১৬. কলিং বেল বাজার শব্দ

১৬.

কেন্ এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিল কলিং বেল বাজার শব্দ পেয়েই। পরক্ষণেই সে দেখলো র‍্যাফায়েল সুইটি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে অবাক চোখে দেখতে লাগল, সেই ছোট পিকনিজ কুকুর লিও, সুইটি-এর কোলে ছিল। সুইটি বলল, চলুন মিঃ হল্যান্ড ভিতরে বসি, আপনার সঙ্গে একটু জরুরী কথা আছে। সুইটি কোন ভূমিকা না করেই শুরু করল। যখন কে তাকে ভেতরে এনে বসাল, কাগজে নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন, মিস কে কার্সন খুন হয়েছে। মানে আপনি গতরাতে যার কাছে গিয়েছিলেন। কেন্ উত্তর না দিয়ে তাঁর বক্তব্যে মনোনিবেশ করল। মিঃ হল্যান্ড এই খবরটা পুলিসের কাছে খুবই জরুরী যে আপনি কের সঙ্গে সে রাতে কিছু সময় ছিলেন। কে প্রশ্ন করল, এতে আপনার প্রয়োজনটা কি?

নিশ্চয়ই আছে, সুইটি বলল, আমি পুরস্কৃত হব আংশিকভাবে খবরটা যদি পুলিসকে জানাই। আর নয়তো পুরস্কারটা আপনি আমায় দেবেন, যদি আপনি কোন ঝামেলায় পড়তে অপছন্দ করেন। আমি যাতে পুলিসের কাছে কিছু না প্রকাশ করি। আচ্ছা, মোদ্দা কথা তাহলে আপনি আমায় ব্ল্যাকমেইল করতে চান? সুইটি লজ্জার মাথা খেয়ে হেসে বলে উঠল, স্যার ব্ল্যাকমেইল কথাটা শুনতে বড় খারাপ। আমি, মানে আমার মত গরীব লোক আপনার কাছে যা আশা করে তা হল, কিছু অর্থ সাহায্য। কেন্ প্রশ্ন করল, কত দিতে হবে?

অল্প হেসে সুইটি বলল, বেশি কিছুনা,নগদ দুশো ডলার আপাততঃ আমায় যদি দেন, তারপর অল্প কিছু করে প্রতিমাসে

কেন্ প্রশ্ন করল অল্প মানে কত? এই ধরুন, ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ ডলার, সুইটি বলল। ভীষণ বিপদে পড়বে কে বুঝতে পারল,যদি সে একবার সুইটি-এর দাবিতে রাজি হয়।ওর চাহিদার শেষ হবেনা। কে বলল, পুলিস আমায় ঠিক খুঁজে বার করবে আজ অথবা কাল। বরং আপনি নির্ভয়ে বলে দিতে পারেন যা আপনি স্বচক্ষে দেখেছেন। একটা ডলারও আপনাকে আমি দিতে রাজী নই।

ঘাবড়ে গেল সুইটি। সে জীবনে এ পর্যন্ত অনেককে ব্লাকমেইল করেছে কিন্তু কাউকে কেনের মত এমন দৃঢ় হয়ে থাকতে দেখেনি। সে একটু ভীত হল, কিন্তু হেসে বলল, পাছে কেসটা তার নাগালের বাইরে চলে যায়। মিঃ হল্যান্ড সুস্থ মস্তিষ্কে সব কিছু বিবেচনা করে দেখুন, আমার জবানবন্দীর ফলে আপনার মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। কের মৃত্যুর পর আমিই একমাত্র দেখেছি আপনাকে তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে। সুতরাং আমিই প্রধান সাক্ষী। যদি আপনি আমার মুখ বন্ধ করতে পারেন। কেন্ উঠে দাঁড়াল এবং বলল, আপনার একটু ভুল হচ্ছে, ঐবাড়ির একতলায় থাকেন একজন মহিলা, তিনিই আমাকে ঐবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন, আপনি নন কখনই। কোনমতেই জোরদার হবেনা আপনার সাক্ষ্য প্রমাণ। সুইটি তার কথাগুলো শুনে ভড়কে গেল। একটু পরেই নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলল, ঐ মহিলা আপনাকে দেখেছেন একথা সত্যি মিঃ হল্যান্ড, কিন্তু আপনার পরিচয় তিনি জানেন না। কিন্তু আমি আপনার সবিশেষ জ্ঞাত আছি। আমার কখনই অভিপ্রেত নয় যে সামান্য কয়েকটা ডলার খরচের ভয়ে আপনার মত এক অসাধারণ ব্যক্তির জীবন নষ্টহবে।কত মর্মাহত হবেনবলুন তোআপনার স্ত্রীযুদি জানতে পারেন। তার এখন বয়স কত অল্প। কেনের এবার ধৈৰ্য্য হারিয়ে গেল, স্ত্রীর নাম শুনেই, সুইটির জামার কলার খামচে ধরে তাকে ঠেলতে ঠেলতে দরজার দিকে নিয়ে গেল চেয়ার থেকে তুলে নিয়ে। কলার ছেড়ে দিন মিঃ হল্যান্ড, এসব কি হচ্ছে? সুইটি চেঁচিয়ে উঠল, আমায় আরও কিছু বলতে দিন।

কোন কথা আর আপনাকে বলতে দেবনা, সোজা আপনি পুলিসের কাছে চলে যান। একটি পয়সাও আপনি আমার কাছ থেকে পাবেন না। এতগুলি কথা কে বলল, তারপর বলল, শীঘ্রই দূর হয়ে যান।

 সুইটি বলল আমি কিন্তু সত্যিই পুলিসের কাছে যাব যদি আপনি আমার শর্তে রাজি না হন। দুশো ডলারের বেশি এক পয়সাও আপনার কাছে নেব না, আপনি এই সুশর্তে রাজি হন। বেশ তো দর কমে যাচ্ছে। পাজী, শয়তান কোথাকার, কে ব্যঙ্গ করে বলল, তোকে একটা আধলাও দেবনা, সুইটির মুখে প্রচণ্ড এক ঘুষি মারল সে, এই কথা বলেই। দরজার কাছে চিৎ হয়ে পড়ল সুইটি অসতর্কিত আক্রমণে ভারসাম্য হারিয়ে। দরজা খুলে উঠে দাঁড়াল কোনক্রমে, তারপর সবেগে দৌড় দিল দরজা খুলে বাগানের রাস্তা ধরে। প্রভুর অনুসারী হল লেজ তুলে তার কুকুর লিও, কারণ সে বুঝেছিল ব্যাপারটার পরিণতি ভাল নয়। বদমাস, বেয়াদব, পেছন থেকে কেন্ চীৎকার করে উঠল আর কোনদিন যদি এখানে দেখি, পিতৃপুরুষের নাম ভুলিয়ে দেব একেবারে।

কেন্ হাঁপাতে লাগল ঘরের ভেতরে এসে। পুলিসের কাছে নিশ্চয়ই সুইটি যাবে এরপর। তারপর সব কিছু ফাস করবে থানায় গিয়ে। মনে হয় পুলিস তাকে আধঘণ্টার মধ্যে এসেই গ্রেপ্তার করবে। পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আর অপেক্ষা করে লাভ নেই, কেন্ বুঝল। এবার তার সময় হয়েছে সত্যের সঙ্গে মুখোমুখি হবার। সে নিজেই সব কথা পুলিসের কাছে জানাবে, সুইটি থানায় পৌঁছার আগেই, কেন্ স্থির সিদ্ধান্ত নিল। একবার সে তাকাল, দেওয়ালে যেখানে অ্যানের ছবিটা আছে তার দিকে, তারপর সদর দরজায় তালা লাগিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। কেন্ বড় রাস্তায় এসে একটা ট্যাক্সিতে চেপে বসল। সীটের পেছনে মাথাটা হেলিয়ে বসল সে, নির্দেশ দিল ড্রাইভারকে পুলিস হেড কোয়ার্টারে যাবার।

.

১৭.

 সার্জেন্ট আমি নিঃসন্দেহ যে ঐ কেন্ হল্যান্ড লোকটিই খুনী। সার্জেন্ট ডোনোভানের দিকে তাকিয়ে ডিটেকটিভ ডানকান রায় দিল। প্রশ্ন করল ডোনোভান, তুমি এত নিশ্চিত হলে কিরূপে? বোঝা অত্যন্ত সরল, আমি গাঁজা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গিয়েছিলাম ডানকান বলল। একখানা রক্তের দাগ লাগা স্যুট আর একজোড়া রক্ত মাখা জুতো ওখানে একজন রেখে গিয়েছিল একথা নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে। এক খদ্দেরের চেহারার যে বিবরণ দিল ওখানকার কর্মচারী, তার সঙ্গে হল্যান্ডের চেহারার বিবরণ অবিকল মিলে যাচ্ছে। দুটো পার্সেল নিয়ে লোকটি দোকানে ঢুকেছিল, আর বেরিয়ে গিয়েছিল খালি হাতে।

ডোনোভান মন্তব্য করল তোমার এই ভাষণে কোন সিদ্ধান্তেই আসা যায়না ডানকান।

না, এটাই শেষ কথা নয়, বলল ডোনোভান, আরও তথ্য আছে আমার কাছে। একথা কি মনে পড়ে যখন আমরা লোকটির কাছে পার্কারের ঠিকানা নিতে যাই, তখন ও কিরকম ভয় পেয়েছিল। পুলিস দেখলে অত ভয় পাওয়ার কি কারণ আছে যদি সে নির্দোষী হয়।

ডোনোভান বলল, ডানকান কেউই সাধারণতঃ খুশী হয়না বিনা কারণে বাড়িতে পুলিস এলে, চল ওর বাড়ি যাওয়া যাক এখানে বসে না থেকে। তাহলে ওকেই খুনী সনাক্ত করবো যদি সবুজ রঙের লিঙ্কন হয় কেন্ হল্যান্ডের গাড়িটা।

দশটা বাজে প্রায় দুজনে পৌঁছল যখন, কেন হল্যান্ডের বাড়ির কাছাকাছি।

ডানকান নিঃশব্দে টর্চের আলো ফেলল বন্ধ গ্যারেজের দরজার ফাঁক দিয়ে।

এই তো সবুজ রঙের লিঙ্কন! সার্জেন্ট ঠিক যা ভেবেছি তাই, সে প্রফুল্লিত হয়ে পরমুহূর্তেই বলে উঠল।

ডোনোভান তাকে গভীর ভাবে হুকুম করল তালা খোলার যন্ত্রটা নিয়ে এস গাড়ি থেকে।

ডোনোভান ডানকানের এই কেরামতিতে একটু ক্ষুণ্ণ হল। কমিশনারকে রিপোর্ট দেবে সে যে এটা সে নিজেই খুঁজে বের করেছে। এই কথাই সে বলবে, ভাবল ডোনোভান, দেখবে তার প্রমোশন কে আটকায়। অনেক জুনিয়ার ডানকান তার থেকে, এখন অনেক দেরী তার প্রমোশন হতে। ডোনোভান রিপোর্টে কিছুই উল্লেখ করবে না ডানকানের কৃতিত্ব সম্পর্কে। সহজেই গ্যারেজের দরজা খুলে ডানকান, তালা খোলার যন্ত্রটা নিয়ে এল। গ্যারেজে ঢোকার পর সুইচ টিপল, আলো জ্বলে উঠল। হঠাৎ ডানকান চেঁচিয়ে উঠল গাড়ির পেছনের সীট খুলেই, দেখুন সার্জেন্ট, পেয়ে গেছি। ডানকান একটা ময়লা নোটবই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সবিস্ময়ে ডোনোভান দেখল। সে জানতে চাইল, কি ওটা?

ডানকান বলল, এটা সেই নোটবই, সেটা হারিয়ে গিয়েছিল পার্কের কার অ্যাটেন্ডাটের টেবিল থেকে, এই গাড়ির পেছন সীটে এটা পাওয়া গেল!

ডানকানকে নিয়ে ডোনোভান গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে এল এই কথা বলতে বলতে, এবার ওকে জেরা করি চল। সদর দরজায় তালা দেওয়া দেখল, বাংলোর কাছে যখন ওরা এল। দুজনে তারা জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ল। আরো দুটো জিনিস তাদের করায়ত্ব হল।

গাঁজা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিনে আনা একজোড়া জুতো এবং ধূসর রঙের একটি স্যুট।ডানকান একটি ভিজিটিং, কার্ডও খুঁজে পেল তাতে পার্কারের নাম লেখা, ওটা ছিল বাজে কাগজের ঝুড়িতে। কার্ডের পেছনে ফোন নাম্বার লেখা আছে কে কার্সনের।

 নিশ্চয়ই কে কোথাও আত্মগোপন করে আছে ভয়ে, বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও আছে, ওকে দেখামাত্র গ্রেপ্তার করার আদেশ জানাচ্ছি আমি থানায় ফোন করে তোনোভান বলল। এবার আমি নিশ্চিত হলাম যে পার্কারই কেনকে কের কাছে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেছিল।

.

১৮.

 এক সুদর্শন তামাটে চেহারার যুবক অ্যাডমসের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, আপনিই কি লেফটেন্যান্ট অ্যাডমস? প্রশ্ন শুনে অ্যাডমস মুখ তুলে তাকাল, হ্যাঁ আমিই, বলুন তো কি ব্যাপার, শান্ত গলায় সে বলল, আমার কি করণীয় আপনার জন্য বলতে পারেন।

কেন্ বলিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে বলল, আমি কেন্ হল্যান্ড, আমিই সেই লোক, আপনারা যার অনুসন্ধানে আছেন, আমিই গিয়েছিলাম সেদিন রাতে কে কার্সনের অ্যাপার্টমেন্টে।

অ্যাডমস তাঁর মুখের দিকে তাকাল জরীপ করার দৃষ্টিতে,ঠিকই তো, বর্ণনানুযায়ী মিল আছে। অ্যাডমস প্রশ্ন করল, তাহলে আগে আপনি আসেননি কেন আমাদের কাছে। এই ভেবে আসিনি যে ঝামেলা আরও বেড়ে যাবে, কে উত্তর দিল, কিন্তু এখন দেখছি পালানো সম্ভব নয়। আমি যে কে কার্সনের খুনী নই শুধু এটুকু আপনাদের জানাতে চাই।

আপনাকে আমি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিবরণ দিতে চাই। অ্যাডমস বলল, আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু এখানে সব আলোচনা করা ঠিক হবেনা। বারবার টেলিফোন ধরতে হবে আর অনবরত লোকজন আসা-যাওয়া করছে। অ্যাডমস মাথায় টুপিটা চাপিয়ে কেকে তার সঙ্গে অন্যত্র যাওয়ার নির্দেশ দিল। ও, একটা কথা, আপনার গাড়িটা কি সঙ্গেই আছে?

না, আনিনি, কেবলল, আমি ট্যাক্সিতেই ভাড়া দিয়ে এসেছি। কেকে তার অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে এল অ্যাডমস নিজের গাড়িতে করে। নিজের টুপিটা খুলে চেয়ারের ওপর রাখল, কেকে ঘরের ভিতর বসিয়ে বলল এবার আপনি অকপটে সবকথা বলতে পারেন। কেন্ সব কথা খুলে বলল একটুও গোপন না করে সেদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্য্যন্ত যা কিছু ঘটেছিল সব। খানিকটা স্কচ হুইস্কি দুটো গ্লাসে ঢেলে অ্যাডমসবলল, আমিও ঠিক তাই করতাম, আপনি যা করেছেন, যদি আমি বিবাহিত হতাম। কেউদ্বেল হয়ে জানতে চাইল, তাহলে আপনি আমার কথা অবিশ্বাস করেননি?

কিছুই যায় আসেনা তাতে আমি বিশ্বাস করলাম বা না করলাম, অ্যাডমস বলল, সব কিছুই জুরীদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বিচার হবার পর। এবার ঠিকমতো বলুন, আমি আপনাকে এখন কয়েকটি প্রশ্ন করছি। আপনি কি আর কারো উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন কে কার্সনের অ্যাপার্টমেন্টের আলো নিভে যাওয়ার আগে? কে বলল, না আমি বুঝতে পারিনি, তবে অন্ধকার ঘরে ওর পায়ের শব্দ আর দরজা খুলে নেমে যাওয়ার শব্দ আমি শুনতে পেয়েছিলাম।

কোন আর্তনাদ কে কার্সনের গলার আপনি শুনতে পাননি? অ্যাডমস প্রশ্ন করল।

কেন্ জবাব দিল না। কারণ ঘনঘন বাজের শব্দ আর বাইরে সেদিন তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার কানে কিছুই শব্দ আসেনি কে যদি আর্তনাদ করে থাকেও।

 আচ্ছা তাই? অ্যাডমস গম্ভীর ভাবে কি যেন ভাবতে লাগল, তারপর প্রশ্ন করল, একটা কুকুর ওয়ালা লোকের কথা বললেন না যে ঐ বাড়িতে থাকে, টেকো মাথা লোকটি, ঠিক বলছি না? হ্যাঁ লোকটির নাম র‍্যাফায়েল সুইটি, খাড়া কান, শকুনের মত বাঁকা নাক, গোটা মাথাটা টাক কেন বলল। আপনি কি ওকে চেনেন?

অ্যাডমস বলল অবশ্যই চিনি। মাত্র দুমাস আগে বাবাজী জেল থেকে বেরিয়েছে। ওর একমাত্র কাজ লোককে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা।

তাহলে আমাকে ও মিথ্যে করে ভয় দেখিয়েছে একথা আপনি বলছেন? একশবার সত্যি, অ্যাডমস বলল, তবে আপনি যে লোকটার অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা বললেন, তাকে নিশ্চয়ই সুইটি দেখতে পেয়েছিল। জানা যাবে ওকে প্রশ্ন করে।

কেন্ পুনরায় জিজ্ঞাসা করল, তাহলে লেফটেন্যান্ট আমার কথা আপনি বিশ্বাস করছেন?

নিশ্চয়ই করছি, তবে আপনি ভাববেন না যে আপনি খুব অনায়াসে পার পাবেন। অ্যাডমস বলল, আপনি এখনো জানেন না যে কি সাংঘাতিক ফাঁদে আপনি গেঁথে আছে। টেলিফোন বেজে উঠল কিছু বলার আগেই। কে কিছুই বুঝতে পারলনা অ্যাডমস টেলিফোন তুলে কাকে কিছু নির্দেশ দিল। অ্যাডমস রিসিভার নামিয়ে রেখে বলল, এই রকম হুকুমজারী হয়েছে যে আপনাকে দেখামাত্র গ্রেপ্তার করতে হবে। আপনার বাড়ি তল্লাসী করে খুঁজে পেয়েছে ধূসর রঙের স্যুট এবং জুতো জোড়া যেগুলো আপনি গাঁজা স্টোর্স থেকে কিনে ছিলেন, আমার দুই সহকারী সার্জেন্ট ডোনোভান আর ডিটেকটিভ: ডানকান। আর সেই সঙ্গে তারা খুঁজে পেয়েছে আপনার গাড়ির ভেতর থেকে কার পার্কের অ্যাটেন্ডেটের সেই হারানো নোটবুকটা। আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে এখন শহরের প্রতিটি পুলিস।

কেন্ উত্তেজিত ভাবে জিজ্ঞাসা করল, আপনি তো বিশ্বাস করেন যে আমি খুন করিনি। সে কথা আপনি দয়া করে সবাইকে বলে দিন। মিঃ হল্যান্ড আপনার কি কোন ধারণা আছে যে রাজনীতি কি পর্যায়ের জিনিস? অ্যাডমস বলল। গম্ভীর ভাবে একটা সিগারেট ধরিয়ে তাকে দেখতে দেখতে প্রশ্ন করল কেন্ এর মধ্যে রাজনীতির স্থান কোথায়? নিশ্চয়ই স্থান আছে। সীন ও’ব্রায়েন নামে একটি লোক অন্তরালে বসে শহরের রাজনৈতিক-প্রশাসনের সব কলকাঠি নাড়ছে অ্যাডমস বলল, সে বিয়ে করতে চায় গিল্ডা ডোরম্যান নামে এক সুন্দরী ক্যাবারে নায়িকাকে। অর্থ, লোকবল, ক্ষমতা সব তারই হাতে। কোনরকম প্রতিবন্ধকতা তাকে ঠেকাতে পারেনা, যা সে চায় তা ঠিক তার করায়ত্ব হয়। জনি ডোরম্যান অর্থাৎ গিল্ডার ভাইকে-কে ভালবাসত, তারপর তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়, সে ছাড়া পেয়েছে গতকাল, সে শাসিয়েছিল কে-কে খুন করবে বলে মাথাখারাপ হবার পর। যদিও আমি কোন উপযুক্ত প্রমাণ পাইনি তবুও মনে হয় এই জনিই হয়তো কে-কে খুন করেছে। এইবার কথা হচ্ছে নিশ্চয়ই চাইবে না তার শ্যালকের প্রাণদণ্ড হোক, ও’ব্রায়েনের মত প্রভাবশালী লোক।

অ্যাডমস আরও বলল, চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখবেনা ও’ব্রায়েন তার শ্যালককে যাতে বাঁচাতে পারে। অবশ্যই সে এমন একটি লোককে খুঁজবে যার ওপর খুনের ভার চাপানো যায়, আর আপনিই হচ্ছেন সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি।

কেন্ বলল, আপনি আমার সঙ্গে রসিকতা করছেন। নিশ্চয়ই নয়, অ্যাডমস বলল, এই শহরের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার লোক একমাত্র ও’ব্রায়েন। পুলিস কমিশনার মারফত ও’ব্রায়েনের কাছে পৌঁছে যাবে সেই রিপোর্ট, আপনার সম্বন্ধে সার্জেন্ট ডোনোভান যে রিপোর্ট তৈরী করবে। তাতে যে সব প্রমাণ থাকবে সবই আপনার বিরুদ্ধে। যাবতীয় সব প্রমাণ যা আপনার পক্ষে তা অন্তরালে চলে যাবে। হাত-পা কেনের ঠাণ্ডা হয়ে গেল, তাকে হাত-পা বেঁধে বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে মানস চক্ষে দেখতে পেল। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যভার হবে যখনই ঘাতক সুইচ টিপবে। কে উত্তেজিত ভাবে বলে উঠল তাহলে আমাকে ডেকে এনে মিছামিছি এত কথা শোনানোর কি প্রয়োজন ছিল। তখনই আমায় গ্রেপ্তার করলে ভাল হত। আপনি নিজে একজন পুলিস অফিসার, আমায় কেন আপনার বাড়ি নিয়ে এলেন? কারণ একটাই, আমি আছি ও’ব্রায়েনের বিরোধী দলে।

অ্যাডমস বলল, ওর পায়ের তলা থেকে মাটি সরাতে চেষ্টা করেছি বহুবার, পারিনি। মনে হচ্ছে এবার আমার সেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে যদি আপনি একটু সহযোগিতা করেন। ও’ব্রায়েন একেবারে নাজেহাল হয়ে যাবে একবার যদি প্রমাণ করতে পারি যে জনি ডোরম্যানই আসল খুনী। আমার লোকেরা আপনাকে ধরার জন্য খোঁজাখুঁজি শুরু করুক তাই আমি চাই। আমি জনিকে ধরব সেই অবসরে, তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে। আপনি যাতে আমার লোকেদের হাতে ধরা না পড়েন, আমি জনিকে গ্রেপ্তার করার আগে, সেই কারনেই আপনাকে আমি এখানে নিয়ে এসেছি। আপনার কথা বলতে হবে লিন্ডসে বার্টকে, আমি সেই চেষ্টাই চালাব যাতে উনি আপনার ব্যাপারে উৎসাহিত হন। আপনার কোন চিন্তাই নেই একবার যদি তাকে বোঝাতে পারি। আপনিও একটু ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। কয়েক সপ্তাহ বা কয়েকদিন লেগে যেতে পারে এজন্য সেকথা এখনই ঠিক করে বলা যাচ্ছেনা। দয়া করে রাস্তায় বেরোবেন না, মনে রাখবেন এখানে থাকলে আপনার বিপদ আসবেনা। খুব করিৎকর্মা আমার লোকেরা। এমনিতেই ওরা উদভ্রান্ত হয়ে আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, আর যদি রাস্তায় দেখে, ধরে সোজা হাজতে ঢুকিয়ে দেবে। অ্যাডমস সমস্তু কথাই বিস্তৃতভাবে কেকে বোঝাল। কেন্হতবিহ্বল হয়ে বলে উঠল কিন্তু আপনার এখানে আমি কি করে একা থাকব। আমার স্ত্রী শীঘ্রই ফিরে আসবেন বাপের বাড়ি থেকে। এছাড়াও আমি চাকরি করি দায়িত্ব পূর্ণ পদে। তার কি ব্যবস্থা হবে? একটু দাঁড়ান, হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে অ্যাডমস তাকে বললেন, আপনি যে একটা জট পাকানো সমস্যায় পড়েছেন তা পূর্বেই বলেছি। আপনার জীবনের চাইতে কখনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় আপনার চাকরি অথবা আপনার স্ত্রী। আপনার জীবনের শেষ সেখানেই হবে, যদি আপনি ধরা পড়েন। সব সময় এটা মনে রাখবেন।

জনি ডোরম্যানকে যদি আপনি ধরতে না পারেন তখন আমার কি হবে, কে প্রশ্ন করল। সময়ের কথা সময়েই ভাবব। কি হবে আমার স্ত্রীর? আপনার ভাবা উচিৎ ছিল নিজের স্ত্রীর কথা, কের সঙ্গে ফুর্তি করতে যাবার সময়, গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে অ্যাডমস বলল, ব্যাপারটা সহজভাবে নিন, দুঃশ্চিন্তা না করে। আমি এখন আবার হেডকোয়াটার্সে ফিরে যাচ্ছি। আপনি আপাততঃ থাকুন এখানেই। ও একটা কথা, সেদিন যখন র রোজ ক্লাবে কে’র পাশে বসেছিলাম, সেই সময় গিল্ডা ডোরম্যান এসেছিল, আপনাকে বলতেই ভুলে গেছি গিল্ডা আর কে দুজনে একসময় একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকত ভাগাভাগি করে, কেন্ বলল। না তো আমি একথা জানতাম না–মাথায় টুপিটা পরে অ্যাডমস বলল, তবে এখনকার সমস্যার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই মনে হয়। আমার ওপর ছেড়ে দিন ব্যাপারটা।

কেন্ বলল, আমার একজন উকিল দরকার।

 বিস্তর সময় পাবেন উকিল খোঁজার, এখন পাশের ঘরে শুয়ে আরামে ঘুমান, অ্যাডমস বলল। এবার আমি তাহলে চলি বলেই সে বেরিয়ে গেল, কেকে আর কিছু বলার সময় দিলনা।

কেন্ দুর্ভাবনায় পড়ল, অ্যাডমস বেরিয়ে যাবার পর। সে ভেবেই পাচ্ছেনা কি করবে, সবকিছুই যেন হঠাৎ ঘটে যাচ্ছে। তবে এটা সত্যি যে সে এক রাজনৈতিক প্যাঁচের মধ্যে পড়ে গেছে, অ্যাডমস সত্যি কথাই বলেছে। এই জটিল রাজনীতির দাবা খেলায় অ্যাডমস তাকে গুটি হিসাবে ব্যবহার করছে, কে তাও জানে। তার কোন চিন্তার কারণ নেই যদি সব হিসাব অনুযায়ী মিটে যায়, তা না হলে অ্যাডমস নিজের হাত ধুয়ে ফেলতে দ্বিধা করবে না, তাকে দোষী প্রমাণ করে।

তাঁর স্ত্রী অ্যানের কথা মনে পড়ল, বাংলো খালি দেখবে অ্যান ফিরে এসে, দেখবে কেন্ উধাও। একবস্ত্রে লোকটা উধাও হল কোথায়, কাউকে না জানিয়ে, এক রাত্রের মধ্যে। আর অফিসেও খোঁজ করবে। কখনও সে এখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকতে পারেনা, কাউকে কিছু না জানিয়ে। যদি একজন নামী উকিলের শরণাপন্ন হয় তাহলে খুব ভাল হয়। তার সামনে রাখা টেলিফোনটা ঝনঝন করে বেজে উঠল, যখন সে মনে মনে চিন্তা করছে কোন উকিলের সঙ্গে সে দেখা করবে। কেন্ রিসিভার তুলল, সামান্য ইতস্ততঃ করার পর। ওপাশ থেকে একজন ভারী গলায় বলে উঠল, হ্যালো লেঃ অ্যাডমস? কে বুঝতে পারল নিশ্চয়ই স্যাম ভার্সি। কেন্ উত্তর দিল লেঃ একটু বাইরে গেছেন, হয়তো হেড কোয়ার্টারে। ভার্সি একটু চুপ করে থেকে বলল, আপনি লিখে নিন একটা খবর,উনি এলে দিয়ে দেবেন, বলবেন যে টাক্সের জাহাজে জনিকে একবার দেখা গেছে, উইল পয়েন্ট ঐ জাহাজের নাম। কেনের শরীরের ভিতর একটা শিহরণ খেলে গেল, সে বলল, ঠিক আছে, বলে দেব।

নোঙ্গর করা আছে জাহাজটা নদীর মোহানায়, ভার্সি বলল,উনি সব বুঝে নেবেন ওকে বললেই। ঠিক আছে ওকে বলে দেব, বলেই কে লাইন ছেড়ে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পর পুলিস হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করল রিসিভার তুলে, ডেস্ক সার্জেন্ট ফোন তুলে প্রশ্ন করল হ্যালো কাকে চান, হ্যালো। কে বলল লেঃ অ্যাডমসকে একবার দিনতো। আপনি কে কথা বলছেন? উনি তত বেরিয়ে গেছেন। উনি কি এখনো পৌঁছননি, বলে গেলেন অবশ্য হেড কোয়ার্টারে যাচ্ছেন। ডেস্ক সার্জেন্ট বলল, উনি এসেছিলেন, আবার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেছেন। কিছু কি জানাতে হবে। ফোন রেখে দিল কেন্ কিছুনা বলে। জনির জাহাজ যদি ছেড়ে চলে যায় অ্যাডমস গিয়ে পৌঁছনর আগেই, সেরীতিমত ভয় পেয়ে গেল। তার নিজেকে নিজেই সাহায্য করতে হবে এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতে গেলে, সে বরং জলের ধারে গিয়ে নজর রাখবে এখানে বসে না থেকে জাহাজটা চলে গেল কিনা। অ্যাডমসের আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।

কেন্ স্যাম ভার্সির দেওয়া খবরটা লিখল, অ্যাডমসের টেবিলের উপর থেকে একটুকরো কাগজ নিয়ে এবং সে উইলো পয়েন্ট জাহাজ খুঁজে বের করবে এটাও লিখল। যত শীঘ্র সম্ভব অ্যাডমস যেন সেখানে চলে যান। কে টেবিলের উপর কাগজটা চাপা দিয়ে রাখল, খুব সাবধানে দরজা খুলে বেরিয়ে এল টুপিটা মাথায় চাপিয়ে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে তখন বাইরে, অন্ধকার আর বৃষ্টির ভেতরে হাঁটতে অদ্ভুত এক নিরাপত্তা বোধ করল সে। দ্রুতগতিতে সে নদীর মোহানার দিকে এগিয়ে চলল রাস্তায় নেমেই।

.

১৯.

 ডেস্ক সার্জেন্ট অ্যাটেনশন হয়ে দাঁড়াল অ্যাডমসকে ঢুকতে দেখেই,নতুন কোন আসামী আছে নাকি ব্যাপার কি? অ্যাডমস প্রশ্ন করল? ডেস্ক সার্জেন্ট বলল, না স্যার আসামী নেই কেউ, তবে প্যারাডাইসলুইকে পাওয়া গেছে ওয়েস্টস্ট্রীটে হতচেতনঅবস্থায়।ওর প্রায় মরণাপন্ন অবস্থা, কেউ ওকে বেদম পিটিয়েছে, সালিভান ওকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছিল, তখন সালিভান ডিউটিতে ছিল। লুইয়ের বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম তার মতানুযায়ী। অ্যাডমস প্রশ্ন করল, কোথায় আছে লুই? ডেস্ক সার্জেন্ট জবাব দিল, কাউন্টি হাসপাতালে ছনম্বর ওয়ার্ডে। ততক্ষণাৎ কাউন্টি হাসপাতালে চলে গেল গাড়ি নিয়ে অ্যাডমস আর বিলম্বনাকরে। সারা মুখে ব্যান্ডেজ বাঁধা, চোখবুজে শুয়ে আছে লুই,ছনম্বর ওয়ার্ডে পৌঁছে দেখতে পেলঝুঁকে পড়ে।অ্যাডমসতার হাত ধরেঝকাল ডাকল,লুই। অ্যাডমসকে চোখ মেলে দেখতে পেল লুই। খেঁকিয়ে উঠে বলল, ছেড়ে দাও বলছি আমাকে, একেবারে বিরক্ত করবেনা। কে তোমার এই দুর্দশা করল? তার বিছানার একধারে বসে অ্যাডমস জানতে চাইল।

নিঃশব্দে নোটবই খুলে দাঁড়িয়েছিল অ্যাডমসের সহকারী ওয়াটসন, আমায় ছেড়ে দাও, একটা কথাও আমি বলব না লুই বলল। পকেট থেকে দেশলাই বের করে একটা কাঠি জ্বালল অ্যাডমস কিছুনা বলে, তারপর জ্বলন্ত কাঠিটা লুইয়ের হাতের পাতায় চেপে ধরল। যন্ত্রণাকাতর শব্দ করে লুই হাতটা সরিয়ে নিল। তার চোখে-মুখে যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠল। বল এখনো কে তোমায় মেরেছে বললঅ্যাডমস,নাহলে এবার তোমারকবজিতেছ্যাকা দেব।টাক্সআরহুইটি,লুই অস্ফুট স্বরে বলল অ্যাডমসের নিষ্ঠুর মুখের দিকে তাকিয়ে। অ্যাডমস আরও নীচু হয়ে জিজ্ঞেস করল কেন মারল? ওরা এরকমকরল কি কারণে?লুই বলল আমি ঠিক মনে করতে পারছি না, বলেই সে দেখল আবার দেশলাই কাঠি জ্বালাচ্ছে অ্যাডমস, বলছি, একটু দাঁড়াল বলল লুই সহকর্মী ওয়াটসনের দিকে তাকিয়ে অ্যাডমস জ্বলন্ত কাঠি নিভিয়ে ফেলল। তারপর লুইয়ের মুখের সামনে ঝুঁকে পড়ল। লুই সব কথা ফাঁস করে দিল কোন কিছু গোপন না করে। •

কে কার্সনের ঠিকানা কি তুমিই জনিকে দিয়েছিলে? অ্যাডমস জানতে চাইল। কে প্রায় রোজ বু রোজ নাইট ক্লাবে যায়। একথা আমি জনিকে বলেছিলাম, কারণ আমি কের ঠিকানা জানিনা। রাত্রি তখন কটা বাজে?

তা প্রায় এগারটা হবে বলল লুই।

ও’ব্রায়েনের হয়ে তাহলে টাক্স কাজ করছে, অ্যাডমস জানতে চাইল। লুই বলল, হ্যাঁ ঠিক তাই, একমাত্র টাক্সই বেঁচে আছে ও’ব্রায়েনের চেলাদের মধ্যে। লুই বিবৃতি দিচ্ছিল ওয়াটসন সব লিখে নিয়েছে, এবার লুইকে দিয়ে নোট বইয়ের পাতায় সই করাল অ্যাডমস। ডাক্তারকে দেখতে পেয়ে জানতে চাইল লুই কেমন আছে, যখন সে ওয়ার্ড ছেড়ে বেরিয়ে আসছিল ডাক্তার বললেন, একেবারেই অবস্থা ভাল নয়। খুলি ফেটে ভেতরের মগজ বেরিয়ে এসেছে, এমন জোরে কেউ ওকে সাইকেলের চেন দিয়ে মাথায় মেরেছে। আজ রাত কাটানো হয়তো সম্ভব নয়। অ্যাডমস ওয়াটসনকে নিয়ে গম্ভীর মুখে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এল, ডাক্তারের কথা শেষ হলে।

.

২০.

 ছোট একটা নৌকো বাঁধা ছিল জেটির ধারে, কেন্ তাতে চেপে সাবধানে দাঁড় বেয়ে এগিয়ে চলল, কিছুদূরে যেখানে উইলো পয়েন্ট জাহাজটা আছে সেইদিকে। মোটর বোটের এঞ্জিনের শব্দ পেল সে কিছুদূর এগোনোর পর। তার পাশ দিয়ে জল কেটে একটা মোটর বোট বেরিয়ে গেল, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই। কেনের নৌকটা দুলে উঠল ঢেউয়ের আঘাতে। কে লক্ষ্য করল ঠিক উইলো পয়েন্টের গায়ে গিয়ে মোটর বোটটা থেমে গেল। একটা মূর্তি জাহাজের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল, অন্ধকারেও কে দেখতে পেল। নৌকা ভেড়াল কে জাহাজের পাশে এসে দাঁড় টেনে নিঃশব্দে। আর কোন লোক সেখানে ছিলনা, বুঝতে পারল সে মোটর বোটের পাশে এসে। জাহাজের পোর্ট অর্থাৎ বাঁ দিক থেকে দুটি লোকের কথোপকথন তার কানে এল, সে মুহূর্তে কেন্ ভাবছিল এখন তার কি করা উচিৎ।

ভাল করে শিক্ষা দিয়েছ তো লুইকে?

টাক্স বলল অবশ্যই প্রচণ্ডভাবে। ওর মাথার ঘিলু বেরিয়ে এসেছে, চেন দিয়ে মেরে ওর মুখ মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে হুইটি। ও’ব্রায়েন জানতে চাইল, তাহলে কি ও এখন বেঁচে নেই? স্যার, সে সম্বন্ধে ঠিক বলতে পারবনা।

আচ্ছা, ও মরে গেলেই ভাল হয়, হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে সমস্ত ব্যাপারটা, একটু চিন্তা করে ও’ব্রায়েন বলল। মুশকিলে পড়ব ও যদি মৃত্যুর আগে জবানবন্দী দিয়ে যায়। বস্ এটা খুব আশ্চর্যের ব্যাপার হবে, যদি ও বেঁচে ওঠে, কারণ আমরা দুজনে ওকে যেভাবে জখম করেছি। ও’ব্রায়েন গলা নামিয়ে বলল, শোন, জনিকেও আর বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই ওকেও শেষ করে দিতে হবে। আপনার কথাই শেষ কথা বস্। ওকে খুন করে, একটা কাঠের পিঁপের ভেতর পুরে আগা পাতলা সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করে দেবে। ও’ব্রায়েন বলল, কাকপক্ষীও যেন না টের পায় এমন জায়গায় গিয়ে পিপেটা পুতে দেবে।

তাই হবে বস, ঐ কথাই রইল, ও’ব্রায়েন বলল আমি একবার দেখা করব জনির সঙ্গে, তারপরে জনির কেবিনের তালা খুলে ভেতরে ঢুকল টাক্সকে সঙ্গে নিয়ে। দুচোখ বুজে জনি শুয়েছিল, উঠে বসল পায়ের শব্দে। ও’ব্রায়েন বলল শুনছ জনি তোমার সঙ্গে কয়েকটা কাজের কথা বলতে এলাম, জনি বলল, দেরী না করে বলে ফ্যালো, তবে তোমার বেশ কিছু টাকা গচ্চা লাগবে তা যে কাজই হোকনা। ও’ব্রায়েন বলল, আমি তোমার সঙ্গে কোন শর্তে যেতে চাইনা জনি, ভুলে যেয়োনা তোমায় এখানে আজীবন বন্দী থাকতে হবে, যদি আমার কথার অবাধ্যতা কর। জনি বলল, আগে শুনিইনা তোমার প্রস্তাবটা কি? ও’ব্রায়েন বলল ফ্রান্সে চলে যেতে হবে তোমায় আজ রাতেই এ স্থান ছেড়ে,প্রথমে যাবে এয়ারপোর্টে তারপর নিউ ইয়র্কের প্লেনে চাপবে ওখানে গিয়ে। আমার একজন লোক নিউইয়র্কে থাকে সে তোমায় প্যারিসের প্লেনে চাপিয়ে দেবে। আমার আরেকজন লোক তোমায় একটা অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যাবে। আমি যতদিন না আদেশ দেব, ততদিন থাকবে তুমি ঐ অ্যাপার্টমেন্টে। জনি প্রশ্ন করল, আচ্ছা আমায় ভাগাবার জন্যে কেন তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছ বলতো? লজ্জা করছে না তোমার আবার জবাবদিহী চাইছ? ও’ব্রায়েন উচ্চৈস্বরে বলল, তোমার তো একটাই কাজ এখানে থেকে শুধুঝামেলা বাড়াবে। আমার তোমার মত শ্যালকের সঙ্গের প্রয়োজন নেই।

ঠিক আছে যাব আমি, জনি বলল, কিন্তু কে আমার প্লেনের ভাড়া যোগাবে? তোমার প্লেনের ভাড়া আমার লোকেরা দেবে। ও’ব্রায়েন পার্স খুলে তিনটে একশো ডলারের নোট বের করল, আর বলল, নাও এ টাকাটা তুমি রাখ, আর আমার সামনে একটা চিঠি লেখো গিল্ডাকে, লিখবে যে বেশ কিছুদিন তোমার ফিরতে দেরী হবে কারণ তুমি প্যারিসে যাচ্ছ। জনি বাধ্য ছেলের মত ও’ব্রায়েনের জবানী অনুসারে গিল্ডাকে চিঠি লিখে দিল। ও’ব্রায়েন চিঠিটা নিয়ে বেরিয়ে গেল, সব কিছুই তার পরিকল্পনা মত এগোচ্ছে, ও’ব্রায়েন দারুণ খুশী।গিল্ডা কখনই তাকে সন্দেহ করতে পারবেনা যদি জনিকে খুন করে পুঁতে ফেলা হয়। গিল্ডা বিশ্বাস করবেই যে জনি প্যারিসে আছে, কারণ সে নিজে হাতে চিঠি লিখে গেছে গিল্ডাকে। জনির মৃত্যু হয়েছে প্যারিসে থাকাকালীন একথা সে গিল্ডাকে জানাবে বেশ কিছুদিন কেটে যাবার পর। মোটর বোটে উঠল ও’ব্রায়েন জাহাজ থেকে নেমে হুকুম দিল টাক্সকে যাতে কাজটা নিঃসাড়ে সে সেরে ফেলে। তারপর জেটির দিকে চলল এঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে।

কেন্ জাহাজের দিকে আড়ালে নৌকোটাকে নিয়ে গিয়েছিল যখন সে বুঝতে পারল ও’ব্রায়েন নেমে আসছে। সে চুপিসাড়ে নৌকটা এনে জাহাজের গায়ে ভেড়াল, মোটর বোটে চেপে ও’ব্রায়েন যখন দূরে চলে গেল। কে হামাগুড়ি দিয়ে কিছুদূর এগোল তারপর টাক্সকে দেখতে পেল। চট করে সে আড়ালেই লুকিয়ে পড়ল, টাক্সের সঙ্গে মহড়া দেওয়া তার একার কর্ম নয় কে বুঝতে পারল। যদি কোনমতে জনির কাছে পৌঁছা যায় তবে তাকে সব কথা বলে সাবধান করে দিতে হবে। তারপর টাক্সকে চেপে ধরতে হবে দুজনে মিলে।

কেন্ উঠে দাঁড়াল টাক্স সিঁড়ি দিয়ে উঠে যখন ওপরের ডেকে চলে গেল। সে দেখল চারটে কেবিন পাশাপাশি, সব কটাই ভেতর থেকে বন্ধ। শুধু দেখল একটা দরজার গায়ে চাবি ঝুলছে সুতরাং এখানেই জনিকে আটকে রাখা হয়েছে। একটি অল্পবয়সী ছেলে বাক্সের উপর শুয়ে আছে ছেলেটি দেখতে সুন্দর, সে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেল। জনি মুহূর্তের মধ্যেই চমকে উঠে দাঁড়াল, কেকে প্রশ্ন করল, কে তুমি? কে দরজা ভেজিয়ে তাতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, তোমার জানার কোন প্রয়োজন নেই আমি কে? উত্তেজনায় মনে হচ্ছে কেনের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কে বলল জনির বিস্ফারিত দৃষ্টির অনুসরণ করে, আমি নৌকোয় বসেছিলাম, ঠিক জাহাজের পাশেই, তোমায় খুন করে পুঁতে ফেলার মতলব আঁটা হচ্ছে একথা শুনতে পেলাম। জনি অপ্রসন্ন সুরে বলল, নিশ্চয়ই তুমি ও’ব্রায়েনের দলের লোক, আমায় তুমি ভয় দেখাতে পারবেনা, ওসব ফালতু কথা বলে, চলে যাও এখান থেকে।

কেন্ বলল এক সেকেন্ডও তোমার জন্য নষ্ট করতে পারবনা। তোমায় খুন করে পিঁপেতে ভরে পুঁতে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে টাক্স। আমরা দুজনে ওকে অনায়াসেই কাবু করে ফেলতে পারি যদি তুমি সহযোগিতা কর। এতক্ষণে জনি কেনের কথা বিশ্বাস করল। তবে কপাল ঘেমে উঠল, সে মনে মনে জানল নিশ্চিত মৃত্যু হবে তার। পিস্তল আছে টান্সের সঙ্গে জনি বলল। কি করে আমরা তার সঙ্গে লড়াইতে নামব?

ওকে প্যাঁচে ফেলে ঘায়েল করতে হবে কে বলল এখানে বসে বসে ওকে কাবু করা যাবেনা বাইরে বেরিয়ে এস। জনি বলল চাবিটা আমায় দাও, সে হঠাৎ উন্মাদের মত বলে উঠল দরজা বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকব আমি, আর তুমি ইতিমধ্যে পুলিসকে খবর দিয়ে দেবে তাইত? কেন্ ধমক দিয়ে বলল কেন বোকার মত কথা বলছ? বন্ধ দরজা ও ভেঙে ভেতরে ঢুকবে। যা কিছু আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। দুজনে থেমে গেল হঠাৎ বাইরে কার পায়ের শব্দ পেল। শিস্ দিতে দিতে এগিয়ে আসছে টাক্স। কে সন্ত্রস্তভাবে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিল, একটা হুইস্কির বোতল আর ভাঙা চেয়ার ছাড়া কোন জিনিসই কেবিনের ভেতর, নেই যা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যায়। সে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকল বোতলটা হাতে নিয়ে। টাক্স পিস্তল হাতে নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল, বলল, জনি। কি ব্যাপার? দরজা খোলা কেন কেবিনের? হয়তো ও’ব্রায়েন খুলে গেছে যাবার আগে ভুল করে। আমি কি করে জানবো? হবে হয়তো, যা টাক্স বলল এখন শোনো, কিছু দরকারী.কথা। দেখ জনি, তোমার ওপর বস্ ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আর তোমায় বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই। সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে পিপেতে তোমায় খুন করে পুরে ফেলা হবে। তারপর তোমায় মাটিতে পুঁতে ফেলব।

জনি চিৎকার করে উঠল, এগিও না খবরদার আমার দিকে, এই অবসরে এগিয়ে এসে পেছন থেকে টাক্সের মাথা লক্ষ্য করে বোতলটা মারল কে। পায়ের আওয়াজ আগেই শুনতে পেয়েছিল টাক্স। ঘাড়নীচু করে মাথাটা ঠিকবাঁচিয়ে নিল। বোতলটা ভেঙে টুকরো হয়ে গেলতারকাঁধে লেগে।

কেন্ ক্ষিপ্র গতিতে সজোরে এক ঘুষি চালাল টাক্সের মুখ লক্ষ্য করে, টাক্স এবারে সরে গেল। তারপর টাক্স কেনেবুকে এক ঘুষি মারল। কেকাতরোক্তি করতে লাগলবুকে হাত দিয়ে। জনিকে হাঁটুর ওপর এক লাথি মেরে শুইয়ে দিল টাক্স জনি যেই ফাঁক পেয়ে বাইরে বেরোতে যাচ্ছিল। জনিকে নিয়ে টাক্স যখন ব্যস্ত কে ঠিক সেই সময় পেছন দিক থেকে তাকে জাপটে ধরল। কেরে মনে হল সে একটা বুনো গরিলাকে জাপটে ধরেছে। একটা ঝটকায় টাক্স কেবিনের দেওয়ালে আছড়ে ফেলল কেকে। কে আর জনি আবার উঠে দাঁড়াল, কেরে দিকে কুটিল হিংস্র চোখে তাকিয়ে টাক্সবলল।বাঃ বেশ তো একজন দোওজুটিয়েছ?খুব ভালকথাতবেকবরে যাবেদুজনেই একসঙ্গে। পিপেতে পুরেদুজনকেই তারপর কবর দেব। টাক্স কালবিলম্বনাকরে পকেট থেকে ছুরি বার করল, অনেক বেশি জায়গা আছে পিপের ভেতর এই কথা বলেই। ছুরিটা নাচাতে নাচাতে এগিয়ে আসতে লাগল টাক্স বলল বল কাকে আগে খতম করি তোদের দুজনের মধ্যে? তাকেই মারব যে বলবে। কেন্ চেয়ার ছুঁড়ে টাক্সের বুকে মারল, তার কথা শেষ হবার আগেই সহজেই চেয়ারটাকে এড়িয়ে গেল, সে কেনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল পর মুহূর্তেই,এবার তাঁর মুখে ঘুষি চালাল কেন্। টাঙ্গের ছুরি কেনের কোটের কাপড়ের ভেতর চলে গেছে কেন্ টের পেল। এক ধাক্কায় টাক্সকে সে মাটিতে ফেলে দিল। তাঁর ছুরি ধরা ডান হাতটা চেপে ধরল দুহাতে সজোরে। জনিও এবার সাহসীহয়ে এগিয়ে এল। টাক্সের বুকে খুব জোরে লাথিমারল ডানপায়ের জুতো দিয়ে। টাক্সমুহূর্তের জন্য অকেজো হয়ে পড়ল, কিন্তু কেনের মুখে এক ঘুষি মারল সে পরমুহূর্তেই দেহের সব শক্তি প্রয়োগ করে। টাক্স মাটি থেকে উঠতে যাচ্ছিল কে উলটে পড়ে যেতেই, কিন্তু জনি তার আগেই পর পর বেশকয়েকবার আঘাত মারলটাক্সের মাথায় চেয়ারটাদুহাতে তুলে ধরে নিস্পন্দ হয়ে পড়ে রইল টাক্স, জনি এগিয়ে এসে তার পকেট থেকে পিস্তলটা বের করে নিল। তারপর বেরিয়ে এল কেবিন থেকে কেকে মেঝে থেকে তুলে নিয়ে।