সারমেয় সংকেত

সারমেয় সংকেত (THE HOUND)

[ উইয়ার্ড টেলস পত্রিকায় প্রকাশিত লাভক্র্যাফটের প্রথম গল্পে আবদুল আলহাজেডের নেক্রোনমিকনের প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও লাভক্র্যাফট গল্পটি সুইসাইড নোটের আকারে লিখেছেন। গল্পটি পো, অ্যামব্রোস বিয়ার্স ও কার্ল হায়েসম্যানের লেখা থেকে প্রভাবিত বলে মনে করা হয়।]

বিরামহীন সাঁইসাঁই শব্দে অস্থির হয়ে উঠেছে কান, যেন কোনও দুঃস্বপ্নের দেশে ডানা ঝাপটাচ্ছে কিছু। দূরে কোথাও একটানা ডেকে চলেছে কোনও অতিকায় হাউন্ড, মৃদু আওয়াজ আসছে তারও। পাগল হয়ে যাচ্ছি কিংবা স্বপ্ন দেখছি ভেবে নিজের মনকে হয়তো ভোলাতে পারতাম। কিন্তু একের পর এক যা ঘটে গেছে, তাতে আর ওইসব আত্মপ্রবঞ্চনা করে লাভ নেই। কীসের কবলে পড়ে সেন্ট জনের শরীরটা একটা ছেঁড়াখোঁড়া লাশ হয়ে গেল, তার রহস্য জানি কেবল আমি। আমারও ওই একই পরিণতি হওয়ার আগে গুলি করে নিজের মাথা উড়িয়ে দিতে চলেছি আমি। কারণ এই মুহূর্তে কোনও এক অশুভ এলড্রিচ জগতের অন্ধকার অন্তহীন সুড়ঙ্গপথ বেয়ে সবেগে ধেয়ে আসছে আমার মৃত্যুদূত। তারই আতঙ্কে বেছে নিয়েছি আত্মহননের পথ।

এক মূর্খ বিকারের জেরে নেমে এসেছে এই ঘোর বিপর্যয়। রোজের সাদামাটা জীবনটায় আর তৃপ্তি হচ্ছিল না আমাদের। ফিকে হয়ে আসছিল প্রেম আর অ্যাডভেঞ্চারের আকর্ষণও। অবসাদের থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইছিলাম আমি আর সেন্ট জন। তাই যেখানে যা নান্দনিক ঘরানা কিংবা শিল্পশৈলী আছে, মিলে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছিলাম তাদের রহস্য উদ্ধারে। পেরিয়েছিলাম প্রতীকীবাদীদের প্রহেলিকা আর প্রাক্‌-রাফেলীয়দের উচ্ছ্বাসের শিল্পরুচির পথ। হাজির হয়েছিলাম ব্যভিচার-বাদীদের নিরানন্দ চারুকলায়। সে শিল্পের বাইরের অংশটুকুতে মন ভরেনি আমাদের। পরিতৃপ্তির সন্ধানে ডুব দিয়েছিলাম তার নারকীয় গভীরতায়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সেখানেও মন টেকেনি আমাদের। অচিরেই ঘুচে গিয়েছিল বোদলেয়র আর হাইসমান্সের সৃষ্টির প্রতি আকর্ষণও।

অবশেষে আরও উত্তেজনা খোঁজার তাগিদে শুরু হল আর-এক প্রয়াস। সশরীরে অপ্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা ভোগের প্রচেষ্টা। আর এই অদম্য বাসনার তাড়নায় আমরা হাত লাগালাম এক জঘন্য অপকর্মে। তার কথা বলতে এই আতঙ্কের মধ্যেও আমার মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে আসছে।

সেই বীভৎস নিন্দনীয় কাজের নাম কবর লুণ্ঠন।

আমাদের ভয়ানক সব অভিযানের বিবরণ দেব না। লুট করে আনা মালপত্রের ফিরিস্তিও দেব না। তবে এটুকু জানিয়ে রাখি যে, সেসব সংগ্রহের ঠাঁই হয়েছিল আমাদের বাড়ির মিউজিয়ামে।

আমাদের সুবিশাল পাথরের বাড়িটাতে বাসিন্দা বলতে ছিলাম কেবল আমি আর সেন্ট জন। সঙ্গ দেবার জন্যে দাসদাসী পর্যন্ত ছিল না। এই বাড়িরই বহু নীচে, ভূগর্ভের অন্দরে এক গোপন কামরায় গড়ে তুলেছিলাম আমাদের মিউজিয়াম।

আমাদের আসক্তিক্লান্ত ইন্দ্রিয়গুলোকে ফের চাঙ্গা করে তুলতে চেয়েছিলাম আমরা। মেতেছিলাম তাই উন্মাদ শিল্পীদের নারকীয় রুচিতে। সেই ভয়ানক সংগ্রহশালায় গড়ে তুলেছিলাম আতঙ্ক আর বিনাশের এক অকল্পনীয় দুনিয়া। ঘরের দেওয়াল জুড়ে বসানো ছিল কালো ব্যাসাল্ট আর অনিক্স পাথরে কোঁদা বিশাল বিশাল দানবমূর্তি। দু-পাশে পাখা মেলে তারা তাদের মুখের অট্টহাসির ফাঁক দিয়ে উগরে দিত উদ্ভট সবুজ আর কমলা রঙের আলো। গোপন পাইপ দিয়ে বয়ে-আনা হাওয়ায় ফুলেফেঁপে উঠত বিশাল বিশাল কালো পর্দা। তাদের গায়ে লাল রঙে আঁকা হাতে হাত ধরা অস্থিমূর্তিরা যেন মেতে উঠত এক মরণ নৃত্যে। পাইপ দিয়ে কেবল হাওয়া নয়, বয়ে আসত আমাদের মেজাজ শরিফ করার জন্যে নানান গন্ধ। কখনও অন্তিম সত্ত্বারের লিলি ফুলের হালকা সুবাস। কখনও-বা প্রাচ্যের অধিপতিদের সমাধিগৃহের ধূপের মাদক সুগন্ধ। আবার কখনও মাটি-তোলা কবরের অন্তরাত্মা-কাঁপানো উৎকট দুর্গন্ধ।

এই ভয়ংকর কামরার দেওয়ালের গায়ে পরপর রাখা ছিল প্রাচীন মমির সারি। তাদের পাশে পাশে দাঁড়িয়ে থাকত সংরক্ষিত মৃতদেহ। ট্যাক্সিডার্মিস্টের হাতের কারিকুরিতে প্রাণবন্ত দেখাত সেসব ন্যাকড়া-ঠাসা লাশ। তাদের মাঝে ইতস্তত রাখা ছিল পৃথিবীর নানা প্রাচীন গোরস্থান থেকে লুটে-আনা সমাধিশীর্ষের ফলক। ঘরের নানান কোণে সাজানো থাকত নরমুণ্ড। তাদের এক-একটাতে পচনের ছাপ এক-একরকম। কোথাও অভিজাতবংশীয়দের কেশহীন গলিত মস্তক। আবার কোথাও সদ্য কবর-দেওয়া শিশুদের ঝকঝকে সোনালি চুলে সাজানো তাজা মুণ্ড। ভয়ানক বিষয়বস্তুর ওপর ছবি আর স্থাপত্যেরও কমতি ছিল না। তাদের বেশ কিছুই সৃষ্টি আমার আর সেন্ট জনের। ছিল মানুষের চামড়ায় বাঁধাই একটা তালা-মারা কাগজপত্রের ব্যাগ। তার অন্দরে রাখা ছিল এমন সব অকল্পনীয় ছবি, যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। সেসবই কুকীর্তি নাকি স্বয়ং শিল্পী গয়ার, যদিও ভয়ে তিনি কখনও সে কথা স্বীকার করেননি। অভাব ছিল না বিকট সব তারের আর ফু-দেওয়া বাদ্যযন্ত্রেরও। আমার আর সেন্ট জনের হাতে পড়ে সেইসব কাঠ আর পেতলের বাজনা বেজে উঠত বীভৎস আওয়াজে কখনও স্বরবিচ্যুতির অসহনীয়, আবার কখনও দানবিক চিৎকারের ভয়ানক অট্টরোলে। এ ছাড়া ছিল নকশিকাটা কালো আবলুশ কাঠের বহু আলমারি। সেসব ঠাসা কবর থেকে লুট করে আনা নানান অবর্ণনীয় সামগ্রীতে। প্রত্যেকটা আমাদের উন্মাদনা আর বিকৃতির ফসল। নিজের প্রাণ নিতে যাওয়ার আগেই এগুলো সব নষ্ট করে দিয়েছি, সুতরাং আর বিশদে কিছু বলতে চাই না।

মুখে নাম আনা যায় না, এমন সব জিনিসপত্রের সন্ধানে আমরা কবরে হানা দিতাম শিকারির মতনই। কিন্ত তা বলে ছোটলোক গোর লুটেরাদের মতন হামলে পড়িনি। আমাদের কাছে এই শখ ছিল সূক্ষ্ম শিল্পের নামান্তরমাত্র। তাই যেন শিল্পসাধনা হয়ে উঠত প্রতিটি অভিযান। নিজেদের মেজাজ, প্রাকৃতিক শোভা, পরিবেশ, আবহাওয়া, ঋতু, চাঁদের আলো ইত্যাদি নানান কিছু মনোমতো হলে, তবেই নামতাম কাজে। কবরের গহ্বর ভয়ানক হাসিতে তার অভ্যন্তরের রহস্য মেলে ধরলে যে চরম আনন্দের অনুভূতি হয়, তার অন্তরায় অনেক। সময়জ্ঞানের অভাব, আচমকা ঝলসে-ওঠা বিদ্যুৎ, কিংবা আনাড়ি হাতে মাটি উলটে ফেলা, এ ধরনের সামান্য উলটো-পালটা হলেই ছিল সব পরিশ্রম পণ্ড হবার সম্ভাবনা। খুঁটিনাটির ওপর তাই তীক্ষ্ণ নজর থাকত আমাদের।

নিত্যনতুন দৃশ্যপটে আরও চড়া দাগের অভিজ্ঞতা ভোগ করার বাসনা চেপে বসেছিল আমাদের ওপর। যেন এক চির-অতৃপ্ত বিকার। আর এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা ছিল সেন্ট জনের। সেই পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই অভিশপ্ত গোরস্থানে। সেখানেই আমাদের ওপর নেমে এসেছিল ভয়ংকর এক অমোঘ নিয়তি।

একটা অসুস্থ প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে পা রেখেছিলাম আমরা হল্যান্ডের সেই সাংঘাতিক কবরখানায়। কয়েকটা ভয়ানক গুজব আর কিংবদন্তি যেন টেনে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের। কানে এসেছিল, গোরস্থানের এক কবরে পাঁচশো বছর ধরে শুয়ে আছেন এমন একজন, যিনি জীবদ্দশায় নিজেই ছিলেন গোর লুটেরা। কোনও এক চোখধাঁধানো সমাধিগৃহ থেকে নাকি চুরি করে এনেছিলেন এমন কিছু, যার ক্ষমতা মারাত্মক।

সে দিনের সেই মুহূর্তের কথা আজও মনে আছে। মাথার ওপর হেমন্তের চাঁদ। তার ম্লান। আলোয় ভয়-ধরানো ছায়া ফেলেছে কবরগুলো। সমাধির জরাজীর্ণ বেদি আর অযত্নে বেড়ে ওঠা ঘাসের ওপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঝুঁকে রয়েছে কদাকার গাছগুলো। আকাশে চাঁদের প্রেক্ষাপটে পাক খাচ্ছে অগুনতি বিশালদেহী বাদুড়ের ঝাঁক। আইভি লতায় ঢাকা প্রাচীন গির্জাটা ভূতুড়ে আঙুল উঁচিয়ে রয়েছে আকাশের দিকে। দূরে ঝোপঝাড়ের আনাচকানাচে আলেয়ার নাচ নেচে চলেছে জোনাকির দল। দূরের সাগর আর জলাভূমির ওপর দিয়ে আসা বাতাসে মিশেছে গাছগাছড়া, ছত্রাক আর নানান অজানা জিনিসের গন্ধ। আর এসবের সঙ্গে ভয়ের আর-এক মাত্রা যোগ করেছে অজানা উৎস থেকে ভেসে-আসা কুকুরের ডাক। যেন দূরে কোথাও একনাগাড়ে ডেকে চলেছে কোনও অতিকায় হাউন্ড। সে আওয়াজ শিহরন ধরিয়ে দেয় শরীরে, মনে করিয়ে দেয় চাষাভুসোর মুখে শোনা গল্পটা। যার কবরের তল্লাশে এখানে আসা, তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল এখানেই। ছেঁড়া, থ্যাঁতলানো সেই শরীর যেন খুবলে ফেলেছিল কোনও অবর্ণনীয় পশুর দাঁত-নখ।

পাণ্ডুর চাঁদের নজরদারিতে পোর লুটেরার কবরে ঝপাঝপ কোদাল পড়ে আমাদের। অদ্ভুতদর্শন গাছ, বুক-কাঁপানো ছায়া, প্রাচীন গির্জা, বিশাল বিশাল বাদুড়, জোনাকির নাচ, সব যেন প্রেক্ষাপটে ভাসে ছবির মতন। গুমরে-কাঁদা রাতের বাতাস রোমাঞ্চ ধরায় শরীরে। নানা উৎকট দুর্গন্ধে উলটে আসে নাড়ি। আর দূর থেকে ভেসে আসে কুকুরের অদ্ভুত ডাক। এত মৃদু সে আওয়াজ, যে নিজের কানকেই বিশ্বাস করা যায় না।

আচমকাই শ্যাওলার ভিজে স্তর পেরিয়ে কোদাল লাগে একটা শক্ত কিছুতে। একটা গোল লম্বাটে বাক্স। তার পচনে জীর্ণ আকারের গায়ে জমে রয়েছে আকরিকের কঠিন প্রলেপ। বাক্সটা তৈরি মোটা মজবুত জিনিসে বটে, কিন্তু এতই পুরোনো যে, সেটাকে চাড় মেরে খুলতে আমাদের বিশেষ বেগ পেতে হল না।

উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালাম বাক্সের অন্দরে। কী অদ্ভুত। পাঁচশো বছরের ব্যবধান সত্ত্বেও অবশিষ্ট রয়ে গেছে বাক্সের বাসিন্দার দেহাবশেষের অনেকটাই। অতীতের হত্যাকারীর চোয়ালের পেষণে কঙ্কালটার দু-একটা অংশ গুঁড়িয়ে গেছে বটে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তার বেশির ভাগটাই অটুট। লম্বাটে দাঁত-বসানো খুলিটা ধবধবে সাদা, পরিষ্কার। অক্ষিকোটর দেখে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, এই চোখ এককালে আমাদের মতনই বিকারের নারকীয় আগুন জ্বলত ধকধক করে।

কফিনের একপাশে পড়ে একটা অদ্ভুত কবচ। হয়তো এককালে পরানো ছিল কফিনে শোয়া কঙ্কালের গলাতেই। অচেনা কায়দায় খোদাই-করা তার সবুজ জেড পাথরের গঠন। সূক্ষ্ম কারুকাজে প্রভাব প্রাচ্যের প্রাচীন শিল্পের। যেন গুঁড়ি মেরে থাকা একটা পাখা বসানো হাউন্ড। কিংবা একটা স্ফিংক্স, মুখ গড়া যার খানিকটা কুকুরের আদলে। সে মুখে একই সঙ্গে বিদ্বেষ, মৃত্যু আর পশুত্ব এমন ছাপ ফেলেছে যে, দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। তার নীচের দিকটা ঘিরে খোদাই-করা কয়েকটা অক্ষর– দুর্বোধ্য সেই অজানা লিপির মর্ম। আর একদম তলায় সিলমোহরের কায়দায় খোদাই অদ্ভুতদর্শন একটা খুলির ভয়ংকর আকৃতি।

কবচটা চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুর্নিবার হয়ে উঠল সেটাকে পাওয়ার আকর্ষণ। যেন ওই মান্ধাতার আমলের কবর থেকে নজরানা হিসেবে ওটাই প্রাপ্য আমাদের। কারণ খুঁটিয়ে দেখে বেশ বুঝতে পারছিলাম কবচটা আমাদের সম্পূর্ণ অপরিচিত নয়। কেবলমাত্র নির্মল সাহিত্য-শিল্পে দখল থাকলে হয়তো কবচের চেহারাটা অস্বাভাবিক ঠেকত। কিন্তু উন্মাদ আরব আবদুল আলহার্জেডের নিষিদ্ধ নেক্রোনমিকন বইখানা দেখা ছিল আমাদের। সে বইতে ইঙ্গিতে উল্লেখ ছিল এটারই কথা। মধ্য এশিয়ার এক দুর্গম প্রদেশের নাম লেং। সেখানকার শবভোজী সম্প্রদায়ের আত্মপ্রতীক এই বীভৎস কবচ। বুড়ো আরব প্রেতবিশারদ তাঁর বইতে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গেছেন এ কবচের রূপের রেখাগুলোরও। মানুষের লাশ যারা দাঁতে ছিঁড়ে খায়, কোনও অজ্ঞাত অতিপ্রাকৃত পদ্ধতিতে তাদের আত্মার শক্তিতে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে ও রেখা।

হাতিয়ে নিলাম জেড পাথরের সবুজ কবচটা। কবচ মালিকের সাদা পরিষ্কার খুলি আর গুহার মতন অক্ষিকোটরের দিকে শেষবারের মতন দৃষ্টি দিয়ে কবরটা বুজিয়ে দিলাম আগের মতন।

হেমন্তের পাণ্ডুর চাঁদের ম্লান আলোয় ঠিক করে বোঝা গেল না, কিন্তু যখন তড়িঘড়ি জায়গাটা ছেড়ে চলে যাচ্ছি, মনে হল, আমাদের হাতে আলগা-হয়ে-যাওয়া কবরের মাটির ওপর নেমে এসেছে বাদুড়ের ঝাঁক। যেন সন্ধান করছে কোনও অশুভ, অভিশপ্ত পুষ্টির।

পরের দিন যখন জাহাজে চড়ে দেশের উদ্দেশে রওনা দিলাম, মনে হল যেন দূর থেকে ভেসে আসছে কোনও অতিকায় হাউন্ডের মৃদু ডাক। কিন্তু সে সময়ে হেমন্তের দুঃখী বাতাস কেঁদে চলেছে নিস্তেজ আওয়াজে। তাই এবারেও ঠিক করে কিছু বোঝা গেল না।

ইংল্যান্ডে ফেরার এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হল যত অদ্ভুত ঘটনা। জনশূন্য পাণ্ডববর্জিত বিশাল মাঠের মাঝখানে একটা প্রাচীন জমিদারবাড়ির কয়েকখানা ঘরে ছিল আমাদের নিঃসঙ্গ বাস। বন্ধুবান্ধব দূরস্থান, চাকরবাকর পর্যন্ত ছিল না। অতিথির আগমনে কদাচিৎ বেজে উঠত আমাদের দরজার কড়া। কিন্তু এবার মনে হতে লাগল, রাতবিরেতে বাড়ির দরজা আর দুটো তলারই জানলা হাতড়াচ্ছে কেউ। কখনও-বা মনে, হল লাইব্রেরির জানলায় চাঁদের আলো ঢেকে দিয়েছে কোনও বিশাল ছায়ামূর্তি। আবার কখনও মনে হল, কাছেই কোথাও সাঁইসাঁই শব্দে পাখা ঝাপটাচ্ছে কিছু৷ কিন্তু প্রত্যেকবারই খোঁজাখুঁজির পর নজরে পড়ল না কিছুই। অতএব দায় চাপালাম কল্পনার ওপর। হল্যান্ডের গোরস্থানে শোনা কুকুরের ডাক যেমন মনে হত, শুনতে পাচ্ছি তখনও, মনে হল, এসবও হয়তো সেইরকমই কোনও অলীক কল্পনা।

জেড পাথরের কবচটার ঠাঁই হল আমাদের মিউজিয়ামের এক কোণে। মাঝেমধ্যে তার সামনে নানা বিচিত্র গন্ধের মোমবাতি জ্বালি আমরা। চলে আলহার্জেডের নেক্রোনমিকন থেকে কবচের বিষয়ে পড়াশোনাও। ক্রমে বুঝতে পারি গোর লুটেরাদের প্রতীক আর তাদের আত্মাদের মধ্যের সম্পর্কের রহস্য। যা পড়ি, তাতে আরও দুশ্চিন্তা জমে উঠতে থাকে মনে।

তারপর একদিন হানা দিল আতঙ্ক।

সে দিন ২৪ সেপ্টেম্বর। রাতের বেলায় খটখট করে উঠল আমার ঘরের দরজা। ভাবলাম হয়তো সেন্ট জন। কিন্তু তাকে যখন ভেতরে আসতে বললাম, তখন কে যেন হেসে উঠল খনখনে আওয়াজে। করিডরে বেরিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। ঘুম থেকে টেনে তুললাম সেন্ট জনকে। কিন্তু সে বলল, সে কিছু জানে না। দুশ্চিন্তা গ্রাস করল দু জনকেই। এই রাতেই প্রথম মনে হতে লাগল, ধু ধু মাঠের ওপর দিয়ে দূর থেকে ভেসে আসা কুকুরের অস্পষ্ট ডাক হয়তো এক ভয়ানক সত্য।

এর দিন চারেক পরের কথা। আমরা দুজনেই তখন আমাদের গোপন মিউজিয়ামে। লাইব্রেরির যে লুকোনও দরজা থেকে সিঁড়ি নেমে এসেছে মিউজিয়াম অবধি, হঠাৎ মনে হল, সেই দরজা খুব ধীরে ধীরে সন্তর্পণে আঁচড়াচ্ছে কোনও কিছু। দু-দুটো ভয় চেপে ধরল আমাদের। এমনিতেই আমরা সর্বদাই আতঙ্কে থাকতাম, পাছে কেউ আমাদের এই বীভৎস সংগ্রহের কথা টের পেয়ে যায়। তার সঙ্গে এবার যোগ হল এই অজানা রহস্য।

সমস্ত আলো নিবিয়ে দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে হঠাৎ করে খুলে দিলাম দরজা।

আমাদের ওপর এসে পড়ল একঝলক হাওয়া। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হল যেন ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে একটা খসখস শব্দ, খুকখুক হাসি, আর কারও ক্রমাগত বকবক করে যাওয়ার আওয়াজ। আমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, নাকি স্বপ্ন দেখছি, নাকি সজ্ঞানেই আছি, সেসব কিছু বোঝার চেষ্টা করিনি। কেবল আঁতকে উঠে উপলব্ধি করেছিলাম আর-একটা ব্যাপার। না-দেখা অশরীরী বকবক করে চলেছে হল্যান্ডের ভাষায়।

এর পরের দিনগুলো কাটতে লাগল একই সঙ্গে বিস্ময়ে আর আতঙ্কে। কখনও মনে হত, এককালের অপ্রাকৃতিক সব উত্তেজনার মাশুল চুকিয়ে হয়তো আমরা পাগল হয়ে যাচ্ছি। আবার কখনও কখনও নিজেদেরকে ধীরে ধীরে আসতে থাকা কোনও সর্বনাশা নিয়তির শিকার ভেবেও নাটুকে আনন্দে পেতাম। অদ্ভুত সব ব্যাপারস্যাপারও এবার থেকে নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়াল। মনে হতে লাগল, আমাদের নির্জন বাড়িটা যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে কোনও অশুভ সত্তার উপস্থিতিতে। তবে তার গতিপ্রকৃতি যে কী, তা বোঝা ছিল আমাদের সাধ্যের বাইরে। প্রতিরাতেই দিগন্তবিস্তৃত মাঠের ওপর দিয়ে ভেসে আসতে লাগল দানবিক কুকুরের আওয়াজ। জোর থেকে আরও জোরে, ক্রমশই বাড়তে থাকল সে আওয়াজ। ২৯ অক্টোবরে নজরে পড়ল, লাইব্রেরির জানলার নীচের নরম মাটিতে পড়েছে কীসের যেন পায়ের ছাপ। অসাধ্য সে ছাপের বর্ণনা দেওয়া। এর সঙ্গে কে জানে কেন আমাদের পুরোনো বাড়িটাতে পালে পালে হাজির হতে শুরু করল বিশাল চেহারার সব বাদুড়। দিনে দিনে বাড়তে লাগল তাদের সংখ্যা।

চূড়ান্ত আঘাত নেমে এল ১৮ নভেম্বর। আমাদের বাড়ি থেকে স্টেশনটা বেশ দূরে। সেখান থেকে অন্ধকারে হেঁটে আসার সময়ে কোনও ভয়ংকর মাংসাশী পশুর কবলে পড়ল সেন্ট জন। সে আক্রমণে ফালাফালা হয়ে গেল সেন্ট জনের শরীর, তার মরণ চিৎকার ভেসে এল আমাদের বাড়ি অবধি। দৌড়ে গেলাম সেই ভয়ংকর ঘটনাস্থলের কাছে। লক্ষ করলাম, সদ্য-ওঠা চাঁদের প্রেক্ষাপটে মেঘের মতন ভাসছে অস্পষ্ট কালো কিছু একটা। তার সঙ্গে কানে এল পাখা ঝাপটানোর সাঁইসাঁই শব্দ। সেন্ট জনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম বটে, কিন্তু সে তখন পৌঁছে গেছে মৃত্যুর দোরগোড়ায়, স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারল না। ওই কবচটা ওই অশুভ জিনিসটা–  এটুকু বলেই বেরিয়ে গেল তার প্রাণ, পড়ে রইল কেবল একটা ছেঁড়াখোঁড়া লাশ।

পরের দিন মাঝরাতে সেন্ট জনকে কবর দিলাম আমাদের অযত্নলালিত বাগানে। জীবদ্দশায় যেসব ভূতুড়ে গুহ্যবিদ্যা তার পছন্দ ছিল, পাঠ করলাম তারই কয়েকটা। শেষ ভৌতিক মন্ত্রটা আওড়াচ্ছি, অতিকায় হাউন্ডের অস্পষ্ট ডাক ভেসে এল জনশূন্য ফাঁকা মাঠের কোনও সুদূর কোণ থেকে। আকাশে ততক্ষণে চাঁদ উঠে গেছে, কিন্তু সেদিকে তাকাতে সাহস হল না। কেবল চোখে পড়ল, বিশাল প্রান্তরের স্বল্প আলোয় ঢিপি থেকে ঢিপিতে লাফিয়ে লাফিয়ে যাচ্ছে অস্পষ্ট একটা চওড়াটে ছায়ামূর্তি।

চোখ বন্ধ করে আছড়ে পড়লাম মাটিতে মুখ গুঁজে। কতক্ষণ বাদে জানি না, উঠে কোনওমতে টলতে টলতে উঠে পৌঁছোলাম বাড়ির ভেতরে। যত্ন করে রাখা সবুজ জেড পাথরের কবচের সামনে প্রণিপাত করতে শুরু করলাম অনবরত।

তেপান্তরের মাঠের মাঝখানে পুরোনো বাড়িতে একা থাকতে আর সাহস হচ্ছিল না। তাই কবচটা সঙ্গে নিয়ে পরের দিনই পাড়ি দিলাম লন্ডনের উদ্দেশে। যাওয়ার আগে নষ্ট করে দিয়ে গেলাম আমাদের মিউজিয়ামের অশুভ সংগ্রহ কিছুটা মাটিতে পুঁতে, কিছুটা পুড়িয়ে দিয়ে।

কিন্তু দিন তিনেক যেতে-না-যেতেই মনে হল, ফের শুনতে পাচ্ছি হাউন্ডের ডাক। হপ্তাখানেক বাদে অন্ধকার নামলেই মনে হতে লাগল, আমার দিকে কেউ তাকিয়ে রয়েছে। অদ্ভুত চোখে। একদিন সন্ধেবেলা হাওয়া খাচ্ছি ভিক্টোরিয়া বাঁধে, খেয়াল করলাম, নদীর জলে রাস্তার আলোগুলোর যে প্রতিফলন পড়েছে, তাদেরই একটা হঠাৎ ঢেকে দিল একটা কালো আকার। একই সঙ্গে রাতের বাতাসের চাইতে জোরালো একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল আমার পাশ দিয়ে। বুঝতে পারলাম, সেন্ট জনের ভাগ্যে যা ঘটেছিল, আমার কপালেও তা জুটতে বেশি দেরি নেই। কবচটাকে সাবধানে মুড়ে নিয়ে তাই পরের দিন চড়ে বসলাম হল্যান্ডগামী জাহাজে।

হাউন্ডটা এল কোথা থেকে? আমাকেই বা সেটা তাড়া করে বেড়াচ্ছে কেন? আমার কাছে এসব প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর ছিল না। কবচটা তার কবরে শুয়ে-থাকা নির্বাক মালিককে ফিরিয়ে দিলে কী হবে, তা-ও আমার জানা ছিল না। হাউন্ডের ডাক শুনেছিলাম প্রথমবার সেই প্রাচীন গোরস্থানে। শুরু সেখানে। তারপর সেন্ট জন তার শেষনিশ্বাসের সঙ্গে বলেছে কবচের কথা। আর এই দুইয়ের মাঝে ঘটেছে একের পর এক ঘটনা। সুতরাং ওই কবচ চুরির সঙ্গে আমার ওপর নেমে-আসা এই অভিশাপের যে একটা সম্পর্ক আছে, সেটা বুঝতে মোটেও অসুবিধে হচ্ছিল না। তাই মনে হয়েছিল, যুক্তি বিচার করে প্রতিটি পন্থা একবার পরখ করে দেখা দরকার।

কিন্তু তার আগেই ঘটল আর-এক অঘটন। রটারডামের এক সরাইখানায় আবিষ্কার করলাম, চুরি হয়ে গেছে আমার কবচ। চোরেরা গায়েব করে দিয়েছে আমার উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র সম্বল। মুষড়ে পড়লাম আমি, ডুবে গেলাম অবসাদের অতলে। সে রাতে মনে হল, হাউন্ডের ডাক যেন আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।

পরের দিন সকালে অপেক্ষা করছিল আর-এক খবর। এক অজানা দুর্বিপাক নেমে এসেছে শহরের এক নিকৃষ্ট পল্লিতে। আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছে সেখানকার লোকজন। অতীতের সমস্ত ভয়ংকর অপরাধকে নৃশংসতায় ছাপিয়ে গেছে সে ঘটনা। একটা জঘন্য বস্তিবাড়িতে হানা দিয়েছে রক্তলাল মৃত্যু। চোরছ্যাঁচড়ের সেই কদর্য আস্তানায় কোনও চিহ্ন না রেখেই এক অজানা আততায়ী ছিঁড়ে ফালাফালা করে রেখে গেছে একটা পুরো পরিবারকে। আর সারারাত আশপাশের মাতালের হুল্লোড় সত্ত্বেও নাকি হালকা শোনা গেছে। কোনও অতিকায় হাউন্ডের তেজি, চাপা ডাক।

ফের এসে দাঁড়াই সেই বিপজ্জনক গোরস্থানে। শীতকালের পাণ্ডুর চাঁদের আলো ভয়ানক সব ছায়া ফ্যালে। ফুটিফাটা সমাধি আর তুষার-পড়া বিবর্ণ ঘাসের ওপর বিরক্তি নিয়ে ঝুঁকে থাকে নিষ্পত্র, ন্যাড়া গাছগুলো। প্রতিকূল আকাশের দিকে আঙুল তুলে ব্যঙ্গ করে আইভি মোড়া গির্জা। হিমেল সাগর আর বরফ-জমা জলাভূমির ওপর দিয়ে ছুটে-আসা নিশীথ বাতাস হাহাকার করে চলে উন্মাদের মতন।

নিজের হাতেই কলুষিত করা সেই প্রাচীন কবরের কাছে এগোই পায়ে পায়ে। ভয় পেয়ে উড়ে পালায় কবরের ওপর উড়তে-থাকা বাদুড়ের বিশাল ঝাঁক। আগেই কমে এসেছিল হাউন্ডের ডাক, কবরের কাছে পৌঁছোতে এবার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় সে আওয়াজ।

কেন এলাম এই কবরের কাছে? এর নীচে শান্ত হয়ে শুয়ে আছে যে সাদা দেহাবশেষ, তার কাছে প্রার্থনা করতে? ক্ষমা চাইতে? নাকি পাগলের মতন কাকুতিমিনতি করতে? কারণ যা-ই হোক, তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ করলাম কবরের হিম-জমাট মাটিকে। শুধু নিজেই যে হঠাৎ এমন বেপরোয়া হয়ে উঠলাম তা-ই নয়, মনে হল, আমার ওপর ভর করেছে বাইরের কোনও প্রবল ইচ্ছাশক্তি।

কবর খুঁড়ে ফেলতে বেগ পেতে হল না বিশেষ। মাঝে থেমেছিলাম একবারই। একটা শীর্ণ চেহারার শকুন হঠাৎ হিমেল আকাশ থেকে তিরবেগে নেমে এসে কবরের মাটি ঠোকরাতে আরম্ভ করেছিল পাগলের মতন। কোদালের এক ঘায়ে ভবলীলা সাঙ্গ করেছিলাম তার।

অবশেষে নাগাল পেলাম সেই জরাজীর্ণ লম্বাটে বাক্সটার। ওপর থেকে সরিয়ে ফেললাম তার সোরা-পড়া ঢাকনাটা। প্রকৃতিস্থ অবস্থায় এটাই আমার শেষ কাজ।

দেখলাম, সেই শতাব্দীপ্রাচীন কফিনে গাদাগাদি করে ঘুমিয়ে রয়েছে পেশিবহুল বিশাল বিশাল বাদুড়। আর সেইসব দুঃস্বপ্নের অনুচরদের আলিঙ্গনের মধ্যে ঘাপটি মেরে রয়েছে আমাদের চুরির শিকার সেই অস্থিসর্বস্ব দেহ। কিন্তু কোথায় আমাদের প্রথম দর্শনে দেখা সেই শান্ত, পরিচ্ছন্ন রূপ? এখন তার সর্বাঙ্গ ঢেকে রয়েছে শুকনো জমাট রক্ত, চুল আর মাংসের ফালিতে। ফসফরাসের মতন জ্বলন্ত দুই অক্ষিকোটর বাঁকা চাহনিতে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকেই। সে দৃষ্টিতে চৈতন্যের লক্ষণ স্পষ্ট। তার রক্ত-মাখা তীক্ষ্ণ শ্বদন্তগুলো মেলা বিকৃত ভঙ্গিতে, হয়তো-বা আমার আসন্ন সর্বনাশকে ব্যঙ্গ করেই।

সেই বাঁকা হাসিতে মেলা মুখের ফাঁক দিয়ে এবার বেরিয়ে এল একটা পরিহাস-মাখা চাপা আওয়াজ। ঠিক যেন কোনও অতিকায় হাউন্ডের ডাক। চমকে দেখলাম তার নোংরা রক্ত-মাখা নখে লটকে রয়েছে হারিয়ে-যাওয়া সবুজ জেড পাথরের কবচখানা। আমার গলা দিয়ে বেরিয়ে এল আতঙ্কের চিৎকার, ছুটে পালালাম বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে। খানিক বাদে খেয়াল করলাম, আমার চিৎকার পালটে গেছে উন্মাদের অট্টহাসিতে।

নক্ষত্র বায়ুতে সওয়ার হয় উন্মত্ততা… দাঁত-নখ তার শান-দেওয়া শত শত লাশে… ফোঁটায় ফোঁটায় মৃত্যু ছেটায় ভূগর্ভে পোঁতা শয়তান মন্দিরের নিকষকালো ধ্বংসাবশেষ থেকে উড়ে-আসা প্রমত্ত বাদুড়ের পালের পিঠে চড়ে।

ক্রমশ উচ্চগ্রামে চড়ছে সেই অস্থিসর্বস্ব ভয়ংকরের কুকুরের মতন ডাক। শিরা-উপশিরা মেলা অভিশপ্ত ডানা দুটোর সাঁইসাঁই পতপত শব্দ ক্রমাগত চক্কর মেরে এগিয়ে আসছে। কাছে। যার নাম নেই, যার নাম নিতে নেই, তার কাছ থেকে বাঁচার একমাত্র পন্থা আত্মবিলুপ্তি। আমার রিভলভার আমাকে সেই আত্মবিলুপ্তি এনে দেবে।

[প্রথম প্রকাশ: গল্পটি ১৯২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উইয়ার্ড টেলস নামক পাল্প ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ভাষান্তর : সুমিত বর্ধন]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *