২.২৬ গ্রোভের সবচেয়ে গরম জায়গা

২.২৬

গ্রোভের সবচেয়ে গরম জায়গাটা হচ্ছে ক্যান্টিন। দেয়াল জুড়ে অনেকগুলো রেডিয়েটর, তাই ওখানকার বেঞ্চগুলোই দখল হয়ে যায় প্রথমে। লাঞ্চে ভিড়টা হয় সবচেয়ে বেশি। স্টাফ আর রোগিরা পাশাপাশি বসে খায়। এসময়। ডাইনারের লোকদেরও ব্যস্ত সময় কাটে হৈ-হট্টগোলের মাঝে। তাছাড়া ইউনিটের সব রোগি এক জায়গায় জড়ো হওয়াতে সবসময় সতর্কও থাকতে হয়।

আজ দুইজন ক্যারিবিয়ান মহিলা হাসিমুখে ডাইনারের দায়িত্ব পালন করছে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সবার পাতে ফিশ অ্যান্ড চিপস বা চিকেন কারি তুলে দিচ্ছে দক্ষ হাতে। খাবারগুলো খেতে যেমনই হোক না কেন, গন্ধ সুন্দর। আমি ফিশ-অ্যান্ড-চিপস নিলাম, অভিজ্ঞতায় বলে এটার স্বাদই তুলনামূলক ভালো হবার কথা। খাবার নিয়ে আসার পথে এলিফকে দেখলাম সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে একটা টেবিল দখল করে বসেছে। বরাবরের মতনই খাবারের মান নিয়ে হাজারটা অভিযোগ তাদের।

“এই ফালতু খাবার গলা দিয়ে নামবে না আমার।”সামনে থেকে ট্রে সরিয়ে দিল এলিফ।

তার ডান পাশে বসে থাকা আরেকজন রোগি সাথে সাথে ট্রে-টা নিজের দিকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করতেই বেচারির মাথায় গাট্টা বসিয়ে দিল সে।

“ছোঁচা কোথাকার!” চিল্লিয়ে উঠলো পরক্ষণেই। “হাত সরা।”

আশপাশের সবাই হেসে উঠলো দৃশ্যটা দেখে। নতুন উদ্যোমে খাবারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এলিফ।

রুমের একদম পেছন দিকে একা একটা টেবিলে বসেছে অ্যালিসিয়া। সামনে রাখা খাবারগুলোর প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তার। মাঝে মাঝে মাছের টুকরোটা নিয়ে আনমনে নাড়াচাড়া করছে, কিন্তু একবারও মুখে তুলল না। ভাবলাম তার সাথে গিয়ে বসি, পরক্ষণেই বাতিল করে দিলাম চিন্তাটা। যদি আমার দিকে তাকাতো, তাহলে যাওয়ার কথা ভাবতাম। কিন্তু ইচ্ছে করে চোখ নামিয়ে রেখেছে সে, আশপাশের কোন কিছু প্রতি আগ্রহ নেই। এখন তাকে ঘটানোটা একদমই উচিৎ হবে না। তাই রোগিদের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে একটা টেবিলের শেষমাথায় বসে খাবার খেতে শুরু করলাম। স্বাদহীন মাছটা কেবলই মুখে দিয়েছি এমন সময় আমার পাশে এসে বসলো কেউ একজন।

ক্রিস্টিয়ান।

অবাক হলেও মুখে কিছু বললাম না।

 “ঠিক আছো?” মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করলো সে।

“হ্যাঁ, তুমি?”।

জবাব না দিয়ে প্লেট থেকে কিছুটা ভাত আর তরকারি মুখে চালান করে দিল ক্রিস্টিয়ান। “তুমি নাকি অ্যালিসিয়াকে ছবি আঁকার বন্দোবস্ত করে দিচ্ছ?” মুখভর্তি খাবার নিয়েই কথা বলছে সে।

“বাহ, ইতোমধ্যে জেনেও গেছো দেখছি।”

“ছোট জায়গায় খবর তাড়াতাড়ি ছড়ায়। বুদ্ধিটা আসলেও তোমার নাকি?”

“হ্যাঁ। ওর জন্যে ভালো হবে ব্যাপারটা।”

 সন্দেহ ফুটলো ক্রিস্টিয়ানের চেহারায়। “সাবধানে, বন্ধু।”

“সতর্ক করার জন্যে ধন্যবাদ। কিন্তু এত সাবধানতার কিছু নেই আসলে।”

“না, এমনি বললাম। বর্ডারলাইন রোগিদের আলাদা একটা আকর্ষণ থাকে, বুঝি আমি ব্যাপারটা। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে, তুমি ধরতে পারছে না।”

“অ্যালিসিয়া আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলবে না, ক্রিস্টিয়ান।”

হেসে উঠলো সে। “আমার ধারণা ইতোমধ্যে ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে তুমি। যা চাচ্ছে সেটাই তুলে দিচ্ছ হাতে।”

“ওর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যে যা দরকার সেটাই করছি আমি। দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে।”

“তার কি দরকার সেটা তুমি কি করে জানলে? একটু মাত্রাতিরিক্ত গুরত্ব দিয়ে ফেলছো না? এখানে কিন্তু অ্যালিসিয়া রোগি, তুমি নও।”

 রাগ লুকোনোর জন্যে ঘড়ির দিকে তাকালাম। “যেতে হবে আমাকে।”

ট্রে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। হেঁটে চলে যাচ্ছি এসময় পেছন থেকে ডাক দিল ক্রিস্টিয়ান। “তোমার এই ভালোমানুষির এক কড়ি দাম নেই ওর কাছে। আমার কথা মিলিয়ে নিও পরে।”

প্রচণ্ড বিরক্ত হলাম কথাগুলো শুনে। সারাদিন আর মেজাজ ভালো হলো না।

***

ডিউটি শেষে গ্রোভ থেকে বেরিয়ে রাস্তার শেষ মাথায় ছোট দোকানটায় চলে গেলাম সিগারেট কিনতে। বিল মিটিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দিলাম। মাথায় ক্রিস্টিয়ানের বলা কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। বর্ডারলাইন রোগিদের আলাদা একটা আকর্ষণ থাকে।

আসলেও কি অ্যালিসিয়ার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করি আমি? ওর মুখে সত্যটা শুনেই বিরক্ত হয়েছিলাম? ক্রিস্টিয়ান অন্তত এমনটাই ভাবে, ডায়োমেডেসও নিশ্চয়ই সন্দেহ করেছেন। তাদের ধারণাই ঠিক?

বেশ কিছুক্ষণ আপনমনে চিন্তা করার পর বুঝলাম তারা ভুল ভাবছে। অ্যালিসিয়াকে সাহায্য করতে চাই আমি, এর বেশি কিছু না। সবসময়ই তার থেকে নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব বজায় রেখেছি পেশাদারিত্বের খাতিরে। দরকার হলে আরো সতর্ক থাকবো এখন থেকে।

(কিন্তু ভুল ভেবেছিলাম আমি। যদিও নিজের কাছে স্বীকার করতে রাজি ছিলাম না ব্যাপারটা। বড্ড দেরি হয়ে গেছিল ততদিনে।)

***

জিন-ফিলিক্সের সাথে কথা বলার জন্যে ফোন দিলাম গ্যালারিতে। অ্যালিসিয়ার ছবি আঁকার সরঞ্জামগুলো এখন কোথায় আছে তা জানতে চাইলাম। “সব কি স্টোরেজে রাখা?”

“না, আসলে,” কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জবাব দিল সে। “আমার কাছেই আছে ওগুলো।”

“আপনার কাছে?”

“হ্যাঁ। বিচারের পর ওর স্টুডিও থেকে সবকিছু নিয়ে এসেছি আমি। যেগুলো জরুরি মনে হয়েছে, সবই রেখে দিয়েছি। ওর পরনে অনেকগুলো স্কেচ, নোটবুক, তেলরঙ-এসব আরকি। ওর হয়ে সংরক্ষন করছি বলতে পারেন।”

“খুব ভালো কাজ করছেন।”

“তাহলে আমার পরামর্শ মনে ধরেছে আপনার? অ্যালিসিয়াকে ছবি আঁকার সুযোগ করে দিচ্ছেন?”

“হ্যাঁ। তবে আদৌ কিছু হবে কি না সেটা সময়ই বলে দিবে।”

“কিছু না কিছু তো জানা যাবেই। তবে আমার একটা অনুরোধ আছে।”

“কি?”

“ও যদি কিছু আঁকে, আমাকে অবশ্যই দেখাবেন।”

তার কণ্ঠে অদ্ভুত একটা আকুতি। স্টোররুমে যত্নের সাথে রাখা অ্যালিসিয়ার ছবিগুলোর কথা মনে হলো আমার। ওগুলো কি আসলে অ্যালিসিয়ার জন্যে সংরক্ষণ করছে সে, নাকি নিজের জন্যে?

“আপনি কি একটু কষ্ট করে জিনিসগুলো গ্রোভে দিয়ে যেতে পারবেন?” জিজ্ঞেস করলাম। “সমস্যা হবে?”

“ইয়ে, মানে-” তার কণ্ঠের দ্বিধান্বিত ভাবটা বুঝতে কষ্ট হলো না আমার।

“নাকি আমি এসে নিয়ে গেলেই সুবিধা?” তাকে এ যাত্রা বাঁচিয়ে দিলাম।

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে বরং?”

এখানে এসে অ্যালিসিয়ার সাথে দেখা করতে ভয় পাচ্ছে জিন-ফিলিক্স। কেন? কি ঘটেছিল তাদের মাঝে?

কিসের মুখোমুখি হতে এত ভয় তার?

.

২.২৭

“তোমার বান্ধবীর সাথে কখন দেখা করবে?” জিজ্ঞেস করলাম।

“সাতটার সময়, রিহার্সেলের পর।” আমার হাতে কফির কাপটা তুলে দিল ক্যাথি। “ওর নাম নিকোল। ভুলে গেছো বোধহয়?”

“ওহ হ্যাঁ,” হাই তুলে বললাম।

চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকালো ক্যাথি। “আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন হচ্ছে নিকোল। আর তুমি তার নাম ভুলে গেলে? ওর পার্টিতেও তো গিয়েছিলে!”

“আরে বাবা, মনে আছে তো আমার। শুধু নামটাই একটু ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা যাও, আর ভুলবো না।”

 “আরো গাঁজা খাও,” মাথা ঝাঁকিয়ে বলল ক্যাথি। “আমি গোসলে যাই, দেরি হয়ে যাবে নাহলে।”রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে।

আপনমনেই হেসে উঠলাম।

সন্ধ্যা সাতটার সময়ই সব হেস্তনেস্ত হয়ে যাবে।

***

সাতটা বাজার পনেরো মিনিট আগে আমি ক্যাথির রিহার্সাল হলের সামনে এসে উপস্থিত হলাম। নদীর পাশ দিয়ে হাঁটতে ভালোই লাগছিল।

ইচ্ছে করেই একটু দূরে বসেছি, তবে এখান থেকে দরজাটা ঠিকই দেখা যায়। আপাতত মুখ ঘুরিয়ে রেখেছি, যাতে ক্যাথি আগে বের হলেও যাতে আমাকে দেখতে না পায়। কিছুক্ষণ পরপর অবশ্য দরজার দিকে আপনা থেকেই চোখ চলে যাচ্ছে। এখন অবধি কেউ বের হয়নি।

সাতটা পাঁচের সময় অবশেষে খুলল দরজাটা। হাসিঠাট্টার শব্দ শুনতে পেলাম। অভিনেতা অভিনেত্রীরা বের হয়ে আসছে দলবেঁধে। তিনজন, চারজনের দলগুলো কথা বলতে বলতে একসময় দূরে মিলিয়ে গেল। কিন্তু ক্যাথি ছিলনা তাদের মাঝে।

আরো পাঁচ মিনিট চলে গেল। দশ মিনিট। ধীরে ধীরে লোকজনের সংখ্যা কমতে কমতে একসময় একদম ফাঁকা হয়ে গেল জায়গাটা। নিশ্চয়ই আমি আসার আগেই বেরিয়ে গেছে সে। নাকি এখানে আসেইনি?

রিহার্সেলে আসার ব্যাপারে মিথ্যে বলেছিল সকালে?

উঠে দাঁড়িয়ে প্রবেশপথের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমাকে নিশ্চিত হতেই হবে। যদি ওর চোখে পড়ে যাই, তখন কি বলবো? কি ছুতো দিব এখানে আসার? ওকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছি? হ্যাঁ, এরকম কিছুই বলতে হবে। দুই বান্ধবীকে ডিনারে নিয়ে যেতে চাই আমি-এটা শুনলে নিশ্চয়ই আর কিছু সন্দেহ করবে না। ক্যাথি অবশ্য এড়িয়ে যেতে চাইবে। বলবে যে নিকোল অসুস্থ অথবা নিকোল শেষ মুহূর্তে মানা করে দিয়েছে। তখন দেখা যাবে বাকিটা সন্ধ্যা অস্বস্তি নিয়ে কাটাবো দু’জন। দীর্ঘ নীরবতাই হবে আমাদের একমাত্র সঙ্গি।

দরজার কাছে পৌঁছে গেছি। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে মন থেকে সব দ্বিধা ঝেরে ফেললাম। যা হওয়ার হবে। দরজা খুলে পা রাখলাম ভেতরে।

 একটা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ এসে লাগলো নাকে। কংক্রিটের ওপরে কোন কার্পেট বা ওয়ালপেপারের বালাই নেই। ক্যাথিদের রিহার্সাল হয় এই দালানের চার তলায়। লিফট নেই, তাই হেঁটেই উঠতে হয় প্রতিদিন। অনেকবার এ নিয়ে অভিযোগও করেছে ক্যাথি। সবে দোতলার সিঁড়িতে পা দিতে যাবো এ সময় ওপর তলা থেকে একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। ফোনে কথা বলছে ক্যাথি:

“আমি জানি বাবা…খুব বেশিক্ষণ লাগবে না আর। বাই।”

জমে গেছি আমি। আর কিছুক্ষণের মধ্যে মুখোমুখি হয়ে যাবো ওর সাথে। একদম শেষ মুহূর্তে হুঁশ ফিরে পেলাম। লাফিয়ে নিচে নেমে ডানদিকে সরে যাওয়া মাত্র আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল ক্যাথি। সোজা দরজার দিকে হাঁটা দিয়েছে। তাড়াহুড়ো না থাকলে আমাকে অবশ্যই চোখে পড়তো তার।

আমিও দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এলাম। ব্রিজের উদ্দেশ্যে প্রায় দৌড়াচ্ছে এখন ক্যাথি। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে ওর পিছু নিলাম। তবে চারপাশে ভিড় থাকায় খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।

ব্রিজ পার হয়ে মেট্রোরেল স্টেশনের দিকে পা চালালো ক্যাথি। হাঁটার ফাঁকে ফাঁকে ভাবছি যে কোন ট্রেনে চড়বে। কিন্তু মেট্রোরেলে উঠলো না ও। বরং সোজা হেঁটে স্টেশনের অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে এলো। চারিং ক্রস রোডের দিকে হাঁটছে এখন। পিছু নিলাম। একসময় চারিং ক্রস রোড পার হয়ে সোহোর কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম হাঁটতে হাঁটতে। এখানকার রাস্তাগুলো তুলনামূলক সরু। বেশ কয়েকবার ডানে-বামে মোড় নিল ক্যাথি। এরপর অকস্মাৎ থেমে গেল লেক্সিংটন স্ট্রিট চৌরাস্তায়। কারো জন্যে অপেক্ষা করছে।

এখানেই তাহলে দেখা করে তারা। ভালো একটা জায়গা বেছে নিয়েছে। চারপাশে ভিড় থাকে সবসময়, কারো চোখে পড়বে না। উপায়ন্তর না দেখে রাস্তার পাশের একটা পাবে ঢুকে পড়লাম। বার কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালে ক্যাথিকে স্পষ্ট দেখা যায়। দাড়িওয়ালা বারটেন্ডার ভ্রু উঁচু করে তাকালে আমার দিকে। “কি লাগবে?”

“গিনেস। এক পেগ।”

হাই তুলে কাউন্টারের অন্য পাশ থেকে একটা গ্লাস এনে আমার সামনে রাখলো সে। ক্যাথি যদি সরাসরি এদিকে তাকায়, তবুও জানালার ফাঁক গলে আমাকে দেখতে পাবে না। কিছুক্ষণ পর আসলেও তাকালো সে। হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেল আমার। কিন্তু না, ধরা পড়ে যাইনি। চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে ক্যাথি।

পাঁচ মিনিট চলে গেল। এখনও অপেক্ষা করছে ক্যাথি। আমি গ্লাসটা নাড়াচাড়া করে চলেছি একমনে। আসতে দেরি করছে লোকটা। ক্যাথির তো এরকমটা পছন্দ করার কথা নয়। কারো জন্যে সচরাচর অপেক্ষা করেনা সে। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেই দেরি করে। বিরক্তির ছাপ দেখতে পাচ্ছি ওর চেহারায়, বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।

এসময় একটা লোক রাস্তা পার হয়ে তার দিকে এগোতে লাগলো। কয়েক সেকেন্ডেই তাকে মেপে ফেললাম। চওড়া ছাতি, কাঁধ অবধি নেমে এসেছে সোনালী চুল। এই বিষয়টা অবাক করলো আমাকে, ক্যাথি সাধারণত কালো চুলের পুরুষদের পছন্দ করে, আমার মতন। হয়তো এই বিষয়েও মিথ্যে বলেছে।

কিন্তু লোকটা ওর পাশ কাটিয়ে চলে গেল। তার দিকে ফিরেও তাকালো না ক্যাথি। দ্রুত দৃষ্টির আড়াল হয়ে গেল সে। তাহলে এই লোকটা না। ক্যাথি আর আমার মনে হয়তো একই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে এখন, আজকে আর আসবে না সে।

ঠিক এসময় ওর মুখে হাসি ফুটলো, কাউকে দেখেছে নিশ্চয়ই। রাস্তার অন্যপাশে কারো উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছে এখন। অবশেষে, ভাবলাম আমি, এসেছে তাহলে। ঘাড় সামনে বাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করলাম লোকটাকে।

কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বছর তিরিশের এক স্বর্ণকেশী এগিয়ে গেল গেল ওর দিকে। পরনের স্কার্টটা অতিরিক্ত খাটো, চেহারা আকর্ষণীয়ই বলা চলে। তাকে চিনতে অবশ্য কোন সমস্যা হলো না আমার। নিকোল। একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো দুই বান্ধবী। এরপর হাত ধরে হাসতে হাসতে হাঁটা দিল ওপর দিকে।

অর্থাৎ ক্যাথি সত্যটাই বলেছিল আমাকে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সত্যটা জেনে আশ্বস্ত হবার পরিবর্তে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলাম। না উদ্বিগ্ন না, আসলে হতাশ হয়েছি।

এরকমটা তো হবার কথা ছিল না!

.

২.২৮

“তোমার কাছে কেমন লাগছে অ্যালিসিয়া? অনেক আলো না? পছন্দ হয়েছে?”

গ্রোভের নতুন স্টুডিও রুমটা গর্বের সাথে দেখাচ্ছে ইউরি। নার্স স্টেশনের পাশের অব্যবহৃত খালি রুমটা যে স্টুডিও হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, এই বুদ্ধিটা তার মাথা থেকেই বেরিয়েছিল। আমিও আপত্তি করিনি। অন্তত রোয়েনার আর্ট থেরাপি রুমের চেয়ে অনেক ভালো জায়গাটা। ওখানে থাকলে সে নিশ্চিত কোন না কোন ছুতোয় জ্বালাতন করতে অ্যালিসিয়াকে। এখানে সে নিজের মত করে আঁকাআঁকি করতে পারবে, কেউ বিরক্ত করবে না।

ঘরের চারপাশে নজর বুলালো অ্যালিসিয়া। তার ইজেলটা জানালার পাশে বসানো হয়েছে কারণ ওখানে অল্প হলেও প্রাকৃতিক আলো পাবে। রংগুলো টেবিলের ওপর সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা। অ্যালিসিয়া সেদিকে এগোলে আমার উদ্দেশ্যে চোখ টিপলো ইউরি। গোটা ব্যাপারটায় তার উৎসাহই সবচেয়ে বেশি। সেজন্যে আমি আসলেও কৃতজ্ঞ। সে না থাকলে এতকিছুর বন্দোবস্ত করতে বেগ পেতে হতো। তাছাড়া রোগিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্টাফও সে, তাই তাকে হাত করতে পারাটা যে কারো জন্যে সুবিধাজনক। “আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো। এবারে আপনি সামলান তাহলে,” বলে হাসিমুখে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল সে। তবে অ্যালিসিয়ার এসবের দিকে কোন মনোযোগ নেই।

নিজের দুনিয়ায় হারিয়ে গেছে সে। মিষ্টি একটা হাসি মুখে ফুটিয়ে একমনে রংগুলো দেখছে। কালো তুলিগুলোর গায়ে এমনভাবে হাত বুলাচ্ছে যেন প্রেমিকের দেয়া ফুল। তিনটা রঙের টিউব আলাদা করলো অ্যালিসিয়া-প্রুসিয়ান ক্ল, ইন্ডিয়ান ইয়েলো আর ক্যাডমিয়াম রেড। এরপর ইজেলে আটকানো ফাঁকা ক্যানভাসটার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো, ভাবছে কিছু একটা। দীর্ঘ একটা সময় মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকলো ওখানেই, যেন একটা ঘোর পেয়ে বসেছে। তার শরীরটা এখানে থাকলেও মন নিশ্চয়ই উড়ে বেড়াচ্ছে স্বপ্নের জগতে, যে স্বপ্নের জগতে কেবল রঙের ছড়াছড়ি। হঠাৎ করেই যেন ঘোর কেটে যায় অ্যালিসিয়ার, টেবিলের দিকে ফিরে একটা প্যালেটে কিছুটা সাদা রঙ নিয়ে তার মধ্যে সামান্য একটু লাল রঙ ঢালল। একটা তুলি দিয়ে রংগুলো মেশাতে হচ্ছে তাকে। কারণ ধারালো সব সরঞ্জাম আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে, প্যালেট নাইফগুলোও।

তুলিতে লাল রঙ মেখে সাদা ক্যানভাসের ঠিক মাঝখানে একটা দাগ দেয় অ্যালিসিয়া। এরপর এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে আরেকটা দাগ দিল পাশে। আরেকটা। কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ছবি আঁকায়। কোন জড়তা বা অস্বস্তির বালাই নেই তার মাঝে। একমনে একেই চলেছে। যেন এই কাজটার জন্যেই জন্ম হয়েছিল অ্যালিসিয়া বেরেনসনের। দূর থেকে দৃশ্যটা দেখতে লাগলাম আমি।

পুরোটা সময় চুপ থাকলাম, শব্দ করে শ্বাস ফেলতেও ভয় হচ্ছিল। বারবার মনে হচ্ছিল এই সময়টুকু একান্তই অ্যালিসিয়ার ব্যক্তিগত, এখানে আমার কোন স্থান নেই। তবে আমার উপস্থিতি নিয়ে তার কোন আপত্তি নেই। কয়েকবার তো ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেছে আমি আছি কি না।

সেই সময়গুলোয় মনে হচ্ছিল আমার অভিব্যক্তি খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে সে।

কারণটাও বুঝে গেলাম খুব শিঘ্রই।

***

পরবর্তী কয়েকদিনে ছবিটা ধীরে ধীরে রূপ নিতে শুরু করে, শুরুর দিকে অবশ্য বোঝা যাচ্ছিল না যে কি আঁকছে সে। কিন্তু কয়েকদিন বাদে সেই বিভ্রান্তিও দূর হয়ে গেল। নিখুঁতভাবে ক্যানভাসে ফুটে উঠছে সবকিছু।

একটা লাল ইটের দালান এঁকেছে অ্যালিসিয়া, দেখলেই গ্রোভের কথা মনে হবে যে কারো। কিন্তু ক্যানভাসের হাসপাতালটায় আগুন ধরে গিয়েছে। আর সেই আগুনের লেলিহান শিখার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে একজন পুরুষ আর একজন নারী। লাল চুল দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে নারীটি অ্যালিসিয়া। এবং তাকে কোলে করে ধরে রাখা মানুষটা আর কেউ নয়, আমি। আগুন প্রায় আমার পায়ের কাছ অবধি পৌঁছে গেছে।

তবে খুব ভালো করে দেখলে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে অ্যালিসিয়াকে কি আসলেও উদ্ধার করছি আমি, নাকি আগুনে ফেলে দিতে উদ্যত হয়েছি?

.

২.২৯

“এটা কেমন কথা! এখানে বেশ কয়েক বছর ধরে আসা যাওয়া করছি আমি। কেউ তো কখনো বলেনি যে আসার আগে ফোন করতে হবে। এভাবে অপেক্ষা করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। অনেক কাজ ফেলে এসেছি।”

 রিসিপশন ডেস্কের কাছে দাঁড়িয়ে এভাবে তারস্বরে অভিযোগ করেই চলেছে এক মহিলা। কথা শুনে মনে হচ্ছে আমেরিকান। স্টেফানি অবশ্য তাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে। বারবি হেলমানকে চিনতে আমার কোন অসুবিধে হলো না, গ্যাব্রিয়েল খুন হবার পর পেপার-টিভিতে অহরহ দেখা যেত তাকে। ঘটনার রাতে সে-ই প্রথম ফোন করে পুলিশকে।

বার্বির বয়স পঁয়ষট্টির আশেপাশে, চুল সোনালী। দূর থেকেও তার শ্যানেল নম্বর ফাইভ পারফিউমের গন্ধ নাকে আসছে, প্লাস্টিক সার্জারির কারণে ঠোঁটগুলো এখন আর চেনার মত অবস্থায় নেই। বার্বি নামটা তার জন্যে আসলেও মানানসই-চেহারাসুরুত পুতুলটার মতনই (ওজন একটু বেশি আর কি)। আচরণে বোঝাই যাচ্ছে সবসময় ইচ্ছেমতন সবকিছু পেয়ে অভ্যস্ত। আর এজন্যেই তাকে যখন জানানো হয়েছে যে এখন থেকে রোগিদের সাথে দেখা করার জন্যে আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আসতে হবে, মাথায় রক্ত চড়ে গেছে।

“ম্যানেজারকে ডাকুন এখনই, এমন ভঙ্গিতে হাত নেড়ে কথাটা বলল যেন কোন রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে ডেকে পাঠাচ্ছে। এসবের মানে কি? কোথায় সে?”

“আমিই এখানকার ম্যানেজার, মিসেস হেলমান,” স্টেফানি বলল। “আমাদের আগেও দেখা হয়েছে।”

এই প্রথম স্টেফানির প্রতি এক ধরণের সহানুভূতি অনুভব করছি আমি; বার্বির সাথে এভাবে কথা বলতে কারোই ভালো লাগার কথা নয়। স্বাভাবিকের চাইতে বড় দ্রুত কথা বলে বার্বি, মাঝে একবারের জন্যে বিরতিও দেয় না। ফলে তার কথার জবাবে কিছু বলা মুশকিল।

 “অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার ব্যাপারে আগে তো কিছু বলেননি আপনি,” বার্বি হেসে বলল। “এর চাইতে তো ক্যাফে ট্যামারিন্ডে টেবিল বুকিং দেয়া সহজ।”

 “আমি কি কোনভাবে সাহায্য করতে পারি?” সামনে এগিয়ে স্টেফানির উদ্দেশ্যে একবার হেসে বললাম।

“না, ধন্যবাদ। আমিই সামলাতে পারবো,” কিছুটা বিরক্ত মনে হলো ইউনিট ম্যানেজারকে।

 চোখে আগ্রহ নিয়ে আমাকে আপাদমস্তক দেখলো বার্বি। “আপনি কে?”

“আমি থিও ফেবার। অ্যালিসিয়ার থেরাপিস্ট।”

“তাই নাকি?” বার্বি বলল। “দারুণ তো।” কথা শুনে মনে হচ্ছে ম্যানেজারদের চাইতে থেরাপিস্টদের সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সে। স্টেফানির প্রতি আগ্রহ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছে অ্যালিসিয়ার প্রাক্তন প্রতিবেশী। এমন আচরণ করছে যেন সে একজন সাধারণ রিসিপশনিস্ট বৈ কিছু নয়।

“আপনি নিশ্চয়ই নতুন? আগে তো দেখিনি।”প্রশ্ন করলেও আমাকে জবাব দেয়ার কোন সুযোগ দিলো না বাৰ্বি, নিজ থেকেই আবারো বলে উঠলো, “সাধারণত প্রতি দুই মাস পরপর আসি আমি। তবে এবারে কিছুটা ব্যস্ত থাকায় লম্বা একটা সময় আসতে পারিনি। আমেরিকা গিয়েছিলাম পরিবারের সবার সাথে দেখা করতে। ফিরে আসা মাত্র তাই অ্যালিসিয়ার খোঁজ নিতে এসেছি। ওকে বড্ড মিস করছিলাম। অ্যালিসিয়া কিন্তু আমার খুব ভালো বন্ধু, জানেন বোধহয়।”

“না, জানতাম না।”

“আরে হ্যাঁ। ওরা যখন প্রথম বাড়িটায় ওঠে, আমিই সব বিষয়ে সাহায্য করি। খুব দ্রুত ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় অ্যালিসিয়ার সাথে। এমন কোন বিষয় নেই যেটা নিয়ে আমার সাথে আলাপ করতো না অ্যালিসিয়া। বুঝলেন তো কি বলছি? আমাকে সব জানাতো সে। সব।”

“আচ্ছা।”

এ সময় ইউরিকে দেখতে পেয়ে তাকে ইশারায় রিসিপশনে আসতে বললাম। “মিসেস হেলমান অ্যালিসিয়ার সাথে দেখা করতে এসেছেন।”

“আমাকে বার্বি বললে ডাকবেন। ইউরি তো আমাকে ভালো করেই চেনে,” বলে হেড নার্সের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলো সে। “আমরা পুরনো বন্ধু। কিন্তু এই মহিলা-”

মাছি তাড়াবার ভঙ্গিতে স্টেফানির উদ্দেশ্যে হাত নাড়লো বার্বি। এতক্ষণে কথা বলার সুযোগ পেল ইউনিট ম্যানেজার। “মাফ করবেন, মিসেস হেলমান। কিন্তু আমাদের নিয়ম কানুনে কিছুটা কড়াকড়ি করা হয়েছে রোগিদের নিরাপত্তার স্বার্থে। এখন থেকে আগে ফোন করে”

“উফ! আবারো সেই একই প্যাচাল। কান পচে গেল আমার।”

এবারে হাল ছেড়ে দিল স্টেফানি। ইউরি বার্বিকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করলে আমিও চললাম তাদের সাথে।

দর্শনার্থীদের জন্যে আলাদা রুম আছে গ্রোভে। আমাদের সেখানে রেখে দ্রুত গিয়ে অ্যালিসিয়াকে ভেতর থেকে নিয়ে এলো ইউরি। রুমে টেবিল একটাই, দুপাশে দুটো চেয়ার। ইউরি বাদেও আরো দু’জন নার্স দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে। ভেতরে ঢুকে বার্বিকে দেখে কোন ভাবান্তর হলো না অ্যালিসিয়ার। মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে পড়লো।

তবে বার্বিকে সে তুলনায় যথেষ্ট আবেগী মনে হচ্ছে এখন। “অ্যালিসিয়া, তোমার কথা অনেক মনে পড়ছিল, জানো? আরো শুকিয়ে গেছে। আমার যদি এরকম ফিগার হতো! কেমন আছো তুমি? ঐ দজ্জাল মহিলার কারণে আরেকটু হলেই না দেখা করে চলে যেতে হতো আজকে

একা একাই এভাবে অনর্গল কথা চালিয়ে গেল বাৰি। স্যান ডিয়েগোতে গিয়ে কি করেছে, কার কার সাথে দেখা করেছে–সব বিস্তারিত বলল। গোটা সময় পাথরের মত মুখ করে বসে থাকলো অ্যালিসিয়া, যেন কোন কথাই তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না। বিশ মিনিট পর অবশেষে কথার ট্রেন থামালো বার্বি। অ্যালিসিয়াকে রুম থেকে নিয়ে গেল ইউরি, এখনও তার মুখে ঠিক আগের মতনই অনাগ্রহ।

বার্বি গ্রোভ থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তাকে ডাক দিলাম আমি। “আপনার সাথে কিছু কথা বলতে পারি?”

মাথা নেড়ে সায় জানালো সে। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে যেন জানতে যে আমি আসবো। “অ্যালিসিয়ার ব্যাপারে কথা বলবেন? যাক, এতদিনে কারো হুশ হলো তাহলে। এমনকি পুলিশের লোকগুলোও আমার কথায় পাত্তা দেয়নি, এমন ভাব করছিল যেন আমি পাগল। কেউ বিশ্বাসই করেনি যে আমি অ্যালিসিয়ার ভালো একজন বন্ধু। ওর সব কথা জানি। এমন সব বিষয়ে আমার সাথে আলাপ করতে সে, আপনি শুনলে তাজ্জব বনে যাবেন।”আমার দিকে তাকিয়ে উদ্দেশ্যপূর্ণ একটা হাসি দিল বার্বি। বুঝতে পেরেছে, আমি আগ্রহী অ্যালিসিয়ার ব্যাপারে শুনতে।

“কী রকম বিষয়ে আলাপ করতো?”

“আসলে এখানে দাঁড়িয়ে তো কিছু বলা সম্ভব না, পরনের পশমী কোটটা ঠিকঠাক করে বলল বার্বি। “আমার একটা কাজও আছে এখন। আজ সন্ধ্যায় নাহয় বাসায় এসে পড়ুন, এই ছয়টার দিকে?”

 বার্বির সাথে তার বাসায় গিয়ে কোন বিষয়ে আলাপ করার ইচ্ছে একদমই নেই আমার। ডায়োমেডেন্স জানতে পারলে তুলকালাম বাধিয়ে দেবেন। কিন্তু হাতে অন্য কোন উপায়ও নেই। বার্বি কতটা জানে সেটা বের করতেই হবে আমাকে। জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম, “আপনার ঠিকানাটা?”

.

২.৩০

হ্যাম্পস্টেড হিথের উল্টোদিকের বাসাগুলোর একটায় থাকে বার্বি। সামনেই বিশাল একটা পুকুর। বাসা তো না, ছোটখাটো একটা দুর্গ। দামও নিশ্চয়ই সেরকম।

গ্যাব্রিয়েল আর অ্যালিসিয়া পাশের বাসাটায় ওঠার অনেক আগে থেকেই হ্যাম্পস্টেড হিথে থাকে বাৰি। তার প্রাক্তন স্বামী একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার, সেই সুবাদে লন্ডন এবং নিউ ইয়র্কের আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতে হতো তাকে। পরবর্তীতে বার্বিকে ডিভোর্স দিয়ে কম বয়সি এক মেয়েকে বিয়ে করে সে। ফলে লন্ডনের বাড়িটা পুরোপুরিভাবে বার্বির নামে লিখে দিতে হয়। দুই পক্ষেরই লাভ হয়েছে, হাসিমুখে বলল বার্বি। “বিশেষ করে আমার।”

 গোটা এলাকায় একমাত্র বার্বির বাড়িটাই ফ্যাকাসে নীল রঙের, অন্যগুলোয় সাদার আধিপত্য বেশি। বাড়ির সামনের বাগানটা বেশ সাজানো গোছানো।

দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে স্বাগত জানালো বার্বি। “হ্যালো, সময় মতনই এসে পড়েছেন দেখছি। এটা খুবই ভালো অভ্যাস। ভেতরে আসুন।”

পথ দেখিয়ে আমাকে লিভিংরুমে নিয়ে আসলো সে, অনর্গল কথা বলেই চলেছে। আমি কেবল সময়মতো হা-হুঁ করছি। বাসার ভেতরটা গ্রিনহাউজের মত গরম। চারদিকে নানা জাতের, নানা বর্ণের অসংখ্য ফুলগাছ। গোলাপ, লিলি, রংবেরঙের অর্কিড। পেইন্টিং, আয়না আর বেশ কয়েকটা বাঁধানো ছবির ফ্রেম টাঙিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালে দেয়ালে। সেই সাথে ছোটখাট মূর্তি, দামি ফুলদানি, শোপিসও আছে। প্রত্যেকটা জিনিসই দামি, কিন্তু একসাথে ঠেসে রাখাতে খুব একটা ভালো দেখাচ্ছে না। এসব থেকে বার্বির মানসিক অবস্থার আবছা একটা ধারণা পাওয়া যায়। ভেতরে ভেতরে কোন কিছু খুব অস্থিরতা অনুভব করে সে। তার শৈশব কেমন কাটতে পারে সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলাম। এভাবে জিনিস জড়ো করা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনাকাটা করা-ব্যক্তির লোভের দিকেই ইঙ্গিত করে।

বড় একটা সোফা থেকে কুশন সরিয়ে জায়গা করে বসতে হলো আমাকে। একটু বেশিই বড় সোফাটা। ড্রিংকস ক্যাবিনেট খুলে দুটো গ্লাস বের করলো বার্বি।

“কি নিবেন বলুন। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে হুইস্কি পছন্দ। আমার আগের স্বামী তো দিনে এক গ্যালন হুইস্কি সাবাড় করে ফেলতো। বলতো যে আমাকে সহ্য করতে হলে নাকি ওই পরিমাণই খেতে হবে।” হাসি ফুটলো তার মুখে। “আমার অবশ্য ওয়াইন না হলে চলে না।”

বার্বি শ্বাস নেয়ার জন্যে থামলে অবশেষে কথা বলার সুযোগ পেলাম আমি। “আমার হুইস্কি ভালো লাগে না। আসলে সচরাচর ড্রিঙ্কও করি না অতটা…বিয়ার হলেই চলবে।”

“ওহ,” একটু বিচলিত মনে হলো বার্বিকে। “আমার কাছে তো বিয়ার নেই।”

“থাক। ড্রিঙ্ক লাগবে না আমার।”

 “কিন্তু আমার লাগবে। আজকে খুব ধকল গেছে।”

একটা গ্লাসে বেশ খানিকটা রেড ওয়াইন ঢেলে নিয়ে আমার উল্টোদিকের আরামকেদারায় পা তুলে বসলো বার্বি, যেন লম্বা গল্পের প্রস্তুতি নিচ্ছে। “এবারে আমি একান্তই আপনার।” আবারো ইঙ্গিতপূর্ণ হাসিটা ফুটল তার মুখে। “বলুন, কী জানতে চান?”

“আপনি কিছু মনে না করলে কয়েকটা প্রশ্ন করতাম।”

 “নিশ্চয়ই।”

“অ্যালিসিয়া কি কখনো কোন ডাক্তারের সাথে দেখা করার ব্যাপারে কিছু বলেছিল আপনাকে?”

 “ডাক্তার?” প্রশ্নটা শুনে কিছুটা অবাকই হলো বার্বি। “মানে সাইকিয়াট্রিস্টের কথা বলছেন?”

“সাইকিয়াট্রিস্ট বা কোন সাধারণ ডাক্তার।”

“আসলে, ঠিক মনে-” দ্বিধা ফুটলো তার চেহারায়। “দাঁড়ান, আপনি বলাতে মনে পড়লো, আসলেও একজন ডাক্তার দেখিয়েছিল ও…”

“তার নামটা মনে আছে আপনার?”

“না। কিন্তু এটা মনে আছে যে ওকে আমার নিজের ডাক্তারের কথা বলেছিলাম। ডঃ মঙ্কস। চমৎকার একজন ডাক্তার ভুদ্রলোক, আপনার দিকে তাকিয়েই গড়গড় করে সমস্যার কথা বলে দিবে। কি খেতে হবে সেটাও ঠিক করে দেন। এরপর লম্বা একটা সময় ধরে সে বর্ণনা করলো যে প্রতিদিন কি কি খাবার খায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। বারবার এটাও বলল যে আমিও যেন উঃ মঙ্কসকে দেখাই। খুব বেশিক্ষণ ধৈর্য্য ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। বেশ কায়দা করে তাকে মূল বিষয়ে ফিরিয়ে আনলাম।

“হত্যাকাণ্ডের দিন অ্যালিসিয়ার সাথে দেখা হয়েছিল আপনার?”

“হ্যাঁ, ঘটনার ঠিক কয়েক ঘন্টা আগেই,” বলে ওয়াইনে লম্বা একটা চুমুক দিল বার্বি। “মাঝেমাঝেই ওর ওখানে গিয়ে আড্ডা দিতাম। দুজনে কফি খেতে খেতে আলাপ করতাম এটাসেটা নিয়ে। তবে আমার সাথে ওয়াইনও থাকতো। আসলে, খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম আমরা।”

 ভাঙা রেকর্ডের মত কিছুক্ষণ পরপর এই কথাটা বলেই চলেছে সে। ইতোমধ্যে বার্বির স্বভাব-চরিত্র বিশ্লেষণ করে বুঝে গেছি, চরম মাত্রার আত্মকেন্দ্রিক একজন মানুষ সে; অন্যদের বোঝার কোন চেষ্টা করে না। আমি এক প্রকার নিশ্চিত, তাদের কথোপকথনে অ্যালিসিয়া খুব বেশি কিছু বলতো না।

“ঐদিন বিকেলে অ্যালিসিয়ার মানসিক অবস্থা কেমন দেখেছিলেন?”

 কাঁধ ঝাঁকায় বার্বি। “স্বাভাবিক। শুধু বলেছিল যে প্রচণ্ড মাথা ধরেছে।”

“তাকে কোন কারণে ক্ষিপ্ত মনে হয়নি?”

 “কেন, ক্ষিপ্ত মনে হওয়ার কথা ছিল নাকি?”

 “আসলে, পরিস্থিতি বিবেচনা করলে…” বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকালো বার্বি। “আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন না যে ও-ই খুনটা করেছে?” বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো সে। “আমি তো আপনাকে অন্যরকম ভেবেছিলাম।”

“দুঃখিত আমি আসলে-”

“অ্যালিসিয়ার পক্ষে কাউকে খুন করাটা সম্ভব না। ও ওরকম মেয়ে-ই না। বিশ্বাস করুন আমার কথা। ও নির্দোষ। আমি শতভাগ নিশ্চিত।”

“এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন কি করে? সব প্রমাণ তো-”

“রাখেন আপনার প্রমাণ। এরকমটা বলার উপযুক্ত কারণ আছে আমার কাছে।”

“কী রকম?”

“তবে…আপনাকে ভরসা করা যায় কি না বুঝতে পারছি না।” যেন আমাকে যাচাই করছে এমন ভঙ্গিতে তাকায় সে।

আমি যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম।

 “আসলে…একটা লোক ছিল ওখানে,” হুট করেই বলে বসে বার্বি।

“একটা লোক?”

“হ্যাঁ, নজর রাখতে অ্যালিসিয়ার ওপর।”

এক মুহূর্তের জন্যে থমকে গেলেও নিজেকে দ্রুত সামলে নিলাম। “নজর রাখতে বলতে কী বোঝাচ্ছেন?”

 “কী বোঝাবো আবার? নজর রাখতো। পুলিশকে বলেছিলাম বিষয়টা, কিন্তু তারা পাত্তাই দেয়নি। গ্যাব্রিয়েলের লাশের পাশে অ্যালিসিয়াকে দেখেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় যে খুনটা ও-ই করেছে। যত্তসব আহাম্মকের দল। অন্য ব্যাখ্যা যে থাকতে পারে, এটা মাথায়ই আসেনি তাদের।”

“অন্য আবার কি ব্যাখ্যা?”

“আপনাকে বলবো আমি। তখন বুঝতে পারবেন, আজ এখানে কেন আসতে বলেছিলাম।”

এত ভণিতা করার কি আছে, মনে মনে বললাম। মুখে অবশ্য হাসি ফুটিয়ে রেখেছি।

গ্লাসে আবারো ওয়াইন ঢেলে নিল বার্বি। “ঘটনার শুরু হত্যাকাণ্ডের দুই। সপ্তাহ আগে থেকে। অ্যালিসিয়ার ওখানে গিয়েছিলাম আড্ডা দিতে। অন্যান্য দিনের চাইতে সেদিন একটু বেশিই চুপচাপ মনে হয় ওকে। তাই জিজ্ঞেস করি যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। তখন কাঁদতে শুরু করে, একদম হাউমাউ করে কান্না। আগে কখনো ওকে কাঁদতে দেখিনি। সবসময়ই আবেগগুলো সামলে চলতো অ্যালিসিয়া…কিন্তু সেদিন আর পারেনি বেচারা। মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত মনে হচ্ছিল।”

“কিছু বলেছিল?”

“আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, এলাকায় অপরিচিত কোন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি কি না। ও নাকি খেয়াল করেছে কেউ একজন বাইরে থেকে নজর রাখে ওর ওপরে।” ইতস্ততা খেয়াল করলাম বার্বির হাবভাবে। “আচ্ছা, আপনাকে দেখাই। আমাকে ছবিসহ একটা মেসেজও পাঠিয়েছিল।”

সদ্য ম্যানিকিউর করা হাত দিয়ে মোবাইল ফোনটা তুলে নিয়ে ছবিটা খুঁজতে থাকে বার্বি। কিছুক্ষণ সময় লাগে খুঁজে পেতে। ফোনটা আমার সামনে মেলে ধরে এরপর।

কিছু না বলে তাকিয়ে থাকি। কি দেখছি এটা বুঝতে খানিকটা সময় লেগে যায়। একটা গাছের ছবি, অস্পষ্ট।

“এটা কি?”

 “দেখে কি মনে হচ্ছে?”

“একটা গাছ?”

 “গাছের পেছনে।”

গাছের পেছনে ধূসর রঙের কিছু একটা আছে। কিন্তু সেটা ল্যাম্পপোস্টও হতে পারে আবার একটা কুকুরও হতে পারে।

“একটা লোক। একটু খেয়াল করে দেখলেই বুঝবেন।”

আমার কাছে মনে হলো না গাছের পেছনে কেউ আছে, কিন্তু তর্ক করাটা অমূলক। এই মুহূর্তে বার্বির মনোযোগ অন্যদিকে ফেরানো যাবে না। “আর?”

“আর কিছু না, এটুকুই।”

 “কিন্তু পরে কি হয়েছিল?”

কাঁধ ঝাঁকায় বার্বি। “কিছু না। আমি অ্যালিসিয়াকে বলি পুলিশকে জানাতে, কিন্তু তখন জানতে পারি যে ও ব্যাপারটা ওর স্বামীকেও বলেনি।”

“গ্যাব্রিয়েলকে বলেনি? কেন?”

“জানি না। আমার ধারণা গ্যাব্রিয়েল হয়তো ব্যাপারটা গুরুত্ব দিত না, এজন্যে বলেনি। যাইহোক, আমি ওকে বারবার বলছিলাম পুলিশকে জানাতে। কারণ এর সাথে তো আমার নিরাপত্তাও জড়িয়ে আছে, তাই না? বাইরে অচেনা একটা লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে, যদি উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে? রাতের বেলা ঘুমোতে গিয়েও শান্তি পাবো না।”

“অ্যালিসিয়া আপনার পরামর্শ শুনেছিল?”

মাথা ঝাঁকায় বার্বি। “না, শোনেনি। কয়েকদিন পর বলে, গ্যাব্রিয়েলের সাথে আলাপ করেছে বিষয়টা নিয়ে। গোটাটাই নাকি তার কল্পনা ছিল, আমাকেও ভুলে যেতে বলে। আর এটাও বলে দেয় যে গ্যাব্রিয়েলের সামনে যেন কখনো প্রসঙ্গটা না তুলি। ছবি ডিলিট করে দিতে বলেছিল, কিন্তু আমি করিনি। পুলিশকে দেখিয়েছি, কিন্তু আগ্রহী মনে হয়নি তাদের। তারা আসলে অ্যালিসিয়াকেই দোষারোপ করে আসছে শুরু থেকে। আমার ধারণা তাদের বড়সড় ভুল হচ্ছে কোথাও। নিঃসন্দেহে অন্য কেউ জড়িত এসবের সাথে। আরেকটা ব্যাপার, নাটুকে ভঙ্গিতে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল বার্বি। “অ্যালিসিয়া আসলে ভয় পাচ্ছিল।”

এক চুমুকে গ্লাসের বাকি ওয়াইনটুকু সাবাড় করে দিল বার্বি। আবারো হাত বাড়ালো বোতলের দিকে। “আপনি কিছুই নেবেন না তাহলে?”

মানা করে দিলাম আবারো। ধন্যবাদ জানিয়ে কাজের অজুহাতে বেরিয়ে গেলাম ওখান থেকে। আর সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই, যা জানার ছিল ততক্ষণে জেনে গিয়েছি। সেগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

বাইরে বেরিয়ে দেখি অন্ধকার হয়ে গেছে। পাশের বাড়িটার সামনে দাঁড়াই ক্ষণিকের জন্যে-অ্যালিসিয়ার পুরনো ঠিকানা। বিচারের পরপরই বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল বাড়িটা, এক জাপানিজ দম্পতি কিনে নিয়েছে। বার্বির মতে তাদের মধ্যে নাকি সামাজিকতা বলে কিছু নেই। আসলে কয়েকবার মেলামেশার চেষ্টা করেও সফল হয়নি সে। বার্বির মত প্রতিবেশী থাকলে আমি কি করতাম? অ্যালিসিয়াই বা মনে মনে কি ভাবতো তাকে নিয়ে?

একটা সিগারেট ধরিয়ে সদ্য শোনা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম। অ্যালিসিয়া তাহলে বার্বিকে জানিয়েছিল যে কেউ তার প্রতি লক্ষ্য রাখছে। পুলিশের লোকেরা ভেবেছে এসব বার্বির মনগড়া কথা, সেজন্যেই পাত্তা দেয়নি। তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, বার্বির কথা বিশ্বাস করা আসলেও কঠিন।

তার মানে অ্যালিসিয়া এতটা ভয় পেয়েছিল যে বার্বিকে কথাটা বলতে একপ্রকার বাধ্য হয়, পরবর্তীতে গ্যাব্রিয়েলকেও জানায়। এরপর কি হয়? আর কাউকে কি অ্যালিসিয়া এ ব্যাপারে কিছু বলে? এটা জানতেই হবে আমাকে।

হঠাই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল আমার। সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকা, সব কথা নিজের মধ্যে চেপে রাখা। এমন কেউ ছিল না যাকে আমি ভরসা করে কিছু বলতে পারতাম। বাবার ভয়টা তাই সার্বক্ষণিক একটা ফাসের মত চেপে থাকতো গলার কাছটায়। অ্যালিসিয়ার অবস্থাও নিশ্চয়ই সেরকমই হয়েছিল, নতুবা বার্বিকে কিছু বলতো না সে।

কেঁপে উঠলাম, মনে হচ্ছে কেউ যেন নজর রাখছে আমার ওপরে।

ঘুরে দাঁড়ালাম, কিন্তু কাউকেই চোখে পড়লো না। আমি ছাড়া আর কেউ নেই এখানে। ছায়ায় টাকা রাস্তাটা একদম খালি, জনমানবশূন্য। চারপাশে নিচ্ছিদ্র নীরবতা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *