০৭. রাস্তাটা কেমন অন্ধকার

০৭.

এই দুপুরেও রাস্তাটা কেমন অন্ধকার আর স্যাঁতসেঁতে। পথ ভুল হয়নি তো?

পথ ভুল হওয়ার কথা নয়। যামিনী নিজে চিনে আসেনি, রিকশাওলা নিয়ে এসেছে। সে এখানকার লোক। তার ভুল হবে কী করে? বাস স্টপে নেমে হাতের কাছে প্রথম যে রিকশা দেখতে পেয়েছিল তার দিকেই যামিনী এগিয়ে যায়।

শহিদ বলরাম কলোনিতে যাব।

রিকশাওলা সিটে বসে দাঁত খুঁটছিল। জায়গার নাম শুনে লোকটা ভুরু কুঁচকে তাকাল। যামিনীকে আপাদমস্তক দেখল ভালো করে। যেন জায়গার নামের সঙ্গে যামিনীকে মানায় না।

কলোনির মুখে নামবেন তো?

 না ভেতরে যাব। সাতাশ বাই তিন নম্বর শহিদ বলরাম কলোনি।

রিকশাওলা জিভ দিয়ে মুখে চকাস ধরনের আওয়াজ করে বলল, ভিতরে যাব না। মুখে নামিয়ে দিতে পারি।

কেন? ভেতরে যাওয়া যায় না? যামিনী অবাক হল।

না যায় না, রাস্তা খারাপ আছে, রিকশা যাবে না।

 যামিনী বলল, ঠিক আছে এক্সট্রা পয়সা দেব, চল।

রিকশাওলা গায়ের জালি গেঞ্জি তুলে পেট চুলকোতে চুলকোতে বলল, বেশি দিলেও যাব না, আপনি অন্য গাড়ি দেখুন দিদি। তবে মনে হয় না কেউ ভিতরে ঢুকবে। কলোনির মুখে নামিয়ে দেবে।

ঠিক আছে তাই চল, মুখেই নামিয়ে দেবে। যামিনী বুঝতে পারল কথা বাড়িয়ে লাভ হবে না। নিশ্চয় জায়গাটায় কোনও গোলমাল আছে। সে রিকশাতে উঠে বসল।

যামিনী আজ স্কুলে যাব বলে বেরিয়েও স্কুলে যায়নি। স্টেশনে এসে বর্ধমানের গাড়ি ধরে। সেখান থেকে বাস। হিন্দোল যেমন বলেছিল।

বাস থেকে নেমে কীভাবে যেতে হবে আমি বলতে পারব না। মনে হয় হেঁটেই যাওয়া যায়।

যামিনী শান্ত গলায় বলল, তোমার ওই যাদব লোকটার সঙ্গে একবার কথা বলা যায় না হিন্দোল?

হিন্দোল উৎসাহের সঙ্গে বলল, কেন যাবে না? আসানসোলে থাকে। যেদিন ইচ্ছে ফোনে কথা বলতে পারেন। সেরকম হলে একদিন দেখা করতে বলি?

বিশাখা বলল, এটা কী বলছ? যামিনীদি এই বিষয়টা নিয়ে বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলতে পারি নাকি! ছিঃ!

যামিনী ঠোঁটের ফাঁকে ব্যঙ্গের হেসে বলল, লজ্জার আর বাকি কী আছে বিশাখা? লুকিয়ে কী লাভ? ভাবছি কিঙ্কি আর নীলকেও বলে রাখব। মনের দিক থেকে ওরা তৈরি হয়ে থাকুক।

বিশাখা হাত নেড়ে বলল, না না একেবারেই নয়, কে কী উড়ো খবর দিল সেটা বিশ্বাস করে বসে থাকতে হবে নাকি?

যামিনী সোফায় হেলান দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল, এরকম একটা উড়ো খবর শুনতে হচ্ছে এটাই তো অপমানের। আমি কোনওদিন কল্পনাও করতে পারিনি, দেবনাথের নামে একথা শুনতে হবে।

হিন্দোল মাথা নামিয়ে বলল, সরি যামিনীদি, ভেরি সরি। আমি সেই জন্যই বিশাখাকে বলেছিলাম, এই ধরনের খবর হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর না হয়ে বলা উচিত নয়। কিন্তু পরে কী ভাবলাম জানেন, ভাবলাম যতই হোক আপনাকে গোপন করাটা উচিত নয়। আপনার স্বামী…।

সেদিন বীণাপাণি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে বসে একই কথা বলেছিল বিশাখা।

আমিই হিন্দোলকে বললাম সত্যি হোক মিথ্যে হোক কথাটা যামিনীদিকে জানানো দরকার। হিন্দোল বলেছিল, একবার নিজে গিয়ে দেখে আসবে কিনা। আমি বললাম, তোমাকে না জানিয়ে সেটা করা যায় না।

যামিনী বিশাখার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, খারাপ খবরটা কী?

 বিশাখা একটু এগিয়ে এল। নীচু গলায় বলতে শুরু করল–

হিন্দোলের কোম্পানিতে যাদব নামে একটা ছেলে কাজ করে। আসানসোলে পোস্টেড। সেখানকার ফ্যাক্টরিতে মেশিন চালায়। একসময় খুব নেশা ভাঙ করত, বাজে সঙ্গে মিশত। আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশনও ছিল। ওইসব দিকে এরকম হয়। ওর বাবা হিন্দোলকে খুব করে ধরেছিল। একটা কাজ পেলে হয়তো ছেলেটা বদলে যাবে। এসব ছেলেকে কাজে ঢোকানো মুশকিল। ঝুঁকি থাকে। তবে হিন্দোল ঝুঁকি নিল। কাজ দিল ছেলেটাকে। ফরচুনেটলি ছেলেটা ভালোও হয়ে গেছে। হিন্দোলকে খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করে। রেগুলার যোগাযোগ রাখে। অফিসের কাজের বাইরেও রাখে। হিন্দোল ওকে নানা কথার মধ্যে দেবনাথদার কথাও বলেছিল একদিন। ও দেবনাথদার একটা ফটো চায়। হিন্দোল বলেছিল, ফটো নিয়ে তুই কী করবি? যাদব বলেছিল, দাও না। যদি কোনওদিন খবর পাই। চার বছর পর সেই খবর পাঠিয়েছে।

যামিনী শাড়ির আঁচল দিয়ে কপাল, ঘাড় মুছল। চোয়াল শক্ত করে বলল, কী খবর?

বিশাখা দুপাশে তাকাল। দোকানের এদিকটা ফাঁকা। দিদিমণিরা থাকলে কেউ এপাশে আসে না। মাঝেমধ্যে শুধু জিগ্যেস করে যায়, কিছু লাগবে কিনা। বিশাখা মাথা নামিয়ে অপরাধীর মতো বলল, দেবনাথদা মনে হয় আর একটা সংসার করেছে।

যামিনী সোজা হয়ে বসে। বলে, কী বললি! কী করেছে?

 বিয়ে করেছে। একটা মেয়ে আছে।

যামিনী টেবিলে চাপড় মেরে বলল, আমি বিশ্বাস করি না। কিছুতেই বিশ্বাস করি না।

বিশাখা মুখ তুলে তাড়াতাড়ি বলল, আস্তে, যামিনীদি। আমিও বিশ্বাস করি না। তুমি উত্তেজিত হয়ো না। লোকে শুনতে পাবে। এইজন্যই হিন্দোলকে সকালে বলেছিলাম, এসব কথা বাইরে বলা ঠিক নয়। তোমাকে বাড়িতে ডেকে নিই। হিন্দোল বলল, বাড়িতে বাবা-মা আছে, সেখানে আলোচনা না হওয়াই ভালো। তোমার বাড়িতেও তো নীল, কিঙ্কি কেউ না কেউ থাকে। ওদের সামনে অন্য সব কথা বললেও এটা তো বলা যাবে না।

বিশাখার কথা শুনতে পেল না যামিনী। সে কঠিন গলায় বলল, ওই যাদব ছেলেটা কোথা থেকে খবর পেল?

বললাম না ওর আন্ডারওয়ার্ল্ডে যোগাযোগ আছে।

আন্ডারওয়ার্ল্ড! দেবনাথ কি ওই সব করছে!

যামিনীর মনে হচ্ছে তার সারা শরীরে কেউ গলানো সীসে ঢেলে দিচ্ছে। কিন্তু সে কিছু বুঝতে পারছে না। তবে অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে।

বিশাখা বলল, না না তা নয়, আসলে…।

আসলে কী?

থাক, বাকিটা হিন্দোল তোমাকে বলবে। ও আজ অফিস থেকে ট্যুরে বেরিয়ে যাচ্ছে। সোমবার ফিরবে, তারপর ওর কাছে…

তুই যতটুকু জানিস বল আমাকে। প্লিজ বল।

যামিনী অবাক হয়ে দেখল, তার চোখে জল আসছে না! বিশাখা কিন্তু হাতের রুমাল দিয়ে চোখের কোণ মুছল। বলল, আমি জানি খবরটা মিথ্যে। এতগুলো খবর মিথ্যে হয়েছে, আর এটা হবে না?

তুই আমার কাছে কিছু গোপন করিস না বিশাখা। তোরা ছাড়া আমার পাশে আর কেউ নেই।

বিশাখা হাত বাড়িয়ে যামিনীকে ছুঁল।

আগে বল তুমি বিশ্বাস করবে না।

তুই বল।

বিশাখা আমতা আমতা করে বলল, দেবনাথদা যে মহিলার সঙ্গে থাকে সে নাকি…।

যামিনী শ্বাস টেনে বলল, সে কী?

শি ইজ আ প্রস্টিটিউট। দেবনাথদার সঙ্গে আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।

.

রিকশা নামিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পর যামিনী খানিকটা ইতস্তত করল। যদিও তার কোনও কারণ ছিল না। রিকশাওয়ালা প্রথমে খারাপভাবে কথা বললেও নামার পর হাত দিয়ে কলোনিতে ঢোকার রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছে।

এটা দিয়ে চলে যান, সোজা যাবেন একদম। কলোনির ভিতর পৌঁছে যাবেন। একটা পুকুর পড়বে। দুদিকে রাস্তা, বাঁদিকটায় ঢুকবেন না।

ঢুকব না? কেন?

রিকশাওলা জিভ দিয়ে আওয়াজ করে বলল, গেলেই বুঝবেন।

যামিনী সোজাই যাচ্ছে। রাস্তা সরু ছিল। যত এগোচ্ছে আরও ছোট হয়ে আসছে। খানিকটা এগিয়ে থমকে দাঁড়াতে হল। রাস্তার ওপর অনেকটা জায়গা জুড়ে জল জমে আছে। নোংরা জল। পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। গলিটাতে ঢুকতেই একটা বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে এসেছিল। সেই গন্ধ ক্রমশ বাড়ছে। দুহাতে শাড়ি সামান্য উঁচু করে যামিনী নোংরা জলে তার জুতো পরা পা রাখল। শরীর ঘিন ঘিন করে উঠল। শুধু শরীর নয়, মনও। এখানে এসে থাকে দেবনাথ! অবশ্য তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? নোংরা জীবন কাটাতে হলে নোংরা জায়গাই লাগে।

বিশাখার কাছ থেকে খবর শোনার পর কটা দিন একেবারে চুপ করে গেল যামিনী। শান্ত হয়ে গেল যেন। কিঙ্কিনি মদ খেয়ে বাড়ি ফেরার পরও কিছু বলেনি। এর মধ্যে একদিন মোবাইলে দেবনাথের অফিসের নম্বর ভেসে উঠল। ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে অর্ধেন্দু দত্তর গলা।

আপনি! অবাক হল যামিনী।

ফোনটা কেটে দেবে নাকি? যদি চাও দিতে পারো।

কী ব্যাপার বলুন। বুক কেঁপে উঠলেও যতটা সম্ভব উত্তাপহীন গলায় বলল যামিনী।

ছেলে কিছু বলেনি?

কী বিষয়?

অর্ধেন্দু দত্ত হেসে বললেন, বাঃ বেশ ডিপ্লোমেটিক কায়দায় কথা বলা ধরেছ দেখছি। গুড। এমন ভান করছ যেন কিছু জানো না।

এই কবছরে মানুষটা গলার স্বরে একটা ভাঙা ভাব এসেছে, আর কিছু বদলায়নি। যামিনী বুঝতে পারছিল না কী করবে। ফোনটা কি রেখে দেবে? অস্ফুটে বলল, নীল আমাকে কিছু বলেনি।

ঠিক আছে কষ্ট করে আর মিথ্যে বলতে হবে না, ইটস ওকে, আমি সব বুঝেছি। আমি তোমাকে একটা কথা বলতে ফোন করেছি, আমার নিজের পক্ষ থেকে নয়, অন বিহাফ অফ মাই অফিস ইউনিয়ন তোমায় ফোন করেছি। তুমি নিশ্চয় জানো নীলাদ্রিকে চাকরির ব্যাপারে আমরা ডেকেছিলাম। অনেকটা কমপেনসেটরি গ্রাউন্ডের মতো। আমাদের অফিসের ভ্যাকেন্সির সঙ্গে ওর কোয়ালিফিকেশন যেরকম ম্যাচ করেছিল, সেই অনুযায়ী কাজের অফার দেওয়া হয় ওকে। কাজটা ছিল পার্মানেন্ট। সেই কাজ তোমার ছেলের সম্ভবত পছন্দ হয়নি। এটা হতেই পারে। কিন্তু আমরা আশা করেছিলাম, ও একটা উত্তর দেবে। ও যে কাজটা করবে না সেটা তো অন্তত জানাবে। বাট হি ডিডন্ট গিভ এনি রিপ্লাই। আমরা ইউনিয়ন থেকে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলে কাজটা ধরে রেখেছিলাম, তোমার বা তোমার ছেলের নাম করে নয়, দেবনাথের নাম করে। আমাদের লস অব ফেস হল।

যামিনী অবাক হয়। নীল তাকে এসব কিছুই বলেনি! সে আমতা আমতা করে বলল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

অর্ধেন্দু দত্ত একটু থামলেন। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, মিসেস চ্যাটার্জি কথাটা শুনতে আপনার খারাপ লাগবে, কিন্তু সরি তা-ও আমাকে বলতে হচ্ছে, আজ অফিসে অনেকেই দুঃখ করে বলছিল, দেবনাথবাবু একজন ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাঁর ফ্যামিলি এরকম হবে আশা করা যায় না।

যামিনী কাতর গলায়, বিশ্বাস করুন আমি কিছুই জানি না।

অর্ধেন্দু দত্ত ফোনেই যেন একটা হাই তুললেন। অবিশ্বাসের হাই। তারপর মুচকি হেসে চাপা গলায় বললেন, এত কী ব্যস্ত থাক যামিনী যে ছেলেমেয়েদের খবর জানতে পারো না? আমার অবশ্য বোঝা উচিত ছিল, বিছানায় তুমি যা পটু তাতে বাড়তি দুটো পয়সা রোজগার করা তোমার পক্ষে কিছুই নয়। ছেলের চাকরিবাকরি নিয়ে তুমি অত চিন্তিত নও। শুনেছি দেবনাথবাবুর বাড়ি ছাড়ার পিছনে নাকি এটাই কারণ। তোমার ঘন ঘন বিছানা বদল। সত্যি নাকি? আই ডোন্ট বিলিভ।

ফোন হাতে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে পাশে রাখা টুলে বসে পড়েছিল যামিনী। বিড়বিড় করে বলেছিল, স্কাউনড্রেল।

আওয়াজ করে হেসে উঠেলেন অর্ধেন্দু দত্ত। বলেছিলেন, ডোন্ট বি সো এক্সাইটেড যামিনী। অত উত্তেজনার কী আছে? তুমি যদি সেদিন টাকা চাইতে আমি কি দিতাম না? অবশ্যই দিতাম। রাজনীতি করি মানে এই নয় প্রফেশনালদের অপছন্দ করি। যাক, যা হবার হয়ে গেছে, পরে কোনওদিন যোগাযোগ হলে রেট বোলো, গুড বাই।

বিপর্যস্ত যামিনী ভেবেছিল পরদিনই দেবনাথের অফিসে চলে যাবে। সবার সামনে অর্ধেন্দু দত্তকে চড় মেরে আসবে। পারেনি। চুপ করে গিয়েছিল। বার বার মনে পড়েছে, দেবনাথের আর একটা সংসারের কথা। তার কাছে সব মান অপমান তুচ্ছ মনে হয়েছে। যখন চোখে জল এসেছে তখনই ভেবেছে, কাঁদবে না। ঘটনা যদি সত্যি হয় তা হলে সে কান্না নিজের কাছে বড় লজ্জার হবে। অর্ধেন্দু দত্ত বেশ্যা বলার থেকেও বেশি লজ্জার। নিজেকে কঠোর করেছে যামিনী। কান্না পেলেও কাঁদেনি, চোখ খুলে রাত জেগেছে। নিজেকে বলেছে শান্ত থাকতে হবে। আরও কটাদিন শান্ত থাকতে হবে। হিন্দোল ফিরলে দেবনাথের নতুন সংসারের ঠিকানা জেনে সে নিজে যাবে।

এই কটা দিন মূলত শান্তই ছিল যামিনী। তবু দুটো গোলমাল করে বসল। তার মধ্যে প্রথমটা ছিল বেশি ঝামেলার।

স্কুলে ক্লাস নিতে গিয়ে একদিন মেজাজ হারাল যামিনী। মেজাজ অনেকদিনই হারাচ্ছিল। একসময়ের হাসিখুশি, মিষ্টি মিস গত কয়েকবছরে খিটখিটে হয়ে উঠেছে ক্রমশ। যে টিচারের কাছে মেয়েদের দোষ এতদিন প্রায় সাত খুন মাপ-এর মতো ছিল, সে-ই অল্পেতেই ধমকধামক দেয়, চাপড় মারে। উঁচু ক্লাসের মেয়েরা বলাবলি করত, বর চলে যাওয়ার পর থেকেই যামিনী মিস বিগড়ে গেছে। আড়ালে তার নাম দিয়েছিল, বিপি মিস, বর পালানো মিস। যামিনী রাগারাগি করলে তারা আড়ালে নিজেদের মধ্যে বলত, এই রে, বিপি মিস খেপেছে।

সেদিন মেজাজ হারানোর ঘটনা বেশি মাত্রায় হয়ে গেল। ক্লাসে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার মতো অতি সামান্য অপরাধে ক্লাস নাইনের এক মেয়েকে বেধড়ক মারল যামিনী। মারতে মারতে বেঞ্চ থেকে টেনে বের করে আনল। মেয়েটি এতই বিস্মিত হয় যে কাঁদতেও ভুলে যায়। কান্না না দেখে আরও রেগে যায় যামিনী। উন্মত্তের মতো হয়ে যায়। এবার হাতের ডাস্টার দিয়ে মারতে থাকে মেয়েটির পিঠে। মেয়েটি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।

পরদিন খুব স্বাভাবিক কারণেই যা ঘটবার তাই হল। সকাল থেকে স্কুলে তুলকালাম কাণ্ড। স্কুল শুরুর আগেই মেয়েটির বাবা-মা এসে হইচই শুরু করল। মেয়ের বাবা হেডমিস্ট্রেসকে হুমকি দিয়ে গেল, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যামিনী চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা পুলিশের কাছে যাবে। মেয়ের মা স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে বলতে লাগল, যে মহিলা নিজের স্বামীকে ভালোবেসে ধরে রাখতে পারেনি, সে আবার স্টুডেন্টদের ভালোবাসবে কী করে? আরে, তুই নিজের বরকে শাসন কর, তারপর পরের মেয়ের গায়ে হাত দিবি।

তখনও যামিনী স্কুলে আসেনি। একে একে টিচাররা আসছে। নিমেষে স্টাফরুমে দুটো দল তৈরি হয়ে গেল। যামিনীর বিরুদ্ধে দল অনেক ভারী। তারা বলতে লাগল, খুব অন্যায় কাজ হয়েছে। ছি ছি। স্কুলের সুনাম নষ্ট হল। একটু আধটু বকাঝকা ঠিক আছে, তাবলে ওরকম চোরের মার মারবে?

বিশাখা মৃদু স্বরে বলে, তোমরা ওর দিকটাও বিচার করো। কতবড় টেনশনের মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছে যামিনীদি।

কয়েকজন তেড়ে এল প্রায়।

তুমি চুপ করো। বাড়ির টেনশন বাড়িতে রেখে কাজে আসতে হয়। আমাদের বুঝি টেনশন নেই, চিন্তা নেই? পাঁচ বছর ধরেই তো আহারে উঁহুরে শুনছি। ওকে কিছু বলা যাবে না, ওকে বেশি ক্লাস দেওয়া যাবে না, খাতা দেওয়া যাবে না, উনি চাপ নিতে পারবেন না। কী ব্যাপার না বর পালিয়েছে। মনে হয় আমাদের বর হারালে ভালো হত! সন্তানের মতো মেয়েগুলোর ওপর এখন রাগ ফলাচ্ছে।

আরতিদি এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন। এবার হাত তুলে বললেন, থাম দেখি, অত বড় বড় কথা বোলো না। মারধোর আমিও সমর্থন করছি না, তাবলে তোমাদের কথাও মানব না। সত্যি যদি ছাত্রীদের নিজের মেয়ের মতো দেখতাম তা হলে টিউশনগুলোর কী হত? একেকটা ব্যাচে পঁচিশজন করে তো বসাচ্ছে সবাই।

আপনিও বাদ যান না আরতিদি। টিউশন আপনিও করেন।

করি তো, করি বলেই তোমাদের মতো কান্নাকাটির আদিখ্যেতা দেখাচ্ছি না।

ইতিহাসের টিচার দেবলীনা একবছর হল জয়েন করেছে। মূলত চুপ করেই থাকে। সে বলল, শুধু টিউশন নয়, টিউশনের জন্য মেয়েদের চাপ দেওয়ার দুর্নামও তো আমাদের নামে রয়েছে।

তুমি মাত্র কদিন জয়েন করেই এত জেনে গেলে! ভূগোলের পর্ণা ব্যঙ্গ করে বলে।

বিশাখা বলল, সত্যি ঘটনা জানতে সময় লাগে না। ইচ্ছে লাগে।

রাজলক্ষ্মী ইংরেজির টিচার। অনেক বছর হয়ে গেল। মাঝেমধ্যে গাড়ি করে স্কুলে আসেন। মুখে বলেন, স্বামীর টাকায় কেনা, কিন্তু সকলেই জানে টিউশনের জন্যই এই রমরমা। কথাবার্তায় মহিলা অতি মার্জিত। দেবলীনার দিকে তাকিয়ে বললেন, একটা অভিযোগ ছুঁড়ে দিলেই হয় না দেবলীনা, স্পেসিফিক প্রমাণ দিতে হয়। মনে রেখো এখানে আমরা যারা আছি তারা সকলেই লেখাপড়া করে এসেছি। পড়ানোর মতো একটা পবিত্র পেশায় আমরা যুক্ত। তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে তিনবার ভাবতে হয়।

পূর্ণিমা চোখের চশমাটা নাকের ওপর নামিয়ে বললেন, সব অপরাধের কি প্রমাণ হয় রাজলক্ষ্মী? ধর, কেউ স্কুলে ইংরেজি পড়ায়। দেখা গেল, তার কাছে যারা টিউশন নেয় তারা সব গ্রামারে ফুল মার্কস পাচ্ছে, বাকিরা বেশিরভাগই তিন চার। খুব বেশি হলে পাঁচ।

কথাটা বলে একটু হাসলেন পূর্ণিমা। সকলেই ইঙ্গিতটা বুঝতে পারল। রাজলক্ষ্মী হাত উলটে বললেন, এ কথার মানে কী! কোনও টিচার যদি প্রাইভেট টিউশনে ভালো করে পড়ায় সেটা তো অন্যায় নয়। বাবা-মায়েরাই বা টিউটরের কাছে পাঠাচ্ছে কেন? আমরা তো হাতে পায়ে ধরে আনছি না!

দেবলীনা বলল, এটাই তো কথা রাজলক্ষ্মীদি। বাবা-মায়েরা কেন টিউশনে পাঠাচ্ছে। বাধ্য হচ্ছে না তো?

কীসের বাধ্য।

পূর্ণিমা বাংলার টিচার। সোজাসাপটা কথা বলে স্টাফরুমে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন অনেকদিন। বললেন, আহা, এই সহজ কথাটা বুঝলে না রাজলক্ষ্মী? টিউশন ছাড়া গ্রামারে ফুলমার্কস আসবে কী করে? কোয়েশ্চনটাই তো জানা হবে না।

আপনি কী বলতে চাইছেন? আমি টিউশনে কোয়েশ্চন বলে দিই? আই স্ট্রংলি প্রোটেস্ট। আমি হেডমিস্ট্রেসকে কমপ্লেইন করব।

কমপ্লেইনের কথা শুনে পূর্ণিমা বিন্দুমাত্র ভয় পেলেন না। বললেন, মন্দ হয় না। ইংরেজি প্রশ্নটা একবার হাত বদল করে পরীক্ষা করা যেতে পারে। সত্যি সত্যি টিউশন মেয়েরা ভালো না, অন্যরা?

আপনার বাংলাটা তা হলে করতে হবে।

দেবলীনা মুচকি হেসে বলল, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে লাভ কী? স্কুলে মারধর বন্ধ করে ঠিক হয়েছে। লেখাপড়া করতে আসা ছেলেমেয়েদের কান্না বন্ধ করাটা জরুরি। কিন্তু টিউশনের অত্যাচার বন্ধ করতে তাদের বাবা-মায়ের কান্না বন্ধ করাটাও কম জরুরি নয়। যে কান্না দেখা যায় সেটা নিয়ে আমরা লাফালাফি করছি, যেটা দেখা যায় না সেটার ব্যাপারে চুপ করে থাকাটাও সমর্থনযোগ্য নয়।

রাজলক্ষ্মী বললেন, লেকচার তো অনেক হল, আসল কালপ্রিট কোথায়? শ্রীমতী যামিনী চট্টোপাধ্যায়?

স্কুলে ঢুকতেই হেডমিস্ট্রেস যামিনীকে ঘরে ডেকে নিলেন। তার আগেই মোবাইলে ধরে ঘটনা জানিয়ে দিয়েছে বিশাখা।

বিষয়টা খুব সিরিয়াস জায়গায় চলে গেছে। প্লিজ যামিনীদি, বড়দির সঙ্গে একদম রাগারাগি করবে না। ওই মেয়ের বাবা-মা এসে শাসিয়ে গেছে। যে করেই হোক একটা মিটমাট করতে হবে। ছোটখাটো গোলমালে জড়িয়ে পড়লে এখন মুশকিল, মনে রেখো তোমার সামনে অনেক বড় সমস্যা। বড়দি কিন্তু চাইবে ব্যাপারটা নিয়ে ঘোঁট পাকাতে।

হেডমিস্ট্রেসের সামনে যামিনী মাথা নামিয়ে বসে রইল। বিশাখা ঠিক বলছে, বিষয়টা মিটিয়ে ফেলতে হবে। ওই ভাবে মারধর ঠিক হয়নি। নিজের ওপর কন্ট্রোল হারিয়ে যাচ্ছে। মাঝখানে খানিকটা শান্ত ভাব এসেছিল। আবার নতুন করে গোলমাল শুরু হয়েছে। সবথেকে বড় কথা হল চাকরিটা তো বাঁচাতে হবে। হিন্দোলের খবর যদি সত্যি হয় তা হলে আরও বেশি রক্ষা করতে হবে।

খানিকটা ক্ষমা চাওয়ার ঢঙেই যামিনী বলল, আমার মনমেজাজ ঠিক ছিল না ম্যাডাম।

মায়াদি কঠিন গলায় বললেন, আমি জানি, তোমার মেজাজ ঠিক থাকার কথাও নয়, তোমার পারিবারিক সমস্যা আছে। কিন্তু বাইরের লোক তো আর সেটা বুঝবে না। তারা মেয়েকে স্কুলে পড়তে পাঠায়, মার খেতে পাঠায়নি।

ওইভাবে মারাটা আমার ঠিক হয়নি। পরে আমার নিজেরই খুব খারাপ লাগছিল। মেয়েটাকে আমি এইটুকু বয়স থেকে দেখছি।

হেডমিস্ট্রেস ভেবেছিলেন যামিনী তার সঙ্গে ঝগড়াতে যাবে। ঊ্যাক ট্যাক করে কথা বলবে। এই মেয়ের সেদিকে ঝোঁক বাড়ছে। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সবসময় যেন একটা হীনমন্যতায় ভোগে। সাধারণ কথাতেও আপত্তি তোলে। মাস কয়েক আগেই ঘরে এসে রুটিন নিয়ে ঝামেলা করে গেছে। অন্য কোনও ঘটনা হলে এই মেয়েকে বেশ খানিকটা প্যাঁচে ফেলা যেত। নাকের জলে চোখের জলে করে তবে ছাড়া যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে খুব একটা কিছু করা যাবে না। ছাত্রছাত্রীকে মারধোরের ব্যাপারে আজকাল আইনকানুন খুব শক্ত হয়েছে। ঘটনাটা নিয়ে যামিনীর বিরুদ্ধে বেশি প্যাঁচ কষতে গেলে জল অনেকদুর গড়াবে। পত্রপত্রিকা এসে যেতে পারে। তখন হেডমিস্ট্রেসও ছাড় পাবে না। পাশাপাশি অন্য টিচাররাও জল ঘোলা করতে শুরু করবে। এরা একবার জল ঘোলা করতে পারলে আর কিছু চায় না। সুতরাং যত দ্রুত সম্ভব জিনিসটা মিটিয়ে ফেলতে হবে। তবে একেবারে ছেড়ে দেওয়াও যায় না। যামিনী চট্টোপাধ্যায়কে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার। যাতে ভবিষ্যতে বেশি টা-ফুঁ না করে। ও সারেন্ডার করেছে। তার মানে ভয় পেয়েছে। এটাই সময়।

শুধু নিজের খারাপ লাগলে তো হবে না যামিনী, একটা কিছু করতে হবে।

যামিনী মুখ তুলে বলল, কী করব বলুন।

মায়াদি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, একটা কাজ করলে কেমন হয়, আজ সন্ধেবেলা আমরা কয়েকজন টিচার যদি ওই মেয়ের বাড়ি যাই? তুমিও যাবে।

তারপর?

মায়াদি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, তারপর আর কী, তুমি বলবে তুমি অনুতপ্ত। তোমারও খারাপ লাগছে। এই যেমন আমাকে বললে আর কী।

যামিনী মুখ তুলে শান্ত গলায় বলল, ছাত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলছেন?

হেডমিস্ট্রেস স্থির চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন, দরকার হলে তাই চাইতে হবে যামিনী। এখন স্টুডেন্টদের গায়ে হাত তুললে কী হয় তুমি বোধহয় জানো না। ওরা যদি থানায় নালিশ করে আগে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। অবশ্য তুমি যদি মনে করো, মিটমাট না করে লকআপে রাত কাটাবে সে তোমার ব্যাপার। স্কুল বোর্ড তো সঙ্গে সঙ্গে আমাকে সাসপেনশন অর্ডার ধরাতে বলবে। আমি একদিন, খুব বেশি হলে দুদিন ঠেকাতে পারব, তার বেশি তো নয়। এনকোয়ারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাইনেটাও আটকে যাবে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যদি চাও সেই প্রক্রিয়ায় যেতে পারো। তা ছাড়া আরও আছে। ঠোঁটের ফাঁকে নিষ্ঠুর হাসলেন মায়াদি। তারপর গলা নামিয়ে বললেন, তোমার কলিগরাই পত্রিকাওলাদের খবর দেবে। যে সময় পুলিশ তোমায় অ্যারেস্ট করতে তোমার বাড়িতে যাবে সেইসময় ক্যামেরা হাতে ফটোগ্রাফার পৌঁছে যাবে। পরদিন কাগজে ফটো উঠবে তুমি পুলিশের জিপে উঠছ। আমি জাস্ট কী কী ঘটতে পারে অনুমান করে বললাম। পরে বলতে পারবে না, আমি সতর্ক করে দিইনি। আমি আমার ডিউটি করলাম, আমার টিচারদের মান-সম্মান রক্ষার দায়িত্ব আমার।

যামিনীর চোখ ফেটে জল আসছে। ঠোঁট কামড়ে বলল, আমি ওই মেয়ের বাড়ি যাব। আপনাকে যেতে হবে না, আমি একাই যাব।

মায়াদি চেয়ারে হেলান দিয়ে জয়ের হাসি হাসলেন। বললেন, গুড, কিন্তু একা যাওয়াটা ঠিক হবে না, ওরা ভীষণ উত্তেজিত হয়ে আছে। আমাকেও রেসপনসিবিলিটি নিতে হবে। তুমি ওই মেয়েটির কাছে ক্ষমা চাওয়া পর, আমি ওর বাবা মায়ের কাছে দুঃখপ্রকাশ করব।

যামিনী বলল, আসলে আপনি চাইছেন আমি যেন আরও পাঁচজন টিচারের সামনে মেয়েটির হাতে-পায়ে ধরি তাই তো? আমার অপমানটা ওরাও দেখে আসুক, পরে যেন সবাইকে রসিয়ে গল্প করতে পারে। ঠিক আছে, তাই হবে। একটা ভুল যখন করে ফেলেছি, শাস্তি তো পেতেই হবে। চলুন, কাকে কাকে নেবেন ঠিক করে নিন।

ঘটনার মিটমাট হল খুব আশ্চর্য ভাবে। একেবারে নাটকের মতো!

 ক্ষমা চাইতে হল না যামিনীকে। দরজা খুলে যামিনীকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল ছাত্রী।

মিস আপনি!

 যামিনী তার কাঁধে হাত রেখে বলল, তোর কাছে এসেছি।

খুব বেশি হলে মুহূর্তখানেক সময় লাগল। মেয়েটি হাউ হাউ করে কেঁদে জড়িয়ে ধরল যামিনীকে। এই দৃশ্যের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। না যামিনী, না হেডমিস্ট্রেসের সঙ্গে আসা আরও তিন টিচার। যামিনীও চোখের জল মুছে মেয়েটির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল পরম স্নেহে। ক্ষমা চাইল মেয়ের মা। বলল, রাগের মাথায় আপনার নামে খারাপ কথা বলে এসেছি, আপনি কিছু মনে করবেন না দিদি।

দ্বিতীয় গোলমালটা যামিনীদের বাড়ি সংক্রান্ত।

এই শহরে দেবনাথ মোট তিনবার বাড়ি বদল করেছে। শেষ পর্যন্ত এই বাড়িতেই থিতু হয়। বাড়িটা সবদিক থেকে সুবিধের। দোতলা, কিন্তু ছড়ানো। একতলায় মোট তিনটে ঘর। বসা খাওয়ার জায়গা আলাদা। দক্ষিণে মাঝারি একটা বারান্দাও আছে। দোতলায় থাকেন বাড়িওলা জানকীবাবু। বিপত্নীক, ছেলেপুলেও নেই। একাই থাকেন। বাড়ি নেওয়ার সময়েই ভদ্রলোকের বয়স ছিল পঞ্চান্নছাপ্পান্ন। এখন আরও পাঁচটা বছর বেড়ে গেছে। ভাড়া নেওয়ার সময় দেবনাথ খোঁজখবর নিয়েছিল। ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেকটা সময় একলা থাকবে যামিনী। পাড়ার সবাই এককথায় বলল, বাড়িওলা খুব ভালো মানুষ। অল্পদিনেই বোঝা গিয়েছিল, সত্যি তাই। মানুষটা ভদ্রলোক। আর পাঁচটা খিটখিটে বাড়িওলার মতো নয়। কোনও ঝামেলা করেননি কখনও। একটার বেশি দুটো কথা বলতে চাইতেন না। মুখোমুখি হলে শুধু মৃদু হেসে, মাথা নাড়তেন। দেবনাথের ঘটনার পর হাসিটাও বন্ধ করে দিলেন। যামিনীর সঙ্গে দেখা হলে মাথা নামিয়ে নিতেন। নীচু গলায় বলতেন, কোনও দরকার হলে আমাকে বলবেন। আমার এক শালা পুলিশে কাজ করে, যদি মনে করেন…। আমি জানি আপনারা সব ব্যবস্থাই করছেন…তবু যদি..। বলার মধ্যেও কুণ্ঠা, যেন অনধিকারচর্চা না হয়। কখনওই অতিরিক্ত কৌতূহল দেখাননি ভদ্রলোক। দুটো সহানুভূতির কথা বলতে নেমে আসেননি একতলায়। হঠাৎ শুনলে মনে হবে, এ কেমন মানুষ! বাড়ির নীচেই এতবড় একটা ঘটনা ঘটছে, কোনও তাপ উত্তাপ নেই! কিন্তু যামিনীরা খুশি হয়েছিল। একজনের কাছ থেকে অন্তত রেহাই পাওয়া গেছে। সহানুভূতি, করুণা, পরামর্শের ধাক্কায় তারা বিপর্যস্ত। একদিন দুদিন নয়, বছরের পর বছর চেনা অচেনা মানুষ প্রশ্নে প্রশ্নে অতিষ্ঠ করে তুলেছে

কী হয়েছিল? বাড়িতে ঝগড়া? ব্যাগ সুটকেস সঙ্গে নিয়েছে? নাকি ঝাড়া হাত-পায়ে গেল? শুনলাম মোবাইল ফোনটা নাকি ফেলে গেছে? সত্যি নাকি? আত্মীয়দের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছ? বাইরে কোথাও রাগারাগি ছিল না তো? গোপনে ব্যবসাট্যাবসা করত কিছু? পার্টনার ছিল? দিনকাল খুব খারাপ। কাগজে কত কী পড়ি। সামান্য রাগ থেকে বন্ধুতে বন্ধুতে খুনোখুনি পর্যন্ত হচ্ছে। আচ্ছা, ধার-দেনা করেনি তো? অনেকে আবার ওতে ঘাবড়ে যায়। ভয়ে গা-ঢাকা দিয়ে থাকে।

জানকীবাবু বোধহয় একমাত্র মানুষ যিনি কোনও প্রশ্ন করতেন না। একটা সময় পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া নিজের হাতে দিয়ে আসত যামিনী। জানকীবাবু ব্যস্ত হয়ে বলতেন, অসুবিধে থাকলে পরে না হয় দিতে।

যামিনী বলত, অসুবিধে নিয়েই তো আছি দাদা। তবু চলতে তো হবে। আপনি টাকা রাখুন।

জানকীবাবু বিষণ্ণ গলায় বিড়বিড় করে বলতেন, কী যে হল…হঠাৎ কী যে হল..অমন সুন্দর মানুষটা…। লোকে যাই বলুক, আমি তো জানি কত সুখে ছিলে তোমরা…ফুটফুটে দুটো ছেলেমেয়ে…হইচই শুনতাম, হাসি শুনতাম…মাঝেমধ্যে কী মনে হয় জানো? মনে হয় সংসারের মায়া বড় কঠিন, বড় নির্মম, সেখানে সুখের থেকে দুঃখটাই বেশি।

যামিনী বুঝতে পারে মানুষটা তাঁর স্ত্রীর কথা মনে করছেন। সে নিজেও আবেগতাড়িত হত। ধরা গলায় বলত, আপনি একদিন এসে চা খেয়ে যাবেন।

ছি ছি, তোমাদের বিরক্ত করব! আমি তো কিছুই করতে পারি না। কোনও অসুবিধে হলে বলবে। ছেলেকে পাঠিয়ে দিও।

বছর তিন যামিনী নিশ্চিন্তে ছিল। এরকম একটা সময় ছেলেময়ে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকাটা খুব জরুরি। দেবনাথের দাদা ঘটনার পর থেকেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। দু-চারদিন এসেছিল, বউদি ফোন করেছিল বারকয়েক, ব্যস সেখানেই শেষ। তারপর আত্মীয়স্বজনকে বলে বেড়াতে লাগল, আমরা বুঝেছি আসলে যামিনীরই গোলমাল। ওর জন্যই দেবনাথ ঘর ছেড়েছে। পুলিশ দু-ঘা দিলে সব বেরিয়ে আসবে। পিছনে আর একটা কেউ আছে। শোনা যায়, ওরা পুলিশের কাছে কমপ্লেইনও করতে গিয়েছিল। পুলিশ তাড়িয়ে দেয়। এসব শুনে যামিনী কিছু মনে করেনি, এছাড়া ওদের উপায়টা বা কী ছিল? নইলে গোটা পরিবারটাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে তুলতে হত। ভাইয়ের খোঁজে কাজকর্ম শিকেয় তুলে ছোটাছুটি করতে হত সর্বক্ষণ। এই ঝামেলা কাঁধে নেওয়া থেকে দোষ দেখিয়ে সরে যাওয়া অনেক বুদ্ধিমানের। এর ফাঁকে পৈতৃক বাড়িটা যদি বিক্রি করা যায় তা হলে একাই টাকাটা ভোগ করা যাবে। সে করুক। দেবনাথকে খুঁজে বের করা ছাড়া অন্য কিছুই মাথায় রাখেনি যামিনী। শুধু বুঝেছিল নিজেদের আশ্রয় নিজেরাই জোগাড় করতে হবে। সেদিক থেকে এই বাড়িই সবথেকে সুবিধেজনক।

কোনও সমস্যা হয়নি। সমস্যা শুরু হল পরে। জানকীবাবু রিটায়ার করে বাড়িতে বসে যাওয়ার পর। তখন নীলাদ্রি সবে কাজে ঢুকেছে। মাঝেমধ্যেই ভাড়ার টাকা ওপরে দিতে যেত কিঙ্কিনি। যামিনী স্কুলে যাওয়ার সময় মেয়ের হাতে খাম দিয়ে বলত, একসময় ওপরে গিয়ে দিয়ে আসবি।

এক সন্ধেবেলায় যামিনী স্কুল থেকে ফেরার পর কিঙ্কিনি বলল, আর আমাকে পাঠাবে না।

যামিনী অবাক হয়ে বলল, কেন!

এমনি, আমার ভালো লাগে না।

যামিনী ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, ভালো লাগে না মানে, এইটুকু দায়িত্ব নিতে পারবে না? শুধু খাবে দাবে আর ঘুরে বেড়াবে? নীচ থেকে ওপরে যেতেও কষ্ট হয়!

কিঙ্কিনি তার মায়ের দিকে মুখ তুলে বলেছিল, জানকীকাকু লোকটা ভালো নয়।

ভালো নয় মানে! ছি ছি, এসব কী বলছ কিঙ্কি! ওঁর মতো মানুষ চট করে পাওয়া যাবে না। বাড়িওলারা কেমন হয় তুমি জানো না। এই মানুষটা কোনওদিন ঝামেলা করেননি। তোমার বাবার ঘটনার পর অন্য যে কেউ হলে বলত বাড়ি ছাড়ুন। তা ছাড়া, তা ছাড়া দেখা হলে কী সুন্দর ব্যবহার করেন! বাড়তি একটা কথা পর্যন্ত বলেন না। অন্য যে কোনও পুরুষমানুষ হলে গায়ে পড়ত।

বাঃ, ভালো মানুষ খারাপ হয়ে যায় না? উনি তাই হয়েছেন, খারাপ হয়ে গেছেন।

যামিনী বলল, এ বিষয়ে আমি তোমার সঙ্গে তর্ক করতে চাই না। নিশ্চয় তুমি কিছু ভুল বুঝেছ।

আমি এতদিন যাচ্ছি, হঠাৎ ভুল বুঝব কেন মা? আমি ভুল বুঝিনি। ঠান্ডা গলায় কিশোরী কিঙ্কিনি প্রতিবাদ করে।

যামিনী এবার বিচলিত হয়। ভুরু কুঁচকে বলল, কী হয়েছে?

আমি বলতে চাইছি না, তবু তুমি যখন জোরাজুরি করছ তখন বলেই ফেলি, আজ উনি আমার বুকের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন।

যামিনী চমকে উঠল, হঠাৎ এটা কীরকম কাজ করলেন জানকীবাবু! তবু হাত নাড়িয়ে সে বলল, ঠিক আছে ঠিক আছে, এটা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। যতই হোক উনি পুরুষমানুষ, বড় হচ্ছ এখন এরকম কিছু কিছু সমস্যা হবে। যেটা ছোট সমস্যা, সেটাকেও বড় বলে মনে হবে। আচ্ছা, তোমাকে আর ওপরে যেতে হবে না, এবার থেকে নীল ভাড়া দিয়ে আসবে।

কিঙ্কিনি বলল, আসলে কী জানো মা, মেয়েদের বুকের দিকে ছেলেরা তাকাবে এটা আমরা জেনে গেছি। এতে অবাক হই না, মাথাও ঘামাই না, কিন্তু যে মানুষটার তাকানোর কথা ছিল না, সে যদি এরকম করে তখন বড় গা ঘিনঘিন করে। তখন মনে হয়, মানুষটা খারাপ, একটু নয়, খুব বেশি খারাপ।

যামিনী উঠে পড়ল। এই বিষয়ে আর সে মেয়ের সঙ্গে কথা বাড়াতে চায় না। কত মানুষই তো যা করার নয়, তাই করে। দেবনাথের কি এভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল? সতর্ক থাকতে হবে। কিঙ্কিনি একা থাকে। সামান্য ঘটনায় হয়তো বেশি ভাবছে, তবু কিছু তো ঘটেছে। তাই-ই বা হবে কেন?

বহুদিন আর কিছু হল না। বরং দেখা হলে জানকীবাবু বিষণ্ণ মুখে মাথা নামিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেছেন। যামিনীর মনে হয়েছিল, মানুষটা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাই লজ্জিত। তারপর একসময় ঘটনাটা ভুলেও গেল।

কাল রাতে বাড়ি ফিরে যামিনী দেখল, গেটের মুখে জানকীবাবু দাঁড়িয়ে আছেন।

আপনি! যামিনী অবাক হল।

আপনার সঙ্গে কথা বলব বলেই অপেক্ষা করছি। জানকীবাবু নীচু গলায় বললেন।

 যামিনী বলল, ছি ছি, এখানে কেন? ঘরে আসুন।

না না তার দরকার নেই। একটা কথা বলতে খারাপ লাগছে, কিন্তু না বলেও পারছি না। আপনারা এবার বাড়িটা ছেড়ে দিন যামিনীদেবী।

যামিনী অবাক হয়ে বলল, সে কী! কেন?

না, এমনি কিছু হয়নি।

যামিনী একটু এগিয়ে এসে বলল,  নিশ্চয় কিছু হয়েছে, কী হয়েছে? ভাড়া বাড়াবেন?

জানকীবাবু মাথা নামিয়ে বললেন, সেদিন আপনার মেয়ে ড্রাঙ্ক হয়ে বাড়ি ফিরেছে। রিকশা থেকে নামার সময় টলছিল। রাত বেশি হলেও পাড়ার কেউ কেউ দেখেছে।

যামিনীর মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে উঠল। একটু চুপ করে থেকে বলল, তাতে আপনার কী সমস্যা?

জানকীবাবু মাথা নেড়ে একইরকম নীচু গলায় বললেন, না, তেমন কোনও সমস্যা নয়, কিন্তু বাড়িটা তো আমার, ছোট একটা মেয়ে মদ খেয়ে বাড়িতে ঢুকলে বাড়ির বদনাম হয়।

যামিনীর ইচ্ছে করল বলে, ছোট মেয়ের বুকের দিকে তাকিয়ে থাকতে সমস্যা নেই, সে একদিন মদ খেলেই সমস্যা! চমৎকার তো! কিন্তু সেকথা বলল না।

আমার মেয়ের বিষয়টা আমাকেই বুঝতে দিন। দরকার হলে পাড়ার লোকদেরও কথাটা বলে দেবেন। আর শুনুন হুট বললেই তো বাড়ি ছাড়া যায় না। আমি শুনলাম, যেদিন অলটারনেটিভ ব্যবস্থা করতে পারব নিশ্চয় চলে যাব।

জানকীবাবু দুঃখ পাওয়া গলায় বললেন, ব্যস তা হলেই হবে।

বাড়িওলার কথাটা কাউকেই বলেনি যামিনী। কী বলবে? তা হলে কিঙ্কিনির মদ খাওয়ার কথাটাও বলতে হয়। একটার পর একটা অপমানে সে যেন ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

ট্যুর থেকে ফিরতেই হিন্দোলের সঙ্গে কথা বলল যামিনী। দেবনাথের নতুন সংসারের ঠিকানা নেই। যাদবের সঙ্গে কথা বলে হিন্দোলই জোগাড় করে দিল। সাতাশ বাই তিন নম্বর শহিদ বলরাম কলোনি। বাস স্টপ থেকে রিকশা ধরতে হবে।

যামিনী বলল, মেয়েটার নাম কী?

হিন্দোল বলল, যাদব তো বলেছে মঞ্জু। না-ও হতে পারে, ওই ধরনের মেয়েরা ঘন ঘন নাম পালটায়।

আমরাও যাব। বিশাখা বলে।

যামিনী চোয়াল শক্ত করে বলল, না, এখানে আমি একাই যাব।

বিশাখা হিন্দোল চোখ চাওয়াচাওয়ি করে। বিশাখা বলে, ঠিক আছে, আমরা বাড়িতে ঢুকব না, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব। সঙ্গে পুলিশ নেওয়া যায় না?

হিন্দোল বিরক্ত গলায় বলল, খেপেছ? যাদব তার চোর ডাকাত স্মাগলার বন্ধুদের কাছ থেকে কী খবর এনেছে তার ঠিক নেই, আমরা একেবারে পুলিশ নিয়ে গিয়ে হাজির হব?

যামিনী ঠোঁটের কোনায় ব্যঙ্গের হেসে বলল, পুলিশ নিয়ে গিয়ে কী হবে? কী করবে? গোপনে আর একটা সংসার করেছে বলে, তোদের দেবনাথকে কোমরে দড়ি দিয়ে নিয়ে আসবে? কাউকে লাগবে না। আমি একাই যাব, একদম একা। খবর যদি সত্যি হয়, শুধু জিগ্যেস করব, কেন আমাকে বলে এলে না? আমি কি বারণ করতাম?

মুখে হাত দিয়ে কেঁদে উঠল যামিনী। বিশাখা মুখ ঘুরিয়ে নিল।

.

কলোনির পথটা আরও অপরিসর এবং নোংরা হয়ে একটা পুকুরের কাছে এসে পৌঁছল। পুকুর না বলে ডোবা বলাই ভালো। রিকশাচালক ঠিক বলেছে। ডোবাটাকে ঘিরে দুপাশে দুটো রাস্তা। বিশ্রী গন্ধটা বেড়ে নাকে এসে জোরে ধাক্কা মারল যামিনীর। গা পাক মেরে উঠল। শাড়ির আঁচল তুলে নাকে চেপে ধরল জোরে। ডোবার একপাশে আবর্জনার স্তূপ। প্রায় ছোটখাটো একটা টিবি হয়ে আছে। এঁটো শালপাতা, কাপড়ের টুকরো থেকে মদের শিশি। গন্ধ সেখান থেকেই আসছে। যামিনী থমকে দাঁড়াল। দুটো পথের কোনদিকে যাবে? আরও কিছুটা এগোতে যামিনী দেখতে পেল, ডোবার গায়ে ঘাটের মতো খানিকটা জায়গা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। বেশ কিছু মহিলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কেউ কাপড় কাঁচছে, কেউ স্নান করছে, কেউ পা ছড়িয়ে বসে শুধু উঁচু গলায় কথাই বলে চলেছে। আড়াল আবডালের কোনও ব্যাপার নেই। একঝলক তাকিয়ে যামিনী বুঝল, আব্রু নিয়ে এরা চিন্তিত নয়। অনেকেই হাঁটুর ওপর কাপড় তুলে রেখেছে, এমনকী থাই পর্যন্ত। বুকের কাপড় আলুথালু। বেশির ভাগেরই জামা নেই। জলে পা ডুবিয়ে খালি গায়ে সাবান ঘষছে। গামছার যেটুকু আড়াল বানিয়েছে সেটা না থাকারই মতো। আশপাশ দিয়ে যে দু-চারজন পুরুষ হেঁটে যাচ্ছে তারা মুখ ফিরিয়ে দেখছেও না। বোঝাই যাচ্ছে, এই দৃশ্যে তারা অভ্যস্ত। যামিনী কী করবে বুঝতে পারছে না। এই পরিবেশ সে কখনও দেখেনি। এই পরিবেশে কী করা উচিত সে জানে না। এটা কি মর্গের থেকেও খারাপ কোনও জায়গা? এক মহিলা চিৎকার করে বলল, ওই মাগিকে একদিন দেখে নেব আমি। ঠিক দেখে নেব। কতদিন বাবু দেখিয়ে ফুটানি করবে? খানকি পাড়ায় বেইমানি করার শাস্তি হাড়ে হাড়ে টের পাবে। নেংটা হয়ে জুতো মুখে এই পুকুরপাড়ে ঘুরতে হবে শালিকে, নইলে তোরা মালতীর নামে কুকুর পুষিস, এই বলে রাখলাম, হ্যাঁ।

যামিনীর ইচ্ছে করল কানে হাত চাপা দিতে। দ্রুত নিজেকে সামলালো। কীসের সঙ্কোচ? জেনেশুনেই তো সে এখানে এসেছে। যামিনী মন শক্ত করে এগিয়ে গেল।

ভাই, সাতাশ বাই তিন নম্বরটা কোনদিকে বলতে পারেন?

অচেনা গলা পেয়ে মহিলাদের কয়েকজন মুখ তুলে তাকাল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *