। চুপ করে থাকো–রিলি খিঁচিয়ে উঠল, বন্দুকটা আবার গর্জে উঠবে।

বেশ চুপ করলাম, স্লিম লাগলে ব্যাপারটা সুখকর হবে না।

এডি ওকে বলবেই আর এডি না বললেও মা প্ৰিসন জানেন কি করতে হবে।

রিলি বুঝল বেইলীর অনুমান ঠিক।

জনির ডেরার সামনে গাড়ি থামাল। বেইলী দরজায় শব্দ করতেই জনি দরজা খুলল। জনির চেহারাটা যে মদ খাবার জন্য, জনির ডেরায় যত গুণ্ডা বদমায়েশদের স্থান, অথচ পুলিসের অজানা। জনি বেইলীর দিকে তাকিয়ে মদ শেষ করছে।

জনি অবস্থা বুঝে দর হাঁকাল। রিলি গাড়ি থেকে নেমে বলল, টাকা তুমি ঠিকই পাবে। তবে এখন নয়, মেয়েছেলেটাকে পুরে রাখতে পারলে বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে। শোন জনি মেয়েটাকে জানার চেষ্টা না করে চোখ-কান সজাগ রাখবে এবং আমাদের খাওয়াতে হবে। বিনিময়ে কুড়ি ডলার পাবে। রাজি তো।

জনি পঞ্চাশ ডলারের কথা বললে রিলি ওঁর গায়ে বন্দুক, ধরে যা দেব তাই নেবে নইলে– এখুনি খাবারের ব্যবস্থা করো।

জনি ভেতরে ঢুকতেই বেইলী তাকে অনুসরণ করল।

 রিলি মিস ব্লানডিসকে নামতে বললো।

মেয়েটার ভয় এখন অনেকটা কমেছে। গাড়ি থেকে নামল।

রিলি বলল, মুক্তির বিনিময়ে তোমাকে ছেড়ে দেব। কিন্তু ঝামেলা করলে ভাগ্য পুড়বে।

 মেয়েটি বলল ফেরৎ না পাঠালে তোমাদেরই ভুগতে হবে।

বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড় কেউ খুঁজে পাবে না।

 রিলি জনিকে জিজ্ঞাসা করল-মেয়েছেলেটা কোথায় ঘুমোবে?

উপরতলায় ছোট একটা অন্ধকার ভ্যাপসা গন্ধ ঘরে তারা ঢুকল।

মেয়েটাকে রিলি বলল, নিজের ঘর মনে হচ্ছে তাই না।

মেয়েটির তীক্ষ্ণ দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রিলি বলল, কায়দা বন্ধ রাখ। তোমার মত অনেক মেয়েকে ঢিট করেছি।

 রিলি অকে বুকের কাছে টেনে এনে বলল, আমাকে একটু চুমু দাও।

মেয়েটি খাটের অপর পাশে যেতেই রিলি এই প্রথম তার হিংস্র দৃষ্টি দেখল। রিলি ভাবল মেয়েটি চিৎকার করলে বেইলী ছুটে আসবে এবং তার কামনা চরিতার্থ করতে চাইবে। তাই সে দরজা বন্ধ করে বাইরে এলো।

নিচে এসে খাবার দেখে সে ওল্ডসামকে বলল, মেয়েটিকে কিছু খাবার দিয়ে আসতে। ওল্ডসাম খুশি হয়ে কিছু খাবার দিয়ে বলল চটপট চালান করে দাও।

খাবারের থালা নিয়ে ব্লানডিস নাক সিটকাল।

ওল্ডসাম বলল, জানি এরকম বিছানা আগে ব্যবহার করনি। গাড়ি থেকে একটা কম্বল এনে দিচ্ছি। কম্বল হাতে দেখে রিলি হাসল। মেয়েদের সেবা করতে চায় অথচ নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

বেইলী খাওয়া শেষ করে সিগ্রেট ধরিয়ে আধশোয়া হল।, ওল্ডসামকে ফিরে আসতে আত্মসচেতন দেখাচ্ছে।

রিলি বলল, মেয়েটাকে ঠিকমত আটকে রেখে এসেছ তো।

 মেজাজ নরম না হলে কুত্তিটাকে আটকে রাখতে হবে বৈকি।

বেইলী বলল, একটু ঘুমিয়ে নিই।

রিলি জনিকে বলল, কেউ আসতে পারে বলে মনে হয়?

জনি মাথা নাড়ল। তার হাতে একটা শর্টগান। দেখতে নরম হলেও ততটা নয়।

জনি চলে গেলে রিলি ফোনের কাছে এল। বেইলী শুনতে পেল রিলি ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছে। একসময় রিলি মিস ব্লনডিসের ঘরে ঢুকলো। বেইলী চোখ বুজল।

রিলি পাতলা পলেস্তারার মধ্যে দিয়ে মিসক্লানডিসকে দেখতে পেল। অগোছালো বিছানা, ঘরের পরিবেশ অসহ্য লাগছে। রিলি বিছানায় বসে জুতো কোর্ট খুলল। বন্দুকটা খাপে ভরা অবস্থায় বিছানায় ফেলল ছুঁড়ে।

ঘরের আলো নেভানো থাকলেও অন্ধকার নয়। রিলি লক্ষ্য করল মিস ব্লানডিস ঘুমোচ্ছ।

মেয়েটির উপর ঝুঁকে পড়ে গলা টিপে ধরল যাতে চিৎকার করতে না পারে।

মিস ব্লানডিস চিৎ হয়ে তাকাল।

 রিলি বলল, চুপচাপ থাকো। আমার হাত থেকে তোমার নিস্তার নেই। তাই চেঁচিয়ে লাভ নেই।

মেয়েটির গলা থেকে হাত সরিয়ে রিলি মেয়েটির দুবাহু চেপে রেখে তার ঠোঁটে ঠোঁট রাখবার চেষ্টা করল। মিস ব্লানডিস মাথা সরিয়ে নিতে লাগল।

দরজা খুলে বন্দুক হাতে বেইলী দাঁড়িয়ে।

 বেইলী বলল ব্যস্ত হয়ো না রিলি। বেশী নড়াচড়া করো না।

রিলি স্থির। বেইলী বলল, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। মেয়েটার সঙ্গে শোবে বলেই আমাদের ধরে আনতে বাধ্য করেছ। যাহোক আজই আমি তার বাবার কাছে পাঠাবো।

তুমি পারবে না। ব্লানডিসকে কৃতজ্ঞতার বশে পৌঁছে দিলে তুমিই বিপদে পড়বে।

এরকম একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। জনি দরজায় এসে বলল, স্লিম ও তার দলবলেরা নীচে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে।

রিলি আর বেইলী পরস্পরের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল।

বেইলী বলল আমি বলেছিলাম স্লিম আমাদের ধাওয়া করবে।

 মেয়েটা আর মুক্তোর হারটা আমাদের কাছে আছে তা বলা যাবে না। রিলি বলল নিচে গিয়ে আটকাও আমি বন্দুক নিয়ে নামছি।

বেইলী চলে গেলে রিলি জনিকে বলল দেখবে মেয়েটা যেন চিৎকার না করে। তারপর মিস ব্লানডিসকে বলল, নিচে যে লোকগুলো এসেছে সে তোমার সৌন্দর্য বিচার না করে তোমায় ভেঙে দেবে। স্লিমকে মানুষের পর্যায় ফেলা যায় না। অস্তিত্ব গোপন রাখতে চাইলে চিৎকার করবে না।

মিস ব্লানডিস ভীতির সঙ্কোচ দেখাল। দোতলার বারান্দা দিয়ে তাকাতেই নিচের লোকগুলো তার দিকে তাকাল এডিও আছে। ওপি আর ডক ফ্লিমের দুপাশে দাঁড়াল।

স্লিমের বোকা চেহারা আর এক ছদ্মবেশ। আসলে সে একজন অমানুষ।

অল্প বয়স থেকেই স্লিম খুনি। আসলে তার রক্তেই খুনের নেশা। তার খুনের পেছনে আছে, অর্থের নেশা। লেখাপড়ায় কোন আকর্ষণ ছিল না। স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়ার সপ্তা খানেকের মধ্যেই একটি ছাত্রীকে বাড়ি থেকে অনেক দূরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখা যায়। এর পেছনে ছিল স্লিম। তবে কেউ স্লিমকে ফায়ার করার আগেই মা প্রিসন ছেলেকে শহরের বাইরে পাঠিয়েছিলেন।

একটা জুয়ার ক্লাবে কাঁচ পরিষ্কারের চাকুরী পেয়ে মাদকদ্রব্য আমদানী রপ্তানী দলে জড়িয়ে পড়ে। সে লক্ষ্য করল দলের লোকগুলো প্রচুর পয়সা কামাচ্ছে। সে তখন হাত পাকাল। সব বাজে কাজই করতে তার অসুবিধা হল না। দলপতি হওয়ার পর মা প্রিসন তাকে নিজের কাছে নিয়ে এল। সে নিজের ছেলেকে একটা সমাজ বিরোধী গড়ে তুলল।

রিলি কোটের পকেটে হাত ঢুকাল। স্লিম তারদিকে তাকিয়ে হাসছে।

এডি বলল-শোন রিলি আমাদের আশা করনি তাই না?

সত্যি তোমাদের আগমন বিস্ময়ের।

এডি জিজ্ঞাসা করতেই রিলি বলল, ওকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছি। বেশীক্ষণ অজ্ঞান ছিল না। শোন রিলি, ওই সুন্দরীকে গোল্ডেন স্লিপার থেকে এনেছিলে তাই না।

না,না। ওকে ইজির রান্নাঘর থেকে পেয়েছিলাম। কাজের তদারকি করছিল। একটু মজা করতে ওকে এনেছিলাম। কিন্তু খুব ভয় পেয়েছে দেখে ছেড়ে দিলাম।

তাকে দেখে তো সম্ভ্রান্ত মনে হচ্ছিল।

সিনেমার যুগে সব মেয়ের পোশাকেই তাকে সম্ভ্রান্ত মনে হয়।

স্লিম জিজ্ঞাসা করল, জনি কোথায়?

উপরে।

 স্লিম এডিকে বলল, ওকে ডাকতে।

জনি তার হাত ধরে টেনে নীচে নামল। একমাত্র ক্লিনের দৃষ্টি রিলি আর বেইলীর উপর। জনির সঙ্গে আবার মিস ব্লানডিস উপরে উঠে দরজা বন্ধ করল। দরজা বন্ধ হতেই ডক ওপি, এডি আর ক্লিন নিজের বন্দুক হাতে তুলে নিল।

স্লিম আদেশ দিল ওদের হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নাও। ওক ওল্ডসামের বন্দুক কাড়তে বন্দুক উঁচিয়ে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে ক্লিনারের বন্দুক গর্জে উঠল আর সে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল।

হিংস্র অভিব্যক্তি নিয়ে স্লিম একবার রিলি ও বেইলী, ওল্ডসামের দিকে তাকাল।

 স্লিম চেঁচিয়ে বলল–ওকে সরিয়ে নাও।

ডক আর ওপি ওল্ডসামের দেহ বাইরে রেখে এল।

এডি রিলিকে বলল, যা জানতে চাইব সত্যি বলবে। মেয়েটা কে?

রিলি বলল, আমি জানি না।

তাহলে আমি তোমাকে জানাই, ও জন ব্লানডিসের মেয়ে। তুমি ওকে এনেছ মুক্তোর হারটা নেবার জন্য। রিলির পকেট থেকে মুক্তোর হারটা স্লিমকে দিল।

এডি দোতলায় মেয়েটার ঘরে ঢুকল।

মিস ব্লানডিস জানালার সামনে দাঁড়িয়ে, দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকল।

এডি বলল, শোন খুকী, আমাদের সঙ্গে তোমাকে যেতে হবে।

 মিস ব্লানডিস বলল, দয়া করে আমাকে বাড়ি যেতে দাও।

একখানা হাত ধরে এডি বলল, এসো। কোন ভয় নেই।

যদি টাকা চাও আমার কাছ থেকে দেব। ওই লোকগুলোর কাছে আমায় নিয়ে যেও না। বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।

আমি তো সঙ্গে রইলাম কোন ভয় নেই।

মিস ব্লানডিস বলল, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ। বাবাকে ফোন করছ না কেন। উনি টাকা দেবেন–তোমাদের।

দরজা খুললে মিস ব্লানডিস এডিকে অনুসরণ করল।

 এডি দোতলায় উঠতেই স্লিম বলল ক্লিনকে, ওদের বাইরে নিয়ে যাও।

ডক আর ক্লিন-বেইলী আর রিলিকে বাইরে নিয়ে গেল। স্লিম পিছনে গেল। হাতে দুটি লম্বা দড়ি। শুনতে পেল রিলি চিৎকার করছে।

ভয়ে বেইলী ফ্যাকাশে হয়ে আছে। একটুকরো ফাঁকা জায়গায় স্লিম তাদের দাঁড় করালো।

সে বলল, ওদের গাছের সঙ্গে বাঁধ।

ডক রিলিকে দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধল। রিলি নিজে বাঁচবার চেষ্টা করল না।

বেইলী স্বেচ্ছায় এগিয়ে গিয়ে গাছে কাঁধ দিয়ে দাঁড়াল, ডক তার দিকে এগিয়ে যেতেই সে তার পেটে এক লাথি মেরে গাছের নিচে নিজেকে আড়াল করল।

স্লিম চেঁচিয়ে বলল, ওকে মেরে ফেল না। ওকে জীবন্ত চাই।

ডক ঘাসের উপর শুয়ে কাতরাচ্ছে। ক্লিন গাছলক্ষ্য করে এগিয়ে গেল। স্লিম একটা ছুরি হাতে অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে। বেইলী পালাবার পথ খুঁজতে ক্লিনের সামনে পড়ল। তাকে লক্ষ্য করে ঘুষি চালাতে স্লিম এগোতে লাগল। দুজনের ব্যবধান যখন কয়েক গজ তখন স্লিমের ছুরি গিয়ে বিধল বেইলীর গলায়।

বেইলীর মৃত্যু প্রত্যক্ষ করল স্লিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে।

রিলি চিৎকার করে বলল–আমাকে খুন কর না। ভগবানের দিব্যি আমাকে ছেড়ে দাও।

স্লিম হাসল। রিলির জামা ট্রাউজারের তলা থেকে বের করতেই ছেঁড়া অংশ দিয়ে রিলির পেট বেরিয়ে এলো।

স্লিম বলল–এই ছুরিটা তোমার পেটের ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। তোমার মৃত্যু অনেক দেরীতে হবে।

রিলি বলল, আমার শরীরে এভাবে ছুরি চালিও না। ভগবানের দিব্যি। না করো না…….

স্লিম হাসছে। ছুরিটা রিলির তলপেটে। ছুরিটা পেটে ঢোকাতেই যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেল। কিন্তু তার দড়ি তাকে ধরে রাখল।

স্লিম কয়েক ফুট দূরে ঘাসের ওপর সিগারেট ধরাল। রিলির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি মরতে থাক বন্ধু।