৩. ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা

ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা

জাহাঙ্গীর তাঁর প্রপিতামহ বাবরের মত নিজের স্মৃতিকথা–তুজুকে-ই জাহাঙ্গীরি–লিখেছিল যা তিনি ১৬০৫ সালে লিখতে শুরু করেন, যে বছর সম্রাট হিসাবে তাঁর অভিষেক হয়। বাবরের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন একটা পৃথিবীর বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, জাহাঙ্গীরের স্মৃতিকথাও প্রাণবন্ত আর বিশদ এবং অনেকক্ষেত্রেই ভীষণ ভোলামেলা। তাঁর স্মৃতিকথায় আমরা বিরোধিতায় আকীর্ণ একজন মানুষকে খুঁজে পাই–তিনি কখনও চাম্পা ফুলের জটিল সৌন্দর্য কবিতার ছন্দে বর্ণনা করছেন বা আমের চমৎকার স্বাদের কথা বলছেন আবার পরমুহূর্তেই স্বীকার করছেন তিনি তার আব্বাজানের বন্ধু আর পরামর্শদাতা আবুল ফজলকে খুন করিয়েছেন কারণ তিনি তাঁর বন্ধু ছিলেন না। আরেকটা দীর্ঘ আর তিক্ত পরিচ্ছেদে তিনি নিজের একসময়ের প্রিয় পুত্র খুররমের কাছ থেকে বিচ্ছেদের বর্ণনা দিয়েছেন, অবজ্ঞাভরে তাকে সম্বোধন করেছেন যে অমঙ্গলের বার্তাবাহী এবং বি-দৌলত, বদমাশ’ হিসাবে। মেহেরুন্নিসার প্রতি তার ভালোবাসা স্পষ্ট। তিনি একটা পরিচ্ছদে তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে একটা খাটিয়ার উপর থেকে এক গুলিতে মেহেরুন্নিসা একটা বাঘ শিকার করেছিল যা, তিনি লিখছেন ভীষণ কঠিন একটা কাজ। ১৬২২ সালে, ক্রমশ দুবর্ল হয়ে পড়ায় জাহাঙ্গীর তাঁর স্মৃতিকথা লেখার দায়িত্ব মুতামিদ খানকে, তার একজন লিপিকার, দেন যিনি মহবত খানের বিদ্রোহের সময় উপস্থিত ছিল। তিনি বিশ্বস্ততার সাথে ১৬২৪ সাল পর্যন্ত স্মৃতিভাষ্য লেখা বজায় রাখেন এবং তারপরে নিজের ভাষ্য লিখেন-ইকবাল-নামা-জাহাঙ্গীরের জীবনের শেষ তিনবছরের কথা। এসব ছাড়াও আরও কিছু দিনপঞ্জি রয়েছে যেমন ফারিশতা’র গুলশান-ই-ইব্রাহিম যা জাহাঙ্গীরের জীবনের আংশিক বিবরণ। শাহজাহাননামার মত দিনপঞ্জি খুররমের কথা শোনায়।

 জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বেশ কয়েকজন বিদেশী পর্যটক হিন্দুস্তান এসেছিল তাঁরা যা প্রত্যক্ষ করেছে সেসব প্রাণবন্তভাবে বর্ণনা দিয়েছে। স্যার টমাস রো, মোগল দরবারে আগত প্রথম ইংরেজ প্রতিনিধি, লিখিত পুস্তক বিস্তারিত বর্ণনায় ঠাসা এবং অনেক সময় সেখানে পক্ষপাতিত্বের সুর থাকলেও মোগল দরবারের জৌলুস দেখে একজন ইউরোপীয়ের বিস্ময় সেখানে ঠিকই টের পাওয়া যায়। অন্যান্য তথ্যসূত্রের ভিতর রয়েছে হিন্দুস্তানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী প্রেরিত উইলিয়াম হকিন্সের লেখা, যিনি আগ্রা জাহাঙ্গীরের দরবারে ১৬০৯ সাল থেকে ১৬১১ সাল পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন; উইলিয়াম ফিঞ্চ, হকিন্সের সহকারী, যিনি আকবরের রক্ষিতা আনারকলির, ‘ডালিম সুন্দরী’ গল্পের উৎস; এডোয়ার্ড টেরী, একজন পাদ্রী যিনি রো’র চ্যাপলিন ছিলেন কিছু সময়ের জন্য এবং তার সাথেই ইংল্যান্ডে ফিরে যান; এবং বিখ্যাত ইংরেজ পর্যটক টমাস ক্রোয়েট যিনি স্থলপথে হিন্দুস্তানে এসেছিলেন এবং ১৬১৫ সালে জাহাঙ্গীরের দরবারে উপস্থিত হন। তিনিই জাহাঙ্গীরের হাতির চোখ ধাঁধানো অলঙ্কারের বর্ণনা দেন যা ভিতরে রয়েছে। তাদের নিতম্বের জন্য সোনার তৈরি আসবাব।

 এম্পায়ার অব দি মোগলের পঞ্চক উপন্যাসের প্রথম তিনটি উপন্যাসের মত, এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলো–রাজকীয় মোগল পরিবার, পারস্যের গিয়াস বেগ এবং তাঁর সমস্ত পরিবার যাদের ভিতরে মেহেরুন্নিসা এবং আরজুমান্দও রয়েছে, সুযোগ সন্ধানী মহবত খান, আবিসিনিয়ার সেনাপতি আর প্রাক্তন দাস মালিক আম্বার এবং টমাস রো’র মত আরো অনেকের–অস্তিত্ব রয়েছে। কিছু সহায়ক চরিত্র যেমন সুলেমান বেগ, নিকোলাস ব্যালেনটাইন এবং কামরান ইকবাল বাস্তব চরিত্রের উপর আধারিত হলেও আসলে কল্পিত চরিত্র।

প্রধান ঘটনাসমূহ–খসরুর বিদ্রোহ, মালিক আম্বারের বিরুদ্ধে খুররমের অভিযানসমূহ, এবং তার আব্বাজানের কাছ থেকে তাঁর বিচ্ছেদ, মহবত খানের অভ্যুত্থান–অবশ্য সত্যি ঘটনা যদিও আমি কিছু পরিবর্তন অথবা পরিবর্ধন করেছি এবং কোনো কোনো স্থানে ঘটনাবলি সংকুচিত আর সময়সীমা পরিবর্তন করেছি। জাহাঙ্গীর বাস্তবিক মেহেরুন্নিসার প্রতি, যাকে পরবর্তীতে নূর জাহান হিসাবে সবাই চিনবে, মোহাবিষ্ট ছিলেন যিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত ক্ষমতা লাভ করেন এবং কার্যত হিন্দুস্তানের শাসক হয়ে উঠেন–সেই সময়ের একজন রমণীর পক্ষে যা একটা অবিস্মরণীয় অর্জন। একটা ব্যাপার বিস্ময়কর যে যখন রাজঅন্তঃপুরের মহিলাদের চিত্রকর্ম খুব অল্প দেখা যেত তখন মেহেরুন্নিসার বেশ কয়েকটা প্রতিকৃতি যার ভিতরে একটার বর্ণনা এই উপন্যাসে রয়েছে এখনও টিকে আছে। সূত্র অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে মেহেরুন্নিসা প্রথমে নিজের ভাস্তি আরজুমান্দের বিয়ে খুররমের সাথে দেয়ার জন্য সহায়তা করে কিন্তু তারপরে তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। গল্পের গতিময়তার জন্য খানিকটা কল্পনার অবতারণা জরুরি। স্যার টমাস রো রাজত্বের একটা সুন্দর খণ্ডচিত্র দান করেছে যেখানে শেকসপিয়রীয় বিষাদের সমস্ত উপকরণসহ উপস্থিত: একজন অভিজাত রাজপুরুষ, একজন বিদূষী স্ত্রী, একজন বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা, একজন কুটিল সৎ-মা, একজন উচ্চাকাঙ্খি সন্তান, একজন ধূর্ত প্রিয়পাত্র…’ আর প্রায়শই মহান বিষাদগাঁথায় যে অন্তর্নিহিত বার্তা মূর্ত হয়ে সেটা হল–যে মূল চরিত্রগুলো তাদের নিজেদের বিনাশের রূপকার হয়ে উঠে।

উপন্যাসটা লেখার সময় সবচেয়ে পরম আনন্দের বিষয় ছিল গবেষণার জন্য ভারতবর্ষে ভ্রমণের সময় অতিবাহিত সময়টা। খুররমের মত আমি দক্ষিণে দাক্ষিণাত্যে গিয়েছি, নর্মদা নদী অতিক্রম করেছি এবং বেলেপাথরের আসিরগড় দূর্গের পাশ দিয়ে ক্ষয়াটে সোনালী পাহাড়ী ভূ-প্রকৃতির ভিতর দিয়ে ভ্রমণ করেছি। আমার গন্তব্যস্থল ছিল তাপ্তি নদীর তীরে বুরহানপুরের দূর্গ-প্রাসাদ-দাক্ষিণাত্যের সালতানের বিরুদ্ধে যা একটা সময় মোগলদের অগ্রবর্তী নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র ছিল এবং এই স্থানে অনেক বিয়োগান্তক আর অশুভ ঘটনার জন্ম হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভগ্নস্তূপের মাঝে হেঁটে বেড়াবার সময় যেখানে একটা সময় মার্বেলের নহর দিয়ে চমৎকার ফ্রেসকো অঙ্কিত হাম্মামে পানি প্রবাহিত হতো আর খুররমের রণহস্তি একসময়ে হাতিমহলে যেখানে বিচরণ করতো সেখানে আমি মাঝে মাঝে মোগলদের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি।

 যোধপুরের কাছে আমি আফিমের তিক্ত স্বাদযুক্ত পানি গ্রামের একজন বয়স্ক লোকের অঞ্জলি থেকে পান করেছি যা রাজপুত যোদ্ধাদের অবশ্যই যুদ্ধের পূর্বে পান করতে হয়। আগ্রায় আমি আমার পুরাতন জ্ঞান আবারও ঝালিয়ে নেই–লাল কেল্লা যেখানে একটা পাথরের খণ্ড থেকে প্রস্তুত জাহাঙ্গীরের পাঁচ ফিট উঁচু গোসলের আধার যা ভ্রমণের সময় সবসময়ে তার সঙ্গে থাকতো দূর্গ প্রাঙ্গণে এখনও রয়েছে; গিয়াস বেগের মার্বেলের কারুকাজ করা সমাধি যা মেহেরুন্নিসা তৈরি করেছেন, যা ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি’ হিসাবে পরিচিত; কাছেই সিকান্দ্রা অবস্থিত যেখানে মহামতি আকবরের অতিকায় বেলেপাথরের সমাধিসৌধ অবস্থিত যা জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে সমাপ্ত হয়; চম্বল নদী আর নদীর বিপুল সংখ্যক ‘ঘড়িয়াল (মাছখেকো কুমীর), সারস আর শুশুক। সেই সাথে সুযোগ হয়েছিল জাহাঙ্গীরের প্রিয় রসালো আম আর ঝাল রাজস্থানী লাল মাস খাওয়ার–মরিচ দিয়ে রান্না করা ভেড়ার মাংস এই সময়েই আনারস আর আলুর মত নতুন পৃথিবী থেকে মরিচও ভারতবর্ষে আসতে শুরু করেছে।

 আমি ভ্রমণ করার সময় মোগল বাহিনীকে বিশাল ধূলোর মেঘের জন্ম দিয়ে যেন অবারিত ভূপ্রকৃতির মাঝে ধীরে কিন্তু নিশ্চিত ভঙ্গিতে এগিয়ে যেতে দেখি। আমি রাতের বেলা তাদের শিবিরে তাবু খাটাতে দেখি যার আকৃতি একটা প্রায় ছোট শহরের মত এবং পরিচারকেরা তুলার বিচি আর তেল বিশাল একটা পাত্রে পূর্ণ করে সেটা বিশ ফিট উঁচু একটা দণ্ডের উপর স্থাপন করছে সেটা অগ্নি সংযোগ করতে–আকাশ দিয়া, আকাশের আলো–রাতের আকাশে যা উপরের দিকে আগুনের শিখা ছড়িয়ে দেয়। আমি গোবরের ঘুঁটে দিয়ে জ্বালান হাজার রান্নার আগুন থেকে ভেসে আসা তিক্ত গন্ধ যেন টের পাই এবং বাদ্যযন্ত্রীদের বাজনার সুর শুনতে পাই যারা সবসময়ে আগুয়ান মোগল বাহিনীর সঙ্গে থাকতো। খুররম আর জাহাঙ্গীর যদিও প্রায় চারশ বছর পূর্বে জীবিত ছিল, কিন্তু কোনো কোনো সময় তাদের পৃথিবী আর তারা যেন আমাদের আশেপাশেই বিরাজ করতে থাকে।

.

অতিরিক্ত তথ্যসূচি

প্রথম অধ্যায়

 আকবর ১৫৪২ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬০৫ সালের ১৫ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।

১৫৬৯ সালের ৩০ আগস্ট জাহাঙ্গীর জন্মগ্রহণ করেন এবং আকবরের মৃত্যুর পরে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।

১৫৮৭ সালে আগস্টের কোনো একদিন খসরু ভূমিষ্ট হয় এবং জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১৬৬০ সালের এপ্রিলে সে প্রথমবারের মত বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পারভেজের জন্ম ১৫৮৯ সালে।

১৫৯২ সালের ৫ জানুয়ারি খুররম জন্মগ্রহণ করে।

 শাহরিয়ারের, এক উপপত্নীর সন্তান, জন্ম তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় না কিন্তু অনুমান করা হয় আকবরের মৃত্যুর কাছাকাছি সময়েই তার জন্ম।

 তৈমূর, যাযাবর বারলাস তূর্কীদের একজন গোত্রপতি, পশ্চিমে ‘তৈমূর দি লেম’ এর বিকৃত ট্যাম্বারলেন নামেই বেশি পরিচিত। ক্রিস্টোফার মারলোর নাটকে তাকে ‘ঈশ্বরের চাবুক’ হিসাবে দেখানো হয়েছে।

 জাহাঙ্গীর হয়ত মুসলিম চন্দ্র মাসের দিনপঞ্জি ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু আমি দিনগুলো পশ্চিমে আমাদের ব্যবহৃত প্রচলিত সৌর, খ্রিস্টান, দিনপঞ্জি অনুসারে পরিবর্তন করেছি।

খসরুর দু’জন ঘনিষ্ট সেনাপতিকে বাস্তবিকই যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবে পশুর চামড়া দিয়ে মুড়ে লাহোরের রাস্তায় প্রদক্ষিণ করানো হয়েছিল এবং আরো অনেককে সূক্ষ প্রান্তযুক্ত লাঠির অগ্রভাগে শূলবিদ্ধ করা হয়েছিল।

দ্বিতীয় অধ্যায়

জাহাঙ্গীরের নির্দেশে বলা হয়ে থাকে মেহেরুন্নিসার স্বামী শের আফগানকে হত্যা করা হয়েছিল, যদিও কোনো ইউরোপীয় এই কাজ করে নি।

তৃতীয় অধ্যায়

 মেহেরুন্নিসাকে শিশু অবস্থায় তাঁর পরিবার কর্তৃক পরিত্যাগ করার বিষয়টা কিছু দিনপঞ্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন জাহাঙ্গীরের সামনে তাঁর নেকাব ফেলে দেয়ার ঘটনা।

চতুর্থ অধ্যায়

হেরেমে যৌনতার সীমা লঙ্ঘনের জন্য চরম শাস্তি দেয়া হতো। যেমন একবার এক মহিলাকে গলা পর্যন্ত বালিতে কবর দিয়ে সূর্যের আলোয় ধুকে ধুকে মারা যাবার জন্য ফেলে রাখা হয়েছিল।

পঞ্চম অধ্যায়

 শাহী মিনা বাজারের বাস্তবিকই খুররম প্রথম আরজুমান্দকে দেখে। তাঁর জন্ম ১৫৯৩ সালে।

ষষ্ঠ অধ্যায়

খসরুর দ্বিতীয় বিদ্রোহ এবং তাকে অন্ধ করার ঘটনা ১৬০৭ সালের গ্রীষ্মকালের কথা। গিয়াস বেগকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মুক্তি দেয়া হয় এবং তাঁর ছেলে মীর খানকে ষড়যন্ত্র করার কারণে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

অষ্টম অধ্যায়

 মেহেরুন্নিসা আর জাহাঙ্গীর ১৬১১ সালে বিয়ে করে এবং খুররম আর আরজুমান্দের বিয়ে হয় ১৬১২ সালে।

নবম অধ্যায়

মালিক আম্বারের বিরুদ্ধে খুররমের প্রথম অভিযানের সময়কাল ১৬১৬। জাহানারা, যিনি বস্তুতপক্ষে খুররম আর আরজুমান্দের দ্বিতীয় সন্তান–হুঁর আল-নিসা নামে তার এক বড় বোন ভূমিষ্ট হবার কিছুদিন পরেই মারা যায়–১৬১৪ সালের এপ্রিলে জন্মগ্রহণ করেছিল।

একাদশ অধ্যায়

 রো ১৬১৫ সালে ভারতবর্ষে আগমন করেন বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে যার ভিতরে ছিল শকট, মারকেটোর’র মানচিত্র আর চিত্রকর্ম।

দ্বাদশ অধ্যায়

 বো’র চিঠিতে বাস্তবিকই জাহাঙ্গীরের গর্বের, তার ধর্মীয় সহনশীলতা, নিষ্ঠুরতা, অজ্ঞেয়বাদ আর মেহেরুন্নিসার প্রভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রো চিঠিতে বর্ণনা করেছেন কীভাবে তিনি সম্রাটকে পরিচালিত করেন এবং তাকে নিজের খেয়াল খুশিমত ব্যবহার করেন। জাহাঙ্গীরের প্রতিকৃতি যেখানে রাজা জেমস তাঁর পায়ের কাছে রয়েছে লন্ডনের বৃটিশ লাইব্রেরিতে রয়েছে।

ত্রয়োদশ অধ্যায়

 মালিক আম্বারের বিরুদ্ধে খুররমের দ্বিতীয় অভিযান পরিচালিত হয় ১৬২০ সালে।

পঞ্চদশ অধ্যায়

১৬২২ সাল নাগাদ খুররমের সাথে তাঁর আব্বাজানের বিচ্ছেদের সূচনা হয় যদিও রো ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন ১৬১৯ সালে।

একুশ অধ্যায়

মহবত খানের অভ্যুত্থান ১৬২৬ সালের ঘটনা–সেই বছরই পারভেজ মারা যায়। জাহাঙ্গীর ১৬২৭ সালের ২৮ অক্টোবর মারা যায়।

চব্বিশ অধ্যায়

অনেক লেখক যাঁদের ভিতরে কয়েকজন সমকালীন সময়ের ইউরোপীয় লেখক নিজের অগ্রসর হবার কথা গোপন রাখতে তাঁর শবাধারের অনুগমনের বিষয়টার উল্লেখ করেছেন, অনেকে এমন দাবিও করেছে যে তিনি নিজের মৃত্যুর একটা নকল দৃশ্যের অবতারণাও করেছিলেন। ইতিহাস হলো, খসরু বুরহানপুরে খুররমের অধীনে বন্দি থাকা অবস্থায় ১৬২১ সালে মারা যায়। আধুনিক ইতিহাসবিদ আর সমসাময়িক পর্যবেক্ষকরা বিশ্বাস করে এর জন্য খুররম দায়ী। খসরুর স্ত্রী আসলেই আত্মহত্যা করেছিল। দাওয়ার বকস, খসরুর জ্যেষ্ঠ সন্তান যে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পরে সিংহাসন পাবার চেষ্টা করেছিল এবং পরাজিত হয়েছিল আর খুররমের আদেশে শাহরিয়ার এবং তার অন্য কয়েকজন পুরুষ আত্মীয়ের সাথে পরবর্তীতে তাকে হত্যা করা হয়।

ছাব্বিশ অধ্যায়

 খুররম (শাহ জাহান) আনুষ্ঠানিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করে ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৬২৮ সালে–আকবরের সিংহাসন আরোহণের ৭২তম বার্ষিকীতে এবং বাবরের ১৪৫তম জন্মবার্ষিকীতে। শাহ জাহান যেসব অহঙ্কারী খেতাব নিজের বলে দাবি করে তার ভিতরে রয়েছে পৃথিবীর অধিশ্বর’ এবং মাঙ্গলিক সমাপাতনের দ্বিতীয় প্রভু’–একসময়ে তৈমূরের গর্বের সাথে ব্যবহৃত খেতাবের নির্লজ্জ আত্মসাৎকরণ। তাঁর সিংহাসনে আরোহনের সময়ে আরজুমান্দের গর্ভে খুররমের দশম সন্তান ভূমিষ্ট হয় যাদের ভিতরে ছয়জন–জাহানারা, দারা শুকোহ, শাহ্ সূজা, রোসন্নারা, আওরঙ্গজেব এবং মুরাদ বকস–জীবিত ছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *