০৬. দরজায় কলিংবেল বাজল

০৬.

চমকে উঠে চারিদিকে তাকাল র‍্যাফায়েল সুইটি যে মুহূর্তে দরজায় কলিংবেল বাজল। কোথাও কোন গণ্ডগোল হয়েছে এই বাড়িতে সে বুঝতে পেরেছে পুলিসের গাড়ি আসতে দেখেই। কিন্তু ব্যাপারটা যে কি সে জানে না। তাঁর যাবতীয় দুষ্কর্মের প্রমাণ সে ঘরের ভেতর থেকে সরিয়ে ফেলেছে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। পুলিসের চোখে অবশ্যই আপত্তিকর এমন কিছু জিনিস সেগুলো।

একটা মোটাসোটা লোক দাঁড়িয়েছিল তাঁর দরজায়, সে দরজা খুলেই দেখতে পেল। সুইটি প্রশ্ন করল, কাকে চান? লোকটি নিখুঁত দৃষ্টিতে সুইটিকে দেখতে লাগল এবং উত্তর দিল আমি সার্জেন্ট ড়োনোভান। এই মুহূর্তে সুইটিং মনে করতে পারছে না, এই বেঁটে মোটা লোকটাকে সে আগে কোথাও দেখেছে কিনা।

ডোনোভান গম্ভীর গলায়সুইটিকেজিজ্ঞাসা করল, আপনার নামটা?

সুইটি হাস্যবিগলিত হয়ে বলল, আজ্ঞে র‍্যাফায়েল সুইটি। কিন্তু ব্যাপার কি বলুন তো? আপনার ওপরতলায় যে মেয়েটি থাকে, গত রাত্রে তার কামরায় কি কাউকে ঢুকতে দেখেছিলেন, কারণ মেয়েটি খুন হয়েছে। কই আমি তো কাউকে দেখিনি সুইটি গ্রীবা আন্দোলিত করে উত্তর দিল। আমি কারো সঙ্গে বিশেষ মেলামেশা করি না। একা একা থাকতেই ভালবাসি আর সবচেয়ে বড় কথা কি জানেন, আমি রাত্রে খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। কাজেই খোঁজ করি না, কে এল বা গেল।

আচ্ছা আপনি কি কারো চিৎকার বা আর্তনাদ শুনতে পাননি? র‍্যাফায়েল সুইটি যে সত্য কথা বলছেনা, একথা ডোনোভান বুঝতে পারল। কিছুটা থেমে গিয়ে আবার জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি কোন শব্দও শুনতে পাননি।

সুইটি উত্তর দিল, হাজারটা লোক চিৎকার করলেও, আমার কানে ঢোকেনা যদি আমি ঘুমিয়ে পড়ি।

ডোনোভান লোকটা যে বিশেষ ক্ষতিকর নয় তা সুইটি বুঝতে পেরেছে। সুইটি ভালভাবে জানে যে অ্যাডমস তাঁকে দেখলে চিনতে পারবে। যদি অ্যাডমস এসব খোঁজ-খবর নিতে আসতে তবে তার কাছে তা ভয়ের ব্যাপার ছিল। পূর্বে সুইটি এই বাড়িতে লেফটেন্যান্ট অ্যাডমসকে গাড়ি থেকে নেমে ঢুকতে দেখেছে। আগের মতই বিনীত হেসে সুইটি বলল, সার্জেন্ট আমায় মাপ করবেন, এই মেয়েটি অর্থাৎ যে খুন হয়েছে তাঁর সঙ্গে আমার কোনদিনই পরিচয় ছিল না। একথা ঠিক যে, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার সময় তাঁর সঙ্গে দেখা হত। সত্যিই মেয়েটি খুন হয়েছে? ইস্ কি মর্মান্তিক ব্যাপার!

ডোনোভান তার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল, কিছুই শোনেন নি। কিছুই দেখেন নি আপনি। ঠিক বলছেন তো?

সুইটি জবাব দিল, না আমি কাউকে দেখিনি। আপনার কলিংবেল বাজানোর পর আমি উঠে এলাম, শুয়েছিলাম, এবার আমায় তাহলে যেতে দিন। মুচকি হেসে ডোনোভানের দিকে তাকিয়ে সুইটি দরজা বন্ধ করে দিল।

বেশ দ্বিধায় পড়ল ডোনোভান। সবার সামনে চোদ্দপুরুষের উদ্ধার করে ছাড়বেন লেফটেন্যান্ট অ্যাডমস। এখন যদি সে উপরে গিয়ে বলে, স্যার, কিছুই বুঝতে পারলাম না জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। হলুদ রং করা দরজার সামনে এসে সে কলিংবেল টিপল, সিঁড়ি দিয়ে নেমে মরিয়া হয়ে সে যখন একতলায় এল।

দরজা খুলে একপাশে সরে দাঁড়াল মে ক্রিস্টি নামে একটি মেয়ে। ডোনোভান মেয়েটির নিঃশ্বাসে গন্ধ পেল সাতসকালেই মেয়েটি খানিকটা জিন খেয়েছে। সে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ল। মেয়েটি কিছু বলার আগেই, তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই, একজন পুলিশ অফিসার আমি, সে পরিচয় দিল।

লোকে কি বলবে? মেয়েটি আতঙ্কিত হয়ে বলল, আপনি এখানে ঢুকছেন কেন? কি ব্যাপার?

এক ধমকে তাকে থামিয়ে দিয়ে ডোনোভান বলল, চুপ কর, উত্তর দাও জানতে চাই। কে কার্শনকে তুমি কি চিনতে? সে উৎকণ্ঠিত স্বরে বলল, কেন? ওর কি কোন বিপদ হয়েছে?

সার্জেন্ট ডোনোভান ধীরে ধীরে জবাব দিল-হা খুন হয়েছে মেয়েটি।

কে খুন করল? ভয়ার্ত চোখে মে প্রশ্ন করল, সেকি? খুন হয়েছে?

ডোনোডান বলল একটা বরফ কাটা গাঁইতি দিয়ে ওকে খুন করা হয়েছে। এখনই আমরা হলনাক্ত বলতে পারব না কে ওকে খুন করেছে। ওর ব্যবসা কি গতকাল রাতে চালু ছিল?

গতকাল রাতে আমি বাড়ি ছিলাম না সুতরাং বলতে পারব না উত্তর দিল মে। হয়তো খুনীর সঙ্গে তোমার দেখা হবে কারণ সে আবার এখানে আসতে পারে, কাটাকাটা গলায় ডোনোভান বলল একটা সিগারেট ধরাবার পরে।

তোমারই ভাল হবে, বলে ফেল যদি কিছু দেখে থাক, তোমায় ভাল যুক্তিই দিচ্ছি।

মে বলল, কাউকেই তো দেখিনি আমি।

এই রাত একটা থেকে দুটোর মধ্যে, কাউকে দেখেছো কিনা ভাল করে মনে করে দেখো ডোনোভান বলল, দেখেছ কি কোন লোককে?

হ্যাঁ, একটা লোক খুব ব্যস্তভাবে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তার সঙ্গে আমার খুব জোরে ধাক্কা লাগে যখন দুটো নাগাদ আমি বাড়ি ফিরছি, মেয়েটি বলল, কি রকম দেখতে লোকটা? ডোনোভান জিজ্ঞাসা করল।

ধূসর রংয়ের টুপি মাথায়, পরণে হালকা ধূসর রংয়ের স্যুট, গায়ের রঙ ফর্সা নয়, লোকটি দীর্ঘদেহী। আবার লোকটিকে দেখলে চিনতে পারবে?

মে বলল, অবশ্য লোকটিকে দেখে খুনী বলে মনে হচ্ছিল না, তবে দেখলে হয়তো চিনতে পারব।

ডোনোভান জিজ্ঞাসা করল, লোকটির কত বয়স হবে? আরও বলল খুনীকে দেখলে কখনই খুনী বলে মনে হয় না।

মে বলল বয়স হয়তো বছর ত্রিশ হবেই। আর কি জান লোকটার সম্বন্ধে?

এটুকু আমার মনে আছে তার চলার মধ্যে একটা ব্যস্তভাব ছিল, আর কিছু বলতে পারব না। এমনকি আমায় প্রায় ধাক্কা মেরেই বেরিয়ে গেল। আমি বলেছিলাম, একটু ড্রিঙ্ক করে যান, আমার ঘরে এসে বসুন, কিন্তু কিছুতেই লোকটি রাজী হয়নি। মে সংবাদ দিল।

যদি সেই লোকটাকে আবার দেখ, সঙ্গে সঙ্গে পুলিস হেড কোয়ার্টারে ফোন করবে, সবসময় চোখ-কান সজাগ রাখবে বুঝলে তো? ডোনোভান বলল।

অ্যাডমসকে প্রয়োজনীয় তথ্য সব জানাতে হবে, তোনোভান সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগল। মের সঙ্গে কথা শেষ করে।

.

০৭.

 গম্ভীর মুখে চুরুট খাচ্ছিলেন মেহগিনি কাঠের বিশাল টেবিলের ওপাশে বসে, পুলিশ কমিশনার পল হাওয়ার্ড। একান্ন বছর বয়স এখন হাওয়ার্ডের, অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্খি তিনি। তার ধারণা রাজনীতি পুলিসের চাকরির সহিত অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তার বেশ ভাল সংযোগ আছে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে। তিনি দিনরাত এই উচ্চাকাঙ্খ মনের মধ্যে ধরে রাখেন যে তিনি শীঘ্রই একজন সেনেটার হতে পারবেন, এই যোগাযোগটুকুর সদ্ব্যবহার করেই।

ঘুষ নিয়ে, তিনি বর্তমানে পুলিসের চাকরিতে উন্নতির শিখরে উঠেছেন। তিনি অনেক বড় বড় অপরাধীকে ছেড়ে দিয়েছেন। মোটা উৎকোচের বিনিময়ে তিনি এমন ভাব করেন যেন তিনি কিছুই জানে না, বোঝেন না। যেসব দুর্নীতি বর্তমান প্রশাসনে চলছে সবই তার জানা। ঘুষ এই একটি শব্দ আছে সব কিছুর মূলে। তিনি নিজের মুখ সবসময় বন্ধ রাখেন, ঘুষ নিয়ে।

ক্যাপটেন জো মটলি চুরুট খাচ্ছিলেন, জানলার পাশে একটা ইজিচেয়ারে আরাম করে বসে, পল হাওয়ার্ডের কাছ থেকে কিছুটা দূরে। একটা কারণেই তার চাকরিটা এখনো বজায় আছে। কারণটা হল, ইনি পুলিস কমিশনারের বড় সম্বন্ধী। মটলি লোক চিনতে পারেন খুব ভাল। পুলিস বাহিনীতে তার মতো দুটি লোক নেই, কাজে ফাঁকি দেওয়ার ব্যাপারে। মেয়েছেলে আর ঘুষ একটিতেও হাওয়ার্ডের অরুচি নেই। মটলি বুঝতে পেরেছিলেন পল হাওয়ার্ড পুলিস কমিশনার হবার পর। তিনি নিজের ছোট বোন গ্লোরিয়াকে টোপ হিসাবে হাজির করলেন হাওয়ার্ডের সামনে, একদিন নিজের চাকরি বাঁচানোর জন্য। গ্লোরিয়াকে হাওয়ার্ড বিয়ে করলেন বোকার মত সেই টোপ গিলে। গৃহের শান্তি বজায় রাখতে হলে সম্বন্ধী জো মটলির পেছনে লাগা তাকে বন্ধ রাখতে হবে বিয়ের ঠিক একমাস পরেই হাওয়ার্ড বুঝতে পারলেন।

তাঁর চাকরি আর যেই খাক পুলিস কমিশনার খাবেনা একথা বুঝতে পেরে মটলি হাফ ছেড়ে বাঁচল। এই মার্ডার কেসের সমাধান চাই সাতদিনের মধ্যে। হাওয়ার্ড মটলির দিকে তাকিয়ে খেঁকিয়ে উঠল, উল্টোদিকে বসে থাকা অ্যাডমসের সঙ্গে কথা বলতে বলতে। যে করেই হোক খুনীকে ধরা চাই, তোমার অধীনে এখন যত কাজের লোক আছে সবাইকে এই মুহূর্তে কাজে লেগে যেতে বল।

মটলিকে হাওয়ার্ড বলল, আমায় আগে জানাওনি কেন যে এ শহরে এরকম একটা পতিতালয় আছে, ছিঃ ছিঃ সমস্ত বাড়িটাই গণিকায় ভর্তি। এ শহরের কোন নোংরা বাড়ি নেই তোমার কথার সাপেক্ষেই আমি কাগজের লেখকদের কাছে গর্ব করে বলেছি। আবার বলল হাওয়ার্ড।

আমি তো সত্যি কথাই বলেছি, মুখ টিপে নিঃশব্দ হাসি হেসে বলল মটলি তার ভগ্নিপতির কথা শুনে। এ শহরে প্রচুর পতিতালয় ছিল, এখনও আছে। কিছুদিন পর পর ওগুলো চালু হয়। কারণ মাঝে মাঝে আমরা রেইড করে ওগুলো বন্ধ করে দিই। হাওয়ার্ড বললেন, একথা যদি সত্যি হয় তবে এটাকে কেন বন্ধ করনি। সীন ও’ ব্রায়েন ও বাড়ির মালিক। কঠোর চোখে তাকিয়ে মটলি বলল।

 তুমি খুব ভাল ভাবেই জানো পল কেন বন্ধ করিনি। হাওয়ার্ড নরম হয়ে গেলেন সীন ও ব্রায়েনের নাম শুনেই। ফুটো বেলুনের মত মুখখানা তার শুকিয়ে গেল, পূর্বে যে মুখ রাগে লাল হয়ে উঠেছিল। মুখ নীচু করে নিজের জুতোজোড়ার দিকে তাকিয়ে আছে অ্যাডমস, এক পলক তার দিকে তাকিয়ে হাওয়ার্ড দেখে নিলেন।

হয়তো সীন ও ব্রায়েনের আসল ভূমিকা কি অ্যাডমস জানেনা। অথবা মটলির কথা সে শুনতে পায়নি, এটাই হাওয়ার্ড ধরে নিলেন।

কিন্তু অ্যাডমসের কানে মটলির কথা ঠিকই পৌঁছেছে সীন ও’ ব্রায়েন যে পার্টির পেছনে আছে, একথা অ্যাডমস ভালভাবেই জানে। ওই ব্যক্তিই পার্টিকে টাকাকড়ি যোগায়। কেউ জানে না, ও ব্রায়েনের এই গুরুত্বের কথা একমাত্র পুলিসের উচ্চপদস্থ অফিসার ছাড়া যে পার্টির নেতা সেই এককথায় বলতে গেলে।

যাকগে, এবার বল তুমি কতদূর এগিয়েছ। হাওয়ার্ড অ্যাডমসকে বললেন, তিনি নিশ্চিত যে ও’ব্রায়েনের আসল ভূমিকা অ্যাডমস জানেনা। মেয়েটির ঘর থেকে বেরিয়ে সেই রাতে একজন লোক উদ্ধশ্বাসে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল, আমরা তার চেহারার বিবরণ পেয়েছি। তদন্ত করার ভারও দিয়েছি ডোনাভানকে অ্যাডমস বলল। তুমি নিজেই এ ভারটা নিতে পারতে, আবার ডোনোভানকে দিলে কেন? বিরক্ত স্বরে হাওয়ার্ড বললেন।

মুখ টিপে হেসে মটলি পুনরায় বলল, অহেতুক ব্যস্ত হও তুমি, পল। এত উত্তেজনা আর শোরগোলের কি আছে? একটা গণিকার খুনের ব্যাপারে?

কেন আমি এত ব্যস্ত হচ্ছি বুঝবে,কাল সকালের কাগজটা আগে বেরোক, হাওয়ার্ড বললেন।

রিপোর্টাররা চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করবে আমার, তোমার নিশ্চয়ই নয়। ওর অপদার্থতার নিন্দা করে আসছে খবরের কাগজের লোকরা বহুদিন ধরেই বলল মটলি, কিন্তু লোক খারাপ নয়। ডোনোভান। আমি মনেকরি ডোনোভানকে সেই সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে ওর হারানো সুনাম আবার ফিরে আসে, যদি ও এই কাজটায় সফল হয়। মটলি বলল, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি। বেশ তোক্লাবে যাব রাত্রে চুলটা হেঁটে।নাচের পার্টিতে গ্লোরিয়া আসবে বলেছে। আসছনা কি তুমি?

হাওয়ার্ড বললেন ঠিক বলতে পারছি না, খুব ব্যস্ত আছি এই খুনের তদন্ত নিয়ে। তুমি কেন ক্লাবে যাবে না, তার জন্য। অ্যাডমসই এ কেসটা দেখছে। ওই ঠিক পারবে।

আমার হাতে এখন অনেক কাজ, তুমি এখন যেতে পার। মটলি বলল, তোমার অনুপস্থিতি গ্লোরিয়াকে স্নান করবে। এবার ফলফলল মটলির শেষ চালে। অ্যাডমসের উপস্থিতির কথা ভেবে থেমে গেলেন, যদিও গ্লোরিয়ার নাম শুনে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। আমার কাজ শেষ করতে পারলে আমি যাব, হাওয়ার্ড বললেন, তুমি যেতে পার, একটু হয়ত দেরী হবে আমার।

পুলিসের চাকরী করে কি করে এমন বৌ-পাগল লোক অ্যাডমস মনে মনে বলল, নক্কারজনক! আত্মহত্যা করা অনেক সোজা বৌয়ের গোলামী করার থেকে।

হাওয়ার্ড অ্যাডমসকে নিয়ে আবার শুরু করলেন, আর কাউকে খুঁজে পাওনি তুমি ঐ লোকটি ছাড়া তাড়াতাড়ি কি কেসটা মিটবে? ঘরের কোথাও কোন প্রমান খুনী রেখে যায়নি, অ্যাডমস বললেন, আমার মনে হয় কেসটা ভোগাবে। ঘরের সব জিনিসপত্র ঠিক আছে, কোন মোটিভ নেই খুনীর। খুব কঠিন ব্যাপার এই গণিকা খুনের রহস্য ভেদ করা। খুব কষ্টের ব্যাপার হবে তাকে ধরা, এটা খুবই সত্যি কথা। যদি না সে ঠিক এমনিভাবে আর একটি গণিকাকে খুন করে। হয়তো ব্ল্যাকমেইল করতে গেছিল মেয়েটি খুনীকে। এটা আমরা মোটিভ হিসাবে ধরে নিচ্ছি, আর লোকটি তাকে মুখ বন্ধ করার জন্য খুন করে অনোন্যপায় হয়েই। মেয়েটির পক্ষে ব্ল্যাকমেইল করা সম্ভব। এমন কিছু আমরা সবকটা ঘর তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও পাইনি।

হাওয়ার্ড প্রশ্ন করলেন। লোকটি কি খুব উপযুক্ত খুনী হিসাবে, তুমি কি মনে কর? সেকি পেশাদার খুনী? লোকটি একেবারেই পেশাদার খুনী নয় একথা অ্যাডমস বললেন আমার তাই মনে হয় স্যার। মেয়েটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে রেখে যেত, শ্বাসরোধ করার পর যদি সে পেশাদার খুনী হত।

মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে সামনের দিক থেকে। কোন রকম হৈ চৈ সে করেনি কারণ সে মারা যাবার পূর্বেই খুনীকে দেখতে পেয়েছিল। তার চিৎকার এ বাড়ির অন্যান্য কেউ শুনতে পায়নি। চুরুটটা অ্যাশট্রেতে গুঁজে দিয়ে হাওয়ার্ড বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে।

খুনীকে যেমন করে হোক ধরা চাইই, অ্যাডমস তুমি তোমার তদন্তের কাজে লেগে যাও। ডোনোভান যতটুকু পারে করুক। অ্যাডমস উঠে পড়ে বললেন,কাজ আপনি যথাযথ পাবেন স্যার।

.

০৮.

 যে সরকার বর্তমানে দল চালাচ্ছে গত তিন বছর ধরে তাদের কোটি কোটি টাকা ঢেলেও’ ব্রায়েন তার কলকাঠি নেড়ে চলেছেন।সীন ও’ব্রায়েন স্বয়ং দলের কর্তাবড়কর্তারা একথা জানেন। অবশ্য সবাই জানে না। তিনবছর আগে খুব শোচনীয় ছিল তাদের আর্থিক অবস্থা। যে দলটি বর্তমানে রাজনৈতিক শাসন ক্ষমতায় বসে আছে। হঠাৎ তাদের সামনে ঈশ্বরের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হলেন সীন ও’ ব্রায়েন আশীর্বাদের মত।

মাদকের চোরাকারবার করতেন সীন ও’ব্রায়েন নিজে। কেউই তাকে দেখেনি দলে যে সকল অন্যান্য লোকজন ছিল, সেই দুজন ছাড়া যারা ছিল ওনার ডানহাত এবং বাঁ হাত। তার দল ছত্রভঙ্গ করে ফরাসী পুলিস, পেছনে লাগে এবং জেলে ঢোকায় তার বিশ্বস্ত লোকজনকে। ও’ব্রায়েনের দুই চেলাই তাদের মধ্যে ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লিন্ট শহরে ও’ব্রায়েন এসে আশ্রয় নেয়, ফরাসী পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে কোনোমতে পালিয়ে আসে, অবশ্য কোটি কোটি টাকা সে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। সে স্থির করল যে রাজনৈতিক দলকে পরিপুষ্ট করাই হবে তার একমাত্র কাজ। কারণ এত টাকা দিয়ে সে কি করবে ভেবে পেল না। পার্টির টাকা কোথা থেকে আসবে এ বিষয়ে ভীষণ চিন্তিত ছিলেন দলের নেতা এড় ফেবিয়ান। তখন তিনি জানতে পারলেন, ও’ব্রায়েন তার দলকে বিশাল অর্থ সাহায্য করতে চায়। এবং তিনি সাগ্রহে রাজী হলেন। কতদিনের মধ্যে দলকে টাকা শোধ করতে হবে অথবা এত টাকা সে কোথা থেকে পেল। সে কথা একবারের জন্যও ফেবিয়ান জানতে চাইলেন না।

অল্পদিনের মধ্যেই তার দল চাঙ্গা হয়ে উঠল। এবং তারা সরকারে ফিরে এল ও ব্রায়েনের অর্থ সাহায্যে। ও ব্রায়েনের হাতের পুতুলে ততক্ষণে পরিণত হয়েছেন ফেবিয়ান। তার বয়সও তখন বেড়ে গেছে। আগের মত সেই সংগ্রামী মনোভাব আর নেই।

তিনি শুধু এটুকু জেনেই খুশী যে পার্টি ফান্ডে কত টাকা জমা পড়ল। নীরবে সমস্ত কিছু পালন করে যাচ্ছেন এর্ড ফেবিয়ান, দলকে টাকা জুগিয়ে যাচ্ছেন যেহেতু এ ব্রায়েন সেইহেতু তার নির্দেশ মান্য করতে হচ্ছে। সীন ও ব্রায়েনের হাতে এখন দলের আসল কর্তৃত্ব। একজন পুরনো সাকরেদের দেখা পেয়েছিল ও’ ব্রায়েন এখানে এসে। দুজনের মধ্যে বেশ কিছুদিন যোগাযোগও ছিল। হঠাৎ লোকটি ধরা পড়ে যায়, তারপর তার সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিচারক কুড়ি বছরের জন্য। সমস্তই জানিয়ে দিয়েছে সেই লোকটি পুলিশকে জেলে যাবার আগে ও’ব্রায়েনের বর্তমান কার্যকলাপ সম্বন্ধে।

ফেরারী আসামী তখন ও’ব্রায়েন নিজেই, নিজের ছবি সেজন্য সে কোন কাগজেই ছাপতে দেয়না। এখন তাকে জেলে পোরার কোন ক্ষমতাই পুলিশের নেই এবিষয়ে সে নিশ্চিন্ত, কারণ ক্ষমতায় তার দল যতদিনআছে ততদিন তোনয়ই। তার স্বভাব সে লোকের সঙ্গে মিশতে ভালবাসে না এবং সে একটু নির্জনতা ভালবাসে। সে এখন দিন কাটায় বিশাল বাংলোয় বসে, সেটা নাকি নদীর ধারে উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। হাজার চেষ্টা করলেও বাইরের লোক তার খোঁজ পাবে না, কারণ বাড়ির পেছনে নদী, বাড়ির বাইরে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা বাড়ির চারপাশে তিন একর বাগান।

বাংলোর দিকে এগিয়ে চললেন গাড়ি থেকে নেমে পুলিস কমিশনার পল হাওয়ার্ড। সামনেই দাঁড়িয়েছিল সালিভান, ও ব্রায়েনের নিরাপত্তা রক্ষী সে।

দুচোখে তার বিস্ময় ফুটে উঠল পল হাওয়ার্ডকে দেখতে পেয়ে। পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা ছিল সালিভান প্রথম জীবনে।

পল হাওয়ার্ড প্রশ্ন করলেন, মি, ও’ব্রায়েন বাড়িতে আছেন কিনা। খুব ব্যস্ত আছেন উনি এখন, তবে হ্যাঁ স্যার, উনি বাড়িতেই আছেন সালিভান বলল।

পল হওয়ার্ড বললেন, আমি দেখা করতে এসেছি বিশেষ প্রয়োজনে, একথা ওকে গিয়ে জানাও। সালিভান সরে দাঁড়াল, পথ ছেড়ে দিয়ে বলল স্যার আমি পারবনা, আপনি নিজেই যান। একটা সুরেলা মিষ্টি গান তার কানে ভেসে এল বাংলোর ভেতর থেকে যখন পল হাওয়ার্ড কিছুদুর এগিয়ে গেছেন। সংগীত শোনাচ্ছে কোন মেয়ে। চোখ বন্ধ করে, দুহাত বুকের ওপর আড়াআড়ি ভাবে জড়ো করে রেখে এক বিশাল আর্ম চেয়ারে বসে আছেন ও’ ব্রায়েন। তিনি দেখতে পেলেন যখন তিনি গানের সুর অনুসরণ করে একটি ঘরে প্রবেশ করলেন। গান গাইছে ও সুললিত হাতে পিয়ানো বাজাচ্ছে।

 একটি মেয়ে ঘরের এক কোণে পিয়ানোর সামনে বসে। মুগ্ধ হয়ে গেলেন পল, মেয়েটিকে দেখে। সত্যিই সুন্দরী সে। কামনা-মদির ভাব ফুটে উঠেছে তার পাতলা দুটি ওষ্ঠে, টিকালো পাতলা নাক, চোখ দুটি বুজ, ফর্সা গাত্রবর্ণ। তার আগের ধারণা দূর হয়ে গেল এই মেয়েটিকে দেখে, কারণ এতদিন তিনি ভাবতেন এই শহরে তার স্ত্রী গ্লেরিয়ার মত সুন্দরী আর নেই। পুলিস কমিশনার পল হাওয়ার্ড ঈর্ষান্বিত হলেন ও’ব্রায়েনের প্রতি মনে মনে। স্বগোতক্তি করলেন তিনি, যদি এমন একটি মেয়েকে পেতাম যে ঠিক এইরকম সুন্দরী। দেখতে সুন্দর ও সুপুরুষ ও’ব্রায়েন বড় বেশী হলেও বয়স চল্লিশ হবে তার। কিন্তু ও’ব্রায়েনের সরু গোঁফ ও উন্নত –দেখলে মনে হয় কোথায় যেন এক চাপা শয়তানি লুকিয়ে আছে তার চোখে মুখে সৌন্দর্য সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও।

যখনই সে পলকে দেখতে পেল, গান মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে, চমকে উঠল মেয়েটি। বললেন, পল হাওয়ার্ড, আমি দুঃখিত আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। কিছু গোপনীয় কথাবার্তা বলতে চাই, বিশেষ প্রয়োজনে আপনার কাছে এসেছি মিঃ ও’ ব্রায়েন। আপনার গানটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল। চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে এসে তার সঙ্গে করমর্দন করল ও’ ব্রায়েন এ কথা বলার পর। গিল্ডা,ইনি পুলিসকমিশনার পল হাওয়ার্ড, মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সে পরিচয় করিয়ে দিল। আর ইনি আমার ভাবি স্ত্রী, গিল্ডা ডোয়ম্যান, বুঝলেন মি হাওয়ার্ড?

পল হাওয়ার্ড হাসিমুখে বললেন, আপনাদের দুজনকেই অভিনন্দন জানাচ্ছি। মেয়েটির দুচোখে ভীতি ফুটে উঠেছে পল দেখতে পেলেন, যদিও সে এগিয়ে এসে তার সঙ্গে করমর্দন করল হাসিমুখে। ও’ ব্রায়েন জিজ্ঞেস করল, কমিশনার কি একটু ড্রিঙ্ক করবেন? ইতস্ততঃ করে পল বললেন, কিছু কথা ছিল আপনার সঙ্গে এবং ড্রিঙ্ক একটু করতে পারি। অপছন্দ হচ্ছে তার উপস্থিতি এ কথা মেয়েটি বুঝতে পারল। দুজনের সামনে দুটি গ্লাসে পানীয় এনে দিয়ে সে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। গ্লাসে চুমুক দিয়ে ও’ব্রায়েন জানতে চাইল, এবার বলুন কমিশনার আপনি কি প্রয়োজনে এসেছেন। পল বললেন, কোন সংবাদ রাখেন কি ২৫ নম্বর লেসিংটন অ্যাভিনিউ সম্পর্কে? ডানদিকের ভুরু তুলে ও’ ব্রায়েন জানতে চাইল কি ব্যাপার বলুন তো?

ঐ বাড়ির মালিক তো আপনিই? হা কি হল তাতে? ব্রায়েন বলল।

একটি মেয়ে খুন হয়েছে ঐ বাড়িতে গত রাত্রে, পল হাওয়ার্ড বললেন। যে মেয়েটি খুন হয়েছে সে ছিল একটি গণিকা। খালিকুঠি বলি আমরা ঐ বাড়িকে পুলিসী ভাষায়, গণিকাদের আস্তানা ছিল ঐ বাড়িটা, একথাটাও জানা উচিত। আর চারটে মেয়ে তাদের আপত্তিজনক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে ঐ বাড়িতে, আমাদের কাছে এ খবরও আছে।

নিজের মুখকে যথাসম্ভব অবিকৃত রাখলো ও’ ব্রায়েন। একটা সিগারেট ধরিয়ে ধীরে-সুস্থে গ্লাসের সবটুকু পানীয় শেষ করে সে বলল, মেয়েটির নাম কি?

ছেড়ে দিন আপনাকে ও নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

পল হাওয়ার্ড উত্তর দিলেন, কে কার্জন মেয়েটির নাম। ও ব্রায়েনের চোখ দুটো নিমেষের জন্য কুঁচকে গেল, কিন্তু মুখের ভাব অপরিবর্তিত রইল। লক্ষ্য করলেন সেটা পল হাওয়ার্ড।

প্রশ্ন করল ও’ ব্রায়েন, কিছু জেনেছে কি কাগজের লোকেরা?

পল হাওয়ার্ড জবাব দিলেন, খবরটা ওদের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জানাতে হবে। ব্যাপারটা তার আগে আপনার সঙ্গে আলোচনা করে নিই একথা মনে হল।

ও’ ব্রায়েন প্রশ্ন করল, কি করে জানলেন আপনি যে ও বাড়িটা আমার? উত্তর দিলেন পল হাওয়ার্ড, আমায় বলেছে ক্যাপটেন্ জো মটলী। কোন সন্দেহ নেই এখন যে ও’ ব্রায়েন নিজেই ওই বাড়িটার মালিক। তাকে হয়তো ভিত্তিহীন কথা বলেছে মটলী একথা পল ভেবেছিলেন।

ও’ ব্রায়েন মন্তব্য করল, বড় বেশী বাজে কথা বলে মটলী। আবার জানতে চাইলেন পল, কোন প্রমাণ আছে কি যে আপনি ঐ বাড়ির মালিক?

 নিশ্চয় আছে, কেন থাকবে না? ওটা কিনেছিল আমার অ্যাটর্নী। ও’ ব্রায়েন বলল, আমিই যে ওর আসল মালিক একটু বেশী খোঁজাখুঁজি করলে প্রমাণ হয়ে যাবে।

পল প্রশ্ন করলেন, তাহলে আপনি ঐ দেহ ব্যবসায়ী মেয়েগুলোকেও চেনেন, যারা ওখানে বাস করে?

ও’ব্রায়েন ঘাড় নেড়ে বলল, অবশ্যই চিনি। মোটা বাড়িভাড়া দেয় ওরা ওদের তো অন্নসংস্থান চাই একটা। সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলছি একটু অপেক্ষা করুন। সে একটা নম্বর ডায়াল করল রিসিভার তুলে একথা বলার পর হ্যালোটার, একমুহূর্ত অপেক্ষা করার পর ফোনে বলল, একটা কাজ তোমায় দিচ্ছি শোনো, বাড়ি থেকে সব মেয়েটিকে ঘাড় ধরে বের করে দাও, ওখানে যে কটা খারাপ মেয়ে থাকে। এখুনি যাও পঁচিশ নং লেসিংটন অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে। চারটে ওরকম মেয়ে থাকে ওই বাড়িতে এটুকু আমি জানি বলেই মনে হয়।

 ওদের পরিবর্তে চারজন পুরুষমানুষকে ওদের খালি অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকিয়ে দাও। পেশা। যাইহোক লোকগুলো যেন ভাল ও ভদ্র হয়। বুঝেছো দুঘন্টার মধ্যে কাজটা সেরে ফেলবে। এবার ও’ব্রায়েন হাওয়ার্ডের দিকে তাকাল রিসিভার যথাস্থানে রেখে। সবকিছুর ব্যবস্থা হয়ে গেল যা। ও বাড়িতে যারা থাকে সবাই ভদ্রলোক, কেউ গণিকা নয় খবরের কাগজের লোকেরা গিয়ে বুঝতে পারবে সব কথাই ভিত্তিহীন।

পল হাওয়ার্ড বললেন, নিশ্চিন্ত হলাম আমিও আংশিকভাবে এতক্ষণ পরে, তবে ভাবতেই পারিনি যে এত সহজ ভাবে আপনি সমস্যার সমাধান করে ফেলবেন।

ও’ব্রায়েন কাধ শ্রাগ করে বলল, এরকম ভাবনা আপনার হবে কেন? অন্য অনেক ব্যাপার আছে যা নিয়ে আপনি মাথা ঘামাতে পারেন। আমি এমনই একজন দক্ষ ব্যক্তি যে, যে কোন ঝামেলা থেকে বাঁচতে এবং বাঁচাতে পারি। সে উত্তর দিল একটা চুরুট ধরিয়ে।

কমিশনার এবার বলুন, মেয়েটির খুনী কে?

পল বললেন, এখনও তা বলতে পারব না, কে কার্সন খুনীকে মনে হয় চিনতে পেরেছিল, তবে কোন সূত্র রেখে যায়নি। ওর বুকের সামনের দিক থেকে একটা বরফ কাটা গাঁইতি বিধিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেউ শুনতে পায়নি কের চিৎকার, আশে পাশে যারা ছিল।

জানতে চাইল ও’ ব্রায়েন, কে তদন্তকারী এই খুনের?

পল জবাব দিলেন লেফটেন্যান্ট অ্যাডমস আর সার্জেন্ট ডোনোভান। একথা মনে হওয়া স্বাভাবিক হয়তো সেই লোকটাই খুনী, এমন একটা লোকের চেহারার কিছুটা বিবরণ পাওয়া গেছে। সামান্যক্ষণ চিন্তার পর, ও’ব্রায়েন বলল, তাই নাকি। আচ্ছা বিবরণটা একবার বলুন তো শুনি।

সুপুরুষ, লম্বা, গায়ের রঙ তামাটে, বয়স ক্রিশ-বত্রিশ এরকমটাই শুনেছি। ধূসর রঙের স্যুট পরিধানে ছিল।

ও’ ব্রায়েন বলল, খুনীকে সনাক্ত করার পক্ষে এখবর পর্যাপ্ত নয়।

হাওয়ার্ড বললেন, খুনী যাতে ধরা পড়ে আমরা সেই চেষ্টাই চালাচ্ছি, আর কোনো খালি কুঠি আছে কিনা আপনার এই শহরে, ঠিক করে বলুন তো।

ও’ ব্রায়েন, অবহেলার সুরে বলল, হয়তো আছে, দু-একটা খালি কুঠি থাকলেও থাকতে পারে কারণ আমার প্রচুর সম্পত্তি আছে। আজকের মত আমায় ছেড়ে দিন, কমিশনার সাহেব। আমার হাতে অনেক কাজ আছে, কিছু মনে করবেন না। আর প্রতিটি কপি আমার চাই এই খুনের ব্যাপারে যখন যেমন রিপোর্ট আপনি পাবেন এককপি টাইপ করে সঙ্গে সঙ্গে কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দেবেন।

কমিশনার বললেন, শুনুন মিঃ ব্রায়েন বাইরের কাউকে পুলিশের রিপোর্ট দেওয়ার নিয়ম আমাদের নেই। তবে আমি নিজে মাঝেমাঝে এসে খবরটা জানিয়ে যাব আপনি যখন বলছেন, যদিও কাজটা বেআইনী। কঠিন চোখে ও’ ব্রায়েন বলল, কমিশনার, আমার ঐ রিপোর্টগুলো চাই ই।

সামান্য থমকে গিয়ে কমিশনার বললেন, আচ্ছা তাই হবে। আজ তাহলে বিদায় নিচ্ছি।

 দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল পলকে ও’ব্রায়েন নিজে এসে। গম্ভীর মুখে তারপর সে কি যেন ভাবতে লাগল দরজা বন্ধ করে, পল গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে চলে যাবার পর।

গিল্ডার চোখেমুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে, গিল্ডা তাকে একদৃষ্টিতে দেখছে দরজা সামান্য ফঁক করে, তার পেছনের ঘরের ভেতর থেকে। ও’ ব্রায়েন তা দেখতে পেল না।

.

০৯.

 কে কার্সনের খুনের ব্যাপারে আলোচনা করছিল। সার্জেন্ট ডোনোভান তার সহকারী ডিটেকটিভ থার্ড গ্রেড ডানকানের সঙ্গে। কার পার্কের যে অ্যাটেন্ডাটটি সেই বারে ডিউটিতে ছিল সেটা কে কার্সনের বাড়ির সামনে, তাদের কানে এসেছে অ্যাটেন্ডাটটির খাতা চুরি গেছে। সেই লোকটাই খাতা সরিয়েছে, যে লোকটা ধূসর স্যুট পরে এসেছিল, আমারও তাই মনে হয় ডানকান বলল, খাতায় যে ওর গাড়ির নম্বর আছে লোকটা জানত।

ডোনোভান বলল, কথাটা ঠিক, তবে খাতাটা এতক্ষণে নিশ্চয়ই পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে। ওর খাতাটা যদিও নিয়ে থাকে কি কি তথ্য তাহলে এতক্ষণে আমরা যোগাড় করতে পেরেছি একটা নোটবই হিপপকেট থেকে বের করে পাতা উল্টে পড়ে যেতে লাগল ডোনোভান।

একটি লোক সবুজ রংয়ের লিংকন মোটর গাড়ি এনে রাখে লেসিংটন অ্যাভিনিউর কার পার্কে, লোকটির পরনে ছিল ধূসর রংয়ের স্যুট। গতরাত্রে ঠিক তখন রাত নটা বাজতে দশ মিনিট বাকি। গাড়িটাকে সে হয়তো সমস্ত রাতই এখানে রাখবে, একথা সেই লোকটি বলে তাকে যে লোকটি ভিতরে ডিউটিতে ছিল। ঐ লোকটি একটি ট্যাক্সিতে চড়ে চলে যায় রাত দশটা নাগাদ মৃতা কে কার্সনকে নিয়ে। ওরা রোজ রেস্তোরাঁয় গিয়েছিল একথা জানা গেছে ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছে। কে কার্সনের সঙ্গে ঐ লোকটিই ছিল একথা ব্লরোজের মালিক স্যাম ভার্সি যে বিবৃতি দিয়েছে তা থেকেই জানা গেছে। এর আগে তার সঙ্গীদের কখনোই বুরোজে নিয়ে যায়নি কে কার্সন। লোকটিকে নিয়ে যখন সে যায় তখন তাকে দেখে মনে হয়েছিল, সে একটু ভিন্ন প্রকৃতির। আমরা দ্বিতীয় ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছে জানতে পারি যে আবার তারা দুজন ট্যাক্সি চেপে রাত বারোটা নাগাদ কের অ্যাপার্টমেন্টের দিকে ফিরে যায়। সে খুন হয় রাত বারোটা নাগাদ, ডাক্তারের রিপোর্টে জানা যায়। ধূসর স্যুট পরা ঐ লোকটি খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, একথা মিস্ ক্রিস্টি ঐ বাড়িরই আরেক বাসিন্দা জানায়। কার পার্কে গিয়ে ঢেকে লোকটি, সেখান থেকে আগেই খাতায় টুকে রেখেছিল তাঁর গাড়ির নম্বর অ্যাটেন্ডাটটি। ভয়ে অজানা লোকটি খাতাটাই সরিয়ে ফেলে পাছে কেউ জানতে পারে। সেটা আসলে তার গাড়ির নম্বর নয়, এমন একটি নম্বর লোকটি অ্যাটেন্ডাটকে বলে যায় যাবার সময়।

ডানকান বলল, আমার সন্দেহ হচ্ছে একজনকে, মনে পড়ে একটা টেলিফোন এসেছিল যখন আমরা তদন্ত করতে যাই কে কার্সনের বাড়ি। আমরা যে মোটা লোকটার সঙ্গে কথা বললাম ব্যাংকে গিয়ে সেই টেলিফোনের সূত্র ধরে, তখন সে আমাদের বলল একটি মেয়ে নিয়ে ঐ বুথে কিছুক্ষণ আগে ফোন করতে ঢুকেছিল একটি বয়স্ক লোক। সেও নিজে ফোন করতে ঢুকেছিল ঐ বুথে তার বৌকে সে কথা পরে বলল। ঐ বুথ থেকে সকালে একটার বেশী ফোন করা হয়নি, ও মিথ্যে বলেছিল, তা আমরা এক্সচেঞ্জে ফোন করে জানতে পারি। এখন মনে হয় আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো নোকটাকে চেপে ধরলে, কারণ ও যে মিথ্যে বলেছে সেটা ধরা পড়ে গেছে। ও হয়তো নিজেই সেই লোক, আমরা যাকে খুঁজছি। একথা কে বলতে পারবে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সার্জেন্ট ডোনোভান এবং বলল তোমার ধারণা একেবারে অমূলক বলা যায়না বটে, এক্ষুনি গিয়ে তাকে জেরা করা দরকার, আর দেরী করছ কেন?

.

১০.

 ঘরে এসে তার আরাম কেদারায় বসল সীন ও’ব্রায়েন, যতক্ষণ না পুলিস কমিশনারের গাড়ি দূরে মিলিয়ে গেল। ঘর থেকে বেরিয়ে এল গিল্ডাও।

ও’ ব্রায়েন গভীর সুরে বলল, কথা আছে গিল্ডা, কাছে এসো। আরাম কেদারার হাতলে এসে বসল গিল্ডা। কে কার্সনকে মনে পড়ে গিল্ডা? তাঁর চুলে হাত বোলাতে বোলাতে ও’ ব্রায়েন জিজ্ঞাসা করল। অবশ্যই মনে পড়ে, গিল্ডা তার দিকে রুক্ষ চোখে তাকিয়ে বলল, কিন্তু একথার মানে? তুমি নিশ্চয়ই জান, ওর কিছুটা ভালবাসা ছিল তোমার ভাই জনির সঙ্গে?

গিল্ডা উত্তর দিল, হা এব্যাপার তো সেই পুরানো দিনের, এ প্রসঙ্গ এখন আলোচনার অর্থটা কি?

 গতকাল রাত্রে কে কার্সন খুন হয়েছে এজন্যই এ প্রসঙ্গ আসছে বলল ও’ ব্রায়েন।

আতঙ্কে শিউরে উঠল গিল্ডা তার বক্তব্য শুনে।

 ভয়ে তার চোখ বন্ধ হয়ে গেল।

গিল্ডা তুমি কি বলতে পার কাল রাতে ফিরে এসেছিল কি জনী? প্রশ্ন করল ও’ব্রায়েন, প্যারাডাইস ক্লাবে আমার একজন লোক ওকে দেখেছিল, তুমিও কি ওকে দেখেছো? গিল্ডা নত মুখে, নিম্নস্বরে জবাব দিল, গতকাল রাতে ও শহরেই ছিল, আমার যতদূর জানা আছে।

ও’ব্রায়েন শান্তস্বরে প্রশ্ন করল, তোমার কি মনে হয় খুনটা কি জনিই করেছে? সোজাসুজি ও ব্রায়েনের চোখের দিকে তাকিয়ে গিল্ডাবলল,কখনই একাজ জনিকরতে পারেনা।ওব্রায়ান বলল, সেটা তত তোমার অভিমত গিল্ডা। একথা তুমি বলছ, কারণ ওকে তুমি ভালবাস। যথেষ্ট বদনাম আছে: জনিও খুব ভাল লোক নয়। পাঁচজনের আলোচনা তো আর উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

গিল্ডা তীক্ষ্ণস্বরে বলে উঠল, আমি আবার বলছি একাজ জনি করেনি। জনিই খুন করেছে, তুমি এমন জোর দিয়ে বলছ কেন, তোমার হাতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে?

এসব কথা তোমায় নিজেই পুলিস কমিশনার বলে গেছেন, তাই নয় কি? কমিশনার কিছুই জানেন না জনির সম্পর্কে, তোমার ধারণা অবশ্যই ভ্রান্ত গিল্ডা।

গিল্ডা জানতে চাইল, তবে তুমি শুধু শুধু জনিকে সন্দেহ করছ কেন এ ব্যাপারে।

যথাসঙ্গত কারণেই করছি, এই শহরেই গতকাল রাত্রে জনি ছিল।

গিল্ডা হঠাৎ ভীষণ জোরে বলে উঠল, কিছুতেই একাজ জনি করতে পারেনা।

ও’ ব্রায়েন জানতে চাইল, তোমার সঙ্গে কি ওর গতরাত্রে দেখা হয়েছিল।

গিল্ডা উত্তর দিল,ও টেলিফোন করেছিল, তবে দেখা হয়নি। আমাকে তুমি কেন আগে জানাও নি যে ও টেলিফোন করেছিল।

গিল্ডা বলল, সীন, আমি খুব লজ্জিত, ও বারণ করে দিয়েছিল তাই আর জানাতে পারিনি, এখন বুঝছি তোমায় জানানো উচিত ছিল। আমায় ফোন করেছিল কারণ ওর খুব টাকার দরকার পড়েছিল। তখন আমি ক্যাসিনোয় যাব বলে বেরোচ্ছিলাম। ও বলল যদি কিছু টাকা পায় তাহলে নিউইয়র্ক যাবে। আমি বললাম টাকা সঙ্গে নিয়ে যাব, ও যেন ক্যাসিনোয় চলে আসে। শেষ পর্যন্ত ও আসেনি। টাকা হয়তো যোগাড় করেছে অন্য কোথাও থেকে।

ও’ ব্রায়েন বলল, তোমার কি মনে হয় টাকাটা কের কাছ থেকে যোগাড় করেছে।

গিল্ডার দুচোখ ধারালো হয়ে উঠল বলল না, ও জানতই না যে কে কোথায় থাকে। তাছাড়া টাকা ও কের কাছ থেকে কখনই নিত না। ও কের ধারে কাছে ছিল না গতরাতে।

তা হলে তুমি বলছ তোমার সঙ্গে ওর দেখা হয়নি গতরাতে?

না, দেখা হয়নি, গিল্ডা জবাব দিল।

আমেরিকায় চলে গেছে ও তাহলে?

আমি নিশ্চিত এ বিষয়ে, যে ও শীঘ্রই আমার সঙ্গে ওখান থেকে যোগাযোগ করবে। আমেরিকায়ই গেছে ও।

ও ব্রায়েনের মাথায় এক ঝলক চিন্তাটা এল, জনিকে বাঁচাতে চাইছেনা তো গিল্ডা? জনি হয়তো এই মুহূর্ত গিল্ডার অ্যাপার্টমেন্টে লুকিয়ে আছে। ও’ ব্রায়েন ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের স্টাডিরুমে ঢুকল, একটা নম্বর ডায়াল করল সে টেলিফোন তুলে দরজা বন্ধ করার পর, হ্যালো টাক্স বলছ?

টাক্সের গলা ভেসে এল অপর প্রান্ত থেকে। নীচু স্বরে জানতে চাইল। হ্যাঁ স্যার, কি করতে হবে বলুন।

আর একটা কাজ তোমায় দিচ্ছি শোন, এখুনি চলে যাও ৪৫ নম্বর ম্যাডেক্স কোর্টে। ওই অ্যাপার্টমেন্টটা মিস ডোরম্যানের। একটু ভালো করে নজর রাখবে চারিদিকে ওখানে গিয়ে, অবশ্য তোমায় যেন কেউ ঢুকতে না দেখে। গিল্ডার ভাই জনি হয়তো ওখানে আত্মগোপন করে আছে। আমার মনে হচ্ছে, যদি তাই হয়,তবে ওকে কোন নিরাপদ স্থানে রেখে এসো, ওখান থেকে নিঃশব্দে তুলে নিয়ে গিয়ে। হয়তো এ কাজটা সহজ নয়, তবে তুমি এর আগে আরও অনেক কঠিন কাজ করেছে। আমি আপনাকে কাজটা করে ফোন করব, টাক্স বলল, আচ্ছা স্যার, এই কথাই রইল।

ওর মাথায় যেন আঘাত কোরোনা,খুব মোলায়েম ভাবেকাজটা সারতে হবেমনে রেখো।ট্যাক্স উত্তর দিলোবসের চিন্তার কোন কারণ নেই। ও’ব্রায়েন বাইরে বেরিয়ে এল রিসিভার নামিয়ে রেখে দরজা খুলে, গিল্ডা কৌচে বসে আছে বসার ঘরে ঢুকে দেখল। তার পাশে এসে বসল ও’ ব্রায়েন। সে বলল, কিছু মনে কোর না গিল্ডা। সম্পূর্ণ ব্যাপারটা নিয়ে তোমার সঙ্গে পরিষ্কার। আলোচনা দরকার এবং তা তোমার ভালোর জন্যই।ভালকরে শোন,কয়েকটাকথা তোমায় বলছি। একটাঝামেলা হয়েছিল কিছুদিন আগে তুমি, তোমার ভাই আর কেকার্সনের মধ্যে। এটা আমার মনে আছে। মাথা ঘামাবার মত কারণ এখন ঘটেছে তা জেনে রেখো। যদিও আগে ব্যাপারটা আমল দিইনি। আমার যে শত্রর অভাব নেই এটা জেনে রেখো। আর তোমায় যে শীঘ্রই আমি বিবাহ করব তারা সবাই জানে। যদি জনি গতকাল শুধু ওখানে গিয়ে থাকে তাহলে সুবিধা হবে আমার শত্রুদের, যদিও জনি খুন না করে থাকে। জনি একবার শাসিয়েছিল অতীতে কে-কে খুন করবে বলে। অনেকেরই হয়তো মনে আছে যারা আমার শত্রু। হয়তো তার অতীত নিয়ে পুলিশ তদন্ত চালাবে। এজন্য আমার সবারআগেজানাদরকার তোমার সঙ্গে কেরকিকারণেমনোমালিন্যহয়েছিল।জনির হঠাৎ মাথার গণ্ডোগোল হয়েছিল আমি এইমাত্র জানি, আর তুমি তাকে মানসিক চিকিৎসালয়ে রেখেছিলে কিছুদিন। গিল্ডা, আমার সম্পূর্ণ জানা দরকার আসল ব্যাপারটা কি?

কোনরকম ঝামেলায় পড় যদি জনিকে নিয়ে, তুমি আমায় তাহলে বিয়ে করোনা সীন, গিল্ডা অনুরোধ করল।

গিল্ডা, আমি আর কাউকে বিয়ে করবনা তোমাকে ছাড়া, মনস্থির করে ফেলেছি সম্পূর্ণভাবে। সবকিছু জানতে চাই শুধু ঝামেলা এড়ানোর জন্য।সব কথা খুলে বল আমায়।গি বলতে আরম্ভ করল। বেশ, তবেবলছি শোন আমি আর কে প্রাণের বান্ধবী ছিলাম, একসময় আমরা দুজনে একই অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম। ওর পার্টনার ছিল মরিসইয়ার্দে, সেনাচত আর আমি গান গাইতাম। ভীষণ স্বার্থপর ছিল মরিস ইয়ার্দে,নীতিবোধ বলে কোন বস্তু ওর মনে ছিল না। আমার সঙ্গে একদিন কে আলাপ করিয়ে দেয় ওকে অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে এসে। আমার দিনরাত অশান্তিময় হয়ে উঠল সেদিন থেকে, আমাকে অনুসরণ করতে লাগলমরিস ছায়ার মত। মরিসকে আমি কেড়ে নিচ্ছি একথা কে ভাবল। আমাদের দুজনের মধ্যে বচসাও হল এই ব্যাপারে।আমি আজও একথা ভেবেপাইনা কের মত মেয়ে কিভাবে প্রেমে পড়ল, ঐ রকম একটা নিষ্ঠুর প্রকৃতির বাজে লোকের যে লোকটা হল মরিস ইয়ার্দে। আমি শেষ পর্যন্ত ঐঅ্যাপার্টমেন্ট ছাড়লাম, এমনকি ঐশহরও ছাড়তে হল কের সঙ্গে ঝগড়ায় বিরক্ত হয়ে,আর মরিসইয়ার্দের জ্বালাতনে।মরিস ক্ষেপে উঠেছিল কেআমার সঙ্গে ঝগড়া করছে জানতে পেরে। মরিস নিজেই শহর ছেড়ে চলে যায় এবং নাচও ছেড়ে দেয়।

আমি আবার ফিরে এলাম মরিস চলে গেছে শুনে, কিন্তু কে ততদিনে নিজেকে বদলে নিয়েছে। মরিস চলে যাওয়ায় ও আর নাচ করেনি, পতিতা বৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। যুদ্ধ যখন শেষ হল, জনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর পেল তারপর তার ওপর কের নজর পড়ল। মানসিক ভারসাম্য জনির হারিয়েছিল যুদ্ধে গিয়ে, মাতাল হত মদ খেয়ে সারাদিন, ভীষণ মেজাজ গরম করত সামান্য ব্যাপারে। জনি আমার ভাই কে জানতে পারল কিন্তু কে যে গণিকা একথা জনি জানতেও পারল না। কের এমন একটা ধারণা হয়েছিল যে আমার জন্যই মরিস এই শহর ছেড়ে এমনকি তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।

সেই ঘটনার ও প্রতিশোধ নিতে চাইল, জনির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে। আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম জনিকে কের বিষয়েও কর্ণপাত করলনা, ক্ষেপেউঠল, মরিসের জন্য কে যেমন ক্ষেপে উঠেছিল জনিরও ঠিক তেমন হল। কে তাকে শুধু খেলিয়ে চলল, জনি অবশ্য একবার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু কেতাতে কান দেয়নি। মেয়েটি যেগণিকাছাড়া আর কিছুনয়, যাকে সে বিয়ে করতে চায়,একথা ঘটনাক্রমেজনিএকদিনজানতে পারল। জনিরমাথা গরম হয়ে গেল একথা জেনে, এবং দুর্দান্ত প্রহার করল কে কে সোজা ওর অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে। সেখানে উপস্থিত ছিল স্যাম ভার্সিহয়ত কোন কারণে।হয়ত সেদিনই কে জনির হাতে খুন হয়ে যেত যদিনা স্যাম ভার্সি ওকে বাঁচাত। আমি জনিকে মানসিক হাসপাতালে পাঠাই ঘটনাটা জানার পর। ও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ ডাক্তাররা বলেছেন, পুরো একবছর ওখানে কাটানোর পর।

আমিই ওকে গতকাল বাড়ি ফিরিয়ে আনতে যেতাম। ডাক্তাররা ওকে ছুটি দিয়েছে জনিই একথা ফোনে জানাল।

গিল্ডা নীরব হল, একসাথে এত কথা বলার পর। থুতনিতে হাত বুলাতে বুলাতে চিন্তিত ভাবে ও’ব্রায়েন বলল, তাহলে জনি আর কের ব্যাপারটা স্যাম ভার্সি জানে। গিল্ডা বলল, হ্যাঁ কে কে বেদম মার মেরেছিল জনি ওর উপস্থিতিতেই।

স্যামের কাছে কি গতকাল জনি গিয়েছিল?ও’ব্রায়েন জানতে চাইল। গিল্ডা উত্তর দিল সেকথা আমি বলতে পারবনা।

ও’ব্রায়েন বলল ধরে নিলাম, জনি কে রখুনীনয়, কিন্তুঐরহস্যময় লোকটি যেনাকি কেরবাড়ি থেকে রাত দুটোর সময় বেরিয়ে এসেছিল, সে যতক্ষণ না ধরা পড়ছে, সন্দেহ ভাজন ব্যক্তির তালিকায় ততক্ষণ জনিরনাম থাকবে। এসো, লাঞ্চের সময় হল এখন ওসবকথা থাক। গিল্ডাবলল, সীনআমি বাড়ি ফিরব এখন, জমাকাজ সব সারতে হবে।ও’ব্রায়েনতারহাত ধরে খাবার ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, যেখানে যাবার ইচ্ছে হয় যাবেআগে আমার সঙ্গে লাঞ্চ খাবে তারপর।

টাক্স ফোন করল, গিল্ডা ও’ব্রায়েনের সঙ্গে লাঞ্চ সেরে বেরোবার কিছু পরেই। খবর কি টাক্স! ও’ব্রায়েন রিসিভার তুলেই জিজ্ঞাসা করল, হ্যাঁ আমি বস্ বলছি।

টাক্স বলল সুসংবাদ, গিল্ডার অ্যাপার্টমেন্টেই জনি ছিল, ওকে পেয়েছি। আমি পরে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করব এখন ও তোমার দায়িত্বেই রইল, বুঝতে পেরেছ?