১২. বাড়ি তল্লাশি

১২.

বুদ্ধিটা হারমাসের মাথাতেই এলো। বললো এক কাজ করো জেনস মিসেস বারলো বাড়ি ফেরার আগেই আমরা আর একবার ওদের বাড়িটা তল্লাশি করে আসি।

কিন্তু কি জন্য তল্লাশি?

বাঃ পিস্তল দুটো খুঁজতে হবে না?

বারলোর বাড়িতে গিয়ে বারলোর ঘরখানা দুজনে আতিপাতি করে খুঁজতে লাগলেন।

হারমাস কার্পেট তুলে মেঝের প্রতিটা অংশ ঠুকে ঠুকে পরীক্ষা করলো। হঠাৎ একখানা কাঠ হাতের চাপে সরে গেল। হারমাস পকেট থেকে টর্চ বের করলেন। হাত ঢুকিয়ে কুঠুরি থেকে একে একে সব কটা জিনিসই তিনি বার করে আনলেন। ৩৮ বোরের রিভলভার, রবারের দুটি পিণ্ড এবং একটি সাদা মানের টুপি।

তিনি স্নানের টুপিটার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললেন টাক মাথা উন্মাদ, তারপর জেনসনের দিকে তাকিয়ে বললেন আমার হিসেবে একটুও ভুল হয়নি। বারলেই তোমার সেই গ্লিন হিল-এর খুনী। এই তার অস্ত্র আর ছদ্মকেশ।

জেনসন পুলিস দপ্তরে ফোন করলেন। লোকজন এসে পলিথিনের প্যাকেট, টুপি, রবারের পিণ্ড নিয়ে চলে গেল। ব্যালিস্টিক রিপোর্টে জানা গেল এই অস্ত্র দিয়েই গ্রিন হিল এর হত্যাকাণ্ড সমাধা হয়েছিল।

.

তখন সন্ধ্যে ছটা। অ্যানসন অফিস থেকে বেরোতে যাবে হারমাস এসে ঢুকলেন।

হারমাস বলল আমি শুনলাম মিঃ বারলোকে নাকি আপনি বলেছিলেন যে নগদে প্রিমিয়াম দিলে পাঁচ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়।

না মিঃ হারমাস আমি ছাড়ের কথা ভুলেও বারলোকে বলিনি। আর বলবোই বা কেন? কোম্পানীর নিয়মের বাইরে কথা বলবার এক্তিয়ার তো আমার নেই।

কিন্তু মেরিওয়েদার তো বলেছেন যে বারলো নাকি পাঁচ হাজারের বীমা করেছেন এবং এর প্রিমিয়াম দেবার জন্য দেড়শ ডলার ব্যাঙ্ক থেকে তুলেছেন।

আমি অতোশত জানি না মশায়। একটা চিঠি পেলাম, গেলাম দেখা করতে। তিনি বললেন পঞ্চাশ হাজারের বীমা করাবেন, করালাম। হতে পারে উনি পরে মত বদলে বেশি টাকার পলিশি করার সিদ্ধান্ত নেন।

আচ্ছা মিঃ অ্যানসন আপনাকে দেখা করতে বলার সেই চিঠিটা সেটা একটু দেখাবেন।

দুঃখিত মিঃ হারমাস। কাজ শেষ হয়ে গেলে চিঠিগুলো আর আমরা রাখি না।

আচ্ছা মিঃ অ্যানসন গত তিরিশে সেপ্টেম্বর রাতে আপনি কোথায় ছিলেন?

কেন, এ প্রশ্ন কেন?

 এমনিই জানতে ইচ্ছে করছে।

একটা ডাইরি বের করে পাতা উল্টে অ্যানসন বললে তিরিশে সেপ্টেম্বর আমি অফিসেই ছিলাম। রাত এগারোটা অবধি একটানা কাজ করেছি। তারপর বাড়ি ফিরে গেছি। বিশ্বাস না করলে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

না না, তা কেন করতে যাবো। দেখুন মিঃ অ্যানসন ভেবে চিন্তে দেখলাম টাকা দিতে আমরা বাধ্য। আপনার কথাই ঠিক। জেল খেটেছে বলে টাকা আটকানো ঠিকহবে না। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো টাকাটা না দিলে এখানকার ব্যবসা আমাদের খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ম্যাডক্স আসুক। আমি দরকার হলে তার সঙ্গে লড়ে যাবো।

ম্যাডক্স এখানে আসছেন নাকি, কবে?

 আজ সন্ধ্যায়। আচ্ছা আপনি আজ বাড়িতে থাকবেন তো?

হ্যাঁ কাজ শেষ করে বাড়িতেই যাবো।

হারমাস উঠে দাঁড়ালেন। বললেন ওঃ আপনাদের এখানকার দোকানদার গুলো দেখছি জিনিসপত্রের গলাকাটা দাম নেয়। নইলে দেখুন এই একটা পেপার ওয়েট, এই বলে একটা পলিথিনে মোড়া পেপার ওয়েট বার করে অ্যানসনের হাতে দিল, বলল দেখে বলুন তো এটার কত দাম হতে পারে।

পলিথিনের মোড়ক খুলে অ্যানসন পেপার ওয়েটটা হাতে নিয়ে দেখে বলল কত আর বড়জোর দশ ডলার।

আর বলছি কি মশাই, কান মূলে একুশটি ডলার নিল। বলে মোড়কটা অ্যানসনের কাছ থেকে পকেটে পুরে হারমাস গুডনাইট জানিয়ে বিদায় নিলেন।

অ্যানসন ভাবলেন ছিঃ ছিঃ মেগ কি কাণ্ডটাই না করলো। আমাকে লুকিয়ে…আগে জানলে এ পথে আর পাই বাড়াতাম না।

একটু পরে ঘরে ঢুকলো জাড় জোন্স।

আরে জোন্স কেমন আছো?

আপনার সঙ্গে একটা জরুরী কথা ছিল।

 কাল বললে হয় না।

না। মিঃ অ্যানসন আপনি স্টিভ হারমাসকে চেনেন তো। একটু আগে উনি আপনার সম্বন্ধে আমাকে নানারকম প্রশ্ন করছিলেন।

আমার সম্বন্ধে।

আমি ওকে বলে দিয়েছি যে তিরিশ তারিখ রাত এগারোটা অবধি আপনি অফিসেই ছিলেন টাইপ করছিলেন, কি ঠিক বলিনি?

হ্যাঁ ঠিকই তো বলেছে। বেশ এটা না হয় কাটালো। কিন্তু পুলিসের লোক আসলে কি বলবো?

একই কথা বলবে।

কিন্তু পুলিসের কাছে মিথ্যে বলার যে অনেক অসুবিধা। সে রাতে তো আপনি অফিসে ছিলেন না।

এ কথা কেন বলছ জোন্স?

সে রাতে সিগারেট খেতে গিয়ে দেখি যে প্যাকেটটা খালি। ভাবলাম যাই আপনার কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে আসি। দরজা ধাক্কালাম, নাম ধরে ডাকলাম সাড়া নেই। তারপরে সঙ্গের চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম দেখি আপনি নেই। টেপ চলছে। ওঃ শব্দখানা দারুণ।

অ্যানসনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠল। ফাঁসির দড়ি আর এড়ানো গেল না।

অ্যানসন ম্লান হাসল। তুমি ঠিকই ধরেছ। তবে বারলোর মৃত্যুর ব্যাপারে আমার কোন হাত নেই।

সে জানি, আপনি ভদ্রলোক আপনি খুনের ব্যাপারে থাকবেনই বা কেন, এবার কিন্তু আমি পুলিসের কাছে সত্য কথাই বলবো। তা আপনার তাতে কোনো অসুবিধে হবে কি?

হ্যাঁ তা একটু অসুবিধে হবে বৈ কি, আসলে একজন গৃহবধূর সঙ্গে লটপট চলছে বুঝলে।

বুঝলাম, আসলে মেয়েদের ব্যাপারে ভাগ্যটা আপনার বরাবরই ভালো। ঠিক আছে আমি নয় একটু ভেবে দেখি পুলিসের কাছে কি বলবো।

অ্যানসন বলল এক কাজ করো জোন্স তোমাকে আমি একশো ডলার দিচ্ছি তুমি বরং ব্যাপারটা ভুলে যাও।

ভুলে যেতে তো আমিও চাই কিন্তু আমার এক হাজার চাই তাহলে ভুলে যেতে পারি, কারণ বউ অসুস্থ তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা চাই। তাহলেই আমি সব ভুলে যাবো।

না জোন্স ব্ল্যাকমেল করতেই এসেছে। আনসন বলল আমি হাজার ডলার কোথা থেকে পাবো।

না মিঃ অ্যানসন ওর কম আমার হবে না। ঠিক আছে, অ্যানসন ইতস্ততঃ করলে দিন দুয়েক সময় দাও, আমাকে, আমি তোমায় হাজার ডলারই দেবো।

অ্যানসনের চোখ দুটো জ্বলে উঠল। এরপর সে গেলো হর্নবির দোকানে গাড়ির চাকার দাম মেটাতে।

হর্নবি বললো পুলিস এসে জানতে চাইছিল কে চাকা পাল্টেছে কবে পাল্টেছে, আমি আপনার কথা বললাম।

ভালই করেছ বলেছে।

.

ম্যাডক্স বলল দ্যাখো অ্যানসনকে আমি কোনদিনই সুনজরে দেখিনি। সব সময় ওর চোখ যেন জুলজুল করছে।

জেনসন একটা সিগারেট ধরালো। হারমাসও চুপ করে রইল তারা দুজন এখন শ্রোতা, ম্যাডক্স বক্তা।

ম্যাডক্স বলল, তাহলে আমরা জানলাম, মিসেস বারলোর শোবার ঘরে অ্যানসনের অবাধ যাতায়াত ছিল। বারলোর রিভলভারের বাক্সটায় তার হাত পড়েছিল। ফে ললি আমাদের বলেছে মেয়েমানুষ আর ঘোড়ার পিছনে টাকা উড়িয়ে অ্যানসন নিঃস্বহায় হয়ে পরেছিল। বাজারে অনেক দেনাও করেছিল। মনে হয় মেগই অ্যানসনকে রিভলভার দেয় সেই রিভলভার দিয়ে অ্যানসন পেট্রল পাম্পে ডাকাতি করে বারলোর প্রিমিয়াম ও নিজের দেনা শোধ করে। গাড়ির চাকাও অ্যানসন বদল করেছে। যাও অ্যানসনকে অ্যারেস্ট করো।

না, ওকে অ্যারেস্ট করার আগে আমাদের আরো ভাবতে হবে। অন্যভাবে কায়দা করে ওকে ধরতে হবে। আপনি গিয়ে মিসেস বারলোর দাবীটা মিটিয়ে দিন।

কি বলছ হারমাস?

হারমাস বলল অ্যানসনকে আমি বলেছি আমরা মিসেস বারলোর দাবী পূরণের চেষ্টা করবো, আর বললেই তো আপনাকে টাকা দিতে হচ্ছে না। শুধু মুখে বলুন।

তারপর।

তারপর আর কি নাটক জমবে। মেগ অ্যানসনকে একটা পয়সা দিতেও রাজী হবে না।

ঝগড়া ঝাটি হাতাহাতি চলবে, আমরা বারলোর বাড়ীর গোপনস্থানে ছোট মাইক্রোফোন আর টেপ রেখে আসবো, ব্যস খেল খতম। তখন আর ওরা ছাড়া পাওয়ার পথ পাবে না।

ম্যাডক্স-এর মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে বলল বুঝলে জেনস এই জন্যই আমার হারমাসকে এত ভাল লাগে।

অ্যানসন বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছে। সারা ঘরময় পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল অ্যানসন দৌড়ে গেল।

হ্যালো, হারমাস বলছি। ম্যাডক্স মিসেস বারলোকে টাকা দিতে রাজী হয়েছেন।

 ধন্যবদ, অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। মনটা বেশ হালকা লাগছে।

 স্বাভাবিক, আপনারই তো মক্কেল, আচ্ছা খাওয়াটা কিন্তু পাওনা রইল, এখন ছাড়ছি।

.

মেগ হাতের শিকটা দিয়ে আগুনটা একটু খুচিয়ে দিল। ঘরটা ক্ষণিকের জন্য উজ্জ্বল আলোয় ভরে গেল।

মেগ ঘরের চারিদিকে তাকাল। একদিনে ঘরটা একটুও বদলায়নি। এখন শুধু সে আর গেলার।

বিকেলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সে সোজা এখানে চলে এসেছে, এসেই গেলারকে ফোন করেছে। সে দশটা নাগাদ আসবে।

গেলার এলে সে গেলারের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করল, গেলার তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল টাকা কবে পাচ্ছো?

জানি না।

 অ্যাটর্নীকে ফোন করেছিলে?

না।

মেগ মুখ তুলে বলল–কিন্তু অ্যানসন তার কি হবে।

 কিছুই হবে না। আগের মতই ইনসিওর করাবে। মেয়ে আর ঘোড়ার পিছনে টাকা ওড়াবে, সে পরে ভাবা যাবে।

না, পরে নয় জেরী, অ্যানসন বলল আর টাকা বলো দুই-ই তোমার, তুমিই সামলাবে আমি পারবো না।

টাকা পেলে তুমি সব টাকা আমার হাতে তুলে দেবে। ও এলে ওকে এক পয়সাও দেবো না।

না অত সহজে হবে না জেরী ও একটা খুনে, দু-দুটো খুন করলো।

খুন করা যেন মুড়ি মুড়কি না? চুপ করে বলছি তখন থেকে শুধু এক কথা। দেবো ঘা কতক লাগিয়ে আর যদি বেশী প্যানপ্যান করো তো।

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল। গেলার বললো এসময় আবার কোন নাগর এলো।

 যাও দেখে এসে গিয়ে।

 আবার কড়া নাড়ার শব্দ হল। আগন্তুক অধৈৰ্য্য হয়ে পড়েছে।

অ্যানসন ফটকের বাইরে গাড়ি রেখে নুড়ি বাঁধানো পথ ধরে এগোল। বাগানে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকটা গাছে ফুল ফুটেছে, সে যেন ফুটতে হয় তাই ফোঁটা। সেই দীপ্তি আর নেই। মাথা চাড়া দিয়ে আগাছাও কিছু উঠেছে।

রাত সাড়ে এগারোটা। বসবার ঘরে আলো জ্বলছে। সে এগিয়ে কড়া নাড়ল। কয়েক মুহূর্ত নীরব কোনো সাড়া নেই। তারপর মেগ দরজা খুলে দিল। মেগ দাঁড়িয়ে রইল দরজার ওপাশে।

সেই প্রথম দিনের মেগ, তার স্বপ্নের রাণী। শুধু সেদিনের নীল চোখের কোলে আজ কদিন আগেকার দুর্ঘটনার ক্ষতচিহ্ন।

মেগ বলল এমন অসময়ে তুমি! না না তুমি, এখন যাও বলে দরজা বন্ধ করতে গেল।

অ্যানসন হাঁটু দিয়ে এক গোত্তা মারল মেগের পেটে, মেগ ছিটকে মেঝেতে পড়ে গেল। অ্যানসন ঘরে ঢুকলো। তারপর বসার ঘরে ঢুকল।

দেখল দুটো খালি গ্লাস টেবিলে পড়ে রয়েছে। বুঝতে পারল যে সে ছাড়াও আরও একজন বাইরের কেউ এ বাড়ীতে আছে।

পকেটে হাত ঢুকিয়ে সন্তর্পনে দু-আঙ্গুলে রিভলভারের নলটা আবার স্পর্শ করলো।

পায়ে পায়ে মেগ এসে ঘরে ঢুকল, তার চোখের দৃষ্টিতে আতঙ্ক, চোয়াল শক্ত। মেগ জানলা বন্ধ করে বলল তুমি কি চাও?

অ্যানসন মেগের দিকে তাকিয়ে বলল মেগ তুমি তাহলে আগাগোড়া আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। তুমি বেশ্যা, জেল ফেরত কয়েদী জানলে এতদূর এগোতাম না।

তুমি এখান থেকে বেরিয়ে যাও।

না। আমাদের বোঝাপড়া এখনও শেষ হয়নি। তুমি কি জানো তোমার এই অন্যায়, অতীত ইতিহাস সব কিছু জানা সত্ত্বেও কোম্পানী আগামীকাল তোমাকে পঞ্চাশ হাজার ডলার দিচ্ছে।

মেগ কি একটা বলতে গিয়ে বলল না। সে অ্যানসনের দিকে তাকাল। তারপর বুক ভরে শাস নিল।

অ্যানসন বলল তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে মেগ এই কাজে নামার আগে আমাদের মধ্যে শর্ত ছিল যে আমি বারলোকে দিয়ে ইনসিওর করাবো, তাকে খুন করবো তারপর টাকা পেলে অর্ধেক টাকা সমেত তুমি আমার হবে। কিন্তু এখন আমি শুধু অর্ধেক টাকা চাই। তোমাকে চাই না। মেগ এর চোখে ঘৃণার ছায়া নামলো। এখন আর অ্যানসনকে তার ভয় নেই। তার কাছেই আছে গেলার। সে বলল–তুমি একটা আধলাও পাবে না। যা করবার করতে পারো।

অ্যানসন বলল–বোকামি কোরো না মেগ। আমার টাকা আমাকে দিতে তুমি বাধ্য, যদি না দাও তাহলে….

রান্নাঘরের দরজাটা খুলে গেল। গেলার হাসতে হাসতে বেরিয়ে এল, এই যে দোস্ত তা মেয়েদের ওপরে না করে আমার সঙ্গে এসো না সমানে সমানে হয়ে যাক।

গেলার এগিয়ে এলো। মেগ ধীরে ধীরে পিছলো। অ্যানসন অবাক চোখে গেলারকে দেখলো, ও তাহলে এই ব্যাপার।

অ্যানসন বলল বীর গেলার হেগান এবং শ্রীমতী মেগ বারলো বাঃ জুটিটা দেখছি বেশ। তোমাকেই পুলিস হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে বারলো হত্যার অপরাধে।

ছিঃ ছিঃ অমনভাবে বোলনা, প্রথমে সেই রকমই মনে হচ্ছিল, কিন্তু আমার জব্বর অ্যালিবাই এর সামনে আর তারা মুখ খুলতে পারেনি। এখন তারা অন্য পথ ধরেছে। তোমারও তো সে রাতের জব্বর অ্যালিবাই আছে তাই না?

আমার কথা আমাকেই ভাবতে দাও। শোন পঁচিশ হাজার ডলার আমার চাই। কারণ শুরু থেকে কাজটা আমাকেই করতে হয়েছে। সুতরাং পঁচিশ হাজার আমি পেতেই পারি।

গেলার হো হো করে হেসে বলল, পঁচিশ হাজার, শোনো দোস্ত, তোমার খেল খতম। জন অ্যানসন আমাদের কাছে এখন একটা মাটির ঢেলা, ইচ্ছে হলে পায়ে চেপে গুঁড়িয়ে দিতে পারি, ছুঁড়ে ফেলতে পারি।

অনর্থক টাকার আশা কোরো না। সত্যি কথা বলতে গেলে সবই মেগ এর কৃতিত্ব, টাকাও তাই পুরোটা ওর।

অ্যানসন বলল-মেগই তাহলে সব করেছে, সব ওরই প্রাপ্য।

আলবাত। তুমি কি ভাবো সবাই তোমার মত ভেড়া?

মেগ বলল আঃ জেরী কি আবোল-তাবোল বকছো আর এত কথার দরকারই বা কি?

দরকার আছে বৈকি মেগ। ছাগলটাকে সব বুঝিয়ে দিই, তা দোস্ত টাকার কথা ভুলে যাও পরে দেখা হলে তোমাকে নয় একটা সিগারেট কিনে দেবো।

কিন্তু পুলিস তোমাকে ধরলো কি ভাবে? কেনই বা ভাবলো যে তুমি বারলোকে খুন করেছে।

দেখো কাণ্ড তাও জানো না। ওরা যে এ বাড়ীতে এসে হাতের ছাপ, টাকা সব তুলে নিয়ে গেছে। বসার ঘর, শোবার ঘর, দেয়াল আলমারী কিছু বাদ দেয়নি। আমার হাতের ছাপ তারা এখান থেকেই পেয়েছে। তোমারটাও পেয়েছে হয়তো। তা পেল তো বয়েই গেল। আমার ভাল অ্যালিবাই আছে।

অ্যানসন বলল শোবার ঘরের ছাপও ওরা নিয়ে গেছে।

জেনসন তো সেরকমই বলল। অ্যানসনের হঠাৎ মনে হলো যে সে বড় অসহায়। সে যেন, ভীষণভাবে ঠকে গেছে। হারমাস-এর কথা তার মনে পড়ল। সেদিন সেই পেপার ওয়েটটা আমাকে দেখতে দিল। আমিও কিছু না ভেবে হাত দিলাম। তাতে আমার হাতের ছাপ পড়েছে। পুলিশ দপ্তরে আমার হাতের ছাপ। মেগের ঘরে কয়দিন আমিও রাত কাটিয়েছি সেখানেও হাতের ছাপ পড়েছে। এছাড়াও আমার বিরুদ্ধে পুলিসের কাছে আরও প্রমাণ আছে। গাড়ির চাকা পাল্টাবার ব্যাপার। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের বৃিতি। এখন আর ম্যাডক্স এর বুঝতে বাকী নেই। কে মেগ এর প্রেমিক।

তার মস্তিস্কের কোষে কোষে যেন আগুন ছড়িয়ে পড়ল।

দু-হাতে মাথার চুল মুঠো করল অ্যানসন, ধপাস্ করে সোফায় বসে পড়ল।

ইস্ কি বোকামিই না করেছি, হারমাস আগামীকাল টাকা দেবে বললো অমনি আমি ছুটে এলাম। আসবো যে এত জানা কথা, ম্যাডক্স আর হারমাস নিশ্চয়ই তা বুঝে আগে থেকে কোন ব্যবস্থা নিয়েছে, আমিও তাতে ধরা দিয়েছি।

সে ভয় মিশ্রিত দৃষ্টি নিয়ে চারিদিকে কি যেন খুঁজতে লাগল। গেলার এবং মেগ অ্যানসনের ব্যাপার দেখে অবাক হল। অবশেষে গেলার বলল দেখো বন্ধু….

অ্যানসন তাকে হাত তুলে থামতে বললো। উঠে ঘরের প্রতিটা অংশ পরীক্ষা করতে লাগল।–সে দেয়াল আলমারীর দরজা খুলে, রান্নাঘরে ঢুকে সব জায়গা পরীক্ষা করতে লাগল।

 অবশেষে জিনিসটা খুঁজে পাওয়া গেল। জানলার পাশের টেবিলে রাখা রেডিওর কাঁচের পেছনে রয়েছে ছোট মাইক্রোফোনটা, সরু ফিতের মতো কালো জানলা গলে বাইরের অন্ধকারে মিশে গেছে।

অ্যানসন একদৃষ্টে মাইক্রোফোনটার দিকে তাকিয়ে রইল। আর না, খেল খতম। ম্যাডক্সকে বোকা বানাতে গিয়ে আমি কঁসির দড়ি গলায় পরলাম।

গেলার বলল,বড়ো নাটক শুরু করলে দেখছি। তোমার কি হল?

অ্যানসন তাকে হাত তুলে থামতে বলে তাকে ইশারায় মাইক্রোফোনটা দেখাল। গেলার পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল।

গেলার যেন বিশাক্ত সাপের মুখে পড়েছে। সে হাঁ করে মাইক্রোফোনটার দিকে তাকিয়ে রইল।

মেগ এগিয়ে এসে উঁকি মারল। তার মুখ থেকে প্রবল চীৎকার বেরিয়ে এলো।

অ্যানসন বলল আর কোনো উপায় নেই। আমরা ধরা পড়ে গেছি। গেলার, ম্যাডক্স বড় চালাক হে। কেমন ফাঁদটি পেতেছে। আর আমরা ফাঁদে পা দিয়েছি।

গেলার বলল আমার কিছু হবেনা। তোমাদের যা হবার হবে। কারণ আমার অ্যালিবাই জব্বর।

অ্যানসন বলল বুঝলে মেগ পাপ কখনও চাপা থাকে না। ঈশ্বরের এই পৃথিবীতে আমরা বড় অসহায়। টেপরেকর্ডারে সব ধরা পড়ে গেছে। আমাদের কথা বার্তাই আমাদের গলায় ফাঁসির দড়ি পরাবে। তবে ফাঁসির দড়ি পরবার আগে আমি নিজেই নিজেকে মুক্তি দেব এই বলে অ্যানসন নিজেকে গুলি করল। তার মৃতদেহ লুটিয়ে পড়ল।