৩. ঐতিহাসিক সূত্র

ঐতিহাসিক সূত্র

পিতা জাহাঙ্গীরের মত শাহজাহান নিজের কোন স্মৃতিকথা লিখে রেখে যাননি, কিন্তু তাঁর ঘটনাবহুল জীবন সম্পর্কে বিশদ ব্যাখা পাওয়া গেছে বিভিন্ন লেখকের রচনাতে। জাহাঙ্গীর নিজে তরুণ শাহজাহানের একটি চিত্র দিয়ে গেছেন–অথবা সে সময় অনুযায়ী শাহজাদা খুবরম যখন তরুণ বয়সে পিতার প্রিয়পাত্র ছিলেন। যখন জাহাঙ্গীর দুর্বল হয়ে পড়ে নিয়মিত লেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, এ দায়িত্ব নিয়ে দেয়া হয় মুতামিদ খানের উপর যে পিতার বিরুদ্ধে শাহজাহানের বিদ্রোহকে তুলে ধরেছে। সম্রাট হিসেবে রাজত্ব শুরু করার পর শাহজাহান আবদুল হামিদ লাহোরীকে দায়িত্ব দেন নিজের শাসনামল লিপিবদ্ধ করার জন্য। কিন্তু প্রতিনিয়ত দুর্বলতার শিকার হয়ে লাহোরী শাহজাহানের রাজত্বকালের কেবলমাত্র প্রথম পঁচিশ বছর তুলে ধরেছেন তাঁর বাদশা-নামাতে। যাই হোক, তাজমহল নির্মাণের কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করে গেছেন লাহোরী। এ ছাড়াও, পণ্ডিত ইনায়েত খান, রাজকীয় পাঠাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি শাহজাহানের শাসনামলের বিস্তারিত বর্ণনা লিখে গেছেন, শাহজাহাননামা নামক গ্রন্থে। এর পাশাপাশি দরবারের বিভিন্ন লেখা তো রয়েছেই।

বিদেশীরাও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে গেছে। লিখে রেখে গেছে মোগল দরবারে তাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, সম্পত্তি আর প্রাচুর্য দেখে বিস্ময়ের কথা। ইংরেজ পিটার মান্ডি, ভারতে থেকেছেন ১৬২৮ থেকে ১৬৩৩। তাজমহলের প্রথম দিককার নির্মাণ কাজ দেখেছেন। লিখে গেছেন : এই ইমারত… নির্মাণের ব্যয় হচ্ছে অসম্ভব শ্রম এবং অর্থ, তত্ত্বাবধান করা হয় অসাধারণ অধ্যবসায় বজায় রেখে। সোনা, রুপা সাধারণ উপাদান হলেও মার্বেল আর সাধারণ পাথর দিয়ে হলেও ফুটে উঠেছে অত্যাশ্চর্যভাবে। ভেনেশীয় অভিযাত্রী নিকোলাও মানুচ্চী শাহজাহানের পরিবারের সংঘর্ষ আর ভাঙন দেখেছেন স্বচক্ষে। তাঁর স্টোরিয়া দো নোগর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন কীভাবে দারা শুকোহ্র হয়ে যুদ্ধ করেছেন আর শেষ ময়দান সামুগড়ের চিত্রও তুলে ধরেছেন নিপুণ হস্তে।

তারপরেও সবসময়কার মত উৎসগুলোকে নাড়াচাড়া করতে হয় সাবধানে। বেতনভুক্ত জীবনীকারেরা কাজের ক্ষেত্রে খানিকটা হলেও সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতেন। কেননা তাদের লেখনীর ক্ষেত্রে প্রশংসার চেষ্টা আর সংঘবদ্ধ প্রচারণা করার উদ্দেশ্য থাকত। কিন্তু মোগল দরবারে বেড়াতে আসা বিদেশীরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করত। তবে এ ব্যাপারে অতি মাত্রায় আগ্রহ আর স্থানীয় প্রথা ভাষা সম্পর্কে না জানা থাকাতে অনেক কিছুকেই তারা আবার অবহেলাও করত আর সত্যিকারের ঘটনা প্রবাহ বুঝতে অসমর্থ হত। এতদসত্ত্বেও বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া একটি তথ্যের ক্ষেত্রে কারো কোন সন্দেহের অবকাশ নেই আর তা হল শাহজাহান ও মমতাজের মাঝে অবিচ্ছিন্ন বন্ধন, পত্নীর মৃত্যুর পর সম্রাটের ভেঙে পড়া, মমতাজ এবং শাহজাহানের জীবিত ছেলেমেয়েদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হওয়া; বহু পরে শাহজাহান নিজে এসব আবিষ্কার করলেও তখন আর কিছুই করার ছিল না।

এই সিরিজের প্রথম গ্রন্থগুলোর মতই, প্রধান চরিত্রদের প্রায় সবগুলোই বাস্তব জীবনেও ছিলেন রক্ত-মাংসের মানুষ হিসেবে রাজকীয় মোঘল পরিবার রাজপুত শাসকেরা মোগলদের অত্যন্ত কাছের বিশ্বাসভাজনে যেমন সাত্তি আল-নিসা। যদিও কয়েকটি চরিত্রকে যেমন নিকোলাস ব্যালান্টাইন যিনি নিজের প্রথম আগমন ঘটিয়েছিলেন দ্য টেইন্টেড থ্রোন-তে, সৃষ্টি করা হয়েছে অন্য কারো অনুকরণে, এক্ষেত্রে নিকোলাও মানুচী আর রাজপুত শাহজাদা অশোক সিংয়ের চরিত্রটাও সেরকম। প্রধান ঘটনা আর যুদ্ধ সমূহ সত্যিকারেই সংঘটিত হয়েছিল; যদিও বর্ণনা করার সুবিধার্থে সময়গুলোকে কখনো-সখনো খানিকটা পরিবর্তন করেছি। এছাড়া কিছু ঘটনাকে এড়িয়েও গেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর মহান আর বিশাল রাজবংশের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকেই গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা।

গবেষণার জন্য অনেক জায়গাই টেনে নিয়ে গেছে আমাকে। যেখানে ফুটে আছে শাহজাহান আর মমতাজের ভালোবাসার কথা, ট্রাজেডির কথা যা কিনা পরবর্তী প্রজন্মেই নড়বড়ে করে দেয় রাজপরিবারের ভিত। দক্ষিণে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে শাহজাহান আর মমতাজের সর্বশেষ ভ্রমণ পথটাকেই বেছে নিয়েছিলাম। যে পথ ধরে তারা একসাথে গিয়েছিলেন তাপ্তি নদীর ধারে বোরহানপুরের অভিশপ্ত সেই প্রাসাদে। এখানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব জরিপ অফিসের কর্মচারি আমাকে দেখিয়েছে যে কক্ষে মমতাজ মারা গেছেন বলে সকলের বিশ্বাস, সেই কক্ষ। নদীর ওপাড়ে, চারপাশে ক্ষেত, জায়নাবাদ উদ্যান খুঁজে পেয়েছি আমি। জায়গাটা মোগলদের পুরোন শিকার স্থান এখানে এখনো টিকে আছে বারদারি মঞ্চ যার নিচে মমতাজের মৃতদেহ অস্থায়ী ভাবে সমাধিস্থ করা হয়েছিল।

আগ্রা দুর্গ, যেখানে সম্রাজ্ঞি হিসেবে নিজের জীবনের খানিকটা সময় কাটিয়ে গেছেন মমতাজ, এখনো বহন করছে। রাজপরিবারের জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের চিহ্ন, মার্বেলের স্নানঘর হাম্মাম, যেখানে বয়ে চলেছে গোলাপের পানি আর তৈজসপত্র, বহু স্তম্ভঅলা ব্যক্তিগত দর্শনার্থীদের কামড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়েছে শাহজাহানের কথা, রত্নপাথরে সজ্জিত, ন্যায়বিচারের বর্ষণ করছেন প্রজাদের উপর অন্যদিকে একইভাবে জ্বলজ্বলে মমতাজ তাকিয়ে আছেন পেছনের খোদাই করা পর্দার ফাঁক দিয়ে। দুর্গের মার্বেলের বারান্দাগুলোতে যমুনা নদী দেখার জন্য নির্মাণ করেছিলেন শাহজাহান, ভাগ্যক্রমে যেটি তাঁরই কারাকক্ষে পরিণত হয়। সাদা মার্বেলের উপর খোদাই করা ফুলগুলোর রং এখনও ঠিক সেরকমই পরিষ্কার আর উজ্জ্বল রয়েছে যেমনটা পাথরের উপরে পাতা আর পাপড়িগুলো তৈরি করেছিলেন কারিগররা। তাই মার্বেলের মেঝে আর পিলারগুলো স্পর্শ করলেই অন্য রকম একটা অনুভূতির স্বাদ পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে মনোহর হচ্ছে ব্রোঞ্জের চাদোয়া সমেত অষ্টভুজ টাওয়ার, এখানে মেঝের ঠিক মাঝখানে আছে মার্বেলের খোদাই করা একটি সাঁকো স্তম্ভ আর দেয়ালের মাঝে আছে আইরিস সহ অন্যান্য অসম্ভব দৃষ্টিনন্দন উজ্জ্বল সব লতানো ফুলের সমারোহ।

কল্পনার চোখে ভেসে উঠেছে কারাবাসের সময় টাওয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা শাহজাহানের চিত্র, তাকিয়ে আছেন তাজমহলের দিকে, বাতাসে ভেসে চলে যাচ্ছেন যমুনার বাঁকে আর শেকসপিয়ারের ট্রয়লাসের মত মৃত মমতাজের কথা ভেবে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছে তাঁর আত্মা।

ঘুরে বেরিয়েছি শাহজাহানের মাহতাব বাগে, তাঁর চন্দ্ৰআলোর উদ্যান, যেখানে বসে তাজমহলের বিমর্ষ রূপ উপভোগ করতেন তিনি। আর অবশ্যই ফিরে গেছি তাজ-এর কাছে। অনেকবারই দেখা হলেও সবসময় অত্যাশ্চর্য মনে হয়েছে। হোক সেটা সূর্যোদয়ের সময় যখন সকালের কুয়াশাতে মনে হয় পুরোপুরি অপার্থিব; অথবা সূর্যাস্তের সময় যখন গম্বুজের চারপাশে জড়িয়ে থাকে বেগুনি ছায়া; অথবা চাঁদের রুপালি আলো, সবসময়েই অসাধারণ তাজ। মতভেদ আছে কেন এটি এত নিপুণ। শিল্পের ছোঁয়া, সমাধি, সবকিছুই নিজ নিজ কাজ করেছে তারপরেও এর জাদুর মূল মন্ত্র হলো ভালোবাসা আর হারানোর নিদর্শন স্তম্ভ এই তাজমহল।

.

পাদটীকা

অধ্যায় ০১

১৬২৬ সালের শুরুতে জানুয়ারিতে সিংহাসনে আসীন হন শাহজাহান আর নিজ রাজত্বকালে বহুবারই গুপ্তঘাতকদের প্রচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছিলেন। জন্মগ্রহণ করেছেন ১৫৯২ সালের জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখে। পত্নী মমতাজ ছিলেন এক বছরের ছোট। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৬১২ সালে।

উত্তপ্ত কয়লা গলাধরণ করে মৃত্যুবরণ করেন খসরুর স্ত্রী জানী।

শাহজাহানের দরবার কবিগণ মমতাজের বহু প্রশস্তি গীতি রচনা করে গেছেন। এ গ্রন্থে উল্লিখিত কবিতা সহ, যেটি নেয়া হয়েছে কলিম এর বাদশানামা থেকে।

দাক্ষিণাত্য সংকট, যার কারণে দক্ষিণে ছুটে যান শাহজাহান, শুরু হয়েছিল ১৬২৯ এর শেষ দিকে।

অধ্যায় ০২

ভারতের পুরাতত্ত্ব জরিপ অধিদপ্তর বর্তমানে কাজ করছে বোরহানপুর ধাসাদ দুর্গটি সংরক্ষণের কাজে।

অধ্যায় ০৩

বোরহানপুরের চারপাশের দুর্ভিক্ষ ছিল অত্যন্ত মারাত্মক। শাহজাহানের ইতিহাসবিদ লিখে গেছেন গত বছর ধরে কোন বৃষ্টিপাত হয়নি… আর ধরার অবস্থা দাঁড়িয়েছে বিশেষভাবে প্রকট…ছাগলের মাংসের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে কুকুরের মাংস আর মৃতদেহের (মানুষের) হাড়ের গুঁড়ো মেশানো হচ্ছে ময়দাতে আর বিক্রি হচ্ছে (রুটি তৈরির জন্য)… হতাশার মাত্রা এত বেড়ে গেছে যে মানুষ একে অন্যকে গোগ্রাসে গিলছে, প্রিয়তমাকে এনে দিচ্ছে পুত্রের মাংস। প্রজাদের সাহায্যের নিমিত্তে কর মওকুফ করে দিয়েছিলেন শাহজাহান। এছাড়া বোরহানপুর আর অন্যান্য শহরে নোঙ্গরখানা খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেখানে রুটি আর ঝোল বিলিয়ে দেয়া হত ক্ষুধার্তের মাঝে, আরো নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতি সোমবার দুঃস্থদের মাঝে ৫০০০ রুটি বিতরণের জন্য।

অধ্যায় ০৪

 রোবহানপুর দুর্গের প্রাসাদের মার্বেল হাম্মামের ছাদে এখন নাজুক সব দেয়ালচিত্র ফুটে আছে। এখানে উষ্ণ সুগন্ধি পানিতে স্নান করতেন মমতাজ। সন্তান গর্ভ ধারণকালের খানিকটা সময় মমতাজ দারা শুকোহ্ ও নাদিরার বিয়ের পরিকল্পনা করে কাটিয়েছেন, শাহজাহানের সভাই পারভেজের কন্যা ছিল নাদিরা। বুদ্ধিদীপ্ত এই সম্পর্কের মাধ্যমে রাজপরিবারের ক্ষত নিরাময়েরও আশা হয়ত করেছিলেন মমতাজ। যাই হোক না কেন এর কারণ তাঁর স্বামী ও পুত্র এতে একমত হয়েছিলেন আর শাহজাহান জমকালো উৎসবের নির্দেশ দিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বার্তাবাহক পাঠিয়ে দেন আগ্রাতে।

১৬৩১ সালের ৭ জুন মৃত্যুবরণ করেন মমতাজ। গওহর আরা ছিল তার চতুর্দশ সন্তান যাদের মাঝে মাত্র সাতজন এ উপন্যাসে বর্ণিত চরিত্র, বেঁচে ছিলেন পুর্নবয়স পর্যন্ত।

কয়েকজন পুরাতাত্ত্বিক বিশ্বাস করেন যে তারা খুঁজে পেয়েছে সেই কক্ষ, যেখান থেকে তাপ্তি নদী দেখা যায়। এ কক্ষে মৃত্যুবরণ করেছেন মমতাজ।

অধ্যায় ০৫

মমতাজের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু যে শাহজাহানের শারীরিক এবং আবেগিক জগতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল তা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন জীবনীকারেরা।

শাহজাহানের হতাশা তুলে ধরে ফুটিয়ে তুলেছেন যে মানব জীবনের সুখময় মুহূর্ত কতটা ক্ষণস্থায়ী এমনকি একজন সম্রাটের জন্যও : হায়! এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া বড়ই অস্থির। আর এর আয়েশি গোলাপি মুহূর্তগুলোও কাঁটায় পরিপূর্ণ। পৃথিবীর আস্তাকুঁড়ে, মর্মবেদনার ধুলাবিহীন বহে না কোন বাতাস; আর দুনিয়াতে মানুষের ভিড়ে আনন্দ নিয়ে কেউ কোন আসন গ্রহণ করতে পারে না দুঃখ ভরা মনে এটি শূন্য করা ব্যতীত। কতটা গভীরভাবে শোকাকুল হয়ে গিয়েছিলেন সকলে তা লিখে গেছেন জীবনীকারেরা, তুলনা করেছেন তাঁর রাতের আঁধার কাটিয়ে দেয়ার মত রত্ন আর বহুমূল্য পোশাকের সাথে প্রভাতের মত সাদা পোশাক এর–শাহজাহানের সময়কার সবচেয়ে নন্দিত কবি লিখে গেছেন : হিন্দতে তাঁর পোশাক শুভ্র করে তুলেছে চোখের জলে, শুভ্র হচ্ছে শোকের রং।

একইভাবে, একটা মাত্র রাতেই শাহজাহানের কেশ শুভ্র হয়ে যাবার কথাও লিখে গেছেন তারা। এমনকি তিনি নাকি পরিত্যাগের জন্য মনস্থির করে ফেলেছিলেন। সে সময়টা এমন এক সময় ছিল যখন বিবাহকে বর্তমানের মত কোন বন্ধন মানা হত না। কিন্তু তখনো শাহজাহান, যিনি কিনা প্রত্যহ নিজের দরবার পঞ্জীকে মুসাবিদা ও অনুমোদন দান করতেন, নিম্নের অনুভূতিকে মঞ্জুর করে গেছেন :

তাহাদের দুজনার মধ্যকার বন্ধুত্ব ও ঐকতান এমন এক উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল যা কখনো কোন শাসক শ্রেণির স্বামী-স্ত্রী অথবা সাধারণ জনগণের মাঝে দেখা যায়নি। আর এটি শুধুমাত্র রক্ত-মাংসের শরীর সম্পর্কিত কোন আকাঙ্ক্ষা ছিল না, ছিল অত্যন্ত বিশুদ্ধ ও আনন্দময় অভ্যাস, যার ভেতর এবং বাহির পুরোটাই পরিপূর্ণ ছিল শুভ আর যা কিছু ভালো তা দ্বারা। মহান এই ভালোবাসা, স্নেহ, সৌহার্দ্র প্রাচুর্য আর পরিপূরকতার কারণ ছিল উভয়ের মধ্যকার শারীরিক আর আত্মিক মেলবন্ধন।

শাহজাহানের শোকাতুর হৃদয়ের বিলাপ সম্পর্কে লেখা হয়েছে :

যদিও অতুলনীয় দাতা আমাদেরকে এতটা দিয়ে ভরে দিয়েছেন : তারপরেও যে ব্যক্তির সাথে এসব সহভাগিতা করতে চাই সে-ই চলে গেল।

মমতাজের মৃতদেহ আগ্রায় ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দারা ও জাহানারাকে দিয়েছিলেন শাহজাহান। একজন দরবার কবি এ উপলক্ষ্যে লিখে গেছেন, বেদনার নীল ঘেঁয়ে ফেলেছিল পুরো ভূমিকে।

অধ্যায় ০৬

তাজমহলের স্থাপত্য নকশার কৃতিত্ব নিয়ে দাবি উঠেছে বহু পক্ষ থেকে। কিন্তু সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রার্থী সম্ভবত উস্তাদ আহমাদ লাহোরি। ১৯৩০ সালের দিকে একজন গবেষক আবিষ্কার করেছেন অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে লাহোরি পুত্রের লেখা একটি কবিতার পাণ্ডুলিপি। সেখানে লাহোরিকে দিল্লির লাল দুর্গ ও তাজমহলের স্থাপত্যবিদ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। ঘটনা যাই থাক না কেন, শাহজাহানের জীবনী রচয়িতাগণ উল্লেখ করে গেছেন যে ম্রাট নিজে নকশার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। স্থাপত্যের ব্যাপারে অত্যন্ত উঁচু সমঝদার ছিলেন শাহজাহান যে কারণে, তাঁর তরুণ বয়সে, পিতা জাহাঙ্গীর তাকে প্রশংসা করে গেছেন। ইংরেজি শব্দ প্যারাডাইস এর সহজ অনুবাদটি নেয়া হয়েছে পুরাতন ফারসী শব্দ পারিডেজা থেকে, অর্থ দেয়াল ঘেরা উদ্যান। উদ্যান আর অন্তহীন কবিতার একটি সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিস্টান এবং ইসলাম উভয়ের মাঝে, যেহেতু ওল্ড টেস্টামেন্ট আর মধ্যপ্রাচ্যেই উভয়ের শিকড় প্রোথিত। দ্য বুক অব জোনোসিস-এ লেখা আছে : ..উদ্যানে পানি দেয়ার জন্য এডেন থেকে প্রবাহিত হয়েছে একটি নদী আর সেখান থেকেই বিভক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে চারটি মাথার।

 তাজমহলের জন্য যে জায়গা নির্বাচন করেছেন শাহজাহান তা আগ্রা দুর্গ থেকে দেড় মাইল দূরে। আগ্রা দুর্গের কাছে নদীতে ডান হাতি তীব্র বাকের মুখে নিম্ন অববাহিকাতে অবস্থিত, ফলে যমুনা এখানে এসে খানিকটা দুর্বল হয়ে গেছে। আম্বারের রাজা ছিলেন এর মালিক যিনি কিনা আনন্দচিত্তে সম্রাটকে প্রদান করেন এ ভূমি। যাই হোক, ইসলাম ঐতিহ্যে মমতাজ মহলের মত নারী, যারা কিনা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তাঁরা শহীদ আর তাই তাদের সমাধিস্থান তীর্থস্থান হিসেবে পরিগণিত হবে। ঐতিহ্য আরো দাবি করে যে এক্ষেত্রে কোন ধরনের পীড়নমূলক উপাদান থাকতে পারবে না–সত্যি হোক না হোক–এহেন পবিত্র ভূমির স্থান নির্বাচনে। আর তাই শাহজাহান রাজাকে একটি নয়– চারটি পৃথক সম্পত্তি দিয়ে গেছেন এ জায়গার বিনিময়ে। এছাড়াও আম্বারের রাজা নিজ খনি মাকরানা থেকে মার্বেল সরবরাহ করেছেন শাহজাহানকে।

অধ্যায়-০৭

১৬৩২ সালের জুন মাসে আগ্রায় ফিরে আসেন শাহজাহান যেন ব্যক্তিগতভাবে তদারক করতে পারেন তাজমহল নির্মাণের কাজ। ইংরেজ পিটার মান্ডি সম্রাজ্ঞীবিহীন রাজকীয় সরবরাহের প্রত্যাবর্তন চাক্ষুষ করে লিখে গেছেন, এটি ছিল সবচেয়ে সুন্দর একটি প্রদর্শনী।

 লাহোরির মতে, ১৬৩২ সালের জানুয়ারিতে তাজমহল সাইটে কাজ শুরু হয়। তখনো শাহজাহান দাক্ষিণাত্যে ছিলেন। তাজমহলের খোদাইকৃত রত্ন সদৃশ্য নকশা বিস্মিত করে তুলেছিল সমসাময়িকদেরকে।

একজন দরবার কবি লিখে গেছেন : মার্বেলের উপর তারা এত সুন্দর করে পাথরের ফুল স্থাপন করেছেন যে সুগন্ধের দিক থেকে না হলেও রঙের দিকে থেকে সেগুলো ছাড়িয়ে গেছে আসল ফুলকে। রত্ন বিশেষজ্ঞ হিসাব কষে দেখিয়েছেন যে চল্লিশটিরও উপরে ভিন্ন জাতের রত্ন ব্যবহার করা হয়েছে। এদের মাঝে বেশির ভাগই শাহজাহান নিজে পছন্দ করে দিয়েছেন। ফরাসী গহনাকার জ্যা-ব্যাপ্টিস্ট ভারনিয়ার, সম্রাটের রত্ন জ্ঞান দেখে অভিভূত হয়ে গেছেন। লিখে গেছেন যে, মহান মোগল রাজ্যে পাথর সম্পর্কে এতটা অসাধারণ জ্ঞান আর কারো ছিল না। তাজমহলের নির্মাণ কাজ করা কারিগরেরা পাথরের উপর নিজেদের চিহ্ন খোদাই করে রেখে গেছেন। ভারত পুরাতত্ত্ব জরিপ অধিদপ্তর আড়াইশোর বেশি চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন তারা, চতুর্ভুজ, তীর আর এমনকি পদ্মফুল। শাহজাহানের তাজমহল নির্মাণ সম্পর্কিত ও পৃথিবীর মাঝে তিনি যে স্বর্গ সৃষ্টি করতে চেয়েছেন সেটির পুরো ঐতিহাসিক ঘটনা সমূহ আর তার রাজত্বকাল সম্পর্কে জানতে পড়ুন অ্যা টিয়ারড্রপ অন দ্য চিক্ অব টাইম নামে ডায়ানা অ্যান্ড মাইকেল প্রিস্টনের নন-ফিকশন গ্রন্থটি।

দারা শুকোহর বিবাহের আংশিক বর্ণনা নেয়া হয়েছে লাহোরির বাদশানামা থেকে–শুকোহর এটি শাহজাহানের রাজত্বকালের প্রথম দশকে আঁকা চুয়াল্লিশটি চিত্রকর্মের একটি, যেগুলো সংরক্ষিত আছে। রয়্যাল লাইব্রেরি অব উইন্ডসর ক্যাসেলে।

….হাতির যুদ্ধ যেখানে নিজের শীতল সাহস তুলে ধরেছিল আওরঙ্গজেব তা একটি সত্যি ঘটনা।

অধ্যায়০৮

চিত্রকরদের মাঝে একমাত্র আমানত খানকে নিজের নাম তাজ-এর উপর স্বাক্ষর করার অনুমতি দিয়েছিলেন শাহজাহান। দুইটি স্থানে পরিস্ফুট হয়ে আছে এ স্বাক্ষর সমাধিস্থানের অন্তর্ভাগে দক্ষিণ খিলানের উপর আর এই খিলানের নিচের দিকে।

 মোগল দরবারে আসা ইউরোপীয় দর্শনার্থীরা শাহজাহানের উন্মাদ যৌন আনন্দের কথা লিখে গেছেন, নিজের আবেগিক ক্ষতি মেটানোর জন্য শারীরিক আনন্দে মেতে উঠেছিলেন তিনি। ভেনেশীয় মানুচ্চি বর্ণনা করে গেছেন, মীনা বাজারে শাহজাহানের সুযোগ সৃষ্টির কথা : সেই আট দিনে প্রতিদিন দুবার করে স্টল পরিদর্শন করতেন সম্রাট বসতেন বহু তাতার রমণী বহনকৃত ছোট একটি সিংহাসনে, চারপাশে ঘিরে থাকত অসংখ্য তত্ত্ববধায়িকা, স্বর্ণের এনামেল করা লাঠি হাতে নিয়ে হাঁটত তারা। আরো থাকত অসংখ্য নপুংসক, দর-কষাকষির কাজ করত; এছাড়া নারী সংগীতজ্ঞের দলও থাকত। দৃঢ় মনোযোগে পার হয়ে যেতেন শাহজাহান তাকিয়ে দেখতেন কোন বিক্রেতা তাঁর মনহরণ করে নিয়েছে কিনা। তাহলে সে দোকানে গিয়ে, ভাবে কথা বলে কিছু জিনিস নির্বাচন করে দিতেন। পাশাপাশি এও আদেশ দিতেন যেন যত মূল্য দাবি করবে তত মূল্যই যেন পরিশোধ করা হয়।

 এরপর সম্রাট সম্মতিসূচক ইশারা দিয়ে চলে গেলে তত্ত্বাবধায়িকা, এই কাজে খুবই পটু, খেয়াল রাখত যেন নারীকে তারা পেয়ে যায়। আর সময় মত সেই নারীকে হাজির করা হত সম্রাটের কাছে।

অধ্যায়-০৯

শাহজাহান প্রকৃতই আওরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যে নিজের রাজকীয় প্রতিনিধি আর শাহ সুজাকে বাংলাতে আর ওড়িষ্যাতে সুবেদার নিযুক্ত করেছিলেন।

১৬৪৪ সালের চৌঠা এপ্রিল এক ঘটনায় মারাত্মকভাবে পুড়ে যায় জাহানরা। এ সম্পর্কে ইনায়েত খান লিখে গেছেন :

শাহজাদীর বুকের পোশাকের কিনার কক্ষের মাঝখানে জ্বলতে থাকা বাতির উপর দিয়ে চলে যায়। প্রাসাদের নারীরা যে পোশাক পড়ত তা তৈরি হত খুবই নাজুক কাপড় দিয়ে আর সুগন্ধি তেল মাখানো হত, তাই আগুন ধরার সাথে সাথে জ্বলন্ত শিখায় পরিণত হয় পুরো পোশাক। কাছাকাছি থাকা চারজন সেবাদাসী তৎক্ষণাৎ আগুন নিভানোর চেষ্টা করলে তাদের পোশাকেও ছড়িয়ে পড়ে আগুন। ফলে তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যাওয়ায়, সতর্কঘণ্টা বাজার পূর্বেই, পানি ঢালার আগে, পিঠ, হাত আর শরীরের উভয় পাশ মারাত্মকভাবে পুড়ে যায় এই অসাধারণ সুন্দরী নারীর। এটা আমার নিজস্ব ধারণা যে মদ আর আফিমের ঘোরে জাহানারাকে মমতাজ বলে ভুল করেছিলেন শাহজাহান। মোগল দরবারে আসা কয়েকজন বিদেশি শাহজাহান আর জাহানারার মধ্যে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের রটনা শুনেছেন বলে দাবি করেছেন। পিটার মান্ডি লিখে গেছেন :

মহান মোগলদের কন্যরা কখনো বিবাহ করতে পারত না…বাকিদের মাঝে শাহজাহান, চিমিনি বেগম (জাহানারা), অসম্ভব সুন্দরী বলে দাবি করেছেন অনেকেই, তার সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন (আগ্রাতে জনসমক্ষে সকলেই এই রটনা নিয়ে আলোচনা করত) কয়েক বারই দুজনকে একত্রে দেখা গেছে। যাই নিকোলাসও মানুচ্চি, যিনি কিনা রাজপরিবারের বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই রটনার গল্পকে বাজে কথা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন, বলেছেন যে জাহানারা অসম্ভব মমতা আর পরিশ্রম দিয়ে, পিতার দেখভাল করত, তাই–এ কারণেই সাধারণ মানুষ পিতার সাথে তার শারীরিক সম্পর্ককে ইশারা করে গালগল্প তৈরি করে। অন্যদিকে এ ব্যাপারে দাপ্তরিক উৎস সমূহ পুরোপুরি নিশুপ ছিল।

অধ্যায়১০

প্রকৃতই একজন ফরাসী ডাক্তার লিখে গেছেন যে হাতের মাঝে রত্ন পাথরের দড়ি পেঁচিয়ে থাকায় রোগীর নাড়ি খুঁজে পাওয়া পুরোপুরি অসম্ভব ছিল।

অধ্যায়-১১

 এক লাখ হচ্ছে একশত হাজার। সমসাময়িক অনেকেই তাজমহল নির্মাণে বিশাল ব্যয়ভার নিয়ে মন্তব্য করে গেছেন। অন্যদিকে শাহজাহানের মাহতাব বাগের কথা সকলেই ভুলে ছিল। পলির স্তরের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল এর সাঁকো আর মঞ্চগুলো। ১৯৯০ সালের দিকে পুরাতাত্ত্বিক গণ প্রমাণ উন্মোচন করেন যে এ উদ্যান তাজমহল ভবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেই নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমান সময়ে বাগানগুলোকে পুনরায় সৃষ্টি করা হয়েছে। সংরক্ষণবাদীরা ১০,০০০ গাছ আর গুল্ম ঝাড় রোপন করে, এর মাঝে কড়া সুগন্ধঅলা সাদা চম্পা ফুলও রয়েছে– ম্যাগনোলিয়া জাতের সদস্য যেটি কিনা রাতে ফোটে ফুলের বেডগুলোতে আবারো শোভা বর্ধন করছে অত্যন্ত রঙিন গাঁদা, পানশি, নাস্টারটিয়াম প্রভৃতি ফুলের দ্বারা।

দারার নতুন প্রাসাদের ভূগর্ভস্থ কক্ষে যেতে আওরঙ্গজেবের অস্বীকৃতির সংবাদ দিয়েছে একজন সভাসদ। বিভিন্ন উৎসগুলোও এ ব্যাপারে একমত যে জাহানারার আগুন লাগার ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন বাক বিতণ্ডার মাধ্যমে পিতার অনুগ্রহ লাভ থেকে বঞ্চিত হতে থাকে আওরঙ্গজেব, পিতা-পুত্রের সম্পর্কেও চিড় ধরে। তির্যকভাবে লাহোরি লিখে গেছেন যে আওরঙ্গজেব অসৎসঙ্গ ও সংকীর্ণমনা সঙ্গীদের খপ্পরে পড়েছিল। এর কয়েক বছর পরে আওঙ্গজেব জাহানারার কাছে এক পত্রে এ সম্পর্কে আরো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশা তুলে ধরে। যেখানে আওরঙ্গজেব লিখেছিল যে, আমি জানতাম যে আমার জীবনকে লক্ষ্য করা হয়েছে (শত্রদের উদ্দেশ্যে); পরিষ্কার বোঝা যায় যে তার বিরুদ্ধে যে ব্যক্তিকে সন্দেহ করেছিল যে ছিল দারা, পিতার প্রিয়তম আর আওঙ্গজেবের চোখে ধর্মদ্রোহী। বিভিন্ন ঘটনাতেও এর স্বপক্ষে মত পাওয়া গেছে যে জাহানারা শাহজাহানের কাছে আওরঙ্গজেবের হয়ে মধ্যস্থতা করেছিল।

অধ্যায়-১২

শাহজাহান আওরঙ্গজেবকে গুজরাটে পাঠিয়ে মধ্য এশিয়ার দায়িত্বভার দিয়েছিলেন কনিষ্ঠ ও অনভিজ্ঞ মুরাদের উপর।

অধ্যায় ১৩

সমরকন্দের দিকে অগ্রসর হতে ও এটি দখল করতে মুরাদ ব্যর্থ হলে পর শাহজাহান আওরঙ্গজেবকে দায়িত্ব দেন। আওরঙ্গজেবও পরাজিত হয়। যেটিকে শাহজাহানের শাসনামলের প্রথম বাধা হিসেবে গণ্য করা হয়।

অধ্যায়-১৪

 জাহাঙ্গীরের আমলে পারস্যবাসী কান্দাহার দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ১৬৩৮ সালে শাহজাহান পুনরায় এটি দখল করে নেন। ১৬৪৯ এর ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয় শাহ আব্বাসের সেনাবাহিনী আবার এ শহরকে অধিকার করে নিলে পর শাহজাহানের পদক্ষেপ সমূহ বিফলে যায়–এর একটির নেতৃত্বে ছিল দারা শুকোহ্। মোগলরা আর কখনোই কান্দাহারের উপর কর্তৃত্ব আরোপ করতে পারেনি।

অধ্যায়-১৫

একটি যুদ্ধের চূড়ান্ত সময়ে বস্তুত সত্যিকার অর্থেই দেখা গিয়েছিল যে আওঙ্গজেব মাদুর বিছিয়ে হাঁটু গেড়ে নামাজ পড়া শুরু করেছিলেন। বিদেশী পর্যটক যেমন ফ্রানকোয়েজ বার্নিয়ার শাহজাহান প্রেমিকদের সম্পর্কে রটনা লিপিবদ্ধ করে গেছেন; যাদের উপর ভয়ংকরভাবে প্রতিশোধ নিতেন শাহজাহান উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একজনকে কড়াইতে জীবন্ত সিদ্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন ম্রাট। যাই হোক, বিবাহ করার সুযোগ না পাওয়াতে প্রেমিক নির্বাচন করেছিল জাহানারা এহেন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অধ্যায়-১৬

ইনায়েত খান লিপিবদ্ধ করে গেছেন যে ১৬৫৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন শাহজাহান; কনিষ্ঠ তিন পুত্র, নিজেদের বহুদূরের প্রদেশ সমূহে থেকেই সিংহাসন দখল করার ষড়যন্ত্র শুরু করেন। কেউই শাহজাহানের সুস্থতার কোন প্রমাণ ছড়ানোর অনুমতি দেয়নি। মানুচ্চি দারার সমর্থক-পরবর্তীতে দাবি করেছেন যে আওরঙ্গজেব নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন শাহজাহান জীবিত আছেন এরকম কোন সংবাদ দাক্ষিণাত্যে না পৌঁছাতে পারে। পত্র পুড়িয়ে ফেলার পাশাপাশি তাদের বাহকেরও তৎক্ষণাৎ মুণ্ডু কর্তনের নির্দেশ দিয়েছিলেন আওরঙ্গজেব।

অধ্যায়-১৭

মুরাদ প্রকৃতই সেনাবাহিনীকে আদেশ দিয়েছিলেন মিরাট লুটপাট করার জন্য। যেন সিংহাসনের জেতার লড়াইয়ে অংশ নেবার জন্য বিশাল সেনাবাহিনী ক্রয় করে সাহায্য পেতে পারেন। নিজের অর্থমন্ত্রী আলী নাকীকে খুন করেছিলেন মুরাদ–যা কিনা পরবর্তীতে তার পতনের জন্য দায়ী হয়। দারার পুত্র সুলাইমান আর আম্বারের রাজপুত্র সেনাপতি জয় সিং, বেনারসের কাছে বাহাদুর নামক জায়গায় শাহ সুজাকে পরাজিত করে ১৬৫৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এরপর গঙ্গা ধরে পালিয়ে যায় শাহ সুজা। পিছু ধাওয়া করতে নিজেকে দমন করতে পারেননি সুলাইমান। আওরঙ্গজেব আর মুরাদ মারওয়ানের মহারাজা যশয়ন্ত সিংয়ের নেতৃত্বে রাজকীয় মোগল সেনাবাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় ধর্মতে ১৬৫৮ সালের পনেরই এপ্রিল।

অধ্যায়-১৮

 দারা চেষ্টা করেছিল চম্বল নদী পার হয়ে আওরঙ্গজেব আর মুরাদের সেনাবাহিনীকে বাধা দেয়ার জন্য। কিন্তু একটি অখ্যাত আর অরক্ষিত দুর্গ নদী হেঁটে পার হয়ে দ্রুত পৌঁছে যায় যৌথবাহিনী।

অধ্যায়-১৯

সামুগড় যুদ্ধ, আগ্রার পূর্বে অনুষ্ঠিত হয় ১৬৫৮ সালের উনত্রিশে মে তারিখে। সত্যিকারভাবেই যুদ্ধ যখন তার পক্ষে যাচ্ছিল এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে হাতি থেকে নেমে আসে দারা। মানুচ্চি, যিনি কিনা দারার সেনাবাহিনীতে লড়ছিলেন। লিখে গেছেন যে : মনে হয়েছিল যেন বিজয়কে ঠেলে ফেলে দিল দারা। খলিলউল্লাহ খানের বিশ্বাসঘাতকতার গল্পও সত্যি।

অধ্যায়-২০

 দুঃখে উন্মত্ত ও উদ্বিগ্ন শাহজাহান রাজকীয় কোষাগার দারার সামনে উন্মুক্ত করে দেয়ার আদেশ পাঠিয়েছিলেন দিল্লির সুবাদারের কাছে। বস্তুত একেবারে সময় মতই আগ্রা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল দারা। পরের দিন আগ্রা থেকে ঘোড়া ছুটিয়ে দারার উদ্দেশে রওনা দেয়া মানুচ্চি দেখতে পায় আওরঙ্গজেবের সৈন্যরা আটকে দিয়েছিল রাস্তা। তারা মানুচ্চিকে জানায় যে ইতিমধ্যেই সরকার বদলে গেছে আর আওরঙ্গজেব বিজয়ী হয়েছে।

মালিক জিউয়ান নিজের জীবনের জন্য দারার কাছে ঋণী থাকলেও বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে আওরঙ্গজেবের হাতে তুলে দেয়।

দারার স্ত্রী নাদিরা যেভাবে একজন রাজাকে নিজের স্তন ধোয়া পানি পান করার জন্য প্রস্তাব করে তা পুরোপুরি সত্যি; যদিও ব্যক্তি হিসেবে মালিক জিউয়ান ছিল না, দারা ও তার পলায়ন পর্বের শুরুতে অন্য কোন রাজার সাথে এ ঘটনা ঘটে। ডায়রিয়া ও অতিরিক্ত ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণ করে নাদিরা।

বন্দি করার পর আওরঙ্গজেব সিপির আর দারাকে নোংরা একটি হাতির উপর চট বিছিয়ে ঘুরিয়ে আনে দিল্লির রাস্তায় রাস্তায়। এই অমর্যাদাকর শোভাযাত্রা অবলোকন করেছেন ফরাসী বার্নিয়ার।

বাস্তব জীবনে, ১৬৫৯ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে জনসমক্ষে নয়, নিজের কারাকক্ষে দারার মস্তক ছিন্ন করা হয়। দিল্লিতে হুমায়ুনের সমাধির চারপাশে অবস্থিত মঞ্চে সমাধিস্থ করা হয় দারাকে।

অধ্যায়-২

এ ব্যাপারে পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, প্রথমদিকে আওরঙ্গজেবের সাথে হাত মিলিয়েছিল রোশনারা। দরবারে যা ঘটছে তার প্রধান উৎস দাতা হিসেবে আওরঙ্গজেবের পক্ষে কাজ করত রোশনারা, বিশেষ করে শাহজাহানের অসুস্থতার সময়টুকুতে। আওরঙ্গজেব সত্যিকারভাবেই আগ্রা দুর্গের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কেটে দিয়েছিল।

 মানুচ্চি স্মৃতিচারণ করে জানিয়েছেন যে প্রতিশোধপরায়ণ আওরঙ্গজেব দারার ছিন্ন মস্তক পাঠিয়েছিলেন শাহজাহানের কাছে।

অধ্যায়২২

সত্যিকারভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে মুরাদকে বন্দি করেছিল আওরঙ্গজেব। এরপর কম্পাসের চারদিকে চারটে হাতি পাঠিয়ে দিয়েছিল যেন মুরাদের বাহিনী তার পিছু নিতে না পারে। পরবর্তীতে নিজের অর্থমন্ত্রী আলী নকীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয় মুরাদকে।

 ১৬৫৮ সালের একুশে জুলাই সাধারণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথমবারের মত নিজেকে স্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন আওরঙ্গজেব। এর প্রায় এক বছর পর ১৬৫৯ সালের পাঁচই জুন তাঁর জ্যোতিবিদদের ভাষ্য অনুযায়ী অত্যন্ত শুভদিন–দ্বিতীয় ও অত্যন্ত আঁকমজকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অধ্যায়-২৩

আওরঙ্গজেবকে দেয়ার পরিবর্তে নিজের মুক্তা মাটিতে মিশিয়ে দেয়া শাহজাহানের গল্পটি পুরোপুরি সত্য।

এটা আমার কল্পনা যে শাহজাহান সুলাইমানের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। যাই হোক না কেন তিনি সফল হননি। আওঙ্গজেবের নির্দেশে সুলাইমানকে প্রথমে পোস্ত খাইয়ে জ্যোম্বি বানিয়ে ফেলা হয়, ধীরে ধীরে যা তাকে হত্যা করে ফেলে। বহু বছর ধরে কারাগারে রাখার পর নিজের এক কন্যার সাথে দারার অন্য পুত্র সিপিরের বিবাহ দেয় আওরঙ্গজেব।

 আরাকানের জলদস্যু রাজার ভূমিতে শেষ শোনা গিয়েছিল শাহ সুজার নাম, বাংলা পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এ অঞ্চলেই সে নিঃশেষ হয়ে গেছে বলে বেশির ভাগেরই বিশ্বাস।

অধ্যায়-২৪

কারাগারের পুরো সময়টুকুতে পিতার সঙ্গী ছিলেন জাহানারা। এ সময় আওরঙ্গজেবের সাথে কখনোই দেখা হয়নি শাহজাহানের। যদিও শাহজাহানের কারাভোগের প্রথম বছরে পিতা-পুত্র পত্র বিনিময় করেছিলেন। শাহজাহানের পক্ষ থেকে পুরোটাই ছিল ভর্ৎসনা আর আওরঙ্গজেবের পক্ষ থেকে আসে ধর্মীয় আর আত্মপক্ষ সমর্থন সুলভ উত্তর। এক চিঠিতে আওরঙ্গজেব লিখেছিলেন যে, আমি বুঝতে পেরেছি যে জাহাপনা ভালোবাসেন, তবে আমাকে নয়–এ থেকেই বহু দিন ধরে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবার যে অনুভূতি তার সূত্র পাওয়া যায়।

ফরাসী জ্যা ব্যাপটিস্ট ভারনিয়ারের এর লেখনীই একমাত্র প্রমাণ যে শাহজাহান নিজের সমাধি হিসেবে কালো মার্বেলের তাজমহল নির্মাণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। তাভারনিয়ার লিখে গেছেন যে, শাহজাহান নদীর অপর তীরে নিজের সমাধি নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন; কিন্তু পুত্রদের সাথে যুদ্ধ এ পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। পূর্বে সাদা মার্বেলের সাথে সংগতি রেখে কালো মার্বেলের ইমারতের কথা বলেছিলেন শাহজাহান। যদি তিনি নিজের তাজমহল নির্মাণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে থাকেন, তাহলে নিশ্চিত যে এক্ষেত্রে স্থান হিসেবে বেছে নিতেন মাহতাব বাগ অথবা চন্দ্র আলোর উদ্যান। পুরাতত্ত্ববিদগণ মাহতাব বাগে এরকম কোন ইমারতের ভিত্তি খুঁজে না পেলেও এ পরিকল্পনা যে শাহজাহানের সাথে খাপ খায় না–তা নয়। কেননা শিল্পের বিশাল সমঝদার ছিলেন তিনি। এছাড়া সাদা মার্বেলের সাথে কালোর বৈপরীত্য ভালোবাসতেন তিনি। এই উদাহরণের সত্যতা নির্ণীত হয়েছে যখন তিনি ১৬৩০ সালে মমতাজ মহলের মৃত্যুর ঠিক পূর্বে কাশ্মিরের শ্রীনগরের শালিমার বাগানে নির্মাণ করেন কালো মার্বেলের মঞ্চ, তাজমহলের মাঝেও কালো মার্বেল অসংখ্যবার ব্যবহার করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, চারটি মিনারের প্রতিটি সাদা মার্বেলের ব্লক একে অন্যের সাথে কালো মার্বেল খোদাই করে জোড়া লাগান হয়েছে, সমাধি সৌধের স্তম্ভমূলের চারপাশের নিচু দেয়ালে খোদাই করা আছে একই উপাদান আর সমাধি স্তম্ভের কাঠামো আর ক্যালিগ্রাফী উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছে কালো মার্বেল পানির ওপারে কালো তাজ আর বিশেষ কোন অবস্থানন্তর প্রাপ্তি ঘটাতো? যাই হোক, সত্যিটা হয়ত আর কখনোই জানা হবে না আমাদের। যেটা পরিষ্কার তা হল তাজমহলে সমাধিস্থ হবার কোন ইচ্ছে ছিল না তার, শুধুমাত্র মমতাজের জন্য এটির নকশা করেছিলেন তিনি। ভবনের একেবারে মাঝখানে আছে মমতাজের জমকালো পাথরের শবাধার। শাহজাহানের সমাধি পড়ে গেছে একপাশে, পুরো নকশাতে একমাত্র বিসদৃশ উপাদান। মমতাজের সমাধির চারপাশের কালো-সাদা টাইলের বর্ডারের মাঝে অনুপ্রবেশ করেছে এটি, আবাররা, সবিস্তারে বর্ণনা পেতে দেখুন অ্যা টিয়ারড্রপ অন দ্য চিক্ অব টাইম। ১৬৬৬ সালের ২২ শে জানুয়ারির প্রথম প্রহরে মৃত্যুবরণ করেন শাহজাহান। স্থান, আগ্রা দুর্গ। বিশাল রাজকীয় কোন শেষকৃত্যের অনুমোদন দান করেননি আওরঙ্গজেব। আদেশ দিয়েছিলেন যেন নীরবে তাজমহলের মাটির নিচের সমাধি স্থানে মমতাজের পাশে সমাধিস্থ করা হয় তার পিতাকে।

.

প্রধান চরিত্রসমূহঃ

শাহজাহানের পরিবার

মমতাজ মহল (প্রাক্তন আরজুমান্দ বানু), শাহজাহানের পত্নী।

 জাহানারা, শাহজাহান এবং মমতাজের জ্যৈষ্ঠ জীবিত কন্যা দারা

শুকোহ, শাহজাহান আর মমতাজের জ্যৈষ্ঠ জীবিত পুত্র

শাহ সুজা, শাহজাহান ও মমতাজের জীবিত দ্বিতীয় পুত্র

 রোশনারা, শাহজাহান ও মমতাজের দ্বিতীয় জীবিত কন্যা

আওরঙ্গজেব শাহজাহান ও মমতাজের তৃতীয় জীবিত পুত্র

 মুরাদ, শাহজাহান ও মমতাজের কনিষ্ঠ জীবিত পুত্র

 গওহর আরা, শাহজাহান ও মমতাজের কনিষ্ঠ কন্যা।

নাদিরা, দারা শুকোহর পত্নী

সুলাইমান, দারা শুকোর জ্যৈষ্ঠ পুত্র

সিপির, দারা শুকোর কনিষ্ঠ পুত্র

জাহাঙ্গীর, শাহজাহানের পিতা

আকবর, শাহজাহানের পিতামহ

 হুমায়ুন, শাহজাহানের প্রপিতামহ

 খসরু, শাহজাহানের সভাই ও জাহাঙ্গীরের জ্যৈষ্ঠ পুত্র

 পারভেজ, শাহজাহানের সত্তাই ও জাহাঙ্গীরের দ্বিতীয় পুত্র

 শাহরিয়ার শাহজাহানের সত্তাই ও জাহাঙ্গীরের কনিষ্ঠ পুত্র

 মেহরুন্নিসা (নূরজাহান আর নূরমহল নামেও পরিচিত) জাহাঙ্গীরের সর্বশেষ পত্নী ও মমতাজ মহলের ফুফু।

আসফ খান, মমতাজ মহলের পিতা ও মেহরুন্নিসার ভাই

জানি, খসরুর বিধবা পত্নী।

ইসমাইল খান, জানির ভ্রাতুস্পুত্র

রাজকীয় গৃহস্থালি আর দরবারের সদস্যবৃন্দ।

 সাত্তি আল-নিসা, মমতাজের বিশ্বস্ত ও পরবর্তীতে জাহানারার বন্ধু

আসলান বেগ, শাহজাহানের বয়স্ক পরিচারক।

 তুহিন রায়, পারস্যের শাহ আব্বাসের দরবারে মোগল কূটনীতিক

 উস্তাদ আহমাদ, তাজমহলের স্থপতি

নাসরীন, রোশনারার প্রাক্তন কর্মচারী ও জাহানারার সেবাদাসী

 আলী নকী, গুজরাটের রাজস্বমন্ত্রী

শাহজাহানের প্রধান সেনানায়ক আর কর্মকর্তাগণ

অশোক সিং, শাহজাহানের বন্ধু ও রাজপুত শাহজাদা

নিকোলাস ব্যালান্টাইন, ইংরেজ ও মোগল দরবারের প্রাক্তন ইংরেজ কূটনীতিকের আর্দালি

 কামরান ইকবাল, আগ্রা দুর্গের সেনানায়ক।

 আহমেদ আজিজ, দাক্ষিণাত্যের সেনাপতি

আবদুল আজিজ, আহমেদ আজীজ পুত্র

 জাফির আব্বাস, আহমেদ আজিজের সেকেন্ড ইন কমান্ড।

মহবত খান, শাহজাহানের রাজত্ব কালের প্রথম দিককার কমান্ডার-ইন-চিফ

 মালিক আলী, শাহজাহানের আস্তাবলের পরিচালক

 সাদিক বেগ, বালুচির জ্যৈষ্ঠ উপদেষ্টা রায় সিং, রাজপুত এবং শাহজাহানের প্রধান গুপ্তচরদের অন্যতম সুলাইমান খান, একজন কর্মকর্তা

 মাওয়ানের রাজা যশয়ন্ত সিং

 খলিলউল্লাহ খান, উজবেক উপদেষ্টা

আম্বারের রাজা জয় সিং

দিলীর খান, আফগান সেনাপতি

রাজা রাম সিং রাঠোর, একজন রাজপুত শাসক

অন্যান্যরা

 মালিক জিউয়ান, দারা শুকোহ ও তার পুত্রের বিশ্বাসঘাতক

 মাখদুমী খান, আগ্রা দুর্গের প্রশাসক ও শাহজাহানের কারারক্ষী

 ইতিবর খান, আওরঙ্গজেবের প্রধান নপুংসক, পরবর্তীতে শাহজাহানের কারারক্ষী।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *