৪. পরিচিত গন্ধ

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

৪.১

বাঃ! এই তো সেই পরিচিত গন্ধ। ঘাম, জীবাণুনাশকের চেনা গন্ধ। ভারী জুতো পরা লোকজনের চলাফেরার শব্দ।

আমি ডিটেকটিভ লেফটেন্যান্ট রেটনিকের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দরজায় টোকা মারলাম।

একজন গম্ভীর গলায় কিছু বলতে হাতল ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।

রেটনিক ডেস্কে বসে কাজ করছে, পুলস্কি দেশলাই কাঠি চিবোচ্ছে হেলান দিয়ে।

দুজনেই কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকাল। রেটনিক টুপীটা পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল।

নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য না করে কথাগুলো হাওয়ায় ছুঁড়ে দিল। বলল, ভাল একটা চমক পাওয়া গেল। ইস, তুমি এখানে আসবে জানলে তোমার সম্মানে শহরের ব্যান্ডটা বাজানোর ব্যবস্থা করতাম। যাক্, বস। চীনা মেয়েদের কেমন লাগল?

ঠিক বলতে পারব না। কাজের ঠেলায় ওদের দিকে তাকাতে সময় পাইনি। তা আপনার এদিকে খবর কি? খুনের কেসটার কোন হদিশ পেলেন?

রেটনিক ওর চুরুট বের করে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল।

না। এখনও কিছু হয়নি। তুমি কিছু পেয়েছে।

 –বোধহয় কিছু পেয়েছি…আপনি কোন হদিশ করতে পারেন নি?

 চুরুটের ধোঁয়া ছাড়ল।

আমরা এখনও হার্ডউইককে ধরার চেষ্টা করছি। তুমি কী কী পেয়েছো?

–জো অ্যান যে মৃতদেহটা এখানে এনেছিল ওটা হেরম্যান জেফারসনের ছিলনা।

ও বেশ ধাক্কা খেল। চুরুটের ধোঁয়া গলায় আটকে বিষম খেল। তারপর রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে আমার মুখের দিকে ছলছলে চোখে তাকাল।

-দেখ টিকটিকি, যদি উল্টোপাল্টা খবর দিয়ে স্মার্ট হবার চেষ্টা কর, তবে আমি তোমায় ছাড়ব না।

–হেরম্যান জেফারসন মাত্র দুদিন আগে খুন হয়েছে। তারপর ওর বডি সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ পুলিস সেটা জল থেকে উদ্ধার করেছে। এই সপ্তাহের শেষে বডিটা প্লেনে এখানে আসছে।

–আশ্চর্য, তবে ঐ কফিনে কার বডি ছিল?

বৃটিশ স্মাগলার ফ্রাংক বেলিং বলে একটা লোকের…আপনি তাকে চিনবেন না।

–তুমি কি বুড়ো জেফারসনের সঙ্গে দেখা করেছ?

না। এখনও করিনি। নোঙর তো প্রথম আপনার এখানেই ফেলতে হয়, তারপর অন্য জায়গায়।

রেটনিক পুলস্কির দিকে তাকাল। পুলস্কি ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।

তারপর কাঁধ ঝাঁকিয়ে রেটনিক বলল, ঠিক আছে, তোমার ওখানকার পুরো ঘটনা আমাকে খুলে বল। দাঁড়াও এক মিনিট আমি সব লিখে নেব। টেলিফোন তুলে স্টেনোগ্রাফারকে ডাকাল, তারপর অপেক্ষা করতে লাগল।

একজন পাতলা চেহারার পুলিস এসে চেয়ারে বসে নোটবুক খুলে একবার রেটনিকের দিকে তাকাল তারপর আমার দিকে।

রেটনিক বলল, আরম্ভ কর। কিন্তু মনে রেখো একটাও যদি মিথ্যে বলেছে তো তোমার জন্মের ঠিক থাকবে না বলে দিচ্ছি। আর কিছু যেন বাদ না পড়ে।

আমার মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠল। আপনার কাছ থেকে আমি অশ্লীল কথা শুনতে আসিনি। জেফারসন আপনাকে দুরমুশ করার জন্যে তৈরী হয়ে আছে, আমার একটা কথা আপনাদের সকলকে শায়েস্তা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

পুলস্কি ঘোঁৎ করে এগিয়ে আমাকে মারতে এলো। স্টেনোগ্রাফার পুলিসটাও ক্ষেপে উঠে দাঁড়াল। আমিও শক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

রেটনিক দাঁড়িয়ে পুলস্কিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।

চুপ। পুলস্কিকে খেঁকিয়ে উঠে বলল, বসো, বসো। এই কথায় এত রেগে যাবে বুঝতে পারিনি। এবার যাক, তোমার স্টেটা ন্ট দাও।

আমি ওর দিকে অনেকক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম। ও আমার দিকে না তাকানোর ভান করল। একটু মাথা ঠাণ্ডা হলে একটা সিগারেট ধরিয়ে হংকং-এর পুরো ঘটনাটা বললাম। শুধু এটা বললাম না যে আমি আর লো নিউইয়র্ক অবধি একসঙ্গে এসেছি। তারপর আলাদা হয়ে যাই, তখন এই বিচ্ছেদের সময় দুজনেরই খুব কষ্ট হচ্ছিল।কিন্তু ও নিজের পরিবেশে চলে এসেছে, সেজন্যে ওর সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখার কোন অর্থ হয়না। ও আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে এজন্য আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। আমি ওকে আমার নিজের টাকা থেকে দুশ ডলার দিয়েছি যাতে ও নতুন করে কিছু শুরু করতে পারে। ও অশ্রু উগত কণ্ঠে আমাকে বিদায় জানিয়েছে। ব্যস, এই ছিল আমাদের শেষ দেখা।

এই সময়ের মধ্যে রেটনিক দুটো চুরুট শেষ করেছে। স্টেনোকে লেখাটা টাইপ করে আনতে বলল। পুলস্কি-কেও ইশারায় বাইরে যেতে বলল।

–কিন্তু ঐ চীনা মেয়েটা, জো-অ্যান কেন খুন হল ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, তাই না? রেটনিক বলল।

হু। তাই তো আমিও ভাবছি।

রেটনিক বলল, আমাদের ঐ কফিনটা খুলতে হবে। তবে বুড়ো জেফারসন হয়তো এটা পছন্দ করবেন না।

–কেন করবেন না? কফিনে তো আর ওঁর ছেলের লাশ নেই। আমি বললাম।

–তা নেই…তবে ওদের ফ্যামিলি ভলট খুলতে হবে তো…রেটনিক বাধো বাধো গলায় বলল।

 –সেটা চিন্তা করবেন না। সে আমি ব্যবস্থা করব। আমি বললাম।

রেটনিক কেমন হতাশভাবে বলল, খবরের কাগজগুলোরসিয়ে রসিয়ে লেখার মত একটা বিষয় পাবে। ওরা একটা ঝামেলাও পাকাতে পারে।

–তা পারে।

 টেবিলের ওপর আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে কাটতে বলল, দেখ রায়ান, এই নিয়ে কোন ঝামেলা হোক তা আমি চাই না। আর এজন্য আমি তোমার ওপর অনেকটা নির্ভর করতে পারি। কফিনটা আমাদের একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত ছিল।

আমি বললাম, ঠিক আছে মিঃ রেটনিক, আমি চলি। মিঃ জেফারসনের সঙ্গে দেখা করতে হবে।

–আমি তোমার টেলিফোনের আশায় বসে রইলাম। উনি মত দিলেই আমি গিয়ে কফিনটা খুলব।

–ঠিক আছে।

–একটা কথা মনে রেখো, পুলিস কোয়ার্টারে তোমার সত্যিকারের একজন বন্ধু রইল। দরকার পড়লে সব সময়ই সাহায্য পাবে।

বুঝলাম। আপনি আমাকে দেখলে আমিও আপনাকে দেখব, তাহলে দুজনেরই ভাল হবে। তাই না?

গাড়িতে উঠে কিছুক্ষণ গুম মেরে চিন্তা করলাম। আগে অফিসে যাব।

অবশ্য অফিসটা এখনও যদি থেকে থাকে। তারপর ওখান থেকে জেনেৎ ওয়েস্টকে ফোন করে জেনে নেব বিকালে মিঃ জেফারসনের সঙ্গে কথা বলা যাবে কিনা।

গাড়ি চালিয়ে অফিসে এসে লিফটে করে ওপরে উঠে আমার ঘরের দরজা খোলার সময় শুনতে পেলাম, মিঃ ওয়েডে গম্ভীর গলায় ডিকটেশ দিচ্ছে। মেঝের ওপরে পড়ে থাকা অনেকগুলো চিঠি তুলে ডেস্কের ওপর রাখলাম। ঘরটায় একটা গন্ধ বেরোচ্ছে। দেখে জানলাগুলো খুলে দিলাম। পরিষ্কার বাতাস ঢোকায় নিশ্বাস নেওয়া বেশ সহজ হল এবং ওয়েডের গলা আরও স্পষ্ট শোনা গেল। জানলার কাছে দাঁড়িয়ে ওর কথাগুলো শুনলাম। অ্যাডহেসিভ-প্লাস্টার-এর ওপর একটা ডিকটেশন দিচ্ছে। তারপর চিঠিগুলো খুলে দেখলাম দু-তিনটে ছাড়া সবগুলোই মামুলি চিঠি। কাজের চিঠিগুলো রেখে বাকিগুলো ফেলে দিলাম মেঝের ঝুড়িতে।

— টেলিফোনের কাছে গিয়ে জেঃ উইলবার জেফারসনের বড়ি ডায়াল করলাম। লাইনে জেনেৎ-এর গলা পেলাম।

–হ্যালো, আমি মিঃ জেফারসনের সেক্রেটারি কথা বলছি। আপনি কি মিঃ রায়ান কথা বলছেন?

–হ্যাঁ, মিঃ জেফারসনের সঙ্গে কি আজ দেখা করতে পারি?

নিশ্চয়ই। আজ বিকেল তিনটে নাগাদ আসুন।

–ঠিক আছে। যাবো।

–কিছু পাত্তা করতে পারলেন? ওর গলা শুনে বোঝা গেল না যে ও কতটা অধীর।

–ওখানে গিয়ে বলব। রিসিভার নামিয়ে রাখলাম।

একটা সিগারট ধরিয়ে ডেস্কের ওপর একটা পা তুলে ঘড়ি দেখলাম, এখন একটা বাজতে কুড়ি। অল্প অল্প ক্ষিদে পাচ্ছে। এখন আর হংকং-এ নেই, কাজেই সুস্বাদু চীনে খাবার আর পাবো না। এখন আবার সেই স্প্যারোর স্যান্ডউইচ। যাই হোক, পেটে কিছু একটা দিতে হবে, এই ভেবে স্প্যারোর স্ন্যাকবার-এ গেলাম। মিনিট কুড়ি ধরে হংকং-এর চীনা মেয়েদের সম্বন্ধে বানিয়ে বানিয়ে বলে ওকে চাঙ্গা করে রাখলাম।

খাওয়া-দাওয়া সেরে বাড়ি গেলাম। সেখানে দাড়ি কামিয়ে, স্নান সেরে, জামাকাপড় পাল্টে গাড়ি নিয়ে মিঃ জেফারসনের বাড়ি এলাম।

বাটলারটা চুপচাপ আমাকে জেনে ওয়েস্ট-এর অফিস ঘরে নিয়ে গেল। জেনেৎ কি যেন লিখছিল।

–আসুন, মিঃ রায়ান, বসুন। ও বলল।

আমি ওর পাশের একটা চেয়ারে বসলাম। বাটলারটা হ্যামলেটনাটকের ভূতের মত মিলিয়ে গেল।

কাজ বন্ধ করে কোলের ওপর দুটো হাত রেখে সাগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

–আপনার ওখানে যাওয়া কতটা সার্থক হলো? মিঃ জেফারসন মিনিট দশেকের মধ্যেই এসে যাবেন।

–হ্যাঁ। মোটামুটি কাজ হয়েছে। আমি মানিব্যাগ থেকে ফ্রাংক বেলিং-এ ফটোটা বের করে ডেস্কের ওপর ওর সামনে রাখলাম।

ফটোটা ও দেখতে লাগল।

–আপনি বলেছিলেন এটা হেরম্যান জেফারসনের ফটো। এটা আপনিই আমাকে দিয়েছিলেন মনে আছে?

–আমি এই ছবিটা জেফারসনকে দেখাব। বলব, আপনি বলেছিলেন এটা তার ছেলের ফটো।

জেনেৎ চোখ নীচু করে বলল, ও কি মারা গেছে?

-হেরম্যান? হ্যাঁ, এখন ও মারা গেছে।

লক্ষ্য করলাম, ওর চোখে মুখে বেদনার ছায়া ছড়িয়ে পড়ল। নিশ্চল হয়ে খানিকক্ষণ বসে থেকে চোখ তুলল। মুখে চোখে সব হারানোর বেদনার ছাপ।

-কি হয়েছিল? ও জিজ্ঞাসা করল।

আপনি জানতেন যে ও মাদকদ্রব্য চোরাচালানকারীদের সঙ্গে যুক্ত ছিল?

–হ্যাঁ। আমি জানতাম। জেনেৎ বলল।

যাই হোক, ওদের সঙ্গে ওর ঝামেলা বাধে–ওদের ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আপনি জানতেন কী করে?

–ও আমাকে সব বলেছিল। ক্লান্ত ভাবে জেনেৎ জবাব দিল। ও আরও বলল, আসলে কি জানেন আমি এমন বোকা যে ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আর ও আমার বোকামীর সুযোগ নিত। আমার মত বোকারা যারা এই ভুল করে তারা আমারই মত কষ্ট পায়।

–আপনি এই ফটোটা আমাকে দিয়ে কেন বলেছিলেন এটা জেফারসনের ফটো?

–শুধুমাত্র মিঃ জে. জেফারসনকে মানসিক কষ্ট থেকে রক্ষা করার জন্যে। ওর মতো একজন ভদ্রলোকের ছেলে এমন একটা নোংরা ব্যাপারে জড়িত রয়েছে, এটা যেন উনি না জানেন–এটাই আমি চেয়েছিলাম।

-আপনি এই ফটোটা কোথায় পেয়েছিলেন?

–এটা আমাকে হেরম্যান পাঠিয়েছিল। যদিও ওর বাবাকে বছরে একটা চিঠি দিত, আমাকে কিন্তু প্রায়ই চিঠি দিত। একটু ভেবেতারপরে বলল, আপনাকে পুরো ব্যাপারটা আমার বলা উচিত। কয়েক বছর আগে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমাদের দুজনের একটা বাচ্চাও হয়েছিল। যদিও জানতাম ও একটা অপদার্থ, তবুও আমি ওকে ভালবাসতাম। সেটা বুঝেই ও সুযোগ নিত। ও আমাকে প্রায়ই অনেক ফটো পাঠাত।

হঠাৎ একদিন ও বেলিং-এর এই ফটোটা পাঠিয়ে লিখল, এই লোকটার সঙ্গে ও একটা ব্যবসা করতে যাচ্ছে। আমার মনে হয় ও যে মিথ্যে বলছে না সেটা প্রমাণ করতে বেলিং-এর ফটোটা পাঠিয়েছিল। যাই হোক, ও এক হাজার ডলার চেয়েছিল, নতুন করে ব্যবসা করার জন্যে। আমি দিইনি। তারপর ওর কাছ থেকে একটা সাংঘাতিক চিঠি পেলাম–ও ভীষণ বিপদে পড়েছে। ওর চিঠি পড়েই আমি বুঝেছিলাম ওর বিপদের গুরুত্বটা। ও লিখেছিল যে ও একটা চোরাচালানের দলের সঙ্গে আটকে পড়েছে। ওই দলের লোকেরা ওকে খুন করে ফেলতে চাইছে। সেজন্য ও কোথাও গা ঢাকা দিচ্ছে।

তখনই ও লিখেছিল, বেলিং মারা গেছে কিন্তু লোকে জানে যে ও মারা গেছে। ওর স্ত্রী বেলিং এর বডি নিয়ে এখানে আসছে। এভাবেই ওখানকার লোককে বোঝান যাবে যে ও মারা গেছে। তাহলে দলের লোকেরা আর ওর খোঁজ করবে না। ও যে এত নীচে নেমে গেছে, দেখে আমি সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি চাইনি মিঃ জেফারসন এই আসল সত্যিটা জেনে কষ্ট পাক। তাই এটা…বোধহয় ঠিক হয়নি..তবুও আমি করেছিলাম।

আমি কিছু বললাম না।

ও আবার বলল, ও আমাকে একটা চীনা লোকের ঠিকানা দিয়েছিল। তার নাম ওয়ং হপ হো। আমাকে বলেছিল, কোন বিপদে পড়লে আমি যেন একে চিঠি লিখে জানাই। যখন জো-অ্যান খুন হল এবং দেখলাম মিঃ জেফারসন আপনাকে ওখানে পাঠাচ্ছে, তখন আমি ওয়ংকে চিঠি লিখে সব জানালাম এবং সাবধান করে দিলাম। ওকে আমি বলে দিয়েছিলাম যে আপনাকে আমি বেলিং-এর ফটোটা দিয়েছি। মিঃ জেফারসন যাতে ব্যাপারটা না জানেন, এজন্য। সত্যি বলতে কি আমি একেবারে বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলাম।

এখন তো তাহলে ওকে সব কথা জানাতে হবে এবং পুরো ঘটনাটা তার জানা উচিত।

কী দরকার? জেনেৎ আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে বলল, ওঁর ছেলে কোন রকম অসৎ সঙ্গে ছিলনা, এটা জেনেই ওঁকে মরতে দিন না!

–সেটা আর এখন সম্ভব নয়। কারণ কফিনটা খুলতে হবে। আর এজন্য পুলিস আসছে। ব্যাপারটা আর চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

আমি বললাম, অবশ্য আমি চেষ্টা করব যাতে এই কেসে আপনি জড়িয়ে না পড়েন। এটুকুই মাত্র করতে পারি।

এমন সময় দরজায় একটা টোকা দিয়ে বাটলার ঢুকল।

মিঃ জেফারসন আপনার সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত। সে বলল, আপনি কি আমার সঙ্গে আসবেন?

আমি রাজি হয়ে মিঃ জেফারসনের ঘরে গেলাম। উনি সেই বিছানার পাশে চেয়ারে বসে আছেন। মনে হল, ওকে আগে যখন দেখে যাই, তারপর থেকে উনি আর নড়েননি।

আমাকে দেখে হাত দিয়ে ওঁর কাছের একটা চেয়ারে বসতে বললেন, আমি বসলাম।

তারপর ইয়ংম্যান ফিরে এসেছে। বেশ, আমি নিশ্চয়ই আশা করব তুমি আমার জন্যে কিছু খবর এনেছে।

-হ্যা…তবে অভ্যর্থনা জানানোর মত কোন খবর আমি আনিনি। আপনি আমায় হংকং পাঠিয়েছিলেন খুনের ব্যাকগ্রাউন্ডটা জেনে আসার জন্যে, আমি যথাসম্ভব তা জেনে এসেছি। আমি বললাম।

আমাকে ভালভাবে লক্ষ্য করে উনি কাঁধ ঝাঁকালেন।

-ঠিক আছে, বল কী খবর আনলে?

মোটামুটি গুছিয়ে আমি হংকং এর ঘটনাগুলো পরপর বললাম। ওর ছেলের সম্বন্ধে যা জেনেছিলাম তাও বললাম। তবে ও কিভাবে মারা গেছে সেটা না বলে শুধু বললাম পুলিস ওর ডেডবডিটা সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেছে।

উনি চুপচাপ সব শুনলেন। একটি কথাও বললেন না, যতক্ষণ না আমি শেষ করলাম।

–তাহলে এখন কী হবে? আমার দিকে তাকিয়ে অসহায়ভাবে জিজ্ঞেস করলেন।

–পুলিস কফিনটা খুলতে চাইছে। এবং ভল্ট খোলার জন্যে আপনার অনুমতি চাইছে। আমি বললাম।

-ঠিক আছে, ভল্ট-এর চাবি মিস্ ওয়েস্ট-এর কাছে পাবে।

–আপনার ছেলের বডি আমি এখানে আনার ব্যবস্থা করেছি। এ সপ্তাহের শেষে সেটা এসে পড়বে।

ধন্যবাদ। নিস্পৃহ কণ্ঠে জবাব দিলেন।

অনেকক্ষণ দুজনে চুপচাপ বসে রইলাম। উনি সামনের দিকে যোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।

-হেরম্যান এত নীচে নেমে যেতে পারে, আমি ভাবতেই পারিনি। মাদকদ্রব্যের চোরাচালান পৃথিবীর জঘন্যতম পেশা। জানোয়ার!

আমি চুপচাপ রইলাম।

–যাক্, ও মরেছে ভালই হয়েছে। উনি বলে চললেন, ওর স্ত্রীকে কে খুন করেছে, সেটা বের করেছে? মিঃ জেফারসন বললেন।

না। সেটা এখনও সম্ভব হয়নি।

আপনি কি চান সেটা আমি বের করি?

নিশ্চয়ই। কেন নয়? তোমার টাকা পয়সা যা কিছু প্রয়োজন হবে ওয়েস্টকে বলবে। এই ব্যাপারটার একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার। ওকে কে খুন করল, এটা বের করতেই হবে।

-ঠিক আছে। আমি তাহলে ভল্টের গবিটা নেব। আমি উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আর একটা কথা আপনার ছেলে মারা গেছে। এখন আপনার উত্তরাধিকারী কে হবে?

চোখ কুঁচকে মিঃ জেফারসন আমার দিকে একবার দেখলেন। তারপর বললেন আমার সম্পত্তি কে পাবে, সেটা জেনে তুমি কী করবে?

ব্যাপারটা যদি গোপন কিছু হয়, তাহলে ক্ষমা চাইছি।

আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলেন।

না। তেমন কিছু নয়, গোপন কিছু নয়, তবে তুমি এটা জানতে চাইছ কেন? উনি বললেন।

–হেরম্যানের স্ত্রী বেঁচে থাকলে আপনার উইলে নিশ্চয়ই ওর নাম থাকত। তাই না? আমি বললাম।

–অবশ্যই। আমার পুত্রবধু সে-সুতরাং সে নিশ্চয়ই আমার সম্পত্তির অংশ পেত।

কতটা অংশ? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

আমার সম্পত্তির অর্ধেক।

–তাহলে তো অনেক টাকা। আর বাকি অর্ধেক? আমি ওনার চোখের দিকে চেয়ে রইলাম।

মিস্ ওয়েস্ট। মিঃ জেফারসন বললেন।

–তাহলে মিস্ ওয়েস্ট এখন পুরো অংশটাই পাবেন।

মিঃ জেফারসন চিন্তিত মুখে আমার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।

 হ্যাঁ তাই, কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে তুমি এত কৌতূহল দেখাচ্ছো কেন?

-কৌতূহলী হওয়াই তো আমার পেশা। বলে আমি চলে এলাম।

জেনেৎ ওর ডেস্কে বসে কাজ করছিল। আমাকে দেখে চোখ তুলে দেখে ঠাণ্ডা গলায় বলল,

–আসুন, মিঃ রায়ান।

আমি বললাম, ভন্টের চাবিটা আমাকে দিতে হবে। পুলিস কফিনটা খুলে দেখবে। আমি রেটনিককে বলেছি চাবিটার ব্যবস্থা আমি করে দেব। মিঃ জেফারসনও কোন আপত্তি করেননি।

ড্রয়ার খুলে জেনেৎ চাবিটা আমাকে দিল। আমি ওকে পুরো ঘটনাটা বললাম এবং চাবিটা পকেটে ঢুকিয়ে বললাম, ব্যাপারটা উনি সহজভাবেই নিয়েছেন।

জেনেৎ মাথা নাড়ল। তারপর বলল, তাহলে এখন কী হবে?

আমার পরবর্তী কাজ এখন জো-অ্যানের খুনীকে খুঁজে বের করা।

–এটা কী করে করবেন? জেনেৎ আমাকে জিজ্ঞেস করল।

–সব খুনের পেছনেই একটা মোটিভ থাকে। এবং আমি নিশ্চিত যে অ্যানের খুনের পেছনেও মোটিভ আছে। সেই মোটিভটা কী তাও আন্দাজ করতে পারছি। যা আমি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করব না। কাজ হয়ে গেলে চাবিটা দিয়ে যাবো।

চলে এলাম। বাটলারটা বোবার মত আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এল। গাড়িতে ওঠার আগে একবার বাড়িটার দিকে তাকাতেই দেখলাম জেনেৎ ওয়েস্টের পর্দায় একজনের ছায়া সরে গেল।

জেনেৎ আমার চলে যাওয়া লক্ষ্য করছিল।

.

৪.২

 লেফটেন্যান্ট রেটনিক এবং সার্জেন্ট পুলস্কি দুজনে পুলিসের গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আমার সঙ্গে সমাধি ক্ষেত্রে ঢুকল।

–পৃথিবীতে যে জায়গা দেখতে আমার সবচেয়ে ঘেন্না করে সেটা এখন আমায় দেখতে হচ্ছে। রেটনিক দাতে চুরুট চেপে বলল।

–আমাদের সবাইকেই একদিন এখানে আসতে হবে। আগে অথবা পরে এটাই তো ভবিষ্যত এবং চিরস্থায়ী ঠিকানা। আমি বললাম।

-সেটা আমি জানি তোমাকে আর শেখাতে হবে না। আমাকে খেঁকিয়ে উঠল।

দরজা দিয়ে ঢুকে সামনের রাস্তা দিয়ে আমরা এগোচ্ছিলাম। আমাদের দুদিকে সুদৃশ্য অনেকগুলো স্তম্ভ।

–ঐ দিকে। পুলস্কি বলে উঠল, ঐ সারির চার নম্বরটা। আমরা নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে খুব সুন্দর একটা সমাধির কাছে এলাম। দেখলেই বোঝা যায় বেশ খরচ করা হয়েছে এর পেছনে।

–এইটা, পুলস্কি বলল।

আমি পকেট থেকে চাবিটা বের করে ওকে দিলাম।

–জেফারসন তোমাকে কী বলল? পুলস্কি স্তম্ভের দরজা খোলার সময় আমাকে রেটনিক জিজ্ঞাসা করল, ও নিশ্চয়ই আমার নামে তোমাকে কিছু বলেছে।

–একী! ভয়ার্ত গলায় পুলস্কি চীৎকার করে উঠল। আমাদের আগে এখানে কেউ এসেছিল।

রেটনিক আর আমি দেখলাম, ভল্ট-এর দরজায় একটা ঠেলা মারতেই ওটা খুলে গেল। কোন বড় ধরনের লিভার দরজা আর তালার মাঝখানে ঢুকিয়ে চাড় দিয়ে তালা ভাঙা হয়েছে। দরজার পাশের পাথরে ফাটল ধরেছে।

-কেউ কিছু ছুঁয়োনো। রেটনিক বলল, আমরা এখান থেকেই দেখি।

 ভল্ট এর মধ্যে ফ্লাশ লাইট ফেলতেই দেখা গেল চারটে সেলফ, তাতে চারটে কফিন। একেবারে নীচের সেলফের কফিনের ঢাকনাটা ভোলা। ঢাকনাটা দেওয়ালে লাগান! কফিনের ভেতরটা ভালভাবে দেখলাম, ওখানে লম্বা একটা সীসার পাত পড়ে রয়েছে, আর কিছু নেই।

রেটনিক বলল, দেখেছ! কেউ বডিটা চুরি করে পালিয়েছে।

–হয়ত আদৌ কোন বডি ছিলনা, এতে। আমি বললাম। আমার দিকে ফিরে রেটনিক অধৈর্যভাবে খেঁকিয়ে উঠল। রাগে থমথমে মুখ।

কী বলতে চাও কি তুমি। আর কত তুমি জান, যা আমাকে বলনি?

-আমি যা জানতাম সব বলেছি। শান্তভাবে বললাম, তাই বলে মগজটা খাটাবো না, তা তো হয়না।

জ্বলজ্বলে চোখে পুলস্কির দিকে তাকিয়ে রেটনিক বলল, এই কফিনটা বের করে হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়ে দাও পরীক্ষা করার জন্যে। হাতের ছাপটাপ পাওয়া যেতে পারে। ততক্ষণে আমি আর এই চালাক টিকটিকি একটু ঘুরে আসছি।

তারপর আমাকে খামচে ধরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বাইরে নিয়ে এল। পুলস্কি পুলিস হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে কথা বলতে লাগল।

পুলস্কির থেকে একটু দূরে একটা সমাধির ওপর বসে রেটনিক বলল,

বল টিকটিকি,–কী ছাইপাঁশ তোমর মগজে এসেছে বল।

-আমার মগজে এখুনি কিছুই আসেনি। আপনার কি একবারও ভেবে অস্বস্তি হচ্ছে না যে, আপনি এখন কোন মৃত স্ত্রী অথবা কারুর স্বামী বা মায়ের ওপরে বসে আছে।

–আমি কোথায় বসে আছি, সেটা ভাবার মত অবস্থা এখন আমার নেই। আজ সকালে মেয়র আমাকে ফোন করেছিল।… আমার সেই প্রভাবশালী শালা..বুঝেছ? জানতে চেয়েছে আমি কবে নাগাদ এই খুনের কেসটা সমাধান করছি। রাগে চুরুটটা কামড়াতে কামড়াতে বলল, বুঝলে কিনা! আমার আপন শালা, সেও আমার ওপর চাপ দিচ্ছে।

আমি চুপ থাকলাম।

–তোমার কেন মনে হল, কফিনটা ফাঁকা ছিল?

এটা আমার ধারণামাত্র। বেলিং-এর দেহ তো পুড়ে কুঁকড়ে গিয়েছিল। কোনভাবে ওর দেহ সনাক্ত করা যাবেনা। সুতরাং ওটাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ায় কি লাভ? জেফারসনের বডি ওতে ছিলনা। ভারী করার জন্যে কিছু সীসা ওতে ভরে পাঠানো হয়েছে।

রেটনিক গুম হয়ে রইল।

–তাহলে তালা ভেঙে খোলার কি দরকার ছিল?

ও প্রশ্ন করল।

–তা অবশ্য ঠিক। হঠাৎ ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হলো। আমি লাফিয়ে উঠে নিজের হাতে ঘুসি মেরে বললাম, ইস্! কী বোকার মত এতক্ষণ ভাবছিলাম। ঠিক ঠিক। একদম সোজা ব্যাপার। প্রথমেই এটা চিন্তা করা উচিত ছিল আমার।

রেটনিক আমার দিকে তাকিয়ে গরগর করতে লাগল।

কী নিজের মনে বকছ?

–হেরোইন। কফিনের মধ্যে হেরোইন ছিল। আমি বললোম। দু-হাজার আউন্স! আর এটাই তো লুকোনোর পক্ষে নিরাপদ জায়গা।… এবং হংকং থেকে স্মাগল করার সবচেয়ে ভাল পথ!

রেটনিক আমার কথা শুনে লাফিয়ে উঠল।

এরপর আমি বলে যেতে লাগলাম, জেফারসন হেরোইন নিয়ে গা ঢাকা দিল। কিন্তু খুব শীগগিরই ও বুঝতে পারল ও নিজের জালে নিজেই ধরা পরেছে। প্রথমতঃ ও হংকং ছেড়ে যেতে পারছে না। দ্বিতীয়তঃ দলের লোকেরা ওকে ছাড়বে না। অত টাকার হেরোইন! কাজেই ও দলের লোককে বোঝাতে চাইল যে ও মারা গেছে। অবশ্য এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিল। জো অ্যানকে দিয়ে ওর বাবাকে টাকা পাঠাতে বলেছিল যাতে করে ওর বডি আমেরিকায় ফেরৎ আনা যায়। ওর কাছে টাকা-পয়সা নেই, কাজেই বাপের টাকায় কফিনটা খালাস করে নিতে হবে। আর মনে হয় কফিনে প্রথমে বেলিং-এর বডি ভরে সেটা আমেরিকান কনস্যুলের অনুমতি আদায় করে। তারপর কোন এক সময় বডিটা সমুদ্রে ফেলে ঐ জায়গয় হেরোইনটা ভরে নেওয়া হয়, সঙ্গে সীসা। জেফারসন নিজে হংকং-এ আটকে পড়লেও ও নিশ্চিত ছিল যে ওর স্ত্রী হেরোইন নিয়ে আমেরিকা পৌঁছে গেছে।

রেটনিক খুব আশার সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু মালটাকে সরালো কে?

-সেটা এখনও আমি ঠিক বলতে পারছি না। ম্যাকার্থী বলেছিল, জেফারসনের বডি যেভাবে পাওয়া গিয়েছিল তাতে বোঝা গিয়েছিল, ওকে মারার আগে ওর ওপর সাংঘাতিক রকম শারীরিক অত্যাচার করা হয়। সেই সময় হয়তো ও সত্যি কথাটা বলে ফেলে। তখন ওর দলের কাউকে এখানে পাঠানো হয়, কফিনটা ভেঙে মালটা সরিয়ে ফেলার জন্যে। সঠিক কিছু বোঝা যাচ্ছে না।

রেটনিকের মুখ অন্ধকার থেকে আলোয় আসার মত উজ্জ্বল হল।

ব্যাপারটার মোটামুটি একটা হদিশ পাওয়া যাচ্ছে। যাকগে এ নিয়ে আর আমার মাথাব্যথা নেই। হেরোইনের ব্যাপারটা নারকোটিক ডিপার্টমেন্টের কাজ, ওরা বুঝবে।

কিন্তু এখনও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, চীনা মেয়েটা আমার অফিসে কেনই বা এসেছিল আর কেনই বা খুন হল? আমি বললাম।

রেটনিকের সেই উজ্জ্বল মুখ নিমেষে ম্লান হয়ে গেল।

-হ্যাঁ, এটাও একটা চিন্তার ব্যাপার।

-আমি অবশ্য একটা আইডিয়া নিয়ে এগোচ্ছি যে, হেরোইনের সঙ্গে এই খুনের কোন সম্পর্ক নেই। আমি বললাম,

বেঁচে থাকলে জো-অ্যান বৃদ্ধ মিঃ জেফারসনের অর্ধেক সম্পত্তি পেত। আজ বিকেলে এখবরটা ওমার থেকে পেলাম। কিন্তু জো-অ্যানের মৃত্যুতে পুরো সম্পত্তিই পাচ্ছে মিস্ জেনেৎ ওয়েস্ট।

রেটনিক চোখ কুঁচকে তাকাল।

–তার মনে জেনেৎ ওয়েস্ট মেয়েটাই ওকে খুন করেছে? রেটনিক আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করল।

-না, এখনও তা মনে করিনা। তবে দশ লক্ষ ডলারের মালিক জেনেৎ হতে পারে এটা ও চিন্তা করে। ওর কোন উচ্চাকাঙ্খী বয়ফ্রেন্ড থাকতে পারে। তবুও মেয়েটা কেন আমার অফিসে এলো, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।

রেটনিক নিস্পৃহভাবে বলল, ঠিক আছে আমি খবর নেব ওর কোন বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা।

এমন সময় পুলস্কি ওকে ডাকল।

–ঠিক আছে টিকটিকি, আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখ–এই কাজটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেরে ফেলতে হবে। বলে রেটনিক পুলিশের গাড়ির দিকে ছুটল। পুলস্কির হাতে পুলিশ টেলিফোনের মুখটা চেপে ধরা।

আমি গাড়ি চালিয়ে অফিস ব্লকের সামনে চলে এলাম। সাড়ে পাঁচটা বাজে। ঘরে ফিরতেও ইচ্ছে করছে না, আবার অফিসেও কিছু করার নেই। দরজার তালা খুলে বাইরের ঘরটায় বসলাম। তারপর বড় ঘরের তালা খুলে ঢুকে একটা সিগারেট ধরালাম।

জেনেতের কথা চিন্তা করতে লাগলাম। যে লোকটা হার্ডউইক বলে পরিচয় দিয়েছিল সে কি জেনেৎ-এর বয়ফ্রেন্ড? এবং ঐ লোকটাই কি জো-অ্যানকে খুন করেছে? তাই যদি হয় তবে আমার অফিসটাকে বেছে নিয়ে আমাকে এই খুনের ব্যাপারে জড়াবার কারণ কি?

জেনেৎ এই খুনের সঙ্গে জড়িত এটা মন থেকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারছিলাম না। ওর সঙ্গে কথা বলে ওকে ওই ধরনের মেয়ে মনে হয়নি। আবার দশলক্ষ ডলারের হাতছানি! ওর বয়ফ্রেন্ড হয়ত ওকে কিছু না জানিয়ে এটা করেছে।

জো ওয়েডের গলা শুনতে পেলাম। আমার চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল। ও বলল, আমি এখন চলে যাচ্ছি। কাল সকালে দেখা হবে। জানলা দিয়ে ওর গলা ভেসে এল। তারপর বুঝলাম ও বেরিয়ে গেল। ওয়েডে ভারী পা ফেলে লিফটের দিকে গেল ও লিফটে করে নেমে গেল।

আমি আবার চিন্তায় ডুবে গেলাম।

ঠিক কিভাবে এগোবো এটা ভাবতে ভাবতে ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেছে। এমন সময় দূরে একটা প্লেনের ইঞ্জিনের শব্দ পেলাম এবং এটা আস্তে আস্তে খুব জোর হয়ে তারপর মিলিয়ে গেল। আমি চেয়ারের ওপর লাফিয়ে উঠলাম।তারপরেই একটা জেট প্লেনের রানওয়ে ছাড়ার আওয়াজ। আমার মনে হল এটা একদম সেইরকমআওয়াজ,যখন আমি হার্ডউইকের সঙ্গে কথা বলার সময় ফোনের ভৈতর দিয়ে শুনতে পেয়েছিলাম। আমি তাড়াতাড়ি টেলিফোনে কান পাতলাম। একটা ব্যস্ত এয়ারপোর্টের শব্দ আমার কানে এল। শব্দটা যে কোথা থেকে আসছে আমার আর কোন সন্দেহ রইল না। উত্তেজনায় আমার বুক দপদপ করতে লাগলো। আমি আস্তে আস্তে ওয়েডের ঘরের হাতল ঘুরিয়ে ঘরে এসে ঢুকলাম।

ওয়েডের সেই চশমাধারী,ইঁদুরমুখো সেক্রেটারি একটা টেপ রেকর্ডার নিয়ে ওরই ডেস্কে বসে কাজ করছে। লাউডস্পীকার দিয়ে ব্যস্ত এয়ারপোর্টের আওয়াজ বেরিয়ে আসছে।

–আমি ভাবলাম, আপনাদের অফিসটা বোধহয় একটা ব্যস্ত এয়ারপোর্ট হয়ে গেছে। আমি বললাম।

আমাকে দেখে সেক্রেটারির মুখ সাদা হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি রেকর্ডারের সুইচ বন্ধ করল।

আমি হেসে ওকে অভয় দিলাম।

–আপনি এত ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেন? আমি বললাম, শব্দটা শুনে কৌতূহল হল তাই এলাম।

না…মানে, টেপটা একটু চালিয়ে দেখছিলাম। মিঃ ওয়েডে তো বাড়ি চলে গেছেন।

–ঠিক আছে, ঠিক আছে এটা আর একবার চালান না, রেকর্ডিংটা খুব সুন্দর হয়েছে। আমি আর একবার শুনি।

না, সেটা বোধহয় ঠিক হবেনা। মিঃ ওয়েডে এটা পছন্দ করবেন না।

-না, না, উনি কিছু মনে করবেন না। আমি ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেলাম এবং বললাম, বেশ দামী মেসিন–তাইনা?

রিউইন্ড বাটনটা টিপতেই রেকর্ডারটা চালু হয়ে গেল, তখন প্লে-ব্যাক বাটন টিপে এয়ারপোর্টের পরিষ্কার আওয়াজ শুনতে পেলাম। বেশ কয়েক মিনিট ধরে আওয়াজটা শুনে টেপটা বন্ধ করলাম। মেয়েটার দিকে চেয়ে হাসলাম।

সুতরাং…আমি নিশ্চিত যে জন হার্ডউইককে আমি খুঁজে পেয়েছি। রীতিমত উত্তেজিত হয়ে পড়েছি।

এই মেয়েটার সামান্য কৌতূহল আর আমার ভাগ্য এই দুটোর জন্যেই এটা সম্ভব হল।

–মিঃ ওয়েডে তো কালকের আগে আসছেন না? আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

–না।

–ঠিক আছে। আমি কালই ওর সঙ্গে দেখা করে নেব।অফিসে ফিরে এসে সিগারেট ধরাতে গিয়ে দেখলাম উত্তেজনায় আমার হাত থরথর করে কাঁপছে।

আধ ঘণ্টা ধরে বসে রইলাম। ছটার একটু পরে ওয়েডের সেক্রেটারি মেয়েটা অফিস বন্ধ করে লিফটের দিকে এগিয়ে গেল। যতক্ষণ না লিফট এবং এই তলার সব লোক নেমে চারিদিক চুপচাপ হল আমি ঠায় বসে রইলাম। তারপর উঠে প্যাসেজের চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম। না, কোন ঘরে আলো জ্বলছে না, কেউ কোথাও নেই। এখন এই তলায় শুধু একা আমি।

আমার ড্রয়ার খুলে একগোছ চাবি পকেটে পুরলাম। তারপর বেরিয়ে এলাম। এক মিনিটের মধ্যে চাবি ঘুরিয়ে মিঃ জেঃ ওয়েডের ঘরের তালা খুলে ফেলৈ চারদিকে তাকালাম, একদিকে দেওয়ালে একটা সবুজ রং এর স্টীলের ফায়ার পুফ কাপ বোর্ড রয়েছে। তালাটা দেখলাম। আমার কাছে যে চাবিগুলো আছে সেগুলো দিয়ে এই তালাটা খোলা যাবে না। অফিসে ফিরে গিয়ে কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে এলাম। আবার ঢুকে ওয়েডের ঘরে তালা দিয়ে দিলাম।

মিনিট পনের চেষ্টা করার পরেও যখন তালাটা খুলতে পারলাম না, তখন ভাবলাম তালাটা ভেঙে ফেলতে হবে। আবার তালা না ভাঙারই সিদ্ধান্ত নিলাম। অন্য ঘরটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঘরে রয়েছে একটা ডেস্ক, একটা ফাইলিং ক্যাবিনেট, একটা টাইপরাইটার একটা চেয়ার। ফাইলিং ক্যাবিনেটটা খুঁজলাম। কিন্তু কিছু কাগজ-পত্র ছাড়া সেখানে আর কিছুই পেলাম, না।

আমি যা খুঁজছি সেটা এই অফিসে যদি থাকে তো এই কাপ-বোর্ডেই আছে।

এয়ার পোর্টের শব্দ রেকর্ড করা টেপটা নিয়ে নিলাম এবং ডেস্কের ড্রয়ার থেকে আর একটা টেপ বের করে সেখানে রেখে দিলাম। ওর ঘরের সব আলো নিবিয়ে, দরজা খোলা রেখে আমার অফিসে চলে এলাম।

টেপ রেকর্ডারটা একটা গোপন জায়গায় রেখে টেলিফোন গাইড খুঁজে মিঃ ওয়েডের বাড়ির নম্বর বের করলাম। ওর বাড়ি লরেন্স অ্যাভি-তে এই অফিস থেকে গাড়ি চালিয়ে দশ মিনিটের পথ। ওর টেলিফোন নাম্বার ডায়াল করে কোন উত্তর পেলাম না।

একবার ভাবলাম রেটনিককে খবরটা দেব কিনা।না, ব্যাপারটা আপাততঃ নিজের হাতেই থাক। অবশ্য আমার ধারণা ভুলও হতে পারে। যাই হোক, ওয়েডের সঙ্গে কথা বলার পর রেটনিককে জানাবার অনেক সময় পাওয়া যাবে।

অনেকবার ডায়াল করার পর, রাত নটা নাগাদ লাইন পেলাম। ও- প্রান্তে মিঃ ওয়েডের গলা পেলাম।

–আমি নেলসন রায়ান বলছি। আমি বললাম।

কী ব্যাপার বলুন। খুব অবাক হয়ে গিয়ে বলল, আপনার জন্যে আমি কি করতে পারি? আপনার বেড়ানো কেমন হল?

–ভাল..আমি অফিস থেকে বলছি। আমি একটা জিনিষ ভুলে ফেলে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি, আপনার ঘরের দরজা খোলা আর আলো নেভানো। আপনার মেয়েটিও নেই, মনে হয় ও তালা দিতে ভুলে গেছে। আমি কি দারোয়ানকে বলব আপনার ঘরে তালা দিয়ে দেবে? টেলিফোনেই ওর চাপা নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলাম।

-আশ্চর্য! অনেকক্ষণ বাদে ও বলল, ঠিক আছে, আমি আসছি।

–দেখে মনে হচ্ছে, চুরির ধান্দায় কেউ আপনার ঘরে ঢুকেছিল।

–চুরি করার আর কী আছে? ঠিক আছে, দেখছি আমি।

আপনি যদি ভাল মনে করেন, তবে আমি দারোয়ানকে বলে ঘর বন্ধ করার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

না…ধন্যবাদ। আমি যাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি না, ও কী করে ঘরে তালা দিতে ভুলে গেল! ও তো এরকম ভুল কখনও করেনি।

–হয়তো কারোর প্রেমে পড়েছে–আমি হেসে বললাম, তাহলে এবার আমি ফোন রাখছি–আমাকে আর কিছু করতে হবে না তো?

— না, না। টেলিফোন করার জন্য ধন্যবাদ।

–তাতে কী হয়েছে…।

আমার ঘরের আলো নিবিয়ে দরজায় তালা দিয়ে পিস্তলটা সঙ্গে নিয়ে ওয়েডের অফিসে গিয়ে ঢুকলাম। ওর সেক্রেটারির ডেস্কে বসে পিস্তলটা রেডি করে আমার পাশে ডেস্কের ওপর রাখলাম।

মিনিট দশেক পর লিফটের ওপরে ওঠার শব্দ পেলাম। ডেস্ক থেকে উঠে পিস্তলটা হাতে নিয়ে, দরজার পিছনে গিয়ে লুকিয়ে শুনতে লাগলাম প্যাসেজে এত্ত পায়ে এগিয়ে আসার শব্দ। ওয়েডে ঘরে ঢুকেই আলো জ্বালালো। আমি ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে ওকে লক্ষ্য করতে লাগলাম। ও ঘরের চারদিকে তাকিয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে আমি যে ঘরে আছি, সেই ঘরের দরজা খুলল। আমি আরো দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে গেলাম। তারপর এক ঝলক ঘরের ভেতর দেখে গিয়েই ও তারপর বাইরের ঘরে এল। তারপর চাবির গোছার শব্দ পেলাম এবং তারপর একটা তালা খোলার শব্দ। আন্দাজ করলাম, ও কাপবোর্ডের তালা খুলল।

আমি দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলাম।

ওয়েডে কাপবোর্ডের পাল্লা খুলে হাঁটু গেড়ে তার সামনে বসে আছে। তাতে ঠাসা বোতল, বাক্স এবং অন্যান্য রাসায়নিক জিনিষের স্যাম্পল।

-হেরোইনটা কি এখানে আছে? খুব ঠাণ্ডা গলায় আমি জিজ্ঞেস করলাম।

ওয়েডে চমকে আমার দিকে তাকাল। তারপর ওর মুখটা সাদা হয়ে গেল। আমি পিস্তলটা অল্প তুললাম, যাতে ও দেখতে পায়। আস্তে আস্তে ও উঠে দাঁড়াল।

–আপনি এখানে কী করছেন? ভয়ার্ত গলায় জিজ্ঞেস করল।

আমি কাপবোর্ডের তালাটা খোলার চেষ্টা করেছিলাম, পারিনি। ওর ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, সুতরাং ভাবলাম আপনি যদি নিজে এসে এটা খুলতে আমাকে সাহায্য করেন। ওখান থেকে সরে দাঁড়ান, কিছু করার চেষ্টা করবেন না।

কিন্তু কেন? স্বলিত পায়ে ওয়েডে ডেস্কের দিকে এগিয়ে গিয়ে তারপর ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ে, দু-হাতে মুখ ঢাকল।

বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, একদম নীচের তাকে প্রায় পঞ্চাশটা নিখুঁত ভাবে প্যাক করা পার্সেল পড়ে আছে।

–ঐগুলিই তো জেফারসন নিয়ে লুকিয়েছিল? ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। ও পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছতে মুছতে মাথা নাড়ল।

–হ্যাঁ আপনি কি করে জানলেন?

–আপনার টেপ-রেকর্ডারে এয়ারপোর্টের শব্দ টেপ করা ছিল, সেটা আপনি নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলেন। আপনার মেয়েটা একবার ভুল করে ওটা চালালে আমি শুনতে পেয়ে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারি।

আমার বড় ভুলো মন। সব কাজেই একটা না একটা ভুল থেকে যায়। ক্লান্ত স্বরে ওয়েডে বলল। আপনি যখন হংকং যাওয়ার কথা বললেন, তখনই বুঝেছিলাম, আমার শেষ সময় এসে গেছে। কেননা আমি জানতাম কোথাও না কোথাও একটা ভুল করে ফেলব। আপনার যাওয়ার সব ঠিক দেখে লোক দিয়ে আপনাকে খুন করার চেষ্টা করি, কিন্তু ব্যর্থ হলাম। আমি বুঝলাম এবার আমাকে ধরা পড়তেই হবে।

–আমি ভেবেছিলাম জেফারসনের সেক্রেটারি জেনেতও এর সঙ্গে জড়িত। কারণ ওরও একটা মোটিভ আছে। আমি বললাম।

আমি আশা করেছিলাম, আপনি ওকেই ধরবেন। ও বলতে লাগল, সেইজন্যই আমি জেফারসনের সঙ্গে ওর সম্পর্কটা অত জোর দিয়ে বলেছিলাম। কিন্তু আমি এটাও ভেবেছি যে হংকং-এ গিয়ে যদি আপনি জেফারসনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, তাহলে আমি ধরা পড়বই।

–আপনি জানলেন কিভাবে জো-অ্যান এখানে হেরোইন নিয়ে আসছে? আমি প্রশ্ন করলাম।

–সব বন্দোবস্ত ছিল। জেফারসন সম্বন্ধে আপনাকে একটি ছাড়া সবই সত্যি বলেছি। আমি বলেছিলাম ওকে আমি ঘেন্না করি, কিন্তু আগাগোড়াই আমরা ভীষণ বন্ধু, যোগাযোগও ছিল। গত দুবছর আমার ব্যবসা ভাল চলছিল না। আর ব্যবসা করার মত মানসিক অবস্থাও আমার নেই।

এব্যাপারে ওর সঙ্গে আমার খুব মিল। টাকা পয়সার জন্যে আমি যখন ক্ষেপে উঠেছি, এমন সময় হেরম্যান লিখল যে ওর কাছে বেশ কিছু হেরোইন আছে। আমি কিনব কিনা। ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট হিসাবে হেরোইনেরব্যবসারকতকগুলো চ্যানেল আমার জানা ছিল।কাজেই রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু টাকা আমার কাছে নেই, অবশ্য জেফারসনও আমাকে বোকার মত জানিয়েছে যে ও হংকং-এ আটকে পড়েছে।দলের সঙ্গে বেইমানিকরতে গিয়ে ওর ঐঅবস্থা। জো-অ্যানটাকা জোগাড় করেএকটাফল পাসপোর্টেরব্যবস্থানাকরতে পারলে ও হংকং ছেড়ে পালাতে পারবেনা।আমারসুযোগ এল।আমিও লিখলামঅ্যানকেদিয়ে হেরোইনটা পাঠাতে।টাকাএখানেআমি দিয়ে দেব।ঠিক ছিলঅ্যানএয়ারপোর্ট থেকে মালটা নিয়ে সোজা এখানে চলে আসবে, আমি দাম মিটিয়ে দেব। তখন থেকেই আমার চিন্তা মেয়েটাকে খুন করতে পারলেই, পয়সাকড়িনা দিয়েই মালটা আমার হস্তগত হবে।–চোখনীচু করে নিজেরহাতের দিকেতাকাল। তারপর বলল, ওকে খুনকরাশক্ত কাজ কিছুনয়।তবেবডিটা কিকরব? তখন ঠিক করলাম, এটা আপনার অফিসে হয়েছে এটা বোঝালে পুলিস ভাববে ও আপনার মক্কেল। পুলিস আপনাকে জড়াবে, আর আমি মাঝখান থেকে পরিষ্কার, তবে ও যখন আসবে তখন আপনাকে অফিস থেকে সরাতে হবে। তাই ঐএয়ারপোর্টেরশব্দ করে ফোন করলাম। কারণ এয়ারপোর্টে যাচ্ছি এটা জানালে অসুবিধা হতে পারে।

তাই ঐ টেপের ব্যবস্থা করেছিলাম। এবং আমি দেখা না করার একটা জুতসই কৈফিয়ৎও দিয়েছিলাম। আপনি চলে যাওয়ার পরে আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম।…ও আর আসে না, অবশ্য ও কোন্ প্লেনে আসবে সেটা আমি জানতাম না। শেষে ও এল। আমাকে বিশ্বাস করে বলল, হেরোইনটা কফিনের ভেতর আছে। আমি খুব কাছ থেকে ওকে খুন করি। মেয়েটা খুব সুন্দর ছিল। আপনার অফিস থেকে একসময় পিস্তলটা নিয়ে আসি। ও যখন কথা বলছিল তখন ওর নজর এড়িয়ে ডেস্কে রাখি। শেষে ও যখন টাকা চাইল কোনরকম দেরী না করে ওকে গুলি করি। তারপর ওকে তুলে আপনার অফিসে নিয়ে যাই। যা ব্যাপারটা এখন শেষ। তারপর থেকে এক রাত্তিরও আমি ঘুমতে পারিনি। মালটাও বেচতে পারিনি। ঐ তো ওখানে সব রয়েছে। আমি আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আপনি আসার পর আপনার সঙ্গে দেখা করার মত স্নায়ুর জোরও আমার ছিল না।

আমার দিকে তাকিয়ে ওয়েডে বলল, এখন আপনি কি করবেন?

আমার ওর জন্য কোন দয়া নেই। ও আমাকে খুনের কেসে ঝোলাতে চেয়েছে। আমাকে গুণ্ডা লাগিয়ে খুন করতে চেয়েছে। আমি ওকে ক্ষমা করতে পারিনা। সাংঘাতিক লোভে ও ঠাণ্ডা মাথায় প্ল্যান করে খুনটা করেছে। এবং নিজের বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অবশ্য বন্ধুও ঐ একই পর্যায়ের।

আপনি কি মনে করেন? আপনার সব ঘটনা পুলিসকে বলতে হবে। আমি বললাম।

টেলিফোন ডায়াল ঘোরালেই ওয়েডে দরজার দিকে এগোল। আমি ইচ্ছে করলেই ওর পায়ে গুলি করে থামাতে পারতাম কিন্তু করলাম না কারণ ও বেশীদূর যেতে পারবে না। আর রেটনিক না আসা পর্যন্ত হেরোইন আমাকেই পাহারা দিতে হবে।

 পুলিস হেডকোয়ার্টারে ফোনে ব্যাপারটা জানিয়ে বললাম এক স্কোয়াড পুলিস নিয়ে যেন রেটনিক তাড়াতাড়ি আসে। টেলিফোন রাখার সময় লিফটু নামার শব্দ পেলাম। পুলিস আধঘণ্টার মধ্যে ওয়েডেকে খুঁজে বের করল। বীচ-ড্রাইভে ওর গাড়িতে সায়ানাইড ক্যাপসুল খেয়ে ও তখন পরলোকে। কেমিস্টহয়ে ও এই সুবিধেটা পেয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি ও সব জ্বালা মেটাতে পেরেছে। সব ঘটনা রেটনিক আমার মুখে শুনে তেঁতো মুখে আমার দিকে তাকাল।

দেখুন, আমি ভেবেছিলাম জেফারসনের সেক্রেটারী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ওয়েডে যদি টেপটা না রেখে যেত তাহলে ওকে ধরতে পারতাম কিনা জানি না।

রেটনিক আমাকে চুরুট দিল।

-দেখ রায়ান। এই কেসের কৃতিত্বটা আমি নেব। আমার বাজারে একটা সুনাম আছে। তোমার নেই। তবে ভবিষ্যতে তোমাকে আমি সাহায্য করব কথা দিচ্ছি, এটা এখন বাজারে ছেড়ে আমি আমার পাবলিসিটি করতে চাই।

–আপনি আমাকে দেখলে আমি আপনাকে দেখব। বললাম, তবে একটা কথা খেয়াল রাখবেন লেফটেন্যান্ট। বৃদ্ধ ভদ্রলোক চাইবেন ব্যাপারটা চাপা থাকুক। কারণ ওর ছেলে স্মাগলার কেউ না জানুন, এটাই চাইবেন। কাজেই ওনার কৃপা দৃষ্টিতে পড়তে চাইলে ব্যাপারটা চেপে যান। পাবলিসিটির কথা ভুলে যান। আপনার ভাগ্য ভাল ওয়েডে মারা গেছে।

রেটনিক মেঝের দিকে তাকিয়ে গুম মেরে কিছু চিন্তা করতে লাগল।

আমি নীচে নেমে এলাম। পুরো ঘটনাটায় একজনের জন্যে আমি দুঃখ অনুভব করলাম–সেই মিষ্টি মেয়ে লেইলা।

ওর কথা চিন্তা করতে করতে রাস্তা পেরিয়ে আর একবার একা একা রাতের খাওয়ার জন্যে স্প্যারোর স্ন্যাক্স বার-এ গিয়ে ঢুকলাম।

পড়তে পড়তে টাল সামলে নিলেন। ওর দিকে আমি ছুটে গেলাম এবং বারবার ভদ্রমহিলার

[অসমাপ্ত]