• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

৫৪. ভোরবেলা বৃষ্টিতে সবাই কমবেশি ভেজে

লাইব্রেরি » আখতারুজ্জামান ইলিয়াস » খোয়াবনামা (উপন্যাস) » ৫৪. ভোরবেলা বৃষ্টিতে সবাই কমবেশি ভেজে

ভোরবেলা বৃষ্টিতে সবাই কমবেশি ভেজে। রাতভর যে ঝড়টা গেলো, ভোরে রওয়ানা হওয়া যায় কি-না সন্দেহ ছিলো। স্টেশনে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের জিপ থেকে নামাবার সময় ছোটো বড়ো মেজো তিনটে সুটকেস, ট্রাংক, হোল্ডঅল ও খাবার বাস্কেট একটু একটু ভেজে। এমন কি যত্ন ও সতর্কতা সত্ত্বেও বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে কাদেরের হাতের পানির সোরাই টইটম্বুর হয়ে যায়। ট্রেন প্রায় আধ ঘণ্টা লেট। এর মধ্যে বৃষ্টি থেমে গেলো, তবে আকাশ মেঘলাই হয়ে রইলো।

ইসমাইল হোসেনের বেগম সাহেবা, তার এক ছেলে, দুই মেয়ে ও কাজের মেয়েটিকে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার ভার পড়েছে কাদেরের ওপর, ঘাড় পেতে এই দায়িত্ব সে নিয়েছে নিজেই। এই সঙ্গে তার বিয়ের বাজারটাও সেরে নেবে। শাড়ি, গয়নাপাতি, কাপড়চোপড়, প্রসাধন ও সুটকেস কেনা হবে ইসমাইলের তত্ত্বাবধানে। শরাফত মণ্ডল সেদিন হোসেন মঞ্জিলে নিজে রিজিয়া বেগমকে অনুরোধ করে এসেছে, মা, আপনাগোরে বাড়ির মেয়ে ঘরে আনিচ্ছি, আপনার পছন্দমতো দেখাশুন্যা যা ভালো মনে হয় তাই কিনবেন।

এই সুযোগে আবদুল কাদের ঢাকায় পার করে দিচ্ছে তমিজকে। ইসমাইল হোসেনের ঢাকার বাড়িতে একবার পাচার করে দিতে পারলে পুলিসের সাধ্য কি তাকে ধরে? তদবির করে তার নামে মামলাটাও খারিজ করে নিয়ে ফের তাকে নিয়ে আসা যাবে গিরিরডাঙায়। তখন দেখা যাবে, কালাম মাঝি ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের ভোট কীভাবে করে!

ইসমাইল হোসেনের ঢাকার বাড়িতে এরকম বিশ্বাসী চাকর একটা দরকার। রিজিয়া বেগম তাকে স্বামীর একটা পুরনো টুইলের শার্ট, প্রায় নতুন একটা লুঙি, এমন কি একটুখানি ছেড়া ছাই রঙের একটা শেরোয়ানি পর্যন্ত দান করে দিয়েছে অকাতরে। বৌ ও বাচ্চার জন্যে যথাক্রমে শাড়ি, ব্লাউজ ও ফ্রক কিনে দিয়েছে, কাদের সেসব পাঠাবার ব্যবস্থা করেছে নিজগিরিরডাঙায়। তমিজের ওপর রিজিয়া বেগম খুব খুশি। শাশুড়ি ও দেওরের মুখভারের তোয়াক্কা না করেই তাকে সে একরকম ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তা তমিজও তাকে খেদমত করার চেষ্টা করে যতোখানি তার বুদ্ধিতে কুলায়। বৃষ্টি থেকে বাঁচাবার তাগিদে রিজিয়া বেগমের সবচেয়ে ছোটো সুটকেসটা সে তুলে নেয়। কুলির মাথা থেকে এবং ওয়েটিংরুম পর্যন্ত সেটাকে বুক ও পেটের সঙ্গে আঁকড়ে রাখায় সে একবার হোঁচট খায় মাল ওজন করার যন্ত্রের সঙ্গে এবং দ্বিতীয়বার প্ল্যাটফর্মের এক ধারে স্থূপ করে রাখা চালের বস্তায়। বলতে কি, রিজিয়া বেগমকে খুশি করতেই হোসেন। মঞ্জিল থেকে রওয়ানা হবার আগে ছাই রঙের শেরোয়ানিটা সে একবার পরার উদ্যোগ নিয়েছিলো। কিন্তু সবাই এ কী? হাত ঢোকালে না এই গরমে এটা পরো কেন? এটা পরলে তোমাকে বড়দা ভেবে স্টেশন মাস্টার সালাম করে বসবে, এখন খোলো, খুলে। তোমার ওই ব্যাগে রেখে দাও প্রভৃতি মন্তব্য ও পরামর্শে সে ওটাকে ঢুকিয়ে রেখেছে ওর ছালার মধ্যে। ছালাটা কিছুতেই হাতছাড়া করছে না।

ফার্স্ট ক্লাস কামরায় কাদের মালপত্র গুছিয়ে রিজিয়া বেগম, ছেলেমেয়ে ও কাজের মেয়েটিকে তাদের যথাযথ আসনে বসিয়ে তমিজকে উঠিয়ে দেয় কয়েক কামরা পর প্রথম থার্ড ক্লাস কম্পার্টমেন্টে। নিজেদের কামরায় ফিরে যাবার সময় কাদের বারবার করে বললো, বোনারপাড়ায় গাড়ি থামলে ওই কামরাত আসিস। ভাবির কিছু দরকার লাগবার পারে। আর এর মধ্যে কোনো স্টেশনে ওঠানামা করিস না। মাঝখানে ছোটো ছোটো স্টেশন, নামলে উঠবার পারব না।

রেলে তমিজ মেলা যাতায়াত করেছে, এতো হুঁশিয়ার করার দরকার হয় না। তবে গাঁয়ের মাঝি কলু, চাষাভুষার আনাড়িপনায় ভদ্দরলোকেরা মজা পায়; তার রেলে অনেকবার চড়ার কথা তমিজ তাই চেপে যায়, বোনারপাড়া নেমে কী করতে হবে সে তা ভালো করেই জানে। ভবিসাহেবার তখন খেদমত করার একটা মওকা মিলবে। তার চায়ের দরকার হতে পারে, সোরাইয়ের পানি ফুরিয়ে যেতে পারে। পানের বাটা তো সঙ্গেই আছে, তবু দোকানের পান কয়েক খিলি না হয় এনে দেবে। ভাবিসাহেবা একটু হাসলে তমিজের এক সপ্তাহের খুশি থাকার খোরাক জুটে যায়। আর যদি বলে, তমিজটাকে বেশি বলতে হয় না, ইশারাতেই সব বুঝে ফেলে তো সারাটা মাস সে খুশি।

এই কামরায় খুব ভিড়। দরজার সামনে মেঝেতে বসার একটা জায়গা তার হয়ে গেলো। চটের ব্যাগে হাত বুলিয়ে ভেতরের জিনিসপত্র সম্বন্ধে তমিজ তৃতীয় কি চতুর্থবার নিশ্চিন্ত হচ্ছে, এমন সময় পাশের লাইনে এসে দাড়ালো একটা লোকাল গাড়ি। ওই ট্রেনের একটা কামরায় উঠলো ট্রাংক ও সতরঞ্চি-জড়ানো বিছানা হাতে কয়েকজন পুলিস। কয়েকজন নয়, একগাড়ি পুলিস উঠলো সার বেঁধে। তমিজ তাড়াতাড়ি করে মুখ ঘোরালো তার কামরার ভেতরের দিকে। পুলিস যদি তাকে ফেরারি আসামি বলে সনাক্ত করে ফেলে! এই কামরায় কাদের নাই, ইসমাইল সাহেব নাই, তার বাবা নাই, ইয়াকুব সাহেব নাই। পুলিস যদি তাকে খপ করে ধরে তো তার বারো বছরের কয়েদ খাটা। বেশিও হতে পারে। এমন কি তার ফাঁসি পর্যন্ত হতে পারে। হঠাৎ তার মনে পড়ে ফুলজানের কথা। তার মেয়েটা কি বড়ো হলো? সে কি হাঁটতে পারে? না-কি হামাগুড়ি দেয়? মেয়েটাকে দেখার কপাল তার হবে কি? কুলসুম বোধহয় ফুলজান আর তার বেটিকে দেখতে যায়ই না। কিংবা গিয়ে হয়তো হুরমতুল্লার চটাং চটাং কথা শুনে এসেছে। মাঝির বেটি বলে হরমতুল্লা নাতনিকে হেলা করে কি-না কে জানে? বৌবেটির জন্যে তমিজ এতোটাই উতলা হয় যে, পুলিসের ভয় পর্যন্ত তার চাপা পড়ে। কিছুক্ষণ পর পুলিসদের আর দেখা যায় না, তারা মুখ সেঁধিয়েছে কামরার ভেতরে। তমিজের গাড়ির ভেতরে কে যেন বলে, ওদিকে খুব গোলমাল, কাল এক গাড়ি পুলিস গেলো, আজ আবার আরেক গাড়ি।

কিসের গোলমাল ভাই? কে যেন জানতে চাইলে ভিড়ের ভেতর থেকেই জবাব আসে, আধিয়ার চাষারা হাঙামা করিচ্ছিলো, পুলিসও খুব সাটিচ্ছে। মদ্দামাগী বাছবিচার নাই, যাক পাচ্ছে তাই ধরিচ্ছে।

তমিজ জিগ্যেস করে, ঐ গাড়ি কুটি যাবি?

শান্তাহার।

শান্তাহার! শান্তাহারের গাড়ি! শান্তাহারের গাড়ির ইনজিনের হুশহুশ ধ্বনি বলতে থাকে, শান্তাহার! ওই গাড়ির ইনজিনের ধোয়া পাকিয়ে পাকিয়ে ওপরে উঠতে উঠতে লিখে দেয়, শান্তাহার! অক্ষরজ্ঞান না থাকলেও তমিজ এই লেখাটাই জীবনে প্রথম পড়তে পারে। শান্তাহার যাওয়া মানে সেখান থেকে যাও জয়পুর, যাও আক্কেলপুর, যাও হিলি। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ। আবার অন্য লাইন ধরে নাটোর কিংবা নবাবগঞ্জ। এতো পুলিস যাচ্ছে, মানে চাষারা দুই ভাগ ফসল তুলছে নিজেদের গোলায়, জোতদারদের গোয়র কাপড় খুলে গেছে, শালারা দৌড় দিচ্ছে, লুকাচ্ছে পুলিসের গোয়ার মধ্যে। আবার এর মধ্যেই আমনের জন্যে একদিকে চলছে জমি তৈরি, পাট কেটে সেই জমিতে একটা দুইটা তিনটা লাঙল চাষ দেওয়া হলো, এখন বীজতলায় কলাপাতা রঙের ধানের চারা বিছানো। জমি তৈরি হলে সেখান থেকে চারা এনে ধান রোপার ধুম পড়ে যাবে। আহা, কাল সারা রাত বৃষ্টি হলো, জমি হয়ে আছে মাখনের মতো, লাঙল ছোঁয়াতে না ছোঁয়াতে ঢুকে যাচ্ছে দুনিয়ার অনেক ভেতরে, তমিজ সেখান থেকে পানি পর্যন্ত টেনে আনতে পারে। শান্তাহারের গাড়ির ধোঁয়ায় আসমানে এখন আবার লেখা হয় ধানজমির ছবি। কী জমি গো! ধানচারা রুইতে না রুইতে ধানের শীষ বড়ো হয়, ধানের শীষ দুধের ভারে নুয়ে পড়ে নিচের দিকে। মোটা মোটা গোছর ধান কাটতে নেমে গেছে। কতো কতো মানুষ তার আর লেখাজোকা নাই। জোতদাররা এসেছে পুলিস নিয়ে। রেলগাড়ি ভরা পুলিস স্টেশনে স্টেশনে নেমে ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। তারা সব কলেরার মতো নামে, গুটিবসন্তের মতো নামে। চাষারা তাদের তাড়া করছে কাস্তে নিয়ে, শালারা উর্ধশ্বাসে পালাবার আর পথ পাচ্ছে না।

গাড়ি ছাড়ে না যে? কতো লেট করবে? কে যেন জানতে চাইলে আর কেউ বলে, ঐটা আগে ছাড়বে। আগে আসে, পরে ছাড়ে।

শান্তাহারের গাড়ি ছাড়ার ঘণ্টা বাজলো। তমিজ হঠাৎ দাঁড়িয়ে দরজার মানুষদের ঠেলেঠুলে নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। পাশের লাইনে দাঁড়ানো শান্তাহারের গাড়ির একটা থার্ড ক্লাস কামরার খোজে সে দৌড় দেয়। গার্ড সাহেবের লম্বা হুইসিলে গাড়ির ইনজিনের বড়ো চাকাগুলো ঘুরতে শুরু করেছে। তমিজ উঠে পড়লো শান্তাহারের গাড়ির একটা কামরায়।

এই গাড়িতে ভিড় কম। বেঞ্চিতে জায়গা থাকলেও উদাম গায়ে গামছা-ঘাড়ে মানুষ অনেকেই বসে রয়েছে মেঝেতে। নিজেদের বাঁক আর ঝুড়ি আর কোদাল তারা ঠেলে রেখেছে বেঞ্চের তলায়। তমিজের সাফসুতরো জামা আর পরিষ্কার লুঙি আর পায়ে রবারের স্যান্ডেল দেখে অনেকে একটু সরে সরে বসে। বেঞ্চে বসতে তার চটের ব্যাগটার কথা মনে হলে তমিজ চমকে ওঠে। কিন্তু গাড়ি তখন গতি নিয়ে ফেলেছে। এতোগুলো জামাকাপড়! কাপড়চোপড়ের ভাঁজে ছিলো! পাঁচটা টাকা!

এখন তো আর ফেরার জো নাই! ফিরে কাজ নাই!

Category: খোয়াবনামা (উপন্যাস)
পূর্ববর্তী:
« ৫৩. রাতভর ঝড়ের মাতম
পরবর্তী:
৫৫. ছাতা বন্ধ করতে করতে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑