২.১১ তখত তাউস

২.১১ তখত তাউস

আগ্রা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৬২৮

 আগ্রা দূর্গের বেলেপাথরের বিশাল তোরণদ্বার–তাঁর দূর্গ–খুররমের সামনে ভেসে উঠে যখন তাকে বহনকারী হাতি আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা নিয়ে ফুলের পাপড়ি শোভিত ঢালু পথ দিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে উপর উঠতে থাকে। সে তাঁর আগ্রায় প্রবেশের তারিখ অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করেছে–সৌর দিনপঞ্জি অনুসারে তাঁর দাদাজান আকবরের রাজত্বের সূচনার আজ বাহাত্তরতম বার্ষিকী। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে চারপাশে ভেসে থাকা কুয়াশার ভিতর দিয়ে হেঁটে সে আকবরের সমাধিসৌধে গিয়েছিল যেখানে, ময়ুরেরা তাঁদের রাত্রের আবাসস্থল থেকে মাত্র চারপাশের উদ্যানে নেমে আসতে শুরু করেছে, সে তাঁর পাথরের শীতল শবাধারে চুমো দিয়েছে। ‘আমি একজন উপযুক্ত সম্রাট হবো, সে ফিসফিস করে বলে।

 কিন্তু আজকের দিনটা আবার বাবরের ১৪৫তম জন্মদিনও বটে যার সাহস আর উচ্চাকাঙ্খার কারণে মোগলরা প্রথমবারের মত হিন্দুস্তান জয় করেছিল। বাবরের ঈগলের মাথার বাটযুক্ত তরবারি আলমগীর এখন তাঁর কোমরে শোভা পাচ্ছে। অক্সাস নদীর তীর থেকে হিন্দুস্তানে আগমন পর্যন্ত এই সুদীর্ঘ যাত্রাকালে তরবারিটা কত যুদ্ধই না দেখেছে… ঈগলের রুবির চোখ দুটো সূর্যালোকে জ্বলজ্বল করে।

খুররম তাঁর ডানহাতের দিকে তাকিয়ে সেখানে আরো প্রাচীন এক পূর্বপুরুষের একটা স্মারকের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্টির সাথে হাসে মুখব্যাদান করা ব্যাঘ্রের প্রতিকৃতি খোদাই করা সোনার ভারি অঙ্গুরীয় যা একসময়ে তৈমূরের হাতে শোভা পেত। সে, খুররম, সেই মহান শাসকের সাক্ষাৎ দশম অধঃস্তন উত্তরপুরুষ এবং শাসক যার সাম্রাজ্য একটা সময় পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের তীর থেকে পূর্বে চিনের সীমান্ত পর্যন্ত প্রসারিত ছিল, এবং তাঁর জন্মের সময় তারকারাজির অবস্থান তৈমূরের জন্মের সময়ের মত ঠিক একই ছিল, যা আকবরকে ভীষণ পুলকিত করেছিল। খুররমের এই মুহূর্তে মনে হতে থাকে যে কেবল তাঁর প্রজারা নয় তার ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষেরাও বুঝি ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে, ছত্রিশ বছর বয়স্ক নতুন মোগল সম্রাট, নিজের চওড়া কাঁধের উপরে তাঁদের রাজবংশের আশা আর আকাঙ্খা বহন করছে।

খুররমকে বহনকারী হাতি প্রধান তোরণদ্বারের নিচে বেগুনী ছায়ায় ভিতর দিয়ে অতিক্রম করতে বিশালাকৃতি নাকাড়াগুলো শুভেচ্ছা জানিয়ে গমগম শব্দে বেজে উঠে। খুররম একমুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে, তার উচ্চাকাঙ্খা আর আর ইচ্ছার প্রতিফলন এই মুহূর্তটা উপভোগ করে। কিন্তু তারপরেই তার নিজের সৃষ্টি এক অন্ধকার ছায়া তাকে আপুত করে সমস্ত সমস্ত উল্লাস স্তব্ধ করে দেয়। দিনের উষ্ণতা আর তাঁর হীরক খচিত সবুজ রেশমের কারুকাজ করা ব্রোকেডের টিউনিকের ওজন সত্ত্বেও সে, তাঁর দাদাজানের সমাধিসৌধ থেকে ফিরে এসে তার নিয়ন্ত্রক তাবুর কাছে মাটিতে ইস্পাতের খঞ্জর দিয়ে গাঁথা একটা অজ্ঞাতনামা বার্তার কথা স্মরণ করে কেঁপে উঠে। বার্তার বিষয়বস্তু একেবারে সংক্ষিপ্ত: নিশ্চয়ই যে সিংহাসন অধিকার করতে এত রক্তপাত হয়েছে সেটা অবশ্যই অমঙ্গল বয়ে আনবে?

তাঁর প্রহরীদের নাকের ডগায় তাঁদের নজর এড়িয়ে বার্তাটা কীভাবে এলো? এটা কি এমন কেউ একজন লিখেছে যাকে সে বন্ধু মনে করলেও আদতে সে তা নয়–এমন কেউ তাঁর তাবুর কাছে যার উপস্থিতি কারও মনে সন্দেহের উদ্রেক করবে না? নাকি কোনো আগন্তুক গোপনে তাঁর শিবিরের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করে বার্তাটা রেখে গিয়েছে? বিজয়দীপ্ত শোভাযাত্রা নিয়ে আগ্রায় প্রবেশের প্রস্তুতি সকালের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল আর হাল্কা সাদা কুয়াশা তাঁদের একেবারে আবৃত করে রেখেছিল বলে কাজটা সম্পন্ন করাটা হয়তো একেবারে কঠিন না।

সে বার্তাটা জ্বলন্ত কয়লাদানিতে নিক্ষেপ করে এবং কমলা আগুনে সেটাকে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখার সময়, মেহেরুন্নিসার উঁচু চোয়ালের হাড়যুক্ত মুখ, বাঁকা ঠোঁটে ফুটে থাকা শ্লেষপূর্ণ হাসি, তাঁর মনে নিমেষের জন্য ভেসে উঠে। সে কল্পনায় তাকে এমন একটা বার্তা লিখতে দেখে। লাহোরে নিজের কক্ষের নির্জনতা থেকে তাঁর পক্ষে কি আসলেই সম্ভব তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনের সমস্ত আনন্দ বিঘ্নিত করার এমন একটা প্রয়াস নেয়া? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। কাজটা যেই করে থাকুক, বার্তাটা তাকে একেবারে নাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু সে চেষ্টা করে নিজের মন থেকে বার্তাটার কথা মুছে ফেলতে। সে আরজুমান্দকেও এ বিষয়ে কিছু বলেনি সেদিন সকালে হারেমের তাবুতে যার বিদায়ী চুম্বন তার মাঝে সেই একই পুরাতন যৌনকামনা উদ্রেককারী অনুভূতি তাকে শিহরিত করে যা তাঁদের বিয়ের পর থেকে এতগুলো বছরে এতটুকু হ্রাস পায় নি। তার মাঝে কামোত্তেজনা জাগাতে কখনও এটা ব্যর্থ হয় নি এবং কিছুক্ষণের জন্য সবধরনের নিরানন্দ ভাবনা কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।

 তাকে বহনকারী হাতি আবার সূর্যালোকে বের হয়ে এসে, তাকে সিংহাসনের দিকে নিয়ে যেতে থাকলে যার জন্য সে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেছে, ভাবনাগুলো আবার ফিরে আসে। কেন? কারণ সে অপরাধবোধ করছে? না। শাহরিয়ার আর খসরুর মৃত্যুর প্রয়োজন ছিল, নয় কি? রাজত্বের শুরু সামান্য রক্তপাত কি ভালো নয় পরে প্রচুর রক্তপাতের চেয়ে কারণ তাঁর সেটা করার মত সাহস নেই? তাঁদের মৃত্যুর ফলে প্রাপ্ত সুবিধা কি তাদের মৃত্যুজনিত পাপের চেয়ে বেশি নয়? হ্যাঁ, সে নিজেকে আবার স্মরণ করিয়ে দেয়। সে এইসব মৃত্যুর সাহায্যে সিংহাসনের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে চিরতরে পরাস্ত করেছে এবং নিজেকে আর নিজের পরিবারকে রক্ষা করেছে।

অনেক হয়েছে, খুররম নিজেকে বলে। সে তাই করেছে যেটা তাঁর করা উচিত ছিল এবং অতীত হল ঠিক তাই–অতীত। বর্তমান আর ভবিষ্যতই হল গুরুত্বপূর্ণ আর সে নিজের কর্মকাণ্ডের দ্বারা দুটোই নিরাপদ করেছে। নিজেকে সুস্থির করার চেষ্টা করে সে চারপাশে তাকিয়ে তাকে অনুসরণরত বিশাল শোভাযাত্রাটা লক্ষ্য করে। তাঁর চার সন্তানকে, রাজবংশের রাজপুত্রদের, বহনকারী হাতিটায় তারা রেশমের একটা সবুজ চাঁদোয়ার নিচে রয়েছে আর আরেকটু ছোট আরেকটায় আরজুমান্দ আর তাদের দুই কন্যার হাওদা রূপার জরির তৈরি কাপড়ের পর্দা দিয়ে ঘেরা যার ভেতরে সোনার তারের জালি বসান রয়েছে যাতে তারা ভেতর থেকে সবকিছু দেখতে পায় তার ঠিক পেছনেই রয়েছে। আরজুমান্দের পিতা আসফ খান বিশাল একটা সাদা স্ট্যালিয়নে উপবিষ্ট অবস্থায় এরপরেই রয়েছেন আর কারুকাজ করা পর্যাণের কাপড়যুক্ত কালো স্ট্যালিয়নে বসে মার্জিত ভঙ্গিতে জনগণকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে মহবত খান, এখন তাঁর খান-ই-খানান, প্রধান সেনাপতি। তারপরে রাজকীয় দেহরক্ষীদের অনুসরণ করছে অশ্বারোহী যোদ্ধার দল পাশাপাশি চারজন অবস্থান করে এগিয়ে চলেছে–যাঁদের অনেকেই লাল-পাগড়ি পরিহিত রাজপুত যোদ্ধা–এবং সবশেষে রয়েছে তবকি আর তীরন্দাজেরা, সবাই মোগল সবুজ রঙের পোষাকে দারুণভাবে সুসজ্জিত, সবাই অজেয় একটা বাহিনীর সদস্য যা এখন তাঁর নেতৃত্বাধীন।

 দৃশ্যটা খুররমের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনে। উপরের দূর্গে পরিচারকেরা দূর্গ প্রাকারের উপরে দৌড়াদৌড়ি করছে, সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে সোনার আর রূপার মোহর–টাকশাল থেকে নতুন তৈরি করা তাঁর রাজত্বের সূচনা ঘোষিত করতে–আর অল্পদামী পাথর–বৈদুর্যমণি, টোপাজ প্রভৃতি নিক্ষেপ করতে। রূপা আর সোনার পাতলা পাত দিয়ে তৈরি চাঁদ আর তারার প্রতিকৃতি অন্য পরিচারকেরা বাতাসে ছুঁড়ে দিচ্ছে। পুরো ব্যাপারটা দেখে মনে হবে বেহেশত থেকে যেন পৃথিবীর উপরে ধনসম্পদ বর্ষিত হচ্ছে–মোগল ধনসম্পদ। সে এসব কিছুর মালিক এবং তার ক্ষমতা আর সম্পদ সবকিছুকে আরও মহিমান্বিত করবে। সে কয়েকটা বিদ্বেষপূর্ণ শব্দের কারণে নিজেকে অস্থির করে তুলবে না।

দ্বিতীয় আরেকটা তোরণের নিচ দিয়ে অতিক্রম করে খুররম ফুলের পাপড়ি দিয়ে ঢাকা আঙিনার মাঝে আকবরের তৈরি করা ঝর্ণাগুলোকে দেখতে পায় এবং এর পেছনেই বহু স্তম্ভযুক্ত দেওয়ানি আম যেখানে মার্বেলের বেদীর উপরে সোনার তৈরি সিংহাসনটা স্থাপিত। তাঁর প্রধান অমাত্যরা ইতিমধ্যেই বেদীর নিচে অগ্রগণ্যতার বিন্যাস অনুসারে সমবেত হয়েছে। আর কয়েক মুহূর্ত পরেই সে ঐ সিংহাসনে নিজের আসন গ্রহণ করবে এবং প্রথমবারের মত তাঁর দরবারের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবে। রক্তপাত ঘটিয়ে সে যদি পাপ করে থাকে তাঁর প্রজাদের কাছে সে এই কারণে অনেকবেশি প্রায়শ্চিত্ত করবে। সে তাঁদের কাছে প্রমান করবে সিংহাসন আর তাঁদের ভালোবাসা তারই প্রাপ্য এবং তাদের পুলকিত করবে যে সে তাঁদের সম্রাট।

তাঁর দাদাজান আকবরের কয়েকটা বাক্য তাঁর মনে পড়ে যায়। মানুষ প্রদর্শন পছন্দ করে এবং নিজেদের শাসকেরা দ্বারা প্রভাবিত হতে আর তাদের জন্য সম্ভম অনুভব করতে চায়। একজন মহান শাসককে সূর্যের মত হতে হবে–চোখ তুলে তাকালে চোখ ধাধিয়ে যাবে আবার সব আলো আর আশা এবং উষ্ণতার উৎস যা ছাড়া অস্তিত্বের সম্ভাবনাই অসম্ভব। আকবর সত্যিকার অর্থেই জাঁকজমকপূর্ণ ছিলেন। কিন্তু সে, খুররম তাকে অনুসরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে, তার অর্জনের সমকক্ষ হতে আর সম্ভব হলে সেটা ছাড়িয়ে যেতে চেষ্টা করবে। সে তাঁর আব্বাজান একসময়ে তাকে যে উপাধি দান করেছিলেন সেই শাহ জাহান, পৃথিবীর অধিশ্বর নাম নিয়ে রাজত্ব পরিচালনা করবে। সোনার তৈরি সিংহাসন যে কিছুক্ষণের ভিতরেই যার উপরে উপবিষ্ট হবে সেটা পৃথিবীর অধিশ্বরের জন্য যথেষ্ট জমকালো নয়। সে ইতিমধ্যেই তাঁর সম্পদের সিন্দুক পরিদর্শন করেছে যেগুলো এত প্রচুর সংখ্যক উজ্জ্বল রত্নপাথরে পরিপূর্ণ যে তাঁর কোষাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের পক্ষে সেগুলো গণনা করা অসম্ভব তারা তাই সেগুলো কেবল ওজন করে যাতে তারা তাকে বলতে পারে, দেখেন জাহাপনা এখানে আপনার আধ টন হীরক রয়েছে এবং এখানে একটন পরিমাণ মুক্তা…’ সে সাম্রাজ্যের সেরা মণিকারকে ডেকে পাঠাবে এমন একটা সিংহাসন তৈরির জন্য যেখানে তার সবচেয়ে উজ্জ্বল রত্নগুলো প্রদর্শিত হবে। সে একটা রত্নখচিত চাঁদোয়ার নিচে উপবেশন করবে যা পদ্মরাগমণি খচিত স্তম্ভের উপর শোভা পাবে। চাঁদোয়ার উপরে একটা বৃক্ষ থাকবে যা জীবনের স্মারক হিসাবে ফুটিয়ে তোলা হবে, যার কাণ্ডটা হবে হীরকের আর মুক্তার এবং এর উভয় পাশে থাকবে ঝলমলে পালক ছড়ান ময়ূর। সে তার তখন তাউসে বসে থাকার সময় এতটাই জ্বলজ্বল করবে যে আসলেই তার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।

আকবরকে মহান আর ন্যায়পরায়ন শাসক হিসাবে, যাকে তার সব প্রজা ভালোবাসে, তাদের ধর্ম গোত্র বা মর্যাদা যাই হোক না কেন, অতিক্রম করা যদি কঠিন হয় তাহলে সে সংকল্পবদ্ধ তাকে রাজকীয় পরিবারের প্রধান হিসাবে সে ছাপিয়ে যাবে। আকবরের সাথে তাঁর সন্তানদের সম্পর্ক বিভেদপূর্ণ আর দূরবর্তী ছিল, ঠিক জাহাঙ্গীরের সাথে তাঁর নিজের যেমন সম্পর্ক ছিল। উভয় পুরুষেই–এবং তার আগে হুমায়ুনের সময়ে সৎ-ভাইয়েরা পরস্পরের সাথে সিংহাসনের অধিকারের জন্য লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতো। আকবরের মত না তাঁর নিজের একটা একতাবদ্ধ আর ভালোবাসাপূর্ণ পরিবারের অধিকারী হবার সৌভাগ্য হয়েছে এবং সে চেষ্টা করবে এটা যেন সেভাবেই থাকে। তার পুত্র আর কন্যারা একই মায়ের সন্তান এবং তাদের যে দুর্ভোগ সহ্য করতে হয়েছে সেটা তাঁদের পরস্পরের আরো কাছে নিয়ে আসায়, রাজবংশকে রূপান্তরিত করতে এগুলো তাকে সাহায্য করবে। দারা শুকোহ আর আওরঙ্গজেব যারা একসঙ্গে বন্দিত্ব বরণ করেছে। কীভাবে পরস্পরের সাথে লড়াই করবে? ভয়ঙ্কর পারিবারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা পুরাতন ঐতিহ্যবাহী তক্তা তখতের রীতি, সিংহাসন বা শবাধার, যা পূর্ববর্তী বংশধরদের কালিমালিপ্ত করেছে এবং সাম্রাজ্যকে গৃহযুদ্ধের হুমকির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে–চিরতরে লোপ পাবে।

তারচেয়েও বড় কথা, সে নিজেকে আর নিজের পরিবারকে তাঁর রাজবংশের অন্যান্য দুর্বলতা থেকে দূরে রাখবে–আফিম আর সুরার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত দুর্বলতা যা তাঁর আব্বাজানের মনকে দুর্বল করে ফেলেছিল আর তার প্রপিতামহ হুমায়ুনকেও এবং তাঁদের পরিবারের অসংখ্য সদস্যকে অকালে সমাধি চিনিয়েছে–তার সৎ-ভাই পারভেজ এবং তাঁর চাচাজান দানিয়েল এবং মুরাদ। তাঁর প্রথম কাজ হবে নিজের জন্য এবং নিজের পরিবারের জন্য সুরা বর্জনের ঘোষণা দেয়া, যদিও তার পূর্বের আকবর আর বাবরের মত সে নিজেকে এসব মাদকের উপর প্রভুত্ব করার মত শক্তিশালী মনে করে এবং তাঁদের দাস নয়।

ঢাকের একটা প্রলম্বিত বাজনা ইঙ্গিত দেয় যে খুররমকে বহনকারী হাতির থামার সময় হয়েছে এবং প্রাণীটা হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে। কিছুক্ষণের ভিতরেই সে নিচে নামবে এবং তার ছেলেদের সাথে নিয়ে সিংহাসনের দিকে এগিয়ে যাবে যখন আরজুমান্দকে আর তার কন্যাদের বহনকারী হাতি তাঁদের হেরেমে নিয়ে যাবে। মেয়েদের দর্শনকক্ষ থেকে আরজুমান্দ, তাঁর ভালোবাসা এবং তার সমস্ত বিপর্যয়ের মাঝে তার একমাত্র স্বস্তির জায়গা, জালি তিরস্করণীর ভিতর দিয়ে তাকে প্রথমবারের মত তার দরবারের সামনে ভাষণ দিতে দেখবে। তার রাজত্বকাল শুরু হতে চলেছে। রক্তপাতের মাধ্যমে যদিও এর সূচনা হয়েছে, আরজুমান্দকে সাথে নিয়ে সে একে নিশ্চিতভাবেই গৌরবের মাঝে সমাপ্ত করবে…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *