০৮. কামরায় ঢুকলেন স্টিভ হারমাস

০৮.

বড় বড় পা ফেলে তার কামরায় ঢুকলেন স্টিভ হারমাস। দরজার পাশের পেরেকে টুপিটা রাখলেন, তারপর চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

কাল রাতে তিনি এবং তার স্ত্রী হেলেন এক পার্টিতে গিয়েছিলেন। পান-ভোজন একটু বেশীই হয়েছে, শরীরটা আজ তাই তেমন জুতসই নয়।

হারমাস গালে হাত ঘষলেন। একটা হাই তুললেন, তাকালেন টেবিলের দিকে। যথারীতি একগাদা ফাইলপত্র এসে জমা হয়েছে।

নাঃ এই বুড়োটাকে নিয়ে আর পারা গেল না। কি চোখেই সে আমাকে দেখেছে। রাজ্যের ফাইল রোজ নিয়মিত পাঠিয়ে দেবে। সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে সুচিন্তিত অভিমত দিতে হবে। শালার অভিমতের নিকুচি করেছে।

টেবিলের স্বয়ংক্রিয় টেলিফোনের সবুজ বাতিটা হঠাৎ জ্বলে উঠল। চাবি টিপতেই ভেসে এলো ম্যাডক্স-এর সেই কণ্ঠস্বর–একবার এখনি আমার ঘরে এসো।

আলো নিভে গেল। হারমাস বিরক্তির দৃষ্টিতে যন্ত্রটার দিকে তাকিয়ে একটা অশ্রাব্য গালাগালি দিলেন। তারপর চেয়ার ঠেলে উঠে অলস-মন্থর পায়ে এগোলেন দরজা পেরিয়ে ম্যাডক্স-এর ঘরের দিকে।

 প্যাটির সঙ্গে ঢোকবার মুখে চোখাচুখি হতে প্যাটি হেসে জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার মিঃ হারমাস? অমন পাচার মত মুখ করে আছেন কফির সঙ্গে মাছি গিলে ফেলেছেন নাকি?

হারমাস হেসে বললেন, আর বোলল না, চেয়ারে এসে বসতে না বসতেই, একবার এসো আমার ঘরে এখুনি, কি ব্যাপার বলো তো?

ঠিক বলতে পারলাম না। এইতো, মিনিট পাঁচেক আগে সকালের খবরের কাগজ দিয়ে এলাম ওঁর টেবিলে, কি জানি আবার কি হলো?

যাই দেখি গিয়ে। গলার স্বর শুনে মনে হল, ব্যাপার গুরুতর। কপালে আজ আমার অনেক ভোগান্তি আছে। এগিয়ে গিয়ে দরজা ঠেলে ম্যাডক্স-এর কামরায় হারমাস ঢুকলেন।

ম্যাডক্স ডেস্কের ওপাশে বসে আছেন। কপালে তার চিন্তার বলিরেখা, দু-আঙ্গুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেট, চারপাশে ফাইলের স্তূপ। সবে সকাল সোয়া নটা, অথচ দেখে মনে হয় যেন কতকাল ধরে একনাগাড়ে ম্যাডক্স কাজ করে চলেছেন।

 হারমাসকে একনজর দেখে তিনি খবরের কাগজটা হারমাসের দিকে ছুঁড়ে দিলেন। নাও এটা বসে বসে দ্যাখ।

বিপরীত দিকের একখানা চেয়ারে বসে হারমাস চোখের সামনে কাগজখানা মেলে ধরলো। প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় হরফে লেখা সংবাদ শিরোনামটি সহজেই তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।

উন্মাদের নতুন আক্রমন, আবার খুন, আবার শ্লীলতাহানি, আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

হারমাস চোখ তুলে একনজর ম্যাডক্স-এর দিকে তাকালেন। তারপর মাথা নীচু করে পড়ায় মনোনিবেশ করলেন।

পড়া শেষ করে তিনি অবাক চোখে তাকালেন, ফিলিপ বারলো তার মানে আমাদের প্রু টাউনের সেই মক্কেল।

হ্যাঁ সবেমাত্র দশ দিন হল পঞ্চাশ হাজার ডলারের বীমা করিয়েছে। আর এখন ভগবানের ক্ষেতে পটলের চাষ করতে চলে গেলো।

স্থ, তাই তো দেখছি, এখানে আর ক্ষেত খুঁজে পেলো না। গুলি একেবারে মাথার খুলি এফেঁড় ওফোড় করে দিয়েছে। বউকে ধর্ষণ করেছে, ছিঃ ছিঃ পুলিসগুলো এত দিনেও একটা সুরাহা কিছু করতে পারলো না। বউয়ের অবস্থা ভাল না, বাঁচবে কিনা সন্দেহ।

ম্যাডক্স খেঁকিয়ে উঠে বললেন থাক থাক ওগুলো আর আমাকে পড়ে শোনাতে হবে না। পড়াশুনা আমারও কম জানা নেই, ওই খবরগুলো আমি ভাল করেই পড়েছি। এখন যা বলি শোনো।

দশদিন আগে বীমা করিয়ে যে লোকটা এমন হুট করে মারা যায়, তার মৃত্যুতে স্বভাবতঃই আমার সন্দেহ জাগে। আমার কাছে ব্যাপারটা আদৌ সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না।

আপনার কাছে সুবিধের না মনে হলেও করার কিছু নেই। একথা নিশ্চয়ই আপনি বলতে পারেন না যে লোকটা ইনসুরেন্সের টাকার লোভে বেঘোরে প্রাণ দিয়েছে।

কি জানি, আমার কেমন যেন অদ্ভুত লাগছে। লোকটার সই-এর কালি এখনও ভালভাবে শুকলো না, না হারমাস গতিক সুবিধের ঠেকছে না।

 অসুবিধের বা কি? এই তো দেখুন না, খবরে পরিষ্কার লিখেছে যে ওর স্ত্রীর চোয়ালের হাড় সরে গেছে। এমন অবস্থায়

গুলি মারো তোমার অবস্থায়। অমন করে পঞ্চাশ হাজার ডলার পাইয়ে দেবার আশ্বাস কেউ আমাকে দিক না। আমিও নিঃশব্দে দশবার ধর্ষিত হয়ে দু-চোয়ালের হাড় সরিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে শুয়ে থাকবোখন। সুতরাং ওসব গাল-গল্প আমাকে শুনোতে এস না। আমি গত বিশ বছর ধরে এমন ঘটনা কম দেখিনি। উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে একটা সিগারেট ধরালেন ম্যাডক্স, ঘন ঘন কয়েকটা টানে ধোয়ার জাল রচনা করলেন। তারপর ছাইদানে আধ খাওয়া সিগারেটটা গুঁজে দিয়ে তাকালেন হারমাস-এর চোখে, তুমি বোধহয় জানোনা, সেই ডিটেকটিভ এজেন্সী কি একখানা রিপোর্ট পাঠিয়েছে বারসোর স্ত্রী সম্বন্ধে। পড়লে বুঝতে পারবে, অমন মেয়েমানুষের পক্ষে টাকার জন্য কোনো কিছু করাই অসম্ভব নয়। তদন্তে নামার আগে, হ্যাঁ ভালো। কথা, এই খুনের ব্যাপারে আমাদের কোম্পানীর হয়ে তদন্ত তোমাকেই করতে হবে।

মুখ ব্যাজার করে হারমাস অন্যদিকে তাকালেন, কই রিপোর্টটা কোথায় দিন।

দিচ্ছি। তার আগে কয়েকটা কথা বলি, মন দিয়ে শোনন। আমাদের যা কিছু করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। যদি সম্ভব হয় তাহলে আজই ব্রেন্ট-এ চলে যাও। সেখানে গিয়ে পুলিসের বড়কর্তা জেনস-এর সঙ্গে দেখা করো। তাকে বলল আমার এই ব্যাপারটায় সন্দেহ আছে। তোমার কাজে সে যেন সবরকম সাহায্য করে এই আমি চাই। জেনস লোক ভালো। তোমার বিন্দুমাত্র অসুবিধে হবে না। সে তোমাকে খুশী মনেই মেনে নেবে। জেনস হাসপাতালে গিয়ে যখন মেয়েটার সঙ্গে দেখা করবে তুমি তখন থেকো। সব সময় চোখ কান খোলা রাখবে। অ্যানসনের সঙ্গে দেখা করে বলবে বারলোর স্ত্রী দাবী পূরণের দরখাস্ত করলে আমি লড়ে যাবো। সহজে ছাড়বো না। খবরদার খবরের কাগজওলারা যেন কিছু জানতে না পারে। জেসন গ্লেন এ গিয়ে ঘটনাস্থলে একবার চোখ বুলিয়ে এসো। আর হ্যাঁ, স্ত্রীটি হাসপাতালে থাকাকালীন ওদের বাড়িটা এক ফাঁকে গিয়ে দেখে এসো, তুমি যে বাড়িতে যাবে সেটা যেন জেনস না জানতে পারে।

এতক্ষণ বেশ তো হচ্ছিল। আবার বাড়ির ব্যাপারটা আনলেন কেন?

কেন আনলাম ঠিক বলতে পারি না। তবে একটা জিনিস বুঝি, পাত্র-পাত্রীর বাড়ির চেহারা দেখলে অনেক কিছু বোঝা যায়। তুমিও হয়তো অস্বাভাবিক কিছু না কিছু একটার সন্ধান সেখানে পেতে পারো।

ঠিক আছে, উঠে দাঁড়ালেন হারমাস, তাহলে আজই আমি রওনা হই। গিয়ে জেনস-এর সঙ্গে দেখা করি।

হ্যাঁ তাই যাও আর ডাক্তার-এর রিপোর্টটাও সংগ্রহ করো। সত্যি সত্যিই মেয়েটা ধর্ষিত হয়েছে নাকি সেটা আগে জানা দরকার।

ডাক্তারের রিপোর্টে আর নতুন কি বলবে। খবরের কাগজে এক জায়গায় হাত দেখিয়ে হারমা বললো এই তো এখানেই তো সব ছবির মতো পরিষ্কার।

ম্যাডক্স তাকে হাত তুলে থামালেন আর তার চোখের দৃষ্টিতে বিরক্তির চিহ্ন ফুটে উঠল। খবরের কাগজে তো রোজ কত খবরই বেরোয়। সব খবর কি সত্যি হয়, বিশ্বাস করার মতো হয়? সুতরাং ওসব বাজে ওজর ছাড়ো। ডাক্তারের রিপোর্ট আমার চাই-চাই।

.

সকাল নটা বেজে পাঁচ। অ্যানা গারভিন অফিসঘরে ঢুকে রীতিমত অবাক হল অ্যানসনকে দেখে। একি আমি কি দেরী করে ফেললাম না আপনি বেশী সকাল সকাল এসে গেছেন।

 অ্যানসন আজ সকাল সকালই চলে এসেছে। অ্যানা আসার আগে স্বয়ংক্রিয় ঘড়িটা খুলে টেপটা সরিয়ে রেখেছে।

অ্যানার কথায় মৃদু হাসলো সে, না না তুমি ঠিক সময় এসেছে। আমিই আজ একটু আগে আগে চলে এলাম। চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিলো অ্যানসন, সকালের কাগজ দেখে মনটা বড় খারাপ হয়ে গেল। বেচারা বারলো, এই সেদিন তার ইনসিওর করালাম। বড় দুঃখের সংবাদ।

হ্যাঁ, কাগজে দেখলাম। সত্যি, ভাবতেও খারাপ লাগে। আমার তো রীতিমত ভয় ধরে গেছে। রাত্রে আর বাড়ির বাইরে আমি এক পাও বাড়াচ্ছি না। মাথা নীচু করে ড্রয়ার থেকে অ্যানা কাগজপত্র বের করলো।

অ্যানসন এগিয়ে এসে ফোন করলো প্রু টাউন গেজেট-এর অফিসে। ওপাশ থেকে সাড়া আসতেই সে লাইনটা সাংবাদিক জেফ ফ্রিসবির টেবিলে দিতে বলল।

কয়েক মুহূর্ত পর ফ্রিসবির গলা শোনা গেল হ্যালো কে বলছেন?

আমি অ্যানসন বলছি। শোনো জেফ, মৃত ফিলিপ বারলো সম্বন্ধে তুমি আজ কাগজে যতটুকু লিখেছে, সেটুকুই সব নয়। আরও আছে আমি বলি শোন, তেমন দরকারী মনে হলে খবরটা ছাপিয়ে দিতে পারো, বারলোকে দিয়ে এই দিন দশেক আগে হলো আমি এক জীবনবীমা করিয়েছিলাম। টাকার অঙ্কটা নেহাৎ কম নয়, পঞ্চাশ হাজার ডলার। খবরটা কালকের কাগজে ছেপে দিও।

ছাপবো নিশ্চয়ই, এত বড় একটা খবর না ছেপে পারি। পঞ্চাশ হাজার, বাপরে বাপ, এত একেবারে এককাড়ি টাকা। মিসেস বারলো দেখছি রাতারাতি লাখপতি হয়ে যাবেন। খুব ভালো করলে খবরটা দিয়ে, ধন্যবাদ।

পুলিস এখনও কাউকে ধরতে পারেনি, তাই তো?

হ্যাঁ, জেনস একেবারে পাগলের মতো ছুটোছুটি করছে। এখনও পর্যন্ত কোনো সূত্রই আবিষ্কার করতে পারেনি।

মিসেস বারলো কেমন আছেন?

ভালো না। ডাক্তার এখনও কাউকে তাকে দেখতে দিচ্ছে না। নতুন কিছু খবর পেলে জানিও। শত হলেও বারলো আমার মকেল। তার সম্বন্ধে তোমাদের পাঁচজনের চেয়ে আমি একটু বেশি রকমই আগ্রহী।

খুবই স্বাভাবিক। মক্কেল বলে কথা। তা মিসেস বারলোকে কবে নাগাদ টাকা দিচ্ছ। দাঁড়াও, আগে সুস্থ হোক। দাবী পূরণের দরখাস্ত করুক তারপর তো টাকা দেওয়ার প্রশ্ন আসছে। তবে আমাদের তরফ থেকে খুব একটা দেরী হবে না।

সে যাই হোক, সব খবরই আমাকে জানিও। তবে ওগুলো তো কম দরকারীনয়। বারলোদের, সম্পর্কে লোকেরা এখন উৎসাহী। যা ছাড়বো, তাই একেবারে চেটেপুটে নেবে। আমিও তেমন কিছু খবর পেলে তোমাকে জানাবো।

অ্যানসন বলল ঠিক আছে ছাড়ছি, তারপর ফোন রেখে দিল।

 অ্যানা ঘাড় তুলে বললো মিসেস বারলো কেমন আছেন?

অ্যানসন গম্ভীর মুখে ঘাড় নেড়ে বলল ভালো না।

কি সাংঘাতিক। মক্কেলের স্ত্রী হিসাবে ওকে এ সময় আমার সাহায্য করা উচিৎ। কিন্তু কিই বা করবো। কি ভাবতে কে কি ভাববে কে জানে। যাকগে আগ বাড়িয়ে কিছু করার দরকার নেই। বরং আমার তরফ থেকে ওকে কিছু ফুল পাঠিয়ে দিই। তুমি এক কাজ করো অ্যানা, ডিভ এর দোকানে একটা ফোন করে বলে দাও, ওরা যেন একডজন গোলাপ হাসপাতালে মিসেস বারলোর কাছে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি যাবার সময় আমি দাম মিটিয়ে দেবোখন।

.

ব্রেন্ট হোমিসাইড বিভাগের কর্মকর্তা লেফটেনান্ট ফ্রড জেনসনকে ঠিক পুরোপুরি পুলিশ বলা যায় না। একটু ঢিলেঢালা স্বভাবের আমুদে প্রকৃতির এই লোকটা ব্যবহারে অতি সজ্জন। তার চোখের দৃষ্টিতে অন্যায় বা অপরাধ ততটা চট করে ধরা পড়ে না সত্যি কিন্তু তা বলে চেষ্টার ত্রুটি তিনি করেন না।

সেদিন সবে নিজের কামরায় একখানা ফাইল খুলে বসেছেন তিনি, এমন সময় দরজা ঠেলে স্টিভ হারমাস ঘরে ঢুকলো।

ফাইল থেকে চোখ তুলে একবার হারমাসকে দেখলেন জেনসন্। তার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠল বললো, বলল হারমাস তোমার জন্য কি করতে পারি?

হারমাস-এর সঙ্গে আগেও দু-একটা কাজ তিনি করেছেন। দুজনেই তাই দুজনের পরিচিত, বন্ধুত্বের একটা ক্ষীন সূত্রও কাজের ফাঁকে দুজনের মধ্যে গড়ে উঠেছে।

হারমাস একখানা চেয়ার টেনে বসলেন। একটা সিগারেট ধরিয়ে একমুখ ধোয়া ছাড়লেন। তারপর তাকালেন জেনসন-এর চোখে। ম্যাডক্স আমাকে পাঠিয়েছেন। ফিলিপ বারলো আমাদের মকেল। পঞ্চাশ হাজার ডলারের বীমা করিয়েছে সে আমাদের কোম্পানির কাছে। আর ম্যাডক্স যথারীতি সরষের মধ্যে ভূত খুঁজে পেয়েছেন।

ম্যাডক্সকে জেনস ভালোভাবেই চিনতেন। মৃদু হাসলেন তিনি হারমাস-এর কথায়, এখানে আর ম্যাডজকে খাপ খুলতে হবে না। বন্ধু, একেবারে জলের মতো স্বচ্ছ। পাঁচদিন আগে ঘটেছে প্রথম ঘটনা, পাঁচদিন পর হল তার পুনরাবৃত্তি। ব্যস, চুকে গেল ঝামেলা। আমাদের মধ্যে এক উন্মাদ এসে ঢুকেছে। সেই এসব করছে। আমরা তাকে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আজ না হয় কালকে ধরা পড়বেই। ম্যাডমকে গিয়ে সব কথা বোলো।

হারমাস ভ্রূ নাচিয়ে বললেন, বললেই তো আর হবে না বন্ধু ঘটনাটির মধ্যে ম্যাডা অনেক জটিল বিষয়ের সন্ধান পেয়েছেন। এমন কি একথাও তিনি বলেছেন, পঞ্চাশ হাজার ডলারের জন্য মিসেস বারলো নাকি তার স্বামীকে মেরে কাউকে দিয়ে নিজেকে ধর্ষণ করিয়েছে। সুতরাং.

নাঃ বুড়োর মাথাটা দেখছি একেবারেই গেছে। দুহাত তুলে কাঁধ ঝাঁকিয়ে একটা অদ্ভুত ভঙ্গি করলেন জেনস, এক কাজ করা ওকে যত তাড়াতাড়ি পারো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। নইলে…

মিসেস বারলোর সঙ্গে তোমাদের কিছু কথা হয়েছে নাকি। হারমাস প্রসঙ্গ পাল্টালেন।

না, হলো আর কোথায়। হাসপাতালের ডাক্তার মিঃ হেনরীকে ফোন করেছিলাম, উনি আমাকে সন্ধে ছটার পর যেতে বললেন।

বেশ আমাকে ঐ সময় সঙ্গে নিয়ে যেও। ম্যাডক্স সব সময় চোখ কান ভোলা রাখতে বলেছেন, দেখি মিসেস বারলোর কথাবার্তা থেকে কিছু সূত্র পাওয়া যায় কিনা। যাই বলল বাবা পঞ্চাশ হাজার ডলার কিছু কম টাকা নয়।

না, না, তা তো ঠিকই। তবে এক্ষেত্রে ম্যাডক্স মিথ্যে জল ঘোলা করছেন। আরে ভাই, সব কিছুই যদি হিসেবে মিলতো, তাহলে তো আর কথাই থাকতো না।

 ঠিক, তুমি খাঁটি কথা বলেছে। একটুও মিথ্যে বলেনি। আমিও ম্যাডক্সকে বারবার বলেছি, কেন অনর্থক হিসেব মেলাতে চাইছেন, কিন্তু বলেও নিজেই আবার তদন্তে ছুটে এসেছি। কি জানি অন্যান্য বারের মতো এবারও যদি ওর হিসেব মিলে যায়।

জেনসন চকিতে চোখ মেলে হারমাস-এর দিকে তাকালেন। হারমাস মৃদু হেসে ঘাড় নাড়লেন। জেনস বললেন তার মানে তুমি বলতে চাইছে, এই খুনের ব্যাপারে মিসেস বারলোর হাত আছে।

হাত আছে না পা আছে জানি না, আগে তার সঙ্গে কথা বলি, ডাক্তারের রিপোর্টটা দেখি, তবে আমার মতামত বলবো।

ছাই বলবে, অনর্থক সময় নষ্টই সার হবে। একটা জিনিস কেন তোমার মাথায় ঢুকছে না হারমাস, খুনীর প্রচণ্ড আঘাতে তার চোয়ালের হাড় সরে গেছে, এর মধ্যে কোন ভান-ভনিতা নেই। এছাড়া…

এছাড়াও তিনি ভীষণভাবে ধর্ষিত হয়েছেন। এই তো? হারমাস হাসল, জানো ম্যাডক্স কি বলেছেন, তিনি বলেছেন পঞ্চাশ হাজার ডলারের জন্য তিনি নিজে অমন দশবার ধর্ষিত হতে বা দু-চোয়ালেরই হাড় সরাতে রাজি।

একটু ইতস্ততঃ করে হাতের সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে চেপে নিভিয়ে দিলেন জেনস। আসলে তোমার ম্যাডক্স চাননা, টাকাটা কোম্পানির হাত ছাড়া হোক, তাই এত বায়নাক্কা। মিসেস বারলো একবার বলে দিন, উনি টাকা চান না, ব্যস দেখবে এই ঘটনা সম্বন্ধে রাজ্যের গাল গল্প উনি নির্বিচারে মেনে নেবেন।

উত্তরে মৃদু হেসে উঠে দাঁড়ালেন হারমাস, এবার আমাকে যেতে হচ্ছে। তাহলে ঐ কথাই রইলো, ছটার একটু আগে আমি এখানে আসবো, তারপর দুজনে মিলে হাসপাতালে যাবো, চলি।

হারমাস পুলিস হেডকোয়াটার্স থেকে বেরিয়ে সোজা গেলেন অ্যানসন-এর অফিসে।

অ্যানসন ঘরেই ছিল। এগিয়ে গিয়ে করমর্দন করলেন তার সঙ্গে।মৃদু হেসে বললেন কি চিনতে পারছেন তো?

অ্যানসন বিপরীত দিকের চেয়ার দেখিয়ে বলল, কেন পারবো না মিঃ স্টিভ হারমাসকে ভোলা কি এত সহজ। বারলোর মৃত্যু সত্যিই মর্মন্তুদ।

হারমাস ঘাড় ফেরালেন। চোখাচোখি হলো তার অ্যানার সঙ্গে। অ্যানা তৎক্ষণাৎ মুখ ফিরিয়ে নিল।

হারমাস একটু নড়েচড়ে বসলেন। হ্যাঁ মৃত্যুটা খুব দুঃখজনক তো বটেই তবে বলছিলাম কি, যদি নিরিবিলিতে কোথাও গিয়ে কফি খাওয়া যেত।

হা হা নিশ্চয়ই, অ্যানসন উঠে দাঁড়ালো, এ বাড়ির উল্টো দিকেই একটা ভালো কাফে আছে, চলুন। অ্যানার দিকে তাকালো সে, অ্যানা আমি আধ ঘণ্টার মধ্যেই আসছি। কেউ এলে একটু অপেক্ষা করতে বোলো।

কিছুক্ষণ পর কাফের একটি নিভৃত কোণে মুখোমুখি বসে কফির কাপে এক দীর্ঘ চুমুক দিয়ে অ্যানসন মুখ তুললল, ম্যাডক্স তাহলে যুদ্ধই ঘোষণা করলেন।

মিঃ অ্যানসন, যুদ্ধ তিনি তাদের সঙ্গেই করেন, যারা তার সঙ্গে বুদ্ধির শক্তিতে সমান পাল্লা দিতে পারে। প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে টেবিলে ঠুকতে ঠুকতে হারমাস তার দিকে তাকালেন, এটা অনুমান মাত্র। তার ধারণা, মিসেস বারলো নিজেই স্বামীকে খুন করে কারো সাহায্যে ধর্ষিতা হয়েছেন।

আপনি অবিলম্বে ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন, নিশ্চয় ওর পেটের ব্যামো হয়েছে মিঃ হারমাস। অ্যানসনের ঠোঁটের কোনে শ্লেষের হাসি খেলে গেল। টাকা ওকে দিতেই হবে। না দিয়ে এবার কিছুতেই পার পাবেন না। আর দিতে আপত্তিই বা কিসের? আমাদের এত বড় কোম্পানি, আমাদের কাছে পঞ্চাশ হাজার ডলার তো নস্যি। এদিকে টাকা না দিলে খবরের কাগজওয়ালারা, দারুণ তোলপাড় কাণ্ড করবে। কোম্পানীর বদনাম হবে, সব দিক দিয়েই ক্ষতি, কি দরকার বাবা ঝামেলা না করে টাকাটা দিয়ে দিলেই তো হয়।

তা অবশ্য যায়। কিন্তু একটা ব্যাপার আমি ঠিক বুঝলাম না মিঃ অ্যানসন, খবরের কাগজওয়ালারা আমাদের এত ভিতরের খবর কি করে জানলেন। আপনি কি ওদের কিছু বলেছেন?

বলবো না কেন? অ্যানসন বলল এটা কাগজের প্রথম পৃষ্ঠার একখানা জবরদস্ত খবর। এ শহরের সবাই মোটামুটি আমাকে চেনে। বারলোকে দিয়ে যে আমি বীমা করিয়েছি, একথাও কারোর অজানা নেই। সুতরাং এ অবস্থায় আপনি নিজেই ভেবে দেখুন। আমার বদনাম তো হবেই, কোম্পানিরও সমুহ বিপদের আশঙ্কা। টাকাটা দিলে লোকে নিশ্চিন্ত হবে, বলবে না এরা টাকা ঠিক ঠিক দেয়, মিঃ অ্যানসনের কাছে বীমা করিয়ে সুবিধে আছে। ব্যবসা আমাদের বেড়ে যাবে।

কিন্তু..একাজটা আপনি ভালো করেননি মিঃ অ্যানসন। খবরের কাগজের হাতে খবর তুলে দেওয়া, এটা ম্যাডক্স একেবারেই সুনজরে দেখবেন না।

কেন? না দেখার কি?

কারণটা তো আপনাকে বললাম, তিনি মনে করেন, আগাগোড়া ব্যাপারটাই একটা সাজানো, ছকে ফেলা ঘটনা। তাই…।

অ্যানসন হাত তুলে থামালোতাকে, মৃদু হেসে একটা সিগারেট ধরিয়ে একমুখ ধোঁয়া ছাড়লো, আসলে তফাৎটা কোথায় জানেন মিঃ হারমাস, আপনি কাজ করেন ম্যাডক্স-এর হয়ে, আর আমি কাজ করি এ অঞ্চলের তিনটে শহরের সমস্ত অধিবাসীদের হয়ে। ওঁর মতলব মতো আমাকে যদি চলতে হতো, তাহলে বহুদিন আগেই এখানকার অফিসে লালবাতি জ্বালতে হতো। বলুন ঠিক কি না? ওঃ অসহ্য। বয়েস হয়ে গেলো, তবু বুড়ো হাবড়াটার চাকরী ছাড়ার নাম নেই। আর কতদিন যে ওঁর জ্বালায় এভাবে প্রতি পদে পদে আমাদের জ্বলে-পুড়ে মরতে হবে, কে জানে।

কয়েক মুহূর্ত নীরবে কাটল। হারমাস কাপেনতুন করে কফি ঢাললো। দুচামচ চিনি মেশাল। তারপর দীর্ঘ এক চুমুক দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। গোড়া থেকেই বারলোর পলিসিটা নিয়ে ওঁর মনে খুঁতখুতুনি। উনি এক ডিটেকটিভ এজেন্সিকে লাগিয়ে দিলেন মিসেস বারলোর সম্বন্ধে খোঁজখবর করার জন্য। তারা দশ পৃষ্ঠার এক দীর্ঘ রিপোর্ট পাঠিয়েছে। তারা জানিয়েছে যে মেয়েটা নাকি এক নম্বরের জাহাবাজ। টাকার জন্য সে না করতে পারে এমন কাজ নাকি ভূ ভারতে নেই।

অ্যানসন চকিতে চুমুক দিতে গিয়ে বিষম খেলো। কাশতে কাশতে কাপ নামিয়ে রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে তাকালে হারমাস-এর চোখে, রিপোর্টে কি আছে?

জানি না, কেন না এখনও দেখার সুযোগ হয় নি। তবে মনে হয় পুরো রিপোর্টটাই খুব একটা সুবিধের নয়।

আপনার এই ম্যাডক্স উন্মাদ, বদ্ধ উন্মাদ, বিরক্তির চিহ্ন অ্যানসনের মুখে সুস্পষ্ট হল। একটা মেয়ে সে আক্রান্ত হয়েছে, ধর্ষিতা হয়েছে, তার স্বামীকে হারিয়েছে, কোথায় তার জন্য সহানুভূতি হবে তা না উনি রিপোর্ট খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

জেনসন আর আপনার বক্তব্য মোটামুটি একই ধাচের,কথা কি জানেন মিঃ অ্যানসন, হারমাস, তার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালেন তবু একটা কথা ম্যাডক্স-এর সঙ্গে দশ বছর হলো কাজ করছি। এতদিন এমন একটা ঘটনাও আমার চোখে পড়লো না, যে ম্যাডক্স কোনো পলিসি সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করার পরও সেই পলিসিটা সাচ্চা বলে প্রমাণিত হল।

কোনদিন হয়নি বলে যে আজও হবেনা, এরকম কোন নিয়ম নেই। আসলে ওসব সস্তা চমক, নাম কেনার সস্তা চেষ্টা। অ্যানসন ক্রোধে উত্তেজনায় থর থর করে কাঁপতে লাগল। ঐ ম্যাডক্সই, দিনে দিনে আমাদের কোম্পানিকে লাটে তুলবে। আমি বলে দিলাম পরে মিলিয়ে নেবেন। পঞ্চাশ হাজার ডলার আমাদের কাছে কি? এত বড় কোম্পানি।

আমাদের কাছে একটা পঞ্চাশ হাজার সত্যিই সামান্য মিঃ অ্যানসন কিন্তু যে লোকটার সারা বছরে এরকম হাজার দুয়েক পঞ্চাশ হাজারী ঠেলা সামলাতে হয়, তার কাছে এর গুরুত্ব কিন্তু কম নয়।

অ্যানসন একমুহূর্ত নীরব থেকে কাধ ঝাঁকালো, ঠিক আছে আপনারা যা ভাল বোঝেন মিঃ হারমাস। আমাকে যা বলবেন, আমার আর কি?

হারমাস প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন যে মিঃ বারলোর বাড়িটা কোথায় বলুন তো।

কেন? শহরতলীর এক নির্জন পরিবেশে।

আমাকে যে ওখানে যেতে হবে মিঃ অ্যানসন।

হারমাস উঠে দাঁড়ালেন। চলুন না আপনিও সঙ্গে চলুন। দুজনে বেশ গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।

কিন্তু ওই বাড়িতে যাবেন কেন? ওখানে কি আছে?

হারমাস স্থির দৃষ্টিতে অ্যানসনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল বলল কি আছে জানি না, ম্যাড আমাকে যেতে বলেছেন যেতে আমাকে হবেই।

যেতে হবে বললেই তো আর হবে না। ওরা কেউ বাড়িতে নেই। চোরের মতো অন্যের বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে, এটা কেমন মিঃ হারমাস?

আরে চলুন চলুন। একা গেলে আমাকে চোর বলা সাজত। আপনাকে তো সাক্ষী হিসাবে নিয়ে যাচ্ছি, আমার চুরির অপরাধ মেটাতে আপনি একাই যথেষ্ট।

অ্যানসন একটু দোনামোনা করে উঠে দাঁড়াল। বিল মিটিয়ে কাফে থেকে দুজনে বেরিয়ে অ্যানসনের গাড়িতে গিয়ে উঠল। গাড়ি ছুটলো হাওয়ার বেগে।

বাঃ খুব সুন্দর চমৎকার! নুড়ি বিছানো পথের দুদিকে বাগানের দিকে তাকিয়ে হারমাস মুগ্ধ বিস্ময়ে বলে উঠলেন।

অ্যানসন গিয়ার পালটে গাড়ি থামাল, হ্যাঁ বাগানটা সত্যিই খুব সুন্দর।

মিঃ অ্যানসন শুধু সুন্দর বললেই যথেষ্ট হয় না। আমার জীবনে এমন নিপুন হাতের কাজ আমি কোনোদিনও দেখিনি, লোকটা নিঃসন্দেহে প্রতিভাধর। বাপরে বাপ কি বিরাট এক একখানা গোলাপ। ইস হেলেন যদি সঙ্গে থাকতো।

গাড়ি থেকে নেমে তিনি কোয়ার্টারের দিকে এগিয়ে গেলেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লাল নীল মাছের খেলা দেখলেন, বিরাট ডালিয়াগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তারপর ঘন ঘন মাথা নাড়তে নাড়তে অ্যানসনের কাছে ফিরে এলেন। বললেন,না মিঃ অ্যানসন এটা একটা ছবির মতো, না না, ছবিতেও এমন মনোহর দৃশ্য আমি খুব কম দেখেছি। তিনি ঘাড় তুলে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বললেন কিন্তু এটা কেমন হল, এমন সুন্দর বাগানের পাশে একখানা পলেস্তারা ঘসা জরাজীর্ণ বাড়ি। বারলোর বোধহয় বাড়ির প্রতি তেমন টান ছিল না তাই না।

অ্যানসন সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দরজার দিকে এগোল। আর পেছন পেছন হারমাসও এলেন। পকেট থেকে কি একটা বের করে দরজার চাবির ফুটোয় ঢুকিয়ে একটু চাপ দিলেন। খট করে একটা শব্দ হল। দরজা খুলল।

ভেতরে যাওয়া কিন্তু ঠিক হচ্ছে না মিঃ হারমাস। শেষ বারের মতো অ্যানসন তাকে সাবধান করলেন, এরকম অনুমতি না নিয়ে…

তার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল, হারমাস ততক্ষণে বড় বড় পা ফেলে দরজা ডিঙ্গিয়ে ঢুকে পড়েছেন হলঘরে, তারপর সেখান থেকে সটান বসবার ঘরে। অ্যানসন তার পিছন পিছন এল।

ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে হারমাস ফিরলো অ্যানসনের দিকে বাঃ এ তো দেখছি বেশ মজার ব্যাপার। বাইরে অমন সুন্দর বাগান আর ভেতরে ঘরের মেঝেয় আধ ইঞ্চি পুরু ধুলো। বারলো কি ঘরেও বাগান করবেন ভেবেছিলেন নাকি। নিজের রসিকতায় নিজেই ঘর ফাটিয়ে হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি, নাঃ মেয়েটা দেখছি নোংরার একশেষ! বোধহয় ঝাটা হাতে নিতেও শেখেনি।

অ্যানসন কোন কথা বললো না। হারমাস এগিয়ে গেলেন টেবিলের টাইপ মেশিনটার দিকে, একরাশ টাইপকরা কাগজের ওপর ঝুঁকে পড়লেন, ই দেখছি লেখাপড়ারও কিছু অভ্যাস ছিল। তা অভ্যাসটা কার স্বামীর না স্ত্রীর?

জানিনা। কিন্তু মিঃ হারমাস, অমনভাবে ওদের ব্যক্তিগত কাগজপত্র দেখাটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। আপনি..

হারমাস হঠাৎ একখানা চেয়ার টেনে টেবিলের সামনে বসে পড়লেন। এক একখানা কাগজ উল্টে-পাল্টে দেখলেন। তার চোয়াল শক্ত হল, মুখে দৃঢ়তার চিহ্ন ফুটে উঠল। অ্যানসন একটা ঢোক গিললো, এখানে অনধিকার প্রবেশ, বেশীক্ষণ….

ধীরে বন্ধু ধীরে। হারমাস তার কথা মাঝপথে হাত তুলে থামিয়ে দিলেন, এখানে আমি তদন্ত করতে এসেছি, আপনার কাছ থেকে উপদেশামৃত নিতে নয়। আপনি বরং গাড়িতে গিয়ে বসুন বাগানের শোভা দেখুন। আমাকে নিজের মতো কাজ করতে দিন। প্লিজ বিরক্ত করবেন না।

অ্যানসন একইভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। আরো মিনিট পাঁচেক পর টাইপ করা কাগজগুলো মুড়ে পকেটে রেখে হারমাস উঠে দাঁড়ালেন।

অ্যানসন যেন খুব অবাক হয়েছে এমনভাবে বলল মিঃ হারমাস কাগজগুলো আপনি নিয়ে চললেন?

হারমাস ছোট করে ঘাড় নাড়লেন, বুঝলেন মিঃ অ্যানসন ম্যাডক্সকে কখনো কখনো আমার দেবতা বলে ভাবতে ইচ্ছে করে। সত্যি অদ্ভুত ওর ক্ষমতা! আমাকে যখন এই বাড়িতে এসে ঘুরেফিরে সব দেখে যেতে বললেন আপনার মতো আমিও তখন অবাক হয়েছিলাম, প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু দেখুন এসে কত ভালই না হল। যে কাগজগুলো পকেটে পুরলাম ওতে কি আছে জানেন? ওতে আছে মিসেস বারলোর লেখা একটা গল্প। এক প্রেমিক প্রেমিকার ইনসুরেন্স কোম্পানীকে প্রতারনা করার চমৎকার একটা পরিকল্পনা। প্রেমিকটি বিমানবন্দরের টিকিট ক্লার্ক, বাঃ চমৎকার। ম্যাডক্স এগুলো দেখে ভারী খুশী হবেন। গল্পটা দেখে বোঝা যায় মিসেস বারলোর মনে আগে থেকেই ইনসুরেন্স কোম্পানীকে প্রতারনা করবার একটা মতলব ছিল। আমাদের পক্ষে গল্পটা পেয়ে সুবিধেই হলো, উনি দাবী পূরণের দরখাস্ত করলে এটা দেখিয়ে ওর মনের অবস্থা বুঝিয়ে লড়ে যাবার একটা সুযোগ আমার হবে।

অ্যানসন হঠাৎ হো হো করে গলা ফাটিয়ে হেসে উঠল। এটা আপনি কি রকম বললেন মিঃ হারমাস, আপনার মতো বিচক্ষণ একজন লোক, কতরকম গল্পই তো লোকে লেখে, তাই বলে কিন্তু…হারমাস তার কথা না শুনে ঘরের এক কোণে চলে গেছে, বাধ্য হয়েই তাকে থামতে হলো।

দেয়ালে ঝোলানো ফ্রেমে একটা বাঁধাই সার্টিফিকেট মনোযোগ সহকারে দেখতে দেখতে হারমাস বললেন, তাহলে বারলো পিস্তল চালাতেও জানতেন। স্মল আর্মস অ্যান্ড টারগেট ক্লাব পিতল চালনায় প্রথম হবার জন্য তাঁকে এই সার্টিফিকেটটা দিয়েছে।

অ্যানসন তাড়া দিলো, বেশ ভালো, এবার চলুন, কেউ দেখে ফেললে আমাদের মুশকিলে পড়তে হবে।

মিঃ অ্যানসন, আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন এমন নিরিবিলি জায়গা কে এখানে আসবে? হাঁ যে কথা বলছিলাম, যে লোকটা পিস্তল চালনায় এমন দক্ষ, তার নিশ্চয়ই নিজের একটা পিস্তল আছে ঠিক কিনা?

থাকলেই বা তা দিয়ে আমাদের কি দরকার?

দরকার, তা দরকার তো আছেই, ঘুরতে ঘুরতে দেয়াল আলমারীর কাছে গেলেন হারমাস। এক টানে দেরাজ খুলে ফেললেন, এই তত পিস্তলের বাক্স। কাঠের বাক্সটা সমস্ত খুলে তিনি তার ডালা খুলে ফেললেন, কয়েক মিনিট তাকিয়ে রইলেন, দোয়াত আছে কালি নেই! কার্তুজ আছে, চোঙ পরিষ্কার করবার ব্রাশ আছে, অথচ পিস্তলটা নেই। পিস্তলের খাপও আছে অথচ আসল মালটাই হাওয়া।

আপনি কি প্রশ্নটা আমাকে করছেন না নিজের মনে কথা বলছেন? অ্যানসন অসহিষ্ণু গলায় বলল।

না না আপনাকে নয়, একে বলে স্বগতোক্তি,আত্মকথা। এখানে আরো কিছুক্ষণ আমাকে থাকতে হচ্ছে, বাড়িটা বেশ মজার, আপনি অনর্থক কেন এখানে দাঁড়িয়ে কষ্ট করছেন মিঃ অ্যানসন, যান না গাড়িতে গিয়ে দু-দণ্ড আরাম করে বসুন না।

না, এগিয়ে গিয়ে অগ্নিকুণ্ডের সামনের সোফায় বসে পড়লো অ্যানসন, আমি এখানেই থাকি। আপনার যদি কিছু দরকার হয়

হারমাস ততক্ষণে দেরাজ বন্ধ করে এগিয়ে গেছেন সিঁড়ির দিকে। পায়ে পায়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলেন।