৩-৪. বিখ্যাত চিত্রাভিনেতা জেমস স্টুয়ার্ট

০৩.

বিখ্যাত চিত্রাভিনেতা জেমস স্টুয়ার্টের মত অবিকল দেখতে একটি লোক পুলিশ হেডকোয়ার্টারে এসে ঢুকল। দীর্ঘদেহ ও মাথায় ধুসর রং-এর চুল। তার কথাবার্তা, হাবভাবে ব্যবহারে জেমস স্টুয়ার্টের অনুকরণ স্পষ্ট বোঝা যায়।

লোকটির নাম পিট হ্যামিলটন শহরের টি.ভি নেটওয়ার্কের ক্রাইম রিপোর্টার, তার কাজ সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ঘটনা ও অপরাধমূলক খবর সংগ্রহ করা। এই কাজের দরুন সমাজের সর্বস্তরে তার প্রতিপত্তি, বিশেষতঃ পুলিশ মহলে তার আনাগোনা বেশী দেখা যায়।

হেডকোয়ার্টারে ঢুকবার মুখেই সার্জেন্ট ট্যানারের ডেস্ক, তাকে অতিক্রম করে সোজা চলে এল বেইগলারের ছোট্ট অফিসে।

হাই জো,কয়েক ঘণ্টা পরেই আমি আকাশে উড়ছিতাই যাবার আগে তোমাদের সঙ্গে একবার দেখা করে গেলাম।একনাগাড়ে কথাগুলো বলার পর নিজেই একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়ল বেইগলারের ডেস্কে। পকেট থেকে একটা নোটবুক বার করে বেইগলারকে প্রশ্ন করল-জেনি ব্যান্ডলারের কোন খবর আছে? তোমরা এতদিনেও কোন খবর সংগ্রহ করতে পারো নি? এতদিন কি ঘোড়ার ঘাস কাটছিলে?

বেইগলার তার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে কেবলমাত্র একবার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। তার কথাবার্তার ধরন দেখে মনে হল হ্যামিলটনকে গলা ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয়। কিন্তু হ্যামিলটনের এমন প্রভাব যে তাকে কেউ সেরকম রূঢ় ব্যবহার করতে পারে না।

বেইগলার সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল–আমরা বোধহয় এক সেক্স ম্যানিয়াকের পাল্লায় পড়েছি। বলাৎকার করা ছাড়া খুনীর অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয় না। এধরণের অপরাধীদের সন্ধান পাওয়া বেশ কষ্টকর। আপনাকে নিশ্চয় এক কথা বারবার বলার আবশ্যকতা নেই, আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।

বেইলারের স্বভাব হল কোন তদন্তের কাজ শেষ না হলে সে মুখ খোলে না। হ্যামিলটন মেয়েটির সম্পর্কে জানতে চাইলে বেইগলার জানায়–জেনি ব্যান্ডলার একজন নামকরা দেহ পসারিনী। দুর্ঘটনার দিন কোন আগন্তুককে নিশ্চয়ই প্রস্তাব করে থাকবে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য…?

হ্যামিলটন মাথা নেড়ে তার কথায় সায় দিল। বেইশ্লারের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বলল–তাহলে নারী মাংসলোভী ঐ লোকটি আবার এরকম ঘটনা ঘটাতে পারে। শহরের সকল যুবতী মেয়েদের সাবধান করে দেওয়া উচিত। আর এজন্যে শহরের মেয়র হেডলি এবং তোমার উচিত সবাইকে লাল সংকেত জানানো। যাতে কোন খুন না হয়, সেজন্য এটাই তোমাদের প্রাথমিক কর্তব্য বলে আমি মনে করছি।

হ্যামিলটন আতঙ্কিত, কারণ বাড়িতে রয়েছে তার পনের-ষোল বছরের একটি মেয়ে। বেইগলার তাকে আশ্বাস দিয়ে বলল–দেখুন, মিঃ হ্যামিলটন, এ ব্যাপারে পুলিশ চীফ ও মেয়রের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে। তাছাড়া ঘটনাটা মাত্র তিনদিন আগে ঘটেছে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই খুনীর প্রকৃতি নির্ধারণ না করে কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে আপনার কাছে একটা অনুরোধ-আপনি এই খুনের বিষয়ে কাগজে লেখালেখি বন্ধ রাখুন, আমাদের কাজে অগ্রসর হবার সুযোগ দিন, যাতে এই শহরে একটা ভয়ঙ্কর আতঙ্ক ছড়িয়ে না পড়ে–সেটা আপনার এবং আমাদেরও দায়িত্ব।

হ্যামিলটন প্রতিবাদ করল–আমরা লেখালেখির দ্বারা আতঙ্ক সৃষ্টি করি না, তবে তুমি কিভাবে বিশ্বাস করতে বলল যে, খুনের কোন সূত্র পুলিশ খুঁজে বার করতে পারে নি?

তীর্যক দৃষ্টিতে বেইগলার হ্যামিলটনের দিকে তাকায়। রাগত স্বরে বলে–আপনার যা খুশী তাই বলতে পারেন, তবে আমাদের কাজে কোন গাফিলতি নেই।

হ্যামিলটন জিজ্ঞাসা করল–মেয়েটির ফটো পেয়েছো?

বেইগলার একটা পোলারয়েড প্রিন্ট তার সামনে তুলে ধরল।

হ্যামিলটন ভাল করে নির্ধারণ করল, তারপর বলল-মেয়েটি সত্যিই নিম্নস্তরের বেশ্যা ছাড়া কিছু নয়। নিজের দুর্ভাগ্য সে নিজেই ডেকে এনেছে।

এরপর হ্যামিলটন বিদায় নিয়ে সোজা রাস্তায় চলে এল। ওদিকে লেপস্কি ও জ্যাকবি পোশাকের দোকানগুলোতে হানা দিয়ে বেড়াচ্ছিল। তারা হেনরি লেভিন-এর দর্জির দোকানের সামনে গাড়ি থামাল। চারবার তারা দোকানে এসে ফিরে গেছে।

তারা গাড়ি থেকে নেমে দোকানে গিয়ে মালিকের খোঁজ করল। মিঃ লেভিন বুদ্ধিমান ও প্রখর স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন, মোটাসোটা চেহারার লোক। গলফ বলের বেতামটা দেখা মাত্রই তিনি চিনতে পারলেন।

লেপস্কি জানতে চাইল–এরকম বোম দেওয়া জ্যাকেট কে কে কিনেছিল আপনার দোকান থেকে?

মিঃ লেভিন অফিস রেকর্ড থেকে চারজনের নাম লেখা একটা স্লিপ তুলে দিলেন লেপস্কির হাতে। এরপর লেপস্কি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দোকান থেকে সোজা গাড়িতে চলে এল। জ্যাকবিও তাকে অনুসরণ করল।

স্লিপটিতে চোখ বোলাতে প্রথমেইনামটা লেপস্কিকে যথেষ্ট বিস্মিত করে দেয়। সেমৃদু চীৎকার করে বলে-কেন ব্রাক্তন? এই বোতামটাই তার দুর্ভাগ্যস্বরূপ তাকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেয়।

জ্যাকবি তার কথায় বাধা দেয়–তুমি কি করে নিশ্চিত হলে কেন খুনী? আমরা তো এখনও জানি না, এরকম কটা বোম তার জ্যাকেট থেকে হারিয়ে গেছে।

লেপস্কি কোন এক আশার সন্ধানে উত্তেজিত হয়ে বলল–আমি বাজি রেখে বলতে পারি, সে অবশ্যই বোম হারিয়েছে এবং ঘটনার দিন সে ঐ মেয়েটির সঙ্গে দৈহিক-সংস্পর্শে লিপ্ত ছিল। সে জ্যাকবির দিকে এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল–ডিনামাইটের মত অমন একটি মেয়ের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে এলে তোমার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিত?

শান্ত স্বরে জ্যাকবি উত্তর দিল–আমি হলে মিস স্টার্নউডকে একা ছেড়ে আসতাম কারণ আমার মাথায় থাকত চাকরীর চিন্তা।

লেপস্কি ক্রুদ্ধ স্বরে বলল–তুমি ছেলে মানুষের মত কথা বলছ। আমি নিশ্চিত কেন ঐ মেয়েটির সঙ্গে ছিল।

জ্যাকবি তর্ক না করে তার কথা মেনে নিয়ে বলল–ধরলাম, সে কারেনের সঙ্গে ছিল কিন্তু তাতে খুনের কোন যোগ থাকতে পারে না। তুমি ভুল করছ কেনকে দোষী বলে। জ্যাকবি কেন সম্পর্কে এতটা নিশ্চিত কারণ তার সঙ্গে কেনের ইনসিওরেন্স ব্যবসাঘটিত পরিচয় রয়েছে। সে খুব ভাল করে জানে, কোন নারীর সঙ্গে নিজের অজ্ঞতাবশতঃ দৈহিক মিলনে আবদ্ধ হতে পারে কিন্তু অপরিচিত মেয়েকে ধর্ষণ করা, তার কাজ হতে পারেনা।

কিন্তু লেপস্কি তার বক্তব্যে অনড়। সে বলতে লাগল–ধর, এমনও তো হতে পারে কারেনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কেন ফেরবার পথে খুনীর মুখোমুখি হয়ে যায়। তবে আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত, কেন দুর্ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছিল। এমন তো হতে পারে, কেন তার জৈবিক ক্ষুধা মেটানোর পর সেই ধর্ষিতা মেয়েটিকে হত্যা করে পালায়। চীফের কাছে রিপোর্ট করব, তিনি যদি সবুজ সংকেত দেন, তাহলে তখন আমরা ব্রান্ডনের কাছে যাব, গ্রেপ্তারী পরোয়ানা নিয়ে।

জ্যাকবি মনে মনে বেশ বিরক্ত হলেও মুখে কিছু বলতে পারল না, কেবলমাত্র জিজ্ঞাসা করল–এই বোতাম লাগানো কোটের অধিকারী আরও তিনজন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেনা?

লেপস্কি নামের তালিকায় চোখ বোলাল। দ্বিতীয় নামটি সান ম্যাক্সী ওয়ার্কস-এর ডেপুটি কমিশনার। গত সপ্তাহ থেকে সে নিউইয়র্কে রয়েছে। তৃতীয় নামটি হ্যারী বেন্টলি, গলফ খেলোয়াড়। সে লেপস্কির পরিচিত, তাকেও অকারণে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে, আর চতুর্থ জন সিরাস গ্রেগ। লেপস্কি নিজের মনে ভাবতে লাগল–এই লোকটাই তো গত পাঁচমাস আগে একটা পথ দুর্ঘটনায় নিহত হন? লোকটা প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিল। এই লোকটাকে সন্দেহের তালিকা থেকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে। স্টীয়ারিং হুইলের উপর হাত রেখে সে ভাবতে লাগল–তাহলে সকল সন্দেহ গিয়ে পড়ছে কেন ব্রান্ডনের উপর।

জ্যাকবি তার মনের ভাব বুঝতে পেরে লেপস্কিকে বলল–গ্রেগ পোশাক বিলাসী ছিলেন। এখন আমাদের জানা দরকার তার স্ত্রী ঐ পোশাকগুলোর কি হাল করছে লেপস্কি তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। সে বলল-হ্যারী বেন্টলির খোঁজখবর আমি নেব; আর তুমি গ্রেগের খবর নাও।–জ্যাকবি গাড়ি থেকে নামবার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলল-আমি একটু হাঁটতে চাই।

লেপস্কি তার গাড়িতে স্টার্ট দিল। তার গাড়ি দৃষ্টির আড়াল না হওয়া পর্যন্ত জ্যাকবি অপেক্ষা করল, তারপর লেভিনের দোকানে গেল।

প্রথমেই সে জানতে চাইলমিঃ গ্রেগ কবে জ্যাকেটটা কিনেছিলেন? লেভিন নিচু স্বরে অনেকটা দুঃখ ও আবেগমিশ্রিত স্বরে বলল-বেচারা গ্রেগ, যেদিন গায়ে চাপায় সেইদিনেই তার মৃত্যু হয়। এটা সাতমাস আগেকার ঘটনা। একটি যুবক চোরাই গাড়ি চালিয়ে আসছিল, তার গাড়িতে সাংঘাতিক ভাবে ধাক্কা মারে। তারা দুজনেই নিহত হয়। এটা একটা ট্র্যাজেডি বটে!

গ্রেগ সম্পর্কে জানা হলেও জ্যাকেটটার বর্তমান দশাটা সম্পর্কে কৌতূহল প্রকাশ করল জ্যাকবি। প্রচলিত প্রবাদ বাক্য কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বার হবার মতই লেভিনের কাছ থেকে জ্যাকবি গ্রেগের পারিবারিক গোলযোগ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলেন। তার সারমর্ম এইরূপ–মিঃ গ্রেগ একজন ধনী ও বীর্যবান ব্যক্তি। তিনি খুব ভাল লোক ছিলেন। অপরদিকে মিসেস গ্রেগ একজন বিপজ্জনক মহিলা। তার সঙ্গে মিঃ গ্রেগের বনিবনা হত না। মিসেস গ্রেগের কাছে তার স্বামীর তুলনায় গুরুত্ব ছিল সদ্যোজাত শিশুর। তার একজন সঙ্গিনীর প্রয়োজন ছিল কিন্তু তিনি একজন ক্যাথলিক ছিলেন এবং ভাল লোক ছিলেন। বেচারা, অনেক কষ্ট পেয়েছে। জ্যাকবি একবার ভাবল–এসকল ঘরোয়া কথা শুনতে গিয়ে সময় নষ্ট করছে না তো? জ্যাকবি জানতে চাইল মিঃ গ্রেগের ছেলেটি কি করে? তারা বর্তমানে কোথায় থাকে সেটা জেনে নিল চটপট সে তার নোটবুকে একাসিরা ড্রাইভ–স্থানটির নাম লিখে রাখল। লেভিন তাকে সাবধান করে দিয়ে বলল-মিসেস গ্রেগ ভাল লোক নন। টাকার জোরে তিনি ইচ্ছামত ব্যবহার করতে পারেন। কোন পুলিশ অফিসার তার কাছে যাক, তা সে চায় না।

জ্যাকবি ঠিক করল–সে একটা রিপোর্ট লিখে কেসটার তদন্তের ভার লেপস্কির ওপর দেওয়ার জন্যে সুপারিশ করবে। লেভিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে হেডকোয়ার্টারে ফিরে এল সে।

এদিকে সিকোম্ব প্যারাডাইস অ্যাসুরেন্স কোম্পানীতে এক আতঙ্কের রেশ। কারেন লুবুনের খবর কেনকে জানাল। কেন যেন ভয়ে একেবারে গুটিয়ে গেল, শুকনো গলায় সে কারেনকে জিজ্ঞাসা করল–তুমি কি একেবারে নিশ্চিত?কারেন একটু থেমে বলল–লোকটি দাঁড়িগোফ কামিয়ে ফেলেছে, চুল ছোট করে হেঁটেছে, তবুও আমি নিশ্চিত। গতকালের রাতে আমরা ঐ লোকটিকেই দেখেছিলাম। লোকটা আমাকে যাচাই করতে এসেছিল, তার ধূর্ত চোখের চাহনি আর হাসি দেখে মনে হয় সে আমাদেরকে চিনতে পেরেছিল আর ঐ ব্যাপারেই সে আমাদের এখানে এসেছে।

আতঙ্কিত কেন কারেনকে প্রশ্ন করল–এখন সে কি করবে বলে ধারণা করা যায়?

-আমি কি করে জানবো? তবে আমার মনে হয় না, পুলিশকে জানাবে সে।-সংক্ষেপে । জানাল কারেন।

সে নিশ্চয়ই কোন মতলব এঁটে এখানে এসেছেহাতের ঘাম রুমালে মুছতে মুছতে বলল কেন।

তুমি ভীষণ ঘাবড়ে গেছ, এরকম ঘটনা তোমার ক্ষেত্রে প্রথম হলেও সমাজে হাজার ঘটছে, আর ঘটবেও। কারেনের দ্বিধাহীন জবাব পেয়ে কেন ডেস্কের উপর হাত চাপড়ে মৃদু চীৎকার । করে বলে উঠল–এই ঘটনার গুরুত্ব কতখানি, তা তুমি বুঝতে পারছ না কারেন। তুমি একবার ভেবে দেখ, তোমার বাবা যদি জানতে পারেন, আর সেই সঙ্গে আমার স্ত্রী–তাহলে আমার জীবনটা ব্যর্থতায় পরিণত হবে।

কারেন যেন বিরক্ত হল, এই সকল কথা শুনে। সে বলল-আমার মত মেয়েকে উপভোগ । করার সময় এসব কথা চিন্তা করা তোমার উচিত ছিল। তোমার এসব কথায় মাথা ঘামাবার সময় আমার নেই। তুমি এখন যেতে পারো। আমার অনেক কাজ আছে।

বিমূঢ় কেন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কারেনের দিকে। সত্যিই তো সে, কারেনের মত বহুভোগ্যা এক নারীর দেহ উপভোগ করেছে কয়েক মিনিট নয়, কয়েক ঘণ্টা ধরে। তখনই সে কেটির সঙ্গে সুখী দাম্পত্য জীবনকে অগ্রাহ্য করে নিজেকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চিতের অন্ধকারে।

নানান ধরনের চিন্তা তার মাথায় জট পাকাতে লাগল। এমন সময় তার ডেস্কের টেলিফোন বেজে উঠল; হেডকোয়ার্টার থেকে মিঃ স্টার্নউডের ফোন। দূরভাষে এক মহিলা তাকে এই সংবাদটা দিল এমনভাবে, মনে হয় সে যেন পোপের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, দূরভাষের অপরপ্রান্তে শোনা গেল মিঃ স্টার্নউডের কণ্ঠস্বর।

–ব্রান্ডন? হ্যামস বলছিল তুমি খুব ভাল কাজ করছ। আমি তোমার কাজে সন্তুষ্ট হয়েছি। এর উপযুক্ত ফল তুমি অবশ্যই পাবে।

কেন ধন্যবাদ জানাল, একটু থেমে স্টার্নউড তার মেয়ের সংবাদ জানতে চাইলেন, ব্রান্ডনের কেমন লাগছে তার সঙ্গে কাজ করতে–তাও জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি সাবধানও করে দিলেন ব্রাক্তন এই অফিসের ইনচার্জ। সে হেতু কারেনের বাঁচালতা ও বেয়াদপি যেন কেন সহ্য না করে।

কেন একটু ইতস্ততঃ করছিল। ভাবল, কারেনকে হেড অফিসে বদলি করবার এটা একটা বড় সুযোগ কিন্তু বলতে পারলনা। তারকণ্ঠস্বর বলে উঠল–ও বেশ স্মার্ট, ও ভালভাবেই কাজ করছে।

ভালো ব্রান্ডন! তবে ওর কাজের ওপর নজর রাখবে–তার পরেই লাইনটা কেটে গেল।

কেন তার চেয়ারে আরাম করে বসল, তার হাতে কাজ রয়েছে অনেক। এমন সময় কারেন তার অফিস ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। কেনের উদ্দেশ্যে বলল-আমার ডেট আছে, আজ চললাম। কাল আবার দেখা হবে।

কেন কোন উত্তর না দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা বেজে পঞ্চান্ন। আর পাঁচ মিনিট পরেই আফিস বন্ধ হবে। কারেন অফিস থেকে বেরুতে যাবে এমন সময় লু-বুন অফিসে ঢুকল। কারেন তাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল,লু বুঝতে পারল কারেন তাকে অবশ্যই চিনতে পেরেছে। করেন নিজেকে পাল্টে বুনকে বলল–আজকের মতো আমাদের অফিস বন্ধ হয়ে গেছে, আপনাকে কালকে আসতে হবে।

লু-বুন,দাঁত বের করে হাসল, জিজ্ঞাসা করল–ব্রান্ডন আছে? তোমাদের দুজনের সঙ্গেই আমার দরকারী কথা সারতে কয়েক মিনিট লাগবে।

কারেন তার নাম জানতে চাইলে সে বলল–আমাকে লু বলে ডাকতে পার। তাদের কথাবার্তার অওয়াজ ততক্ষণে কেনের কানে গেছে। সে উঁকি মেরে দেখল আগন্তুককে। তারপর ড্রয়ার খুলে টেপটা চালু করে দিল। নিজেকে শক্ত করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। ততক্ষণে কারেন ও লু কেনের দরজার সামনে এসে গেছে। কারেন পরস্পরের পরিচয় করিয়ে দেবার পর কেনকে বলল-উনি আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চান।সকলেই কেনের অফিস ঘরে এসে বসল। প্রথমে লুই মুখ খুলল। কিছুটা তো হাসি হেসে সে কেনের উদ্দেশ্যে বলল,-হাই দোস্ত। গত রাতে আপনি ওই মেয়েটিকে সঙ্গ দিয়েছিলেন?

কেন রুক্ষস্বরে বলল–আপনি কি বলতে চাইছেন? সহজ ভাষায় পরিষ্কার করে বলুন।

ক্রুদ্ধস্বরে বুন বলে উঠল–আপনারা বেশ ভাল করেই জানেন,আমি কি বলতে চাইছি।আমাকে বোকাবানাবার চেষ্টা করবেন না।তারপর সেগলার স্বরনামিয়ে কেনের উদ্দেশ্যেবলল-ঘাবড়াবার কিছু নেই, আসুন ভাল ভাবে কথাটা আলোচনা করা যাক। কারেন একটা ফাইলিং ক্যাবিনেটের সামনে ঝুঁকে পড়ে অন্যমনস্ক ভাবে বলে উঠল–এটা কি একটা ঘেরাও?

বুন তার দিকে চেয়ে দেখল, বুঝতে পারল সে এক রহস্যময়ী নারী। কয়েক মুহূর্ত পরে বুন বলল-খুব বেশী স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করো না বেবী। জান হয়ত তোমার প্রেমকুঞ্জের কাছে গতরাতে একটি মেয়ে খুন হয় এবং সে সময়ে তোমরা দুজন দৈহিক সুখে লিপ্ত ছিলে। ফেরবার পথে তোমাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আমি প্যাডলারস ক্রীকের খোঁজ চাইলে তোমরা আমাকে পথ বাতলে দিয়েছিলে। আমি জানি তোমরা কেউই মেয়েটাকে খুন করনি। সে বলতে থাকল–আজ সকালে পুলিশ ও ডিটেকটিভ-এর দল এসেছিল। তারা আমার ঘর ও আমার পোশাক তন্ন-তন্ন করে খুঁজেছে রক্তের দাগ বা প্রমাণ পাওয়ার জন্য। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তারা ফিরে গেছে। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি ঘটনাস্থলের কাছে কাউকে দেখেছি কিনা। আমি তোমাদের কথা বলিনি, আর যদি বলে দিতাম তাহলে এতক্ষণে সকলেই জেনে যেত তোমরা দুজনে গত রাতে কেবিনে ছিলে এবং কি করছিলে। আমি তোমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছি, সুতরাং আমার জন্যে তোমাদেরও কিছু করতে হবে। তাই নয় কি?

কারেন বা কেন কেউই মুখ খুলল না। একটু থেমে লু বলল–শোন দোস্ত। ব্যাপারটা এরকম হলে ভাল হয় না? আমার টাকার দরকার। তোমরা দুজনে আমাকে আর্থিক সাহায্য করবে।কেনের দিকে ফিরে সে বলল–তোমার স্ত্রী এক ডাক্তারের অধীনে কাজ করে যার পেশা হল গর্ভপাত ঘটানো।সুতরাং আমাকে আর্থিক সাহায্য করতে তোমার কোন অভাব হবেনা।তারপর কারেনের দিকে ফিরে বলল–আর বেবী!তুমি ধনী ব্যবসায়ীর একমাত্র কন্যা হওয়ার দরুণ তুমি স্বেচ্ছাচারী হয়ে জীবন পালন করছ। আমরা তিনজন যদি এই শর্তে রাজী হয়ে যাই, তাহলে আমাদের প্রত্যেকের চলার পথ সহজ হয়ে যাবে, কোন সমস্যা থাকবে না।

কেন এক মুহূর্তেই ভেবে নিল এটা ব্ল্যাকমেল ছাড়া কিছু নয়। অর্ধেক খোলা ড্রয়ারের দিকে তাকিয়ে দেখল রেকর্ডারের শুলটা তখনও ঘুরছে, রেকর্ড চালিয়ে সে বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। কারেনের দিকে সে তাকিয়ে দেখল নির্বিকার ভাবে কারেন বসে রয়েছে। সকলেই চুপ। বাধ্য হয়ে লুমুখ খুলল–আমার উপকারের প্রতিদান স্বরূপ তোমাদের দিতে হবে দশহাজার ডলার। তাহলে তোমাদের ও আমার কোন সমস্যা থাকবে না। এখন তোমরা বল, আমার এই চুক্তি তোমরা মেনে নিচ্ছ কিনা।

কারেনের চটজলদি জবাব শোনা গেল–আমাদের কাছ থেকে তুমি একটা পয়সাও পাবেনা। তোমার মত জঘন্য চরিত্রের লোকের সঙ্গে কোন বোঝাপড়াই আমরা করতে চাই না।

লু শান্ত গলায় বলল–আমি জানতাম, তোমরা বোকার মত কাজ করবে। আর এও জানি কি করে তোমাদের আয়ত্তে আনা যায়। সে তার শার্টের পকেট থেকে দুটো চিরকুট বার করল। একটা কেনের হাতে ও অপরটি কারেনের হাতে দিয়ে তাদেরকে পড়তে বলল।

কেনের চিঠিটাতে লেখা ছিল :

 মিসেস ব্রান্ডন,
আপনার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করুন, ২২ তারিখের রাতে প্যাডলারস ক্রীকে কারেন স্টার্নউডের কেবিনে কি করছিলেন!

–একজন শুভানুধ্যায়ীর কাছ থেকে, যার কোন অসঙ্গতি কিংবা ভেজালে বিশ্বাস নেই।

অপরদিকে কারেনের চিঠিটা ছিল এরকম—

 মিঃ জেফারসন স্টার্নউড 

আপনার কন্যাকে জিজ্ঞাসা করুন, ২২ তারিখের রাত্রে প্যাডলারস ক্রীকে তার কেবিনে আপনার কর্মচারী কেন ব্রান্ডনের সঙ্গে কি করছিল!

–একজন শুভানুধ্যায়ীর কাছ থেকে, যার কোন অসঙ্গতি কিংবা ভেজালে বিশ্বাস নেই।

লু উঠে পড়ল। দরজার দিকে যেতে যেতে বলল–এবার তোমরা দুজনে আলোচনা করে নাও কি করবে? তিনদিন পরে আমি আসব। টাকাটা তৈরী রেখ। একেবারে নগদ চাই, তোমরা যদি বোকামী কর, তাহলে চিঠিগুলো যথাস্থানে পৌঁছে যাবে। ধীর পদক্ষেপে সে দরজা পেরিয়ে গেল। একসময়ে বাইরের দরজাও বন্ধ হল।

কেন তখন কাঁপা কাঁপা হাতে রেকর্ডারের বোতামটা টিপে দিল।কারেন বুঝললুর কথাগুলো রেকর্ড হয়ে গেছে। এজন্যে কারেন কেনকে সমর্থন জানিয়ে বলল–আমরা এটার দ্বারাই ঐ শয়তানটাকে কজা করতে পারব। টেপটা আমায় দাও, আমি পুলিশের কাছে যাব।

কেনের ফ্যাকাশে মুখ আরো বেশী বিবর্ণ হয়ে উঠল, সে আঁতকে ওঠার মত বলে উঠল–এ তুমি কি বলছ? পুলিশ যখন তার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেলের চার্জ আনবে। সেও তখন মুখ খুলবে। ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যাবে।

কারেন প্রতিবাদ করে বলে উঠল–তার মানে, আমরা দশহাজার ডলার ঐশয়তানটার হাতে তুলে দেব। কেন বলল–আমার এত টাকা নেই।কারেন নিজেকে পাল্টে নিয়ে বলল–আমারও অতো টাকা নেই। ওকে চিঠিগুলো পাঠাতে দাও। আমি আমার বাবাকে বোঝাব আর তোমার স্ত্রীকে বোঝনোর দায়িত্ব তোমার। কথা বলতে বলতে সে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল-আমার অনেক দেরী হয়ে গেল। কাল আবার দেখা হবে।

কারেন চলে গেল। কেন ভাবতে লাগল, কেটিকে সেকি করে বোঝাবে? আজ চার বছর বিয়ে। হয়েছে কিন্তু সে কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেয় নি। তাই তাদের বিয়েটা আজো সুখের রয়েছে। একমুহূর্তে সে ভেবে নিল চিঠিটা পৌঁছানোর আগেই কেটিকে সব কথা বলতে হবে। কিন্তু যদি তার সংসার ভেঙে যায়। কেটি যদি দুঃখ পায়! সে নিজের মনকে প্রবোধ দিল, তারা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, তাদের প্রেম কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। কিন্তু পরক্ষণেই ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা উপলব্ধি করে সে বুঝতে পারে, তার ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চিত। চিন্তাটা তাকে বিমর্ষ করে তুলল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে ছটা। অফিস বন্ধ করে তার শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে গিয়ে বসল। সারাটা পথ ভাবতে ভাবতে গেল কি করে কথাটা কেটির কাছে পাড়বে, তাকে বোঝাবে। স্ত্রীর কাছে সে অবিশ্বাসী হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরে গাড়ি গ্যারেজ করবার পর সে লবিতে পা রাখল। কেটি তাকে দেখামাত্রই তার কাছে ছুটে এল।

কেটিকে চঞ্চল দেখে সে ভয় পেল। শয়তানটা কেটির সঙ্গে দেখা করে নি তো? চিন্তার মধ্যে ডুবে গেল। কেটির গলার আওয়াজে তার চমক ভাঙল-কেন, তুমি ফিরে এসেছ। তোমাকে আমি ফোন করতে যাচ্ছিলাম।

কেন উদ্বেগ প্রকাশ করল–কি হয়েছে প্রিয়তমা, আজ তোমাকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে।

মা আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। বাবার হার্ট-অ্যাটাক করেছে, এসময় মা আমাকে তার পাশে পেতে চান। আমিও যেতে চাই। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে একটা প্লেন ছাড়বে। আমি সেটা ধরতে চাই।  তুমি আমাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেবে।–এক নিশ্বাসে দ্রুত কথাগুলো বলে গেল কেটি।

কেটির মা বাবা আটলান্টায় থাকেন। বাবা একজন সফল অ্যাটর্নি। কেন তার অনুরক্ত। খবরটা তাকে ভীষণভাবেনাড়া দিল। সে তার নিজের সমস্যার কথা একেবারে ভুলে গেল। কেটির দুচোখে জলের ধারা দেখে তারও মন ভেঙে গেল। সান্ত্বনা দেওয়ার সুরে সে বলল-ওর অবস্থা কি খুবই খারাপ? আমি খুবই দুঃখিত। কেটি বলল-আমার তো । ই রকমই মনে হয়।

বিমান বন্দরের দিকে তারা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় কেটি বলল-তোমাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে, জানিনা, ওখানে কতদিন থাকতে হবে। ফ্রীজে যথেষ্ট খাবার রয়েছে, চালিয়ে নিতে পারবে তো?

কেন তার হাতের উপর হাত রাখল-ওটা কোন সমস্যা নয়। আমার জন্যে কোন চিন্তা করতে হবে না। ইচ্ছে ছিল তোমার সঙ্গে যাই।

কেটির চোখে জল। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে কেনের নিজের সমস্যার কথাটা একবার মনে এল। ভাবল, কেটির অনুপস্থিতিতে ঐ চিঠি এলে কেন তা ছিঁড়ে ফেলতে পারবে।

. পুলিশ চীফ টেরেল তার ডেস্কের পেছনেবসে লেপস্কির রিপোর্ট শুনছিল। লেপস্কি তার রিপোর্ট শেষ করে নিজের মন্তব্য পেশ করল–হ্যারী বেন্টলিকে আমাদের সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। সারা সন্ধ্যা সে ক্লাব হাউসে ছিল। তার জ্যাকেটটাও আমি পরীক্ষা করে দেখেছি। কোন বোতাম খোয়া যায়নি। এখন বাকি গ্রেগ ও ব্রান্ডন।–একটু থেমে সে বলতে শুরু করল–আমার অনুমান সারাটা সন্ধ্যায় কারেনের সঙ্গে কাটাবার পর সে মেয়েটির মৃতদেহ বা মেয়েটিকে খুন করতে পারে? তাই আমি ভাবছি তার উপর চাপ সৃষ্টি করব কিনা।

টেরেল চিন্তা করে বলল–তার জ্যাকেটটা পরীক্ষা করে দেখ আর খোঁজ নাও মেয়েটি খুন হবার সময় সে কি করছিল? ব্রান্ডনের মত লোক সেক্স ম্যানিয়াক হতে পারে তা অবিশ্বাস্য। আর কারেন স্টার্নডডের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কৌতূহলের দরকার নেই।

লেপস্কি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল। সে টেরেলের উদ্দেশ্যে বলল-শুনেছি মিসেস গ্রেগ নাকি দারুন ধূর্ত। প্রত্যুত্তরে টেরেল–হ্যাঁ মিসেস গ্রেগের সঙ্গে সাবধানে কথা বলবে। ওর অনেক টাকা আছে আর সেই সঙ্গে একজন প্রভাবশালী লোকও বটে।

হেড কোয়ার্টারে পুলিশ চীফ ও ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেডের মধ্যে যখন আলোচনা সম্পূর্ণ হল তখন ঘড়ির কাঁটা আটটার ঘর ছাড়িয়ে কিছুটা দুর গেছে। লেপস্কি ভাবল ব্রান্ড নিশ্চয়ই এতক্ষণে তার বাংলোতে ফিরে এসেছে। আজ রাতেই তার সঙ্গে দেখা করবে ঠিক করল সে। সে জ্যাকবিকে সঙ্গে নিয়ে কেনের বাংলোর দিকে গাড়ি ছোটাল।

তখন কেন এয়ারপোর্ট থেকে সবেমাত্র ফিরেছে। সে নিজের কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে কেটির বাবার চিন্তায় মগ্ন ছিল। একটা কলিংবেলের আওয়াজ তার চিন্তার জাল ছিঁড়ে ফেলল।

দরজা খুলে সে দেখতে পেল লেপস্কি ও জ্যাকবি। সে আশঙ্কাও করছিল এ ধরনের কোন ব্যাপার ঘটতে পারে। আতঙ্কিত কেনের মুখের চেহারার পরিবর্তন লক্ষ্য করল লেপস্কি। সে পুলিশী গলায় নিজের ও জ্যাকবির পরিচয় দিল।

কেন নিজের মনকে শক্ত করে তাদের লাউঞ্জে নিয়ে এসে বসাল। কেন নিজের থেকে জিজ্ঞাসা করল–কি, ব্যাপার বলুন তো?

লেপস্কি ধীরে ধীরে যে কোন কাজে এগোন পছন্দ করে। ঘরের চারিদিক লক্ষ্য করতে থাকে। কেনের চোখ মুখের চেহারা তার সন্দেহকে প্রবল করে তুলল।

লেপস্কিই কেনের উত্তর দিল–আমরা একটা খুনের ব্যাপারে তদন্তকরতে এসেছি, মিঃ ব্রান্ডন। পকেট থেকে একটা গলফ বল বোতাম বার করে কেনের সামনে রাখল, জিজ্ঞাসা করল–এটা কি আপনার?

কেন কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিল–আমার তো মনে হয় না। এক অদ্ভুত-আতঙ্ক তাকে গ্রাস করেছে এবং যা সকলেরই দৃষ্টিগোচর।

লেপস্কি আবার বলতে শুরুকরে–ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েকগজ দূরে এই বোতামটা পাওয়া গেছে। এটা একটা অদ্ভুত ধরনের বোম, যা সচরাচর কেউ ব্যবহার করে না। টেলর লেভিনের কাছ থেকে জেনেছি যে চারজন এই ধরনের জ্যাকেট কিনেছেন, তাদের মধ্যে আপনি একজন। আপনার সেই জ্যাকেটটা দেখতে পারি?

কেন দেখাতে না চাইলেও তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলহা কেন দেখাব না। এখনি সেটা নিয়ে আসছি। সে শয়নকক্ষে গিয়ে আলমারি খুলে জ্যাকেটটা বার করে দেখলে বোতামগুলি ঠিক রয়েছে। তার মুখে হাসির রেশ ফুটে উঠতে দেখা গেল। সে ক্ষিপ্রপদে শয়নকক্ষ থেকে বেরিয়ে লাউঞ্জে এসে লেপস্কির হাতে জ্যাকেটটা তুলে দিল। লেপস্কি গোয়েন্দার চোখ নিয়ে জ্যাকেটটা খুঁটিয়ে দেখল। মনে মনে অসন্তুষ্ট হলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল–কিছু মনে করবেন না ব্রান্ডন, আপনাকে বিরক্ত করবার জন্য, আসলে পুলিশের কাজই হল সবাইকে সন্দেহ করা। ব্যর্থ লেপস্কি কেনকে ফাঁদে ফেলবার জন্যে প্রশ্ন করল–মেয়েটি গতকাল রাত আটটা থেকে দশটার মধ্যে খুন হয়। সেই সময় আপনি কোথায় ছিলেন?

কেন অপ্রস্তুত ভাবে বলল–সে সময় আমি বাড়িতেই ছিলাম। আমার শালির বিবাহবার্ষিকী ছিল কিন্তু মাঝপথে আমার গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় আমি বাড়িতে চলে আসি এবং আমার স্ত্রীর ফেরা পর্যন্ত জেগেই তার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকি। ঐ ব্যাপারে আপনি আমার ভায়রা ভাই–এর কাছে খোঁজ নিতে পারেন। তার নাম জ্যাক ফ্রেমবি, কর্পোরেশনের উকিল। লেপস্কি বুঝতে পারল কেন মিথ্যা বলছে। সন্দেহের চোখে তার দিকে তাকাল, তারপর উঠে দাঁড়াল। যাবার আসে তাকে কষ্ট দেবার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করল লেপস্কি।

গাড়িতে উঠতে গিয়ে জ্যাকবিকে বলল লেপস্কি-লোকটা মিথ্যে কথা বলছে। মনে হয়, সে নিশ্চয়ই খুনীকে দেখে থাকবে। তাকে দেখে মনে হয়, সে নিশ্চয়ই কোন কথা লুকোচ্ছে।তারপর তারা মিসেস গ্রেগের বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়ি ছোটাল। দেখি সেখানে আবার কি কৌতুক নাটকের অভিনয় হয়।

তারা দশ মিনিটের মধ্যে একাসিরা ড্রাইভে পৌঁছে গেল। জায়গাটা অবসরপ্রাপ্ত ধনী ব্যবসায়ীদের জন্যে সংরক্ষিত, সামনে বিশাল-সমুদ্র। প্রত্যেক ভিলার সামনে-পেছনে এক একর জমির ওপর বাগান। চমৎকার সাজান-গোছান ভিলাটি। মিসেস গ্রেগের ভিলাটা রাস্তার একেবারে শেষ প্রান্তে।

মিসেস গ্রেগের ভিলাটি দোতলা, সাদা ওনীল রং-এর। দুজন ডিটেকটিভ লন পেরিয়ে প্রবেশ পথের সাদা দরজার সামনে এসে কয়েক মুহূর্তের জন্যে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। এক সময় লেপস্কিই বেল টিপল। তারপর ডাইনে বাঁয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল। ডান দিকে সুইমিং পুল, আর বাঁদিকে চারটে গ্যারাজ। একটা গ্যারাজে সিলভার শ্যাডো লোলস চোখে পড়ল, বাকি তিনটে গ্যারাজ বন্ধ। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবার পর লেপস্কি আবার বেল টিপল।

এরপর দরজা খুলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আর্চবিশপের মত দেখতে শীর্ণ-রোগাটে দীর্ঘদেহী একটা লোককে দেখা গেল। পরনে কালো ও হলুদ রং-এর ডোরাকাটা পোশাক।

লোকটির চোখদুটো ভাবলেশহীন, ঠোঁট দুটো কাগজের থেকেও পাতলা। লেপঙ্কির দিকে দৃষ্টি পড়তেই ভ্রূ তুলে তাকাল সে। লেপস্কি পুলিশী গলায় বলল-মিসেস গ্রেগের সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই।

লোকটি বলে উঠল-স্যার, এইসময় ম্যাডাম কারোর সঙ্গে দেখা করেন না। তার কণ্ঠস্বর যেন কবরের নিচ থেকে উঠে এল।

লেপস্কি তার ব্যাজটা তুলে ধরে বলল–আমরা পুলিশের লোক।

 লোকটা পুনরায় বলল–তিনি এখন বিছানায়। আপনারা বরং কাল সকাল এগারোটায় আসুন।

লেপস্কি লোকটির পরিচয় জানতে চাইল-স্যার রেনল্ডস ও মিসেস গ্রেগের পার্টনার।

লেপস্কি কথার জের টেনে বলল-মিসেস গ্রেগকে ঠিক এই সময় বিরক্ত করতে চাই না, তবে আমরা একটা খুনের তদন্ত করতে এসেছিলাম। পকেট থেকে একটা গল বলের আকারের বোতাম বার করে সে তাকে জিজ্ঞাসা করল–দ্যাখো তো চিনতে পারো কিনা?

রেনল্ডস ভাবলেশহীন মুখে সেটা একবার দেখল। ঘাড় নেড়ে জানাল-হ্যাঁ,এরকম বোতাম আমি আমার মৃত প্রভু গ্রেগের জ্যাকেটে ব্যবহার করতে দেখেছিলাম।

রেনল্ডস জানাল–জ্যাকেটটা অন্যান্য পোশাকগুলোর সঙ্গে স্যালভেসন আর্মিতে পাঠানো হয়েছে গ্রেগের মৃত্যুর দুমাস পরে।

লেপস্কি জানতে চাইল-জ্যাকেটটার কোন বোতাম খোয়া গেছে কিনা? রোনাল্ডস কিছুক্ষণ। ভাবল, তারপর বলল–আমি এতো সব খুঁটিয়ে দেখিনি। ধন্যবাদ জানিয়ে তারা ফিরে এল। গাড়িতে উঠে জ্যাকবিকে বলল সে–লোকটার হাবভাব দেখে মনে হল সে মিথ্যে বলছে। তুমি বরং আগামীকাল স্যালভেসন আর্মিতে গিয়ে চেক করো। হয়ত সেই জ্যাকেটটা খুঁজে পাওয়া যাবে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ফিরে যেতে যেতে লেপস্কি বলল–লেভিনের মত ক্লাস ওয়ান টেলর নিশ্চয়ই আসল দামী জ্যাকেটটার সঙ্গে বাড়তি বোতাম সংগ্রহ করে থাকবে।

কৌতূহল হল জ্যাকবির–তোমার মনে হঠাৎ এরকম কথা এল কেন? কোন মতলব আঁটছ নিশ্চয়ই।

লেপস্কি তার উত্তর দিল, কেবলমাত্র মুচকি হেসে। হেডকোয়ার্টারে ফিরে গিয়ে প্রথমে ফোন করল লেভিনের বাড়িতে। অনেকক্ষণ ধরে তারা কথা বলল। জ্যাকবি তাদের কথা আন্দাজে বোঝার। চেষ্টা করল। কথা শেষ করে লেপস্কি ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিল। তারপর জ্যাকবির দিকে ফিরে বলল-আমার অনুমান যদি সত্য হয়, অর্থাৎ ব্রান্ডনের জ্যাকেটে যদি ডুপ্লিকেট বোম পাই, তাহলে কালকেই ওকে অ্যারেস্ট করব।

.

০৪.

 দুজন ডিটেকটিভের সঙ্গে রেনল্ডস-এর কথাবার্তা লাউঞ্জের দরজা ফাঁক রেখে অ্যামেলিয়া শুনছিল। দুজন ডিটেকটিভের অপ্রত্যাশিত আগমনে সে যেমন ভীত হয়েছিল, তেমনি চমকিত। অ্যামেলিয়াই হল মিসেস গ্রেগ। দীঘল ও ভারিক্কী চেহারার অ্যামেলিয়ার বয়স প্রায় ষাট ছুঁতে যাচ্ছে। রুক্ষ্ম-পাতলা চুল, বিরাট গোলাকৃতি মুখে তার ছোট-ছোট ধূসর রং-এর চোখ ও ছোটনাকটা যেন বেমানান। তার মুখে সর্বদাই একটা হিংস্রভাব ফুটে উঠতে দেখা যায়।

লেপস্কি তার স্বামীর জ্যাকেটের প্রসঙ্গ তুলতেই সে চমকে উঠল, আবার রেনল্ডস যখন তাদেরকে বলল যে জ্যাকেটটা স্যালভেসন আর্মিতে দিয়ে এসেছে! আসলে এই মুহূর্তে রক্তমাখা জ্যাকেটটা বেসমেন্ট বয়লার রুমে পড়ে আছে। তার সঙ্গে স্ন্যাকস ও জুতো জোড়াও রাখা আছে সেখানে। দরজা থেকে জানালা পর্যন্ত অস্বস্তির সঙ্গে সে পায়চারি করছিল। ডিটেকটিভ দুজন চলে যাবার পর তার বেটপ বুকের উপর হাত রেখে লাউঞ্জের একটা চেয়ারের উপর বসে পড়ল। চোখে। মুখে হতাশা ও অসহায়তার ছাপ। তার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল বিগত কয়েক দিনের ঘটনা।

কয়েক মাস আগে একটা মোেটর দুর্ঘটনায় তার স্বামী মারা যায়। দীর্ঘ সাতাশ বছরের বিবাহিত জীবন তাদের সুখের ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পর অ্যাটর্নি অ্যামেলিয়ার হাতে তুলে দেয় একটি খাম। খামের উপর লেখা ছিল আমার মৃত্যুর পর কেবল খোলা যেতে পারে।মিঃ গ্রেগ তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছিলেন শুধু অবহেলা। তাই উইল অনুযায়ীর সমস্ত সম্পত্তির মালিকানা পায় একমাত্র পুত্রসন্তান ক্রিমপিন।উইলে ক্রিমপিনের প্রতি নির্দেশ ছিল সে যদি মনে করে, তার মাকে এককালীন কিছু অর্থ দিতে পারে। অ্যামেলিয়াকে লেখা চিঠিতেও সেই প্রতিশোধের আগুনের স্পর্শ অনুভব করা যায়। অ্যামেলিয়া,

তোমার জীবনে কেবল মাত্র দুটি জিনিস গুরুত্ব পেয়েছে। প্রথম আমার সম্পত্তি হস্তগত করা। দ্বিতীয় আমাদের ছেলের উপর কর্তৃত্ব করা। আমি জানি, আমাদের ছেলে তোমার মত রুক্ষ স্বভাবের হয়েছে। তাই আমি ঠিক করেছি, আমার সমস্ত এস্টেটের মালিক হবে সে, যাতে করে প্রচুর অর্থ ও সম্পত্তির অধিকারী হয়ে তুমি যেমন আমার সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার করেছে।

সেও যেন ঠিক তোমার সঙ্গে এরূপ আচরণ করে। তুমি যেদিন আবিষ্কার করবে ক্রিমপিন আর তোমার অধীনে নেই তখন তোমাকে তার আসল রুদ্রমূর্তি দেখাবে। সে হবে তোমার থেকেও ভয়ঙ্কর কঠোর প্রকৃতির। তবুও এই সম্ভাবনার কথা মনে করে আমি খুব আনন্দ পাচ্ছি। আমার এই উইল তুমি পরিবর্তন করতে পারবে না। আর ক্রিমপিন যদি মারা যায় তাহলে আমার সমস্ত এ্যাস্টেটের অধিকারী হবে ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউট। আর তুমি পাবে মাত্র দশ হাজার ডলার। আমাদের ছেলের উপর অন্ধভাবে কর্তৃত্ব করে তুমি তাকে ভিন্ন ধরনের পুরুষ হিসাবে গড়ে তুলেছ। আমার টাকা সে হাতে পেলে তুমি এই নির্মম সত্যকে উপলব্ধি করতে পারবে; আর তখন আর আমি এই জগতে থাকব না।

চিঠিটা পড়বার পর অ্যামেলিয়া তার স্বামীর এ ধরণের কথাকে পাগলের প্রলাপ মনে করে উচ্চস্বরে হেসে উঠল। স্বাধীন হবে ক্রিমপিন? আবার হাসল সে। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে সে ক্রিমপিনের ওপর কর্তৃত্ব করে গেছে আর ভবিষ্যতেও করবে। অ্যামেলিয়া তাকে কোনদিন বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুল-কলেজে যেতে দেয়নি, পাছে মাথা বিগড়ে গিয়ে লোফার তৈরী হয়ে যায়। বাড়িতে দামী শিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছেলেবেলা থেকেই অয়েল পেইন্টিং করার দিকে ক্রিমপিনের ঝোঁক ছিল। তাই অ্যামলিয়া তার প্রাসাদ বাড়ির উঁচু তলায় একটা সুন্দর স্টুডিও সাজিয়ে দিয়েছিল। মাঝে মধ্যে ক্রিমপিন বিচিত্র ধরনের ছবি আঁকে, তার অর্থ কারোরই বোধগম্য হয় না। তার মধ্যে অন্যতম একটি হল–কালো রং-এর আকাশ, লাল রং-এর চাঁদ, কমলালেবুরং-এর সী-বিচ। এক চিত্র বিশেষজ্ঞকে দিয়ে এই সকল ছবির অর্থ বিচার করবার প্রয়াস চালায় মিসেস গ্রেগ। টাকা খেয়ে স্বভাবতই সেই চিত্র বিশেষজ্ঞ রায় দেয়, অস্বাভাবিক তার প্রতিভা। তার ব্যক্তিগত মতামত থেকে জানা যায় এইসব স্মৃতি অসুস্থ মনের পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়। তার স্বামীর লেখা চিঠির মন্তব্যটাও বারবার মনে হত। তার স্বামীর একতরফা দলিলটা ইতিমধ্যেই বেশ যন্ত্রণা দিতে শুরু করেছে। এর থেকে রেহাই পাবার মতলবও সে ঠিক করে ফেলেছে।

টপ ফ্লোরটি ক্রিমপিনের স্টুডিও। তার অনুপস্থিতিতে অ্যামেলিয়া স্টুডিও-তে গিয়ে দেখল, ইজেলের উপর বিরাট ক্যানভাসটা তার চোখে পড়ল। একটি মহিলার অসমাপ্ত ছবি, কমলালেবু রঙের বালির ওপর শুয়ে আছে, তার পা দুটি ছড়ান, তার যোনিদেশ থেকে রক্তের ধারা নেমেছে।

হতবাক অ্যামেলিয়া স্থির দৃষ্টিতে পেন্টিংটি দেখতে থাকল। সে ভাবতে লাগল যেমন করেই হোক তার এই ধরনের শিল্পকলা বন্ধ করতে হবে। হঠাৎ সে পিছন ফিরে তাকাতে গিয়ে দেখল রেনল্ডস দাঁড়িয়ে বিরাট হল ঘরের মধ্যে। পঁচিশ বছরের এই ভৃত্যটি তার স্বামীর কাছে অপছন্দের হলেও অ্যামেলিয়া ও তার ছেলের কাছে খুবই বিশ্বস্ত। স্বামীর সঙ্গে মোকাবিলা করা বা যৌবনে পৌঁছানো ক্রিমপিনকে কি করে হাতের মুঠোয় রাখা যায় এসব পরামর্শ রেনল্ডসই দিয়েছে। মিসেস গ্রেগ রেনল্ডস-এর পরামর্শ ছাড়া একপাও চলতে পারেন না। অপরদিকে কুঁড়ে, অলস ও মদ্যপ লোকটি বুঝেছিল মিসেস গ্রেগের খাস খানসামার পদ বজায় রাখতে পারলে দামী স্কচের জোগান পাওয়া যাবে। তাই দুজনেই নিজেদের স্বার্থে পরস্পরের মধ্যে একটা সমঝোতা গড়ে তুলেছিল। অ্যামেলিয়া রুক্ষস্বরে জানতে চাইল–ক্রিমপিন কোথায়?

রেনল্ডস জানাল সে এখন মিঃ গ্রেগের স্টাডিরুমে রয়েছে।

মিঃ গ্রেগ তার স্টাডিরুমে বসে এস্টেটের সমস্ত কাজকর্ম দেখাশোনা করত। কিন্তু সেখানে ক্রিমপিন কি করতে পারে?

অজানা-আশঙ্কা ও কৌতূহল নিয়ে সে ছুটে গেল সেখানে। তখন ক্রিমপিন তার শৈল্পিক আঙুলের ফাঁকে পেনসিল নিয়ে তার বাবার এস্টেটের দলিলপত্র গভীর মনযোগ সহকারে দেখছিল। অ্যামেলিয়া ঘরে ঢুকে তাকে উদ্দেশ্য করে বলল-তুমি এখানে কি করছ?

ক্রিমপিনের চোয়াল দুটি শক্ত হল।কঠোর দৃষ্টি ফেলে সে তার মায়ের দিকে তাকাল, তারপর শোনা গেল একটি ধাতব কণ্ঠস্বর–বাবা মারা গেছেন। এখন তার সব কাগজপত্র আমাকেই তো দেখতে হবে।

তার রোবট কণ্ঠস্বর শুনে অ্যামেলিয়ার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেল। এরকম কণ্ঠস্বর সে পূর্বে শোনে নি। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে অ্যামেলিয়া তাকে বলে–তুমি কি করছ, তোমার বাবা সকল সম্পত্তির মালিক তোমাকে করলেও আমার সাহায্য ছাড়া এসব কাজের মোকাবিলা করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি বরং তোমার শিল্পকলা নিয়ে থাক, আর ঐদিকটা আমিই দেখছি।

ক্রিমপিন তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল–আমি কিছুই ছাড়ছি না। তোমার রাজত্ব শেষ এবার আমার পালা। অনেকদিন ধরে আমি এজন্যে অপেক্ষা করে রয়েছি।

রাগে-উত্তেজনায় অ্যামেলিয়া চীৎকার করে উঠল–তুমি জান, কার মুখের ওপর কথা বলছ তুমি? আমি তোমার মা, আমার কথা শুনে চলবে; যাও, এখুনি তোমার স্টুডিওতে ফিরে গিয়ে তোমার কাজে মন দাও।

কিন্তু ক্রিমপিন তার মায়ের মুখের দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, হাতের পেন্সিলটা ডেস্কের ওপর রেখে হাত গুটিয়ে একগুয়ের মত বসে রইল। এসময়ে ক্রিপিনকে অ্যামেলিয়ার মার্টিন মামার মত মনে হল। কয়েক বছর পূর্বেকার স্মৃতি তার চোখের সামনে ফুটে উঠল।

অ্যামেলিয়া তখন মাত্র দশ বছরের মেয়ে। তার মার্টিন মামা বাইরে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে এক বিলাসবহুল হোটেলের একটি ঘরে গিয়ে উঠল। তখন মামার চোখে মুখে অন্য রূপ। এক ভয়ঙ্কর লোলালুপ দৃষ্টি অ্যামেলিয়াকে গ্রাস করছিল। আমার সোনা মেয়ে, জান তো কোন পুরুষ মানুষের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে হলে কিছু দিতে হয়। এটা হল দেওয়া-নেওয়ার যুগবলতে বলতে মার্টিন মামা এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে সম্পূর্ণ নগ্ন করে দিল। অ্যামেলিয়া কি করবে ভেবে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে এইসব কাণ্ড ঘটে গেল। অ্যামেলিয়া শেষ চেষ্টা করল। সে মরীয়া হয়ে তাকে কোন রকমে ধাক্কা দিয়ে চীৎকার করে ওঠে আর বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নেয় নিজের লজ্জা ও মামার হাত থেকে বাঁচবার জন্য। তার চীৎকারে হোটেলের কর্মচারী ও খানসামারা ছুটে আসে এবং হোটেল কর্তৃপক্ষ তাকে পাগল সাব্যস্ত করে পাগলাগারদে পাঠায়। সেখানে সে নাকি আত্মহত্যা করে।

নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারল ক্রিমপিন খানিকটা তার মার্টিন মামার চরিত্র পেয়েছে। ঐ মুহূর্তেই তার মনে পড়ল তার স্বামীর চিঠির মন্তব্যটি। ক্রিমপিন অন্য পুরুষদের থেকে আলাদা। আমার টাকা হাতে পেলে ও তোমারই মত স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবে।

ছেলের এই আচরণ স্পষ্ট করে দিল য়ে ছেলের উপর জোর খাটানোর দিন তার শেষ হয়ে গেছে। ক্রিমপি তার ঘোলাটে চোখ নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকবার পর–এই কাগজটা নাও-ডেস্কের ওপর থেকে একটা কাগজের সীট তুলে নিয়ে অ্যামেলিয়ার হাতে দিয়ে পড়তে বলল এবং শীঘ্রই তার মতামত জানাতে বলল,-এবার তুমি আসতে পার-ক্রিমপিনের ঝাঝালো উক্তিটি কানে যাবার পর অ্যামেলিয়া কাগজের টুকরোটি হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা পদক্ষেপে লাউঞ্জে চলে এল। দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল রেনল্ডস। সেও তার মনিবের পেছন পেছন এসে লাউঞ্জের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে তার হাত থেকে সেই কাগজের টুকরোটা নিজের হাতে নিয়ে জোরে জোরে পড়তে লাগল।

কাগজের সব বক্তব্যটি এইরূপ–অ্যামেলিয়া যদি তার নতুন বাড়িতে তার সঙ্গে থাকতে চায় ভাল, সে বাড়ি থেকে বাৎসরিক আয় সে পাবে পঞ্চাশ ডলার। আর সেটা মনঃপুত না হলে বছরে দশ হাজার ডলার নগদ নিয়ে অন্য যে কোন জায়গা করে নিতে পারে। বর্তমানের এই বাড়িটি বিক্রি করা হবে। বাড়ির পুরাতন জনাদশেক কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হবে। রেনল্ডস থাকবে তার কত্রীর সঙ্গে এবং তার মাইনে বছরে আরো এক হাজার ডলার বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তাতে যদি সে রাজী না হয় তো তাকে বরখাস্ত করা হবে। অ্যামেলিয়া ফিসফিস করে বলল-ক্রিমপিন নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে।

এদিকে রেনল্ডস ভাবছিল–এটা তো তার পক্ষে বেশ ভালই হল, বাড়তি এক হাজার ডলার দিয়ে সে অনায়াসে স্কচের খরচ চালিয়ে নিতে পারবে। আর যদি এতে রাজী না হয়, তাহলে তার চাকরী যাবে।

তাই সে অ্যামেলিয়াকে বলল–ম্যাডাম, মিঃ ক্রিমপিনের প্রথম প্রস্তাবে আপনি রাজী হয়ে যান। উনি অস্বাভাবিক প্রকৃতির লোক হয়ে উঠেছেন। ওর শেষ পরিণতি দেখার জন্যে আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। অ্যামেলিয়া তার বিবাহিত জীবনে এই প্রথম কাদল।

এরপরই ক্রিমপিনের সঙ্গে অ্যামেলিয়া, রেনল্ডস ও ক্রিসি নামক এক বয়স্কা মহিলা একাসিরা ড্রাইভের নতুন ভিলায় উঠে আসে।

ভিলার টপ ফ্লোরটা ক্রিমপিনের। একতলায় রেনল্ডসও অ্যামেলিয়ার শোবার ঘর। ক্রিসিকেও একতলায় রান্নাঘরের পাশে একটি ভাল ঘর দেওয়া হয়।নতুন ভিলাটি অ্যামেলিয়ার বেশ পছন্দসই হয়েছে।

এই ক্রিসি বেশ ভাল রাঁধতে জানে। সে জন্ম থেকেই বোবা। এইজন্যেই হয়ত ক্রিমপিন তাকে রেখে দিয়েছে। টপ ফ্লোরটা পরিষ্কার করবার জন্য সেখানে ঢোকার অনুমতি পেয়েছে কেবলমাত্র ক্রিসি। কিন্তু রেনল্ডসের সন্দেহ ক্রিসি ঠোঁট নাড়া দেখে বুঝতে পারে, কে কার বিষয়ে কোন কথা বলছে। সে মাঝে মাঝে ভিলার বাইরেতেও যায় কেনাকাটি করবার জন্যে।

এদিকে ক্রিমপিন সারাক্ষণই তার অ্যাপার্টমেন্টে কাটায়। রেনল্ডস তার খাবার উপরে পৌঁছে দিয়ে আসে। অ্যামেলিয়া ধরে নেয়, সে তার স্টুডিওতে ছবি আঁকার কাজ করছে। মাঝে মাঝে সে যখন তার রোলস নিয়ে বেরোয় অ্যামেলিয়া ধরে নেয়, সে, অ্যান্টনি লুশনের সঙ্গে পরামর্শ করতে যাচ্ছে।

অ্যামেলিয়া এতদিনে তার ছেলের ওপর সব কর্তৃত্ব হারিয়েছে। সে বরাবরই সামাজিক কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। প্রায়ই সেতার বাড়িতে ককটেল পার্টি কিংবা প্যারাডাইস সিটির কোন বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় নৈশভোজে তার বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণ করত কিন্তু এখানে এসে সব কিছুই বন্ধ। কেউ । প্রশ্ন করলে ছেলের শিল্প কলা ও নিরিবিলি পরিবেশের দোহাই দিয়ে মনের ভাব গোপন করে রাখতে হয়। তার ধারণা, ক্রিমপিন একদিন বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী পিকাসোর থেকেও ভাল ছবি আঁকবে। তাই সে বাধ্য হয়ে পঞ্চাশ ডলার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।

একদিন ক্রিমপিন রোলস নিয়ে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল। ক্রিসিও বাজারে গেছে। কৌতূহলবশতঃ অ্যামেলিয়া ক্রিমপিনের বদ্ধ ফ্লোরে গিয়ে হাজির হল। সঙ্গে রেনল্ডসও গেছে। একটুকরো তার গলিয়ে ক্রিমপিনের অ্যাপার্টমেন্টের তালা খোলা হল।

স্টুডিওর সর্বত্র ভয়ঙ্কর বীভৎস ছবি। অজ্ঞান হয়ে যাবার মত অবস্থা অ্যামেলিয়ার। ছবিগুলোর বিষয় ছিল এরকমনগ্ন নারী,কমলালেবুরঙের বালির উপর শুয়ে আছে। মাথার উপর রক্তলাল চাঁদ, কালো সমুদ্র। কোন কোন ছবিতে নগ্ন মেয়েটির দেহের টুকরো ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত। আরও একটি ক্যানভাস, এই ছবিতে যে নারীকে দেখানো হয়েছে তা অ্যামেলিয়ার, রক্তাক্ত দাঁতগুলো কামড়ে ধরে রয়েছে পুরুষের একটি পা, ময়লা সাদা ও লাল স্ট্রাপের ট্রাউজারের আড়ালে সেই পাটা ঝুলছিল। এই ট্রাউজারটি তার স্বামীর। প্রায় জ্ঞানশূন্য অবস্থায় সে রেনল্ডস-এর কাঁধে ভর দিয়ে ক্রিমপিনের স্টুডিও থেকে বেরিয়ে লাউঞ্জে চলে এল। তারপর অ্যামেলিয়া কিছুটা ব্রান্ডি গলাধঃকরণ করে একটু সুস্থবোধ করল। ওদিকে রেনল্ডস ততক্ষণে কয়েক পেগ স্কচ খেয়ে নিয়েছে। অ্যামেলিয়া রেনল্ডসের কাছে পরামর্শ চাইল, কি করবে? রেনল্ডস এক মুহূর্তেই ভেবে নিল–ক্রিমপিনের বিরোধিতা করলে চাকরিটা খোয়াতে হবে। সে অ্যামেলিয়ার উদ্দেশ্যে বলল–ওর পরিণতি দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।

অ্যামেলিয়াও ভাবছিল ছেলের সকলকীর্তিকলাপ, তার পাগলামী মেনে নিয়ে পঞ্চাশ ডলারের আশায় চুপ চাপ থাকা, নতুবা তাকে দশ হাজার ডলার বছরের শেষে আয় করতে হবে।

তার কিছুদিন পরে এক সন্ধ্যায় জেনি ব্যান্ডলার খুন হয়। নৈশভোজের পর অ্যামেলিয়ারা টিভি দেখছিল। রেনল্ডস হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল, যেন কোন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কার করেছে। অ্যামেলিয়ার উদ্দেশ্যে বলল-ম্যাডাম, শীগগির বয়লার রুমে চলুন।

দারুণ ভয়ে অ্যামেলিয়া রেনল্ডস-এর সঙ্গে বয়লার রুমে গিয়ে যা দেখল, অবিশ্বাস্য ব্যাপার। ফার্নেসের সামনে স্তূপীকৃত হয়ে ছিল তার অপরাধের সাক্ষ্য গলফ বল বোতাম লাগানো জ্যাকেট, ধূসর রং-এর স্ন্যাক্স, সাদা ও নীল চেক সার্ট, আর সোয়েটার জুতা। সব পোশাক ও জুতো জোড়ার ওপর রক্তের দাগ থিথি করছিল। জ্যাকেটের ওপর পিন দিয়ে আঁটা ছিল একটি চিরকুট তাতে নির্দেশ দেওয়া ছিল–এগুলো ধ্বংস করে ফেল।

ওরা লাউঞ্জে ফিরে এল।অ্যামেলিয়া আগের মত আবার টিভির সামনেবসল।আর সেই মুহূর্তেই টিভিতে হ্যামিলটন নিহত জেনীর মৃতদেহের বর্ণনা দিচ্ছিল। শেষ পর্যায়ে এসেহ্যামিলটন বলল সেক্স ম্যানিয়াক খুনীকে যখনই কেউ স্বচক্ষে দেখবে সে যেন তখনই স্থানীয় থানায় খবর দেয়। এই বিকৃত-রুচির লোকটি গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত শহরের কোন যুবতী নিরাপদে থাকতে পারছে না।

খবরটা শুনে রেনল্ডস কাঁপা কাঁপা হাতে টিভির সুইচ বন্ধ করে দিল।

অ্যামেলিয়া তখন গোঙাতে গোঙাতে বলতে থাকে–না, আমি বিশ্বাস করি না, ক্রিমপিন একাজ কখনই করতে পারেনা।পরক্ষণেই অ্যামেলিয়ার চোখের সামনে ভেসে উঠল ক্রিমপিনের আঁকা বীভৎস ছবিটি। তার আতঙ্কিত কণ্ঠস্বর নির্দেশ দিল রেনল্ডসকে-এখনি রক্তমাখা পোশাকগুলো পুড়িয়ে ফেল। বিপদের হাত থেকে রেহাই পেতে চাই। ঠিক সেই সময় লেপস্কি ও জ্যাকবি তাদের ভিলায় এসে ঢুকেছিল।

.

ম্যাক্স জ্যাকবি পরদিন সকালে দর্জি লেভিনের কাছ থেকে গলফ্ বোতাম লাগানো জ্যাকেটটি নিয়ে স্যালভেসন আর্মিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পৌঁছল। জিন ফেড্রক, শহরের ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার বিতরণের ইনচার্জ সে। ফ্রেডক জোর গলায় জানিয়ে দিল–মিঃ গ্রেগের অন্য পোশাকের সঙ্গে এরকম জ্যাকেট আসেনি।

ওদিকে কেন ব্রান্ডন অফিস যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। তখন বাজে আটটা পনের। কেন ভাবতে পারেনি লেপস্কি আবার আসবে। নতুন আশঙ্কায় তার মুখখানা ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছিল। লেপস্কি পুলিশী গলায় সুপ্রভাত মিঃ ব্রান্ডন, আপনার কাছে ঐ জ্যাকেটটির ডুপ্লিকেট বোতাম রয়েছে তো? আমার সেগুলো একবার দেখা দরকার।

কেনের মনে হল তার সারা মুখ থেকে রক্ত বুঝি নিমেষে উধাও হয়ে গেল। মুখের ভাব পাল্টে সে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে বলল–ডুপ্লিকেট বোম লেভিন দিয়েছিল কিনা আমি ঠিক বলতে পারছি না। তাছাড়া এ বিষয়ে আমার স্ত্রীই জানবে। সে রক্ষণাবেক্ষণের কাজটা করে থাকে। কিন্তু সে এখন এখানে নেই। তার বাবার অসুখ। সে মা বাবার কাছে আটলান্টায় রয়েছে। ফিরে এলে আমি ডুপ্লিকেট বোম সেটের কথা জিজ্ঞাসা করব।

লেপস্কি জোর দিয়ে বলল, আপনার স্ত্রী ফেরা মাত্রই জেনে খবরটা দিতে আমাকে ভুলবেন না। অন্য কোন জ্যাকেট থেকে এই বোম খোয়া যায়নি। আমি জিজ্ঞাসাবাদ করে দেখেছি।

কেন মাথা নেড়ে বলল–ঠিক আছে। আমি নিশ্চয়ই জেনে বলব।

লেপস্কি চলে যাবার পর কেন তার শোবার ঘরে ছুটল। আলমারি খুলে দেখল-বোতাম রাখার বাক্সতে ডুপ্লিকেট সেটটা রয়েছে। জ্যাকেটটা ভাল করে দেখল–প্রতিটি হাতে তিনটি বোতাম, সামনের দিকে তিনটি। তার মানে মোট নটি। কিন্তু বাক্সের সব বোতামগুলো খুঁটিয়ে গোনার পর দেখল একটি বোম কম পড়ছে।

তার দেহে শিহরণ খেলে যায় এখনি হয়ত সে লেপস্কির কাছে ধরা পড়বে। কারেনের সঙ্গে সময় কাটানোর প্রসঙ্গটাও উঠতে পারে। চোখ বুজে ফেলে ভয়ে। কেটির কথা ভাবতে থাকে। একমাত্র কেটিই পারে তাকে বাঁচাতে, কেবলমাত্র কেটি যদি বলে লেভিন কোন ডুপ্লিকেট বোম সেট দেয়নি। কিন্তু এই মিথ্যে কথাটা বলবার জন্য কেটিকে সে কিভাবে বোঝাবে? ঘড়ির কাঁটা এখন সকালনটা নির্দেশ করছে। কেন তাড়াহুড়োকরে তার অ্যাপার্টমেন্টে তালা বন্ধ করে অফিসের দিকে গাড়ি ছোটাল।

ওদিকে লেপস্কি হেড কোয়ার্টারে গিয়েই আটলান্টা পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করল। কেটির বাবা সিটি কোর্টের অনেক কেস লড়েছে, সেই সূত্রেই লেপস্কির সঙ্গে পরিচয় রয়েছে।

ডেস্ক সার্জেন্ট বলল মিসেস কেটি ব্রান্ডন, উনি তত মিঃ লেসির মেয়ে। ভদ্রলোক আমাদের বন্ধু। কিন্তু তার এখন হার্ট-এর ট্রাবল। মিসেস কেটি ব্রান্ডন এখন তার কাছেই রয়েছে।

সম্পূর্ণ পরিচয় জানবার পর লেপস্কি কেটির বাপের বাড়ির ফোন নম্বর চাইল। ডেস্ক সার্জেন্ট বিস্মিত হন, প্রশ্ন করল–কোন গণ্ডগোল। লেপস্কি স্বাভাবিক ভাবে বলল–রুটিন অনুযায়ীকাজ করতে হচ্ছে। তারপর কেটিকে ফোন করল লেপস্কি। প্রথমেই পরিচয় দিয়ে স্বাভাবিক সৌজন্য প্রকাশ করে জানতে চাইল–কেন ব্রান্ডনের জ্যাকেটের আসল বোতামের সঙ্গে কোন নকল বোতামের সেট মিঃ লেভিন দিয়েছিল কিনা?

কি ব্যাপার, ডুপ্লিকেট বোতাম? বিস্ময় ভরা কণ্ঠে কেটির প্রশ্ন। নরম গলায় লেপস্কি বলল–না, না, আশঙ্কার কারণ নেই, এটা একটা রুটিন মাফিক তদন্ত। ডুপ্লিকেট সেটটা কোথায় আছে, এটা কেবলমাত্র জানার দরকার।

কেটি জানাল–ডুপ্লিকেট সেটটা বাড়িতে বোতামের বাক্সেই রয়েছে। লেপস্কি পুনরায় ক্ষমা চাইল তাকে অসময়ে বিরক্ত করবার জন্য, তারপর ফোনটা নামিয়ে রেখে ম্যাক্স জ্যাকবির দিকে তাকিয়ে বলল–এখন দেখা যাকব্রান্ডন কত মিথ্যে স্বপ্ন দেখতে পারে।তার চোখে মুখে নেকড়ের হাসি।

অফিসে পৌঁছাবার পরই কেনকে তিনজন নিগ্রো দম্পতির সঙ্গে পলিসির ব্যাপারে আলোচনায় বসতে হল। ওরা চলে যাবার পর ডাক মারফৎ আসা চিঠিগুলো পড়তে উদ্যোগী হল, এমন সময় ডেস্কের টেলিফোনটা বেজে উঠল। কেন রিসিভার তুলে দূরভাষের অপরপ্রান্তে শুনল লেপস্কির কণ্ঠস্বর–আমি সিটি পুলিশের লেপস্কি বলছি-লেপস্কির ধাতব কণ্ঠস্বর কেনের কাছে গর্জনের মত মনে হচ্ছিল। আর একটু হলে কেনের হাত থেকে রিসিভারটা পড়ে যাচ্ছিল।

ঘোর কাটিয়ে কেন প্রশ্ন করল–কি ব্যাপার, আবার কিসের খোঁজে ফোন করেছেন?

আমার তো সেই পুরোনো ধান্দা–জোর গলায় লেপস্কি এবার বলল-সেই বোতামগুলো খুঁজে পেলেন?

কেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-মিঃ লেভিন হয়ত ভুল বলে থাকবেন, আমাকে তিনি কোন ডুপ্লিকেট সেট দেননি। লেপস্কি কেনের ঝুতিকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে বললে, কেন জানাল–সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত। রিসিভার নামিয়ে কেন ভাবতে লাগল, সে এক বিপজ্জনক কাজ করে ফেলেছে। কেটিকে সতর্ক করে দিতে হবে। কেন শ্বশুরমশাইয়ের খবর নেবার বাহানায় রিসিভার তুলল। দূরভাষে কেটির গলা শোনা গেল। প্রথমে কেন জিজ্ঞাসা করল–প্রিয়তমা, কেটি, তোমার বাবা এখন কেমন আছেন? কেটি কান্না ভরা স্বরে জানাল–ডাক্তাররা,বলেছেন, ফিফটি ফিফটি চান্স এদিকে মা প্রায়ই হিস্টিরিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছেন। জানি না কবে তোমার কাছে ফিরে যেতে পারব।

কেন তাকে সান্ত্বনা দিল, তারপর ভাবল, গল বোতামের কথাটা বলবে কেটিকে কিন্তু তার আগেই কেটি বলে উঠল–ওঃ কেন, তোমাকে একেবারে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, কয়েক ঘণ্টা আগে প্যারাডাইস সিটি পুলিশ থেকে ফোনে জানতে চেয়েছিল তোমার জ্যাকেটের গলফ বোতামের ডুপ্লিকেট সেটটার কথা। ওরা নাকি এ ব্যাপারে তোমার সঙ্গে কথা বলেছে।

কেনের বুকটা কেঁপে উঠল, সে একটা কথাও বলতে পারল না। কেটি নিজের থেকে বলল–আমি ওঁদের বলেছি, সেগুলো তোমার বোতামের বাক্সে রয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা কি কেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

কেন তখনকার মত নিজেকে বাঁচাবার জন্য বলল–পরে তোমাকে ফোনকরে সব কথা বলব। এখন আমার অনেক ক্লায়েন্ট অপেক্ষা করছে। গুডবাই, ডার্লিং–তাড়াতাড়ি ফোন নামিয়ে রাখল সে।

এই সময়েই কারেন কেনের অফিস ঘরে ঢুকে তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল, বিস্ময়ের স্বরে। প্রশ্ন করল–কেন তোমার কি হয়েছে? তোমার ঘামে ভেজা মুখ দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন তোমার ঠোঁটে মৃত্যু-চুম্বন দিয়ে গেছে।কারেন তার ডেস্কের পাশে এসে বসল। তাকে পেয়ে কেন যেন স্বস্তিবোধ করল। বলল–একটা বোম খুঁজে পাচ্ছি না, ওদিকে কেটি লেপস্কিকে জানিয়ে দিয়েছে ডুপ্লিকেট গলফ বলের বোম সেটটা তার বোতামের বাক্সে রয়েছে। আবার কাল সেই ব্ল্যাকমেলারটা আসবে। পাগলের মত অবস্থা হয়েছে আমার।

কারেন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল–তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না। ঠাণ্ডা মাথায় অফিসের কাজ কর। বাকি সব দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দাও।

মুচকি হেসে কারেন কথা কটি বলে তার ডেস্কে ফিরে গেল।

ওদিকে লেপস্কি হেড কোয়ার্টারে টেরেলের কাছে রিপোর্ট পেশ করছিল–লেপস্কি বলল–কেন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে ডুপ্লিকেট বোতামের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই কোন গণ্ডগোল রয়েছে।

 টেরেল মৃদু প্রতিবাদ করল-কেন মিথ্যা বললেও, এতে প্রমাণিত হবেনা যে, সে মেয়েটাকে খুন করেছে। এটা গেল ব্রান্ডনের খবর আরও একটি দিক আমরা অনুসন্ধান করিনি। জ্যাকবি খবর নয়ে জেনেছে মৃত মিঃ গ্রেগের পোশাকের সঙ্গে তার গলফ বোম লাগান জ্যাকেটটি ছিল না। তুমি বরং মিসেস গ্রেগের সঙ্গে দেখা কর। রেনল্ডস হয়ত অন্য কোথাও পাচার করে দিয়েছে, এখন তাই এই প্রসঙ্গ তুলছে ধরা পড়বার ভয়ে, লোকটি বোধহয় ধাপ্পাবাজ, আর লেপস্কি একটা কথা মনে রেখ, মিসেস গ্রেগ গভীর জলের মাছ। ওঁর সঙ্গে সাবধানে কথা বলবে।

লেপস্কি গাড়ি নিয়ে মিসেস গ্রেগের বাড়ির দিকে রওনা হল। একাসিরা ড্রাইভের বাড়িতে পৌঁছে প্রথমেই তাকে রেনল্ডসের সামনা সামনি হতে হল। লেপস্কি সরাসরি বলল-মিসেস গ্রেগের সঙ্গে কথা বলতে চাই।

 লাউঞ্জ থেকে লবিতে এসেঅ্যামেলিয়া চীৎকার করে জিজ্ঞাসা করল,-কি ব্যাপার রেনল্ডস? রেনল্ডসের প্রত্যুত্তর-ম্যাডাম, পুলিশের একজন লোক এসেছেন, তিনি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।

অ্যামেলিয়া ভারিক্কী গলার স্বরে খানিকটা পরিবর্তন এল–পুলিশ! ঠিক আছে ওনাকে ভেতরে পাঠিয়ে দাও।

লেপস্কি লবিতে পৌঁছাল। অ্যামেলিয়া একটি কোচের উপর বসে রয়েছে। লেপস্কির মনে হল–সে যেন এক দজ্জাল-শ্বাশুড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

লেপস্কি একেবারে ভূমিকাহীন ভাবেই কাজের কথাটা পাড়ল। প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিল অসময়ে বিরক্ত করবার জন্য। তারপর জানতে চাইল মিঃ গ্রেগের গলফ বোতাম লাগান জ্যাকেটটা সম্পর্কে। লেপস্কি জানাল, আপনার লোক গতকাল রাত্রে আমাকে বলেছিল, আপনার মৃত স্বামীর অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে ঐ জ্যাকেটটা পাঠান হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার ইনচার্জ মিঃ ক্রোকের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আপনাদের এখান থেকে জ্যাকেটটা পাঠান হয়নি।

অ্যামেলিয়া লেপস্কির দিকে তাকাল, পরমুহূর্তেই রেনল্ডসের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল–রেনল্ডস! ঐ জ্যাকেটটাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তো? সে অ্যামেলিয়াকে সমর্থন করে বলল–হ্যাঁ ম্যাডাম, গতকাল ওকে আমি সেই কথাই বলেছিলাম। আগের দিন বয়লার রুমে সেই জ্যাকেটটা পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে।

অ্যামেলিয়া লেপস্কির মুখের ওপর দৃষ্টি স্থির করে বলল–ঐ ক্ৰেডাক লোকটা দারুণ সন্দেহজনক। দেখুন হয়ত, আমার স্বামীর জ্যাকেটটা সে নিজের কিংবা নিজের ছেলের ব্যবহারের জন্য সরিয়ে রেখেছে।

লেপস্কি একটু গলার স্বর জোরাল করেবলল–মিসেস গ্রেগ, আমি আগেই বলেছি, এটা একটা খুনের তদন্ত। আপনি মিঃ ক্রেডাকের বিরুদ্ধে একটা সাংঘাতিক অভিযোগ আনতে যাচ্ছেন।

রেনল্ডস হেসে উঠল, অ্যামেলিয়া তৎক্ষণাৎ বলল–আমরা ঐ জ্যাকেটটি পাঠিয়ে দিয়েছি, এবার যে কেউ তা চুরি করে থাকতে পারে। প্রকৃত চোর কে তা খুঁজে বের করবার দায়িত্ব আপনাদের।কিছুক্ষণনীরব থাকার পর অ্যামেলিয়া লেপস্কির উদ্দেশ্যে বলল-আশাকরি আপনি আর বিরক্ত করতে আসবেন না। মেয়র আমার বিশেষ বন্ধু, আমি তাকে জানাতে বাধ্য হব।

ঠিক আছে ম্যাডাম! নেকড়ের হাসি হেসে লেপস্কিবলল–আপনাকে আর বিরক্ত করবার প্রয়োজন হবেনা। তারপর সে রেনল্ডসকে অনুসরণ করে গাড়িতে গিয়ে বসল। ছুটল পুলিশ হেড কোয়ার্টারের দিকে।

.

টেরেলকে সমস্ত বৃত্তান্ত জানানোর পর সে বলল–এই দজ্জাল মহিলাকে আমরা ঘাঁটাতে চাই না। বরং তোমরা স্যালভেসন আর্মির সংগ্রহকারক লোকটির সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখ।

টম ও ম্যাক্স টেরেলের নির্দেশমত কাজ করল কিন্তু তারা কোন সূত্র পেলনা। এরপর লেপস্কি হিপি কলোনীর দিকে মন দিল, এখানে কোন সূত্র পাবার আশায়।

হিপিকলোনীর লু-বুন তার কেবিনে শুয়ে ছিল, আগের দিন সারাটা রাত সেকাটিয়েছিল একটি নিগ্রো যুবতীর সঙ্গে। যৌনসংসর্গের কলাকৌশল সম্পর্কে মেয়েটির বেশ অভিজ্ঞতা ছিল। মেয়েটি সারারাত তাকে দারুণ সুখ দিয়েছে। বুন শুয়ে শুয়ে সেদিনের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা করছিল। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। পরের দিন সে প্যারাডাইস সিটির সীকো শাখা অফিসে যাবে এবং নগদ দশ হাজার ডলার নিয়ে স্বদেশে ফিরে যাবে। অ্যাক্ট-লয়ের পরীক্ষাটা সম্পূর্ণ করবে। এমন সময়ে দরজায় নক করবার শব্দ হল। বুন দরজা খুলে দেখল দরজার ওপারে টিভির প্রতিনিধি হ্যামিলটন দাঁড়িয়ে তার পিছনে একটি ট্রাঙ্ক এবং ক্যামেরাম্যান। ক্যামেরাম্যান হ্যামিলটনকে জিজ্ঞাসা করল–এখান থেকেই শুরু করি। হ্যামিলটন মাথা নেড়ে সায় দিল।

ক্রিমপিন টিভি খুলতেই ভাষ্যকার হ্যামিলটনের প্রতিবেদন–সেক্স ম্যানিয়াককে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোন কু খুঁজে পায়নি।হ্যামিলটন বলতে থাকে–আজ সকালে জানতে পারা যায় প্যারাডাইস হিপি কলোনিতে লু-বুন নামে একটি যুবক খুনের দৃশ্যটা প্রত্যক্ষ করেছিল। তবে সে মুখ খুলতে রাজী নয়। এই সময় টিভির পর্দায় হ্যামিলটনের মুখের বদলে লুবুনের কেবিনের দৃশ্য ফুটে উঠল।

ক্রিমপিন শ্যেন দৃষ্টিতে লু-বুনকে দেখতে থাকে। তার চোখ ছোট হয়ে আসতে থাকে। সে ভাবতে থাকে, একটা দারুণ উত্তেজনা পূর্ণ তেল রং-এর পেটেন্ট সে তো আঁকতে পারবে এবং লুবুনের বিশেষ এক ব্যবস্থা আজ রাত্রেই করে ফেলতে হবে।

লেপস্কি তার ডেস্কের সামনে বসেছিল,কজি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবে এখনও দু-ঘণ্টা সময় আছে। পাশেই বসেছিল জ্যাকবি। লেপস্কি জ্যাকবিকে রিপোর্ট তৈরী করতে বলে বাড়ির দিকে পা বাড়াল। লেপস্কি বাড়ি ফিরে চীৎকার করে বলে উঠল-ক্যারল, তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে এস।

খাবারের ফাঁকে ক্যারলের সঙ্গে সে মার্ডার সম্পর্কে খানিকটা আলোচনা করল। একসময়। ক্যারল তাকে তিনটি সূত্রের সন্ধান দিল। সে তার বন্ধু মেথিটেবল বেসিন্ধার কাছ থেকে এই ক্লু তিনটি পেয়েছে।

লেপস্কি তার বক্তব্যকে তাচ্ছিল্য প্রকাশ করলে ক্যারল শান্ত গলায় বলল–প্রথমে তুমি রক্ত লাল চাঁদ, দ্বিতীয়বার কাল আকাশ, আর তৃতীয়বার কমলালেবু রং-এর সী-বীচের খোঁজ করবে। তার আগে তুমি ঐ সেক্স ম্যানিয়াককে ধরতে পারবে না।

লেপস্কি এতক্ষণ মাথা নিচু করে তার স্ত্রীর কথাগুলো শুনছিল, এবার সে মাথা তুলে গম্ভীর হয়ে বিড়বিড় করে কু তিনটি উচ্চারণ করল। কিছুটা ইয়ার্কির ছলে সে প্রশ্ন করল–তা এই প্রলাপগুলো বকতে গিয়ে সে আমার কত পেগ হুইস্কি খরচ করেছে, ডার্লিং?

ক্যারল তার কথার উত্তর না দিয়ে বলল–সব কথা ঠাট্টা করে মেথিটেবলের কথা উড়িয়ে দিও না। তা করলে এবার তোমাকে ঠকতে হবে। ক্যারল তাকে আবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলল–ওর ঐ তিনটে কু যেন মনে থাকে।

লেপস্কি প্রত্যুত্তরে বলল-নিশ্চয়ই…নিশ্চয়ই! ঈশ্বরের দোহাই এখন আমাকে আরও কিছু খেতে দাও।

কেন ব্রান্ডন বাড়ি ফিরে এসে একের পর এক স্কচের গ্লাস শেষ করছে। একটু পরেই লেপস্কি আসবে, তার পরেই তার চলার পথ শেষ হয়ে যাবে। একটি মাত্র গলফ বোতামের অভাবে সে ঐ মেয়েটির খুনী রূপে চিহ্নিত হবে। কারেনের সঙ্গে তার গোপন-সম্পর্কের কথা প্রকাশ হয়ে পড়বে। তার চাকরী খোয়া যাবে, কেটির সঙ্গে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন হতেও পারে।

তার এই চিন্তার জাল বোনা মাঝপথে প্রায় এগারোটার সময় থামাতে হল কলিং বেলের আওয়াজে।লেপস্কি নিশ্চয়ই এসেছে।-পায়ের তলার মাটি নেই বলে মনে হল। কাঁপা পায়ে এসে সেদরজা খুলল।বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল-লেপস্কিনয় করেন, তার দরজার সামনেদাঁড়িয়ে। হাঁপাতে হাঁপাতেকারেন দ্রুত পদক্ষেপে কেনের ঘরে ঢুকে গেল,-আমাকে এখানে আসতে কেউ দেখেনি।

কেন তার দিকে স্থির চোখে তাকাল–তুমি এখানে কি জন্য এসেছ? কেনের দিকে কারেন তার ডান হাতটা মেলে ধরল, হাতের তালুতে একটি বোতাম চকচক করছিল। হাসতে হাসতে সে বলল-তোমাকে বলেছিলাম না, এটার ব্যবস্থা করে দেব। কেন তখনও বোতামটার দিকে বড়বড় চোখে চেয়েছিল। কেন জানতে চাইল,-এটা তুমি কোথা থেকে পেলে? লেভিনের দোকানে গিয়ে জ্যাকেটটা দেখতে চাইলাম। তখন তারা খুব ব্যক্ত ছিল। একটা বোতাম কেটে নিলাম। কেউ আমাকে দেখতে পায়নি। ভাববেহয়ত বোতামটা কোথাও পড়ে গেছে।হাত বাড়িয়ে কেন তার হাত থেকে বোতামটা নিল। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ভাবল তার বয়স দশ বছর কমে গেছে।

ততক্ষণে সে কেনের শোবার ঘরে গিয়ে দ্রুত পোষাকমুক্ত হয়ে তার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়াল, হাসি মুখে বলল–এসো এখানে আমরা সেলিব্রেট করি। আমাকে দৈহিক-সুখ দেবার জন্য এই একটা বোতামই যথেষ্ট।

কেন স্কচের নেশায় বুঁদ হয়ে রয়েছে, সে এক মুহূর্তের জন্য ভাবল–ঐ শয্যা তার ও কেটির কিন্তু পরমুহূর্তেই কারেনের সৌন্দর্য ও যৌন-আবেদনের কাছে নিজের কামনা-বাসনার আত্মসমর্পণ ঘটল। কারেনের একটা হাত ধরে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল।