৩৬. ফারগো দম্পতি

৩৬.

তিন ঘণ্টা পর চিয়োকো’র কাছে নোটবুকটা ফেরত দিয়ে এলো ফারগো দম্পতি। নারিটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে ফিরতি ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছে ওরা। এই ফাঁকে সেলমাকে নোটবুকের স্ক্যানকপি ইমেইল করে পাঠিয়ে দিয়েছে। বলেছে, যদ্রুত সম্ভব একজন অনুবাদক যোগাড় করে পুরো নোটবুক অনুবাদ করে দিতে।

 রেমি’র মনে এখনও চিয়োকো’র কষ্টের কাহিনি ঘুরপাক খাচ্ছে। মন খারাপ করে ট্যাব চালাচ্ছে ও। স্যাম স্ত্রীর চেহারা দেখে বলল, “ঠিক আছে তো?

মনে হয়।

 ‘খুব চিন্তা করছ, তাই না?

‘হম। আসলে বোমা পড়ার গল্পটাকে মাথা থেকে বের করতে পারছি না। চিন্তা করে দেখো, বোমা হামলার ফলে অত অল্পবয়সে মাকে হারানো। তারপর হাতে-মুখে ক্ষত…’

‘ঠিকই বলেছ। দুঃখজনক। সেল রিসার্চ করে দেখেছে, চিয়োকো নাকি কখনও বিয়ে করেননি। এমনও হতে পারে এর পেছনে ওই ক্ষতগুলোর কোনো ভূমিকা আছে। ওরকম দাগ নিয়ে বেড়ে ওঠা খুব ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।

‘আমারও তা-ই মনে হয়।’

রেমি একটু চেপে বসল স্যামের দিকে।

ইন্টারনেটে ইন্টারেস্টিং কিছু পেলে?’ স্যাম প্রশ্ন করল।

না, যা পাচ্ছি সবই ভয়াবহ কাহিনি। এক ইতিহাস বিশারদ দাবী করেছেন, যুদ্ধের সময় জাপানিরা প্রায় ৩ কোটি মানুষকে খুন করেছিল। কী নিষ্ঠুর!’

‘বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছে। বলল স্যাম। ঘড়ি দেখল। আচ্ছা, জানালার কাছে বসলে হয়তো স্যাট ফোনের জন্য ক্লিয়ার নেটওয়ার্ক পাব? কী বলে?

‘দেখো পাও কিনা।

ব্যাগ থেকে ফোন বের করে এগোল স্যাম। আধমিনিট লাগল স্যাটেলাইটের সংযোগ পেতে। তারপর ডায়াল করল সেলমা’র নাম্বারে। চতুর্থবার রিং হওয়ার সময় ফোন রিসিভ হলো।

‘গুড মর্নিং!’ বলল স্যাম।

 ‘তোমাকেও গুড মর্নিং!’

‘একটা ফাইল ইমেইল করেছি। পেয়েছ?

হ্যাঁ, পেয়েছি এবং কাজ শুরু করে দিয়েছি ওটা নিয়ে।

 ‘অনুবাদক পেয়েছ?

ল্যাজলো সাহেব ঘুরঘুর করছিল এখানে। তাকে কাজটা ধরিয়ে দিয়েছি। কানজি ভাষা বলা ও লেখা দুটোতেই তার দক্ষতা আছে। অবশ্য এই তথ্য আমি আজই জানতে পারলাম। এই মানুষটা যে আরও কত কিছু জানে! কে বলতে পারে?

“আচ্ছা, বেশ ভাল কথা। ল্যাজলো কি নোটবুক থেকে পেয়েছে কিছু?

বলল, কাজ করছে। বেচারা বোধহয় কাজের অভাবে বোর হচ্ছিল। ফাইলটা প্রিন্ট করেই নিজের অফিসে ছুট দিয়েছে। সেলমা একটু থামল। খুশির খবর আছে। বড় জাহাজ যাচ্ছে তোমাদের জন্য।

চমৎকার! কতদিন লাগবে পৌঁছুতে?

চার দিন।’

 ‘লিওনিড খুব খুশি হবে এবার।

 ‘ভাল কথা, তোমার এই বন্ধু কি সবসময় মনমরা হয়ে থাকে নাকি?”

সত্যি বলতে, ওর রসবোধ অনেক ভাল। তবে সবসময় দেখা যায় না।

বিমানবন্দরের স্পিকার থেকে ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য তিনটি ভিন্ন ভাষায় দেয়া ঘোষণা ভেসে এলো। দ্রুত কথা শেষ করে ফোন রাখল স্যাম। কয়েক মিনিটের মধ্যে ফারগো দম্পতি প্লেনে চড়ে বসল।

মাঝ বিকেলে হনিয়ারায় এসে পৌঁছুল ওরা। ফ্লাইট প্রায় খালি-ই ছিল বলা যায়। দ্বীপে গণ্ডগোল শুরু হওয়ায় পর্যটকরা আর ঘুরতে আসার সাহস করেনি। হোটেলও জনমানব শূন্য। ওরা হোটেলে ফিরতেই ক্লার্ক আর ম্যানেজার ওদেরকে রিসিভ করল।

মিস্টার ও মিসেস ফারগো-কে আবারও আমাদের হোটেলে স্বাগতম। বলল ম্যানেজার।

ধন্যবাদ। এখানকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়েছে? স্যাম প্রশ্ন করল।

 ‘উন্নতি বলতে সব এখন চুপচাপ। নতুন করে আর কোনো হট্টগোল বাধেনি।

ভাল লক্ষণ। তাই না?’ বলল রেমি।

‘আশা করছি, পরিস্থিতি যেন বিগড়ে না যায়। এরকম শান্ত-শিষ্ট থাকলেই আমরা খুশি।’ ম্যানেজার বলল।

কথা শেষ করে রুমে চলে গেল ওরা। স্যাট ফোন চালু করে সেলমাকে আবার স্যাম ফোন করল।

‘আমরা গোয়াডালক্যানেলে চলে এসেছি। ওদিকে কী অবস্থা?

‘একদম ভাল সময়ে ফোন দিয়েছ। ল্যাজলো আমার কাছে আছে। কথা বলবে?

‘দাও।’

ল্যাজলো’র বিট্রিশ উচ্চারণ ভেসে এলো ওপাশ থেকে। মিস্টার স্যাম! পুরো পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছেন! কী অবস্থা?

‘আর অবস্থা! এখন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ব্যাঙের মতো লাফিয়ে বেড়াচ্ছি! আপনার অনুবাদের খবর বলুন।

‘অর্ধেক করেছি। বেশ গোলমেলে জিনিস, বুঝেছেন? যা সব কঠিন কাব্য আছে এখানে। দীর্ঘ সব প্যাসেজ। অনুবাদ করতে গিয়ে একটু ভুগতে হচ্ছে।

ইন্টারেস্টিং কিছু চোখে পড়েছে?

‘পড়েছে। কেন যেন মনে হচ্ছে কবি এখানে কবিতার আড়ালে অন্য কিছু বোঝাতে চেয়েছেন। কেমন যেন একটা প্যাটার্ন পাচ্ছি।’

‘প্যাটার্ন?’

আসলে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমি এব্যাপারে খুব সতর্ক আছি।’

‘তাহলে আপনি মনে করছেন কবিতাগুলোর ভেতরে কোনো কোড লুকোনো আছে?

হ্যাঁ, সন্দেহ করছি আরকী। কিন্তু আমার সন্দেহ ভুলও হতে পারে। পুরোটা অনুবাদ করে শেষ করি। তারপর বুঝতে পারব। আশা করছি আজ শেষরাতের দিকে পুরোটা অনুবাদ হয়ে যাবে।

‘জানাবেন।

অবশ্যই। আর আপনারা শুধু দুঃশ্চিন্তা না করে একটু দ্বীপের আলো বাতাসও উপভোগ করুন।

‘পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করব।’

কথা শেষ হওয়ার পর স্যামের দিকে তাকাল রেমি। কী অবস্থা?

ল্যাজলো বেশ কোমর বেঁধে কাজে নেমে পড়েছে। নোটবুকে কবিতার আড়ালে কোড লেখা আছে বলে তার ধারণা। আবার ধারণাটা ভুলও হতে পারে।’

‘দেখা যাক কী হয়।’

হাসল স্যাম। আগেই হতাশ হয়ে পড়ো না। কাজটা খুব সহজ নয়। যদি সহজ হতো তাহলে যে-কাউকে দিয়েই অনুবাদ করিয়ে নেয়া যেত। এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অনুবাদ করতে অনেক ঝক্কি আছে।’ স্যাম সময় দেখল। ‘চলো একটু ঘুরতে বের হই।

মতলব কী তোমার?

‘আরেকবার রুবো’র সাথে দেখা করতে চাচ্ছিলাম। দেখি তার কাছ থেকে আবার ওসব কাহিনি শুনতে চাইব। দেখব এবারও সে একই কাহিনি বলে কিনা। এমনও হতে পারে, এবার তার কাছ থেকে আমরা নতুন কিছু জানতে পারব।’

***

গাড়ি নিয়ে রুবো’র বাড়ির সামনে এসে দেখল একটা পুলিশ কার আর একটা অ্যাম্বুলেন্স রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়ে আছে। স্যাম ও রেমি দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেল। তাকাল একে অপরের দিকে। গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে গেল পুলিশ কারের দিকে। একজন পুলিশ অফিসার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সানগ্লাস।

কী হয়েছে? রুবো ঠিক আছেন তো?’ সামনে এগিয়ে বলল রেমি।

 ‘আমরা রুবো’র সাথে দেখা করতে এসেছি। কী হয়েছে, অফিসার?” স্যাম জানতে চাইল।

 ‘দূর্ঘটনা হয়েছে। মনে হচ্ছে, বেচারা পা পিছলে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে মাথায়।

দু’জন মেডিক্যাল কর্মী বাড়ির ভেতরে ঢুকে রুবো’র পলকা দেহকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে বাইরে আনল। সবাই বুঝল, যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করার নেই। স্যাম ও রেমির দিকে তাকাল অফিসার। এখানে কী আর কেউ থাকতো?’

না। উনি বয়স্ক মানুষ, একাই থাকতেন। আশা করি, খুব বেশি কষ্ট পেয়ে মারা যাননি।’ রেমি বলল।

‘নিশ্চিত করে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। তবে মেডিক্যালের লোকজন প্রাথমিক চেকআপ সেরে জানিয়েছে, কষ্ট পায়নি।

 ধীরে ধীরে ভাড়া করা পাথফাইণ্ডারের দিকে এগোল ফারগো দম্পতি। স্যাম ড্রাইভিং সিটে বসে ইঞ্জিন চালু করতে করতে বলল, প্রায় ১০০ বছর সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার পর রুবো হঠাৎ করে মারা গেল। এতগুলো বছর তার কিছুই হলো না। অথচ আমরা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই… সব শেষ! এটা কী স্রেফ দূর্ঘটনা নাকি সন্দেহজনক কিছু আছে এর পেছনে?

 ‘আমাদেরকে ধাক্কা মেরে নদী ফেলে দেয়ার পর গুলি করে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। মনে আছে? আশা করি, উত্তরটা পেয়েছ।

শুকনো হাসি দিল স্যাম। হুম, পেয়েছি।

.

 ৩৭.

পরদিন সকালে সেলমা স্যামকে ফোন করল। রেমি ও স্যাম তখন হোটেলের বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছে।

‘হ্যালো, সেলমা! ভাল খবর দাও, প্লিজ। মন খারাপ।

‘কেন? কী হয়েছে?

রুবো’র মারা যাওয়ার ঘটনা বলল স্যাম।

‘শুনে খারাপ লাগছে। অবশ্য তার অনেক বয়সও হয়েছিল। তোমরা দু’জন ভাল আছো তো?’ শান্ত স্বরে সেলমা বলল।

হুম, আছি। বলল, কেন ফোন করেছ?

‘আমার পাশে ল্যাজলো বসে আছেন। কথা বলবে।

“ঠিক আছে, দাও।

ল্যাজলো ফোন ধরেই উৎসাহী কণ্ঠে বলতে শুরু করল। হ্যাল্লো! স্যাম ব্রাদার! জাপানির নোটবুক থেকে তো জব্বর জিনিস জানতে পেরেছি!

‘তাই?”

‘কবিতাগুলো বেশ কাঁচা হাতে লেখা হলেও কোডগুলো জটিল ছিল, বুঝলেন?’

‘কোড?

“ইয়েস, ব্রাদার! আমি প্রোগ্রামের সাহায্যে কোডটা ভেঙেছি। কিন্তু তারপরও পুরোটার অর্থ ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।’

‘কোড থেকে কী পেয়েছেন, সেটা বলে ফেলুন।

মুখে বলে ঠিক বোঝানো যাবে না। আপনাকে সব ইমেইল করে দিয়েছি। চেক করে জানাবেন আপনি কিছু বুঝতে পারলেন কিনা। এদিকে আমি আরও মাথা ঘামাতে থাকি। তবে মাথাকে বোধহয় এখন বিশ্রাম দেয়াই ভাল। হয়তো নতুন করে কিছু বের করা যাবে না।

“আচ্ছা, ইমেইল দেখব। এখন মুখেই সংক্ষেপে বলুন, শুনি।

‘এখানে একটা গ্রাম, ঝরণাধারাসহ বেশ কিছু জিনিসের কথা বলা আছে। মনে হচ্ছে, কোনো দিক নির্দেশনা টাইপের কিছু আরকী। তবে দ্রাঘিমাংশ আর অক্ষাংশ দেয়া থাকলে সুবিধে হতো।’

‘তা কী করে সম্ভব? কর্নেল যখন নোটবুক লিখেছেন তখন তার কাছে কোনো জিপিএস ছিল না। তাই নিখুঁত করে কিছু লিখেও যেতে পারেননি।

 ‘এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন। কর্নেল সাহেব কিন্তু মনে মনে ঠিকই চেয়েছে কেউ যাতে তার কোডটা ভাঙতে পারে। কোড যদি ভাঙা সম্ভব না হয় তাহলে লেখার কী অর্থ থাকে বলুন? তবে হ্যাঁ, আমি তো প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে কোড ভেঙেছি। তখনকার সময়ে এরকম প্রযুক্তি ছিল না। কর্নেল ব্যাটার বুদ্ধি আছে বলতে হবে। তবে আমার সাথে পারেনি, বুঝলেন?

‘জি, ল্যাজলো, আপনার মতো মেধাবী ব্যক্তিকে টিমে পেয়ে আমরা গর্বিত।

‘এখন সেলমা’র সাথে কথা বলুন। দেখুন সে কী বলে…’

‘অসংখ্য ধন্যবাদ, ল্যাজলো। দারুণ কাজ করেছেন।’

‘আশা করি, আমার দেয়া তথ্যগুলো আপনাদের ওখানে কাজে আসবে। সেলমা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। ওকে বারবার জিজ্ঞাস করলাম, কাহিনি কী? কিছুই বলছে না।’

 ‘আসলে আমরা একটা ডুবে যাওয়া শহর খুঁজে পেয়েছি, সমুদ্রের তলায়। মনে হচ্ছে, ওখানে গুপ্তধন ছিল। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, জাপানিরা দ্বীপ থেকে চলে যাওয়ার সময় গুপ্তধনগুলো ওখান থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখে গেছে। আর আপনি সেই গুপ্তধন খোঁজার ব্যাপারেই আমাদেরকে সাহায্য করছেন।’ রেমি’র দিকে তাকিয়ে হাসল ল্যাজলো। আচ্ছা, ল্যাজলো, এখন কি আপনি ওখানে কোনো কাজে ব্যস্ত আছেন?’

‘আমেরিকার কোন উপন্যাস সবচেয়ে সাহিত্যমান সম্পন্ন সেটা নিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখতে বসেছিলাম তারপর হঠাৎ খেয়াল হলো… আরে! আমি তো ব্রিটিশ! আমেরিকানদের সাহিত্য দিয়ে আমার কাজ কী?! তাই সাহিত্য ছেড়ে টিভি দেখতে শুরু করেছি।

‘তাহলে এক কাজ করুন, ফ্লাইট ধরে চলে আসুন সলোমন আইল্যাণ্ড। আমাদের সাথে গুপ্তধন খুঁজবেন।’

স্যামের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল রেমি। ও খুব ভাল করেই জানে ওপাশ থেকে কী জবাব আসবে। আমি পরের ফ্লাইট ধরেই আসছি!”

তাহলে আপনার এখানে আসতে আসতে দু’দিন লেগে যাবে।

 ‘আমাকে ছেড়ে গুপ্তধন খুঁজতে নামবেন না কিন্তু!

“ঠিক আছে। কিন্তু এখানে আসার আগে সেলমার কাছ থেকে কুমীর আর জায়ান্ট হতে বাঁচার জন্য স্প্রে নিয়ে আসবেন। সাথে বুকে বুলেট প্রুফ ভেস্ট পরতে ভুলবেন না। এখানে দাঙ্গা চলছে কিনা।

কী বললেন?

‘শুনতে পাননি? তাহলে বাদ দিন। রেডি হয়ে রওনা হোন। এখানে ঠিক কয়টার দিকে পৌঁছুবেন আমাদেরকে আগেভাগে জানিয়ে দেবেন। আমরা আপনাকে বরণ করে নেব!’

‘আচ্ছা, জানাব।’

কথা শেষ হওয়ার পর রেমি মুখ খুলল। এখানে কি ল্যাজলোকে টেনে আনার খুব দরকার ছিল?

‘উনি ওখানে বেকার বসে আছেন। তাছাড়া নোটবুকের কোডভাঙার কাজটাও করে দিচ্ছেন খুশিমনে। সমস্যা কী?’ স্যাম রেমিকে কোডভাঙার বিষয়টা খুলে বলল।

 ‘তাহলে আমাদের সন্দেহ-ই সত্যি? কুমাসাকা এখানে গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছিল যাতে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কোনো একসময় এখানে এসে সেটাকে নিজের দখলে নিতে পারে।

হুম।’

কিন্তু তার পরিকল্পনা বানচাল হয়ে গেছে। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে ল্যাজলো কেন ডাকলে? আমরা তো প্রায় গুপ্তধনের কাছে চলেই গিয়েছি বলা যায়।

 ‘গুপ্তধন উদ্ধার অভিযানে যোগ দিলে তার মনটা ফ্রেশ হবে। উদ্দীপনা বাড়বে। তাই ডাকলাম।

 ‘আমি এসব কিছু জানি না। এখানকার বিদ্রোহীরা যাকে ইচ্ছে হচ্ছে মেরে ফেলছে। এরমধ্যে…’

‘সমস্যা কী? পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে একটা ফ্লাইট ধরে চলে যাবে। কিংবা জাহাজে চড়ে বসবে।

“ঠিক আছে, দেখা যাবে। আচ্ছা, আমরা কি আজকে জাহাজে যাচ্ছি?

 ‘যাওয়াটাই ভাল হবে। বেচারা লিও কী করছে কে জানে।

বারান্দা থেকে রুমে ফিরে ল্যাজলোর পাঠানো ইমেইল দেখল রেমি। মাথা নেড়ে বলল, একবার শুধু ঠিকঠাকভাবে দিকের হদিসটা বের করতে পারি, শুধু একবার। তাহলেই কাজ শেষ!

 ‘হুম। কিন্তু একটু খাটুনি করে গুপ্তধন খুঁজে বের না করলে আসলে মজা থাকে না।

হয়তো। কিন্তু অনেক তো হলো। আর কত? আর এই ইমেইলে যা দেখছি, কর্নেল সাহেব তো ঠিক করে লিখেও রাখেনি ঠিক কোন গ্রাম থেকে দিক ধরে এগোতে হবে।

ল্যাজলো হয়তো কিছু মিস করে গেছে। সমস্যা নেই, সে আরও একবার কোডের উপর চোখ বুলিয়ে চেক করে নেবে। তবে আমাদের একটা সূত্র আছে। কোডে বলা আছে, ঝরণাধারার পাশের এক গুহা…’

‘গুহাটা এক না হয়ে অনেকগুলোও হতে পারে। কবিতায় ছন্দ মেলানোর জন্য কবিরা কত কী-ই তো লেখে।

 ‘তা ঠিক। কিন্তু অনুসরণ করে এগোনোর মতো কিছু তো হাতে আছে?

হুম। ঘড়ি দেখল রেমি। পাহাড়ে অভিযানে বের হওয়ার জন্য এই দ্বীপে প্রয়োজনীয় গিয়ার পাওয়া যাবে বলে মনে হয়?

‘সাধারণ পর্যায়েরগুলো পাওয়া যেতে পারে। আমি সেলমাকে একটা লিস্ট পাঠিয়ে দেব। ল্যাজলো যখন আসবে। লিস্টের সব জিনিস সাথে নিয়ে আসবে। ব্যাস, হয়ে গেল।

***

 সমুদ্রের দিকে যাওয়ার পথে আজ পুলিশের গাড়ি চোখে পড়ল মাত্র একটা। সাগরের পাড়ে কোনো গাড়ির টায়ারের দাগও নেই। আগের যে দাগটা ছিল সেটা পানিতে ধুয়ে মুছে গেছে। এদিকে নিয়মিত বৃষ্টি হয়। ওরা পৌঁছুনোর ৫ মিনিট পর ডেস ছোট নৌকা নিয়ে হাজির হয়ে গেল। ডারউইন-এর দিকে যেতে যেতে এদিককার হালচাল জানাল ওদের।

জাহাজে ওঠার পর ওদেরকে সরাসরি ব্রিজে নিয়ে গেল ডেস। ওখানে লিও মনিটরের সামনে বসে ডাইভারদের কাজ দেখছে। স্যাম ও রেমি রুমে ঢুকতেই চোখ তুলে তাকাল।

‘গুড মর্নিং! লিও’র কাছে গিয়ে বলল স্যাম।

মর্নিং? এখন তো বিকেল! লিও আপত্তি করল।

 ‘আছি তো সবাই পানির উপরে। সকাল আর বিকেল গুলিয়ে ফেললে দোষ কী?’ হেসে বলল রেমি। এখানকার কাজের কী অবস্থা?

 ‘চলছে। এই হারে চলতে থাকলে কয়েক বছর লাগবে। লিও জবাব দিল।

 ‘তোমার জন্য একটা ভাল খবর আছে।’ বলল স্যাম। বড় জাহাজ আসছে। খুব শীঘ্রই চলে আসবে।’ সেলমা’র পাঠানো রিসার্চশিপের ব্যাপারে স্যাম লিও-কে সব খুলে বলল। জাহাজের কথা শুনে অবশেষে হাসি ফুটল রাশিয়ানের ঠোঁটে।

‘জাহাজটা এক্ষুণি এলে ভাল হতো।’ বলল লিও।

জাহাজ আসতে থাকুক। এই ফাঁকে তোমাকে অন্য একটা কাজে লেগে পড়তে হবে’ স্যাম কোড ও ল্যাজলো’র কথা জানাল লিওকে। আমরা চাই, তুমি জাহাজ থেকে নেমে আমাদের সাথে গুপ্তধন খোঁজায় যোগ দাও। রাজা লক-এর গুপ্তধন খুঁজতে অভিযানে নামব। তুমি সাথে থাকলে দলটা পূর্ণতা পাবে।

‘শুকনো জায়গায় নামতে পারব? কবে নামব? কখন নামব?’

 ‘খুব জলদি। স্যান ডিয়াগো থেকে প্রয়োজনীয় গিয়ার নিয়ে এক বন্ধু আসছে। সর্বোচ্চ দু’দিন লাগবে।’ স্যাম হাসল। এই সুযোগে আমরা তোমাদের সাথে ডাইভিং করব। রেমি বারবার বলছে, তোমার ডাইভিং স্বচক্ষে দেখতে চায়। আর তুমি জানো, তোমার ভাবীকে আমি কোনোকিছুতে “না” বলতে পারি না।’

মজা পেয়ে রেমি মাথা নাড়ল। হুম। আজ রাতে আমরা এখানেই থাকব। যাতে সকালের ডাইভিংটাও দেখতে পারি। লিও, তুমি তোমার ডাইভিং দক্ষতা আমাকে দেখানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে নাও।

 চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়ল লিও। তোমরা মজা করছ? ওকে সমস্যা নেই। মজা করা ভাল।

রেমি অপেক্ষা করছে কখন লিও চোখ খুলবে। লিও চোখ খুলতেই সুন্দর একটা হাসি দিল রেমি। ডাইভিং নিয়ে আমি কখনও মজা করি না।

স্যাম কাঁধ ঝাঁকাল। বন্ধু, তোমার ভাবী-ই এখন বস। ওর কথা না শুনে উপায় নেই। চলো, পানিতে নামার জন্য প্রস্তুত হই।

.

 ৩৮.

পরদিন সকালে কুদের সাথে নাস্তা শেষ সেরে লিও-কে নিয়ে দ্বীপে ফিরল ফারগো দম্পতি। ডারউইন থেকে নামতে পেরে বেচারা খুব খুশি। পাড়ে পৌঁছে ওদের নিশান পাথফাইন্ডারের দিকে এমনভাবে দৌড় দিল যেন ফাঁসির দণ্ড থেকে মুক্তি পেয়েছে। বন্ধুর কাণ্ড দেখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাসল স্যাম।

 ‘লিও দৌড়াদৌড়ি সাবধানে করো। কুমীরের কথা ভুলে যেয়ো না। স্যাম সতর্ক করল।

গতি কমাল লিও। তাকাল স্যামের দিকে। আবারও মশকরা করলে নাকি?

না। এবার ও সিরিয়াস। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে কুমীরের শ্রবণশক্তি বেশ ভাল। কুমীরের ভয় না থাকলে আমি গান গেয়ে, হাতে তালি বাজিয়ে হাঁটতাম। স্রেফ জীবনের মায়া করি বলে চুপচাপ আছি।’ বলল রেমি।

 ‘হুম। বেনজি’র কথা মনে আছে? বেচারা কিন্তু একটা পায়ে হারিয়েছে। স্যাম মনে করিয়ে দিল।

লিও থেমে দাঁড়াল। আমি বুঝতে পারছি। তোমরা বলতে চাইছ, এবার আমার পা-টাও হারাতে পারে।

‘এই তো বুঝেছ। তুমি জানো? একটা পুরুষ কুমীর রেসের ঘোড়ার চেয়ে দ্রুত দৌড়াতে পারে?’ বলল রেমি। এই তথ্যটা কোথায় পড়েছিলাম, ভুলে গেছি। কিন্তু তথ্যটা সঠিক। এখানকার লোকরা পুরুষ কুমীরগুলোকে “ল্যাণ্ড ব্যারাকুড়া” নামে চেনে।’

গাড়ির কাছে পৌঁছুনোর পর বরাবরের মতো সবকিছু চেক করল স্যাম। না, নতুন কোনো টায়ারের দাগ বা পায়ের ছাপ নেই। নিশ্চিত হয়ে সবাই গাড়িতে চড়ে বসল। রওনা হলো হোটেলের দিকে।

 লিও-র জন্য একটা রুম যোগাড় করতে কোনো কষ্টই করতে হলো না। দাঙ্গা-হাঙ্গামার কারণে পুরো হোটেল প্রায় ফাঁকা।

‘ল্যাজলো জানিয়েছে ও আগামীকাল সকাল ৮-১০ টার মধ্যে এখানে এসে পৌঁছুবে।’ বলল রেমি।

‘চমৎকার। তাহলে আমরা বিকেলে পাহাড় অভিযানে বেরোতে পারব। গুহা খোঁজার ব্যাপারে আমি খুব উত্তেজনাবোধ করছি।’ স্যাম মন্তব্য করল।

 ‘বিষয়টা খুব গোপনে করতে হবে। লিও এখানকার সাগরের কী খুঁজে পেয়েছে আর সেটার সূত্র ধরে আমরা কী খুঁজতে যাচ্ছি এসব দ্বীপের লোকজন জানতে পারলে আমাদেরকে সবসময় ঘিরে রাখবে। গুপ্তধনের লোভ কার নেই?

 ‘ঠিক বলেছ। এখন প্রার্থনা করছি, ল্যাজলো’র তথ্য অনুযায়ী আমরা যেন সঠিক জায়গাটাই খুঁজে বের করতে পারি। আমরা সফল হলে লিও কিন্তু রীতিমতো রকস্টার বনে যাবে। ল্যাজলো’রও ফায়দা হবে, ওর মেধার জোরেই তো এগোচ্ছে এসব।

ফায়দা হলে তো ভাল। আমি তো ভয় পাচ্ছি পরে না সব ফালুদা হয়ে যায়!

‘তা হবে না। গুপ্তধন উদ্ধার বলে কথা।

‘গুপ্তধন আমাকে শেখাতে এসো না। এখন কীভাবে কাজটায় সফল হওয়া যায় সেই চিন্তা করো।’

‘সত্যি কথা বলতে, মুখে বলা সহজ। কিন্তু মাঠে নামলে সবকিছু কেমন যেন কঠিন হয়ে যায়। বলল স্যাম।

পুরো বিকাল জুড়ে দ্বীপে যেসব গিয়ার পাওয়া যায় সেগুলো সংগ্রহ করে কাটাল ওরা তিনজন। রাবার বুট, লেড ফ্ল্যাশলাইট, শক্ত রশি ইত্যাদি টুকটাক জিনিস পাওয়া গেল হাতের কাছেই। বাকিগুলো ল্যাজলো নিয়ে আসবে। তারপর শুরু হবে অভিযান।

শহরের পরিবেশ বর্তমানে বেশ স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়া থেকে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনি এসে পৌঁছেছে। দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা স্বাগতম জানিয়েছে তাদেরকে। কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়নি।

***

পরদিন সকালে স্যাম ও রেমি একটু আগেভাগে উঠে পড়ল। ল্যাজলো আসছে আজ। দ্রুত রেডি হয়ে হনিয়ারা এয়ারপোর্টের টার্মিনালে দাঁড়াল ওরা। কয়েক মিনিট পর একজন কুলির মাথায় ভারী বোঝা চাপিয়ে তার পেছন পেছন টার্মিনাল থেকে ল্যাজলো বেরিয়ে এলো। ল্যাজলো’র পরনে খাকি শার্ট, হাফপ্যান্ট, পায়ে বুট মাথায় ক্লাসিক হেলমেট। অভিযানে যাওয়ার জন্য বেশ ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।

‘যাক, আপনাদেরকে পাওয়া গেল। কাস্টমসের ব্যাটারা আমাকে এসব নিয়ে আসতে দিতে চাচ্ছিল না। শালারা বলে, কিছু জিনিস রেখে যান। মগের মুলুক নাকি?’ ফারগো দম্পতির দিকে এগোতে এগোতে বলল ল্যাজলো।

স্যাম ওর সাথে হাত মেলাল। রেমি জড়িয়ে ধরল ল্যাজলোকে।

‘আপনার সাথে এত মালপত্র দেখে মনে হচ্ছে আপনি এখানে লরেন্স ও অ্যারাবিয়ার স্থানীয় ভার্সন তৈরি করার জন্য অডিশন নিতে এসেছেন!’ স্যাম বলল।

ল্যাজলো নিজের পোশাকের দিকে তাকাল। বলেন কী? এরআগে কাউকে কোনো অভিযানে এরকম পোশাক পরে বেরোতে দেখেননি? আমার মনে হয়, এরকম পোশাক এখানকার স্থানীয়দের কাছ থেকে ভাল আচরণ পেতে সাহায্য করবে।

 যাক গে, যা হওয়ার হয়েছে। সার্কাসের ক্লাউন সেজে আসেননি তাতেই আমরা খুশি। ফোঁড়ন কাটল রেমি।

এরকম খোঁচা খেয়ে ল্যাজলো মুখ শক্ত করে ফেলল। আমি আপনাদের দু’জনকে বেশ ভালই বিনোদন দিচ্ছি মনে হয়!

ল্যাজলো’র কাঁধে হাত রাখল স্যাম। এত সিরিয়াস হচ্ছেন কেন? একটু মজা করছিলাম। বাদ দিন, বলুন, ফ্লাইট কেমন উপভোগ করলেন?

‘২১ ঘণ্টার ফ্লাইট। বোরিং লেগেছে। জঘন্য। আর কী বলব? বলার ভাষা নেই।’

“যাক, এখন আপনি উপভোগ করার মতো জায়গায় চলে এসেছেন। এবার সবাই একসাথে ঘোরা যাবে, কী বলেন?’ বলল রেমি।

 ‘কোনো নারীর কাছ থেকে শেষ কবে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম মনে করতে পারছি না। অবশ্যই ঘুরব। আমার অনেক এনার্জী আছে। আচ্ছা, আমি যে কোড ভেঙে তথ্যগুলো দিলাম সেটা আপনাদের কতখানি কাজে লেগেছে?

‘এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট কাজে এসেছে। আমরা ভাবছি, কুমাসাকা’র সেই গ্রামটা আগে খুঁজে বের করব। কিন্তু পাহাড়ে না ওঠা পর্যন্ত ওই গ্রাম খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। স্যাম জানাল।

‘আজই পাহাড় চড়তে শুরু করি, কেমন? দিনটা বেশ ভাল। আর্দ্রতা আর তাপমাত্রা দুটোই সন্তোষজনক মনে হচ্ছে। কত ডিগ্রি তাপমাত্রা এখন?

 ‘আমি ভেবেছিলাম আপনারা সেলসিয়াস দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করেন।’ বলল রেমি।

‘সেলসিয়াস আর ডিগ্রি-তে কী আসে যায় বলুন? গরম তো গরমই।’ ল্যাজলো বিষয়টা আমলে নিল না।

‘ভাল কথা, এখানে কিন্তু কুমীর, বিদ্রোহী বাহিনি, জায়ান্ট… ইত্যাদির আগাগোনা আছে। বিষয়টা মাথায় রাখবেন। স্যাম বলল।

‘আমি তো ভেবেছিলাম এসব আপনি মজা করে বলেন।

‘জায়ান্টের বিষয়টাকে মজা বলে ধরে রাখতে পারেন। কিন্তু বাকি সবগুলো একেবারে দিনের আলোর মত সত্যি। এখানকার খবর পড়ে আসেননি?’

সেলমা অবশ্য এগুলোর ব্যাপারে আমাকে বলেছিল। কিন্তু আমি পাত্তা দেইনি। ভেবেছিলাম, আমি যাতে এই অভিযানে যোগ দিতে না পারি সেজন্য বানিয়ে বানিয়ে বলছে। থামল ল্যাজলো। গলার স্বর নিচু করে বলল, ‘সেলমা কিন্তু আমার জন্য পাগল, বুঝলেন? আমি অবশ্য বুঝেও পাত্তা দেইনি। মজা নিচ্ছি। আমি যে আপনাকে এসব বলেছি এটা আবার সেলমা বলবেন না কিন্তু। আমি চাই না বেচারি কোনো বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়ুক।

রেমি স্যামের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকাল। ইশারা করল কথা বন্ধ করে পার্কিং লটে যাওয়ার জন্য।

 গাড়িতে চড়ার পর দেখা গেল ল্যাজলো যে মালপত্রগুলো এনেছে তাতেই ভরে গেছে পেছনের অংশ। ল্যাজলো পেছনের সিটে কোনমতে বসার জায়গা পেয়েছে। বেচারা।

 ‘আশা করছি, এই সিন্দুকমার্কা গাড়ির এসিটা অন্তত ঠিকঠাক কাজ করবে।’ বলল ল্যাজলো।

“হুম, চমৎকার কাজ করবে। এই দ্বীপে এসে এপর্যন্ত তিনটা গাড়ি বদল করেছি। এটা চার নাম্বার গাড়ি। রেমি জবাব দিল।

“তাই নাকি? ওই তিন গাড়িতে কী হয়েছিল জানতে পারি?

স্যাম ও রেমি একে অন্যের দিকে তাকাল। রেমি রিয়্যার ভিউ মিররের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল, সেটা আপনার না জানাই ভাল হবে।

“ঠিক আছে। দরকার নেই। চলুন, যাওয়া যাক।

 “আচ্ছা, লিও-কে চেনেন আপনি?

না তো।

 ‘ওর সাথে দেখা হলে মজা পাবেন। স্বভাবে একদম আপনার বিপরীত।

 ‘ঠিক আছে। তাহলে তো দেখা করতে হয়।

‘ল্যাজলো, এই অভিযানে কিন্তু আপনার ভূমিকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নোটবুকের কোড ভেঙে না দিলে আমাদের পক্ষে আর সামনে এগোনো সম্ভব হতো না। শেষমেশ যদি আমরা গুপ্তধন উদ্ধার করতে পারি তাহলে তার জন্য আপনিও বাহবা পাবেন।’

‘গুপ্তধন পেলে ধনী হয়ে যাব, তাই না? তাহলে নিজেকে তো এখনই ধনী ভেবে বসতে পারি, কী বলেন?’

রেমি নিজের হাসি দমিয়ে রাখতে পারল না। আপনার এই স্বভাবটা আমাদের দারুণ লাগে। সবসময় পজেটিভ চিন্তা করেন।

.

 ৩৯.

হোটেলে পৌঁছে লিও’র সাথে ল্যাজলো-কে পরিচয় করিয়ে দিল স্যাম। ভাড়া করা পাথফাইণ্ডারে চড়ে বের হলো সবাই। এদিকে আকাশে মেঘ জমে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে।

পুলিশের প্রথম রোডব্লক পার করার পর মুখ খুলল লিও, তোমরা কীভাবে শুরু করবে? ঠিক কোথা থেকে শুরু করতে হবে, জানবে কী করে?

‘আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি জাপানিরা সাগর থেকে গুপ্তধন তুলে সরিয়ে রেখেছে। এবং সেটা কোথায় সরিয়ে রেখেছে সে-ব্যাপারে আমরা সেই ঘটনার সময়কার একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির সাথে কথা বলেছি। এসবের ভিত্তিকে আশা করছি, আমরা সেই পুরানো জনশূন্য গ্রামটাকে খুঁজে বের করতে পারব। রেমি বলল।

“আর যদি না পারো?

 ‘তাহলে বিষয়টা একটু কঠিন হয়ে যাবে।’ বলল স্যাম।

‘আর ভাষাগত সমস্যার কী হবে? লিও প্রশ্ন ছুড়ল। আমার যতদূর মনে পড়ে, তোমরা বলেছিলে এখানকার গ্রামের লোকজন ইংরেজি বা পিজিন কোনটাতেই কথা বলতে পারে না।’

‘তবে বয়স্ক ব্যক্তিরা ইংরেজি জানে। শুধরে দিল রেমি। বহির্বিশ্বের সাথে তাদের আহামরি কোনো লেনদেন না থাকলে এখানে পর্যটন ব্যবসা বেশ চাঙ্গা। তাই ব্যবসার খাতিরে হলেও বিদেশি ভাষা তাদের শিখতেই হয়। হয়তো পিজিন ভাষাটা ওরা শিখেছে। আমরা পিজিন না জানলেও আমাদের ল্যাজলো সাহেব কিন্তু পিজিন ভাষায় ওস্তাদ।

‘আচ্ছা, বুঝলাম। মিস্টার ল্যাজলো ঠিক কীরকম দিক নির্দেশনা নোটবুক থেকে বের করেছেন জানতে ইচ্ছে করছে।

স্যাম রিয়্যারভিউ মিরর দিয়ে ল্যাজলো’র দিকে তাকাল। আপনার সলিড স্মৃতিশক্তির একটু নমুনা দেখাবেন, প্লিজ?

‘এহেম, এহেম। ইয়ে মানে, নোটবুক থেকে যা উদ্ধার করেছি সেটা হলো… শেষ কুঁড়েঘর থেকে সূর্য উদয়ের দিক, তারপর ছাগলের মাথা হয়ে যেতে হবে শত্রু এলাকায়। ওখানে ঝরনাধারা আছে। ঝরনার ওপাশেই পথ।

‘সিরিয়াসলি? এই জিনিসের উপর ভর করে এগোচ্ছি আমরা?

কর্নেল কুমাসাকা এসব লিখেছিলেন যাতে নিজেকে জায়গাটা সম্পর্কে মনে করিয়ে দিতে পারেন। তাই তিনি বিস্তারিত লেখেননি। স্রেফ কিছু সংকেত লিখেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, এটাই যথেষ্ট।

হুম, খুবই যথেষ্ট। ব্যঙ্গ করল লিও। এমন একটা গ্রাম আমরা খুঁজতে যাচ্ছি যার এখন কোনো অস্তিত্বই নেই। কেউ ওখানে থাকে না। তারপর আবার খুঁজতে হবে ছাগলের মাথা! তারপর ঝরনা। এরপর পথ পাওয়া যাবে। আচ্ছা, ধরে নিলাম গ্রাম, ছাগলের মাথা, ঝরনা সব পাওয়া গেল। কিন্তু তারপর যে পথটা পাওয়া যাবে সেটা ধরে কতদূর যেতে হবে? তার উত্তর জানা আছে? হতে পারে সেটা ১০ মিটার… আবার সেটা ১০ কিলোমিটারও হতে পারে। অত রাস্তা আমাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব? তার উপর আছে বিদ্রোহীদের হামলার ভয়। কখন কোথায় কাকে মেরে দেবে কোনো ঠিক নেই। বুঝেছ? কী বলতে চাচ্ছি?

মেঘ গর্জন করে উঠল। একটু পর শুরু হয়ে গেল ঝুম বৃষ্টি। প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের ফলে দৃষ্টিসীমা নেমে এলো ২০ ফুটে।

‘এত চিন্তার কিছু নেই। তুমি হয়তো আমাদের সাথে এসেছে এক রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়ে। কিন্তু আমাদেরকে প্রয়োজনে কয়েক রাতও থাকতে হতে পারে। সেজন্য প্রয়োজনীয় রসদ আছে আমাদের সাথে। একাধিক তাবুও নিয়ে যাচ্ছি। কোনো সমস্যা হবে না। স্যাম আশ্বস্ত করল।

 ‘পোকামাকড় তাড়ানোর জন্য স্প্রে-ও আছে। ভয় নেই।’ যোগ করল রেমি।

‘এই যে, এখন বৃষ্টিটা শুরু হলো। সবকিছু কাদায় একেবারে ঝোল ঝোল হয়ে যাবে। লিও ঘোঁতঘোত করল।

 ‘পাহাড়ে উঠব আমরা। কাঁদায় খুব একটা সমস্যা হবে না। আর পাহাড়ের গায়ে পানি জমেও না। অতএব, দুশ্চিন্তার কিছু নেই।… বলতে বলতে আমরা জায়গামতো চলে এসেছি। গাড়ির গতি কমাল স্যাম। রেমি, এটাই সেই রাস্তা না? এই রাস্তা ধরেই তো আমরা রুবো-কে নিয়ে এখানকার একটা গ্রামে গিয়েছিলাম?

তুমুল বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির কাঁচের ভেতর দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করল রেমি। জঙ্গলের মধ্যে একটা ফাঁক দেখা যাচ্ছে। হতে পারে। নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

‘বেশ। চলো, দেখা যাক আমাদের ধারণা সত্যি কিনা। এটুকু বলে স্যাম গাড়ি ঘোরাল সেদিকে। গাড়ির ছাদে গল্ফ বল সাইজের পানির ফোঁটা এসে আছড়ে পড়ছে। কাঁচা রাস্তায় ওদের নিশান পাথফাইণ্ডার নামার পর টায়ারগুলো বেশ কয়েকবার পিছলে গেল। কিন্তু মাটি আকড়ে ধরল কয়েক সেকেণ্ড পরেই।

ওরা গাড়ি নিয়ে জলধারার কাছে পৌঁছে গেল। ইতিমধ্যে বৃষ্টি থেমেছে। আগেরবার এই জলধারার সামনে এসেই রুবো দ্বিধাদ্বন্দে ভুগেছিল।

এবার আমরা কি জলধারাটুকু পার হব নাকি পাহাড় বাইতে শুরু করব?

বলো কী? অবাক হলো লিও।

‘আমার মনে হয় এবার জলধারা পার হলেই কাজ হবে।’ বলেই স্যাম গ্যাস প্যাডেলে চাপ দিল। গাড়িতে প্রচুর মালপত্র থাকায় একদম ভারি হয়ে গেছে। পানি ছিটিয়ে অগভীর জলধারাটুকু পার হয়ে গেল নিশান পাথফাইণ্ডার।

সামনে একটা গ্রাম উদয় হলো। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল রেমি। যাক, ওরা ঠিক পথেই এগোচ্ছে। অবশ্যই এই গ্রামে মানুষজন বসবাস করে। গাড়ি থেকে নামল সবাই। কৌতূহলী গ্রামবাসীদের কেউ কেউ ওদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ওদেরকে নিয়ে পাহাড়ের উঁচু অংশের দিকে এগোল স্যাম। আগেরবার যে কবিরাজকে দেখে গিয়েছিল তাকে এবার প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলল। কবিরাজ স্যামের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। হাত দিয়ে দেখাল পাহাড়ের উপরের দিকে একটা কুঁড়েঘর। আগেরবার ওরা ওখানে গিয়ে নাউরুর সাথে কথা বলেছি। স্যামও পাল্টা মাথা নাড়ল। ৫০ ডলার ধরিয়ে দিল বৃদ্ধ কবিরাজের হাতে।

 ‘রুবো,’ বলে স্যাম মাথা নেড়ে ইঙ্গিত করল রুবো আর বেঁচে নেই। চোখ বড় বড় হয়ে গেল কবিরাজের। ডলারগুলো নিতে ইতস্তত করলেও পরে নিজেকে সামলে নিল।

‘আপনি ইংরেজি বলতে পারেন?’ জানতে চাইল স্যাম।

কাঁধ ঝাঁকাল বৃদ্ধ। পারে না। এক তরুণ ছেলেকে ইশারা করে ডাকল সে। স্যাম তরুণটিকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল।

‘ফারি আরকী,’ জবাব দিল তরুণ। উচ্চারণে আঞ্চলিক টান।

‘আমরা একটা পুরানো গ্রাম খুঁজছি। ওই গ্রামে কেউ থাকে না। স্যাম বলল। কিন্তু তরুণের চোখ দেখে মনে হলো সে ঠিক বুঝতে পারছে না। আবার বলল স্যাম। একটা গ্রাম। নাউরু একসময় থাকতো ওখানে। ওই। গ্রামটা খুঁজে বের করতে চাই।’

এবার তরুণটি বুঝতে পেরে গ্রামের বয়স্কদের কাছে গেল। আলোচনা করল সবার সাথে। কিছুক্ষণ এর-ওর সাথে কথা বলে ফিরল স্যামের কাছে।

‘ওইখানে কিছু নাই। ভালা না জায়গাড়া।

‘আমরা জানি। কিন্তু তবুও আমাদেরকে যেতে হবে। সামনে এগিয়ে এসে বলল রেমি।

আবার বয়স্কদের কাছে গেল ছেলেটা। আরেক দফা পরামর্শ করার পর ফিরে এলো।

যাওনের লিগা রাস্তা নাই।’

‘সমস্যা হবে না। আমরা হেঁটেই যাব।’ রেমি জবাব দিল। তুমি আমাদেরকে একটু গ্রামটা দেখিয়ে দিতে পারবে?

স্যাম চট করে ২০ ডলার বের করে তরুণের সামনে ধরল। তরুণ একবার বয়স্কদের দিকে তাকিয়ে লুফে নিল নোটটা। এমনভাবে নিল যেন আর একটু দেরি হলে ওটা বাতাসে মিলিয়ে যেত।

‘এহনই যাইবেন?’ ছেলেটা জানতে চাইল।

 মাথা নাড়ল স্যাম। হ্যাঁ।

গাড়ির কাছে ফিরে যাবতীয় মালপত্রগুলো ওরা চারজন ভাগ করে নিল। রওনা হলো তরুণের পেছন পেছন। গ্রামের মানুষ, তরুণটির পায়ে কোনো স্যাণ্ডেল বা জুতো নেই। ভার নিয়ে চলার এক ফাঁকে ল্যাজলো লিও’র দিকে তাকিয়ে দেখল বেহাল অবস্থা। লিও’র মুখ প্রায়ই বাংলা পাঁচ হয়ে থাকে। আর এখন বোঝা নিয়ে এগোতে গিয়ে ওটা হুতুম পেঁচার মতো হয়ে আছে। অবশ্য ফারগো দম্পতি এসব ভার বহনকে মোটেও কষ্ট হিসেবে নেয়নি। বড় বড় পা ফেলে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে তারা।

 পাক্কা এক ঘণ্টা পাহাড় বাওয়ার পর অন্য একটা পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে পৌঁছুল সবাই। এখানটায় পাখির কিচিরমিচির ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। সব কেমন গুমোট, চুপচাপ। একটু দূরে থাকা কিছু সাজানো পাথরের দিকে নির্দেশ করল ছেলেটা। পাথরগুলো মানুষ সাজিয়েছে সেটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। যদিও ঝোঁপঝাড়ের কারণে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে ওগুলো দেখতে।

গাছের ছায়ায় বিশ্রামের জন্য থাম। ওরা। তরুণ ওদেরকে একটা জিনিস দেখাল।

‘টেবিল।

বিষয়টা বুঝতে পারল রেমি। এই গ্রামের বাসিন্দারা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে শুঁটকি বানাতো। এই টেবিলেই মাছ শুকাতে দিতে তারা। পাথরের টেবিল হওয়ায় এগুলো এখনও টিকে আছে। পাশের পাহাড় থেকে পাথর কেটে এনে টেবিলগুলো বানানো হয়েছিল।

 ‘দেখে তো মনে হচ্ছে, এই একই পাথর দিয়ে রাজা লক মন্দির তৈরি করেছিল।’ বলল লিও।

‘ঠিকই বলেছ। এখানে এরকম পাথর খুবই সহজলভ্য ছিল তখন। স্যাম সায় দিল।

চারদিকে তাকিয়ে দেখল ল্যাজলো। এখানে তো এখন কিছু নেই। সব গায়েব। এই ছেলেটা যদি আমাদেরকে সাহায্য না করতো তাহলে আমাদের সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যেত, সন্দেহ নেই।

নাউরুর ভাষমতে, এই গ্রামের সবাইকে খুন করা হয়েছিল। কেউ কোনো চিহ্ন রেখে যাওয়ার মতো সময় পায়নি।’ বলল রেমি।

একটু সরে দাঁড়াল স্যাম। পকেট থেকে কম্পাস বের করে দেখল। তারপর আগের জায়গায় ফিরে এসে তাকাল তরুণটির দিকে।

‘অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা এখানে থাকব। তুমি যেতে পারো। স্যাম বলল।

স্যামের কথা শুনে তরুণ হতভম্ব হয়ে গেছে। স্যাম এবার ইশারা ইঙ্গিত করে আবার বলল কথাটা। এবার তরুণ নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারল। কাঁধ ঝাঁকিয়ে ফিরতি পথ ধরল সে। যদি এই পাগলা বিদেশিগুলো জঙ্গলের মাঝখানে ক্যাম্প করে জীবন নিয়ে জুয়া খেলতে চায়, খেলুক। তাতে ওর কী? ওর পকেটে ডলার উঠেছে। আর কী লাগে?

তরুণ বিদেয় হওয়ার পর ব্যাগ থেকে জিপিএস বের করল স্যাম। যে রাস্তা ধরে এখানে এসেছে জিপিএস-এ সেটার চিহ্ন দিয়ে রাখল যাতে ফেরার সময় পথ ভুল না হয়। আমরা যে পথে এগোচ্ছি, পূর্ব দিক পড়ছে ওদিকে। শেষ কুঁড়েঘর থেকে সূর্য উদয়ের দিক… তারমানে আমার মনে হচ্ছে, এখানে পূর্ব দিকের কথা বলা হয়েছে।’ স্যাম বলল।

‘আর ছাগলের মাথা?’ জিজ্ঞেস করল ল্যাজলো।

‘এটা খুঁজে বের করা একটু কঠিন। আশা করছি জিনিসটা চোখের সামনে পড়লে আমরা চিনতে পারব।’

‘যদি এমন হয় ছাগলের মাথা দিয়ে যেটাকে বোঝানো হয়েছে সেটা এতদিনে ধুয়ে গেছে কিংবা ধ্বংস হয়ে গেছে? লিও প্রশ্ন ছুঁড়ল।

‘সেরকম পরিস্থিতি হলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

লিও স্যামের কথা পাত্তা না দিয়ে একটা মশা মারল। ছাগলের মাথা খুঁজতে হবে। এই গ্রামের লোকেরা কবে কখন ছাগল খেয়েছিল এখন সেটার মাথা খুঁজতে হবে!

পূর্ব দিকে এগোচ্ছে সবাই। তাপমাত্রা বাড়ছে ধীরে ধীরে। কিছু দূর যাওয়ার পর পেছন ফিরে তাকাচ্ছে স্যাম। দেখে নিচ্ছে কেউ ওদের পিছু নিয়েছে কিনা। ওই ছেলেটা আর গ্রামবাসীরা মনে হয় না ওদের কোনো ক্ষতি করতে চাইবে। তারপরও সাবধানের মার নেই।

 পূর্বে এগোতে এগোতে পাহাড়ী ঢাল আরও খাড়া হতে শুরু করল। ধীরে ধীরে ওদের রাস্তাটা উত্তর দিকে বেঁকে গেছে। ম্যাচেটি বের করে সামনের ঝোঁপঝাড় পরিষ্কার করতে করতে ধীর গতিতে এগোল ফারগো দম্পতি।

বিকেল হয়ে গেল।

আরেকটা বড় জলধারার সামনে এসে পৌঁছেছে ওরা। সবাই ক্লান্ত। একটা বড় বট গাছের নিচে বিশ্রামের জন্য বসল অভিযাত্রী দল।

কতদূর এলাম আমরা?’ প্রশ্ন করল রেমি। ওর কপাল বেয়ে ঘাম নামছে।

‘আধ মাইল হয়েছে হয়তো। জিপিএস-এর দিকে তাকাল স্যাম। একটু অপেক্ষা করল সিগন্যালের জন্য। না, আধ মাইলের একটু বেশিই এসেছি।

‘ছাগলের মাথার হদিস পেতে আরও কতদূর যেতে হবে কে জানে! বিড়বিড় করল লিও।

‘সেটাই তো চ্যালেঞ্জ।’ স্যাম বলল।

‘অবশ্যই আমাদেরকে এটাও মনে রাখতে হবে, ছাগলের মাথা বলতে আসলে কী বোঝানো হয়েছে সেটা আমরা জানি না।’ বলল ল্যাজলো।

 ‘আমার মনে হয় ছাগলের মাথা প্রাকৃতিক কোনো জিনিসই হবে। কর্নেল কুমাসাকা দিক নির্দেশের ব্যাপারে যা যা লিখেছেন সবই প্রাকতিক উপাদান। যেমন: জলধারা, সূর্য ওঠার দিক।’ রেমি বলল।

 ভুল হলো। কুমাসাকা জলধারার ব্যাপারে কিছু লিখে যাননি। তিনি ঝরনাধারার ব্যাপারে লিখেছেন। জলধারা আর ঝরনাধারার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ল্যাজলো শুধরে দিল। আমি এখনও কোনো ঝরনা দেখিনি এখানে।

‘আমি ছাগলও দেখিনি। ফোড়ন কাটল লিও।

মাঝেমাঝে উত্তরটা আমাদের সামনেই থাকে। রেমি কয়েকটা বড় বড় পাথরের দিকে তাকিয়ে বলল কথাটা। রেমির দৃষ্টি অনুসরণ করে স্যামও তাকাল সেদিকে।

একটু পর দাঁত বের করে হাসতে শুরু করল স্যাম। আমি তোমাদেরকে কখনও বলেছি আমার বউটা কীরকম স্মার্ট? এগোলো বিশাল আকৃতির পাথরগুলোর দিকে। ল্যাজলো, বলুন তো ওগুলো দেখতে কীসের মতো?

‘কীসের মতো আর? কয়েক ঢাউস সাইজের পাথর।

হাসল রেমি। অন্ধের দেশে এক চোখঅলা ব্যক্তিই হয় রাজা।

‘তা ঠিক। কিন্তু আপনার এই কথার সাথে পাথরের সম্পর্কটা ধরতে পারলাম না…’ থেমে গেল ল্যাজলো। আবার তাকাল পাথরগুলোর দিকে।

কয়েক মিনিট চুপচাপ বসে রইল সবাই। নীরবতা ভাঙল লিও। আচ্ছা, তোমরা এসব কী বলো? কিছুই তো বুঝি না। কোনো কোড় ভাষায় কথা বলছ নাকি?

স্যাম মাথা নেড়ে লিও-কে পাথরগুলো দেখাল। পাথরগুলো আ খেয়াল করে দেখো। ছাগলের মাথার মতো দেখতে।

বলো কী? আমার নিজেকে এখন মদন মনে হচ্ছে…’

 মাথা নেড়ে সায় দিল ল্যাজলো। আপনার সাথে আমি একমত।

.

 ৪০.

স্যাম জিপিএস-এর আরেকটা চিহ্ন দিল। তারপর জুম করল জিপিএস-এ। জঙ্গলের এই অংশটুকুর স্যাটেলাইট অংশটুকু দেখার বৃথা চেষ্টা করে ইস্তফা দিল।

নাহ, স্যাটেলাইট ইমেজে জঙ্গলের কোনো বিশেষ কিছু দেখা যাচ্ছে না। গাছপালা এত ঘন যে উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে সবুজ চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে পুরোটা।’

 ‘হুম। আচ্ছা, নোটবুকের পরের অংশে যেন কী ছিল?’ প্রশ্ন করল রেমি। ‘শত্রুর এলাকায় প্রবেশ করো টাইপের কিছু একটা লেখা ছিল বোধহয়?’

মাথা নাড়ল ল্যাজলো। ঠিক বলেছেন। এ-ব্যাপারে আপনার কোনো পরামর্শ আছে?

সামনে থাকা পাহাড়ের চূড়োর দিকে তাকাল স্যাম। আমার মনে হয় কর্নেল কুমাসাকা নোটবুকে সংকেতগুলো লেখার সময় একটু চালাকি খাঁটিয়েছেন। প্রথমে পূর্ব দিকে যাওয়া কথা বললেও ছাগলের মাথা থেকে এখন আমরা যেদিকে এগোচ্ছি এটা উত্তর-পূর্ব দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু পূর্ব দিক লিখে রাখলে বিষয়টা খুব সহজ হয়ে যেত। ছাগলের মাথা যোগ করে কর্নেল বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। এটা হচ্ছে, আমার মতামত। এখন তোমাদের কারও কিছু বলার আছে?

‘কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উঠে এসেছি। আপত্তি তুলল রেমি।

বুঝেছি, তুমি বলতে চাচ্ছে, তখন তো তাদের কাছে ভারি বোঝা ছিল। গুপ্তধন নিয়ে উঠতে হয়েছিল তাদের, ঠিক?

‘মিস্টার স্যাম, আপনি ঠিক ধরেছেন। আমি মিসেস ফারগো’র সাথে একমত। তাই আমার মনে হচ্ছে, জাপানিরা তখন এমন একটা প্রাকৃতিক পথ বেছে নিয়েছিল যে পথে বাধার পরিমাণ কম।’

মন্দ বলেননি। তবে আমার মনে হচ্ছে এই জলধারা অনুসরণ করে এগোলে আমরা সঠিক জায়গায় পৌঁছে যেতে পারব।’ বলল স্যাম।

‘সেটাই যদি হবে তাহলে কুমাসাকা কেন নোটবুকে সহজ করে লিখল না জলধারা ধরে এগোবে আর গুপ্তধন পেয়ে যাবে! সে কোন দুঃখে ছাগলের মাথা দেখে তারপর শত্রুর এলাকায় ঢুকতে বলল? লিও যুক্তি দাঁড় করাবার চেষ্টা করল।

হয়তো সে আশংকা করেছিল সময়ের সাথে সাথে জলধারা বয়ে যাওয়ার পথ বদলে যেতে পারে। যেমন; এখন গ্রামের ওদিকটায় জলধারা যে পথ দিয়ে বইছে রুবো’র আমলে তখন ওদিকে বইত না। তাই এত বছর পর রুবো হঠাৎ জলধারার গতিপথের পরিবর্তন দেখে গ্রাম খুঁজে পেতে একটু দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গিয়েছিল। কিংবা এমনও হতে পারে, অত সহজ করে লিখে রাখলে যে-কেউ সংকেতের অর্থ বের করে হাজির হয়ে যেত এখানে। গুপ্তধন হাতিয়ে নিত। কর্নেল হয়তো সেই ভয়ে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কাব্য রচনা করে গেছে। এরকম আরও অনেক কারণ থাকতে পারে…’ ব্যাখ্যা করল স্যাম।

‘আমাদের বাঁশ যাওয়ারও অনেক কারণ থাকতে পারে…’ লিও বিড়বিড় করল।

 ‘এত হতাশ হয়ো না, লিও। আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবে সবগুলো পয়েন্ট খুঁজে পেয়েছি।’ বলল রেমি।

 ‘আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। চলুন, জুলধারা ধরে এগিয়ে গিয়ে দেখি, কী আছে? যদি ভুল হয় অন্য পথ ধরব। ব্যস, হয়ে গেল। এইটুকু একটা দ্বীপ, গুপ্তধন হাতে না এসে যাবে কোথায়? ল্যাজলো সমর্থন জানাল।

সামনে এগোতে শুরু করল সবাই। টানা একঘন্টা চলার পর ওরা দেখল জলধারা চওড়া হয়ে তারপর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দু’দিকে চলে গেছে। লিওর দিকে তাকাল স্যাম।

 ‘কোনদিকে যাওয়া যায়?

‘কোনোদিকেই নয়। তবে হোটেলে ফিরে গেলে ভাল হয়।

কী যে বলো? গুপ্তধন উদ্ধার করতে এসে এরকম কথা বলা মানায়?

 ‘আরে ভাই, একটা রাস্তা পছন্দ করে ফেলুন। উৎসাহ দিল ল্যাজলো। ‘একটু রোমাঞ্চের স্বাদ নিন!

লিও’র সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করল সবাই। কিছুক্ষণ পর ডান দিকে যাওয়ার মত দিল লিও। এই জলধারা পূর্ব দিকে একটু বেশি এগিয়েছে।’

‘এবার বুঝেছ? কেন কর্নেল লিখে যায়নি “জলধারা ধরে এগোলে গুপ্তধন পেয়ে যাবে?” খোঁচা মারল রেমি।

কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার পথ চলতে শুরু করল সবাই। চড়াই উঠছে। অনেক খানি উঁচুতে ওঠার পর থামল ওরা। নিচের দিকে তাকাল স্যাম।

‘নাহ। ওরা ভারি গুপ্তধন নিয়ে এত উঁচুতে উঠতেই পারে না। আমরা ভুল পথে এসেছি।’

মাথা নেড়ে সায় দিল রেমি। হুম। চলো অন্য পথ ধরে এগোই।’

স্যাম আকাশের দিকে তাকাল। জলধারা ঠিক যেখানে দু’ভাগ হয়েছে। ওখানে পৌঁছুতে পৌঁছুতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। রাতটা আমরা ওখানেই ক্যাম্প করে কাটাব। তারপর সকালে উঠে আবার রওনা হওয়া যাবে।’

ল্যাজলো তাকাল লিও’র দিকে। মন খারাপ করবেন না, মিস্টার লিও। ভুল হতেই পারে। ব্যাপার না।’

‘এজন্যই আমি তখন বলেছিলাম হোটেলে ফিরে যাই। লিও জবাব দিল।

পরিকল্পনা অনুযায়ী তাবুতে রাত কাটাল ওরা। ডিনারের মেনুটা সাদামাটা হলেও খেয়ে সবাই তৃপ্তি পেয়েছিল। কিন্তু অশান্তি করেছে ঢাউস সাইজের মশাগুলো।

সারারাত মশার গান শুনে সকালে উঠল অভিযাত্রী দল। সময় নষ্ট না করে এগিয়ে চলল ২য় জলধারা ধরে। জঙ্গল কুয়াশায় ঢাকা। ২০ মিটারের বেশি দৃষ্টি দেয়া যাচ্ছে না।

এগোতে এগোতে হঠাৎ মাথা নিচু করে থামল স্যাম। এক হাত উঁচু করে সঙ্গীদেরকেও থামার ইঙ্গিত করল। থামল সবাই। তাকাল পেছনে।

“কিছু শুনেছ?’ রেমিকে জিজ্ঞেস করল স্যাম।

রেমি মাথা নাড়ল। না তো৷ কী?

‘আমার মনে হলো আমি পানিতে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনলাম।

ওদেরকে অবাক করে দিয়ে দুরদার করে সামনের এগিয়ে গেল ল্যাজলো। ঠিকই শুনেছেন। আমরা এবার সেই ঝরনাধারা পেয়ে গেছি। ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলল সে।

সবাই দৌড়ে গেল ল্যাজলোর কাছে। দেখল সামনে একটা উঁচু ঝরনা। চওড়াও বেশ ভাল। প্রায় ২০ ফুট। অনবরত সাদা পানি ঝরিয়ে যাচ্ছে। তার ডানপাশে আরেকটা ছোট ঝরনা।

ছোট ঝরনার দিকে তাকিয়ে বলল রেমি। দেখো, ওই ঝরনা থেকে অন্তত আরও দুটো জলধারার জন্ম হয়েছে।’

হুম। কিন্তু এবার আসল প্রশ্নটা হচ্ছে কুমাসাকা তার নোটবুকে ঝরনার পেছনে যেতে বলেছে। তাহলে?’ স্যাম প্রশ্ন করল।

‘এখন কোনটার পেছনে যাব?’ জানতে চাইল ল্যাজলো।

‘তারমানে আমরা একটা গুহার মতো কিছু খুঁজছি, তাই না? আমার দৃষ্টিশক্তি মোটামুটি ভালই। আমি ছোট ঝরনাটার পেছনে বিশাল সাইজের পাথর আর গুহার মতো কিছু একটা দেখতে পাচ্ছি। লিও জানাল।

মাথা নেড়ে দাঁত বের করে হাসল স্যাম।

ঝরনার ওপাশে.. অর্থাৎ ঝরনার পেছনে… ঠিক রেমি ফিসফিস করল।

‘ভাইসাহেব, আপনাকে যে যা-ই ভাবুক। আমি মনে করি, আপনাকে সবাই যতটা ভাবে আপনি আসলে ততটা খারাপ নন। লিও’র পিঠ চাপড়ে বলল ল্যাজলো। ল্যাজলোর দিকে তাকিয়ে হুতুম পেঁচার মতো মুখ করল লিও। সরে গেল একপাশে। ও ঠিকই বুঝতে পেরেছে, প্রশংসার আড়ালে খোঁচা লুকিয়ে আছে।

জিপিএস-এ আবার চিহ্ন দিল স্যাম। তাহলে আর দেরি কীসের? চলো, যাওয়া যাক। আমরা একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছি। আচ্ছা, এখান থেকে রেমি আমাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাও। যাবে?

‘আমার মনে হয় এই সম্মানটা ল্যাজলো’র প্রাপ্য। কোডটা তো উনি ভেঙেছেন।’ বলল রেমি।

‘আহ, বেশ বেশ। আমি-ই যাচ্ছি সামনে। আমার পেছন পেছন আসুন সবাই। ফলো মি! ল্যাজলো সামনে পা বাড়াল।

***

গুহার মুখটা বিশালাকৃতির। গুহার মুখ তিন মিনিট ধরে ম্যাচেটি দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর প্রবেশ করল ওরা।

ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাতে হবে। স্যাম বলল। ফ্ল্যাশলাইট অন করল সবাই।

ল্যাজলো সবার সামনে খুব সাবধানে পা ফেলে এগোচ্ছে। গুহার ভেতরের উচ্চতা খুব একটা বেশি নয়; মাত্র ৫ ফুট, চওড়ায় টেনেটুনে ১৫ ফুট হবে। মাথানিচু করে এগোচ্ছে ওরা। গুহার আরও ভেতরে প্রবেশ করে ওরা দেখতে পেল ভূমিতে পানি জমে জলাশয়ের মতো তৈরি করেছে। ফ্ল্যাশলাইটের আলো প্রতিফলিত হচ্ছে ওতে। হয়তো ঝরনার পানি চুঁইয়ে এসে তৈরি হয়েছে এটা।

ল্যাজলো, সাবধানে এগোবেন। এমনও হতে পারে এটা ১০০ ফুট গভীর। সতর্ক করে দিল স্যাম।

সর্তক করে দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্য…’ থেমে গেল ল্যাজলো। স্থির করে ধরল হাতে থাকা ফ্ল্যাশলাইট।

কী হয়েছে?’ রেমি প্রশ্ন করল।

‘আমরা-ই এখানে প্রথম অভিযাত্রী নই, বোধহয়।’ বলে একপাশে সরল ল্যাজলো। স্যাম ও রেমি সামনে এগিয়ে এসে গেল একজোড়া কঙ্কাল পড়ে আছে। পাথুড়ে ভূমিতে। তাদের মণিবিহীন চোখের কোটর গুহার মুখের দিকে তাক করা।

 লিও ওদেরকে পাশ কাটিয়ে কঙ্কালগুলোর কাছে গেল। খুন হওয়া গ্রামবাসী। নিচু গলায় বলল সে।

 ‘হতে পারে। কিন্তু জাপানিরা এই কাজ করেছে বলে তো বিশ্বাস হচ্ছে না। সাইজে ছোট কঙ্কালটার পা দেখো।

‘ওগুলো…? মাঝপথে রেমি থেমে গেল।

“হুম, ওগুলো প্লাস্টিকের গোলাপি স্যাঞ্চেল। সাধারণত বাচ্চা মেয়েরা পরে। বলল স্যাম।

‘এই জিনিস তাহলে এখানে কেন?’ ল্যাজলো ফিসফিস করে বলল।

কাঁধ ঝাঁকাল স্যাম। তা বলা যাচ্ছে না। তবে এগুলো এখানে আছে বেশ কয়েকদিন হলো। জানোয়াররা এসে না হয় মাংস খুবলে খেয়েছে, পচনে পরনের পোশাকও গায়েব কিন্তু এদেরকে দেখে তো মনে হচ্ছে না, এরা আহত হয়েছিল। কোথাও কোনো হাড় ভাঙ্গা নেই। মাথার খুলিও ঠিকঠাক আছে। হয়তো প্রাকৃতিক কোনো কারণে এদের মৃত্যু হয়েছে।

আপত্তিসূচক মাথা নাড়ল রেমি। আমার তা মনে হয় না। ওদের কব্জি দেখো।

কী ওটা? জানতে চাইল লিও।

সবাই ঝুঁকে দেখল জিনিসটা। নরম গলায় ল্যাজলো বলল, প্লাস্টিকের হাতকড়া। জিনিসটা প্লাস্টিকের হলেও একবার বাধলে বন্দির আর ছোটার উপায় থাকে না। মৃত্যুর সময় ওদের হাত এটা দিয়ে বাধা ছিল।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *